মুজাহিদদের বাৎসরিক শরয়ী দাওরা উপলক্ষ্যে আমীরুল মুমিনীন-এর বিশেষ বয়ান: শরীয়ত ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই। – আমীরুল মুমিনীন মোল্লা আখতার মুহাম্মাদ মনসূর হাফিজাহুল্লাহ
ডাউনলোড লিংক-
অনলাইনে পড়ুন-
https://justpaste.it/tupz
PDF
—-
http://www.mediafire.com/file/btcs1nv9s96zssd/31._Boyan.pdf/file
https://archive.org/download/u_m_a_2/31.%20Boyan.pdf
Word
—–
http://www.mediafire.com/file/ezqcdntlttuwzlk/31._Boyan.docx/file
https://archive.org/download/u_m_a_2/31.%20Boyan.docx
================
মুজাহিদদের বাৎসরিক শরয়ী দাওরা উপলক্ষ্যে আমীরুল মুমিনীন-এর বিশেষ বয়ান:
শরীয়ত ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ নেই।
আমীরুল মুমিনীন মোল্লা আখতার মুহাম্মাদ মনসূর হাফিজাহুল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মুজাহিদদের গঠনতন্ত্র পবিত্র শরীয়তের আলোকে তৈরিকৃত এক গঠনতন্ত্র। এর মধ্যে মুজাহিদদেরকে জিহাদ সম্পর্কীয় সমস্ত জরুরী মাসায়েলের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অতএব, এই গঠনতন্ত্রের গুরুত্ব অনুধাবন করা উচিত এবং বুঝেশুনে মনোযোগের সাথে এর উপর আমল করা উচিত।
আমি প্রত্যেক মুজাহিদ ভাইকে ইখলাস ও আগ্রহের সাথে উক্ত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলার অনুরোধ করছি। আর সাথে সাথে উলামায়ে কেরাম, মাশায়েখে ইজামের ওয়াজ-নসীহত, তাদের দিক নির্দেশনা এবং তাদের বর্ণিত শরয়ী মাসায়েলগুলো মনোযোগসহ শুনতে ও পারতপক্ষে মুখস্ত করে ফেলতে অনুরোধ করছি। মুজাহিদ ভাইয়েরা প্রত্যেকেই এসব ওয়াজ-নসীহত, দিকনির্দেশনা ও মাসায়েলের উপর নিজে আমল করবে এবং অপর ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাকেও আমল করতে উৎসাহিত করবে, যাতে আমাদের এ পবিত্র জিহাদ শতভাগ ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং শরীয়ত গর্হিত কোনো কাজ জিহাদের সারিতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।
আমার প্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা! আমরা জানি যে, জিহাদ একটি ইবাদাত। আর ইবাদাতের সাওয়াব নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আমরা যদি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই জিহাদ করতে চাই, দুনিয়ায় আল্লাহর নুসরাত প্রাপ্তির আশাবাদী হই, আখেরাতে বড় মর্যাদার প্রত্যাশী হই, তাহলে প্রত্যেক পদক্ষেপের পূর্বে আমাদের নিয়ত পরখ করে নিতে হবে। দুনিয়ার সম্মান, মর্যাদা,যশ,খ্যাতি, প্রতিপত্যি, শাসক হওয়ার আশা ইত্যাদি থেকে আমাদের অন্তরকে পবিত্র করতে হবে। আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করা এবং তাঁর হুকুম প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হতে হবে। নিয়ত ঠিক করার পর যখন রণাঙ্গণে বের হবে তখন এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকবে যেন, সকল কাজ শরীয়ত এবং ফিকহে হানাফী অনুযায়ী সম্পাদিত হয়; কোনো কাজ শরীয়তের খেলাফ না হয়।
