আল-ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশনইলম ও আত্মশুদ্ধিনির্বাচিতবই ও রিসালাহমিডিয়া

আত্মশুদ্ধি – ০৯||দান সদকাঃ ফযিলত ও উপকারিতা||মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

আত্মশুদ্ধি – ০৯
দান সদকাঃ ফযিলত ও উপকারিতা
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

অনলাইনে পড়ুন
https://justpaste.it/dansadakafojilotoupokarita

ডাউনলোড করুন

PDF

https://banglafiles.net/index.php/s/scWZFjjk44psLiZ

https://archive.org/details/09.dansadakafojilotoupokarita

https://archive.org/download/09.dansadakafojilotoupokarita/09.%20DanSadaka-FojilotOUpokarita.pdf
https://archive.org/details/09.dansa…ilotoupokarita
https://archive.org/download/09.dans…OUpokarita.pdf

http://www.mediafire.com/file/yg9vezrqj7saz8u/09._DanSadaka-FojilotOUpokarita.pdf/file

WORD

https://banglafiles.net/index.php/s/6db3SimrW68dJC8
https://archive.org/details/09.dansa…okarita_201912

https://archive.org/details/09.dansadakafojilotoupokarita_201912

https://archive.org/download/09.dansadakafojilotoupokarita_201912/09.%20DanSadaka-FojilotOUpokarita.docx
https://archive.org/download/09.dans…Upokarita.docx

http://www.mediafire.com/file/3n2q0hqjqhrprqy/09._DanSadaka-FojilotOUpokarita.docx/file

*************

দান সদকাঃ ফযিলত ও উপকারিতা

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ 

 

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা সাইয়িদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালীন, ওয়া আলা আলিহী, ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন। আম্মা বা’দ

আমরা সকলেই প্রথমে দুরূদ শরীফ পড়ে নিই।

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

আলহামদুলিল্লাহ বেশ কিছুদিন পর আবার আমরা আরেকটি তাযকিয়া মজলিসে হাজির হতে পেরেছি, এ জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার শুকরিয়া আদায় করি আলহামদুলিল্লাহ।

গত মজলিসে আমরা যা আলোচনা করেছিলাম তার সারকথা ছিল, আমাদের মজলুম ভাই বোনদের সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়া, তাঁদের জন্য নিজেদের দানের হাতকে প্রসারিত করা।

দান সদকাঃ ফযিলত ও উপকারিতা

গত মজলিসের আলোচনার অবশিষ্ট অংশ হিসেবে আজকে আমরা কুরআন হাদীসের আলোকে দান সদকার ফযিলত ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

মুহতারাম ভাইয়েরা, আমরা সবাই জানি যে, আমাদের কাছে যত সম্পদ রয়েছে সমস্ত সম্পদের প্রকৃত মালিক হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। তিনি এ সম্পদ যাকে ইচ্ছা করেন তাকেই দান করেন। মুমিন কাফের সবাইকেই দেন। মুমিনদের মধ্যে আবার নেককার বদকার সবাইকেই দেন। সম্পদের প্রকৃত মালিক যেহেতু আল্লাহ, তাই আমাদের কর্তব্য, এ সম্পদ অর্জন করা এবং ব্যয় করা উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর সকল বিধি-নিষেধ পুরোপুরি মেনে চলা। কিয়ামতের দিন তিনি আমাদের কাছ থেকে এর হিসাবও নিবেন যে, আমরা কীভাবে সম্পদ উপার্জন করছি এবং কীভাবে ব্যয় করেছি? আমরা যদি বৈধ পন্থায় উপার্জন করি এবং তাঁর সন্তুষ্টির পথে ব্যয় করি তাহলেই তাঁর কাছে হিসাব দেওয়া আমাদের পক্ষে সহজ হবে।

কিয়ামতের দিন যে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া কেউ এক পাও এদিক ওদিক যেতে পারবে না, তার মধ্যে দু’টি প্রশ্নই হবে সম্পদ সম্পর্কে। কীভাবে উপার্জন করেছো? এবং কোন পথে ব্যয় করেছো?

