Bengali Translation || ধারাবাহিক “আলোর বাতিঘর” সিরিজ-৫ জাজি’র রণক্ষেত্র (দ্বিতীয় পর্ব) || ইমামুল মুজাহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Mediaتـُــقدم
পরিবেশিত
Presentsالترجمة البنغالية
বাংলা ডাবিং
Bengali Translationبعنوان:
শিরোনাম:
Titled
معركة جاجي- الجزء الثاني- الحلقة- ٥ من سلسلة قناديل من نور
ধারাবাহিক “আলোর বাতিঘর” সিরিজ-৫
জাজি’র রণক্ষেত্র
(দ্বিতীয় পর্ব)”
Light of Lighthouse”
series-5
Battlefield Of Jazi
(Second Part)
للشيخ أسامة بن لادن – رحمه الله
ইমামুল মুজাহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ
By Sheikh Usamah Bin Laden Rahimahullah
للمشاهدة المباشرة والتحميل
সরাসরি দেখুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Viewing and Downloading
লিংক-১ : https://justpaste.it/jazir_ronokhetro_part-2
লিংক-২ : https://noteshare.id/e3kcVde
লিংক-৩ : https://web.archive.org/web/20230521…okhetro_part-2
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20230521…are.id/e3kcVde
اصلي معیار
FULL HD (439.5 MB)
মূল রেজুলেশন [৪৩৯.৫ মেগাবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/2wL8edxxQX6Rb4F
লিংক-২ : https://archive.org/download/alor-batighor_5/AlorBatighor_-5.mp4
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy7d6cc20468e64933ac2e5eff6be4229c
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=z4p0f2m7q8
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/5f476aed-d8be-4b01-8086-96ab2b1a93fd/cdf0e4829013c61010cc3e60a279be57389837bce86764a167fbfb92dbcaebdd
روابط الجودة العالية
HQ 1080 (331.7 MB)
১০৮০ রেজুলেশন [৩৩১.৭ মেগাবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/DWHrcX8SLR9DHQo
লিংক-২ : https://archive.org/download/alor-batighor_5/AlorBatighor-5-1080.mp4
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy8136874b89964a09a70300b0341dd721
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=d3b6c1d8h8
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/a0ae6fdf-a9a3-4bce-b74c-5eafb7bdbee2/f6ae7ba9a6e0cd77ba9d27c862c563f8522395617f14c65dc1dff9abbbc40982
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/bpti5oso9moadsq/AlorBatighor_-5_-_JajirRonokhetro_-_2nd_Part_F-41708_1080.mp4/file
روابط الجودة المتوسطة
MQ 720 (147.5 MB)
৭২০ রেজুলেশন [১৪৭.৫ মেগাবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/LwxmyMpTamxa9PQ
লিংক-২ : https://archive.org/download/alor-batighor_5/AlorBatighor-5-720.mp4
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy30505b6f560e4e9290cc454141c7062b
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=a1o5h0x2w5
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/697e85f1-1805-4325-b25d-ac218162d3ac/95af51553349d0ec09907bc3f71b5eece7a2887033873f2bfe1fe74bddc3af92
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/ly5nw4vdq4wcpj5/AlorBatighor_-5_-_JajirRonokhetro_-_2nd_Part_41708_F-720.mp4/file
روابط الجودة المنخفضة
LQ 360 (41.4 MB)
৩৬০ রেজুলেশন [৪১.৪ মেগাবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/Bi5aoJzPos7mP3D
লিংক-২ : https://archive.org/download/alor-batighor_5/AlorBatighor-5-360.mp4
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy2ef0898d26a64338859dec0fd17cbf4e
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=f7g4z4l9j5
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/4cf964c2-2a90-4c4c-8f05-20502a19748f/36e9a895a0413bea186bf54ecf42a6a4ed93f2cc440dd9c0b007fb13230df956
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/m1p6u…F-360.mp4/filehttps://jmp.sh/QzMKU6CB
روابط جودة الجوال
Mobile Qoality (97.8 MB)
3GP রেজুলেশন [৯৭.৮ মেগাবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/Tp2wQXfHS2FsN39
লিংক-২ : https://archive.org/download/alor-batighor_5/AlorBatighor-5-.3gp
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy7a88e2b7cb194aee8aae0b4d14a7a794
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=c7e8f8w9k9
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/9c12d570-4c91-408b-aa96-cf7d21239881/16cb2371011e755633c5b93ae5b07ae32cf53431609f98254b0def8649af6125
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/o8i6k…_Part.3gp/file
روابط بي دي اب
PDF (747 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৭৪৭ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/SNipXbTDWRnF3AM
লিংক-১ : https://archive.org/download/alor-batighor_5/AlorBatighor-5.pdf
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy83fab512ae6b42ebb4bea3f16963c72a
লিংক-৩ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=k7d0e0o9h2
লিংক-৪ : https://drive.internxt.com/sh/file/8fcf8b9d-4773-4e57-a059-c4b2d935f0eb/a04f81affaf9e401f3a320f63e52ddd9241170725e2340042f3d72bcf5eb7aa7
লিংক-৫ : https://www.mediafire.com/file/0zjmcazu1n9qa2t/41708pdf.pdf/file
روابط ورد
Word (1.1 MB)
ওয়ার্ড [১.১ মেগাবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/igL99bZwrReKSCn
লিংক-২ : https://archive.org/download/alor-batighor_5/AlorBatighor-5-.docx
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy86e0fa7b83064e5faf9d59f3049ce697
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=s3v4y6q0s0
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/47d3bdd8-b807-463f-8366-88116dddc38f/1ce8d632a8a3f68eea20e6c3633d051c8a4124ed62bcb4b9efdfc23e606a7ff1
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/50r7g5hurddqwga/41708doc.docx/file
روابط الغلاف- ١
book Banner [678 KB] বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [৬৭৮ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/BiQkERBprGMDfyM
লিংক-২ : https://archive.org/download/alor-batighor_5/AlorBatighor-5-cover.png
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qyc1df677d64ee4ab9aa2d6dc746b5c485
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=e5p7a0g5c9
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/ff1167f3-b1dd-4d8e-a8f3-7b4e732378b7/a22cc0d40c2dd0102e8348df92f44fb9c36e52172181d12fac534b94dda1fc6f
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/view/nlk79…cover.png/file
روابط الغلاف- ٢
Banner [274 KB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [২৭৪ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/wHHH8cXSLnxYJqM
লিংক-২ : https://archive.org/download/alor-batighor_5/AlorBatighor-5-Banner.png
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy6438894143d847b48943d5025cacd939
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=t7o0y3w5l6
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/95eee58b-6084-4e15-9b5e-0a078593814a/90d4b688e41d9a419c5efb0234d7b83b2854f4de81d77eecba455ab7115832af
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/view/mget7tozusv7w5a/41708_banner.png/file
=============
ধারাবাহিক “আলোর বাতিঘর” সিরিজ-5
জাজি’র রণক্ষেত্র
(দ্বিতীয় পর্ব)
শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ
অনুবাদ ও প্রকাশনা
–মূল প্রকাশনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য–
মূল নাম:
معركة جاجي- الجزء الثاني- الشيخ أسامة بن لادن رحمه الله – الحلقة 5 من سلسلة قناديل من نور.
