আত-তিবইয়ান পাবলিকেশন্সআরবফাতাওয়া-ফারায়েজবই ও রিসালাহমিডিয়াশাইখ আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম রহিমাহুল্লাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

মুসলিম ভুমিকে প্রতিরক্ষা করা- শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহঃ

মুসলিম ভুমিকে প্রতিরক্ষা করা- শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহঃ

https://archive.org/details/DefenceOfTheMuslimLandsbangla-shaheedAbdullahAzzamra

https://www.mediafire.com/file/fdly7bwje367wfy/muslimder_vumi_proti_rokkha.pdf/file

মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা

(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)

মুসলিমদের ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ “যদি মুসলিমদের ভূমির এক বিঘত পরিমাণের জায়গাও কুফ্ফাররা দখল করে নেয়, তখন প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর উপর জিহাদ করা ফারদ আ’ইন (সবার জন্য ফরয) হয়ে যায়। ঐ মুহূর্তে জিহাদে বের হওয়ার জন্য সন্তানের প্রয়োজন হয় না তার পিতা-মাতার কাছ থেকে অনুমতি নেয়া এবং স্ত্রীরও তার স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় না।”

শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম

(রহিমাহুল্লাহ্)

আত্তিবয়ান পাবলিকেশন্স – এর পক্ষ হতে বিতরণ সংক্রান্ত বিশেষ অনুরোধঃ প্রকাশকের টীকাসহ এই গ্রন্থের সকল অংশে যে কোন প্রকার – যোগ-বিয়োগ, বাড়ানো – কমানো অথবা পরিবর্তন করা যাবে না, এই শর্তে, যে কোন ব্যক্তি এই প্রকাশনা প্রচার বা বিতরণ করার অধিকার রাখেন।

সূচীপত্র

প্রকাশকের কথা.. 7

কে ছিলেন এই আবদুল্লাহ আযযাম?. 10

ভূমিকা… 18

১ম অধ্যায়ঃ ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্ দায়িত্ব. 20

কাফিরদের বিরুদ্ধে দুই ধরনের জিহাদঃ… 23

মাযহাব গুলোর মতামত সমূহঃ… 25

সাধারণ অভিযানের দলিল সমূহ এবং এর সমর্থনঃ… 27

২য় অধ্যায়ঃ ফিলিস্তীন ও আফগানিস্তানে জিহাদের হুকুম. 34

আফগানিস্তান থেকে শুরুঃ…. 35

৩য় অধ্যায়ঃ র্ফাদুল আ’ইন ও র্ফাদুল কিফায়া.. 37

অভিভাবক, স্বামী এবং ঋণদাতা থেকে অনুমতি প্রসঙ্গ. 39

শাইখ ও শিক্ষক এর নিকট থেকে অনুমতি প্রসঙ্গঃ… 41

মাল দ্বারা জিহাদ করা.. 43

৪থ অধ্যায়ঃ খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন. 46

অনুমতি প্রসঙ্গে… 47

১ম প্রশ্নঃ বর্তমানে আমরা কিভাবে একটি ‘সাধারণ অভিযান’-কে বাস্তবায়িত করতে পারি?. 49

২য় প্রশ্নঃ আমরা কি একজন ইমাম ব্যতীত জিহাদ করতে পারি?. 50

৩য় প্রশ্নঃ আমরা কি আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে পারি যেখানে বিভিন্ন বিভক্ত আমীরের অধীনে যুদ্ধ হচ্ছে?. 51

৪র্থ প্রশ্নঃ সবাই যদি বসে থাকে তাহলে কেউ একা কি যুদ্ধ করতে পারে?. 52

৫ম প্রশ্নঃ আমরা কি ঐ সমস্ত মুসলিমদের সাথে একসাথে যুদ্ধ করতে পারি যাদের ইসলামী শিক্ষা অত্যন্ত কম?. 53

৬ষ্ঠ প্রশ্নঃ দুর্বল অবস্থায় কি আমরা মুশরিকদের নিকট থেকে সাহায্য চাইতে পারি?. 55

বিভিন্ন মাযহাবের রায়. 56

জিহাদের পক্ষে নাযিলকৃত আদেশ সংশ্লিষ্ট দলিল সমূহ. 57

কাফিরদের সাথে শান্তি চুক্তি করার শর্তসমূহঃ… 60

উপসংহার. 65

উৎসর্গ

শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম এবং আফগান মুজাহিদীনদের প্রতি যারা বিংশ শতাব্দীতে জিহাদের শিখাকে প্রজ্বলিত করেছেন এবং এই বরকতময় পথে দ্বীনের তরীকে চালিত করেছেন, এই দ্বীনের পতাকাকে সম্মান এবং মর্যাদার সাথে উন্নীত করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই শহীদ হয়ে গিয়েছেন এবং অনেকেই প্রতীক্ষায় আছেন……

مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا

“মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সহিত তাহাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করিয়াছে, উহাদের কেহ কেহ শাহাদাতবরণ করিয়াছে এবং কেহ কেহ প্রতীক্ষায় রহিয়াছে। উহারা তাহাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করে নাই।” (সূরা আহযাব ৩৩:২৩)

প্রকাশকের কথা

সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য, যিনি সমস্ত জাহানের মালিক। আখিরাত হচ্ছে একমাত্র মুত্তাকীনদের জন্য, যেখানে জালিমদের ছাড়া আর কারো সাথে কোন শত্রুতা থাকবে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের জন্য আর কেউ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর দাস ও রসূল। আল্লাহ তাঁর প্রতি, তাঁর আহলে বাইতের প্রতি, তাঁর সম্মানিত সাহাবাগণের প্রতি এবং কিয়ামাত পর্যন্ত আগত তাঁর সকল অনুসারীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।

‘মুসলিমদের ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা’ বইটি মূলতঃ শহীদ শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক রচিত ‘আদ্-দাফা আন-আরদিল মুসলিমীন’ কিতাব থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। তিনি এই কিতাবটি লিখেছিলেন আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আগ্রাসন চালানোর চার বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে। এই বইটিতে মূলতঃ

শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) এর পক্ষ থেকে একটি বিষয়ের উপরে ফাতাওয়া প্রদান করা হয়েছে। আর তা হল আফগানিস্তানের মুজাহিদীনদের সহযোগীতা করা এখন সমস্ত বিশ্বের মুসলিমদের উপর আবশ্যক একটি দায়িত্ব।

জিহাদ এখন শুধু মৌখিক চর্চার বিষয় হয়ে গিয়েছে,

যা শুধু চা অথবা কফি পান করার সাথে আলাপ করা হয়ে থাকে,

জিহাদের সম্বন্ধে এমন লোকদের কিতাব লিখতে অথবা বক্তৃতা দিতে শোনা যায়,

যারা কখনো এক মিনিটের জন্যেও জিহাদের ময়দানে সময় অতিবাহিত করেনি,

অথবা একটি গুলিও ছোড়েনি।

[শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম]

বর্তমান বিশ্বে বহু মুসলিম আলিম, বুদ্ধিজীবী, নেতা, শিক্ষার্থী, গবেষক এবং বক্তাদেরকে ইসলামের জিহাদ সম্পর্কে বিভিন্ন অভিমত পেশ করতে শোনা যায়। যাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে যারা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, জিহাদ শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর যুগেই প্রচলিত ছিল এবং এখন তা রহিত হয়ে গিয়েছে। অন্যেরা বলে থাকে, জিহাদ হচ্ছে আত্মশুদ্ধির জন্য – যা শুধুমাত্র নফসের সাথে করা হয়ে থাকে। আবার অন্য কিছু মানুষ বলার চেষ্টা করে, ইসলাম শুধু আত্মরক্ষা মূলক জিহাদেরই অনুমতি দেয়, আক্রমণাত্মক জিহাদ ইসলামের মধ্যে নেই। আবার অনেকের মধ্যেই একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতিত জিহাদে অংশ গ্রহণ করা যায় না। অন্য কিছু মানুষ আছে যারা সব সময়ই কাফিরদের সামনে নিজেদের অনুতপ্ততার কথা স্বীকার করে থাকেঃ তাদের লেখনীর মাধ্যমে, সাক্ষাতকারে অথবা বক্তৃতায়। যারা এই সকল অভিমত পেশ করে থাকে তাদের অধিকাংশের মধ্যে একটি সাধারণ মিল রয়েছে আর তা হল তারা এক মিনিটের জন্যেও জিহাদের ময়দানে সময় অতিবাহিত করে নি, মুজাহিদীনদের সাথে যুদ্ধে সময় কাটায়নি, তাঁদের সাথে নালা খনন করেনি, ব্যারাকে একই সাথে ঘুমায়নি, তাঁদের খাবারের সাথে শরীক হয়নি, তাঁদের আহতদের সাথে আহত হয়নি অথবা শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করার স্বাদ পায়নি।

যদি কেউ কোন মুসলিম পপ-ষ্টারকে জিজ্ঞাসা করে যে গান শোনা কি ইসলামে অনুমোদিত নাকি নিষিদ্ধ, সে তার সাধ্যমত চেষ্টা করবে এবং এর জন্য প্রয়োজনে কোরআন ও সুন্নাহ্ থেকে দলিল দিয়ে হলেও বোঝানোর চেষ্টা করবে যে, ইসলামে এর অনুমোদন রয়েছে। এই পপ-ষ্টারের আমলের দিকে যদি কেউ লক্ষ্য করত তাহলেই সে বুঝতে পারত যে, অযৌক্তিক যুক্তি দিয়ে হলেও সে তার কাজের পক্ষে সাফাই দেয়ার চেষ্টা করছে। ঠিক একইভাবে, যদি এমন কোন আলিম, যিনি আল্লাহর রসূল ﷺ-এর, তাঁর সাহাবাগণের এবং পূর্ববর্তী সত্যনিষ্ঠ আলিমগণের পদাঙ্ক অনুসরণ করে না, জিহাদের ময়দানে অংশ গ্রহণ করে না, তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, বর্তমান সময়ে জিহাদের বিধান কি? তাহলে এটি ধারণা করা খুব কঠিন কোন বিষয় নয় যে তিনি কোন্ ধরনের উত্তর দিতে পারেন।

এ কারণেই, মুজাহিদীন শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) কোরআনের আয়াত, সহীহ্ হাদীস এবং পূর্ববর্তী আলিমগণের মধ্য থেকে ৫০জন আলিমের কিতাব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অভিমত সম্বলিত এই কিতাবটি সংকলন করেছেন; যার মাধ্যমে বর্তমান সময়ে জিহাদ সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে অপসারণ করা যায়। এই কিতাবটিতে যে সকল বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে তা হলঃ

  • আক্রমণাত্মক ও আত্মরক্ষামূলক জিহাদের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কিত আলোচনা, প্রথম দিকে এটি ফার্দুল কিফায়া থাকে এবং পরবর্তীতে তা ফার্দুল আ’ইন হয়ে যায়।
  • জিহাদের ফারজিয়াতের প্রকৃতি সম্পর্কে চার মাযহাবের ইমামগণের রায়।
  • বর্তমান সময়ে জিহাদ করার জন্য পিতা-মাতার অনুমতি কি পূর্বশর্ত?
  • খলিফা অথবা ইসলামিক রাষ্ট্র না থাকলেও জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার হুকুম।
  • একাই জিহাদে বেরিয়ে পরা উচিত যখন বাকি সবাই পিছনে বসে থাকে।
  • কাফিরদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার এবং তাদের সাথে শান্তি চুক্তি করার বিধান।

এই কিতাবটি এমন একটি সময়ে লিখা হয়েছিল যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আফগান জিহাদ চলছিল, তাই এর বেশ কিছু বিষয়বস্তু আফগান জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত পাওয়া যায়। তবে এর মূল বিষয় বস্তু গুলো নেয়া হয়েছে পূর্ববর্তী সত্যনিষ্ঠ আলিমগণের কাছ থেকে, তাই সকল যুগে এই ধরনের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে এর হুকুম প্রযোজ্য হবে।

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ

আল্লাহ্ তা’আলা তাদের (বেশী) পছন্দ করেন যারা তাঁর পথে এমনভাবে সারিবদ্ধ হয়ে লড়াই করে, যেন তারা এক সীসাঢালা সুদৃঢ় প্রাচীর।[1]

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ভালোবাসেন ঐ সকল মুজাহিদীনদেরকে যারা তাঁর পথে জিহাদ করে, তাই মুসলিমদের কর্তব্য হচ্ছে মুজাহিদীনদেরকে ভালোবাসা, যাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন। এবং তাঁদের নামের উপর যে কোন ধরনের নিকৃষ্ট উপাধি (জঙ্গী, ধর্মান্ধ, চরমপন্থি, সন্ত্রাসী অথবা মৌলবাদী ইত্যাদি) দেয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখা যেমনটি কাফিররা করে থাকে।

আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদের এই কিতাবের মাধ্যমে মুজাহিদ আলিমগণের লিখনির দ্বারা জিহাদ সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে দূর করে দেন, যাঁরা না পরোয়া করেন সমালোচকের সমালোচনা অথবা জালেম শাসকদের তরবারী।

আল্লাহ্ তা’আলা যেন আমাদের এই কিতাব থেকে উপকার নেয়ার এবং তাঁর পথে আহ্বানে সাহসিকতার সাথে সাড়া দেয়ার তৌফিক দান করেন।

আল্লাহ্ তা’আলা যেন আমাদেরকে তাদের মতো না করেন; যারা তাদের জ্ঞান থেকে কোন উপকার নিতে পারেনি, এবং বিচার দিবসে তা তাদের জন্য বোঝার কারণ হয়ে যাবে।

আল্লাহ্ তা’আলা যেন সারা বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে যে সকল মুজাহিদীনরা আল্লাহর পথে জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকে বিজয় এবং সফলতা দান করেন।

আল্লাহ্ তা’আলা যেন তাদের মধ্য থেকে শহীদদেরকে কবুল করে নেন এবং আহতদেরকে দ্রুত আরোগ্য দান করেন।

আমি ঐ সকল ভাইদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, যারা এই কিতাবটি অনুবাদ, টাইপিং এবং সম্পাদনার এর কাজে সহযোগীতা করেছেন। আল্লাহ্ তা’আলা যেন তাদেরকে এই কাজের উত্তম বিনিময় আখিরাতে দান করেন।

[আযযাম পাবলিকেশন্স]

কে ছিলেন এই আবদুল্লাহ আযযাম?

“শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) একক কোন ব্যক্তি ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একাই পুরো একটি উম্মাত। তাঁর শাহাদাতের পরে মুসলিম মায়েরা তাঁর মতো দ্বিতীয় একটি সন্তানকে জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।”

[শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ্, আল-জাজিরা টিভি চ্যানেলের সাক্ষাতকার, ১৯৯৯]

“বিংশ শতাব্দীতে জিহাদকে পূণর্জাগরণে তিনিই দায়ী।”

[টাইম ম্যাগাজিন]

“তাঁর কথা কোন সাধারণ মানুষের কথা ছিল না, তাঁর কথা ছিল খুবই অল্প কিন্তু এর অর্থ ছিল অত্যন্ত গভীর। যখন আমরা তাঁর চোখের দিকে তাকাতাম, তখন আমাদের অন্তর ঈমান এবং আল্লাহ তা’আলার প্রতি ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে যেত।”

[মক্কা থেকে একজন মুজাহিদ আলিম]

বর্তমান বিশ্বে এমন কোন জিহাদের ভূমি অথবা আল্লাহর পথে যুদ্ধরত মুজাহিদ নেই, যিনি শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)-এর জীবনী, শিক্ষা এবং তাঁর কাজের দ্বারা প্রভাবিত না হয়েছেন।

[আযযাম পাবলিকেশন্স]

১৯৮০-এর দশকে শহীদ শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) ছিলেন এমন একটি মুদ্রিত নাম যার কথা চেচনিয়ার জিহাদের ময়দানগুলোতে আজও বার বার প্রতিধ্বনিত হয়ে চলছে। তিনি (রহিমাহুল্লাহ্) মুজাহিদীনদের ব্যাপারে বলতেন, যে কেউ জিহাদের ময়দানে মারা গেল সে যেন শরীক হল, ‘শহীদী কাফিলার সাথে’।”

[চেচনিয়া জিহাদের ফিল্ড কমান্ডার ইবনুল খাত্তাব (রহিমাহুল্লাহ্)]

আবদুল্লাহ ইউসুফ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৪১ সালে দখলকৃত পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের জেনিন প্রদেশে, আসবাহ্ আল-হারতিয়াহ্ নামক গ্রামে। তিনি এমন একটি পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন, যেখান থেকে তিনি শিক্ষা পেয়েছিলেন ইসলাম সম্পর্কে এবং ভালবাসতে শিখেছেন আল্লাহ ও তাঁর রসূল ﷺ-কে, আল্লাহর পথে মুজাহিদীনদের, সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণের এবং আখিরাতের আকাঙ্খার বিষয়ে।

আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) ছিলেন এমন একজন ব্যতিক্রম ধর্মীয় কিশোর যিনি খুব অল্প বয়সেই ইসলামের দিকে প্রচার কাজ শুরু করেন। তাঁর সহচররা তাকে ধর্ম ভীরু কিশোর হিসেবেই চিনতো। বাল্যকালে তাঁর মধ্য থেকে কিছু অসাধারণ গুণাবলী প্রকাশিত হয়েছিল, যা তাঁর শিক্ষকেরা চিনতে পেরেছিলেন অথচ তখনও তিনি সবেমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন, তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান এগ্রিকালচার খাদররী কলেজে, যেখান থেকে তিনি ডিপ্লোমা লাভ করেন।

শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) পরিচিত ছিলেন দৃঢ় নিষ্ঠাবান এবং গম্ভীর প্রকৃতির, যার কারণে তাকে দেখে বোঝার কোন উপায় ছিল না যে তিনি তখনও ছিলেন একটি ছোট্ট বালক। তিনি তাঁর গ্রামেই প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন, তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে তরুণ হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি সুদর্শন এবং মেধাবী। খাদররী কলেজ থেকে তাঁর গ্র্যাজুয়েট শেষ করার পরে তিনি দক্ষিণ জর্ডানের আদ্দির নামক গ্রামে শিক্ষকতা পেশায় কাজ করেন। এর পরে তিনি দামেস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে শারিয়াহ্ বিভাগে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন এবং সেখান থেকে তিনি ১৯৬৬ সালে শারিয়াহ্ (ইসলামিক আ’ইন)-এর উপর বি.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে যখন ইহুদীরা পশ্চিম তীর দখল করে নেয় তখন তিনি সেখান থেকে হিজরত করে জর্ডানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, কারণ তিনি ফিলিস্তিনের মধ্যে ইহুদীদের দখলদারিত্বের অধীনে থাকতে চাচ্ছিলেন না।…

পরবর্তীতে তিনি ১৯৭০ সালে ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলী আগ্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে জর্ডান থেকে জিহাদে যোগ দান করেন। এর কিছুদিন পরেই তিনি চলে যান মিশরে এবং সেখানে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শারিয়াহ্-এর উপর মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৭০ সালের পরে জর্ডানের বাহিরে জিহাদ করাকে পি.এল.ও বাহিনী জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়, তখন তিনি জর্ডানের আম্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি কায়রোতে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাণ্ডিত্যের পুরষ্কার লাভ করেন, যেখান থেকে তিনি ইসলামিক আইনের বিজ্ঞান ও দর্শন (উসূলুল ফিকহ)-এর উপর পি.এইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে মিশরে থাকা কালীন তিনি শহীদ সাইয়্যেদ কুতুব (রহিমাহুল্লাহ্) [১৯০৬-১৯৬৬] -এর পরিবারের খোজ-খবর নিতে যান।

শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) ফিলিস্তিনের জিহাদের মধ্যে একটি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। যদিও কিছু বিষয় যা তার খুবই অপছন্দনীয় ছিল, যেমন এর মধ্যে এমন অনেকেই যোগদান করেছিল যারা ইসলাম থেকে অনেক দূরে ছিল। তিনি বলতেন, কিভাবে তারা ফিলিস্তিনকে মুক্তির জন্য জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে তারা প্লেয়িং কার্ড ও গান শোনা এবং দৃষ্টিভ্রমের কাজের মধ্য দিয়ে রাত অতিবাহিত করে। শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) আরো উল্লেখ করে বলেন, হাজারো মানুষের কোন জনবহুল জায়গায় যখন তাদের সবাইকে সলাতের জন্য আহবান করা হত, তখন তাদের মধ্য থেকে এত কম সংখ্যক মানুষ সলাতে উপস্থিত হত যা এক হাতের আঙ্গুল দিয়েই গুণা সম্ভব ছিল। তিনি তাদেরকে ইসলামের দিকে পরিচালনার চেষ্টা করতেন, কিন্তু তারা তাঁর এই প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করত। একদিন তিনি এক মুজাহিদকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ফিলিস্তিনের মধ্যে এই অভ্যুথানে দ্বীনের সাথে কি সম্পর্ক আছে?’ সে বোকার মত এবং সুস্পষ্ট ভাষায় বলল, ‘এই অভ্যুথানের পিছনে দ্বীনের কোন সম্পর্ক নেই’।”

এটি ছিল সেখানে তাঁর অবস্থানের শেষ মুহুর্তের কথা, এর পরে তিনি ফিলিস্তিন ত্যাগ করে সৌদি আরবে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা দেয়ার জন্য চলে যান।

যখন শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) উপলব্ধি করতে পারলেন যে, এই উম্মাহর বিজয় ফিরিয়ে আনতে পারবে একমাত্র ঐক্যবদ্ধ বাহিনীর মাধ্যমে, তখন থেকে জিহাদ এবং বন্দুক হয়ে যায় তাঁর প্রধান কাজ ও বিনোদন।

“আর কোন সমঝোতা নয়, নয় সংলাপ অথবা কোন আলাপ-আলোচনা, একমাত্র জিহাদ এবং রাইফেল।”

তিনি তা-ই বলতেন যা তিনি নিজে আমল করতেন। শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) হচ্ছেন প্রথম আরব যিনি আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে জিহাদে যোগ দান করেছিলেন।

১৯৮০ সালে যখন তিনি সৌদি আরবে ছিলেন তখন তাঁর সুযোগ হয়েছিল একজন আফগান মুজাহিদের সাথে সাক্ষাত করার, যিনি হজ্জ করার উদ্দেশ্যে সেখানে এসেছিলেন। অতঃপর তিনি তাদের মধ্যেই সময় কাটালেন এবং আফগান জিহাদের বিষয়ে আরো কিছু জানতে চাইলেন। যখন তাঁকে আফগান জিহাদের ঘটনাগুলো বলা হচ্ছিল তখন এ বিষয়গুলো তাঁর কাছে ছিল একেবারেই অপ্রকাশিত, এবং তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে এত দিন যাবৎ তিনি এই পথটিকেই খোঁজ করছিলেন।

এভাবেই তিনি সৌদি আরবের জেদ্দায় বাদশাহ্ আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর শিক্ষকতার পেশাকে ত্যাগ করেন এবং সেখান থেকে তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে চলে যান জিহাদে অংশ গ্রহণ করার জন্য এবং তাঁর বাকি জীবন তিনি এর মধ্যেই অতিবাহিত করেন। সেখানে গিয়ে তিনি আরো কিছু মুজাহিদ নেতাদের খোঁজ পেয়ে যান। পাকিস্তানে অবস্থানকালের প্রথম দিকে তিনি ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দান করেন। এর কিছু দিন পরেই তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরিভাবে আফগানিস্তানের জিহাদের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

১৯৮০ সালের প্রথম দিকে শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) জিহাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আফগানিস্তানে আসেন। এই জিহাদের মধ্যে আত্ম নিয়োগের মাধ্যমে তিনি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার পূর্ণ আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন, ঠিক যেভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা বলেছিলেন, “আল্লাহর পথে যুদ্ধের ময়দানে এক মুহুর্ত দণ্ডায়মান হওয়া, ৬০ বছর ধরে ইবাদাতে দণ্ডায়মান থাকার চেয়ে শ্রেয়।”

এই হাদীসের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) এমনকি তার পরিবারকে পর্যন্ত পাকিস্তানে নিয়ে আসেন; যাতে তিনি জিহাদের ময়দানের আরো নিকটবর্তী হতে পারেন। এর কিছুদিন পরেই, তিনি জিহাদ ও শাহাদাতের ভূমিতে অবস্থান করার উদ্দেশ্যে ইসলামাবাদ ছেড়ে পেশোয়ারে চলে যান। পেশোয়ারে আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) ও তার প্রিয় বন্ধু উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ্ বায়তুল আনসার (মুজাহিদীনদের সেবা সংস্থা) এর সন্ধান পান। যারা আফগান জিহাদ এর জন্য সমস্ত প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করতে প্রস্তুতছিল। এই সংস্থা অনেক নতুন মুজাহিদীনকে পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ দান করত যাতে তারা আফগানিস্তানে সম্মুখ কাতারে থেকে জিহাদ করতে পারে।

আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)-এর জিহাদের প্রতি প্রচন্ড আকাঙ্খার কারণে শুধু এতটুকু করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। অবশেষে তিনি জিহাদের প্রথম কাতারে শামিল হন এবং সাহসিকতার সাথে বীরের মত ভূমিকা পালন করেন।

আফগানিস্তানে তিনি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় খুব কম সময়ই অবস্থান করতেন। তিনি গোটা দেশে সফর করেছেন; এর অধিকাংশ প্রদেশগুলো হচ্ছে: লোগার, কান্দাহার, হিন্দুকুশ পর্বতমালা, পাঞ্জসের এর উপত্যকা, কাবুল, জালালাবাদ। এই সফর করার কারণে তিনি আফগানিস্তানের সাধারণ যোদ্ধাদের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পান যারা আল্লাহর কালিমাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেদের জীবন ও সম্পদ দ্বারা জিহাদে লিপ্ত ছিল।

সফর থেকে ফেরত আসার পর পেশোয়ারে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে জিহাদের ব্যাপারে খুতবা দিতে লাগলেন। তিনি বিভক্ত মুজাহিদীন নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য দু’আ করতেন এবং যারা এখনো পর্যন্ত জিহাদের কাতারে শামিল হয়নি ও আল্লাহর রাহে অস্ত্র তুলে নেয়নি; খুব দেরি হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে তাদের দায়িত্বে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানাতেন।

