আল-ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশননির্বাচিতপিডিএফ ও ওয়ার্ডমাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহমিডিয়া

আত্মশুদ্ধি- পর্ব-২৩ || ইসলামে মিডিয়ার গুরুত্ব || মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

مؤسسة الفردوس
আল ফিরদাউস
Al Firdaws
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presentsفي اللغة البنغالية
বাংলা ভাষায়
In the Bengali Language

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:

سلسلة تزكية النفس- الحلقة ٢٣
أهمية وسائل الإعلام في الإسلام
আত্মশুদ্ধি- পর্ব-২৩
ইসলামে মিডিয়ার গুরুত্ব
Self-purification- Episode-23
The importance of media in Islam

لمولانا صالح محمود حفظه الله
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
By Mawlana Saleh Mahmud Hafizahullah

للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading

https://justpaste.it/attosuddi-porbo_23
https://archive.vn/o55aU
https://mediagram.me/76d6c7443c7f7d53
https://archive.vn/uKA6m
https://web.archive.org/web/20210222…suddi-porbo_23
https://web.archive.org/web/20210222…d6c7443c7f7d53

روابط بي دي اب
PDF [713 KB] পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৭১৩ কিলোবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/QcYszJ9pw86X4rk
https://archive.org/download/23.-isl…iarGurutto.pdf

روابط ورد
Word (436 KB)

ওয়ার্ড [৪৩৬ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/JsAZcY6K9gKY9nz
https://archive.org/download/23.-isl…arGurutto.docx

روابط الغلاف- ١
book Banner [335 KB]

বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [৩৩৫ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/P8MeAQoqpJ5gx7o

https://archive.org/download/attosho…i-shriz-23.jpg

روابط الغلاف- ٢
Banner [746 KB]

ব্যানার ডাউনলোড করুন [৭৪৬ কিলোবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/dL4bzPs622o75fT
https://archive.org/download/attosud…a%20banner.jpg

مع تحيّات إخوانكم في مؤسسة الفردوس للإنتاج الإعلامي

*****************

 

 

আত্মশুদ্ধি – ২৩

ইসলামে মিডিয়ার গুরুত্ব

 

 

 

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

 

 

 

 

 

সূচীপত্র

 

ইসলামে মিডিয়ার গুরুত্ব.. 4

এক. মিডিয়া হচ্ছে ইসলামী দা‘ওয়াহ প্রচারের মাধ্যম. 5

দুই. মিডিয়া হচ্ছে সহীহ আকীদা-বিশ্বাস প্রসারের মাধ্যম. 7

তিন. মিডিয়ার মাধ্যমে দ্বীনি ও কুরআনী শিক্ষার প্রসার. 8

চার. মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামী সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রচার-প্রসার করা.. 10

পাঁচ. মিডিয়ার মাধ্যমে বিনোদন ও চেতনা জাগানো সঙ্গীত ইত্যাদির প্রচার-প্রসার করা   10

ছয়. মিডিয়ার মাধ্যমে মানব কল্যাণের ফিকির ছড়িয়ে দেওয়া.. 11

সাত. মিডিয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের মাঝে ঐক্য গড়ে তোলা.. 13

আট. মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধ করা.. 13

 

 

 

 

 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন, ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা সাইয়্যেদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালিন,ওয়া আলা আলিহী, ওয়া আসহাবিহী, ওয়ামান তাবিয়াহুম বি ইহসানিন ইলা ইয়াওমিদ্দীন, মিনাল উলামা ওয়াল মুজাহিদীন, ওয়া আম্মাতিল মুসলিমীন, আমীন ইয়া রাব্বাল আ’লামীন।

আম্মা বা’দ:

মুহতারাম ভাইয়েরা! আমরা সকলেই দুরুদ শরীফ পড়ে নেই-

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ،كما صَلَّيْتَ عَلٰى إبْرَاهِيْمَ، وَعَلٰي آلِ إبراهيم، إنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إبْرَاهِيْمَ، وَعَلٰى آلِ إبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ.

