মানহাযের ব্যাপারে নির্দেশনা,লেকচার প্রদানকারী শাইখ উসামা বিন লাদিন
Ansarullah Bengali Team
আনসারুল্লাহ বাংলা টিম
Presents
পরিবেশিত
The Bengali translation
বাংলায় অনূদিত
of Audio Lecture
অডিও লেকচার
Entitled
শিরোনাম
Guidance Regarding the Manhaj
মানহাযের ব্যাপারে নির্দেশনা
By Shaykh
লেকচার প্রদানকারী শাইখ
Usama Bin Ladin
উসামা বিন লাদিন
May Allah Grant him Highest Paradise
আল্লাহ্* তাঁকে জান্নাত-উল-ফিরদাউস নসীব করূন
আর্কাইভ ডাউনলোড লিঙ্কঃ
PDF
http://archive.org/download/BengaliTranslationOfGuidanceRegardingTheManhajByShaykhUsamaBinLadin/ManhajBangla.pdf
Archive Page
https://archive.org/details/BengaliTranslationOfGuidanceRegardingTheManhajByShaykhUsamaBinLadin
https://archive.org/details/GuidanceRegardingTheManhajByShaykhUsamaBinLadinrahimahullah
Don’t forget us in your Sincere Prayer
আপনাদের আন্তরিক দোয়ায় আমাদেরকে ভুলবেন না
==========================
“মানহাজের ব্যাপারে নির্দেশনা”
আলোচনায়ঃ শাইখ উসামাহ্ ইব্ন লাদিন (রহিমাহুল্লাহ্)
আনসারুল্লাহ বাংলা টীম
পরম করুণাময় এবং অসীম দয়ালু আল্লাহ্র নামে শুরু করছি ।
সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহ্র জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক, আর, সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সাহাবীগণের প্রতি ।
এরপর,
মুসলিম উম্মাহ্ বর্তমান যে দিনগুলোর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর আমেরিকান এবং ইসরায়েলী শক্তিসমূহের দখলদারি ও অত্যাচার ও আগ্রাসন থেকে যা কিছু এই উম্মাহ্র উপর সংঘটিত হয়েছে, আর পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামের সুশীতল ছায়া যেভাবে ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে, আমরা যখন এসব নিয়ে কথা বলি, তখন এই দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুহাম্মাদ () -এর দেখানো পথনির্দেশনার অনুসন্ধান করা আমাদের জন্য একান্ত জরুরী হয়ে পড়ে, সেই দিনটি থেকে, যেদিন এটি একটি অচেনা বিষয় হিসেবে ইসলামের সূচনালগ্নে আবির্ভূত হয়েছিল ।
সুতরাং নিশ্চিতভাবে, যে পর্যবেক্ষণ করে, সে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে যে, মুহাম্মাদ () যখন বিভিন্ন গোত্রের কাছে দা’ওয়াহ্-এর জন্য কথা বলেছেন এবং ইসলামের দা’ওয়াহ্ উপস্থাপন করেছেন, তখন তিনি খুব সচেতন ছিলেন। আর যখন আমরা সেই মূল বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করি, যেগুলোর প্রতি তিনি () বিভিন্ন গোত্রকে আহবান করেছিলেন, তখন আমরা দেখতে পাই যে, সেগুলো খুবই স্পষ্টঃ
১। তিনি () তাদেরকে তাওহীদের সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আহবান করেছিলেন, যা হল, আল্লাহ্ ব্যতীত ‘ইবাদাত পাবার যোগ্য কোন ইলাহ নেই, এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্র রসূল।
২। আর এরপর তিনি () তাদেরকে আহবান করেছিলেন, যেন তারা তাকে () নিরাপত্তা প্রদান করে এবং সাহায্য করে ।
আর তিনি () যখন আমীর সা’সা‘আহ্-এর বংশধরদের প্রতি দা’ওয়াহ্ দিয়েছিলেন, তখন এটি পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়েছিল । কারণ যখন তারা তাকে () জিজ্ঞেস করেছিলঃ “ও ‘আরব ভাইজান, আপনি কিসের প্রতি আমাদেরকে আহবান করছেন?” তিনি () বলেছিলেনঃ “আমি আপনাদেরকে সেই সাক্ষ্য প্রদানের দিকে আহবান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত ‘ইবাদাত পাবার যোগ্য কোন ইলাহ নেই, এবং আমি আল্লাহ্র রসূল, এবং যে, আপনারা আমাকে নিরাপত্তা দিবেন এবং সাহায্য করবেন ।”
সুতরাং, এখানে একটি পরিষ্কার স্মরণীয় শিক্ষা দেখা যাচ্ছে যে, এই দা’ওয়াহ্ আর এই কালিমার অবশ্যই একটি ভূখন্ডের প্রয়োজন, আর এই পবিত্র বৃক্ষের প্রয়োজন একটি ভূমির, যার উপর এটি বেড়ে উঠবে। সুতরাং, এই ভূখন্ডটি হবে এই দা’ওয়াহ্কে নিরাপত্তা প্রদান ও সাহায্য করার মাধ্যম। আর এ থেকেই তিনি () এই ভূখন্ডের সন্ধান করছিলেন, আর সেই সাথে মক্কাতে দা’ওয়াহ্ দিচ্ছিলেন, আর এ অবস্থায় তিনি () রইলেন ১৩ বছর ।
আর আমাদের যত ‘ইল্ম রয়েছে, তা তাঁর () ইলমের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ, আর তিনি ছিলেন ‘আরবদের মধ্য থেকে সবচেয়ে সাবলীলভাষী, যাকে জাওয়ামি’উল-কালাম (সবচাইতে সংক্ষিপ্ত শব্দের দ্বারা ব্যাপক অর্থের প্রকাশ) দেওয়া হয়েছিল, তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি যাকে সপ্ত আকাশের ওপর থেকে ওহীর মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছিল। আর এই সবকিছুর পরে, অল্পকিছু মহৎপ্রাণ সাহাবী (রাযিআল্লাহু আনহু) ছাড়া আর কেউই তাঁর () উপর ঈমান আনেনি ।
আর এখানে এই বিষয়টিও স্বচ্ছ হয়ে উঠে যে, এই কালিমাটি, এটির শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও, এটির সুশীতল ছায়ার দ্বারা এই পৃথিবীকে ছায়াবৃত করার জন্য আরও কিছু প্রভাবক প্রয়োজন । আর তাই তিনি () সেই অবস্থায় (মক্কাতে দা’ওয়াহ্রত অবস্থায়) রইলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আল-মাদীনাহ্ আল-মুনাওয়্যারাহ্-এর দ্বার খুলে দিলেন, আর আনসারগণের (রাযিআল্লাহু আনহু) [আল-আওস এবং আল-খাযরাজ ] দ্বারা এর সংরক্ষণ করলেন। আর যখন তারা [আনসার(রাযিআল্লাহু আনহু)] দা’ওয়াহ্-কে সাহায্য করা শুরু করলেন, তখন দ্বীন ইসলাম ছড়িয়ে পড়লো, আর কয়েক বছরের মাঝেই ‘আরব উপদ্বীপের হাজার হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করলো, আর মানুষেরা ইসলামের মাঝে দলে দলে ভিড় জমালো ।
সুতরাং, এখানে একটি স্মরণীয় শিক্ষা দেখা যাচ্ছে, যা আমি উল্লেখ করেছি যে, শক্তি ছাড়া দা’ওয়াহ্ দুর্বলই রয়ে যাবে, আর এই শক্তির সন্ধান করার জন্য, একটি ভূখন্ড, একটি পরিবেশ থাকা খুবই জরুরী ।
ইসলামিক ভূমিসমূহ ও ইসলামিক খিলাফাহ্-এর অপসারণ এবং আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত অপর কিছু দিয়ে শাসন করে এমনসব শাসনব্যবস্থাসমূহের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বাস্তবতাটি এখন খুবই স্বচ্ছ হয়ে পড়েছে । এ সকল শাসনব্যবস্থাসমূহ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্র আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে, যদিও এগুলোর শাসনাধীন ভূখন্ডসমূহে প্রচুর পরিমাণে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ও স্কুল দেখা যায়, প্রচুর কিতাবাদি দেখা যায়, আর দেখা যায় প্রচুর দা’য়ী, ইমাম, মাসজিদ এবং ক্বুরআনের হাফিয । আর এ সবকিছুর পরেও এ সকল স্থানে ইসলাম ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে, এর কারণ হল, এ সকল স্থানের মানুষেরা মুহাম্মাদ ()-এর মানহাজ অনুসারে চলছে না ।
সুতরাং, এই মানহাজ, যা আমাদের সামনে সুবাহের ন্যায় স্বচ্ছ, তা কিছু সুনির্দিষ্ট গুণাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা শারী‘আহ্-এর দালীলে পাওয়া যায়। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে, তবে আল্লাহ্ অপর এক ক্বওম নিয়ে আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ্ ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহ্কে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফ্ফারদের প্রতি অতি কঠোর, তারা আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না। এটা আল্লাহ্র অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন, আর আল্লাহ্ প্রাচুর্যদানকারী, সর্বজ্ঞ।” [আল-মাইদাহঃ৫৪]
সুতরাং, এই আয়াতটি আমরা যে অবস্থার মধ্যে আছি সেই সম্পর্কে বলছেঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে,…”
যখন রিদ্দাহ্/দ্বীন-ত্যাগ সংঘটিত হয়, তখন মানুষকে দ্বীন ইসলামে ফিরিয়ে আনার জন্য কি কি গুণাবলীর প্রয়োজন? তো এখানে ৬টি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার কথা থেকে শুরু করেঃ “…যাদেরকে আল্লাহ্ ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহ্কে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফ্ফারদের প্রতি অতি কঠোর,…”। সুতরাং, এই গুণাবলী অর্জন করা আমাদের জন্য খুবই জরুরীঃ
[১] আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি একান্ত ভালোবাসা
[২] ঈমানদারদের প্রতি বিনয় ও সহানুভূতি
[৩] কল্যাণের সাথে সাহায্য করা এবং তা করা সর্বোত্তম পদ্ধতিতে
[৪] কুফ্ফারদের প্রতি কঠোরতা, আর এটা ইসলামের সবচাইতে শক্তিশালী বন্ধনঃ আল-ওয়ালা’ ওয়াল-বারা’ (আনুগত্য এবং সম্পর্কচ্ছেদ)-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, আমরা ঈমানদারদের সাথে আনুগত্য ও কর্তব্যপরায়ণতার সম্পর্ক স্থাপন করি, এবং আমরা কুফ্ফারদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করি, আর তাদের সাথে খুব কঠোর আচরণ করি ।
[৫,৬] এরপর ৫ম এবং ৬ষ্ঠ গুণাবলী হলঃ “…তারা আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না…”।
আর, মানুষদেরকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনার জন্য, আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করা, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া না করা – এ বৈশিষ্ট্য দু’টির গুরুত্ব অত্যাধিক।
সুতরাং, যারা এমন মনে করে যে, মানুষকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব (এই গুণাবলী অর্জন ব্যতীত) এবং একটি ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, যখন কিনা ইসলামের ছায়া পৃথিবীর বুক থেকে অপসারিত হয়েছে, তবে এমন মানুষেরা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেন নি । কারণ এই আয়াতটি সম্পূর্নরূপে স্বচ্ছ এবং স্পষ্টত প্রতীয়মান একটি আয়াত ।
সুতরাং, মানুষের উপর কর্তৃত্বশীল হবার জন্য ঈমানদারদের মাঝে ভালোবাসা এবং আনুগত্যের সম্পর্কস্থাপন করা একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়, আর সেই সাথে কর্তৃত্বশীল হবার জন্য অত্যাবশ্যক হল, কুফ্ফারদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা, আর আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করা [যেমনটি তিনি সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “…নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না…”]। সুতরাং, এটি সকল প্রকারের সাহায্য-সহযোগিতা এবং সকল প্রকারের সৎকাজের আদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে ।
সুতরাং, যখন আমরা এ সকল গুণাবলী অর্জন করতে সফল হব, এবং এমন সাহায্যকারী গঠন করতে পারব যারা এ সকল গুণাবলী ধারন করে, তবে আমরা একটি শক্তিশালী ভিত্তি পাব, যার দ্বারা বড় পরিবর্তন সম্ভব হয়ে উঠবে, আর সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করা সম্ভব হয়ে উঠবে ।
আর এই বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য দালীলসমূহের দিকে তাকালে আমরা আমাদের রসূলুল্লাহ্র () সেই হাদীসটি দেখতে পাই যা, আল-হারিস আল-আশ‘আরীর (রাযিআল্লাহু আনহু) দ্বারা বর্ণিত হয়েছে, যাতে তিনি () বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ইয়াহ্ইয়া ইব্ন যাকারিয়্যাহ্কে পাঁচটি বিষয়ের হুক্ম দিয়েছিলেন, যেগুলোর উপর তাকে ‘আমল করার জন্য এবং তিনি যেন এগুলোর উপর ‘আমল করার জন্য বনু ইসরঈলকে আদেশ দেন, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু তিনি তা করা থেকে বিরত থেকেছিলেন, তাই ‘ঈসা বললেনঃ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আপনাকে পাঁচটি বিষয়ের হুক্ম দিয়েছেন, যেগুলোর উপর আপনাকে ‘আমল করার জন্য এবং আপনি যেন বনু ইসরঈলকে এগুলোর উপর ‘আমল করার আদেশ দেন, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, হয় আপনি তাদের আদেশ করুন, অথবা আমি তাদের আদেশ করব।’”
সুতরাং, এখানে এই দ্বীনের একটি পরম বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে, আর তা হল, আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা প্রশংসনীয় এবং সকল প্রকারের নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত, আর আল-ইসতিবদাল (আল্লাহ্র একদল মানুষকে অপর একদল মানুষের দ্বারা প্রতিস্থাপন) সুন্নাহ্টি কারোও ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম নয় । কারণ এখানে দেখা যাচ্ছে যে, একজন আল্লাহ্র নাবী আল্লাহ্ যে দায়িত্ব বহন করার আদেশ দিয়েছেন, তাতে কিছুমাত্র পিছবা হয়েছেন, আর তাই আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা অপর এক নাবীকে জানালেন, “হয় তিনি [ইয়াহ্ইয়া (আঃ)] তাদেরকে আদেশ করবেন, নতুবা আপনি তাদেরকে আদেশ করেন ।” সুতরাং, আল্লাহ্ ও তার রসূলের () আদেশ পালনের ক্ষেত্রে পিছে পরে থাকার ক্ষেত্রে আমরা কে? সুতরাং, যদি আমরা পিছবা হই, তবে আল-ইসতিবদাল সুন্নাহ্টি আমাদের উপরও প্রযোজ্য হয়ে পড়বে।
ফলে ‘ঈসা (আঃ) তখন ইয়াহ্ইয়াকে (আঃ) বললেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আপনাকে পাঁচটি বিষয়ের হুক্ম দিয়েছেন, যেগুলোর উপর আপনাকে ‘আমল করার জন্য এবং আপনি যেন বনু ইসরঈলকে এগুলোর উপর ‘আমল করার আদেশ দেন, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, হয় আপনি তাদের আদেশ করুন, অথবা আমি তাদের আদেশ করব।” ফলে ইয়াহ্ইয়া বললেন, “আমি ভয় করছি যে, আপনি যদি এগুলোতে আমার অগ্রগামী হন, তাহলে আমি পৃথিবীর দ্বারা গ্রাসকৃত হব অথবা শাস্তিপ্রাপ্ত হব।” ফলে, তিনি মানুষদেরকে বাইতুল-মাক্বদীসে একত্র করলেন, যার ফলে সমগ্র মাসজীদ মানুষদের দ্বারা ভরে গেল, আর তারা দাঁড়িয়েছিলেন ছাদের উপরে, এবং তিনি বললেনঃ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমাকে পাঁচটি বিষয়ের হুক্ম দিয়েছেন, যেগুলোর উপর আমাকে ‘আমল করার জন্য এবং আমি যেন তোমাদেরকে এগুলোর উপর ‘আমল করার আদেশ দেই, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছে”
প্রথমটি হল, তোমরা আল্লাহ্র ‘ইবাদাত করবে এবং তার সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করবে না । কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করে, তার উদাহরণ হল সেই দাসের উদাহরণের ন্যায়, যাকে এক ব্যক্তি তার সর্বোত্তম স্বর্ণ ও রৌপ্য সম্পদের দ্বারা ক্রয় করেছে এবং বলেছেঃ ‘এই হল আমার ঘর এবং আমার জীবিকার উপকরণ, সুতরাং কাজ কর এবং আমার কাছে এর মজুরি নিয়ে এসো ।’ সুতরাং, সে কাজ করতে গেল আর এর থেকে অর্জিত মজুরি তার মালিক ব্যতীত অপর এক ব্যক্তিকে দিয়ে দিল। সুতরাং, তোমাদের মধ্য থেকে কে তার দাসের এরূপ আচরণ মেনে নিবে ?