নিঃসন্দেহে ধন-সম্পদ নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণের ক্ষেত্রে ব্যয় করার অনুমতি ইসলামে আছে এবং সন্তানদের জন্য সঞ্চিত করে রাখাও পাপের কিছু নয়। কিন্তু পাপ ও অন্যায় হচ্ছে, সম্পদে গরীব-দুঃখীদের যে হক রয়েছে তা আদায় না করা। আল্লাহ বলেন,

 

وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَعْلُومٌ، لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ

এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে। ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত (যারা অভাবী কিন্তু লজ্জায় কারো কাছে হাত পাতে না তাদের) সবার হক রয়েছে। (সূরা মাআরিজ : ২৪-২৫)

অধিকাংশ মানুষের অবস্থা হয়, তারা দান-সদকা করতে চায় না। মনে করে, এতে তার সম্পদ কমে যাবে। তাই সব সময়ই সম্পদ জমা করে রাখার ফিকির করে, এমনকি অনেক সময় নিজের প্রয়োজনেও খরচ করতে চায় না। অথচ হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

يقولُ العَبْدُ مالِي، مالِي، إنَّما له مِن مالِهِ ثَلاثٌ: ما أكَلَ فأفْنى، أوْ لَبِسَ فأبْلى، أوْ أعْطى فاقْتَنى، وما سِوى ذلكَ فَهو ذاهِبٌ، وتارِكُهُ لِلنّاسِ.

মানুষ বলে, আমার সম্পদ, আমার সম্পদ, অথচ তিনটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সম্পদই শুধু তার। যা সে খেয়ে শেষ করেছে, যা সে পরিধান করে নষ্ট করেছে এবং যা দান করে নিজের জন্য সঞ্চয় করেছে। এগুলো ছাড়া সবই শেষ হয়ে যাবে এবং অন্যদের জন্য ছেড়ে যাবে। (সহী মুসলিম : ২৯৫৯)

এ হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, তৃতীয় প্রকার সম্পদটাই কেবল আমাদের কাজে লাগছে। এ ছাড়া বাকিগুলো তেমন কাজে লাগছে না।

এবার চলুন, আমরা দান সদকার ফযিলত ও উপকারিতা সম্পর্কে কিছু আয়াত ও হাদীস জেনে নিই।

দান-সদকা গুনাহ মিটিয়ে দেয়

গোপনে ও প্রকাশ্যে যে কোনভাবেই দান করা যায়। সকল দানেই সওয়াব রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ

যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে দান কর এবং গরিব মিসকিনকে দিয়ে দাও, তবে এটা আরও বেশি উত্তম এবং (এ ওসিলায়) তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। (সূরা বাকারা : ২৭১)

হযরত মুআয বিন জাবাল রাযি. থেকে বর্ণিত দীর্ঘ এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

الصدقَةُ تُطْفِئُ الخطيئةَ كما يُطْفِئُ الماءُ النارَ

দান-সদকা গুনাহ মিটিয়ে দেয় যেমন পানি আগুন নিভিয়ে ফেলে। (জামে তিরমিযী : ২৬২৬)

দান-সদকার দ্বারা সম্পদ কমে না

হযরত আবু কাবশা আল আনমারী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ

দান সদকার দ্বারা কারও সম্পদ কমে না। (জামে তিরমিযী : ২৩২৫)

 

দান-সদকার দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি পায়

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজের সম্পদ ব্যয় করে তাদের ওই সম্পদের উদাহরণ এমন বীজের মতো যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রতিটি শীষে একশটি করে দানা থাকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে আরও বেশি দান করেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত, সুবিজ্ঞ। (সূরা বাকারা : ২৬১)

হযরত খুরাইম বিন ফাতেক রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ كُتِبتْ لَهُ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ

যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন কিছু ব্যয় করে তার জন্য সাতশ গুণ সওয়াব লিখে দেয়া হয়। (সুনানে নাসায়ী  : ৩১৮৬ সহী)

হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَن تَصَدَّقَ بعَدْلِ تَمْرَةٍ مِن كَسْبٍ طَيِّبٍ، ولا يَقْبَلُ اللَّهُ إلّا الطَّيِّبَ، وإنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُها بيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيها لِصاحِبِهِ، كما يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ، حتّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ.