প্রতি সপ্তাহের ন্যায় আজকে আবারও আমরা তাযকিয়া মজলিসে হাজির হতে পেরেছি, এই জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করি- আলহামদুলিল্লাহ।

ইসলামে মিডিয়ার গুরুত্ব
মুহতারাম ভাইয়েরা! আজকে আলোচনার বিষয় হচ্ছে: ইসলামে মিডিয়ার গুরুত্ব।

ইসলাম আল্লাহ্‌ তা’আলার মনোনীত এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সমুদয় বিষয়ের যাবতীয় সমস্যার সমাধান রয়েছে। ইসলাম মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তা করতে উৎসাহ দেয়, আর অকল্যাণকর বিষয়াদি থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ করে। এসব নির্দেশনা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে যুগে যুগে মহান আল্লাহ্‌ অসংখ্য নবী-রাসূল এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাঁরা সমকালীন প্রযুক্তির সাহায্যে এসব বিধি-নিষেধ ও নির্দেশনা মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দা‘ওয়াতী মিশনে তৎকালীন শ্রেষ্ঠ মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগিয়েছেন।

সুতরাং মিডিয়া একটি মাধ্যম যার সাহায্যে ইসলামকে সমগ্র বিশ্ববাসীর নিকট প্রচার করা যায়। অতএব, ইসলামী দা‘ওয়াতের গুরুত্ব যতখানি; ইসলামী মিডিয়ার গুরুত্বও ততখানি রয়েছে। এখন ইসলামের কোন কোন বিষয় গুলো মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার-প্রসার করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।

এক. মিডিয়া হচ্ছে ইসলামী দা‘ওয়াহ প্রচারের মাধ্যম
ইসলামী দা‘ওয়াহ হলো মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানানো। যেহেতু ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ দীন, সেহেতু তার দা‘ওয়াতও শ্রেষ্ঠ। মানুষকে সঠিক পথের দিশা দিতে এ মহতী কাজের কোনো বিকল্প নেই। ইসলামী দা‘ওয়াহ যেমনি ফরয তেমনি ইসলামী মিডিয়াও কোন কোন ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকল নবী-রাসূল তাঁদের সমকালীন উপকরণ ব্যবহার করে দা‘ওয়াতের কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান যেহেতু ইসলামে রয়েছে, সেহেতু ইসলামের দা‘ওয়াত উপস্থাপনের মাধ্যমেই সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব।

পবিত্র কুরআনে নবী-রাসূলগণের দা‘ওয়াত পদ্ধতি ও মাধ্যম বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। নূহ আলাইহিস সালাম তাঁর জাতিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, যা পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে,

يَغْفِرْ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُؤَخِّرْكُمْ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ إِنَّ أَجَلَ اللَّـهِ إِذَا جَاءَ لَا يُؤَخَّرُ ۖ لَوْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿٤﴾ قَالَ رَبِّ إِنِّي دَعَوْتُ قَوْمِي لَيْلًا وَنَهَارًا ﴿٥﴾ فَلَمْ يَزِدْهُمْ دُعَائِي إِلَّا فِرَارًا ﴿٦﴾

অর্থ: “তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হলে তা বিলম্বিত হয় না; যদি তোমরা এটা জানতে!’ তিনি বললেন, ‘হে আমার রব! আমি তো আমার সম্প্রদায়কে দিনরাত ডেকেছি, ‘কিন্তু আমার ডাক তাদের পলায়ন প্রবণতাই বৃদ্ধি করেছে”। [সূরা নূহ ৭১ : ৪-৬]

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মানব সভ্যতা বিকাশে নবী-রাসূলগণের অবদানই বেশি। যুগে যুগে প্রেরিত ঐসব নবী-রাসূলের সুন্নাত হলো দা‘ওয়াত দান। তাঁরা মানুষকে এক আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে এবং তাগুতকে বর্জন করতে আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। কুরআনে এসেছে,

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّـهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللَّـهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ ۚ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ ﴿٣٦﴾

