কাশ্মীর… সিংহদের জেগে উঠার সময় এখনই! – উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ || ডাবিং ভিডিও, অডিও, পিডিএফ ও ওয়ার্ড
বাংলায় অনূদিত
কাশ্মিরে মুসলিমদের উপর ভারতীয় মুশরিকদের সাম্প্রতিক নির্যাতন-নিপীড়ন ও কাশ্মির ও সমগ্র উপমহাদেশের মুসলিমদের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনামূলক খুবই গুরুত্বপূর্ণ বয়ান।
কাশ্মীর… সিংহদের জেগে উঠার সময় এখনই!
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
[ডাবিং ভিডিও, অডিও, পিডিএফ ও ওয়ার্ড]
ডাউনলোড করুন
ভিডিও ডাউনলোড করুন
[১০৮০ ফরম্যাট, ৭৩৫ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/MLC4ekNJDMM7SGR
https://www.file-upload.com/b8oqk9ktw49i
[৭২০ ফরম্যাট, ১০২ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/wX94EC8kTzNFLD4
https://www.file-upload.com/u712ykrjuwgo
[৪৮০ ফরম্যাট, ৬৬.৭ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/e3RdpLeBz7LfWaP
https://www.file-upload.com/iqn4yz8ajfe4
অডিও ডাউনলোড করুন
[ ২৪.১ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/azd2bpriiGsEDSs
https://www.file-upload.com/spkrunsmp6hc
https://file.fm/f/b3q2bcsy
ওয়ার্ড ফাইল ডাউনলোড করুন
[ ২৪.১ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/DHs3e3rBNCR6EHn
https://www.file-upload.com/sf34ojqi6j0l
https://file.fm/f/9yq5e6pc
পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করুন
[ ২৪.১ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/G9p3M6WTApTd9Zs
https://www.file-upload.com/ph4o188x6g4s
https://file.fm/f/f8shcn6n
প্রচ্ছদ
https://banglafiles.net/index.php/s/BHroAJYs7GNw746
https://www.file-upload.com/ovv5mja5q7sk
https://file.fm/f/zurcrj3r
————-
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]
=============
কাশ্মীর…
–উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
————————————
بسم الله الرحمن الرحيم.
الحمد لله رب العلمين، والصلوة والسلام على رسوله الكريم،
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي ، يَفْقَهُوا قَوْلِي.
কাশ্মীর, পাকিস্তান ও সমগ্র উপমহাদেশের প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
কাশ্মীরের বর্তমান যে পরিস্থিতি, যেখানে সবচেয়ে দীর্ঘ ও কঠিন কারফিউয়ের মধ্য দিয়ে ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে। সোয়া কোটির অধিক মুসলমানের কাশ্মীর পরিণত হয়েছে এক নিকৃষ্ট কারাগারে। সকল ধরণের গণ–যোগাযোগ মাধ্যম সর্ম্পূণরূপে নিষিদ্ধ। খবরাখবর বের হওয়ার সকল মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক ভয়ানক নিরবতার ভিতর দিয়ে আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের উপর চলছে নির্যাতনের স্টিমরোলার। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এটি কেবল ভারতের ঔদ্ধত্ব ও অবাধ্যতা চিত্রিত করে না, বরং ভবিষ্যতের কূট পরিকল্পনাকেও ফুটিয়ে তোলে। পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট করছে যে, মুসলমানদের দ্বীনি মর্যাদাবোধ পদদলিত করতে, তাঁদের আযাদী আন্দোলনকে সমূলে ধ্বংস করতে এবং কাশ্মীরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্টতাকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করতে ভবিষ্যতেও তারা এ ধরণের সকল নির্যাতনের মন্দ কৌশল ব্যবহার করবে। তারা যে ভদ্রতা ও মানবতাকে এভাবে বলি দিচ্ছে, সেটাকে আরো ঢাক ঢোল পিটিয়ে আইনি এবং বৈধতার পোশাক পরাবে।
প্রিয় ভাইয়েরা আমার! এসব নির্যাতনের তামাশা চোখ দিয়ে দেখে আমরা অনর্থক পর্যালোচনা, সারহীন শ্লোগান এবং নামকা ওয়াস্তে ঐক্যের সমাবেশ করে যাবো, নাকি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন উপযুক্ত কাজও আমাদের দায়িত্বে পড়ে? বাস্তবতা হচ্ছে: যা কিছু ঘটে চলেছে, তাতে আমাদের নিজেদেরও পরীক্ষা আছে। এসব ঘটনা প্রত্যেক মুসলমানকে তাঁর ঈমান ও ইসলামের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে আহবান করছে। যদি আমরা নিজের ভাইয়ের এই ব্যাথায় বাস্তবিকই মন থেকে ব্যথিত না হই, অথবা ব্যথিত তো হই, কিন্তু এই সমব্যাথা আমাদেরকে ইখলাছের সাথে কাজের ময়দানে নামাতে না পারে, তবে সত্যি সত্যি আমরা প্রকৃতপক্ষে মুসলমান হতে পারিনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন–
المسلم أخو المسلم لا يظلمه ولايسلمه.
“ এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তাঁর ভাইয়ের প্রতি জুলুম করতে পারে না এবং তাকে মাজলুম অবস্থায় ছেড়েও রাখতে পারে না।”
নিজের মাজলুম ভাইয়ের সাহায্য করা এবং জালেমের হাত রুখে দেয়া ফরজ। কিন্তু প্রিয় ভাই! বাস্তবতা হচ্ছে: কাশ্মীরে চলমান এই নির্যাতনের সমাপ্তি শুধু তখনই ঘটতে পারে, যখন উম্মাহ হিসেবে সেই বাস্তবতাগুলোকে মেনে নেওয়া হবে, যার উপর বর্তমান পরিস্থিতি একযোগে সত্যায়ন করছে। এগুলো এমনই কিছু বাস্তবতা; যা আমাদেরকে বাস্তবতা আর মরীচিকার মাঝে পার্থক্য বলে দিচ্ছে এবং এ গুরুত্বও আরোপ করছে যে, এ পার্থক্য ছাড়া না আযাদীর লক্ষ্যপানে পা উঠানো যাবে, না কোথাও জালেম ও ডাকাতদের থেকে নিজের ইসলামী অধিকার উদ্ধার করা যাবে। এগুলো এমনই কিছু বাস্তবতা; যা একেবারেই নির্ভেজাল ও সুস্পষ্ট বিষয়। কাশ্মীর ও তুর্কিস্তান থেকে নিয়ে ফিলিস্তিন ও সিরিয়া পর্যন্ত উম্মাহর সকল নির্যাতিত সদস্যকে বিজয় ও সাহায্যের সেই রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছে, যা সোজা, প্রশস্ত ও মসৃণ। আসুন! এ সকল বাস্তবতার উপর কিছু আলোকপাত করি।
বাস্তবতা–১. ইন্ডিয়া নামেমাত্র সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু প্রথম বাস্তবতা হচ্ছে: যার উপর দুনিয়ার এই ‘বড় গণতান্ত্রিক’ লেবেল লাগানো হচ্ছে, তা গণতন্ত্রের তামাশা বৈ আর কিছুই নয়! কাশ্মীরে ভারতের এ সকল কার্যকলাপ আরো একবার প্রমাণ করল যে, গণতন্ত্র প্রকৃতপক্ষে প্রতারণা, ধোঁকা এবং মরীচিকা। এ গণতন্ত্র হলো: বহুসংখ্যক দুর্বল ও পরাজিত লোকের উপর কিছু বিজয়ী ও শক্তিশালী লোকের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার নাম। এ পরিস্থিতি আমাদেরকে বলে দিচ্ছে, যার হাতে লাঠি থাকবে, যার কাছে ধন–সম্পদের ভান্ডার থাকবে, এ গণতন্ত্র শুধু তারই হাতের পুতুল হয়ে থাকবে। যখন ক্ষমতাসীন শ্রেণির ইচ্ছা হবে, তখন নিজের এই স্বার্থকে আইনিরূপ দিয়ে দিবে। সে আইনের পবিত্রতা আপন হৃদয়ে বসিয়ে নিবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকদের দিয়ে তার পূজা–অর্চনা করিয়ে নিবে। কিন্তু যখন এ স্বার্থ পরিবর্তন হয়, প্রবৃত্তি ও রুচিবোধ বদলে যায়, তখন নিজের হাতে ঐ ‘পবিত্র’ আইনকে তারা পুনরায় সাজিয়ে নেয়। আর ঐ আইনকে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়। এখানে সেই শাসক শ্রেনি নিজের সংবিধানে এ বিষয়টি রেখেছিল যে, কাশ্মীরে কাশ্মীরের প্রতিনিধিদের সন্তুষ্টি ছাড়া কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না। সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট সকল কোর্টই এই আইনকে ৩৭০ আর্টিক্যাল নাম দিয়েছিল এবং সেটাকে তারা তাদের আইনের একটি স্বতন্ত্র অংশ বলত। কিন্তু সেটাকে যখন পরিবর্তনের ইচ্ছা হল, তখন এক দিকে সোয়া কোটি কাশ্মীরি মুসলমানের মুখ বন্ধ করতে, তাদেরকে কোণঠাসা ও দলিত মদিত করতে লাখ লাখ সৈন্য মোতায়েন করা হল। কাশ্মীরের অলিতে গলিতে এবং প্রত্যেক ঘরের সামনে সেনা সদস্য দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল। পাশাপাশি সব ধরণের শ্লোগান ও সভা–সমাবেশকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হল। অপরদিকে সেই ডাকাত ও জালেমরা দূর দিল্লিতে বসে অসহায় নির্যাতিত কাশ্মীরিদের ব্যাপারে ফায়সালা দিয়ে দিল। সেই আইনকে তারা কলমের এক খোঁচায় উঠিয়ে দিল এবং এ কার্যকলাপকে স্বয়ং আইনি ও গণতান্ত্রিক বলেও ঘোষণা দিয়ে বসল। এটাই গণতন্ত্র!