আফগান জিহাদের দ্বারা শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিলেন, ঠিক একইভাবে আফগান জিহাদও তাঁর দ্বারা মারাত্মক প্রভাবিত হয়েছিল। তিনি তাঁর পুরো সময় এই কাজের মধ্যেই নিয়োজিত থাকতেন। আফগান মুজাহিদ নেতাদের কাছে তাঁর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুসলিম উম্মাহ্-কে আফগান জিহাদের বিষয়ে জাগ্রত করার জন্য তিনি তাঁর সামর্থ্যের মধ্যে কোন প্রচেষ্টাকেই বাকি রাখেননি। তিনি সারা বিশ্বের প্রতিটি কোনায় সফর করেন এবং মুসলিমদের ভূমি এবং দ্বীনকে হিফাজতের জন্য তাদেরকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান। তিনি জিহাদের উপর অনেক বই লিখেছেন। যেমনঃ ‘এসো কাফেলা বদ্ধ হই’, ‘আফগান জিহাদে আর-রহমান এর মুজিযা সমূহ’, ‘মুসলিম ভূমি সমূহের প্রতিরক্ষা’, ‘কারা জান্নাতের কুমারীদের ভালবাসে?’ ইত্যাদি। অধিকন্তু তিনি সশরীরে আফগান জিহাদে অংশ গ্রহণ করেন। যদিও তার বয়স চল্লিশোর্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিনি আফগানিস্তানের পূর্ব থেকে পশ্চিমে, উত্তর থেকে দক্ষিণে, বরফের এলাকায়, পাহাড়ে, গরম-ঠাণ্ডায়, গাধায় চলে, পায়ে হেটে সফর করেছেন। তার সাথে কোন যুবক থাকলে ক্লান্ত হয়ে পড়ত অথচ শাইখ ক্লান্ত হতেন না।

তিনি আফগানিস্তানের জিহাদের বিষয়ে মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করেছেন এবং এই জিহাদ যে, ইসলামের জন্য করা হচ্ছে তা সারা বিশ্বের মুসলিমদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর এই অক্লান্ত প্রচেষ্টার পরে আফগান জিহাদ আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করে এবং এতে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে মুসলিমরা অংশ গ্রহণ করা শুরু করে। খুব দ্রুত ইসলামের সৈনিকেরা তাদের জিহাদের ফারজিয়াত আদায় এবং নির্যাতিত মুসলিম ভাই ও বোনদেরকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসে পৃথিবীর চতুর্দিক অর্থাৎ পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ দিক থেকে এবং আফগানিস্তানে সমবেত হতে শুরু করে দেয়।

শাইখের জীবন আবর্তিত ছিল একটি মাত্র বিষয়কে কেন্দ্র করে, আর তা ছিল আল্লাহর হুকুমকে এই জমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত করা, যা প্রতিটি মুসলিমের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাঁর সারা জীবনের একমাত্র মহৎ লক্ষ্য ছিল, জিহাদের মাধ্যমে খিলাফাহ পুণঃপ্রতিষ্ঠিত করা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, পৃথিবীর বুকে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে যাতে সারা বিশ্বব্যাপী ইসলামের আলো জ্বলতে থাকে। তিনি এ কাজে তাঁর পরিবারকেও উৎসাহিত করতেন। যার ফলশ্রুতিতে, তাঁর স্ত্রীকে দেখা যেত ইয়াতীমদের সেবা এবং অন্যান্য মানুষের দুঃখ দুর্দশায় সহযোগিতামূলক কাজে নিয়োজিত থাকতে। তিনি অনেক বারই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বলতেন, তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ চালিয়ে যাবেন যতক্ষণ পর্যন্ত হয় তিনি শহীদ হবেন নতুবা তাকে হত্যা করা হবে। তিনি প্রায়ই একটি কথার পুনরাবৃত্তি করে বলতেন, যদিও তখনও তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা। একদা তিনি বলেছিলেনঃ

“আমি কখনো জিহাদের ভূমি ত্যাগ করবোনা; তিনটি অবস্থা ব্যতীত। হয় আমি আফগানিস্তানে নিহত হব, নতুবা পেশোয়ারে নিহত হব নতুবা আমার হাত বাধা অবস্থায় পাকিস্তান থেকে বহিষ্কৃত হব।”

বিংশ শতাব্দীতে আফগানিস্তানের জিহাদের মাধ্যমে শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) জিহাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে উঠেন। তিনি মুসলিমদের হৃদয়কে জিহাদ এবং এর প্রয়োজনীয় বিষয়ে দারুণভাবে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন, তা জিহাদের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে অথবা উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে কিংবা জিহাদের বিষয়ে দাবীকৃত ভ্রান্ত ধারণাগুলোকে দূর করার মাধ্যমেই হোক না কেন? তরুণ প্রজন্মকে জিহাদের পথে আহ্বানের মাধ্যমে তিনি আলিমদের জন্য একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন। তিনি জিহাদ এবং এর যে কোন প্রয়োজনীয়তাকে খুব গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করতেন। একদিন তিনি বলছিলেন,

“আমি মনে করি আমার প্রকৃত বয়স হচ্ছে নয় বছরঃ সাড়ে সাত বছর কেটেছে আফগান জিহাদে আর দেড় বছর কেটেছে ফিলিস্তিনের জিহাদে, এছাড়া আমার জীবনের বাকি বয়সগুলোর কোন মূল্য আমার কাছে নেই।”

মিম্বারে দাড়িয়ে খুতবা দেয়ার সময়ে প্রায়ই তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে থাকতেন,

“জিহাদ পরিত্যাগ করা হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত এক আল্লাহর ইবাদাত করা হয়। এই জিহাদ চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর কালিমাকে সবার উপরে তোলা হয়। জিহাদ চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সকল নির্যাতিত মানুষদের মুক্ত করা হয়। জিহাদ চলবে আমাদের সম্মান ও দখলকৃত ভূমিগুলোকে ফিরিয়ে আনার আগ পর্যন্ত। জিহাদ হচ্ছে চিরস্থায়ী মর্যাদার পথ।”

অতীতের ইতিহাস থেকে এবং যে কেউ শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)-কে পূর্ব থেকে চিনতেন তারা সবাই তাঁর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন বক্তা। শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)-কে মুসলিম উম্মাহ্-কে উপলক্ষ করে খুতবা দেয়ার সময় বলতে শোনা যেত যে,

“মুসলিমরা কখনোই অপর জাতির দ্বারা পরাজিত হয় না। আমরা মুসলিমরা কখনোই আমাদের শত্রুদের কাছে পরাজিত হইনি, কিন্তু এর পরিবর্তে আমরা পরাজিত হয়েছি আমাদের নিজেদেরই লোকদের কাছে।”

তিনি ছিলেন একজন উত্তম ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ধর্মানুরাগ, আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা এবং সংযমশীলতা ছিল তাঁর চারিত্রিক অলংকার। তিনি কখনোই কারো সাথে হীনতামূলক আচরণ দেখাতেন না। শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) সব সময়ই তরুণদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন; তিনি তাদেরকে সম্মান করতেন এবং সকল প্রকার ভয়-ভীতিকে অতিক্রম করে তাদের হৃদয়ে সুপ্ত সাহসিকতাকে জাগিয়ে তুলতেন। তিনি অবিরাম সিয়াম পালন করতেন; বিশেষ করে দাউদ (আলাইহি ওয়া সালাম)-এর সুন্নাহ্ অর্থাৎ একদিন সিয়াম পালন করা এবং একদিন বিরত থাকা, এই নীতিতে তিনি সিয়াম পালন করতেন। তিনি অন্যদেরকে সোম এবং বৃহস্পতিবার দিন সিয়াম পালন করার বিষয়ে খুব বেশি বেশি তাগিদ দিতেন। শাইখ ছিলেন একজন ন্যায়বান, সৎ মানুষ এবং তিনি কখনো কোন মুসলিমের সাথে খারাপ ভাষায় অথবা অসন্তুষ্টি মূলক ভাবে কথা বলতেন না।

একবার পেশোয়ারে বসে কিছু উগ্র স্বভাবের মুসলিম ঘোষণা দিল যে, তিনি কাফির হয়ে গিয়েছেন, কারণ তিনি মুসলিমদের সম্পদ অপচয় করছেন। যখন এই সংবাদ শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)-এর কাছে এসে পৌঁছালো তখন তিনি তাদের কাছে গিয়ে তর্ক করার পরিবর্তে তাদের জন্য কিছু উপহার সামগ্রী প্রেরণ করলেন। এই উপহার সামগ্রী পাওয়ার পরেও তাদের মধ্য থেকে কিছু লোক তার বিষয়ে কটুবাক্য এবং অপবাদ ছড়াতে লাগল। কিন্তু শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) তাদেরকে নিয়মিতভাবে উপহার পাঠাতে লাগলেন। অনেক বছর পর, যখন তারা তাদের ভুল বুঝতে পারল, তখন তারা তাঁর বিষয়ে বলতে লাগলঃ

“আল্লাহর কসম! আমরা কখনোই শাইখ আবদুল্লাহ আযযামের মত মানুষ দেখিনি। তিনি আমাদেরকে নিয়মিত অর্থ এবং উপহার দিয়ে যেতেন যখন কিনা আমরা তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য এবং কটুবাক্য রটনা করতাম।”

আফগান জিহাদ চলাকালীন সময়ে তিনি সেখানকার বিভিন্ন মুজাহিদীনদের দলকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। স্বভাবতইঃ মুসলিমদের এত সফলতা দেখে ইসলামের শত্রুরা নিদারুণ যন্ত্রণা অনুভব করতে লাগল এবং তারা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা শুরু করল। ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে তিনি যেই মিম্বারে উঠে নিয়মিতভাবে জুম্মার খুতবা দিতেন তার নিচে একটি মারাত্মক শক্তিশালী টি.এন.টি বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল। এটি এতই ভয়াবহ বিস্ফোরক ছিল যে, এটি বিস্ফোরিত হলে মসজিদের ভিতরে সকল মানুষ নিয়ে পুরো মসজিদটিই ধ্বসে যেতে পারতো। কিন্তু আল্লাহ যাকে বাঁচিয়ে রাখতে চান তাকে মারার ক্ষমতা কার আছে? বিস্ফোরকটি তখন বিস্ফোরিত হয়নি।

শত্রুরা তাদের ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল, তাই তারা কিছু দিন পরে ঠিক একই বছরে পেশোয়ারে তাদের দুষ্কর্ম বাস্তবায়নের চেষ্টা চালায়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে, শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)-কে এই দুনিয়া থেকে তুলে নিয়ে তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাদের সাথে রাখবেন (আমরা তাঁর ব্যাপারে এরূপই ধারণা করে থাকি), তিনি তাঁর মহৎ ব্যক্তিত্বের সাথে আখিরাতের দিকে প্রত্যাবর্তন করলেন। দিনটি ছিল ১৯৮৯ সালের ২৪শে নভেম্বর, শুক্রবার এবং সময় ছিল বেলা ১২:৩০।

শত্রুরা তিনটি বোমা রাস্তার পাশে পুতে রেখেছিল আর রাস্তাটি এতই সরু ছিল যে, সেখান দিয়ে একটি গাড়ির বেশি অতিক্রম করতে পারত না। শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) এই রাস্তা দিয়েই প্রতি শুক্রবার জুমার সলাত আদায় করতে যেতেন। সেই দিন, শাইখ তাঁর দুই পুত্র ইবরাহীম এবং মুহাম্মাদকে সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তাঁর আরেক সন্তান তামিম আদনানী (আফগান জিহাদের আরেকজন বীর মুজাহিদ পরবর্তীতে যিনি প্রসিদ্ধ আলিম হন) একাকী অন্য আরেকটি গাড়িতে করে আসছিলেন। প্রথম বোমাটি যেখানে পুতে রাখা হয়েছিল ঠিক সেই জায়গাতেই গাড়িটি থামানো হল এবং শাইখ গাড়ি থেকে নেমে হাটা শুরু করলেন আর তখনই শত্রুদের বোমাটি মারাত্মক বিকট শব্দ নিয়ে বিস্ফোরিত হল যার আওয়াজ পুরো শহরবাসী শুনতে পেয়েছিল।

মসজিদ এবং আশপাশ থেকে মানুষ ঘটনাস্থলে দৌড়িয়ে আসলো। সেখানে গাড়ির বিক্ষিপ্ত কিছু টুকরো ছাড়া আর কিছুই তারা দেখতে পেল না। তাঁর ছোট পুত্রের দেহ বিস্ফোরণের ফলে ১০০ মিটার আকাশের উপরে উঠে গিয়েছিল, বাকি দু’জনের দেহও একই পরিমাণের উচ্চতায় উপরে উঠে গিয়েছিল এবং তাদের দেহের বিভিন্ন অংশ গাছের এবং বৈদ্যুতিক তারের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল । আর শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)-এর দেহটি সম্পূর্ণ অক্ষত শুধুমাত্র মুখ দিয়ে কিছু রক্ত প্রবাহিত অবস্থায় একটি দেয়ালের সাথে হেলানো অবস্থায় পাওয়া গেল।

ঐ চরম বিস্ফোরণের মাধ্যমেই শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) এর দুনিয়ার যাত্রা পরিসমাপ্তি ঘটে, যিনি তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পথে জিহাদ করার মাধ্যমে কাটিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তাঁর জন্য জান্নাতের বাগান আরো সুনিশ্চিত হয়ে যায়। আমরা আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করি, যেন তিনি তাঁকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নেন এবং সম্মানিত বান্দাদের সাথে থাকার সুযোগ দান করেন। যেমনটি আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا

“যারা আল্লাহ তা’আলা ও (তাঁর) রসূলের আনুগত্য করে, তারা (শেষ বিচারের দিন সেসব) পুণ্যবান মানুষদের সাথে থাকবে, যাদের উপর আল্লাহ তা’আলা প্রচুর নিয়ামাত বর্ষণ করেছেন, এরা (হচ্ছে) নবী-রসূল, যারা (হিদায়াতের) সত্যতা স্বীকার করেছে, (আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী) শহীদ ও অন্যান্য নেককার মানুষ, সাথী হিসেবে এরা সত্যিই উত্তম!” [2]

আর এভাবেই এই মহান শাইখ এবং জিহাদকে পুণর্জীবিতকারী জিহাদের ভূমি এবং এই দুনিয়াকে ছেড়ে চলে যান, যিনি আর কখনো ফিরে আসবেন না। তাঁকে পেশোয়ারে শহীদদের কবরস্থান পাবী-তে কবর দেয়া হয়। যেখানে তাকে আরো শতাধিক শহীদদের মাঝে শায়িত করা হয়। আল্লাহ তা’আলা তাঁর শাহাদাতকে কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু মর্যাদা দান করুন।

ইসলামের শত্রুদের বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির পরেও তিনি বিভিন্ন দেশে তাঁর জিহাদের প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রেখেছিলেন। তাই বিংশ শতাব্দীতে এমন কোন জিহাদের ভূমি পাওয়া যায়নি অথবা এমন কোন মুজাহিদ দেখা যায়নি যিনি শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)-এর জীবনী, শিক্ষা অথবা তাঁর কাজ দ্বারা উদ্বুদ্ধ না হয়েছেন।

আমরা আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করি, যেন তিনি শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)-এর সকল প্রচেষ্টাগুলোকে কবুল করে নেন এবং তাঁকে জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু মর্যাদা দান করেন। আমরা আল্লাহ তা’আলার নিকট আরো প্রার্থনা করি, এই উম্মাতের জন্য তিনি যেন তাঁর মতোই মহৎ চরিত্রের আরো আলিমগণকে জাগিয়ে তোলেন, যাতে তারা তাদের জ্ঞানকে শুধুমাত্র কিতাবের পাতায় এবং মসজিদের দেয়ালের ভিতরেই সীমাবদ্ধ না রেখে জিহাদের ময়দানগুলো পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে পারেন।

বিংশ শতাব্দীতে তাঁর জীবনীর এই দশটি বছরের অর্থাৎ ১৯৭৯-৮৯ সময়কালকে আমরা ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। একদা শাইখ আবদুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্) নিজেই বলেছিলেন,“ইসলামের ইতিহাস শহীদদের রক্ত, স্মৃতি এবং দৃষ্টান্ত ছাড়া লেখা হয় না।”

يُرِيدُونَ أَنْ يُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللَّهُ إِلا أَنْ يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ

هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ

“এ (মূর্খ) লোকেরা তাদের মুখের (এক) ফুঁৎকার দিয়ে আল্লাহর (দ্বীনের) আলো নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তাঁর এ আলোর পূর্ণ বিকাশ ছাড়া অন্য কিছুই চান না, যদিও কাফিরদের কাছে এটি খুবই অপ্রীতিকর! তিনিই (মহান আল্লাহ), যিনি (তোমাদের কাছে) সুস্পষ্ট হিদায়াত ও সঠিক জীবনবিধান সহকারে তাঁর রসূলকে পাঠিয়েছেন, যেন সে এই বিধানকে (দুনিয়ার) সব কয়টি বিধানের উপর বিজয়ী করে দিতে পারে, মুশরিকরা (এ বিজয়কে) যতো অপছন্দ করুক না কেন!” [3]

ভূমিকা

সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি এবং তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। আমরা তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আশ্রয় চাই আমাদের খারাপ আমল ও নফসের খারাবী থেকে। আল্লাহ তা’আলা যাকে হিদায়াত দান করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না। আর তিনি যাকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষিপ্ত করেন কেউ তাকে হিদায়াত দান করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর দাস এবং রসূল।

হে আমার রব! কোন কিছুই সহজ নয় শুধুমাত্র আপনি যার জন্য তা সহজ করে দেন। এবং আপনি যখন চান তখন অন্ধকারের ভিতরে আলো দান করেন।

আমি যখন এই ফাতওয়াটি[4] লিখি তখন এটি বর্তমানের আকারের চেয়ে আরো বড় ছিল। আমি এটিকে আমাদের সম্মানিত শাইখ আব্দুল আজিজ বিন বাজকে[5] দেখাই। আমি তাঁর সামনে ফাতওয়াটি পড়ি; এবং তিনি পুরো ফাতওয়াটি শুনে এর সাথে একমত পোষণ করেন এবং বলেন, “এটি খুব ভাল”। তবে, তিনি আমাকে উপদেশ দেন ফাতওয়াটি আরো সংক্ষিপ্ত করার জন্য এবং এর শুরুতে একটি ভূমিকা দেয়ার জন্য যখন এটি প্রকাশনা করা হবে। পরবর্তীতে তিনি ব্যস্ত হয়ে পরেন কারণ তখন ছিল হজ্জের মৌসুম, তাই এটি আর দ্বিতীয় বারের মত তাকে দেখাতে পারিনি।

এরপর শাইখ বিন বাজ জেদ্দায় বিন লাদেনের মসজিদে এবং রিয়াদের একটি বড় মসজিদে খুতবা দেয়ার সময় ঘোষণা দেন যে বর্তমানে জিহাদ হচ্ছে প্রত্যেকের জন্য ফারদ্ আ’ইন। অতঃপর আমি এই ফাতওয়ার শেষের ছয়টি প্রশ্ন ছাড়া বিশিষ্ট শাইখ আবদুল্লাহ আল-ওয়ান, প্রভাষক সাঈদ হাউয়া, মুহাম্মাদ নাজীব আল-মুত’ঈী, ডঃ হাসান হামিদ হিসান এবং উমার সাঈফ প্রমূখদেরকে দেখাই। আমি তাদের সম্মুখে এটি পড়ে শুনাই এবং তাদের সবাই এতে একমত পোষণ করেন এবং এতে স্বাক্ষর করেন। এছাড়াও আমি শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফ্ফী, হাসান আইউব এবং ডঃ আহমেদ আল-আশাল এর সামনেও এটিকে পড়ে শুনিয়েছিলাম।

এরপর আমি হজ্জের মৌসুমে একটি খুতবা দেই সাধারণ পথনির্দেশনা সেন্টারের মধ্যে যা মিনায় অবস্থিত। সেখানে ইসলামী দেশগুলো থেকে প্রায় এক’শ -এর বেশি আলিমগণ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আমি বলেছিলামঃ

“এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী সত্যনিষ্ঠ আলিমগণ[6] একমত পোষণ করেছেন এবং সকল যুগের মুহাদ্দিসগণ[7] উপলব্ধি করেছেন যে, যদি মুসলিমদের ভূমির এক বিঘত পরিমাণের জায়গাও কুফ্ফাররা দখল করে নেয়, তখন প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর উপর জিহাদ করা ফারদ্ আ’ইন (সবার জন্য ফরয) হয়ে যায়। ঐ মুহুর্তে জিহাদে বের হওয়ার জন্য সন্তানের প্রয়োজন হয় না তার পিতা-মাতার কাছ থেকে অনুমতি নেয়া এবং স্ত্রীরও তার স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় না।”

আমি আমীরুল জিহাদ (সাইয়াফ[8])-এর অধীনে ৩ বছর সময় আফগানিস্তানের জিহাদে কাটিয়ে এসেছি এবং আমি সেখানে জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি। সুতরাং এ বিষয়ে যদি কোন মত পার্থক্য থেকে থাকে, ‘হে উলামা মাশায়েখগণ! তাহলে দাড়িয়ে যেতে পারেন।’ সেখানে একজনও দ্বিমত পোষণ করেননি। তার পরিবর্তে, ডঃ জাফর শাইখ ইদ্রিস উঠে বললেন, ‘হে আমার ভাই! আমাদের এ বিষয়ের উপর কোন দ্বিমত নেই।’”

সুতরাং, অবশেষে আমি এই ফাতওয়াটি প্রকাশনা করি। যেন আল্লাহ তা’আলা এই কিতাবটির মাধ্যমে এই দুনিয়ায় এবং আখিরাতের জন্য সমস্ত মুসলিমদের কল্যাণ এনে দিতে পারেন।

“ঈমান আনার পরে সর্ব প্রথম ফারদ্ কর্তব্য হচ্ছে আগ্রাসী শত্রু বাহিনীকে মুসলিম ভূমি থেকে বিতাড়িত করা, যারা মুসলিমদের দ্বীন এবং দুনিয়াবি কোন বিষয়ের উপর আক্রমণ চালায়।”

ডঃ আবদুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ্

১ম অধ্যায়ঃ ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্ দায়িত্ব

সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি এবং তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। আমরা তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আশ্রয় চাই আমাদের খারাপ আমল ও নফসের খারাবী থেকে। আল্লাহ তা’আলা যাকে হিদায়াত দান করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না। আর তিনি যাকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষিপ্ত করেন কেউ তাকে হিদায়াত দান করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর দাস এবং রসূল। আল্লাহ তাঁর উপর, তাঁর পরিবার ও সাহাবী (রদিআল্লাহু আনহুম) গণের উপর শান্তি বর্ষন করুন।

অতপর…

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এই দ্বীন (ইসলাম)-কে সমস্ত বিশ্ববাসীর উপর দয়াস্বরূপ পছন্দ করেছেন। তিনি এই দ্বীনের জন্য সর্বশেষ নাবীকে পাঠিয়েছেন যিনি রসূলদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী রহমত প্রাপ্ত। তাঁকে পাঠানো হয়েছে তীর ও বর্শার দ্বারা এই দ্বীনকে বিজয়ী করে তোলার জন্য; যখন এটি সবার নিকট সুস্পষ্ট দলিল ও যুক্তি দ্বারা পরিষ্কার হয়ে যায়। নাবী ﷺ বলেন,

“আমাকে উত্থিত করা হয়েছে কিয়ামতের আগে তলোয়ার সহকারে যতক্ষণ পর্যন্ত শিরকমুক্ত অবস্থায় এক আল্লাহর ইবাদাত করা হয়। তিনি আমার রিজিক রেখেছেন বর্শার ছায়ার নীচে এবং যারা আমার আদেশ প্রত্যাখ্যান করবে তাদের জন্য রয়েছে অবমাননা ও লাঞ্ছনা, যা নির্ধারিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে। এবং যে তাদের (কাফিরদের) অনুসরণ করবে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত।”[9]

আল্লাহ তা’য়ালা মানবতার মুক্তির পথ রেখেছেন জিহাদের মধ্যে, কেননা তিনি বলেন,

وَلَوْلا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ

আল্লাহ যদি মানবজাতির একদল দ্বারা অন্য দলকে প্রতিহত না করতেন তাহলে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ জগতসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল।[10]

এভাবেই সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’আলা এই বিধানকে মানব জাতির উপরে অনুগ্রহ স্বরূপ দান করেছেন এবং এটিকে দ্ব্যর্থহীন করে দিয়েছেন। অন্য কথায়, মানবজাতির পুনর্গঠনের জন্যই সত্য-মিথ্যার এই দ্বন্দ্ব চলতে থাকবে, যেন সত্য সদা প্রবল হয় এবং যা কিছু উত্তম তা বিস্তার লাভ করে। এর আরও একটি উদ্দেশ্য হল মু’মিনদের আমল এবং ইবাদাতের স্থানগুলোকে নিরাপদে রাখা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন,

الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ إِلا أَنْ يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ وَلَوْلا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ

“যদি আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা শায়েস্তা না করতেন তাহলে দুনিয়ার বুক থেকে (খৃষ্টান সন্ন্যাসীদের) উপাসনালয় গির্জা সমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, ইহুদীদের ইবাদাতের স্থান এবং মুসলমানদের মসজিদ সমূহও যেখানে বেশী বেশী পরিমাণে আল্লাহর নাম নেয়া হয়। আল্লাহ তা’য়ালা অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্য করেন, অবশ্যই আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী।”[11]

প্রতিরক্ষা অথবা জিহাদের বিধি-বিধান ও কৌশল সম্পর্কে আল্লাহর কিতাবের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে আমরা বুঝতে পারি যে, সত্যের নিজস্ব একটা শক্তি আছে যা দ্বারা সে নিজেকে টিকিয়ে রাখে। এখন প্রশ্ন হল যে, আর কতকাল এই সত্য (দ্বীন) পরাজিত হতে থাকবে এর বাহকদের অবহেলার কারণে? আর কত দিন মিথ্যা (অন্যান্য দ্বীনগুলো) বিজয়ী হবে এদের সাহায্যকারীদের উৎসর্গের কারণে?