যে ব্যক্তি নিজের হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর সদকা করে – আর আল্লাহ তো হালাল সম্পদ ছাড়া কোনও দানই কবুল করেন না – আল্লাহ ওই দান নিজের ডান হাতে নেন এরপর তা বৃদ্ধি করতে থাকেন যেভাবে তোমরা ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন পালন করে থাকো এমনকি তা (বেড়ে বেড়ে) পাহাড় সমান হয়ে যায়। (সহী বুখারী : ৭৪৩০; সহী মুসলিম : ১০১৪)

 

ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়  

হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,  প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলতে থাকেন,

اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا

হে আল্লাহ! দান সদকাকারীকে (তার দানের) বদলা দিন।

আর অপরজন বলতে থাকেন,

اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا

হে আল্লাহ! কৃপণের সম্পদ ধ্বংস করে দিন। (সহী বুখারী : ১৪৪২; সহী মুসলিম : ১০১০)

দুনিয়া আখিরাতে কষ্ট লাঘব করে দেয়া হয়

হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ

যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির কষ্ট লাঘব করে দেবে (কোনো ভাবে তাকে সহায়তা করে, দেনাদার হলে ঋণের কিছু অংশ বা পুরোটা মওকুফ করে দিয়ে) আল্লাহ দুনিয়াতে ও আখেরাতে তার কষ্ট লাঘব করে দিবেন। (সহী মুসলিম : ২৬৯৯)

কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নীচে ছায়া লাভ করবে

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামত দিবসে সাত শ্রেণির লোক আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে। তম্মধ্যে একটি শ্রেণি হল,

وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ

এমন ব্যক্তি যে এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কি দান করে বাম হাতও জানতে পারে না। (সহী বুখারী : ১৪২৩; সহী মুসলিম : ১০৩১)

দান-সদকা গুনাহ মাফ করে ও জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে

হযরত কা‘ব বিন উজরা রাযি থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

يا كَعْبُ بنَ عُجْرةَ، الصلاةُ قُربانٌ، والصَّومُ جُنَّةٌ، والصَّدَقةُ تُطْفئُ الخَطيئةَ كما يُطْفئُ الماءُ النّارَ.

হে কা‘ব বিন উজরা! সালাত (আল্লাহর) নৈকট্য আনয়নকারী, সিয়াম ঢাল স্বরূপ আর দান-সদকা গুনাহকে মিটিয়ে ফেলে যেভাবে পানি আগুন নিভিয়ে ফেলে। (মুসনাদে আহমাদ : ১৫২৮৪)

হযরত আদী বিন হাতেম রাযি থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ

খেজুরের একটি অংশ দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। (সহী বুখারী ১৪১৩; সহী মুসলিম : ১০১৬)

সদকাকারী কিয়ামত দিন তার সদকার ছায়াতলে থাকবে

হযরত উক্ববা বিন আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إنَّ الصَّدقةَ لتُطفِئُ عن أهلِها حرَّ القبورِ وإنَّما يستظِلُّ المؤمنُ يومَ القيامةِ في ظلِّ صدقتِه

নিশ্চয়ই দান-সদকা দানকারী থেকে কবরের আগুন নিভিয়ে ফেলবে এবং মু’মিন কিয়ামতের দিন তার সদকার ছায়াতলে অবস্থান করবে। (আত তারগীব : ২/৬১)

দান-সদাকার ক্ষেত্রে যেসকল বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে

দান-সদকার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, ওগুলোর কারণে দান-সদকার এ মূল্যবান আমলটি একদমই নষ্ট হয়ে যাবে। নিম্নে এ ধরণের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।

লোক দেখানোর জন্য দান করা

বর্তমান যুগে অনেক মানুষ এমন আছে, যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দান করে এবং তা করে কেবল মানুষকে দেখানোর জন্য। মানুষের প্রশংসা ও ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। মানুষের মাঝে গর্ব অহংকার প্রকাশ করার জন্য।