প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে : পাকিস্তানের গণতন্ত্র হোক বা ভারতের গণতন্ত্র, তার বাহ্যিক দিক সুন্দর হোক বা অসুন্দর, তার ভিতরের প্রেতাত্মাটি সর্বদাই এই কিছু সংখ্যক ক্ষমতাবানদের উপকারী হয়ে থাকে। যাদের হাতে ক্ষমতা থাকে এ গণতন্ত্র তাদের হাতের কারিশমা হয়ে থাকে।
প্রত্যেক জায়গাতেই ক্ষমতা ও সম্পদের জবর দখলকারী ঐ প্রতারকদের কাছেই ঘুরে ফিরে মিডিয়া নামের যাদুর ছড়ি থাকে। যার সাহায্যে তারা জনসাধারণকে যখন ইচ্ছা হাসায়, আবার যখন ইচ্ছা কাঁদায়। এই যাদুকর মিডিয়া–ই সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য করে দেখায়। তার কাজ হল, বরবাদ আর ধ্বংসযজ্ঞকে শান্তিপূর্ণ নিরাপদ নগরী হিসেবে তুলে ধরা এবং গুটি কয়েক লোকের প্রবৃত্তিকে বিশাল সংখ্যক লোকের নিরাপত্তা হিসেবে প্রমাণ করা। এ জন্যই পূর্ব হোক বা পশ্চিম, সব স্থানে প্রকৃত গণতন্ত্র হচ্ছে: এই ধোঁকা ও প্রতারণা। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, কোথাও লাঠি দৃষ্টিগোচর হয়। আবার কোথাও সম্পদ আর ক্ষমতা পর্দার আড়াল থেকে ক্রিয়া দেখায়।
বাস্তবতা–২. এই ঘটনাগুলো কোন ধরণের অস্পষ্টতা ছাড়া আমাদেরকে আরেকবার যে বিষয়টি বলে দিচ্ছে, তা হলো: ডাকাতের সামনে অধিকার ভিক্ষা চেয়ে কখনও অধিকার পাওয়া যায় না। জালেমের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার কারণে সে কখনও জুলুম থেকে ফিরে আসে না। কাশ্মীরি মুসলমানদের জিহাদ ও কিতাল ছেড়ে দেওয়ার উপর বাধ্য করা এবং তাদেরকে রাজনৈতিক আন্দোলনের কলাকৌশল শিক্ষাদানকারীদেরও আজ এ বাস্তবতা মেনে নিতে হবে, ভারতের জুলুম–অত্যাচার তখনই মাত্রা পেয়েছে, যখন মুসলিম উম্মাহকে ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদ ও কিতালের ভাষার স্থানে কাশ্মীরি মুসলমানদের সাথে শুধু সারঃশুন্য ঐক্য প্রদর্শনের পথ দেখানো হয়েছে। শান্তির ভাষা তো কেবল তার সাথেই বলা যেতে পারে, যে নিজে শান্তিবাদী হবে, আঘাতকারী হবে না। এমনিভাবে যে নিজে ভাষার শক্তি এবং বুঝ ও বুঝানোর মাধ্যম ব্যবহার করে। কিন্তু শক্তিই যার ভাষা হবে, যে জুলুম, দাপট আর অস্ত্রের শক্তিতে অন্যকে কোণঠাসা করে রাখে, ইতিহাস শাক্ষী, এমন জালেমের সামনে শান্তিবাদী থাকা মানে স্বয়ং নিজের হাতেই নিজের অধিকার ধ্বংস করা। প্রাকৃতিক নিয়ম হচ্ছে, লোহাকে লোহাই কাটে। জুলুম–অত্যাচার, দাম্ভিকতা এবং অবাধ্যতাকে যদি কোন বস্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তবে তা সত্যের তরবারি। যদি শুধু আলোচনার ভিক্ষা, নিন্দার স্মারকলিপি আর ঐক্যবদ্ধ বিক্ষোভ দিয়েই ছিনতাইকৃত অধিকার আদায় করা যেত, তবে কাশ্মীর থেকে ফিলিস্তিন পর্যন্ত মুসলমানদের চোখের পানি মুছে যেত। এটা সেই বাস্তবতা, যা মহান আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে আমরা মুসলিমদেরকে, (যাদের জিম্মাদারিই হচ্ছে: দুনিয়াকে জুলুম ও ফ্যাসাদের নাপাকি থেকে পবিত্র করা) বাতিলের সাথে আচরণের ভাষা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা শক্তি ও দাপটের মাধ্যমে ফ্যাসাদ বিস্তারকারীদের সাথে সহযোগিতা বা সমঝোতা করতে এবং আঘাতকারী ও জবর দখলকারীর মোকাবেলায় শান্তিবাদী থাকার সবক দেন না। আল্লাহ তা‘আলা তো ঈমানদারদের এমন জালেমদের বিরুদ্ধে