জিহাদ দুটি প্রধান স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তা হল ধৈর্য্য এবং মহত্ব। ধৈর্য্য এমন একটি গুণ যার দ্বারা আত্মার সাহসিকতা প্রকাশ পায় এবং মহত্ব কাউকে তার সম্পদ ও জানকে আত্মত্যাগ করতে শেখায়। আত্মত্যাগ যার মধ্যেই থাকুক না কেন এটি হচ্ছে একটি মহৎ গুণ যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রসূল ﷺ বলেছেন, “ঈমান হল ধৈর্য ও মহত্ব।”[12]

ইবনে তাইমিয়্যাহ[13] রহিমাহুল্লাহ্ বলেন,

“ধৈর্য্য ও মহত্ব ব্যতীত বনী আদমের দ্বীন এবং দুনিয়াবি বিষয়ে সংশোধন হবে না।”[14]

আল্লাহ তা’আলা এই বিষয়টিকে আরো পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, যে কেউ জিহাদ ত্যাগ করবে তিনি তদস্থলে অন্য এমন কাউকে নিয়ে আসবেন, যারা এই কাজটি সম্পাদন করবে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ

إِلا تَنْفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلا تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

“তোমরা যদি অগ্রসর না হও তাহলে তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোন অনিষ্ট করতে পারবে না কারণ তিনি যা ইচ্ছা তা করতে পারেন।”[15]

নাবী ﷺ-ও দু’টি পাপের উৎসকে উল্লেখ করেছেন, “কৃপণতা ও কাপুরুষতা”। এই উৎস দুটি আত্মাকে কলুষিত করে এবং সমাজের নৈতিক অবনতি ঘটায়। সহীহ্ হাদীসে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “মানুষের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ দিক হল কৃপণতা ও কাপুরুষতা।”[16]

আমরা যদি অতীতের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো আমাদের পূর্ববর্তী আলিমগণ জিহাদের বিধানকে আঁকড়ে ছিলেন এবং মানব জাতিকে এরই মাধ্যমে শিক্ষা এবং নেতৃত্ব দান করেছিলেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِآَيَاتِنَا يُوقِنُونَ

“আর আমি তাদের মধ্য হতে নেতা মনোনীত করিয়াছিলাম, যাহারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করত, যেহেতু তারা ধৈর্য্য ধারণ করেছিল। আর তারা ছিল আমার নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী।”[17]

সহীহ হাদীস থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেছেন, “আমার উম্মতের প্রথম অংশ ঈমানের দৃঢ়তা ও সংযমের দ্বারা গঠিত হয়েছিল আর শেষ অংশ কাপুরুষতা এবং কৃপণতার দ্বারা ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।”[18]

দূর্ভাগ্যবশতঃ এমন কিছু জাতি ছিল যারা মুসলমানদের উত্তরসূরি ছিল, তারা আল্লাহর বিধানকে অবহেলা করত। তারা তাদের রবকে ভুলে গিয়েছিল, তাই তাদের রবও তাদেরকে ভুলে গিয়েছিলেন এবং তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا

“তাদের পর (তাদের অপদার্থ) বংশধররা এলো, তারা নামায বরবাদ করে দিলো এবং (নানা) পাশবিক লালসার অনুসরণ করলো, অতএব অচিরেই তারা (তাদের এ) গোমরাহীর (পরিণাম ফলের) সাক্ষাত পাবে।”[19]

তারা তাদের নফসের অনুসরণ করত এবং তাদের আমলের খারাপগুলোকে তাদের নিকট শোভনীয় করে তোলা হয়েছিল। সহীহ হাদীস থেকে বর্ণিত, রসূল ﷺ বলেন,

“আল্লাহ তা’আলা অপছন্দ করেন প্রতিটি স্বার্থান্বেসী, উদ্ধত ব্যক্তিকে যে বাজারে লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেরায়; রাত্রিতে সে লাশের মত ঘুমিয়ে থাকে এবং দিনের বেলায় থাকে গর্দভের ন্যায় এবং দুনিয়াবি বিষয়ে জ্ঞানী আর আখিরাতের বিষয়ে একদম মূর্খ।”[20]

হারিয়ে যাওয়া অবশ্যপালনীয় কর্তব্যের মধ্যে একটি কর্তব্য হল জিহাদ। কেননা এটি এখন আর মুসলিমদের মধ্যে দেখা যায় না; যেন তারা এখন বন্যার পানিতে ময়লার মত হয়ে গিয়েছে। যে রকমটা মুহাম্মাদ ﷺ বলেছিলেন, “এমন একটি সময় আসবে যখন জাতিগুলো একে অপরকে প্রতিটি অঞ্চল থেকে তোমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য আহ্বান করতে থাকবে, যেভাবে একই পাত্রে রাতের খাবারের খাওয়ার জন্য একে অপরকে আহ্বান করা হয়ে থাকে। একজন ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল যে, ‘এটা কি এই কারণে যে আমরা তখন সংখ্যায় কম হবো?’ তিনি বললেন- ‘না, বরং তোমরা হবে বন্যার পানির ময়লার মতো। আল্লাহ তোমাদের অন্তরের মধ্যে ‘ওয়াহান’ ঢুকিয়ে দেবেন এবং তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে ভয়কে উঠিয়ে নিবেন।’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ‘ওয়াহান’ কি?’ তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা আর মৃত্যুকে ঘৃণা করা (আল্লাহ পথে)।’ অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, “তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং জিহাদের প্রতি ঘৃণা’।”[21]

কাফিরদের বিরুদ্ধে দুই ধরনের জিহাদঃ

১. আক্রমণাত্মক জিহাদ (যেখানে শত্রুকে তার নিজ এলাকায় আক্রমণ করা হয়):

এক্ষেত্রে কাফিররা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য একত্রিত হয় না। এই জিহাদ তখন ফরযে কিফায়া হয়, যার জন্য প্রয়োজন হয় স্বল্প সংখ্যক (যথেষ্ট) মু’মিনদের, যাতে তারা সীমানা রক্ষা এবং কুফ্ফারদের ভূমি আক্রমণ করতে পারে। আল্লাহর (দ্বীনের) শত্রুদের অন্তরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য বছরে অন্তত একবার একটি সৈন্যদলকে শত্রুদের ভূমিতে প্রেরণ করা উচিত। এটি হল ইমামের(খলীফার) দায়িত্ব যে, তিনি বছরে এক অথবা দু’বার জিহাদের উদ্দেশ্যে একটি সৈন্যদল গঠন করবেন এবং তাদেরকে জিহাদের ময়দানে প্রেরণ করবেন। সর্বোপরি, এটি হল মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর একটি দায়িত্ব যে, তারা এই কাজে ইমামকে সহযোগীতা করবে আর তিনি যদি এই সৈন্যদল না প্রেরণ করেন; তাহলে তিনি গুনাহের মধ্যে লিপ্ত হবেন।[22]

এ ধরনের জিহাদের ব্যাপারে আলিমগণ বলেছেন, “আক্রমণাত্মক জিহাদ হল জিযিয়া[23] আদায়ের জন্য।” যে সকল আলিমগণ দ্বীনের শারীয়াহ সম্পর্কে ইলম রাখেন তাঁরাও বলেছেন, “জিহাদ হল এমন একটা দাওয়াহ্ যার মধ্যে শক্তি আছে এবং এটি হল একটি আবশ্যক দায়িত্ব যা সকল সম্ভাব্য উপায়ে বাস্তবায়ন করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সেখানে শুধু মাত্র মুসলিমরা অথবা যারা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে তারাই অবস্থান করে।”[24]

২. আত্মরক্ষামূলক জিহাদঃ

এটি হল আমাদের ভূমি হতে কাফিরদের বের করে দেয়া, যা ফারদ-আ’ইন, অর্থাৎ সবার জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য। সকল প্রকার আবশ্যকীয় কর্তব্য গুলোর মধ্যে এটি হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যদি নিম্নের অবস্থাগুলো দৃষ্ট হয়ঃ

(ক) যদি কাফিররা মুসলিমদের ভূমিতে প্রবেশ করে।

(খ) যদি দু’টি বাহিনী যুদ্ধের ময়দানে মুখোমুখি এসে দাড়ায় এবং একে অপরকে আহ্বান করতে শুরু করে।

(গ) যদি খলিফা কোন ব্যক্তি অথবা জনগণকে আহ্বান জানায় তাহলে অবশ্যই বেরিয়ে পরতে হবে।

(ঘ) যদি কাফিররা মুসলিমদের মধ্য থেকে কিছু মানুষকে বন্দী করে ফেলে।

প্রথম শর্তঃ যদি কাফিররা মুসলিমদের ভূমিতে প্রবেশ করে

সলফে সালেহীনগণ, তাদের উত্তরসূরিগণ, চার মাযহাবের আলিমগণ (মালিকী, হানাফী, শাফেঈ, হাম্বলী), মুহাদ্দিসগণ এবং মুফাসসীরগণ সকলেই এবং ইসলামের ইতিহাসের সকল সময়ে একমত পোষণ করেছেন যে, এই শর্তানুযায়ী জিহাদ র্ফাদ আ’ইন হয়ে যায়। র্ফাদ আ’ইন ঐ সকল মুসলিমদের উপর যাদের ভূমি কাফিররা আক্রমণ করেছে অথবা যারা আক্রান্ত মুসলিম ভূমির কাছাকাছি রয়েছে এরূপ পরিস্থিতিতে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পরার জন্য সন্তানকে তার পিতা-মাতার কাছ থেকে, স্ত্রীকে তার স্বামীর কাছ থেকে, দাসকে তার মনিবের কাছ থেকে এবং দেনাদারকে তার পাওনাদারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ঐ আক্রান্ত অঞ্চলের মুসলমানদের যখন সৈন্যের ঘাটতির কারণে অথবা অক্ষমতা কিংবা গাফলতির কারণে কাফিরদেরকে তাদের ভূমি হতে বিতাড়িত করতে না পারে তখন এই র্ফাদ আ’ইনের হুকুমটি ঐ আক্রান্ত ভূমির নিকটবর্তী মুসলিমদের উপর, তারপর তার নিকটবর্তী মুসলিমদের উপর প্রযোজ্য হবে। আর যদি তাদেরও গাফলতি অথবা জনশক্তির ঘাটতি থাকে তাহলে পরবর্তী অতপর পরবর্তী এলাকার মুসলিমদের উপর এই হুকুম বর্তাতে থাকে; যতক্ষণ পর্যন্ত না এই ঘাটতি পূরণ হয় ততক্ষণ পর্যন্ত এটি চলতে থাকবে এবং এক পর্যায়ে এটি পুরো দুনিয়ার মুসলিমদের উপর র্ফাদ আ’ইন হয়ে যাবে।

এই বিষয়ের উপর শাইখ ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ্) বলেন, “প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ, যার মাধ্যমে আগ্রাসী শত্রুদের (মুসলিমদের ভূমি থেকে) বের করে দেয়া হয়, এটি জিহাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি জিহাদ। সর্বজন স্বীকৃত যে, দ্বীন এবং নিজেদের সম্মান রক্ষা করা হচ্ছে একটি আবশ্যক দায়িত্ব। ঈমান আনার পর প্রথম বাধ্যতামূলক দায়িত্ব হল আগ্রাসী শত্রুদেরকে পার্থিব ও দ্বীনের উপর আগ্রাসনকে প্রতিহত করা। এক্ষেত্রে কোন ওজর-আপত্তি করার কোন সুযোগ নেই; যেমনঃ সরবরাহ অথবা পরিবহন, বরং যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়েই জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে। আলিমগণ, আমাদের সহকর্মীগণ এবং অন্যান্যরাও এ বিষয়ের উপর একমত।”

ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ্) কাজীর বক্তব্যের প্রতি দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, যিনি যানবাহনকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করে বলেছিলেন, “জিহাদ যদি কোন দেশে ‘র্ফাদুল আ’ইন’ হয় তখন হজ্জের ক্ষেত্রে যেমন যানবাহন থাকা জরুরী ঠিক জিহাদের ক্ষেত্রেও যানবাহন থাকা জরুরী (যদি শত্রুদের দূরত্ব সফরের দূরত্বের সমান হয়)।”

ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ্) আরও বলেন, “কাজী হজ্জের সাথে তুলনার ক্ষেত্রে যে কথা বলেছেন তা এর পূর্বে অন্য কেউ বলেনি এবং এটি হচ্ছে একটা দূর্বল উক্তি। জিহাদ হচ্ছে ফারদ্ কারণ এর মাধ্যমে শত্রুদের দ্বারা ক্ষতিকে দূর করতে হয় এবং এই কারণেই এটি হজ্জের উপর অগ্রাধিকার পায়। হজ্জের জন্য কোন যানবাহন অত্যাবশ্যকীয় নয়। জিহাদের ক্ষেত্রকে অনেকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। অন্য একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, উবাদা বিন সামিত (রদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত নাবী ﷺ বলেছেন, ‘মুসলিমদের উপর বাধ্যবাধকতা যে, তাকে শুনতে ও মানতে হবে কঠিন এবং সহজ সময়ে, তার পছন্দ হোক বা অপছন্দ এবং যদিও তার অধিকার তাকে না দেয়া হয়।’ তাই এই আবশ্যক দায়িত্বের একটি খুঁটি হচ্ছে জিহাদে বেরিয়ে পরতে হবে, যদিও আমাদের কঠিন অথবা সহজ সময় হয়। যেভাবে হজ্জের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, র্ফাদ কাজগুলো কঠিনতর সময়গুলোতেও বহাল থাকে। এবং এটা হলো আক্রমণাত্মক জিহাদের বেলায়। কিন্তু প্রতিরোধমূলক জিহাদের ক্ষেত্রে এই র্ফাদ কাজটির প্রয়োজনীয়তা আরও অনেক গুনে বেড়ে যায়। দ্বীন এবং পবিত্র বিষয়গুলো আগ্রাসী শত্রুদের হতে রক্ষা করা হলো র্ফাদ- এক্ষেত্রে সবাই একমত। ঈমান আনার পর প্রথম বাধ্যতামূলক দায়িত্ব হল আগ্রাসী শত্রুদেরকে পার্থিব ও দ্বীনের উপরে আগ্রাসনকে প্রতিহত করা।”[25]

আমরা এখন এ ব্যাপারে ৪ মাযহাবের মতামত দেখবো যারা সবাই এ বিষয়ে একমত ছিলেন।

মাযহাব গুলোর মতামত সমূহঃ

হানাফি[26] মাযহাবঃ

ইবন আবেদীন[27] বলেছেন[28], “যদি শত্রুরা মুসলিমদের সীমানায় আক্রমণ চালায় এমতাবস্থায় জিহাদ করা র্ফাদ আ’ইন হয়ে যায় এবং এই র্ফাদ আ’ইন হয় তাদের উপর যারা ঐ আক্রান্ত এলাকার নিকটে অবস্থান করছে। যদি নিকটবর্তীদের সাহায্যের প্রয়োজন না হয়, তাহলে আক্রান্ত এলাকা হতে যারা দূরে অবস্থান করছে তাদের জন্য এটি র্ফাদ কিফায়া। আর যদি তাদের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে তাহলে তাদের পরবর্তী নিকটবর্তী যারা আছে তাদের উপর এটি র্ফাদ আ’ইন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে হতে পারে যে, সীমান্তবর্তী এলাকার মুসলিমদের প্রচেষ্টায় শত্রুরা প্রতিহত হচ্ছে না অথবা, তারা অলসতায় বসে আছে অথবা জিহাদ করছে না। তাহলে এটি তাদের পরবর্তী নিকটবর্তী মুসলিমদের উপর ফারদ্ আ’ইন হয়ে যাবে; ঠিক যে রকমভাবে তাদের উপর সলাত ও সিয়াম ফারদ্। এই হুকুমকে পরিত্যাগ করার তাদের কোনই সুযোগ নেই। যদি তারাও অক্ষম হয়ে পরে তাহলে এটি র্ফাদ আ’ইন হবে পরবর্তী নিকটবর্তীদের উপর এবং এই পদ্ধতি অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত পুরো মুসলিম উম্মাহের উপর র্ফাদ আ’ইন হয়ে যায়।”

আল কাসানি[29][30], ইবনে নাজিম[31][32], ইবনে হাম্মাম[33][34]-এর পক্ষ থেকেও ঠিক একই ফাতওয়া দেয়া হয়েছে।

মালিকী ফিকহ[35]:

হাশিয়াত আদ দুসুকী-তে[36] বলা হয়েছে যে, “জিহাদ র্ফাদ আ’ইন হয় তখন, যখন শত্রুপক্ষ হতে আকস্মিক আক্রমণ করা হয়।”

দুস্সুকী বলেন, “যখন এমনটি ঘটে তখন প্রত্যেকের উপর জিহাদ র্ফাদ আ’ইন হয়ে যায়। এমনকি মহিলা, শিশু, দাস-দাসীদের উপরও যদিও তারা তাদের অভিভাবক, স্বামী অথবা ঋণদাতার পক্ষ হতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।”[37]

শাফেঈ মাযহাব[38]:

রামলী[39] লিখিত ‘নিহায়াত আল মাহতাজ’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, “যদি তারা (কাফিররা) আমাদের ভূমিতে আক্রমণ চালায় এবং তাদের ও আমাদের মধ্যকার দূরত্ব হয় যতটুকু দূরত্বে সফর সলাতের বিধান রয়েছে তা অপেক্ষা কম, তাহলে ঐ ভূমির মুসলিমদের উপর তাদের ভূমিকে রক্ষা করা র্ফাদ আ’ইন হয়ে যায়। এমনকি এটি তাদের উপরেও ফারদ্ আ’ইন হয়ে যায়, যাদের উপরে কোন জিহাদ নেই, যেমনঃ মহিলা, শিশু, দাস-দাসী, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।”[40]

হাম্বলী[41] মাযহাবঃ

ইবনে আল কুদামা[42] লিখিত কিতাব ‘আল-মুঘনি’-তে তিনি বলেছেন, “জিহাদ তিনটি অবস্থায় র্ফাদ আ’ইন হয়ে যায়ঃ

১. যদি উভয় পক্ষ যুদ্ধে মিলিত হয় এবং একে অপরের মুখোমুখি হয়।

২. যদি কাফিররা কোন মুসলিমদের ভূমিতে প্রবেশ করে, তখন সেখানকার মুসলিমদের উপর জিহাদ র্ফাদ আ’ইন হয়।

৩. যদি ইমাম অথবা খলিফা মুসলিমদেরকে অগ্রসর হওয়ার জন্য আদেশ দেন, তখন তাদের উপর এটি র্ফাদ আ’ইন হয়ে যায়।”[43]

এবং ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ্)-এর উক্তি, “এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যদি কোন শত্রু মুসলিম ভূমিতে প্রবেশ করে তবে ঐ ভূমির নিকটবর্তীদের, অতঃপর নিকটবর্তীদের উপর তাদেরকে বহিষ্কার করা র্ফাদ আ’ইন হয়ে যায় কারণ, মুসলিমদের ভূমিসমূহ হল একটি ভূমির মত। তাই এক্ষেত্রে জিহাদে বের হওয়ার জন্য পিতা-মাতা অথবা ঋণদাতার কাছ থেকে অনুমতি ব্যতীতই অগ্রসর হওয়া হল র্ফাদ। এবং বর্ণনাগুলো আহমদ হতে এসেছে এবং তিনি এ বিষয়ের সাথে একমত পোষণ করেছেন।”[44]

এই পরিস্থিতিটি সাধারণ অভিযান নামে পরিচিত।

সাধারণ অভিযানের দলিল সমূহ এবং এর সমর্থনঃ

১) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন,

انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ

“অভিযানে বাহির হয়ে পড় হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারী এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে।”[45]

যারা সম্মুখ অভিযানে বের না হবে, আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য চরম শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন এবং তাদেরকে অন্য জাতি দ্বারা স্থলাভিষিক্ত করে দিবেন যারা ইসলামের সত্যিকার বাহক হবে -এটি হল তাদের প্রতিদান স্বরূপ; এবং এ রকম আরেকটি আয়াত পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ শুধুমাত্র তাদেরকেই শাস্তি দিবেন যারা তাদের র্ফাদ সমূহকে পরিত্যাগ করেছে এবং হারাম কাজে লিপ্ত থেকেছে। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন,

إِلا تَنْفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلا تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

“যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে তিনি তোমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দান করবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।”[46]

ইবনে কাছির[47] (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন, “আল্লাহ তা’য়ালা আদেশ দিয়েছিলেন যে, প্রত্যেককেই যেন আল্লাহর রসূল ﷺ-এর সাথে তাবুক যুদ্ধে শত্রুদের (যারা রোমানের আহলে কিতাব ছিল) সাথে যুদ্ধ করার জন্য অভিযানে বের হয়ে পরে।”

ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ্ বুখারী শরীফের ‘সম্মুখ অভিযানের শর্ত ও জিহাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় এবং এর জন্য নিয়্যত’ নামক অধ্যায়ে এই আয়াতটিতে (সূরা তাওবাহ্ঃ ৩৯) উল্লেখ করেছেন। তাবুকের যুদ্ধের এই আদেশ ছিল সর্ব সাধারণের জন্য কেননা মুসলিমরা জানতে পেরেছিল যে, রোমানরা আরব উপদ্বীপের সীমানাগুলোতে জমা হচ্ছে এবং তারা মদিনা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাহলে তখন কি করা উচিত যখন কাফিররা মুসলিমদের ভূমির ভিতরে প্রবেশ করেছে; ঐ মুহুর্তে সম্মুখে অভিযান চালানো কি আরো বেশি অগ্রাধিকার পায় না?

আবু তালহা (রদিআল্লাহু আনহু) এই আয়াতটি সম্পর্কে (সূরা তাওবাহ্ঃ ৩৯) বলেন আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনে, “…হালকা অথবা ভারী…” দ্বারা বুঝিয়েছেন যে, “তিনি বৃদ্ধ অথবা যুবক কারও অযুহাত শুনবেন না।”[48]

হাসান-আল-বসরী[49] বলেন, “কঠিন অথবা সহজ অবস্থায়।”

ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ্) বলেন, “যদি শত্রুরা মুসলিমদের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি নেয়, তখন আক্রান্ত মুসলিমদের উপর ঐ সকল শত্রুদেরকে বহিষ্কার করা র্ফাদ হয়ে যায়। ঠিক একইভাবে, যে সকল মুসলিমরা আক্রান্ত হয়নি তাদের উপরও এটি ফারদ্। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ آَمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَوَوْا وَنَصَرُوا أُولَئِكَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَلَمْ يُهَاجِرُوا مَا لَكُمْ مِنْ وَلايَتِهِمْ مِنْ شَيْءٍ حَتَّى يُهَاجِرُوا وَإِنِ اسْتَنْصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ إِلا عَلَى قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

“…আর দ্বীন সম্বন্ধে যদি তারা তোমাদের সাহায্য প্রার্থনা করে তবে তাদেরকে সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য…।”[50]

এজন্যই রসূল ﷺ আদেশ দিয়েছেন যে, মুসলিমদের সহযোগীতা করার জন্য যখন তাদের প্রয়োজন হয়। এতে কেউ বেতনভুক্ত যোদ্ধা হোক বা না হোক, এবং এটাও দেখার বিষয় নয় যে তার ক্ষমতা কতটুকু আছে, বরং এটি সবার উপরে র্ফাদ যে, প্রত্যেকে তার জান ও মাল দিয়ে, সংখ্যায় অল্প হোক অথবা বেশী, যানবাহনে চড়ে হোক অথবা পায়ে হেঁটে তাদের সাহায্য করবে। আর এ কারণেই, আহযাব-এর যুদ্ধে যখন শত্রুরা মদিনা আক্রমণ করেছিল, তখন আল্লাহ তা’য়ালা কাউকে এ দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেননি।[51]

আয্ যুহুরী[52] (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,

“সাইয়্যিদ ইবনুল মুসাইয়্যিব[53] একচোখ অন্ধ অবস্থায় জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তখন লোকেরা তাকে বলল, ‘আপনি তো ওযর প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত।’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘আল্লাহ বৃদ্ধ ও যুবক উভয়কেই জিহাদে বের হওয়ার আদেশ করেছেন। আমার পক্ষে যদি যুদ্ধ করা সম্ভব নাও হয় অন্তত মুজাহিদদের সংখ্যা তো বৃদ্ধি করতে পারবো অথবা তাদের মালের দেখাশোনা করতে পারবো।’”[54]

২) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন,

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ

“…এবং তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করবে যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে এবং জেনে রাখ আল্লাহ তো মুত্তাকীদের[55] সাথে আছেন।”[56]

ইবন আল আরাবী[57] বলেন, “এখানে ‘সর্বাত্মকভাবে’ বলতে বুঝানো হয়েছে যে, তাদেরকে প্রত্যেক দিক হতে অবরুদ্ধ করতে হবে এবং সকল সম্ভাব্য অবস্থানে।”[58]

৩) আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

“এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত না হয়…।”[59]

এখানে ফিতনা বলতে শির্ককে বুঝানো হয়েছে। যেভাবে ইবনে আব্বাস[60] (রদিআল্লাহু আনহু) এবং সুদ্দী[61] (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন, “যখন কাফিররা (মুসলিমদের) কোন ভূমিতে আক্রমণ করে এবং তা দখল করে নেয়, তখন পুরো উম্মাহ তাদের দ্বীনের ক্ষেত্রে বিপদে পতিত হয় এবং তাদের ঈমানের মধ্যে সন্দেহ অনুপ্রবেশ করবে। তাই ঐ মুহুর্তে তাদের জান, মাল, ইজ্জত এবং দ্বীনকে রক্ষা করার জন্য জিহাদ করা বাধ্যতামূলক দায়িত্ব হয়ে পড়ে।”[62]

৪) নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ফাতহে মক্কার পর আর কোন হিজরত[63] নেই, কিন্তু অবশিষ্ট থাকবে শুধু জিহাদ এবং নিয়্যত। তাই যদি তোমাদেরকে অভিযানে অগ্রসর হতে বলা হয় তখন তোমরা অগ্রসর হবে।”[64]

“যখন শত্রুরা মুসলিমদের উপর আক্রমণ করছে, এইরূপ পরিস্থিতিতে যদি উম্মাহকে সাধারণ অভিযানের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন উম্মাহর উপর এটি বাধ্যতামূলক হয়ে যায় যে, তারা এ অভিযানে অংশগ্রহণ করবে। উম্মাহকে তাদের দ্বীন প্রতিরোধ করার জন্যই অগ্রসর হতে হবে। এই বাধ্যতামূলক দায়িত্বের সীমা রেখা মুসলিমদের প্রয়োজন এবং ইমামের দাবী অনুযায়ী নির্ভর করে।” এভাবেই ইবনে হাজার[65] (রহিমাহুল্লাহ) এই হাদিসটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

আল-কুরতুবী[66] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “যে কেউ যদি শত্রুর সামনে মুসলিমদের দূর্বলতার ব্যাপারে জ্ঞাত হন, এবং জানেন যে, তিনি আক্রান্তদের নিকট পৌছাতে পারবেন এবং তাদেরকে সাহায্য করতে পারবেন তাহলে তাদের উপরও সম্মুখে অগ্রসর হওয়া বর্তায়।”[67]

৫) প্রত্যেকটি দ্বীন যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার’র পক্ষ হতে নাযিল করা হয়েছে, তা ৫টি প্রয়োজনীয় বিষয়কে হিফাজতের নিশ্চয়তা দেয়ঃ দ্বীন, জান, মাল, ইজ্জত এবং নফস। অতএব, যেকোন ভাবেই হোক এই ৫টি প্রয়োজনীয় বিষয়কে অবশ্যই হিফাজত করতে হবে। আর তাই আগ্রাসী[68] শত্রুদের বিতাড়িত করার জন্য ইসলাম আদেশ করেছে।

আগ্রাসী হল সেই ব্যক্তি যে, অন্যের উপর জোর পূর্বক নিজের ক্ষমতাকে চাপিয়ে দেয় তাদেরকে হত্যা করার জন্য, তাদের সম্পদ এবং ভূমিকে কুক্ষিগত করার জন্য।

(ক) ইজ্জতের উপর আগ্রাসী শক্তিঃ এমনকি যদি কোন মুসলিমও কারো ইজ্জতের উপর আগ্রাসন চালায়, তাহলে তা প্রতিরোধ করা তার উপর বাধ্যতামূলক যদিও এর জন্য তাকে হত্যা করা হয়, এ বিষয়ের উপর সকল আলিমগণ একমত পোষণ করেছেন। অনুরূপভাবে, এ বিষয়েও আলিমগণ একমত পোষণ করেছেন যে, কোন মুসলিম মহিলার[69] জন্য অনুমোদিত নয় যে, সে নিজেকে কুফ্ফারদের নিকট আত্মসমর্পণ করে দিবে অথবা তাকে বন্দী করার সুযোগ করে দিবে, যদিও তাকে হত্যা করা হয় অথবা তার ইজ্জত হরণের আশংকা থাকে।

