বাংলাদেশঃ নিরবতার দেয়ালে চাপা পড়া গণহত্যা – শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ
বাংলাদেশঃ নিরবতার দেয়ালে চাপা পড়া গণহত্যা
– শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ
সরাসরি অনলাইনে পড়ুন
https://justpaste.it/nirobotarpracir
ডাউনলোড করুন
ভিডিও
বাংলা ডাবিং
HQ
https://banglafiles.net/index.php/s/EaxHXF6MRXMn7nr
https://archive.org/download/massacrebndub_201906/Massacre_bn_dub.mp4
https://www.file-upload.com/653z16brhm9g
LQ
https://banglafiles.net/index.php/s/sSqXA8bX7mNFnit
https://archive.org/download/nirobotar-dewale-capa-pora-gonohotta/Massacre_bn.3gp
https://www.file-upload.com/wi3mp0cmjl84
সাবটাইটেল ভিডিও
https://banglafiles.net/index.php/s/xkrTw38DxLSRLaX
https://ia601009.us.archive.org/15/items/Al_Qadisiyyah/bangladesh_nirobotar_prachirer_pichone_gonohotta.mp4 http://www.mediafire.com/file/w363ztv5i69yawc/9.bangladesh_nirobotar_prachirer_pichone_gonohotta.mp4/file
হাই কোয়ালিটি পিডিএফঃ
https://banglafiles.net/index.php/s/nsayjCXyxJLgKqt
https://archive.org/download/balakot_media_books/nirobotar_prachirer_pichone_gonohotta.pdf
http://www.mediafire.com/file/kj5e5jcv55livbk/16.nirobotar_prachirer_pichone_gonohotta.pdf/file
লো কোয়ালিটি পিডিএফ
https://banglafiles.net/index.php/s/tZrtPDiJqJbGqtr
https://archive.org/download/balakot_media_books/nirobotar_prachirer_pichone_gonohotta_LQ.pdf
http://www.mediafire.com/file/uw8jzi1imdpat8f/16.nirobotar_prachirer_pichone_gonohotta_LQ.pdf/file
ওয়ার্ড
https://banglafiles.net/index.php/s/2ymDysxMAZY3Yts
https://archive.org/download/balakot_media_books/nirobotar_prachirer_pichone_gonohotta.doc
http://www.mediafire.com/file/186grmbewq4qaet/16.nirobotar_prachirer_pichone_gonohotta.doc/file
======================
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]
======================
বাংলাদেশের ব্যাপারে শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরী (আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন) এর একটি মূল্যবান বক্তব্য
বাংলাদেশ… নীরবতার প্রাচীরের পিছনে গণহত্যা
আলোচনায়: শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরী (আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন)
উৎস: আস–সাহাব মিডিয়া (হিজরী ১৪৩৫)
পরিবেশনায়: বালাকোট মিডিয়া (হিজরী ১৪৩৫)
– – – – – – – – – – – – – – – – –
“আল্লাহর অপরিবর্তনীয় বিধান হচ্ছে, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন, হক্ (সত্য) প্রকাশ পাবেই এবং তা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে। বিষয়টা এমন নয় যে, হক্ (সত্য) এর প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের থাকাটা জরুরি। এমনও হতে পারে যে, যখন আমরা হক্ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিলাম, তখন হক্ (সত্য) প্রতিষ্ঠার এই প্রচেষ্টা এমন শক্তি লাভ করলো যে, এর দ্বারা একটি ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো। তাই আমার মতে, আমাদের জীবনের বিনিময়ে যদি আমরা এই তাগুতী শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্তি পাই, তাহলে এটা কোনো অলাভজনক ব্যবসা হবে না।”
– মাওলানা আব্দুর রশীদ গাযী (আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন)(১)
– – – – – – – – – – – – – – – – –
আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই, সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ, তাঁর সাহাবাগণ ও তাদের প্রতি যারা তাঁকে অনুসরণ করেন।
পৃথিবীর সকল স্থানে অবস্থিত হে আমার প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা!
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু!
বর্তমান সময়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি গণহত্যা পরিচালনা করা হচ্ছে, এবং মুসলিম বিশ্ব এটির ব্যাপারে মোটেও সচেতন নয়। পশ্চিমা মিডিয়াগুলো এই হত্যাকারীদের সাথে গোপনে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তারা এই গণহত্যার ব্যাপকতা ও সত্যতা গোপন করছে।
এটা হচ্ছে সেই রক্তের বন্যা যা আজ বাংলাদেশে বয়ে চলেছে, আর মুসলমানেরা এর দিকে ন্যূনতম মনযোগটুকুও দিচ্ছে না।
বাংলাদেশ আজ এমন এক ষড়যন্ত্রের শিকার যাতে ভারতীয় দালালগোষ্ঠী, দুর্নীতিগ্রস্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব, এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষমতালোভী বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদেরা – যারা কিনা নিজেদের লোভ ও আকাঙ্ক্ষা মিটানোর জন্য সবকিছুই পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকে – তারা সকলেই এই ষড়যন্ত্রে সমানভাবে অংশগ্রহণ করেছে। আর সাধারণভাবে এ ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে উপমহাদেশের মুসলিম উম্মাহ এবং বিশেষভাবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মুসলমানগণ।
বাংলাদেশে আজ ইসলামী আকীদার বিরুদ্ধে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও বাংলাদেশে অবস্থিত মুসলিম উম্মাতের বিরুদ্ধে যে সকল অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে, তা শুধুমাত্র ঐ অপরাধীগুলোর রোপণ করা নষ্ট বীজের ফসল। পাকিস্তানের জুলুমের হাত থেকে মুক্ত ও স্বাধীন করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ করাও তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর শাসন থেকে মুক্ত হওয়াও তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। এগুলোর কোনো কিছুই তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল না, যদিও এই অপরাধীগুলো সবসময় এসব স্লোগানের মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারণ করে, এবং তোতাপাখির মতো এই স্লোগানগুলো বারংবার বলতে থাকে এবং এগুলো প্রচার করতে থাকে – তাদের নির্বুদ্ধিতা বা মুসলমানদের অমঙ্গল–কামনা অথবা উভয়ের বশবর্তী হয়ে। ঐ কারণগুলো কখনোই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না। বরং প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল, মুসলিম উম্মাতকে এই উপমহাদেশে দুর্বল করে দেয়া। যেন এই উম্মাতকে বিভক্ত করা যায়, এবং তাদের নিজেদের মাঝে ঝগড়া–বিবাদ, এলাকা ভিত্তিক দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধ বাঁধিয়ে তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া যায়। আর এই সব কিছুর উপরে, সকল ষড়যন্ত্রের পিছনে সেই প্রতারক গোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য ছিল উম্মাতের কেন্দ্রস্থল ও উম্মাতের শক্তির মূল উৎস “ইসলামী আকীদা” কে আক্রমণ করা।
পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও আফগানিস্তানে আজ যা ঘটে চলেছে তা এই ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শুরু মাত্র, আর উল্লিখিত অপরাধীরা হচ্ছে ইসলামের শত্রুদের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের হাতিয়ার।
যারা (পাকিস্তানী সেনাবাহিনী) সেদিন (১৯৭১ সালে) বাংলাদেশের মুসলমানদের হত্যা করেছিল, তারাই আজ পাকিস্তানের মুসলমানদের হত্যা করছে। এবং যারা সেদিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সাথে বন্ধুত্ব করেছিল – এই দাবিতে যে, তারা বাংলাদেশের অধিবাসীদের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষা করতে চায়, তারাই আজ বাংলাদেশের অধিবাসীদের পবিত্রতা, ঈমান–আকীদা, সম্মান, জীবন ও সম্পদের উপর আক্রমণ করছে।
তারা (পাকিস্তানী তাগুতগোষ্ঠী) দাবি করে যে, তারা ষাট বছর পূর্বে (১৯৪৭ সালে) পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছে যাতে করে তারা এই উপমহাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের রক্ষা করতে পারে। আর আজকের পাকিস্তান হচ্ছে এমন যেখানে নেই ইসলামী শরীয়ত (এর শাসন), নেই স্বাধীনতা এবং নেই কোনো সম্মান! পাকিস্তানের সরকার, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা, পুলিশ এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থা আজ দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রুসেডারদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত ভাড়াটে সৈনিকের মতো কাজ করে যাচ্ছে।
একইভাবে বাংলাদেশও। তারা দাবি করে যে, তারা চল্লিশ বছর পূর্বে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে যাতে করে তারা বাংলাদেশের অধিবাসীদের স্বাধীনতা, গৌরব, সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। কিন্তু আজকে বাংলাদেশ এক বিশাল কারাগারে পরিণত হয়েছে, যেখানে মুসলমানদের পবিত্রতা, সম্মান, মর্যাদা এবং তাদের পবিত্র স্থানসমূহের অবমাননা করা হচ্ছে। এমনকি তাদের জীবন–সম্পদ আজ হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। সেই ক্রুসেডারদের আক্রমণকে বজায় রাখার স্বার্থে আজ তাদের উপরে অত্যাচার ও নিপীড়ন চালানো হচ্ছে যারা আজ ইসলামের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সামরিক ও আদর্শিক যুদ্ধ পরিচালনা করছে।
এই সেই বাংলাদেশ, যার ব্যাপারে তারা দাবি করে যে, তারা পাকিস্তানের উপর জয়লাভ করে একে ছিনিয়ে এনেছে যাতে তা স্বাধীন হয়, তা এখন ভারতের অধীনস্থ এক করদ রাজ্যে (Surrogate) পরিণত হয়েছে। এর ইসলাম বিরোধী নীতিমালা সমূহ যা ইসলামী আকীদাহ, এর প্রতীকসমূহ এবং মহান নবীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবমাননা করে যাচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে ভারতের কাছে বশ্যতা ও দাসত্বের জ্বলন্ত প্রমাণ।
বাংলাদেশের এই ঘটনাগুলোতে ভারত ও আমেরিকা উভয়েরই অনুমোদন রয়েছে, কারণ ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের পারস্পরিক স্বার্থ জড়িত। আর এই কারণেই তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দিন দিন আরও মজবুত হচ্ছে। এটাই হলো সেই তিক্ত সত্য যার ব্যাপারে আমাদেরকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে যেন আমরা নিজেদেরকে এই দুর্ভাগ্য, লাঞ্ছনা ও দেশী–বিদেশী ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলোর হাত থেকে মুক্ত ও স্বাধীন করার পথের প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি।
পৃথিবীর সকল স্থানে অবস্থিত হে আমার মুসলমান ভাইয়েরা,
বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, তাদের অপরাধ একটাই, আর তা হলো, তারা ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান চরম ষড়যন্ত্র ও সীমালঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে এসেছিল যা সংগঠিত হয়েছে ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ও এর মদদপুষ্ট একদল ধর্মনিরপেক্ষ লোকদের দ্বারা – যারা ইসলাম ও ইসলামের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরুদ্ধে অপমানকর ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে। সেই সাথে শত শত আলেম–ওলামা আজ তীব্র প্রতিকূলতা, মনুষ্য–শিকার, কারাগারে বন্দীত্ব, অবিচার ও মৃত্যুদন্ডের সম্মুখীন হচ্ছেন, আর এর কারণ একটাই, আর তা হলো, তারা অসহায় মুসলমানদের উপর খ্রীষ্টান ক্রুসেডারদের দালালদের তীব্র আক্রমণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন, যারা পাশ্চাত্যের শীর্ষস্থানীয় অপরাধীগুলো কর্তৃক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে – বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা এবং দ্বীন ইসলাম, এর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ইসলামী আকীদাহকে বিদ্রুপ করার কাজে।
হে আমার বাংলাদেশী মুসলমান ভাইয়েরা,
ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত ক্রুসেডারদের সেই আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, যা এই উপমহাদেশীয় ও পশ্চিমা শীর্ষস্থানীয় অপরাধীগুলোর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে ইসলাম, ইসলামের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ইসলামী আকীদার বিরুদ্ধে, যেন তারা আপনাদেরকে একটা স্বৈরাচারী ও কুফরী শাসনের দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ করতে পারে। তারা আপনাদের উপর যে জীবন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করছে তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে: মানবজাতিকে দাসে পরিণত করা, তাদের সম্পদ লুঠে নেয়া এবং তাদেরকে নৃশংস ও নারকীয় পদ্ধতিতে বিভক্ত করে রাখা।
আমি আপনাদেরকে ইসলামী আইন–কানুন, বিধি–বিধান ও আদর্শ আঁকড়ে ধরার জন্য আহবান করছি। আপনারা ইসলামী শরীয়তের অনুসরণ করে জীবন অতিবাহিত করুন, এবং আপনাদের সন্তানদেরকে মজবুতভাবে ইসলামের অনুসরণের উপর বড় করুন।
আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, আপনারা হক্কানী ওলামাদেরকে চারপাশে জড়ো হোন, তাদেরকে সাহায্য ও সমর্থন করুন, তাদেরকে নিরাপত্তা দিন।
আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, ইসলামের হেফাজত করার জন্য ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে এক গণজাগরণ সৃষ্টি করুন।
আমি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কিরামদেরকে আহবান করছি, দ্বীন ইসলাম আপনাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পূর্ণ করুন।
মহামর্যাদাবান আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
(আর স্মরণ করো) যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের থেকে আল্লাহ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, তোমরা এটা মানুষদের মাঝে পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করবে, এবং তা গোপন করবে না…(২)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
নিশ্চয়ই আমি তাওরাত নাযিল করেছিলাম, যাতে ছিল হেদায়েত এবং নূর, আল্লাহর অনুগত নবীগণ তদানুযায়ী ইহুদীদের আদেশ ও বিচার–ফায়সালা করতেন, আর আলেমগণ ও পুরোহিতগণও (সেই কিতাব অনুসারে ইহুদীদেরকে আদেশ ও বিচার–ফায়সালা করতেন), তা এ কারণে যে, তাদেরকে আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের আদেশ দেয়া হয়েছিল এবং তারা তার সংরক্ষণের সম্মতিসূচক সাক্ষ্যপ্রদান করেছিল; অতএব, তোমরা মানুষদের ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো; আর আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে পার্থিব সামান্য মূল্য গ্রহণ করো না; আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদানুযায়ী বিচার–ফায়সালা করে না তবে তারা কাফের।(৩)
আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, আপনারা ইসলামী শরীয়তের পরিপূর্ণ কর্তৃত্বের মূলনীতিকে আঁকড়ে ধরুন, এবং মানবরচিত সংবিধান ও আইনের উপরে শরীয়তের শ্রেষ্ঠত্বকে আঁকড়ে ধরুন, যেন তা সাধারণ জনগণের ইচ্ছার উপর কর্তৃত্বশীল থাকে। এবং শরীয়ত যেন তাদের খেয়াল–খুশি কিংবা অন্য কোনো কর্তৃত্বের অধীন না হয়।
আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, আপনারা সাধারণ জনগণকে এক বিশাল ও সর্বব্যাপী ঈমানী জাগরণের নেতৃত্ব দিন, এমন এক জাগরণের নেতৃত্ব দিন যার জোয়ারে কোনো ভাটা পড়ে না এবং যার গতিশীলতা কখনো হ্রাস পায় না, যতক্ষণ না ইসলামের জমিনে শুধুমাত্র ইসলামী শরীয়তের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, যা অন্য কোনো কর্তৃত্বের অধীন না থেকে বরং নিজেই কর্তৃত্বশীল হয়, যা অন্যের নির্দেশের অধীন না হয়ে বরং নিজেই নির্দেশদাতা হয়, যা অন্যদেরকে নেতৃত্ব দেয়, অন্যের নেতৃত্বের অধীন থাকে না।
আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, আপনারা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রতারণা জনসম্মুখে তুলে ধরুন, এই ব্যবস্থার প্রতারণা উন্মোচন করে দিন যা পশ্চিমারা মুসলমানদের শোষণ করার কাজে ব্যবহার করছে। যদি এর দ্বারা এমন এক সরকার ক্ষমতায় আসে যা পাশ্চাত্যকে সন্তুষ্ট করে তাহলে পাশ্চাত্য এটিকে উৎসাহ দেয় ও সমর্থন করে; আর যদি এর দ্বারা এমন এক সরকার ক্ষমতায় আসে যা সামান্য পরিমাণও পশ্চিমাদের কিংবা ইসলামের শত্রুদের বিরোধিতা করে, তাহলে সেই সরকারের জন্য পশ্চিমাদের গোলামদের কামান, গোলন্দাজ বাহিনী, বোমা, বুলেট ইত্যাদি অপেক্ষা করে। আর নব্বই এর দশকের আলজেরিয়ার পাশাপাশি মিশর এই সত্যের সাম্প্রতিক উদাহরণ।
হে সম্মানিত আলেমগণ!
আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, আপনারা এই উম্মাতের অন্তরে শহীদী মৃত্যুর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করুন, আর দ্বীন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্রতা এবং পবিত্র স্থানসমূহের রক্ষার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করুন। আপনাদের অবশ্যই এই উম্মাতকে শিক্ষা দিতে হবে যে, আল্লাহর অবাধ্যতায় জীবন অতিবাহিত করার চাইতে আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গ করা অনেক উত্তম, এবং অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মূল্য, অত্যাচার ও নিপীড়নের কাছে আত্মসমর্পণের মূল্য থেকে অনেক কম। আপনাদের অবশ্যই উম্মাতকে এই শিক্ষা দিতে হবে যে, যে ব্যক্তি স্বাধীনতা চায় তাকে এর মূল্য দিতে হয়, আর স্বাধীনতার মূল্য হলো: মৃত্যু।
– – – – – – – – – – – – – – – – –
“যারা আমাদের প্রতি আক্রমণাত্মক নয় তাদের প্রতি আমরাও আক্রমণাত্মক নই,”
“কিন্তু আমরা অবশ্যই এমন কারো প্রতি অহিংস নই যে আমাদের প্রতি সহিংস!”
“না! মোটেও না! যদি আপনি আমার দেহে একটি নয় ইঞ্চি ছুরি ঢুকিয়ে দিয়ে এরপর তার ছয় ইঞ্চি আমার দেহ থেকে বের করে আনেন তবে সেটা উন্নতি নয়! আপনি যদি পুরো ছুরিটাও বের করে আনেন, সেটাও উন্নতি নয়! উন্নতি হচ্ছে, আপনার ছুরির দ্বারা আমার দেহে যে ক্ষয়–ক্ষতি সৃষ্টি হয়েছে সেটার নিরাময় করা।”
“কোনো অপরাধী যদি আমাকে নির্যাতন করে তখন তাকে হটানোর জন্য আমার যা কিছু ব্যবহার করতে হয় আমি তা করবো।”
“আপনি যখনই অন্যের কাছে স্বাধীনতা ভিক্ষা চাইবেন, আপনি কখনো স্বাধীন হতে পারবেন না। স্বাধীনতা হলো নিজে অর্জন করার বিষয়”
আপনি তা অর্জন করার জন্য কি মূল্য দিতে বলছেন?