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ “তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে” বলে জিহাদ ফরজ করেছেন এবং وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ “আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা/ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।” এ ঘোষণা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ঐ সময় পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যতক্ষণ না ফিতনা ফ্যাসাদ নির্মূল হবে এবং আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবে। সূরা আনফালে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের প্রতি জোর নির্দেশ এবং জিহাদ ও কিতালের উৎসাহ দেওয়ার পর মহান আল্লাহ বলেছেন–
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ…﴿الأنفال: ٢٤﴾
“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর, যখন তোমাদের সে কাজের প্রতি আহবান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন।”(সূরা আনফাল : ২৪)
আল্লাহ তা‘আলা যেন এ উম্মাহর সম্মান ও জীবন তাঁর আনুগত্য এবং সেই আনুগত্যের অধীনে জিহাদ ও কিতাল করার মাঝেই রেখেছেন। তাই এ জিহাদ যদি না থাকে, তবে দেড় মিলিয়নেরও বেশী মুসলমানের এ বিশাল জামাতের অবস্থাও হাদীস অনুসারে সেই দস্তরখানের মতই হবে, যেখানে দুশমনেরা সব দিক থেকে ক্ষুধার্থের মত ঝাঁপিয়ে পড়বে। এ কারণে লাঞ্ছনা আর অপমান থেকে বের হওয়ার পথ হল জিহাদ ও কিতাল। সেই কিতাল, যা আল্লাহর আনুগত্যের ভিতরে থেকে হবে এবং যা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ হবে। আর জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ হচ্ছে: যার উদ্দেশ্য হবে– আল্লাহর সন্তুষ্টি, আল্লাহর শরীয়াহ বাস্তবায়ন এবং নির্যাতিতদের সাহায্য সহযোগিতা করা।
বাস্তবতা–৩. যা কাশ্মীরের চলমান পরিস্থিতি থেকে আরেকবার খোলাখুলিভাবে স্পষ্ট হচ্ছে, তা হলো: পাকিস্তানি জেনারেল আর শাসকদের স্বভাব ব্যক্তিস্বার্থ, মোনাফেকি ও প্রতারণার উপর গঠিত। আর তাদের এ কার্যকলাপের কারণেই আজ কাশ্মীরের মুসলমানদের উপর জুলুম ও অত্যাচার বেড়ে গেছে। এ জুলুম ও অত্যাচারের কারণ এটাই যে, মুশরিক হিন্দুরা আজ আমাদের এই ভাইদেরকে একাকী, একেবারেই একাকী মনে করছে। ভারতের এ বিশ্বাস হয়ে গেছে, মুসলিম উম্মাহর অস্ত্র এবং উপকরণ না কাশ্মীরি মুসলমানদের কাজে আসবে, আর না উম্মাহর কোন জিহাদী আন্দোলন কাশ্মীরে কখনো পা রাখতে পারবে। এ বিশ্বাস করানোর কাজ কে করেছে? তারা কারা, যারা মুজহিদীন ও উম্মাহর অস্ত্র কাশ্মীরে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে? তারা এই পাকিস্তানি জেনারেল আর শাসকগোষ্ঠী। কাশ্মীরে এই প্রতারকদের হুবহু সেই কার্যকলাপই চলছে, যা ফিলিস্তিনে আরব সাম্রাজ্যের বাহিনী ও শাসকগণ করে চলছে। আরব বাহিনীর কাজ হলো: উম্মাহর মুজাহিদদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের সীমানাকে বন্ধ করে দেওয়া। ফিলিস্তিনের মুসলিমদেরকে ইসরাইলের সামনে নিঃস্ব করে রাখা এবং মুসলিম উম্মাহর জিহাদি আন্দোলনগুলোকে শেষ করে দেওয়া। এই সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যখন বলেছে, ‘সৌদীআরবের রাজ পরিবার যদি না থাকত, তবে ইসরাইলের অস্তিত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেত।’ তো এটা সে কোন ভুল কথা বলেনি। এটা শুভ্র সত্য। এটাই হলো: সে সব বাহিনী ও শাসকদের বাস্তবতা। কাশ্মীরে পাকিস্তানি বাহিনী আর এজেন্সিদের হুবহু এই কার্যকলাপই চলছে। এখানকার জেনারেলদের এই ব্যক্তিস্বার্থ আর কাপুরুষতাপূর্ণ রীতি যদি না থাকত, এ উম্মতের জিহাদি লস্করকে কাশ্মীরের উপত্যকায় প্রবেশে যদি বাঁধা দেওয়া না হত এবং কাশ্মীরের ভিতরে জিহাদি আন্দোলনকে তাদের অধিনস্ত ও মুখাপেক্ষি বানিয়ে রাখার নিচু মানসিকতা ব্যবহার না করত, তবে আজ কাশ্মীরের এই হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখতে হত না। আজ এই কাপুরুষ শৃগালস্বভাব হিন্দুরা বাঘ হয়ে আমাদের ভাইদের উপর এভাবে হামলে পড়ত না!