(খ) জান ও মালের উপর আগ্রাসী শক্তিঃ অধিকাংশ আলিমগণের রায় যে, যদি আগ্রাসী শক্তি আক্রমণ করে জান অথবা মালের উপর তাহলে তাদেরকে সর্ব শক্তি দিয়ে বিতাড়িত করা হচ্ছে বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে মালিকী ও শাফেঈ মাযহাবের মত হচ্ছে, আগ্রাসী শক্তি যদি মুসলিমও হয় তবুও তাকে হত্যা করা বৈধ। সহীহ হাদীসে[70] বর্ণিত রয়েছে, “যে তার মাল রক্ষার জন্য হত্যা হয় সে শহীদ, যে তার জান রক্ষার জন্য হত্যা হয় সে শহীদ, যে তার পরিবার রক্ষার জন্য হত্যা হয় সে শহীদ।”[71]

আল-জাস্সাস[72] (রহিমাহুল্লাহ্) এই হাদীস সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর বলেছেন, “আমরা এই বিষয়ে কোন প্রকারের দ্বিমত পাইনি যে, যদি কোন ব্যক্তি অন্য কারোর উপর অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য অস্ত্র ধারণ করে, তাহলে মুসলিমদের বাধ্যতামূলক দায়িত্ব হল তারা ঐ আগ্রাসী ব্যক্তিকে হত্যা করবে।”[73]

এমতাবস্থায় ঐ আগ্রাসী ব্যক্তি যদি মারা যায়, তাহলে জাহান্নামে যাবে, যদিও সে মুসলিম হয়। একইভাবেই আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মারা যায়, তাহলে সে শহীদ। এটা হল ইসলামের রায় একজন মুসলিম আগ্রাসীর ক্ষেত্রে, তাহলে এটা কিভাবে মেনে নেয়া যায় যে, কাফিররা মুসলিমদের ভূমির উপর আক্রমণ করবে এবং নির্যাতন ও অপমান করবে দ্বীনকে, ভূমিকে এবং ক্ষতি করতে থাকবে জান ও মালের যতক্ষণ না তা নিশ্চিহ্ন হয়ে পরে? এ পরিস্থিতিতে মুসলিমদের উপর এটি কি সর্বাগ্রে বাধ্যতামূলক দায়িত্ব হয়ে পরে না যে, মুসলিমরা কাফিরদেরকে বহিষ্কার করবে তাতে যদি সে একা হয় অথবা পুরো মুসলিম জাতি একত্রিত হতে হয়।

৬) যদি কাফিররা কোন মুসলিম বন্দীদেরকে তাদের কোন মুসলিম ভূমি দখলের অভিযানের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে, তখন ঐ কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বাধ্যতামূলক, যদিও এতে ঐ মুসলিম বন্দীদের নিহত হতে হয়।

ইবনে তাইমিয়্যাহ[74] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “যদি কাফিরদের সাথে মুসলিমদের সৎকর্মশীল কোন ব্যক্তি থাকে, যিনি মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি; কিন্তু তাঁকে (সৎকর্মশীল মুসলিম) হত্যা করা ব্যতীত যদি কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করা সম্ভব না হয় তাহলে ঐ পরিস্থিতিতে তাঁকে হত্যা করা বৈধ। নেতৃত্ব স্থানীয় আলিমগণ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে, যদি কাফিররা মুসলিম বন্দীদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে এবং এ কারণে আশংকা হয় বাকি মুসলিমরা তাদের (কাফিরদের) সাথে যুদ্ধ করতে পারবে না, তাহলে তখন এটি অনুমোদিত যে কাফিরদের লক্ষ্য করে তীর ছোড়া হবে যদিও এতে মুসলিমরা নিহত হয়। আলিমগণের মধ্যে একজন বলেছেন, যদি সমস্ত মুসলিমদের ক্ষতির আশংকা নাও থাকে সেক্ষেত্রেও ঐ পরিস্থিতিতে মুসলিম বন্দীকে লক্ষ্য করে তীর ছোড়া বৈধ। তিনি আরও বলেছেন, সুন্নাহ এবং ইজমা (আলিমগণের ঐক্যমত) হচ্ছে যদি আগ্রাসী হয় মুসলিম এবং তার আগ্রাসনকে কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে যা একমাত্র তাকে হত্যা করা ছাড়া, তখন তাকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে। যদিও তার আগ্রাসন এক দিনারের ভগ্নাংশ পরিমাণ হয়। এটি এ জন্য যে সহীহ হাদীসে এসেছে, রসূল ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মাল রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ।’”

এটি এ একারণে যে, অবশিষ্ট সমস্ত মুসলিমীনদেরকে র্শিক এবং ফিতনা থেকে বাঁচানো, তাদের দ্বীন, ইজ্জত এবং সম্পদ-কে রক্ষা করা অল্প সংখ্যক মুসলিম বন্দীদেরকে কাফিরদের নিকট থেকে রক্ষা করার চেয়ে অগ্রাধিকার পায়।

৭) বিদ্রোহী মুসলিম গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাঃ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন,

وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ

“মু’মিনদের দু’টি দল যদি নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে বসে, তখন তোমরা উভয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে, অতপর তাদের একদল যদি আরেক দলের উপর জুলুম করে, তাহলে যে দলটি জুলুম করছে তার বিরুদ্ধেই তোমরা লড়াই করো যতক্ষণ পর্যন্ত সে দলটি (সম্পূর্ণরূপে) আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে না আসে, (হ্যাঁ, একবার) যদি সে দলটি (আল্লাহর হুকুমের দিকে) ফিরে আসে তখন তোমরা দু’টি দলের মাঝে ন্যায় ও ইনসাফের সাথে মীমাংসা করে দেবে এবং তোমরা ন্যায়বিচার করবে; অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা ন্যায়বিচারকদের ভালোবাসেন।”[75]

যদি মুসলিমদের দ্বীন, ইজ্জত, সম্পদ রক্ষার জন্য এবং মুসলিমদের মধ্যে একতা বজায় রাখার জন্য বিদ্রোহী মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আল্লাহ তা’আলার তরফ হতে আদেশ হয়, তাহলে আগ্রাসী কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কি আরও বেশি অগ্রাধিকার পায় না?

৮) যদি মুসলিমদের মধ্যে থেকে কোন ব্যক্তি যুদ্ধ করে তার ক্ষেত্রে হুকুমঃ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন,

إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ

“যারা আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং (আল্লাহর) জমীনে বিপর্যয় সৃষ্টির অপচেষ্টা করে, তাদের জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদের হত্যা করা হবে কিংবা তাদের শূলবিদ্ধ করা হবে, অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হবে, কিংবা দেশ থেকে তাদের নির্বাসিত করা হবে; এই অপমানজনক শাস্তি তাদের দুনিয়ার জীবনের (জন্য, তাছাড়া) পরকালে তাদের জন্যে ভয়াবহ আযাব তো রয়েছেই।”[76]

এই হুকুমটি প্রযোজ্য হবে ঐ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে মুসলিমদের মধ্যে যুদ্ধ চালায়। সে জমীনের উপর দুর্দশা এবং বিশৃঙ্খলা ছড়ায় এবং সম্পদ ও সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করে। রসূল ﷺ উক্ত শাস্তি বাস্তবায়ন করেছিলেন মুরতাদ হয়ে যাওয়া কিছু বেদুঈনদের উপর। উক্ত ঘটনা বুখারী[77] এবং মুসলিমে[78][79] বর্ণিত হয়েছে। তাহলে ঐ সকল কাফির জাতির বিরুদ্ধে কি শাস্তি হওয়া উচিত যারা মুসলিমদের জনজীবনে বিপর্যয় নিয়ে আসছে এবং তাদের দ্বীন, ইজ্জত এবং সম্পদকে নষ্ট করছে? ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই কি মুসলিমদের প্রথম দায়িত্ব নয়?

এই হল কিছু কারণ এবং দলীল যা প্রমাণ করে যে, যখনই কাফির শত্রুরা মুসলিম ভূমিতে প্রবেশ করবে, তখন মুসলিমদের সাধারণ অভিযানে বের হওয়া উচিত।

“ঈমান আনার পরে সর্ব প্রথম ফারদ্ কর্তব্য হচ্ছে আগ্রাসী শত্রু বাহিনীকে মুসলিম ভূমি থেকে বিতাড়িত করা, যারা মুসলিমদের দ্বীন এবং দুনিয়াবি কোন বিষয়ের উপর আক্রমণ চালায়।”[80]

[ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ্)]

২য় অধ্যায়ঃ ফিলিস্তীন ও আফগানিস্তানে জিহাদের হুকুম

وَمَا لَكُمْ لا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا

“তোমাদের এ কি হয়েছে, তোমরা আল্লাহর পথে সেসব অসহায় নর-নারী ও (দুস্থ) শিশু সন্তানদের (বাঁচাবার) জন্যে জিহাদ করো না, যারা (নির্যাতনে কাতর হয়ে) ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের মালিক! আমাদের জালিমদের এই জনপদ থেকে বের করে (অন্য কোথাও) নিয়ে যাও, অতপর তুমি আমাদের জন্যে তোমার কাছ থেকে একজন অভিভাবক (পাঠিয়ে) দাও, তোমার কাছ থেকে আমাদের জন্যে একজন সাহায্যকারী পাঠাও!”[81]

পূর্ববর্তী অধ্যায়গুলোতে এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে যে, যদি কাফিররা মুসলিমদের এক বিঘত জায়গাও দখল করে তবে, তখন ওই জায়গার এবং তার নিকটবর্তী জায়গার মানুষদের উপর জিহাদ ফারদ্ আ’ইন (প্রত্যেকের উপর ফরজ) হয়ে যায়। যদি তারা অস্ত্রের অভাবে অথবা অলসতার কারণে কাফিরদের বের করতে সক্ষম না হয়, তখন জিহাদের এই দায়িত্বটি তার পার্শ্ববর্তী মুসলিমদের উপর বর্তায়, এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে এটি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত মুসলিমদের উপর জিহাদ করা র্ফাদ আ’ইন হয়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে স্ত্রীর জন্য স্বামীর নিকট থেকে, সন্তানের জন্য পিতামাতার নিকট থেকে, ঋণ গ্রহীতার জন্য ঋণদাতা থেকে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।

যদি এক বিঘত পরিমাণের জায়গাও যা এক সময় মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তা কাফিররা দখল করে নেয়। তাহলে সেই জায়গাটুকু যতদিন পর্যন্ত পুনর্দখল না করা হবে ততদিন পর্যন্ত সকল মুসলিমদের ঘাড়ের উপর এই গুনাহের বোঝা ঝুলতে থাকবে।

এই গুনাহ-এর পরিমাণ একজনের ক্ষমতা অথবা সামর্থ্যরে ভিত্তিতে হবে। মুসলিমদের আলিমগণ, নেতাগণ এবং দা’য়ীগণ যারা সমাজে সুপরিচিত, তাদের গুনাহ্ সাধারণ জনগণের চেয়ে অনেক বেশি হবে।

বর্তমানে আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, কাশ্মীর, লেবানন, চাঁদ, ভারত, ইরাক ইত্যাদি অঞ্চলগুলিতে জিহাদের উদ্দেশ্যে গমন না করা হবে ঐ সকল পূর্বপুরুষদের চেয়েও বড় গুনাহ্, যারা তাদের জীবদ্দশায় এই অঞ্চলগুলোকে কাফিরদের দখল থেকে মুক্ত করেনি। বর্তমানে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনের প্রতি কারণ এখানে সমস্যা বিকট আকার ধারণ করেছে। অধিকন্তু আমাদের শত্রুরা অনেক বেশি ধোঁকাবাজ এবং তারা এই এলাকায় ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সিদ্ধ হস্ত। আমরা যদি এই সমস্যা সমাধান করতে পারতাম তাহলে আমাদের অনেক জটিলতাই কমে যেত। এই অঞ্চল দুটিকে রক্ষা মানে হচ্ছে পুরো উম্মাহকে রক্ষা করা।

আফগানিস্তান থেকে শুরুঃ

আরবদের মধ্য থেকে যার পক্ষে ফিলিস্তিনে জিহাদ করা সম্ভব তার অবশ্যই সেখানে জিহাদ শুরু করা উচিত। যদি তা তার পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই তার আফগানিস্তানে শুরু করা উচিত।

আমি মনে করি, বাকী সমস্ত মুসলিমদের উচিত আফগানিস্তান থেকে জিহাদ শুরু করা উচিত। আমাদের মত হচ্ছে, ফিলিস্তিনের পূর্বে আফগানিস্তানে জিহাদ শুরু করা উচিত। এটি অবশ্যই এই কারণে নয় যে, আফগানিস্তান ফিলিস্তিনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বরং ফিলিস্তিনের সমস্যাটা বড় ধরণের সমস্যা। এটি ইসলামী বিশ্বের হৃৎপিণ্ড এবং এটি হচ্ছে একটি বরকতময় ভূমি, কিন্তু কিছু কিছু নির্দিষ্ট কারণে আফগানিস্তান থেকে জিহাদ শুরু করা উচিতঃ

১. আফগানিস্তানের জিহাদ ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে ধাবমান হচ্ছে; যেমনঃ হিন্দুকুশ পর্বতমালায় মুজাহিদীনদের সফলতাই হচ্ছে এই ব্যাপারে সাক্ষী যার উদাহরণ নিকট অতীতে ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় না।

২. আফগানিস্তানের জিহাদে যে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে তা সুস্পষ্ট এবং তার ভিত্তি হচ্ছেঃ ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্’’ এবং এই জিহাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘আল্লাহর কালিমাকে সবচেয়ে উঁচু করা’। আফগান ইসলামিক ইউনিয়ন এর সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে আছে “আমাদের একতার লক্ষ্য হচ্ছে আফগানিস্তানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।” তৃতীয় অনুচ্ছেদে আছে, “আমাদের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে আল্লাহর বাণী ‘…বিধান দিবার অধিকার কেবল আল্লাহরই…’ [সূরা ইউসূফঃ ৪০] থেকে।” অর্থাৎ শাসন-কর্তৃত্ব চলবে শুধুমাত্র বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের।

৩. প্রথম থেকেই মুসলিমরা আফগানিস্তানের জিহাদকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে, যারা বর্তমানে আফগানিস্তানে জিহাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলনের সন্তান, আলিম এবং কুরআনের ক্বারী। অথচ ফিলিস্তিনের নেতৃত্বের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের লোক বিদ্যমান, তাদের মধ্যে রয়েছে একনিষ্ঠ মুসলিম, কম্যুনিস্ট, জাতীয়তাবাদী, মডার্ন মুসলিম। তারা মিলিত হয়ে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ পতাকা উত্তোলন করে আছে।

৪. আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত মুজাহিদীনদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাফির দেশগুলো থেকে সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছে, যেখানে ফিলিস্তিন সম্পূর্ণভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল, যারা ফিলিস্তিনের জরুরী প্রয়োজনের সময় সাহায্য বন্ধ করে রাখে। তারা আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সময় নিজেদের চেহারা লুকিয়ে রাখে। সেখানের পরিস্থিতি শক্তিশালী দেশগুলোর খেলার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এই দেশগুলো মুসলিমের ভূমি, জনগণ, ইজ্জত নিয়ে জুয়া খেলছে এবং ক্ষতি করছে, যাতে ফিলিস্তিনের সামরিক শক্তি শেষ হয়ে যায়।

৫. আফগানিস্তানের তিন হাজার কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমানা বিদ্যমান এবং এখানের গোত্রগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, এটা মুজাহিদীনদের জন্য নিজেকে রক্ষা করার বর্মের মত। অথচ ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। সীমানাগুলি বন্ধ, মুসলিমদের হাতগুলি বন্ধ এবং প্রশাসনের গোয়েন্দারা সর্বক্ষণ গোয়েন্দাগিরি করছে, যাতে কেউ সীমানা লঙ্ঘন করে ইহুদীদের হত্যা করতে না পারে।

ইমাম আশ-শাফিঈ[82] (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেনঃ “যদি এমন কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যেখানে বিভিন্ন ধরণের শত্রু বিদ্যমান, এক শত্রু আর এক শত্রুর তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী তখন ইমামের উচিত সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী শত্রুর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। যদি ইমামের অবস্থান অনেক দূরে হয় তবুও এটি গ্রহণযোগ্য। এটি এই কারণে, ইহা প্রমাণিত হবে যে, আল্লাহর ইচ্ছায় তুমি ভীত নয় এবং যেন অন্যের জন্য অনুসরণযোগ্য উদাহরণ হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রয়োজনীয় ভিত্তিতে নেয়া যেতে পারে, যা প্রয়োজনের সময় জায়েয তা হয়তো অন্য সময়ে জায়েয নয়, এই ধরণের পরিস্থিতি রসূল ﷺ এর সময়ে ঘটেছিল যখন তিনি ﷺ শুনলেন হারিস আবি দিরার তাঁর (ﷺ) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য জড় হচ্ছে। তখন তিনি (ﷺ) হারিসের চেয়ে নিকটবর্তী শত্রু থাকা সত্ত্বেও হারিসকে আক্রমণ করলেন। অধিকন্তু তিনি খবর পেলেন খালিদ বিন আবি সুগলান বিন সুহ তাঁর (ﷺ)-এর বিরুদ্ধে শক্তি জড় করছে, তখন তিনি ইবনু আন্নিসকে পাঠালেন হত্যা করার জন্য, যদিও তার চাইতে নিকটবর্তী শত্রু বিদ্যমান ছিল।”

৬. আফগানিস্তানের মানুষ তাদের শক্তি এবং গর্বের ব্যাপারে বিখ্যাত, মনে হয় যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এখানের পাহাড় এবং ভূমিকে জিহাদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন।

৩য় অধ্যায়ঃ র্ফাদুল আ’ইন ও র্ফাদুল কিফায়া

لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيبًا وَسَفَرًا قَاصِدًا لاتَّبَعُوكَ وَلَكِنْ بَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُ وَسَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَوِ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْ يُهْلِكُونَ أَنْفُسَهُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ

“(হে নাবী, এতে) যদি আশু কোন লাভ থাকতো, হতো যদি (তাদের এ) সফর সহজ সুগম, তাহলে তারা অবশ্যই (এ অভিযানে) তোমার পিছনে পিছনে যেতো, কিন্তু তাদের জন্যে এ যাত্রাপথ অনেক দীর্ঘ (ও দুর্গম) ঠেকেছে; তারা অচিরেই আল্লাহর নামে (তোমার কাছে) কসম করে বলবে, আমরা যদি সক্ষম হতাম তাহলে অবশ্যই তোমার সাথে (অভিযানে) বের হতাম, (মিথ্যা অজুহাতে) তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছে, আল্লাহ তা’আলা জানেন, এরা হচ্ছে মিথ্যাবাদী।”[83]

ফার্দুল আ’ইনঃ

এটি হচ্ছে র্ফাদ, যা প্রত্যেক মুসলিমের পালন করা বাধ্যতামূলক। যেমনঃ সলাত, সিয়াম।

ফার্দুল কিফায়াঃ

এটি এমন এক দায়িত্ব, যদি কিছু ব্যক্তি তা পালন করে তাহলে বাকি সবাই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়। ফার্দুল কিফায়া মানে হচ্ছে, যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তি এই দায়িত্ব পালন না করে তাহলে সবাই গুনাহগার হয়ে যাবে। যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তি দায়িত্ব পালনে সাড়া দেয়, তাহলে বাকি সবাই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। প্রাথমিক অবস্থায় ফার্দুল কিফায়ার দিকে আহবান এবং ফার্দুল আ’ইনের দিকে আহবানের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। পার্থক্য এতটুকুই যে, ফার্দুল কিফায়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তি যোগাড় হয়ে গেলে বাকী সবাই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায় অথচ ফার্দুল আ’ইনের ক্ষেত্রে যত অধিক সংখ্যক ব্যক্তি সাড়া দিক না কেন বাকী সবাই দায়িত্বমুক্ত হয় না[84]

এজন্য ফাখর আর-রাজি[85] ফার্দুল কিফায়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “এই দায়িত্ব পালন করার সময় দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তির দিকে তাকানো হয় না[86]।”

ইমাম আস-শাফেয়ী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ফার্দুল কিফায়ার হুকুমটি প্রত্যেক ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করেই করা হয় অথচ প্রয়োজন হচ্ছে কিছু সংখ্যক ব্যক্তির সাড়া দেয়া।”[87]

অধিকাংশ আলিমগণ এই সংজ্ঞার উপর একমত পোষণ করেছেন ইবনে হাজিব[88], আল-আমদি[89] এবং ইবনে আব্দুস সাকুর। তারা বলেছেন ফার্দুল কিফায়ার হুকুমটি প্রত্যেকের উপর করা হয়, কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক দায়িত্বটি পালন করলে বাকী সবাই দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যায়। মানুষ বর্তমানে জিহাদের হুকুম নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে, তারা মনে করে ইহা বর্তমানে ফার্দুল কিফায়া অর্থাৎ যদি কিছু ব্যক্তি দায়িত্বটি পালন করে তাহলে বাকি সবাই দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাবে। এই মত অনুসারে আফগানিস্তানে জিহাদ করা হচ্ছে ফার্দুল কিফায়া।

উপরন্তু, আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ান ও কমিউনিস্টদের বের করা পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিমের উপর বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রয়োজনীয় সংখ্যক মুসলিম সাড়া দেয়। কমিউনিস্টদেরকে সম্পূর্ণরূপে বহিষ্কার করার পরই এই দায়িত্ব পালন না করার গুনাহ থেকে সবাই মুক্ত হবে এটি এই কারণে যে, যখনই কাফিররা আক্রমণ করবে তখন ওদেরকে বহিষ্কার করা বাধ্যতামূলক। এবং এই কাফিরদের মুসলিম ভূমি থেকে বহিষ্কার করা পর্যন্ত এই দায়িত্ব বহাল থাকে।কিছু লোক অনেক দূর থেকে মন্তব্য করে, “আফগানিস্তানের জিহাদে শুধু টাকার প্রয়োজন মানুষের প্রয়োজন নাই।” এই কথাটি সত্য নয়, কারণ ছয় বছর ধরে আফগানিস্তানে রাশিয়ান আগ্রাসনের সময় দেশের বাইরে পঞ্চাশ লক্ষ শরণার্থী, দেশের ভেতরে সত্তর লক্ষ শরণার্থী এবং আরও কিছু ছিল পাহাড়ে ও জঙ্গলে। ওই ব্যক্তির কথার জবাবে এই পরিস্থিতি উল্লেখ করাই যথেষ্ট।

সাইয়াফ বলেছেন, “চৌদ্দটি দেশ যার মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়ন, তারা সকলে মিলে ওয়ারসো (WARSAW) চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিস্টদের অনুসরণ করছে, তারা একত্রিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে অথচ মুসলিম বিশ্ব এখনও তর্ক করছে যে, আফগানিস্তানে জিহাদ করা কি ফার্দুল আ’ইন নাকি ফার্দুল কিফায়া?”

