অডিও ও ভিডিওআত-তিবইয়ান পাবলিকেশন্সইলম ও আত্মশুদ্ধিবই ও রিসালাহবাংলা প্রকাশনামিডিয়া

মাশারী আল-আশওয়াক্ব ইলা মাশারী আল-উশাক্ব – ইবনে নুহাস রহঃ

মাশারী আল-আশওয়াক্ব ইলা মাশারী আল-উশাক্ব

– ইবনে নুহাস রহঃ

http://www.pdf-archive.com/2014/02/27/mashari-al-ashuak-ila-mashari-al-ushak/

https://islamisangkolon.files.wordpress.com/2011/05/al-mas-al-ashq-in-bangla.pdf

অডিও বাংলা ডাউনলোড করুন নিচের লিংক থেকে।

part-1

Part-2

Part-3

Part-4

Part-5

Part-6

Part-7

Part-8

Part-9

সবগুলো অডিও একসাথে ডাউনলোড করুন্।

PDF
https://www.mediafire.com/file/j43flyb9jt6lqj5/mashari_al_asauyaq_ila_mashari_al_ushaq.pdf/file

ZIP
https://www.mediafire.com/file/jyc80py5obkl091/MashariAlAshwaqIlaMasariAlUshaaq201512.zip/file

আত্তিবয়ান পাবলিকেশন্স – এর পক্ষ হতে বিতরণ সংক্রান্ত বিশেষ অনুরোধঃ প্রকাশকের টীকাসহ এই গ্রন্থের সকল অংশে যে কোন প্রকার – যোগ – বিয়োগ, বাড়ানো – কমানো অথবা পরিবর্তন করা যাবে না, এই শর্তে, যে কোন ব্যক্তি এই প্রকাশনা প্রচার বা বিতরণ করার অধিকার রাখেন।

সূচীপত্র

অনুবাদকের ভূমিকা… 7

মূল গ্রন্থের ভূমিকাঃ…. 8

জিহাদের অর্থ.. 8

জিহাদের হুকুমঃ9

জিহাদকে ছোট এবং বড় শ্রেণীতে বিভক্তকরণঃ10

১ম অধ্যায়ঃ অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদের নির্দেশ এবং এর আবশ্যকতা এবং তাদের জন্য কঠোর সতর্কতা যারা জিহাদ করেনা।. 13

যুদ্ধের আদেশঃ… 13

জিহাদ কি ফারদ কিফায়া নাকি ফারদ আইন?. 17

যারা জিহাদে অংশগ্রহণ করে না তাদের শাস্তিঃ…. 19

যারা পিছন পড়ে থাকে তাদের জন্য একটি উপদেশ.. 21

দীর্ঘ জীবন কামনা… 21

পরিবারের সাথে সম্পৃক্ততা… 22

সম্পদের প্রতি ভালবাসা… 22

সন্তান সন্ততির প্রতি ভালবাসা এবং তাদের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া… 23

আপনার বন্ধু বান্ধব.. 23

ক্ষমতা ও মর্যাদা… 24

আরামদায়ক জীবনযাপনের প্রতি আসক্তি…. 24

অধিক সৎকর্ম করার জন্য দীর্ঘায়ু কামনা… 25

স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা… 25

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ মুজাহিদীন এবং জিহাদের মর্যাদা.. 27

জিহাদের মর্যাদাঃ…. 27

সালাত এবং আপন মাতা – পিতার প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার পর জিহাদই হল সর্বোত্তম আমলঃ… 28

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের পর সবচেয়ে মহৎ কাজ হল জিহাদঃ… 28

জিহাদ, আল্লাহর গৃহে ইবাদত করা এবং এর দেখাশোনা করা এবং হাজ্জীদের সাহায্য করা হতে উত্তমঃ… 29

জিহাদ যে সর্বোত্তম কাজ সে সম্পর্কে প্রমাণসমূহঃ… 29

জিহাদ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজঃ…. 30

মুজাহিদ সকল মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠঃ… 31

কেউই জিহাদের সমতুল্য কোন ইবাদত করতে পারে নাঃ…. 31

মুজাহিদের ঘুম অন্যদের সারারাত প্রার্থনা এবং রোজা অপেক্ষা উত্তম এর প্রমাণ সমূহঃ… 32

এই জাতির রাহবানিয়াহ (সন্ন্যাসবৃত্তি) এবং সিয়াহা (আল্লাহর ইবাদতের জন্য পৃথিবী ভ্রমণ করা) হল জিহাদঃ    32

ইসলামের চূড়া হল জিহাদঃ… 33

মুজাহিদদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াদাঃ…. 33

আল্লাহ কখনও মুজাহিদীনদের পরিত্যাগ করেন না বরং তাদের সাহায্য করেন এবং তাদের ডাকে সাড়া দেনঃ    34

মুজাহিদীনদের বিভিন্ন প্রতিদান সমূহঃ… 34

‘জিহাদের অবস্থান হজ্জের উপর’ – এর প্রমাণঃ… 36

জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণের মর্যাদাঃ…. 37

আল্লাহর পথে ধূলিকণার গুরুত্বঃ… 40

জিহাদের নিমিত্তে সমুদ্রপথ যাত্রার গুরুত্বঃ… 40

ঘোড়া এবং তা জিহাদের জন্য সংরক্ষণ করার গুরুত্বঃ… 41

আল্লাহর পথে ভীতির গুরুত্বঃ… 42

যুদ্ধের মাঠে সৈন্য সারিতে দাঁড়ানোর গুরুত্বঃ… 42

৩য় অধ্যায়: আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়ের উৎকর্ষসমূহ. 44

ব্যয়ের বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা: 46

আল্লাহর জন্য পথে যোদ্ধাদের জন্য সরবরাহ করার নৈতিক উৎকর্ষ এবং তাদের পরিবার গুলির দেখাশুনা করাঃ     51

৪র্থ অধ্যায়: রিবাতের উৎকর্ষ এবং সেই ব্যক্তির উৎকর্ষ যে রিবাতে মৃত্যুবরণ করে… 53

দন্ডায়মান হওয়ার (সীমান্ত প্রহরী) সময়.. 56

আল্লাহর পথে পাহারা দেওয়ার মূল্যঃ…. 57

অধ্যায় ৫: লক্ষ্যভেদ করার উৎকর্ষ এবং এর নিয়মাবলী… 59

লক্ষ্যভেদ করার উৎকর্ষ.. 59

যারা ধনুর্বিদ্যা শিক্ষা করে এবং পরে তা পরিত্যাগ করে তাদের জন্য সতর্কবাণী… 62

তলোয়ার চালনার উৎকর্ষ.. 62

অধ্যায় ৬: আল্লাহর রাহে আহত হওয়ার উৎকর্ষ. 64

অধ্যায়ঃ ৭ – আল্লাহর জন্য অবিশ্বাসী/কাফির হত্যা করার উৎকর্ষ. 67

অধ্যায়ঃ ৮ – শাহাদাহ – র উদ্দেশ্যে বা শত্রুদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কুফফারদের বিশাল বাহিনী/আর্মিতে একজন ব্যক্তি বা ছোট কোন দলের ঝাঁপিয়ে/ঢুকে পড়ার গুণাবলী… 69

অধ্যায়ঃ ৯ – দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার উৎকর্ষ. 77

অধ্যায়ঃ ১০ – যুদ্ধের মাঝে যে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে তার জন্য কঠিন, ভয়াবহ শাস্তি… 79

অধ্যায় ১১ – জিহাদের বিভিন্ন নিয়্যতসমূহঃ… 81

অধ্যায় ১২: – শাহাদাহর জন্য প্রার্থনা করা এবং তা লাভ করা.. 89

শাহাদাহ্‌ – র ফযীলতঃ…. 92

মাটি শহীদদের শরীর ধ্বংস করেনাঃ…. 93

শহীদদের বৈশিষ্ট্য (ফযীলত) 94

সপ্তদশ অধ্যায় – যুদ্ধের কৌশল.. 102

অনুবাদকের ভূমিকা

মূল লেখকের পরিচিতিঃ

আহমাদ ইব্রাহীম মুহাম্মাদ আল-দীমাশকী আল-দুমইয়াতি (মৃত্যু ৮১৪ হিজরি); যিনি আবি যাকারিয়া বা ইবন নুহাস নামেও পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী ব্যক্তি এবং পূর্ব থেকেই একজন মুজাহিদ। এবং একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত হাফিজ ইবন হাযার আল-আসকালানি মন্তব্য করেনঃ ”দুমইয়াতের প্রথম সারিতে তিনি ছিলেন জিহাদ থেকে অবিচ্ছেদ্য এবং এটি একটি যথাযথ ও পরমোৎকৃষ্ট গুণ।”

যা অন্যান্য পন্ডিতগণ তার সম্পর্কে বলেনঃ

আস-সাখোওয়ী (ইবন হাযর এর বিশিষ্ট ছাত্রদের একজন) বলেনঃ “তিনি সবসময় ভাল কাজ করার সংগ্রাম করেছেন, এবং লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে পছন্দ করতেন, তিনি তার জ্ঞানের জন্য কখনই অহংকার করতেন না, অপর দিকে যারা তাকে চিনতো না তারা তাকে সাধারণ একজন মানুষ মনে করত। তিনি ছিলেন সুন্দর দাঁড়ির অধিকারী; মাঝারী আকৃতির একজন সুদর্শন পুরুষ। তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত রিবাত ও জিহাদে অংশগ্রহণ করেন যতক্ষণ না তিনি শহীদ হন”। আবু ইমাদ বলেন ”শাইখ, ইমাম, পণ্ডিত এবং দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী”।

৮১৪ হিজরিতে রোমানরা মিশরের তীনাহ্ গ্রামে আক্রমণ চালায়। ইবনে নুহাসের নেতৃত্বে দুমইয়াত – এর লোকেরা তাদের ভাইদের সাহায্যের জন্য লড়াই করে। দু’ পক্ষেই তখন প্রচণ্ড যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে এবং সে সময় তিনি পালিয়ে যাননি; তাকে হত্যা করা হয়।

আধুনিক যুগের বিশেষজ্ঞরা তার কাজকে এভাবে মূল্যায়ন করেনঃ

আবু আব্দুল ফাতিহ আলী বিন হাজ (আলজেরিয়ার একজন করারুদ্ধ বিশেষজ্ঞ ও নেতা) এই উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন ”ইবন নুহাস আদ – দেমইয়াতি থেকে আমি যা পড়ি তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল একটি অনুসন্ধান যা আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার জন্য যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় থাকার কারণগুলি ব্যক্ত করে, সুতরাং আমি চাই পুরোপুরিভাবে তা লিপিবদ্ধ করতে যা এতে রয়েছে যেন তা অন্যান্য ভাইদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে,  হয়ত আল্লাহ তাদেরকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করবেন।” শহীদ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (ইনশাআল্লাহ শহীদ) বলেন ”জিহাদের ওপর লেখা বইগুলোর মধ্যে এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ বই।”

***এ বইটিতে অনুবাদকের মন্তব্যসমুহ ব্রাকেটের মাঝে উল্লেখ করা হয়েছে ‘[….]’।

মূল গ্রন্থের ভূমিকাঃ

জিহাদের অর্থ

ভাষাবিদ্যাগত অর্থঃ

লিসনে আল-আরাবঃ শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ; কথা ও কাজ দ্বারা সকল প্রচেষ্টা এর অন্তর্ভুক্ত।

মুযমে মাতন আল-লুঘাহ্ঃ সাধারণ ভাবে জিহাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয় সত্যের জন্য যুদ্ধে রত হওয়ার ক্ষেত্রে।

ইসলামে এর পারিভাষিক অর্থঃ

সত্য ধর্মের দিকে আহবান এবং তাদের বিরুদ্ধে জীবন দিয়ে যুদ্ধ করা যারা এটাকে অবিশ্বাস করে এবং সম্পদ দ্বারাও (আল-ইনায়াহ শারহ আল-হিদায়াহ (হানাফি))।

জিহাদ হল যুদ্ধ (শাফিঈ মাযহাবের ‘আল-শিরাজী’ )।

জিহাদ হল মুসলিমদের যুদ্ধে রত হওয়া অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যাদের মুসলিমদের সাথে কোন শান্তি চুক্তি নেই এবং এই যুদ্ধ আল্লাহর কালেমাকে প্রতিষ্ঠিত রাখার লক্ষ্যে। জিহাদ হল অবিশ্বাসদের বিরুদ্ধে লড়াই যখন তারা মুসলিম রাজ্য আক্রমণ করে এবং যখন মুসলিমগণ অমুসলিমদের মাটিতেই তাদেরকে আক্রমণ করে। [মাওয়াহিব আল-যালীল ফী শারহ মুখতাসার খালিল (মালিকী)]

জিহাদ হল প্রত্যেক ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের প্রতিকার। এটি অবিশ্বাসের অসুস্থতা থেকে একজন ব্যক্তিকে মঙ্গলময় ইসলামে অর্পণ করানোর মধ্য দিয়ে তার প্রতিকার করে। আল্লাহকে অবিশ্বাস করা হল সবচেয়ে বড় ব্যাধি এবং তা ধ্বংসাত্মক সকল মনুষ্যত্বের উপর; অপরদিকে ইসলাম হল পরিপূর্ণ প্রতিকার। বিকৃতি এবং দুর্দশা দূরীকরণের মাধ্যমে জিহাদ সমাজের প্রতিকার করে। অবিশ্বাসীদের অক্ষত ভাবে ছেড়ে দিলে ব্যাধি বৃদ্ধি পায় এবং তাদের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং ক্যানসার ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করে। ফলে, ইসলাম খ্যাতির সাথে বাঁচেনা এবং মুসলিমরা শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে না ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না এই ব্যাধির প্রতিকার হয়। যদি কোন ঔষধ দ্বারা এই ব্যাধির প্রতিকার সম্ভব হয় তবে হোক। নতুবা সেই সংক্রমিত অংশটি কেঁটে ফেলতে হবে যদিও তা কাটার দরুন কষ্ট হয় এবং শরীরকে সে তীব্র যন্ত্রণায় ভুগতে হয়। তখন কেউ দাবী করতে পরবে না যে এই কর্তন ছিল নৃশংস বা নিষ্ঠুর;  এটা ঐ শরীরের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। এটাই সংক্ষিপ্তভাবে ইসলামের জিহাদ প্রাথমিক পর্যায়ে সত্য বানীকে শান্তিপূর্ণ ভাবে পৌঁছে দিতে হবে। যদি এই শান্তিপূর্ণ আহবান নিঃশেষ হয় এবং তার ফলাফল কাঙ্ক্ষিত না হয় বা শূন্য হয় তবে সত্যবার্তা বহনকারীদের প্রয়োজন পড়বে তাদের তলোয়ার ব্যবহার করার এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুত বিজয়ের জন্য লড়াই করা।

গুরুত্বপূর্ণ শব্দাবলীঃ

রিবাতঃ ‘রিবাত’ হল জিহাদের উদ্দেশ্যে শত্রুদের নিকটবর্তী সীমান্তে অবস্থান নেওয়া। রিবাতের ভূমি হল এমন ভূমি যেখানে ইসলামের শত্রুদের দ্বারা আক্রমণ আসন্ন। যে ব্যক্তি রিবাতে দণ্ডায়মান হয় তাকে মুরাবিত বলে।

গাজওয়াঃ ভাষাগত অর্থে এটি হল ‘অনুসরণ’ ইসলামের পরিভাষায় এর অর্থ এটা বলতে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে শত্রুকে তাড়া করা বুঝায়।

জিহাদের হুকুমঃ

ইসলামে দু’ প্রকার ফারদ (দায়িত্ব) আছেঃ ফারদ আইন এবং ফারদ কিফায়া।

ফারদ আইন (ব্যক্তিগত দায়িত্ব) হল একটি অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব যা প্রত্যেককে সম্পাদন করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ পাঁচ ওয়াক্তের সালাহ্ এবং রোযা।

ফারদ কিফায়া (যৌথ দায়িত্ব): এটি হল আবশ্যকীয় কাজ যা করতে হয়। তবে যদি কিছু মুসলিম দায়িত্বটি পালন করে তবে বাকিরা অব্যাহতি পাবে। উদাহরণস্বরূপ ভাল কাজের আদেশ এবং খারাপ কাজের নিষেধ। এটা একটি দায়িত্ব যা উম্মাহর ভেতর করা আবশ্যক যদি কেউ তা পালন করে তবে বাকিরা পরিত্রাণ পাবে কিন্তু যদি কেউই না করে তবে পুরো মুসলিম উম্মাহ গুনাহগার রূপে গণ্য হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না দায়িত্বটি পালিত হয়। অপর একটি উদাহরণ হল আযান অনেক মাযহাবের মতে আযান হল ফারদ কিফায়াহ। যদি কেউই আযান না দেয় তবে পুরো সম্প্রদায় দায়ীরূপে গণ্য হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের মধ্য থেকে কেউ একজন এ দায়িত্ব পালন করে।

জিহাদ হল একটি সম্মিলিত বা যৌথ দায়িত্ব (ফারদ কিফায়া) (যা সকলের ওপর আদিষ্ট। কিন্তু যদি কেউ তা পালন করে তবে তা যথেষ্ট হবে); এটাই অধিকাংশ ফকীহগণের মত।

‘আল-হিদায়াহ’ (হানাফি) গ্রন্থে এটা বর্ণিত যেঃ অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ রয়েছে যদিও তারা যুদ্ধ আরম্ভ না করে এবং সাধারণভাবে এটাই ইসলামের বিষয়বস্তু। আল-মুগনীঃ জিহাদ প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর দায়িত্বরূপে গণ্য হয় এ সকল ক্ষেত্রেঃ

  • যখন শত্রুর সম্মুখীন হবে তখন যুদ্ধ করবে পলায়ন করবেনা;
  • যদি অবিশ্বাসীরা মুসলিম রাজ্যে অবতরণ করে।
  • যদি ইমাম যুদ্ধের জন্য ডাক দেয় তবে প্রত্যেক সামর্থবান ব্যক্তির ওপর তা ন্যস্ত হয় বা বর্তায় এবং তাদের উচিৎ তাতে সাড়া দেওয়া।

ইবন হাযম বলেনঃ জিহাদ মুসলিমদের কর্তব্য। যদি কিছু মানুষ সে দায়িত্ব পালন করে, সীমান্ত রক্ষার মাধ্যমে এবং তাদের নিজের ভূমিতে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে এবং তা জয় করে; তবে অন্য মুসলিমরা এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করবে নতুবা এটা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর অবশ্য কর্তব্য। এই আয়াত অনুযায়ী, “অভিযানে বের হয়ে পড়, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারী অবস্থায়, এবং সংগ্রাম কর আল্লাহর পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে।” (সূরা তাওবা ৯:৪১)

জিহাদকে ছোট এবং বড় শ্রেণীতে বিভক্তকরণঃ

“আমরা ছোট জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করলাম বড় জিহাদের (নফসের বিরুদ্ধে) দিকে” – এই হাদিসটি সঠিক নয় এটি হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে কেউ এটি বর্ণনা করেননি।

ইবন তাইমিয়্যাহ্ (রহ.) বলেনঃ

“আমরা ছোট জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করলাম বড় জিহাদের (নফসের বিরুদ্ধে) দিকে” – হাদিসটি জাল হাদিস এবং এটি কোন হাদিস বর্ণনাকারী কর্তৃক বর্ণিত নয়, যাদের রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বানী, তাঁর পদক্ষেপ এবং অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর জিহাদ সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে। প্রকৃত পক্ষে কুফফারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধই হল সবচেয়ে প্রধান কাজ। একজন মানুষের পক্ষে এর চেয়ে বড় কাজ করা সম্ভব নয়।

জিহাদ বলতে যে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করাকেই বোঝানো হয়েছে তার কয়েকটি প্রমাণঃ

  1. নারীদের প্রতিবাদঃ যখন নারীরা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসলেন এবং অভিযোগ করলেন যে পুরুষরা জিহাদে অংশ নেয় কিন্তু আমরা নেই না তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন যে মহিলাদের জিহাদ হল হজ্জ। এখানে এটি স্পষ্ট যে জিহাদের অর্থ হল লড়াই। যদি এর মানে আত্মার সাথে যুদ্ধ করাই হত তবে কেন মহিলারা তা করতে পারেনা?
  2. সালাফ আলেমগনের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থের শুধুমাত্র সূচিপত্রের দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তাদের বইয়ে জিহাদ শিরোনামের অধ্যায়ে জিহাদের অর্থ হল যুদ্ধ করা। তারা যদি এর অন্য অর্থ বুঝতো তবে তা তাদের লেখায় ফুটে উঠত। আমার বক্তব্যের প্রমাণ চাইরে তুমি এই বইগুলো খুঁজে দেখ – তারা প্রত্যেকেই এই লড়াইকে জিহাদ বলেছেন ‘ক্বিতাল’ বলেননিঃ “আল-মুগনী” (ইবনে কুদামাহ); “আল-উম্ম” (ইমাম শাফিঈ); “আল-মুদাওয়ানাহ” (ইমাম মালিক); “আল-মুখতাসার খালিল” – এর তিনটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ (আল-খারশি); “আলায়শ এবং আল-হাতাব – আল-মুহালা” (ইবন হাযম); “সুবুল আল-সালাম, ” “নায়ল আল-আওতার”এবং “আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা” (ইবন তাইমিয়্যাহ)।
  3. জিহাদ সম্পর্কীয় এই হাদিস গুলি শুধু যুদ্ধকেই বুঝায়। উদাহরণ স্বরূপ:
    • আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করা হয়, “জিহাদের সমতুল্য কোন কাজ আছে কি?” তিনি বলেন : ”হ্যাঁ, কিন্তু তুমি তা করতে সামর্থবান হবেনা।” তৃতীয়বার তিনি বললেন, ” মুজাহিদের সমতুল্য ঐ ব্যক্তি যে ততক্ষণ পর্যন্ত অনবরত রোযা রাখে এবং নামায (সালাহ্) পড়ে যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই মুজাহিদ ফিরে আসে” (মুসলিম)। অর্থাৎ যুদ্ধ থেকে ফিরে আসে। আত্মার সাথে যুদ্ধই যদি জিহাদ হতো তাহলে তা থেকে ফিরে আসার প্রশ্ন কেন আসবে?
    • আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করা হয়, “হে আল্লাহর রাসুল আমাকে এমন কাজ – এর নির্দেশ দিন যা জিহাদের সমতুল্য।” তিনি বলেন, ”এমন কিছুই আমি খুঁজে পাইনা।” অতঃপর তিনি বলেন। “যখন মুজাহিদ জিহাদে যায়, তখন কি তুমি মসজিদে প্রবেশ করে অনবরত, কোন বিরতি না দিয়ে, সালাহ এবং রোযা রাখতে পারবে?” লোকটি বলেন, ” কে সেটা করতে পারবে !” (বুখারী)
    • আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে একবার একজন সাহাবা একটি উপত্যকার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যেখানে পরিষ্কার পানির ঝরনা প্রবাহিত ছিল। তিনি বললেন যদি আমি আমাকে মানুষদের থেকে নিজেকে নিঃসঙ্গ করতাম এবং এই উপত্যকায় বসবাস করতে (আল্লাহর ইবাদত করতে) পারতাম; কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে অনুমতি না নেওয়া পর্যন্ত তা করব না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ”এটা কর না নিজ বাড়িতে ৭০ বছর সালাহ পড়ার চেয়ে আল্লাহর রাস্তায় অবস্থান করা অনেক বেশী উত্তম। তুমি কি চাওনা যে আল্লাহ্ তোমাকে ক্ষমা করুন এবং জান্নাতে দাখিল করুন? যুদ্ধ কর (ইক্বযু) আল্লাহর রাস্তায়; কারণ যে একটা উটকে দুধ পান করানোর সমান সময়ও আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ (কতল) করবে জান্নাত তার জন্য নিশ্চিত করা হবে।” (তিরমিযী সাহীহ)। সুতরাং এই সাহাবী যে নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য নির্জনবাসী হতে চেয়েছিল, তাকে তা করতে নিষেধ করা হল।

শুধু এটাই নয়, যখন ফী সাবিলিল্লাহ্ (আল্লাহর রাস্তায় বা পথে) কথাটি ব্যবহৃত হয় তখন তার অর্থ দ্বারা যুদ্ধকেই বুঝানো হয়।

ইবন হাযার বলেন যে, যখনই ফী সাবিলিল্লাহ্ ব্যবহৃত হয় তখন তার দ্বারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করাকেই বুঝায়।

ইবন আবি শায়বাহ – এর “আল-মুসান্নাফ” এবং আল-বায়হাকীর “আল-সুনান আল-কুবরা”য় আছেঃ

আবু বকর আস সিদ্দীক এক সৈন্যদলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তাদের সাথে সাথে হাটছিলেন এবং এসময় তিনি বললেন, “তাঁরই কারণে আমাদের পাগুলোকে ধূলি ধূসরিত করার জন্য সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।” একজন ব্যক্তি বলেনঃ “কিন্তু আমরা তো শুধু তাদেরকে এগিয়ে দিতে গিয়েছি এবং বিদায় জানিয়েছি?” আবু বকর বলেন ”আমরা তাদরে প্রস্তুত করেছি বিদায় জানিয়েছি এবং দু’ আ করেছি তদের জন্য।” এখানে লক্ষণীয় যে, লোকটি আবু বকরের এ কথাটির জন্য প্রশ্ন করে – ”আমরা আমাদের পাগুলি ধুলো দিয়ে মেখেছি আল্লাহর জন্য।” – কারণ লোকটি এর দ্বারা রণক্ষেত্র বা যুদ্ধক্ষেত্রকে বুঝত। আবু বকর তাকে বিশেষন করে দিলেন যে এর মাঝে এমন ব্যক্তিও অন্তর্ভুক্ত হয় যে সমর্থন করে এবং সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দেয়।

নিম্নোক্ত হাদিসসমূহ দ্বারা উপরে বর্ণিত “আল্লাহর রাস্তায়” – কথাটির ব্যাখ্যা পাওয়া যায়:

সালমান আল-ফারসি (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহর রাস্তায় একদিন অবস্থান করা একমাস রোযা রাখা এবং এর রাতগুলোয় সালাহ পড়া অপেক্ষা উত্তম। এবং যদি সে মৃত্যুবরণ করে তবে তার কাজের পুরস্কার, যা সে করত, চলতে থাকবে এবং তার রিযক অবিরত থাকবে এবং সে কবরে ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে রক্ষা পাবে।” (মুসলিম ৫৭৬)

যদি ”আল্লাহর রাস্তায়” কোন সাধারণ অর্থবোধক হত এবং সকল ভাল কাজ করার অর্থ বহন করত তবে উদ্বৃত্ত একমাস রোযা বা সালাহ পড়ার চেয়ে উত্তম কথাটি ভিত্তিহীন হয়ে পড়ত। সুতরাং জিহাদ বলতে নির্দিষ্টভাবে যুদ্ধকেই বোঝানো হয়েছে।

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “দু’ ধরনের চোখকে আগুন (জাহান্নামের) দ্বারা স্পর্শ করানো হবে না। সেই চোখ যে আল্লাহর ভয়ে কাঁদে এবং সেই চোখ যা আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দিয়ে রাত কাটায়।” (তিরমিযী ৭০৮)

আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়া তখনই অর্থ পূর্ণ হয় যখন যুদ্ধকে বুঝানো হয়।

আমর বিন আবসাহ বলেন আমরা আল-তাইফ অবরোধ করছিলাম এবং আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনি, “যে আল্লাহর জন্য একটি তীর নিক্ষেপ করে তাকে আল্লাহর নিমিত্তে একটি দাস মুক্ত করে দেয়ার সমতুল্য পুরস্কার দেয়া হবে।” আমর বলেন আমি সেদিন ১৬ টি তীর ছুড়ে ছিলাম। (আল-নাসাঈ ৮০১ – আল-হাকিম তিরমিযী আবু দাউদ)

তীর ছোঁড়া কেবল যুদ্ধেই সম্ভব।

১ম অধ্যায়ঃ অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদের নির্দেশ এবং এর আবশ্যকতা এবং তাদের জন্য কঠোর সতর্কতা যারা জিহাদ করেনা।

যুদ্ধের আদেশঃ

“তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়ত কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।” (সূরা আল-বাকারা ২: ২১৬)

“এবং আল্লাহর পথে লড়াই কর এবং জেনে রাখ নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু শুনেন।” (আল-বাকারা

২:২৪৪)

“…এবং আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দু’ নিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেত। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু করুণাময়।” (সূরা আল-বাকারা ২:২৫১)

“অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁত পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে; নামায কায়েম করে; যাকাত আদায় করে; তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা আত তাওবাহ ৯:৫)

“তোমরা যুদ্ধ কর আহলে কিতাবের ঐ লোকদের সাথে যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম (ইসলাম) যতক্ষণ না তারা জিযিয়া প্রদান করে।” (সূরা আত্-তওবাহ ৯:২৯)

“সুওয়াব আল-ইমান” – গ্রন্থে ইমাম আল-হালীমী বলেনঃ

আল্লাহ পরিষ্কার ভাবে বলেছেন যে, তিনি যদি বিশ্বাসীদের দ্বারা অবিশ্বাসীদের প্রতিহত না করতেন এবং বিশ্বাসীদেরকে ইসলাম রক্ষা করার এবং কুফরের সৈন্যদলকে ধ্বংস করার কর্তৃত্ব না দিতেন; তাহলে দুনিয়ায় কুফরের সাম্রাজ্য কায়েম হতো এবং সত্য ধর্ম নিষ্কাশিত হয়ে যেত। এটা প্রমাণিত যে দ্বীন টিকে থাকার কারণ হল জিহাদ এবং এর বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি ঈমানের ভিত্তি হবার যোগ্যতা রাখে।

  1. ইবন উমারের (রাঃ) এর বর্ণনায়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ ছাড়া উপাস্য হওয়ার যোগ্য কেউ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হলেন আল্লাহর রাসূল, সালাহ প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত দেয়; অতঃপর যদি তারা তা করে তবে তাদের রক্ত ও সম্পদ আমার থেকে নিরাপদ; সে সব ব্যতীত যা ইসলামে রয়েছে। এবং তাদের হিসাব আল্লাহ সুবহানাহু তা’ আলার সাথে হবে (তিনি হিসাব নেবেন)। বুখারী মুসলিম, তিরমিযী নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবন মাযাহ, আহমাদ, আল-বায়হাকী। ইবন হিব্বান, আল-দারকুতনী, এবং ইমাম মালিক।

এটি বর্ণিত ইবন উমার আবু হুরায়রা যাবির ইবন আব্দুল্লাহ, আনাস বিন মালিক, যারীর ইবন আব্দুল্লাহ, আস ইবন আবু আস, ইবন আব্বাস, সাহল ইবন সাদ, আল-নুমান ইবন বাশীর, তারীক ইবন আশইয়াম, আবু বাকরাহ, মু’ আয বিন যাবাল এবং সামুরা বিন যুনদুব কর্তৃক। এতদনুসারে, এই হাদিসটি হল মুতাওয়াতীর অর্থাৎ সম্পূর্ণ শক্তিশালী হাদিস এর একটি।

এই হাদিসের বিভিন্ন ব্যাখ্যার মধ্যে ইবন হাযারেরটি সবচেয়ে শক্তিশালী; বর্ণনটি হল যে, আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানুষের সাথে যুদ্ধ করা হয়। এই উদ্দেশ্য অনেক উপায়ে অর্জন করা যেতে পারে; এটি যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব; অথবা আল্লাহর বিধান মেনে নিয়ে জিযিয়া[1] দেয়ার মাধ্যমেও সম্ভব। এছাড়াও মুসলিম এবং অমুসলিমদের মাঝে চুক্তির মাধ্যমেও এটা হতে পারে; তবে চুক্তি কোন অবস্থাতেই কাফিররা আল্লাহর হুকুমের বিরোধিতা করতে পারবে না।

  1. আবু মুছান্না আল-আবদি বলেনঃ আমি আবু আল-খাসাসইয়াহ কে বলতে শুনেছিঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকট গেলাম এবং বললাম যে আমি তার কাছে বাইয়াত দিতে চাই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বাইয়াত গ্রহণ করলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কেউই উপাস্য হওয়ার যোগ্য নেই’ এবং ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল’ এই সাক্ষ্য দেয়ার, পাঁচ ওয়াক্ত সালাহ পড়ার, রমাদানে রোযা রাখার, যাকাত প্রদান করার, হাজ্জ করার এবং আল্লাহর উদ্দেশ্য যুদ্ধ করার; আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলোর মধ্য দু’ টি কাজ আমি করতে পারব না। প্রথমটি হল যাকাত দেওয়া; আমার মাত্র দশটি উট আছে। এটাই আমার সম্পূর্ণ সম্পদ। দ্বিতীয়টি হল জিহাদ। আমি শুনেছি যে, যে ব্যক্তি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দৌঁড়ে পালাবে সে আল্লাহর ক্রোধের স্বীকার হবে, আমার ভয় হয় যদি আমি যুদ্ধের সম্মুখীন হই হয়ত আমি মৃত্যুকে ভয় পাব এবং আমার নাফস আমাকে ব্যর্থ করবে।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত ধরলেন এবং বললেন” সাদাকাহও না এবং জিহাদও না! তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে কিভাবে?” আবু আল-খাসাসইয়া অতঃপর বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উল্লেখিত প্রতিটি বিষয়ের উপর আমার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন।

আল-হাকিম কর্তৃক বর্ণিত এবং তিনি এটিতে সহীহ বলেছেন।

  1. সালামাহ বিন নুফাইল (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পাশে বসেছিলাম তখন একজন লোক আসল এবং বলল ‘হে আল্লাহর রাসূল, ঘোড়াগুলিকে ত্যাগ করা হচ্ছে এবং অস্ত্রগুলি নামিয়ে রাখা হচ্ছে এবং অনেকে দাবী করছে যে, আর কোন যুদ্ধ নেই” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তারা মিথ্যে বলছে! যুদ্ধ তো মাত্র শুরু হয়েছে! এবং আমার উম্মাহর এক দল আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করবে এবং যারা তাদের বিরোধিতা করবে তারা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পাবেনা। আল্লাহ একদল মানুষের অন্তরকে পথভ্রষ্ট করে দিবেন যাতে তারা (মুসলিম) তাদের সাথে যুদ্ধ করার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। এবং তারা যুদ্ধ করতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না চূড়ান্ত সময় আরম্ভ হয় (বিচারের দিন) এবং ঘোড়াগুলির কপালে মঙ্গল নিহিত থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত— এবং ইয়াজুজ ও মাজুজের বেরিয়ে আসার আগ পর্যন্ত যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে না।

‘আল-মুযাম আল-কারীর’ এ আল-তাবারানী কর্তৃক বর্ণিত এবং এটি হাসান (সম্মত)।

  1. সালামাহ বিন নুফাইল বলেনঃ একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বসেছিলাম তখন একজন ব্যক্তি তার নিকট আসল এবং বলল, ”হে আল্লাহর রসূল ঘোড়াগুলিকে এখন অবজ্ঞা করা হচ্ছে এবং অস্ত্র গুলি পরিত্যাগ করা হচ্ছে এবং কিছু লোক দাবী করছে যে, আর কোন জিহাদ নেই এবং যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন ”তারা মিথ্যে বলছে! যুদ্ধ তো মাত্র শুরু হয়েছে! যুদ্ধ তো মাত্র শুরু হয়েছে! এবং আমার উম্মাহর একটা দল সত্যের পথে যুদ্ধ করতে থাকবে এবং আল্লাহ কিছু লেকের অন্তরকে পথভ্রষ্ট করে দিবেন এবং আল্লাহ যোদ্ধাদেরকে তাদের দ্বারা উপকৃত করবেন সেইদিন পর্যন্ত যেদিন চূড়ান্ত সময় সূচিত হবে এবং আল্লাহর শপথ পূর্ণ হবে এবং বিচার দিন পর্যন্ত ঘোড়াগুলির কপালে মঙ্গল নিহিত থাকবে। আমার কাছে এটা প্রকাশ করা হয়েছে যে আমি শীঘ্রই তোমাদের ছেড়ে চলে যাব (মৃত্যু) এবং তোমরা আমকে অনুসরণ করবে যখন তোমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে এবং বিশ্বাসীদের ঘর হবে আল-শামে। (আল-শাম বলতে সিরিয়া, লেবানন, প্যালেষ্টাইন এবং জর্ডানকে বুঝায়। এটাদ্বারা দেশগুলোর অংশবিশেষ বা পুরোটাই বুঝানো হয়।)

আন নাসাঈর ব্যাখ্যায় আল-সিন্ধি বলেনঃ

ঘোড়াগুলির অবমাননা বলতে বুঝায় তাদের অবজ্ঞা করা এবং তাদের গুরুত্বকে কম বা নীচু করে দেখা অথবা যুদ্ধে তাদের ব্যবহার না করা। “এখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে; এখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে” কথাটি পুনরাবৃত্তি করার কারণ হল এর গুরুত্ব প্রকাশ করা এবং এর অর্থ হল যুদ্ধ কেবল প্রসারিত হচ্ছে এবং আল্লাহ সদ্য এর আদেশ দিয়েছেন সুতরাং কি করে এটা এত তাড়াতাড়ি সমাপ্ত হয়? অথবা এর অর্থ হল প্রকৃত যুদ্ধ মাত্র শুরু হয়েছে কারণ এতদিন তারা তাদের রাজ্যের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করেছে – আরবের ভূমিতে; কিন্তু এখন সময় এসেছে সৈন্য নিয়ে দূরবর্তী ভূমিতে যাওয়ার। “আল্লাহ কারও কারও অন্তরকে পথভ্রষ্ট করে দিবেন” এর অর্থ হল আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে কিছু মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সুযোগ দেবেন যদিও এর দ্বারা কিছু মানুষের অন্তরকে ঈমান থেকে কুফরের দিকে পথভ্রষ্ট করে দেওয়া লাগে তবুও। কারণ আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে তাঁর জন্য যুদ্ধ করার এবং তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না।

“ঘোড়াগুলির কপালে মঙ্গল রয়েছে” এর অর্থ প্রতিদান এবং পুরষ্কার অথবা সম্মান এবং মহিমা।

“বিশ্বাসীদের ঘর হল আল-শাম” এটি দ্বারা বোঝাচ্ছে যে, শেষ জমানায় এটি ইসলামের শক্তির কেন্দ্র এবং জিহাদের ভূমি হবে

{আমাদের মনে এ প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যেঃ এতদিন এই হাদিসগুলো কোথায় ছিল? আমাদের বিশিষ্ট আলেমগণ কেন এতদিন এ হাদিছগুলো সম্পর্কে না জানিয়ে আমাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে রেখেছেন? আমরা হয়ত তাহারাহ – র উপর হাদিসগুলো শুনেছি এবং আরও শুনেছি টয়লেটে যাওয়ার আদব সংক্রান্ত শত হাদিস; সেখানে কেন এসব হাদিস খুঁজতে হাদিস গ্রন্থগুলোকে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে হয়?}

  1. আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত যে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন

“অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর তোমার সম্পদ, অস্ত্র এবং জিহ্বা দ্বারা।”

‘তোমাদের কথা দ্বারা’ বলতে বুঝায় অবিশ্বাসীদেরকে এমন সব কথা শোনানো যা তারা শুনতে পছন্দ করে না। সহীহ আল-নাসাঈ, আবু দাউদ, আহমাদ, এবং আল-হাকীম।

  1. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের জন্য আমার পাঁচটি আদেশ আছেঃ শোনা, মান্য করা, যুদ্ধ অর্থাৎ জিহাদ করা, হিজরত করা এবং জামাতবদ্ধ হয়ে থাকা। তিরমিযী – আহমাদ – আব্দুল রাযাক (হাসান)
  2. ইবন আব্বাস হতে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “মক্কা বিজয়ের পর আর কোন হিজরত নেই কিন্তু জিহাদ এবং অভিপ্রায় আছে এবং যদি তোমাদেরকে যুদ্ধের জন্য ডাক দেওয়া হয় তবে যুদ্ধ কর।”

আল্লাহ্ বলেনঃ “তোমরা অভিযানে বেরিয়ে পড়, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারী অবস্থায় এবং তোমাদের সম্পদ এবং জীবন দ্বারা আল্লাহর জন্য যুদ্ধ কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।” (আল-তওবাঃ ৪১)

“হালকা অথবা ভারী” আয়াতটি সম্পর্কে মন্তব্যগুলি নিম্নরূপ

আবি সালেহঃ যুবক এবং বয়স্ক।

কাতাদাহঃ সক্রিয় অথবা নিষ্ক্রিয় কর্মশক্তিপূর্ণ অথবা তার বিপরীত, এটি বর্ণিত যে আবু আইয়ুব আল-আনসারী এক বছরের জন্য জিহাদ থেকে বিরত থাকলেন অতঃপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং বললেন “এই আয়াতে আমি আমার জন্য কোন ওজর খুঁজে পাই না।” ফলে তিনি পুনরায় জিহাদ আরম্ভ করলেন।

আবু শায়বাহ আল-হাকামে একটি সহীহ হাদিসে বর্ণনা করেনঃ ব্যস্ত অথবা ব্যস্ততাহীন।

এটাও বলা হয়েছে যে, “ভারী” বলতে এমন ব্যক্তির কথা বুঝায় যার সম্পত্তি আছে এবং সে ভয় পায় যদি সে জিহাদে যায় তবে এগুলো সে হারাবে। “স্বল্প” বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায় যার সম্পত্তি অনেক সুতরাং তার কো দুশ্চিন্তা নেই। (সে তা হারানোর ভয় করে না।)

আল-কুরতুবী বলেনঃ “আয়াতটি সবার জন্য এবং সবার উপর তা কার্যকর। যুদ্ধে অংশগ্রহণ তাদের কাছে সহজসাধ্য হোক বা না হোক।”

আল-যুহরী বলেন যে ইবন আল-মুসায়াব সেনাবাহিনীতে যোগদান করে চোখ হারান। তাকে বলা হল তুমিতো অসুস্থ, তিনি বললেন, “আসতাগফিরুল্লাহ (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) আল্লাহ বলেন “হালকা এবং ভারী” যদি আমি যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে অসমর্থ হই তবুও সৈন্যদলের সংখ্যা তো বৃদ্ধি করতে পারবো এবং তোমাদের মালামালের দেখাশোনা করতে পারব।”

[সুবহানাল্লাহ, এমন অনেকে আছে যাদের কোন ওজর না থাকা সত্বেও তারা যুদ্ধ থেকে পালানোর জন্য তর্ক করে। যখন এমন কিছু লোকও আছে যাদের যুক্তিপূর্ণ ওজর থাকা সত্বেও তারা যোদ্ধাদের সাথে অংশগ্রহণ করার জন্য তর্ক করে।]

  1. আবু ইয়ালা এবং আল-হাকিম একটি বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণনা করেন, আনাস বিন মালিক বলেন যে, আবু তালহা মুমূর্ষ অবস্থায় সূরা তওবাহ্ তিলাওয়াত করেন এবং এই আয়াত তিলাওয়াত করেন, “তোমরা অভিযানে বেরিয়ে পড়, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারী অবস্থায়” এবং বলেন আমি দেখতে পাই আল্লাহ আমাকে ডাকছেন হই আমি যুবক নয় আমি বৃদ্ধ। বলে তিনি তার সন্তানদের বললেন তাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে। অতঃপর তারা বলল আপনি তো রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে থেকে যুদ্ধ করেছেন, যে পর্যন্ত না তিনি মৃত্যু বরন করেন এবং এরপর আবু বকর (রাঃ) এর সাথে থেকে (যুদ্ধ করেছেন) যে পর্যন্ত না তিনি মৃত্যু বরন করেন এবং এরপর উমার (রাঃ) এর সাথেও। এখন আমাদেরকে আপনার পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করার অনুমতি দিন। তিনি বললেনঃ “আমাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত কর।” এবং তারা তা করল। তিনি সমুদ্রে একটি যুদ্ধের অভিযানে বের হলেন এবং মৃত্যু বরন করলেন, তারা সাত দিন পর্যন্ত তাঁকে সমাহিত করার জন্য কোন দ্বীপ খুঁজে পেল না এবং তাঁর শরীর পরিবর্তিত হয়নি।
  2. আব্দুল রাযযাক হতে বর্ণিত যে মাকহুল কিবলার দিকে মুখ ফিরে দশবার আল্লাহর নামে শপথ করতেন যে, যুদ্ধের জন্য বেড়িয়ে পড়া তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। এরপর তিনি তার শিক্ষার্থীদের দিকে ফিরতেন এবং বলতেন “যদি তোমরা আমাকে দশবারের অধিক শপথ করতে বলতে আমি তা-ই করতাম।”

জিহাদ কি ফারদ কিফায়া নাকি ফারদ আইন?