আল-হামদুলিল্লাহ ইসলামী শরীয়ত আমাদের সামনে সব কিছু স্পষ্ট করে দিয়েছে। কার সাথে কেমন আচরণ করতে হবে তা খুলে খুলে বর্ণনা করে দিয়েছে। আমরা যেহেতু দাবী করি যে, আমাদের জিহাদের মূল উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করা, আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠিত করা, তাই আমাদের উপর আবশ্যক হল, আল্লাহর হুকুমকে সর্বপ্রথম নিজের উপর বাস্তবায়ন করা এবং কোনোরূপ ছাড় ব্যতিরেকে সর্বক্ষেত্রে শরীয়তের উপর পুক্সখানুপুক্সখরূপে আমল করা। জিহাদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ইজতিহাদ, ব্যক্তিগত মেঝাজ এবং বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে বেঁচে থাকবে। আর শুধুমাত্র শরীয়তের অনুসরণ করবে। এ ব্যাপারে পূর্ণ আস্থারাখবে যে, শরীয়ত আমাদেরকে যখন যে হুকুম দেয় তার মধ্যেই আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত আছে, যদিও বাহ্যিকভাবে কারো কাছে তা অপছন্দনীয় হোকনা কেন।
জিহাদী কার্যক্রমে শরীয়তের উপর আমলের যথাযথ পাবন্দী করবে। আল্লাহর ভয়-ডরকে নিজের প্রতীক বানিয়ে নিবে। আল্লাহ ভীতি-ই এমন গুণ যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা মানুষের মর্যাদা নির্ধারণ করে থাকেন। যে যত বড় মুত্তাকী সে ততবেশি মর্যাদার অধিকারী হবে। আমীর-উমারাদের আনুগত্য করবে, অধিনস্ত সাথীদের সাথে মুহাব্বতের আচরণ করবে। বয়ষ্কদের সম্মান করবে। জনসাধারণের সাথে উত্তম আচরণ করবে। পরস্পর ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক বজায় রাখবে, অন্যের প্রয়োজনকে নিজের উপর প্রাধান্য দিবে। খেদমত, বিনয়, র্ধৈয, সহনশিলতা, আমানতদারী, অপরাধ মার্জনা এবং উত্তম আচার-আখলাক দ্বারা নিজেকে সুসজ্জিত করবে। যাতে মুজাহিদগণ সাধারণ লোকদের জন্য আদর্শ হতে পারে এবং তারা তাঁদেরকে অনুসরণ করতে পারে। আর মুজাহিদের উন্নত চরিত্র ও উত্তম আখলাক দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লোকেরা ইসলাম ও জিহাদের প্রতি ঝুঁকতে পারে।
বিজিত এলাকার সাধারণ মুসলমানগণ আমাদের হাতে আল্লাহর অর্পণকৃত আমানত। আমরা তাদের শাসক। আল্লাহ তাআলা তাদের মাধ্যমে আমাদেরকে পরীক্ষা করবেন। তিনি দেখতে চান আমরা তাদের সাথে কেমন আচরণ করি। তাই তাদের অধিকারের ব্যাপারে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহ না করুন যদি তাদের উপর কোনো জুলুম হয়ে যায়, তাদের সাথে কঠোরতা কিংবা অহংকার মূলক আচরণ করা হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মোটেও ছাড় দিবেন না। কারণ তিনি তাঁর বান্দার উপর জুুলুমকে মোটেও বরদাশত করেন না। তাই প্রত্যেক মুজাহিদ ভাই খুব সতর্ক থাকবে এবং নববী ফরমান ‘ সুসংবাদ প্রদান কর, আতঙ্কিত কর না, সহজ কর, কঠরতা কর না’-এর উপর আমলকরত সাধারণ মুসলিমদের সাথে ন¤্রতা, ভদ্রতা ও উত্তম আখলাক দেখাবে। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলাও আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন এবং সাধারণ মুসলিমদের সমর্থনও আমরা অর্জন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ ইমারাতে ইসলামিয়ার মুজাহিদগণ বর্তমানে পূর্বের তুলনায় অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় আল্লাহ তাআলা মুজাহিদগণকে বড় বড় বিজয় দান করেছেন এবং এ বিজয়ের ধারা এখনও চলমান। দুশমন ইমারাতে ইসলামিয়াকে দুর্বল করার জন্য, মুজাহিদদের সারিকে বিভক্ত করার জন্য অনেক ক‚টচাল অবলম্বন করে ছিল। কিন্তু আল্লাহর অসীম রহমতে তাদের সমস্ত চক্রান্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ইমারাতে ইসলামিয়ার সকল মুজাহিদ ঐক্যবদ্ধ। তাদের সারি একটি-ই। দিন দিন তাদের সারি মজবূত ও সুদৃঢ় হচ্ছে। এ জন্য আল্লাহর দরবারে আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত এবং শত্রæ পক্ষের অতীত কর্মপন্থা থেকে শিক্ষা হাসিল করে শত্রæর রাজনৈতিক ও সামরিক চক্রান্তের ব্যাপারে খুব হুশিয়ার থাকা উচিত।