অথচ দান-সদকা যদি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয় তাহলে তা দ্বারা দুনিয়াবি কিছু স্বার্থ হাসিল হলেও আখেরাতে কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে না। একটি হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 

أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ

আমি শিরককারীদের শিরক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন আমল করে তাতে আমার সাথে অন্যকে শরীক করে আমি তাকে এবং তার শিরকী আমলকে পরিত্যাগ করি। (সহী মুসলিম : ২৯৮৫)

হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম তিন ব্যক্তির ব্যাপারে জাহান্নামের ফায়সালা দেয়া হবে। তম্মধ্যে এক ব্যক্তি হবে যাকে আল্লাহ সম্পদের প্রাচুর্য দিয়েছিলেন। বিভিন্ন ধরনের অর্থ-সম্পদ তাকে দিয়েছিলেন। তাকে সামনে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে প্রদত্ত সব নেয়ামতের কথা স্মরণ করাবেন। তার মনেও হবে। তখন তিনি তাকে বলবেন, এই সব নেয়ামত দ্বারা তুমি কী কাজ করছো? সে জবাব দিবে, যে পথে অর্থ ব্যয় করলে আপনি খুশি হবেন এ ধরনের সকল পথে আপনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সম্পদ ব্যয় করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এরূপ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে দানবীর বলা হবে আর তা তো বলাই হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে। তাকে মুখের উপর উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সহী মুসলিম : ১৯০৫

দান-সদকা করে খোটা দেয়া

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى

হে ঈমানদারগণ! তোমরা খোটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকাকে নষ্ট করে দিও না। (সূরা বাকারা : ২৬৪)

হযরত আবু যর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

ثلاثةٌ لا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَلا يَنْظُرُ إلَيْهِمْ، وَلا يُزَكِّيهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ قَالَ : فقَرأها رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاثَ مِرار، قَالَ أَبُو ذرٍّ: خَابُوا وَخَسِرُوا! مَنْ هُمْ يَا رسول الله؟ قَالَ:  المُسْبِلُ، وَالمنَّانُ، وَالمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالحَلِفِ الكاذِبِ . رواه مسلم.

কিয়ামত দিন আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। আবু যর রাযি. বললেন, “ওরা ধ্বংস হোক, ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তারা কারা? হে আল্লাহর রাসূল!” তিনি বললেন – “যারা টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধান করে, যে দান করে খোটা দেয় এবং যে মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য বিক্রয় করে। (সহী মুসলিম : ১০৬)

দান-সদকার ক্ষেত্রে কৃপণতা করা

কৃপণতা একটি নিকৃষ্ট স্বভাব। কৃপণতা থাকলে মানুষ লোভী হয়। সম্পদের লোভে যে কোন ধরণের অন্যায় ও অবৈধ কাজের দিকে পা বাড়ায়। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবিষয়ে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। হাদিসে এসেছে,

عن جابر رضي الله عنه : أن رسول الله صلى الله عليه وسلم، قال: «اتقوا الظلم ؛ فإن الظلم ظلمات يوم القيامة . واتقوا الشح ؛ فإن الشح أهلك من كان قبلكم . حملهم على أن سفكوا دماءهم، واستحلوا محارمهم». رواه مسلم

হযরত জাবের রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  তোমরা (কারো ওপর) জুলুম করা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, জুলুম কেয়ামতের দিন অন্ধকারে পরিণত হবে। আর কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, কৃপণতাই পূর্ববর্তী লোকেদেরকে (দৈহিক ও নৈতিক উভয় দিক দিয়ে) ধ্বংস করেছে। তাদের মাঝে কৃপণতা থাকার কারণেই তারা একে অপরকে হত্যা করত এবং হারাম কাজগুলোকে (বা নিজেদের মাহরাম নারীদেরকে) বৈধ মনে করত। (যেমন মীরাসের সম্পদ দ্রুত পাওয়ার জন্য নিজের কোনো আত্মীয়কে হত্যা করে ফেলত এবং অন্য নারীদের সাথে ব্যভিচার করতে পয়সা খরচ হত বিধায় নিজেদের মাহরামদের সাথেই ব্যভিচারে লিপ্ত হত) (সহী মুসলিম : ২৫৭৮)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কৃপণতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তিনি দু’আয় বলতেন,