অধিকাংশ আলেমের মতে কাফিরদেরকে তাদের ভূমিতে আক্রমণ করা ফারদে কিফায়া। কিন্তু ইবন মুসায়াব এবং ইবন শুবরুমাহ বলেন যে এটি একটি দায়িত্ব (ফারদ আইন) যা প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর অর্পিত।

জিহাদে সর্বনিম্ন অংশ গ্রহণ হল বছরে একবার এর অধিক হল সর্বদাই উত্তম। কোন বিশেষ প্রয়োজন যেমন, মুসলিমদের দুর্বলতা এবং শত্রুদের অধিক সংখ্যা অথবা তাদেরকে প্রথম আক্রমণ করলে পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার আশংকা অথবা সঞ্চিত সম্পদের অভাব অথবা এর সদৃশ কোন ওজর ছাড়া একটি বছর যুদ্ধবিহীন পার করার অনুমতি নেই নতুবা, যদি কোন প্রয়োজন না পড়ে তবে এক বছরের বেশী সময়ের জন্য অবিশ্বাসীদের আক্রমণ করার ক্ষেত্রে বিলম্ব করার অনুমতি নেই। এটি ইমাম শফিঈ – র বক্তব্য।

আল-হারামাইন – এর ইমাম বলেনঃ

আমি উসুলের উপর থাকা আলেমদের মন্তব্য গ্রহণ করি।

জিহাদ হল একটি আদেশমূলক ডাক এবং এটি অবশ্যই প্রতীক্ষিত হবে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী; ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না পৃথিবীতে একজন মুসলিম ব্যতীত আর কেউ অবশিষ্ট না থাকে অথবা এমন ব্যক্তি থাকে যে নিজেকে ইসলামে সমর্পণ করে। এতদনুযায়ী জিহাদ এক বছরে একবার ই সীমাবদ্ধ নয়। সম্ভব হলে এটি আরো অনেকবার করা উচিৎ যা ফিকাহ শাস্ত্রের আলেমগণ বলেন। তার কারণ হল সাধারণত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের যে সময় লাগে তা বছরে একবারের যুদ্ধ চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হতে পারে।

হাম্বলী মতের অনুসারী ‘আল-মুগনীর’ লেখক বলেন “জিহাদের সর্বনিম্ন সংখ্যা হল বছরে একবার সুতরাং বছরে একবার জিহাদ চালানো বাধ্যতামূলক। যদি কখনো বছরে একবারের বেশী জিহাদ চালানোর প্রয়োজন দেখা দেয় তবে মুসলিমদের সেই চাহিদা পূরণ করতে হবে।”

আল-কুরতুবী তার তাফসীরে বলেনঃ “ইমামের উপর এটা জরুরী যে সে বছরে একবার মুসলিমদের একটি সেনাদল শত্রুর ভূমিতে প্রেরণ করবে এবং এমন যুদ্ধাভিযানে ইমাম অংশগ্রহণ করবে। যদি তা না হয়, তবে ইমামের উচিৎ একজন সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে প্রেরণ করা যাকে তিনি বিশ্বাস যোগ্য মনে করবেন এবং যে শত্রুদেরকে ইসলামের দিকে আহবান জানাবে। তাদের ক্ষতি দুরে সরিয়ে রাখবে, আল্লাহর ধর্মকে বিজিত করার জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ইসলামে প্রবেশ করে অথবা জিযিয়া প্রদান করে।”

[লক্ষ্য করুন যে আল-কুরতুবীর বলা সেনা প্রেরণের উদ্দেশ্য গুলোর একটি হল – শত্রুদের ক্ষতি দূর করা এটি একটি এজন্য যে, মুসলিমরা কখনই তাদের জীবনে প্রশান্তি লাভ করবেনা যদি না তারা আল্লাহর শত্রুদের তাদের ভূমিতে আক্রমণ করে। সেই দায়িত্ব পূরণ না করার ফলাফলই হচ্ছে তা যা আমরা আজ ভোগ করছি। তুমি যদি শয়তান কে রোধ না কর সে তোমাকে একা ছেড়ে দেবে না।]

জিহাদ শিশু, মানসিকভাবে অক্ষম, মহিলা এবং অসুস্থ ব্যক্তির ওপর বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু যে ব্যক্তি কানা অথবা সামান্য অসুস্থ যেমন মাথাব্যথা, দাঁতে ব্যথা অথবা জ্বর অথবা সামান্য খোঁড়া ব্যক্তির জন্যও এটি বাধ্যতামূলক। এটি ইমাম আহমাদ এর মাযহাব এবং আমি এ সম্পর্কে কোন মতবিরোধ খুঁজে পাইনি এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন। এটি আলেমগণের প্রচলিত মত যে, একজন ব্যক্তি অভিভাবকদের অনুমতি ব্যতীত গাযওয়া জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তবে এগুলো সবই ফারদে কিফায়া জিহাদের ক্ষেত্রে (যখন শত্রুকেই প্রথমে আক্রমণ করা হয় শত্রুরই ভূখণ্ডে)। কিন্তু যদি শত্রু মুসলিমদের দিকে এগিয়ে আসে, অথবা সীমান্তে বিস্তার লাভ করে; যদিও তারা পুরোপুরি প্রবেশ না করে এবং তাদের সৈন্য মুসলিমদের সৈন্যের দ্বিগুণ বা কম তখন প্রত্যেক মানুষের উপর জিহাদ অত্যাবশ্যকীয় ও জরুরী হয়ে দাঁড়ায়। তখন দাসরা বেরিয়ে পড়ে তাদের মনিবের অনুমতি ছাড়া, নারীরা তাদের স্বামীদের অনুমতি ছাড়া (যদি তারা যুদ্ধের জন্য সামর্থ্যবতী হয়, এ ব্যাপারে জোরালো মত রয়েছে); সন্তান তার অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া; ঋণী ব্যক্তি তার ঋণদাতার অনুমতি ব্যতীত। এগুলো ইমাম মালিক আহমাদ, এবং আবু হানীফা এর মতামত (লেখকের মাযহাব হলো শাফীঈ)।

যদি কোন নির্দিষ্ট স্থানে শত্রুরা মুসলিমদের ঘেরাও করে এবং যদি মুসলিমদের পক্ষে একত্রিত হওয়া এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়া সম্ভবপর না হয়। তবে যে ব্যক্তি কোন এক অবিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী দলের মুখোমুখি হবে এবং সেই মুসলিম যদি বুঝতে পারে যে সে আত্মসমর্পণ করলে তাকে হত্যা করা হবে, তবে সে অবশ্যই যুদ্ধ করবে। এ বিধান মুক্ত ব্যক্তি, দাস, পুরুষ, নারী অন্ধ, পঙ্গু বা অসুস্থ ব্যক্তি সবার জন্য প্রযোজ্য। তবে আত্মসমর্পণ করলে যদি তারা হত্যা না করার নিশ্চয়তা দেয় অথবা আত্মসমর্পণ না করার কারণে নিহত হবার আশংকা থাকে তাহলে আত্মসমর্পণ করা যেতে পারে, তারপরও যুদ্ধ করাই উত্তম।

যদি কোন নারী আশংকা করে যে তাকে কারারুদ্ধ করলে সে ধর্ষিত হবে তাহলে তার যুদ্ধ করা অত্যাবশ্যক, যদিও তাতে তার মৃত্যু হয় কারণ যদি কাউকে জোরপূর্বক ব্যভিচার করানোর চেষ্টা করা হয় সেক্ষেত্রে যদি তার জীবনও যায় তারপরও ব্যভিচার করতে দেয়া উচিৎ নয়।

যদি আক্রান্ত এলাকায় কিছু মুসলিম শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হয় এবং তারা সংখ্যায় যথেষ্ট হয় এবং তারা একাই যুদ্ধ করতে সক্ষম হয় তথাপি অন্য মুসলিমদের দায়িত্ব হবে তাদের সহায়তা করা। আল-মুওয়ারদী বলেন যে, যেহেতু এটি প্রতিরোধ মূলক জিহাদ, সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য এটা দায়িত্ব যে তারা এলাকায় জিহাদ করবে।

যদি অবিশ্বাসীরা এমন কোন জনশূন্য মুসলিম ভূমিতে নেমে আসে যেটা জনপূর্ণ এলাকা হতে অনেক দূরে অবস্থিত, সে ক্ষেত্রে দু’টি মত রয়েছে এবং আল-গাযালী দুটিই বর্ণনা করেছেন। প্রথমটি হল ইমাম আল-হারামাইন এর তিনি বলেন যে মুসলিমদের জন্য এটি অত্যাবশ্যকীয় নয় যে সে এমন কোন নিঃসঙ্গ জনশূন্য ভূমিকে রক্ষা করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করবে।

ইমাম নববী বলেন, ইমাম এর (আল-হারামাইনের আল-মুওয়ীনী) মন্তব্য গ্রহনযোগ্য নয়। কেমন করে মুসলিমরা মেনে নেবে যে অমুসলিমরা দার – উল – ইসলাম নিয়ে নেবে যেখানে আমাদের পক্ষে তা রক্ষা করা সম্ভবপর? আল-কুরতুবী বলেনঃ যদি শত্রুরা মুসলিম রাজ্যের কাছে চলে আসে এমনকি যদি প্রবেশ নাও করে তাহলে মুসলিমদের উপর এটা অত্যাবশ্যকীয় যে সে সেখানে যাবে এবং সাক্ষাত করবে ঐ শত্রুদের সাথে ইসলাম ধর্মের বিজয় এবং এর কর্তৃত্ব অর্জনের জন্য এবং শত্রুদের পরাভূত করার জন্য।

আল-বাঘাওয়ী বলেন যে, বাইরের দেশের শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত দেশের সবচেয়ে কাছের মুসলিমদের উপর এটা অত্যাবশ্যকীয় এবং দূরে অবস্থানরত মুসলিমদের উপর এটি যৌথ দায়িত্ব।

যারা জিহাদে অংশগ্রহণ করে না তাদের শাস্তিঃ

আল্লাহ্ বলেন “বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্মী, তোমাদের, গোত্র, তোমদের অর্জিত ধন – সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান – যাকে তোমরা পছন্দ কর – আল্লাহ তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” (সূরা আত তাওবাহ ৯:২৪)

এই আয়াতে তাদের জন্য সুস্পষ্ট সতর্কবাণী রয়েছে যারা তাদের নিজেদের কারণে এবং তাদের সম্পদের কারণে জিহাদ পরিত্যাগ করে।

আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কী হল, যখন আল্লাহর পথে বের হওয়ার জন্য তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প। যদি বের না হও তবে আল্লাহর তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবেনা, আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান। (সূরা আত তাওবাহ ৯:৩৮ – ৩৯)

“পেছনে থেকে যাওয়া লোকেরা আল্লাহর রসূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসে থাকতে পেরে আনন্দ লাভ করেছে; আর জান ও মালের দ্বারা আল্লাহর রাহে জেহাদ করতে অপছন্দ করেছে এবং বলেছে, এই গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও, “উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম”। যদি তাদের বিবেচনা শক্তি থাকত। অতএব তারা সামান্য হেসে নিক এবং তারা তাদের কৃতকর্মের বদলাতে অনেক বেশী কাঁদবে।” (তাওবাহ্ ৮১ – ৮২)

  1. ইবনে উমার কর্তৃক বর্ণিত আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “যদি তোমরা ইনাহ্ (এক ধরণের সুদ) করার এবং গরুর লেজ অনুসরণ কর এবং কৃষক হয়ে পরিতৃপ্ত— হয়ে যাও এবং জিহাদ প্রত্যাখ্যান কর আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা অবতরণ করবেন যা ততক্ষণ পর্যন্ত উঠিয়ে নেওয়া হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের ধর্মের দিকে প্রত্যাবর্তন কর।” (আবু দাউদ – সহীহ)

হাদিসটির অর্থ হল যদি মানুষ কৃষিকাজ এবং এর অনুরূপ কোন কাজে নিজেদের জড়িয়ে ফেলার কারণে জিহাদ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আল্লাহ তাদের উপর তাদের শত্রুদেরকে ছেড়ে দেবেন; তাদের উপর লাঞ্ছনা বয়ে আনবেন এবং তা ততক্ষণ পর্যন্ত দূর করা সম্ভব না যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের দায়িত্বের দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং তা শুরু করে এবং সেটি হল অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা; তাদের ব্যাপারে কঠোর ও নিষ্ঠুর হওয়া; দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করা; ইসলাম ও তার অনুসারীদের বিজয় দেয়া এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ঊর্ধ্বে উন্নীত করা এবং কুফর ও তার অনুসারীদের অবমাননা করা। এই হাদিসটি এটা তুলে ধরে যে, জিহাদ ছেড়ে দেওয়া হল ইসলাম ছেড়ে দেওয়া কারণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের ধর্মের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে”।

  1. আবু বকর (রা.) বলেন যে, যদি কোন ব্যক্তি জিহাদ বন্ধ করে দেয় তাহলে আল্লাহ তাদের সবার উপর শান্তি আরোপ করবেন/তাদেরকে শান্তি দ্বারা আবৃত করবেন। আল-তাবরানী (বিশ্বস্ত হাদিস সূত্রে)
  2. আসাকির বর্ণনা করেন যে, যখন আবু বকর (রা.) খলীফা হলেন, তখন তিনি পুল – পিটে দাঁড়ান এবং যা বলেন তা হল, “যদি মানুষ যুদ্ধ না করে তবে আল্লাহ তাদেরকে দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দিবেন।” কিছু মানুষ হয়ত বলবে যে, এমন কিছু মানুষ আমি দেখি যারা জিহাদ করেনা কিন্তু সম্পদশালী এর উত্তর হল সম্পত্তি মানে অর্থের পরিমাণ না, কিন্তু সম্পত্তি হল পরিতৃপ্তি এবং সন্তোষ যা হৃদয়ের মাঝে বিদ্যমান থাকে। যখন মানুষ যুদ্ধ বন্ধ করে তখন সে যুদ্ধ জয়ের পুরস্কার হারায়। যখন তারা তা করে উপরন্তু নানাবিধ পথে অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় লিপ্ত হয়; এমনকি তারা অন্যায় পথে অর্থ উপার্জনের দিকেও পা বাড়ায়। এমন অবস্থায় তুমি তাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যকই পাবে যাদের সম্পদ/উপার্জন হালাল। তারা তখন পার্থিব কিঞ্চিৎ সম্পদের জন্য আকাঙ্ক্ষা করতে থাকে। এটা তাদেরকে লাঞ্চনাগ্রস্থ করে দেয় এবং তারা অর্থের কাছে দাস হয়ে পড়ে। কিন্তু মুজাহিদরা লোভ হতে মুক্ত এবং তারা তাদের অর্জিত সম্পদের (পরলোকের জন্য সঞ্চিত সম্পদ) জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করে। আল্লাহ তাকে বিজয় – পুরস্কার দ্বারা সহায়তা করেন। সে তা জয় করে তার তলোয়ার দ্বারা এবং এটি সম্পূর্ণ হালাল।
  3. আবু হুরায়রাহ (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন “যে ব্যক্তি যুদ্ধ করেনি অথবা যুদ্ধের জন্য নিয়্যতের করেনি এমন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে সে মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (মুসলিম)
  4. আবু উমামাহ্ বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন “যে ব্যাক্তি যুদ্ধ করেনি বা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি অথবা তার যে কার অনুপস্থিতিতে রাখেনি আল্লাহ তাকে এক দুর্দশা দ্বারা আঘাত করবেন।” আবু দাউদ (সম্মতি পূর্ণ সহীহ)

যারা পিছন পড়ে থাকে তাদের জন্য একটি উপদেশ

তোমরা যারা জিহাদকে অবহেলা করেছ এবং সফলতার পথ হতে দূরে সরে থেকেছঃ তোমরা নিজেদেরকে আল্লাহর করুণা রহমত হতে বঞ্চিত হবার অবস্থানে নিয়ে এসেছ এবং নিজেদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার হতে বঞ্চিত করেছ।

কিসে তোমাদের পেছনে ফেলে রাখল? কেন তোমরা মুজাহিদীনদের সারিতে যোগদান করনি? কেন তোমরা তোমাদের জীবন/অযথা ও সম্পদ বিসর্জনে ইতস্তত করেছ?

নিম্নলিখিত কারণগুলোর একটি নিশ্চয় হবেঃ দীর্ঘ জীবন কামনা; পরিবার, সম্পত্তি, বন্ধুবান্ধবের (সাথে সম্বন্ধ) আসক্তি; জিহাদের আগে আরও কিছু সৎকর্ম করবার বাসনা; সুন্দরী স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা; ক্ষমতা/পদমর্যাদা; অথবা আরামদায়ক জীবনোপকরণের প্রতি আসক্তি। এছাড়া আর কছুই তোমাদের ধরে রাখতে পারেনা; উপরে বর্ণিত কারণগুলোর কোন একটিই তোমাদেরকে আল্লাহর থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। তোমরা কি শুনতে পাওনা তোমাদের প্রতি আল্লাহর ডাক, “হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হল যে, যখন তোমাদেরকে বলা হয় – বের হও আল্লাহর পথে, তখন তোমরা মাটিতে লেগে থাক (অলস ভাবে বসে থাক) তাহলে কি তোমরা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনের উপর পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের ভোগ বিলাস তো আখিরাতের তুলনায় কিছুই নয় অতি সামান্য।” (সূরা আত তাওবাহ ৯:৩৮)

মনোযোগ দিয়ে শোন, যা কিছু তোমাদের জিহাদে যাওয়া হতে বিরত রাখছে তার প্রতি কি জবাব আমি দিই। তাহলে তোমরা উপলব্ধি করতে পারবে যে তোমরা (ভাল থেকে) বঞ্চিত এবং মনে রাখতে পারবে যে তোমরা নিজেরা আর শয়তান তোমাদের জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছে।

দীর্ঘ জীবন কামনা

আল−হর নামে বলছি, নির্ভীকতা আয়ু কমিয়ে দেয় না; আর কাপুরুষতা একে বৃদ্ধি করনা। আল্লাহ বলেন, “প্রত্যেক জাতির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, সুতরাং যখন সেই নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হবে, আল্লাহ তখন কাউকেই অবকাশ দিবেন না তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত” (সূরা মুনাফিকুন ৬৩:১১)

এবং তিনি আরও বলেন, “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা আনকাবুত ২৯:৫৭)

তোমরা যারা নিজেদের সাথে প্রতারণা করেছ, মনে রেখ মৃত্যুকালে তীব্র বেদনা ও যন্ত্রণা রয়েছে আর কিয়ামতের পর বিচার দিবসে রয়েছে প্রচন্ড ভয়। তোমাদের মনে পড়ে কি, যে শহীদ এই সমস্ত কিছু থেকে মুক্তি প্রাপ্ত হয়?

সে মৃত্যু – যন্ত্রণার কিছুই অনুভব করে না – সামান্য কাঁটা ফোটার মত ব্যথা ছাড়া। প্রিয় ভাই আমার, তবে কেন এমন সুযোগ হেলায় হারানো? আর মৃত্যুর পর কবরের আযাব থেকে তুমি মুক্তিলাভ করবে, কবরে ফেরেশতাদের কোন প্রশ্ন উত্তরের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না, এবং বিচার – দিবসে যখন সবাই থাকবে ভীত সন্ত্রস্ত তখন তুমি থাকবে শান্ত স্থির। মৃত্যুর পর তোমার আত্মা একটি পাখির দেহে ঢুকিয়ে দেয়া হবে যা জান্নাতে উড়ে বেড়াবে। সাধারণ মৃত্যু এবং শাহীদ হবর মধ্যকার পার্থক্যটা বুঝতে পারছ তো?

পরিবারের সাথে সম্পৃক্ততা

যা আপনাকে জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত রাখছে, তা যদি হয় পরিবার পরিজন, সহায় সম্পত্তি, বন্ধু বান্ধব, তবে দেখুন আল্লাহ কী বলেন, “তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান – সন্ততি এমন কিছু হয় যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দিবে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারাই তাদের কর্মের জন্য পাবে বহুগুণ পুরস্কার আর তারা প্রসাদে নিরাপদ থাকবে।” (সূরা সাবা, ৩৪:৩৭)

আরও বলেন তোমরা জেনে রেখ যে, “পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন – সম্পদ ও সন্তান – সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগীতা ব্যতীত আর কিছুই নয়; ওর উপমা বৃষ্টি, যাদ্দারা উৎপন্ন শস্য – সম্ভার কৃষকদের চমৎকৃত করে; অতঃপর ওটা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি ওটা পীতবর্ণ দেখতে পাও অবশেষে ওটা খড়কুটায় পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাসি— এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি পার্থিব ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।” (সূরা হাদীদ ৫৭:২০)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন “জান্নাতে চাবুকের নিচে বা পায়ের নিচের জমিটুকুও এই পৃথিবী এবং এর ভেতর যা কিছু আছে তার সব থেকে উত্তম।” (বুখারী)

সুতরাং জান্নাতের বিশাল রাজ্য এই পার্থিব পরিবারের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে, যারা অচিরেই মৃতদের মাঝে শামিল হবে? হতে পারে এই পরিবারই আপনার প্রতি বিদ্বেষ, দূর্ব্যবহার আর ঈর্ষা পোষণ, করে। যদি আপনার টাকা – পয়সা থাকে তবে তারা আপনাকে ভালবাসে, আর যদি আপনি দেউলিয়া হন তবে তারা আপনাকে ত্যাগ করে। একদিন তারা আপনার সাথে, অন্যদিন আপনার বিরুদ্ধে। অবশেষে বিচার দিবসে, তারা আপনাকে আর ঘাঁটবে না এবং এক পয়সা পরিমাণ ছাড়ও তারা আপনাকে দেবে না/এমনকি পরস্পরের জন্যও তারা আপনাকেই দায়ী করবে। তারা প্রত্যেকেই সেদিন নিজেকে উদ্ধার করতে চাবে, এমনকি যদি এর বদলে আপনাকে জাহান্নামের আগুনে জলতে হয়।

সম্পদের প্রতি ভালবাসা

যদি এটাই আপনাকে জিহাদ হতে বিমুখ রেখে থাকে তাহলে বলতে হয়, এ কী করে সম্ভব যখন আপনি জানেন যে পরীক্ষামূলক এই সম্পদ আপনাকে একসময় হারাতে হবে? এবং এই সম্পদের জন্যই বিচার দিবস আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে কীভাবে এই সম্পদ গড়ে তুলেছেন? আর কীভাবে তা খরচ করেছেন? এ ২টি প্রশ্ন আপনাকে এমন এক দিনে জিজ্ঞাসা করা হবে যেদিন একটি বাচ্চাও চুল পেঁকে বুড়ো হয়ে যাবে। বড়ই ভয়ংকর সে দিন।

আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, “দরিদ্র মুসলিমরা ধনী মুসলিমদের অর্ধদিন পূবেই জান্নাতে প্রবেশ করবেঃ (যা হবে) ৫০০ বছর (এর সমান)!”

আল্লাহ বলেন, “তোমাদের সম্পদ ও সন্তান সন্ততি তো তোমাদের জন্য পরীক্ষা; আল্লাহরই নিকটে রয়েছে মহা পুরষ্কার।”(সূরা তাগাবুন ৬৪:১৫)

এরপরও কীভাবে আপনার সম্পদ আপনাকে জিহাদ হতে বিরত রাখে?

সন্তান সন্ততির প্রতি ভালবাসা এবং তাদের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া

এর কারণ কি এই যে আপনি তাদের জন্য উদ্বিগ্ন? কিন্তু আপনার চেয়ে আল্লাহই তাদের জন্য অনেক বেশী চিন্তাশীল। আল্লাহ কি তাদের ব্যবস্থা করে দেননি যখন তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন মাতৃগর্ভে ছিল!

এমন এক সন্তান কি করে আপনাকে জিহাদ হতে বিরত রাখে যখন ছোটকালেও তাকে নিয়ে আপনি চিন্তিত ছিলেন আর বড় হবার পরও। তারা সুস্থ হোক বা অসুস্থ আপনি তাদের নিয়েই চিন্তা ভাবনা করেন আপনি তাদের অবজ্ঞা করলে তারা বিদ্রোহ ও বিরোধিতা করে। তাদেরকে উপদেশ দিলে তারা আপনাকে ঘৃণা করে। আপনার এত ভালবাসার পরও, যখন আপনি বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হন, তখন তারা আপনাকে পরিত্যাগ করে চলে যায়! এরপরও আপনি তাদের আশীর্বাদ হিসেবে দেখেন!

আপনার মন থেকে তাদের বিতাড়িত করুন বের করে দিন! তাদের যিনি সৃষ্টিকর্তা তার হাতে সপে দিন ওদের। আর আল্লাহর উপর ভরসা করুন তাদের সুব্যবস্থার জন্য যেমনটি নিজের জন্যও তাঁরই উপর ভরসা করেন। তাদের ব্যবস্থার ব্যাপারে যদি আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করতে না পারেন তবে এটা কী করে স্বীকার করেন যে আল্লাহই এই আসমান জমিনের সব কিছুর নিয়ন্ত্রক?

আল্লাহর নামে বলছি, ওদের বা আপনার উপর যে মঙ্গল বা অমঙ্গল আপতিত হয় তার উপর আপনার কোনই হাত নেই। তাদের বা আপনার নিজের জীবনের উপর আপনার কোনই নিয়ন্ত্রণ নেই। আপনার আয়ুর সাথে ১টি দিন যোগ করার ক্ষমতাও আপনার নেই। একদিনের মধ্যেই আপনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং সন্তানদের ইয়াতীম হিসেবে রেখে যেতে হবে। তখন আপনি আফসোস করবেন হায় আমার এতিমরা; আমি যদি শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারতাম! জবাব দেয়া হবেঃ এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। আল্লাহ বলেন।

“হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর এবং ভয় কর সেই দিনকে যখন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না এবং সন্তানও কোন উপকারে আসবে না তার পিতার! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে।” (সূরা লুকমান ৩১:৩৩)

এখন, আপনার সন্তান যদি সফলকামদের (জান্নাতি) অন্তর্ভুক্ত হয় তবে আপনাদের জান্নাতে পুনর্মিলিত করা হবে। আর যদি সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয় তবে তার জন্য অপেক্ষা কেন? এখন থেকেই আলাদা হয়ে যান! যদি সত্যই আপনি আপনার সন্তানের জন্য উদ্বিগ্ন হন তবে শহীদ হন। আপনি পরিবারের ৭০জন সদস্যের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে আর কীসের জন্য অপেক্ষা?

আপনার বন্ধু বান্ধব

যদি আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব পরিচিতদের ফেলে যেতে অপারগ হন তবে বিচার দিনের কথা চিন্তা করুন। সে দিন বন্ধু শক্রতে পরিণত হবে কেবল সৎকর্মশীলগণ ব্যতীত। অতএব আপনার বন্ধুরা যদি সৎকর্মশীল না হয় তবে তাদের সাথে আর থাকতে চেয়েন না কেননা কাল অবশ্যই তারা আপনার বিরুদ্ধে যাবে। তবে তারা যদি সৎকর্মশীল হয়ে থাকে তবে আল্লাহ আপনাদের এর চেয়ে ভাল জায়গায় পুনর্মিলিত করবেন। আল্লাহ বলেনঃ

“আমি তাদের অন্তর হতে ঈর্ষা দূর করব তারা ভাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে।” (সূরা হিজর ১৫:৪৭)

ক্ষমতা ও মর্যাদা

আপনি হয়ত মুজাহিদীনদের সারিতে যোগ দেয়া হতে বিরত রয়েছেন কারণ আপনি যে উচ্চপদ, ক্ষমতা ও মর্যাদা হাসিল করেছেন এই দুনিয়ার তা হারাতে চান না। আপনি এখন যে পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন এর আগে আর কতজন এই পদে ছিল। এ পদ যদি তাদের ছেড়ে যেতে পারে তবে নিঃসন্দেহে একদিন আপনাকেও ছেড়ে যেতে হবে। আপনার ক্ষমতা সে তো অস্থায়ী আর আপনার প্রতিপত্তি মর্যাদা এসবও মানুষ শীঘ্রই ভুলে যাবে। আপনার পদমর্যাদা, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আপনাকে জান্নাতের পথ হতে দূরে রাখছে। জান্নাতের সর্বনিম্ন ব্যক্তিও এই পৃথিবীর দশগুণ এলাকা এবং এর অন্তর্ভুক্ত সবকিছুর অধিকারী হবে। এতো কেবল জান্নাতের সর্বনিম্ন ব্যক্তির মর্যাদা ও ক্ষমতা যা এ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতা বান রাজার চেয়েও বেশি।

এই পৃথিবীর কিছুই দূষণমুক্ত বা বিশুদ্ধ নয়। আপনি যে সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন, এটার বেশ বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে হতাশাব্যঞ্জক অনেক কিছু। ক্ষমতা ও পদমর্যাদার জন্য আপনাকে অনেক লড়াই করতে হবে। এতে অনেক শত্রুর জন্ম হবে আর হারাতে হবে বন্ধুদের। পথিমধ্যে অনেক বেদনা, অনেক ব্যর্থতা সহ্য করতে হবে। আর জান্নাত এ সমস্ত কিছু থেকে মুক্ত। আল্লাহ বলেন, “স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা – মাতা পতি পত্মী ও সন্তান সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও এবং ফেরেশতা তাদের আছে হাযির হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে (২৩) বলবে, তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি। কতই না ভাল এই পরিণাম! (২৪)” (সূরা রাদঃ ১৩)

আরামদায়ক জীবনযাপনের প্রতি আসক্তি

হতে পারে আপনার বিশাল বাসভবনের শান্তি, বাগানের ছায়া, শয্যার আরাম, আপনার চতুর্দিকের সমস্ত আমোদ প্রমোদ, যা জীবনকে করেছে আরামদায়ক ও মনোরম। কিন্তু মনে রাখবেন, এগুলোর কোনটিই চিরস্থায়ী নয়। আপনার এই বিলাসবহুল বাড়ি ইট পাথর, ও চুনসুরকি দ্বারা তৈরি বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা যদি পরিষ্কার করা না হয় তাহলে এটা নষ্ট হয়ে যাবে, আর যদি ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় তবে এটার পতন ঘটবে। ঘটনাক্রমে একদিন এটাই ধুলাবালিতে পরিণত হবে যা থেকে এটা তৈরি করা হয়েছিল। আপনি কি এর চেয়ে সোনা ও রূপার ইটের তৈরি প্রাসাদে থাকতে বেশি পছন্দ করবেন না? এমন প্রাসাদ যা চিরস্থায়ী এবং যার কোন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন নেই। এর আসবাবপত্র পছন্দনীয় এবং সুবিন্যস্ত করে সাজিয়েছে ফেরেশতারা। আর এতে আপনাকে সার্বোৎকৃষ্ট খাবার পরিবেশন করবে এমন দাস – দাসীরা, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “তাদেরকে পরিবেশন করবে কিশোরগণ, তাদেরকে দেখে মনে হবে তারা যেন বিক্ষিপ্ত মুক্তা।”

জান্নাত সবকিছুই পরিচ্ছন্ন, সবকিছুই পবিত্র। সেখানে কোন প্রকৃতির ডাক বা ঘাম নেই। আমাদের দেহ ভিন্ন এক রূপ নিয়ে আসবে। জীবন সেখানে অসীম। সেখানে সময়ের কোন চাপ নেই। জান্নাতিরা যখন তখন যা ইচ্ছা যতক্ষণ খুশি ততক্ষণই করতে পারবে। তারা সিংহাসনে হেলান দিয়ে স্ত্রীর সাথে ৪০ বছর কথা বলতে পারবে। আপনার এবং এত আমোদপ্রমোদের মাঝে শহীদ হওয়া ছাড়া আর কিছুই কোন বাধা নেই। এই জীবনপদ্ধতির সাথে দুনিয়ার জীবনপদ্ধতির তুলনা করে দেখুন।

অধিক সৎকর্ম করার জন্য দীর্ঘায়ু কামনা

আপনি হয়ত জিহাদে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছেন না, কারণ আপনি এর জন্য প্রস্তুত নন এবং আপনি আরও নেককাজ করতে চান। অর্থাৎ আপনি উত্তম নিয়্যতে জিহাদ থেকে দুরে আছেন। কিন্তু শুনুন, আপনি প্রতারিত বা বঞ্চিত হচ্ছেন। আল্লাহ বলেন,

“হে মানুষ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চনা যেন কিছুতেই আল্লাহর সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে তোমাদেরকে। শয়তান তোমাদের শক্র; সুতরাং তাকে শক্র হিসেবে গ্রহণ কর; সে তো তার দলবলকে আহবান করে শুধু এজন্য যে, তারা যেন জাহান্নামের সাথী হয়।” (সূরা ফাতির ৫ – ৬)

এটা শয়তানের ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা আল্লাহর আউলিয়াদের (বন্ধু) পথ নয়। সাহাবা এবং তাবিঈনরা কি সৎকর্মের প্রতি আপনার চেয়ে বেশি উৎসাহী ছিলেন না। আপনি কি শুনেন না আল্লাহ আপনাকে বলছেন “বের হও হালকা অথবা ভারী (স্বল্প সরঞ্জামের সাথেই হোক, অথবা প্রচুর সরঞ্জামের সাথেই হোক) এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন – সম্পদ ও প্রাণ দ্বারা যুদ্ধ কর এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে।” (সূরা তওবা ৯:৪১)

আপনি কি দেখছেন না যে, নিজেকে শুধরানোর বা আরও ভাল করবার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ ধন – প্রাণ দ্বারা জিহাদে অংশগ্রহনকারীদেরকে গৃহে উপবিষ্টদের উপর পদমর্যাদায় গৌরবান্বিত করেছেন … উপবিষ্টদের উপর মুজাহিদদের মহান প্রতিদানে গৌরবান্বিত করেছেন।” (সূরা আন – নিসাঃ৯৫)

প্রকৃত অর্থে জিহাদের সমতুল্য কিছুই নেই। রাসূল (সা) বলেছেন “যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যদের সারিতে দাড়িয়ে থাকা, পরিবারের মধ্যে ৭০ বছর আল্লাহর ইবাদত করার চেয়ে উত্তম”। (তিরমিজী আল-বায়হাকী আল-হাকীম)

স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা

যদি আপনি সুন্দরী স্ত্রীর কারণে জিহাদে যেতে অপারগ হন, আর আপনার তাকে যদি পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট নারী ও সবচেয়ে সুন্দরী বলে মনে হয় তবে শুনুন, সেও কি একসময় সামান্য একটা মাংস পিণ্ড ছিল? এবং একসময় সেও কি পঁচে নিঃশেষ হয়ে যাবে না? মাসিকের কারণে আপনাকে তার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে জীবনের অনেকটা সময়। সে বাধ্য হবার থেকে অবাধ্যই বেশি ছিল। সে যদি নিজেকে পরিষ্কার না রাখত তবে তার থেকে দুর্গন্ধ আসত। যদি সে চুল না আঁচড়াত তবে তা অবিন্যস্ত বা এলোমেলো হয়ে থাকত। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যে আরও কুৎসিত হতে থাকে। তাকে খুশী করা সহজ নয়, তার ভালবাসা রক্ষার্থে আপনাকে অনেক খরচ করতে হয়। আপনি সবসময় তাকে খুশী করতে চান বা প্রভাবান্বিত করতে চান কিন্তু কিছুই যেন যথেষ্ট হয় না তার জন্য। সে আপনাকে শুধু তখনই ভালবাসে যখন সে যা চায় আপনি তাই দেন আর যদি না দেন তবে সে আপনাকে ছেড়ে অন্য কাউকে খুঁজে নিবে যেন, ‘যদি আমাকে চাও তবে খরচ কর আমার জন্য’ ! সাধারণ ভাবে একসাথে অবিরাম/চিরস্থায়ী দুঃখ যন্ত্রণা ছাড়া তাকে উপভোগ করা সম্ভব নয়।

এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে এই নারী আপনাকে জান্নাতের নারী থেকে দূরে রাখে। আল্লাহর নামে বলছি, শহীদের রক্ত জান্নাতে তার স্ত্রীর সাথে দেখা হবার আগে শুকায় না। সে হবে সুন্দর যার থাকবে বড় বড় দ্যুতিময় চোখ। একজন কুমারী যেন একটি পান্না। সে আর কাউকে ভালবাসেনি, বাসবেও না কেবল আপনাকে ছাড়া। সে তৈরি হয়েছে কেবল আপনারই জন্য। তার একটি মাত্র আঙুলও চাঁদের ঔজ্জ্বল্যকে হার মানবে। পৃথিবীতে যদি তার হাতের কব্জিটুকুও প্রকাশ পায় তার সমস্ত মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে। সে যদি আসমান ও জমিনের মধ্যে অবস্থান করে তবে মধ্যবর্তী সম্পূর্ণ এলাকা তার সুগন্ধে মৌ মৌ করবে। আর যদি সে সমুদ্রের পানিতে থুথু ফেলে, তবে এর নোনা পানিও বিশুদ্ধ (খাবার) পানিতে পরিণত হবে।

তার দিকে যতই তাকাবেন, সে ততই সুন্দর হতে থাকবে। তার সাথে যত সময় অতিবাহিত করবেন আপনি ততই তাকে ভালবাসবেন। এরকম একজন নারী সম্পর্কে জেনে শুনেও তার সাথে মিলিত হবার চেষ্টা না করা কি বিবেক বুদ্ধির পরিচয় দেয়? আর যদি আপনি জানেন যে, আপনি ১ জন নয় বরং ৭০ টি হুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন?

মনের মধ্যে রাখুন যে, স্ত্রীকে ছেড়ে যাওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। আপনি মারা যাবেন এবং সে ও আপনাদের ইনশাআল্লাহ জান্নাতে পুনর্মিলিত হবে এবং দেখবেন যে সে, জান্নতের হুরদের চেয়ে বেশি সুন্দরী। আপনি তাকে পাবেন এ জীবনের সমস্ত অসন্তোষ মূলক জিনিস হতে মুক্ত।

অনেক বেশি দেরী হবার আগেই জেগে উঠুন। এই দুনিয়ার কারাগার হতে নিজেকে মুক্ত করুন এবং শহীদের মর্যাদা লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন এত অসাধারণ পুরষ্কার আর আপনার মাঝে কোন কিছুকে বাঁধা হয়ে দাড়াতে দিবেন না।

  1. আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “শহীদের মৃত্যুযন্ত্রণা কেবল একটি পোকার হুল বিদ্ধের ব্যথার মত।” (আত তিরমিযী আন – নাসাঈ ইবন মাজাহ, আহমাদে আল-আলবানী হাসান)
  2. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর পথে দিনের প্রথম ভাগে বা শেষভাগে যাত্রা করা এই দুনিয়া ও এর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম এবং যদি জান্নাতের কোন রমণী এই দুনিয়ার মানুষদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করে, তবে এদের মধ্যকার এলাকা আলো আর সুগন্ধিতে ভরে যাবে আর তার মাথার রুমাল পর্যন্ত এই দুনিয়া ও এর মধ্যকার সবকিছু হতে উত্তম।” (বুখারী)

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ মুজাহিদীন এবং জিহাদের মর্যাদা

জিহাদের মর্যাদাঃ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’ আলা বলেন, “সমান নয় সেসব মু’ মীন যারা বিনা ওযরে ঘরে বসে থাকে এবং ঐসব মু’ মীন যারা আল্লাহর পথে নিজেদের জান – মাল দিয়ে জিহাদ করে। যারা স্বীয় জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের উপর যারা বসে থাকে। আর প্রত্যেককেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদীনদের মহান পুরস্কারে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপরে। এসব তাঁর তরফ থেকে মর্যাদা ক্ষমা ও রহমত। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা নিসা ৯৫ – ৯৬)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’ আলা বলেনঃ “সুতরাং তারা যেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে যারা আখিরাতের বিনিময় পার্থিব জীবন বিক্রয় করে দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে তারপর সে নিহত হোক বা বিজয়ী হোক অবশ্যই আমি তাকে দান করব মহা পুরস্কার। (সূরা নিসা ৭৪)

“যারা ঈমান এনেছে হিজরত করেছে এবং নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে তারা আল্লাহর কাছে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ। আর তারাই প্রকৃত সফলকাম। তাদের রব তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন স্বীয় অনুগ্রহের ও সন্তোষের এবং জান্নাতের যার মধ্যে তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী নেয়ামত।তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আছে মহাপুরষ্কার।” (সূরা তওবাঃ ২০ – ২২)

“নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুমিনদের থেকে তাদের জান ও তাদের মাল; এর বিনিময়ে যে, অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে, কখনও হত্যা করে এবং কখনও নিহত হয়। তাওরাত, ইনজিল এবং কোরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চাইতে শ্রেষ্ঠ আর কে আছে? সুতরাং তোমরা আনন্দ কর তোমাদের সে সওদার জন্য যা তোমরা তাঁর সাথে করেছ আর তা হল বিরাট সাফল্য।” (সূরা তওবাঃ ১১১)

“ওহে যারা ঈমান এনেছ। তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ় রাখবেন।” (সূরা মুহাম্মাদঃ ৭)

“প্রকৃত মু’ মিন তো তারাই, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি; পরে কখনও সন্দেহ করেনি এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন সম্পদ ও জীবন দিয়ে জিহাদ করেছে তারাই সত্যবাদী।” (সূরা আল-হুজুরাতঃ ১৫)

“ওহে যারা ঈমান এনেছ! আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দেব যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে? তা এই যে তোমরা ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি এবং জিহাদ করবে আল্লাহর পথে তোমাদের ধন সম্পদ দিয়ে ও তোমাদের জীবন দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে।

আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন তোমাদের গুনাহসমূহ এবং দাখিল করবেন এমন জান্নাতে যার নিম্নদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে নহরসমূহ এবং এমন মনোরম গৃহে যা রয়েছে অনন্তকাল বসবাসের জন্য। এটাই মহা সাফল্য। আর অন্য একটি অনুগ্রহ রয়েছে, যা তোমরা পছন্দ কর। তা হল আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়। (সূরা আল-ছফঃ ১০ – ১৩)

সালাত এবং আপন মাতাপিতার প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার পর জিহাদই হল সর্বোত্তম আমলঃ

  1. একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একজন প্রশ্ন করল (আল্লাহর) ইবাদত সমূহের মধ্যে কোন কাজটি আল্লাহর চোখে অধিক প্রিয়?