“স্বাধীনতার মূল্য হচ্ছে: মৃত্যু।”
– আল হাজ্জ মালিক আল শাবায্য (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন)
ম্যালকম এক্স
– – – – – – – – – – – – – – – – –
আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, আপনারা এই উম্মাতকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই কথার উপর আমল করতে উৎসাহ দিন:
“শহীদগণের নেতা হচ্ছেন হামজা বিন আব্দুল মুত্তালিব এবং সেই ব্যক্তি যে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ায়, তাকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করে এবং এর জন্য তাকে সে (শাসক) হত্যা করে।”
– – – – – – – – – – – – – – – – –
“হে আমার ভাইয়েরা, (ইসলামের দিকে) দাওয়াতের পথ অপ্রিয় জিনিস দিয়ে পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। এটা বিপদাপদে পরিপূর্ণ। বন্দীত্ব, মৃত্যু, জোরপূর্বক স্থানান্তর, নির্বাসন ইত্যাদি সবই এই রাস্তায় বিদ্যমান। সুতরাং, যে কেউ কোনো মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে চায় কিংবা (ইসলামের) দাওয়াত দান করতে চায়, তাকে এই ব্যাপারটা মনে রাখতে হবে। আর যদি কেউ এই রাস্তাকে আনন্দ–ভ্রমণ কিংবা মুখরোচক ভাষণ, বিশাল সমাবেশে কোনো আলোচনা কিংবা অভিজাতপূর্ণ কোনো খুতবাহ মনে করেন, তবে তার উচিত নবী–রাসূলগণ (আলাইহিমুস সালাম), দায়ীগণ এবং তাদের অনুসারীদের ইতিহাসের দিকে তাকানো, যেদিন থেকে এই দ্বীন পৃথিবীতে এসেছে। বরং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেদিন আগমন করেছিলেন সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত।”
– ইমাম আব্দুল্লাহ আয্যাম (আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন)
– – – – – – – – – – – – – – – – –
হে বাংলাদেশের দ্বীন ইসলামের আলেমগণ!
আপনাদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিক লোকদের বিরুদ্ধে এক আদর্শিক ও দাওয়াতী যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে, যেন তাদের বিশ্বাস ও মতবাদের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যায়। আপনাদেরকে অবশ্যই এদের ব্যর্থতা, কেলেঙ্কারি, এবং তারা যে এই দেশকে বিপথে পরিচালিত করছে তা জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে। একই সাথে আপনাদেরকে অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণকে ইসলামী শরীয়তের উপকারিতা ও শ্রেষ্ঠত্ব ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিতে হবে। আপনাদেরকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে যে, ইসলামী শরীয়ত ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, গৌরব, সম্মান, সতীত্ব, সচ্চরিত্র, সুষ্ঠু আদব–কায়দা এবং মানবাধিকার এর সংরক্ষণের আহবান করে।
হে ইসলামের আলেমগণ!
আপনারাই এই উম্মাতের নেতা। আপনারা যদি মজবুত থাকেন, তাহলে এই উম্মাতও মজবুত থাকবে। আপনারা যদি দৃঢ় থাকেন, তাহলে এই উম্মাতও দৃঢ় থাকবে। আপনারা যদি সত্যের উপর অটল ও অবিচল থাকেন, তাহলে এই উম্মাতও অটল ও অবিচল থাকবে। সুতরাং, আপনাদের কাঁধে যে আমানত রয়েছে সে ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন, এবং আপনাদের নেতৃত্বের আসনের ব্যাপারে – যার জন্য আপনারা বিচার দিবসে জিজ্ঞাসিত হবেন। আপনাদের ব্যক্তিগত দুর্বলতার জন্য যেন ইসলামের কোনো ক্ষতি না হয়ে যায় এ ব্যাপারে সতর্ক হোন!
হে ইসলামের আলেমগণ!
আপনারা একটি সর্বজনীন উদ্দেশ্যে ইসলামের পতাকাতলে সমবেত ও একত্রিত হোন। ভারত, পাশ্চাত্য, ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিকদের দ্বারা গঠিত জোটের মোকাবেলা করার জন্য আপনারা আপনাদের সমর্থনে সমগ্র উম্মাতকে ঐক্যবদ্ধ করুন! এই অপরাধীচক্র আপনাদেরকে তাদের প্রভুর গোলামে পরিণত করে আপনাদেরকে আপনাদের ঈমান, ইজ্জত, সম্মান ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করার পূর্বেই আপনারা তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন। তাওহীদের কালিমার অনুগামী থেকে আপনারা সকলের যেন কথা একই হয়।
আপনারা “কায়েদাতুল জিহাদে” (আল কায়েদা) আপনাদের ভাইদের প্রকাশিত “ইসলামের সমর্থনে একটি প্রামাণ্য দলিলপত্র” দেখতে পারেন, যেখানে তারা সমগ্র উম্মাতকে ঐক্যের প্রতি আহবান করেছেন। আমি আপনাদের কাছে এটি উপস্থাপন করছি যেন আপনারা এর উপর চিন্তাভাবনা করতে পারেন এবং এর থেকে উপকৃত হতে পারেন।
হে আমার বাংলাদেশের মুসলমান ভাইয়েরা!
আল্লাহর সাহায্য ও শক্তির বলে আফগানিস্তানে ইসলামী ইমারতের বিজয় সন্নিকটে। আল্লাহর অনুমতিক্রমে, এই বিজয় হবে ইসলাম ও ইসলামের সমর্থনকারীদের বিজয়, এবং পরাজয়টি হবে ইসলামের শত্রুদের পরাজয়, যে শত্রুদের মাঝে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধীচক্র, তাদের সমর্থনকারী এবং অপরাধীচক্রের সেই সকল আঞ্চলিক দালালগুলো যারা ইসলামী জমিনের পূর্বাংশে (মূলত ভারতীয় উপমহাদেশ) নিয়োজিত আছে। সুতরাং, এই ইসলামী ইমারতের বিজয়ের জন্য আপনাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ, জনবল, নসীহাত, চিন্তা–ভাবনা, মানুষদেরকে এর দিকে আহবান প্রভৃতি সকল প্রচেষ্টাকে নিবদ্ধ করুন।
আপনারা দৃঢ় থাকুন এবং ধৈর্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকুন, কারণ আল্লাহ যে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা অতি সন্নিকটে।
আর মূসা বললো: “তোমরা যদি আল্লাহর উপর ঈমান রাখো তবে তাঁরই উপর ভরসা করো, যদি তোমরা সত্যিই মুসলমান হয়ে থাকো!” তারা বললো: “আমরা আল্লাহর উপরেই ভরসা করলাম, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জালেম লোকদের লক্ষ্যস্থল বানাবেন না। আর আমাদেরকে আপনার নিজ রহমতে কাফের লোকদের কবল থেকে মুক্তি দিন।” এবং আমি মূসা ও তাঁর ভ্রাতার প্রতি ওহী নাযিল করলাম, “তোমরা উভয়ে তোমাদের মানুষদের জন্য মিসরেই বাসস্থান বহাল রাখো, আর তোমরা নিজেদের ঘরগুলোকে উপাসনালয় হিসেবে গণ্য করো, এবং তোমরা নামায কায়েম করো, আর ঈমানদারদের সুসংবাদ জানিয়ে দাও।” আর মূসা বললো: “হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গকে পার্থিব জীবনে দান করেছেন জাঁকজমকের সামগ্রী এবং বিভিন্ন রকমের সম্পদ; হে আমাদের রব! যার কারণে তারা আপনার পথ হতে মানবজাতিকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের সম্পদগুলোকে ধ্বংস করে দিন এবং তাদের অন্তরসমূহকে আরও কঠিন করে দিন, যেন তারা তাদের প্রতি আগমনকারী যন্ত্রণাদায়ক আযাব দেখার পূর্ব পর্যন্ত ঈমান আনতে না পারে।” আল্লাহ বললেন: “তোমাদের উভয়ের দোয়া কবুল করা হলো। অতএব তোমরা দৃঢ় থাকো, আর তাদের পথ অনুসরণ করো না যাদের কোনো জ্ঞান নেই।”(৪)
হে মুসলিম উম্মাত!