আর আল্লাহ্ তোমাদেরকে সলাত আদায় করার আদেশ দিয়েছেন । সুতরাং, যখন তোমরা সলাতে নিমজ্জিত থাকো, তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডলী ঘুরিয়ে নিও না, কারণ নিশ্চয়ই বান্দা যতক্ষণ সলাতে নিমজ্জিত থাকে, এবং মুখমন্ডলী না ঘুরিয়ে একনিষ্ঠ মনে সলাতে অবস্থান করে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ও তার মুখমন্ডলী তার বান্দার দিক করে রাখেন।
এবং তিনি তোমাদেরকে সিয়াম পালনের আদেশ দিয়েছেন, কারণ এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির উদাহরণের ন্যায়, যে কোমরবন্ধনী (অর্থাৎ বেল্ট) পরিহিত, আর এর সাথে আটকানো রয়েছে একটি থলে যাতে রয়েছে কস্তুরি, আর সকল মানুষেরা (অথবা সে নিজেই) এর সুগন্ধে বিস্ময় বোধ করছে । কারণ, নিশ্চয়ই সিয়ামপালনকারী ব্যক্তির মুখ থেকে আসা গন্ধ আল্লাহ্র কাছে কস্তুরির সুগন্ধ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়।
এবং তিনি তোমাদেরকে যাকাত প্রদানের আদেশ করেছেন, কারণ এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির উদাহরণের ন্যায়, যাকে তার শত্রুপক্ষ বন্দী করেছে, তার হাতদু’টি ঘাড়ের সাথে বেঁধেছে এবং তার শিরচ্ছেদের জন্য তাকে প্রস্তুত করা হয়েছে, আর এমন সময় সে বলেছেঃ ‘আমি অল্প কিংবা বেশী পরিমাণ মুক্তিপণের বিনিময়ে আমাকে তোমাদের থেকে মুক্ত করব’, সুতরাং সে নিজেকে তাদের থেকে মুক্ত করল ।
আর আল্লাহ্ তোমাদেরকে তার যিক্র/স্মরণ করার জন্য আদেশ করেছেন, কারণ এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির উদাহরণের ন্যায়, যাকে তার শত্রু ধাওয়া করছে এবং দ্রুততার সাথে তার নিকটবর্তী হচ্ছে, আর তখন সে একটি সংরক্ষিত দুর্গের নিকট পৌছলো, আর এভাবে সে তাদের থেকে নিজেকে রক্ষা করল । আর একইভাবে বান্দার জন্য আল্লাহ্র যিক্র/স্মরণ হল সংরক্ষিত দুর্গের ন্যায়, যেটি ব্যতীত সে নিজেকে শাইতন থেকে রক্ষা করতে পারে না।”
আর এরপর আল্লাহ্র রসূল () বললেনঃ “আর আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করছি, যা আল্লাহ্ আমাকে আদেশ করেছেন, আর তা হলঃ শ্রবন, আনুগত্য, জিহাদ, হিজরাহ্ এবং জামা‘আহ্।”
[ইমাম আহ্মাদ ও ইমাম আত্-তিরমিযির দ্বারা বর্ণিত]
সুতরাং, এখানে বিষয়টি হল, প্রথম পাঁচটি বিষয় যা হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ, এগুলোকে অপর পাঁচটি বিষয় ব্যতীত মানবজাতির জন্য একটি শাসনব্যবস্থা বা কর্মপদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় । একইভাবে একজন ব্যক্তির পক্ষে কমপক্ষে এবং অন্তরের দিক দিয়ে মুসলিম হওয়া সম্ভব নয়, যখন সে মানবরচিত বিধানের দ্বারা শাসন করে এবং পৃথিবীতে ইসলামের কর্তৃত্ব থাকে না । আর যে ইসলাম মুহাম্মাদ () -এর কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং যেটিকে তিনি মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, সেটি পাঠানোর কারণ হল, এটি যেন সমগ্র পৃথিবীকে শাসন করে, সকল প্রকারের বিচার-আচার যেন এটির দিকেই ঘুরিয়ে নেয় এবং নিছক কিছু আনুষ্ঠিকতার রূপ যেন না নেয়। সুতরাং, এই পাঁচটি বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর আমরা যদি এই পাঁচটি বিষয়কে মনযোগ দিয়ে দেখি, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন গোত্রের প্রতি রসূল () -এর দা’ওয়াহ্-এর বাস্তবতার সাথে এই পাঁচটি বিষয় সম্পূর্নরূপে সঙ্গতিপূর্ণ এবং দৃঢ়সমর্থকঃ
[১] “…সেই সাক্ষ্য প্রদানের দিকে আহবান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত ‘ইবাদাত পাবার অধিকারী কোন ইলাহ নেই, এবং আমি আল্লাহ্র রসূল,…” এবং এই সাক্ষ্য প্রদানের সাথে জড়িত সকল শর্তাবলি ও করণীয় বিষয়ের বাস্তব প্রয়োগ।
[২] “…এবং যে, আপনারা আমাকে নিরাপত্তা দিবেন এবং সাহায্য করবেন।”
সুতরাং, নিরাপত্তা প্রদান ও সাহায্য করা – এ দু’টি বিষয় ঐ পাঁচটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। কারণ নিরাপত্তা প্রদান ও সাহায্য প্রদানের জন্য প্রয়োজন একটি জামা‘আহ্, আর তাদের প্রয়োজন শোনা ও আনুগত্য করা, এবং তাদের প্রয়োজন জিহাদ করার এবং প্রয়োজন হিজরাহ্ করার। আর আমরা যখন আল্লাহ্র কিতাব এবং আল্লাহ্র রসূলের () সুন্নাহ্র অনুসরণের চেষ্টা করি, তখন আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, ইসলামিক স্টেইটের প্রতিষ্ঠা এবং দ্বীনের সম্প্রসারণের পদ্ধতি হিসেবে এগুলোর কথা জোর দিয়ে বলা হচ্ছেঃ
[১] একটি জামা‘আহ্
[২] আদেশ শোনা
[৩] আনুগত্য করা
[৪] হিজরাহ্ করা
[৫] জিহাদ করা
সুতরাং, যারা হিজরাহ্ করার এবং আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করার ত্যাগ স্বীকার ব্যতীত ইসলামের জন্য কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে এরূপ মানুষেরা মুহাম্মাদের () মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেনি। আর যদি তারা বুঝে থাকে, তবে তারা এর উপর ‘আমল করেনি, বরং তারা অন্যান্য ধরনের আনুগত্য ও ‘ইবাদাতের দ্বারা নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখছে। সুতরাং, এরূপ মানুষেরা এ সকল বড় ‘ইবাদাতসমূহের ভারী ফলাফল থেকে পলায়ন করছে, কারণ নিশ্চয়ই জিহাদ একটি কষ্টকর ‘আমল, যা আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, এখন পর্যন্ত যা বলা হয়েছে, তা থেকে এটা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, জামা‘আহ্ ও জিহাদের গুরুত্ব অত্যাধিক।
আর আমরা এখন এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে আছি যে, আমাদের এমন কোন ভূমি নেই যেখানে আমরা হিজরাহ্ করতে পারি। এই সুযোগটি একটি অল্প সময়ের জন্য ছিল, আর এটি ছিল একটি বিরল সুযোগ, কারণ খিলাফাহ্-এর পতনের পর থেকে ইসলামের অকৃত্রিম মানুষদের জন্য একটি ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব করে তুলার জন্য ক্রুসেডাররা কঠোর পরিশ্রম করেছে। আর এরপর আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার পূর্বনির্ধারিত হুক্ম অনুসারে আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ চলতে থাকলো আর সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাজিত হল। ক্রুসেডাররা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভয় ও আতংকে মুসলিমদের কার্যকলাপের প্রতি তাদের প্রহরা ও উদ্বেগের কথা ভুলে গিয়েছিল, আর সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করার সম্ভাব্য যেকোন উপায় তারা প্রয়োগ করতে রাজী ছিল, এমনকি যদি এর মানে দাঁড়ায় মুজাহিদ্বীনদের বিরুদ্ধে না যাওয়া। সুতরাং, সেই দরজাটি খোলা ছিল, আর এরপর ১০ বছর হয়ে গেছে।
যাহোক, খুবই দুর্ভাগ্যবশত মুসলিম উম্মাহ্ তার এই অবশ্যপালনীয় কর্তব্যের দায়িত্ব বহনের জন্য উঠে দাঁড়ায়নি, বিশেষকরে যারা ‘উলামা, যারা দ্বীনের দিকে আহবানকারী, যারা বিভিন্ন ইসলামিক গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট, তাদের কথা বলছি। আর যারা জিহাদের ভূমিতে এসেছিল, তারা ছিল মুসলিম উম্মাহ্র খুবই স্বল্প সংখ্যক যুবক মুসলিম, আর এসেছিল কিছু ব্যবসায়ীদের থেকে আসা অর্থনৈতিক সাহায্য, কিন্তু একটি শক্তিশালী ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য এটি যথেষ্ট ছিল না।
আর তখন একটা ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠার ভালো সম্ভাবনা ছিল যা হত অঞ্চলভিত্তিক বা গোত্রভিত্তিক বা জাতীয়তাভিত্তিক আনুগত্য থেকে সম্পূর্ন মুক্ত ইসলামিক সংজ্ঞানুযায়ী একটি ভূমি, যখন আফগান ভাইয়েরা একটা অসাধারণ সহজ-উপযোগী পরিবেশ ও সমর্থন উপভোগ করছিল।
তবুও দুর্ভাগ্যবশত, সহজ-উপযোগী পরিবেশের উপস্থিতি, এই পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহন করার জন্য বিভিন্ন ইসলামিক গোষ্ঠী, ‘উলামা এবং চিন্তাবীদদের প্রতি বিশেষ করে শাইখ ‘আব্দুল্লাহ্ ‘আযযাম (রহিঃ) এবং অন্যান্য ভাইদের করা বার বার আহবান, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ইত্যাদি সত্ত্বেও বেশীরভাগেরই প্রতিউত্তর ছিলঃ
“তার মাঝে দেখছি না কোন প্রাণ,
যে বিষয়ের করছো তুমি আহবান”
[কবিতা]।
মানুষেরা ভৌগলিক এবং আঞ্চলিক প্রীতি নিয়ে ছিল উদ্বিগ্ন ও ব্যস্ত, আর প্রত্যেকেই চাচ্ছিল তার নিজস্ব ইসলামিক ভূমি, প্রত্যেক গোষ্ঠী তার নিজস্ব জন্মাঞ্চলে একটি নিজস্ব ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিল, সবাই যেন এ সকল অ-ইসলামিক মানসিকতার জালে বন্দী হয়ে গিয়েছিল।
সুতরাং, ১০ বছর ধরে এই সুযোগটি ছিল, এরপরেও মানুষেরা এর থেকে সুযোগ গ্রহন করার জন্য নড়ে নি। আর আমি এই কথাগুলো বলছি এটা বুঝানোর জন্য যে, বিষয়টা খুব সহজ ছিল না, আর বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়টিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
এরপর আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা সেই সময় এবং এই সময়ের মাঝে তালিবানদের জাগরণ এবং তাদের প্রসার এবং একটি ভূমি প্রতিষ্ঠার এবং এরপর থেকে চলতে থাকে বর্তমান দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধের অনুমতি দিলেন যা আনুমানিক ছয় বছর বা তার চেয়েও দীর্ঘ সময়ব্যাপি চলছে। আর মানুষ থেকেছে নিজের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার জালেই বন্দী হয়ে, আর সেই সাথে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার জালেও হয়েছে বন্দী যা তালিবানদের খ্যাতি ধ্বংস করার জন্য তাদের নির্দয় প্রচারাভিযান চালিয়েছে। মানুষকে ভুল দিকে প্রভাবিত করার জন্য হয়ত আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নিন্দা করা যায়, কিন্তু যা মেনে নেওয়া খুব কঠিন তা হল, যাদেরকে মানুষ ইসলামের সমর্থনকারী, সাহায্যকারী, আহবানকারী হিসেবে জানতো, তারা বলেছেঃ “আমরা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলাম!” আফগানিস্তান ‘আরব উপদ্বীপসমূহ থেকে কিংবা মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য যেকোন অংশ থেকে কয়েক ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত।
সুতরাং, সাহায্য পাঠানোর ক্ষেত্রে তাদের দেরী করে ফেলা, এমনকি যদিও এই ভূমিটির নাম ছিল তালিবানদের ভূমি – ‘ইল্মের ছাত্রদের ভূমি – এটি বাহ্যিকভাবে তাদের বুঝ এবং তাদের সত্যবাদিতার এক অস্বাভাবিক শূণ্যতাকেই আমাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়, আর আল্লাহ্ ছাড়া কোন শক্তি বা ক্ষমতা নেই, আর এ ব্যাপারে আল্লাহ্ই ভালো জানেন। সুতরাং, এই ভূমিটি এখন আর নেই, আর তারা একটি আংগুলও নাড়ায়নি।
আর আমি বলিঃ আমার নিশ্চিত বিশ্বাস রয়েছে যে, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার রহমতে, একটি ইসলামিক ভূমি আর ইসলামিক খিলাফাহ্ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট উপাদান ও সক্ষমতা এই উম্মাহ্র রয়েছে, কিন্তু, আমাদেরকে এ সকল উপাদান ও সক্ষমতাসমূহকে জানাতে হবে যে, এরূপ করাটা তাদের জন্য ফার্দ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর সেই সাথে যারা এ সকল উপাদান ও সক্ষমতাসমূহের প্রয়োগকে তাদের ভুল উক্তিসমূহের দ্বারা সীমিত ও সীমাবদ্ধ করছে, তাদেরকে আমাদের জানাতে হবে যে, তারা এর দ্বারা গুণাহ অর্জন করছে। সুতরাং, যদি যুবকেরা এবং ব্যবসায়িকেরা তাদের ফার্দ কর্তব্য উপলদ্ধি করতে পারত, তাহলে আমাদের পক্ষে এই কাজটি করা সম্ভব হত, যার ফলে উম্মাহ্র বাকী অংশ থেকে কর্তব্য অবহেলার গুণাহ্ সরানো যেত, যেহেতু তখন আমাদের উপর আপতিত যন্ত্রনা ও দুর্দশা দূরীভূত করা হত।
আমরা এখানে সে সকল মানুষদের কথা বলছি যারা বলে যেঃ “জিহাদের জন্য সমগ্র উম্মাহ্র প্রয়োজন নেই।” যদিও এই উক্তিটি সত্য, কিন্তু সত্যের প্রসারের উদ্দেশ্যে এটি উচ্চারিত হয়নি। কারণ আজকের জিহাদের পক্ষে সমগ্র উম্মাহ্কে আবাসিত করা এক অসম্ভব বিষয়, আর যারা আগ্রাসী শত্রুবাহিনীকে প্রতিহত করার কাজে নিয়োজিত, তারা সমগ্র উম্মাহ্র একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ। এটা সত্য। কিন্তু আরেকটি বিধি রয়েছে যে, জিহাদ একটি ফার্দ ‘আইন (ব্যক্তিগতভাবেও অবশ্যপালনীয় কর্তব্য), আর তারা এই বিধির প্রয়োগের ব্যাপারে আমাদের সাথে ভিন্নতা পোষণ করে। তারা বলেঃ “আমরা তোমাদের কাছে কয়েক হাজার সাহায্যকারী সৈন্য পাঠালাম, আর তোমরা তাদের আবাসিত করতে পারছ না?” আর তারা বলেঃ “আমাদের প্রত্যেকেরই কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি ময়দান পরিত্যাগ করা এবং আমাদের সবার জিহাদে যোগদান করা একটি অযৌক্তিক বিষয়!” আর এখানে এই যুগের দূষণ পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠে, বস্তুবাদের দূষণ, বুদ্ধিবৃত্তির দূষণ এবং এগুলোর প্রসার। কারণ এগুলো হল এমনসব বিধি যেগুলো এই উম্মাহ্র সালাফদের (পূর্ববর্তীদের) থেকে ন্যায়পরায়ণ ফুক্বাহাদের ঐকমত্য থেকে এসেছে, আল্লাহ্ যেন তাদের উপর রহম করেন, আর আজকাল কিছু নতুন ফুক্বাহা দেখা যাচ্ছে যারা উম্মাহ্র ঐকমত্যর বিরুদ্ধে যাচ্ছে! যখন জিহাদ ফার্দ ‘আইনে পরিণত হয়, তখন এটার গুরুত্ব সর্বাধিক হয়ে উঠে, যা শাইখ উল-ইসলাম [ইব্ন তাইমিয়্যাহ্ (রহিঃ)] উল্লেখ করেছেনঃ “স্বয়ং ঈমান আনার পরে আগ্রাসী শত্রু পক্ষের সৈন্যদেরকে প্রতিহত করার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ কোন ফার্দ নেই, যারা দ্বীন ও মুসলিমদের জীবনকে হুমকি দেয়।”
সুতরাং, আপনার এখানে এ কথা বলার কোন সুযোগ নেই যে, যদি তারা সকলে বেড়িয়ে পড়ে তবে জিহাদের পক্ষে তাদের আবাসন সম্ভব নয়। এরূপ কথা আসলে একজনের বুঝ-এ অস্বাভাবিক রকমের শূণ্যতা এবং পৃথিবীর প্রতি অস্বাভাবিকভাবে আসক্তি থাকার ফলেই হয়ে থাকে। ফার্দ ‘আইন বিষয়টি তখনই ফার্দ কিফায়াতে পরিণত হয়, যখন যথেষ্ট পরিমাণের মুসলিম মুজাহিদ আগ্রাসী শত্রুবাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য অগ্রসর হয়। সুতরাং, এই অগ্রসর হওয়ার পদ্ধতিটির মাধ্যমেই এই ফার্দ ‘আইন সকলের উপর থেকে অপসারিত হয়, আর বাকিরা থেকে যায়, যারা পিছনে পড়ে ছিল, তাদের বিভিন্ন কাজের ময়দানে।
আর দুর্ভাগ্যবশত, এটা ইসলামের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে বাঁধাগুলোর মধ্যে একটা অন্যতম প্রধান কারণ, আর এটা তাদের লিখাসমূহ, তাদের বার্তাসমূহ এবং তাদের মিটিংসমূহে প্রকাশ পায়। তারা বলেঃ “জিহাদ একটি অনেক বড় ‘ইবাদাত, কিন্তু আরও অনেক ধরনের ‘ইবাদাতও আছে।”
এসব মানুষেরা মুহাম্মাদের () মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেনি। আর আমি কা’ব ইব্ন মালিকের (রাযিআল্লাহু আনহু) কাহিনীটি বর্ণনা করেছিলাম, যে তিনি যখন মাদীনাহ্-এ ছিলেন, তখন তিনি বিভিন্ন প্রকারের ‘ইবাদাতে লিপ্ত থাকতেন, আর তিনি ছিলেন আল্লাহ্র রসূলের () শহরে অবস্থিত। আর নাবী মুহাম্মাদ () -এর একটি হাদীসে এটি বর্ণিত আছে যে, তার () মাসজীদে ‘ইল্ম অর্জন করা হল আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করার ন্যায়। আর এসবকিছু থাকা সত্ত্বেও, আর তার সবচাইতে পূর্বে ইসলামগ্রহনকারী সাহাবীদের মাঝে অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যেও অন্যতম যারা বাই‘আতুল ‘আক্বাবাহ্-এ অংশগ্রহন করেছিলেন। এর থেকে বাই‘আতুল ‘আক্বাবাহ্-এর গুরুত্ব উপলদ্ধি করা যায়, যা সংগঠিত হয়েছিল একটি মুসলিম ভূমি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে, আর এটি সংঘটিত হবার সময় কা’ব ইব্ন মালিকের (রাযিআল্লাহু আনহু) অপর কোন গুণাবলীর কথা উল্লিখিত হয়নি, কারণ জিহাদ যখন ফার্দ ‘আইন হয়ে পড়ে, তখন অন্যান্য ধরনের ‘ইবাদাতের কথা উল্লেখ করার কোন সুযোগ নেই, আর যখন কেউ এতে যোগদান না করে বসে থাকে, তখন তাকে অগ্রাহ্য করা ও নিন্দা করা ছাড়া আর কোন কিছুই উল্লেখ করার সুযোগ নেই। তাই তার (রাযিআল্লাহু আনহু) ক্ষেত্রে এরূপ বলা হয়নি যেঃ “আল্লাহ্ যেন তাকে (রাযিআল্লাহু আনহু) পুরস্কৃত করেন, কারণ সে রয়েছে মাদীনাহ্-এ, হারাম শরীফে সলাত আদায় করতে পেরে তিনি কতই না সৌভাগ্যবান!” অথবাঃ “তিনি শিক্ষাপ্রদান করছেন!” – এরূপ বলা হয়নি, ক্বুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের কারণেঃ