সুতরাং প্রতিটি ব্যক্তি শহীদ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত মুসলিমরা অপেক্ষা করুক তখন তাদের বিশ্বাস হবে যে, জিহাদ করা ফার্দুল আ’ইন। অথচ তারা জানে যে, এখন পর্যন্ত ১৫ লক্ষ শহীদ হয়ে গেছে।

আফগানীরা বলে, “আমাদের মধ্যে একজন আরব থাকা এক মিলিয়ন ডলার থাকার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ।” শাইখ সাইয়াফ, জিহাদ ম্যাগাজিনে নবম পরিচ্ছেদে আলিম এবং দা’য়ীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সলাত এবং সালাম রসূলুল্লাহ ﷺ, তাঁর পরিবার, সাহাবী এবং যারা হিদায়াতের উপর আছে তাদের জন্য। আম্মাবা’দ:

আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপনারা জানতে পেরেছেন যে আফগানিস্তানে জিহাদ শুরু হয়েছে এবং চালু আছে। এই লক্ষ্য উপলব্ধি করার পর আমাদের এমন মুজাহিদীন দরকার যারা ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছে এবং সত্যিকারের ইসলামী জিহাদ পরিচালনা করতে পারবে। উপরন্তু বিরামহীন ভাবে শিক্ষা এবং উপদেশ দেয়ার জন্য আমাদের দা’য়ী এবং আলিম প্রয়োজন। আপনাদের জানা উচিত যে, অনেক শিক্ষক এবং আলিম আফগানিস্তানের জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়ে গিয়েছেন। এই জন্যই আমাদের যোগ্য শিক্ষক প্রয়োজন যারা মুজাহিদীনদের বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষাদান এবং পরিচালনা করতে পারবে এবং প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, শরণার্থী ক্যাম্প, সেনাবাহিনীকে শিক্ষাদান করবে যাতে লক্ষ্যে পৌছার জন্য আল্লাহর সাহায্য আসে। কোন উচ্চ পেশাজীবী অথবা বিশেষজ্ঞের চাইতে আমাদের আলিম এবং শিক্ষক প্রয়োজন। ইসলাম ও মুসলিমদেরকে উপকার করার জন্য আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন।

আপনাদের ভাই,

আব্দুর রাব্বির রসূল সাইয়াফ

পাকতিয়া, জামি

৩রা শাওয়াল, ১৪০৫ হিজরি।

অভিভাবক, স্বামী এবং ঋণদাতা থেকে অনুমতি প্রসঙ্গ

শত্রুর অবস্থার সাথে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত। শত্রুরা যদি তাদের নিজেদের দেশে অবস্থান করে, তারা মুসলিমদের সীমানায় এসে একত্রিত হয়নি, মুসলিম ভূমি হুমকির সম্মুখীন নয় এবং সীমান্তগুলিতে যথেষ্ট মুজাহিদীন আছে, অবস্থা যদি এরকম হয় সেক্ষেত্রে জিহাদ ফার্দুল কিফায়া এবং উল্লেখিত শ্রেণীগুলি থেকে অনুমতি নেওয়া আবশ্যক কারণ অভিভাবক এবং স্বামীর আনুগত্য হচ্ছে ফার্দুল আ’ইন আর উপরোক্ত পরিস্থিতিতে জিহাদ হচ্ছে ফার্দুল কিফায়া।

যদি শত্রুরা মুসলিমদের সীমানা আক্রমণ করে অথবা মুসলিমদের ভূমির যেকোন অংশে প্রবেশ করে, সেক্ষেত্রে আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, সমগ্র দেশ এবং তার আশে পাশে যারা আছে তাদের সকলের উপর জিহাদ ফার্দুল আ’ইন হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে উপরোক্ত শ্রেণীগুলি থেকে অনুমতি নেওয়া আবশ্যক নয়। কোন ব্যক্তির জন্য অপরের নিকট থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনকি সন্তান তার অভিভাবকের নিকট থেকে, স্ত্রী তার স্বামীর নিকট থেকে, ঋণগ্রহীতা তার ঋণদাতার নিকট থেকে অনুমতি ব্যতীতই জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম ভূমি থেকে শত্রুদেরকে বহিষ্কার করা না হয় অথবা প্রয়োজনীয় সংখ্যক মুজাহিদীন সাড়া না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক নয়। এমন কি পৃথিবীর সমস্ত মুসলিমদের একত্রিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলে একত্রিত হতে হবে। যদিও অভিভাবকের আনুগত্য করা ফার্দুল আ’ইন তারপরও ইহার উপর ফার্দুল আ’ইন জিহাদ অগ্রাধিকার পাবে। কারণ জিহাদের মাধ্যমে সমগ্র দ্বীনকে রক্ষা করা হয় এবং অভিভাবকের আনুগত্যের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির জন্য দায়িত্ব পালন করতে হয়। সুতরাং একজন ব্যক্তিকে রক্ষা করার চাইতে সমগ্র দ্বীনকে রক্ষা করা অগ্রাধিকার যোগ্য। উপরন্তু জিহাদের মাধ্যমে যদিও একজন মুজাহিদ ধ্বংস (শহীদ) হতে পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে সমগ্র দ্বীন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া নিশ্চিত হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত নয় যে একজন ব্যক্তি জিহাদে চলে গেলে তার অভিভাবক ধ্বংস হয়ে যাবে। অনিশ্চিত বিষয়ের উপর নিশ্চিত বিষয় প্রাধান্য পায়।

ফার্দুল আ’ইন এবং ফার্দুল কিফায়ার একটি উদাহরণঃ

কিছু ব্যক্তি সমুদ্র সৈকতে হাঁটছে, তাদের মধ্যে একজন ভাল সাঁতারু বিদ্যমান। তারা দেখল একটি শিশু পানিতে ডুবে যাচ্ছে এবং চিৎকার করছে, ‘আমাকে বাঁচাও!’ ‘আমাকে বাঁচাও!!’ বলে; কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। একজন সাঁতারু তাকে উদ্ধার করার জন্য সামনে অগ্রসর হল কিন্তু তার পিতা তাকে নিষেধ করছে। বর্তমান সময়ের কোন আলিম কি এই কথা বলবে যে, উক্ত সাঁতারুর তার পিতার হুকুম পালন করা উচিত এবং বাচ্চাটি ডুবে যাক। বর্তমানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ঠিক এরকমই। সে সাহায্যের জন্য কাঁদছে, তার বাচ্চাদেরকে জবাই করা হচ্ছে, তার মেয়েদেরকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, নিরপরাধদেরকে হত্যা করা হচ্ছে এবং তাদের ফসল ধ্বংস করা হচ্ছে। যখনই কোন একনিষ্ঠ যুবক তাদেরকে মুক্ত করার জন্য সেখানে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে তখনই তাকে সমালোচনা করা হয় এবং দোষারোপ করে বলা হয়, “কিভাবে তুমি তোমার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া সেখানে যাও।”

ডুবন্ত শিশুকে উদ্ধার করা সমস্ত সাঁতারুর জন্য ছিল ফারদ। যে কোন একজন সাঁতারু অগ্রসর হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশুটিকে মুক্ত করার দায়িত্বটি সকলের উপর ছিল। একজন যদি তাকে মুক্ত করার জন্য অগ্রসর হয় তখন অন্য সবাই গুনাহ থেকে দায় মুক্ত হয়ে যায়, কিন্তু কোন একজন অথবা যথেষ্ট সংখ্যক ব্যক্তি যদি শিশুটিকে উদ্ধার করার জন্য অগ্রসর না হয় তখন সকলেই গুনাহের অংশীদার হয়ে যায়।

যে কোন একজন অগ্রসর হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। এমনকি শিশুটিকে উদ্ধার করার জন্য কোন অভিভাবক যদি তার সন্তানকে নিষেধ করে তবে অবশ্যই সে অভিভাবককে অমান্য করতে হবে। এটি এই কারণে যে, প্রাথমিক অবস্থায় ফার্দুল কিফায়ার দিকে আহবান এবং ফার্দুল আইনের দিকে আহবানের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য এতটুকুই যে, ফার্দুল কিফায়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যক্তি যোগাড় হয়ে গেলে বাকী সবাই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়। আর যদি কেউ সাড়া না দেয় তবে সবাই গুনাহগার।

ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “যদি শত্রু আক্রমণ করে তখন তর্কের কোন অবকাশ নেই। প্রকৃতপক্ষে দ্বীন, জীবন এবং সমস্ত প্রিয় জিনিস রক্ষা করা ফারদ। এই ব্যাপারে সবাই একমত প্রকাশ করেছেন।[90]

ফার্দুল কিফায়ার ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং ফার্দুল আ’ইনের ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়ার অপ্রয়োজনীয়তার বিধান নেওয়া হয়েছে দু’টি হাদিসের মধ্যে সামঞ্জস্য করার মাধ্যমেঃ

প্রথম হাদিসঃ বুখারী কর্তৃক সংকলিত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আল আ’স (রদিআল্লাহু আনহু) বলেছেনঃ “এক ব্যক্তি জিহাদে যাওয়ার অনুমতির জন্য রসূল ﷺ এর নিকট আসল। তিনি ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার পিতামাতা জীবিত আছে?’ ব্যক্তিটি উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ’। তিনি ﷺ বললেন, ‘যাও তাদেরকে সেবা কর, তাদের মধ্যেই তোমার জিহাদ।’”

দ্বিতীয় হাদিসঃ ইবনে হিব্বান[91] আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর[92] (রদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ “এক ব্যক্তি রসূল ﷺ এর কাছে এসে সবচেয়ে উত্তম আমলের কথা জিজ্ঞেস করল। তিনি ﷺ উত্তর দিলেন, ‘সলাত’। লোকটি আবার প্রশ্ন করল, ‘অতঃপর কোনটি?’ তিনি ﷺ বললেন, ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।’ লোকটি তখন বলল, ‘আমার দুজন পিতামাতা আছে।’ তিনি ﷺ তাকে বললেন, ‘আমি তোমাকে আদেশ করছি তাদের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করতে।’ লোকটি উত্তর দিল, ‘যিনি আপনাকে সত্য সহ পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ, আমি জিহাদ করবো এবং তাদেরকে পরিত্যাগ করবো।’ তিনি ﷺ বললেন, ‘তুমি ভাল জান।”[93]

ইবনে হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “এখানে বুঝতে হবে যে (দ্বিতীয় হাদীসে) জিহাদ ছিল ফার্দুল আ’ইন। এটিই এই দুই হাদিসের মধ্যে সামঞ্জস্য।”[94]

শাইখ ও শিক্ষক এর নিকট থেকে অনুমতি প্রসঙ্গঃ

ইবাদাত করার জন্য শাইখ অথবা শিক্ষকদের নিকট থেকে অনুমতি নেওয়ার কোন দলীল প্রমাণ নেই। এই ইবাদাত ফার্দুল আ’ইন অথবা ফার্দুল কিফায়া-ই হোক না কেন। এই ব্যাপারে কোন ‘সালাফুস সালেহ’ হতে কোন উদ্ধৃতি নেই।

যে ব্যক্তি এর বিপরীত কিছু বলবে তাকে অবশ্যই পরিষ্কার দলিল প্রমাণ হাজির করতে হবে। প্রত্যেক মুসলিম তার শাইখ অথবা শিক্ষকের অনুমতি ব্যতীত জিহাদে রওয়ানা দিতে পারবে। রব্বুল আলামীন এর নিকট থেকে পাওয়া অনুমতি সবার উপরে অগ্রাধিকার পাবে। তিনি তো অনুমতি দিয়েই রেখেছেন। অধিকন্তু তিনি ইহা ‘র্ফাদ’ করেছেন।

ইবনু হুবাইরা[95] বলেছেন, “শয়তানের একটি চক্রান্ত হচ্ছে ‘আল্লাহর সাথে মূর্তির ইবাদাতের ব্যাপারে সে ধোঁকা দেয়। যখন সত্য প্রমাণিত হয় তখন সে ওয়াস-ওয়াসা দেয় যে, ‘এটি আমাদের মাযহাবে নেই’। সুতরাং এভাবে সত্যের উপর একজন ব্যক্তির মাযহাবকে অগ্রাধিকার দেয়ার মাধ্যমে সে বাতিল ইলাহের ইবাদাত করে।’”

ধরুন, কেউ আমেরিকাতে ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি অথবা ইতিহাস নিয়ে লেখা-পড়া করতে যেতে চায়। যেখানে ‘ফাসাদ’ অন্ধকার রাত্রির মত বিস্তৃত, ওয়াস-ওয়াসা তাকে সমুদ্রের তরঙ্গের মত ঘিরে ধরবে। এই লোকেরা যদি তাদের শাইখ এর নিকট হতে অনুমতি গ্রহণ না করে তবে সে অথবা অন্য কেউ রাগান্বিত হয়না। অথচ সে যদি জিহাদের ভূমিকে প্রতিরক্ষার জন্য বের হয় তখন প্রতিটি ব্যক্তি তার দিকে আঙ্গুল তুলে বলে, “সে কিভাবে অনুমতি ব্যতীত যেতে পারে?” উক্ত শাইখ রসূল ﷺ এর বাণী ভুলে গেছেঃ

“এক রাত আল্লাহর পথে ‘রিবাত’ (ইসলামী ভূমির সীমানায় প্রহরারত থাকা)-এ ব্যয় করা, হাজার রাত সলাত এ দাড়িয়ে থাকা ও সিয়াম রাখার চেয়ে উত্তম।”[96]

“একদিন ও একরাত ‘রিবাত’ (সীমানা পাহারা দেয়া)-এ থাকা একমাস সিয়াম রাখা ও সলাত পড়ার চেয়ে উত্তম। সে যদি ‘রিবাত’ এ থাকা অবস্থায় মারা যায় তবে মৃত্যুর পর তার আমল চালু থাকবে, সে রিযিকপ্রাপ্ত হবে এবং সে ফিতনা[97] থেকে মুক্ত থাকবে।”[98]

“একটি সকাল অথবা সন্ধ্যা আল্লাহর পথে জিহাদে ব্যয় করা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চাইতে উত্তম।”

শাইখ ও তার অনুসারীদের দায়িত্ব হচ্ছে উত্তম আমলের দিকে দ্রুত বেগে অগ্রসর হওয়া। এবং রসূল ﷺ বলেছেনঃ “৫টি জিনিসের পূর্বে ৫টি জিনিসের সুযোগ গ্রহণ করঃ

(১) তোমার মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবন,

(২) অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতা,

(৩) ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়,

(৪) বৃদ্ধ হবার পূর্বে যৌবন,

(৫) দরিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতা।”[99]

তাদের আরও গভীরভাবে নিম্নের হাদীসের প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়া উচিত,

“যুদ্ধের ময়দানে এক মুহুর্ত দাড়িয়ে থাকা ষাট বছর রাতের[100] সলাত থেকে উত্তম।”

ইমাম আশ-শাফিঈ (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন, “এই ব্যাপারে সকলে একমত পোষণ করেছেন যে, যদি সুন্নাহ তোমার সামনে পরিষ্কার হয়ে যায় তখন কোন ব্যক্তির কথায় সুন্নাহ পরিত্যাগ করা জায়েজ নয়।”

মাল দ্বারা জিহাদ করা

কোন সন্দেহ নেই যে, মাল দ্বারা জিহাদ করার চাইতে জান দ্বারা জিহাদ করা উত্তম। এই জন্যই, রসূল ﷺ এর যুগে ধনী সাহাবীগণ যেমনঃ উসমান (রদিআল্লাহু আনহু), আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রদিআল্লাহু আনহু)-এর মত সাহাবীগণও জান দিয়ে জিহাদ করা থেকে অবকাশ পাননি। কারণ আত্মার পরিশুদ্ধি ও উন্নতি হয় জিহাদের ময়দানে। এর জন্যই রসূল ﷺ একজন সাহাবাকে উপদেশ দিচ্ছিলেন, “…জিহাদকে আঁকড়ে ধর কেননা এটিই হচ্ছে ইসলামে ‘রাহবানিয়্যাত’ (সন্ন্যাসবাদ)।”[101]

এইজন্যই যখন রসূল ﷺ-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, “একজন শহীদ কে কি কবরের ফিতনায় ফেলা হবে? তিনি ﷺ উত্তর দিলেন, “তার মাথার উপর তরবারির আঘাতই তার জন্য ‘ফিতনা’ হিসেবে যথেষ্ট।”[102]

অধিকন্তু রসূল ﷺ জিহাদ কে পরিত্যাগ করে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকতে নিষেধ করেছেন। একদা তিনি লাঙ্গলকে লক্ষ্য করে বললেন, “এটি মানুষের বাড়িতে আসা যাওয়া করে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ্ এর দ্বারা লাঞ্ছনা প্রবেশ করান।”[103]

বিশুদ্ধ হাদিসে এসেছে, “যদি তোমরা ‘তাবাইয়া আল য়ি’নিয়্যা’ “অর্থাৎ (এক ব্যক্তির নিকট কোন জিনিষ একটি দামে বিক্রয় করা অতপর একই জিনিস তার নিকট থেকে অনেক কম দামে ক্রয় করা) অনুসরণ কর, বলদের লেজের অনুসরণ কর (অর্থাৎ কৃষিকাজ নিয়েই সন্তুষ্ট থাক) এবং জিহাদকে বর্জন কর তখন আল্লাহ্ তোমাদের উপর নির্যাতন চাপিয়ে দিবেন। এই নির্যাতন ততদিন পর্যন্ত থাকবে যতদিন তোমরা দ্বীনের মধ্যে ফেরত না আস।”[104]

আরেকটি সহীহ হাদীসে এসেছে, “তোমরা ‘দাইয়া’[105] গ্রহণ করনা কারণ ইহা তোমাদেরকে দুনিয়ার জীবন এর উপর সন্তুষ্ট করে রাখবে।”[106]

রসূল ﷺ দুনিয়াকে বর্জনের উপায় বলে দিয়েছেন। যেমনঃ কৃষি, সুদের ব্যবসা, য়ি’নায় ব্যবসা, পশুপাখির খামার, শিল্প-কারখানা ও উঁচু দালান ইত্যাদি বর্জনের মাধ্যমে। শারীয়াহ অনুযায়ী ইসলাম যখন আক্রান্ত তখন উক্ত কাজগুলির মধ্যে ব্যস্ত হওয়া হারাম এবং অনেক বড় গুণাহ্।

যদি মুজাহিদীনদের মালের প্রয়োজন হয় তখন একজনের মাল দ্বারা জিহাদ করা র্ফাদ। তখন মহিলা ও শিশুর মাল দ্বারা জিহাদ করাও র্ফাদ, এটি ইবনে তাইমিয়্যাহ[107] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন। এই জন্যই জিহাদে যখন মালের প্রয়োজন হবে তখন মাল জমা করা হারাম। ইবনে তাইমিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আমাদের কাছে এত সামান্য মাল আছে যে, হয় দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের উপর খরচ করতে হবে অথবা জিহাদে ব্যয় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা কি করবো?” তিনি বলেছিলেন, “যদিও দুর্ভিক্ষে পীড়িতরা মারা যায় তবুও আমরা জিহাদকে অগ্রাধিকার দিব। মুসলিমদেরকে যখন শত্রুরা বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে তখন ঐ মুসলিমরা আমাদের হাতে নিহত হয় অথচ এখানে দুর্ভিক্ষ পীড়িতরা আল্লাহর হুকুমের অধীনে মারা যায়।”[108]

আল কুরতুবী[109] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “আলিমগণ একমত পোষণ করেছেন যে, যাকাত পরিশোধের পরও যদি মুসলিমদের কোন প্রয়োজন থাকে; তবে তারা নিজেদের মাল থেকে খরচ করবে উক্ত প্রয়োজন পূরণ করার জন্য।”

ইমাম মালিক[110] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “মুসলিম বন্দীদেরকে মুক্ত করা র্ফাদ। যদিও সমস্ত সম্পদ খরচ হয়ে যায়। এ ব্যাপারেও সবাই একমত পোষণ করেছেন।”

একজন ব্যক্তিকে রক্ষার চাইতে দ্বীনকে রক্ষা করা অগ্রাধিকার যোগ্য, এবং সম্পদকে রক্ষার চাইতে একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা অগ্রাধিকার যোগ্য। সুতরাং একজন মুজাহিদীন এর রক্তের চাইতে একজন ধনীর সম্পদ বেশী মূল্যবান নয়।

সুতরাং হে ধনীগণ! তোমরা মালের ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে সতর্ক হও। যেখানে মুসলিম দেশগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে সেখানে ধনীরা তাদের মাল নিয়ে নফসের খাহেশাতের মধ্যে ডুবে আছে। আফসোস!! যদি এই ধনীরা মাত্র একদিন তাদের নফসের খাহেশাত থেকে দূরে থাকত এবং মালের অপচয় বন্ধ করে সমস্ত টাকা আফগানিস্তানের মুজাহিদীনদের নিকট পাঠাতো! যাদের পা গুলো বরফে ক্ষয়ে যাচ্ছে, এবং ঠাণ্ডায় মারা যাচ্ছে। তারা দিনে খাবার পায়না এবং নিজেদের রক্ষার জন্য অস্ত্র পায়না।

আমি বলি, যদি ধনীরা তাদের একদিনের অপচয়ের টাকা আফগানিস্তানে ব্যয় করতো তবে মুজাহিদীনরা আল্লাহর সাহায্যে বিজয় লাভ করতো। অধিকাংশ আলিম, তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন শাইখ বিন বায তারা ফাতওয়া দিয়েছেন যে, মুজাহিদীনদের মধ্যে যাকাত ব্যয় করা হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম আমল ও উত্তম সাদাকা।

সারাংশঃ

একঃ পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিম এর জন্য নিজের জীবন দ্বারা জিহাদ করা ফার্দুল আ’ইন।

দুইঃ জিহাদ করার জন্য একজন অপরজন থেকে অনুমতির প্রয়োজন নেই। সন্তানের জন্য পিতার নিকট থেকে

অনুমতি প্রয়োজন নেই।

তিনঃ মাল দ্বারা জিহাদ করা ফার্দুল আ’ইন। এবং জিহাদের জন্য মালের প্রয়োজন হলে সে পরিস্থিতিতে মাল জমা করা হারাম।

চারঃ জিহাদকে অগ্রাহ্য করা সলাত এবং সিয়ামকে অগ্রাহ্য করার মতই। বরং বর্তমানে জিহাদকে অগ্রাহ্য করা আরও নিকৃষ্ট। ইবন আর রুশদ[111] বলেছেনঃ “ইজমা হচ্ছে যখন জিহাদ ফার্দুল আ’ইন হয়, তখন এই ফার্দ হজ্জের চাইতেও অগ্রাধিকার পাবে।”

৪থ অধ্যায়ঃ খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

বর্তমান সময়ে আমরা কি এই ফাতওয়াটি পূর্ণভাবে পালন করতে পারি?

সব কিছু শোনার পর কেউ হয়তবা বলতে পারেঃ হ্যাঁ, ঠিক আছে। আমরা জানতে পারলাম যে, সলাত ও সিয়াম যেমন ব্যক্তিগতভাবে ফরয (ফারদ্) ঠিক তেমনি বর্তমানে জিহাদ করাও ফারদ্ আল-আ’ইন। এমন কি জিহাদের গুরুত্ব সলাত ও সিয়াম এর চাইতেও বেশি। যেমন ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “ঈমান আনার পর সর্বপ্রথম ফারদ্ কাজ হচ্ছে, মুসলিমদের ভূমি থেকে আগ্রাসী শত্রুদের বহিষ্কার করে দেয়া যারা দ্বীন এবং দুনিয়াবি বিষয়ের (Worldy affairs) উপর আক্রমণ করে।”[112]

জিহাদের সময় সলাত দেরীতে পড়া যায়, একত্রে পড়া যায় অথবা রাকআত সংখ্যা পর্যন্ত কমে যায়। দুইটি সহীহ হাদীসে এসেছে, “আল্লাহ তাদের বাড়িঘর এবং কবর আগুনে পরিপূর্ণ করে দিক যারা আমাদেরকে ব্যস্ত রেখেছে যার কারণে আমরা মধ্যবর্তী সলাত আদায় করতে পারিনি এমনকি সূর্য ডুবে গেছে।”[113]

এবং একজন মুজাহিদ সিয়াম ভঙ্গ করতে পারে জিহাদের সময়। যেমন মুসলিম থেকে বর্ণিত, “রসূল ﷺ ফাতহে মক্কার (মক্কা বিজয়ের) সময় সিয়াম ভেঙ্গে ছিলেন এবং বলেছিলেন যে, তোমরা সকালে শত্রুর মুখোমুখি হতে যাচ্ছ। সিয়াম ভঙ্গের মাধ্যমে শক্তিশালী হতে পারবে। সুতরাং সিয়াম ভঙ্গ কর।”[114]

এটি আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়েছে যে, জিহাদ যখন ফারদ্-আল-আ’ইন হয়, তখন তা পালন করার জন্য কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই। ঠিক যেমন সূর্যোদয়ের পূর্বের সলাত আদায়ের জন্য পিতা, শাইখ, মনিব এর কাছ থেকে অনুমতির প্রয়োজন হয়না।

একইভাবে ফার্দ জিহাদের ক্ষেত্রে কোন অনুমতির (permission) দরকার নেই। উদাহরণস্বরূপ: এক রাত্রে পিতা এবং পুত্র একত্রে কোন স্থানে ঘুমাচ্ছে। পুত্র ফজর এর সলাত পড়তে চাচ্ছে কিন্তু পিতা ঘুমাচ্ছে। কেউ কি উপদেশ দিবেন যে পুত্রকে অবশ্যই সলাত পড়ার জন্য অনুমতি নিতে হবে? শুধু তাই নয়, পিতা যদি কোন কারণবশত (যারা সলাত না পড়ে ঘুমাচ্ছে তাদের ঘুম যাতে না নষ্ট হয়) সলাত পড়তে মানা করে তবে কি পুত্র এই আদেশ মানবে? নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা উত্তরটি খুবই স্পষ্ট।

“আনুগত্য সৎকাজে”[115] এবং

“স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই”[116] এবং

“তার ক্ষেত্রে কোন আনুগত্য নেই যে আল্লাহর আনুগত্য করেনা”[117]

জিহাদকে উপেক্ষা করা গুনাহ এর কাজ। এবং স্রষ্টার অবাধ্যতার ক্ষেত্রে সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই।

অনুমতি প্রসঙ্গে

অনুমতি নিতে হবে কিনা এই প্রশ্নোত্তরে আমরা আল্লাহর সাহায্যে বলতে চাই সাহাবারা (রদিআল্লাহু আনহু) কোন দিন অনুমতি চাননি, যখন জিহাদের পতাকা উত্তোলন হয়েছিল এবং উম্মাহকে জিহাদের জন্য আহবান করা হয়েছিল। বরং রসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে অনুমতি চাওয়া এবং পরামর্শ করতে শুধু সেই এসেছিল যে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জিহাদে যাওয়ার জন্য অথবা যে কোন জিহাদে যাওয়ার নাম লিখিয়েছিল। মুয়াউইয়া বিন জাহিমা আস সালমি থেকে বর্ণিত মুসনাদে আহমদ ও নাসাঈ কর্তৃক সংকলিত, জাহিমা রসূল ﷺ-এর কাছে আসল এবং বলল, “ইয়া রসূলুল্লাহ ﷺ! আমি একটি গাযওয়াতে (expedition) অংশ গ্রহণ করতে চাই এবং এ ব্যাপারে আপনার সাথে পরামর্শ করতে এসেছি। তিনি ﷺ বললেন মার সাথে থাক কারণ জান্নাত তার পায়ের নীচে।”[118]

অন্য বর্ণনায় আছে, “অমুক এবং অমুক অপারেশন এর জন্য আমার নাম লিখানো হয়েছে” অর্থাৎ “আমি স্বাক্ষর দিয়েছি”।

এটি ছিল সেই সময়ের ঘটনা যখন জিহাদ ফার্দুল কিফায়া ছিল।

কিন্তু আহবান করার পর জিহাদ যখন ফার্দুল আ’ইন হয় তখন রসূলুল্লাহ ﷺ অনুমতি চাইতে আসা পরিষ্কার নিফাক্ব এর চিহৃ। কারণ এই ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আয়াত নাযিল হয়েছে।

لا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ أَنْ يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ

إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ

“যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী, তারা তাদের ধন ও প্রাণ দ্বারা যুদ্ধ করতে তোমার নিকট অব্যাহতি পাওয়ার প্রার্থনা করে না, আল্লাহ সংযমীগণ (মুত্তাকীদের) সম্বন্ধে জ্ঞাত আছেন। যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না –তারাই কেবল তোমার নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা করে, তাদের অন্তর সংশয়যুক্ত, ওরা স্বীয় সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।”[119]

হিদায়াত প্রাপ্ত খলীফাগণ যেমনঃ আবুবকর, উমার, উসমান, আলী (রদিআল্লাহু আনহু) এর ব্যাপারে আমরা এমন কোন উদাহরণ পাইনা যে, তখনকার সময় সাহাবাগণ অথবা তাবেঈগণ অনুমতি চেয়েছেন। তখন প্রত্যেক ব্যক্তি (যে কেউ) যদি জিহাদ করতে চাইতো তবে তারা আবু বকর (রদিআল্লাহু আনহু) এর কাছে অনুমতির জন্য আসতো না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে জিহাদের পতাকা অবশ্যই তুলতে হবে এবং বাহিনী প্রেরণ করতে হবে। উপরন্তু, খলীফাদের পর আমীরুল মু’মিনীনদের নিকট থেকে ও এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না যে, যে ব্যক্তি জিহাদে অথবা রিবাতে অংশগ্রহণ করতে চাইতো তাকে অনুমতি নিতে হতো। এমনকি ইসলামের ইতিহাসে পর্যন্ত এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, কেউ অনুমতি ছাড়া জিহাদ অথবা গাযওয়াতে অংশগ্রহণ করার জন্য শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমীরুল জিহাদ এর কাছ থেকে অনুমতি নেয়া প্রয়োজন যাতে যুদ্ধে বিশৃঙ্খলা না হয়, পরিকল্পনা নষ্ট না হয়ে যায়।

ঈমান আউযায়ী[120] (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন, “শুধুমাত্র বেতনপ্রাপ্ত সৈনিকদের জন্য অনুমতি প্রয়োজন ইমামের নিকট থেকে।”

আর-রামলি[121] (রহিমাহুল্লাহ) নিহায়াত আল মাহতাফ এর ৮/৬০ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন, “ইমাম অথবা তার সেকেন্ড ইন কমান্ড এর অনুমতি ছাড়া কোন অভিযানে অংশগ্রহণ করা মাকরুহ। তাও আবার তিন ক্ষেত্রে ছাড়াঃ

১. যদি অনুমতির কারণে জিহাদের লক্ষ্য নষ্ট হয়ে যায়।

২. ইমাম যদি কারণ ছাড়া (অথবা ভুল কারণে) অভিযান বন্ধ করে দেয়।

৩. কেউ যদি চিন্তা করে অনুমতি নিতে গেলে কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে তাকে প্রত্যাখ্যান করবে। এগুলোতে বালকিনী[122] একমত পোষণ করেছেন।”[123]

আমরা বলতে চাই এতসব কিছু বিবেচনার বিষয় তখন যখন জিহাদ ফার্দুল কিফায়া। কিন্তু জিহাদ যখন ফারদুল আ’ইন তখন কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। ইবন-আর-রুশদ বলেছেন, “ইমাম যদি যুলুমও করে তবুও তাকে অবশ্যই আনুগত্য করতে হবে। যতক্ষণ সে গুনাহের আদেশ না করে। ফার্দুল আ’ইন জিহাদ থেকে নিষেধ করা গুনাহ এর আদেশ।[124]

এই বিষয়ে আরো পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করছিঃ অনুমতি শুধুমাত্র ফার্দুল কিফায়া এর ক্ষেত্রে প্রয়োজন। তাও আবার যথেষ্ট সংখ্যক সৈন্য অংশগ্রহণ করার পর (যত সংখ্যক অংশ গ্রহণ করলে উক্ত ফারদ্ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব)। কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যক সৈন্য অংশ গ্রহণ করার পূর্বে এটি সবার কাঁধের উপর র্ফাদ দায়িত্ব হিসাবে থাকবে। ফার্দুল আ’ইন ও ফার্দুল কিফায়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই যথেষ্ট সংখ্যক অংশ গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত।

এতসব কিছু জানার পর একজন বলবেঃ

আমরা জানতে পারলাম জিহাদ হচ্ছে ফার্দুল আ’ইন। এবং কোন অনুমতির প্রয়োজন নাই। তারপরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায়।

১ম প্রশ্নঃ বর্তমানে আমরা কিভাবে একটি ‘সাধারণ অভিযান’-কে বাস্তবায়িত করতে পারি?