বাংলাদেশের মর্মান্তিক ঘটনা এই কথারই সাক্ষ্য বহন করে যে, পশ্চিমা মিডিয়া ও ইসলামী বিশ্বের মিডিয়াগুলো এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে স্বক্রিয় ভূমিকা পালন করছে, এরা পশ্চিমা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ভারত ও ইসলামের অন্যান্য শত্রুগুলোর পাশাপাশি কাজ করছে। হাজার হাজার মানুষকে বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু কেউই তাদেরকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যায় নি। বরং মিডিয়াগুলো এই ঘটনাটিকে এমনভাবে পাশ কাটিয়ে গেছে যেন কিছুই হয় নি। সরকারের পক্ষ থেকে একটা বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছিল: মৃতের সংখ্যা নাকি একশত এর কাছাকাছি। সুতরাং, এভাবেই বাংলাদেশে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং এখনোও হত্যা করা হচ্ছে, কিন্তু পশ্চিমারা নীরব দর্শক। আর ভারত তো এমনকি এই শোকাবহ ঘটনার ব্যাপারে তার আনন্দও প্রকাশ করেছে। আমেরিকা ও ভারত এই ঘটনার পরে বাংলাদেশী সরকারকে আরও বেশী সহযোগিতা করা শুরু করেছে।
একইভাবে, যখন মিশরে পাঁচ হাজারেরও (৫,০০০) বেশী মানুষকে হত্যা করা হলো এবং রাস্তাঘাটে তাদের মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয়া হলো, তখন আমেরিকা এই বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে আহবান জানায়। কিন্তু যখন লক্ষ লক্ষ মুসলমানদেরকে হত্যা করা হয় আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, ফিলিপাইন, গুজরাট, আহমাদাবাদ ও সোমালিয়াতে, তখন সমগ্র বিশ্ব নীরব হয়ে থাকে।
কিন্তু যখন আফগানিস্তান, মালি ও সোমালিয়ার মানুষেরা বিদেশী দখলদারিত্ব এবং ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের থেকে মুক্তি চায় এবং শরীয়তের সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা “জরুরি” হয়ে পড়ে। এরপর তাদেরকে আক্রমণ করার জন্য পাঠানো হয় পূর্ণাঙ্গ সেনাবাহিনী, যাতে আন্তর্জাতিক অপরাধীচক্রের হোতারা এবং তাদের স্থানীয় দালালরা অংশগ্রহণ করে। আর তাদের গ্রামগুলো ও ঘরগুলোকে এক ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয়। তাদের নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা হয়। এক কথায়, তারা শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করতে পারে না কারণ তারা “জঙ্গী” ও “স্বাধীনতার শত্রু”। কিন্তু যখন সালমান রুশদী, তসলিমা নাসরীন, এবং আলী রাজিব হায়দার ইসলাম, ইসলামের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ইসলামী আকীদাকে অপমান করে, তখন তাদেরকে নায়কোচিত সম্মাননা দেয়া হয়, যাদের সুরক্ষা, সম্মান ও পুরস্কার প্রদান করা জরুরি! এমনকি তাদেরকে “হোয়াইট হাউজ” কিংবা “টেন ডাওনিং স্ট্রীট” এ উষ্ণ অভ্যর্থনা দেয়া হয়! কেন?
কারণ এরা হচ্ছে “স্বাধীনতার প্রতীক” যাদেরকে ইসলামের শত্রু ও পশ্চিমারা রক্ষা করে। অপরদিকে, “গুয়ান্তানামো”তে এবং সিআইএ (CIA) এর গোপন কারাগারসমূহে যে সকল মুসলমানদেরকে বন্দী করে রাখা হয়েছে তাদের স্বাধীনতার কোনো অধিকার নেই। তাদেরকে অত্যাচার করা, তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, বন্দী করে রাখা উচিত। যদিও আমেরিকার নিজেদের নির্ধারিত কোনো আদালতেও তাদের কোনো শাস্তি দেয়া হয় নি। কারণ, এরা “মানুষ” নয় যাদের মানবাধিকার দিতে হবে বলে আমেরিকা মনে করে। এরা ঐ সকল (জাতিসংঘ) সনদের অধীন নয় যা পুরো মানবজাতির ব্যাপারে মেনে চলাকে আমেরিকা নিজের উপর বাধ্যতামূলক করে নিয়েছে। এটা হচ্ছে ‘ক্ষমতার যুক্তি’ এবং অহংকার। এটা আসলে মানবাধিকার নয়, বরং ঐ সকল ব্যক্তির অধিকার যারা ইসলামের বিরোধিতা করে। সুতরাং, একজন মুসলমানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো হচ্ছে তাদের অধিকার!! আর এটাই হলো পশ্চিমাদের অহংকারী দৃষ্টিভঙ্গি, যা মহান ইমাম ও মুজাদ্দিদ, শাইখ উসামা বিন লাদেন (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন) সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি তাদেরকে সেই যুক্তি দিয়েই প্রতিহত করেছিলেন যা তারা বুঝে। আর তিনি তাদেরকে সেই ভাষা দিয়েই মোকাবেলা করেছিলেন যে ভাষা তারা বুঝতে পারে। জুলুম ও নিপীড়নের মুখে ‘শক্তির যুক্তি’।
পাশ্চাত্যের কাছে “স্বাধীনতা” হচ্ছে আপনাকে তাদের গোলামী করতে হবে। এর মানে হলো, আপনাকে তোতা পাখি হয়ে যেতে হবে যে শুধু তাই বারংবার বলতে থাকবে যা তাকে পশ্চিমারা শিখিয়ে দেয়! পশ্চিমাদের কাছে স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে, আপনি শুধুমাত্র তাদের কাছে তাদের ঘনিষ্টতা ও সন্তুষ্টি আশা করবেন। কিন্তু যদি আপনি মানুষকে আল্লাহর তাওহীদের (একত্ববাদ) দিকে আহবান করেন; যদি মানুষদেরকে ইসলাম, জিহাদ, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ এবং শরীয়তের শাসনের প্রতিষ্ঠার দিকে আহবান করেন, তাহলে আপনি একজন “জঙ্গী”!!!