“বলুনঃ যদি তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের পুত্রগণ, তোমাদের ভ্রাতাগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের স্বগোত্র, আর ঐসব ধন-সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর ঐ ব্যবসা যাতে মন্দা পড়বার আশংকা তোমরা করছো, আর ঐ গৃহসমূহ যা তোমরা পছন্দ করছো, তোমাদের কাছে আল্লাহ্ ও তার রসূল ও তার রাস্তায় জিহাদের চাইতেও অধিক প্রিয় হয়, তবে তোমরা আল্লাহ্ নির্দেশের (‘আযাবের হুক্ম ) জন্য অপেক্ষা কর, আর আল্লাহ্ ফাসিক্ব সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।” [আত্-তাওবাহঃ২৪]
একইভাবে, আমরা যদি তাদের দিকে তাকাই যারা তাবুকের যুদ্ধে না গিয়ে ঘরেই অবস্থান করছিল, তখন আমরা দেখি যে, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা তাদের জন্য ‘ফিসক্ব’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
আজ, এই দ্বীনের প্রতিরক্ষার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা এবং এই দ্বীনকে সাহায্য করার জন্য মজুদ শক্তি ও উপাদানের প্রয়োগের পদ্ধতিতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এখন, যে ব্যক্তি দ্বীনের সাহায্যার্থে কাজ না করে নীরব বসে থাকে, সে এটাই জানে না যে সে গুণাহ্ অর্জন করছে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে মনে করে যে, সে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার আনুগত্যের অধীনেই আছে! আর সে এই গুণাহ্র লজ্জা সম্পর্কে থাকে সম্পূর্ন অজ্ঞ হয়ে, অথচ এ ব্যাপারে (আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ) সতর্কতা, হুঁশিয়ারি এবং উৎসাহসূচক প্রচুর আয়াত রয়েছে, আর যারা এই ফার্দ পালন না করে বসে থাকে এবং পার্থিব জীবনের দিকে ঝুঁকে থাকে, তাদেরকে নিন্দা ও তিরস্কার করে প্রচুর আয়াত রয়েছে। আর তখন কাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল এসব আয়াতের দ্বারা? তারা হলেন আল্লাহ্র রসূলের () সাহাবীগণ (রাযিআল্লাহু আনহুম)! একের পর এক সতর্কবাণী। “ও হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হল যে, যখন তোমাদেরকে বলা হয় – আল্লাহ্র রাস্তায় (জিহাদের জন্য) বেড়িয়ে পড়, তখন তোমরা জমিনকে আকড়ে ধর! তবে কি তোমরা পরকালের বদলে পার্থিব জীবন নিয়েই পরিতুষ্ট হয়ে পড়লে? অথচ পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস পরকালের তুলনায় অতি সামান্য! [সূরাহ্ আত্-তাওবাহঃ৩৮]
আমাদের কারোও কি তার পিতা কিংবা তার চাচা অথবা তার শাইখকে একথা বলার সাহস আছে যেঃ “আপনারা পার্থিব জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট! ফিলিস্তিনের দুর্দশা চলছে আশি বছর ধরে, আপনি একটি বুলেটও ফায়ার করেন নি! আর আপনি একদিনের জন্যও আপনার পায়ে ধুলো লাগতে দেন নি! সুতরাং, আপনি তাদের মধ্যে একজন, যারা পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে পড়েছে।” আমাদের কেউই একথা বলতে সক্ষম হবে না। দ্বীনকে কিভাবে প্রতিরক্ষা প্রদান করতে হবে, তার মাধ্যম ও কর্মপদ্ধতি কি – এসম্পর্কে আমাদের বুঝ-এ প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। আর এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করলে প্রচুর আয়াত মিলবে, যা আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি।
যে সকল যুবকেরা দ্বীনের কাজে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে সক্ষম, এবং দ্বীনের জন্য নিজেদেরকে কুরবানি করতে সক্ষম, তারা অতি দূর্ভাগ্যবশত একটি ভুলধারণা দ্বারা ভুলদিকে চালিত হচ্ছে, যেটা হল, তারা ইসলামের সেসকল ‘উলামাদের কথা শুনছে ও আনুগত্য করছে যারা জিহাদ থেকে নিজেদেরকে পৃথক করে রেখেছে। কারণ, যে জিহাদে অংশগ্রহণ না করে বসে থাকে, তার কথা শুনা অথবা তার আনুগত্য করা উচিত নয়। আর এর ফলে দ্বীনের এই সম্পদেরা ব্যক্তিগতভাবে যা পালন করা ফার্দ তা থেকে মুখ ফিরিয়ে যা সমষ্টিগতভাবে পালন করা ফার্দ তাতে মনযোগ দিয়েছে, যেমনঃ ‘ইল্ম অর্জন করা। অথচ এমনকি যদি সকল মানুষও ‘উলামায় পরিণত হয়ে যায়, তাহলেও দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না – জামা‘আহ্, শোনা, আনুগত্য করা, সাহায্য করা এবং জিহাদ করা – এগুলোর সমন্বয় ঘটছে।
সুতরাং এখান থেকে, আমাদের যুবকদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা উচিত যে, তাদের ‘ইল্মসম্পন্ন নেতৃত্ব আজ পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে পড়েছে। এটি (এই নেতৃত্ব) সেই গুরুত্বপূর্ণ ফার্দ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে যেটিকে সামান্য অবহেলা করার কারণে আল্লাহ্র রসূলের () কিছু সাহাবীকেও (রাযিআল্লাহু আনহুম) নিন্দা করা হয়েছিল। আর আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে তার এই কথাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেনঃ
“যেরূপে আপনার প্রতিপালক আপনাকে আপনার ঘর থেকে সত্যের সাথে বের করলেন, আর মুসলিমদের একটি দল এটিকে অপছন্দ করছিল।” [সূরাহ্ আল-আনফালঃ০৫]
বদরের দিনে যখন সাহাবী (রাযিআল্লাহু আনহুম)-গণ বের হলেন, তখন তারা ভাবছিলেন যে, তারা সেদিন বানিজ্যের কাফেলা আয়ত্ত করবেন। সুতরাং, যখন তারা (রাযিআল্লাহু আনহুম) শুনলেন যে, হাজারখানেক কুরাইশ বেড়িয়ে এসেছে, তারা এটা অপছন্দ করলেন। সুতরাং, [আবূ আইয়্যুব বর্ণনা করেছেন] আল্লাহ্র রসূল () বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” ফলে আবূ আইয়্যুব বললেনঃ “আমরা শত্রুর সম্মুক্ষীণ হবার ব্যাপারে আমাদের অনিচ্ছা প্রকাশ করলাম, এবং আমরা বললামঃ “হে আল্লাহ্র রসূল, আমরা শত্রুর সাথে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বেড় হইনি, আর তাদের মোকাবিলা করার মত সামর্থ্য আমাদের নেই। আমরা শুধুমাত্র কাফেলাটির জন্যই বেড় হয়েছি।” ফলে তিনি () বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” ফলে আমরা আমাদের পূর্বের কথাই তাকে আবার শোনালাম। ফলে তিনি বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” এরপর আল-মিক্বদাদ ইব্ন ‘আম্র (রাযিআল্লাহু আনহু) কথা বললেন, আর তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ্র রসূল! এক্ষেত্রে আমরা আপনাকে সেই কথা বলব না যা বনু ইসরঈল মূসা (আঃ)-কে বলেছিলঃ ‘সুতরাং আপনি এবং আপনার রব যান এবং যুদ্ধ করেন! আমরা তো এখানেই বসে থাকব।’ [আল-মাইদাহঃ২৪]
বরং আমরা আপনাকে বলিঃ আপনি এবং আপনার রব এগিয়ে যান এবং যুদ্ধ করুন, আর আমরা আপনাদের সাথেই যুদ্ধ করব! আল্লাহ্র কসম, আমরা আপনার ডানদিক থেকে, আপনার বামদিক থেক, আপনার সামনের থেকে এবং আপনার পিছন থেকে যুদ্ধ করব।”
এটা হল সাহাবীদের (রাযিআল্লাহু আনহুম) কথা, যারা একটি যুদ্ধ ও জিহাদসমৃদ্ধ পরিবেশে ছিলেন, আল-আওস এবং আল-খাজরাযের মধ্যে চলতে থাকা যুদ্ধ তাদের দুই গোত্রের অসংখ্যজনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল, আর এটি স্থায়ী হয়েছিল ১০ বছরের জন্য, আর তারা যখন এমন অসীম যুদ্ধের মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল, তখন আল-ইসলাম তাদের কাছে এসেছিল, আর জাহিলিয়্যাহ্-এর সময় আল-আওস এবং আল-খাজরাযের অনেকেই যুদ্ধের সাথে পরিচিত ছিল, আর এসবকিছুর পরে আল-ইসলাম তাদের কাছে আসলো এবং তাদেরকে জিহাদের জন্য উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিল – তাহলে আজকের দিনে আমরা কোথায়? অন্তরগুলো আজ কেবলই দোদুল্যমান এবং যাদের উপর আল্লাহ্ দয়া করেছেন তারা ব্যতীত সকলেই আল্লাহ্র দ্বীনকে সাহায্য করার বদলে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুবকদের বুঝতে হবে যে, জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন নেতৃত্বে বড় আকারের ঘাটতি রয়েছে, আর আমাদের এরূপ মানুষদের কথাকে সেভাবেই উল্লেখ করতে হবে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা উল্লেখ করেছেন।
এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে কোন গ্রহনযোগ্য কারণ ব্যতীত জিহাদ না করে বসে রয়েছে, তবে তার অবস্থার বর্ণনা কুরআনে খুবই পরিষ্কার এবং অবশ্যম্ভাবীঃ আর তা হল “ফিস্ক্ব”। “আর যদি তারা বেড় হবার ইচ্ছা পোষণ করতো, তবে কিছু সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করতো, কিন্তু আল্লাহ্ তাদের বেড় হওয়াকে অপছন্দ করলেন, আর তাই তাদেরকে বলা হলঃ ‘বসে থাকো তোমরা, যারা বসে থাকে তদের সাথে।’” [সূরাহ্ আত্-তাওবাহঃ৪৬] যারা মহিলাদের সাথে বসে থেকে পরিতুষ্ট তারা বুঝে না, এমনকি যদিও তাদের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেষ্ঠ ডিগ্রী থাকে। আর তারা জানে না, এমনকি যদিও ফাত্ওয়ার জন্য তাদের দিকেই সমস্ত প্রশ্ন করা হয়। কারণ এটা আল্লাহ্র কিতাবে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া আছেঃ “তারা ঘরে বসে থাকা (মহিলাদের) সাথে অবস্থান করে পরিতুষ্ট ছিল” – এমন যে কেউ যার অন্তর আছে বা যাকে আল্লাহ্ শোনার ক্ষমতা দিয়েছেন, সে জানে যে এই আয়াতের বর্ণনার সাথে কারোও অবস্থার মিলে যাওয়াটা একটা ব্যাপক নিন্দনীয় ব্যাপারঃ “তারা ঘরে বসে থাকা মহিলাদের সাথে অবস্থান করে পরিতুষ্ট ছিল, আর তাদের অন্তরসমূহে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছিল, তাই তারা বুঝে না।” [সূরাহ্ আত্-তাওবাহঃ৮৭]
তাই জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন মুফতি যদি অনেক কিতাবাদি, প্রবন্ধ এবং ভলিউমের লেখকও হয়ে থাকেন, তবুও তিনি বুঝেন না, কারণ ‘ইল্মের সারাংশ হল আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি ভয়। উম্মে সুফিয়ান (আল্লাহ্ যেন তার উপর রহম করেন) নামক এক মহিলা বলেছিলেনঃ “ও ‘আলিম!” আর তিনি বললেনঃ “‘আলিম হল শুধু সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ্কে ভয় করে চলে।” সুতরাং, ‘ইল্ম মানে ব্যাপক বর্ণনার সমষ্টি নয়, বরং ‘ইল্ম হল আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সে অনুসারে আল্লাহ্র ‘ইবাদাত করা, আর তাকে ভয় করা এবং তার দেওয়া দায়িত্ব পালন করা।
আর তাই আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেন যে, তারা বুঝে না। কারণ, যদি তারা সত্যিই বুঝতো, এবং যদি তাদের অন্তরে এই ঈমান দৃঢ় ভাবে থাকতো যে, আল্লাহ্র সাথে যা আছে তা এই দুনিয়া অপেক্ষা অনেক উত্তম, তবে তারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি এবং তার থেকে পুরস্কার লাভের আশায় প্রতিযোগিতা করতো, আপোষে ভরা হীন জীবনকে পছন্দ করতো না।
তাই আমি বলিঃ যুবকদেরকে এ সকল বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে তারা কৃত্রিমতার শিকলের বন্ধন থেকে মুক্তি পায়, যে বন্ধন তাদেরকে সঠিক কাজ করা থেকে বিরত রাখে।
আর এই হল (‘আব্দুল ‘আযিয আল-‘উমারি, নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে হামলাকারী অন্যতম মুজাহিদ) ‘আবুল ‘আব্বাসঃ এক অমূল্য সম্পদ – যার ন্যায় সম্পদ আমাদের ভূখন্ডে এবং মুসলিম ভূখন্ডসমূহে আরোও আছে, কিন্তু তাদেরকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে – যার দ্বারা আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা অনেক কল্যাণ সাধন করেছেন। সে এসকল শিকল থেকে নিজেকে মুক্ত করেছিল, ফলে যখন সে এখানে (আফগানিস্তানে) আসলো, তখন সে বাস্তবতার স্বরূপকে দেখলো এবং অসচেতন মানুষকে সচেতন করার জন্য তার শেষ বক্তব্য উপস্থাপন করলো যা ছিল অতি স্বচ্ছ এবং হৃদয়স্পর্শী। সে বললঃ “তোমরা যে ‘ইল্ম অর্জন করছো তা অতি উত্তম ‘আমল এবং এতে অনেক কল্যাণ রয়েছে, এবং আল্লাহ্ যেন তোমাদেরকে এর জন্য পুরস্কৃত করেন। কিন্তু, যখন জিহাদের প্রসঙ্গ আসে, তখন না এবং আবারও না। যখন জিহাদ ফার্দ হয়ে পড়ে, তখন কোন কিছুই এর পথে আসতে পারে না।” শাইখ উল-ইসলাম (রহিমুল্লাহ) বলেছেনঃ “যখন ফার্দ কর্তব্য/বিষয়-গুলো একটি অপরটির পথে এসে দাঁড়ায়, তখন অধিক গুরুত্বপূর্ণটিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। সুতরাং, ইসলামের জাগরণের পথে জাগৃত মানুষদের অনেক উত্তম গুণাবলী এবং অসাধারণ সক্ষমতা রয়েছে, আর তাদেরকে কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, অজ্ঞতার এই কুয়াশা এবং এই অন্ধকার দূরীভূত হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসরণীয় আরেকটি দালীল হচ্ছেঃ
হুযাইফাহ্ (রাযিআল্লাহু আনহু) আল্লাহ্র রসূল () হতে বর্ণনা করেছেন, যেটিতে আলোচিত দৃশ্যপট আমাদের বর্তমান অবস্থার সাথে মিলে যায়, সেখানে তিনি (রাযিআল্লাহু আনহু) বলেছেনঃ “মানুষ আল্লাহ্র রসূলকে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো, কিন্তু আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করতাম অকল্যাণ সম্পর্কে, এই ভয়ে যে, তা আমাকে গ্রাস না করে ফেলে। তাই আমি বললামঃ ‘হে আল্লাহ্র রসূল, আমরা ছিলাম জাহিলিয়্যাহ্ এবং খারাবীতে নিমজ্জিত, এবং আল্লাহ্ আমাদেরকে কল্যাণের দিকে চালিত করেছেন। সুতরাং, এই কল্যাণের পরে কি আর কোন অকল্যাণ আছে?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যা।’ আমি বললামঃ ‘এই অকল্যাণের পরে কি আর কোন কল্যাণ থাকবে?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যা, কিন্তু সেটি দূষিত হবে।’ আমি বললামঃ ‘সেটির দূষণ কি?’ তিনি বললেনঃ ‘একদল মানুষ যারা আমার দেখানো সঠিক পথে চলবে না, তুমি তাদের মাঝে কল্যাণ এবং অকল্যাণ দেখতে পাবে।’ আমি বললামঃ ‘সেই কল্যাণের পরে কি আর কোন অকল্যাণ থাকবে?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যা, জাহান্নামের দ্বারে আহবানকারী; যে-ই তাদের ডাকে সাড়া দিবে, তাকে তারা জাহান্নামে ছুড়ে ফেলবে।’” [বুখারী ও মুসলিম]
সুতরাং, আজকের এই পরিস্থিতি যা আপনি হয়ত খেয়াল করেছেন যে, এখন এই ভয়াবহ অকল্যাণ ইসলামের ভূখন্ডসমূহের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে, আর এর দৃষ্টান্ত চতুর্দিকে দেখতে পাওয়া যায়, যেমনঃ আজকের শাসকেরা মানুষদেরকে জাহান্নামের দ্বারেই আহবান করছে, ‘আরব উপদ্বীপসমূহ এবং অন্যান্য মুসলিম ভূখন্ডের শাসকেরা সবাই এ ব্যাপারে একইরূপ ধারন করেছে, কারণ, তাদের মিডিয়া, তাদের সমগ্র কর্মপদ্ধতি, জমিনে তাদের দুর্নীতির সৃষ্টি, মানবরচিত বিধানের দ্বারা সকল কর্মের পরিচালনা, রসূলের ﷺ আদর্শ ব্যতীত অপর আদর্শসমূহের প্রচার করা, এসবকিছুর দ্বারা তারা সকাল-সন্ধ্যায় মানুষদেরকে জাহান্নামের দরজার দিকে আহবান করছে, আর আল্লাহ্ ছাড়া কোন শক্তি বা ক্ষমতা নেই। সুতরাং, পত্র-পত্রিকাসমূহ, রেডিও-টেলিভিশন, মিটিং-সভাসমূহ – এ সব কিছুতে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা এবং তার রসূলের প্রতি কুফ্র পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, আর কেউ এগুলোতে কোন প্রকারের বাঁধা দিচ্ছে না। সুতরাং, এই শাসকেরাই হল তারা, যারা জাহান্নামের দ্বারে আহবান করে।
এখন এরকম পরিস্থিতিতে সমাধান কি হতে পারে?