তিনি বলেন “ওয়াক্ত – মত সালাত আদায় করা” আমি বললাম, ‘অতঃপর’ ? রাদিআল্লাহু আনহু

তিনি বললেন : “তোমার পিতামাতার প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া”, আমি বললাম, “অতঃপর?” তিনি বলেন, “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ”। (বুখারী)

  1. ইবনে উমর রাদিআল্লাহু আনহু জিহাদকে সালাতের পর সর্বোত্তম আমল হিসেবে গণ্য করতেন (আল-বাইহাকী)

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের পর সবচেয়ে মহৎ কাজ হল জিহাদঃ

  1. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কেউ জিজ্ঞাসা করল ইবাদত সমূহের মধ্যে কোন কাজটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, “আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।” সে বলল, “অতঃপর?” তিনি উত্তর দিলেন, “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ”; তখন তিনি জিজ্ঞাসিত হলেন, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, “কবুলকৃত হজ্ব”।(বুখারী এবং মুসলিম)
  2. মাইজ রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হয়, “সর্বোত্তম কাজ কোনটি?” তিনি বলেন”আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং অতঃপর জিহাদ এবং অতঃপর হাজ্জ এবং এগুলোর সাথে অন্য প্রতিটি কাজের তুলনা এমন, যেমন দূরত্ব রয়েছে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের।(আহমেদ)

[এটা এরই নির্দেশক যে, এসব কাজসমূহের মর্যাদা অন্যান্য কাজার তুলনায় শুধু উপরেই নয় বরং তাদের মাঝে রয়েছে মর্যাদার ক্ষেত্রে বিশাল পার্থক্য]

  1. আবু জার রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম, সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে তিনি বললেন, “আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাঁর রাস্তায় জিহাদ করা।” (বুখারী এবং মুসলিম)
  2. আবু কাতাদাহ রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঠে দাঁড়ালেন এবং তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য বললেন, “জেহাদ করা এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করা হলো সর্বোত্তম কাজ” এক ব্যক্তি তখন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, “হে আল্লাহর রাসূল আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই তবে কি আমার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে?” আল্লাহর রাসূল বললেন, “হ্যাঁ”। (মুসলিম)

আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,” আল্লাহর চোখে সর্বোত্তম কাজ হল আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাসে গাজওয়া (শক্রর সাথে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে বের হওয়া ) করা – কুলুল ছাড়া (যোদ্ধাদের মাঝে গনীমতের মাল বণ্টনের পূর্বে তা থেকে কিছু নেয়া) এবং একটি মকবুল হজ্জ।” (আবু খুযায়মা – ইবনে হাববান)

জিহাদ, আল্লাহর গৃহে ইবাদত করা এবং এর দেখাশোনা করা এবং হাজ্জীদের সাহায্য করা হতে উত্তমঃ

  1. আল-নুমান বিন বশীর রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,” আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গৃহের ধর্ম প্রচারের স্থানের পাশে বসা ছিলাম যখন একটি লোক বলল, ‘আমি কিছু মনে করব না যদি আমি মুসলিম হয়ে, হাজীদের দেখভাল করা ছাড়া কিছু না করি।’ অন্যজন বলল, ‘আমি কিছু মনে করব না যদি আমি মুসলিম হয়ে পবিত্র গৃহে ইবাদত করা ছাড়া কিছু না করি’ তৃতীয় ব্যক্তি বলল, ‘না। আল্লাহর রাস্তার জিহাদ করা তোমরা যা বলেছ তা হতে উত্তম।” উমর রাদিআল্লাহু আনহু তাদেরকে বকা দিলেন এবং চুপ থাকতে বললেন এবং রাসুলুল্লাহর গৃহের পাশে উচ্চস্বরে কথা বলতে নিষেধ করলেন। তিনি তখন বললেন, ‘আজ শুক্রবার এবং কিছুক্ষণের মাঝেই তিনি খুৎবাহ দিতে আসবেন। যখন তিনি চলে যাবেন আমি তার কাছে যাব এবং তোমাদের আলোচনার ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করব। আল্লাহ তখন প্রকাশ করলেন, তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানো এবং মসজিদে হারামের রক্ষণাবেক্ষণকে ঐ ব্যক্তির আমলের সমান সাব্যস্ত কার নিয়েছ যে ব্যক্তি ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি আর জিহাদ করেছে আল্লাহর পথে? এরা আল্লাহর কাছে সমান নয়। আর আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন না জালিম কওমকে।” (মুসলিম)

[সুতরাং এই আয়াতটি জিহাদের উৎকৃষ্টতা সম্পর্কে বর্ণনা করছে]

জিহাদ যে সর্বোত্তম কাজ সে সম্পর্কে প্রমাণসমূহঃ

  1. আমর বিন আবসাহ রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেনঃ এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম কি?’ তিনি বললেন, “ইসলাম হল তোমার অন্তরের আত্মসমর্পণ এবং এই যে মুসলিমরা তোমার জিহ্বা এবং হাত হতে নিরাপদ থাকবে।” সে বলল, ‘ইসলামের সর্বোত্তম কি?’ আল্লাহর রাসূল বললেন, “ঈমান(বিশ্বাস)” সে বলল, ‘বিশ্বাস কি?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আল্লাহতে, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূলগণ এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস করা।” সে বলল, ‘ঈমানের সর্বোত্তম কি?’ আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “গুনাহসমূহ পিছনে ফেলে আসা।” সে বলল, ‘হিজরাতের সর্বোত্তম কি?’ আল্লাহর রাসূল বললেন, “জিহাদ” সে বলল, ‘জিহাদের সর্বোত্তম কি?’ আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “সেই ব্যক্তি যার ঘোড়াকে বধ করা হয়েছে এবং সে নিহত হয়েছে/তার রক্ত বের করা হয়েছে।” (আহমেদ আল-তাবারানী আল-বায়হাক্বী)

দেখ আল্লাহ তোমার উপর দয়া করল কিভাবে আল্লাহর রাসূল উত্তম হতে উত্তম সাজিয়েছেন এবং ইসলামের উত্তমকে জিহাদ এবং অতঃপর জিহাদের উত্তমকে বলেছেন আত্মত্যাগ।

  1. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলেন, “মুসলিম হও” লোকটি বলল, ‘ইসলাম কি?’ তিনি তার উত্তর দিলেন এবং সে জিজ্ঞাসা করল হিজরাহ ও জিহাদ করতে বললেন। লোকটি বলল, ‘জিহাদ কি?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,”তুমি আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করবে এবং তুমি শক্রদের সাথে যুদ্ধে করতে ভয় পাবে না এবং তুমি কুলুল করবে না, (আবু ্ ইয়ালা আল-বায়হাকী)
  2. আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে তিনি আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল আমরা দেখতে পাই যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা সর্বোত্তম কাজ। আমাদের কি জিহাদ করা উচিৎ নয়?” আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, “তোমার জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল মকবুল হ্জ্জ।” (বুখারী)
  3. আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “বৃদ্ধ দুর্বল এবং মহিলার জিহাদ হল হ্জ্জ এবং উমরাহ”
  4. আল-খতীব”বাগদাদের ইতিহাস” গ্রন্থে বলেন এবং ইবনে আসাকির দামেস্কের ইতিহাসে বলেন যে, মুহাম্মদ বিন ফাজাইল বিন ইয়াদ বলেন আমি ইবনে আল-মুবারাককে আমার স্বপ্নে দেখে তাঁকে জিজ্ঞাসা করি ”তুমি তোমার কাজের সর্বোত্তম কি দেখতে পেয়েছ?” তিনি বলেন, “যে কাজ নিয়ে আমি ব্যস্ত ছিলাম” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “জিহাদ এবং রিবাত?” তিনি বলেন, “হ্যাঁ”আমি তাকে বললাম, “সুতরাং আল্লাহ আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন?” তিনি বলেন “তিনি আমাকে ক্ষমা করেছেন।”
  5. আল-ফাজল বিন জিয়াদ বলেন আমি আবু আব্দুল্লাহ (ইমাম আহমেদ) কে বলতে শুনেছি যখন গাজওয়া তাঁর সামনে উচ্চারিত হত তিনি কাঁদতে শুরু করতেন এবং অতঃপর বলতেন, “এর চেয়ে উত্তম আর কোন ইবাদত নেই।”
  6. আল-মুগনীতে এটা বলা আছে যে ইমাম আহমেদ বলেন, “শত্রুর সম্মুখীন হওয়ার তুলনায় আর কিছুতেই এত উত্তম প্রতিদান নেই। এবং একজনের জন্য সত্যিকারের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা হল অন্যান্য কাজের তুলনায় সর্বোত্তম কাজ; যারা শক্রর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত আছে তারাই ইসলামকে রক্ষা করছে সুতরাং তা হতে আর কি উত্তম হবে। মানুষ নিরাপদ অনুভব করে যখন সে ভয়ের মাঝে থাকে তারা তাদের আত্মা সমূহ আল্লাহর কাছে দিয়ে রেখেছে।”

জিহাদ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজঃ

  1. আব্দুল্লাহ বিন সালাম বলেন, “আমরা রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একদল সাহাবী ছিলাম এবং আমরা বলছিলাম আমরা যদি জানতাম আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কোনটি, আল্লাহ তখন নাজিল করলেন, ‘যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে যমীনে সবকিছুই আল্লাহর পবিত্রতা মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যা কর না তা বল কেন? আল্লাহর কাছে অতিশয় অসন্তোষ জনক এমন কথা বলা যা তোমরা করো না নিশ্চয়ই আল্লাহর তাদের ভালবাসেন যারা তাঁর পথে যুদ্ধ করে সারিবদ্ধ ভাবে যেন তা সীসা গলানো সুদৃঢ় প্রাচীর।’ (সুরা আস সফ – ১ – ৪)

মুজাহিদ সকল মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠঃ

“সমান নয় সেসব মুমিন যারা বিনা ওযরে ঘরে বসে থাকে এবং ঐসব মুমিন যারা আল্লাহর পথে নিজেদের জানমাল দিয়ে জিহাদ করে। যারা স্বীয় জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে আল্লাহ তাদর মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের উপর যারা ঘরে বসে থাকে। আর প্রত্যেককেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদীনকে মহান পুরষ্কারে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপরে। এসব তাঁর তরফ থেকে মর্যাদা ক্ষমা রয়েছে। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা নিসা ৯৪ – ৯৬)

  1. আবু সাইদ আল-খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাস করা হলো, ‘মানুষ মাঝে সর্বোত্তম কে?’ তিনি বলেন, “একজন বিশ্বাসী যে নিজে জান মাল দিয়ে আল্লাহর জন্য জিহাদ করে।” (বুখারী – মুসলিম)

কেউই জিহাদের সমতুল্য কোন ইবাদত করতে পারে নাঃ

  1. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল এমন কাজের কথা যার পুরষ্কার জিহাদের অনুরূপ তিনি বলেন, “তুমি তা করতে পারবে না।” তারা আবার জিজ্ঞাসা করল এবং তৃতীয়বার। এবং প্রত্যেকবার রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন তোমরা তা করতে পারবে না।” অতঃপর তিনি বলেন মুজাহিদের সমান হল সে যে রোজা রাখে এবং সালাত পড়ে কোনরূপ বিশ্রাম ছাড়া এক নাগাড়ে যতক্ষণ না মুজাহিদ ফিরে আসে।” (মুসলিম)
  2. একজন লোক রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসল এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করল এমন কিছু কাজের কথা যা জিহাদের অনুরূপ আল্লাহ রাসূল (সা) বললেন, “আমি এমন কিছু দেখিনা।” অতঃপর তিনি বলেন, “যখন মুজাহিদ প্রস্থান করে। তুমি কি পারবে মসজিদে ঢুকে একনাগাড়ে সালাহ ও সাওম পালন করতে কোন বিরতি ছাড়া?” লোকটি বলল “এবং কে এমন করতে পারে।” (বুখারী)
  3. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, “মুজাহিদের ঘোড়া দৌড়াতে থাকবে চারণভূমিতে এবং মুজাহিদকে তার জন্য পুরস্কার দেয়া হবে।” (বুখারী)

এমন মানুষগুলো যারা তাদের পুরস্কারগুলো বহুগুণে বর্ধিত অবস্থায় পেয়েছিল রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথী হওয়ার জন্য যদি জিহাদের সমতুল্য কিছু খুঁজে না পায়। তখন আমরা কিভাবে এর চেয়ে ক্ষুদ্র কাজ দ্বারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারি। কিভাবে আমরা অন্যান্য কাজের মাধ্যমে শান্ত হয়ে থাকতে পারি এমনকি যখন এসব কাজেও রয়েছে আন্তরিকতার অভাব ও ত্রুটিসমূহ?

হে আল্লাহ! আমাদের জাগ্রত কর নিদ্রা হতে এবং তোমার কারণে জিহাদে আমাদের কবুল করে নাও সে সময়ের আগে যখন খুব দেরী হয়ে যাবে। তুমি যেকোনো ভালোর জন্য আমাদের আশা এবং তুমি ছাড়া কোন শক্তি নেই।

মুজাহিদের ঘুম অন্যদের সারারাত প্রার্থনা এবং রোজা অপেক্ষা উত্তম এর প্রমাণ সমূহঃ

  1. সাফওয়ান বিন সেলিম বলেন ”আবু হুরায়রা জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কি কেউ কোন বিশ্রাম ছাড়া একনাগাড়ে সালাত পড়তে বা কোনরূপ বিরতি ছাড়া রোজা রাখতে পারবে?” তারা বললেন, “হে আবু হুরায়রা এক নাগাড়ে কে এমন করতে পারে?” তিনি বলেন, “আমি তার নামে শপথ করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ মুজাহিদ এর নিদ্রা তার থেকে উত্তম।” (ইবনে আল-মুবরাক)

এটাই যদি হয় তাদের ঘুমের মর্যাদা, তাদের ইবাদতের মর্যাদা তবে কিরূপ? প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বীর এরূপ বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত এবং এই সেই বিষয় যা হারানোর জন্য অন্যদের কাঁদা উচিত।

আল্লাহ মুজাহিদীনদের জন্য জান্নতে ১০০ টি স্তর রেখেছেন প্রত্যেক স্তরের দূরত্ব পরের স্তরের সাথে আসমান এবং জমিনের সমান।

“আল্লাহ মুজাহিদীনদের অন্য যারা (পিছনে) থেকে গেছে তাদের থেকে মহৎ এক প্রতিদানের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এসব তাঁর তরফ থেকে মর্যাদা ক্ষমা রহমত আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা নিসা ৯৫ – ৯৬)

  1. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন জান্নাতে ১০০ টি স্তর রয়েছে প্রত্যেক স্তরের সাথে পরবর্তী স্তরের মধ্যে রয়েছে জমিন ও আসমান (জান্নাত) সমান দূরত্ব সুতরাং তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে ফিরদাউস চাইবে। এটা জান্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে এবং সর্বোচ্চ অংশে অবস্থিত। এখান থেকে জান্নাতের নহর সমূহ প্রবাহিত হয় এবং এর উপরে রয়েছে আল্লাহর আরশ।” [বুখারী]

এই জাতির রাহবানিয়াহ (সন্ন্যাসবৃত্তি) এবং সিয়াহা (আল্লাহর ইবাদতের জন্য পৃথিবী ভ্রমণ করা) হল জিহাদঃ

“(এই বিশ্বাসীরা) তওবাকারী, ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রোযাদার, রুকুকারী, সিজদাকারী, ভাল কাজের আদেশদাতা ও মন্দকাজে বাধা প্রদানকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হেফাজতকারী (এসব গুনে গুণান্বিত) মু’মিনদের আপনি খোশখবর শুনিয়ে দিন।” (সূরা তওবা ১১২)

  1. আবু সাইদ আল-খুদরী রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এক ব্যক্তি এলো এবং বলল, “আমাকে উপদেশ দিন।” তিনি বললেন, “আল্লাহকে ভয় কর কারণ এটি সব ভাল কিছুর মূল এবং জিহাদ কর। যেহেতু এটা এ জাতির জন্য রাহবানীয়াহ স্বরূপ বা সন্ন্যাস জীবনযাপন স্বরূপ এবং আল্লাহকে স্মরণ কর এবং কোরআন অধ্যয়ন কর যেহেতু তা এ পৃথিবীতে চলার জন্য এবং জান্নাতের কথা স্মরণ রাখার জন্য তোমার জন্য আলো স্বরূপ এবং ভাল ছাড়া সব কিছু থেকে নিজ জিহ্বাকে সংযত রাখ, কারণ এভাবে তুমি শয়তানকে পরাজিত করতে পরবে।” (আল-তাবারানী আল-যাতিব আহমেদ)

আবু আব্দুল্লাহ আল-হাতিমী বলেন, “ ‘এ জাতির সন্ন্যাস জীবনযাপন হলো জিহাদ’ – এর অর্থ হলো যে খৃষ্টানরা মানুষ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিভৃতে আশ্রমে সন্ন্যাস জীবনযাপন করত। তারা আল্লাহর জন্য সর্বোচ্চ যে ত্যাগ করতে পারত তা হল এই যে এই দুনিয়ার প্রলোভন থেকে দূরে থাকা। তারা দাবী করত যে তারা প্রত্যেক ব্যক্তি হতে দূরে থাকে এই উদ্দেশ্যে যে, সে যেন কারও ক্ষতি না করে। কিন্তু শয়তানদের শয়তানী কাজে লিপ্ত রাখার চেয়ে বড় ক্ষতি আর কিছু নেই। সুতরাং সত্যিকার ব্যক্তি সেই, যে শয়তানকে উপেক্ষা করে এবং তাদের ক্ষতি করে তারা হল মুজাহিদীন যে তাদের ধ্বংস করে।”

আবু উসামাহ বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমার জাতির সিয়াহাহ হল জিহাদ।”(আবু দাউদ আল-হাকিম আল-সুমান আল-কুবরা)

সিয়াহাহ হলো অসৎ বিষয়াদি থেকে দুরে থাকা ও আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার জন্য দুনিয়ার বুকে ভ্রমণ করা।

যেহেতু জিহাদের দ্বারা এ দুটোই অর্জন করা যায় তাই জিহাদই হলো মুমিনের সিয়াহাহ; মুমিন তো দুনিয়া থেকে আল্লাহর দিকে পলায়নরত থাকে।

ইসলামের চূড়া হল জিহাদঃ

  1. মুয়াজ বিন জাবাল বর্ণনা করেন, আমরা তাবুক হতে ফেরার পথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ছিলাম তিনি আমাকে বললেন, “তুমি যদি চাও আমি তোমাকে এই বিষয়ের মূল, স্তম্ভ এবং চূড়া সম্পর্কে বলতে পারি।” আমি বললাম, “অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” তিনি বলেন, “সব বিষয়ের প্রধান হল ইসলাম; এর খুঁটি হল সালাহ এবং এর চূড়া হল জিহাদ।” (আল-হাকিম – আহমেদ – আল-তিরমিযী ইবনে মাযাহ)

মুজাহিদদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াদাঃ

  1. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ মুজাহিদদের, যারা নিজেদের ঘর ত্যাগ করেছে, শুধুমাত্র আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে এবং আল্লাহর ওহীকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য ওয়াদা রয়েছে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা সে যদি ফিরে আসে তার জন্য রয়েছে গণীমতের পুরস্কার।” (বুখারী, মুসলিম)
  2. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন ব্যক্তির জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে ও সাহায্যের ওয়াদা, আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদগণ, সেই ভৃত্য যে মুকাতাবাহ শুরু করেছে, এবং সেই ব্যক্তি যে পবিত্রতার জন্য বিবাহ করতে চায়।” (আব্দুর রাজ্জাক্ব – আল-তিরমিযী – আল-হাকিম)

আল্লাহ কখনও মুজাহিদীনদের পরিত্যাগ করেন না বরং তাদের সাহায্য করেন এবং তাদের ডাকে সাড়া দেনঃ

  1. জাবীর বিন আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেন, একদা আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক একটি অভিযানে প্রেরিত হই যার উদ্দেশ্য ছিল কুরায়িশদের একটি কাফেলার উপর অকস্মাৎ হামলা করা এবং তিনি আবু উবায়দাকে আমাদের নেতা নির্বাচন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে একটি চামড়ার ব্যাগে খেজুর দেয়া ছাড়া কিছুই দেয়ার মত পেলেন না। বর্ণনাকারীকে জিজ্ঞাসা করা হয় এক খেজুরে কি এমন ভাল থাকতে পারে?” আমরা তা খেতাম এবং এর বিচিগুলোকে চুষতে থাকতাম পানির সাথে তাই আমাদের জন্য সারাদিনের জন্য একমাত্র খাবার ছিল। অতঃপর আমরা গাছের পাতা সংগ্রহ করে তা জ্বাল দিয়ে খেতে থাকতাম। অতঃপর আমরা উপকূলের উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলাম। আমরা একটি বালুর ঢিবির মত কিছু একটা দেখতে পেলাম এবং বিস্ময়করভাবে তা ছিল একটি তিমি। আবু উবাদা প্রথমে বললেন যে এটি মৃত (সুতরাং তা গ্রহণ করা যাবে না)। অতঃপর তিনি বললেন, “কিন্তু অথবা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দূত এবং আমরা আল্লাহর পথে রয়েছি এবং এটি আমাদের প্রয়োজন সুতরাং ইহা থেকে গ্রহণ কর। আমরা সেখানে পুরো এক মাসের জন্য অবস্থান করলাম যতক্ষণ না আমাদের দেহে চর্বি ভাসতে শুরু করল। এবং আমরা ছিলাম ৩০০ জন আমরা এর চোখ থেকে বালতি নিয়ে তেল গ্রহণ করতাম এবং তার বিশাল ষাঁড়ের মত মাংস থেকে গোশত কেটে নিতাম। আবু – উবায়দা আমাদের ১৩ জনকে এর চোখের কোটরের মাঝে রাখতে পেরেছিলেন। এরপর তিনি এর পাঁজরের হাড় মাটিতে স্থাপন করলেন এবং অতঃপর আমাদের উটদের মাঝে সবচেয়ে বড় উটটি এর নিচ দিয়ে চলে গেল একটি ধনুকের মত হাড়ের কোন অংশ স্পর্শ না করে। আমরা অতঃপর কিছু শুষ্ক গোশত তুলে আমাদের এই হাড়ের কোন অংশ আমাদের সাথে মদিনায় নিয়ে এলাম। যখন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – কে আমাদের গল্প শোনালাম, তখন তিনি বললেন এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে ছিল জীবিকা যা তিনি তোমাদের জন্য পাঠিয়েছিলেন। তোমরা কি আমার জন্য তোমাদের সাথে কিছু গোশত নিয়ে এসেছ?” আমরা তাঁর জন্য কিছু পাঠালাম এবং তিনি তা থেকে খেলেন।” (মুসলিম)

মুজাহিদীনদের বিভিন্ন প্রতিদান সমূহঃ

আল্লাহ (সুব:) বলেন, “ –  –  –  –  – এটা এজন্য আল্লাহ তা’য়ালার পথে তারা যে তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধায় কষ্ট পাবে, এমন কোনো স্থানে তারা যাবে, যেখানে যাওয়ায় কাফেরদের তাদের ওপর ক্রোধ আসবে এবং শত্রুদের কাছ থেকেও তারা কিছু লাভ করবে, এর প্রতিটি কাজের বদলে তাদের জন্য নেক আমল লেখা হবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা নেক লোকদের কাজের প্রতিফল বিনষ্ট করেন না। তারা আল্লাহর পথে যা খরচ করে কম হোক কিংবা বেশী এবং যদি তারা আল্লাহর উদ্দেশ্য কোন প্রান্তর অতিক্রম করে চলে, তাও তাদের জন্য লিপিবদ্ধ হবে, যাতে করে তারা যা কিছু করে এসেছে, আল্লাহ তা’য়ালা তার চাইতে উত্তম পুরস্কার তাদের দিতে পারেন।” (সূরা তওবা ১২০ – ১২১)

  1. আবু বকর বিন আবি মুসা বর্ণনা করেন, “আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতের দরজা তরবারির নীচে অবস্থিত।” একটি গরীব লোক অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো এবং বলল, “হে আবু মুসা তুমি কি তা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে শ্রবণ করেছ?” আব্বা সম্ভবত বললেন, হ্যাঁ। লোকটি তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে গেল এবং তাদেরকে বলল, “আমি তোমাদের আমার সালাম দিচ্ছি। অতঃপর সে তলওয়ারের খাপ ভেঙে ফেলল এবং শত্রুদের দিকে রওয়ানা হল এবং তাদেরকে তার তরবারি দিয়ে আঘাত করতে লাগল যতক্ষণ না সে মৃত্যু বরণ করল।” (মুসলিম)

ইবনে দাক্বিক আল-ইদ বলেনঃ জান্নাত তরবারির ছায়ার তলে একথা অর্থ হল মুজাহিদদের তরবারির মাধ্যমে জান্নাত আসবে এবং তরবারির ব্যবহার জান্নাতে প্রবেশ এবং এর দরজা খোলার জন্য আবশ্যক।

  1. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে কেউই আল্লাহর কারণে যুদ্ধ করে তার জন্য জান্নাত কবুল হতে ততটুকু সময়ই প্রয়োজন যতটুকু প্রয়োজন একটি উটের দুধ দোয়াতে।” (আহমেদ, আবু – দাউদ, আত্ – তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, ইবনে হিব্বান)
  2. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “পরীক্ষা এবং যন্ত্রণা তাদের পথে রয়েছে। পরীক্ষা যেন একটুকরো আঁধার রাত। তাদের মাঝে সবচেয়ে নিরাপদ সেই ব্যক্তি যে গিরি উপত্যকা বা পাহাড় চূড়ায় বসবাস করে, এক পাল ভেড়া নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে, অথবা সেই ব্যক্তি যে তার ঘোড়া চরায় এবং তরবারির উপর জীবিকা নির্বাহ করে।” (আল-হাকিম)

[এটা নির্দেশ করে যে বিশাল দুর্দশার সময় একজন লোকের হয় সম্পূর্ণ পৃথকভাবে বেঁচে থাকা উচিত অথবা তার চেয়ে ভাল জীবন মুজাহিদ হিসেবে বেঁচে থাকা উচিত]

  1. সাবুরাহ বিন আল-ফাকাহ্ বর্ণনা করেন, “আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি, “শয়তান আদম সন্তানকে ইসলামের পথে বাঁধা দেয় এবং তাকে বলে, “তুমি কি মুসলিম হতে যাচ্ছ এবং তোমার ঐতিহ্য এবং তোমার পূর্বপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করছ?” কিন্তু আদম সন্তান তাকে অমান্য করে এবং মুসলিম হয় এবং ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়। অতঃপর শয়তান তার হিজরতের জন্য তার পথে বসে থাকে এবং তাকে বলে, “তুমি কি হিজরত করবে এবং তোমার ভিটা মাটি পিছনে ত্যাগ করে আসবে?” সে তাকে অমান্য করে হিজরত করবে। অতঃপর শয়তান তার জন্য তার জিহাদের পথে বসে থাকে এবং তাকে বলে, “তুমি কি যুদ্ধ করতে যাচ্ছ তোমার এবং তোমার সম্পদের শোচনীয় অবস্থা? তুমি হত্যা করতে যাবে এবং নিহত হবে এবং তখন তোমার স্ত্রীকে নেয়া হবে এবং তোমার সম্পদ ভাগ করা হবে।” আদম সন্তান তাকে অমান্য করল এবং জিহাদে চলে গেল।”

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতঃপর বলেন, “যে ব্যক্তি অনুরূপ করে এটা আল্লাহর জন্য আবশ্যক হয়ে যায় যে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা যদি তিনি তার পশু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন তিনি জান্নাতে যাবেন।”[আহমাদ]

  1. খালিদ বিন আল-ওয়ালিদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, “যদি আমি একটি সুন্দর মহিলাকে বিবাহ করি যাকে আমি ভালবাসি অথবা আমাকে একটি নবজাতক পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় এটা আমার জন্য কম প্রিয় হবে সেই অবস্থা র চেয়ে, যখন আমি এক বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা রাত্রিতে একদল যোদ্ধার সাথে অবস্থান করছি পরবর্তী সকালে শত্রুর মোকাবেলা করতে আমি তোমাদের জিহাদে যেতে উপদেশ দেই।” (ইবনে আল-মুবারক) এটা খালিদের মৃত্যুর আগের উক্তি।
  2. তিনি আরও বলেন, “আমার জিহাদে ব্যস্ত থাকা আমাকে প্রচুর কুরআন তিলাওয়াত হতে বিরত রেখেছে।” (ইবনে আসাকির আবু ইয়া’ লা)

জিহাদের অবস্থান হজ্জের উপর’ – এর প্রমাণঃ

  1. ইবনে উমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, “একটি জিহাদের অভিযান ৫০টি হজ্জ হতে শ্রেয়।”(ইবনে উমরের এই বিবরণ সহীহ) (ইবনে আর মুবারাক ইবনে আবি শায়বাহ)
  2. যিরার বিন আমর বলেন, “আমি একটি লম্বা সময় জিহাদে অতিবাহিত করেছি এবং আমার হৃদয় হজ্জের জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষী ছিল। আমি তথায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করলাম এবং অতঃপর আমার ভাইদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে গেলাম। আমি ইশাক্ব বিন আবু ফারওয়াহ এর কাছে তাকে বিদায় জানাতে গেলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কোথায় যাচ্ছ?” আমি উত্তর দিলাম “আমি হজ্জে যাচ্ছি।” তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “তোমার কি জিহাদের ব্যাপারে মতামত বদলেছে, না অন্য কিছু?” আমি বললাম, “না এটা এজন্য যে, আমি এখানে জিহাদে দীর্ঘ সময় ধরে ছিলাম এবং আমার হজ্জের জন্য এবং আল্লাহ ঘরে যাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা ছিল।” তিনি আমাকে বললেন, “জিরার! তোমার তা করা উচিত না যা তুমি ভালবাস বরং তাই করা উচিত যা আল্লাহ ভালবাসেন। হে জিরার! তুমি কি জান না যে আল্লাহর রাসূল কেবলমাত্র একবার হাজ্জ করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার জীবন জিহাদে যুদ্ধরত অবস্থায় ব্যয় করেছেন যতক্ষণ না তিনি আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করেছেন। হে জিরার তুমি যদি হজ্জ বা উমরা কর তুমি শুধু হজ্জ বা উমরার জন্য প্রতিদান পাবে। কিন্তু তুমি যদি জিহাদে বা যুদ্ধে আত্ম নিয়োগ কর, মুসলিমদের মেরুদণ্ড রক্ষা করার জন্য তবে সেই গৃহে ১, ০০, ০০০ হাজী যদি আসে তুমি তাদের প্রত্যেকের হজ্জের প্রতিদান এবং প্রত্যেক বিশ্বাসী নারী ও পুরুষের হজ্জের প্রতিদান পেতে থাকবে যতক্ষণ না শেষবিচারের দিন উপস্থিত হয়। যেহেতু যেই বিশ্বাসীদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসে সে যেন তার মত যে তাদের রক্ষা করে আদম (আঃ) এর সময় থেকে শুরু করে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত আর তুমিও অবিশ্বাসীদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রতিদান পেতে থাকবে আদম (আঃ) এর সৃষ্টির সময় থেকে শুরু করে শেষবিচারের দিন পর্যন্ত, যেহেতু আজ যারা তাদের (অবিশ্বাস) সাথে যুদ্ধ করে এরা তাদের অনুরূপ যাঁরা তাদের সাথে যুদ্ধ করে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত। তুমি তাওরাত, ইনজিল, কুরআনে প্রেরিত প্রতিটি ওহীর জন্যও পুর®কৃত হবে, যেহেতু তুমি আল্লাহর আলোকে নির্বাপিত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করছ।

হে জিরার বিন আমর! তুমি কি জান না যে আলেমগণ ও মুজাহিদীনরা ব্যতীত আর কেউই মর্যাদায় রাসূলের নিকটবর্তী না? আমি বললাম, “তা কেমন করে?” তিনি বলেন, “যেহেতু আলেমগণ রাসূলের দায়িত্বকে পূর্ণ করেন অন্যদের সত্য পথের নির্দেশনা দিয়ে এবং তাদেরকে তা শিক্ষা দিয়ে আর মুজাহিদীনরা রাসূলগণ যা নিয়ে এসেছেন তার জন্য যুদ্ধ করেন এবং আল্লাহর বাণী সর্বোচ্চ তুরে ধরতে এবং অবিশ্বাসী বক্তব্যকে সর্বনিম্নে নামিয়ে আনতে তারা চেষ্টা সাধনা করেন।

ধিরার (জিরার) বলেন, “আমি হজ্জ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং আরও সিদ্ধান্ত নিলাম জিহাদের মধ্যে থাকতে যতক্ষণ না আমি মৃত্যু বরণ করি এবং আল্লাহর সাথে মিলিত হই।”

জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণের মর্যাদাঃ

আল্লাহ বলেন, “অতএব আল্লাহর পথে যুদ্ধ করুন (হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে শুধু আপনার নিজের কাজের জন্য দায়ী করা হবে। আর আপনি মু’ মিনদের উৎসাহিত করুন। অচিরেই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি খর্ব করে দিবেন। আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবলতর এবং কঠোর শাস্তিদাতা।” (সূরা আন নিসা ৪:৮৪)

আল্লাহ্ বলেন, “হে নবী! আপনি মুমিনদের যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করুন। যদি তোমাদের মধ্যে ২০জন দৃঢ়পদ লোক থাকে তবে তার ২০০উপর জয়লাভ করবে আর যদি তোমাদের মধ্যে ১০০জন থাকে তবে তারা ১০০০ কাফেরের উপর জয় লাভ করবে। কেননা তারা এমন লোক যারা বোঝে না।” (সূরা আনফাল – ৬৫)

  1. আমরা উম্ম ইবরাহীমের বিখ্যাত কাহিনী দিয়ে এ অধ্যায় শেষ করব। এই কাহিনী আবু জাফর আল-লুবান এর মত আলেমগণ উল্লেখ করেছেন। তিনি বর্ণনা করেনঃ এ কথা বর্ণিত আছে যে, বসরায় একজন সৎকর্ম পরায়ণ ব্যক্তি থাকতেন যিনি ছিলেন উম্ম ইব্রাহীম আল-হাসিমিয়াহ। শত্রুদল একটি মুসলিম শহরে আক্রমণ করল এবং মানুষ জিহাদে যোগদানে উৎসাহিত হল। আব্দুল ওয়াহিদ বিন যায়িদ আল-বাসরি জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে একটি ভাষণ দিলেন এবং শ্রোতাদের মধ্যে ছিলেন উম্ম ইব্রাহীম; আব্দুল ওয়াহিদ যা বলছিলেন তার মধ্যে ছিল আল-হুর (জান্নাতের রমণী)। উম্ম ইব্রাহীম দাঁড়িয়ে পড়লেন এবং আব্দুল ওয়াহিদকে বললেন, “আপনি আমার পুত্র ইব্রাহীমকে জানেন এবং আপনি জানেন বসরার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তাদের একটি কন্যার সাথে তাকে বিবাহ দিতে আশা করে এবং আমি এখনও তাদের ব্যাপারেও একমত হইনি। কিন্তু আমি তোমার বর্ণিত মেয়েটিকে পছন্দ করেছি এবং আমি তার সাথে আমার পুত্রের বিবাহ দিতে পারলে সুখী হব। তুমি কি দয়া করে আরেকবার তার বর্ণনা দিবে?”

আব্দুল ওয়াহিদ তখন একটি কবিতা আবৃতি করে হুরের বর্ণনা দিলেন। উম্মু ইব্রাহীম বলেন, “আমি আমার ছেলেকে এই মেয়ের সাথে বিবাহ দিতে চাই এবং আমি তার পণ বাবদ তোমাকে ১০, ০০০ দিরহাম দিচ্ছি এবং তুমি তাকে (ছেলেকে) তোমার সাথে এই ফৌজে নিয়ে যাও যাতে সে একজন শহীদ হিসেবে নিহত হতে পারে এবং আমার জন্য শেষ বিচারের দিন সুপারিশ করতে পারে। আব্দুল ওয়াহিদ বললেন, “তুমি যদি তা কর তবে তোমার ও তোমার পত্রের জন্য রয়েছে মহা পুরষ্কার। সে তখন তার পুত্রকে শ্রোতাদের মধ্য থেকে ডাকল এবং সে (পুত্র) উঠে দাঁড়ালো এবং বলল, “জ্বী আমার মা”। তিনি বললেন, “তুমি কি এই মেয়েকে বিবাহ করে সুখী হবে এই শর্তে যে তোমার আত্মা আল্লাহকে দিয়ে দিবে।” সে বলল, “জ্বী আমি খুবই সন্তুষ্ট।” তিনি বললেন, “হে আল্লাহ তুমি আমার সাক্ষী থাক আমি আমার পুত্রকে জান্নাতের এই মেয়ের সাথে বিবাহ দিলাম এই শর্তে যে সে তার আত্মা তোমার জন্য ব্যয় করবে। সে প্রস্থান করল এবং ১০, ০০০ দিনার নিয়ে ফিরে আসল এবং তা আব্দুল ওয়াহিদকে দিল এবং বলল, “এটা তার (মেয়ের) পণ। এটা গ্রহণ কর এবং মুজাহিদীনদের প্রয়োজনে ব্যয় কর। তিনি তখন তাঁর ছেলের জন্য একটি ভাল ঘোড়া জোগাড় করলেন এবং তাকে (ছেলেকে) সশস্ত্র করলেন। যখন ফৌজ যাত্রা শুরু করল তখন ইব্রাহীম কুরআন তিলাওয়াতকারীদের সাথে বেরিয়ে আসল এবং তিলাওয়াত করল –

“নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসীদের থেকে তাদের জীবন এবং সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন।”

যখন উম্মু ইব্রাহীম তাঁর পুত্রকে অভিবাদন করছিলেন তখন তিনি বললেন, “সাবধান থাক এবং তোমার থেকে আল্লাহর দৃষ্টিতে কোন কমতি অনুমোদন কর না। তিনি তখন তাকে আলিঙ্গন করলেন এবং চুমু খেলেন এবং বললেন, “আল্লাহ যেন শেষ বিচারের দিন ছাড়া আমাদের কখনও এক না করেন।”

আব্দুল ওয়াহিদ বললেন, “যখন আমরা শত্রুর শিবিরে পৌঁছলাম এবং জনগণকে যুদ্ধের জন্য ডাকা হল, ইব্রাহীম সবার সামনে ছিল এবং সে অনেক শত্রু নিধন করল, কিন্তু তারা তার উপর চড়াও হল এবং তাকে হত্যা করল। আমাদের ফিরতি পথে আমি আমার সৈন্যদের বললাম তারা যেন উম্মু ইবরাহীমকে না বলে যে তার পুত্র নিহত হয়েছে যতক্ষণ না আমি তাকে বলি। যখন আমরা বসরায় প্রবেশ করলাম তিনি(উম্মু ইব্রাহিম) জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ কি তার উপহার গ্রহণ করেছে যাতে আমি আনন্দিত হতে পারি অথবা তিনি কি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন যাতে আমাকে কাঁদতে হয়?” আমি বললাম, “ আল্লাহ তোমার উপহার কবুল করেছেন এবং তোমার ছেলে শহীদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন।” তিনি তখন আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহ আমার উপহার নেয়ার জন্য শুকরিয়া।” পরদিন তিনি মসজিদে এলেন এবং আমাকে বললেন, “আনন্দ কর” আমি আমার ছেলে ইব্রাহীমকে গত রাতের স্বপ্নে দেখেছি। সে একটি খুব সুন্দর বাগানে সবুজ কাপড় পরিহিত অবস্থায় একটি মুক্তা খচিত আসনে বসা ছিল এবং তার মাথায় ছিল একটি মুকুট। সে আমাকে বলল, “মা আনন্দ কর! আমি আমার বধূকে বিবাহ করেছি।”

আল্লাহ বলেন, “আর যাহারা অগ্রবর্তী তাহারা অগ্রবর্তীই হবে। এরাই বিশেষ নৈকট্যর অধিকারী।” (ওয়াকিয়াঃ ১০ – ১১)

উসমান বিন আবি সাওদাহ বলেছেন, “আমাদের বলা হয়েছে এ আয়াতে অগ্রবর্তী বলতে যারা প্রথমে জিহাদে যেতে বের হয় তাদেরকে বুঝিয়েছে এবং তাদেরকে বুঝিয়েছে যারা প্রথমে সালাতের জন্য যায়।” (ইবনে আবি শায়বাহ্, সহীহ)

  1. উসমান তাবেঈনদের ইমামদের একজন এবং তাদের যোদ্ধাদের একজন। তাকে প্রশ্ন করা হল, “তুমি কি এ বছর যুদ্ধ করতে যাচ্ছ?” তিনি বললেন, “আমি যুদ্ধ করার সুযোগ হারাতে চাইনি এমনকি যদি আমাকে ১, ০০, ০০০ দিনারও দেয়া হয়।”
  2. আল-হাসান বিন আবি আল-হাসান বলেন যে, আল্লাহর রাসূল একটি ফৌজ পাঠালেন এবং তাদের মধ্যে মুয়াজ বিন জাবাল ছিলেন। তিনি ফৌজের সাথে যেতে দেরি করলেন এবং তাই রাসূলুল্লাহ্ তাকে দেখলেন এবং বললেন, “আমি তোমার সাথীদের তোমার থেকে জান্নাতে ১ মাস অগ্রবর্তী হিসেবে দেখতে পাচ্ছি।” মুয়াজ রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি পিছিয়ে ছিলাম শুধু এ কারণে যাতে আমি আপনার সাথে সালাত পড়তে পারি এবং যাতে আপনি আমার জন্য দোয়া করেন যাতে আমি আমার সাথীদের থেকে প্রতিদানের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকি”, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “না। তারা তোমার অগ্রবর্তী, যাও এবং তাদের ধর।” অতঃপর তিনি বললেন, “আল্লাহর জন্য সকালে একটি ভ্রমণ, এই দুনিয়া এবং এর উপর যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম এবং দিনের শেষে একটি ভ্রমণ আল্লাহর জন্য এই দুনিয়া এবং এর উপর যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম।” (আল-সুনান)
  3. আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ভোর সকালে আল্লাহর জন্য একটি ভ্রমণ এই পৃথিবী এবং এর উপর যা কিছু আছে তা হতে উত্তম এবং দিনে শেষে আল্লাহর পথে ভ্রমণ এই পৃথিবীতে এবং এর উপর যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম।” (বুখারী)

আল-নববী (রহঃ) এই হাদিসটি দিয়ে শুধু দিনের প্রথম ও শেষ ভাগকে আলোকপাত করা হয়েছে যে আল্লাহর পথে একটি ক্ষুদ্র সময় অনেক বড় প্রতিদান বহন করে।

(বিঃদ্রঃ “আল্লাহর জন্য”, “আল্লাহ্ পথে”, “আল্লাহর উদ্দেশ্য”, ফি সাবিলিল্লাহ্ আরবি শব্দের অনুবাদ যা বইয়ের প্রথমে উল্লেখিত হয়েছে।)

  1. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে কেউ অন্য কোন উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে তাঁর কারণে তাঁর অন্য যুদ্ধ করে এবং তাঁকে ও তার রাসূলকে বিশ্বাস করে বাইরে বের হয়, আল্লাহ তাকে ওয়াদা করেন যে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা গণীমতসহ ঘরে ফিরিয়ে আনবেন। তাঁর নামের শপথ যার হাতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রাণ, যে কেউই আল্লাহর পথে আহত হয়, শেষ বিচারের দিনে সে সেই আঘাত নিয়ে আসবে যেমনটি এই পৃথিবীতে ছিল; রং সেই রক্তের রঙের মতো এবং একই রকম গন্ধ থাকবে।তাঁর নামের শপথ যার হাতে মোহাম্মদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাণ যদি এটা মুসলিমদের জন্য কঠোর না হতো তাহলে আমি কোন ফৌজকে আল্লাহর পথে পাঠিয়ে পিছনে থেকে যেতাম না।তাঁর নামের শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রাণ, আমি আশা করি আমি আল্লাহর কারণে যুদ্ধ করি এবং অতঃপর নিহত হই এবং আবার নিহত হই এবং অতঃপর যুদ্ধ করি এবং আবার নিহত হই।” (মুসলিম)
  2. আব্দুল্লাহ্ বিন মুহাইরিয বর্ণনা করেন যে তার বাবাকে গ্রীষ্মের ফৌজে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি বলেন, “হে আমার পুত্র আমাকে রোমান ভূমিতে নিয়ে যাও। সুতরাং আমি তাকে বহন করে নিয়ে গেলাম এবং তখনও তাকে নিয়ে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন তিনি বলেন, “হে আমার পুত্র, দ্রুত যাও”, আমি বললাম, “কিন্তু বাবা তুমি তো অসুস্থ।” তিনি বলেন, “আমার পুত্র, আমি রোমান ভূমিতে আমার মৃত্যুর সাক্ষ্য চাই। আমি তাকে বহন করলাম যতক্ষণ না সে মৃত্যুবরণ করেন।” পুত্র বলল, “আমি চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম কিভাবে আমি তার জানাজার জন্য এই শত্রুভূমিতে খুঁজে পাব। আমি তখন একদল লোকের সারি দেখলাম যাদের আগে কখনও দেখিনি যারা আমার বাবার জন্য প্রার্থনা করছিল।” (ইবন আসাকির) (ওসব লোক নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রেরিত ফেরেশতা ছিল যারা এই সংকট পরায়ণ ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করে। )
  3. সাদ বিন আব্দুল আযীয বলেন আবু মুসলিম আল-খাতলানী রোমান যুদ্ধের সময় মৃত্যু বরণ করেছিলেন মুয়াবিয়াহ রাদিআল্লাহু আনহু এর শাসনামলে। বিসর বিন আরতাহ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, (একজন সাহাবী যে তাদের ফৌজের নেতা ছিলেন) “ আমাকে মৃতদের উপর নেতা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হোক এবং যুদ্ধের পতাকা আমাকে দাও। এবং আমার জন্য যুদ্ধে নিহত সব যোদ্ধাদের সবচেয়ে নিকটে কবর তৈরি কর। আমি পুনরুত্থান দিবসে শহীদদের নেতা হিসেবে পতাকা বহন করে উঠতে চাই।” (ইবনে আসাকির)

আল্লাহর পথে ধূলিকণার গুরুত্বঃ

  1. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে স্বীয় পা সমূহ ধূলিপূর্ণ করে, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন।”(বুখারী)
  2. আবু দারদা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ তাঁর পথের ধূলিকণাপূর্ণ দাসদের ফুসফুসকে জাহান্নামের অগ্নি দ্বারা সংযুক্ত করবেনা এবং যে আল্লাহর পথে স্বীয় পা সমূহ ধূলি পূর্ণ করে, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে এত দূরে রাখবেন যার দূরত্ব হবে একটি দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে ১০০০ বৎসর ভ্রমণ করার পথ, এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে আহত হয়, সে শহীদের সীল গ্রহণ করবে বিচার দিবসে, সেই ক্ষতস্থান জাফরান রং ধারণ করবে এবং সেখান থেকে সুগন্ধ ছড়াবে, এটা এমন প্রতীক হবে যা শুরু এবং শেষের সকল সৃষ্টি তা সনাক্ত করতে পারবে। তারা বলবে, “তারা শহীদের ছাপ রয়েছে।” এবং যে ব্যক্তি একটি উটকে দুধ পান করানোর সমান সময়ের জন্যও আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, জান্নাত তার জন্য অবধারিত।” (আহমাদ)