অর্থ: “আর অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল পাঠিয়েছিলাম এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র ‘ইবাদত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। অতঃপর তাদের কিছু সংখ্যককে আল্লাহ্‌ হিদায়েত দিয়েছেন, আর তাদের কিছু সংখ্যকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল; কাজেই তোমরা জমিনে পরিভ্রমণ কর অতঃপর দেখে নাও মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কী হয়েছে?” [সূরা আন নাহল ১৬ : ৩৬]

কুরআনের অন্যত্র এসেছে,

﴿إِنَّآ أَرۡسَلۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ بَشِيرٗا وَنَذِيرٗاۚ وَإِن مِّنۡ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيهَا نَذِيرٞ ٢٤ ﴾ [فاطر: ٢٤]

অর্থ: “নিশ্চয় আমি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে; আর এমন কোনো উম্মত নেই যার কাছে গত হয়নি সতর্ককারী”। [সূরা ফাতির ৩৫ : ২৪]

অপর এক আয়াতে নবীগণের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে,

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا

অর্থ: “আর আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ের ফয়সালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোনো (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্টতায় পতিত হল”। [সূরা আল্-আহযাব: ৩৩: ৩৬]

অতএব ইসলামী দা‘ওয়াতের কাজ নবী-রাসূলগণের। তাঁদের অবর্তমানে এ দায়িত্ব সকল মুসলিম উম্মাহর উপর বর্তায়। আজকাল ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাহায্যে খুব সহজে স্বল্প সময়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যে কোন ম্যাসেজ পৌঁছানো যায়। সেই হিসেবে ইসলামের দাওয়াতও এই মিডিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছিয়ে দেওয়া দরকার। বিশেষ করে মজলুম মুসলমানদের বাস্তব চিত্র উম্মাহর সামনে পেশ করা দরকার। ফলে দ্বীন প্রচারের জন্য ইসলামে মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

দুই. মিডিয়া হচ্ছে সহীহ আকীদা-বিশ্বাস প্রসারের মাধ্যম
পৃথিবীতে প্রেরিত মহান আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে মনোনীত সকল নবী-রাসূলগণ মানুষের আকীদাহ-বিশ্বাস সংশোধনের প্রতি সর্বদা আহ্বান জানিয়েছেন। কেননা নূহ আলাইহিস সালামের সময়কাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন মূর্তিপূজা, অগ্নিপূজা, আল্লাহর সাথে বিভিন্ন সত্তার অংশীদার স্থাপন করছিল। তাই নবী-রাসূলগণ তাদের সেসব কর্ম ত্যাগ করে এক আল্লাহ্‌র ইবাদতে আহ্বান জানিয়েছেন। কুরআনে এসেছে,

﴿ لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ فَقَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓ إِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ ٥٩ ﴾ [الاعراف: ٥٩]

অর্থ: “অবশ্যই আমরা নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের কাছে। অতঃপর তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্‌র ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই। নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর মহাদিনের শাস্তির আশংকা করছি”। [সূরা আল্-আ’রাফ ৭ : ৫৯]

একজন মানুষের জীবনে বিশুদ্ধ আকীদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আকীদার ভিন্নতা দেখা দেওয়ায় মুসলিমগণ শী‘আ, সুন্নী প্রভৃতি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আকীদা শুদ্ধ না হলে বিশুদ্ধ ইসলাম জীবনে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

আমাদের দেশে মানুষের মাঝে এ বিষয়ের খুবই অভাব রয়েছে। মিডিয়ার সাহায্যে আকীদা সম্বলিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সেমিনার, প্রশ্নোত্তর প্রভৃতির মাধ্যমে মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ আকীদা বিশ্বাস জাগ্রত করা সম্ভব। মানুষ যা সত্য হিসেবে জানে এবং মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সেটা অন্যকে জানানো তার ঈমানী দাবী। কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, এক আল্লাহ্‌ আছেন, তার ইবাদত করতে হবে, তার সামনে একদিন সকল কার্যক্রমের হিসাব দেওয়ার জন্য দাঁড়াতে হবে, তবে সে অনুসারে কাজ করা যে দরকার এ ধরনের বিশ্বাস আকীদার অংশ বিশেষ।