সুতরাং, সেই মহান সাহাবী (রাযিআল্লাহু আনহু) এরপরে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তাহলে আমি যদি সেই সময়ে উপস্থিত থাকি, তবে তখন আপনি আমাকে কি করতে বলেন?” ফলে তিনি () তাকে একটি আদেশ দিলেন, যদিও ইসলামে অনেক ফার্দ দায়িত্ব আছে এবং তাদের গুরত্বেরও প্রচুর বর্ণনা মিলে, এরপরেও এই ধরনের পরিস্থিতিতে আদেশ শুধু একটিই, ঈমান আনার পরে যেটির গুরুত্ব অন্যান্য সকল ফার্দ কর্তব্যের তুলনায় বেশী। তিনি () বললেনঃ “মুসলিমদের জামা‘আহ্ ও এর ইমামের সাথে নিজেকে বিদ্ধ কর [অর্থাৎ, জামা‘আহ্ ও ইমামকে আকড়ে থাকো]।”
সুতরাং, এই হল এক ফার্দ কর্তব্য যা এখন পালন করা অতীব জরুরী বিষয়, কিন্তু আল্লাহ্ যে সকল ‘উলামাদের উপর দয়া করেছেন তারা ব্যতীত আর কোন ‘উলামার কাছেই এটির কোন জায়গা নেই, আর তারা এটির কথা মুখেও তুলেন না। তাদের প্রত্যেকে তাওয়াগিত শাসকদের [যারা শারী‘আহ দ্বারা শাসন করা পরিত্যাগ করেছে] সম্পর্কে ভালো কথা বলা আর প্রশংসা করায় ব্যস্ত, যারা কিনা আল্লাহ্ ও তার রসূলের উপর অবিশ্বাস করেছে। ফলে এ সকল ‘উলামারা কাফির শাসকদের প্রতি প্রশংসামূলক কথা বলে টেলিগ্রাম পাঠান, আর সেসকল কাফির শাসকেরা এসকল ‘উলামাদের প্রশংসা করে ‘উলামাদের প্রতি প্রশংসামূলক টেলিগ্রাম পাঠান, আর এভাবে সমগ্র উম্মাহ্কে প্রতারিত করা হয়।
আজ উম্মাহ্ যে দুর্যোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এরূপ দুর্যোগ দ্বারা এটি এর আগে কখনো আক্রান্ত হয়নি। এর আগেও অনেক বিষয়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, কিন্তু সেগুলো ছিল আংশিক এবং একটি নির্দিষ্ট পরিসরে সীমাবদ্ধ। কিন্তু আজকের দুর্যোগটি মিডিয়ার জাগরণের দ্বারা সমগ্র জাতিকে তার পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করেছে। মিডিয়া আজকে প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করেছে, আর কোন ঘরই এই ফিত্নাহ্ থেকে মুক্ত নয়, তা শহরাঞ্চলের ঘর হোক কিংবা বনাঞ্চলের ঘর। কেউ এটি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। অতীতে কোন ‘আলিম ভুল করলে তার ভুল একটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকতো, আর কোন রাজপুত্র বা শাসক কোন দুষ্কর্ম করলে তার সেই দুষ্কর্ম তার রাজপ্রাসাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু, এমনটি মুসলিমদের ইতিহাসে কখনোই ঘটেনি যে, বেশীরভাগ মানুষই তাদের চাকুরীর কাছে বন্দী, যে চাকুরী হল অত্যাচারী শাসকের অধীনে নিয়োজিত থেকে কোন সেবা প্রদান করা।
যতবার এই উম্মাহ্র অবনতি ঘটেছে, আর যখনই এই উম্মাহ্র মানুষ সঠিক পথ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তখনই এই দ্বীনের ইতিহাসে অসাধারণ ঘটনার সূচনা ঘটেছে, অন্যেরা এই পথকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছে, এবং তারা কঠোর আত্মত্যাগ করেছে, এবং নিজেদেরকে কুরাবনী দিয়েছে। কিন্তু, এমনটি কখনোই ঘটেনি যে, সমগ্র উম্মাহ্ এবং তার ফুক্বাহা এবং তার ‘উলামা তাওয়াগিত শাসকদের অধীনে নিয়োজিত চাকুরীর দাসে পরিণত হয়েছে!
তাদের (‘উলামা) একজন আমার সাথে কথা বলছিল, আর সে বললঃ “আমরা সত্য কথা বলতে সক্ষম নই, কারণ যখনই আমরা সত্য কথা বলতে চাই, তখনই আমরা ঘরগুলোতে থাকা শিশুদের কথা, আর মহিলাদের কথা চিন্তা করি, তখন তারা কোথায় যাবে? আর আমরাই বা কোথায় যাব?”
সুতরাং, আজকের দিনের শাসনব্যবস্থার অধীনে নিয়োজিত চাকুরীজীবির সাথে শাসকের কি ধরনের সম্পর্ক বিদ্যমান তা যুবকদের বুঝা খুবই জরুরী। যে কেউই আজ শাসনব্যবস্থার অধীনে নিয়োজিত একটি চাকুরীজীবি, তবে সে ঠিক তা-ই, অর্থাৎ সে শাসনব্যবস্থারই চাকর, সেটিরই দাস। আর আমরা যখন বলি যে, অমুক শাইখ এবং অমুক আর তমুক শাসনব্যবস্থার দাস, তখন যুবকদের আমাদের উপর রাগ করা উচিত নয়।
আমরা যদি একটি সামগ্রিক জরিপ করতাম যেখানে জনসংখ্যা, নাম, বয়স, সামাজিক অবস্থান, পেশা ইত্যাদির অনুসন্ধান করা হত, আর সবাইকে এই প্রশ্নটি করতামঃ “আপনি কি সরকারী চাকুরীজীবি নাকি স্বাধীনভাবে উপার্জনকারী?” তবে যে শাসনব্যবস্থার চাকুরী করে সে কি লিখত?
ম্যানেজার বলতোঃ “আমি শাসনব্যবস্থার চাকুরীজীবি, সরকারী চাকুরীজীবি।”
পুলিশ বলতোঃ “আমি একজন সরকারী কর্মচারী।”
বিচারকেরা বলতোঃ “আমরা সরকারী চাকুরীজীবি।”
আর দার উল-ইফতা’-এর ‘উলামা বলতোঃ “আমরা সরকারী চাকুরীজীবি।”
সুতরাং, যুবকদের বুঝ-এর মাঝে ঘাটতি রয়েছে, যখন আমরা মানুষদের প্রকৃত পরিচয় বর্ণনা করি, যে তারা হল সরকারী কর্মচারী, আপনি দেখবেন যে তারা রাগান্বিত হচ্ছে!
আর এটা সত্যিই অদ্ভূত বিষয়! আপনি তাদের সাথে অত্যাচারী শাসকদের কোন সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকার করেন, অথচ এটাই তাদের প্রকৃত বর্ণনা এবং বাস্তবতা।
সুতরাং, সমাধানের পথটি হল সেই পথ যা খুবই স্পষ্ট এবং সরলভাবে আল্লাহ্র কিতাব এবং রসূল () -এর সুন্নাহ্-এ বলে দেওয়া আছে। সুতরাং, এসকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সম্পর্কিত করেঃ
[১] সমাধান হল জিহাদের জন্য সবাই মিলে একত্রিত হওয়া।
[২] সমাধান হল জামা‘আহ্, শ্রবন, আনুগত্য এবং জিহাদের মাধ্যমে কাজ করা।
[৩] সমাধান হলঃ “মুসলিমদের জামা‘আহ্ ও এর ইমামের সাথে নিজেকে বিদ্ধ কর [অর্থাৎ, জামা‘আহ্ ও ইমামকে আকড়ে থাকো]।”
আর মুসলিমদের জামা‘আহ্ এবং সেটির ইমামের উপর প্রথম ফার্দ কর্তব্য হল কুফ্ফারদেরকে প্রতিহত করা এবং আগ্রাসী সৈন্যদেরকে প্রতিরোধ করা। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “অতএব আল্লাহ্র রাস্তায় যুদ্ধ কর; তোমার উপর নিজ ব্যতীত অপর কারোও ভার অর্পন করা হয়নি, এবং ঈমানদারদেরকে উদ্বুদ্ধ কর; অচিরেই আল্লাহ্ কুফ্ফারদের শক্তি প্রতিহত করবেন, আর আল্লাহ্ শক্তিতে সুদৃঢ় ও শাস্তিদানে কঠোর।” [সূরাহ্ আন্-নিসাঃ৮৪] সুতরাং, কুফ্ফারদের শক্তি প্রতিহত করার উপায় হচ্ছেঃ [১] যুদ্ধ করা এবং [২] উদ্বুদ্ধ করা।
সুতরাং, তাহলে কেন মানুষেরা সঠিক দিকনির্দেশনার অনুসরণ করছে না? কারণ হল জাহান্নামের দ্বারে আহবানকারীরাঃ
[১] শাসকেরা এবং তাদের সমগ্র কর্মপদ্ধতি, যা দিন-রাত মানুষকে সরলপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে আহবান করে আসছে।
[২] সরকারী চাকুরীজীবি লোকেরা, যাদের মধ্যে কতক-কে মানুষকে আল্লাহ্র রাস্তায় বাঁধা দেওয়ার কাজের চাকুরী দেওয়া হয়েছে।
শাসনব্যবস্থা তাদেরকে চাকুরী দিয়েছে এবং তাদেরকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করেছে, কিন্তু, এই পেশার মূল বাস্তবতা হল তাকে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার চাকুরী দেওয়া হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, তথ্যমন্ত্রীর কাজ হল মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া, এটি সে নিজে করে এবং তার সমগ্র কর্মপদ্ধতি ও কর্মব্যবস্থাকে দিয়ে করায়। সে তার দেশকে সর্বোৎকৃষ্ট দেশ হিসেবে মানুষকে ধারণা দেয় এবং শাসককে একজন প্রতিভাবান শাসক হিসেবে জনসাধারণের কাছে তুলে ধরে, আর এরকম অনেক মিথ্যা কথা সে নির্দ্বিধায় মানুষের সামনে উপস্থাপন করে, আর মানুষকে প্রতারিত করে।
একইভাবে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিথ্যা সাক্ষী দেয়। সে বলে যেঃ “আমরা ভালো আছি, আর আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সর্বোৎকৃষ্ট অবস্থায় আছে”, অথচ প্রকৃতপক্ষে আমরা এক দশকেরও বেশী সময় ধরে অন্যের দখলদারীর অধীনে আছি, আর সমগ্র বিশ্ব জানে যে আমরা দখলদারীর অধীনে আছি, আমেরিকার প্লেনসমূহ কাউকে কিছু না জানিয়ে যখন খুশী তখন হানা দেয়, দিন হোক কিংবা রাত হোক। আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেড়িয়ে এসে বলেঃ “আমরা স্বাধীন, এবং কেউ আমাদের অনুমতি না নিয়ে আমাদের ভূখন্ড ব্যবহার করতে পারে না। সুতরাং, এরাই হল তারা যারা মিথ্যা সাক্ষী দেয়।
আর আল্লাহ্র রহমতে, অবশেষে সকল মানুষের মাঝে এই সচেতনতা ছড়িয়ে পড়েছে, আর তারা জানতে পেরেছে যে, এরা (শাসনব্যবস্থার কর্মচারীরা) আসলে সরকার ও শাসনব্যবস্থার দাস।
কিন্তু এখন আমরা যে বিপদের সম্মুক্ষীন হচ্ছি তা কোন মন্ত্রী বা তার অনুসারীদের থেকে আসছে না, কারণ তারা যা করে তার দ্বারা মানুষকে এখন আর প্রতারিত করা সম্ভব নয়, কারণ তাদের প্রতারণা মানুষের সামনে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখন যে সমস্যাটি প্রধান বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হল আল্লাহ্কে ভয় করে না দ্বীনের এমন নেতাদের থেকে আসা মিথ্যা এবং প্রতারণা, যা উম্মাহ্কে ভুল পথে পরিচালিত করছে।
এখন যদি মিথ্যা কথার সাক্ষীটি মক্কা আল-মুকাররামাহ্-এ পবিত্র কা’বাঘরের নিকটে থাকা ব্যক্তিটি হন, তাহলে কেমন হয়? নাবী () তার একটি হাদীসে বর্ণনা করেছেনঃ “আল্লাহ্র দৃষ্টিতে সবচাইতে ঘৃণ্য ব্যক্তি হল তিন প্রকারের…” আর তিনি প্রথম যার কথা উল্লেখ করলেনঃ “হারামে থাকা এক মুলহিদ (বিদ‘আতী)।” আর মাসজীদ আল-হারামে অবস্থান করে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া হল সবচাইতে ভয়াবহ বিদাআতী কাজগুলোর মাঝে একটি, যার ফলাফলস্বরূপ উম্মাহ্ পথভ্রষ্ট হয় আর সাক্ষীদানকারী ব্যক্তি মাস শেষে কিছু পয়সা বেতন হিসেবে পান।
সুতরাং, এ সকল শাসকদের কুফ্র-এর ব্যাপারে, তাদের দুষ্কর্মের ব্যাপারে, তাদের মুসলিম ভূখন্ডসমূহকে কুফ্ফারদেরকে দখল করতে দেওয়ার ব্যাপারে, এবং তাদের আল্লাহ্র বান্দাদের মাঝে দুর্নীতির ছড়ানোর ব্যাপারে কেউ দ্বিমত্ করে না।
আর এরপর আপনি আসলেন, আর পবিত্র মাসে পবিত্র জায়গার পবিত্র ঘরে মিথ্যা সাক্ষী দিলেন! আর আল্লাহ্ ব্যতীত কোন নিরাপত্তা বা শক্তি নেই।
আর তিনি () বলেছেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে সবচাইতে বড় গুণাহ্র খবর দিব না?” সুতরাং তিনি () বললেনঃ “আল্লাহ্র সাথে শরীক সাব্যস্ত করা,” – আল্লাহ্ যেন আমাদেরকে এটা থেকে হিফাযাত করেন – “এবং পিতামাতার অবাধ্য হওয়া।” তিনি শুয়ে ছিলেন, আর এরপর তিনি উঠে বসলেন এবং বললেনঃ “এবং নিশ্চয়ই মিথ্যা সাক্ষী! এবং নিশ্চয়ই মিথ্যা সাক্ষী! এবং নিশ্চয়ই মিথ্যা সাক্ষী!” আর তিনি এটি পুনরায় বলা অব্যাহত রাখলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না সাহাবী (রদিঃ) বললেনঃ “যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা বললাম যেঃ তিনি যদি নীরব হতেন!” [বুখারী ও মুসলিম]
সুতরাং, আপনি যদি জমিনের এক হাত পরিমাণ জায়গায় দাঁড়িয়েও মিথ্যা সাক্ষী দেন, তবে এটি একটি ব্যাপক গুণাহ্ তা আপনি জমিনের যে অঞ্চলে দাঁড়িয়েই দেন না কেন, তাহলে এই মিথ্যা সাক্ষীটি যদি আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার পবিত্র ঘরে দাঁড়িয়ে দেওয়া হয় তখন ব্যাপারটি কেমন হয়? আর কিছু পয়সার বিনিময়ে এই মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া হচ্ছে প্রতি জুমু‘আয়, প্রতিটি অনুষ্ঠানে, আর এর দ্বারা সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে পথভ্রষ্ট করার প্রয়াস চলছে, আর আল্লাহ্ ছাড়া কোন নিরাপত্তা বা শক্তি নেই। সুতরাং, এমন সাক্ষীদানকারীর গুণাহ্ কি পর্যায়ের হতে পারে?