জিহাদের নিমিত্তে সমুদ্রপথ যাত্রার গুরুত্বঃ

  1. আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্ম হারাম বিনতে মালহান – কে দেখতে যেতেন এবং তিনি তাঁকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানাহার করাতেন। উম্ম হারাম ছিলেন উবাদাহ্ বিন আল-সামিত – এর স্ত্রী। একদা যখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন, তিনি তাঁকে পানাহার করানোর পর তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুল আছড়াতে বসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর তিনি হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন। তিনি (উম্ম হারাম) প্রশ্ন করলেন, “কী আপনাকে হাসালো?” তিনি বললেন, “আমাকে আমার এমন কিছু সংখ্যক জাতির সামনে উপস্থিত করা হয়েছিল যারা আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করতে বের হচ্ছিল, সমুদ্রপথে, সিংহাসনে আরোহণ করা রাজার ন্যায়।” আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন যেন আমি তাদের একজন হতে পারি।” তিনি তার জন্য প্রার্থনা করলেন এবং অতঃপর পুনরায় ঘুমাতে গেলেন। তিনি আবারও হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন, তিনি বললেন – “কী আপনাকে হাসালো?” তিনি বললেন যে তিনি অপর এক দলকে দেখেছেন এবং পূর্বেকার মত এবারও তা ব্যাখ্যা করলেন। তিনি তাঁকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের মধ্যে একজন হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত।” কয়েক বৎসর পর, উম্ম হারাম একদল বাহিনীতে অংশগ্রহণ করেন যারা সমুদ্রে পথে যাত্রা করে। যখন তারা উপকুলে পৌঁছল তখন মৃত্যু হল।”(বুখারী)
  2. উম্ম হারাম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – কে বলতে শুনেছেন, “আমার উম্মাহর প্রথম যারা আল্লাহর জন্য সমগ্র পাড়ি দিবে, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত।” উম্ম হারাম বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আমি কি তাদের অন্তর্ভুক্ত?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর তিনি বললেন, “আমার উম্মাহর প্রথম সৈন্যদল যারা রোমের শহর আক্রমণ করেছিল, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত।” তিনি (উম্ম হারাম) বলেন, “আমি কি তাদের মধ্যে একজন?” তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “না”। (বুখারী)

(হাদিসটি নৌবাহিনী এবং রোম আক্রমণের সম্মানের বিষয় নির্দেশক)

  1. কাব আল-আহ্বার বলেন, যখন একজন ব্যক্তি জাহাজে তার প্রথম পদার্পণ করে তখন যে তার পাপ পেছনে ফেলে আসে এবং সে সেইরূপভাবেই পবিত্র হয়ে যায় যেরূপ পবিত্র সে ছিল যখন সে জন্মগ্রহণ করেছিল। এবং যে ব্যক্তি সমুদ্রে যাত্রাকালে রোগাক্রান্ত হয়, সে যেন এমন রাজার ন্যায় যার মাথায় মুকুট রয়েছে। (সাঈ বিন মানসুর তার সুনানে, কাবের সম্মত ধারায়।)
  2. হায় আল-মা’ ফিরি বলেন, একদা তারা আব্দুল্লাহ্ বিন উম্ম আমর এর সাথে আলেজান্দ্রিয়ার লাইটহাউজের নীচে বসে ছিল যখন জিহাদের একটি জাহাজ যাত্রার জন্য রওনা হয়। আব্দুল্লাহ্ বলেন, “হে মাসলামাহ্ আমাকে বল যে ঐ সকল মানুষের পাপসমূহ কোথায়?” তিনি বললেন, “সেগুলো তাদের গলায় ঝুলছে।” আব্দুল্লাহ্ বললেন, “না, সেখানে নয়। সেই আল্লাহর শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তারা তাদের সমুদয় পাপ এই উপকুলে রেখে গেছে, তাদের ঋণ ব্যতীত।”
  1. আব্দুল্লাহ্ বিন আমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, “আল্লাহ্ সমুদ্রপথের মুজাহিদীনদের প্রতি অনেকবার হাসেন। তিনি হাসেন যখন প্রথম তারা তাদের পরিবার এবং সম্পদ পেছনে ফেলে জাহাজে আরোহণ করে। তিনি হাসেন তাদের প্রতি যখন জাহাজটি সমুদ্রে আন্দোলিত হয়। এবং তিনি তাদের প্রতি হাসেন যখন তারা প্রথম উপকুল দেখতে পায়।” (ইবনে আবি শায়বাহ [মাওকুফ])

(হাদিসে এটি উল্লেখিত যে, আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি হাসবেন, সে কখনই জাহান্নামের আগুনে শাস্তি প্রাপ্ত হবে না।)

আল-মুগনী-র লেখক এবং ইমাম আহমাদের মতানুসারী অন্যরা বলেন যে সমুদ্র পথের অভিযানের পুরষ্কার ভূ-পথের (মাটির) অভিযানের পুরষ্কার অপেক্ষা বৃহৎ কারণ এটা অধিক কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

আমার মতে উপরি উল্লিখিত সমুদ্র পথের জিহাদের বৃহৎ মর্যাদা প্রাসঙ্গিক হাদিস সম্পর্কে কোন দ্বিমত থাকা উচিৎ নয়। কিন্তু এটাও বলা উচিৎ যে, একজন ব্যক্তি সমুদ্রে যাত্রা করবেনা যখন তা এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, জীবনের (বাঁচার) সম্ভাবনা অপ্রতুল।

ঘোড়া এবং তা জিহাদের জন্য সংরক্ষণ করার গুরুত্বঃ

আল্লাহ (সুবঃ) বলেনঃ

“আর এই কাফেরদের (সাথে মোকাবিলার) জন্য তোমাদের সাধ্যানুযায়ী অস্ত্রাদী দ্বারা এবং প্রতিপালিত অশ্বাদি দ্বারা সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখ, যার দ্বারা তোমরা প্রভাব বিস্তার করে রাখতে পার, সেই সকল লোকদের উপর যারা আল্লাহ তা’ আলার শত্রু এবং তোমাদেরও শত্রু এবং এদের ছাড়া অন্যান্য লোকদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না, তাদেরকে আল্লাহই জানেন; আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যা কিছুই ব্যয় করবে, তার (সওয়াব) তোমাদেরকে পুরোপুরি দেওয়া হবে এবং তোমাদের জন্য একটুও কম করা হবেনা।” [সূরা আনফাল ৮:৬০]

  1. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য, তাঁকে এবং তাঁর প্রতিশ্রুতির উপর বিশ্বাস রেখে ঘোড়া প্রতিপালন করবে, তবে সেই ঘোড়ার খাবার, পানীয় এবং মলমূত্র – সেই ব্যক্তির ভাল কাজ হিসেবে বিচার দিবসে গণ্য করা হবে।” (বুখারী)

আল্লাহর পথে ভীতির গুরুত্বঃ

  1. সালমান রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, “যদি কোন বিশ্বাসীর হৃদয় আল্লাহর পথে প্রকম্পিত হয়, তবে তা তার পাপ সমূহ এমনভাবে ঝেড়ে ফেলে (আন্দোলিত করে) যেভাবে খেজুরের গুচ্ছ (স্তবক) আন্দোলিত হয়।”(ইবন আল-মুবারাক – ইবন আবু শায়বাহ্ – তাবারানী [মাওকুফ])
  2. আব্দুল্লাহ্ বিন আমর বিন আল-আস রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোন অভিযান যা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং বিজয়ী হয় অথবা নিরাপদে ফিরে আসে, তা পুরস্কারের দুই তৃতীয়াংশ প্রাপ্ত হয়। যেখানে এমন সৈন্যদল যারা পরাজিত হয়, ভীত হয় এবং কষ্ট পায়, তারা পূর্ণ পুরস্কার প্রাপ্ত হয় যা তাদের জন্য সংরক্ষিত।” (মুসলিম)

যুদ্ধের মাঠে সৈন্য সারিতে দাঁড়ানোর গুরুত্বঃ

আল্লাহ তা’ আলা বলেন,

“আল্লাহ তো ঐ সমস্ত লোকদের ভালবাসেন, যারা তার রাস্তায় এমনভাবে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করে, যেন তারা একটি শক্ত কাঠামো, (যাতে সীসা ঢেলে দেওয়া হয়েছে)।” [সূরা সাফ ৬১:৪]

  1. সাহল বিন সাদ আল-সাঈদী রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “দু’ টি সময়ে আল্লাহ্ জান্নাতের দরজা খুলে দেন এবং যখন এটি ঘটে তখন কোন (প্রায়) প্রার্থনাই অগ্রাহ্য করা হয়না; সালাতে ডাকার সময় এবং যখন সৈন্যদল তাদের সৈন্যসারিতে দাঁড়ায়।”(আবু দাউদ)
  2. ইবন উমার রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, “আমার নিকট এমনকি তলোয়ার চালনা, বর্শা নিক্ষেপ, তীর নিক্ষেপ ইত্যাদি ছাড়াও কেবল শত্রুদের সামনে দাঁড়ানোটাই ৬০ বছর ধরে কোন পাপ না করে আল্লাহর ইবাদত করা হতে উত্তম” (আল-খামি)
  3. ইমরান বিন হাসিন রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, “যুদ্ধের মাঠে সৈন্যদলে দাঁড়ানো আল্লাহর নিকট ষাট বছর ইবাদত করা অপেক্ষা উত্তম।” (আল-হাকিম আল-বুখারীতে পরিশুদ্ধ এবং সাহাবী কর্তৃক সম্মত)
  4. ইয়াযিদ বিন শাযারাহ্ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, “আমাকে বলা হয়েছে যে, তলোয়ার হল জান্নাতের চাবি।” (আব্দুল রাযাক, বিশুদ্ধ ধারায় – ইয়াযিদ)
  5. আব্দুল্লাহ্ বিন আমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, “আমি কি তোমাদেরকে বিচার দিবসের শ্রেষ্ঠ শহীদের কথা বলব? সে ঐ ব্যক্তি যে যুদ্ধের মাঠে সৈন্যদলে দাঁড়ায় এবং যখন সে শত্রুর মুখোমুখি হয় তখন ডানে বা বামে তাকায় না। বরং সে তার তলোয়ার বহন করে এবং বলে, “হে আল্লাহ! আজ আমি আপনাকে আমার আত্মা সোপর্দ করছি, আমার বিগত দিনগুলোর মীমাংসার জন্য।” এবং অতঃপর সে নিহত হয়। সে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তি শহীদদের অন্তর্ভুক্ত যে এখন জান্নাতের উচ্চ ঘরে যেখানে তার ইচ্ছা হয় বিশ্রাম নেয়।” (ইবন আল-মুবারাক)
  6. আবু বকর আল-সিদ্দীক রাদিআল্লাহু আনহু একদা এক সৈন্যদলের রক্ষী হন এবং তাদের সাথে হাঁটতে থাকেন এবং অতঃপর বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যে আমরা আমাদের পাগুলো তাঁর কারণে ধূলিপূর্ণ করছি।” একজন ব্যক্তি বললেনঃ “কিন্তু আমরা তো শুধু তাদের রক্ষী হয়েছি এবং তাদেরকে বিদায় জানিয়েছি?” আবু বকর বললেন, “আমরা তাদেরকে প্রস্তুত করেছি, তাদের বিদায় জানিয়েছি এবং তাদের জন্য দু’ আ করেছি।” (আল-ইবন আবি শায়বাহ্ কর্তৃক আর মুসনাফ – আল-সুনান আল-কুবরা – আল-বায়হাকী কর্তৃক)।

[ নিম্নের অধ্যায়টি শায়খ আনওয়ার আল-আওলাকীর লেকচার সিরিজ থেকে নেওয়া হয়েছে যেখানে তিনি, প্রখ্যাত আলিম – আবি যাকারিয়া আল-দীমাশকী আল-দূমইয়াতী “ইবন নুহাস” এর “মাশারী আল-আশওয়াক ইলা মাশারী আল-উশাক ওয়া মুদীর আর ঘায়াম ইলা দার আসসালাম” বইটি আলোচনা করেছেন। ৮৪১ হিজরিতে, ইবন নুহাস (আল্লাহ্‌ তাকে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করুন) মিশরের একটি গ্রামে, আল্লাহর শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করার সময় মৃত্যু বরণ করেন।]

৩য় অধ্যায়: আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়ের উৎকর্ষসমূহ

আল্লাহ্‌ বলেন, “এমন কে আছে যে আল্লাহকে কর্জ দেবে উত্তম কর্জ; অতঃপর আল্লাহ্‌ তাকে দ্বিগুণ – বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তারই নিকট তোমরা সবাই ফিরে যাবে।” [আল-বাকারাহঃ ২৪৫]

আল্লাহ্‌ বলেন, “যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন – সম্পদ ব্যয় করে, উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। এবং এই বৃদ্ধি আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন। এবং আল্লাহ্‌ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। [বাকারাহ : ২৬১]

হাসানা (ভাল কাজ) কতগুণ বৃদ্ধি পায়? আল্লাহ্‌ কোরআনে বলেছেন, “যে একটি ভাল কাজ ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়।

“যে একটি সৎকর্ম করবে। সে তার দশগুণ পাবে এবং যে একটি মন্দ কাজ করবে। সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।” [সুরা আল-আনআম: ১৬০]

কিভাবে সম্ভব যে সুরা বাকারাহ্‌ ২৬১ নং আয়াতে ৭০০ বার বলা হয়েছে? কিভাবে সম্ভব যে কুরআনে একটি আয়াতে একটি ভাল কাজকে দশ গুন করার কথা বলা হয়েছে এবং অপর আয়াতে বলা হয়েছে ৭০০ গুণ? উত্তরটি হল, সাধারণত, ভাল কাজকে ১০ গুণ করা হয় কিন্তু সেটা হয় আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় (জিহাদ), তখন তা ৭০০ দ্বারা গুণ করা হয়। সুবহানাল্লাহ! এবং সাহাবাদের বোধ ছিল যে, যখনই কুরআনে “ফী সাবিলিল্লাহ্‌’ উল্লেখিত হত। তখনই এর অর্থ হত জিহাদের পথে।

এই আয়াতে জিহাদের ব্যয়ের অর্থ হল, যেমনঃ ঘোড়া, অস্ত্র ইত্যাদির জন্য ব্যয় করা।

আল-কুরতুবী তাঁর তাফসীরে বলেন, “একটি হাসানা ১০ গণ ভাল কাজ বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু এই আয়াত (২:২৬১) আমাদেরকে দেখায় যে জিহাদের জন্য ব্যয় – এর ক্ষেত্রে একটি ভাল কাজ ৭০০ দ্বারা গুণ হয়ে থাকে।”

সাহাবাদের ইনফাক্ব (ব্যয়) – এর ব্যাপারে ইবন আসাকীর – এর একটি অনুচ্ছেদ আছে। রাসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলিমদের তাঁবুকে ব্যয় করার জন্য উৎসাহিত করলেন। ফলে, আবু বকর তার সমস্ত সম্পদ, ৪০০ দিরহাম নিয়ে উপস্থিত হলেন। সুতরাং, রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলল, “তুমি কি তোমার পরিবারের জন্য কিছু অবশিষ্ট রেখেছ?” তিনি বলেন, “আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।”অপর একটি বর্ণনায়, তিনি বলেন, “যা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটাই উত্তম।” এবং অপর একটি বর্ণনায় তিনি বলেন, “আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি।” তিনি {আবু বকর(রাঃ)} সবকিছুই দিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর উমার(রাঃ) আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি তোমার পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছ? “তিনি বললেন, “আমি আমার সম্পদের অর্ধাংশ তাদের জন্য রেখে এসেছি।” অতঃপর উমার ইবন খাত্তাব জানতে পারলেন যে আবু বকর তার অগ্রবর্তী এবং তিনি বললেন, “আমি কখনই আবু বকরের সাথে কোন ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে পারিনি, তিনি সবসময় আমার অগ্রবর্তী হয়ে যান।” সুতরাং উমারের প্রচেষ্টা ছিল তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া (তার চেয়ে বেশী দান করা)। দেখুন আবু বকর(রাঃ) শুধু এই ভাল কাজগুলো করতেন এবং হয়তো অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করার কথা কখনও মনেও আনেন নি। কিন্তু আবু বকর(রাঃ) উত্তম হওয়ার কারণে, প্রত্যেকে তার সাথে প্রতিযোগিতা করতেন। অন্যরা আবু বকর(রাঃ) – এর সমতুল্য হওয়ার প্রচেষ্টা করত। আবু বকর (রাঃ) অন্যদের প্রতিযোগী হওয়ার চেষ্টা করেনি।

  1. আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর উম্মাহকে সমৃদ্ধ করার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেন। আল্লাহ্‌ অবতীর্ণ করেন,”কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম কর্জ প্রদান করবে, যেন তিনি তা বহু গুণে বৃদ্ধি করতে পারেন।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো চাইলেন। আল্লাহ্‌ অবতীর্ণ করলেন, “প্রকৃতপক্ষে, ধৈর্যশীলকে তাদের প্রতিদান কোন গণনা ছাড়াই প্রদান করা হবে (সীমা ছাড়া প্রদান করা হবে)” (আল-বায়হাকী)
  2. রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে। তা তাদের জন্য ৭০০ গুণ বৃদ্ধি পাবে।” [তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, আল-হাকীম, আহমাদ (সহীহ)]
  3. এক ব্যক্তি একটি উট নিয়ে আল্লাহর জন্য রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকট আসলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমাকে বিচার দিবসে ৭০০ টি উট প্রদান করা হবে।” [মুসলিম আল-হাকীম]

[সুতরাং, যখন তুমি জিহাদের জন্য এক টাকা ব্যয় কর, তোমাকে ৭০০ টাকা দেওয়া হবে ৷ যদি তুমি তোমার গাড়ি দান কর, বিচারের দিন ৭০০ টি নতুন গাড়ি দেয়া হবে। তুমি যাই ব্যয় কর না কেন, তা ৭০০ গুণ হবে।]

  1. আবু হুরায়রা হতে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে আল্লাহর জন্য এক জোড়া ব্যয় করে তাকে বিচার দিবসে জান্নাতে প্রবেশের জন্য ডাকা হবে। যারা সালাত পড়ত তাদের সালাতের দরজা দিয়ে ডাকা হবে, যারা জিহাদ করত তাদের জিহাদের দরজা দিয়ে ডাকা হবে। যারা সাদাকা দিত তাদে সাদাকার দরজা থেকে ডাকা হবে। এবং রোযা পালনকারী ব্যক্তিদের রাইয়ান নামের দরজা থেকে ডাকা হবে।” আবু বকর (রাঃ) বললেন, “সেখানে কি এমন কোন ব্যক্তি থাকবে যাকে সবগুলো দরজা থেকে ডাকা হবে?” রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “হ্যাঁ এবং তুমি তাদের মধ্যে একজন।” (আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)
  2. সাসাহ্‌ বিন মু’আওয়ীয়া বলেন, আমি আবু – যার – এর বাসায় গেলাম এবং তাকে পেলাম না। অতঃপর আমি তার সাথে সাক্ষাত লাভ করলাম, তিনি তার বাসার জন্য উটের পিঠে পানি নিয়ে ফিরছিলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, “আপনিই কি আবু যার?””, তিনি বললেন, “আমার পরিবার আমাকে এই নামেই ডাকে”, আমি বললাম, “আপনি কি আমার কাছে বর্ণনা করতে পারবেন যা আপনি আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে শুনেছেন, হয়ত আল্লাহ্‌ তা দ্বারা আমাকে উপকৃত করবেন”। তিনি বললেন, “রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য এক জোড়া ব্যয় করবে, সে ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য জান্নাতের রক্ষীরা তার দিকে ছুটে যাবে।” আমি বললাম, “কি সেই এক জোড়া?” তিনি বললেন, “এক জোড়া ঘোড়া অথবা একজোড়া উট।” (আল-হাকিম, আহমাদ নাসাঈ)
  3. সাওবান বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ব্যয় করা দিনার – এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হল যা তোমরা তোমাদের পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য ব্যয় কর, যা তোমরা আল্লাহর জন্য তোমাদের উন্নয়নে ব্যয় কর, এবং সে দিনার তোমরা আল্লাহর জন্য তোমাদের সঙ্গীদের উপর ব্যয় কর।”(মুসলিম)

[যেমন উসমান (রাঃ) উট, ঘোড়া এবং এমনকি ১০, ০০০ দিনার দান করেন (নিম্নে ৭.৮.৯ দ্রষ্টব্য)]

ব্যয়ের বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা:

যদিও একজন মুসলিম কণ্টকাকীর্ণ কষ্টের পথকে নিজের পথ হিসেবে গ্রহণ করে বা মেনে নেয়, কিন্তু যেহেতু তারা ঘটনাগুলো থেকে অনেক দূরে, তাই এটা একটা উপলব্ধি হয়েই থেকে যায়। যা হয়, তা হল – ভাইয়েরা জিহাদের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেই ক্ষান্ত হয়ে যায়। আর বড়জোড় তারা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। এটাই চলতে থাকে। সুতরাং পুরো ব্যাপারটাই কেবল একটি উপলব্ধিগত আলোচনায় পরিণত হয় এবং এর বেশী কিছু হয় না। সুবহানাল্লাহ্‌, অথচ এই আয়াতটি বলছেঃ

“মুসলিমগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক।” (আস্ – সাফ: ২ – ৩)

এই আয়াতটি নির্দিষ্টভাবে এই বিষয় সম্পর্কেই বলে। এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার এটাই কারণ। এর ঠিক পূর্বের আয়াতটিতেই আল্লাহ্‌ স্মরণ করিয়ে দেন,

“নিশ্চয়ই, আল্লাহ্‌ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসা গালানো প্রাচীর।” (আস্ – সাফঃ ৪)

আল্লাহ্‌ ঐ ব্যক্তিকে ভালবাসেন যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে। শুধু যুদ্ধের বিষয়ে কথা বলেই ক্ষান্ত হয় না। তারা, যারা প্রকৃতই যুদ্ধ করে! ভাইয়েরা বছরের পর বছর ধরে হিজরাহ্‌ – এর বিষয়ে এবং যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়ে কথা বলে আসছে, এবং কোন কিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে না। এটা শুধুই ইচ্ছা এবং কথা। এই হাদিসটি ব্যবহার করে তাদের উচিৎ নিজেদের যাচাই করা, “যে ব্যক্তির মৃত্যু হল এমন অবস্থায় যে – সে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করেনি, এমনকি কোন জিহাদের জন্য পরিকল্পনাও করেনি, তবে তার মুনাফিকের মৃত্যু হল।” (মুসলিম)

কেউ কেউ বলে যে আমরা যুদ্ধে যাওয়া ও যুদ্ধ করার জন্য অন্ততঃ চিন্তা করি। কিন্তু মনে রেখো যে, এই হাদিসটি মনস্থির হতে বলছে গাজওয়ার ব্যাপারে যেটা হল ফারদ কিফায়া, ফারদ আইন না।

“আর যদি তারা বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করত। কিন্তু তাদের যাওয়া আল্লাহর পছন্দ নয়। তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ হল বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাক।” [৯: ৪৬]

আমরা পূর্বে এই আয়াত সম্পর্কে বলেছি, পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ ফরয। যখন এটি ফারদ – উল – আইন তখন কেবল নিয়তই যথেষ্ট নয়, তখন তা অবশ্য করণীয়। শুধু এটা বললেই যথেষ্ট হবেনা যে, “আমার সংকল্প ছিল, সুতরাং আমি নিফাক থেকে মুক্ত”। আমাদেরকে এ ব্যাপারে পরিষ্কার থাকতে হবে। ফারদ – উল – আইন এবং ফারদ – উল – কিফায়া জিহাদের ক্ষেত্রে অনেক সন্দেহ সৃষ্টি হয় যখন একজন এ দু’টির মধ্যে পার্থক্য করে না। ইবন কুদামাহ – এর মতে তিনটি কারণে জিহাদ ফারদ – উল – আইন হয়:

  • যখন শক্ররা মুসলিম ভূমিতে প্রবেশ করে।
  • যখন ইমাম কাউকে সৈন্যদলে আহবান করেন।
  • যখন দুইদল সম্মুখীন হয়। (এর অর্থ হল – যদিও জিহাদ প্রাথমিকভাবে ফারদ – উল – কিফায়া হয়, তথাপি এটি ফারদ – উল – আইন হয়ে পড়ে যখন সৈন্যরা শক্রদের সম্মুখীন হয়। কারণ সেই মুহূর্তে কোন ব্যক্তির পিছনে ফিরে পলায়ন করার অনুমতি নেই।)

আমাদের মাঝে অধিকাংশ ব্যক্তিই হিজরাহ্‌ করা এবং যুদ্ধে যাওয়ার কথা বলে, এবং এই কথা কখনোই কাজে রূপান্তরিত হয় না। যেখানে আমরা ফারদ – উল – আইন এর অর্ধেক দায়িত্ব সরাসরি আমাদের পকেট থেকে ব্যয় করার মাধ্যমে পূরণ করতে পারি। কারণ জিহাদের প্রকারভেদ দু’টি। একটি হল জীবন দ্বারা এবং অপরটি হল অর্থ (টাকা) দ্বারা। সুতরাং এ বিষয়ে (জিহাদ) কথা বলে ক্ষান্ত থাকার কোন ওজর নেই এবং অব্যাহতি নেই। আমাদের এখন যা করা প্রয়োজন তা হল আমাদের পকেটে হাত ঢোকানো। আমাদের উচিত আমাদের “মাল’ দ্বারা জিহাদ করা এবং একই সাথে সশরীরে জিহাদ করার জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, “যদি কোন ব্যক্তির পক্ষে সশরীরে জিহাদ করা সম্ভবপর না হয় এবং তারা অর্থ দ্বারা জিহাদ করতে সক্ষম হয়, তবে এটা করা তাদের জন্য ফারদ হয়ে যায়।” আবুল হাকামের বর্ণনায় আহমাদ ইবন হাম্বল একই কথা বলেন এবং আল-কাযী আবু বাকর আল-আরাবী তাঁর আহকামুল কুরআনে নিম্নের আয়াতটির তাফসীরে উল্লেখ করেনঃ

“তোমরা বের হয়ে পড়ো। যদিও তোমরা হালকা (দুর্বল, বৃদ্ধ এবং দরিদ্র/অসহায়) অথবা ভারী (স্বাস্থ্যবান, যুবক এবং সম্পদশালী), এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে, এটি তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার।” [৯: ৪১]

অতঃপর ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, সম্পদশালীদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক যে তারা আল্লাহ্‌র (আযযাওয়াজাল) পথে ব্যয় করবে এবং এটা নারীদের ওপরও বাধ্যতামূলক যে তারা তাদের অতিরিক্ত অর্থ থাকলে তা থেকে ব্যয় করবে। যদি নারীদের কাছে তাদের প্রয়োজনের চেয়ে অধিক থেকে থাকে, তবে তা দেওয়া তাদের উপর ওয়াজিব হয়ে পড়ে।”যাদ্‌ – উল – মাদ্‌ – এ ইবন আল-ক্বাইয়ুম বলেন, “আমাদের অন্যতম শিক্ষা হল যে. সম্পদ দিয়ে জিহাদ করা ঠিক তেমন ভাবেই অত্যাবশ্যক ঠিক যেভাবে জিহাদ অত্যাবশ্যক নাফসের সঙ্গে।” এবং এটি হল আহমাদ এর বর্ণনাগুলোর মধ্যে একটি, “এবং এটি নিঃসন্দেহে সত্যি, কারণ কুরআনে – অর্থ দ্বারা জিহাদ হল শরীরের জিহাদ করার প্রতিরূপ এবং এটি সর্বদা তার সাথেই উল্লেখিত। আসলে একটি আয়াহ্‌ ব্যতীত এটা সবসময় শরীরের জিহাদের পূর্বে আসে। এটি একটি প্রমাণ যে, সম্পদের জিহাদ আত্মার জিহাদ অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং অধিক জোরালো। “রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোন মুজাহিদকে সহযোগিতা করল, সে প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ করল, এবং যে একজন মুজাহিদের পরিবারের দেখাশুনা করল, সে প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ করল।” (বুখারী – মুসলিম)

এটা করা তার ওপর অত্যাবশ্যক যে এটা করতে সক্ষম, ঠিক সেভাবেই যেভাবে একজন ব্যক্তি যে সশরীরে যুদ্ধ করতে সক্ষম – তার ওপর (সশরীরে যুদ্ধ) অত্যাবশ্যক। ঠিক যেভাবে একজন ব্যক্তি যে শারীরিক অক্ষমতার জন্য হাজ্জ্ব করতে না পারায় অন্যকে অর্থ দিয়ে তার বদলে হাজ্জ্ব করতে পাঠানো ফরয, ঠিক সেভাবেই একজন ব্যক্তি যদি সশরীরে জিহাদ করতে না পারে তবে সম্পদ দ্বারা জিহাদ করা ফরয।”

এ ব্যাপারে কারো কোন ওজর দেখানোর নেই। যারা এটা জানেই না তাদেরকে হয়তো ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যারা সত্যকে জানে এবং জানে যে এটি আল্লাহকে পথ যা তাঁকে সন্তুষ্ট করে – তারপরও যদি সে কিছুই না করে, তাহলে সেটা হবে অপরাধ। দু’টির মধ্যে পার্থক্য হলো যে ব্যক্তির জ্ঞান থাকা সত্তেও সে তা কাজে পরিণত করেনা, সে ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা খারাপ যার জ্ঞান নেই।

আরো একটি বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আরোপ করতে হবেঃ শরীয়ার নিয়মানুযায়ী দারুল কুফরে একজন মুসলিমের জীবন – যাপন করার অনুমতি নেই। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমি তাদের থেকে মুক্ত যারা মুশরিকীনদের মধ্যে বসবাস করে।” অতএব, প্রত্যেক মুসলিমের জীবনযাত্রাই এখন প্রশ্নের সম্মুখীন ৷ এই পাপপূর্ণ স্থানে বসবাসের দায় থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় হলোঃ

  • দাওয়াহ এবং
  • অর্থ উপার্জন করে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা

সুতরাং যখন আমরা আমাদের অবস্থার দিকে তাকাই, আমাদের সিদ্ধান্ত পৌঁছানো প্রয়োজন যে এখানে কিসের অগ্রাধিকার, তা নয় যা আমি চাই বা করতে ইচ্ছা করি। আমরা সবসময় সে বিষয়গুলোই অনুসরণ করতে চাই যেগুলো আমাদের কাছে প্রিয়। কিন্তু সেখানে ‘আযর’ নেই। “আযর’ (পুরস্কার) আছে, আল্লাহর (সুবহানাহু তাআলা) পছন্দ অনুযায়ী যার যার অবস্থানে, যার যার দক্ষতা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করা। আমাদের মাঝে অনেকেরই নিয়াহ আছে মুজাহিদীনদের সাথে গুহায় পর্বতে গিয়ে যোগদানের এবং আলহামদুলিল্লাহ্‌, এটা নিঃসন্দেহে একটা ভাল নিয়াহ। কিন্তু আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত না যে, তার আগেই এখানেই আমাদের পক্ষে কি কি করা সম্ভব, যতক্ষণ না আমরা যোগদানে সক্ষম হই। একজন মুজাহিদ যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ তাকে যে ক্ষমতা ও সামর্থ্য দিয়েছেন তার সবটুকু ব্যবহার করে, তেমনি আমাদের উচিৎ আমাদের সম্পদ ব্যয়ে সর্বোচ্চ সামর্থ্য ব্যবহার করা সেই সময় আসার আগ পর্যন্ত যেদিন আমরা মুজাহিদীনদের সারিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ্‌। মুজাহিদীনদের মধ্যে সামনের সারির হওয়া হল সবচেয়ে ভাল মানুষদের সাথে থাকা। সুতরাং যতদিন না আমরা সেই পুরষ্কার পাওয়ার সুযোগ লাভ না করি, ততদিন পর্যন্ত আমাদের উচিৎ যতভাবে সম্ভব আমাদের পুণ্য ভারী করার চেষ্টা চালানো। এবং সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল সম্পদ দ্বারা জিহাদে অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যা ফারদ হয় তখন যখন জিহাদ ফারদ – উল – আইন হয়ে পড়ে। যখন জিহাদ ফারদ – উল – আইন হয় তখন তা সম্পদ এবং শারীরিক দুটি দ্বারাই ফারদ – উল – আইন হয়। কিন্তু এ পথে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে, ফলে কখনও কখনও সশরীরে জিহাদ করা অসম্ভব বা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু সম্পদ দ্বারা জিহাদ করার ক্ষেত্র অনেক বেশী প্রশস্ত এবং এর সুবিধা গ্রহণ করা উচিত। যদি আল্লাহ্‌ (আযযাওয়াজাল) আমাদেরকে সম্পদ দ্বারা জিহাদের সুযোগ দিয়ে থাকেন। তাহলে শুধুমাত্র একজন পাগলই এ সুযোগ ছেড়ে দিবে। এখন তুমি সম্পদ দ্বারা জিহাদ অনুশীলন কর এবং ইনশাআল্লাহ্‌ ভবিষ্যতে আল্লাহ্‌ সশরীরে জিহাদ করার পথ খুলে দিবেন। সুতরাং তোমার দু’টিরই সংযুক্তি থাকবে। তাহলে এখন অপেক্ষা কিসের এবং সম্পদ দ্বারা জিহাদ করার সুযোগ হারাবে কেন – সে সময় আসা পর্যন্ত যখন সম্পদ দ্বারা জিহাদের সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে যাবে? আমাদের উচিৎ দু’টি করার জন্যই প্রচেষ্টা চালানো।

এখন, যদি আমরা ফুকাহার মতামত লক্ষ্য করি – যা হল, জিহাদ বছরে একবার করা বাধ্যতামূলক, তবে একজন অন্তত বলতে পারবে যে আমি একজন মুজাহিদদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করছি, সারা বছরের জন্য এবং তুমি তা করতে পারতে। আল্লাহকে প্রতিশ্রুতি দাও যে তুমি জিনিসগুলো নির্দিষ্ট করছ এবং নির্দিষ্ট কারণে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ এবং তুমি এটা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে।

আল্লাহর সাহায্যে ইখলাসের সাথে সম্পদ দ্বারা জিহাদ করা যায়। কারণ এক্ষেত্রে কোন খ্যাতি/পরিচিতি এবং প্রদর্শন অন্তর্ভুক্ত নেই। এটা এমন একটি জিনিস যা গোপনীয়তার সাথে করা যায় এবং কেউ এটা সম্পর্কে জানতে পারে না এবং এভাবেই সেই ব্যক্তি বাস্তব জিনিস যেমন সশরীরে জিহাদ করার আন্তরিকতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। বিরতিহীনভাবে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে এবং এটা গোপনীয়তার সাথে আন্তরিকভাবে করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির অন্তরে ইনশাআল্লাহ্‌ জিহাদের জন্য আন্তরিকতা/সচেতনতা সৃষ্টি হবে যেন সে ইখলাসের সাথে যেতে পারে যখন আল্লাহ্‌ সশরীরে যুদ্ধের ব্যবস্থা তৈরি করে দেবেন। আল্লাহ্‌ (আযযাওয়াজাল) তাকে তার প্রচেষ্টা এবং সচেতনতার জন্য তাওফীক প্রদান করবেন।

  1. যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবুকের সেনাদলের প্রস্তুতির জন্য দান করা সম্পর্কে সাহাবাদের সাথে আলোচনা করছিলেন

তখন উসমান বিন আফফান রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হাজার দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) নিয়ে আসলেন এবং তিনি তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পোশাকের ভাঁজে ঢেলে দিলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েনগুলো (মুদ্রা) ঝাঁকাচ্ছিলেন এবং ঘোরাচ্ছিলেন এবং বারবার বলছিলেন, “আজকের পর থেকে উসমান যা – ই করবে, তাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা।”(আহমাদ, তিরমিযী)

  1. রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “হে আল্লাহ উসমানের উপর সন্তুষ্ট হোন কারণ আমি উসমানের প্রতি সন্তুষ্ট।” (ইবনে হিশাম)
  2. মুহীবালদীন আল-তাবারী বলেন, “উসমান প্রথম ৩০০টি উট নিয়ে আসেন যেগুলোর পৃষ্ঠগুলি পূর্ণ ছিল, অতঃপর তিনি ১০০০ স্বর্ণের দিনার নিয়ে আসেন, অতঃপর যখন তিনি দেখলেন যে সৈন্যবাহিনী তখনও স্বল্প ছিল, তখন তিনি সর্বমোট ১০০০ ঘোড়া এবং উট নিয়ে আসলেন। যখন সেটাও যথেষ্ট ছিল না তখন তিনি ১০, ০০০ দিনার এবং ২০টি ঘোড়া পাঠিয়ে দেন।

আল্লাহ্‌ বলেন, “আর তোমরা ব্যয় কর আল্লাহর পথে, এবং (এই কাজ ত্যাগ করে) নিজেদেরকে নিজেরা ধ্বংসের পথে নিক্ষেপ করো না। আর কাজ উত্তমরূপে সম্পন্ন কর। নিশ্চয়, আল্লাহ্‌ ভালবাসেন উত্তমরূপে কাজ সম্পাদনকারীদেরকে।” (বাকারাহঃ ১৯৫)

  1. হুযাইফাহ্‌ এই আয়াতের অর্থ বর্ণনা করেন যে, যখন মানুষ তাদের সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না। তারা তাদের নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে ছুড়ে দেয়। (বুখারী)

এই তাফসীরে ইবন আবি হাতিম বলেন যে, এটি ইবন আব্বাস, ইকরীমাহ্‌, আল-হাসান, মুজাহিদ, আত্তা সাঈদ বিন যুবাইর, আবি সালেহ, আল-ধাজাক, আল-সুদ্দী, মুক্বাতিল বিন হায়ান, কাতাদাহ্‌ এবং অন্যদের মতামত।

আল-কুরতুবী তাঁর তাফসীরে বলেন যে, হুযাইফাহ্‌, ইবন আব্বাস, আত্তা, ইকরিমাহ, মুজাহিদ এবং অন্যরা বলেন যে, তুমি দারিদ্রকে ভয় করার কারণে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা থেকে সংযত হয়ো না। এটা বুখারীরও মত এবং তিনি অন্য কোন মত উল্লেখ করেননি।

আল্লাহ্‌ বলেন, “……. আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে, (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে, সুতরাং এখন এর স্বাদ গ্রহণ কর।” (আত্ তাওবাহ্‌ ৩৪ – ৩৫)

আল্লাহ্‌ বলেন, “শুন, তোমরাই তো তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবান জানানো হচ্ছে, অতঃপর তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ্‌ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এরপর তারা তোমাদের মত হবেনা।” (সুরা মুহাম্মাদ: ৩৮)

আল্লাহ্‌ বলেন, “তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কিসে বাধা দেয়, যখন আল্লাহই নভোমণ্ডলের ও ভূমণ্ডলের উত্তরাধিকারী?” (আল-হাদীদ: ১০)

  1. আসলাম আবি ইমরান বলেন, আমরা একটি সেনাদলের মধ্যে ছিলাম এবং কনস্টান্টিনোপল এর দিকে মদিনা থেকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। সৈন্যদলের শীর্ষনেতা ছিলেন আব্দুল রাহমান বিন খালিদ বিন আল-ওয়ালীদ। রোমানরা শহরের দরজাগুলোর সম্মুখে পলায়ন করল। আমাদের মধ্য থেকে একজন শত্রুদের দিকে তীব্রবেগে অগ্রসর হল। কিছুলোক বলল, “আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। সে নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে ছুড়ে ফেলছে!” আবু আইয়ুব আল-আনসারী (একজন সাহাবা) বলেন, “এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় আনসারদের সম্পর্কে। যখন আল্লাহ্‌ তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বিজয় দান করলেন এবং ইসলামের বিজয় সূচিত হল, আমরা বললাম, চল আমরা আমাদের ব্যবসার দিকে প্রত্যাবর্তন করি এবং তার দেখাশুনা করি। তখন আল্লাহ্‌ এই আয়াত নাযিল করলেন, “এবং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর এবং তোমাদেরকে তোমরা নিজ হাতে ধ্বংসের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলনা। এবং সৎকর্ম কর, প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ্‌ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।”

সুতরাং, নিজেদেরকে ধ্বংসের মাঝে ছুঁড়ে ফেলার অর্থ হল জিহাদ ছেড়ে দিয়ে খামার এবং ব্যবসায় প্রত্যাবর্তন করা। আবু ইমরান বলেন, “আবু আইয়ুব জিহাদে ছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি কনস্টান্টিনোপল এ সমাহিত হন।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, আল-হাকিম)

  1. আল-ক্বাসীর বিন মুখমারাহ্‌ (তাবীঈ) বলেনঃ ধ্বংস হল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা থেকে বিরত থাকা। যদি কোন ব্যক্তি একা দশ হাজার শত্রুকে আক্রমণ করে, তবে তা ভাল এবং আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন। (আল-সুনান আল-কুবরা, আল-তাবারী তাফসীরে)

শয়তান তোমাকে বলতে পারে যে তুমি মরে যেতে পার, কেন তুমি তোমার সম্পদ তোমার পরিবারের জন্য রেখে দিচ্ছনা? এই চিন্তা সেই গ্রহণ করে যার মধ্যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস অতি সামান্য। এতে বোঝা যায় যে আল্লাহর রিযিক দেবার ক্ষমতার নিয়ে সে সন্দিহান। কারণ কেউ যদি বিশ্বাস রাখে যে আল্লাহ্‌ এবং পরিবারের মাঝখানে সে একজন মাধ্যম ব্যতীত আর কিছুই না, বাস্তবে, সে তাদের যোগানদাতা নয়, তাহলে, সে তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের কী হবে ভেবে ভয় পাবেনা।

  1. আবু যার বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রবেশ করতে দেখলেন এবং তিনি তখন কাবা’র ছায়ায় বসেছিলেন। তিনি আমাকে দেখে বললেনঃ “কাবা’র মালিকের শপথ, তারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত!” আমি তাঁর কাছে না গিয়ে পারলাম না এবং প্রশ্ন করলাম তারা কারা? তিনি বললেন, “বিত্তশালীগণ। তবে তারা ব্যতীত যারা এভাবে ব্যয় করে।” এবং তিনি তার হস্ত মুবারক দ্বারা ইশারা করলেন। তরঙ্গায়িত করলেন বামে, ডানে এবং পেছনে। অতঃপর তিনি বললেন, “এবং তারা সংখ্যায় অনেক কম!” (মুসলিম – বুখারী)

আল্লাহর জন্য পথে যোদ্ধাদের জন্য সরবরাহ করার নৈতিক উৎকর্ষ এবং তাদের পরিবার গুলির দেখাশুনা করাঃ

  1. আবু সাঈদ আল-খুদরী বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী লাহইয়ানের প্রতি একদল সেনা প্রেরণ করলেন। তিনি বললেন, প্রত্যেক দু’জন ব্যক্তির থেকে একজন যুদ্ধ যাও। অতঃপর তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন – যারা বাকি থেকে গিয়েছিলঃ “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের পরিবারের দেখাশুনা করবে, সে যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত। সে ব্যক্তি তাদের চেয়ে অর্ধেক পুরস্কার পাবে যারা যুদ্ধের জন্য চলে গেছে। (মুসলিম)
  2. রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র জন্য যোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় বস্তু সরবরাহ করে/সহায়তা করে প্রকৃত পক্ষে সে যুদ্ধ করে। এবং যে ব্যক্তি কোন যোদ্ধার পরিবারের দেখাশুনা করে, প্রকৃতপক্ষে সে যুদ্ধ করে।” (বুখারী – মুসলিম)
  3. ইবন মাসুদ বলেনঃ “আমার কাছে হাজ্জ করার চেয়ে একজন যোদ্ধাকে চাবুক প্রদান পূর্বক সুসজ্জিত করা অধিক উত্তম।” (ইবন আর মুবারাক – ইবন আবি শায়বাহ্‌)
  4. উদায় বিন হাতেম রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট সর্বোত্তম সাদাকাহ্‌ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আল্লাহর পথে তোমার সঙ্গীদের সহায়তা কর।” তিনি বললেন অতঃপর কী? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “একটি কাঠামো নির্মাণ করা, যা তাদেরকে ছায়া দিয়ে সাহায্য করে।” তিনি বললেন অতঃপর কী? রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ“তাদের ঘোড়ার পিঠের গদি দিয়ে সাহায্য করা।” (সুনান সাঈদ বিন মানসূর)
  5. আমির বিন কায়স (তাবীঈ) রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতেন। তার একটি খচ্চর ছিল, যা তিনি মুহাজিরীনদের সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতেন। যখন তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিতেন, তিনি তখন মানুষের চারপাশে ঘুরে তাদের মুখের দিকে তাকাতেন এবং তাদের শিক্ষা দিতেন। যদি তিনি এমন দল পেতেন যাদের সাথে তিনি মানানসই, তবে তিনি তাদের নিকট যেতেন এবং বলতেনঃ “আমি তোমাদের সাথে যোগ দেব কিন্তু আমার তিনটি শর্ত রয়েছে।”তারা বলেন – “সেগুলো কী?” তিনি বলতেনঃ
  • আমি তোমার সেবক হব এবং এক্ষেত্রে আমার প্রতিযোগী কেউ হবে না।
  • আমি তোমাদের মধ্যে থেকে আযান দেব এবং এ ব্যাপারে আমার প্রতিযোগী কেউ হবেনা।
  • আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তোমাদের ব্যয় বহন করব।”

যদি তারা সম্মত হত তবেই তিনি তাদের সাথে যোগদান করতেন। যদি কখনও তারা তার সাথে প্রতিযোগিতা করত তাহলে তিনি সেখান থেকে প্রস্থান করতেন এবং অন্য দলের সন্ধানে চলে যেতেন। (ইবন আল-মুবারাক)