[শাইখ আঈমান আয যাওয়াহিরি হাফিযাহুল্লাহর (ভিডিও ক্লিপ)]
“এটাই কারণ, আরব মুজাহিদগণ আফগানিস্তানে রাশিয়ার পরাজয়ের পর কাশ্মীর জিহাদে অংশ গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমেরিকার গোলাম পাকিস্তানী শাসক ও সেনাবাহিনী তাঁদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানী শাসক ও সেনাবাহিনী কাশ্মীর মুজাহিদদের সাথেও সেই আচরণ করে, যে আচারণ তারা রাশিয়া বিতাড়িত হওয়ার পর আরব মুজাহিদ, ইমারতে ইসলামিয়া ও অন্যান্য মুজাহিদদের সাথে করেছিল। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও শাসকের একান্ত আগ্রহ হলো: কাশ্মীরের মুজাহিদদেরকে নিজেদের বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে ব্যবহার করা। সে উদ্দেশ্য অর্জনের পর তারা সেই মুজাহিদদেরকে কোণঠাসা করতে চায় অথবা একেবারেই শেষ করে দিতে চায়। এ সব কর্মকান্ডের ফল নিয়ে সুবিধাবাদী এই প্রতারকগোষ্ঠী বেঁচে আছে। যাদের পকেট ঘুষ আর হারাম মালে ভরে আছে।”
পুলওয়ামা ঘটনার পর পাকিস্তান ইন্ডিয়ান বিমান ভূপাতিত করেছিল, কিন্তু তার সমস্ত ফায়দা মোদির ঝুড়িতে ঢেলে দেওয়া হয়। বিমানের পাইলটকে সম্মান ও ইজ্জতের সাথে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে কাশ্মীর জিহাদের সাথে আরেকবার সম্পর্ক ছিন্ন করা হল। কাশ্মীর জিহাদকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলা হল। পাকিস্তানের ভিতরে কাশ্মীরপন্থী কিছু ছোটখাট দলকে অস্ত্রমুক্ত করার নিশ্চিত বিশ্বাস করানো হল। এ দলগুলোর মসজিদ, অফিস ও যানবাহনগুলো সরকারী তহবিলে নিয়ে নেওয়া হল এবং ঘোষণা করা হল, কাশ্মীর জিহাদের দাওয়াতও এখানে পূর্ণরূপে তদারকি করা হবে।
[ইমরান খান (পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী)-এর ক্লিপ]
“আমি আজ আপনাদেরকে একটি কথা বলব, তা হলো: যদি কোন ব্যক্তি…বা সে পাকিস্তান থেকে ভারতে গেল…আর সে মনে করল যে, কাশ্মীরে গিয়ে যুদ্ধ অথবা জিহাদ করবে, তাহলে সে সর্বপ্রথম কাশ্মীরিদের সাথেই জুলুম করবে। যদি কোন ব্যক্তি কোনভাবে এখান থেকে কিছু মাত্র তৎপরতা চালায়…তাহলে আমি বলছি– সে পাকিস্তানেরও শত্রু এবং কাশ্মীরিদেরও শত্রু বলে গণ্য হবে।”
এ সব ঘটনা যেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও শাসকদের কাপুরুষতা, ব্যক্তিস্বার্থ, মোনাফেকি আর খেয়ানতদারির পর্দাকে আরো একবার ছিড়ে দিল। শুধু নিজেদের সুবিধাই এ বাহিনীর উদ্দেশ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কাশ্মীরি মুসলমানদের সাহায্যের জন্য কি তারা নিজেদের এই বিলাসিতা আর সুযোগ–সুবিধা ঝুকির মধ্যে ফেলে দিবে? না! এটা কখনোই হতে পারে না। তাদের নিজেদের সুযোগ–সুবিধা ঠিক থাকাবস্থায় যদি কাশ্মীরি মুসলমানদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলাও চলতে থাকে, তথাপিও তারা কোন নড়াচড়া করবে না।
[শহীদ জাকির মূসা রহ. এর অডিও ক্লিপ]
“আমার শ্রদ্ধেয় ভাইসব!
আপনারা এ বিষয়টি জেনে রাখুন, যখন পাকিস্তান রাষ্ট্রের উপর আঘাত আসবে, তখন সে এক দিনের মধ্যে ইন্ডিয়ার সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। আর যখন কাশ্মীরে আমাদের কোন মায়ের কলিজায় আঘাত লাগে, যখন কোন বোনের আত্মায় আঘাত লাগে, যখন আমাদের ভাইদের শরীরে আঘাত লাগে, তখন এই রাষ্ট্র ইন্ডিয়ার সাথে বন্ধুত্ব আর আনুগত্যের আলোচনা করে। এটা কেমন কথা, তারা তখনও তাদের বিমান উড্ডায়ন করেনি! যখন আছিয়া আর নিলুফার রক্তে এ জমিন লাল হয়েছিল, যখন শোপিয়ান ও পিলগামে মুজাহিদদের ওয়ারিশরা তাঁদের অগ্নিদগ্ধ লাশ পেয়েছিল, যখন ২০০৮–এ, ২০১০–এ, এবং ২০১৬ তে ভারতের বুলেট আমাদের সন্তানদের বুক ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। মনে রাখবেন, আপনাদের প্রতি তাদের কোন ভালোবাসা নেই। যেমন আমার প্রিয় সাথী রায়হান রহ. বলেছিলেন, এ সব রাষ্ট্রের কোন ঈমান থাকে না, এ সব রাষ্ট্রের শুধু সুবিধার চিন্তা থাকে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পাকিস্তান সরকার ও ইন্ডিয়ার সকল ষড়যন্ত্র থেকে নিরাপদ রাখুন।”