সুতরাং, কোন বুদ্ধিমান মানুষের পক্ষে এ সকল শাসনব্যবস্থার দাসের কাছে দ্বীনি বিষয়ের কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য যাওয়া সম্ভব নয়। তাদের সম্পর্কে কমপক্ষে তাই বলা যায় যা শাইখ মুহাম্মাদ ইব্ন ‘আব্দিল-ওয়াহ্হাব (রহ.) যারা তাওয়াগিত শাসকদের প্রতিরক্ষা করে তাদের সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেছেনঃ “তাদের সম্পর্কে কমপক্ষে যা বলা যায় তা হল, তারা হচ্ছে ফুস্সাক্ব।” সুতরাং, তাদের অবস্থা কমপক্ষে ফুস্সাক্ব, এবং তাদেরকে বর্জন করা ও অবজ্ঞা করাই তাদের প্রতি সবচাইতে উপযুক্ত কাজ।
কারণ ইব্ন ‘আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু)-এর দ্বারা বর্ণিত রসূলুল্লাহ () -এর একটি হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, আল্লাহ্র রসূল () বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই প্রথম যে বিষয়টি বনু ইসরঈলদের মাঝে অবনতি নিয়ে এসেছে তা হল, একজন লোক অপর একজন লোককে বলতোঃ “হে অমুক এবং অমুক, আল্লাহ্কে ভয় কর এবং তুমি যা করছো তা পরিত্যাগ কর, কারণ এটি হালাল নয়!” আর এরপরের দিন তার সেই [যে হালাল নয় এমন কাজ করছিল] লোকটির সাথে দেখা হলে সেটি [পাপকর্মকারী লোকটির পাপ] তাকে [প্রথম ব্যক্তি] তার [পাপকর্মকারী] সাথে খাওয়া-দাওয়া করা, পান করা এবং বসার থেকে বিরত করতো না।” [আবূ দাঊদ থেকে বর্ণিত]
সুতরাং, এটি হল প্রথম ঘাটতিগুলোর মাঝে অন্যতম যা একটি উম্মাহ্র মাঝে প্রবেশ করে।
তাদের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করাটা জরুরী, কারণ এখানে আমরা কোন ছোট বিষয় নিয়ে কথা বলছি না, বরং আমরা বড় গুনাহসমূহের মাঝে সবচাইতে বড় গুণাহ্ নিয়ে কথা বলছিঃ যা হল আল্লাহ্র সাথে শরীক সাব্যস্ত করা, আল্লাহ্র আইন ব্যতীত অপর কিছু দিয়ে জমিনে শাসন করা, কুফ্ফারদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা – আর এগুলো সবই হল সেসকল বিষয় যেগুলো সংঘটিত হলে একজন দ্বীন ইসলামের বহির্ভূত হয়ে পড়ে।
সুতরাং, যদি যুবকেরা এই বুঝটি অর্জন করতে না পারে, দুঃখজকভাবে আপনি দেখতে পাবেন, হয়ত কোন যুবক আপনার কাছে খুবই আনন্দিত হয়ে আসবে কারণ সে মাসজীদ আল-হারামের অমুক শাইখের সাথে দেখা করেছে। অথচ এরূপ ফুস্সাক্বদের দিকে তাকিয়ে আনন্দিত হওয়া ও খুশী হওয়াটা মোটেও ঠিক নয় যারা সমগ্র উম্মাহ্কে পথভ্রষ্ট করছে। সুতরাং, ইসলামের জাগরণের মাঝে যদি এই বুঝটি অর্জিত না হয়, তবে আমরা কখনোই আমাদের সত্য প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে পৌছাতে পারবো না।
সুতরাং, শাসকবর্গ যে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছেন এ কথা মানুষজনকে ব্যাখ্যা করা এবং বুঝিয়ে বলাটা খুবই জরুরী একটি বিষয়। এই ব্যাপারে আবূ বাক্র (রাযিআল্লাহু আনহু) থেকে একটি সাহীহ্ হাদীস রয়েছে যেখানে আহমাসিয়্যাহ্র এক মহিলা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ “আমরা এই কল্যাণের [দ্বীন ইসলাম] উপর কত সময় পর্যন্ত থাকবো?” ফলে তিনি তাকে বললেনঃ “যে সময় পর্যন্ত আপনাদের ইমামগণ ন্যায়পরায়ণতায় দৃঢ় থাকবেন সে সময় পর্যন্ত আপনারা এর [দ্বীন ইসলামের কল্যাণ] উপর থাকবেন।” [বুখারী থেকে বর্ণিত] সুতরাং, শাসকদের ন্যায়পরায়ণতায় সুদৃঢ় থাকা দ্বীন ইসলাম বজায় থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
সুতরাং, যারা মানুষদেরকে বলছে যে দ্বীন এখনোও বজায় আছে তাদেরকে তাদের কথার ব্যাপারে সতর্ক করা একটি অতি আবশ্যক বিষয়। কারণ প্রায় এক শতাব্দী পূর্বেই শাসকেরা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের সাথে কুফ্র করেছে, যেদিন থেকে তারা ইংরেজদের শক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, যেদিন থেকে তারা ইংরেজদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে, তাদের সশস্ত্রবাহিনীর সাথে মৈত্রীর সম্পর্ক করেছে, তাদের স্বর্ণকে ভালোবেসেছে, জমিনে দুর্নীতি করেছে, আর এই শাসক ছিল ইসলামিক ভূমি – আদ্-দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহ্ – এর পতনের অন্যতম প্রধান কারণ, আর এ সবকিছুর পরে এই শাসক ঈমানদার হতে পারে না। আর দ্বীন ইসলাম কখনোই আইন ও শাসন হিসেবে থাকতে পারে না, যখন এর শাসকরা কুফ্র করে।
সুতরাং, এই বুঝটি খুবই পরিষ্কার হতে হবে যে, যখন শাসকরা কুফ্র করে তখন মানুষদেরকে তাদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে হবে। এখানে আর ইসলাম নেই, সুতরাং একজন ইমাম প্রতিষ্ঠার জন্য একটি জাগরণ খুবই জরুরী যিনি আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার হুদূদ মানুষের মাঝে প্রতিষ্ঠা করবেন। কারণ তিনি বলেছেনঃ “মুসলিমদের জামা‘আহ্ ও এর ইমামের সাথে নিজেকে বিদ্ধ কর [অর্থাৎ, জামা‘আহ্ ও ইমামকে আকড়ে থাকো]।”
আর শাসকেরা আজ বিভিন্ন প্রকারের চালাকির ব্যবহার করে থাকে এবং এর দ্বারা মানুষকে প্রতারিত করে। এটি যেন ঠিক আল্লাহ্র রসূল () -এর সেই হাদীসটির ন্যায়, যেখানে তিনি আমাদের ও আমাদের ভূমির অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি () বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামাতের পূর্বে বছরের পর বছর ধরে প্রতারণা চলবে, যেখানে আমানতদারকে ধিক্কার দেওয়া হবে এবং বিশ্বাসঘাতক/খিয়ানাতকারী-কে বিশ্বাস করা হবে, মিথ্যাবাদীকে বিশ্বাস করা হবে এবং সত্যবাদীকে অবিশ্বাস করা হবে, এবং রুওয়াইবিদাহ্-রা কথা বলা শুরু করবে।” তাকে বলা হলঃ “হে আল্লাহ্র রসূল, এই রুওয়াইবিদাহ্-রা কারা?” তিনি বললেনঃ “সে সকল বোকাদের দল যারা মানুষজনের কার্যাবলি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলবে।”
সুতরাং, আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে, এটাই সেই যুগ যেখানে শাসকেরা সকল প্রকারের চালাকী ব্যবহার করছে, হোক তা ‘আরবের শাসক কিংবা অন্যান্য মুসলিম ভূখন্ডসমূহের শাসক, কিংবা বিশ্বের অন্য যেকোন স্থানের শাসক। আর এর একটি পরিষ্কার নিদর্শন হল, বুশ অসংখ্য মুসলিমদের রক্তপাতকারী শ্যারনের কথা উল্লেখ করে “একজন শান্তিপূর্ণ মানুষ” হিসেবে। আর একইভাবে দ্বীনের শাসকেরা কুফ্ফারদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে অপরদিকে দাবী করে যে তারা ইসলামের উপরই প্রতিষ্ঠিত আছে, আর এভাবে সমগ্র উম্মাহ্কে তারা প্রতারিত করে।
আর এই প্রতারণার সাথে আরোও প্রতারণার স্বরূপ তারা এমনসব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে যেগুলোর মূল উদ্দেশ্য হল মানুষকে প্রতারিত করা। আর মানুষেরা হয়ত বিস্মিত হবে যখন আমরা এগুলোর কথা বলছি, যেহেতু এগুলো শারী‘ঈ ও ফিক্ব্হী বিষয়ের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এটাই বাস্তবতা যে এ সকল প্রতিষ্ঠান জেনে বা না জেনে উম্মাহ্কে প্রতারিত করছে। কারণ রেডিও-টেলিভিশনে কিছু ‘উলামাকে উপস্থাপন করা ও তাদের ফাত্ওয়া দেওয়ার পিছনে শাসনব্যবস্থার অপর উদ্দেশ্য আছে। তা না হলে তারা রেডিও-টেলিভিশন ও অন্যান্য জায়গায় সত্যবাদী ‘উলামাদেরকে উপস্থাপন করতো। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে উম্মাহ্র এই কঠিন ও দুর্দশাময় সময়ে এ সকল প্রতিষ্ঠান একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
কারণ আমরা অতীতে দেখেছি যে, যখন এই শাসনব্যবস্থা আমেরিকান ক্রুসেডারদের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করলো এবং তাদেরকে হারামাইন ভূখন্ডে আসতে দিলো, তখন সাধারণ মানুষেরা এবং এর যুবকেরা এর বিরোধীতা করলো, কিন্তু এরপরে যেটির দ্বারা মানুষের এই বিরোধীতাকে শান্ত করা হল তা হচ্ছে এ সকল প্রতিষ্ঠান ও এর ‘উলামাদের দ্বারা। তারা শাসকের কাজকে সঠিক বলে ফাত্ওয়া দিল এবং এই শাসককে “ওয়ালিয়্যুল ‘আম্র” নামে নামকরণ করলো, যদিও প্রকৃতপক্ষে এই শাসক মুসলিমদের জন্য “ওয়ালিয়্যুল ‘আম্র” নয়। সুতরাং, এ সকল বাস্তবতাকে লক্ষ্য করতে হবে।
মানুষ হয়ত বিস্মিত হবে যে, এটা কিভাবে সম্ভব? অমুক ও অমুক শাইখের এত ‘ইল্ম থাকা সত্ত্বেও, এবং তাদের এত বয়স হওয়া সত্ত্বেও এটা তারা কি করে করতে পারেন? এটা কিভাবে সম্ভব যে তারা স্বল্প কিছু পয়সার বিনিময়ে তাদের দ্বীনকে বিক্রয় করছেন?
আমি বলি যে, মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়, আর আমরা যদি আমাদের ইতিহাসের দিকে তাকাই এবং ইসলামের গত কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস দেখি, তবে আমরা দেখবো যে এরূপ ঘটোনাগুলো বার বারই ঘটেছে। আর মানুষের বুঝার সুবিধার্থে আমি একটি বা দুইটি উদাহরণ উপস্থাপন করবোঃ
[১] ইমাম আয-যাহাবী (রহিমুল্লাহ) তার সিয়ার-এ ‘আলী ইবনুল মাদিনির (রহিঃ) জীবনী উল্লেখ করেছেন। তার জীবনীর সূচনাটির দিকে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন, তিনি বলেছেনঃ “ ‘আলী ইবনুল মাদিনি…যিনি হাদীসশাস্ত্রে আমিরুল মুমিনীন।” [সিয়ার ‘আলামীন-নুবালাঃ ১১/৪১] । আর তিনি তার কথা উল্লেখ করেছেন, বর্ণনা করেছেন, প্রশংসা করেছেন আর এমনও বলেছেন যে, হাদীসশাস্ত্রে মানুষেরা তার উপর নির্ভরশীল। আমরা যদি ন্যায়পরায়ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই তবে হ্যা, এটা ঠিক যে উনার ‘ইল্মের তুলনায় আমাদের এখনকার ‘উলামাগণ তেমন কিছুই নন, কিন্তু এত কিছুর পরেও তিনি একটি বিশাল ভুল করেছিলেন যখন তাকে সুলতানের চাকুরী করতে নিয়ে আসা হল। বনুল-‘আব্বাসের শাসকেরা তাকে এমন কাজের জন্য জোর করেছিল যা ছিল তার নিজ ‘আক্বীদাহ্ এবং তিনি যে শিক্ষা দিতেন তার পরিপন্থী। আর তিনি তাদের সাথে সম্মত হয়েছিলেন এবং এতে উম্মাহ্র দিকনির্দেশনা চরম ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়েছিল।
[২] একইভাবে শাইখুল মুমিনীন ইয়াহ্ইয়া ইব্ন মা’ইন (রহিঃ)-ও একই ভুল করেছিলেন।
আর সে যুগের অনেক ‘উলামাই প্রহার, ধর-পাকড়, বন্দী, মৃত্যুদন্ড ইত্যাদির ভয়ে এই একই ভুল করেছিলেন, আর একটি অতি ক্ষুদ্র দল ব্যতীত কেউ-ই দৃঢ়তার সাথে দাঁড়ায় নি, আর আপনি হয়ত জানেন যে এই অল্প কয়েকজনের মাঝে ছিলেন আহ্লুস সুন্নাহ্ ওয়াল-জামা‘আহ্-এর ইমাম, ইমাম আহ্মাদ ইব্ন হান্বাল (রহিমুল্লাহ)। সুতরাং, এর থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। আপনি এ সকল জীবনী পড়ুন, এতে আপনি সেসকল মানুষের অবস্থা ও পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে পারবেন।
এটা নাবী () -এর সাহীহ্ হাদীসে তিনি বলেছেনঃ “একজন বিচারকের দুই ব্যক্তির মাঝে বিচার করা উচিত নয়, যদি তিনি রাগান্বিত অবস্থায় থাকেন।” [ইমাম আহ্মাদ থেকে বর্ণিত] এখানে দেখা যাচ্ছে যে, যদি বিচারক রাগান্বিত অবস্থায় থাকেন, তাহলেই বিচার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে, তাহলে তার ব্যাপারটা কিরূপ যে ভীত অবস্থায় রয়েছে? কারণ, নিশ্চয়ই মানব রূহের উপর রাগের চাইতে ভীতির প্রভাব বেশী, যা ইবনুল-ক্বয়্যিম (রহিমুল্লাহ) বলেছেনঃ “সুতরাং, যে কেউ এটিকে শুধুমাত্র রাগের মাঝে সীমাবদ্ধ করে, আর দুশ্চিন্তাকর দুঃখ-কষ্ট, মনযোগবিচ্যুতকারী ভীতি, অসম্ভব ক্ষুধা বা তৃষ্ণা অথবা এমন যে কোন কিছু যা ক্বল্ব (অন্তর) কে বুঝ থেকে বিরত রাখে সেগুলোকে এর বহির্ভূত করে, তবে তার প্রজ্ঞা ও তার বুঝ অতি সামান্য।” [ই’লামুল মুয়াক্বক্বইন, পৃষ্ঠাঃ ২০৭-২০৮]
সুতরাং, আমাদের দেশের মানুষেরা সত্য কথা বলতে ভয় পায়, এটা মাথায় রাখতে হবে। আর অনেক ‘উলামা একথা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন যে, সত্য কথা বললে তাদের কি হবে, এ নিয়ে তারা ভীত। আর আমি পূর্বে হাই’আত কিবারিল-‘উলামার (শীর্ষ ‘আলিমদের কমিটী) একজন শীর্ষ ‘আলিমের সাথে আমার কথোপকথন উল্লেখ করেছি, যখন আমরা তাদেরকে বলেছিলামঃ “যদি আমরা এটা স্বীকার করে নেই যে আমেরিকানদের এই ভূখন্ডে উপস্থিতি একটি চরম দুরবস্থা, তাহলে একটি ফাত্ওয়া প্রদান করা উচিত যে এখন জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহন করা ফার্দ।” ফলে তিনি এ বলে ক্ষমা চাইলেন যে, তিনি এই ফাত্ওয়া প্রদান করতে পারবেন না, আর একই সাথে সবার সামনে একথাও বললেন যে, এটাই আসলে সত্য যে, এখন আমেরিকানদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য জিহাদই করা প্রয়োজন। তিনি বললেনঃ “কিন্তু শাসনকর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আমাদের সাথে একমত হবে না।” আর যখন আমরা তাকে বললামঃ “হাই’আত কিবারিল-‘উলামার” মাধ্যমে এই ফাত্ওয়া প্রদান করতে চেষ্টা করুন,” তখন তিনি যা বললেন তার সততাকে আমি বাহবা দেই, তিনি বললেনঃ “শাসনব্যবস্থা হাই’আত কিবারিল-‘উলামাকে এ ব্যাপারে কোন কর্তৃত্ব দেয় না।” তিনি আরোও বললেনঃ “কোন বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করা ও সেটির ব্যাপারে ফাত্ওয়া দেওয়ার কাজ যারা করে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। ফাত্ওয়া শুধুমাত্র সে সকল বিষয়েই দেওয়া হয় যেগুলো ‘উপর থেকে’ (উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ) আমাদের দিকে পাঠানো হয়।”
সুতরাং, মানুষের এই বিষয়টি বুঝা জরুরী, কারণ যদি এই সন্দেহ ও ভুল সবার কাছে পরিষ্কার না হয়ে যায়, আর দ্বীন ও ঈমানদারদের প্রতি পরিষ্কার আনুগত্য ও সহানুভূতির ঘোষণা ছাড়া এবং শির্ক ও বিদ‘আহ্ থেকে সম্পূর্ন দায়মুক্তি, ঘৃণা ও অনানুগত্যের ঘোষণা ব্যতীত উম্মাহ্ সামনে আগাতে থাকে, তবে আমাদের পক্ষে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন কখনোই সম্ভব হবে না। সুতরাং এটি একটি চরম সঙ্কটের বিষয় এবং অতি জরুরী বিষয়। সুতরাং, সত্যবাদী ‘উলামাদের, ‘ইল্মের ছাত্রদের ও দ্বীনের দা‘ঈদের জরুরীভিত্তিতে এ সম্পর্কিত সকল সন্দেহ ও সংশয় যুবকদের মন থেকে দূরীভূত করার পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