‘হাদিসে জিবরাঈল’-এ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকীদা বলতে ঈমান, ইসলাম, ইহসান প্রভৃতিকে বুঝিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইসলাম হলো: এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্‌ এক ও অদ্বিতীয় এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রাসূল। সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রমজান মাসে সাওম পালন করা, সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করা। তখন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এর প্রশ্ন করা এবং উত্তর সত্যায়ন করাতে আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ঈমান হলো আল্লাহ্‌, ফেরেস্তাগণ, আসমানি গ্রন্থসমূহ, রাসূলগণ, পরকাল ও তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। তারপর জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইহসান হলো, তুমি আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে এমনভাবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ, যদি তুমি তাঁকে নাও দেখ, নিশ্চয়ই তিনি তোমাকে দেখছেন। [সহীহ মুসলিম]

সুতরাং বর্তমান এই ফেতনার যুগে মিডিয়ার মাধ্যমে সহীহ আকীদার প্রচার-প্রসার খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।

তিন. মিডিয়ার মাধ্যমে দ্বীনি ও কুরআনী শিক্ষার প্রসার
মানবজাতিকে আলোর দিশা দিতে গাইডবুক হিসেবে যে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন তার নাম হলো ‘আল-কুরআন’। এটি এক ঐশী গ্রন্থ, যা সময় ও যুগের চাহিদার আলোকে সুদীর্ঘ তেইশ বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর নাযিল হয়েছে। এতে মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির সব উপায় বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন,

﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ٨٩﴾ [النحل: ٨٩]

অর্থ: “আর আমরা আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ”। [সূরা আন-নাহল ১৬ : ৮৯]

এ ঐশী বাণী সংরক্ষণের দায়িত্ব মহান আল্লাহ্‌ নিজেই নিয়েছেন। এর প্রতিটি হরফ অধ্যয়নে রয়েছে অসংখ্য সওয়াব। এর শিক্ষা মানব জীবনে বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শিক্ষা প্রসারের গুরুত্ব দিতে গিয়ে বলেছেন,

خيركم من تعلم القران وعلمه

অর্থ: “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়”। [সহীহ বুখারী বাবু খাইরুকুম মান তা‘আল্লামাল কুরআনা ওয়া‘আল্লাহ্‌- হাদিস নং:- ৫০২১]

মহান আল্লাহ্‌ মানুষকে এ ঐশী গ্রন্থ শিক্ষা দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অসংখ্য সাহাবী তাদের বক্ষে কুরআনের বাণী সংরক্ষণ করেছিলেন। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন,

﴿ ٱلرَّحۡمَٰنُ ١ عَلَّمَ ٱلۡقُرۡءَانَ ٢ ﴾ [الرحمن: ١،٢]

অর্থ: “আর-রাহমান। তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন”। [সূরা আর-রাহমান : ১, ২]

সুতরাং মিডিয়ায় কুরআনের শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে কুরআন শিক্ষার জন্য ভালো ও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা। যার মাধ্যমে পৃথিবীর কোটি কোটি দর্শক স্বল্প সময়ে তা আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়। সাধারণত মিডিয়ায় এ ধরনের কার্যক্রম তেমন বেশি দেখা যায় না বিধায় ইসলামী মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামী খেলাফত থাকলে এগুলোর বাস্তবায়ন খুব সহজেই হয়ে যেত।

চার. মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামী সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রচার-প্রসার করা
সংস্কৃতি মানুষের অন্যতম অনুষঙ্গ। যা মানুষকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলে। অতএব মানুষ সঠিক শিক্ষা লাভ করতে হলে সংস্কৃতির দ্বারস্থ হতে হয়। ইসলামের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে যা ইসলামী আকীদা সম্বলিত মানব কল্যাণে নিয়োজিত। আল্লাহ্‌ তা‘আলা প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরব দেশে এমন এক সময়ে পাঠিয়েছিলেন, যখন সাহিত্য সংস্কৃতিতে তারা ছিল অগ্রসর। তাই তাঁর উপর নাযিলকৃত মহাগ্রন্থ আল-কুরআনকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও উন্নত সাহিত্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মানুষের সাংস্কৃতিক জীবন কীভাবে পরিচালিত হবে, সে সম্পর্কে কুরআনে রয়েছে দিক-নির্দেশনা। ইসলামী শরী‘আহকে উপেক্ষা না করে যে সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইসলামের কল্যাণে চালু হয়, তাই ইসলামী সাহিত্য ও সংস্কৃতি।