এ কারণে এই বাস্তবতাকেও স্বীকার করতে হবে যে, কাশ্মীরি মুসলমানরা আজ যে করুণ অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে, তার কারণ হলো: জুলুম ও প্রতারণার এই দুই দিক। আর এ দুইয়ের মাঝেই কাশ্মীরিরা পিষিত হচ্ছে। এক. হিন্দুদের জুলুম। দুই. পাকিস্তানি জেনারেলদের প্রতারণা। কাশ্মীরের মুসলমান তো হিন্দুদের জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, কিন্তু তারা এই বিশ্বাসঘাতকতার কোন সমাধান করে না, যা সর্বদা তাদের পিঠে খঞ্জর ঢুকে দিচ্ছে। তাই এই লড়াই কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তাদের হিন্দুদের জুলুমের সাথে সাথে পাকিস্তানী জেনারেলদের প্রতারণার ব্যাপারেও একটা ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। এমন হলে, তখনই কোন এক সময় গিয়ে সেই সোনালী সূর্য উদিত হবে, যার দেখা পাওয়ার জন্য এই বিশাল সম্প্রদায় বহু দশক ধরে কুরবানী দিয়ে আসছে।
চতুর্থ সূক্ষ বিষয়: যা সুস্পষ্ট বাস্তবতা হয়ে আমাদের সামনে আসছে, তা হলো: জাতিসঙ্ঘ জালেম ও মুসলিম বিদ্বেষী হওয়া। জাতিসঙ্ঘ, যা বিশ্বের উপর পাঁচ ডাকাতের একচ্ছত্র কর্তৃত্বের নাম। তার ইসলামের প্রতি দুশমনির এই বাস্তবতা তার গঠন, তার ছলনা ও তার পুরা ইতিহাস থেকে স্পষ্ট। কাশ্মীরে হিন্দু বাহিনীর জুলুম নির্যাতন সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে গেছে। কাশ্মীরি মুসলমানদের কান ফাটা চিৎকার সমগ্র বিশ্ববাসী শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু এ জাতিসঙ্ঘের কানে এর বাতাস পর্যন্ত পৌঁছেনি। অপরাধের পাঁচ গড ফাদার, যাদের কাছে এ ইস্যুতে ভ্যাটো দেওয়ার অধিকার আছে। তাদের কনফারেন্স বধ্যরুমে শুরু হয়ে বন্ধমুখে শেষ হয়েছে। কিন্তু কী ফলাফল বের হয়েছে? কারো কোন খবর নেই। জালেম হিন্দুদের জুলুম বন্ধ করা তো দূরের কথা, তাদের জুলুমকে জুলুমও বলা হয়নি। কেন? কারণ হলো–
﴿ وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ﴾…
“আর যারা কাফের তারা পারস্পরিক সহযোগী, বন্ধু।”
তারপর ভারতের জুলুমের সাথে সঙ্গ দেওয়া ঐ পাঁচ গড ফাদারদের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক প্রয়োজনও তো আছে। কাশ্মীর, চেচনিয়া ও তুর্কিস্তান থেকে নিয়ে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক সমস্যায় এ জাতিসঙ্ঘের আচরণ এমন জুলুম ও দুশমনিমূলক হয়ে থাকে।
বাস্তবতা–৪. যা আমাদের মানতে হবে, তা হলো: জাতিসঙ্ঘের ইসলাম, মুসলমান ও মানবতার সাথে এই দুশমনিমূলক কার্যকলাপ। এমনিভাবে এটাও মানতে হবে যে, তার থেকে কোন ধরণের কল্যাণের আশা–আকাঙ্খা করার দৃষ্টান্ত হল, কোন হিংস্র ও নির্দয় শত্রুর কাছে দয়ার আশা করা।
এ হল সে সব বাস্তবতা, যদি এগুলোকে গুরুত্ব না দেওয়া হয়, তার মূল রহস্য উদঘাটন করা না হয়, তবে বিপদের পর বিপদ এবং জুলুমের পর জুলুম এ মহাকালে কখনো শেষ হবে না। জুলুম আর অন্যায়ের এ অন্ধকার রাত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকবে। এর কালো মেঘ তো বিক্ষিপ্ত করা যাবে; কিন্তু সেই আলোকোজ্জ্বল ভোর উদিত হবে না, যার জন্য কাশ্মীর থেকে আসাম পর্যন্ত উপমাহাদেশের এ ভূমি ছটফট করছে এবং যার অপেক্ষায় খোরাসান থেকে দিল্লী পর্যন্ত মুসলমানদের চোখ চাতক পাখি হয়ে আছে।
প্রিয় ভাইয়েরা! কাশ্মীর উপত্যকায় স্বাধীনতা আর আত্মোৎসর্গের উদ্দীপনায় কখনো ভাটা পড়েনি। আলহামদুলিল্লাহ, নাপাক হিন্দুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উত্তেজনাও সর্বদা জাগরুক ছিল। কিন্তু এ উপত্যকা বহু যুগ থেকে এমন এক আন্দোলনের পথ চেয়ে ছিল, যার লক্ষ্য হবে সব ধরণের জুলুম ও কুফুর থেকে মুক্তি এবং আল্লাহ তা‘আলার মোবারক শরীয়ার বাস্তবায়ন। এমন আন্দোলনের অপেক্ষা এখানে ছিল, যা দাওয়াত, জিহাদ এবং শরীয়ার আনুগত্যই নিজের পথ হিসেবে বিবেচনা করবে। যা হিন্দু বাহিনীর মোকাবেলায় তরবারির ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষা জানবে না। এখানকার পুরো জমিন সেই আন্দোলনের জন্য পিপাসিত ছিল, যাকে দুনিয়ার কোন ধোঁকাবাজ এজেন্সি তার কাঙ্খিত সফরের পথ থেকে এক ইঞ্চিও সরাতে পারবে না এবং যে আন্দোলন স্বীয় জিহাদে দ্বীনের কোন দুশমন ও মুনাফেক বাহিনীর অধীনতা মানতে প্রস্তুত হবে না। ঈমানদারগণ করজোড়ে দু‘আ করছিল, যেন এ কাশ্মীরে সেই আন্দোলন দাঁড়িয়ে যায় এবং ঝড়ের বেগে উপমহাদেশকে আপন কব্জায় নিয়ে নিবে। স্বদেশ আর জাতীয়তা নামক লাত