সুতরাং, এই শাসনব্যবস্থা ঠিক যেমন তথ্য মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেছে, যেটির কাজ হল মানুষকে প্রতারিত করা, একইভাবে এটি এটির সে সকল প্রতিষ্ঠানসমূহের পিছনে প্রচুর শ্রম দেয় যেগুলো নিজেদেরকে ইসলামের সাথে সম্পর্কিত করে, যেগুলো এই শাসনব্যবস্থাকে বৈধতা প্রদান করে, যেগুলো ঘোষণা দেয় যে এরূপ শাসনব্যবস্থা সত্যের উপরেই প্রতিষ্ঠিত।
আর এই বিষয়টিকে আরোও স্পষ্ট করার জন্য বলছি, আপনি খেয়াল করে থাকবেন যে, হাই’আত কিবারিল-‘উলামার ভবনটি রাজপ্রাসাদের সংলগ্ন। আপনি হয়ত এটাও দেখেছেন যে, আল-আযহারের দারুল-ইফতার ভবনটি হুসনি মুবারাকের রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন। আর হারামাইন ভূখন্ডের দারুল-ইফতা রাজার রাজপ্রাসাদের সংলগ্ন। সুতরাং, যে ব্যক্তি রাজার থেকে বেতন নিচ্ছে, আপনি কি এমন কাউকে জিজ্ঞেস করবেন যে, রাজার ব্যাপারে শারী‘আহ্-এ কি বিধি প্রযোজ্য? রাজা কি কাফিরদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক করেছে কি না? আর কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করা কি ঈমান বিধ্বংসকারী কোন বিষয় কিনা? আসলে এই বিষয়গুলো খুবই পরিষ্কার, যদিও ‘ইল্মের অভাবের কারণে কিছু মানুষের কাছে বিষয়টা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। সেক্ষেত্রে এরূপ মানুষদেরকে সত্যবাদী মানুষদের কাছ থেকে ‘ইল্ম জেনে নেওয়ার জন্য পাঠানো উচিত। আর আপনি রাজার চাকুরী করে এমন কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন না যে, রাজার উপর শারী‘আহ্-এর কি বিধি প্রযোজ্য।
সুতরাং, এরূপ ক্ষেত্রে কি করণীয় তার সমাধানের জন্য সে সকল ‘আলিম বা ব্যক্তিদের আদর্শের দিকে তাকানো ভুল হবে যারা শাসনব্যবস্থার চাপে পরে আপোষ করেছেন, আর এমন কাজ করেছেন যা দ্বীন ইসলামের আক্বীদাহ্র পরিপন্থী।
আমাদের ইমাম ‘আলী (রাযিআল্লাহু আনহু)-এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যেখানে তিনি বলেছেনঃ “ও হারিস! বিষয়টি তোমার কাছে জটিল রূপ ধারণ করেছে। মানুষ হাক্বে্র (সত্য) উৎস নয়। হাক্ব্ কে (সত্য) জানো, আর তখনই তুমি এর অনুসারী মানুষদেরকে চিনতে পারবে।”
মানুষের মাঝে হাক্বের (সত্য) অনুসন্ধানের ফলে অন্ধ-অনুসরণ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক যুবকই তাদের সকল কাজে শাসনব্যবস্থার দাসদের অনুসরণ করে। তাদেরকে একটি মর্যাদার পোশাক পরতে দেওয়া হয়েছে আর তাদেরকে বড় বড় নাম দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা শাসনব্যবস্থার দাস। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা তাদেরকে তাদের ‘ইল্ম থাকা সত্ত্বেও পথভ্রষ্ট করেছেন। কারণ আমরা দ্বীনি কিতাবাদি থেকে শিখেছি যে মৌলিক যে সকল ‘আমল একজনকে দ্বীনের বহির্ভূত করে, তার মাঝে একটি হল কুফ্ফারদের প্রতি আনুগত্য স্থাপন করা। যদিও আমাদের সাথে গোপন আলোচনায় তারা এ ব্যাপারে সত্য কথা বলে, কিন্তু এরপরেও জনসম্মুখে তারা মিথ্যা রচনা করে, যেমনটি ইয়াহ্ইয়া ইব্ন মা’ইন (রহিমুল্লাহ) করেছিলেন। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া আবশ্যক।
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার সন্তুষ্টি ও বর্তমান দুর্দশার থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন দ্বীন ইসলাম, আল্লাহ্, তার রসূল () ও মুসলিমদের আমীরগণের ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া। আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আন্তরিক উপদেশ [নাসীহাহ্], কারণ নাসীহাহ্ হল অন্যতম উপাদান যার দ্বারা দ্বীনের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত হয়। এই কারণে আল্লাহ্র রসূল () বলেছেনঃ “দ্বীন হল নাসীহাহ্।” [মুসলিম দ্বারা বর্ণিত] কারণ নাসীহাহ্র সবচাইতে পরিষ্কার নিদর্শনগুলোর মাঝে অন্যতম হল সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, যা দ্বীনকে প্রতিরক্ষা প্রদান করে। এ কারণের তিনি () দ্বীনের সারাংশ করেছেন তার এই উক্তির মাধ্যমেঃ “দ্বীন হল নাসীহাহ্।”
কিন্তু এখন আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি যখন, মানুষের দ্বীনের বুঝ অসংখ্য সংশয়ে ভরা, আর তারা মনে করে যে, নাসীহাহ্ এবং সচেতনতা ছাড়াও দ্বীন তার কার্যাবলি বজায় রাখতে পারে। তাই আমরা আজ দেখি যে, মানুষ আজ প্রাচুর্য ও চাকচিক্য দ্বারা আক্রান্ত এবং সে পার্থিব বিষয়াদি ও দুনিয়ার প্রতি অনেক ঝুঁকে পড়েছে। আর এরচেয়েও খারাপ কথা হল, যে সকল অলস ব্যক্তিত্বরা পার্থিব জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, তারা তাদের এই ব্যাধি যুবকদের মাঝে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে। কারণ যে সকল যুবকেরা তাদের দ্বীন নিয়ে গর্বিত, যারা অসৎকাজে বাঁধা দিতে চায়, অসৎকাজ বন্ধ করতে চায়, তাদেরকে এ সকল অলসেরা বলে যে, অসৎকাজে বাঁধা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর এভাবে এ সকল অলসেরা রসূল () -এর কথার উপরে নিজেদের কথাকে প্রাধান্য দেয়।
সুতরাং, নাসীহাহ্, এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুক্ষীণ করা ব্যতীত দ্বীনের পক্ষে তার কার্যাবলি বজায় রাখা সম্ভব নয়। আর এই কারণেই তিনি () বলেছেনঃ “সর্বোত্তম জিহাদ হল অত্যাচারী শাসকের সম্মুখে হাক্ব্ (সত্য) কথা বলা।” [ইমাম আহ্মাদ দ্বারা বর্ণিত] আর এ সবকিছু এজন্যেই যেন দ্বীনের সকল কার্যাবলি বজায় থাকে।
দ্বীনের সকল কার্যাবলি যেন সুষ্ঠভাবে বজায় থাকে এ জন্য যে নিজেকে ঝুঁকির সম্মুক্ষীণ করছে, তার পরিস্থিতির উদাহরণ হল সেই জাহাজের মানুষটির পরিস্থিতির উদাহরণের ন্যায়, যেটির ক্যাপ্টেন সেটিকে একটি খাড়া জলপ্রপাতের দিকে চালিত করছে, আর এই ব্যক্তি সেই জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উপদেশ দিতে চায়, আর অন্যান্যরা তাকে (ক্যাপ্টেনের) ভয়ে বলছেঃ “যদি তুমি তাকে উপদেশ দাও, তবে সে তোমাকে হত্যা করবে! তাকে উপদেশ দিতে যেও না।” সুতরাং, (উপদেশ না দেওয়ার) ফলাফল হচ্ছে, তারা সকলেই সেই জলপ্রপাতের মধ্যে পড়বে।
আর তাই আমাদের দ্বীনে একটি ভুল পথকে সঠিক করার জন্য এত জোর ও যত্ন দেওয়া হয়েছে যে, আপনি নিজেকে আল্লাহ্র রাস্তায় কুরবানী করে দিবেন যেন পথটি সঠিক হয়, যেন মানুষ নিজেদের দ্বীনের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকে। আর এই কারণে আল্লাহ্র রসূল () -এর এই হাদীসটি এসেছেঃ “শহীদদের নেতা হলেন হামযা ইব্ন ‘আব্দিল মুত্তালিব, এবং একজন ব্যক্তি যিনি একটি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, তাকে আদেশ করেছেন (হাক্ব্-এর) এবং নিষেধ করেছেন (বাতিল-এর), আর তাই তিনি তার (শাসকের) দ্বারা হত্যাকৃত হয়েছেন।” [আল-হাকিম দ্বারা বর্ণিত হয়েছে]
এটা এই হাদীসের একটি খুবই পরিষ্কার ও স্পষ্ট বুঝ, আর এরপরেও আমাদের ‘উলামা ও মাশায়িখগণ আমাদেরকে ধরে রাখেন এবং এটা করা থেকে বিরত করেন, একথা বলে যে, এতে কোন কল্যাণ নেই।
সুতরাং, তাদের (যারা যুবকদেরকে উপরোল্লিখিত হাদীসানুসারে কাজ করতে নিষেধ করে) দেওয়া বুঝ ‘আক্বীদাহ্ ও দ্বীনের জন্য খুবই বিপজ্জনক। তারা কি করে নিজেদের কথাকে আল্লাহ্র রসূলের এ কথার উপরে প্রাধান্য দেনঃ “শহীদদের নেতা হলেন হামযা ইব্ন ‘আব্দিল মুত্তালিব, এবং একজন ব্যক্তি যিনি একটি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, তাকে আদেশ করেছেন (হাক্ব্-এর) এবং নিষেধ করেছেন (বাতিল-এর), আর তাই তিনি তার (শাসকের) দ্বারা হত্যাকৃত হয়েছেন।” [আল-হাকিম দ্বারা বর্ণিত হয়েছে] কারণ আমাদের শক্তি, দ্বীনকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য আমাদের অস্ত্র, দ্বীনকে ভিতর থেকে দূষিত করার যে কোন অপচেষ্টার প্রতিরোধ, বাহির (কুফ্ফার) থেকে আগত দ্বীনের প্রতি যে কোন প্রকারের হুমকির প্রতিরোধ, ইত্যাদির সাথে শহীদ হবার তামান্না ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং, জিহাদ এবং এর ফলাফলস্বরূপ যা আসে, শুধুমাত্র তার মাধ্যমেই হাক্ব্কে (সত্য) পুনরায় ফিরিয়ে আনা এবং বাতিলকে (মিথ্যা) পুনরায় দূরীভূত করা সম্ভব।
সুতরাং, যে সকল যুবকদের অন্তরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা দ্বীনের ভালোবাসার প্রতি এবং তার রাস্তায় কুরবানীর প্রতি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাদের মোটেও উচিত হবে না এ সকল শাসনব্যবস্থার দাস, অলস ব্যক্তি ও পৃথিবীর দিকে ঝুঁকে যাওয়া লোকদের থেকে কোন প্রকারের কথাকেই কানে নেওয়া। সুতরাং, পূর্বের (যখন তথ্যপ্রযুক্তি এত শক্তিশালী ছিল না) ‘উলামাগণ (যারা ছিলেন ন্যায়পরায়ণ) আর বর্তমানের (যখন তথ্যপ্রযুক্তি খুবই শক্তিশালী) শাসনব্যবস্থার ‘উলামাগণের মাঝে কতই না পার্থক্য!
‘ইল্মের অধিকারী ব্যক্তিগণ বলেছেনঃ “শাসকের দ্বারে ‘আলিমদের প্রবেশের ক্ষেত্রে তিনটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে।” আর এর মাঝে সবচাইতে বেশী ক্ষতিকর হল সাধারণ জনগণকে পথভ্রষ্ট করা। কারণ সাধারণ জনগণ বলবেঃ “যদি এই নেতা বা এই রাজা বা এই মন্ত্রী ভালো না হতেন, তবে তো অমুক আর অমুক শাইখ কখনোও তাদের ভবনে প্রবেশ করতেন না!” আর তারা এ ব্যাপারে অজ্ঞ যে, আসলে সেই শাইখ শাসনব্যবস্থারই একটি দাস যে সেই নেতা বা রাজা বা মন্ত্রীর চাকুরী করে।
ইমাম আহ্মাদ (রহিমুল্লাহ) বলেছেনঃ “যে সকল বিষয় মানুষের ফিক্ব্হী (প্রজ্ঞার) অভাবকে নির্দেশ করে, তার মাঝে একটি হল সে দ্বীনের বিষয়াদিতে অপর কোন মানুষের অন্ধ-অনুসরণ করে।” [ই’লামুল মুওয়াক্ব্ক্বইন, ২/২১১]
সুতরাং, শাসকেরা যাদেরকে জিহাদের পথে বাঁধাস্বরূপ দাঁড় করিয়ে রেখেছে, যখন আমরা তাদেরকে চিনতে পারবো, আর যখন আমরা সার্থকভাবে সাধারণ মানুষদেরকে তাদের ব্যাপারে সতর্ক করতে পারবো, তখনই আমরা আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে জিহাদের পথে চলা শুরু করতে পারবো যার দ্বারা কুফ্ফারদের শক্তিকে ধ্বংস করা হয় এবং হাক্ব্ (সত্যকে) প্রতিষ্ঠিত করা হয়। আর এ সকল শাসনব্যবস্থার দাসেরা মুহাম্মাদ () যে ফিক্ব্হী (প্রজ্ঞার ) শিক্ষা দিয়েছেন তা ধারন করে না, এবং তিনি () আমাদেরকে যে মানহাজ (কর্মপদ্ধতির) শিক্ষা দিয়েছেন, সে সম্পর্কে তাদের কোন বুঝ নেই।
সুতরাং, এ কথা আমাদের মনের মধ্যে শক্ত করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে, দ্বীনকে সুষ্ঠুরূপে পালন করলে তা অবশ্যই বাতিল-এর সমর্থনকারী লোকদের থেকে প্রতিরোধও নিয়ে আসবে, ঠিক যা সাহীহ্ আল-বুখারী-এর একটি হাদীসে পাওয়া যায়, যেটি আমাদের মা ‘আইশাহ্ (রাযিআল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেছেন। যখন আল্লাহ্র রসূল () আমাদের মা খাদীজাহ্ (রাযিআল্লাহু আনহা)-এর সাথে ওয়ারাক্বাহ্ ইব্ন নুফাইল-এর কাছে গেলেন, আর এরপর তার () উপর ওহী নাযিল হবার সূচনার ঘটনা তিনি বর্ণনা করলেন, তখন ওয়ারাক্বাহ্ ইব্ন নুফাইল বললেনঃ “আহা, আমি যদি বেঁচে থাকতাম সেদিন পর্যন্ত, যেদিন মানুষেরা আপনাকে তাড়িয়ে দিবে।” ফলে আল্লাহ্র রসূল () বললেনঃ “তারা আমাকে তাড়িয়ে দিবে?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “আপনাকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে তার সদৃশ কোন কিছু নিয়ে এ ব্যতীত কোন মানুষ আসেনি যে, সে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়েছে।”
তাহলে রসূল () -এর জীবনী থেকে প্রাপ্ত সঠিক বুঝ হল, তাঁর () ন্যায় যারাই সঠিক দ্বীন আল-ইসলামের দিকে গমন করে, তারা অবশ্যই বাঁধাপ্রাপ্ত হবে।
আল-‘আক্বাবাহ্-এর দিনে আনসারগণ (রাযিআল্লাহু আনহুম) এসেছিলেন রসূলুল্লাহ্ () এর কাছে ইসলামের বাই‘আহ্ দিতে। তখন আল-‘আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) বেড়িয়ে আসলেন যিনি তখনও মানব রচিত দ্বীনের উপরই ছিলেন এবং মুসলিম ছিলেন না, আর বললেনঃ “হে আল-খাযরাজের লোকেরা, নিশ্চয়ই তোমরা মুহাম্মাদকে আমন্ত্রণ করেছ, সুতরাং যদি তোমরা শক্তিশালী ও যুদ্ধবাজ হয়ে থাকো এবং যুদ্ধের বুঝওয়ালা মানুষ হয়ে থাকো, এবং ‘আরবদের বিরোধীতার ফলাফল বহন করতে সমর্থ্য হয়ে থাকো, তবে জেনে নাও যে, তারা তাদের প্রতিটি ধনুক থেকে তোমাদেরকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করবে। সুতরাং, এ ব্যাপারে তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি তা আমাকে জানাও, আর তোমরা সকলে একমত হয়েই বিষয়টি আমাকে জানাবে। কারণ, নিশ্চয়ই সে কথাই সবচাইতে উত্তম, যে কথা সবচাইতে সত্য। তোমরা কিভাবে যুদ্ধে যাবে এবং তোমাদের শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে তা আমাকে বর্ণনা কর।”
সুতরাং, এখানে দেখা যাচ্ছে যে, আল-‘আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) তখন মানব রচিত দ্বীনের উপরই ছিলেন, অর্থাৎ একটা কাফির, আর এরপরেও তিনি তার ভ্রাতুষ্পুত্র মুহাম্মাদ () এর ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ায় সে কথাগুলো বলেছিলেন। আর তিনি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”-এর অর্থ বুঝেছিলেন, যে, সমগ্র বিশ্বই এর অনুসারীদের বিরোধীতা করবে। ফলে তখন ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন ‘আম্র (রাযিআল্লাহু আনহু) কথা বললেন, এবং তিনি বললেনঃ “আল্লাহ্র কসম, আমরা যুদ্ধবাজ মানুষ, আর আমরা এর উপরই লালিত-পালিত হয়েছি, আর আমরা এটিকে পূর্বপুরুষদের পরম্পরা অনুসারে পেয়ে এসেছি, তীর ছুড়তে থাকা যতক্ষণ পর্যন্ত না তা ফুরিয়ে যায়, একে অপরের দিকে বর্ষা চেপে ধরতে থাকা যতক্ষণ পর্যন্ত না তা ভেঙ্গে যায়, আর এরপর আমরা আমাদের তরবারীসহ পায়ে হাটতে থাকা এবং একে অপরকে আঘাত করতে থাকা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের (মানে মিত্র-শত্রু সকলের) মধ্যকার সবচাইতে শক্তিশালীরা – হয় আমাদের থেকে বা তাদের থেকে – মারা যায়।”