কিছু মানুষ বলে যে, ‘সাধারণ অভিযান’ যা ইসলামে আবশ্যকীয়, যেখানে মহিলা স্বামীর অনুমতি ব্যতীত, সন্তানরা পিতার অনুমতি ব্যতীত বের হতে পারে। কিছু কারণে এই অভিযানে বের হওয়া খুবই কঠিনঃ

যেখানে অভিযান করা হবে সেখানে হাজার হাজার মুসলিমদের মধ্য থেকে এক ভাগ মুসলিমদের জন্য জায়গা সংকুলান হবে না। এই অভিযানের কারণে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ইসলামী ভূমিগুলো থেকে মানুষ খালি হয়ে যাবে। সুতরাং প্রত্যেকে যদি জিহাদের জন্য আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনে চলে যায় তবে সমস্ত মুসলিম ভূমি খালি হয়ে যাবে ফলশ্রুতিতে কম্যুনিস্ট, বাথিষ্ট, জাতীয়তাবাদী, সেকুলারিষ্টরা ভূমিগুলো দখল করে ফেলবে।

উত্তরঃ যদি মুসলিম বিশ্ব আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী ফিলিস্তিনে এক সপ্তাহের জন্য ‘সাধারণ অভিযান’ পরিচালনা করত তবে সম্পূর্ণ ফিলিস্তিন ইহুদী মুক্ত হয়ে যেত। একইভাবে আফগানিস্তানের সমস্যাও এতদিন থাকত না। অধিকন্তু, দা’য়ীগণ নিঃশেষ হতনা। বরং আমরা শুধু অপেক্ষা করছি ও কান্না করছি। আমাদের চোখের সামনে কাফিররা আমাদের দেশগুলি দখল করছে এবং এভাবে হয়ত সম্পূর্ণ মুসলিম বিশ্বকে তারা দখল করে ফেলবে পরিশেষে আমরা প্রচুর কাঁদব।

অপ্রত্যাশিতভাবে আমরা ইসলামকে নিয়ে চিন্তা করি জাতীয়তা ভিত্তিক। কাফিররা যে দেশের সীমানা একে দিয়েছে তার বাইরে আমরা চিন্তা করতে পারিনা।

উদাহরণ স্বরূপঃ জর্ডানের মধ্যে দু’টি এলাকা আছে। একটি হচ্ছে ‘আর-রামশাহ্’ যা সিরিয়ার সীমানার নিকটে অবস্থিত। অপরটি হচ্ছে ‘আকাবা’ যা ‘আর-রামশাহ্’ হতে ৬০০ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। সিরিয়ার মধ্যে একটি এলাকা আছে যার নাম ‘দারা’ যা ‘আর-রামশাহ্’ হতে ১০ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। ‘আর-রামশাহ্’-এর অধিবাসীরা ‘দারা’-এর অধিবাসীদের চাইতে আকাবার অধিবাসীদেরকে বেশি ঘনিষ্ঠ মনে করে। যদিও উভয় অধিবাসীরাই মুসলিম উপরন্তু ‘দারা’-র অধিবাসীরা ধার্মিক বেশি।

২য় প্রশ্নঃ আমরা কি একজন ইমাম ব্যতীত জিহাদ করতে পারি?

উত্তরঃ হ্যাঁ, আমরা ইমাম ব্যতীত জিহাদ করেছি। কোন আলিম আজ পর্যন্ত বলেননি যে, “একজন ইমামের অধীনে পরিচালিত আল-জামাআ’র অনুপস্থিতিতে ফার্দ জিহাদের হুকুম বাতিল হয়ে যায়। বরং আমরা দেখি যে, ক্রুসেড এবং তাতারিদের আগ্রাসনের সময় বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন আমীরের অধীনে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। হালাব (সিরিয়া)-এ একজন আমীর ছিলেন, দামেস্কে ছিলেন একজন আমীর, মিশরে একাধিক আমীর ছিল।

কোন একজন আলিম বলেননি যে, উক্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে জিহাদের হুকুম রহিত হয়ে যায় (মুসলিমদের ভূমি রক্ষার জন্য জিহাদ করা) । বরং জিহাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। এই ঘটনা ঘটেছিল আন্দালুস-এ।

কবি বলেছেনঃ

“তারা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দলে বিভক্ত ছিল প্রত্যেক স্থানে ১জন আমীর ছিল, যিনি ছিলেন দায়ী।”

অন্যজন লিখেছেন,

“যা আমাকে আন্দালুসিয়ার ব্যাপারে দুঃখিত করে, তা হচ্ছে সেখানে রাজারা অনেক বড় বড় উপাধি ধারণ করেছে যার যোগ্য তারা নয়, ঠিক যেমন বিড়াল সিংহের মত গর্জন দিয়ে উঠে।”

কোন একজন আলিম বলেননি যে, উক্ত অবস্থায় জিহাদ করা যাবেনা, বরং আলিমরাই আন্দালুস-এর জিহাদে সামনের কাতারে ছিলেন।

ইমামের নিয়োগকৃত কমান্ডার যুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ করতে পারেন। যা ঘটেছিল মু’তার দিবসে। খালিদ বিন-আল ওয়ালীদ পতাকা উত্তোলন করলেন এবং তিনি রসূল ﷺ-এর নিয়োগকৃত ছিলেন।

ইমাম অথবা আমীরুল মু’মিনীন এর অনুপস্থিতি জিহাদ আদ-দিফায়ী (মুসলিমদের ভূমি রক্ষার জিহাদ)-কে বন্ধ করে দেয়না। খিলাফাত প্রতিষ্ঠা হবে এই কথা বলে আমরা বসে থাকতে পারিনা। কিন্তু খিলাফাত কখনো প্রতিষ্ঠা হবেনা শুধুমাত্র কঠিন তত্ত্ব, অনেক জ্ঞান ও অধ্যয়ন দ্বারা। বরং জিহাদ-ই একমাত্র সঠিক পথ যার মাধ্যমে বিভক্ত নেতৃত্বকে একত্র করা যাবে যাতে খিলাফাত প্রতিষ্ঠা হয়।

মুজাহিদরাই তাদের মধ্য থেকে একজনকে আমীর নিযুক্ত করবে। এই আমীর’ই মুজাহিদদেরকে সংগঠিত করবে। তাদের চেষ্টাগুলোকে একত্র করবে এবং দূর্বলকে সাহায্য করবে। একটি সহীহ হাদীস এ বর্ণিত হয়েছে যা উকবা বিন আমির থেকে বর্ণিত (যিনি নিম্ন লিখিত দলের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন) যে, “রসূল ﷺ ১টি বাহিনীকে পাঠালেন এবং একজনকে কমান্ডার নিযুক্ত করে দিলেন। যখন সে ফেরত আসল তখন বলল, ‘রসূল ﷺ আমাদেরকে দোষারোপ করলেন যেরকম করতে আমি আগে দেখিনি।’ তিনি ﷺ বললেন, “আমি যখন কোন ব্যক্তিকে প্রেরণ করি এবং সে আমার আদেশ পালন করতে অসমর্থ হয় তখন তোমরা তাকে পরিবর্তন করে এমন কাউকে নিয়োগ করতে পারলে না যে আমার আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারে।”[125]

যদিও রসূল ﷺ তাঁর পবিত্র হাতে একজনকে যুদ্ধের পতাকা তুলে দিয়েছেন তারপরও তিনি তাকে পরিবর্তন করতে উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু যদি শুরুতেই কোন আমীর না থাকে সেক্ষেত্রে আমীর নিয়োগ করা কত গুরুত্বপূর্ণ? সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় যদি যুদ্ধের সময় আমীর না থাকে। ইবন আল কুদামা[126] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “ইমামের অনুপস্থিতি জিহাদকে বন্ধ করে দেয়না কারণ জিহাদ বন্ধ হলে অনেক বড় ক্ষতি হবে।”

যদি মুসলিমরা একজনকে আমীর নির্বাচিত করে তাকে অবশ্যই মানতে হবে। ফাতহ-আল-আলী-আল-মালিক[127] শাইখ মিয়ারা বলেছেন, “যদি কোন জায়গায় আমীর অনুপস্থিত থাকে এবং জনগণ একজনকে আমীর নির্বাচিত করে তাদের কাজগুলিকে সহজ করার জন্য, দূর্বলকে শক্তিশালী করার জন্য এবং উক্ত আমীর যদি এগুলো অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো জায়েজ নয়, যা দলীল থেকে প্রমাণিত। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য, জামাআ’ত কে বিভক্ত করার জন্য, ইসলামের অবাধ্যতার জন্য তার বিরুদ্ধতা করে তার ব্যাপারে রসূল ﷺ-এর বাণী হচ্ছে, “…তখন যে ব্যক্তি ইহা বিভক্ত করতে চাবে, তাকে হত্যা কর সে যেই হোক কেন।”[128]

এবং “যখন তোমরা এক ব্যক্তির অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছো তখন যদি কেউ তোমাদের জামাআ’তকে বিভক্ত করতে চায় তাকে হত্যা কর”।[129]

৩য় প্রশ্নঃ আমরা কি আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে পারি যেখানে বিভিন্ন বিভক্ত আমীরের অধীনে যুদ্ধ হচ্ছে?

 আফগানিস্তানে জিহাদ করা ফার্দ যদিও সেখানে ভিন্ন ভিন্ন নেতার অধীনে জিহাদ পরিচালিত হচ্ছে। কারণ এখানে আগ্রাসী নাস্তিকদের বিরুদ্ধে মুসলিম ভূমি রক্ষার জন্য জিহাদ হচ্ছে । একাধিক মুসলিম দলগুলো কাফির ও নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করছে। কারণ আমরা মনে করি প্রত্যেকটি দলের আমীর হচ্ছে উক্ত মুজাহিদ বাহিনীর একজন আমীর।

৪র্থ প্রশ্নঃ সবাই যদি বসে থাকে তাহলে কেউ একা কি যুদ্ধ করতে পারে?

একজন একা যুদ্ধ করবে কারণ সর্ব শক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর রসূলকে বলেছেন,

فَقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لا تُكَلَّفُ إِلا نَفْسَكَ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَكُفَّ بَأْسَ الَّذِينَ كَفَرُوا وَاللَّهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنْكِيلًا

“অতএব (হে নাবী), তুমি আল্লাহ্ তা’আলার পথে লড়াই করো, (কেননা) তোমাকে শুধু তোমার কাজকর্মের জন্যেই দায়ী করা হবে এবং তুমি মু’মিনদের (আল্লাহ্ তা’আলার পথে জিহাদ করতে) উদ্বুদ্ধ করতে থাকো…।”[130]

এই আয়াতটিতে আল্লাহ তাঁর রসূলকে দু’টি দায়িত্ব দিয়েছেন।

১) যুদ্ধ কর যদিও একাই করতে হয়।

২) মু’মিনদেরকে উদ্ধুদ্ধ কর।

মহিমান্বিত রব ক্বিতালের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। এই ক্বিতালের উদ্দেশ্য হচ্ছে কাফিরদের অপশক্তি দমন করা কারণ আমরা যদি ক্বিতাল না করি তারা আমাদেরকে কখনো ভয় পাবে নাঃ

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

“এবং ক্বিতাল করতে থাক যতক্ষণ পর্যন্ত ফিতনা দূর না হয় এবং দ্বীন পূর্ণাঙ্গভাবে একমাত্র আল্লাহর জন্য হয়ে যায়।”[131]

ক্বিতাল কে উপেক্ষা করলে শির্ক (সবচেয়ে বড় ফিতনা) ছড়িয়ে যায় এবং কুফর প্রতিষ্ঠিত হয়। সাহাবীগণ উক্ত আয়াতের অর্থ সাধারণভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন।

আবী ইসহাক[132] বলেছেন[133]: “যখন কোন ব্যক্তি নিজেকে যুদ্ধের ময়দানে মুশরিকদের মধ্যে নিক্ষেপ করে তবে কি সে নিজেকে নিজের হাতে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়?” তিনি বললেন, “না, কারণ আল্লাহ্ তাঁর রসূলকে ﷺ পাঠিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে ক্বিতাল কর, (হে মুহাম্মাদ ﷺ) তুমি অন্য কারও ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে না…।’[134] তুমি যা উল্লেখ করলে তা হচ্ছে মাল খরচের ব্যাপারে।”[135]

ইবন-আল-আরাবী[136]: “এমন পরিস্থিতিও আসতে পারে যখন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জিহাদের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া ফার্দ। যে জিহাদকে বলা হয় ফার্দুল আ’ইন। যখন শত্রুরা আমাদের যে কোন দেশকে আক্রমণ করে অথবা ঘেরাও দেয়। যদি তারা অগ্রসর না হয় তবে তারা গুনাহগার। যদি শত্রুরা মুসলিমদের বন্দী করে ফেলে, দেশ দখল করে তবে সেক্ষেত্রে সকলের উপর অগ্রসর হওয়া ফার্দ। হালকা, ভারী, যানবাহনে চড়ে অথবা পায়ে হেটে, দাস অথবা স্বাধীন ব্যক্তি সকলকেই বের হতে হবে। যার পিতা বর্তমান আছে তার অনুমতি নিতে হবেনা। যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী না হয়, মুসলিম ভূমি রক্ষা না হয়, শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত না করা হয় এবং বন্দীদের মুক্ত করা না হয়। এই ব্যাপারে কোন ইখতিলাফ নেই।

কিন্তু একজন কি করবে যদি সবাই বসে থাকে? সে বন্দী খুঁজবে এবং মুক্তিপণ পরিশোধ করবে। তার সামর্থ্য থাকলে নিজেই আক্রমণ করবে যদি তাও না পারে তবে একজন মুজাহিদকে তৈরি করবে।”[137]

একা যুদ্ধ করা আল্লাহ পছন্দ করেন। রসূল ﷺ বলেছেনঃ “আমাদের রব এক ব্যক্তিকে দেখে অত্যন্ত খুশী হন যে আল্লাহর পথে আক্রমণ করে যদিও তার সাথীরা মার খেয়ে পালিয়ে যায় এবং সে জানে তার উপর কি বিপদ আসতে পারে তারপরও যুদ্ধ চালিয়ে যায় যতক্ষণ না তার রক্ত ঝরানো হয় এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর ফিরিশতাদেরকে বলেনঃ “দেখ আমার বান্দা আমার কাছে যা আছে তা পাওয়ার আশায় এবং আমার কাছে যে শাস্তি আছে তার ভয়ে ফেরত এসেছে যতক্ষণ না তার রক্ত ঝরানো হয়।”

৫ম প্রশ্নঃ আমরা কি ঐ সমস্ত মুসলিমদের সাথে একসাথে যুদ্ধ করতে পারি যাদের ইসলামী শিক্ষা অত্যন্ত কম?

এই প্রশ্ন করেছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি যাদের মধ্যে কেউ কেউ একনিষ্ঠ (Sincere)। আমরা ঐ সব আফগানীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে কিভাবে যুদ্ধ করবো যাদের মধ্যে সত্যবাদী লোক বিদ্যমান এবং খারাপ লোক ও বিদ্যমান; সেখানে ধূমপান ও নিসওয়ার (এক প্রকার টোব্যাকো) এর ছড়াছড়ি এবং যার জন্য একজন তার বন্দুক পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়? যারা অন্ধভাবে হানাফী মাযহাব অনুসরণ করে এমন কি কেউ তাবীজও পরে।

শারীয়াহ হুকুম ব্যাখ্যা করার আগে বলতে চাই যে, আমাকে পৃথিবীর একটা এলাকা দেখান যেখানে মুসলিমদের উপর সমস্যা নেই। এই সমস্যা থাকার কারণে আমরা কুফফারদেরকে প্রত্যেক মুসলিম ভূমিতে ছেড়ে দিব?

উত্তরঃ আমরা অবশ্যই যুদ্ধ করব। কারণ যুদ্ধ করতে হয় অনেক বড় ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য। এই মূলনীতিটা উল্লেখ করা আছে আল-আহকাম-আল-আদয়াল-আল-মাদ এর ২৬ নং অধ্যায়: “সকলের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য ব্যক্তিগত ক্ষতি মেনে নেয়া উচিত।”

২৭ নং অধ্যায়: “অনেক বড় ক্ষতি শেষ হতে পারে ছোট ক্ষতি স্বীকার এর মাধ্যমে।”

২৮ নং অধ্যায়: “কেউ ২টি মুনকার এর যেকোন ১টি নিতে বাধ্য হয় তবে যেটি অপেক্ষাকৃত ছোট মুনকার তা গ্রহণ করবে।”

২৯ নং অধ্যায়: “দুটি মুনকারের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম মুনকারটি সর্বপ্রথম গ্রহণ করার নীতি।”

আমাদের অবশ্যই ২টির যেকোন ১টি মুনকার নিতে হবে।

(১) হয় রাশিয়া আফগানিস্তান দখল করবে, অথবা দারুল কুফর এ পরিণত হবে, কুরআন ও ইসলামকে নিষিদ্ধ করবে

অথবা,

(২) গুনাহগার জাতিকে সাথে নিয়ে জিহাদ করতে হবে।

ইবনে তাইমিয়্যাহ্[138] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ’র একটি মূলনীতি হচ্ছে, প্রত্যেক ভাল ও খারাপ মুসলিমের সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করা। যেমনঃ রসূল ﷺ বলেছেনঃ ‘আল্লাহ্ এই দ্বীনকে খারাপ ব্যক্তি দ্বারা সাহায্য করবেন।’ যদি খারাপ আমীর অথবা পাপী সৈন্য ছাড়া জিহাদ পরিচালনা করা সম্ভব না হয় তখন তার জন্য যেকোন ১টি পথ খোলা আছে। হয় (১) তাদের থেকে দূরে সরে থাকা এবং জিহাদের দায়িত্ব তাদের

উপর ছেড়ে দেয়া, সেক্ষেত্রে শত্রুরা হয়ত বাকী মুসলিমদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ফেলবে। যা তাদের দ্বীন ও জীবনের জন্য অনেক বড় ক্ষতি বয়ে আনবে। অথবা, খারাপ আমীরের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। এতে অপেক্ষাকৃত বড় ক্ষতি থেকে বাঁচা যাবে। মুসলিমরা যদি সবগুলো আমল চালু করতে না পারে কমপক্ষে যতটুকু সম্ভব আমল চালু করা উচিৎ। এই পরিস্থিতিতে অথবা এই রকম পরিস্থিতিতে এই রকম সিদ্ধান্তই নেয়া উচিৎ। হিদায়াত প্রাপ্ত খলীফাগণ অনেক ‘গাযওয়াতে’ এই রকম করেছেন রসূল ﷺ বলেছেনঃ “ঘোড়ার কপালে কিয়ামাত পর্যন্ত কল্যাণ লেখা আছে প্রতিদান ও গণিমত হিসাবে।” যতক্ষণ তারা মুসলিম থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে একসাথে জিহাদ করা যাবে।”

আফগানিস্তানের জিহাদ এর ভিত্তি হচ্ছে ইসলাম এবং ইহার লক্ষ্য হচ্ছে পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। যদি ফিলিস্তিনে মুসলিমরা প্রথম থেকেই যুদ্ধ করত, প্রাথমিক দিকে মুসলিমদের আমল খারাপ থাকা সত্ত্বেও জর্জ হাবাশ, নাইফ হাওয়াতমা, ফাদার কাপিচি এবং তাদের মত অন্যান্যরা আসার আগে তবে ফিলিস্তিন হারাত না। অথচ আফগান জিহাদের সমস্ত নেতারা সলাত পড়ে, রোযা রাখে, এবং অন্যান্য ইবাদাত করে এবং মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন মুসলিম থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ করা ফার্দ। তাদের আমলের অবস্থা কি রকম তা বিবেচ্য বিষয় নয় যতক্ষণ পর্যন্ত তারা কাফিরদের এবং আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

আশ-শাওকানি[139] বলেছেন[140], “খারাপ অথবা গুনাহগার মুসলিমদের নিকট থেকে সাহায্য চাওয়া জায়েজ। এই ব্যাপারে সকলে একমত পোষণ করেছেন।”

৬ষ্ঠ প্রশ্নঃ দুর্বল অবস্থায় কি আমরা মুশরিকদের নিকট থেকে সাহায্য চাইতে পারি?

কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে, আফগানিস্তানে জিহাদের জন্য আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে সাহায্য আসে আর

ফিলিস্তিনে জিহাদের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে সাহায্য আসে। এই ধরনের সাহায্য নেয়া হারাম। এই ব্যাপারে ফুকাহাদের ইজমা হয়েছে। এবং এটি জিহাদের উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে দেয়। এই ব্যাপারে অনেক হাদীস দ্বারাই প্রমাণ করে কুফ্ফারদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া নিষেধঃ

তিনি ﷺ বদরের যুদ্ধে একজন মুশরিককে বলেছিলেন, “চলে যাও, আমি কোন মুশরিকের সাহায্য নিবো না”[141]

অন্য হাদিসেঃ “আমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য নেই না।”[142]

হাইসামী “মাজমুয়া আল জাওয়াইদ” কিতাবে বলেছেন আহমদ ও তাবারানী এর বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত। এবং আরেকটি সহীহ বর্ণনা থেকে আসছে যে, “সাফওয়ান বিন উমাইয়্যা কাফির থাকা অবস্থায় রসূল ﷺ-এর সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করেছিল।”

আন-নওবী[143] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “সাফওয়ান বিন উমাইয়্যা কে হুনাইনে রসূল ﷺ-এর সাথে দেখা গেছে, অথচ তখন সে কাফির ছিল।” রসূল ﷺ হুনাইনের দিন সাফওয়ান বিন উমাইয়্যার নিকট থেকে বর্ম ধার নিয়েছিলেন। তিনি ﷺ বলেছিলেন, “এই ধার তোমাকে ফেরত দিব।”

সীরাত রচয়িতাদের কাছে বর্ণনাটি মাশহুর যে, ‘ক্বাসমান’ রসূল ﷺ এর সাথে ‘উহুদ’ এ অভিযান করেছিল এবং কাফিরদের তিন জন পতাকাবাহীদের হত্যা করেছিল। তিনি ﷺ বলেছিলেন,“আল্লাহ এই দ্বীনকে কোন খারাপ ব্যক্তি দ্বারাও সাহায্য করেন।”[144]

অনুরূপভাবে বিপরীতধর্মী হাদীস থাকায় আলিমরা এই বিষয়ে মতপার্থক্য করেছেন। মুশরিকদের কাছে সাহায্য চাওয়া প্রাথমিকভাবে হারাম ছিল কিন্তু পরে তা ‘রহিত’ হয়ে যায়। আল-হাফিয আল তালখীস এ বলেছেন, “এটাই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম সামঞ্জস্য এবং আশ-শাফিঈ (রহিমাহুল্লাহ) ইহা একমত পোষণ করেছেন।[145]

ফিক্বহ এর বড় চারজন ইমাম একমত পোষণ করেছেন যে, কাফিরদের নিকট থেকে সাহায্য চাওয়া কিছু শর্তের ভিত্তিতে জায়েজ।

(১) ইসলাম এর শাসন অবশ্যই মুশরিকদের চাইতে উপরে থাকতে হবে। অর্থাৎ ইসলামের শক্তি মুশরিকদের মিলিত শক্তির চাইতে বেশি থাকতে হবে যাদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। এবং সেটা ইচ্ছে যখন কুফ্ফাররা মুসলিমদের বিরুদ্ধে একত্রে যুদ্ধ করছে।

(২) কুফফারদেরকে অবশ্যই মুসলিমদের সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে এবং মুসলিমদের অবশ্যই তাদের বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে নিরাপদ থাকতে হবে এবং ইহা তাদের ব্যবহার দেখে বুঝা যাবে।

(৩) মুসলিমদের যদি সাহায্য অত্যাবশ্যকীয় হয় অথবা কুফ্ফার সাহায্যের কথা নিজ থেকে বলে।

বিভিন্ন মাযহাবের রায়

হানাফী রায়ঃ

মুহাম্মাদ বিন আল হাসান[146] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ[147]

“এটা গ্রহণযোগ্য যে, যদি কোন মুসলিম, মুশরিকদের নিকট থেকে সাহায্য গ্রহণ করে কিন্তু ইসলামের শক্তি অবশ্যই বেশী থাকতে হবে।”

জাসসাস[148] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ বলেছেন, “যুদ্ধের ক্ষেত্রে মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য নেয়া জায়েজ যখন এই সাহায্যের কারণে ইসলামের বিজয় হয়।”

মালিকী রায়ঃ

ইবন-আল কাসিম[149] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ[150] “এটা আমার অভিমত নয় যে, মুশরিকদের সাহায্য নেয়া যাবে যতক্ষণ না তারা দাসের ভূমিকা পালন করে সাহায্য করে। তখন কোন অসুবিধা নাই তাদের সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে।”

ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন[151], “এটা আমার মত নয় যে মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য নেয়া যাবে যতক্ষণ না তারা দাসের ভূমিকায় সাহায্য করে।”