ও মানাত মূর্তির উপর কুঠারাঘাত করবে। যা বক্ষকে সমস্ত প্রকর সাম্প্রদায়িকতা থেকে পবিত্র করে তাকে লিল্লাহিয়্যাত, ইসলাম ও ঈমানের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করবে। কাশ্মীর উপত্যকার এমন আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল, যার পরিচয় হবে أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارতথা কাফেরদের প্রতি সীমাহীন কঠোর এবং رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ তথা মুসলমানদের প্রতি কোমল হৃদয়। যে আন্দোলন তানজিম ও সংগঠনগুলোর মাঝে মত–পার্থক্যকে ভালোবাসা আর ভ্রতৃত্ব দিয়ে জোড়া লাগাবে এবং তাদেরকে এক কাতারে ও এক পথে এনে بُنْيَانٌ مَّرْصُوصٌ তথা সীসা ঢালা প্রাচীরে পরিণত করবে।
আলহামদুলিল্লাহ, ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। আজ কাশ্মীর উপত্যকার দিগন্তে এ রহমতের বৃষ্টি পুরো বিশ্ববাসীর দৃষ্টি গোচর হচ্ছে। কাশ্মীরে এ আন্দোলন আজ গা মোড়া দিয়ে উঠেছে এবং উপমহাদেশের সকল নির্যাতিত ও বঞ্চিতরা তার মাঝে নিজের মুক্তি এবং সফলতা দেখতে পাচ্ছে। এই বরকতময় আন্দোলনের চিত্তাকর্ষক শক্তি তার দাওয়াত ও পায়গাম, তার কার্যক্রম, জিহাদ এবং আল্লাহর উপর নির্ভরতার মাঝে নিহিত। এ আন্দোলন বিশেষ কোন গ্রুপ বা জামাতের নয়, বরং কাশ্মীর উপত্যকার সমস্ত ঈমানদার এবং সমগ্র উপমহাদেশের মুসলিম উম্মাহর আন্দোলন। বুরহান ওয়ানি, জাকির মূসা, মুফতি হেলাল, সুবজার আহমাদ ভাট এবং রায়হান খানের মত ব্যক্তিদের রক্ত এ স্বপ্নে আরো রং ঢেলে দিয়েছে। আজ সমগ্র কাশ্মীর আলহামদুলিল্লাহ ‘হয়তো শরীয়ত নয়তো শাহাদাত’ এর শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে এই কাফেলার সহযাত্রী হয়েছে।
উপমহাদেশের প্রিয় ভাইয়েরা!
বিশ্বাস রাখুন! এটা সেই আন্দোলনের আভাস, যা খোরাসান থেকে চিটাগাং এবং সিন্দু থেকে হিন্দ পর্যন্ত কুফুর ও জুলুমের শিক্ষা গুরুদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে এবং পুরো উপমহাদেশকে তাওহিদী কালিমার পতাকা তলে এনে ন্যায় ও ইনসাফের বসন্তকাল ফুটাবে। তার প্রথম শিবির যদি খোরাসানের মরুপ্রান্তর হয়, তবে দ্বিতীয় শিবির কাশ্মীর ও দিল্লী এবং তৃতীয় শিবির বাইতুল মাকদিস হবে। তার গতি পথে পাহাড়সম যত বাঁধা–বিঘ্নতাই থাক না কেন, তা কখনই বাধা হতে পারবে না। সময়ের ফেরাউন ও আবু জাহেলরা একে থামিয়ে দিতে চাচ্ছে, এ আন্দোলন থামবে না। এ আন্দোলন আল্লাহর হুকুমে পাহাড়–পর্বত ডিঙ্গিয়ে, নদী ও সাগরের বুক চিরে সামনে অগ্রসর হতে থাকবে। দুনিয়াবাসী দেখে নিবে, এর সামনে সকল তাগুত এবং পথের বাধা এসব প্রতারককে একেবারে সেভাবেই অথর্ব মনে হবে, ঠিক যেভাবে আজ উম্মতের এই গাদ্দার ও ধোঁকাবাজরা খোরাসানে এ আন্দোলনের সামনে অক্ষম অথর্ব মনে হচ্ছে। ইমারতে ইসলাম আফগানিস্তানের এই সফলতা এবং তার সামনে আরব অনারবের তাগুতদের ব্যর্থতা উপমহাদেশে গতিশীল এই জিহাদি আন্দোলনের সোনালি ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যাদের অন্তরদৃষ্টি আছে এবং যারা আপন রবের ওয়াদায় পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন, তারা ভবিষ্যতের দৃশ্যাবলি আজই কল্পনার দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছেন। কাশ্মীর উপত্যকায় শুরু হওয়া এ মোবারক আন্দোলন কাফের ও মোনাফেকদের সমস্ত বাধা মাড়িয়ে সম্মুখ পানে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ‘শরীয়ত অথবা শাহাদাত’ এর এই মহান কাফেলা উপমহাদেশে দখলদার মুশরিক ও প্রতারক শাসকদের তখত (শাহী আসন) পদদলিত করে তাদের ঝুটি ধরে কুদসের ভূমির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সুতরাং সেই ব্যক্তি সৌভাগ্যবান, যে নিজেকে এই মহান কাফেলার আনসার বানাবে এবং এই বিজয়ী সৈন্যদলের প্রস্তুতিতে নিজের ঘাম ও রক্ত ঝরাবে। এমনিভাবে সেই ব্যক্তিও ভাগ্যবান, যে এই জিহাদে শামিল হয়ে জাহান্নাম থেকে নিজের মুক্তির পাথেয় সংগ্রহ করবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বরকতময় বাণী–
عِصَابَتَانِ مِنْ أُمَّتِي أَحْرَزَهُمُ اللَّهُ مِنَ النَّارِ’ عِصَابَةٌ تَغْزُو الْهِنْدَ، وَعِصَابَةٌ تَكُونُ مَعَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ.