মিডিয়ায় ইসলামী সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ মিডিয়ায় একটি বড় সময় জুড়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে যদি মিডিয়াতে বিশাল ইসলামী সাহিত্য ভাণ্ডার থেকে চর্চা করা হয়, তবে মানুষ সঠিক পথের দিশা পাবে। অনুরূপভাবে ইসলামী সংস্কৃতি সম্পর্কেও মানুষ জানতে পারবে। জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে সংস্কৃতির অনুশীলন করবে। আমাদের দেশে জন্মদিন, খৎনা অনুষ্ঠান, মৃত্যুদিবস, দু‘আ অনুষ্ঠান ইত্যাদি ইসলামী সংস্কৃতি হিসেবে মনে করা হয়। অথচ এসব বিষয়ে ইসলামের রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিধান, যা অনেকাংশে শরী‘আহ সম্মত নয়। তাই আমাদেরকে মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামী সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রচার-প্রসার আরো বাড়িয়ে দিতে হবে।

পাঁচ. মিডিয়ার মাধ্যমে বিনোদন ও চেতনা জাগানো সঙ্গীত ইত্যাদির প্রচার-প্রসার করা
আজকাল যুবক শ্রেণির নিকট মিডিয়া অন্যতম রসদ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ঘরে-বাইরে এমনকি সফরেও তারা মিডিয়ার সাহায্যে বিনোদন করে থাকে। বিভিন্ন কৌতুক, সঙ্গীত যা দেশপ্রেম, আল্লাহ ও তাঁর নবীর ভালবাসায় উদ্বুদ্ধ করে এমন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ইসলামী মিডিয়ায় প্রচারিত হয়ে থাকে। অথচ এসব বিষয়ে ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। তবে ইসলাম বিনোদনের ক্ষেত্রে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে নিষেধ করে। ফলে বিনোদনের ক্ষেত্রে এসব পরিহার করতে হবে। এমন আমোদ-প্রমোদ জাতীয় বিষয় যা ইসলাম সমর্থন করে তা মিডিয়াতে প্রচার-প্রসার করা। যেমন জিহাদের চেতনা জাগানো সঙ্গীত, কবিতা , গল্প ইত্যাদি এ জাতিয় আরো যা হতে পারে।

ছয়. মিডিয়ার মাধ্যমে মানব কল্যাণের ফিকির ছড়িয়ে দেওয়া
ইসলামের সকল কার্যক্রম মানব কল্যাণে নিয়োজিত। কল্যাণকর সব কিছু ইসলাম মানুষের জন্য বৈধ করেছে। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ বিদ্যমান রয়েছে। কেউ ধনী, কেউ গরীব, আবার কেউ প্রতিবন্ধী, কেউবা সুবিধাবঞ্চিত, কেউ এতিম, কেউবা নারী, কেউবা অভাবগ্রস্ত প্রমুখের কল্যাণ সাধন করেছে ইসলাম। মানবাধিকারের ক্ষেত্রে ইসলাম এতই গুরুত্ব দিয়েছে যে, এটাকে ফরজ সাব্যস্ত করেছে।

মহান আল্লাহ্‌ বলেন,

﴿ فَ‍َٔاتِ ذَا ٱلۡقُرۡبَىٰ حَقَّهُۥ وَٱلۡمِسۡكِينَ وَٱبۡنَ ٱلسَّبِيلِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ لِّلَّذِينَ يُرِيدُونَ وَجۡهَ ٱللَّهِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٣٨ ﴾ [الروم: ٣٨]

অর্থ: “অতএব আত্মীয়কে দাও তার হক এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। যারা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি কামনা করে তাদের জন্য এটা উত্তম এবং তারাই তো সফলকাম”। [সূরা আর্-রূম ৩০ : ৩৮]