আগেকার মুসলিমরা যদি সেনাবাহিনীর সাথে বের হতেন তবে তারা তাদেরকে সাহায্য করার প্রচেষ্টা করতেন এবং তাদের সঙ্গীদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা চালাতেন। তারা নিজেদের অপেক্ষা অন্যদের অধিক প্রাধান্য দিতেন। তারা এ সবকিছুই করতেন আল্লাহর জন্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে।

৪র্থ অধ্যায়: রিবাতের[2] উৎকর্ষ এবং সেই ব্যক্তির উৎকর্ষ যে রিবাতে মৃত্যুবরণ করে

আল্লাহ বলেন: “অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাটিতে তাদের সন্ধানে ওঁত পেতে বসে থাক।” (আত্‌ তাওবাহ:৫)

আল্লাহ্‌ বলেন: “হে ঈমানদারগণ! দৃঢ়ভাবে চেষ্টা কর ও (জিহাদে) ধৈর্য রাখ এবং (জিহাদের জন্য) প্রস্তুত থাক। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যেন তোমরা পূর্ণ সফলকাম হতে পারো।”(আল-ইমরান:২০০)

আল-হাসান বলেন: “দৃঢ়ভাবে চেষ্টা করা ও দৃঢ়ভাবে সহ্য করা (ধৈর্য ধরা) যা এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে এর অর্থ হল যে, মুসলিমরা আদেশপ্রাপ্ত যে তারা সহ্য এবং দৃঢ়তায় অবিশ্বাসীদের এমনভাবে ছাড়িয়ে যাবে যে অবিশ্বাসীরা শেষ পর্যন্ত তাদের ধর্ম ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।”

ইবন যারীর:

মুহাম্মাদ বিন ক্বাব আল-কুরাযী সবসময় এই আয়াত সম্পর্কে বলতেন: “আল্লাহর জন্য দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান হও যতক্ষণ পর্যন্ত না অবিশ্বাসীরা তার ধর্ম পরিত্যাগ করে তোমার ধর্ম গ্রহণ করে।”

  1. আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:” আল্লাহর জন্য একদিন দৃঢ়তার সাথে দন্ডায়মান হওয়া, পৃথিবী এবং এর সবকিছু অপেক্ষা উত্তম।” (বুখারী)
  2. সালমান আল-ফারসী বলেন: রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “আল্লাহর রাস্তায় একদিন দন্ডায়মান হওয়া হল একমাস রোযা রাখা এবং এর রাত্রিগুলিতে সালাহ্‌ পড়া অপেক্ষা উত্তম। এবং যদি তার মৃত হয় তবে এই কাজের জন্য সে পুরস্কার পেতে থাকবে এবং তার রিযক চলতে থাকবে এবং সে কবরে ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে অব্যাহতি পাবে।” (মুসলিম)
  3. রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তির আমল তার মৃত্যুর সাথে শেষ হয়ে যাবে, ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে আল্লাহর রাস্তায় দন্ডায়মান হয়। এর কারণ হল – কিয়ামত পর্যন্ত তাদের আমল বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং তারা কবরের ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে অব্যাহতি পাবে।” (আবু দাউদ, আল-হাকীম)

আল-কুরতুবী বলেন, এর অর্থ দাড়ায় যে, মৃত্যুর পর রিবাত সর্বাধিক পুরস্কার প্রদান করে। রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আদম সন্তানের মৃত্যুর পর তার কৃতকর্ম সমাগত হয়, কেবলমাত্র তার করে আসা কোন দানশীলতা, তার রেখে আসা জ্ঞান যাতে মানুষ উপকৃত হয় এবং সৎকর্মপরায়ণ সন্তান যে তার জন্য দু’আ করবে – এই তিনটি ছাড়া। (মুসলিম) দান, জ্ঞান এবং সৎকর্মশীল সন্তান সবই একদিন শেষ হয়ে যাবে। এটা বন্ধ হবে যখন দান ফুরিয়ে যাবে, যখন জ্ঞানের অনুপস্থিতি ঘটবে এবং যখন তার সন্তানের মৃত্যু হবে। কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় দন্ডায়মান ব্যক্তির পুরস্কার অব্যাহত থাকবে বিচার দিবস পর্যন্ত। কারণ, শক্রদের আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকলেই অন্য সব আমল করা সম্ভব, এবং এই নিরাপত্তা এসব মুজাহিদীনদের কারণেই অর্জিত হয় যারা আল্লাহর পথে দন্ডায়মান হয় এবং উম্মাহকে পাহারা দেয়।

  1. উসমান(রা) মিম্বারে দাঁড়ালেন এবং বললেন: “আমি রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছ থেকে একটি হাদিস শুনেছি যা আমি তোমাদের বলিনি কারণ আমি ভয় ছিল যে এটা শুনলে তোমরা সবাই মদিনা ত্যাগ করবে। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে. “আল্লাহর রাস্তায় একদিন দল্ডায়মান হওয়া, ১০০০ বছর অন্যত্র দন্ডায়মান হওয়া অপেক্ষা উত্তম। সুতরাং সবাই বেছে নিক যা তারা পছন্দ করে।”(মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বাহ, আল-তিরমিযী, আল-নাসাঈ)

উসমানের এই হাদিস হল একটি স্পষ্ট প্রমাণ যে, আল্লাহর রাস্তায় একদিন যুদ্ধের ভূমিতে দন্ডায়মান হওয়া ১০০০ বছর মক্কা মদিনা এবং জেরুজালেমের যেকোনো স্থানে দন্ডায়মান হওয়া অপেক্ষা উত্তম। একারণেই তিনি এ হাদিসটি তাদেরকে আগে বলেননি। কারণ তিনি এটা ভেবে ভীত হয়েছিলেন যে, সকলে তাকে ছেড়ে চলে যাবে। এমন অনেক সাহাবা এবং তাবিঈন আছেন, যাদের সংখ্যা আল্লাহই গণনা করতে সমান, যারা মক্কা এবং মদিনা ছেড়ে আল-শামের উপকূলে দন্ডায়মান ছিল যে পর্যন্ত না তাঁরা শহীদ হয়েছেন অথবা স্বাভাবিকভাবে তাদের মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে।

  1. আল-হারিথ বিন হিশাম (আবু যাহেলের ভাই) জিহাদের উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করলেন ফলে মক্কাবাসীরা শোকাহত হয়। বহু সংখ্যক মক্কাবাসী তাকে আল-বাযআ’ পর্যন্ত অনুসরণ করেছিল, তারা সবাই কাঁদছিল। তা দেখে তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং বললেন: “হে মানুষগণ, আমি এ কারণে তোমাদের ছেড়ে যাচ্ছিনা যে তোমরা আমার প্রিয় নও। আমার যাওয়ার কারণ এটিও নয় যে, আমি এ শহর অপেক্ষা অন্য স্থান অধিক পছন্দ করি। বরং এটা এজন্য যে, ইসলাম এসেছে এবং কিছু সংখ্যক মানুষ হিজরত করেছে৷ তারা আমাদের মধ্যকার সবচেয়ে সম্ভ্রান্তদের মধ্যে থেকে ছিলনা। অতঃপর আমরাও জাগ্রত হই (ইসলাম কবুল করি)। কিন্তু আল্লাহর শপথ, যদি মক্কার পর্বতগুলো স্বর্ণে রূপান্তরিত হয় এবং আমরা তার সবটাই আল্লাহর জন্য ব্যয় করি, তবুও আমরা তাদের একদিনের আমলের সমান হতে পারব না। এখন যদি তারা এই পৃথিবীতে আমাদের চেয়ে এগিয়ে থাকে তবে আমরা পরকালে তাদের সমতুল্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে চাই। আমি আল্লাহর দিকে যাত্রা করছি।”

তিনি আল-শামে গেলেন অত:পর তিনি ইয়ারমুকের যুদ্ধে শহীদ হলেন। (ইবন আল-মুবারাক)

ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন এ ব্যাপারে আলেমরা একমত যে, আল্লাহর রাস্তায় দন্ডায়মান হওয়া – মক্কা, মদিনা অথবা জেরুজালেমে অবস্থান করা অপেক্ষা উত্তম।

ইবন আল-মুনযীর বলেন যে, ইমাম আহমাদকে প্রশ্ন করা হয় যে: “আপনার কাছে কোনটি অধিক প্রিয় – মক্কায় অবস্থান করা নাকি আল্লাহর রাস্তায় দন্ডায়মান হওয়া?” তিনি বললেন: “দন্ডায়মান হওয়াই আমার নিকট অধিক প্রিয়।”

ইমাম আহমাদ আরো বলেন: “আমাদের দৃষ্টিতে আল্লাহর রাস্তায় দন্ডায়মান হওয়া এবং ক্বিতালের সমতুল্য আর কিছুই নেই।” একজন ব্যক্তি ইমাম মালিককে প্রশ্ন করল: “আপনার নিকট আমার জন্য কোনটি পছন্দনীয় – মদিনায় অবস্থান করা নাকি আলেকজান্দ্রিয়ায় অবস্থান করা?” তিনি বললেন: “আলেকজান্দ্রিয়ায় অবস্থান করা [রোমানরা নৌপথে আক্রমণ করতো বলে আলেকজান্দ্রিয়া ছিল রিবাতের ভূমি।]

এমনকি রিবাতে সালাহ্‌র সওয়াবও অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। একইভাবে বহুগুণ বৃদ্ধি পায় রোযা, যিকর, কুরআন তিলাওয়াত এবং আল্লাহর জন্য সম্পদ সাদাকা করার সওয়াব।

  1. উসমান বলেন: “আল্লাহ আমাদেরকে মুসলিম হওয়ার নির্দেশ দিলেন, এবং আমরা তা করলাম (মুসলিম হলাম) সুতরাং আমরা মুসলিম। অত:পর তিনি আমাদেরকে হিজরাহ কররে আদেশ দিলেন ফলে আমরা, মক্কার জনগণ, মুহাজিরীন হলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে জিহাদ করতে বললেন এবং তোমরা তা করলে। সুতরাং তোমরা, অর্থাৎ শামের জনগণ, হলে মুজাহিদীন। তোমার নিজের জন্য এবং তোমার পরিবারের জন্য এবং চারপাশের অভাবী মানুষের জন্য অর্থ ব্যয় কর। কারণ যখন তুমি একটি দিরহাম নিয়ে বের হও এবং তা দ্বারা কিছু গোশত কেন এবং তুমি ও তোমার পরিবার তা গ্রহণ কর তোমাকে তখন ৭০০ দিরহাম ব্যয় করার পুরস্কার দেওয়া হবে!” (দামাসকাসের শহরের ইতিহাস।)

উসমানী যুগে আল-শামে ব্যয় করার সওয়াব বহুগুণ ছিল, কারণ আল-শাম তখন ছিল রিবাতের ভূমি। যে কোন সময় সেখানে শত্রুর আক্রমণের আশংকা ছিল। কিন্তু জেনে রাখা উচিৎ যে, এটা শুধুমাত্র সীমান্ত এলাকার জন্য প্রযোজ্য।

  1. আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “আমার জাতির মধ্য থেকে এমন কিছু মানুষ থাকবে যারা সীমান্ত রক্ষার কাজ করবে, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবে, কিন্তু তাদের পাওনা তাদেরকে দেয়া হবেনা। তারা আমার থেকে এবং আমি তাদের থেকে।”(ইবন আল-মুবারকে নির্ভরযোগ্য)।
  2. আবু হুরায়রাহ্‌ কর্তৃক বর্ণিত: আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “মানুষের মধ্যে এ ব্যক্তির জীবিকাই সর্বোৎকৃষ্ট যে আল্লাহর রাস্তায় ঘোড়ার লাগাম ধরে থাকে আর যখনই (যুদ্ধের) ডাক শোনে তখনই ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে এবং রওনা হয়ে যায় শক্রদের হত্যা করতে অথবা শত্রুদের হাতে মৃত্যুবরণ করতে। এবং এ ব্যক্তি যে পর্বতের চূড়ায় অথবা কোন গভীর উপত্যকায় সালাহ প্রতিষ্ঠা করে, যাকাহ্‌ প্রদান করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদাহ করে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং তার মৃত্যু হয় এমন অবস্থায় যে জনগণ তার মাঝে ভাল ছাড়া আর কিছু দেখেনা।” (মুসলিম)
  3. সাহাবী আব্দুল্লাহ্‌ বিন আল-হারীয বিন যাযী আল-যাবিদি – র নিকট দু’জন ব্যক্তি আসল। তিনি তাদের অভ্যর্থনা জানালেন এবং তাদেরকে একটি বালিশ প্রদান করলেন যার ওপর তিনি বসেছিলেন তারা বলল: “আমরা এটির জন্য আপনার নিকট আসিনি বরং এজন্য যে এসেছি যে আপনি আমাদেরকে এমন কিছু শুনাবেন যা দ্বারা আমরা উপকৃত হব (একটি হাদিস)”। তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি তার অতিথিদের ঔদার্য সহকারে গ্রহণ করেনা, সে মুহাম্মাদ এবং ইব্রাহীমের মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত নয় ৷ তার ওপর রহমত যে তার রাতগুলি আল্লাহর রাস্তায় তার ঘোড়ার লাগাম ধরে কাটায়, যার নাস্তার জন্য থাকে একটি শুকনো রুটি এবং পানি। এবং তাদের জন্য আফসোস যারা গরুর মতো শুধু খেতে ব্যস্ত, যারা বলে : “ভৃত্য! এটা নাও এবং ভৃত্য! ওটা আন” অথচ তারা আল্লাহ্‌কে স্মরণ করেনা।” (ইবন আল-মুবারাক)

দন্ডায়মান হওয়ার (সীমান্ত প্রহরী) সময়

ইমাম আহমাদকে প্রশ্ন করা হল দন্ডায়মান থাকার কি কোন সময়সীমা আছে?” তিনি বললেন: “চল্লিশ দিন।”

  1. আবু হুরাইরাহ বলেন : “আমার জন্য, সমুদ্রের পাশে এক রাত দণ্ডায়মান থাকা এবং আমার পেছনের মুসলিমদের রক্ষা করা – আল-কাবা অথবা রাসূলুল্লাহর মসজিদে আল-ক্বদর অতিবাহিত করা অপেক্ষা উত্তম। এবং রিবাতে তিনি দিন অতিবাহিত করা হল একটি পুরো হজ্জের সমান, এবং রিবাতের সবচেয়ে পূর্ণ সময় হল চল্লিশ দিন।” (আব্দুল রাযযাক)
  2. আল-আনসার থেকে একজন ব্যক্তি উমার এর নিকট আসল, উমার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কোথায় ছিলে?” তিনি বললেন:”” আমি রিবাতে ছিলাম।” উমার বললেন, “কতদিন ছিলে?” তিনি বললেন, “ ত্রিশ দিন” উমার বললেন: তোমার চল্লিশ দিন পূর্ণ করা উচিৎ ছিল।” (আব্দুল রাযযাক)
  3. আবু হুরায়রাহ বলেন: “যদি তুমি রিবাতে তিনদিন অতিবাহিত কর তবে ইবাদাতকারীরা তাদের ইচ্ছামত ইবাদাহ করুক।”(ইবন আবি শায়বাহ (বিশুদ্ধ)

[অর্থাৎ যদি তুমি রিবাতে তিন দিন ব্যয় কর তবে ইবাদাতকারীরা যতই ইবাদাহ্‌ করে বা যতদিনই ইবাদাহ্‌ করে তারা তোমাকে ছুতে পাবেনা বা সওয়াবের দিক থেকে তোমাকে অতিক্রম করতে পারবেনা]

রিবাতের নির্দেশ হল যে একজন ব্যক্তি এমন ভূমিতে নিজেকে দন্ডায়মান রাখবে যেখানে শক্রর আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে (রিবাত শব্দটি রাবাত শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হল বন্ধন)। মুরাবিতের উদ্দেশ্য থাকে শক্রদের সাথে লড়াই করা, মুসলিমদের রক্ষা করা, বা ঐ ভূমিতে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। সেই ভূমি যত বেশী ঝুঁকিপূর্ণ হবে এর পুরস্কার ততবেশী হবে। হতে পারে সে স্থানটি সমুদ্র বন্দর অথবা অন্যত্র।

ইমাম মালিক জেদ্দায় রিবাতকে রিবাত হিসেবে বিবেচনা করেননা কারণ এটি মাত্র একবার শত্রুরা আক্রমণ করেছিল। যারা রিবাতের ভূমিতে সপরিবারে অবস্থান করে তাদের ব্যাপারে ইমাম মালিককে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন তাদেরকে মুরাবিতীন হিসেবে বিবেচনা করা হয়না। কারণ মুরাবিত হল সে যে নিজ পরিবার ছেড়ে রিবাতের উদ্দেশ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিতে চলে যায়।

আমার বিবেচনায় যে ব্যক্তি রিবাতের এলাকায় বাস করে এবং সেখানে বাস করার একটাই নিয়্যত থাকে যে, সে জিহাদ করবে অথবা মুসলিম ভূমি রক্ষা করবে। এবং সে ব্যক্তি কোন সমস্যা ছাড়াই সেই স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সক্ষম। আমার মতে এমন ব্যক্তিই হল মুরাবিত এবং সে পুরস্কৃত হবে যদিও সে তার পরিবারের সাথে থাকে। সাহাবাগণ এবং তাবীঈনরা রিবাতের ভূমিতে তাদের পরিবার নিয়ে থাকতেন রিবাতের নিয়্যত নিয়ে।

হয়ত ইমাম মালিক এ কথা দ্বারা এটা বুঝিয়েছিলেন যে যাদের জন্ম হয় রিবাতের ভূমিতে এবং সেখানে তারা বেড়ে ওঠে এবং তারা সেখানে এজন্য বসবাস করে যে সেটা তাদের স্বদেশ এবং একটি স্থান যেখানে তাদের পরিবার বসবাস করে এবং তারা যেখানে রিবাতের উদ্দেশ্যে জীবন – যাপন করেনা।

এটা ইবন আতইয়াহ এরও মতামত। তিনি বলেন যে, “কেউ যদি রিবাতের ভূমিতে এজন্য বসবাস করে যে সেটা তার আবাস এবং কাজের স্থান, তবে তাদেরকে ভূমির রক্ষক হিসেবে বিবেচনা করা যাবে, মুরাবিতিন হিসেবে নয়।”

সুতরাং যারা রিবাতের ভূমিতে বাস করে এমন উদ্দেশ্যে যা অপর কোন স্থানে থেকে পূরণ করা সম্ভব নয়, বা এ কারণে যে তার পরিবার তাকে সেখানে বসবাসের জন্য জোর করে, বা কাজের উদ্দেশ্যে – তাহলে তারা মুরাবিত নয়। এমন কি যদি কোন ব্যক্তি রিবাতের স্থানে থাকে এবং শত্রুর আক্রমণের ঝুঁকি শেষ হয়ে গেলেও সেই স্থানে বসবাস করতে থাকে তবে এতে বোঝা যায় যে, সে ব্যক্তির উদ্দেশ্য জিহাদ নয় এবং ফলে এ ব্যক্তির মাঝে মুরাবিতের বৈশিষ্ট্য নেই।

এখন যদি এমন কোন ব্যক্তি থাকে যে রিবাতের ভূমিতে বসবাস করে এবং এই চিন্তায় থাকে যে যদি শত্রুরা আক্রমণ করে তবে সে পালিয়ে যাবে তাহলে এমন ব্যক্তি পাপের স্থানে বসবাস করছে। কারণ যখনই শক্র আক্রমণ করবে তখন পালিয়ে যাওয়া হবে একটি বিশাল পাপ সুতরাং এমন ব্যক্তির পক্ষে এটাই ভাল হবে যে সে রিবাতের ভূমি থেকে চলে যায় কারণ সে এমন চিন্তার কারণে প্রতিটি মুহূর্তে পাপ সঞ্চয় করছে।

আল্লাহর পথে পাহারা দেওয়ার মূল্যঃ

আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “দিনার ও দিরহামের দাস এবং খামিসার দাসরা ধ্বংস হোক, কারণ তারা এ জিনিসগুলি পেলে খুশি হয় কিন্তু যদি না পায় তবে অসন্তুষ্ট হয়। এমন ব্যক্তি ধ্বংস হোক ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক। যদি তার শরীরে কাটা বিদ্ধ হয়, তবে সে কাঁটা বের করানোর জন্য সে যেন কোন সাহায্যকারী না পায়। জান্নাত হলো তার জন্য যে ঘোড়ার লাগাম ধরে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তার চুল এলোমেলো হয়ে যায় এবং তাঁর পা ধুলোয় পূর্ণ হয়ে যায়! যখন তাকে সৈন্যবাহিনীর সামনের কাতারে পাঠানো হয়, তখন সে তাতে পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত থাকে এবং যখন তাকে সৈন্যবাহিনীর পশ্চাৎভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয় তখনও সে তৃপ্ত হয়ে তার দায়িত্ব গ্রহণ করে, (সে এতটাই সাদাসিধা এবং সহজসরল যে) যখন সে অনুমতি চায় তখন তাকে অনুমতি দেওয়া হয়না এবং যখন সে কোন সুপারিশ করে তখন তার সুপারিশ নেওয়া হয় না। (বাখারী)

  1. আব্দুল্লাহ বিন আমর কর্তৃক বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “দু’ধরনের চোখকে দোজখের আগুন স্পর্শ করবেনাঃ ঐ চোখ যা আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে আর ঐ চোখ যা আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারা দিতে সারা রাত নিঘুর্ম কাটিয়ে দেয়।”(তিরমিযী)
  2. আবু রায়হানাহ্‌ কর্তৃক বর্ণিত: একবার আমরা রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে একটি যুদ্ধের অভিযানে ছিলাম। যাত্রাকালে আমরা একটি উঁচু এলাকায় পৌঁছলাম এবং সেখানেই রাত আতিবাহিত করলাম আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা ছিল ফলে আমি দেখলাম কিছু লোক মাটিতে গর্ত খুঁড়ছে। তারা সেখানে জড় হয়ে থাকবে এবং তাদের বর্ম দ্বারা নিজেদেরকে শীত থেকে রক্ষা করবে। রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের দেখলেন তখন তিনি বললেন, “কে আজকের রাতে প্রহরী হবে এবং আমি তার জন্য দু’আ করব?” একজন আনসারি এগিয়ে আসলেন এবং বললেন, “আমি হব হে আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কাছে যেতে বললেন এবং অতঃপর তিনি তার নাম জিজ্ঞেস করলেন। লোকটি উত্তর দেওয়ার পর রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য লম্বা দু’আ করলেন। যখন আমি রাসূলুল্লাহর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ শুনলাম আমি তাঁর নিকট গেলাম এবং বললাম যে আমিও রক্ষী হব। আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কাছে যেতে বললেন এবং অতঃপর তিনি আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, “আবু রায়হানাহ”।অতঃপর তিনি আমার জন্য একটি দু’আ করলেন এবং সেটি ছিল পূর্বের দু’আ অপেক্ষা ছোট অতঃপর তিনি বললেন, “দোযখের আগুন সেই চোখের জন্য নিষিদ্ধ যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে এবং দোযখের আগুন সেই চোখের জন্য নিষিদ্ধ যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়ার জন্য সারা রাত জেগে থাকে।”(আহমাদ, আল-মুসান্নাফ, আল-নাসাঈ, আল-হাকিম)
  3. মাখুল কর্তৃক বর্ণিত: যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় রাত জেগে পাহারা দিবে ভোর হওয়ার পূর্বেই তার সমস্ত পাপ ঝরে যাবে। (মুসান্নাফ ইবন আবু শায়বাহ)
  4. সাহল বিন আল-হানযালইয়াহ বলেন, “হুনাইন এর দিন আমরা রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। আমরা সারাটা দিন হেঁটেছিলাম। একজন সৈনিক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলেন এবং বললেন “হে রাসূলুল্লাহ! আমি সামনে এগিয়ে গিয়ে অমুক – অমুক পর্বতে পৌঁছেছি এবং আমি সকল হাওয়াযীনকে তাদের মহিলা, উট এবং ভেড়াগুলো হুনাইনে একত্রিত করতে দেখেছি।” রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হাসলেন এবং বললেন: “ওগুলো পরবর্তীতে মুসলিমদের জয়ের অর্জিত পুরস্কার (গনিমতের মাল) হবে ইনশাআল্লাহ!” অতঃপর তিনি বললেন, “আজকের রাতের প্রহরী কে হবে?” আনাস বিন মুরযাদ আল-গা’নাওয়ী সামনে আসলেন এবং বললেন: “আমি হব, হে আল্লাহর রাসূল!” রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “তবে আরোহণ কর”। ফলে তিনি (আনাস (রাঃ)) তার ঘোড়ায় আরোহণ করলেন এবং রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলেন। রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “এই উপত্যকার দিকে অগ্রসর হও যতক্ষণ না তুমি এর চুড়ায় পোঁছে যাও এবং আমাদেরকে তোমার দিক থেকে আক্রমণে পড়তে দিওনা।” যখন আমরা সকালের সালাহ পড়লাম, আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরা কি তোমাদের বীরকে দেখেছ?” তারা বলল, “আমরা দেখিনি।” রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সালাহর মাঝে উপত্যকার দিকে দৃষ্টিপাত করছিলেন। যখন সালাহ শেষ হলো তখন তিনি বললেন, “খুশির খবর! বীর এসেছে!” আমরা গাছের মধ্য দিয়ে উপত্যকার দিকে তাকিয়ে থাকলাম যে পর্যন্ত না তাকে দেখা গেল এবং সে আসল এবং আল্লাহর রাসূলের সামনে দাঁড়ালো। তিনি (আনাস(রা)) বললেন, “আমি যেখানে আল্লাহর রাসূল আমাকে থাকতে বলেছেন সেই উপত্যকার চুড়ায় পোঁছানো পর্যন্ত এগিয়েছি, সকাল হওয়া পর্যন্ত সেখানে থেকেছি এবং আমি কাউকেই দেখিনি।” রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তুমি কি তোমার প্রহরা ছেড়ে কোথাও গিয়েছিলে” তিনি (আনাস(রাঃ)) বললেন, “না। কেবল সালাহর সময় আর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া ছাড়া আর কোথাও যাইনি।”রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তুমি তোমার জান্নাত নিশ্চিত করেছ এবং তুমি যদি আজকের পর আর কোন ভাল কাজ নাও কর তবু তোমার কোন ক্ষতি হবেনা।”(আবু দাউদ, মুসনাদ আবু উওয়ানাহ্‌, আল-হাকিম কর্তৃক পরিশুদ্ধ এবং আল-যাহাবী কর্তৃক সম্মত)
  5. ইবন উমার কর্তৃক বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “আমি কি তোমাদেরকে এমন এক রাতের কথা বলব না যা আল-ক্বদর এর রাত অপেক্ষা উত্তম? একজন রক্ষী যে ভয়ংকর (ঝুঁকিপূর্ণ) সীমান্ত পাহারা দেয় এটা না জেনেই যে সে তার পরিবারে কোনদিন ফিরে আসতে পারবে কিনা।”(আল-মুসান্নাফ, আল-সুনান আল-কুবরা – আল-বায়হাকী, আল-হাকিম – যাহাবী কর্তৃক সম্মত)

অধ্যায় ৫: লক্ষ্যভেদ করার উৎকর্ষ এবং এর নিয়মাবলী

লক্ষ্যভেদ করার উৎকর্ষ

[সবগুলোই বর্তমান যুগের অস্ত্রশস্ত্রের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য হবে]

আল্লাহ বলেন, “তোমরা কাফিরদের মোকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদা সজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে।” (আল-আনফাল: ৬০)

  1. উকবাহ বিন আমির হতে বর্ণিত: “আমি রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে মিম্বারে উপবিষ্ট অবস্থায় বলতে শুনেছি, “তোমরা যথাসাধ্য শক্তি তাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুত রাখবে। আর নিক্ষেপ করার ক্ষমতাই শক্তি, নিক্ষেপ করার ক্ষমতাই শক্তি, নিক্ষেপ করার ক্ষমতাই শক্তি।” (মুসলিম)
  2. খালিদ বিন বাইদ বলেছেন আমি তীরন্দাজীতে পারদর্শী ছিলাম আর উকবাহ আমার সাথে তীর নিক্ষেপের অনুশীলনে বের হত। একদিন আমার যেতে ইচ্ছে করছিল না, তখন সে আমাকে বলল “খালিদ, আমি রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছ থেকে কী শুনেছি তোমাকে বলি। তিনি বলেছেন, একটি তীরের কারণে আল্লাহ তিন ব্যক্তি কে জান্নাতে প্রবেশ করবেন যে এটি বানায় আর ভাল নিয়তে বানায়, যে এটি নিক্ষেপ করে এবং যে এটি তীরন্দাজের হাতে এগিয়ে দেয়। অতএব তোমরা ধনুর্বিদ্যা এবং অশ্বচালনা অনুশীলন কর। ধনুর্বিদ্যা অনুশীলন করায় আমি অধিকতর গুরুত্ব দেই। কেবল তিন ধরনের বিনোদন অনুমোদিত – ঘোড়াকে ট্রেনিং দেয়া, স্ত্রীর সাথে খেলা, আর ধনুর্বিদ্যা। আর যে ধনুর্বিদ্যা শিখল, অতঃপর তা ছেড়ে দিল, সে আল্লাহর একটি দান ছুড়ে ফেলে দিল।” (আল-মুসানাফ, মুসনাদ আবি আওনাহ, আবু দাউদ, আল-হাকিম (যাহাবী একমত))
  3. সালামাহ বিন আল-আকওয়া বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন কিছু ছেলেদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা তীর ছোড়া খেলছিল। তিনি বললেন, “ওহে ইসমাঈলের সন্তানরা। তোমরা তীর নিক্ষেপ কর। তোমাদের পিতা একজন বড় তীরন্দাজ ছিলেন। নিক্ষেপ কর আর আমি অমুক অমুকের সাথে যোগ দিচ্ছি।” বলে তিনি একটি দলে যোগ দিলেন। রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরপর বললেন, “তোমরা (খেলা) বন্ধ করে দিলে কেন? ” তারা বলল, “কী করে করব যখন আপনি ওদের সাথে যোগ দিলেন?” তিনি বললেন, “আচ্ছা নিক্ষেপ কর, আমি তোমাদের সবার দলেই থাকব।”(বুখারী)
  4. উকবাহ বলেন, আমি রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “তোমরা অনেক রাষ্ট্র জয় করবে এবং তোমরা নিরাপদ নিশ্চিন্তে থাকবে। যদি তা হয় তবুও তোমরা তীরন্দাজী ছেড়ে দিও না।”(মুসলিম)

(অর্থাৎ, যদি মুসলিমরা যুদ্ধ থেকে নিরাপদেও থাকে, তাও যেন তারা সামরিক অনুশীলন অবহেলা না করে)

  1. আতা বিন রাবাহ বলেছেন: আমি জাবির বিন আবদুল্লাহ এবং কাবির বিন উমার আল-আনসারীকে লক্ষ্যভেদ অনুশীলন করতে দেখলাম। এদের একজন ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ল। অপর জন তাকে বললো, “আমি রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “আল্লাহর স্মরণ ছাড়া সবই বৃথা, কেবল চারটি জিনিস বাদে। সেগুলো হচ্ছে – দুই লক্ষবস্তুর মাঝে হাটা, ঘোড়াদের ট্রেনিং দেয়া, স্ত্রীর সাথে খেলা আর সাতার অনুশীলন করা।” (নাসাঈ – তাবারানী)

[আলেমরা বলেছেন যে বিপরীত পাশে অবস্থিত দু’টি লক্ষ্যবস্তুর দিকে তীর/নিক্ষেপ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে যাতে একজন একপাশে দাড়িয়ে তীর ছুড়বে এরপর আরেকদিকে এগিয়ে গিয়ে প্রথমদিকে নিক্ষেপ করবে।

আল-মুঘনীর লেখক উল্লেখ করেছেন যে, মুখোমুখি অবস্থানরত দুটি লক্ষ্যর দিকে তীর নিক্ষেপ করা সুন্নাত কেননা সাহাবারা এভাবেই অনুশীলন করতেন। বর্ণিত আছে যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন “দু’টি লক্ষ্যবস্তুর মাঝে জান্নাতের বাগিচা রয়েছে।”]

  1. আবু উসমান আল-মাহদী বলেন, আমরা যখন উতবাহ বিন ফারকাদের সাথে আজারবাইজানে ছিলাম, তখন উমরের কাছ থেকে একটি চিঠি পেলাম। তিনি বলেছিলেন, “আমাদের পিতা ইসমাঈলের পোশাক পরিধান কর এবং অমুসলিমদের পোশাক ও জাঁকজমক – বিলাসিতা হতে সাবধান হও। সূর্যের নিচে সময় কাটাও কেননা এটাই আরবদের স্থান। কর্কশ ও রুক্ষ হও এবং প্রস্তুত থাক। মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাঁটবে এবং অশ্বপৃষ্ঠে ধীরে আরোহণ না করে লাফিয়ে উঠবে। লক্ষ্যভেদ কর এবং লক্ষ্যবস্তুর মাঝ দিয়ে হাট।” (আল-সুনান আল-কুবরা, আল-বায়হাকী, গ্রহণযোগ্য সনদ)
  2. আমর বিন আবসাহ বলেন, তায়েফ অবরোধের দিন রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “যে কেউ একটি তীর ছুড়বে আল্লাহর জন্য, তাকে দাসমুক্তির সমান পুরস্কার দেয়া হবে।” আমর বলেন সেদিন আমি ১৬টি তীর ছুড়েছিলাম। (আল-নাসাঈ – আল-হাকিম, তিরমিযী, আবু দাউদ)
  3. কাব বিন মুররাহ বলেন আমি রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “যে কেউ তার তীর নিয়ে শত্রুদের মধ্যকার কোন লক্ষ্যভেদ করে আল্লাহ তাকে জান্নাতে এক পর্যায় উপরে উন্নীত করে দিবেন।” আবদুল্লাহ বিন আল-নাহাম বলেন “আর এক পর্যায় কিরূপ?” রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “ভেবো না যে এই পর্যায়গুলো তোমাদের বাড়ির দরজার সামনের সিড়ির ধাপের মত। বরং দুটো পর্যায়ের মধ্যকার দূরত্ব হচ্ছে একশত বছর।”(আল-মুজতবা – মুসলিমের নিয়মানুযায়ী সহীহ)
  1. আমর বিন আবসাহ বলেন, রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে কেউই একটি তীর ছুড়বে তা শত্রুর কাছে পৌঁছুক বা না, এটা হবে একজন মুসলিম দাস মুক্ত করার মতই আর এটা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবে।” (আন – নাসাঈ, সহীহ সনদ সমৃদ্ধ)
  2. আবু উমামাহ বর্ণনা করেছেন, রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে কেউ ইসলামের স্বার্থে তার চুল পাকাবে (চিন্তায়), সেটা তার জন্য কিয়ামতের দিন আলো দিবে এবং যে কেউ আল্লাহর জন্য একটি তীর নিক্ষেপ করে, সেটা শক্রকে আঘাত করুক বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হোক, সে হবে তার মত যে কিনা ইসমাঈলের বংশধরদের মধ্যকার কোন দাসকে মুক্ত করেছে।” (আত – তাবারানী)
  3. উতবাহ বিন আবদ আল-সূলামি বর্ণনা করেছেন: রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবাদের বলেছেন, “উঠে দাড়াও এবং যুদ্ধ কর।”একজন উঠে দাঁড়াল এবং একটি তীর ছুড়ল। রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেলেন: “এর জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে গেল।” (আহমদ)

আমর বিন আবসাহর হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, আল্লাহর পথে একটি তীর ছুড়লেও তাকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন এবং আল্লাহই এ বিষয়ে সর্বজ্ঞ।

  1. ইবরাহীম আল-তামিমী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন আমি হুযাইফাকে মাদাইনে দুটো লক্ষ্যবস্তুর মাঝ দিয়ে দৌড়াতে দেখেছি এবং তার দেহের উপরের অংশে কোন কাপড় ছিল না [সাঈদ বিন মনসুর (সহীহ)]

[হুযাইফা দুই লক্ষ্যবস্তুর মাঝে হাঁটতেন না বরং দৌড়াতেন এবং কষ্ট সহ্য করার অনুশীলনের অংশ হিসেবে সে দেহের উপরের অংশে কোন কাপড় পরতেন না]

  1. মুজাহিদ বলেছেন আমি আবদুল্লাহ ইবন উমারকে উনার লক্ষ্যবস্তুর মাঝে দৌড়াতে দেখেছি এবং তিনি বলছিলেন, “কীভাবে আমি এটা অর্জন করবো! কীভাবে আমি এটা অর্জন করবো!” [সাঈদ বিন মামুর (সহীহ)]

“কীভাবে আমি এটা অর্জন করব!” দ্বারা শাহাদাৎ বুঝানো হয়েছে। কেননা এটাই তাদের ব্যাকুল বাসনা ছিল। অবশ্য এটা দ্বারা লক্ষ্যবস্তুগুলোও বুঝানো হয়ে থাকতে পারে।

এ থেকে দেখা যায় সাহাবারা তীর চালনার প্রতি কতটা মনোযোগ দিতেন। তাঁরা রীতিমত একে উদযাপন করতেন এবং এ ব্যাপারে তারা এতটাই সক্রিয় ছিলেন যে নিজেদের ট্রেনিং দেয়ার জন্য তারা দুইটি লক্ষ্যবস্তুর মাঝে দৌড়াতেন – হাঁটতেনও না। এই ছিল তাদের সাধনা আর তারাই হলেন আমাদের জন্য উদাহরণ, এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তারাই সফল। তারা যা করতেন তাই হচ্ছে সর্বকালের সেরা কাজ। আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে যা বলেছেন সেটাই যথেষ্ট “মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর আর নিজেদের মাঝে সহানুভূতিশীল। তুমি তাদেরকে দেখবে রুকু, সিজদা করতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করতে। মুখমন্ডলে সিজদার চিহ্নই তাদের বৈশিষ্ট্য ৷”

অতএব একজন তীরন্দাজকে সমস্ত লৌকিকতা ত্যাগ করে অনুশীলন করতে হবে এবং ভাইদের সাথে অনুশীলনে অংশগ্রহণ করতে হবে। নিয়্যত হতে হবে আল্লাহর জন্য এবং তার পুরস্কারের আশায়। আর এটা অনুধাবন করতে হবে যে তারা যেটা করছে এটা সর্বোৎকৃষ্ট ইবাদত গুলোর একটি। কেবলমাত্র বিনোদন বা খেলাধুলা নয়। তাদের উচিৎ আল্লাহর শোকর – গুজার হওয়া যে তিনি তাদের এটা অনুশীলন করার জন্য সুস্থতা ও সামর্থ্য দিয়েছেন এবং একে তাদের কাছে প্রিয় করে তুলেছেন। অনুশীলনের সময় ভাইদের সাথে হাসিতামাশা করতেও উৎসাহ দেয়া হয়েছে যাতে ধনুর্বিদ্যা চর্চা করতে আরও আকর্ষণীয় লাগে। বিলাল বিন সাদ বলেছেন, ”আমি এমন মানুষ দেখেছি যারা লক্ষ্যবস্তুর মাঝে দৌড়াত ও একে অপরের সাথে কৌতুক করতে আর রাত্রিবেলা ধর্মভীরু সন্ন্যাসী হয়ে যেত।” বিলাল ছিল তাদেরই একজন। তিনি ছিলেন তাবি’য়ীনদের বড়বড় আলেম ও বড়বড় আবেদের মাঝে একজন। তিনি প্রতি রাতে এক হাজার রাকাত সালাত আদায় করতেন।

শামস আদ দ্বীন আল-জাওযিয়াহ তার ”বীরত্ব” বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেন, “বর্ণিত আছে যে, কিছুলোক ধনুর্বিদ্যা অনুশীলন করছিল যখন রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলা হল, “সালাতের সময় হয়েছে”। তিনি বললেন, “তারা তো সালাতেই রয়েছে।” অতএব তিনি তাদের এই অনুশীলন সালাতের সমপর্যায়ের বলে বিবেচনা করেছেন।”

যারা ধনুর্বিদ্যা শিক্ষা করে এবং পরে তা পরিত্যাগ করে তাদের জন্য সতর্কবাণী

কাকিম আল-লাখমী উকবা বিন আমিরকে বলেছিলেন “তুমি বৃদ্ধ বয়সেও দুইটি লক্ষ্যবস্তুর মাঝে দৌড়াচ্ছো!” উকবাহ বললেন, যদি না আমি রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছ থেকে কিছু কথা শুনতাম তবে আমি এসবের মধ্য দিয়ে যেতাম না।”বর্ণনাকারী জিজ্ঞাসা করলেন, “কী সে কথা?” তখন তিনি বললেন, “যে কেউ ধনুর্বিদ্যা শিখল এবং তা পরিত্যাগ করল সে আমাদের মধ্য থেকে নয়” – অথবা বলেছিল ”সে একটি গুনাহ করল” [মুসলিম]

কিছু উলামা মত দিয়েছেন যে ধনুর্বিদ্যা শিখে পরে তা ছেড়ে দেয়া বড় গুনাহগুলোর একটি কেননা যখনই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন “সে আমাদের মধ্য থেকে নয়” – বা এধরনের কিছু, তখন তা বড় গুনাহের প্রতিই নির্দেশ করে।

তলোয়ার চালনার উৎকর্ষ

আল্লাহ বলেন, “…… তারা যেন সশস্ত্র থাকে ……” (আন নিসা: ১০২)

আল্লাহ বলেন, “তোমরা কাফিরদের মোকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদাসজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে”(আনফাল: ৬০)

  1. আমি প্রেরিত হয়েছি তরবারি সহ ঠিক চূড়ান্ত সময়ের আগে যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন অংশীদার ছাড়া কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা হয় এবং আমার রিযক রয়েছে আমার বর্শার ছায়ায়। আর যে কেউ আমার বিরুদ্ধাচরণ করবে তার পরিণতি ভয়ংকর হবে এবং যে অন্যকোন জাতিকে অনুকরণ করবে সে তাদেরই একজন। (আহমদ)

ইবন আল-কাইয়ীম: ইমাম আহমদ বলেছেন যে, যেসব জায়গায় জিহাদ দরকার সেখানে বর্শা নিয়ে অনুশীলন করার পুরস্কার নফল সালাতের চেয়ে বেশি।

  1. আবদুল্লাহ বিন আবু আওফা হতে বর্ণিত যে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শক্রদের আক্রমণের অপেক্ষায় ছিলেন। যখন সূর্য ডুবতে থাকল তিনি বললেন, “শক্রর সাথে মোলাকাতের আকাঙ্ক্ষা করো না। কিন্তু যখন মুখোমুখি হবে তখন দৃঢ়তা অবলম্বন করবে আর মনে রাখবে যে তরবারির ছায়ায় রয়েছে জান্নাত।” (বুখারী ও মুসলিম)
  2. আবু বকর বিন আবু মুসা বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, “তরবারির ছায়াতলে জান্নাত রয়েছে।” পুরনো কাপড় পরা এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বলল, “ও আবু মুসা, তুমি কি এটা রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – র কাছ থেকে শুনেছ?” তিনি বললেন, “হা”। সেই ব্যক্তি তার সঙ্গী – সাথীদের মধ্যে ফিরে গেল, তাদেরকে সালাম দিল, এরপর তার তরবারি বের করে এর খাপ ভেঙ্গে ফেলল আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে থাকল। (মুসলিম)

অধ্যায় ৬: আল্লাহর রাহে আহত হওয়ার উৎকর্ষ

  1. আবু হুরায়রা(রাঃ) হতে বর্ণিত: রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর পথে যে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হবে – আর আল্লাহ জানেন কে তাঁর জন্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, বিচার দিবসে সে ঐ ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরতে থাকা অবস্থায় উপস্থিত হবে। এর রং হবে রক্তের ন্যায় আর এর ঘ্রাণ হবে মিশকের ন্যায়।” (বুখারী, মুসলিম)

ইবন দক্বীক আল-ঈদ : বিচার দিবসে আহত ব্যক্তির এই অবস্থা দুইটি ব্যাপারের দিকে ইঙ্গিত করে – এই ক্ষত সেই ব্যক্তির জন্য সাক্ষীস্বরূপ হবে। সমস্ত সৃষ্টির সম্মুখে এটা তার জন্য সম্মানের প্রতীক।