ফলে আল-‘আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) বললেনঃ “তোমাদের কি বর্ম আছে?” তারা বললঃ “জী আছে, এই দেখুন।” এ সময় আল-বারা’ ইব্ন মা’মুর (রাযিআল্লাহু আনহু) এগিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ “আপনি যা বলেছেন তা আমরা শুনেছি, আর আল্লাহ্র কসম, আমরা যা বলেছি তা ব্যতীত আর কোন কিছু যদি আমাদের অন্তরে থেকে থাকতো, তবে তা আমরা বলে ফেলতাম। কিন্তু আমরা বিশ্বাসী এবং ঈমানদার হতে চাই, আর আমরা আল্লাহ্র রসূলের () ওয়াস্তে আমাদের রক্ত উৎসর্গ করতে চাই।” সুতরাং, যারা প্রকৃতপক্ষে দ্বীন ইসলামকে পর্যবেক্ষণ করেছে, সেই সালাফ (পূর্ববর্তীগণ)-দের (রাযিআল্লাহু আনহুমা) দ্বীন সম্পর্কে বুঝ এটাইঃ আল্লাহ্র ওয়াস্তে এবং তার দ্বীনের প্রতিরক্ষায় এবং তার রসূলের () প্রতিরক্ষায় নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করা।
আর সেই বরকতময় দিন (আল-আক্বাবাহ্) থেকে আরেকটি শিক্ষনীয় ঘটনা হল, যখন সাহাবীগণ (রাযিআল্লাহু আনহুম) আল্লাহ্র রসূলের () কাছে বাই‘আহ্ দিতে চাচ্ছিলেন, তখন আস‘আদ ইব্ন যুরারাহ্ তার হাত উঠালেন এবং বললেনঃ “একটু সবুর কর, হে ইয়াসরিবের লোকেরা! আমরা আমাদের উটগুলোর পার্শ্বদেশে আঘাত করে তাঁর () কাছে এ ব্যতীত আর কোন কারণে পৌছাইনি যে, আমরা জানতাম যে তিনি আল্লাহ্র রসূল, আর আজকে তার কাছে চলে আসার মানে হল সকল ‘আরবদের থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া, তোমাদের মাঝে সর্বোত্তমদের নিহত হওয়া, এবং তরবারির আঘাতে তোমাদের খন্ড-বিখন্ড হওয়া। যদি তোমরা এ ব্যাপারে ধৈর্য্যশীল হয়ে থাকো, তবে তোমরা এটি গ্রহন কর (মানে বাই‘আহ্ দিতে এগিয়ে যাও), আর তোমাদের পুরস্কার আল্লাহ্র কাছে। অন্যথায়, যদি তোমরা নিজেদের ব্যাপারে ভীত হয়ে থাকো, তবে তোমরা তাকে ছেড়ে দাও (মানে তাকে বাই‘আহ্ দিয়ে তোমাদের ব্যাপারে তাকে দায়িত্বশীল করা থেকে বিরত থাকো), আর সেক্ষেত্রে তিনি আল্লাহ্র দরবারে তোমাদের ব্যাপারে অব্যাহতি প্রাপ্ত হবেন।” [ইমাম আহ্মাদ দ্বারা বর্ণিত]
সুতরাং, এটাই হল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” সম্পর্কে সালাফদের (পূর্ববর্তীদের) বুঝ, আর এর থেকে বুঝা যায় যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” এর বুঝ-এর উপর ‘আমল হল, পৃথিবীতে শারী‘আহ্-এর শাসন প্রতিষ্ঠা করা, আর এর ফলে অনিবার্য শত্রুর মোকাবিলা করা।
আর যেদিন আল্লাহ্র রসূল () আল-মুসান্না ইবনুল হারিসাহ্ কে আহবান করেছিলেন, যেন সে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”-এর উপর ঈমান আনো এবং তার () প্রতিরক্ষা করো এবং তাকে () নিরাপদ স্থান দান করো, সেদিন সে তখনও মুশরিক অবস্থাতেই ছিল, আর সে বললঃ “নিশ্চয়ই এটা এমন একটি বিষয় যা রাজারা খুবই ঘৃণা করে।”
আর আরেকটি হাদীস রয়েছে যেটিতে রসূলুল্লাহ্ () -কে সর্বোত্তম ‘আমল (কাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এমনকি যুল-হিজ্জাহ্ মাসের দশটি দিনের মাঝেও, আর তিনি একটি ব্যতিক্রম উল্লেখ করেছিলেন। তিনি () তাদেরকে সর্বোত্তম ‘আমলসমূহের (কাজ) কথা বললেন, আর বললেন যে, সেগুলো সর্বোত্তম এমনকি যুল-হিজ্জাহ্ মাসের দশটি দিনেও, এরপর তিনি বললেনঃ “তবে সেই ব্যক্তির ‘আমল ব্যতীত (অর্থাৎ, এই ব্যক্তির ‘আমলকে হিসেবে না আনলে পূর্বে উল্লেখ করা ‘আমলগুলোই সর্বোত্তম, আর এটিকে হিসেবে আনলে এটি সেগুলোর চাইতেও উত্তম ) যে নিজের জীবন ও সম্পদকে ঝুঁকির মাঝে ফেলে জিহাদের জন্য বেড় হয়েছে, আর এরপরে কোন কিছু নিয়েই ফিরেনি (অর্থাৎ, শহীদ হয়েছে)।” [আল-বুখারী দ্বারা বর্ণিত হয়েছে]
আর যে বুঝটি এখনকার দিনের ‘উলামাদের মনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, যা হল নিজেদেরকে, নিজেদের সন্তান-সন্ততিকে, নিজেদের সম্পদসমূহকে, নিজেদের চাকুরীসমূহকে তারা নিরাপদ রাখতে চায় দ্বীন পালনের সাথে সাথে। এটি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”-এর বাস্তবতা ও এর ফলাফল স্বরূপ যে বিরোধীতার আগমন ঘটে সেটির বাস্তবতার সাথে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুতরাং, দ্বীনি বিষয়াদির উপেক্ষা ও নিজেদের মানসিকতার আনুগত্যের দ্বারা এ সকল ‘উলামাগণ ও শাসকেরা আল্লাহ্ ও তার রসূলের উপর অবিশ্বাস করেছে, আর তাদের এই পদ্ধতির দ্বারা দ্বীন পালনের চেষ্টার শুরুতেই ব্যর্থতা নিশ্চিত হয়ে আছে। কারণ তারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”-এর বাস্তবতা, এটির সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও এটির প্রয়োগ পরিত্যাগ করেছে।
সুতরাং, এ সকল ‘উলামাদের অবজ্ঞা করা ও এড়িয়ে চলা অতি জরুরী, কারণ শাসকেরা তাদেরকে তাদের অবস্থানে শুধুমাত্র এ জন্যই এনেছে যেন মানুষদেরকে আল্লাহ্র রাস্তা থেকে বিরত করা যায়। এক শতাব্দীর এক-চতুর্থাংশ সময় পূর্বে শাইখ মুহাম্মাদ ইব্ন ইবরহীম (রহিমুল্লাহ)-এর ইন্তেকালের পর, দ্বীনের বিতর্কিত বিষয়াদি এড়িয়ে চলা, নিজ ফিক্ব্হী (প্রজ্ঞা), ‘ইল্ম (জ্ঞান), সতর্কতা অবলম্বন করা, সত্যের উপর দৃঢ়তার সাথে দন্ডায়মান থাকা ইত্যাদি ব্যাপারে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শাইখ ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন হুমাইদ (রহিমুল্লাহ)। কিন্তু, শাসনব্যবস্থা তখনও এমন হাক্ব্ (সত্যপন্থী), তাক্বওয়াবান ব্যাক্তিদেরকে চায়নি যারা বিতর্কিত বিষয়াদি এড়িয়ে চলে, বরং তাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল। ফলে শাসনব্যবস্থা শাইখ ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন হুমাইদ (রহিমুল্লাহ)-এর উপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখলো, আর সে সকল ‘উলামাদেরকে উল্লেখযোগ্য করে তুলার চেষ্টা করলো যারা ছিল শাসনব্যবস্থার প্রতি বড় উদার ও কোমল এবং আপোষপোষণকারী। আর এ সবকিছুই হল শাসনব্যবস্থার চালাকি।
ফলে শাসনব্যবস্থা শাইখ ‘আব্দুল্লাহ্ ইব্ন হুমাইদ (রহিমুল্লাহ)-এর উপর চাপপ্রয়োগ করা অব্যাহত রাখলো, ফলে অবশেষে তিনি পদত্যাগ করলেন যখন তিনি দেখতে পেলেন যে, শাসনব্যবস্থা বহুদূরে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, আর যখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, শাসনব্যবস্থা কুফ্ফারদের সাথে মৈত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং আল্লাহ্ প্রদত্ত শারী‘আহ থেকে অনেক দূরে সরে পড়েছে।
আর আজকের দিনের শাসনব্যবস্থার কার্যাবলি এরকমই করছে। তারা আজ বেশ কিছু ‘উলামাদেরকে উল্লেখযোগ্য করে তুলছে মিডিয়ার দ্বারা, আর এর পিছনে উদ্দেশ্য সেই একই, যা হল মুসলিমদেরকে প্রতারিত করা।
আর এই প্রসঙ্গে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যখন আমরা জানি যে কারা শাইতন ‘উলামা, আর কারা শাসনব্যবস্থার ‘উলামা, তখন অতি গুরুত্বের সাথে এটার অনুসন্ধান করাও অতিব জরুরী হয়ে দাঁড়ায় যে, কারা সত্যবাদী ‘উলামা আর কারা নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া না করে হাক্ব্ (সত্য) কথা বলেন। কারণ আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথী হয়ে যাও।” [আত্-তাওবাহঃ ১৯]
সুতরাং, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” কালিমাকে কিভাবে সাহায্য করা যায়, আর কিভাবে আল্লাহ্র শারী‘আহ্কে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, এ সকল বিষয়ের ব্যাপারে জানার জন্য তাদের (সত্যবাদী ‘উলামাদের) সাহচর্যে আসা ও তাদের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন।
আর সত্যবাদী ‘উলামাদের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, আর আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা এ সকল বৈশিষ্ট্যসমূহকে তার পবিত্র কিতাবে উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই তারাই হল প্রকৃত ঈমানদার যারা আল্লাহ্ ও তার রসূলের উপর ঈমান এনেছে এবং এরপর কোন প্রকারের সন্দেহ পোষণ করেনি, আর যারা আল্লাহ্র রাস্তায় নিজেদের সম্পদ ও জীবনের দ্বারা জিহাদ করেছে। এরাই হল তারা যারা ঈমানদার।” [আল-হুজুরাতঃ ১৫]
সুতরাং, সত্যবাদীদের সবচাইতে পরিষ্কার ও স্পষ্ট বৈশিষ্ট্যসমূহের মাঝে রয়েছেঃ
[১] ঈমানের বৈশিষ্ট্য
[২] আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদের বৈশিষ্ট্য
আর আমরা দেখতে পাই যে, এই অর্থটির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে, আর সত্যবাদিতাকে জিহাদের সাথে, (ঈমানদারদেরকে) সাহায্য করার সাথে, হাক্ব্ (সত্য) কথা বলার সাথে, আর হাক্ব্ (সত্যের) জন্য উঠে দাঁড়াবার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে। যেমন তিনি সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “(এ সম্পদ) সে সকল অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য যারা নিজেদের আবাস ও সম্পদ হতে বহিস্কৃত হয়েছে, তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে, এবং আল্লাহ্ ও তার রসূলের সাহায্য করে। তারাই তো সত্যবাদী।” [আল-হাশ্রঃ ০৮]
যারা হিজরাহ্ করে, আল্লাহ্ ও তার রসূলকে () সাহায্য করে এবং আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করে তারাই তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্র রাস্তায় আছে, এবং মুহাম্মাদ () এর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। সুতরাং, তারাই সত্যবাদী।
আর সবচাইতে উত্তম জিহাদের মাঝে রয়েছে হাক্ব্ (সত্য ) কথা বলা এবং তার জন্য উঠে দাঁড়ানো, যা আমরা নাবী () এর হাদীসে দেখতে পাইঃ “সর্বোত্তম জিহাদ হল অত্যাচারী শাসকের সামনে দাঁড়িয়ে হাক্ব্ (সত্য ) কথা বলা।” সুতরাং, এরূপ জিহাদের উদাহরণ হল সে সকল ‘উলামাদের উদাহরণ, যারা সত্যের জন্য উঠে দাঁড়ান এবং শাসকদের সাথে কোন প্রকার আপোষ করেন না। সুতরাং, এখানে সত্যবাদী ‘উলামাদের একটি বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
আর যারা এ সকল তাওয়াগিত শাসকদের প্রশংসা করে, তারা কি সুদি ব্যাংকসমূহের টাওয়ারসমূহ দেখে না? এটা হল আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তা দিয়ে শাসন না করার ফল, আর আল্লাহ্র প্রদত্ত মানহাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার দৃষ্টান্ত, তাও এমনকি হারাম-এর সামনে। এটা হল আল্লাহ্র পবিত্র ঘরের সামনে সংঘটিত এক চরম বিদ‘আহ্। আর সেই হাদীসটিতে হারামে আল-ইলহাদ বলতে যা বুঝিয়েছে, তা শুধু কুফ্র-এর মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সেরকমই বুঝিয়েছে যেরকম হাদীসটি বলছেঃ “আল্লাহ্র দৃষ্টিতে সবচাইতে ঘৃণ্য ব্যক্তি হল তিন প্রকারের…”, যার মাঝে একজন হলঃ “হারামে অবস্থানকারী মুলহিদ (বিদ‘ঈ ব্যক্তি)।”
‘ইল্ম -এর মানুষেরা বলেছেন যে, হারামে সংঘটিত একটি কাবীরাহ্ গুনাহ্কেই ইলহাদ বলা হয়। আর এখানে গুরুত্বারোপ করার জন্য এবং ভয়াবহতা বুঝানোর জন্য এটিকে ইলহাদ শব্দের দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে মানুষেরা নিজেদেরকে এর থেকে দূরে রাখে।
সুতরাং, একজন সত্যবাদী ব্যক্তির স্বচ্ছতম বৈশিষ্ট্য হল জিহাদ; কথা ও ‘আমল (কাজের ) দ্বারা। আর একজন ব্যক্তি সত্যবাদী হতে পারে এবং অন্তরে সে খারাবীকে ঘৃণা করতে পারে, কিন্তু এক্ষেত্রে না আমরা তাকে জানতে পারবো, আর না পারবো তাকে চিনতে। আমরা শুধুমাত্র তাকেই শনাক্ত করতে পারি যে কথা ও ‘আমল (কাজের ) দ্বারা খারাবীকে বাঁধাদান করে।
আর এটা ইসলামের জাগরণের তরঙ্গ, যুবকদের কাছে অতি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরতে হবে, যা আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি, যে, হাক্ব্ (সত্য) প্রতিষ্ঠা করার জন্য, একটি ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আর একটি খিলাফাহ্ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে সক্ষমতা ও উপাদান আছে, কিন্তু, তার আগে তাদের নিজেদেরকে এবং তাদের মন-মানসিকতাকে অন্ধ-অনুসরণ থেকে স্বাধীন করতে হবে। নাবী () এর একটি সাহীহ হাদীসে এ সম্পর্কে তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “অন্ধ-অনুসরণকারী হয়ো না, একথা বলে যেঃ ‘যদি মানুষ ভালো কাজ করে, তবে আমরাও ভালো কাজ করবো, আর যদি মানুষ অন্যায় কাজ করে, তবে আমরাও অন্যায় কাজ করবো,’ বরং নিজেদেরকে সুদৃঢ় করো, যেন যদি মানুষ ভালো কাজ করে, তোমরা ভালো কাজ করবে, কিন্তু যদি তারা অন্যায় কাজ করে, তবে তোমরা অবিচারকে পরিণত হবে না।” [আত্-তিরমিযি-এর দ্বারা বর্ণিত, যিনি এটিকে হাসান বলেছেন]
আর আমি আপনাকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করছি, যার থেকে বুঝা যায় যে, জ্ঞানবান ও বুঝওয়ালা মানুষেরা যখন তাদের মানুষদের মধ্যকার কারোও অন্ধ-অনুসরণ শুরু করে, তখন তারা অনেক বড় ধরনের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এমনকি তারা এরফলে আখিরাতেও অনেক বড় ক্ষতির সম্মুক্ষীন হতে পারে, আর আলাহ্ ছাড়া কোন নিরাপত্তা বা শক্তি নেই। আর ঘটনাটিতে উদাহরণ হলেন খালিদ ইব্ন ওয়ালিদ (রাযিআল্লাহু আনহু) এবং ‘আম্র ইব্ন আল-‘আস (রাযিআল্লাহু আনহু)। ‘আম্র ইব্ন আল-‘আস (রাযিআল্লাহু আনহু) ছিলেন ‘আরবদের থেকে একজন অন্যতম বিজ্ঞ ব্যক্তি। আর খালিদ ইব্ন আল-ওয়ালিদ (রাযিআল্লাহু আনহু) ছিলেন একজন অসাধারণ প্রতিভাবান যুদ্ধপ্রকৌশলী। আর এরপরেও তারা ইসলাম গ্রহনে দেরী করেছেন, আর সেটা হল বিশ বছর। অথচ ইসলামের আলো তাদের সামনেই ছিল, রসূলুল্লাহ্ () মাক্কাহ্-এ তের বছর ছিলেন। আর তাদের এই বিজ্ঞবান ও কৌশলী হওয়া সত্ত্বেও তারা ইসলামের আলো দেখতে পান নি। সুতরাং, এর কারণ কি হতে পারে?