اللَّهُمَّ إنِّي أعُوذُ بكَ مِنَ البُخْلِ

হে আল্লাহ! আপনার কাছে কৃপণতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। (সহী বুখারী : ৬৩৬৫)

দান-সদকার ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদেরকে লোক দেখানো, খোটা দেয়া ও কৃপণতা ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকতে হবে। দান করতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তাতে অন্য কোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারবে না।

এতক্ষণ যে সকল আয়াত ও হাদীস পেশ করলাম এগুলো থেকে আমরা কী শিক্ষা লাভ করতে পারি কোন ভাই কি এক দুই কথায় সংক্ষেপে একটু বলতে পারবেন?

উপস্থিত এক ভাইঃ সব সময় দান সদকা করতে হবে মন খুলে এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

উপস্থিত আরেক ভাইঃ আমার প্রকৃত সম্পদ ওটাই যা আমি দান সদকার মাধ্যমে আখেরাতের জন্য সঞ্চয় করি।

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহঃ মাশাআল্লাহ। এগুলোর সাথে আরও একটি কথা যোগ করা যায়। তা হল, আমার নিকটতম কেউ কোনো মসিবতে পড়লে আমি যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ি, তার জন্য নিজের অর্থ সম্পদ ব্যয় করি ঠিক সেভাবেই মজলুমদের জন্যও আমাকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তাদের জন্য আমার দানের হাতকে প্রসারিত করতে হবে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য চুড়ান্ত চেষ্টা করতে হবে। চুড়ান্ত চেষ্টা কীভাবে করতে হবে এর জন্য একটি ঘটনা শোনাই।

আল্লাহই আমাদের ব্যবস্থা করবেন

এক তালিবুল ইলম। তার পারিবারিক অবস্থা খুবই নাজুক। বাবা নেই। আছে শুধু মা। তাঁর দেখা-শোনাও তাকেই করতে হয়। সে প্রতি বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা থেকে চলে যেত, শনি বার এসে ক্লাসে শরিক হত। এ সময় সে কখনো রিক্সা চালাত, কখনো মাটি কাটত, কখনো ইট ভাংগার কাজ করত। যখন যে কাজ পেত তা করেই কিছু টাকা উপার্জন করত। আর এই টাকা দিয়ে তার নিজের এবং মায়ের গোটা সপ্তাহ চলত। এর পাশাপাশি ওখান থেকে সামান্য কিছু টাকা সদকা করার উদ্দেশ্য জমিয়েও রাখত। এভাবে জমাতে জমাতে তার কাছে সদকার জন্য বেশ কয়েক হাজার টাকা জমা হয়ে যায়। হঠাত সে একদিন মজলুমদেরকে সাহায্য করার ই’লান শুনে। তখন সে তার কাছে জমানো সব টাকা বের করে দিয়ে দেয়।

যিনি নিচ্ছিলেন তিনি তাকে বললেন, সবটা দিও না, কিছু রেখে দাও। সে উত্তর দিল সামনে বন্ধ আসতেছে তখন বেশি কাজ করার সুযোগ পাওয়া যাবে। সবগুলোই নিয়ে নেন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহই আমাদের ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহু আকবার! কত বড় কুরবানি!

এ সংক্রান্ত আরেকটি ঘটনা বলি। এক ভাই চাকুরী করতেন। তার বেতন ছিল প্রায় আশি হাজার। বেতন পেলেই তিনি সংসারের খরচের জন্য দশ পনের হাজার টাকার মতো রেখে বাকি টাকাটা জিহাদের কাজে দিয়ে দিতেন। তিনি এতটুকু রাখাকেও অন্যায় মনে করতেন। তিনি মনে করতেন, জিহাদের কাজে প্রয়োজন তো এর চেয়ে অনেক বেশি। কিছু দিন পর তার বেতন বেড়ে এক লাখ হয়ে যায়। তখন তিনি পুরোটাই আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দিতে শুরু করেন। আল্লাহু আকবার। ভাইয়ের এ উদারতার ফলে আল্লাহ তা’আলাও তার সাংসারিক খরচের ব্যবস্থা অন্যভাবে করে দেন আলহামদুলিল্লাহ।