ভিডিও দৈর্ঘ্য: ০১:১০:১৮ মিনিট
প্রকাশের তারিখ: শাওয়াল, ১৪৪১ হিজরি
প্রকাশক: আস সাহাব মিডিয়া
بسم الله الرحمن الرحيم
শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“আমাদের ফিলিস্তিনী ভাইদের প্রতি! আপনাদের সন্তানদের রক্ত তো আমাদেরই সন্তানদেরই রক্ত। আর আপনাদের রক্ত তো আমাদেরই রক্ত। রক্তের বিনিময়ে রক্ত ঝরানো হবে, আর ধ্বংসের বিনিময়ে ধ্বংস চালানো হবে। মহান আল্লাহকে সাক্ষী করে বলছি, আমরা আপনাদেরকে ভুলে যাবো না। যতদিন না সাহায্য আসে, অথবা আমরা সেই স্বাদ আস্বাদন করি যা আস্বাদন করেছিলেন হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু”।
শাইখ আতিয়াতুল্লাহ লীবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“জিহাদের মাধ্যমেই আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করবেন। সংশোধন করবেন পুরো উম্মাহকে”।
শাইখ আবু মুসআব আয-যারকাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“আল্লাহর সাহায্য নিয়ে বলছি, আমার সর্বস্ব দিয়ে আপনার সামনে সমাজের চিত্র স্পষ্ট করে তুলব”।
শাইখ আবু হামজা জর্দানী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“আল্লাহর অনুগ্রহে মুজাহিদদের কাছে যে স্বার্থ ও মনোবল থাকে, তা কাফেরদের কাছে থাকে না। আমাদের নিহতরা যায় জান্নাতে আর তাদের নিহতরা জাহান্নামে”।
মোল্লা দাদুল্লাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“সত্যের জন্য অকাতরে জীবন দেব, তবু বাতিলের কাছে নত হব না”।
শাইখ আবুল লাইস আল-লীবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“উম্মাহর অনেক ভারী বোঝা বহন করতে হয় আমাদের”।
শাইখ আবু রুসমা ফিলিস্তিনী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“শাইখ আবু কাতাদাহ তেমন বড় কিছু করেননি। তিনি শুধু হক কথা বলতেন”।
শাইখ দোস্ত মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“আমরা আলেমদের উদ্দেশে বলব, আপনারা ইলম অনুযায়ী আমল করুন। কারণ আলেমরা নবীদের ওয়ারিশ”।
শাইখ আব্দুল্লাহ সাইদ রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“জিহাদের মাধ্যমেই উম্মাহ জীবন লাভ করবে। আল্লাহ বলছেন,
‘হে ঈমানদারগণ, আপনারা আল্লাহ ও রাসুলের ডাকে সাড়া দাও, যখন আপনাদেরকে ঐ কাজে ডাকে, যা আপনাদেরকে জীবন দান করবে’”।
শাইখ আবু উসমান আশ শিহরী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে এ মহান নেয়ামতের মূল্যায়ন করুন। হে আল্লাহর বান্দা, নিজেকে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ে অভ্যস্ত করে তুলুন”।
শাইখ আবু তালহা জার্মানী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“আমরা জিহাদ করি আর বিজয়ের গান গেয়ে উম্মাহর মাঝে প্রাণ সঞ্চার করি”।
শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল-লীবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“প্রিয় পিতা, বিচ্ছেদের পরেই তো সাক্ষাৎ পর্ব আসে”।
শাইখ মুস্তফা আবু ইয়াযিদ রহিমাহুল্লাহ বলেন,
‘আপনাদের সাথে মিলিত হতে চাই, যাতে আপনাদের ঈমান থেকে নূর গ্রহণ করতে পারি”।
************
একটি পঙক্তি-
“অস্ত্র হাতে নাও আর শহিদদের পথে পা বাড়াও।
গোলাপটিকে তাজা রাখতে পানির বদলে রক্ত ঢেলে দাও”।
***************
ভূমিকা
মূল বক্তব্য বুঝার জন্য কিছু তথ্য জেনে রাখা দরকার –
১. সোভিয়েতের বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তান থেকে দুইটি পথে মুজাহিদদের সাহায্য আসতো। মোট সাহায্যের ৬০ ভাগ এই দুইটি পথে – জাওয়ার ও জাজি’র পথে আসতো। এর মধ্যে খোস্তের দক্ষিণাঞ্চলের জাওয়ার রুটটি জালালুদ্দিন হাক্কানি রহিমাহুল্লাহর নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর জাজি’র নিয়ন্ত্রণ ছিল সাইয়াফের হাতে।
স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে এই দুইটা পথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই সোভিয়েত বাহিনী তাদের উপরস্থদের কাছে এই দুই পথ আক্রমণ করে বন্ধ করার জন্য বাজেট চেয়েছিল।
২. আফগান যুদ্ধের পর শাইখ উসামা ভবিষ্যতের যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষিত সৈন্য প্রস্তুতির আকাঙ্ক্ষা থেকে শুধুমাত্র আরবদের নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করতে চেয়েছিলেন। এর স্বপক্ষে যুক্তিযুক্ত কারণও ছিল। এই লক্ষ্যেই আল-মাসাদা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল।
৩. আব্দুর রাসুল সাইয়াফ আফগান জিহাদের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় ও মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইসলামি শরিয়াহ’ বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীতে ‘ইত্তেহাদ আল ইসলামী’ নামে দল গঠন করেন।
আফগান নেতাদের মধ্যে আব্দুর রাসুল সাইয়াফ সৌদি প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। শাইখ উসামা ১৯৮৪ সালের কোন এক সময়ে সাইয়াফের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং জাজিতে ক্যাম্প স্থাপনের অনুমতি চান।
৪. ১৯৮৫ সালের শেষভাগে ক্যাম্প তৈরির কাজ শুরু হয়।
৫. ১৯৮৬ সালের ২৪শে অক্টোবর শাইখ উসামা বিন লাদেন এবং আরও এগারো জন মিলে ক্যাম্পের প্রথম তাবু গাড়েন। এই ১১ জনের মধ্যে ২ জন মিশরীয় ছিলেন যাদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক অভিজ্ঞতা ছিল।
১. আবু উবাইদাহ আল-পানশিরি ২. আবু হাফস আল-মিশরি
৬. জাজিতে কাজ চলাকালীন সময়ে শাইখ উসামার সাথে আরব মুজাহিদের ছোট একটি দল ছিল। আযামারি ও সফিক নামে দুজন আরব মুজাহিদ ভাই প্রথম ‘আল মাসাদাহ’ ক্যাম্প এর জায়গাটি আবিষ্কার করেন। জায়গাটি গেরিলা যুদ্ধের জন্য খুবই উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আফগান মুজাহিদরা এখানে পার্মানেন্ট কোন বেস তৈরি করেননি কয়েকটি কারণে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল –
১. জায়গাটি একবারেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছিল।
২. শীতকালে এই জায়গাতে যাওয়ার রাস্তাটি বরফে ঢেকে যেত।
৩. রসদ পৌঁছানো কষ্টকর ছিল।
৪. বাতাস বেশি ছিল।
সমস্যা থাকা সত্ত্বেও শাইখ উসামা জায়গাটিতে একটি পার্মানেন্ট বেস তৈরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। কারণ এই ক্যাম্পটা থেকে সোভিয়েত সৈন্য, তাদের ট্যাঙ্ক, রসদ বহনকারী গাড়ি ও বিমানের গতিবিধি সহজেই লক্ষ্য করা যেত।
শাইখ সাইয়াফের কাছে এখানে একটি পরিখাসহ রাস্তা তৈরির অনুমতি চান।
৭. ১৯৮৭ সালের এপ্রিলের মধ্যে ক্যাম্পে ৭ থেকে ৮ টা ভবন দারিয়ে গিয়েছিল। যোদ্ধা সংখ্যাও প্রায় সত্তরে গিয়ে ঠেকেছিল।
৮. শাইখ উসামা বিন লাদেন বলতেন, ‘মুসলিমরা একসময় গিয়ে জাজি সংঘর্ষে চোখ বুলাবে; আর উপলব্ধি করবে যে, ছোট পরিসরে হলেও এটা ছিল ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক যুদ্ধ। কেননা একটি সুপার পাওয়ারের বিরুদ্ধে হালকা অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত ক্ষুদ্র এক বাহিনী তাদের অবস্থান ধরে রেখেছিল।
৯. শাইখ আরও উল্লেখ করেন, ‘আল্লাহ মুজাহিদদের এমন এক যুদ্ধে রক্ষা করেছিলেন এবং পথ দেখিয়েছিলেন যেখানে রীতিমত গুহায় দিন কাটানো মুসলিমরা তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম এক পরাশক্তির বিরুদ্ধে লড়েছিল। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়ে বদরে-খন্দকে মুসলিমদের বিরাট বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক বিজয় এনে দিয়েছিল। জাজিতে সেই সাহায্য যেন আবার ফিরে এসেছিল’।
১০. সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে জাজি ও জালালাবাদের যুদ্ধ থেকে শাইখ উসামা গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেন। একটি ছিল – প্রশিক্ষণ পূর্ণরূপে সমাপ্ত হওয়ার পরই কেবল মুজাহিদদেরকে অপারেশনে পাঠানো হবে। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে স্রেফ শাহাদাতের তামান্নার উপরে প্রাধান্য দেয়া হবে পেশাদারিত্বকে।
১১. যুদ্ধক্ষেত্রের একটি মানচিত্র –
১. হেডকোয়ার্টারের সীমানা
২. হেডকোয়ার্টার
৩. ক্যাম্প বদর
৪. মিশর ক্যাম্প
★ মুকাদ্দিমা
৫. আরবদের পর্যবেক্ষণ ঘাটি
৬. আব্দুল্লাহ আস সামিয়া এর ঘাটি