“আমার উম্মতের দু’টি দল এমন আছে, আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ করে দিয়েছেন। একটি দল হলো, যারা হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করবে। আরেক দল হলো, যারা ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) এর সঙ্গী হবে।”
(মুসনাদে আহমাদ : ৫/২৭৮, হাদীস নং– ২১৩৬২)
প্রিয় ভাইয়েরা! আমার এ আলোচনা উপমহাদেশের মুসলমানদের প্রতি এ আবেদন রেখে শেষ করছি যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রত্যেককে যে নেয়ামত ও যোগ্যতা দিয়ে সম্মানিত করেছেন, কেয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। এ জন্য সকল ঈমানদারের কাছে এ আবেদন, নিজের জান মাল দিয়ে কাশ্মীরে উদীয়মান এ বরকতময় জিহাদী আন্দোলনকে সাহায্য করুন। স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এটাও বলছি, ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দান কাশ্মীর পর্যন্ত সীমিত মনে করবেন না। ইন্ডিয়ান বাহিনী এবং ইন্ডিয়ার এই মুশরিক শাসকবর্গকে ভারতের ভিতরে বা বাহিরে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই আঘাত করুন। ইনশা আল্লাহ, আপনাদের এ সব আঘাত এক বিরাট পরিবর্তনের জন্য সহায়ক হবে। পাশাপাশি এর কারণে অবশ্যই অবশ্যই কাশ্মীরি ভাইদের উপর থেকে দুঃখের বোঝা হালকা হবে। এমনিভাবে কলম ও মুখের মাধ্যমেও জিহাদী আন্দোলনকে শক্তিশালী করুন এবং এ আন্দোলনের দাওয়াত ও দাবীকে ব্যাপক করতে নিজের পরিপূর্ণ শ্রম ব্যয় করুন।
একটু কল্পনা করুন যে, কেয়ামতের দিন উপস্থিত হয়েছে। আমরা আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান, তখন জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, যখন “ তোমরা হালকা ও ভারী অবস্থায় অভিযানে বেরিয়ে পড়” এর ঘোষণা করা হচ্ছিল, ঐ সময় তোমরা কেন চার দিনের যিন্দিগীতে নিমজ্জিত হয়ে লড়াইয়ের ময়দান থেকে দূরে বসে তামাশা দেখছিলে?!
আরো মনে রাখবেন, আপনাদের কাছে যে যোগ্যতা, যে উপকরণ ও অস্ত্র আছে, তার উপর কোন প্রতিষ্ঠান বা শাসকের নয়, বরং এ উম্মতের মাজলুম মুসলমানদের হক আছে। এসব উপকরণ ও অস্ত্র এই মাজলুম উম্মতের আমানত। সুতরাং তা মাজলুম উম্মাহর রক্ষার কাজেই ব্যবহার করুন। এর মাধ্যমে কাশ্মীরে অবরুদ্ধ আপন ভাইদের প্রতি ইনসাফ করুন। কিন্তু, আপনারা যদি এমনটি না করেন, তবে মনে রাখবেন, আল্লাহর দরবারে এ বিষয়ে সেই সময় জিজ্ঞাসা করা হবে; যখন কোন প্রতিষ্ঠান, কোন জেনারেল এবং কোন শাসক আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচাতে পারবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী–
مَا مِنِ امْرِئٍ يَخْذُلُ امْرَأً مُسْلِمًا فِي مَوْطِنٍ تُنْتَهَكُ فِيهِ حُرْمَتُهُ، وَيُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ، إِلَّا خَذَلَهُ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نُصْرَتَهُ.
“যে কোন ব্যক্তি কোন মুসলমানকে যদি এমন সহায় সাহায্যহীন অবস্থায় ফেলে রাখে, যখন তার সম্মান ভূলুন্ঠিত হচ্ছে, তার ইজ্জতের উপর হাত দেওয়া হয়েছে, ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাকে ঐ সময় আশাহত করে রাখবেন, যখন তার সাহায্যের খুবই প্রয়োজন হবে।”
আল্লাহ আমাদেরকে কাশ্মীরি মুসলমানদের সাহায্য করার তাওফীক দান করুন এবং উপমহাদেশে উদীয়মান এ মহান জিহাদী আন্দোলনের সৈনিক ও সাহায্যকারী হিসেবে কবুল করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
وآخر دعوانا أن الحمد للہ ربّ العالمین۔