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,

﴿ ۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗا وَبِذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡجَارِ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡجَارِ ٱلۡجُنُبِ وَٱلصَّاحِبِ بِٱلۡجَنۢبِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخۡتَالٗا فَخُورًا ٣٦ ﴾ [النساء: ٣٦]

অর্থ: “আর তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত কর ও কোন কিছুকে তাঁর শরীক করো না; এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীকে”। [সূরা আন-নিসা ৪ : ৩৬]

অন্য আয়াতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সরাসরি নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে:

﴿ ۞إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُ بِٱلۡعَدۡلِ وَٱلۡإِحۡسَٰنِ وَإِيتَآيِٕ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَيَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡبَغۡيِۚ يَعِظُكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٩٠ ﴾ [النحل: ٩٠]

অর্থ: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ আদল-ন্যায়পরায়ণতা, ইহসান-সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর”। [সূরা আন-নাহল ১৬ : ৯০]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«خَيْرُ النَّاسِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ»

অর্থ: “মানুষের মধ্যে সেই উত্তম যে মানুষের কল্যাণ করে”। [ত্বাবরানী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, নং ৫৭৮৭]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুঃখী ও অভাবী মানুষের সাহায্যার্থে সর্বদা এগিয়ে আসতেন। নিজেকে নিবেদিত করতেন। কুরআনের অন্যত্র যাকাত আদায় করে গরীবদের মাঝে বিতরণের জন্য মহান আল্লাহ্‌ বলেন,

﴿ وَفِيٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ حَقّٞ لِّلسَّآئِلِ وَٱلۡمَحۡرُومِ ١٩ ﴾ [الذاريات: ١٩]

অর্থ: “আর তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে ঝাঞ্চাকারী ও বঞ্চিতের হক”। [সূরা আয-যারিয়াত ৫১ : ১৯]

অন্য আয়াতে এসেছে,

﴿ خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا ١٠٣ ﴾ [التوبة: ١٠٣]

অর্থ: “আপনি তাদের সম্পদ থেকে ‘সদকা’ গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন”। [সূরা আত-তাওবাহ ৯ : ১০৩]

মিডিয়া মানুষের মাঝে এ মহতী কাজ তথা মানব কল্যাণে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য উৎসাহ যোগাতে পারে। এছাড়াও গরীব-অসহায়দের সাহায্যার্থে মিডিয়ার মাধ্যমেও এগিয়ে আসতে পারে। মানব কল্যাণের গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচনা, লেখনী ও বাস্তব প্রামাণ্য চিত্র প্রচার করতে পারে। এসব বিষয় চিন্তা-ফিকির করলে দেখা যায় যে, মিডিয়ার মাধ্যমেও মানব কল্যাণের অনেক কাজ আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব।

সাত. মিডিয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের মাঝে ঐক্য গড়ে তোলা
মুসলিম এক শ্রেষ্ঠ উম্মাহ। এদের আল্লাহ এক, রাসূল এক, আসমানি গ্রন্থ একটি, সে হিসেবে দীনের নাম ইসলাম। মানুষের মাঝে কোনো ভেদাভেদ নেই। শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি তাকওয়া। দেশ থেকে দেশান্তরে মুসলিমগণ বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত থাকলেও তাদের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন হলেও মূলসূত্রে তাদের মাঝে ঐক্য বন্ধন স্থাপনে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

মহান আল্লাহ্‌ বলেন,

﴿ وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ وَٱذۡكُرُواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ إِذۡ كُنتُمۡ أَعۡدَآءٗ فَأَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوبِكُمۡ فَأَصۡبَحۡتُم بِنِعۡمَتِهِۦٓ إِخۡوَٰنٗا ١٠٣ ﴾ [ال عمران: ١٠٣]

অর্থ: “আর তোমরা সকলে আল্লাহ্‌র রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়ো না। আর তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ স্মরণ কর, তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে”। [সূরা আলে-ইমরান ৩ : ১০৩]