৭. আব্দুর রাসুল সাইয়াফ ও শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের ঘাটি
আরব দলের বিমান বিধ্বংসী ইউনিট এর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র
পরিখা
আরব দলের অ্যামবুশ পরিচালনার দিক
এই পথে সোভিয়েত বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছিল
সোভিয়েতের অবস্থানস্থল
প্যারাট্রুপার
এই জায়গাতে বিমান/হেলিকপ্টার থেকে প্যারাট্রুপাররা অবতরণ করেছিল।
তথ্যসূত্রঃ
১. Anne Stenersen – Al-Qaida in Afghanistan-Cambridge University Press (2017) – (পৃষ্ঠা ১৩-২০)
২. Mustafa Hamid_ Leah Farrall – The Arabs at War in Afghanistan-Hurst & Co. (2014) – (পৃষ্ঠা – ৮৯-৯৩)
৩. সাম্রাজ্যের ত্রাস – মাইকেল শইয়ার (Michael Scheuer)
(তথ্যগুলো সম্পাদকদের পক্ষ থেকে যুক্ত করা। কোন তথ্য শাইখের মূল বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক হলে শাইখের বক্তব্যই সঠিক বলে ধরে নিতে হবে – সম্পাদক)
জাজি’র যুদ্ধ
পর্ব – ২
শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহুঃ
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য যিনি মুমিন মুজাহিদদেরকে সম্মানিত করেছেন। আর যারা জিহাদ থেকে পিছিয়ে থেকে তাঁর অবাধ্যতা করছে, তাদেরকে করেছেন লাঞ্ছিত ও অপদস্থ। দুরুদ পাঠ করছি প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি। শান্তি কামনা করছি তার পরিবার ও সাহাবীদের জন্য।
হামদ ও সানার পর…
কিছু ভাইয়ের আবেদনে আফগানিস্তানের জাজিতে সংগঠিত যুদ্ধ নিয়ে আজ কথা বলবো। এ যুদ্ধটি আফগান ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার হক্ব ও বাতিলের চলমান যুদ্ধকে সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছিল।
আমি এই যুদ্ধের কাহিনী বলছি, যাতে উম্মাহর মাঝে আস্থা, মনোবল ও সাহস ফিরে আসে। কারণ দিন দিন বাতিল দলগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ফিলিস্তিনের ক্ষত-বিক্ষত ভূমিতে নিকৃষ্ট ইহুদী জাতি বারবার দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। খৃষ্টানরাও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্রের জাল বুনে যাচ্ছে। এমন একটি সময়ে আমরা জাজি’র যুদ্ধ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে মুসলিমদের মহান বিজয় নিয়ে আলোচনা করছি, যাতে আমাদের মধ্য থেকে দুর্বলতা ও মনোবলহীনতার আচ্ছাদন চিরতরে কেটে যায়। আমরা যেন বন্দিত্বের সেই শিকল ভেঙ্গে ফেলতে পারি, যে শিকল আমাদের কিছু স্বাধীন মুসলিম ভাইদের চিন্তা-চেতনাকে বন্দী করে রেখেছে। অন্য দিকে বিশ্ব-কুফফার সম্প্রদায় তাদের মিডিয়া শক্তি, সামরিক শক্তি, এমনকি মুসলিম ভূখণ্ডে তাদের দোসরদের দ্বারা বিভিন্ন ধরনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে।
এভাবে তারা চক্রান্তের মাধ্যমে আমাদের সন্তানদেরকে হীনমন্যতা, দুর্বলতা ও পরাজিত মনোভাবে অভ্যস্ত করে তুলতে চায়। ইনশাআল্লাহ, এই যুদ্ধের কাহিনী থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, মুসলিম উম্মাহ কতটা শক্তিশালী! কতটা সাহসী! মুসলিমরা যে ফিলিস্তিনসহ সকল মুসলিম রাষ্ট্র থেকে ইয়াহুদি, খ্রিষ্টান এবং ক্রুসেডার আমেরিকাকে বিতাড়িত করতে সক্ষম, তাও স্পষ্ট হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।
যে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ইউরোপ, আমেরিকা ও ইসরাইল প্রচণ্ড ভয় পেত, যে সোভিয়েতের নাম শুনলে তাদের ঘোড়সওয়াররাও কাঁপতো, জাজি’র যুদ্ধে সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন – আফগানী মুসলিমদের অল্প সংখ্যক সৈন্য, সামান্য ট্যাংক আর মিসাইলের কাছে পরাজিত হয়েছিল। এই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে তারা শক্তিধর থেকে শক্তিহীন হয়ে পড়ল। অথচ সোভিয়েতের বিপুল সংখ্যক সৈন্যের তুলনায় মুসলিম সেনারা ছিলো অতি নগণ্য। আসলে সাহায্য ও অনুগ্রহ একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়।
এ জামানার মুসলিমরা খুবই ভীতু। তাদের অন্তরে সাহসের চেয়ে ভয় বেশি। অথচ এই ভয়ের কোন ভিত্তিই নেই। পঞ্চাশ বছর আগে ইংরেজরা যখন ইয়াহুদিদের কাছে ফিলিস্তিন হস্তান্তর করেছিলো, তখন আরব রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিনকে রক্ষা করতে বিদ্রোহ করেছিলো। বিভিন্ন আরব দেশ থেকে দলে দলে সেনারা ফিলিস্তিনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ইয়াহুদিদের তখন সেখানে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন শক্তি ছিলো না। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যখন দেখা গেল যে ইয়াহুদিরা পরাজিত হতে শুরু করেছে এবং ইসরাইল খণ্ড খণ্ড হয়ে যাচ্ছে, তখন আরব শাসকদের পক্ষ থেকে আদেশনামা জারি করা হলো – সেনা প্রধানরা যেন ইয়াহুদি ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা বন্ধ করে।
মূলত এই নির্দেশ ছিল ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে। বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে আব্দুর রহমান ফয়সালসহ অন্যান্য আরব শাসকদের কাছে এই নির্দেশ আসে যে, তারা যেন হামলা বন্ধ করে দিয়ে একটি সাময়িক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। তো সেখানে উল্লেখযোগ্য কোন যুদ্ধই হয়নি। বরং আমেরিকার আদেশেই সেনা প্রধানরা হামলা বন্ধ করে দেয়।
অথচ নির্বোধ ইহুদি নেতা ‘শ্যারন’ মিডিয়ায় এসে বলল, ‘ফিলিস্তিনী ও আরবদেরকে বাস্তবতা উপলব্ধি করে একটি সুনির্দিষ্ট সমঝোতার পথে হাটতে হবে। কারণ, ইজরাইলের সাথে যুদ্ধ করে তাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে’।
আল্লাহর কসম, সে মিথ্যা বলেছে। বাস্তবে সেখানে কোন যুদ্ধই সংঘটিত হয়নি। আল্লাহ যেমন যুদ্ধের আদেশ করেছেন তেমন কোন যুদ্ধই হয়নি। আমরা কিছু কিছু যুদ্ধে আরব শাসকদের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হই। অন্যথায় তাওহীদবাদী বাহিনীর সামনে দাঁড়ানোর শক্তি কার আছে? জীবনের চেয়ে মৃত্যু যাদের কাছে বেশি প্রিয়, তাদের সামনে টিকে থাকার সাধ্য কার আছে?
এক বছর পর ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘ আরব শাসকদেরকে ইসরাইলের সাথে একটি স্থায়ী সন্ধিতে আবদ্ধ হতে বাধ্য করে। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত, এই ২০ বছরের সন্ধিতে ইহুদিরা বেশ প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ইহুদীদেরকে এনে দখলকৃত ফিলিস্তিনের ভূমিতে বাসস্থান করে দেয়। এদিকে তাদেরকে অস্ত্র, রসদ ও তথ্য দিয়ে সাহায্য করছিল ইউরোপ ও আমেরিকা।
অন্য দিকে আরব শাসকরা সব ভুলে বিশ্বকাপ ও প্রেসিডেন্ট কাপ নিয়ে মত্ত ছিল। আর জনগণকে তাদের মৌলিক বিষয়গুলো থেকে দূরে রেখেছিলো। এরই মাঝে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইহুদীরা ফিলিস্তিনের অবশিষ্ট অংশটুকুও দখল করে নেয়। তখন কোন যুদ্ধই হয়নি। কোন যুদ্ধ ছাড়াই তারা তা দখল করে। আর এটি মূলত আরব নেতাদের খেয়ানতের কারণেই হয়েছে। ইহুদীরা তা শক্তি দিয়ে ছিনিয়ে নিতে পারেনি। বরং আমেরিকান চাপে পড়ে হাফিজ আল আসাদ ইহুদীদেরকে ফিলিস্তিন দিয়ে দেয়, বিপরীতে তাকে সিরিয়ার শাসন-ক্ষমতায় বহাল রাখা হয়। 1966 সালের অভ্যুত্থানের পর হাফিজ আল আসাদ সিরিয়ার প্রতিরক্ষা-মন্ত্রী ছিলো।
এই কথাগুলোর দ্বারা আমি এই বিষয়টাই নিশ্চিত করতে চাচ্ছি যে, বর্তমানে সবাই মনে করে যে, আমেরিকা আর ইসরাইল হচ্ছে বিশ্বের সুপার পাওয়ার – বিষয়টা একদমই এমন না। ইমানের বলে বলিয়ান ও মহান রবের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থাশীল মুমিনের সামনে ট্যাংক, কামান আর বন্দুক বারুদের কোন মূল্যই নেই। তবে শর্ত হচ্ছে, আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার আদেশ অনুযায়ী পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এবং আল্লাহ তায়ালার উপর পরিপূর্ণ ভরসা রাখতে হবে।
আগেও বলেছি, আমি এই যুদ্ধের কাহিনী এ জন্য বলছি, যাতে উম্মাহর অন্তর থেকে ভয়-ভীতি দূর হয়। ১৪০৭ হিজরির ২৭ রমযান মোতাবেক ১৯৮৭ সালের ২৫ শে মে বিরাট এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই যুদ্ধের সূচনা হয়। গত রাতে বলেছিলাম, রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সিনিয়র অফিসাররা সোভিয়েতের কাছে একটি বাজেট চায়[1]। মুজাহিদদের জন্য পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে আসা সাহায্যের পথগুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্যই তারা এই বাজেট চেয়েছিল।