  1. আয়েশা(রাঃ) বলেন, যখনই আবু বকর(রাঃ) উহুদের দিনের কথা স্মরণ করতেন তখনই তিনি বলতেন, “ঐ দিনটি তালহার জন্য (তালহা বিন উবায়দুল্লাহ(রাঃ))। আমিই প্রথম রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে ফেরত গেলাম। কিন্তু দেখলাম একজন আগে থেকেই তার পাশে যুদ্ধরত আছে। আর আমি নিজেকে বললাম, ‘তালহার মত হও”। শেষে তিনি বলতেন, “সেদিন তালহা প্রায় ৭০টি স্থানে আঘাত পেয়েছিল এবং তার হাত কাটা পড়েছিল।” [ইবন মুবারাক, আল-হাকীম, ‘আল-হিলইয়া’ – তে আবু নাঈম, আল-বাযযার]
  2. উরওয়া বিন আল-যুবায়ের বলেছেন “আল-যুবায়েরের শরীরে তরবারির আঘাতের তিনটি ক্ষতচিহ্ন ছিল। একটা ছিল তার ঘাড়ে। সেটা এত বড় ছিল যে আমি এর ভেতর আমার আঙুল টুকাতে পারতাম। দুইটি ছিল বদর যুদ্ধের আর একটি ইয়ারমুকের যুদ্ধের।”
  3. আনাস বিন মালিক বলেছেন “ইয়ামামায় আবু আল-দিগানাহ নিজেকে দেয়ালের পেছনে ছুড়ে দেয়ায় তার পা ভেঙ্গে গেল, সে ঐ ভাঙ্গা পা নিয়েই যুদ্ধ করতে থাকে যতক্ষণ না সে মারা পড়ে।” (আলাম আল-নুবালা)
  4. মুয়ায বিন আমর বিন আল-জামুহ বলেছেন “বদরের দিনে আবু জাহলকে আমার লক্ষ্য নির্ধারণ করলাম যখন তাকে পেলাম তার দিকে ধাওয়া করলাম তরবারি দিয়ে আঘাত করে তার পা দুভাগ করে দিলাম। এরপর (তার ছেলে) ইকরিমাহ আমার ঘাড়ে আঘাত করল যতক্ষণ না সে আমার হাত কেটে ফেলল। এটা কেবল সামান্য চামড়ার দ্বারা আমার শরীর থেকে ঝুলতে লাগল। কিন্তু যতক্ষণ যুদ্ধ করেছি তার বেশিরভাগ সময়ই সেটা আমার শরীরের সাথে ঝুলছিল। এভাবে শরীরের সাথে ঝুলন্ত হাত নিয়ে চলাটা একসময় আমার কাছে এত বিরক্তিকর মনে হল যে, এর উপর পা দিয়ে চেপে ধরে টেনে ছিঁড়ে ফেললাম।”
  1. ইয়ামামার যুদ্ধের সময় সর্ব প্রথম যে যুদ্ধ ময়দান ত্যাগ করছিল সে ছিল আবু আকীল (আনসারদের একজন) তার ঘাড় ও হৃৎপিণ্ডের মাঝামাঝি অংশে একটি তীর আঘাত করলে সে আহত হয়। তাকে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। যুদ্ধ যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে মোড় নিতে থাকল সে শুনতে পেল যে মা’আন বিন আদি শক্র ধাওয়া করার জন্য আনসারদের প্রতি আহবান করছে। আবদুল্লাহ বিন উমর বলেন, “আবু আকীল উঠে দাঁড়াল। তো আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি কী করতে চাচ্ছ?’ সে বললো, “তারা আমাকে ডাকছে। আমি বললাম, ‘আহতদের তো ডাকছে না।’ সে বললো, ‘তারা আনসারদের ডাকছে, আর আমি আনসারদের একজন এবং হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আমি এই ডাকে সাড়া দিব।’ এরপর সে তার তরবারি দিয়ে যুদ্ধ ময়দানে গেল এবং ততক্ষণ যুদ্ধ করল যতক্ষণ না তার বাম হাত কাটা পড়ল। আমি বললাম, ‘আবু আকীল’ সে দুর্বল কণ্ঠে জবাব দিল, ‘হা, কে জিতল? আমি বললাম, ‘আল্লাহর শত্রুরা মারা গিয়েছে। সে তার আঙ্গুল উপরের দিকে উঠাল আল্লাহর প্রশংসা করল আর এরপর সে মৃত্যুবরণ করল। আমি আমার পিতা উমরকে এ ব্যাপারে অবহিত করলে তিনি বললেন, “আল্লাহর তার উপর দয়া করুন। সে শাহাদাতের খোজ করেছে যতক্ষণ না তা সে পেয়েছে। “ (আল-ওয়াকিদ)
  2. আবু হুযাইফার দাস সালিমকে বলা হলো যদি সে ভয় করে যে সে যুদ্ধের পতাকা ধরে রাখতে পারবে না, তাহলে সে যেন এটা অন্য কাউকে দিয়ে দেয়। সে জবাব দিয়েছিল, “যদি তাই হয় তবে আমি কুরআনের নিকৃষ্টতম ধারক (কুরআনের হাফেয)।” তার ডান হাত কেটে ফেলা হয়েছিল. এরপর বাম হাত দিয়ে পতাকা ধরে রেখেছিল। তার বাম হাত যখন কেটে ফেলা হল, তখন দুহাতের যা অবশিষ্টাংশ রয়ে ছিল তা দিয়েই পতাকা জড়িয়ে ধরে রাখছিল। আর উচ্চকণ্ঠে বলে যাচ্ছিল, “এবং মুহাম্মদ রাসূল ব্যতীত কিছুই নয়। নিশ্চয়ই তার পূর্বে রাসূলগণ বিগত হয়েছে। অনন্তর যদি তার মৃত্যু হয় অথবা তিনি নিহত হন তাহলে কি তোমরা পশ্চাৎপদে ফিরে যাবে? এবং যে কেউ পশ্চাৎপদে ফিরে যায় তাতে সে আল্লাহর কোন অনিষ্ট হবেনা এবং আল্লাহ কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার প্রদান করেন।”(আল-ইমরান: ১৪৪)। যখন সে মৃতপ্রায় সে তার সাথীদের জিজ্ঞাসা করল, “আবু হুদাইফার কী হল?” তারা বলল যে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। সে এরপর আর একজনের কথা জিজ্ঞাসা করল। তারা জবাব দিল যে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। সে বলল, “তাহলে আমাকে এ দুজনের মধ্যবর্তী স্থান কবর দিও।” (আল-মুবারাক)

[অতএব দেখতেই পাচ্ছেন যে সাহাবাদের বোধ এমনই ছিল যে যদি কেউ হাফেয বা আলেম হয়, তাহলে তাকে যুদ্ধের ময়দানে আরো বেশী দৃঢ়তা অবলম্বন করতে হবে]

  1. যায়দ বিন সাবিত বলেছেন উহুদের দিন রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সাদ বিন আল-রাবী – কে খুঁজতে পাঠালেন, আর যদি পাই তবে তাকে রাসূলের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম পৌছাতে বললেন ৷ আমি তাকে অনেক মৃতদেহের মাঝে ৯০টির মত আঘাতসহ মূমুর্ষ অবস্থায় পেলাম। তাকে বললাম, “রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে সালাম দিয়েছেন।” সে বলল, “রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে আমার সালাম আর তোমার প্রতিও সালাম। রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বলবেন আমি এখন জান্নাতের সুবাস পাচ্ছি। আর আমার কওম, আনসারদের বলবেন যে, ‘তোমাদের কোন অজুহাতই থাকবেনা যদি রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কোন ক্ষতি হয় আর তোমাদের একজনও যদি বেচে থাকে”।”এরপর সে মৃত্যুবরণ করল। (“আল-দলীল’ – এ আল-বায়হাকী, আল-হাকীম সহীহ সনদ)
  2. সাদ বর্ণনা করেন যে. সেতুর যুদ্ধের দিন তিনি এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন যার হাত পা সব কেটে ফেলা হয়েছিল এবং সে হামাগুড়ি দিয়ে তিলাওয়াত করছিল, “আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হয়, তারা ঐ ব্যক্তিদের সঙ্গী হবে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন অর্থাৎ নবীগণ সিদ্দীকগণ শহীদগণ ও সৎকর্মশীলগণ এবং এরাই সর্বোত্তম সঙ্গী।”(নিসা: ৬৯) কেউ একজন তাকে জিজ্ঞাসা করল, “আপনি কে?”তিনি বললেন, “আমি আনসারদের একজন।” [ইবন আল-মুবারাক]
  3. আবু আল-হাসান আল-মুরাদি থেকে বর্ণিত যে. আলী বিন বকর বলেছেন, “রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় আমি এক মুসলিমকে দেখলাম যার পরিপাক নালী পেট থেকে বের হয়ে ঘোড়ার জিনের উপর পড়ে গেল। সে এগুলোকে পেটের ভিতর ঢুকিয়ে এর চার দিকে তার পাগড়ীটা বেঁধে ফেলল। এরপর সে যুদ্ধ করতে থাকল এবং নিজে মারা যাওয়ার আগে দশেরও বেশি রোমান সৈন্য হত্যা করল।”

অধ্যায়ঃ ৭আল্লাহর জন্য অবিশ্বাসী/কাফির হত্যা করার উৎকর্ষ

আল্লাহ্ বলেন, “অতএব যখন তোমরা কাফিরদের সাথে যুদ্ধে মোকাবিলা কর তখন তাদের গর্দানে আঘাত কর –  –  –  – ।” (মুহাম্মাদঃ ৪)

  1. আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “একজন অবিশ্বাসী এবং তাকে যে হত্যা করবে, এদের দু’ জনকে কখনই জাহান্নামে একত্রিত করা হবে না।” (মুসলিম)

অন্যভাবে বলতে গেলে, কাফিরকে হত্যার জন্য একজন মুসলিমকে এতটাই পুর®কৃত করা হয়, যে আল্লাহ্ তাকে কাফিরের সাথে জাহান্নামে একত্রিত করে কখনই অসম্মানিত করবেন না।

  1. আনাস বিন মালিক (রাঃ) তাঁর ভাইকে একটি কবিতা গুণগুণ করে যেতে শুনে বলল, ভাই আমার! তুমি কবিতা আবৃতি করছ? যদি এমন হয় যে এটাই তোমার শেষ কথা হয়? [যখন কুরআন নাযিল হত, সাহাবারা কুরআন ছাড়া অন্য কিছু আবৃত্তি/ উচ্চ কণ্ঠে মুখস্থ বলা পছন্দ করতেন না। আনাস তার ভাইকে হুশিয়ার করে দিচ্ছিল যে, যদি এই মূহুর্তেই তার মৃত্যু ঘটে এবং এই কবিতা হয় তার মুখনিঃসৃত শেষ কথা, তাহলে সে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে কীভাবে? অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি ভাইকে আল্লাহকে স্মরণ করতে বললেন। আল-বারা বললেন, “না! আমার মত মানুষ বিছানায় শুয়ে মরতে পারে না। আমি ৯৯ জন কাফির এবং মুনাফিক হত্যা করেছি।”(মুসান্নাফ ইবনে আবু শায়াবাহ)
  2. উমর (রাঃ) তার বাহিনীর/ আর্মির সেনাপতিদের কাছে পত্রে লিখেছিলেন যেন তারা আল-বারাকে নেতৃত্বস্থানীয় কোন পদ না দেয়। এর কারণ হিসেবে উমর বলেন যে, সে মুসলিমদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।”(আল-হাকীম)
  3. মিথ্যাবাদী মুসায়লামার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় সে একটি ঢালের উপর বসে, মুসলিমদের বলেছিল তারা যেন তাদের বর্শায় করে সেই ঢাল বহন করে তাকে দেয়ালের ওপাশে নিক্ষেপ করে, যাতে সে ভিতর দিয়ে প্রবেশদ্বার খুলে দিতে পারে। দরজা অবশ্য সে খুলতে পেরেছিল, তবে তার আগে সে ৮০টির ও বেশি আঘাত পেয়েছিল।
  4. আনাস হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “এমন একজন মানুষ যার চুল হয়তো উশকো – খুশকো, কাপড় অপরিচ্ছন্ন/ ধূলিময় যাকে হয়তো কেউ কোন আমলই দেয় না, অথচ সে যদি কোন শপথ করে, আল্লাহ্ তার জন্য তা পূর্ণ করে দেন। এদের একজন হল আর বারা বিন মালিক।”(তিরমিযী – আল-হাকিম)
  5. তস্তুরের যুদ্ধের দিন মুসলিমরা আল-বারাকে শপথ গ্রহণ করতে বলল যেন তাদেরকে বিজয় দেয়া হয়। আল-বারা বলেন, “ও আল্লাহ্! আমি শপথ করছি যেন আপনি আমাদের বিজয় দেন এবং আমাকে আপনার নবীর অনুসরণ করান (মৃত্যুর মাধ্যমে)।” সে শত্রুদের ধাওয়া করল এবং মুসলিমরা তাকে অনুসরণ করল। পারস্য বাহিনী পরাজিত হল আর আল-বারা শহীদ হলেন। আল্লাহ্ তাঁর শপথ পূর্ণ করলেন।
  6. আনাস বর্ণনা করেন, যখন আবু মুসাকে বসরার গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়া হল, তিনি আল-বারাকে তার শাসন বিভাগে নেতৃত্বস্থানীয় যে কোন পদ বেছে নিতে বললেন। আল-বারা বললেন, “আমি এগুলোর ১টিও চাইনা। বরং আপনি আমাকে আমার ধনুক, ঘোড়া, বর্শা, তলোয়ার এবং ঢাল দিন এবং আমাকে জিহাদে পাঠান।” উনি তাকে জিহাদে পাঠিয়ে দিলেন। আল-বারাই সর্বপ্রথম মৃত্যু বরণ করেছিল। (ইবন আবু শায়বান)
  7. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুনায়নের যুদ্ধের দিন বলেন, “যে কেউ একজন কাফিরকে হত্যা করবে, সে তাকে/ তার সম্পদ লুট করতে পারবে।” আবু তালহা সে দিন ২০জন কাফির হত্যা করেছিল আর তাদের প্রত্যেককেই লুট করেছিল। (আবু দাউদ – আল-হাকিম)

অধ্যায়ঃ ৮ – শাহাদাহ-র উদ্দেশ্যে বা শত্রুদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কুফফারদের বিশাল বাহিনী/আর্মিতে একজন ব্যক্তি বা ছোট কোন দলের ঝাঁপিয়ে/ঢুকে পড়ার গুণাবলী

আল্লাহ্‌ বলেন:

“যারা বিশ্বাস করত যে তাদেরকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে, তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাজিত করেছে। বস্তুতঃ ধৈর্যশীলদের সঙ্গী হচ্ছেন আল্লাহ।” (সূরা বাকারাহঃ ২৪৯)

আল্লাহ্‌ (সুবঃ) আরও বলেন:

“পক্ষান্তরে কোন কোন লোক এরূপ আছে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি সাধনের জন্য আত্ম বিসর্জন করে (self himself) এবং আল্লাহ হচ্ছেন সমস্ত বান্দার প্রতি স্নেহপরায়ণ।” (সূরা বাকারাহঃ ২০৭)

  1. মুদরিক বিন আউফ বলেছেনঃ আমি তখন উমার (রাঃ) – এর সাথে ছিলাম যখন তার কাছে আল-নুমান বিন মাকরানের পক্ষ থেকে একজন দূত এলো। উমার (রাঃ) তার সৈন্যদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সেই দূত কেবল কিছু সুপরিচিত ব্যক্তির মৃত্যুর কথা উল্লেখ করতে থাকলেন এবং এরপর বললেন আরও কিছু ব্যক্তি মারা গিয়েছে যাদের আমি চিনিনা। উমার (রাঃ) বললেনঃ “কিন্তু আল্লাহ্‌ তাদের চিনেন”। দূত বলল, “আর কিছু ব্যক্তি, যারা আত্ম বিসর্জন দিয়েছে (sold)। [আল-মুসাননাফ, সহীহ সনদ]
  2. পূর্ব (দিক) থেকে কাফেরদের এক বিরাট বাহিনী আসলে আনসারদের একজন ব্যক্তির সাথে তারা মুখোমুখি হয়। সে একাই তাদের দিকে ধেয়ে এলো এবং তাদের সৈন্য – সারি ভেদ করে ভেতরে ঢুকে পড়ল। এভাবে সে ঐ বাহিনীর অপর দিকে বেরিয়ে এলো। এরপর সে পেছন থেকে তাদের বাহিনীতে ঢুকে পড়ল এবং তাদের সৈন্য – সারি ভেদ করে সামনের দিক থেকে বেরিয়ে এলো, এরকম সে ২/৩ কার করল (দুই বা তিনবার সে এর পুনরাবৃত্তি করল)। সা’দ বিন হিশাম আবু হুরায়রার কাছে এর উল্লেখ করলে তিনি তিলাওয়াত করলেন, “এবং কোন কোন লোক এরূপ আছে যে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি সাধনের জন্য আত্ম বিসর্জন করে (self himself) এবং আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের প্রতি স্নেহপরায়ণ।”(সূরা বাকারাহঃ ২০৭) [আল-মুসান্নাফ)

আসলাম আবি ইমরান বলেছেন, মদিনা থেকে কনস্টান্টিনোপল (ইস্তাম্বুল) অভিমুখী এক বাহিনীর মধ্যে আমরা ছিলাম। এই বাহিনীর প্রধান/ সেনাপতি ছিলেন আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন আল-ওয়ালীদ। রোমানদের বাহিনীর পিছনে ছিল সেই শহরের প্রবেশদ্বার। আমাদের মধ্য থেকে একজন হঠাৎ করে তাদের দিকে তেড়ে গেল। কেউ কেউ বলতে লাগল, “আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ্‌ নেই, সে তো নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত করল বা সে তো নিজের ধ্বংস ডেকে আনল।” আবু আইয়্যুব আল-আনসারী (একজন সাথী/ সাহাবী) বললেন, “এই আয়াতটি আমাদের অর্থাৎ আনসারদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছিল। যখন আল্লাহ্‌ তাঁর রাসূলকে বিজয় দিলেন এবং ইসলাম প্রভাবশালী হল তখন আমরা বলেছিলাম চলো আমরা আমাদের (পূর্বের) ব্যবসা বাণিজ্যে ফিরে যাই এবং সেগুলোর প্রতি যত্নশীল হই বা সেগুলোতে মনোনিবেশ করি। আল্লাহ্‌ তখন উক্ত আয়াত নাযিল করলেন, “এবং তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না এবং কল্যাণ সাধন করতে থাক, নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ কল্যাণ সাধনকারীদের ভালবাসেন।”(সুরা বাকারাহঃ ১৯৫)

অতএব, নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া মানে হচ্ছে জিহাদ ছেড়ে দিয়ে খামার/ কৃষিকার্যে ও ব্যবসা – বাণিজ্যে ফিরে যাওয়া।

আবু ইমরান বলেছেনঃ আবু আইয়ুব জিহাদেই পড়ে থাকলেন যতক্ষণ না তাকে ইস্তাম্বুলে সমাহিত করা হয়। (আবু দাউদ, তিরমিযী, আল-হাকিম)

  1. মুজাহিদ বলেছেনঃ আল্লাহর রাসূল (সা) কেবল দুজনকে, আব্দুল্লাহ্‌ বিন মাস’উদ (রাঃ) এবং খাব্বাব (রাঃ) – একটি বাহিনী হিসেবে পাঠালেন এবং তিনি দিহইয়াহকে একাই একটি বাহিনী রূপে পাঠালেন। (আল-সুনান আল-কুবরা)
  2. আল-শাফি’ঈ (রহঃ) বলেছেনঃ মাউনাহ’র কুয়ার পাশে সাহাবাদের যখন হত্যা করা হয় তখন আনসারদের একজন অনেক পেছনে ছিল। যতক্ষণে সে পৌঁছালো, শকুনের দল তার সাথীদের গিলছিল। সে আমর বিন উমাইয়াহকে বলল, “শত্রুবাহিনীর মুখোমুখি হতে আমি একাই চললাম, যাতে তারা আমাকে হত্যা করতে পারে। আমাদের সাথীরা যেখানে সবাই মারা গেছে সেখানে আমি বেচে থাকতে চাই না। যখন আমর বিন উমাইয়াহ্‌ (এই ঘটনার একমাত্র জীবিত ব্যক্তি) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করল, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে ব্যক্তি সম্পর্কে অনেক ভাল মন্তব্য করলেন এবং সেই সাথে আমর বিন উমাইয়াহকে বললেন, “তুমিও কেন তার সাথে এগিয়ে গেলে না?” (আল-সুনান আল-কুবরা)
  3. রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “এমন সময় আসবে যখন মানবজাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এমন একজন হবে যে কিনা সর্বদা আল্লাহর জন্য তার ঘোড়ার লাগাম ধরে থাকবে, যখনই সে যুদ্ধের ডাক শুনবে, সে ঘোড়া ছুটিয়ে মৃত্যুর সন্ধান করবে।” (আবু উওয়ানাহ)
  4. ইবন মাস’উদ বর্ণনা করেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ্‌ দু’জন বা দু’ধরনের মানুষ দেখে চমৎকৃত হন। তাদের একজন হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে কিনা (আল্লাহর পুরষ্কারের জন্য ব্যগ্র/ তীব্র আকাঙ্ক্ষী এবং শাস্তির ভয়ে ভীত হয়ে সালাত আদায়ের জন্য) তার আরামদায়ক বিছানা থেকে উঠে পড়ে। আর দ্বিতীয় রকম ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতে গেল, কিন্তু তার সাথী যুদ্ধক্ষেত্রে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। সে যুদ্ধক্ষেত্রে পৃষ্ঠপ্রদর্শনের শান্তি এবং যুদ্ধক্ষেত্রে অটল/ দৃঢ় থাকার পুরষ্কার অনুধাবন করে নিজের রক্ত ঝরাতে যুদ্ধে ফিরে এলো। আল্লাহ্‌ তখন বলেন, “আমার এই বান্দাকে দেখ! সে আমার পুরষ্কারের তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও আমার শাস্তির ভয়ে যুদ্ধে ফিরে গেল যতক্ষণ না তার রক্ত ঝরানো হল। (আহমেদ – সহীহ, আল-মুসান্নাফ – তাবারানী)

শত্রুবাহিনীতে ঝাঁপিয়ে পড়া/ ঢুকে পড়ার উৎকৃষ্টতা নিয়ে যদি অন্য কোন হাদিস না থাকত, তবে এ হাদিসটিই যথেষ্ট হত।

  1. সালামা বিন আল-আকওয়া হতে বর্ণিতঃ আমরা মদিনায় ফিরে আসার পথে এক জায়গায় সাময়িক ভাবে থামলাম, যেখানে আমাদের ও বনু লিহয়ান (মুশরিক) এর মাঝে একটা পাহাড়/ পর্বত ছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করলেন যে কিনা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবাদের জন্য রাতের বেলা পর্বতারোহণ করে তথ্য সন্ধান করবে। আমি সে রাতে ২ – ৩ বার (পর্বত) আরোহণ করেছিলাম, (অবশেষে) আমরা মদিনায় পৌঁছালাম। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দাস, রাবাহ’র সাথে তাঁর উটগুলো পাঠালেন, সঙ্গে আমিও ছিলাম। আমি তালহার ঘোড়াসহ উটগুলো চারণভূমিতে নিয়ে গেলাম। ভোরবেলা আবদু আল-রহমান আল-ফাযারী আকস্মিকভাবে হানা দিয়ে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমস্ত উট নিয়ে চলে গেল এবং যে এগুলোর তত্ত্বাবধানে ছিল তাকে হত্যা করল। আমি বললামঃ রাবাহ, এই ঘোড়াটি তালহা বিন উবায়দিল্লাহর কাছে নিয়ে যাও আর রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খবর দাও যে তাঁর সমস্ত উট মুশরিকরা ভাগিয়ে নিয়ে গেছে। এরপর আমি একটি টিলার মদিনার দিকে মুখ করে দাড়িয়ে তিনবার আহবান করলামঃ আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন। এরপর আমি আক্রমণকারীদের খোজে বের হয়ে পড়লাম এবং তাদের দিকে তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম ও কবিতা আবৃতি করতে লাগলাম –

আমি আল-আকওয়ার পুত্র

আর আজ হীন জাতির পরাজয়ের দিন

আমি ওদের একজনকে পাকড়াও করে তার ঘাড়ে তীর নিক্ষেপ করলাম।

আর বলতে লাগলাম – কেমন লাগে? একই সাথে আবৃতি করতে থাকলাম –

আমি আল-আকওয়ার পুত্র

আর আজ হীন জাতির পরাজয়ের দিন

আমার রবের শপথ! আমি তাদের দিকে তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম আর তাদের পশু/ জন্তুগুলোকে খোঁড়া করে দিতে থাকলাম। যখনই কোন ঘোড়সওয়ার আমার উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করতো, আমি কোন একটা গাছের গুড়ির কাছে বসে যেতাম (এবং নিজেকে লুকিয়ে ফেলতাম)। এরপর আমি তার দিকে (তীর) নিক্ষেপ করতাম এবং তার ঘোড়াকে খোঁড়া করে দিতাম। (অবশেষে) তারা একটি সরু গিরিসঙ্কটে ঢুকে পড়ল। আমি সেই পর্বতে আরোহণ করে তাদের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে তাদের আমার নিকটে আসতে দিলাম না। এভাবে আমি ক্রমাগত তাদের ধাওয়া করতে থাকলাম যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সবগুলো উটই উদ্ধার করলাম এবং তাদের কাছে আর একটিও অবশিষ্ট ছিল না। এরপর আমি (ক্রমাগত) এদের দিকে তীর নিক্ষেপ করতে করতে তাদের অনুসরণ করতে থাকলাম, যতক্ষণ তারা নিজেদের বোঝা কমানোর জন্য ৩০টিরও বেশি আলখাল্লা (mantle) ও ৩০টি বল্লম ফেলে দিল। তারা যা কিছু ফেলে গেল তার উপর পাথর দিয়ে আমি চিহ্ন দিলাম যাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবারা এগুলো (গণিমতের মাল হিসেবে) চিনতে পারেন। (তারা চলতে লাগল) যতক্ষণ না তারা একটি সরু উপত্যকায় পৌঁছাল এবং অমুক অমুক লোক আর বদর আল-ফাযারীর পুত্র তাদের সাথে যোগ দিল। এরপর তারা নাশতা করতে বসল আর আমি ক্রমশঃ সরু হওয়া একটা পাহাড়ের উপর বসলাম। আল-ফাযারী বলল, “কে ঐ ব্যক্তি যাকে আমি দেখতে পাচ্ছি?” তারা বলল, “এই ব্যক্তি আমাদের হয়রান করেছে। রবের শপথ! সন্ধ্যা থেকে (একবারের জন্যও) সে আমাদের ছাড়েনি (অর্থাৎ পিছে লেগে আছে) এবং ক্রমাগত আমাদের দিকে (তীর) নিক্ষেপ করে চলেছে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আমাদের সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে। সে বলল, “তোমাদের মধ্য থেকে ৪ জন তার দিকে প্রচন্ড বেগে ছুটে যাও (এবং তাকে হত্যা কর)। ৪ জন পর্বতারোহণ করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকল। যখন তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হল, আমি বললামঃ আমাকে চিনতে পারছ? তারা উত্তর দিলঃ না, কে তুমি? আমি বললামঃ আমি সালামা, আল-আকওয়ার পুত্র। সেই সত্তার শপথ! যিনি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সম্মানিত করেছেন, আমি তোমাদের যাকে ইচ্ছা তাকে হত্যা করতে পারি, কিন্তু তোমরা আমাকে হত্যা করতে পারবে না। তাদের একজন বললঃ আমার মনে হয় (সে ঠিকই বলেছে)। অতঃপর তারা ফিরে চলল। আমি আমার জায়গা থেকে নড়লাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর অশ্ববাহিনীকে গাছের মধ্য দিয়ে আসতে দেখলাম। দেখ! আকরাম আল-আসাদী ছিলেন তাদের অগ্রবর্তী। তার পিছনে ছিল আবু কাতাদাহ আল-আনসারী এবং তার পিছনে আল-মিকদাদ বিন আল-আসওয়াদ আল-কিনদী। আমি আকরামের ঘোড়ার লাগাম ধরে ফেললাম। (এটা দেখে) তারা (আক্রমণকারীরা) পালিয়ে গেল। আমি (আকরামকে) বললামঃ আকরাম, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীরা তোমার সাথে যোগ দেয়া পর্যন্ত ওদের থেকে নিজেকে রক্ষা কর। সে বলল, সালামা, যদি তুমি আল্লাহ্‌ এবং বিচার দিবসে বিশ্বাস রাখ আর (যদি) জান যে জান্নাত (যেমন) সত্য, তার আমার ও শাহাদাহর মাঝে বাধা হওয়া তোমার উচিৎ হবে না। অতঃপর আমি তাকে যেতে দিলাম। আকরাম এবং আবদ আল-রহমান (ফাযারী) দ্বন্দ্বযুদ্ধ বা লড়াইয়ে মিলিত হল।আকরাম আবদ আল-রহমান এর ঘোড়াকে খোঁড়া করে দিল আর ফাযারী আকরামকে বল্লম দ্বারা আঘাত করে তাকে হত্যা করল।আবদ আল-রহমান আকরামের ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে দাঁড়াল। আবু ক্বাতাদাহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অশ্ববাহিনীর একজন আবদ আল-রহমানের সাথে লড়াইয়ে নিয়োজিত হয়ে বল্লম দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত হানলে তাকে হত্যা করল। সেই সভার শপথ যিনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সম্মানিত করেছেন, আমি (এত দ্রুত) দৌড়িয়ে তাদের অনুসরণ করতে থাকলাম যে, পেছনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সাহাবাদেরও দেখতে পেলাম না, এমনকি তাদের ঘোড়ার উড়ানো ধুলিও নয়। (আমি তাদের অনুসরণ করতে থাকলাম) যতক্ষণ না সূর্যাস্তের আগে তারা একটি উপত্যকায় পৌঁছাল যেখানে একটি ঝর্ণা ছিল, যাতে তারা পানি পান করতে পারে কেননা তারা অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত ছিল। তারা আমাকে তাদের দিকে দৌড়ে যেতে দেখল। তারা এক ফোটা পানি খাওয়ার/ পান করার আগেই আমি তাদের সেই উপত্যকা থেকে বের করে দেই। তারা উপত্যকা ছেড়ে একটা ঢাল বেয়ে দৌড়ে নামতে থাকল। আমি (তাদের পেছন পেছন) দৌড়াতে থাকলাম ও তাদের একজনকে পাকড়াও করে তার কাঁধের হাড় বরাবর একটি তীর নিক্ষেপ করে বললামঃ নাও, সহ্য কর। আমি আল-আকওয়ার পুত্র আর আজই সেই দিন যখন হীন জাতি ধ্বংস হবে। (আহত ব্যক্তি) বললঃ তার মা তার জন্য বিলাপ করুক! তুমি কি সেই আকওয়া, যে কিনা সকাল থেকে আমাদের ধাওয়া করছে? আমি বললাম, ”হাঁ। সেই একই আকওয়া।” তারা টিলার উপর দু’টি ভীষণ ক্লান্ত ঘোড়া রেখে গিয়েছিল আর আমি তাদের হেচড়িয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এ কাছে নিয়ে এলাম, আমিরের সাথে দেখা হল, যার সাথে এক পাত্রে ছিল পানি মিশ্রিত পাতলা দুধ এবং অপর পাত্রে ছিল পানি। আমি পানি দিয়ে অযু করলাম ও দুধটুকু পান করলাম। এরপর আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকট আসলাম যখন তিনি এ ঝর্ণার ওখানে বসে ছিলেন যেখান থেকে আমি ওদের বের করে দিয়েছিলাম রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমস্ত উট এবং যা কিছু আমি জিতে নিয়েছিলাম, সেই সাথে সমস্ত আলখাল্লা ও বর্শা – বল্লম হস্তগত করলেন আর আমি তাদের থেকে যেসব উট কুক্ষিগত করেছিলাম, তা থেকে বিলাল (রাঃ) একটি মাদী – উট জবাই/ যবেহ করে তার কলিজা ও কুজ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর জন্য আগুনে পুড়িয়ে রাঁধছিল। আমি বললামঃ হে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের লোকদের মধ্য থেকে ১০০ জনকে বেছে নেয়ার অনুমতি দিন আমাকে এবং আমি এ ডাকাতদের পিছন পিছন গিয়ে তাদের শেষ করে দিব যাতে করে (ওদের মৃত্যুর/ ধ্বংসের) খবর (ওদের লোকদের কাছে) পৌঁছে দেবার মত কেউ – ই না থাকে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমার এ কথা শুনে) এত হাসলেন যে আগুনের আলোয় তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দেখা গেল।তিনি বললেনঃ সালামা, তোমার মনে হয় তুমি এটা করতে পারবে? আমি বললামঃ জ্বি, সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সম্মানিত করেছেন। তিনি বললেনঃ এখন তারা গাতফানে পৌঁছে গেছে, সেখানে তাদের আপ্যায়ন করা হচ্ছে। (এমন সময়) গাতফান থেকে এক লোক এলো এবং সে বলল, অমুক অমুক ব্যক্তি ওদের জন্য একটি উট জবাই করেছে। যখন ওরা এর চামড়া ছাড়াচ্ছিল তারা দেখল যে (দূরে) ধূলা উড়ছে। তারা বললঃ ওরা (আকওয়া ও তার সাথীরা) এসেছে। অতঃপর তারা পালিয়ে গেল। যখন সকাল হল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আজ আমাদের সবচেয়ে পারদর্শী ঘোড়া সওয়ার হচ্ছে আল-ক্বাতাদাহ আর সবচেয়ে দক্ষ পদাতিক সৈনিক হচ্ছে সালামা তিনি এরপর আমাকে গণীমতের মালের দুই অংশ দিলেন – এক অংশ ঘোড়সওয়ারের জন্য আর এক অংশ পদাতিক সৈন্যের জন্য, এরপর (আমার জন্য) দুই অংশ একত্রিত (করলেন) করে আমাকে দিলেন। (আহমদ, মুসলিম)

সালামাহ যে ১০০ জন সাথীর জন্য আবেদন করেছিল এতেই বুঝা যায় যে শক্ররা কত অধিক সংখ্যক ছিল কেননা তা না হলে সে ১০০ জনের জন্য আবেদন করত না।

  1. আল-আলা বিন আল-হাযরামি বলেন, “বিসর বিন আরতা’আহ রোমানদের শহর/ নগরী আক্রমণ করল। কিন্তু তার বাহিনীর পশ্চাদংশ সারাক্ষণই শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছিল এবং যখনই তিনি শত্রুদের জন্য কোন ফাঁদ পাততেন, তার নিজস্ব সৈন্যরাই বরং আক্রান্ত হত। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ১০০জন সৈন্য নিয়ে তিনি পিছনে রয়ে যাবেন যাতে তিনি বের করতে পারেন কারা লুকিয়ে থেকে হঠাৎ করে তাদের আক্রমণ করছিল। একদিন তিনি একা একটি উপত্যকায় গেলেন এবং দেখলেন একটি উপাসনালয়ের বাইরে ৩০টি ঘোড়া বাধা রয়েছে আর এদের সওয়ারী সেনারা ভেতরে। তিনি ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন দিলেন যাতে ওরা বেরিয়ে যেতে না পারে। তিনি একাই ওদের সাথে লড়তে লাগলেন এবং তারা তাদের অস্ত্র হাতে নেয়ার আগেই তিনি তিনজনকে হত্যা করে ফেললেন। যখন বিসরের সৈন্যরা আবিষ্কার করল যে তিনি নেই, তারা তাকে খুঁজতে বের হল এবং সেই উপাসনালয়ে এসে তার ঘোড়াটি দেখতে পেল। এর ভেতর থেকে আসা শব্দও শুনলে তারা। তারা এর ভেতর ঢুকতে চেষ্টা করল কিন্তু দরজা বন্ধ ছিল বিধায় ছাদের ঢালি সরিয়ে উপর দিয়ে ঢুকল। তারা দেখল, তিনি এক হাতে তলোয়ার দিয়ে ওদের সাথে লড়ে যাচ্ছেন, আর অন্য হাত দিয়ে নিজের পরিপাক নালী ধরে আছেন, যা রের হয়ে আসছিল। এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। তার সৈন্যরা লড়াই চালিয়ে গেল যতক্ষণ না কিছু মারা পড়ল আর বাকীরা বন্দী হলো। বন্দীরা সেই সেনাদের জিজ্ঞাসা করল, “ঈশ্বর এর নামে তোমাদের জিজ্ঞাসা করছি! কে এই লোক?” তারা বললঃ “ইনি হচ্ছেন বিসর বিন আরতা’আহ রোমান knight রা বলল, “ঈশ্বরের নামে বলছি, কোন কালেই এর মত কাউকে কোন মহিলা জন্ম দেয়নি!” সৈন্যরা এরপর তার ঝুলে থাকা নাড়ী পেটের ভেতর ঢুকিয়ে দিল, কেননা নাড়ীর কোন অংশেই ফুটা হয়েছিল না। তারপর নিজেদের পাগড়ি দিয়ে উনার পেট জড়িয়ে ফেলে তাকে বহন করে নিয়ে চলল এরপর তার পেট সেলাই করা হল এবং তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। (আবু হাজ্জাজ আল-মুখী এবং অন্যরা)

বিসর একজন সাহাবী ছিলেন না তাবীঈ ছিলেন – এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। তিনি এ জাতির সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তিদের একজন ছিলেন।

  1. আল-বারা বিন আযীব বর্ণনা করেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আব্দুল্লাহ বিন আতিক ও আব্দুল্লাহ বিন উতবাহকে একদল লোকসহ আবু রাফি’র কাছে পাঠালেন (তাকে হত্যা করার জন্য)। যেতে যেতে তারা তার দূর্গের কাছে এলে, আব্দুল্লাহ্‌ বিন আতিক বলল, (এখানে) অপেক্ষা কর, ততক্ষণে আমি একটু গিয়ে দেখে আসি। পরে আব্দুল্লাহ্‌ বলেছিলেন, “দূর্গে ঢোকার জন্য আমি একটি কৌশল অবলম্বন করে ছিলাম। সৌভাগ্যবশতঃ তাদের একটি গাধা হারিয়ে গেলে, তারা সেটা খুঁজতে মশাল নিয়ে বাইরে এলো। আমি ভয় পাচ্ছিলাম, পাছে তারা আমাকে চিনে ফেলে, তাই আমার মাথা, পা ঢেকে ফেললাম ও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার ভান করলাম। দ্বাররক্ষী ডাক দিল, “যে কেউ ভেতরে ঢুকতে চায়, সে যেন (এখনই) ঢুকে পড়ে আমি দরজা লাগিয়ে দেয়ার আগেই। অতঃপর আমি ঢুকে পড়লাম এবং দুর্গের দরজার কাছে গাধার (আস্তাবল) – এ লুকিয়ে থাকলাম। তারা আবু রাফির সাথে রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে গভীর রাত পর্যন্ত গল্প – গুজব করল। এরপর তারা যার যার বাড়িতে চলে গেল। যখন আর কোন গলার স্বর শোনা যাচ্ছিল না কোন নড়াচড়াও লক্ষ্য করলাম তখন আমি বেরিয়ে এলাম। আমি দেখে নিয়েছিলাম, দ্বাররক্ষী দেয়ালের একটি ছিদ্রে চাবি রেখে গিয়েছে। চাবি দিয়ে দূরের দরজা খুললাম আর নিজেকে বলতে থাকলাম, যদি কেউ বুঝে ফেলে, আমি সহজেই পালিয়ে যেতে পারব”। এরপর লোকেরা ভিতরে থাকা অবস্থায় আমি বাইরে থেকে এ বাড়ির সমস্ত দরজা বন্ধ করে দিলাম এবং সিঁড়ি দিয়ে আবু রাফির (ঘরের) দিকে গেলাম। বাড়ির সমস্ত লাইট বন্ধ থাকায় সব ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল এবং (আবু রাফি) কোথায় তা বুঝতে পারছিলাম না। অতঃপর আমি ডাক দিলাম, “ওহে আবু রাফি!” সে উত্তর দিল, “কে?” আমি সেই কণ্ঠস্বর অনুসরণ করে এগুলাম এবং তাকে আঘাত করলাম। সে জোরে চিৎকার করে উঠল কিন্তু আমার আঘাত বৃথা গেল। এরপর আমি তাকে সাহায্য করার ভান করে তার কাছে গেলাম এবং কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে বললাম, “ওহে আবু রাফি কী হয়েছে তোমার?” সে বলল, “তুমি কি অবাক হচ্ছ না? তোমার মা ধ্বংস হোক! এক লোক এসে আমাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করেছে।” এরপর আমি আবারও তাকে লক্ষ্য করে আঘাত করলাম, কিন্তু এবারও সেটা বৃথা গেল। আর এবার আবু রাফি আরও জোরে চিত্কার করে উঠল এবং তার স্ত্রী উঠে এলো। আমি আবারও তার কাছে গেলাম কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে, যেন আমি তাকে সাহায্য করতে এসেছি। আবু রাফিকে সোজা হয়ে পিঠের উপর শুয়ে থাকতে দেখে তার পেটে তলোয়ার ঢুকিয়ে দিয়ে তার উপর ভর দিয়ে বাঁকা হয়ে গেলাম যতক্ষণ না হাড় ভেঙে যাওয়ার শব্দ শোনা গেল। এরপর আমি তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এলাম এবং সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গেলাম আর এতে আমার পায়ের হাড় স্থানচ্যুত হল। পা ব্যান্ডেজ করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আমার সাথীদের নিকটে গেলাম। (ওদের) বললাম, “যাও, আর আল্লাহর রাসূলকে এই সুসংবাদ পৌঁছিয়ে দাও। তবে যতক্ষণ না তার মৃত্যুর সংবাদ পাই (এখান থেকে) আমি যাব না।” যখন ভোর হল, দেয়ালের উপর একজন মৃত্যুসংবাদ ঘোষণাকারী দাড়িয়ে ঘোষণা দিল, “আমি আপনাদেরকে আবু রাফির মৃত্যুর খবর জানাচ্ছি।” এরপর আমি উটে রওয়ানা হলাম কোন ব্যথা অনুভব না করেই, আর আমার সাথীরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে পৌঁছানোর পূর্বেই তাদের ধরে ফেললাম এবং তাঁকে (রাসূলকে) সুসংবাদটি আমিই দিলাম।” (বুখারী)

কাদিসিয়াহর যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল সাত হাজারের কিছু বেশি আর কাফিররা ছিল চল্লিশ বা ৭০ হাজার ও ৭০ টি হস্তী।

  1. সিরাজ আল-মালুকে আল-তারতুশী উল্লেখ করেছেন যে আমর বিন মাদী ইয়াকরিক নদীর ধারে গিয়ে তার সাথীদের বললেন, “এখন আমি সেতুটি পার হব। একটি উট যবেহ করতে যে সময় লাগে সে সময় পর যদি তোমরা আমাকে অনুসরণ করে আস তার তবে দেখবে যে শত্রুরা আমাকে ঘিরে রেখেছে আর আমি মাঝে দাড়িয়ে আছি এবং আমি তরবারি নিয়ে যে কেউ আমার সামনে পড়বে তার সাথেই লড়ছি। আর তোমরা যদি এর চেয়ে দেরী কর, তবে এসে আমাকে মৃত পাবে।” এরপর তিনি সেতু পার হয়ে শক্র ক্যাম্পের দিকে চলে গেলেন। এর কিছুক্ষণ পর তার লোকেরা বলল, “হে যাবিদের সন্তানরা! আমরা কি আমাদের লোককে একা ছেড়ে দিব? আমরা তাকে জীবিত নাও পেতে পারি।” অতঃপর তারা সেতু পার হয়ে দেখল যে তিনি ঘোড়াহীন অবস্থায় শত্রুদের এক জনের ঘোড়ার পেছনের দুই পা ধরে রেখেছে যাতে ঘোড়াটি নড়তে না পারে। আর ঘোড়সওয়ারী অনেক চেষ্টা করছিল তার তরবারি দিয়ে আমরকে পিছন দিয়ে আঘাত করতে, কিন্তু কোন লাভ হল না। যখন সে আমাদের আক্রমণ করতে দেখল তখন সে ঘোড়া থেকে নেমে পালিয়ে গেল। আমর সেই ঘোড়ায় চড়ে বসলেন। এরপর বললেন, “তোমরা আর একটু হলেই আমাকে হারাতে।” তারা জিজ্ঞাসা করল, “তোমার ঘোড়া কোথায়? তিনি বললেন, “তাকে (একটি) তীর বিদ্ধ করলে সে মারা যায় আর আমি তার পিঠ থেকে পড়ে যাই।”
  2. সিরাজ আল-মালুকে আল-তারতুশী এবং আল-কুরতুবী তার ইতিহাসে বর্ণনা উল্লেখ করেন যে তারেক বিন যিয়াদ ১৭০০ সৈন্যসহ আন্দালুসিয়া ঢুকে পড়লেন। তাথফীর ছিল লাখবীকের প্রতিনিধি এবং সে তারিকের ও তার বাহিনীর সাথে টানা ৩ দিন যুদ্ধ করল। সে লাথরীককে একটা চিঠি পাঠাল যে কিছু মানুষ আমাদের এলাকায় ঢুকে পড়েছে এবং আমি জানিনা এরা এই দুনিয়ার লোক নাকি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। ওদের সাথে একা যুদ্ধ করার কোন ক্ষমতাই আমাদের নেই। অতএব আমাদের সাহায্যের জন্য আপনারা নিজেরাই এখানে আসুন। লাথরীক প্রায় ৯০, ০০০ সৈন্য উপস্থিত হল। তারা মুসলিমদের সাথে আরও তিনদিন যুদ্ধ করে গেল। মুসলিমদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে এলে তারিক বললেন, “তোমাদের তরবারি ছাড়া আর কোথাও কোন আশ্রয়/ আশা নেই। তোমরা শত্রু এলাকার মধ্যে আর পিছনে সাগর এ অবস্থায় তোমরা কোথায় যাবে? দাড়াও, আমি এমন ব্যবস্থা করব যাতে হয় বিজয় আসে নাহলে মৃত্যু। তারা বলল, “আপনি কী করবেন?” তিনি বললেন, “আমি সরাসরি তাদের নেতাকে আক্রমণ করব। যদি আমাকে ধাওয়া করতে দেখ, তবে আমার সাথে ধাওয়া করবে।” তারা তাই করল এবং লাথরীক নিহত হল, সেই সাথে তার অনেক সৈন্যও এবং তারা পরাজিত হল খুবই অল্প সংখ্যক মুসলিম মারা গেল। তারিক এরপর লাথরীকের মস্তক আফ্রিকায় মুসা বিন নুসায়েরকে পাঠালেন এবং মুসা এটা দামেস্কে খলিফা আল-ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিককে পাঠিয়ে দিলেন।
  3. সাবিত বর্ণনা করেন যে, আবু জাহলের পুর ইকরিমাহ (তিনি তখন মুসলিম ছিলেন) কোন এক যুদ্ধে ঘোড়া থেকে নেমে পড়লেন। খালিদ বিন আল-ওয়ালিদ বললেন, “এমনটি কর না। তোমার মৃত্যু মুসলিমদের জন্য খুবই কষ্টকর/ কঠিন হবে। তিনি উত্তর দিলেন, “হে খালিদ, আমাকে একা ছেড়ে দাও! তুমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সাথে মুসলিম হয়েছো, যখন আমি ও আমার পিতা তাঁর সাথে জঘন্যতম শত্রুতায় লিপ্ত ছিলাম।” তিনি পায়ে হেটে/ দৌড়িয়ে যুদ্ধ করলেন যতক্ষণ না তিনি নিহত হলেন। (ইবন – আল-মুবারাক – আল-সুনান আল-কুবরা)