শাফিঈ রায়ঃ

আর রামলি (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ[152] “ইমাম অথবা নায়েবে ইমাম কুফ্ফারদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারে যদিও তারা ‘আহলুল হারব’ হয়, যদি তিনি জানেন যে কাফিররা আমাদের সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখে এবং শর্ত হচ্ছে তাদের সাহায্য আমাদের দরকার যুদ্ধের জন্য কারণ আমাদের সংখ্যা কম।”

হাম্বলী রায়ঃ

ইবন-আল-কুদামা (রহিমাহুল্লাহ)বলেছেনঃ[153] “ইমাম আহমাদ এর মত হচ্ছে, মুশরিকদের থেকে যুদ্ধের ক্ষেত্রে সাহায্য চাওয়া জায়েজ এবং তারা ‘গাণীমাহর’ অংশ পাবে যদি তারা ইমামের অধীনে যুদ্ধ করে। তিনি অধিকাংশের মতের বাইরে গিয়েছেন যারা ‘গাণীমাহর অংশ দেয়ার (মুশরিকদের) ব্যাপারে সমর্থন করেননি’।”

জিহাদের পক্ষে নাযিলকৃত আদেশ সংশ্লিষ্ট দলিল সমূহ

শান্তি চুক্তির অনুমোদনের ব্যাপারে অনেক লেখক ভুল করেছেন। তারা কুরআনের আয়াত নাযিলের ধারাবাহিকতা না মেনে আয়াত উল্লেখ করেছেন। যেখানে তাদের অবশ্যই জিহাদের ব্যাপারে আয়াত নাযিলের ধারাবাহিকতা জানতে হবে। যা হচ্ছে চূড়ান্ত আদেশঃ

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ

“মুশরিকদের (মুশরিক, মূর্তিপূজক, অগ্নিপূজক, আল্লাহর একত্বে যারা কুফর করে) সাথে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ কর ঠিক যেমন তারা তোমাদের সাথে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করে, এবং জেনে রাখ আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথে আছেন।”[154]

فَإِذَا انْسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاةَ وَآَتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

“…মুশরিকদের যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর, তাদেরকে ঘেরাও কর, বন্দী কর এবং তাদের জন্য প্রত্যেক ঘাটি প্রস্তুত রাখ।”[155]

ইবন আল-কাইয়্যিম[156] (রহিমাহুল্লাহ) যাদ আল মা’য়াদ এ ব্যাখ্যা করেছেন যে, “প্রথম জিহাদের অনুমতি দেয়া হয় হিজরতের পর, পরবর্তীতে আদেশ করা হয় শুধু তাদের বিরুদ্ধে যারা মুসলিমদের আক্রমণ করে এবং পরিশেষে মুশরিকদের বিরুদ্ধে ‘আম’ ভাবে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।”

ইবন-আবিদীন[157] (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “জেনে রাখ, জিহাদের আদেশ নাযিল হয়েছে ধারাবাহিকভাবে। রসূল ﷺ-কে প্রথম আদেশ দেয়া হয়েছিল তাবলীগ করার জন্য ও মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেছেন,

فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ

“অতএব তোমাকে যে আদেশ দেয়া হয়েছে তুমি খোলাখুলি জনসম্মুখে তা বলে দাও এবং (এরপরও) যারা (আল্লাহর সাথে) শরীক করে তাদের তুমি উপেক্ষা করো।”[158]

অতঃপর তাদেরকে বিজ্ঞতার সাথে দাওয়াত দেয়ার জন্যঃ

ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

“তুমি মানুষকে তোমার রবের পথে আহবান কর হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং উহাদের সহিত তর্ক করিবে উত্তম পন্থায়। তোমার রব, তাঁহার পথ ছাড়িয়া কে বিপথগামী হয় সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কাহারা সৎপথে আছে তাহাও তিনি সবিশেষ অবহিত।”[159]

অতঃপর যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছেঃ

أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ

“যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হইল তাহাদিগকে যাহারা আক্রান্ত হইয়াছে; কারণ তাহাদের প্রতি অত্যাচার করা হইয়াছে। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাহাদিগকে সাহায্য করিতে সম্যক সক্ষম।”[160]

অতঃপর কাফিররা প্রথম আক্রমণ করলে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের আদেশ দেয়া হয়েছেঃ

وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ

“যাহারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহর পথে তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; কিন্তু সীমালঙ্ঘন করিও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সীমালঙ্ঘন কারীগণকে ভালবাসেন না।”[161]

অতঃপর শর্তের অধীনে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়েছে, নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিক্রম করার পরঃ

فَإِذَا انسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ ۚ فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَءَاتَوُا الزَّكٰوةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

“অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হইলে মুশরিকদিগকে যেখানে পাইবে হত্যা করিবে, তাহাদিগকে বন্দী করিবে, অবরোধ করিবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাহাদের জন্য ওঁৎ পাতিয়া থাকিবে। কিন্তু যদি তাহারা তওবা করে, সলাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তাহাদের পথ ছাড়িয়া দিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[162]

পরিশেষে সাধারণভাবে সকল কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়ঃ

وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ

 “যাহারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহর পথে তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; কিন্তু সীমালঙ্ঘন করিও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সীমালঙ্ঘন কারীগণকে ভালবাসেন না।”[163]

এই জন্যই আয়াত নাযিলের ধারাবাহিকতার জ্ঞান অর্জন করা জরুরী। একটি বিষয়ে পরিষ্কার থাকা উচিৎ যে, দাওয়ার প্রাথমিক স্তরের দিকে রাজনৈতিক সমঝোতায় যাওয়া জায়েয নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি শক্তিশালী নেতৃত্বের অধীনে এই দাওয়াহ্ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইহার লক্ষ্যকে সংরক্ষণ করা যায়। যদি ইসলামিক দাওয়া প্রাথমিক পর্যায়ে কাফিরদের সাথে সমঝোতা (compromise)-এ রাজী হয় তবে দাওয়ার বিষয়বস্তু কে বিসর্জন (compromise) দিতে হয়, ঘোলাটে হয়ে যায় এবং মানুষের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়।

দাওয়ার প্রাথমিক ধাপের জন্য উদাহরণ হচ্ছে মহান সূরাঃ

قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ

لا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ

وَلا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ

“হে কাফিররা! (আল্লাহ, তাঁর রসূল, একত্ববাদে, ফিরিশতা, কিতাব, কিয়ামাত, ক্বাদর এর সাথে কুফরিকারী) আমি তার ইবাদাত করিনা যার ইবাদাত তোমরা কর। তোমরা যার ইবাদাত কর আমি তার ইবাদাত করিনা…।”[164]

এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ঈমানদারদের আরেকটি নমুনা হচ্ছে,

أَلَهُمْ أَرْجُلٌ يَمْشُونَ بِهَا أَمْ لَهُمْ أَيْدٍ يَبْطِشُونَ بِهَا أَمْ لَهُمْ أَعْيُنٌ يُبْصِرُونَ بِهَا أَمْ لَهُمْ آَذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا قُلِ ادْعُوا شُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ كِيدُونِ فَلا تُنْظِرُونِ

إِنَّ وَلِيِّيَ اللَّهُ الَّذِي نَزَّلَ الْكِتَابَ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِينَ

“বল [হে মুহাম্মাদ ]: ডাক সেই সমস্ত শরীকদের এবং আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর ও আমাকে কোন অবকাশ দিওনা। নিশ্চয়ই আমার ওয়ালী (রক্ষক, সাহায্যকারী, সমর্থনকারী ইত্যাদি) হচ্ছে সেই আল্লাহ যিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং সৎকর্মশীলদের রক্ষা করে থাকেন।”[165]

আমাদেরকে অবশ্যই দাওয়া প্রকাশ করতে হবে ও কাফিরদের কানে পৌছাতে হবে। দায়ীদেরকে অবশ্যই উঁচু গলায় বলতে হবে যতক্ষণ না তাদেরকে পরীক্ষা করা হয় যাতে তাদের আত্মা সবর অনুযায়ী পরিক্ষিত হতে পারে। এটা হয়েছিল রসূল ﷺ-ও তার সাহাবাদের সাথে মক্কায়। কিন্তু যখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তখন কেউ আর চুক্তি করতে (কাফিরদের সাথে) বাধা দিতে পারবে না।

কাফিরদের সাথে শান্তি চুক্তি করার শর্তসমূহঃ

ফুক্বাহাগণের মধ্যে এই ব্যাপারে ইখতিলাফ আছে যে, কাফিরদের সাথে শান্তি চুক্তি করা যাবে কি না। কেউ হুদাইবিয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন শান্তি চুক্তি অনুমোদিত। আবার কেউ বলেন এটি অনুমোদিত যদি মুসলিমরা চরম দূর্বল অবস্থায় থাকে। আবার কেউ বলেন তরবারির আয়াত নাযিল হওয়ার পর এখন এটি অবৈধ। আমরা বলি, শান্তি চুক্তিতে বৈধ যদি এর ফলে মুসলিমদের কল্যাণ হয় কিন্তু শর্ত হচ্ছে যে, চুক্তিতে এমন কোন ধারা থাকবেনা যাতে দ্বীনের কোন ক্ষতি হয়।

যেমনঃ

(১) চুক্তিতে এমন কোন ধারা থাকতে পারবেনা যাতে মুসলিমদের এক বিঘত ভূমিও বেদখল হয়ে যায়। কারণ ইসলামের ভূমি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এই ধরনের ধারা চুক্তিকে অবৈধ করে দেয় কারণ ভূমি হচ্ছে ইসলাম ও আল্লাহর। মুসলিমদের অঞ্চলের কোন কিছু অপব্যবহার জায়েজ নয়। অথবা বনী আদমকে বিনিময় হিসাবে ব্যবহার করা যার মালিক একমাত্র আল্লাহ। রাশিয়ানদের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি করা জায়েজ নয় যতক্ষণ না তারা আফগানিস্তানের কোন অংশ দখল করে রাখে। তদ্রূপ ইহুদীদের সাথে চুক্তি করা জায়েজ নয় ফিলিস্তিনে।

(২) যদি জিহাদ ফার্দুল আ’ইন হয় তবে তা শান্তি চুক্তি বাতিল করে দেয়। যেমনঃ শত্রুরা যদি মুসলিম ভূমি আক্রমণ করে অথবা আক্রমণের ইচ্ছা করে। “খলীফা যদি খ্রিষ্টানদের সাথে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করে কিন্তু মুসলিমরা যদি অনুভব করে জিহাদই একমাত্র সমাধান তখন শান্তি চুক্তি বাতিল হবে এবং খলীফার কাজটি বর্জনীয় (চুক্তির ব্যাপারে শুধুমাত্র)।”[166]

যখন জিহাদ ফার্দুল-আ’ইন তখন শান্তি চুক্তি করা জায়েজ নয়। যেমনঃ শত্রুরা যখন মুসলিম দেশ দখল করে। আমরা যা কিছু বর্ণনা করেছি তার মধ্যে যে বিষয়গুলোর কারণে জিহাদ ফার্দুল আ’ইন হয় সেগুলোর কারণে শান্তি চুক্তিও বাতিল হয়ে যাবে। কারণ এই চুক্তির কারণে ফার্দুল আ’ইন পালন করা যাবেনা এবং যেখানে সমস্যার সমাধান হচ্ছে জিহাদ। কাদী (কাজী/বিচারক) ইবন-রুশদ বলেছেন, “আলিমগণ একমত পোষণ করেছেন যে, যখন জিহাদ ফার্দুল আ’ইন হয় তখন এটি ফার্দ হাজ্জ এর চাইতে অগ্রাধিকার পায়। কারণ যদি জিহাদ ফার্দুল আ’ইন হয় তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হবে পালন করতে হবে কিন্তু ফার্দ হজ্জ কিছু দেরীতে পালন করা যেতে পারে। সুতরাং এই চুক্তি বর্জন করতে হবে কারণ ইহা শারীয়াহ সম্মত নয়। এটি গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর শর্তাবলী মানা বাধ্যতামূলক নয়। যাদেরই শারীয়ার মূলনীতি সম্পর্কে সঠিক বুঝ আছে তারা এই মতই পোষণ করেছেন। আরও, উক্ত চুক্তির কারণে ফার্দ জিহাদ বন্ধ হয়ে যায়। ইহা বন্ধ করা অবৈধ এবং প্রত্যেক অবৈধ মানা বাধ্যতামূলক নয়।

(৩) যেকোন শর্ত আল্লাহর শারীয়াকে বর্জন করলে অথবা ইসলামের কোন অংশকে উপেক্ষা করলে উক্ত শর্ত চুক্তিকে বাতিল করে। রাশিয়ার জন্য এই চুক্তি করা (আফগানিস্তানের সাথে) ঠিক নয় কারণ এটি জিহাদ এবং এর লক্ষ্যকে বাতিল করে দেয়।

(৪) যদি চুক্তিতে এমন কোন শর্ত থাকে যার কারণে মুসলিমরা অপমানিত হয় অথবা এই রকম পরিবেশ তৈরি হয় তবে এই রকম চুক্তি করা যাবেনা।

যুহরী (রহিমাহুল্লাহ) যেমনটি একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ[167] “যখন মুসলিমদের উপর চাপ বড় আকার ধারণ করল, তখন রসূল ﷺ একজনকে উয়াইনা ইবন হুসন বিন হানিফা বিন বাদর এবং হারিছ বিন আবী আউফ আল মুযনী (তারা বনী গাতফান এর প্রধান ছিল) এর কাছে পাঠালেন। তিনি ﷺ তাদেরকে এর তৃতীয়াংশ ফসলের ভাগ (মদিনার) প্রস্তাব দিলেন এই শর্তে যে, তাঁর ﷺ এবং তাঁর সাহাবীগণের কাছ থেকে তারা এবং তাদের সমস্ত বাহিনী চলে যাবে। তারা এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছিল কিন্তু তখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। যখন তিনি ﷺ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে যাবেন, তখন তিনি সাদ বিন মুয়ায ও সাদ বিন উবাদা (রদিআল্লাহু আনহু)-কে পাঠানোর চিন্তা করলেন। তিনি ﷺ তাদেরকে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, ‘তোমরা ভাল করে জানো, আরবরা আমাদের উপর একই তীর দিয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে (সম্মিলিতভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে)। তোমাদের কি অভিমত, যদি আমরা তাদেরকে মদিনার কিছু ফসল দেই?’ তাঁরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল ﷺ, যদি আপনি বলেন এটি আপনার মত, তাহলে আমরা আপনার মত অনুসরণ করবো। নতুবা আমরা ইতিপূর্বে তাদেরকে একটি খেজুরও দেইনি, তাদের কাছে বিক্রয় করা ছাড়া অথবা যখন তারা আমাদের মেহমান হত এবং এটি ছিল আমাদের মুশরিক থাকা অবস্থায়। কিন্তু এখন আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন।’ রসূল ﷺ তাঁদের কথা শুনে খুশি হলেন।”

আনসাররা অনুভব করছিল যে, তারা এতে অপমানিত হবে। অন্য আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আনসাররা উত্তর দিল, “আমরা তোমাদেরকে তরবারি ছাড়া আর কিছুই দিব না।”

(৫) শারীয়াহ বিরোধী কোন চুক্তি করা যাবে না। উদাহরণস্বরূপঃ

ক) এমন চুক্তি যার কারণে কাফিরদেরকে দুটি পবিত্র মসজিদের (সমগ্র আরব ভূমি) ভূমিতে বসবাসের অনুমতি দেয়া হয়। কারণ সহীহ হাদিসে এসেছে, রসূল ﷺ বলেছেনঃ “সমস্ত ইহুদী এবং নাসারাদেরকে জাজিরাতুল আরব (সমগ্র আরব ভূমি) থেকে বের করে দাও।”[168]

খ) মুসলিম মহিলাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠানোঃ “…যদি তারা সত্যিকার ঈমানদার হয় তবে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠাবেনা, তারা কাফিরদের জন্য হালাল নয় (স্ত্রী হিসেবে) এবং কাফিররাও তাদের জন্য হালাল নয় (স্বামী হিসেবে)…।”[169]

মুসলিম পুরুষদেরকে কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ফুক্বাহাগণের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। কিছু আলিম হুদায়বিয়ার সন্ধির উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন যে উহা জায়েয কিন্তু বাকী অধিকাংশ আলিমগণ বলেন যে হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনায় মুসলিমদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠানোর অনুমতি ছিল রসূল ﷺ-এর জন্য ‘খাস’, কারণ তিনি ﷺ জানতেন যে, আল্লাহ্ ঐ মুসলিমদের জন্য একটি পথ বের করে দিবেন। ইহাই অধিকাংশের মত। বারা ইবনু আজিব বলেছেনঃ “রসূল ﷺ হুদায়বিয়ার দিন কাফিরদের সাথে নিম্নের চুক্তিতে আবদ্ধ হলেনঃ

১. রসূল ﷺ-এর নিকট থেকে যে ব্যক্তি কাফিরদের নিকট চলে যাবে তাকে ফেরত দেয়া হবে না।

২. যে ব্যক্তি তাদের (কাফিরদের) নিকট থেকে চলে আসবে তাকে ফেরত দিতে হবে। রসূল ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের নিকট থেকে তাদের নিকট চলে যাবে আল্লাহ তাকে দূরে সরিয়ে দেবেন।”[170]

সহীহ মুসলিমের রিওয়ায়েতে অতিরিক্ত এসেছেঃ “…যে ব্যক্তি ওদেরকে (কাফিরদের) পরিত্যাগ করবে আল্লাহ্ তার জন্য পথ বের করে দেবেন।”[171]

(৬) একইভাবে, এমন কোন চুক্তি করা জায়েয নয় যাতে মুসলিম ভূমিতে কাফিররা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রকাশ্যভাবে করতে পারে। উদাহরণস্বরূপঃ চার্চ নির্মাণ করা, মিশনারিদের প্রকাশ্যে ঘোরা-ফেরা। এই সবকিছুই মুসলিম এবং তাদের ঈমানের উপর ফিতনা তৈরি করবে, বিশেষ করে জাজিরাতুল আরবের মধ্যে।

সুতরাং ফিলিস্তিনে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য যে চুক্তি করা হয়েছে তা শুরু থেকে বাতিল। যে কোন প্রকার সংশোধন জায়েয নয়। কিন্তু আফগানিস্তানে কিছু শর্তের অধীনে জায়েযঃ

১. সমগ্র মুসলিম ভূমি থেকে রাশিয়ান সৈন্যদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে।

২. প্রত্যাহারের পর যদি আফগানিস্তানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তবে পরবর্তীতে কোন হস্তক্ষেপ করা যাবে না। যেমনঃ রাজাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা অথবা এমন সংস্কৃতি চালু করা যাতে আফগানদের ঈমানকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়।

৩. অবশ্যই শর্তহীন ভাবে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ানদের অবশ্যই মুজাহিদীনদের ব্যাপারে আস্থা থাকতে হবে যে, তারা চুক্তির শর্ত সমূহ মেনে চলবেঃ

وَإِنْ جَنَحُوا لِلسَّلْمِ فَاجْنَحْ لَهَا وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

“তাহারা যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকিয়া পড়ে তবে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকিবে এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভর করিবে; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”[172]

আস-সুদ্দী (রহিমাহুল্লাহ্) এবং ইবনু জায়িদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “তারা (কাফিররা) যদি চুক্তির আহবান করে তবে সাড়া দিবে।”[173] ইবনু হাজার আল-হাইসামী[174] (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেনঃ “মাত্র একটি হারাম শর্তের কারণে সমগ্র চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। যেমনঃ এমন কোন শর্ত যাতে বন্দীদের মুক্ত করতে বাধা দেয়, দখলকৃত মুসলিম ভূমি থেকে শত্রু সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধা দেয়, কোন মুসলিম বন্দী মুক্ত হয়ে চলে আসলে তাকে ফেরত পাঠানো, কাফিরদেরকে হিজাজে (সমগ্র আরব ভূমি) বসবাস করতে দেয়া, আমাদের ভূমিতে মদকে প্রতিষ্ঠিত করা, তাদের নিকট থেকে যে মুসলিম আমাদের নিকট চলে আসে তাকে ফেরত দেয়া।”[175]

মুজাহিদীনদেরকেও অবশ্যই রাশিয়ানদের ব্যাপারে আস্থা থাকতে হবে যে, তারা একনিষ্ঠভাবে চুক্তির জন্য আহবান জানাবে এবং ধোঁকা দেবে না। যারা শুধু শান্তির মধ্যে থাকতে চায় অথবা মাঝামাঝি অবস্থায় থাকতে চায় তারা জিহাদের লক্ষ্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, যা হচ্ছে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করা। কারণ পশ্চিমা বিশ্ব কখনও এই চুক্তি মেনে নেবে না উপরন্তু তারা বাধা দিবে এবং বিরোধিতা করবে। এই লোকেরা জিহাদের মূল লক্ষ্য বুঝতে ব্যর্থ হয় এবং তাদের পরিষ্কার ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। অধিকন্তু এ সমস্ত লোকদের জিহাদে অংশ গ্রহণ করা অথবা নেতৃত্ব দেয়া জায়েয নয়।

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন,

فَإِنْ رَجَعَكَ اللَّهُ إِلَى طَائِفَةٍ مِنْهُمْ فَاسْتَأْذَنُوكَ لِلْخُرُوجِ فَقُلْ لَنْ تَخْرُجُوا مَعِيَ أَبَدًا وَلَنْ تُقَاتِلُوا مَعِيَ عَدُوًّا إِنَّكُمْ رَضِيتُمْ بِالْقُعُودِ أَوَّلَ مَرَّةٍ فَاقْعُدُوا مَعَ الْخَالِفِينَ

“যদি আল্লাহ্ তা’আলা (এ অভিযানের পর) তোমাকে এদের কোন একটি দলের কাছে ফেরত নিয়ে আসেন এবং তারা যদি তোমার কাছে (পুনরায় কোন যুদ্ধে যাবার) অনুমতি চায়, (তাহলে) তুমি বলো (না) কখনো তোমরা আমার সাথে (আর কোন অভিযানে) বের হবে না, তোমরা আমার সাথী হয়ে আর কখনো শত্রুর সাথে লড়বে না; কেননা তোমরা আগের বার (যুদ্ধের বদলে) পেছনে বসে থাকা পছন্দ করেছিলে, (আজ যাও) যারা পেছনে থেকে গেছে তাদের সাথে তোমরাও (পেছনে) বসে থাকো।”[176]

আল-কুরতুবী বলেছেনঃ “ইহা ইঙ্গিত দেয় যে, নির্বোধদেরকে জিহাদে অন্তর্ভূক্ত করা জায়েয নয়। অধিকাংশ ফুক্বাহাগণ বলেছেন জিহাদে অহংকারী, নিরাশাবাদী, সন্দিগ্ধ, কাপুরুষ ব্যক্তিদেরকে সেনা বাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত করা জায়েয নয়।”[177]

উপসংহার

পরিশেষে আমরা বলতে চাই যে, অনেক যুক্তি এবং দলিল প্রমাণ বর্ণনা করলে এই সমস্যা সমাধান হবে না বরং এগুলো অন্তর থেকে গ্রহণ করতে হবে আল্লাহ্ যদি অন্তরে নূর দেন শুধুমাত্র তাহলেই অন্তর হাক্ককে গ্রহণ করতে পারবে। এবং সমস্ত ব্যাপারগুলি প্রকাশিত হবে। অপরপক্ষে অন্তর যদি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয় তবে সে অন্তর দেখতে পায় না।

أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَا أَوْ آَذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا فَإِنَّهَا لا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَكِنْ تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ

“…বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয় বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।”[178]

অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা দলিল বুঝতে হয়, রবের আয়াত দিয়ে তাকওয়ার চাষ করতে হয়, আগ্রহ এবং আনুগত্যের মাধ্যমে ইবাদাত করতে হয়।

قَدْ جَاءَكُمْ بَصَائِرُ مِنْ رَبِّكُمْ فَمَنْ أَبْصَرَ فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ عَمِيَ فَعَلَيْهَا وَمَا أَنَا عَلَيْكُمْ بِحَفِيظٍ

“…তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ অবশ্যই এসেছে। সুতরাং কেউ তা দেখলে তার দ্বারা সে নিজেই লাভবান হবে, আর কেউ না দেখলে তাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি তোমাদের সংরক্ষক নই।”[179]

এই দৃষ্টিভঙ্গি অন্তর চক্ষু খুলে দেয়। যা শুধুমাত্র অধ্যয়নের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়। বরং এটা এমন এক বুঝশক্তি যা আল্লাহ্ তাঁর (কিতাব ও দ্বীনের জন্য) বান্দার প্রতি দান করেন অন্তরের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী। এই দৃষ্টিশক্তি একজনের অন্তরে উর্বর হতে থাকে যা সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন,

إِنَّ فِي ذَلِكَ لايَةً لِلْمُؤْمِنِينَ

“অবশ্যই ইহাতে মু’মিনদের জন্য রহিয়াছে নিদর্শন।”[180]

মুজাহিদ[181] (রহিমাহুল্লাহ্­) বলেছেন[182], রসূল ﷺ বলেছেনঃ “ঈমানদারের দৃষ্টির ভয় করবে কারণ একজন ঈমানদার সর্বশক্তিমান আল্লাহর নূর দ্বারা দেখে।” অতঃপর তিনি তেলাওয়াত করলেন,

إِنَّ فِي ذَلِكَ لايَةً لِلْمُؤْمِنِينَ

 “অবশ্যই ইহাতে মুমিনদের জন্য রহিয়াছে নিদর্শন।”[183]

যে সমস্ত আলিমগণ দুনিয়ার উপর আখেরাতকে প্রাধান্য দেয়, সে যেন অবশ্যই তার খুতবায়, উপদেশ দানের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে কথা বলে কারণ আল্লাহর অনেক আইন মানুষের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে নেতৃস্থানীয় মানুষদের তৈরি আইন। যারা নফসের খাহেশাত ও নিজের ইচ্ছা মত চলে তারা সবসময় হক্কের বিরোধিতা করে অথবা হক্কের একটা অংশ বর্জন করে। যে সমস্ত আলিমরা ক্ষমতাকে ভালবাসে এবং নিজের ইচ্ছামত চলে তারা সবসময় হক্কের বিরোধিতা করে, বিশেষ করে যখন ওদের অন্তরের সন্দেহ ঘনীভূত হয়, ফলে ওদের নিচু প্রবৃত্তি ওয়াস-ওয়াসার সম্মুখীন হয়। তখন সত্যকে লুকানো হয় এবং সত্যের চেহারাকে ঢেকে ফেলা হয়। যদি সন্দেহাতীতভাবে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় তখন সে নিজের অজুহাত হিসেবে বিতর্কিত বিষয় গ্রহণ করে।

তাদের জন্য এবং তাদের মত লোকদের জন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন,

فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا

“…উহাদের পরে আসিল অপদার্থ পরবর্তীগণ, তাহারা সলাত নষ্ট করিল (সলাত না পড়ার মাধ্যমে অথবা পরিপূর্ণভাবে না পড়ার মাধ্যমে অথবা নির্দিষ্ট সময়ে না পড়ার মাধ্যমে) ও লালসার পরবশ হইল।”[184]