কারণ, পাকিস্তান থেকে সেসময় মুজাহিদ ভাইদের মাধ্যমে সাহায্য আসতো অথবা সরাসরি খাবার ও রসদ সামগ্রী দ্বারা সাহায্য করা হত। সোভিয়েত বাহিনীর পক্ষে এটা বন্ধ করা সম্ভব ছিল না। বিশেষ করে কান্দাহারের গাওয়ান্দাক আর পাকতিয়ার জাজি’র পথ দুটি। জাজি’র পথটি ছিল পাকিস্তান থেকে জাজি’র উত্তর দিকের পথটি। আফগানিস্তানে মুজাহিদদের জন্য আসা সাহায্যের ৬০% এই পথে আসত।
সোভিয়েতের বহু সৈন্য মুজাহিদদের সাথে সংঘর্ষে আহত নিহত হচ্ছিল। তাই তারা সীমান্ত-পথগুলো বন্ধ করতে চাইল, যাতে ভিতরের ঘাঁটিগুলো দখল করতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ছিলো যে, এই যুদ্ধে মুজাহিদরাই বিজয়ী হবে। শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ এই যুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন। সেখানে তিনি এই যুদ্ধে বড় বড় কমান্ডারদের শাহাদাতের কথাও উল্লেখ করেছেন। যারা এই যুদ্ধের ইতিহাস পড়েছেন, তারা সাক্ষী যে, আরব মুজাহিদ ভাইদের অনুগ্রহ ছিল অনস্বীকার্য। তারা সর্বদা আগে থাকতেন এবং শত্রুদের উদ্বুদ্ধ করতেন, যাতে তারা নিজে থেকে যুদ্ধ শুরু করে। এভাবেই আরব ভাইদের ক্যাম্পে ২১ দিন লাগাতার যুদ্ধ চলেছিল। এই ক্যাম্পটির নাম ছিল আনসার ক্যাম্প।
আমরা এই বোর্ডটার দিকে লক্ষ্য করলে ঐ অঞ্চল, মুজাহিদ ও শত্রুদের ঘাঁটিগুলো বুঝতে পারবো।
(বোর্ডে অংকন করা একটি চিত্রের দিকে ইশারা করে) এটা আফগানিস্তান, আর এটা হল পাকতিয়া প্রদেশের জাজি জেলা। আর এ হল পাকিস্তানের পার্শ্ববর্তী সীমান্ত। আর এটা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সড়ক, যা দিয়ে যুদ্ধের সরঞ্জাম ও খাবার দাবার আসত। আমরা এই অঞ্চলে এসে এই জায়গায় মুজাহিদদেরকে আর এই দুর্গে শত্রুদেরকে পেলাম। শত্রুরা এই উঁচু পাহাড়ের নিচে বেশ কয়েকটি আস্তানা তৈরি করেছিলো।
এটি একটি প্রসিদ্ধ দুর্গ, যেটাকে চাউনি দুর্গ বলা হয়। এটি প্রায় এক হাজার মিটার দীর্ঘ, আর আধা কিলো চওড়া। আমরা এলাকাটি অনুসন্ধান করে দেখলাম, এটি একটি ঘন বনাঞ্চল। যা তিন হাজার মিটারেরও বেশি উঁচুতে অবস্থিত। যুদ্ধের ময়দানও ছিলো উঁচু জায়গায়।
এই অঞ্চলটিতে শীত কালে তুষারপাত হয়। বুখারী (বাষ্পীয়) নামক উষ্ণতার যন্ত্র ছাড়া ছয় মাস এখানে থাকা অসম্ভব। অর্থাৎ আমাদের ছয় মাসের জন্য উষ্ণতার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা এই জায়গায় মুজাহিদদের এবং শত্রুদেরকেও পেলাম। সেখানে আমরা দুই কিলো তিনশ মিটারের পাহাড়ি এলাকাগুলো জরিপ করে দেখলাম যে, সেখানে মুজাহিদদের কোন ঘাঁটিই নেই, বরং শত্রুদের ঘাঁটি আছে। আমরা তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বললেন; শীতকালে এখানে তুষার পাত হয়, ফলে পথ-ঘাট সব বন্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করে আমাদের জন্য একটা পথ খুলে দিলেন। তাই আমরা হিজাজ থেকে বুলডোজার সহ অনেক ভারি ভারি অস্ত্র সামগ্রী এনে এই পথটির সাথে মিলিয়ে আরেকটি পথ তৈরি করেছি।
জায়গাটি প্রস্তুত করা হয়েছিল এই ভিত্তিতে যে, তা মুজাহিদদের অধীনে থাকবে। কারণ, আরব মুজাহিদদের সংখ্যা এত ছিল না যে, তারা একটি কেন্দ্র জয় করতে পারবে। ১৩৯৯ হিজরি মোতাবেক ১৯৭৯ ঈসায়ীতে জিহাদ শুরু হয়ে ১৪০৫ হিজরি পর্যন্ত চলতে থাকে। আমরা এই কেন্দ্রটি জয় করার পর আরব থেকে আর কেউই আসেনি। তাই আমরা আফগান মুজাহিদদের জন্য মাটির নিচে একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র বানালাম। এর দ্বারা আমাদের উদ্দেশ্যে ছিল তাদের সাথে একত্রে কাজ করা।
আমাদের প্রাথমিক কাজ ছিল, ভারি যন্ত্রপাতি দিয়ে রাস্তা তৈরি করা এবং পাহাড়ে সুড়ঙ্গ খনন করা। যাতে করে মুজাহিদরা শক্তি অর্জন করতে পারে। আমরা সুড়ঙ্গ খননের যন্ত্রপাতিও নিয়ে এসেছিলাম। এক ভাই আমাদের সাথে মক্কা মদিনা সহ বিভিন্ন স্থানে সুড়ঙ্গ খনন করেছেন। তিনি এখানেও জিহাদের প্রতি স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে আমাদের সাথে সুড়ঙ্গ খনন করেছেন। আমাদের খননকৃত সুড়ঙ্গগুলো এখনো পাকতিয়া প্রদেশে অবশিষ্ট আছে।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এই জায়গাটি প্রস্তুত করার পর বুঝতে পারলাম, মুজাহিদ ভাইদের এর প্রতি কোন আগ্রহ নেই। কারণ, এখান থেকে মুজাহিদদের কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় তের কিলো মিটার, অথচ আমারা সুড়ঙ্গ খনন করে ফেলেছিলাম ক্যাম্প থেকে ১৪ কিলো মিটার দূরে।
এই ক্যাম্পের নাম ‘মা’সাদাহ’ রাখার কারণটা বলি। শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ অধিকাংশ সময় এখানে আমাদের সাথে ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণ করতেন। সপ্তাহের যেকোন একদিন মা’সাদার উদ্দেশ্যে আমাদের সাথে বের হতেন। তখন আমরা তাঁর সাথে এই জায়গাটির নাম নিয়ে পরামর্শ করি। তখন এক সম্মানিত সাহাবির একটি কবিতা আমার মনে আসল, যাতে তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, মদিনা, মুহাজির ও আনসার সাহাবিদের প্রশংসা করেছেন।
مَــنْ سَــرَّه ضَــرْبا يُــمَــعْــمِــعُ بــعــضُهُ
بـعـضـاً كـمـعـمـعـةِ الأَبَـاءِ المُـحْرَقِ
فــلْيــأتِ مَــأْســدَةً تُــسَــنُّ سُــيُـوفُهـا
بـيـنَ المـذادِ وبـيـن جِـزعِ الخَـنْـدقِ
فـي عُـصْـبَـةٍ نَصَرَ الإله نبيه بهم
متى همّت بقوم تصدق
نصل السيوف إذا قصرنا بخطونا
قدما ونوقفها إذا لم تلحق
যে এমন আঘাত দেখতে পছন্দ করে,
যা জ্বলন্ত বাঁশের ন্যায় দ্রুততার সাথে কলরোল সৃষ্টি করে।
সে যেন সেই সিংহপাড়ায় এসে পৌঁছলো,
যেখানে তরবারিগুলোকে শান দেয়া হয় মাযায ও খন্দক-ঢালের মধ্যবর্তী স্থানে।
সেই দলের মাঝে, যাদের মাধ্যমে স্রষ্টা তার নবীকে সাহায্য করেছিলেন।
যখন তারা এমন দলের প্রতি প্রবৃত্ত হয়েছিল, যারা বিশ্বাস করে –
আমরা পায়ে পৌঁছতে ব্যর্থ হলে তরবারি দিয়ে পৌঁছে যাই এবং তরবারি না পৌঁছলে তা থামিয়ে দেই।
জায়গাটি প্রস্তুত হয়ে গেল। প্রস্তুতকালে পাহারা দেয়ার জন্য আমাদের একজন লোকের প্রয়োজন ছিল, বিশেষ করে যখন যন্ত্রপাতি আনতে যেতাম। অবশ্য সেদিন আমাদের সাথে শুধু উসামা আজমরাই ভাই – যিনি বর্তমানে মার্কিন কারাগারে বন্দী আছেন – (আল্লাহ তায়ালা তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন।) এবং আমাদের ভাই শফিক ইব্রাহিম ছিলেন। আর এই দুই যুবক মদিনা মুনাওয়ারার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। আমরা তিনজন মদিনাতে এক সঙ্গেই থাকতাম।
উসামা ভাই মূলত উজবেকিস্তানের বুখারার বলকান প্রদেশের হায়দার এলাকার। আর শফিক ভাই মদিনার, মূলত তিনি সিন্ধুর মানুষ। আর তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছি আমি অধম। এই দুর্গে অবস্থানরত কমিউনিষ্ট ব্রিগেডের সামনে আমরা তিনজন কীই বা করতে পারি? কিন্তু সাহায্য ও অনুগ্রহ তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই, তিনি যাকে চান তাকে দান করেন।
অধিক তুষার পাতের কারণে রাস্তায় চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ল। উষ্ণতা লাভের জন্য আমরা একটা তাবু গাড়লাম। পরদিন সকালে ঘাঁটিতে যাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছিলাম। ঠিক তখনই তায়েফ থেকে রবি ভাই আর মিশর থেকে আবু যাহাব ভাই আসলেন। গত কাল আমাদের একজনের প্রয়োজন ছিল, আর আজ দুইজন উপস্থিত।
আফগান কমান্ডারদের সাথে কথা বলার জন্য তারা বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। তখন আমি ভাইদেরকে বললাম; তাদেরকে ভেতরে চা খেতে নিয়ে আস। আমার উদ্দেশ্য ছিল তাদের সাথে বসে কথা বলা। তারা ভিতরে এসে চা পান করলেন। আসরের সময় হলে আমরা সালাত আদায় করি। তখন ভাই আবু যাহাব আমার সাথে কথা বলা শুরু করলেন। তিনি আমাকে বললেন; আমরা আপনার সাথে বসতে চেয়েছি। অতঃপর যখন অমুক[2] ভাই চলে গেলেন…