শায়েখ উসামা রহ. এর বোনের ঘটনা   

মুহসিনুল উম্মাহ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. একবার তাঁর এক বোনের কাছে যান এবং জিহাদ বিল মালের প্রসঙ্গে ‘ফাতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া’ খুলে বোনকে দেখান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বোন চেক বের করে আট মিলিয়ন রিয়াল লিখে দেন।

তার এই দানের কথা শুনে পরিবারের লোকজন ছুটে আসে। তারা বলতে লাগল, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো! একবারেই এতগুলো অর্থ দিয়ে দিলে। আরে তুমি এটা কি করলে? নারীরা না দেয়ার জন্য তাকে নানাভাবে বুঝাতে লাগল। আর পুরুষরা লাগল তার স্বামীর পেছনে।

অবশেষে তাঁর বোন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেল। কেউ কেউ বলল, তুমি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে থাকো। কমছে কম এক মিলিয়ন রিয়াল দিয়ে একটি বাড়ি বানিয়ে নাও। এভাবে বুঝাতে লাগল। অবশেষে সত্যিই বোন শাইখের কাছে বললেন, ওখান থেকে আমাকে এক মিলিয়ন রিয়াল ফেরত দাও, আমি ওটা দিয়ে বাড়ি বানাবো। তখন শাইখ রহ. বললেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, তুমি একটি রিয়ালও ফেরত নিও না। তুমি তো ফ্লাটে আরামে আছো। আর আফগানে গিয়ে দেখ, মানুষ না খেয়ে মরছে, থাকার জন্য তাঁবু পর্যন্ত পাচ্ছে না। (তাফসীরে সূরা তাওবা পৃঃ ৩২১)

দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় স্থানে দানের বিনিময় পাওয়া যাবে 

আমরা যে সব দান সদকা করে থাকি আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এর প্রকৃত প্রতিদান তো আখেরাতেই দিবেন ইনশাআল্লাহ। তবে দুনিয়াতেও এর কিছু কিছু প্রতিদান তিনি দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে আপনাদেরকে দু’টি ঘটনা বলি। ঘটনা দুটি বলেই আজকের মজলিস শেষ করব ইনশাআল্লাহ।

বিশিষ্ট দানবীর শাইখ সালীম রহ.র ঘটনা

শাইখ সালীম। ছিলেন খুব অভাবী। কিন্তু নিজে অভাবী হলেও কখনো কোনো ভিক্ষুককে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতেন না। জুব্বা ছিলো তাঁর পছন্দের পোশাক। বাইরে বের হলে জুব্বা পরেই বের হতেন। কিন্তু শীতে কষ্ট পাওয়া কোনো অসহায় মানুষ যখন তাঁর সামনে এসে দাঁড়াতো, সাথে সাথে তিনি নিজের জুব্বাটা তাকে দিয়ে দিতেন! ঘরে ফিরে আসতেন খালি গায়ে। পরনে থাকত শুধু লুঙ্গি।

তাঁর ঘরে কোন ভিক্ষুক এলে তাকে কিছু দিতে তিনি একদমই দেরি করতেন না। কখনো এমনও হত যে, পরিবারের লোকদের সামনে থেকে খাবার উঠিয়ে ভিক্ষুককে দিয়ে দিতেন!

একদিনের ঘটনা। তখন রমজান মাস। মাগরিবের আযানের বেশিক্ষণ বাকি নেই। সবাই ইফতারি সামনে নিয়ে আযানের অপেক্ষা করছে। এই বুঝি আযান হবে! ঠিক সেই মুহূর্তে এক ভিক্ষুক দরোজায় দাঁড়িয়ে হাঁক দিয়ে বলল, আমার ঘরের সবাই না খেয়ে আছে! খাওয়ার মতো কিছু থাকলে আমাকে দিন। এ কথা শুনে শায়খ সালীমের মন কেঁদে উঠল। তিনি স্ত্রীর অজান্তে সব খাবার ভিক্ষুককে দিয়ে দেন।