তখন আপনার দ্বারা সৃষ্ট এই সমস্যার সমাধানে তারা যে পথ বেছে নেয় তা হলো, বোমা বর্ষণ, গণহত্যা ও যুদ্ধ। ইসলামী শরীয়ত দিয়ে শাসন করার বা শাসিত হবার কোনো অধিকার আপনার নেই, এমনকি যদিও সিংহভাগ জনগণ আপনাকেই সমর্থন করে। এর কারণ হলো, গণতন্ত্র হচ্ছে এমন এক পথ যা আপনাকে এমন অবস্থায় উপনীত করে যেখান থেকে আপনি শুধুমাত্র পশ্চিমাদের গোলামী করতে পারবেন। আর আপনি যদি গণতন্ত্রকে তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনি “জঙ্গী”।
গণতন্ত্রের প্রবক্তারা এর যে সত্যটা গোপন করে তা হলো, এটা হচ্ছে অধিকাংশের খেয়াল–খুশির উপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি স্বৈরতন্ত্র। গণতন্ত্রে “সত্য” নির্ভর করে অধিকাংশের খেয়াল–খুশি, আকাঙ্ক্ষা ও সিদ্ধান্তের উপর। অধিকাংশের খেয়াল–খুশি সেখানে আইন হয়ে যায়, এমন জীবন ব্যবস্থা যা মেনে চলতে সবাইকে বাধ্য করা হয়। এটি একটি ভয়ংকর মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, যা হচ্ছে: গণতন্ত্রে আল্লাহর বদলে জনগণকেই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বলা হয়। আর এর বাস্তবতা হচ্ছে, গণতন্ত্র আসলে কোনো দ্বীন–ধর্ম, আচার–রীতিনীতি কিংবা মূলনীতি কোনো কিছুই ধার ধারে না। এখানে সবকিছুই অনুমোদিত যতক্ষণ তা বেশীরভাগ মানুষের ভোট পায়।
গণতান্ত্রিক ব্রিটেনই কয়েক শতাব্দী যাবত মুসলমানদের ভূমিসমূহ দখল করেছিল, সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে এবং তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠন করেছে। গণতান্ত্রিক ব্রিটেনই ইহুদীদের কাছে ফিলিস্তিনের মালিকানা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্রিটেনই ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যাবার পূর্বে ইহুদীবাদীদের হাতে ফিলিস্তিনকে অর্পণ করে গেছে। এবং গণতান্ত্রিক আমেরিকার দ্বারাই জাপানে দুইটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করার ভয়ংকর ইতিহাস রচিত হয়েছে। এই গণতান্ত্রিক আমেরিকাই ভিয়েতনামকে ধ্বংস করেছিল এবং সেখানে পাঁচ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল। আর এখনও সেই গণতান্ত্রিক আমেরিকাই মুসলমানদের খনিজ তেল চুরি করছে এবং মুসলমানদের ভূমিসমূহে দখলদারি চালাচ্ছে। এই আমেরিকাই ইরাকে পাঁচ লক্ষ শিশুকে হত্যা করেছে, এবং ইরাক ও আফগানিস্তানে তাদের ক্রুসেডার আক্রমণে আরও লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। সেই সাথে, একথা ভুলে গেলেও চলবে না যে, গণতান্ত্রিক আমেরিকাই ইসরায়েলকে বর্তমান অবস্থায় এনেছে, ইসরায়েলকে অস্ত্র ও অর্থের যোগান দিয়েছে এবং এর প্রতিরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর এই গণতান্ত্রিক আমেরিকাই যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচার–আচরণের যত রকমের সীমারেখা ও বিধি–নিষেধ ছিল তার সবই ভঙ্গ করেছে, এবং যুদ্ধবন্দীদের নির্যাতন না করার যে বিধি ছিল তা মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের ক্রুসেডার যুদ্ধে পুরোপুরি ভঙ্গ করেছে। আজ গণতান্ত্রিক ইসরায়েলই ফিলিস্তিনের অধিবাসীদেরকে হত্যা করছে, তাদের ঘর–বাড়ি ও জায়গা–জমি কেড়ে নিচ্ছে। আর যে কেউ এই জুলুমকে প্রতিহত করতে চায় ও আত্মরক্ষা করে, তাকে পশ্চিমারা “জঙ্গী” বলে আখ্যায়িত করে।
গণতান্ত্রিক ভারত আজ কাশ্মীর, গুজরাট, আহমাদাবাদ ও আসামে হাজার হাজার মুসলমানদেরকে হত্যা করছে। এই সকল অপরাধগুলোই তাদের নিজ নিজ জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতি নিয়ে করা হচ্ছে। আর এভাবে এই অপরাধগুলো গণতন্ত্রের দ্বীনে বৈধ ও সম্পূর্ণ ন্যায় হয়ে যায়।
সুতরাং, গণতন্ত্র হলো একটি দ্বীন যা দ্বীন ইসলামের বিরোধী।
ইসলাম ও গণতন্ত্রের মাঝে পার্থক্য | ||
বিষয় | ইসলাম | গণতন্ত্র |
আনুগত্য | আল্লাহর শরীয়ত | অধিকাংশ মানুষের খেয়াল–খুশি |
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী | আল্লাহ | জনগণ |
কারণ ইসলামী শরীয়তে পরম আনুগত্য শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতিই করা হয়ে থাকে। অপরদিকে গণতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থায় অধিকাংশ মানুষের খেয়াল–খুশির প্রতি পরম আনুগত্য নির্ধারণ করা হয়। দ্বীন ইসলামে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহকেই দেয়া হয়, আর গণতন্ত্রে এই ক্ষমতার অধিকার মানুষের প্রতি অর্পণ করা হয়।
মহামর্যাদাবান আল্লাহ তাআলা বলেন:
বিধান দেয়ার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহরই, তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে, এটাই সরল–সঠিক দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।(৫)
সুতরাং, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটি ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করা সম্ভব নয়। ঠিক যেমন, খ্রীষ্টানদের আকীদা অনুসরণ করে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করা সম্ভব নয়। মদ ও জিনা–ব্যাভিচার কে কারও জন্য অবৈধ করার জন্য যদি আপনি তাকে খ্রীষ্টান হয়ে যেতে বলেন তাহলে সেটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? একইভাবে, কেউ এসে আপনাদেরকে এটা বলাও যুক্তিসঙ্গত হবে না যে, ইসলামী আইন বাস্তবায়নের জন্য আপনাদেরকে ইসলামী শরীয়তের শাসন ও আল্লাহর সার্বভৌমত্বের মূলনীতি পরিত্যাগ করতে হবে, এবং অধিকাংশ মানুষের শাসন এবং মানুষের সার্বভৌমত্বের মূলনীতি মেনে নিতে হবে।
হে আমার অত্যাচারিত মজলুম উম্মাত!