মা’সাদাহ কেন্দ্রটি তিনজনের দ্বারা শুরু হয়। আল্লাহর অনুগ্রহে আরও দুজন যুক্ত হয়ে আমরা পাঁচজন হলাম। আলহামদুলিল্লাহ। আবু যাহাব ভাই একজন উত্তম ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কুরআনের অনেকাংশ মুখস্থও করেছেন। আর রবি ভাইও একজন উত্তম ব্যক্তি ছিলেন। আল্লাহ আমাদেরকে ও তাদেরকে কবুল করুন।
এই যে ঘাঁটিটা আমরা নির্মাণ করলাম, এটা যে একদিন একটি কেন্দ্রে পরিণত হবে, তা আমরা কখনো কল্পনাই করিনি। যেমন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন:
إِذْ أَنتُم بِالْعُدْوَةِ الدُّنْيَا وَهُم بِالْعُدْوَةِ الْقُصْوَىٰ وَالرَّكْبُ أَسْفَلَ مِنكُمْ ۚ وَلَوْ تَوَاعَدتُّمْ لَاخْتَلَفْتُمْ فِي الْمِيعَادِ ۙ
“আর যখন তোমরা ছিলে সমরাঙ্গনের এ প্রান্তে আর তারা ছিল সে প্রান্তে অথচ কাফেলা তোমাদের থেকে নীচে নেমে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় যদি তোমরা পারস্পরিক অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে, তবে তোমরা এক সঙ্গে সে ওয়াদা পালন করতে পারতে না।” (সুরা আনফাল ৮:৪২)
আল্লাহর অনুগ্রহে আমাদের নির্মিত এই ঘাঁটি থেকেই সোভিয়েত সেনাদের বিরুদ্ধে মহান যুদ্ধ ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে। এই সংগ্রামে সফলতা শুধু আহলে ইসলামেরই ছিলো। আলহামদুলিল্লাহ।
শুনুন: আজ আপনারা বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন। উম্মাহর ইতিহাসকে লাঞ্ছনা ও অপমান থেকে রক্ষা করে সম্মানের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে দৌড়-ঝাপ করছেন। চিন্তা করলেই বুঝবেন যে, আমরাও উম্মাহর কঠিন অবস্থা পার করেছি। অদূর ভবিষ্যতে উম্মাহর জন্য কল্যাণের বিরাট কোন কিছু দেখতে পাবেন, ইনশাআল্লাহ। সুতরাং সৌভাগ্যবান তো সেই যে বিজয়ের আগেই কাফেলার সাথে যুক্ত হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ বলেন:
لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا ۚ
“অর্থঃ তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যাদা বড় তাদের অপেক্ষা, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে”। (সুরা হাদিদ ৫৭:১০)
পাঁচজনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল মা’সাদাহ ক্যাম্পটি। আমরা আশংকা করতাম, কখন আবার শত্রুরা আমাদের উপর হামলা করে বসে। কারণ এলাকাটি ছিলো ঘন গাছপালা পূর্ণ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। আর শত্রুও ছিলো আমাদের অতি নিকটে। এত নিকটে যে, আমরা তাদের ট্যাংকের আওয়াজ শুনতাম, এমনকি ট্যাংকের সংখ্যাও স্বচক্ষে দেখতে পেতাম।
আমাদের জন্য বিষয়টি ছিল নতুন। আমার সাথে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের যে ছাত্র ভাইয়েরা ছিল, আল্লাহ তাদের বিরাট এক সৌভাগ্য দিয়েছেন। ঐ বিজয়টি তাদের হাতেই হয়েছিল। এ পাহাড়, শত্রুরা এবং পাহাড়ে এ সারি ঠিক একটা নতুন চাঁদের মত, যার দু দিক ছিল ৫ কি. মি. এর চেয়ে বেশি। আমরা এখানেই কেন্দ্র গড়েছিলাম।
শাবানের ১৭ তারিখে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আরও স্পর্শকাতর বিষয় হল: এই কেন্দ্রটি আরব মুজাহিদদের জন্য প্রথম গোপন কেন্দ্র ছিল। প্রথম বারের মত ১৭ শাবানে আরব মুজাহিদ ও শত্রুদের মাঝে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। কিছু আফগানী মুজাহিদ ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে। এটি অন্য বিষয়। আমরা এখন কথা বলবো , ইসলাম ও কুফরের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়কারী সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আফগানিস্তানের যুদ্ধটি সম্পর্কে।
শাবানের যুদ্ধ থেকে আমরা একটি ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে রমযানের মাঝামাঝির সময়ের পর থেকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। আশপাশের সকল দল সাথে নিয়ে, যেমন, সাইয়াফ, হেকমতিয়ার এবং রাব্বানী। ফিল্ড কমান্ডার ও সিনিয়র নেতাদের সাথে বসে তারতীব করলাম যাতে কমিউনিস্টদের হাত থেকে এই জায়গাগুলো মুক্ত করতে যুদ্ধ করতে পারি।
হাজার সংখ্যক শত্রুবাহিনীর এই বিগ্রেডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আর শত্রুরা মুজাহিদদেরকে তাড়াতে এবং সীমানা বন্ধ করতে একটি সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অথচ আমরা তখনো তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।
১৫ রমযান, ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মে। ‘জেট মিগ এবং সুখোই’ নামক দুটি বিমান আরব ও আফগান মুজাহিদদের ঘাটিগুলোর উপর দিয়ে উড়ে আসলো। তখন মুজাহিদরা বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে তাদের মোকাবেলা করে। তারপর লড়াই শেষ হওয়ার পর তাদের চক্রান্তের বিষয়টি আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়।
সে সময়ে বিমানগুলো আসার একমাত্র কারণ ছিল; মুজাহিদদের শক্তিকে লণ্ডভণ্ড করা, যাতে তারা ঘাটিগুলোকে টার্গেট করে বোমা বর্ষণ করতে পারে। প্রথমে তারা ঘাটিগুলোকে চিনে নিলো, যাতে যুদ্ধ শুরু হলেই তারা সেগুলো গুড়িয়ে দিতে পারে। অতঃপর ২৩ রমযান আমাদের একটু উপর দিয়েই দুটি হেলিকপ্টার আসলো, যা দেখে আমরা আরবি-আফগানী সবাই হতভম্ব হয়ে গেলাম। আর এটি ঘটেছিল কুবা নামক পাহাড়ে, যা মা’সাদার পাহাড়ের চেয়েও চার/পাঁচশত মিটার উপরে।
পাহাড়ের চূড়ায় আমরা সাত ভাই ছিলাম। আমাদের মিশন ছিল – তীরন্দাজদের মত করে পাহাড়কে রক্ষা করা। যাতে কোন শত্রু বাহিনী পাহাড়ে উঠতে না পারে এবং মা’সাদা অঞ্চলে হামলা করতে না পারে।
একবার আমরা একটি ক্যাম্পে ছিলাম। তখন হঠাৎ দেখতে পেলাম, খুব নিচ দিয়ে দুটি বিমান আসছে। আমরা বিস্মিত হয়ে গেছি। কারণ আমরা তখন ক্যাম্প পরিদর্শনে ছিলাম। সাথে কোন অস্ত্রও ছিলোনা। শুধুমাত্র আরপিজি ছিলো। অপরিচিত বিমানগুলো হামলা করার জন্য আমরা অবশ্য এক ভাইকে প্রস্তুত করে রেখেছিলাম।
আমরা ভাবলাম যে, যদি আমরা তাকে আঘাত না করি, তবে সে ঘুরে ঘুরে আমাদেরকে আঘাত করতে পারে। তাই আমরা সতর্ক ছিলাম যে, যদি সে আমাদের দিকে আসে তবে আমরা বোমা বর্ষণ করবো। তবে তারা শুধু আমাদের ঘাটিগুলো পরিদর্শন করে চলে গেছে।
এই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য যা আমরা পরে বুঝতে পারলাম, তা হল ঘাটিগুলোকে খুব কাছ থেকেই অনুসরণ করা, এবং ফটোতে না দেখে সরাসরি দেখা। তারপরে খবর আসে যে, কমিউনিস্টদের দুটি সৈন্যবাহিনী আমাদের এলাকার দিকে আসছে। মূলত তারা বাহিনী দুটি হলেও সবাই একই পতাকাবাহী। দুই দল মিলে তাদের সংখ্যা ছিলো আট কিংবা নয় হাজারের মতো। রাশিয়ান সৈন্যদের সবাইও এখানে উপস্থিত ছিলো না। তারা মোট ১২ হাজার সৈন্য হলেও আহত ও নিহতদের সংখ্যা ৪-৫ হাজার।
অবশেষে দিনটি আসলো এবং আমরা যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হতে লাগলাম। তখন এই সৈন্য দলটি আন নাহরাইন নামক একটি এলাকায় পৌঁছালো। তাদের কেউ কেউ দুর্গে প্রবেশ করলো। রমজানের ২৭ তারিখে তারা রকেট লঞ্চার স্থাপন করেছিল এবং একটি কামান আমাদের দিকে তাক করে স্থাপন করেছিলো। সেদিনই তারা আমাদের দিকে একটি রকেট ছোড়ে।
মা’সাদার ভেতরে হুনাইন নামক আমাদের একটি ঘাঁটি ছিল। সেখানের মুজাহিদরা অধিকাংশই ছিলেন সৌদিয়ান। হঠাৎ একটি মিসাইল এসে আমাদের পেছনে কুবা পাহাড়ে আঘাত করে। আমাদের সাহসী মুজাহিদ ভায়েরা এই প্রলয় সৃষ্টিকারী কামানগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত ছিলো। এই রকেট লঞ্চারগুলো একই সাথে চল্লিশটি বোমা ছুড়তে পারে। মিলিটারিদের এসব কামান গোলা ও বর্ষণ দেখে সাধারণ মানুষ বিস্মিত হয়ে পড়ে।
ভাইয়েরা! আল্লাহর কসম করে বলছি, এই ঘটনার কয়েক মিনিট পরেই হঠাৎ দেখতে পেলাম, মা’সাদার আকাশে কালো মেঘ জমলো এবং বজ্রধ্বনি এমন প্রকট আওয়াজের রূপ ধারণ করলো, কসম করে বলছি, আমরা ভুলেই গেলাম যে, ইতি পূর্বে এখানে বোমা বর্ষণ হয়েছিল। কারণ, বজ্রের ধ্বনি বোমার ধ্বনির চেয়েও হাজার গুণ বেশি ছিল। ফলে মুজাহিদ ভাইদের অন্তরে স্বস্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। তারপর মুষলধারে বৃষ্টি হয়। আমরা সবাই আনন্দিত ও নির্ভয় হলাম। এখান থেকেই শুরু হয় কারামত। এই যুদ্ধ পুরোটাই কারামতে ভরপুর ছিল। আমরা যথাস্থানে আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আকবার ! আল্লাহু আকবার !! আল্লাহু আকবার !!!