একটু পর তাঁর স্ত্রী এসে দেখেন দস্তরখান শূন্য। রোজা রেখে ইফতারি বানানোর কষ্টটা তিনি হয়তো সইতে পারেন নি, তাই একটু মন খারাপ করেই স্বামীকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনার কাছে কি আমার কষ্টের কোনোই মূল্য নেই? এখন আমরা কী দিয়ে ইফতার করব? শাইখ কিছুই বললেন না।

কিছুক্ষণ পর কে যেন দরোজায় এসে আওয়াজ দিলো। দরজা খুলতেই দেখা গেলো, শহরের বিশিষ্ট শিল্পপতি সাঈদ পাশার খাদেম নানা রকমের খাবারে সাজানো বিরাট এক খাঞ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এগুলো কী? কে পাঠাল? জিজ্ঞেস করলে খাদেম বিনয়ের সাথে উত্তর দিল, আজ সাঈদ পাশার বাড়িতে মেহমান আসার কথা ছিলো। কিন্তু কেউ আসেন নি। তাই তিনি আমাকে বলেছেন, সব খাবার শায়খ সালীমের বাড়িতে পৌঁছে দিতে।

শায়খ সালীম বুঝলেন, এটি আল্লাহর তরফ থেকে আসা নগদ প্রতিদান। তিনি তাঁর স্ত্রীকে লক্ষ্য করে শুধু এটুকু বললেন, তুমি কি কিছু বুঝলে?

 

 

এক মায়ের ঘটনা

এ ধরণের আরেকটি ঘটনা বলি। ঘটনাটি এক মায়ের। তার ছেলে জরুরি এক কাজে সফরে ছিলো। একদিন মা খেতে বসেছেন। সামনে ছিলো সামান্য রুটি ও একটু তরকারি। খাওয়া মাত্র শুরু করবেন ঠিক ওই মুহূর্তে দরোজার কাছে এসে এক ভিক্ষুক কিছু খাবারের জন্য হাঁক দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ওই মা সামনে যা ছিল সবটাই ভিক্ষুককে দিয়ে দেন।

ক’দিন পর ছেলে সফর থেকে ফিরে আসে। এসে মাকে সফরের বিভিন্ন ঘটনা শোনায়। এক পর্যায়ে বলল, এ সফরের সবচে’ বিস্ময়কর ঘটনাটি হল, পথে হঠাৎ একটা সিংহ আমাকে তাড়া করে। আমি ছিলাম একা। ভীষণ ভয় পেয়ে দৌড়াতে শুরু করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিংহটা একদম আমার কাছে পৌঁছে যায়। ভাবছিলাম এখনই বুঝি আমাকে খেয়ে ফেলবে। কিন্তু হঠাৎ দেখি, সাদা পোশাকধারী এক লোক আমার সামনে এসে হাজির। সে-ই আমাকে সিংহের হাত থেকে রক্ষা করে। এ ঘটনাটির তাৎপর্য আমি এখনও বুঝতে পারছি না।

মা জানতে চাইলেন, ঘটনাটা কখন ঘটেছে? ছেলের কাছ থেকে সময়টি জানতে পেরে তিনি বুঝতে পারলেন, ঠিক যখন তিনি নিজের খাবার ভিক্ষুককে দিয়েছিলেন ঠিক তখনই ঘটনাটি ঘটেছিল। সঙ্গে সঙ্গে সেজদায় পড়ে আল্লাহর শোকর আদায় করেন।

এভাবেই আল্লাহ তা’আলা দান-সদকার ওসিলায় তাঁর বান্দাদেরকে নানান বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ তা’আলা সবাইকে ইখলাসের সাথে দান-সদকা করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন এবং ইখলাসের সাথে জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন।

আমরা সকলে মজলিস থেকে উঠার দোয়াটা পড়ে নিই।

سبحانك اللهم وبحمدك، أشهد أن لا إله إلا أنت، أستغفرك وأتوب إليك

وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين

وآخر دعوانا ان الحمد لله رب العالمين

 

******************

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + four =

Back to top button