বাংলাদেশে যা ঘটে চলেছে তা বার্মার ঘটনাবলী থেকে খুব দূরে নয়। বার্মার প্রতিটি গণহত্যার পর ইসলামের শত্রুরা এর সরকারকে আরও অধিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করে “বার্মায় মানবাধিকারের অবস্থার উন্নতি” এর নামে। হ্যাঁ, অধিকার ঠিকই। তবে তা হচ্ছে অত্যাচারিত ও মজলুম মুসলমানদের উপর আরও জুলুম–নির্যাতন চালানোর ব্যাপারে জালেমদের অধিকার; এই অধিকার হচ্ছে, ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে মুসলমানদের উপর আগ্রাসন চালানোর অধিকার। এটাই হচ্ছে, “মানবাধিকার” এর নামে প্রতারণা স্বরুপ। তারা মনে করে যে, আমাদের রক্তের বন্যা প্রবাহিত করে এবং আমাদের পবিত্রতায় আঘাত করার পরেও তারা আমাদেরকে এই মানবাধিকারের বুলি দিয়ে বোকা বানাতে পারবে! আর একথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, সেখানকার তথাকথিত বিরোধীদলীয় নেতৃ ‘সূ চী’ যাকে তারা তাদের ভাষায় “বার্মায় মানবাধিকার রক্ষায় অবদান” এর জন্য “নোবেল পুরস্কার” দিয়েছিল এবং “হোয়াইট হাউজ” এ উষ্ণ অভ্যর্থনা দিয়েছিল, সে বার্মায় মুসলমানদের গণহত্যার ব্যাপারে নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। বার্মায় চলমান এই ভয়ংকর বর্বরতার ব্যাপারে নীরবতায় আমেরিকার সমর্থন রয়েছে। বরং আমেরিকা এখন একথাও বলছে যে, বার্মা নাকি “গণতন্ত্র ও মানবাধিকার” এ অনেক উন্নতি অর্জন করেছে – এসব শব্দ আমেরিকা নিজের ইচ্ছেমতো পছন্দ করে ও সংজ্ঞায়িত করে। যার ফলে ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের হত্যা করা আজ ইসরায়েলের মানবাধিকার; ইরাক, আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ করা আমেরিকার মানবাধিকার; আর মালিতে বোমাবর্ষণ ও দখলদারি চালানো আজ ফ্রান্সের মানবাধিকার। ষড়যন্ত্রমূলক নীরবতা এবং গণহত্যায় পিছন থেকে সমর্থনের মাধ্যমে আমেরিকা আজ মুসলমানদের গণহত্যায় শরীক থাকছে।
প্রকৃতপক্ষে, নবীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপমানের সমর্থনে আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর কোনো মদদ যদি না থাকতো, তাহলে তাদের তুচ্ছ গোলামগুলো বাংলাদেশে এমন দুঃসাহস দেখাতো না।
আমাদের উচিত সুদান, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি জায়গার সংখ্যালঘুদের জন্য পশ্চিমারা যে মায়া কান্না কাঁদে, তার সাথে বাংলাদেশ, বার্মা, ফিলিপাইন, ভারত, আফগানিস্তান, কাশ্মীর, ইরাক, ইয়েমেন, সোমালিয়া, মালি, ফিলিস্তিন ও মিশরে মুসলমানদের উপর চলমান গণহত্যার ব্যাপারে পশ্চিমাদের নীরবতার তুলনা করা। তাহলেই আমরা বুঝতে পারবো যে, “মানবাধিকার” হচ্ছে ওদের জনগণের অধিকার, আমাদের জনগণের অধিকার নয়।
বাংলাদেশ ও বার্মায় যে ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে তার থেকে কাশ্মীরে চলমান হত্যাযজ্ঞ খুব বেশী দূরের কোনো বিষয় নয়। আসাম, গুজরাট, আহমাদাবাদ ইত্যাদি জায়গায় চলমান হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য।
সুতরাং, দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়াতে মুসলমানদের উপর একযোগে চলমান এই গণহত্যা কি নিছক কোন কাকতালীয় ব্যাপার? নাকি এটা একটা ভয়ংকর ষড়যন্ত্র যেখানে ইসলামবিরোধী পশ্চিমা অপশক্তি, দিল্লী ও বেইজিং সকলেই অংশগ্রহণ করেছে?
সেই সাথে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, সোমালিয়া, মালি ইত্যাদি দেশে এবং সম্প্রতি মিশরেও আজ যা ঘটে চলেছে, এই সকল ঘটনাগুলোর মাঝে যদি আমরা কোনো যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করি তাহলে এর উপসংহারস্বরূপ আমরা কি দেখতে পাই?
পৃথিবীর সকল স্থানে অবস্থিত আমার মুসলমান ভাইয়েরা!