২৮ রমযানে চরমভাবে যুদ্ধ শুরু হয়। বোমা বর্ষণ ও ঝাঁকে ঝাঁকে বিমান উড়া শুরু করল। দুই মিনিটের চেয়েও কম সময়ে মা’সাদার উপর দিয়ে ২৪ টারও বেশি বিমান উড়ে গেছে এবং এই সংকীর্ণ জায়গায় বোমা নিক্ষেপ করছে।
ভাইয়েরা! মা’সাদার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আয়তন ৪০০ মিটারের চেয়েও কম, এবং দৈর্ঘ্য ৮০০ মিটারের চেয়েও কম। এই সঙ্কীর্ণ জায়গায় রাশিয়ান যুদ্ধ বিমানগুলো এত বিপুল শক্তি দিয়ে কী করতে পারে! আজ পর্যন্ত যারা মা’সাদায় যাচ্ছে তারা অবশ্যই দেখতে পাচ্ছে যে, রাশিয়ান বিমানের আঘাতগুলো এখনো মা’সাদায় রয়ে গেছে।
ভাইয়েরা! আমাদের ঘাঁটিতে বোমা বর্ষণের কারণে কিছু গর্ত হয়ে গিয়েছিল। সেগুলোর ব্যাস ১২ মিটারের চেয়েও বেশি। যারা গিয়েছে তারা দেখতে পাবে গর্তের মধ্যে কী রয়েছে। আবার কোথায় এক ইঞ্চি গর্তও রয়েছে। পাশাপাশি ডিক্স কামান, বার্মিজ মর্টার শেল ও ক্লাস্টার বোমা ইত্যাদিও নিক্ষেপ করছে।
বোমা যেখানেই পড়েছে সেখানেই পুড়ে গেছে। আর ঐ জায়গাটি ছিলো গাছগাছালি বেষ্টিত। সবগুলো গাছই খণ্ডবিখণ্ড হয়ে গিয়েছিল। দ্বিখণ্ডিত হয়নি এমন একটি গাছ পাওয়া দুষ্কর ছিলো। কিন্তু আল্লাহর ফযলে আমরা একটি কৌশল অবলম্বন করলাম। সতর্কতা স্বরূপ আমরা আমাদের ঘাটির নীচে গর্ত করে রেখেছিলাম। ফলে টানা ২১ দিন ধরে ঘন ঘন বোমা বর্ষণের পরেও আল্লাহর রহমতে আমাদের কোন ক্ষতি হয়নি, এবং আমাদের ঘাটিগুলোও নিরাপদ ছিলো।
যুদ্ধের সূচনাকালে আমরা যেই ঘাটিটি ছেড়ে এসেছিলাম, সেটিই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ঘন বোমা বর্ষণের সময় শুধু মাত্র একটি বোমা একটি কেন্দ্রে আঘাত করেছিল। সেখানকার মাটি ছিল ৪০ সেন্টিমিটারের উপরে, তার নিচে ছিল কাঠ। বোমা বর্ষণের ফলে কাট ভেঙ্গে গেল এবং মাটি খসে পড়ল। তবে আল্লাহর অনুগ্রহে ভেতরে থাকা মুজাহিদ ভাইদের কোন ক্ষতি হয়নি। তারা নিরাপদ ছিলেন।
২৮ তারিখ আসরের সময় থেকে যুদ্ধ প্রবল ভাবে শুরু হয়। প্রবলভাবে বোমা বর্ষণ হয়েছিল। অতঃপর শত্রুরা (ধসে যাওয়া ক্যাম্পের) এই পথ দিয়ে ৮ টি ট্যাংক নিয়ে অগ্রসর হল। তখন আমরা বোমার সীমার মধ্য দিয়েই এই জায়গায় পৌঁছালাম এবং ভাইদেরকে আল্লাহর নামে শুরু করার জন্য বললাম।
আল্লাহর রহমতে আমরা আমাদের যে অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে যুদ্ধ করেছি তাতে ছিল: ৩ টি মর্টার। আল্লাহর অনুগ্রহে ওয়ারস চুক্তি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে এটাই ছিলো আমাদের একমাত্র অস্ত্র।
ভাই! তিনটি মর্টার মানে কী? কিছুই না। তখন আমদের কাছে একটি রকেট লাঞ্চার ছিল, যাকে এখানে বিএম (BM) বলা হয়। দুটি গাড়ি ও একটি ট্রাক – এগুলোই আমাদের কাছে ছিল, যা দিয়ে আমরা ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতাম। আসল শক্তি ছিলো আল্লাহ তায়ালার সাহায্য।
মুজাহিদ ভাইদের সাথে ছিল চারটি গাড়ি। আর তাদের মর্টারগুলো অনেক দূর পৌঁছানোর মতো শক্তিশালীও ছিলোনা। মুজাহিদ ভাইয়েরা এই ঘাটিগুলোতে লুকিয়ে ছিলেন। আর আমাদের সাথে সামনে ছিলো বিশজন মুজাহিদ। তাদের কমান্ডার ছিলেন “বুলচ্যাট[3]”। প্রচণ্ড বোমা বর্ষণের সময় আমরা বাইআতুল আক্বাবার সাহাবাগণ এবং মুসা আলাইহিস সালাম এর সঙ্গীদের মত ৭০ জন লোক ছিলাম।
তখন আমরা গ্রুপ হয়ে যাই। ৩৫ জনকে রেখেছি এই সুড়ঙ্গগুলোর মাথায়। আর আমরা ৩৫ জন মা’সাদাতে ছিলাম। প্রত্যেক ২৪ ঘণ্টায় পালাবদল করেছিলাম। কেননা, যুদ্ধ লাগাতার রাত-দিন সব সময় চলছিলো। রাত দিন একটানা যুদ্ধ করা তো কষ্টকর। এটি মানুষের সাধ্যের বাইরে। তাই আল্লাহর ফযলে আমরা ৭০ জনের একটি দল ৩৫ জন করে ২ টি ভাগে ভাগ হয়ে যাই। অতঃপর শত্রু যখন এই জায়গায় পৌঁছায় তখন প্রায় ৮ টি ট্যাংক এবং বারোটি পরিবহন যান ছিলো। ইতোপূর্বে তারা যুদ্ধের ট্যাংক ও বিমান নিয়ে মহড়া করেছিলো। তারা ভেবেছে সেগুলো দেখে আমরা ভয়ে পালিয়ে গেছি।
রুশ সৈন্যরা এস্থানে আসা মাত্রই মুজাহিদগণ তাদের উপর আচমকা হামলা করে বসলেন। প্রবল ভাবে তাদের উপর বোমা বর্ষণ করতে লাগলেন। পরিশেষে তারা আশ্রয়স্থল খুঁজে না পেয়ে স্বস্থান ত্যাগ করে পালাতে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারাও পালটা মুজাহিদগনের উপর বোমা বর্ষণ শুরু করে, তবে মুজাহিদরা এসময় বোমা বর্ষণ করেন নি। এ ফাঁকেই তারা অনেকে ট্যাংক, গাড়ি নিয়ে মুজাহিদদের সীমানায় ঢুকে পড়ে। পাঁচ কিলো মিটার দূরত্বে আমাদের মর্টার অবস্থিত ছিলো। তাদের কেউ তখন রাস্তায় ছিলো আবার কেউ আমাদের ঘাটিতে ঢুকছিলো। তখন আমরা উপর থেকে তাদের উপর বোমা বর্ষণ করতে শুরু করলাম।
শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ বলেন:
ইতিমধ্যে আমি তাদের গাড়ির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আমি ভাইদেরকে সম্বোধন করে বললাম: বিসমিল্লাহ বলে শুরু করো। তখন তারা বৃষ্টির ফোঁটার ন্যয় বোমা নিক্ষেপ শুরা করে। ক্ষেপণাস্ত্র পরিচালনা করছিলো আমাদের ভাই সাইফ আবু আব্দুর রহমান লীবী। তিনি এখন কান্দাহারের এক শহরে আছেন। কামানের বোমা খুব নিপুণভাবে লক্ষে আঘাত করতে পারেনা। কিন্তু আমাদের বোমাগুলো নিপুণভাবে তাদের ট্যাংকে আঘাত হানছিলো। এটা অবশ্যই আল্লাহর অনুগ্রহ ছিলো।
আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার !! আল্লাহু আকবার !!