ইকরিমাহ (রাঃ) ইয়ারমুকের যুদ্ধে শহীদ হন।

  1. মালিক বিন দিনার বলেছেন, যাওয়িয়াহর যুদ্ধে আব্দুল্লাহ বিন গালিব বলেন, “আমি এমন কিছু দেখছি যা থেকে আমি কিছুতেই পিছু হটতে পারছি না। চল জান্নাতে চলে যাই।” এরপর তিনি তরবারির খাপ ভেঙে ফেলে, লড়ে যেতে থাকলেন যতক্ষণ না তিনি নিহত হলেন। যখন তাকে সমাহিত করা হল তার কবর থেকে মিশকের সুগন্ধ আসতে থাকল। আমি নিজেই তার কবরে গিয়ে কিছু ধুলো বালি কুড়িয়ে নিয়ে এর থেকে নির্গত মিশকের গন্ধ শুকলাম। (আল-বায়হাকী)

শক্রদের বাহিনীর মাঝে (একা) নিজেকে নিক্ষিপ্ত করার ব্যাপারে আলেমদের কিছু মত বিরোধ রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট পরিমাণ দলিল উল্লেখ করেছি যাতে দেখা যায় যে এটা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং এতে অনেক বড় পুরষ্কার রয়েছে।

আবু হামিদ আল-গাযালী তার ইহয়াতে বলেছেন, এ ব্যাপারে কোন মতবিরোধ নেই যে একজন মুসলিম একাই অবিশ্বাসীদের সৈন্যসারির সাথে লড়াই করতে পারবে, যদিও সে জানে যে সে মারা পড়বে। সে নিজে যেমন মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত একাই কাফিরদের সাথে লড়ে যেতে পারবে, তেমনি একে সৎকর্মের আদেশ ও অসৎকর্মে নিষেধের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। কিন্তু যদি সে জানে যে তার এই কাজ শত্রুদের কোন ক্ষতিই করতে পারবেনা, যেমন যদি কোন অন্ধ বা অক্ষম ব্যক্তি নিজেকে শত্রুর মুখে ছুড়ে দেয়, তবে এটা নিষিদ্ধ। এটা তার জন্য অনুমোদিত যে অনুধাবন করে যে, সে মরার আগে (অবশ্যই) অন্যদের মারতে পারবে অথবা সে যদি বুঝে যে তার এই কাজের ফলে তার অসম সাহস দেখে কাফিরদের অন্তর দুর্বল হয়ে যাবে। তারা বুঝবে, মুসলিমদের নিজের জীবনের কোন পরোয়া নেই বরং তারা আল্লাহর রাহে শাহাদাত বরণ করতেই পছন্দ করে – এই সবকিছুই তাদেরকে দুর্বল করে তুলবে।”

আল-রাফী এবং আন – নববী, সেই সাথে অন্যরাও বলেছেন যে জিহাদে নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়া অনুমোদিত বা এর হুকুম রয়েছে। সহীহ মুসলিমের টীকায় আন – নববী বলেছেন যে এটা আলেমদের সাধারণ মত। তিনি থী ক্বারদ – এর যুদ্ধের ঘটনার মন্তব্যে এটি বলেন।

আল-কুরতুবী বলেছেন, “আর এটা (বুখারীতে) উল্লেখিত ঘটনার সাথে সমতুল্য যে এক লোক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে এসে বলল, “কী হবে যদি আমি খাঁটিভাবে, ধৈর্যসহকারে আল্লাহর পথে নিহত হই?” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমাকে জান্নাত দেয়া হবে”। সে নিজেকে শক্র বাহিনীতে নিমজ্জিত করল এবং সে নিহত হল।

অধ্যায়ঃ ৯ – দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার উৎকর্ষ

আলেমদের মত অনুযায়ী দুজন ব্যক্তির দ্বন্দ্বযুদ্ধ অবতীর্ণ হওয়া বৈধ। যদি কোন কাফির দ্বন্দ্বযুদ্ধের জন্য ডাক দেয়/ আমন্ত্রণ জানায় তবে তাতে সাড়া দিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আল-শা’ ফীর মাযহাব অনুযায়ী, দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহবান জানাতে পরামর্শ দেয়া হয়নি আবার নিরুৎসাহিতও করা হয়নি (অর্থাৎ করতে বলাও হয়নি, না – ও করা হয়নি।) অভিজ্ঞ ব্যক্তির জন্য এটা যথাযথ কিন্তু দুর্বল ব্যক্তি যার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে, তার জন্য একে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আসলে, বলা হয় যে এমন ব্যক্তির জন্য দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহবান জানানো নিষিদ্ধ। আমীর (নেতা) – এর অনুমতি নেয়াটা সুন্নাহ্, তবে তাকে না জানিয়েও করা যায়। যারা সেনাবাহিনী থেকে বের হয়ে এর সামনে অবস্থান নেয় এর দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহবান জানায়, তাদের ব্যাপারে ইমাম মালিক (রহঃ) – কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন যে, এটা তাদের নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যদি সে আল্লাহর জন্য এটা করে তবে আমি কোন সমস্যা দেখিনা। যেহেতু আমাদের পূর্ববর্তী গণের প্রথা এটি – ই/ এমনই ছিল। ইমাম আল-শাফী বলেছেন, আমি দ্বন্দ্বযুদ্ধে কোন সমস্যা দেখি না।

যুদ্ধের সময় দ্বন্দ্বযুদ্ধ এবং কেউ এর আহবান জানালে তাতে সাড়া দেয়া বীরপুরুষদের রীতি, সাহসী ব্যক্তিদের জন্য এটা সম্মানের প্রতীক এবং ইসলামের সময় ও তার পূর্বে এটি তাদের গর্বের জন্য বিষয় ছিল।

  1. আমর বিন আব্দুদ (কুরাইশ বীর যোদ্ধাদের একজন), খন্দকের যুদ্ধের সময় বের হয়ে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহবান জানাল। বর্ম পরিহিত আলী (রাঃ) দাড়িয়ে গেলেন, বললেন, “আমি করব”। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অনুমতি দিলেন না, বললেন, “এটা আমর! বসো।” আমর আবার ডাক দিল “তোমাদের মধ্যে কি কেউ নেই! কোথায় সেই জান্নাত, তোমাদের মধ্যে যেই মারা যাবে সেই তাতে প্রবেশ করবে বলে দাবী কর তোমরা? তোমাদের মধ্যে এমন ১জন নেই যে কিনা আমার মোকাবিলা করতে পারবে? আলী (রাঃ) আবারও দাড়িয়ে গেল, বলল, “আমি করব।” রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “এটা আমর! বসে যাও।” আমর আবারও ডাক দিল, আর এবার মুসলিমদের চ্যালেঞ্জ করে সে কবিতা আবৃত্তি করল। আলী (রাঃ) তৃতীয়বারের মত দাড়িয়ে বলল, “আমি করব/যাব।” রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “এটা আমর” আলী (রাঃ) বললেন, “তাতে কী হয়েছে যে এটা আমর।” রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবার তাকে যেতে দিলেন। আলী (রাঃ) কবিতা আবৃত্তি করতে করতে আমরের দিকে এগিয়ে গেলেন। আমর জিজ্ঞাসা করল, কে তুমি?” সে বলল, “আবু তালিবের পুত্র আলী/ আলী বিন আবু তালিব” আমর বলল, “তোমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্য থেকে কাউকে পাঠাও, বাবা। তোমার রক্ত ঝরাতে চাইনা।” আলী উত্তরে বলল, “কিন্তু আমি আপনারটা ঝরাতে খুশি হব।” আমর ক্রোধান্বিত হয়ে গেল। সে আলীর দিকে এগিয়ে গেল এবং প্রচন্ডভাবে খাপ থেকে তলোয়ার আঘাত হানল, কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় ঢালের সাহায্যে তিনি রক্ষা পেলেন। তথাপি আঘাতটা এত জোরে ছিল যে তা ঢাল ভেদ করে ঢুকে আলী (রাঃ) – এর মাথায় আঘাত করল। কিন্তু আমরের কাঁধে তড়িৎ আঘাত করে আলী (রাঃ) তাকে একদম ভড়কে দিল/ অবাক করে দিল। আর এই আঘাতই আমরকে ছুড়ে ফেলে দিল একরাশ ধূলির মাঝে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন মুসলিমদের বজ্রধ্বণিপূর্ণ

তাকবীর শুনতে পেলেন। আলী (রাঃ) আমর বিন আব্দুদকে হত্যা করেছে। (ইবনে হিশাম)

  1. খালিদ (রাঃ) যখন একটি নগরী অবরোধ করে রেখেছিল, তখন ওদের একজন যোদ্ধা গেট দিয়ে বের হয়ে এলো তার ডান হাতে তরবারি আর বাম হাতে ঢাল এবং সে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহবান জানাল। একজন মুসলিম স্বেচ্ছায় যুদ্ধ করতে এগিয়ে গেল এবং তাকে হত্যা করল। এরপর সেই মুসলিম দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহবান (জন্য ডাক দিল) জানাল। ওরা ওদের সবচেয়ে বীর যোদ্ধাকে পাঠাল। মুসলিম ব্যক্তি তাকে হত্যা করল। সে ৩য় দ্বন্দ্বযুদ্ধের জন্য আহবান জানালে তারা তাকে বলল, “শয়তান তোমার সাথে লড়াই করুক।”
  2. আলী (রাঃ) বলেন, “উতবাহ বিন রাবিআহ, তার পুত্র আল-ওয়ালীদ আর তার ভাই শায়বাহ বদর প্রান্তরে (রের হয়ে) দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহবান জানাল। আনসারদের তিন তরুণ যুবক তাদের মোকাবিলা করতে আসল। উতবাহ জিজ্ঞাসা করল, তারা কারা। যখন তারা বলল, সে উত্তর দিল, “তোমাদের সাথে লড়াই করার কোন ইচ্ছা নেই আমাদের। আমাদের লোকদের (অর্থাৎ কুরাইশ) মধ্য থেকে আমাদের সমপর্যায়ের লোক পাঠাও। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “দাড়িয়ে যান, হামযা; দাড়িয়ে যাও আলী; দাড়িয়ে যাও উবায়দা বিন আল-হারিস।” হামযা, উতবাহর মোকাবিলা করলেন আর তাকে হত্যা করলেন এবং আমি শায়বাহর মুখামুখি হলাম ও তাকে হত্যা করলাম, আর উবায়দা ও আল-ওয়ালীদ দু’ জন দুজনকে আহত করল এবং পড়ে গেল। আমি এবং হামযা আল-ওয়ালীদের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে শেষ করলাম আর উবায়দাকে বহন করে নিয়ে চলে গেলাম। (আবু দাউদ)

অধ্যায়ঃ ১০ – যুদ্ধের মাঝে যে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে তার জন্য কঠিন, ভয়াবহ শাস্তি

আল্লাহ্ বলেন,

“হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন কাফির বাহিনীর সম্মুখীন হইবে তখন তোমরা তাহাদের পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিবে না; সেদিন যুদ্ধকৌশল অবলম্বন কিংবা দলে স্থান লওয়া ব্যতীত কেহ তাহাদিগকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিলে সে তো আল্লাহর বিরাগভাজন হইবে এবং তাহার আশ্রয় জাহান্নাম, আর উহা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।” (সূরা আনফালঃ ১৫ – ১৬)

জেনে রাখুন যে, আলেমদের মত অনুযায়ী যুদ্ধের ময়দানে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করা বা পলায়ন করা একটি কবিরা/বড় গুনাহ এবং যে এমনটি করে আল্লাহর অভিশাপ/ক্রোধ ও সেই সাথে ভয়াবহ শাস্তি তার প্রাপ্য।

  1. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের (সৎ) কর্মবিধ্বংসী ৭টি জিনিস থেকে দূরে থাকঃ
  • আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহর শরীক করা,
  • জাদু বিদ্যা,
  • হত্যা/ খুন,
  • ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ,
  • সুদের কারবার,
  • যুদ্ধের সময় পলায়ন করা, এবং
  • আর সতী – নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ/ দোষ দেয়া। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

জিহাদ যদি কোন সম্মিলিত দায়িত্ব হয়, তবে এটি ব্যক্তিগত দায়িত্ব পরিণত হয় যখনই দু’ পক্ষের সেনাবাহিনী মুখোমুখি/মিলিত হয় এবং এসময়/এরপর পালিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায়, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আর সেই ব্যতিক্রম গুলো হচ্ছেঃ –

  • যদি শত্রুবাহিনীর সৈন্য সংখ্যা মুসলিম বাহিনীর দ্বিগুণের বেশী হয়।
  • নতুন অবস্থান নেয়ার জন্য।
  • মুসলিমদের অন্য বাহিনী/ দলে যোগদান করার জন্য পিছু হটা।
  • অসুখের কারণে যদি অপারগ হয় অথবা যদি কোন আয় না থাকে।

আল্লাহ্ (সুবঃ) বলেন, “যদি তোমাদের মধ্যে বিশজন ধৈর্যশীল থাকে, তবে দু’ শর উপর জয়লাভ করবে। আর তোমাদের মধ্যে যদি একশ থাকে তবে এক হাজার কাফেরের উপর বিজয় হবে। কেননা তারা নির্বোধ লোক। আল্লাহ্ এখন তোমাদের বোঝা কমালেন, তিনি তোমাদের দুর্বলতা জানেন; সুতরাং তোমাদের ১০০ ধৈর্যশীল থাকলে ২০০ জনের উপর বিজয়ী হবে। তোমাদের মধ্যে এক হাজার থাকলে আল্লাহর হুকুমে ২০০০ এর উপর বিজয়ী হবে, আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।” (সূরা আনফালঃ ৬৫ – ৬৬)

ইবন আল-মুবারাক হতে বর্ণিত, “ইবন আব্বাস বলেন, যদি তিনজনের মধ্যে একজন পলায়ন করে/ চলে যায়, তবে সে যুদ্ধে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেনি। যদি সে দু’ জনের মধ্যে থেকে চলে যায় বা পালায়, তবে সে যুদ্ধে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছে।”

আল-কুরতুবী তার তাফসীরে বলেন, “যদি শত্রু পক্ষের সৈন্য সংখ্যা মুসলিমদের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি হয় তবে মুসলিমরা পিছু হঠতে (retreat) পাবে, যদিও ধৈর্যধারণ করো (steadfast) যুদ্ধ করাটাই উত্তম। মু’ তার যুদ্ধে ৩০০০ সৈন্য নিয়ে মুসলিমরা ২, ০০, ০০০ সৈন্যসহ রোমান ও ১, ০০, ০০০ আরব সৈন্যর মুখোমুখি হয়। আরও উল্লেখ আছে যে, যখন তারিক আল-আন্দালুসিয়ার প্রবেশ করে, তার ছিল ১৭০০ সৈন্য আর শত্রুপক্ষের ৭০, ০০০ সৈন্য। ইমাম মালিক (রহঃ) – কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যদি একজন মুসলিম ১০জন শত্রু সৈন্যের সম্মুখীন হয় তবে কি সে লড়াই করবে না পিছু হটবে? তিনি বলেছেন, দু’ টি সুযোগ নেয়ার অবকাশই তার রয়েছে।

  1. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “বার হাজার সৈন্যের বাহিনী, “বার হাজার সৈন্যের বাহিনী, কখনই তাদের অল্পসংখ্যক হবার কারণে হারবে না।” (আবু দাউদ, আল-সুনান আল-কুবরা, তিরমিযী, দারিমী, আল-হাকীম)

বেশীর ভাগ আলেম এই হাদিসকে কুরআনের সেই আয়াতের ব্যতিক্রম মনে করেন সেখানে আল্লাহ বলেছেন যে শত্রুপক্ষ যদি মুসলিমদের দ্বিগুণের বেশী হয় তবে তারা পিছু হটতে পারে। আলেমরা বলেছেন যে এই নিয়ম কেবল সৈন্যসংখ্যার চেয়ে কম হলেই প্রযোজ্য। কিন্তু যদি মুসলিম বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ১২০০০ এর চেয়ে বেশি হয় তবে তারা পিছু হটতে পারবে না শত্রুসংখ্যা যতই বেশী হোক।

অধ্যায় ১১ – জিহাদের বিভিন্ন নিয়্যত সমূহঃ

জিহাদের জন্য বিশুদ্ধ নিয়্যত অত্যাবশ্যক, কেননা সঠিক নিয়্যতে জিহাদ না করলে আল্লাহ্ তা কবুল করেন না। মুজাহিদীনদের বিভিন্ন নিয়্যত এখানে বর্ণনা করা হলঃ

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

এমন অনেক মুজাহিদ রয়েছে যারা জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। তারা জিহাদ এ জন্যই করে কারণ তাদের বিশ্বাস আল্লাহ এমন ইবাদতেরই যোগ্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি পাবার আকাঙ্ক্ষা ব্যতীত আর অন্য কোন উদ্দেশ্যে তারা জিহাদ করেনা। তবে এমন নিয়্যতের অধিকারীর সংখ্যা খুবই নগণ্য।

কিছু মুজাহিদীন, ইসলামের প্রতি ভালবাসা থেকে জিহাদ করে থাকে। তারা ইসলামের বিজয় আর অবিশ্বাসের চরম পরাজয় কামনা করে।

এই দু’ টো নিয়্যতের বৈধতা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কোন মুজাহিদ যে এ দুটোর যেকোনো একটিপর উপর ভিত্তি করে জিহাদ করেছে, তার প্রমাণ হিসেবে এটাই যথেষ্ট যে তার জিহাদের কথা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানল কিনা সে এটা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় এবং এটা নিয়ে সে কোন বড়াই করে বেড়ায় না।

জান্নাত পাবার নিয়্যতঃ

কিছু মুজাহিদীন জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্যই জিহাদ করে থাকে। বেশির ভাগ মুজাহিদীনেরই এমন নিয়্যত থাকে। তারা জাহান্নামকে ভয় করে আর জান্নাত চায়। কেউ কেউ বলেছে, শহীদের মর্যাদা পাবার জন্য এমন নিয়্যত যথেষ্ট নয়। কিন্তু সঠিক মত হচ্ছে, শহীদের মর্যাদা পাবার জন্য এমন নিয়্যতই যথেষ্ট এবং এর পক্ষে কুরআন সুন্নাহ এবং সাহাবাদের জীবনী/কর্মজীবন থেকে প্রচুর প্রমাণ পাওয়া যায়।

আল্লাহ্ বলেনঃ

“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন, তারা আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে, যেখানে তারা (কখনও) হত্যা করে এবং (কখনও) নিহত হয়ে যায়। এর জন্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে এবং ইঞ্জিলে আর কোরআনে; আর কে আছে নিজের অঙ্গীকার পালনকারী আল্লাহ্ অপেক্ষা অধিক? অতএব, তোমরা আনন্দ করতে থাক তোমাদের এই ক্রয় – বিক্রয়ের উপর, যা তোমরা সম্পাদন করেছ; আর এটি হচ্ছে বিরাট সফলতা।” [আত তওবা : ১১১]

এবং,

”হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন একটি লাভজনক ব্যবসার সন্ধান দেবো না, যা তোমাদেরকে কঠোর আযাব থেকে বাঁচিয়ে দেবে! তা হচ্ছে, তোমরা আল্লাহ্ ও তার রাসূলের উপর ঈমান আনবে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গল, যদি তোমরা বুঝতে! আল্লাহ তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে …” [সূরা আস্ সফঃ ১০ – ১২]

  1. রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যে কেউ একটি দুধ দোয়ানোর সমপরিমাণ সময়ও আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তাকে জান্নাত দেয়া হয়” [ইবন হীব্বান – আন নাসাঈ – আত তিরমিযী – আল-দারিমি – আহমদ – ইবন মাজাহ]
  2. রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা কি এটা পছন্দ কর না যে আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন? তাহলে আল্লাহর পথে জিহাদ কর” [তিরমিযী – আহমদ]
  3. আনাস বিন মালেক বর্ণনা করেন যে বদরের যুদ্ধের দিন রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “উট এবং (সেই) জান্নাতের মুখোমুখি হও, যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের সমান” উমায়র বিন আল-হামাস বললেনঃ ইয়া রসূলূল্লাহ্! জান্নাত যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের সমান?” রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “হা উমায়র তার হাতের খেজুরগুলো খাচ্ছিল। উমায়র বলল, “আমি যদি এই সবগুলো খেজুর খাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি তবে তাতো অনেক বেশি সময় হয়ে যাবে?” অতঃপর সে তার খেজুর গুলো ছুড়ে ফেলে দিল এবং যুদ্ধের ময়দানে ছুটে গেল ও নিহত হল [মুসলিম – আল-হাকিম]

এই হাদিস থেকে তো বোঝা যাচ্ছে যে উমায়র জান্নাতের আশাতেই জিহাদ করেছে।

  1. শাদ্দাদ বিন আল-হাদ বলেছেন যে একদা এক বেদুঈন রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসল। সে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল এবং তাঁর অনুসরণ করল। খন্দকের যুদ্ধের সময়, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাদের মাঝে গণীমতের মাল বণ্টন করে দিচ্ছিলেন, তো তাকে তার (বেদুঈন) অংশ দিলেন সেই বেদুঈন বলল “এটা কী?” তারা উত্তর দিলঃ “রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা তোমার জন্য পাঠিয়েছেন” অতঃপর সে রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – র নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা কী?” রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “গণীমতের মাল হতে এটা তোমার ভাগ/অংশ” সে বলল, “আমি তো এ জন্য আপনার অনুসরণ করিনি বরং এজন্য করেছি যাতে আমি ঠিক এখানে – তিনি তার কণ্ঠনালীর দিকে ইঙ্গিত করলেন – তীর বিদ্ধ হতে পারি অতঃপর মৃত্যুবরণ করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি?” রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “যদি তুমি আল্লাহর সাথে সত্যবাদী হও তবে আল্লাহ্ও তোমার সাথে সত্যবাদী হবেন” এর কিছু পরে তারা যুদ্ধ করতে গেল। সেই বেদুঈনকে কণ্ঠনালীতে তীরবিদ্ধ অবস্থায় রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)র নিকট বয়ে নিয়ে আসা হল। রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন যে এ সে কিনা। তারা বলল “হ্যাঁ” তিনি বললেন, “সে আল্লাহর সাথে সত্যবাদী ছিল এবং আল্লাহ্ তার প্রতি সত্যবাদী ছিল” অতঃপর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “হে আল্লাহ্! তোমার এই দাস/বান্দা তোমার জন্য হিজরাহ করেছে, এরপর শহীদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছে। আমি এর সাক্ষী” [আব্দুল রাযযাক – নাসাঈ]

লক্ষ্য করুনঃ এখানে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন “আমি এর সাক্ষী” যেখানে বেদুঈন কেবলমাত্র জান্নাতই চেয়েছিল। যদি এমন নিয়্যত শরীয়তসিদ্ধ না হত তবে তার কাছে এ কথা শোনার সাথে সাথেই নিশ্চয় তিনি তা শুধরে দিতেন।

আত্মরক্ষাঃ

কিছু মানুষ কেবল তখনই যুদ্ধ করে যখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা হয়। নিজেদের রক্ষা কার ছাড়া তাদের আর কোন উদ্দেশ্য থাকেনা। এমন নিয়্যতধারী মানুষ উপরে বর্ণিত তিন ধরনের নিয়্যতের কাছাকাছি তবে নিঃসন্দেহে মর্যাদায় তাদের চেয়ে নিম্ন। আন – নববী বলেছেন যে তিন শ্রেণীর শহীদ রয়েছেঃ

* এই দুনিয়া ও আখিরাতে যে শহীদঃ এটা সেই শহীদ যে আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে।

* কেবল আখিরাতে যে শহীদ, এই দুনিয়ায় নয়; যে ব্যক্তি পানিতে ডুবে বা প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

* কেবল এই দুনিয়াতে শহীদ, আখিরাতে নয়; যে ব্যক্তি যুদ্ধে নিহত হয়েছে ঠিকই কিন্তু যার নিয়্যত বিশুদ্ধ ছিলনা অথবা যে গণীমত হতে চুরি করেছে।

জিহাদ ও গণীমত উভয়ইঃ

কিছু লোক যুদ্ধে যায় আল্লাহর পথে লড়াই করার জন্য কিন্তু একই সাথে গণীমতের মাল পাওয়ার নিয়্যতও থাকে তাদের। আলেমগণ এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কারও কারও মতে – এটা অবৈধ নিয়্যত এবং এ জিহাদের কোন পুরস্কার নেই, এমনকি তাদের শাস্তি হবে কেননা তারা এই দুনিয়ার জন্য যুদ্ধ করেছে।

কিন্তু অন্য আলেমদের মতে এই নিয়্যতও গ্রহণযোগ্য এবং এটাই বেশিরভাগ আলেমের মত। আর এটা সঠিক মত কেননা সাহাবাদের কাজের সাথে এটা মেলে। আল-করু তুবী বলেছেনঃ “রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বাধীন কুরাঈশ কাফেলার উপর পথিমধ্যে হামলা করতে চেয়েছিলেন। এটিই প্রমাণ করে যে, গণীমতের মালের জন্য যুদ্ধ করা যায় কেননা এটা হালাল আয়ের উৎস। এটা ইমাম মালেকের মতকে খন্ডন করে। ইমাম মালেকের মত অনুযায়ী এটা দুনিয়ার স্বার্থে যুদ্ধ করা। এমন হাদিস রয়েছে যেগুলোতে বলা হয়েছে যে, যে কেউ আল্লাহর বাণীকে সর্বোচ্চে তুলার জন্য যুদ্ধ করে সেই আল্লাহর পথে রয়েছে এবং সে নয় যে গণীমতের জন্য যুদ্ধ করে। কিন্তু এখানে হাদিসের অর্থ হচ্ছে, কেউ যদি কেবলমাত্র গণীমতের জন্যই যুদ্ধ করে, তবে সেটা একটা অবৈধ নিয়্যত।

এমন নিয়্যত যে গ্রহণযোগ্য এর পক্ষে আরেকটি হচ্ছে যেখানে আল্লাহ্ বলেনঃ “…………… আল্লাহ্ তোমাদেরকে প্রচুর গণীমতের মালের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা তোমরা নিবে……….” [আল-ফাতহঃ ২০]

এটা তো কেউ ভাবতে পারে না যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর দাসদের/বান্দাদের ‘গণীমতের’ র অঙ্গীকার করবেন অথচ তার আকাঙ্ক্ষা করাতে অসম্মত হবেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কর্মপন্থা ও এর প্রমাণ স্বরূপ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফেরদের বহু কাফেলা লটু বাহিনী প্রেরণ করেছেন। এরূপ আকাঙ্ক্ষা যে জায়েজ তা প্রমাণের জন্য কিছু দলীল দেয়া হলঃ

  1. আবদুল্লাহ বিন হুযাইফা বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গণীমতের মাল জয় করার জন্য আমাদের পাঠিয়েছিলেন (আবু দাউদ – আল-বায়হাকী – সুন্নাহ্)

এটা খুবই স্পষ্ট যে, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বিশেষভাবে গণীমত – এর মাল জয় করার জন্যই পাঠিয়েছিলেন এখন গণীমতের মাল গ্রহণ হচ্ছে পুরস্কারের এক বিধান কিন্তু তা কখনই জিহাদের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দেয় না।

  1. আবদুল্লাহ্ বিন আমর বিন আল-আস থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; “কোন সৈন্যদল যদি গণীমতের মাল লাভ ও গ্রহণ করে তবে তারা তার প্রাপ্য পুরস্কারে দুই – তৃতীয়াংশই গ্রহণ করল, আর যে সৈন্যবাহিনী পরাজিত হয়েছে এবং কোন গণীমতের মালই পায়নি তাদের জন্য তো (বাকী) রয়েছে

গণীমতঃ

জিহাদের অংশগ্রহণকারী এমন কিছু যোদ্ধা আছেন যাদের জিহাদের অংশগ্রহণের লক্ষ্য গণীমতের আর্থিক প্রাপ্তি ভিন্ন অন্য কিছু না, যদি তারা জিহাদে এমন অবস্থার মুখোমুখি হয় যেখানে আর্থিক লাভা – লাভের বা ক্ষতিপূরণের তেমন সম্ভাবনা নেই তবে তারা আর জিহাদে অংশগ্রহণে উৎসাহী হয়না, এ সমস্তের জন্যই যে যাই করুক না কেন তার কোন পুরস্কার (আখিরাতে) নেই এবং যদি এমন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ ও করে তবে সে ‘শহীদ’ হিসেবে গণ্য হবে না।

খ্যাতি বা পরিচিতি লাভঃ

আবার এমন ও কিছু (যোদ্ধা) আছে যারা খ্যাতি ও পরিচিতি লাভের জন্যই যুদ্ধ করে। এরূপ ব্যক্তি কখনই মুজাহিদ নয় সে মৃত্যুবরণ করলেও ‘শহীদ’ নয়। হাদিস অনুযায়ী তারা হবে (বিচার দিবসে) জাহান্নামে প্রথম নিক্ষিপ্ত ব্যক্তি বর্গের অন্যতম, এখন যদি কোন ব্যক্তির জিহাদের উদ্দেশ্য হয় একই সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং সাথে সাথে পরিচিতি লাভ, তবে সে পুরস্কৃতও হবে না অথবা শাস্তি প্রাপ্ত ও হবে না, আল-তিরমিযীতে বর্ণিত; রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘বিচার দিবসে, যখন আল্লাহ্ তায়ালা প্রথম ও শেষকে একত্রে হাযির করবেন, এক ঘোষণা করা হবে, “যদি কোন ব্যক্তি তার আমলসমূহের নিয়তে আমার (আল্লাহর) সাথে আর কাউকে শরীক করে, তবে তাদেরকে তাদের পুরষ্কার কামনা করতে হল ঐ সবের নিকট যাকে তারা (আমার সাথে) শরীক করেছিল কারণ আল্লাহ্ কোন শরীক গ্রহণ করেন না।”

হতাশাঃ

যদি কোন ব্যক্তি জিহাদ করে এবং মৃত্যুবরণ করে মুক্তি পেতে চায় তাদের বিবাদময় দৌর্বল্য থেকে, ঋণ, দরিদ্রতা, হতাশা বা সংকটপূর্ণ জীবন থেকে যখন তারা যুদ্ধ করে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি বা আল্লাহর কালাম (বাণী) কে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার কথা চিন্তাও করে না। এরূপ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটা বলা সংগত যে তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করা হবে না কারণ সে জিহাদ আল্লাহর রাহে করেনি।

কেউ এ যুক্তি দেখাতে পারে যে, যে অবশ্যই একজন শহীদ কারণ সে তো (তার কাজের মাধ্যমে) এটা অবশ্যই নিশ্চিত করেছে যে, সে তার জীবন বিলিয়ে দিয়েছে এমন এক উপায়ে যাতে সে আল্লাহর শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। অতএব, যদি এমনভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়, যেমন – অস্ত্রসজ্জিত ডাকাতদলের হাতে পড়ে বা কোন রোগভোগের কারণে, তাহলে হয়ত সে এই (শাহাদার) মর্যাদার আশা করতে পারেনা, আমি এক্ষেত্রে দ্বিতীয় মত গ্রহণই বেশী আগ্রহীঃ কারণ সত্যিকার অর্থেই সে একজন শহীদ যদিও সে (মর্যাদার দিক দিয়ে) যথার্থ আন্তরিক শহীদদের নিকটবর্তীও নয়।

জিহাদের জন্য ভাতা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিধানাবলীঃ

জিহাদের নিমিত্তে ভাতা গ্রহণ – এই প্রশ্নের বিধানে আলেম বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কেউ এটাকে জায়েজ বলেছেন অপরদিকে কেউ নিষিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। ‘জায়েজ’ বলে মতপ্রকাশকারীদের মতে, এটা শুধু সে ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য – যেখানে ভাতাকে কোন মুজাহিদ তার জিহাদের শর্তরূপে পেশ করে না। অতএব, যদি ভাতা প্রত্যাহার করাও হয় – তবুও মুজাহিদ তার জিহাদের প্রতি তখনও আগ্রহী থাকে। যদি প্রকৃত চিত্র তা না হয় – তবে তো জিহাদের উদ্দেশ্য তো নিছক পার্থিব লাভা – লাভ – অথচ তা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হওয়া উচিত।

যদি কোন ব্যক্তি তার দরিদ্রতার জন্যই কেবলমাত্র ভাতা গ্রহণ করে। এবং এরূপ ভাতা গ্রহণ ছাড়া জিহাদ করতে সমর্থ নয় – সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির এরূপ নিয়্যতে কোন দোষ নেই।

  1. রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মুজাহিদ তার পুরস্কার পাবে, যেখানে কেউ সেই মুজাহিদকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে – তবে সে তো তার (আর্থিক সাহায্যে) পুরষ্কার পাবেই সাথে সাথে উক্ত মুজাহিদদের সমান পুরষ্কার পাবে।” (আবু দাউদ)

প্রথমে আন্তরিক নিয়্যত শুরু করার পর জিহাদের মাধ্যমে খ্যাতি চাওয়াঃ

যদি কোন ব্যক্তি প্রথমে জিহাদ শুরু করে এক আন্তরিক নিয়্যত নিয়ে এবং তারপর জিহাদ – এর মাধ্যমে খ্যাতি চায় তবে – ইবাদতের যতগুলো কাজ এই নিয়্যত পরিবর্তনের পূর্বে করা হয়েছে তা বৈধ ও গ্রহণযোগ্য, আর তারপর যেসব আমলসমূহ করা হয়েছে তা বিনষ্ট হয়ে গেছে। যদি কেউ জিহাদ শুরু করে এক স্বচ্ছ নিয়্যতে কিন্তু যখন সে সৈন্যদল মুখোমুখি হয় তখন শুধুমাত্র পালিয়ে যাওয়া এড়াতে এবং কাপুরুষ সাব্যস্ত হওয়া থেকে বাচতেই সে যুদ্ধ করে – তবে এরূপ ব্যক্তির সব পুরস্কারই বিনষ্ট হয়েছে।

অতএব মুজাহিদদের তার মনকে পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত এবং হৃদয় থেকে সব খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা, ঔদ্ধত্য, অন্যের প্রশংসা পাবার আকাঙ্ক্ষা এবং বিরুদ্ধ সমালোচনার ভীতি দূর করা উচিত এবং নিজ নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করা উচিত। যাতে করে সে নিশ্চিতভাবে স্থির করে রাখতে পারে যে তার জিহাদের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ভিন্ন অন্য কিছু নয়।

ঐ ব্যক্তির প্রতি বিধান – যে তার জিহাদের (ব্যাপারে) গর্ববোধ করেঃ

একজন মুজাহিদের জিহাদ শেষ হওয়া অবধি নিয়্যত নিয়ত সহীহ্ থাকতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে সে যে জিহাদ করেছে এটা লোকদের (যারা অংশগ্রহণ করেনি) জানানোর এক অদম্য আগ্রহ জাগ্রত হতে পারে। অথবা সে হয়ত তার ঘটনাগুলো বর্ণনা করতে পারে যাতে তার সাহস ও জিহাদের দক্ষতা প্রমাণিত হয়।

এরূপ আচরণ যে তার পুরস্কারকে (আখিরাতের) সমূলে ধ্বংস করে – তার কিছু দলিল দেয়া হলঃ

  1. এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এলো এবং তাঁকে বলল, “আমি প্রতিদিন সাওম পালন করছি” রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যুত্তরে বললেন, “তুমি সাওমও পালন করনি এবং তা ভেঙ্গেও ফেলনি” (মুসলিম)

ভাবার্থঃ তোমার সাওমের ব্যাপারে বড়াই করে তুমি তোমার পুরষ্কার নষ্ট করেছে। অতএব এটা যেন এমন যে, তুমি সাওম পালনই করনি। অতএব, কোন ব্যক্তির তার জিহাদের কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করা উচিত নয় এবং এই কারণে তার অন্য কোন নেক আমল ও প্রকাশ করা উচিত নয় – যাতে তার পুরস্কার সংরক্ষিত থাকে।

কিন্তু যদি তার বর্ণনার কারণে কোন উপকার হয় যেমন – অন্যদের উদ্বুদ্ধ করে অথবা তার অন্তরকে দৃঢ় করে সেক্ষেত্রে এটা জায়েজ – যতক্ষণ (অবশ্যই) নিয়্যত থাকবে তার মাধ্যমে উপকারের – এবং কখনই প্রদর্শন নয়।

  1. আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে কেউ তার আমল সমূহকে প্রদর্শন করল। আল্লাহ্ তাকে তুচ্ছ ও অপমানিত করবেন।” (তাবারানী)

কোন মুজাহিদ যে জিহাদে গেল অথচ যুদ্ধ না করেই মৃত্যুবরণ করল – সে শহীদঃ

আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, “যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করার জন্য নিজ বাড়ি থেকে বের হয় এবং এমতাবস্থায় মৃত্যু এসে তাকে গ্রাস করে নেয়। তাহলে তার (সে অপূর্ণ হিজরতের) পুরস্কার দেয়ার দায়িত্ব আল্লাহ্ তায়ালার উপর; আল্লাহ্ তায়ালা বড় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু” (সূরা নিসাঃ ১০০)

  1. আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত; আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কোন মুজাহিদের (আমলের) সাদৃশ্য এমন যে, কেউ সালাত ও সাওম পালন করছে এবং তাতে শান্ত হচ্ছে না যতক্ষণ না মুজাহিদ ব্যক্তি গণীমত পুরস্কারসহ তার পরিবারের কাছে ফিরে না আসে। অথবা আল্লাহ্ তার রূহকে কবয করে নেবেন এবং ওকে জান্নাত প্রবেশ না করান (ততক্ষণ পর্যন্ত) (ইবন হাব্বান – বুখারী – মুসলিম – আল-নাসাঈ)
  2. আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “শহীদান কারা” সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, “সেই ব্যক্তিবর্গ যারা আল্লাহর রাস্তায় মারা যায়।” রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তখন আমার উম্মাহের মধ্যে শহীদানের সংখ্যা অল্পসংখ্যক হত, কিন্তু যে ব্যক্তিকে আল্লাহর রাস্তায় হত্যা করা হয় – সে শহীদ, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মারা যায় – সে শহীদ, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় তারা আরোহী থেকে পড়ে (মারা) যায় – সে শহীদ, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় ডুবে মারা যায় – সে শহীদ, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় থাকাকালে কোন প্লেগরোগে মারা যায় – সে শহীদ, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় থাকাকালে কোন আভ্যন্তরীণ রোগে মারা যায় – সে শহীদ, (ইবন আবু সায়বাহ্ – আবু দাউদ – আল-নাসাঈ – ইবন মাজাহ্)

সাবুরাহ ইবন আল-ফাকাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “ শয়তান আদম সন্তানের গতিরোধ করে যখন সে ইসলামের পথে যেতে চায় এবং বলে, “তুমি কি মুসলিম হতে যাচ্ছ এবং তোমার ঐতিহ্য এক পূর্বপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করতে যাচ্ছ?” কিন্তু আদম সন্তান তার অবাধ্যতা করে মুসলিম হয় এবং তাকে (আল্লাহ্ তায়ালা) ক্ষমা করে দেয়া হয়। অতঃপর শয়তান তার হিজরতের পথে বসে পড়ে এবং বলে, “তুমি কি হিজরত করবে এবং তোমার ঘর, তোমার দেশ ছেড়ে যাবে?” (এবারও) সে তার অবাধ্য হল এবং হিজরত করল, এবার শয়তান তা জিহাদের পথে বসে পড়ে ও বলে, “তুমি কি যুদ্ধ করতে যাচ্ছ অথচ এতে তুমি এবং তোমার সম্পদ নিঃশেষ হবে। তুমি হয়ত যুদ্ধে যাবে এবং তারপর তোমাকে হত্যা করা হবে, তখন কেউ তোমার স্ত্রীকে অধিকার করবে, তোমার সম্পদ ভাগ করা হবে”; আদম সন্তান (এবারও) তাকে অগ্রাহ্য করে এবং জিহাদের পথে যায়। আল্লাহর সত্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে কেউ এসব করে, এটা আল্লাহর উপর অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে “তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা যদি তার পশু তাকে আঘাত করে এবং সে তার কারণেও মারা যায় তবুও সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” – (আহমেদ হাসান)

কিছু আলেম মনে করেন যে, যে ব্যক্তিকে আল্লাহর পথে হত্যা করা হয় এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে স্বাভাবিকভাবে মারা যায় – তাদের মর্যাদা সমান। শহীদানের ক্ষেত্রেও তারা সমান এবং পুরস্কারের ক্ষেত্রেও। কিšু— আরো শক্তিশালী মত এই যে, তারা সমান নন! যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হন এবং সে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন তাদের মধ্যে (মর্যাদায়) পার্থক্য আছে। অবশ্যই সেই ব্যক্তি যে নিহত হয়েছে তার মর্যাদা অধিক এবং কিছু কারণে অধিকতর পছন্দনীয় –

  • ইবন হীব্বান বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সর্বোত্তম জিহাদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি বললেন, “সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে সেটা যেখানে তোমার (বাহক) ঘোড়াকে হত্যা করা হয় এবং তোমার রক্ত ছলকে পড়ে” অতএব, সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহর রাস্তায় নিহত করা হয় সেই সর্বোত্তম জিহাদ করেছে।
  • কোন মৃত ব্যক্তিকে মৃত হিসেবেই গণ্য করা হয় যদিও সে আল্লাহর পথেই মারা যায়। অপরদিকে শহীদকে কখনই মৃত হিসেবে গণ্য করা হয় না – আল্লাহর এই আয়াত অনুযায়ী – “যারা আল্লাহ্ তায়ালার পথে নিহত হয়েছে তাদের তোমরা কখনও (মৃত) বলো না; এবং তারাই হচ্ছে (আসল) জীবিত (মানুষ) কিন্তু এ (বিষয়টির) কিছুই তোমরা জান না” (সূরা বাকারাঃ ১৫৪)
  • তারা তাদের শর্ত সমূহ তার জন্য সাক্ষী হিসেবে (হাজির দেখতে) পাবে সেই বিচার দিবসে। সেই ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে এবং তার গন্ধ হবে মিশক এর মতো।
  • আল্লাহর রাস্তায় হত্যাকৃত ব্যক্তিরা দুনিয়ার বুকে ফিরে আসার কামনা করবে যাতে তারা পুনরায় আল্লাহর পথে নিহত হতে পারে। কিন্তু এটা তার ক্ষেত্রে হবে না যে আল্লাহর পথে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “শহীদ ব্যক্তি ব্যতীত – কোন রূহই এমন হবে না যার মৃত্যু হবে; এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার প্রাপ্ত হবে এবং দুনিয়ায় ফিরে আসতে রাজী থাকবে যদিও তাকে দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যবর্তী সবকিছু দিয়েও দেয়া হয়। কিন্তু সে (শহীদ) দুনিয়ায় ফিরে আসা কামনা করবে এবং যাতে সে আবার আল্লাহর রাস্তায় পুনরায় নিহত হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে – সে শহীদদেরকে প্রদান করা (বিপুল) পুরস্কার যখন নিজ চোখে প্রত্যাশা করবে।”
  • আল্লাহর রাস্তায় হত্যাকৃত ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ খাতা মাফ করে দেয়া হবে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণকারীদের ক্ষেত্রে এরূপ নয়।
  • আল্লাহর রাস্তায় যে ব্যক্তি মারা যায় – তার (জানাযা)র নামায পড়া হয়। কিন্তু যাকে হত্যা করা হয়েছে তার জন্য কোন জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়না। তার কারণ হচ্ছে এই নামায পড়া হয় আল্লাহর নিকট মৃত ব্যক্তির ক্ষমা প্রার্থনা করে। এবং যেহেতু শহীদকে তার সমস্ত গুনাহ্ মাফ করেই দেয়া হয়েছে অতএব তার জন্য জানাযার নামায পড়ার আবশ্যকতা কি?