আল্লাহ্ তাদের ব্যাপারে আরো বলেছেন,

فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَرِثُوا الْكِتَابَ يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَذَا الْأَدْنَى وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا وَإِنْ يَأْتِهِمْ عَرَضٌ مِثْلُهُ يَأْخُذُوهُ أَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِيثَاقُ الْكِتَابِ أَنْ لا يَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلا الْحَقَّ وَدَرَسُوا مَا فِيهِ وَالدَّارُ الْآَخِرَةُ خَيْرٌ لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ أَفَلا تَعْقِلُونَ

“(কিন্তু) তাদের (অযোগ্য) উত্তরসূরিরা (একের পর এক) এ জমীনে উত্তরাধিকারী হলো, তারা আল্লাহ্ তা’আলার কিতাবেরও উত্তরাধিকারী হলো, তারা এ দুনিয়ার ধন-সম্পদ করায়ত্ত করে নেয়, (অপরদিকে মূর্খের মতো) বলতে থাকে, আমাদের (শেষ বিচারের দিন) মাফ করে দেয়া হবে, কিন্তু (অর্জিত সম্পদের) অনুরূপ সম্পদ যদি তাদের কাছে এসে পড়ে, তারা সাথে সাথেই তা হস্তগত করে নেয়, (অথচ) তাদের কাছ থেকে আল্লাহ্ তা’আলার কিতাবের এ প্রতিশ্রুতি কি নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ্ তা’আলা সম্বন্ধে সত্য ছাড়া কিছু বলবে না! আল্লাহ্ তা’আলার সেই কিতাবে যা আছে তা তো তারা (নিজেরা বহুবার) অধ্যয়নও করেছে, আর পরকালীন ঘরবাড়ি! (হাঁ) যারা (আল্লাহকে) ভয় করে তাদের জন্যে তো তাই হচ্ছে উত্তম (নিবাস), তোমরা কি (এ বিষয়টি) অনুধাবন করো না?”[185]

নফসের খাহেশাত অনুসরণ করার কারণে অন্তর্চক্ষু অন্ধ হয়ে যায়। ফলে সে ‘সুন্নাহ’ ও ‘বিদআত’ এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। ইহা প্লেগের মত রোগ। আলিমগণ যখন দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়, নফস এবং নেতাদের হুকুম মত চলে তখন এই রোগ তাদের মধ্যে ঢুকে।[186] তাদের বর্ণনা নিম্নের আয়াতে আসছেঃ

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آَتَيْنَاهُ آَيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ

وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلَكِنَّهُ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْ ذَلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآَيَاتِنَا فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

“(হে মুহাম্মাদ,) তুমি তাদের কাছে (এমন) একটি মানুষের কাহিনী (পড়ে) শোনাও, যার কাছে আমি (নাবীর মাধ্যমে) আমার আয়াতসমূহ নাযিল করেছিলাম, সে তা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, অতঃপর শয়তান তার পিছু নেয় এবং সে সম্পূর্ণ গোমরাহ লোকদের দলভুক্ত হয়ে পড়ে। (অথচ) আমি চাইলে তাকে এ (আয়াতসমূহ) দ্বারা উচ্চ মর্যাদা দান করতে পারতাম, কিন্তু সে তো (ঊর্ধ্বমুখী আসমানের বদলে) নিম্নমুখী জমীনের প্রতিই আসক্ত হয়ে পড়ে এবং (পার্থিব) কামনা-বাসনার অনুসরণ করে। তার উদাহরণ হচ্ছে কুকুরের উদাহরণের মতো, যদি তুমি তাকে দৌড়াতে থাকো তবু সে (জিহ্বা বের করে) হাঁপাতে থাকে, আবার তোমরা সেটিকে ছেড়ে দিলেও সে (জিহ্বা ঝুলিয়ে) হাঁপাতে থাকে, এ হচ্ছে তাদের দৃষ্টান্ত যারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে, এ কাহিনীগুলো (তাদের) তুমি পড়ে শোনাও, হয়তো বা তারা চিন্তা গবেষণা করবে।”[187]

শুধুমাত্র দলীল উপস্থাপন করাই যথেষ্ট নয়, কারণ আলোকিত অন্তর দ্বারা সত্যকে উপলব্ধি করা যায়। অন্তর যখন দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং এই অন্তরের মানুষটা যখন গুনাহের মধ্যে হাবুডুবু খায় তখন ‘রন’ (কালো দাগ) দ্বারা অন্তর ঢেকে যায়। কারণ প্রত্যেক গুনাহের জন্য অন্তরে একটা করে দাগ পড়ে। এই কালো দাগ গুলি অন্তরে বাড়তে থাকে এবং একসময় ‘রন’ দ্বারা অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এবং এই ‘রন’-ই অন্তরকে আলোকিত হতে বাধা দেয়। যখন অন্তর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়, তখন যে কোন জিনিসকে আর সত্যিকার রূপে দেখা যায় না, যেমনঃ সত্য ঘোলাটে হয়ে যায় এবং ইহার স্বরূপ প্রকাশিত থাকে না। অন্তরটা বদলিয়ে যায় এবং হক্ককে বাতিল হিসেবে দেখে এবং বাতিলকে হক্ক হিসেবে দেখে।

অন্তরে অবশ্যই তাক্বওয়া থাকতে হবে যাতে উপলব্ধি করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অন্তর পরিষ্কার হয় এবং ইহা প্রতিটি জিনিস এর আসল রূপকে নির্ণয় করতে পারে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ

“হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে আনুগত্য কর এবং ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ফুরকান (সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করার মানদণ্ড অথবা মাখরাজ, অর্থাৎ প্রতিটি কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়), এবং তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং আল্লাহ্ অতিশয় মঙ্গলময়।”[188]

পূর্বযুগীয় আলিমগণ যখনই কোন প্রশ্ন উত্তর দানে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতেন তখন তারা বলতেন, “যুদ্ধের ময়দানে মুজাহিদদের প্রশ্ন করো কারণ তারা আল্লাহর সবচাইতে নিকটে আছে”, তারা আহমাদ বিন হাম্বলকে প্রশ্ন করেছিল “আপনার পরে আমরা কাকে প্রশ্ন (জানার জন্য) করবো?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “আবু বাক্বর আল ওয়ারাক কে জিজ্ঞেস করবে কারণ সে সেরকম তাক্বওয়ার অধিকারী যেরকম থাকা উচিত এবং আমি আশা করি সে উত্তর দানে সফল হবে।”

একটি সহীহ্ হাদীসে এসেছে রসূল ﷺ বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বের জাতিতে প্রেরণা দানকারী লোক ছিল (যারা নাবী নয়), এবং আমার উম্মতে যদি এমন কেউ থেকে থাকে সে অবশ্যই উমার (রদিআল্লাহু আনহু)।”[189] এবং উমার (রদিআল্লাহু আনহু) সত্যিই এমন ছিলেন।

আয়িশা (রদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আর একটি সহীহ হাদীসে এসেছে যে, “রসূল ﷺ যখন রাতের সলাতে দাঁড়াতেন তখন তিনি এই বলে শুরু করতেনঃ হে জিবরাইল ও মীকাঈলের রব, আসমান ও যমীনের উৎপত্তিকারী, দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, বান্দাদের বিবাদপূর্ণ বিষয়ের ব্যাপারে ফয়সালা কারী, তারা যখন হক্কের ব্যাপারে মত পার্থক্য করে তখন আপনি আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আপনি যাকে চান তাকেই হিদায়াত দিয়ে থাকেন।”[190]

পরিশেষে, আমরা বরকতপূর্ণ আয়াত দিয়ে দু’আ করছিঃ

قَدِ افْتَرَيْنَا عَلَى اللَّهِ كَذِبًا إِنْ عُدْنَا فِي مِلَّتِكُمْ بَعْدَ إِذْ نَجَّانَا اللَّهُ مِنْهَا وَمَا يَكُونُ لَنَا أَنْ نَعُودَ فِيهَا إِلا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّنَا وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَأَنْتَ خَيْرُ الْفَاتِحِينَ

“…হে আমাদের রব! আনুগত্যের ব্যাপারে আমাদের এবং আমাদের জাতির মধ্যে ফয়সালা করে দিন, আপনি হচ্ছেন সবেচেয়ে উত্তম ফায়সালাকারী।”[191]

আমরা সহীহ মুসলিম থেকে বর্ণিত সেই দু’আর পুনরাবৃত্তি করছি যা রসূল ﷺ করতেনঃ “হে আল্লাহ! তারা সত্যের ব্যাপারে যে বিবাদ করছে তা থেকে আপনি আমাদেরকে হিদায়াত দান করুন। আপনি যাকে চান হিদায়াত দান করে থাকেন। হে আমাদের রব! আমাদের এবং ঈমানে অগ্রগামী ভাইদের ক্ষমা করে দেন এবং আমাদের অন্তরে কোন মু’মিনদের প্রতি বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব! আপনি অসীম দয়ালু এবং করুণাময়।”

হে আল্লাহ! আমাদের জীবনে পরিতৃপ্তি দান করুন এবং শহীদ হিসেবে মৃত্যুদান করুন এবং মুহাম্মাদ ﷺ এর জামা’য়াতের অন্তর্ভূক্ত করুন। হে আল্লাহ! আপনি মহিমাময় এবং সমস্ত প্রশংসা আপনার, আমি সাক্ষী দিচ্ছি আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই এবং আপনার কাছে তওবা করি।

[1] সূরা আস্-সাফঃ ৪

[2] সূরা নিসাঃ ৬৯

[3] সূরা তাওবাহ্ঃ ৩২-৩৩

[4] ফাতওয়াঃ আলিমগণের দ্বারা ইসলামের কোন বিষয়ে রায় প্রদান করা।

[5] এই কিতাবটি যখন ভাল ভাবে লিখা শেষ হয়েছিল তখন শাইখ বিন বাজ মারা যান, ১৯৯৯ সালে।

[6] সালাফঃ সত্যনিষ্ঠ পূর্ববর্তী আলিমগণ, এখানে রসূল ﷺ এর পরে তিনটি যুগের কথা বুঝানো হয়েছে।

[7] মুহাদ্দিসঃ হাদিসশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ।

[8] আব্দুর-রাব্ব রসূল সাইয়াফঃ এই কিতাবটি লেখা হয়েছিল সাইয়াফের কমিউনিস্ট নর্দান এ্যালাইন্সে এবং আমেরিকার সাথে মিত্রতা করার পূর্বে।

[9] মুসনাদে আহমেদ, তাফসীরে তাবারানী, সহীহ আল-জামিয়া আল সাগীর:২৮২৮ – আলবানী

[10] সূরা বাকারাঃ ২৫১

[11] সূরা হাজ্জঃ ৪০

[12] মুসনাদে আহমেদ, সহীহ। সিলসিলাহ আল-আহাদিস আস-সাহীহা (৫৫৪)

[13] ইবনে ফরদ্, শাইখুল ইসলাম তাকিউদ্দিন বিন আহমদ। দেখুন পরিশিষ্ট খ নং-১

[14] মাজমুয়া আল ফাতওয়া ২৮/১৫৭

[15] সূরা তাওবাহ্ঃ ৩৯

[16] আবু দাউদ, বুখারী, সহীহ। সহীহ আল-জামিয়া (৩৬০৩)

[17] সূরা আস-সাজদাহ্ঃ ২৪

[18] আহমদ, তাবারানী, বায়হাকী-হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামী#৩৭৩৯

[19] সূরা মারইয়ামঃ ৫৯

[20] সহীহ আল-জামিয়া আস সাগীর: ১৮৭৪

[21] আবু দাউদ-সহীহ, আহমদ – উত্তম সনদে ‘ক্বিতালের প্রতি ঘৃণা’ – এই শব্দ সহকারে, সিলসিলাহ আল হাদীস আস সহীহ (৯৫৮)

[22] হাসিয়াত বিন আবেদীনঃ ৩/২৩৮

[23] জিজিয়াঃ ইসলামী রাষ্ট্রে কাফিরদের নিরাপত্তার জন্য দেয়া কর বিশেষ।

[24] হাসিয়াহ আশ শিরওয়ানী এবং ইবনে আল কাসিম (তুহ্ফা আল-মুহতায আলাল-মিনহাজ ৯/২১৩)

[25] কিতাব আল-ইখতিয়ারাত আল-ইলমিয়্যাহ-ইবনে তাইমিয়্যাহ আল-ফাতওয়া কুবরা-৪/৬০৮

[26] আবু হানিফা, নুমান বিন সাবিত

[27] ইবনু আবিদীন, মুহাম্মদ আমীন আল হানাফী।

[28] হাসিয়াত ইবনু আবিদীন- ৩/২৩৮।

[29] আল-কাসানি, আবু বাকার বিন মাসুদ।

[30] বিদায়া আস্-সানায়া ৭/৭২।

[31] ইবনে নাজিম, ইব্রাহীম আল-মিসরী আল-হানাফী

[32] আল বাহর আর রায়িক ৫/১৯১।

[33] ইবনু হাম্মাম, আল-কামাল।

[34] ফাতহ্ আল-ক্বাদির ৫/১৯১

[35] ইমাম মালিক বিন আনাস বিন মালিক।

[36] আদ্-দুসুকী, ইব্রাহীম।

[37] হাশিয়াত আদ্-দুসুকী ২/১৭৪

[38] ইমাম আশ-শাফীঈ, মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস বিন আব্বাস।

[39] আর-রামলী, আহমদ।

[40] নিহায়াত আল মাহতাজ।

[41] ইমাম আহমাদ বিন মুহাম্মদ বিন হাম্বলী, আশ্-শাইবানী

[42] ইবনু কুদামা আল মাকদিসী, মুয়াফিক উদ্দীন আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ বিন আহমাদ আল-হাম্বলী

[43] আল-মুঘনি ৮/৩৫৪

[44] ফাতওয়া আল কুবরা-৪/ ৬০৮

[45] সূরা তাওবাহ্ঃ ৪১

[46] সূরা তাওবাহঃ ৩৯

[47] ইবনু কাসীর, আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন আবি হাফস শিহাব উদ্দীন উমার বিন কাসীর বিন দাউবিন কাসীর বিন যার আল কুরাইশী

[48] মুখতাছির ইবনে কাছির ২/১৪৪

[49] হাসান আল-বাসরী, আল হাসান বিন আবিল হাসান ইয়াসার আবু সাঈদ আল বাসরী

[50] সূরা আনফালঃ ৭২

[51] মাজমুয়া আল-ফাতওয়া ২৮/৩৫৮

[52] আয-যুহুরী, মুহাম্মদ বিন মুসলিম বিন আব্দুল্লাহ বিন সিহাব

[53] সাইয়িদ বিন আল-মুসাইয়্যিব, আবু মুহাম্মদ।

[54] আল-জামী’ লিল আহকাম আল-কুরআন- ৮/১৫০।

[55] আল মুত্তাকুনঃ মানে হচ্ছে ধার্মিক এবং সৎকর্মশীল ব্যক্তি যে আল্লাহকে বেশী ভয় পায় (সমস্ত হারাম কাজ থেকে দূরে থাকে) এবং আল্লাহকে বেশী ভালবাসে (আল্লাহর হুকুম মানার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে)।

[56] সূরা তাওবাহ্ঃ ৩৬

[57] ইবন আল আরাবী, কাজী আবু বকর মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ্ আল ইসবীলি।

[58] আল-জামি’ লী আহকাম আল কুরআন ৮/১৫০।

[59] সূরা আনফালঃ ৩৯

[60] আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস

[61] আস্-সুদ্দী, ইসমাঈল বিন আব্দুর রহমান।

[62] আল-কুরতুবী- ২/২৫৩

[63] হিজরতঃ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এক ভূমি থেকে আরেক ভূমিতে প্রত্যাগমন করা।

[64] সহীহ আল-বুখারী হতে সংগৃহীত

[65] ইবনু হাজার আল আসকালানী, আবুল ফাদল শিহাবুদ্দিন আহমেদ বিন আলী বিন মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ বিন আহমেদ আল-কিনানী আশ শাফেঈ।

[66] আল-কুরতুবী, মুহাম্মাদ বিন আহমেদ বিন আবী বাকার রফাহ, আবু আব্দুল্লাহ্ আল-আনসারী

[67] ফাত্হুল বারী- ৬/৩০

[68] জামী আল-আহকাম- ৮/১৫০

[69] আরবী শব্দে ‘আরদ’-এর অর্থের মধ্যে মহিলা অন্তর্ভূক্ত

[70] হাশিয়াত ইবনে আবেদীন ৫/৩৩৮,জিলাঈ ৬/১১০, মুওয়াহিব আল জালিল ৬/৩২৩, তাফা আল মাজতাজ ৪/১২৪, আল-ইন্না ৪/২৯০, আল-রাওদা আল-বাহিয়া ২/৩৭১, আল-বাহর আয-যুখার ৬/২৬৮।

[71] সহীহ আল জামিআ আল সাগীর আলবানী ৬৩২১-মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ

[72] আল-জাস্সাস, আবু বাকর আর-রাজী

[73] আহকাম আল-কুরআন–জাস্সাস ১/২৪০২।

[74] মাজমু আল-ফাতওয়া- ২৮/৫৩৭

[75] সূরা হুজরাতঃ ৯

[76] সূরা মায়েদাঃ ৩৩

[77] আল বুখারী, মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইব্রাহীম

[78] ইমাম মুসলিম বিন হাজ্জাজ আল কুশাইরী আন-নিসাপূরী

[79] ফাত্হ আল-রাব্বানী। তারতীব মুসনাদ আল-ইমাম আহমাদ আস্-সাইবানী- (আহমেদ আব্দুর রহমান আল-বান্না)- ৮/১২৮

[80] আল ফাতওয়া আল-কুবরা- ৬/৬০৮।

[81] সূরা নিসাঃ ৭৫

[82] আল উমম- ৪/১৭৭।

[83] সূরা তাওবাহঃ ৪২

[84] আল-মুগনী- ৮/৩৭৫।

[85] আর-রাজি, ফখর উদ্দীন।

[86] আল-মাহসুম (আর-রাজি)। ডঃ তাহা-জাবির কর্তৃক সমর্থিত।

[87] উসূল আল-ফিক্ (আবি জাহরা)

[88] ইবনে হাজিব, উসমান বিন উসমান

[89] আল আমদি, সাইফুদ্দিন

[90] আল্-ফাতওয়া আল-কুবরা- ৪/৬০৭।

[91] ইবনে হিব্বান, আবু হাতীম মুহাম্মাদ বিন হিব্বান বিন আহমেদ বিন হিব্বান আল-বুশতী

[92] ফাত্হুল বারী- ৬/১০৫।

[93] ফাত্হুল বারী- ৬/১০৬। ইবনে হিব্বান কর্তৃক বর্ণিত।(সহীহ) এবং ইবনে হাজার কর্তৃক সমর্থিত, তিনি বলেছেন ইহা হয় হাসান অথবা সহীহ (ফাত্হুল বারী)

[94] ফাত্হুল বারী- ৬/১০৬।

[95] ইবনু হুবাইরা। ওয়াজির বিন হুবাইরা আল-হাম্বলী।

[96] ইবনে মাজাহ, আত-তাবারানী, আল-বায়হাকীতে বর্ণিত আছে, আল-হাকীম কর্তৃক সহীহ প্রমাণিত, আদ্-দাহাবী কর্তৃক সমর্থিত এবং ইবনে হাজার বলেছেন ইহা একটি হাসান সনদ, আল-ফাত্হ আর-রাব্বানী- ১০/৯৫।

[97] ফিতনাঃ পরীক্ষা এবং যন্ত্রণা যেমনঃ কবরের সওয়াল জবাব, দাজ্জালের ফিতনা (the Anti-Christ)

[98] মুখতাসার মুসলিম-১০৭৫।

[99] আল-হাকীম, বায়হাকী, সহীহ আল-জামী-১০৮৮।

[100] আহমেদ, আল-হাকীম, আদ-দারেমী সহীহ, সহীহ আল-জামী আল-সাগীর-৪৩০৫

[101] আহমেদ সহীহ, সহীহ আল-জামী আল-সাগীর-৪৩০৫

[102] আন্-নাসাঈ, সহীহ, সহীহ আল-জামী আল-সাগীর-৪৩৫৯।

[103] আল-বুখারী, সিলসিলাহ আল-হাদিস-আস-সহীহ-১০।

[104] আবু দাউদ, সহীহ, সিলসিলা আল-হাদীস আস-সহীহ-১১।

[105] দাইয়াঃ

[106] আত-তিরমিযী, সিলসিলা আল-হাদীস আস-সহীহ-১২।

[107] ফাতওয়া আল কুবরা- ৪/৬০৮।

[108] ফাতওয়া আল কুবরা- ৪/৬০৮।

[109] আল-কুরতুবী-২/২৪২।

[110] আল-মালিকী-২/২৪২।

[111] ইবনে রুশদ, ওয়ালিদ বিন আহমেদ।

[112] ফাতওয়া আল কুবরা- ৪/৬০৮।

[113] আল-বুখারী, মুসলিম।

[114] আল-মুসলিম।

[115] আল-বুখারী, মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত। সহীহ আল-জামী’ আস-সাগীর-৩৯৬৭।

[116] হাদীস সহীহ আহমদ ও হাকিম, সহীহ আল জামি আস-সাগীর হাদীস নং, ২৩২৩

[117] আহমেদ, সহীহ, সহীহ আল-জামী’ আস-সাগীর-৭৩৯৭

[118] ১১৮ আহমেদ, নাসাঈ, সহীহ নাইল আল-আউতার-৮/৩৭।

[119] সূরা তাওবাহঃ ৪৪-৪৫

[120] আল-আউযাই, আবু উমার আবদুর-রহমান বিন আমীর।

[121] আল-রামলী, নিহায়াতুল-মুথাজ- ৮/৬০।

[122] আল-বালকিনী, সিরাজুদ্দিন।

[123] আল-বালকানী, সিরাজুদ্দিন উমার

[124] ফাত্হ আল-আলী আল-মালিকী কর্তৃক সহীহ আলিশ-১/৩৯০

[125] আবু দাউদ, আহমেদ, আল-হাকীম কর্তৃক সহীহ প্রমাণিত এবং আয্-যাহাবী এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন, ফাত্হ আর রাব্বানী।

[126] আল-মুগনী-৮/২৫৩।

[127] ফাত্হ আল-আলী আল-মালিক-১/৩৮৯।

[128] সহীহ মুসলিম

[129] সহীহ মুসলিম

[130] সূরা নিসাঃ ৮৪

[131] আনফালঃ ৩৯

[132] আবু ইসহাক, ইব্বারিম বিন মুহাম্মদ বিন আল-ইশফারা।

[133] আহমদ, আল-হাকীম বলেছেন সহীহ এবং আয্-যাহাবী সমর্থন করেছেন।

[134] সূরা নিসাঃ ৮৪

[135] “তুমি যাহা উল্লেখ করলে তাহা মাল খরচের ব্যাপারে” এটা আসছে নিম্নের আয়াত হতে “আল্লাহর পথে খরচ কর এবং নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংস করোনা।” অর্থাৎ আল্লাহর পথে (জিহাদ এবং অন্যান্য খাতে) ব্যয় না করা মানে হচ্ছে ধ্বংস। আল ফাতহ আল রব্বানী (১৪/৮)

[136] আহকাম আল-কুরআন-২/৯৫৪

[137] আহমদ এবং আবু দাউদ, হাসান।

[138] মাজমুয়া আল-ফাতওয়া-২৮/৫০৬।

[139] আশ-শাওকানী, মুহাম্মদ বিন আলী

[140] নাইল আল-আউতার-৮/১২৮

[141] সহীহ মুসলিম, নাইল আল-আউতার-৭/১২৮

[142] আহমদ এবং আত-তাবারানী।

[143] তাহতীব আল-আশমা ওয়াল-লুঘাত-২৬৩

[144] আল-বুখারী, আবু হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত

[145] নাইল আল-আউতার-৮/৪৪।

[146] মুহাম্মদ বিন আল-হাসান আশ-শাইবানী।

[147] শারহ্ কিতাব আশ-সিয়ার ফুকারা-২০১।

[148] আহকাম আল কুরআন, জাস্সাস কর্তৃক।

[149] ইবনে আল-কাসীম আল মালিকী

[150] আল-মাদুনা-২/৪০।

[151] আল-কুরতুবী-৮/১০০।

[152] নিহায়া আল-মুহতাজ ৮/৫৮ এবং তাকমিলাহ আল-মাজমুয়া-১৯/২৮।

[153] আল-মুগনী-৮/৪১৪।

[154] সূরা তাওবাহঃ ৩৬

[155] সূরা তাওবাহঃ ৫

[156] ইবনে আল-কাইয়্যুম, আবু আব্দুল্লাহ আল-জাওজিয়া।

[157] হাশিয়াত বিন আবিদীন-৩/২৩৯।

[158] সূরা হিজরঃ ৯৪

[159] সূরা নাহলঃ ১২৫

[160] সূরা হাজ্জঃ ৩৯

[161] সূরা বাকারাঃ ১৯০

[162] সূরা তাওবাহ্ঃ ৫

[163] সূরা বাকারাঃ ১৯০

[164] সূরা কাফিরূন

[165] সূরা আরাফঃ ১৯৫-১৯৬

[166] ফাত্হ আলী- ১/২৮৯।

[167] ই’লা আস-সুনান- ১২/৮ Strong, with an interrupted chain of narration 44.

[168] সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, আল-ফাত্হ আল রাব্বানী-১৪/১২০।

[169] সূরা মুমতাহিনাঃ ৪০

[170] সহীহ বুখারী এবং মুসলিম-এ বর্ণিত।

[171] আল-কুরতুবী-৮/৩৯

[172] সূরা আনফালঃ ৬১

[173] হাসীয়াহ আশ-শিরওয়ানী এবং ইবনে আল-কাসীম তার লিখিত তুহফাহ আল-মুহতিজ ৯/৩০৬।

[174] ইবনে হাজার আল হাইসামী, আহমদ বিন মুহাম্মদ।

[175] আল-কুরতুবী-৮/৩৯।

[176] সূরা তাওবাহ্ঃ ৮৩

[177] আল-কুরতুবী-৮/২১৮।

[178] সূরা হাজ্জ: ৪৬

[179] সূরা আনআম: ১০৪

[180] সূরা হিজর: ৭৭

[181] মুজাহিদ বিন জুবাইর আল-মাক্কী

[182] তিরমিযী কর্তৃক সংগৃহিত, আবু সাইদ আল খুদরী (রদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত

[183] সূরা হিজর: ৭৭

[184] সূরা মারিয়ামঃ ৫৯

[185] সূরা আরাফঃ ১৬৯

[186] আল ফাওয়ায়ীদ- ১১৩-১১৪।

[187] সূরা আরাফঃ ১৭৫-১৭৬

[188] সূরা আনফালঃ ২৯

[189] সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত।

[190] সহীহ মুসলিম।

[191] সূরা আরাফঃ ৮৯

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 13 =

Back to top button