একটু পরেই শত্রুদের এম্বুলেন্স তাদের নিহত, জখমে জর্জরিতদের তুলে নেয়ার জন্য দ্রুত এগিয়ে আসছিল। এরই মধ্যে মুজাহিদ ভাইয়েরা মর্টার ও রকেট লাঞ্চারের মাধ্যমে বোমা নিক্ষেপ শুরু করে। বোমাগুলো তাদের এম্বুল্যান্সের সামনে এসে পড়তে থাকে। গাড়িগুলোর কয়েক মিটার সামনে বোমার বিস্ফারণ হলে লাশ রেখে তারা তাদের গাড়ি নিয়ে পালাতে শুরু করে। এপর্যন্ত যা কিছুই আমি শুনালাম তা আমার স্বচক্ষে দেখা।
সে দিন আল্লাহর অনুগ্রহে আমাদের হৃদয় সিক্ত হয়েছে। আমাদের আনন্দের কোন সীমা ছিলোনা। যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোথাও এমন হৃদয়ের প্রশান্তি পাওয়া যায়না। শুধুমাত্র আল্লাহর শত্রুদের গর্দান উড়িয়েই এমন শান্তি পাওয়া যায়।
এভাবেই যুদ্ধ চলমান থাকলো আসর হতে মাগরিব পর্যন্ত। আমরা তাদের উপর হামলা চালাতে থাকলাম। আমাদের কাছে একটি “শ্রবণ যন্ত্র” ছিল। যার সাহায্যে শুনছিলাম, তাদের গাড়ির ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ায় তাদের অনেকেই আমাদেরকে মন্দ ভাষায় গাল মন্দ করছিল।
রাত্রি বেলায় আমরা বোমা বর্ষণ বন্ধ করলে তারা সুযোগ পেয়ে আমাদের উপর পালটা বোমা হামলা শুরু করে। একটি করে বিমান আসতো আর আমাদের উপর বোমা বর্ষণ করে চলে যেত। এভাবেই আটাশতম রমযান, উনত্রিশতম রমযান তারা হামলা চালাতে থাকে, অনুসন্ধান চালাতে থাকে। পরবর্তীতে তারা বুঝতে পেরেছিল যে, মুজাহিদরা মোকাবেলায় অনেক শক্তিশালী। এদের পিছনে আরও অনুসন্ধান চালাতে হবে, তখন তারা ত্রিশতম রমাযানেও ব্যাপক ভাবে অনুসন্ধান চালাতে থাকে।
মুজাহিদগণ এই তিন রাতের প্রথম রাত কাটিয়েছেন (মা’সাদাতে) ক্যাম্পে। এ রাতে তারা অনেক কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলেন। এত কষ্টের মাঝেও তারা রাত পোহানোর পর ফজরের নামাজ আদায় করলো, কিন্তু রোযা রাখলো না। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন:
إنكم مصبحو عدوكم، والفطر أقوى لكم
ভোরেই তোমরা শত্রুর মুকাবিলা করবে। সুতরাং ইফতারই তোমাদের জন্য শক্তি বর্ধক।
তাই আমরা সাতাশ, আটাশ, উনত্রিশ ও ত্রিশতম দিন পর্যন্ত রোযা রাখিনি। ত্রিশতম দিনে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তারা আমাদের ক্যাম্পগুলোতে ব্যাপক হারে বোমা হামলা চালাবে। তাই ঘটলো। আমরা উপরের ক্যাম্প হতে (মাসাদাতে) নিচের ক্যাম্পে প্রবেশ করলাম। মাসাদা ছিল মাটির নিচে দুটি ক্যাম্প। আমরা ছয় মিটার দূরের ক্যাম্পটিতে ঢুকে গেলাম, যেন শত্রুকে সহজে দেখা যায়। আমাদের সঙ্গে ছিল মদিনা মুনাওয়ারার ভাই খালেদ কারদারি, হারামের ভাই খাদির রবি তালেব, মিসরের ভাই হাফেজ আবুল ফজল। মিশরের আরও অনেকেই ছিলেন। পূর্ব দিগন্তের ভাই আবু সাহল এবং আবু আজ্জামও ছিলেন। আমরা সর্ব মোট দশজন ছিলাম।
আমাদের আত্মরক্ষার জন্য আমরা দুটি গাছ কেটে ক্যাম্পের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিলাম। খালেদ কারদারি ভাই বোমা হামলার তীব্রতার দরুন ক্লান্ত হয়ে ক্যাম্পের ভিতরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। আমরা সূর্যোদয়ের পূর্বেই প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এমন সময় হঠাৎ ক্যাম্পের উপর একটি বিমান চক্কর দিচ্ছিল। বিমানের রূপালি রঙ্গে সূর্যের সোনালি রং প্রতিফলিত হচ্ছিল।
তারা আমাদের উপর ভীষণভাবে বোমা নিক্ষেপ শুরু করলো। প্রতিটা বোমার ওজন ছিল দুই হাজার রিতিল, প্রায় একটন। তবে আল্লাহর রহমতে কিছু বোমা উপত্যকার নিচেই বিস্ফোরিত হয়ে যেতো। তবে অধিক প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ায় আমাদের দিকে যেন কুঠার নিক্ষেপ করতো এমন মনে হতো। আর তখন আমরা পাহাড়ের শীর্ষ চূড়ায় অবস্থান করতাম।
যখনি এক একটি করে বোমা নিক্ষেপ করা হতো তখন মনে হতো, আমাদের উপর পাথর ছিদ্রের যন্ত্র চালানো হচ্ছে। উপরে যেখানে বোমাগুলো পড়তো সেখানে এমনভাবে বিস্ফোরণ হতো, যার প্রভাবে, আমরা যে মাটির গর্তের ভিতরে থাকতাম, তাতে মাটি ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়তো। পুরো পাহাড় কেঁপে উঠতো। আর রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাঝে এই চ্যালেঞ্জিং বোমাবর্ষণ অব্যাহত ছিল।
আমরা বোমা হামলার ভয়ংকর মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করছিলাম যেন তিনি আমাদের এ ট্র্যাজেডির অনিষ্টতা থেকে হেফাজত করেন।
আমরা এ ভাবেই ত্রিশতম রমযান পর্যন্ত পাহাড়ের কেন্দ্রগুলোতে থাকি। ত্রিশতম রমযানে আমরা অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমাদের তিনটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ছিল। মা’সাদায় দুটি কেন্দ্র ছিল। এর একটি ছিল ডানে, বদর নামক এই কেন্দ্র থেকেই পথ দেখা যেত। আরেকটি কেন্দ্র ছিল বামে। আমাদের তৃতীয় কেন্দ্রটি ছিল কুবা পাহাড়ের চূড়ায়। এই কেন্দ্র থেকেই সব কিছু দেখা যেত, শোনা যেত। তাই দ্বিতীয় কেন্দ্রে হামলা হলে এখান থেকে জানা যেত।
যখন তারা বিমান নিয়ে ভারি ভারি অস্ত্র ও বোমা দিয়ে আমাদের উপর আক্রমণ করছিল, তখন আমাদের আহমাদ ভাই ঘাঁটি থেকে দুই শত রুশ সৈন্যকে দেখতে পেলেন। এরা আমাদের উপর আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে আমাদের কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে আসছিল। তাদের পরনে ছিল বোরকার ন্যয় অপরিচিত একধরণের পোশাক।
আমরা পূর্বে একমত হয়েছিলাম যে, যখন আমাদের কোন কেন্দ্রে হামলা হবে, তখন মা’সাদার কেন্দ্রই সর্বাগ্রে আক্রান্ত হবে। আমাদের একটি সুরঙ্গ (টানেল) ছিল। তো নির্দেশনা দেয়া ছিল যে, যখনই কেন্দ্র আক্রান্ত হবে, তখন ‘জুবিয়া’র অস্ত্রধারী ভাইয়েরা তিনবার ফাঁকা গুলি করবে। যাতে সাথীরা জানতে পারে যে, মা’সাদার কেন্দ্রে হামলা হয়েছে। বিভিন্ন পাহাড়-পর্বতে যাদের যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের জানা আছে যে, পাহাড়ে সৈন্যের আধিক্য থাকলেও কম মনে হয়। সংখ্যায় কম হলেতো কমই। পাহাড় পর্বতে যুদ্ধ করতে হলে কমপক্ষে ১০০ জন সৈন্য লাগে, অথচ আমাদের সংখ্যা ছিল চল্লিশ জনের কাছাকাছি।
আমরা একমত হয়েছিলাম যে, শত্রুর মুখোমুখি হয়ে লড়বো। শত্রু বাহিনী সংখ্যায় ছিল দুইশত। সোভিয়েত ইউনিয়ন এদেরকে নিয়ে গর্ব করতো, যেভাবে আমেরিকা মেরিন বাহিনীকে নিয়ে গর্ব করে।
আমরা তাদের কাছাকাছি গিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। আমরা ছিলাম পাহাড়ের উপরে। তারা আমাদের তালাশে পাহাড় বেয়ে উঠছিল। আমরা শঙ্কিত ছিলাম তারা আমাদেরকে পিছন থেকে দেখে ফেলে কিনা। কারণ, আমরা আমাদের যে স্থান হতে বের হয়েছি তা ছিল তাদের মুখোমুখি। সে স্থান হতে একটু সামনে হাঁটলে একটি গিরিপথ পাওয়া যায়, যেখান দিয়ে শত্রু দেখে ফেলার খুব সম্ভাবনা আছে। তাই আমরা আমাদের আবুল ফজল ভাইকে এই গিরি পথে প্রহরী হিসাবে রেখে দিলাম, যাতে শত্রুরা আমাদেরকে দেখে না ফেলে। এ ভাই ছিলেন শক্তিশালী এবং বিচক্ষণ একজন মুজাহিদ। আমরা তাকে বললাম; আপনি দূরত্বকে দূর মনে করবেন না।
এরপর আমরা শত্রুর উপর হামলা করার জন্য একটি স্থানে গেলাম। এখানে আমরা ছিলাম তিন জন। আবদে ফকির (আমি), খাদির ও মুখতার। অতঃপর আমরা শত্রুর অপেক্ষায় ছিলাম। হঠাৎ দেখি তারা ইশারা-ইঙ্গিতে পরস্পরে পাখির স্বরে কথা বলছে। তাই আমরা আক্রমণ করার জন্য হাত বোমা নিলাম। এমতাবস্থায় হঠাৎ আমাদের ভাই আবু উবাইদা আসলো। তিনি ছিলেন আল কায়দা সংগঠনের সামরিক সৈনিক। আমি তাকে ক্ষীণ আওয়াজে বললাম: এই যে শত্রু! এই যে শত্রু!!