কারণ হল অন্ধ-অনুসরণ। তারা (রাযিআল্লাহু আনহু) ক্বুরাইশদের মধ্যকার কিছু ব্যক্তিত্বকে দেখতেন যাদেরকে তখন তারা মহান মনে করতেন – আহ্লুন-নাদওয়াহ্ – আর তাদেরকে অনুসরণ করতেন। ফলে যখন খালিদ ইব্ন ওয়ালিদ (রাযিআল্লাহু আনহু) এবং ‘আম্র ইব্ন আল-‘আস (রাযিআল্লাহু আনহু) মাক্কাহ্ বিজয়ের অল্প কিছু সময় পূর্বে ইসলাম গ্রহন করলেন – যা হল মুহাম্মাদ () এর নাবুয়্যাত প্রাপ্তির প্রায় বিশ বছর পর – তখন তার (খালিদ) কিছু বন্ধু তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমার মন কোথায় ছিল হে খালিদ, যে তুমি এই আলো গত বিশ বছরে দেখতে পাও নি?” ফলে তিনি (রাযিআল্লাহু আনহু) জবাব দিলেন, আর তার কথা সকল অন্ধ-অনুসরণকারীদের এক মুহুর্ত হলেও মনযোগ সহকারে শোনা ও এর উপর চিন্তা করা উচিত। তিনি বললেনঃ “আমরা আমাদের সামনে কিছু ব্যক্তিত্বকে দেখেছিলাম যাদের চিন্তা-ভাবনাকে আমরা পাহাড়সম (তাৎপর্যপূর্ণ) মনে করতাম।” – আল-ওয়ালিদ ইবনুল মুগিরাহ্, ‘আম্র ইব্ন হিশাম, রবি‘আহ্-এর পুত্র ‘উসবাহ্ ও শাইবাহ্, আল-‘আস ইব্ন ওয়া’ইল আস্-সাহ্মি, এবং উমাইয়্যাহ্ ইব্ন খালাফ – এরাই হল ‘আরবের সে সময়কার কিছু ব্যক্তিত্ব যারা সবার মগজ ধোলাই করেছিল, আর মানুষের মনে এই বিশ্বাস তৈরী করেছিল যে, তারা নিজেরা সঠিক পথেই চলছে এবং অন্যদেরকেও তারা সঠিক পথেই পরিচালিত করছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়স্থানেই ধ্বংসের দিকে তাদের অনুসারীদেরকে পরিচালিত করেছিল।
ফলে যখন খালিদ ইব্ন ওয়ালিদ (রাযিআল্লাহু আনহু) নিজের মনকে স্বাধীন করলেন, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা তাকে অনেক কল্যাণ দান করলেন এবং তার সক্ষমতার দ্বারা অনেক কল্যাণ সাধন করলেন। কারণ তিনি ছিলেন আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার তরবারিসমূহ থেকে একটি তরবারি যার দ্বারা আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা ইসলামের ভূখন্ডের মাঝে পার্সী ও রুমকেও অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
সুতরাং, আমি বলি যে, অনেকেরই অসাধারণ সক্ষমতা আছে, কিন্তু তারা এগুলোকে অলস ব্যক্তিদের অনুসরণের ফলে অকার্যকর করে রেখেছে, যারা তাদের মহিলাদের সাথে ঘরে বসে থেকেই নিজেদের প্রতি সন্তুষ্ট। সুতরাং, মুহাম্মাদ () এর মানহাজ অনুসরণ ব্যতীত এই উম্মাহ্র পক্ষে মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়। কারণ আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, বিপদ ও ঝুঁকি এই দা’ওয়াহ্-এর জন্য একটি অনিবার্য স্থায়ী বিষয় হয়ে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সমগ্র পৃথিবী ও এতে অবস্থানকারী সবকিছু আল্লাহ্র শারী‘আহ্-এর কাছে আত্মসমর্পন করে।
সুতরাং, ইসলামে কোন্ বিষয়গুলোর প্রাধান্য সবচাইতে বেশী সেগুলোর ব্যাপারে আমাদেরকে জানতে হবে। বিষয়টির মূল হল ইসলাম, আর ইসলামের স্তম্ভসমূহ ও ঈমানের মূল হল এই শাহাদাহ্ যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”। আর ঈমানের রয়েছে অনেক শাখা ও প্রশাখা। আর যখন মূল শাখাই অনুপস্থিত থাকে, যেটি কিনা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, সবচাইতে উত্তম এবং সবচাইতে উপরে, তখন সেটিকে ফেলে অনান্য প্রশাখা নিয়ে নিজেদেরকে ব্যস্ত করে ফেলা মোটেই সমীচিন নয়। সুতরাং, এটা হল দ্বীনের মূল ভিত্তি ও বুঝ।
আর আজ মানুষ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” যে অর্থ ও তাৎপর্যের সাথে রসূল () এর মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল, সেটি আজ সম্পূর্ন অনুপস্থিত। আর এরপর মানুষ নিজেদেরকে অন্যান্য প্রশাখার দ্বারা ব্যস্ত রাখছে, যেখানে মূল শাখাই অনুপস্থিত। সুতরাং, বাস্তবতা জানে এমন কোন মানুষের পক্ষেই এরূপ কাজকে ফার্দ ‘ইবাদাত থেকে পলায়ন ছাড়া আর অন্য কোনভাবে বর্ণনা করা সম্ভব নয়, যে ফার্দ ‘ইবাদাত হল সবচাইতে বড় ফার্দ ‘ইবাদাত, আর তা হল সকল ঈমানদারদের জীবনে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”-এর প্রয়োগ ঘটানো।
যদি একজন ব্যক্তি জিহাদ না করে বসে থাকে এবং রাস্তা থেকে কাঁটা বা তার সদৃশ কোন বাঁধা সড়ানোর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে, যেটি কিনা ঈমানেরই একটি প্রশাখা, যখন কিনা অপরদিকে জিহাদ ব্যক্তিগতভাবে ফার্দ কর্তব্যে পরিণত হয়েছে, তখন তার সেই কর্মের ব্যাপারে এরূপ বলা হবে না যেঃ “আল্লাহ্ যেন তাকে উত্তম পুরস্কার দান করেন,” বরং, আমাদের দ্বীনের মাঝে সে একটি ফাসিক্ব ব্যক্তি হিসেবেই বিবেচিত হবে, যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”-কে এবং মুহাম্মাদ () এর দ্বীনকে সাহায্য করার ফার্দ/ (বাধ্যতামূলক) কর্তব্য থেকে পলায়ন করেছে। সুতরাং, এই প্রধান বিষয়টির ব্যাপারে সচেতন থাকা অতি জরুরী বিষয় যেটির কিছু ব্যতিক্রম স্থান ব্যতীত প্রায় সমগ্র মুসলিম ভূখন্ডেই অনুপস্থিতি আজ সকলের চোখের সামনে সম্পূর্ন স্বচ্ছ।
আর আমি মুহাম্মাদ () এর এই হাদীসটিতে মনযোগ প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি। এটি আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিআল্লাহু আনহু) মুহাম্মাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর থেকে বর্ণনা করেছেন, যেটিতে তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘যে কেউ আমার ওয়ালী-এর সাথে শত্রুতা করে, তবে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। আর আমার বান্দা যখন আমার জন্য কোন কিছু নিয়ে আমার নিকটে আসে, তখন তার মাঝে সেগুলোই আমার সবচাইতে প্রিয় যেগুলো আমি তার উপর ফার্দ করেছি।’ ” [আল-বুখারী বর্ণনা করেছেন]
সুতরাং, এই ফার্দ কর্তব্যগুলো হল সেগুলোই যেগুলো তিনি সুবহানাহু তা‘আলা তার শারী‘আহ্-এ ফার্দ বলে নির্ধারণ করেছেন। আর তিনিই এগুলোর প্রাধান্যের ক্রম নির্ধারণ করেছেন। আর এই ফার্দ কর্তব্যগুলো আমাদেরকে এগুলোর প্রাধান্যের ক্রমানুসারেই পালন করতে হবে, নিজেদের অনুমান, ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, কল্পনা, পৃথিবীকে আঁকড়ে ধরা অনুসারে করলে হবে না।
সুতরাং, যখন প্রধান ফার্দ হল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”-এর শাসন প্রতিষ্ঠা করা, তখন আমাদের কোনক্রমেই নিজেদেরকে অন্যান্য প্রকারের ‘ইবাদাতের দ্বারা ব্যস্ত রাখা উচিত নয়, যেটি ইসলামিক স্টেইটের প্রতিষ্ঠা ও আল্লাহ্র শারী‘আহ্-এর প্রতিষ্ঠার কর্তব্যকে প্রতিস্থাপিত করে ফেলে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যে সকল ‘উলামাদেরকে শাসনব্যবস্থা জনসাধারণের সামনে উপস্থাপন করে থাকে, তারা খুব ভালো করেই জানে যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”-এর শাসন আজ সম্পূর্ন অনুপস্থিত, আর শাসকেরা এই পবিত্র কালিমার সাথে ভয়াবহ শত্রুতা করেছে। আর এরপরেও তারা নিজেদেরকে বোকা বানাচ্ছে, নিজেদের সাথে প্রতারণা করছে, আর বিভিন্ন প্রশাখার ‘ইবাদাতের কথা বলা ও এগুলোর ব্যাপারে ফাত্ওয়া প্রদানের মাধ্যমে তারা সাধারণ মুসলিমদেরকেও প্রতারিত করছে, যেখানে মূল শাখাই সম্পূর্ন অনুপস্থিত। সুতরাং, পরিস্থিতি হল সেই ব্যক্তির ন্যায়, যে ফাউন্ডেশন ছাড়াই বাড়ি তৈরী করে।
সুতরাং, যারা ফাত্ওয়া দেয় তারা জানে যে, মানুষেরা তাদের বিচার-আচার সংক্রান্ত সকল কার্যাবলি সংশ্লিষ্ট বিভেদ, তর্ক-বিতর্ক, দ্বিমত আর বানিজ্যভিত্তক আদালতসমূহ, আর এর সদৃশ প্রতিষ্ঠানসমূহেই সমাধান করতে যায়। আর এরূপ করার মানে হল আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত অপর কোন কিছুর বিচার গ্রহন করা, আর এটা হল বড় কুফ্র যা একজনকে তার দ্বীনের বহির্ভূত করে দেয়। আর যারা ‘ইল্ম (জ্ঞান)-এর অধিকারী তারাও এটা জানেন। আর এরপরেও তারা এ ব্যাপারে কথা বলেন না।
আজ মুসলিম বিশ্বের সকল স্থানে অসংখ্য সুদি ব্যাংক দেখা যায়, আর কোন সত্যবাদী ‘আলিমের পক্ষে একথা বলা অসম্ভব যে, এ সকল সুদি কার্যাবলি হল নিছক কিছু কাবীরাহ্ গুনাহ্। কারণ আমাদের ভূখন্ডসমূহে এ সকল সুদি ব্যাংকসমূহের উপস্থিতি হল আল্লাহ্র আইন ব্যতীত অপর কোন কিছু দিয়ে শাসন ও বিচার করার নিদর্শন। তিনি সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “তাদের কি এমন কতক শরীক দেবতা আছে, যারা তাদের জন্য এমন এক দ্বীনের বিধান দিয়েছে যার অনুমতি আল্লাহ্ দেননি?” [আশ্-শুরাঃ ২১] আর এ সবকিছুর পরে তারা জনসাধারণের সাথে অন্যান্য প্রশাখা নিয়ে কথা বলে, আর এ সবকিছু থেকেই বুঝা যায় যে, মূল বিষয় থেকে কত দূরে অবস্থান করছে। কারণ এটাই হল সেই মূল কারণ যার জন্য রসূলদেরকে পাঠানো হয়েছে, কিতাবসমূহ নাযিল করা হয়েছে, যেন মানুষের মাঝে বিচার-ফয়সালা করা যায় এবং এর দ্বারা শাসন করা যায় এবং তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করা যায়। সুতরাং, এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া অতি জরুরী।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যুবকদেরকে অবশ্যই তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে যারা উম্মাহ্ থেকে প্রাপ্ত আমানতের অবহেলা করেছে এবং উম্মাহ্-এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কারণ হুযাইফাহ্ (রাযিআল্লাহু আনহু) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ “আল্লাহ্র রসূল () আমাদের কাছে দুইটি ঘটনার বর্ণনা করেছেন যেগুলো ঘটবে। আমি তাদের মাঝে একটিকে ঘটতে দেখেছি এবং অপরটির অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি আমাদেরকে বলেছেনঃ ‘মানুষের ক্বল্ব (অন্তরের) অতি গহীনে বিশ্বাস নাযিল হয়েছে, এরপর তারা ক্বুরআন শিক্ষা করেছে, আর তারা সুন্নাহ্ শিক্ষা করেছে।’ আর তিনি আমাদেরকে এটির বিলুপ্তির ঘটনা বলেছেনঃ ‘এক ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়বে, আর তার ক্বল্ব (অন্তর) থেকে বিশ্বাসকে কেড়ে নেওয়া হবে, আর একটি কালো দাগের ন্যায় এটির আলামত (চিহ্ন) রয়ে যাবে, আর এরপর সে আবার ঘুমাবে, আর সেটিকেও কেড়ে নেওয়া হবে, আর এটির আলামত (চিহ্ন) রয়ে যাবে একটি ফোস্কার ন্যায়, ঠিক একটি জলন্ত কয়লা তোমার পায়ের উপর পড়লে যেমনটি হয়ে থাকে, এটি ফুলে উঠে, কিন্তু তুমি দেখো যে এটি খালি, যেটির ভিতরে কিছুই নেই।’
আর অনেক মানুষের অবস্থা আজ এরকমই। আপনি মনে করবেন যে, সে সঠিক পথের উপরই হয়ত আছেন, আপনি মনে করবেন যে সে আমানতদার, আর সে আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ীই ফাত্ওয়া দিবেন, কিন্তু বাস্তবে সে তা নয়, বরং সে ঠিক সেই ফোস্কার ন্যায়ই নিঃসার যেটি একটি জলন্ত কয়লা পায়ের উপর পড়লে হয়ে থাকে। আর হাদীসটির বাকী অংশ হল, যা তিনি (রাযিআল্লাহু আনহু) রসূলুল্লাহ্ () থেকে বর্ণনা করেছেনঃ “মানুষেরা তাদের বানিজ্য করা বজায় রাখবে, কিন্তু তখন আমানতদার মানুষ পাওয়া হবে এক দুরহ ব্যাপার। মানুষ বলবেঃ ‘সেখানে অমুক ও অমুক গোত্রের এক আমানতদার মানুষ রয়েছে।’ পরে তারা কিছু মানুষ সম্পর্কে বলবেঃ ‘তিনি কতই না বিজ্ঞ! তিনি কতই না বিনয়ী! তিনি কতই না শক্তিশালী!’ অথচ সেই ব্যক্তির ক্বল্ব (অন্তরে) ষরিষার দানার সমপরিমাণের ঈমানও থাকবে না।”
সুতরাং, যারা সত্যবাদী ও আমানতদার এবং যারা মিথ্যাবাদী ও খিয়ানতকারী তাদের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করা জরুরী। একদল নাবুয়্যাতের উত্তরাধিকারের দায়িত্ব নিয়েছেন, অপরদিকে একদল নিছক কিছু ডিপ্লোমার ডিগ্রী নিয়েছেন, দ্বীনকে একটি চাকুরী হিসেবে নিয়েছে, এর থেকে উপার্জন করছে, আর এর বিনিময়ে খাচ্ছে, আর আল্লাহ্ ছাড়া কোন নিরাপত্তা বা শক্তি নেই।
সুতরাং, এই ব্যাপারে সারাংশ হল, আল-ওয়ালা’ ওয়াল-বারা’ বিষয়টিতে অনেকগুলো ধ্রুব বিষয় আছে যেগুলো সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এই আল-ওয়ালা’ ওয়াল-বারা’ এর ধারণাকে পরিবর্তিত করার জন্য এবং মানুষদেরকে এর ব্যাপারে ভুল ধারণা দেওয়ার জন্য আজ শাসনব্যবস্থা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করছে।
আর এর মধ্যে একটি ধ্রুব বিষয় হল, ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা আমাদের ব্যাপারে কখনোই সন্তষ্ট হবে না, যা আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা তার পবিত্র কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ “আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ না করা পর্যন্ত ইহুদী ও খ্রীষ্টানগণ আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না…”[আল-বাক্বারাহঃ ১২০]
আর ধ্রুব বিষয়গুলো থেকে আরেকটি ধ্রুব বিষয় হল, আজকের বাস্তবতা, যা হল, আমাদের ভূখন্ডসমূহ আজ দখলকৃত অবস্থায় আছে। আর যখন কোন মুসলিম ভূখন্ড দখলকৃত হয় তখন ঈমান আনার পর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ফার্দ বিষয় হয় আগ্রাসী শত্রুদেরকে প্রতিহত করা। সুতরাং, এটা সমগ্র শাসনব্যবস্থার কার্যাবলির বাস্তবতা থেকে পরিষ্কার হয়ে উঠে। কারণ, প্রিন্স তালাল ইব্ন ‘আব্দুল ‘আযিয একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমরা যদি আমেরিকান সেনাবাহিনীদেরকে আমাদের ভূখন্ড ছেড়ে চলে যেতে বলতাম, তবে তারা যেত না।” আর এটি খুবই পরিষ্কার উক্তি। আর একইভাবে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেনঃ “আর যদি আমরা আমেরিকার সরকার ও আমেরিকার সেনাবাহিনীদেরকে বলতাম কাতার ছেড়ে চলে যেতে, তবে আমাদেরকে মানচিত্র থেকেই মুছে ফেলা হত।” সুতরাং, ভূখন্ডসমূহ দখলকৃত অবস্থাতেই আছে, আর মানুষেরা নিজেদেরকে সেসকল ‘ইবাদাতে কর্মে ব্যস্ত রাখা অব্যাহত রেখেছে যেগুলো নফল ‘ইবাদাত ও ‘আমলের মাঝে পড়ে, যেগুলো এই মুহুর্তের অবশ্যপালনীয় ফার্দ কর্তব্য থেকে বহুদূরে।
সুতরাং, নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে মনযোগ দেওয়া জরুরীঃ
[১] সমাধান হল আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করা
[২] অলস, শাসনব্যবস্থার দাস – দের থেকে সতর্ক থাকা ও সচেতনতা গড়ে তুলা।
[৩] বর্তমান বাস্তবতার আলোকে, হাক্ব্ (সত্যের) প্রতিষ্ঠা ও বাতিল (মিথ্যার) ধ্বংসের জন্য, হিজরাহ্ ও জিহাদ পরস্পরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিষয়।
আর আল্লাহ্ই সবচাইতে ভালো জানেন।
-শাইখ উসামাহ্ ইব্ন লাদিন