আমাদেরকে সবাইকে একযোগে আমাদের সাধ্যমতো সর্বাত্বক চেষ্টা করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ, ভারত, বার্মা ও শ্রীলংকায় মুসলমানদের উপর চলমান এই জুলুম ও নির্যাতনের অবসান ঘটানো যায়। এটা সকলেরই ঈমানী দায়িত্ব; দ্বীনের দায়ী, লেখক, সাংবাদিক, জনমত তৈরিকারী, যারই দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা আছে তাকে এই চরম অবিচারের প্রকৃত চেহারা জনসম্মুখে প্রকাশ করে দিতে হবে। যাতে করে জনগণের প্রবল চাপের মুখে এই সকল দেশের অপরাধী সরকারগুলো তাদের জুলুম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। একইভাবে, যারা জনকল্যাণকর কার্যক্রমে লিপ্ত, ধনী মুসলমান কিংবা ব্যবসায়ী যারা মুসলমানদেরকে সমর্থন করেন তাদের উচিত বার্মার মুসলমানদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া এবং তাদের সকল প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করা।
আর সেই সাথে কাশ্মীর, গুজরাট, আসাম ও আহমাদাবাদে আমাদের যে সকল ভাইয়েরা হিন্দু আধিপত্যের অন্ধকারে পরাধীন হয়ে আছেন, তাদেরকে আমি বলতে চাই,
আপনারা আপনাদের বিরুদ্ধে যেসকল অপকর্মের সাক্ষী হয়ে আছেন এবং যেসকল অপরাধ এখনোও চলছে, তা হচ্ছে শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রের প্রতারণা ও অসারতার আরো একটি দৃষ্টান্ত, যা কিনা আপনাদেরকে হিন্দুদের সাথে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে আহবান করে, যা হিন্দু–মুসলমান সবাইকেই একই কাতারে নিয়ে আসে। আর আপনারা সম্ভবত ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন যে, হিন্দু–মুসলমানদের একই মঞ্চে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য একটাই, আর তা হলো, মুসলমানদেরকে হিন্দুদের সহজ শিকারে পরিণত করা।
হিন্দু আধিপত্যের অন্ধকারে বসবাসরত আমার প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা!
ঈমানদারদের প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য এবং কাফেরদের প্রতি দায়মুক্তি ও শত্রুতার আকীদা (আল ওয়ালা ওয়াল বারা) আমাদেরকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাআলার এই বাণী মনে রাখতে হবে:
হে ঈমানদারগণ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে (কাফের–মুশরিক) বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না; তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছো, অথচ তারা তোমাদের নিকট যে সত্য (তাওহীদ, কোরআন, নবী মুহাম্মাদ) এসেছে, তার সাথে কুফরী করেছে, আর রাসূলকে এবং তোমাদেরকে তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এ কারণে যে তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে বিশ্বাস করো! যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে থাকো, তবে তোমরা তাদের সাথে গোপনে বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা করো না, কারণ তোমরা যা গোপন করো এবং যা প্রকাশ করো তা আমি সম্যক অবগত। আর তোমাদের মধ্যে যে কেউই এরূপ করে তবে সে সরল পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। যদি তারা তোমাদের উপর কিছু ক্ষমতা পেয়ে যায় তবে তারা তোমাদের সাথে শত্রুর ন্যায় আচরণ করবে, এবং তারা স্বীয় হাত ও মুখ দ্বারা তোমাদের অনিষ্ট সাধন করবে এবং চাইবে যে, তোমরা কুফরী করো।(৬)
তিনি আরও বলেন:
দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিস্কৃত করে নি তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। আল্লাহ শুধু তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিস্কার করেছে, এবং তোমাদেরকে বহিস্কারে সাহায্য করেছে। সুতরাং, তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে তারাই হচ্ছে জালেম।(৭)
মহাসম্মানিত আল্লাহ তাআলার এই কথার উপর আমাদের অবশ্যই আমল করতে হবে:
তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছো না? অথচ অসহায় পুরুষগণ, নারীবৃন্দ এবং শিশুরা বলে যে, “হে আমাদের প্রতিপালক! অত্যাচারী অধিবাসীদের এই নগর হতে আমাদেরকে বহির্গত করুন, এবং স্বীয় সন্নিধান হতে আমাদের পৃষ্ঠপোষক ও আপনার নিকট হতে আমাদের জন্য সাহায্যকারী প্রেরণ করুন।” যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কুফরী করেছে তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। অতএব তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; নিশ্চয়ই শয়তানের ষড়যন্ত্র অতি দুর্বল।(৮)
সবশেষে, ভারতের অত্যাচারী ও অপরাধী সরকারকে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে,
প্রত্যেক অপরাধেরই একটি শাস্তি রয়েছে। কাঁটা রোপণ করে কখনোও ফুলের শোভা আশা করা যায় না, আর নির্যাতিতরা নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিবে, যদিও এতে কিছু সময় ব্যয় হয়। নিশ্চয়ই মহাসম্মানিত আল্লাহ তাআলা সত্যই বলেছেন যে,
…জুলুমকারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ।(৯)
আর আমাদের শেষ দোয়া হলো, সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক, আর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও তাঁর সাহাবাদের প্রতি।
ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
– – – – – – – – – – – – – – – – –
কেউ আপনাকে স্বাধীনতা দিতে পারবে না,
কেউ আপনাকে সাম্য দিতে পারবে না,
না পারবে ন্যায়বিচার অথবা এরকম অন্য কিছু দিতে,
যদি আপনি পুরুষ হয়ে থাকেন, আপনি তা অর্জন করে নিন!
– ম্যালকম এক্স [আল হাজ্জ মালিক আল শাবায্য (আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন)]
– – – – – – – – – – – – – – – – –
আস–সাহাব মিডিয়া
১৪৩৫
– – – – – – – – – – – – – – – – –
(১) ২০০৭ সালের ১০ জুলাই পাকিস্তানী তাগুত সরকারের নেতৃত্বে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী “লাল মসজিদ” এ “অপারেশন সাইলেন্স” নামক গণহত্যা পরিচালনা করে। এতে মাওলানা আব্দুর রশীদ গাযী এবং তাঁর সহস্রাধিক ছাত্র–ছাত্রী শাহাদাত বরণ করেন (আল্লাহ তাঁদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন)। তাঁরা পাকিস্তানী তাগুতগোষ্ঠীকে বর্জন করেছিলেন এবং শুধুমাত্র এক আল্লাহকেই ইবাদতের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাঁরা সত্যিকার অর্থে মহান আল্লাহ তাআলার তাওহীদ (একত্ববাদ) কে অন্তরে ধারণ করেছিলেন। তাই পাকিস্তানী তাগুতগোষ্ঠী তাঁদের বিরুদ্ধে এই গণহত্যা পরিচালনা করে, ঠিক যেমন ২০১৩ সালের ৬ মে ভোররাতে বাংলাদেশী তাগুতগোষ্ঠীর নেতৃত্বে বাংলাদেশী তাগুতবাহিনী শাপলা চত্বরে হাজার হাজার তাওহীদবাদী মুসলমানদের উপর গণহত্যা পরিচালনা করেছিল।
(২) সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৭
(৩) সূরা মায়িদাহ, আয়াত: ৪৪
(৪) সূরা ইউনুস, আয়াত: ৮৪–৮৯
(৫) সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৪০
(৬) সূরা মুমতাহিনাহ, আয়াত: ১–২
(৭) সূরা মুমতাহিনাহ, আয়াত: ৮–৯
(৮) সূরা নিসা, আয়াত: ৭৫–৭৬
(৯) সূরা নামল, আয়াত: ২২৭