এরা এমন পোশাক পরিধান করে এসেছিল আমরা তাদেরকে চিনতেই পারছিলাম না। অথচ আমরা এমন পোশাক পরিধান করিনি। আমাদের ভাই আবু উবাইদা নীল পোশাক পরিধান করেছিল। তাই তারা পিছন থেকে হঠাৎ আমাদেরকে দেখে ফেললো। সাথে সাথে রাশিয়ানদের একজন আমাদের উপর ‘ক্র্যাকঅফ’ নামক একটি বুলেট ছুঁড়ে মারে। বুলেটটি আমার ও আবু উবাইদার মধ্য দিয়ে চলে গেল। তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে, তারা আমাদেরকে দেখে ফেলেছে এবং আমরা তাদের আওতাধীন আছি।
আমরা অপেক্ষায় ছিলাম তারা আমাদের কাছাকাছি আসলেই আমরা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বো। কোন শব্দ নেই, নড়াচড়া নেই। কিন্তু হঠাৎ তারা আমাদের উপর জ্বলন্ত ব্রেনেট বোমা বর্ষণ শুরু করলো। পাঁচজন রুশ সৈনিক হামলার উদ্দেশ্যে আমাদের সীমান্তে ঢুকেছিল। এদের পরিকল্পনা খুবই সূক্ষ্ম ছিল। আমাদের মর্টার ব্যাটালিয়নের সৈন্যরা তাদেরকে ঘিরে ফেলার উপক্রম হলে তারা টের পেয়ে যায় এবং পিছু হটতে শুরু করে।
যখন তারা জানতে পারলো যে, মুসলিম মুজাহিদরা তোপখানার অভ্যন্তরে মর্টার পরিচালনা করছে, তখনি শত্রুরা এই জায়গাটি কভার করার জন্য অবর্ণনীয় বোমাবর্ষণ শুরু করে দেয়। আমরা দশ-এগারো জনের কেউ ধারণা করতে পারিনি যে, মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারবো। এই পরিমাণ অস্বাভাবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে যে, বোমা বর্ষণের তীব্রতার মাঝে ত্রিশ মিনিট পর পর মাত্র এই পরিমাণ সময় পাওয়া গিয়েছে যে, একবারের চেয়ে অধিক ‘সুবহান আল্লাহ’ বলা যায় না। সাথে সাথে আবার যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
এসময়ে আবু উবাইদা চেয়ে ছিলেন, আমরা স্থান পরিবর্তন করি। আমরা তাকে বললাম; এখানেই অপেক্ষা করি। আমরা একটু অপেক্ষা করতে না করতেই যুদ্ধ আবার শুরু হলো (এভাবেই চলতে থাকলো)। আবার কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধ হল।
আমরা অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হলাম। পিছন থেকে ভাই আব্দুল্লাহ সহ আমাদের কিছু ভাই কান্নাকাটি করতে লাগলেন এবং আল্লাহর দরবারে দুয়া করতে লাগলেন – তিনি যেন আমাদেরকে দুশমনের হাত থেকে রক্ষা করেন। কেউ ধারণা করেনি যে, এ স্থানে বোমা হামলা হলে সে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে।
এরপর যুদ্ধ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হলে আমরা এ স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে যাই। আমরা পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে সরে যেতে না যেতেই আবার শুরু হয়ে যায় বোমা হামলা। এরই মধ্যে একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল।
আমাদের ভাই খাদির একটি পাথরের আড়ালে ছিল। সে মনে করে ছিল আমরা সবাই মরে গেছি। সে একাকী বেঁচে আছে। নিজের সামনে অনেক শত্রু দেখে সে ভয় পেয়ে গেল। সে ভাবছিল – আমি তাদের হাতে শহীদ হলেই ভালো হবে। কিন্তু তারা যদি আমাকে না মেরে বন্দী করে তা হলে কি অবস্থা হবে?
এভাবে তার মনে অমূলক কিছু ধারণা সৃষ্টি হল, যার ফলে ভয়ে থর থর করে কাঁপছিলো আর আল্লাহকে স্মরণ করছিল। আর এই রকম পরিস্থিতিতে লিভার প্রচুর পরিমাণে শর্করা পাম্প করে, ফলে অঙ্গগুলো তাদের ভারসাম্যের বাইরে চলে যায় এবং সেগুলো কাঁপতে থাকে। পাশাপাশি এই পরিস্থিতির তীব্রতার কারণে সে আরপিজি বা বোমা বহন করতে পারে না। অতঃপর যখন এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি হতে সে রেহাই পেল, তখন সে তার মুজাহিদ ভাইদের নামে একটি বার্তা পাঠাল যে, সবাই জোটবদ্ধ হোন, ঐক্যবদ্ধ হোন… বার্তাটি তাঁর কানে পৌঁছানোর সাথে সাথেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দয়ায় সে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে ও নিশ্চিন্ত হতে পারল যে, তার ভাইয়েরা এখনো বেঁচে আছে।
তারপর আমরা সবাই দৌঁড়াতে ও আশ্রয় নিতে শুরু করি এবং প্রাণপণে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যাই, আবার উঠে দাঁড়াই। এভাবে আমরা বিপদস্থল থেকে দূরে সরে আসি।
আমরা যখন টের পেলাম যে, শত্রুরা আমাদেরকে ধরার জন্য বিমান চালনাসহ সব ধরনের অসাধারণ শক্তি ব্যবহার করে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছে, তখন আমরা এই ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ছেড়ে পূর্বে যে গুহা থেকে সরে এসেছিলাম সে গুহায় আবার আশ্রয় নিলাম। এরই মাঝে আফগান মুজাহিদদের উপর আল্লাহ তায়ালার মদদ নেমে আসে।
সাইয়াফ থেকে বিশজন লোক এবং হেকমতিয়ার থেকে বিশজন লোক আমাদের গুহার পাশেই এসেছিল। আমরা তাদেরকে চিনতে পারছিলাম না। তারাও আমাদেরকে চিনতে পারছিল না। আমাদের ও তাদের মাঝে পূর্ব কোন সম্পর্ক ছিল না। আমরা তাদেরকে বললাম, ‘চলুন আমাদের সাথে’। তারা আসতে রাজি হল না। তারা সেখানেই রয়ে গেল।
ঐ সময় অবশ্য শত্রুরা আমাদের কে বিভিন্ন ভাবে খোঁজ করছিল। অতঃপর আমরা আমাদের এক দুইজন ভাইকে সেখানে পাহারার জন্য রেখে গুহায় চলে আসি। হঠাৎ আমরা শত্রুদেরকে আমাদের এক ক্যাম্পে দেখলাম। ভাগ্যক্রমে ক্যাম্প থেকে আমরা আগেই সরে এসেছিলাম।
আমাদের মুজাহিদ ভাইদের কাছে যে ‘আরপিজি’ ও হাত-বোমা ছিল তা শত্রুদের উপর নিক্ষেপ করতে লাগলো। শত্রুরাও পালাক্রমে আমাদের পাহাড়ে বোমা নিক্ষেপ করছিল আর সামনের দিকে এগিয়ে আসছিল। শত্রুদের যারাই সামনের দিকে ছিল তারাই মারা যাচ্ছিল। আর যারা পিছনে ছিল তারা পশ্চাদপসরণ করছিল।
আমাদের ভাই আবু উবাইদাও তাদেরকে ধাওয়া করতে চাইলেন। কিন্তু আমরা তাকে ফিরিয়ে রাখি। আমাদের একজন ভাই মর্টার হতে একটি বোমা শত্রুদের দিকে নিক্ষেপ করার সাথে সাথে তাদের পাঁচ জন মারা যায়। অন্যরা এসে তাদের লাশ নিয়ে যাচ্ছিল।
শেষ পর্যন্ত যেন আসমান হতে নেমে আসা মদদ আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে গেল। শত্রুরা আবার নতুন করে ব্যাপক ভাবে বোমা নিক্ষেপ করে আমাদের অনুসন্ধান করছিল আর আমাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল শত্রুরা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে না। কিন্তু তাদের অনুসন্ধান ছিল বড় সূক্ষ্ম ও মারাত্মক। অবশেষে তারা যখন আমাদের নিকটে চলে আসে তাদের একজন অন্য জনকে বলে; আরও দুইশত মিটার সামনে নিক্ষেপ করুণ।
আমাদের একজন ভাই একটি গর্তে আত্মগোপনে ছিলো। তিনি সেখান থেকে বের হতে না হতেই শত্রু তার উপর আক্রমণ করে বসে।
আজ এতটুকুতেই আমার আলোচনা সমাপ্ত করছি। আবার পরবর্তীতে সাক্ষাৎ হবে ইনশা আল্লাহ। এই সংক্ষিপ্ত আলোচনাই আশা করি উপকার বয়ে আনবে। ইনশা আল্লাহ।
.وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
*********
১ জাজি’র রণক্ষেত্র (প্রথম পর্ব) || শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ || আলোর বাতিঘর-৪ – লিঙ্ক –
[2] রেকর্ডারে উনার নামটি অস্পষ্ট।
[3] রেকর্ডারে উনার নামটি অস্পষ্ট।
**********
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent
আই লাভ গাজওয়াহ সাইট