আট. মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধ করা
ইসলাম বিদ্বেষীরা মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মিডিয়ার সাহায্যে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে অপ-ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। ফলে মানুষের মাঝে সন্দেহ ও সংশয়  সৃষ্টি হচ্ছে। তারা ইসলামকে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মানবাধিকার শূন্য, অচল জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রচারণা চালায়। ইসলামপন্থীদের মাঝে অর্থের লোভ দেখিয়ে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার নামে বৃত্তি দিয়ে তাদের মগজকে রীতিমত ধোলাই করছে। এমতাবস্থায় তাদের এসব প্রতারণা ও ধোঁকা থেকে মানুষকে বাঁচাতে হলে ইসলামী মিডিয়ার কোনো বিকল্প নেই।

সবচেয়ে বেশি আফসোস হয় এক শ্রেণির দরবারী আলেমদের উপর, তারা এখন রীতিমত জঙ্গিবাদের স্লোগান দিয়ে জিহাদের অপ-প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি যে, তারা এখন বিভিন্ন মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সফর করতেছে তাদের জিহাদ বিরোধী চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়ন করার জন্য। তাদের মিশন হচ্ছে জঙ্গিবাদের স্লোগান দিয়ে জিহাদ বিরোধী মানসিকতার বীজ রোপণ করা। এ বিষয়ে মগজ ধোলাইর জন্য তারা বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রচারণা গুলো সরাসরি, প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক্স ইত্যাদি মাধ্যমে প্রচার করে যাচ্ছে। সেই তুলনায় আমরা একটু চিন্তা করে দেখি তো ভাই? মিডিয়াতে আমাদের প্রকাশনা ও প্রচারণার পরিমাণ কতটুকু? হয়ত অনেকে মনে করতে পারেন আমরা তো সংখ্যায় খুবই কম। কী করে সম্ভব তাদের মোকাবেলা করা? এই ধারণা যারা পোষণ করি তারা ভুলের মধ্যে আছি। কারণ ইসলামের শুরুর যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত ইতিহাস তালাশ করলে দেখা যায় যে, মুসলমানদের সংখ্যা সর্বযুগে কমই ছিল। আর এই কম সংখ্যককেই আল্লাহ তা’আলা বেশি সংখ্যকের উপর বিজয় দান করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন:

كَم مِّن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللّهِ وَاللّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ

অর্থ: “কত ক্ষুদ্র দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী হয়েছে আল্লাহর হুকুমে। আর যারা ধৈর্যশীল আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন”।  [সূরা বাকারা ২:২৪৯]

অতএব ভাই আমরা সংখ্যায় কম এই হীনমন্যতা রাখা যাবে না। আমাদের সাথে আছে কুল কায়েনাতের স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলা। তাই আমাদের চেয়ে শক্তিশালী পৃথিবীতে আর কেহ নেই। যেহেতু আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। সুতরাং এখন থেকে আমরা যে যেই সেকশনে কাজ করি খুব গুরুত্বের সাথে করব এবং বেশি পরিমাণে করার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে মিডিয়ার মাধ্যমে সহীহ দ্বীন প্রচার-প্রসার করার তাওফিক দান করুন, আমীন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করার তাওফিক দান করুক। আমাদের মুজাহিদ ভাইদেরকে সব জায়গায় কাফেরদের ওপর বিজয়ী হওয়ার তাওফিক দান করুন। সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে আ’মালের উন্নতি করার তাওফিক দান করুন। জিহাদ ও শাহাদাতের পথে ইখলাসের সাথে অগ্রসর হওয়ার তাওফিক দান করুন। পরকালে আমাদেরকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন।

প্রিয় ভাইয়েরা, আমাদের আজকের মজলিস এখানেই শেষ করছি। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।

আমরা সকলে মজলিস থেকে উঠার দোয়া পড়ে নিই।

 

سبحانك اللهم وبحمدك،أشهدأن لاإله إلا أنت،أستغفرك وأتوب إليك

وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين

وآخردعوانا ان الحمد لله ربالعالمين

 

*****************

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الفردوس للإنتاج الإعلامي
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশন
In your dua remember your brothers of
Al Firdaws Media Foundation
5 visits · 1 online

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen + 6 =

Back to top button