গত বছর যেসব ভাই ইমারাতে ইসলামিয়া থেকে দূরে সরে গিয়ে ছিল, এ বছর সম্ভব্য সকল পন্থা অবলম্বন করে, তাদেরকে রাজি-খুশি করার মাধ্যমে ইমারাতে ইসলামিয়ার সাথে যুক্ত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। আমি ইমারাতে ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা, প্রিয় রাহবার, আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর মুজাহিদ রহ. এর একটি কথা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ‘আমরা কারো সাথে ব্যক্তিগত কোনো কারণে শত্রæতা পোষণ করি না, আমাদের বন্ধুত্ব ও শত্রæতার মাপকাটি হল দ্বীনে ইসলাম।’
ইমারাতে ইসলামিয়া যেহেতু বিভিন্ন কমিশন ও বিভাগে বিন্যস্ত, তাই ইন্তিজামি মুজাহিদ ও দায়িত্বশীলগণ সকল বিভাগকে সহযোগিতা করবে। আর সাধারণ মুজাহিদগণ সামরিক অপারেশনের পাশাপাশি দাওয়াতী কাজেও সহযোগিতা করবে। শিক্ষা বিভাগ শিশু-কিশোর ও নওজোয়ানদেরকে দ্বীনী ও প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মাধ্যমে জিহাদী আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অংশ গ্রহণ করবে।
আমাদের জিহাদী আন্দোলনের রক্ত পিচ্ছিল এই পথ কুরআন ও সুন্নতে নববীর আলোয় আলোকিত এক পথ। আমরা ঐ পথেই চলছি যে পথে চলেছিলেন আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর মুজাহিদ রহ.। নিকট অতীতে দুর্গম এই পথে চলার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের জন্য উত্তম ও জীবন্ত আদর্শ। আমি আবারও বলছি, ইসলামী শরীয়াহ ব্যতীত আমাদের অন্য কোনো পথ নেই। আমাদের এ লড়াই ইসলামী শরীয়াহ কায়েমের জন্যই নিবেদিত।
ইমারাতে ইসলামিয়ার বদনাম করার জন্য শত্রæরা অতীতেও বিভিন্ন ধরণের প্রপাগণ্ডা ছড়িয়ে ছিল; ভবিষ্যতেও ছড়াতে থাকবে। আমাদের দায়িত্ব হল, সীরাতে মুস্তাকীমের উপর অটল-অবিচল থেকে গুরুত্ব ও মনযোগসহ নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে থাকা। শত্রæদের কুমন্ত্রনা, কানকথা ও প্রপাগণ্ডার প্রতি ভ্রæক্ষেপ না করা।
আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে আশা করছি যে, আগামী মাসগুলোতে হৃদয় প্রশান্তকারী বিজয়সমূহ দেখতে পাব। গত বছর শত্রæর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ, তাদের ক‚টকৌশলের অপমৃত্যু এবং মুজাহিদগণের বিজয় দ্বারা এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর সাহায্য মুজাহিদদের সাথে রয়েছে। আমরা আল্লাহর সাহায্যের পূণার্ঙ্গ আশাবাদী। আমরা যদি ইসলামী শরীয়তের উপর অটল-অবিচল থাকতে পারি, তাহলে কোনো দুশমনই আমাদের উপর বিজয় লাভ করতে পারবে না। বরং বিজয় আমাদেরই পদচুম্বন করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।’ (আলে ইমরান:১৩৯) অতএব, আসুন! আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির সাথে সাথে দৃঢ় ঈমান ও সংকল্প নিয়ে আল্লাহর দ্বীনের খেদমত করার জন্য নিজেদের অঙ্গীকারকে নবায়ন করে নেই।
সর্বদা নিজের নিয়তের প্রতি দৃষ্টি রাখুন। নিয়ত পরিশুদ্ধ করুন। শুধু মাত্র আল্লাহর কালিমাকে বুলান্দ করার জন্য শত্রæর উপর শক্তিশালী হামলা করতে নিজেকে মানসিক ও শারিরিকভাবে প্রস্তুত করুন। সর্বশেষ আল্লাহর কাছে দুআ করছি, যেন তিনি উম্মাহকে চলমান সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দান করেন এবং মুজাহিদগণকে বিজয় দান করেন। আল্লাহ তাআলা আরেকবার সারা দেশ জুড়ে ইসলামী শরীয়তের শান্তিময় সমীরণ প্রবাহিত করে দিন। মাজলূম উম্মাহকে ইসলামী শরীয়তের ছায়ায় ইজ্জত ও নিরাপত্তাময় জিন্দেগী দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।