অধ্যায় ১২: – শাহাদাহর জন্য প্রার্থনা করা এবং তা লাভ করা

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন যেন আমরা প্রত্যেক সালাহ্‌ – র সময় তাঁর কাছে সরল পথ প্রদর্শনের জন্য প্রার্থনা করি, তাদের পথ যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহ্‌ বলেনঃ

“আমাদেরকে সরল পথের দিকে পরিচালিত করুন। তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন।” (আল-ফাতিহা)

এবং যে সকল মানুষের প্রতি আল্লাহ্‌ অনুগ্রহ করেছেন তাদের কথা এই আয়াতে উল্লিখিত হয়েছেঃ

“আর যে কেউ আল্লাহ্‌র হুকুম এবং তাঁর রাসূলের হুকুম মান্য করবে। তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ্‌ নেয়ামত দান

করেছেন, সে তাদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাঁদের সান্নিধ্যই হল উত্তম।” (আন নিসাঃ৬৯)

  1. সাহল বিন হানীফ কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তিই আল্লাহ্‌র নিকট শাহাদাহর জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে, আল্লাহ্‌ তাকে শহীদের সম মর্যাদায় (সমপর্যায়ে) উন্নীত করবেন, যদিও সে তার বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।” (মুসলিম – আবু দাউদ, তিরমিযী, আল-নাসাঈ, ইবন মাযাহ্‌, আল-হাকীম)
  2. আমীর বিন সাদ কর্তৃক বর্ণিতঃ একজন ব্যক্তি সালাহ্‌ পড়তে আসল যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাহ্‌ পড়ছিলেন এবং তিনি (ঐ ব্যক্তি) বললেন, “হে আল্লাহ্‌, আমি তোমার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিসটির প্রার্থনা করি যা তুমি ন্যায়পরায়ণ দাসদের প্রদান করেছ”, যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাহ্‌ শেষ করলেন, তিনি ফিরলেন এবং বললেনঃ “কে সেই ব্যক্তি যে কিছুক্ষণ পূর্বে কথা বলছিল?” ঐ ব্যক্তি বললঃ “ হে আল্লাহর রাসূল, আমি সেই ব্যক্তি”, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “তোমার ঘোড়াকে হত্যা করা হবে এবং তুমি শহীদ হবে।” (ইবন ছাব্বান – আল-হাকীম (সাহাবী কর্তৃক পরিশুজ) আবু ইয়ালা – বাযার)
  3. আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য শুধুমাত্র তাঁর রাহে যুদ্ধ করতে বেরিয়ে পড়ে এবং তাঁর এবং তাঁর রাসূলগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করার অথবা যুদ্ধলব্ধ পুরস্কার বা গণীমতের মাল নিয়ে বাসায় প্রত্যাবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিবেন। তাঁর নামের শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় আহত হয়, বিচার দিবসে সে এ আঘাত নিয়েই উপস্থিত হবে, তার রক্তের বর্ণ হবে পৃথিবীর রক্তের মতোই কিন্তু গন্ধ হবে মিশকের। তাঁর নামের শপথ যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, যদি এটা মুসলমানদের জন্য কঠিন না হত, তাহলে আমি কোন ফৌজকে আল্লাহর রাস্তায় বের করে পিছনে থেকে যেতাম না। কিন্তু যারা পেছনে থেকে যায় তাদের জন্য খাদ্য নেই এবং তাদের কিছুই নেই এবং এটা তাদের জন্য কঠিন যে আমি চলে যাব তাদেরকে পেছনে ফেলে। তাঁর নামের শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, এমন যদি হত যে আমি আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করতাম এবং অতঃপর নিহত হতাম এবং অতঃপর যুদ্ধ করতাম এবং অতঃপর নিহত হতাম এবং অতঃপর যুদ্ধ করতাম এবং অতঃপর নিহত হতাম।” (মুসলিম)
  4. যবির কর্তৃক বর্ণিত যে তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উহুদ যুদ্ধে শহীদদের কথা উল্লেখ করতে শুনেছেন এবং অতঃপর তিনি বলেনঃ “আমি যদি আমার সঙ্গীদের সাথে পর্বতের নীচে মৃত্যুবরণ করতে পারতাম!” [আল-হাকিম (যাহাবী কর্তৃক পরিশুদ্ধ)] [অর্থ: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশা করেছিলেন তাদের সাথে উহুদের পর্বতের নীচে মৃত্যুবরণ করার।]
  5. ইশাক বিন সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস কর্তৃক বর্ণিত যে, তার পিতা তাকে বলেছেন যে, আব্দুল্লাহ বিন জাহ্‌শ তাকে উহুদের যুদ্ধে যাওয়ার আগে বলেছিলেনঃ “চল যাই এবং দু’আ করি।” সুতরাং তারা বেরিয়ে পড়ল এবং সাদ প্রথমে গেল। তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ, যদি আগামীকাল আমরা শত্রুদের মুখোমুখি হই তবে আমাকে একজন কঠিন শত্রুর মুখোমুখি করুন যেন আমি তোমার জন্য তার সাথে যুদ্ধ করতে পারি এবং সে আমার সাথে যুদ্ধ করতে পারে। অতঃপর আমার দ্বারা তাকে পরাজিত করুন এবং তাকে মৃত্যু দান করুন।” অতঃপর আব্দুল্লাহ্‌ দু’আ করলেনঃ আমাকে একজন কঠিন (শক্তিশালী) যোদ্ধার সম্মুখীন করুন যেন আমি তোমার জন্য তার সাথে যুদ্ধ করতে পারি এবং সে আমার সাথে যুদ্ধ করতে পারে। অতঃপর তার মাধ্যমে (হাতে) আমাকে মৃত্যু দান করুন এবং তারপর সে আমার নাক ও কান কেটে ফেলুক। সুতরাং যখন আমি আপনার সাক্ষাৎ লাভ করব, আপনি আমাকে প্রশ্ন করবেন, “হে আব্দুল্লাহ্‌! তোমার নাক ও কান কেন কেটে ফেলা হয়েছে?” আমি উত্তর দেবঃ “এগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে তোমার রাহে (জন্য) এবং তোমার রাসূলের জন্য” এবং এরপর আপনি বলবেনঃ “হ্যাঁ, তুমি সত্যি বলেছ”। ইশাক বিন সাদ বললেনঃ আমার পিতা বললেনঃ “হে আমার পুত্র, আব্দুল্লাহ দু’আ, আমার দু’আ অপেক্ষা উত্তম। আমি তাকে শেষ দিবসে তার নাক এবং কান দড়ির সাথে বাঁধা অবস্থায় পেয়েছি।” [আল-হাকিম (অব এ্ষধযধনর কর্তৃক পরিশুদ্ধ]
  6. উমার বিন খাত্তাব সবসময় বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার রাসূলের শহরে তোমার নিকট শাহাদাহ্‌ প্রার্থনা করি।”
  7. থালাবী বলেন যে আমর বিন আল-আস বলেনঃ আমি ইয়ারমুকে আমার ভাই হিশামের সাথে ছিলাম এবং আমরা আমাদের রাত এই দু’আ করে আতিবাহিত করলাম যে আল্লাহ্‌ যেন আমাদেরকে শাহাদাহ্‌ প্রদান করে আমাদের ধন্য করেন। পরের দিল আমার ভাই তা প্রাপ্ত হয় কিন্তু আমি হইনি।
  8. আনাস কর্তৃক বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “জান্নাতের একজন ব্যক্তিকে আল্লাহ্‌ প্রশ্ন করবেনঃ “ হে আদম সন্তান, তুমি কি তোমার অবস্থা (আবাস) নিয়ে পরিতৃপ্ত” যে তখন বলবেঃ “হে আমার রব! এটা হল শ্রেষ্ঠ স্থায়িত্ব (অবস্থা বা আবাস)!” আল্লাহ বলবেনঃ” তুমি আমার নিকট যা ইচ্ছে চেয়ে নাও।” সে বলবেঃ “আমি চাই যে তুমি আমাকে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে দাও যেন আমি তোমার জন্য দশ বার মৃত্যুবরণ করতে পারি।” সে এটা বলে যখন সে শাহাদাহ্‌র মহান সম্মান (মর্যাদা) দেখে। অতঃপর আল্লাহ্‌ জাহান্নামের আগুনের একজন ব্যক্তিকে প্রশ্ন করবেনঃ “হে আদম সন্তান, তোমার কাছে তোমার অবস্থা কেমন লাগছে?” সে বলবেঃ হে আমার রব; এটা হল নিকৃষ্ট অবস্থা (বাসস্থান)! আল্লাহ তাকে প্রশ্ন করবেনঃ তুমি কি পুরো পৃথিবী পূর্ণ স্বর্ণের বিনিময়ে নিজেকে এটা থেকে মুক্ত করতে চাও?” সে বলবেঃ “হ্যাঁ” আল্লাহ্‌ তাকে বলবেনঃ “তুমি মিথ্যে বলছ। আমি তোমার কাছে তার চেয়েও কম চেয়েছিলাম এবং তুমি তা করনি, ” (আল-হাকিম – আল-নাসাঈ – আবু আওলাহ্‌)

যদি জান্নাতের বাসিন্দাগণ শাহাদাহ্‌ কামনা করে যদিও তাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে, তবে কিভাবে আমরা তা প্রার্থনা করবোনা, যখন আমরা দুঃখ, বেদনা, প্রতারণা এবং খারাপের মাঝে বসবাস করি। এবং আমরা এমনকি এটাও জানিনা যে, আমরা জান্নাত প্রাপ্ত হব নাকি জাহান্নামের আগুন!

  1. খালিদ বিন আল-ওয়ালিদ বলেনঃ “যদি আমাকে বিয়ের জন্য এমন কোন সুন্দরী নারী প্রদান করা হয় যাকে আমি ভালবাসি। অথবা যদি আমাকে নবজাতক পুত্র সন্তান লাভের সুসংবাদ প্রদান করা হয়, তবে এগুলো আমার কি নিকট একটি বরফ শীতল রাতে বাহিনীর সাথে পরের দিন সকালে শত্রুদের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রতীক্ষারত থাকা – অপেক্ষা কম পছন্দনীয় হবে! আমি তোমাদেরকে জিহাদে যাওয়ার পরামর্শ দেই (দিচ্ছি)।” (ইবন আল-মুবারাক)। এগুলো ছিল খালিদের মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বের কথা।
  2. আব্দুল্লাহ বিন উমার বলেনঃ উহুদ যুদ্ধের সময় আমার পিতা উমার, তার ভাই যাইদকে বলেনঃ “ আমার বর্ম নিয়ে নাও” যাইদ উত্তর দিলেনঃ “আমি শাহাদাহ্‌ প্রার্থনা করছি, ঠিক যেভাবে তুমি প্রার্থনা করছ এবং সে তা নিতে অসম্মত হল। পরিশেষে তার দু’জনই এটি ছেড়ে চলে গেলেন (যুদ্ধে)। (আবু নাঈম – আল-হিলইয়া – তে) যাইদ ছিলেন উমার – এর বড় ভাই। তিনি উমারের পূর্বে মুসলিম হন। তিনি খুব লম্বা ব্যক্তি ছিলেন। তিনি উহুদের যুদ্ধের সময় শাহাদাহ্‌ অন্বেষণ করেছিলেন কিন্তু তখন তা পাননি। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর মৃত্যুর পরও তিনি বেঁচে ছিলেন – এবং আল-ইয়ামামাহ্‌ – এর যুদ্ধের সময় তিনি মুসলিম ফৌজের পতাকা বহন করেছিলেন। তিনি তা নিয়ে দৃঢ়ভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তার তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করছিলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে হত্যা করা হয় এবং পতাকা নিচে পড়ে যায়। পরবর্তীতে সেটা আবু হুযাইফার দাস সালিম তুলে নেন। যখন তার মৃত্যু সংবাদ উমারের নিকট পৌঁছালো তখন তিনি প্রচন্ড মনক্ষুন্ন হলেন। তিনি বললেনঃ “আমার ভাই মুসলিম হয়েছেন আমার পূর্বে এবং এরপর শাহাদাহ্‌ জয় করেছেন আমার পূর্বে, “তিনি পরবর্তীতে বলেনঃ “যখনই পূর্ব দিক থেকে কোন বাতাস প্রবাহিত হয়, এটা আমাকে আমার ভাই যাইদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।” (যাইদ ইয়ামামা – তে নিহত হয় যে স্থানটি ছিল মদিনার পূর্ব দিকে)
  1. সালিহ বিন আকতাম তার পুত্রকে বলেনঃ “হে আমার পুত্র, সম্মুখে এগিয়ে যাও এবং যুদ্ধ কর!” তার পুত্র সম্মুখে অগ্রসর হল এবং নিহত হল। পরবর্তীতে সালিহ নিজেও নিহত হয়েছিলেন। যখন একজন মহিলা সালিহের স্ত্রী মুওয়াযাহ্‌র নিকট তার স্বামী এবং পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে আসল, তখন মুওয়াযাহ্‌ সেই মহিলাকে, যে শোক প্রকাশ করতে এসেছিল, তাকে বললেনঃ “যদি তুমি আমাকে অভিনন্দন জানাতে এসে থাক, তবে স্বাগতম। যদি তুমি এখানে শোক প্রকাশ করতে এসে থাক তবে তুমি অবশ্যই এ স্থান ত্যাগ কর।” (ইবন আল-মুবারাক আল-যাহাবী (সেয়ার আলাম – এ) আবু নাইম (হিলইয়াহ্‌ – তে) ইবন সা’দ (তাবাকাত – এ))
  2. সা’দ ইবন ইব্রাহীম বর্ণনা করেন যে, কাদিসীয়াহ্‌ যুদ্ধের সময় তারা এমন একজন ব্যক্তির পাশ দিয়ে গেলেন যার হাত এবং পা গুলিকে যুদ্ধের সময় কেটে ফেলা হয়, তিনি রক্তের ওপর গড়াচ্ছিলেন এবং তিলাওয়াত করছিলেনঃ “আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হয়, তবে এইরূপ ব্যক্তিগণও সেই মহান ব্যক্তিগণের সহচর হবেন যাদের প্রতি আল্লাহ্‌ তা’আলা অনুগ্রহ করেছেন অর্থাৎ নবীগণ এবং সিদ্দীকগণ এবং শহীদগণ এবং নেক্কারগণ। আর এই মহাপুরুষগণ অতি উত্তম সহচর।” (আল-নিসাঃ ৬৯) তার বললেনঃ “তুমি কে?” তিনি বললেনঃ “আল-আনসার – এর মধ্য থেকে একজন।” (ইবন আবি শায়বাহ্‌)

শাহাদাহ্‌ – র ফযীলতঃ

শাহাদাহ হল একটি বিশাল রহমত এবং এই মর্যাদা শুধুমাত্র খুব ভাগ্যবান ব্যক্তি ছাড়া আর কাউকে দেওয়া হয়না ৷ শহীদরা রাসূলগণের সাথে জান্নাতে সঙ্গী হবেনঃ “আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হয়, তবে এইরূপ ব্যক্তিগণও সেই মহান ব্যক্তিগণের সহচর হবেন যাদের প্রতি আল্লাহ্‌ তা’আলা অনুগ্রহ করেছেন অর্থাৎ নবীগণ এবং সিদ্দীকগণ এবং শহীদগণ এবং নেক্কারগণ। আর এই মহাপুরুষগণ অতি উত্তম সহচর।” (আল-নিসাঃ৬৯) শহীদদেরকে “শহীদ” হিসেবে সম্বোধন করার কারণকে আলেমরা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখেছেন। (শহীদ – এর আরবী অর্থ হল “প্রত্যক্ষদর্শী বা সাক্ষী”) সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিম্নরুপঃ

  • কারণ, আল্লাহ্‌ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ সাক্ষী যে, এমন ব্যক্তির জন্য জান্নাত অনুমোদিত। (অর্থাৎ জান্নাত প্রদত্ত হবে)।
  • কারণ, তাদের আত্মা জান্নাতের সাক্ষ্য দেয়। এটি হল আল-কুরতুবীর মতামত।
  • কারণ, তারা তাদের এবং আল্লাহর মধ্যকার চুক্তির (ক্রয় – বিক্রয়), প্রত্যক্ষদর্শী (সাক্ষী) যা এই আয়াতে উল্লিখিতঃ “নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌ তা’আলা বিশ্বাসীদের (মুমিনদের) নিকট থেকে তাঁদের প্রাণ ও তাঁদের ধন – সম্পদকে ইহার বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন যে, তাঁরা জান্নাত পাবেন; অর্থাৎ তাঁরা আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে। ফলে তাঁরা হত্যা করে এবং নিহত হয়ে যায়। এর (অর্থাৎ এ যুদ্ধের) দরুন (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে এবং ইনজীলে আর কোরআনে; আর কে আছে অঙ্গীকার পালনকারী আল্লাহ্‌ অপেক্ষা অধিক? অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাকো তোমাদের এই ক্রয় – বিক্রয়ের উপর যা তোমরা সম্পাদন করেছ; আর এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা।” (আত-তাওবাহঃ ১১১)
  • যখন শহীদের আত্মা তার শরীর ছেড়ে চলে যায় তখন তা প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পায় আল্লাহর দানসমূহ যা তিনি (আল্লাহ্‌ তা’আলা) তার জন্য পূর্বে প্রস্তুত করে রেখেছেন। আল্লাহ্‌ শহীদদেরকে বহুবিধ পুরস্কার প্রদান করেছেন। সেগুলোর মধ্যে একটি হল যে, শহীদরা জীবিত “আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদের সম্বন্ধে এরূপ বলোনা যে, “তারা মৃত” বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা অনুভব করতে পারনা।” (আল-বাকারাহঃ ১৫৪)
  1. ইবন আব্বাস হতে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ শহীদরা নদীর তীরে জান্নাতের দরজার পাশে একটি সবুজ বর্ণের গম্বুজের মধ্যে আছেন। তারা সকালে ও রাতে জান্নাত হতে আহার প্রাপ্ত হয়। [আহমাদ – ইবন আবু শায়বাহ – তাফসীর আল-তাবারী আল-হাকিম (যাহাবী কর্তৃক পরিশুদ্ধ)]

আলেমরা শহীদদের “জীবন” – এর সারমর্ম ব্যাখ্যা করেছেনঃ আল-কুরতুবী বলেন যে, শহীদরা সত্যিকার অর্থেই জীবিত, তাদের শরীর মৃত কিন্তু আত্মা মৃত নয়। অন্যান্য জীবিত মুসলিমদের সাথে পার্থক্য শুধু এটাই যে তারা জান্নাত থেকে খাবার প্রাপ্ত হয় যেখানে অন্য বিশ্বাসীগণ (মুসলিমগণ) তা পায় না। মুজাহিদ বলেন যে, জান্নাতের ফল থেকে শহীদের আহার করানো হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা সেটার ভেতরে অবস্থান করছে না। অন্যরা বলেন যে, শহীদদের আত্মা জান্নাতের সবুজ পাখিদের মধ্যে রয়েছে। আল-কুরতুবী এই মতামতটি গ্রহণ করেছেন তা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথার অনুরূপ। আল-কুরতুবী আরো বলেন যে, শহীদরা প্রতি বছর যুদ্ধ করার পুরস্কার প্রাপ্ত হবে এবং তারা প্রতিটি জিহাদের পুরস্কারের অংশ প্রাপ্ত হবে বিচার দিবস পর্যন্ত।

আমার মত হচ্ছে, শহীদদের জীবন বিভিন্ন এবং তা শহীদদের মর্যাদার ওপর নির্ভর করেঃ

  • কিছু শহীদের আত্মা জান্নাতের পাখিদের মধ্যে থাকবে। জান্নাতে যেখানে ইচ্ছে তারা উড়ে বেড়াবে।
  • অন্যরা নদীর ওপর জান্নাতের দরজার পাশে থাকবে এবং প্রতিদিন ও প্রত্যেক রাতে তারা জান্নাত হতে তাদের আহার প্রাপ্ত হবে।
  • অন্যদের আত্মা ফেরেশতাদের সাথে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছে উড়ে বেড়াবে ৷
  • অন্যরা জান্নাতে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে (অধিষ্ট হবে)।

মাটি শহীদদের শরীর ধ্বংস করেনাঃ

শহীদের শরীর পচে যায়না।

  1. আব্দুল রহমান বিন সাসাহ বলেনঃ আমাকে বলা হয়েছে যে, আমর বিন জামুহ এবং আব্দুল্লাহ্‌ বিন আমর (দু’জনেই আনসার ছিলেন) উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদেরকে একই কবরে করব দেন। মুয়াবিয়ার শাসনকালে প্রচন্ড বন্যার কারণে কবরস্থানটি প্লাবিত হয় ফলে কবর পরিবর্তনের জন্য (স্থান পরিবর্তন) তাদের কবরটি উন্মুক্ত করা হয়। যখন তাদের কবর খোলা হয়। তখন তাদের শরীর অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়, মনে হচ্ছিল যে তাঁরা যেন গতকালই মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ঘটনাটি ঘটেছিল তাদের মৃত্যুর ৪৬ বছর পর। (ইমাম মালিক)

এমনই একটি ঘটনা এখানে বর্ণনা করা হলঃ

  1. জাবির বর্ণনা করেন, মুয়াবিয়া বলেনঃ “এই কবরস্থানে (উহুদের যুদ্ধে শহীদদের কবরস্থান) যে শহীদগণ রয়েছে, তাদের দেহাবশেষ সরাতে হবে”। জাবির বলেনঃ “আমরা তাঁদের কবর থেকে তাঁদের অক্ষত শরীর উদ্ধার করলাম (বের করলাম) (মনে হচ্ছিল যে, তারা জীবিত)। সেগুলোর মধ্যে একজনের শরীর ছিল যার পায়ে কুড়াল দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল (যুদ্ধের সময়) এবং সেখান থেকে তখনও ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়ছিল।” (ইবন আল-মুবারক, আব্দুল রাযাক)।
  2. ইবন আব্বাসের ছেলে বলেনঃ “আমি আমার আত্মীয় হামযাহ – এর কবরের নিকট যাই এবং তাঁর শরীর বের করি এবং তা ছিল অপরিবর্তিত।”
  1. উল্লেখ করা হয় যে, উমারের শাসনকালে আসহাবে উখদুদের ছেলেটির কবর পাওয়া যায়। তার হাত তার মাথার সেই স্থানে ছিল যেখানে তীরটি বিদ্ধ হয়েছিল। (তিরমিযী সম্মত গ্রহণযোগ্য)
  2. আল-কুরতুবী বলেন যে, মদিনার জনগণ বর্ণনা করে যে, ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের শাসনামলে যখন মদিনার গভর্নর ছিলেন উমার বিন আব্দুল আযীয, তখন একবার রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কবরের দেওয়াল ধ্বংস প্রাপ্ত হয় (ভেঙ্গে পড়ে)। দেওয়াল ভেঙ্গে পড়ার কারণে একটি পা এর পাতা উন্মুক্ত হয়ে পরে এবং জনগণ এটা ভেবে ভীত হয় যে, সেটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পায়ের পাতা কিনা। উমারের নাতি আসে এবং পায়ের পাতা সনাক্ত করে এবং বলে যে সেটি হল তারা দাদা উমার এর পাদদেশ। উমারের (শাহাদাতের) মৃত্যু হয়েছিল।

যদি শহীদদেরকে জীবিত বিবেচনা করা হয়, তবে তাদের জন্য অন্য মৃতদের ন্যায় সালাহ্‌ (জানাযা) পড়ার বিধান নেই। গোসল করানোর ব্যাপারে ইমাম মালিক, শাফীঈ, এবং আবু হানীফা বলেন যে, শহীদদের গোসল করানো উচিৎ নয়। বুখারী শরীফে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেন উহুদ যুদ্ধের শহীদদের গোসল এবং জানাযার সালাহ্‌ ব্যতীত কবর দেওয়ার জন্য (দাফন করার)। শহীদদের গোসল না করানোর কারণ হল যে, বিচার দিবসে তাদের রক্ত সাক্ষী হবে (সাক্ষ্য দেবে)৷ আল-হাসান এবং ইবন আল-মুসায়াব বলেন যে, শহীদদের গোসল করানো উচিৎ। কিন্তু অধিক নির্ভরযোগ্য মত হল যে, তাদের গোসল করানো যাবেনা। জানাযার সালাহ্‌ পড়ানো ব্যাপারে, ইমাম মালিক, শাফীঈ এবং আহমাদ বলেন যে, শাহীদদের জন্য এ সালাহ (জানাযা) পড়া হয় না। কিন্তু কুফাহ এবং বসরা – র স্কলাররা ভিন্ন মত পোষণ করেন। অধিক নির্ভরযোগ্য মত হল, শহীদদের জন্য কোন জানাযার সালাহ্‌ নেই।

উপরিউক্ত সকল উক্তি হল যুদ্ধক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির মৃত্যু বিষয়ক। কিন্তু যদি কোন যোদ্ধা যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হয় কিন্তু অতঃপর অন্য স্থানে যায় এবং পানাহার করে কিন্তু চূড়ান্তভাবে সেই ক্ষতের কারণে তার মৃত্যু হয়, তবে এমন ব্যক্তিকে গোসল করানো এবং জানাযার সালাহ পড়ানোর বিধান রয়েছে। সাহাবারা উমারের (রাঃ) – এর ক্ষেত্রে ঠিক এমনই করেছিলেন যখন তাকে হত্যা করা হয়েছিল।

শহীদদের বৈশিষ্ট্য (ফযীলত)

আল্লাহর পক্ষ থেকে শহীদরা প্রচুর ফযীলত প্রাপ্ত হয়। যেমনঃ

আল্লাহর জন্য পুনরায় মৃত্যু কামনা করাঃ

শহীদগণ ব্যতীত আর কেউই জান্নাত থেকে বের হতে চাবে না, জান্নাতে প্রবেশের পর যদিও তাকে পৃথিবী এবং তার মধ্যে যা কিছু রয়েছে সব দেওয়া হয়। সে (শহীদ) চায় জান্নাত ছেড়ে পুনরায় পৃথিবীতে আসতে এবং পুনরায় আল্লাহর জন্য (রাহে) নিহত হতে। সহীহ্‌ মুসলিমে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “শহীদগণ ব্যতীত আর কারোরই জান্নাতে প্রবেশের পর আর কখনই পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থাকবেনা। সে (শহীদ) পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের আকাঙ্ক্ষা রাখে আল্লাহর রাহে আরো দশবার নিহত হওয়ার ইচ্ছার দরুন। কারণ সে সেদিন দেখতে পাবে যা আল্লাহ্‌ শহীদদের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন” আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে বলেনঃ “তাঁর নামের শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, আমি আশা করি আমি আল্লাহর কারণে (পথে) যুদ্ধ করব অতঃপর নিহত হব এবং আবার যুদ্ধ করব অতঃপর আবার নিহত হব এবং আবার যুদ্ধ করব এবং অতঃপর আবার নিহত হব।”

সকল পাপের ক্ষমাঃ

যে মুহূর্তে শহীদের আত্মা তার শরীর ছেড়ে যাবে সে মুহূর্তে সে তার কৃত সকল পাপ পেছনে ফেলে যাবে। সহীহ্‌ মুসলিমে আছেঃ আবু কাতাদাহ্‌ বলেন, একদা এক খুতবায় আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন যে, আল্লাহর পথে জিহাদ এবং ঈমান হল সকল কাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। ফলে, একজন ব্যক্তি দাঁড়ালো এবং বললঃ “ হে আল্লাহর রাসূল, যদি আল্লাহর পথে আমাকে হত্যা করা হয় তবে কি তার কারণে আমার সকল পাপ মাফ করে দেওয়া হবে?” রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “ হাঁ যদি তুমি দৃঢ়তা, আন্তরিকতার সাথে শত্রুর মোকাবিলা কর এবং পলায়ন না করে মারা যাও।” লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “হ্যাঁ যদি তুমি দৃঢ়তা, আন্তরিকতার সাথে শত্রুর মোকাবিলা করে এবং পলায়ন না করে মারা যাও এবং তুমি ঋণগ্রস্ত না থাক, জিবরাইল আমাকে এটি বলেছেন।”

  1. আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আল-আস বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “ঋণ ব্যতীত শহীদের আর সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (মুসলিম – আল-হাকিম – আহমদ) আল-কুরতুবী ঋণ দ্বারা এখানে যা বুঝানো হচ্ছে সেটা হল, যখন সেই শহীদের সামর্থ্য ছিল সেই ঋণ ফিরিয়ে দেওয়ার কিন্তু সে তা দেয়নি অথবা তার পক্ষে স্বেচ্ছায় লিখিত দেওয়ার সুযোগ ছিল এবং সে তা করেনি। এর মধ্যে সেই অর্থ অন্তর্ভুক্ত যা সে কোন অপচয়ের কারণে ধার করে এবং তা ফেরত দেয়নি। কিন্তু যখন শহীদ দারিদ্য ও চরম প্রয়োজনের কারণে অর্থ ধার নেয় এবং অতঃপর তা ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য না থাকে, তবে তা তাঁর জান্নাতে প্রবেশের প্রতিবন্ধক হবেনা। এক্ষেত্রে, সুলতান তার ঋণ পরিশোধ করবে। যদি তা না হয়, তবে আল্লাহ্‌ নিজে তার জন্য সেই ঋণ পরিশোধ করে দিবেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “যখন তুমি ধার নেও এবং আন্তরিকতার সাথে তা পরিশোধ করার সংকল্প রাখ, তবে আল্লাহ তা পরিশোধ করে দিবেন। এবং যখন তুমি নষ্ট করার ক্ষেত্রে ধার করবে তখন আল্লাহ্‌ তা নষ্ট করে দেবেন।” (বুখারী)
  2. আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “শহীদের সাতটি বৈশিষ্ট্য থাকেঃ তাঁর (ক্ষত থেকে) প্রথম রক্ত বিন্দু ঝরার সাথে সাথে তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে….” (আহমাদ আল-তাবারানী)
  3. আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আল-আস বলেনঃ যখন কোন দাস আল্লাহর জন্য (রাহে) নিহত হয়। তাঁর রক্তের প্রথম ফোঁটা মাটি স্পর্শ করার সাথে সাথেই তাঁর সমস্ত পাপ ক্ষমা হয়ে যায়।

ফেরেশতারা তাদের পাখা দ্বারা শহীদকে ছায়া দেয়ঃ

  1. জাবির বর্ণনা করেন যে, তার পিতার বিকৃত মৃত দেহ আল্লাহর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে আনা হয়। আমি তার মুখের কাপড় সড়াতে চাচ্ছিলাম কিন্তু কিছু মানুষ আমাকে তা করতে নিষেধ করল। অতঃপর আমরা কিছু নারীর কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তোমরা কেন কাঁদছ? ফেরেশতারা এখনও তাঁকে ছায়া প্রদান করছেন।” (বুখারী – মুসলিম)

শাহাদাহ্‌ জান্নাতের প্রতিশ্রুতি বহন করেঃ

আল্লাহ্‌ বলেনঃ “নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌ তা’আলা বিশ্বাসীদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন – সম্পদ সমূহকে এর বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন যে, তারা জান্নাত লাভ করবে।” (তাওবাহঃ১১১)

আল্লাহ্‌ বলেনঃ ……. আর যারা আল্লাহ্‌র রাস্তায় নিহত হয়, আল্লাহ তাদের আমল কখনও বিনষ্ট করবেন না। আল্লাহ্‌ তাদেরকে গন্তব্য (মকসুদ) পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিবেন এবং তাদের অবস্থা ঠিক রাখবেন এবং তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন……।” (মুহাম্মাদ ৪ – ৬)

  1. সামুরাহ বিন জুনদুব বর্ণনা করেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ গতরাতে আমি দু’জন ব্যাক্তিকে স্বপ্নে দেখেছি যারা আমার সাথে উপরে আরোহণ করে এবং আমাকে একটি গাছের ওপর নিয়ে যাওয়া হয় এবং এমন এক প্রসাদে আমরা প্রবেশ করি যার মত সুন্দর প্রাসাদ আমি আগে কখনোই দেখিনি। তারা বললঃ “এই প্রাসাদ হল শহীদদের জন্য।” (বুখারী)
  2. আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহ দু’জন ব্যক্তির প্রতি হাসেন, যাদের মধ্যে একজন অপরজনকে হত্যা করে এবং তার দু’জনই জান্নাতে প্রবেশ করে।” তারা বলে, “ কিভাবে তা ঘটবে হে আল্লাহর রাসূল?” তিনি বলেনঃ “একজন অপরজনকে হত্যা করে, ফলে যাকে হত্যা করা হল (নিহত ব্যক্তি) সে জান্নাতে প্রবেশ করল (শহীদ) এবং হত্যাকারী ব্যক্তি যখন ইসলামে প্রবেশ করে এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং শহীদ হিসেবে নিহত হয় এবং জান্নাতে প্রবেশ করে।” (বুখারী – আল-নাসাঈ – মুসলিম)
  3. আনাস কর্তৃক বর্ণিতঃ হারিযাহ – এর মা, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি আমাকে আমার পুত্র হারিযাহ সম্পর্কে বলবেন নাঃ যদি সে জান্নাতে না থাকে তবে আমি তার জন্য কাঁদব (অশ্রু বিসর্জন করব)।” (বদর যুদ্ধে হারিযাহ একটি বিক্ষিপ্ত তীরের আঘাতে মৃত্যুবরণ করে)। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তুমি কি তোমার জ্ঞান বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছ! জান্নাত শুধু একটি নয়। অনেকগুলি এবং তোমার ছেলে সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাতে অবস্থান করছে: আল-ফিরদাওস।” (বুখারী)।

জান্নাতে সবুজ পাখির অভ্যন্তরে অবস্থানঃ

  1. ইবন আব্বাস কর্তৃক বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “যখন উহুদ যুদ্ধে তোমাদের ভাইরা নিহত হয়, আল্লাহ্‌ তাঁদের আত্মাগুলো সবুজ পাখির অভ্যন্তরে প্রবেশ করান যারা জান্নাতের নদীর তীরগুলিতে উড়ে বেড়ায় এবং সেখানকার ফল আহার করে। রাতে এই পাখিগুলো তাদের সন্ধ্যা কাটায় আল্লাহর সিংহাসনে ঝুলন্ত লন্ঠনের মাঝে। যখন শহীদরা তাদেরকে প্রদত্ত আল্লাহর অনুগ্রহ সমূহ দেখতে পায়, তখন বলেঃ “কে আমাদের ভাইদের বলে দেবে যে, আমরা জান্নাতে অবস্থান করছি যেন তারা জিহাদ উপেক্ষা না করে এবং যুদ্ধ বন্ধ না করে।” অতঃপর আল্লাহ্‌ আয়াত নাযিল করেনঃ “আর যারা আল্লাহ্‌ তা’আলার পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত ধারণা করনা, বরং তারা জীবিত, স্বীয় রবের নৈকট্যপ্রাপ্ত, তারা রিযিকও প্রাপ্ত হয়। তারা পরিতুষ্ট ও ঐ সমস্ত বস্তুতে যা তাদেরকে আল্লাহ্‌ তা’আলা স্বীয় অনুগ্রহে দান করেছেন, আর যারা তাদের নিকট পৌঁছেনি, পেছনে (দুনিয়াতে) রয়ে গিয়েছে। তারা (শহীদানরা) তাদের অবস্থা উপভোগ করে, এবং দুনিয়া থেকে পরবর্তীতে যারা তাদের সাথে যোগ দিবে – তার খবর শুনতে থাকে, এবং তারা কখনো বিষণ্ণ হবেনা। তারা আনন্দিত আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহ পেয়ে, আর এটা এই জন্য যে আল্লাহ্‌ মুমিনদের আমলের প্রতিদান ব্যর্থ করেননা। (আল-ইমরানঃ ১৬৯ – ১৭১) (আবু – দাউদ, মুসলিম)

তাঁদেরকে কবরে শাস্তি প্রদান করা হবেনাঃ

একটি হাদিস আছে যেখানে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তির মৃত্যু রিবাতে হবে তাকে কবরে পরীক্ষা করা হবেনা। যদি রিবাতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হয়, তাহলে যে ব্যক্তি শহীদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করে তার ক্ষেত্রেও নিশ্চয় প্রযোজ্য হবে। কবরের প্রশ্নোত্তরের অর্থ হল মানুষের বিশ্বাস পরীক্ষা করা। যখন একজন ব্যক্তি আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করে শহীদ হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে সে দেখে যে – তার মাথার ওপর দিয়ে আকস্মিক কোন তলোয়ার চলে গেছে, তার পাশে বিক্ষিপ্ত বর্শা এবং তীর ছুটে এসেছে, এবং সে আরো দেখে মানুষের মাথা এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকৃতভাবে কেটে ফেলা হয়েছে – তবুও সে ব্যক্তি পেছনে হটে যায় না বরং মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করে যায়, তাদের আত্মাকে আল্লাহর জন্য ছেড়ে দেয়, তাদের জন্য এটাই ঈমানের যথেষ্ট পরীক্ষা ৷

শিঙ্গায় ফুঁৎকারের ফলে সৃষ্ট আতঙ্ক হতে শহীদ মুক্ত থাকবেঃ

  1. সাঈদ বিন জুবাইরকে প্রশ্ন করা হয়, যে নিচের আয়াতে আল্লাহ কাদেরকে ব্যতিক্রম বুঝিয়েছেন (কারা এ আতঙ্কের অন্তর্ভুক্ত নয়)? “এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে, তখন আসমান ও জমীনের অধিবাসীদের মৃত্যু হবে, কিন্তু আল্লাহ্‌ যাকে চান (সে ব্যতীত)” তিনি বলেনঃ “তাঁরা হলে শহীদগণ। প্রত্যেকেই মৃত্যুবরণ শুধু তারা ছাড়া (শহীদরা), তাঁরা তাঁদের হাতে তাঁদের তলোয়ার নিয়ে আল্লাহর সিংহাসনের চারপাশে অবস্থান করেন।” (ইবন আল-বারাকাহ্‌ – বুখারী, আল-কাবীরে, আবু নাঈম – আল-তাবারী তাফসীরে – আল-সাইয়ুতি এটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন. আল-হাকিম (আল-যাহাবী এর পরিশুদ্ধতা নিশ্চিত করেছেন )
  2. আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরাঈল (আঃ) – কে জিজ্ঞেস করেন যে, কারা শিঙ্গায় ফুঁৎকারের আতঙ্ক থেকে পরিত্রাণ পাবেন। জিবরাঈল (আঃ) বলেন – তাঁরা হলে শহীদগণ। (আল-হাকিম)

শহীদ ব্যক্তি তাঁর পরিবারের ৭০ জনের জন্য সুপারিশ করতে পারেঃ

  1. নিমরান বিন উতবাহ বলেনঃ আমরা উম্ম আল-দারদাকে দেখতে গেলাম এবং আমরা অনাথ ছিলাম। তিনি (উম্ম আল-দারদা) বললেনঃ “কী আনন্দ! আমি আমার স্বামী আবু আল-দারদাকে বলতে শুনেছি যে, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “একজন শহীদ তার আত্মীয়দের (মধ্য থেকে) সত্তর জনের জন্য সুপারিশ করতে পারবে।” (আবু দাউদ – ইবন হিব্বান – আল-বায়হাকী)।

বিচারের দিবসে শহীদ ব্যক্তি প্রশান্তি অনুভব করবেনঃ

  1. আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “এবং সে (শহীদ ব্যক্তি) সেই দিন প্রশান্তি অনুভব করবে যেদিন চারিদিকে প্রচন্ড ভীতি বিরাজ করবে।” (আহমাদ – আল-তাবারানী)।

শহীদের রক্ত ততক্ষণ পর্যন্ত শুকায় না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জান্নাতে তাঁর স্ত্রীকে দেখতে পায়

  1. আব্দুল্লাহ বিন উবাইদিল্লাহ বিন উমাইর বলেনঃ “যখন দু’পক্ষের শত্রু মুখোমুখি হয়, তখন জান্নাতের নারীরা নিচের জান্নাতে নেমে আসে সেই যুদ্ধ দেখার জন্য। যদি তারা কোন পুরুষকে দৃঢ় অবস্থায় থাকতে দেখে, তারা বলেঃ “হে আল্লাহ্‌ তাকে দৃঢ় রাখ (কর)” কিন্তু যদি সে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে তখন তারা তার থেকে চলে যায়। যদি সে নিহত হয়, তবে তারা তার নিকট আসে এবং তার মুখ থেকে ময়লা মুছে দেয়। [আব্দুল রাযাক (বিশুদ্ধ)]

যে ব্যক্তি শহীদ হয় সে তার চেয়ে উত্তম যে বিজয়ী হয় এবং নিরাপদ ঘরে প্রত্যাবর্তন করেঃ

  1. জাবির কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হন। তিনি বলেনঃ “সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ হল সেটা যেখানে তোমার ঘোড়াকে হত্যা করা হয় এবং তোমারও রক্তপাত হয়।” (ইবন হাববান আহমাদ – ইবন আবু শায়বা)
  2. আমার বিন আবসাহ কর্তৃক বর্ণিতঃ একজন ব্যক্তি বলল “হে আল্লাহর রাসূল, ইসলাম কী?” তিনি বললেনঃ “ইসলাম হল তোমার হৃদয়ের বশ্যতা (আনুগত্য), এবং এই যে, মুসলিমরা তোমার কথা এবং হাত থেকে নিরাপদ।”” সে বলল, “ইসলামের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কী?” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “ঈমান (বিশ্বাস)” সে প্রশ্ন করল, “বিশ্বাসী কী?” রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি উত্তরে বললেন, “ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস।” সে বলল, “ঈমানের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কী” রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “হিজরাহ” সে বলল, “হিজরাহ্‌ কী?” রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “পাপসমূহ পেছনে ফেলে আসা।” সে বলল, “হিজরাহর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কী?” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “জিহাদ” সে বলল, “জিহাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কী?” রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “যে ব্যক্তির ঘোড়া হত্যা করা হয় এবং তারও রক্তপাত হয়।(আহমাদ – আল-তারারানী – আল-বায়হাকী)।

এই হাদিসগুলো স্পষ্ট করে দেয় যে, যে ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়, সে এ ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম যে বিজয় লাভ করে।

  1. আব্দুল্লাহ্‌ বিন উবাইদিল্লাহ্‌ বিন উমাইর বলেনঃ আমর বিন আল-আস কা’বা তাওয়াফ করছিলেন, তিনি একত্রে বসে থাকা কিছু কুরাঈশ ব্যক্তিবর্গের পাশ দিয়ে যান। যখন তারা তাকে দেখল তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল যে, কে উত্তমঃ আমর বিন আল-আস নাকি তার ভাই হিশাম? যখন আমর তাঁর তাওয়াফ শেষ করলেন তখন তিনি তাদের নিকট গেলেন এবং বললেনঃ “আমি তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছি, কি সেটা?” তারা বললঃ “আমরা ভাবছিলাম কে উত্তম আপনি নাকি আপনার ভাই হিশাম।” আমর বিন আল-আস বললেনঃ “আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে বলব।” আমি আমার ভাই হিশামের সাথে ইয়ারমুকে ছিলাম এবং আমরা আল্লাহর কাছে এ দু’আ করে রাত অতিবাহিত করলাম যে, আল্লাহ্‌ যেন আমাদেরকে শাহাদাহ দান করেন। পরের দিন আমার ভাই তা লাভ করে কিন্তু আমি না। সুতরাং তোমরা দেখতে পাচ্ছ যে সে আমার চেয়ে উত্তম ছিল।” (ইবন আল-মুবারাক) এটি আমর – এর একটি সুস্পষ্ট বক্তব্য (কথা) যে, যে ব্যক্তি নিহত হয় সে ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম যে নিহত হয় না ৷

শহীদ একটি সামান্য যন্ত্রণা (কামড়) ছাড়া মৃত্যুর আর কোন কষ্ট অনুভব করেনাঃ

  1. আবু হুরাইরাহ্‌ কর্তৃক বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ একজন শহীদ মৃত্যুর কোন যন্ত্রণাই অনুভব করেনা, শুধুমাত্র একটি পতঙ্গের কামড়ের ন্যায় অনুভব করা ব্যতীত। (তিরমিযী – আল-নাসাঈ – ইবন মাযাহ্‌ – আল-বায়হাকী – আহমাদ – আল-দারিমী)।
  2. “মাযমু” আল-লাতঈফ – এ আছে যে, এক ব্যক্তি বললঃ “হে আল্লাহ্‌, আমার আত্মাকে কোন কষ্ট অনুভব করা ছাড়াই তুমি নিও।” একদিন যখন সে একটি ফার্মের ভেতরে দিয়ে যাচ্ছিল তখন ক্লান্তি অনুভব করল এবং ঘুমানোর জন্য শুয়ে পরল। কিন্তু অবিশ্বাসীরা তার কাছে আসল এবং তার মস্তক কেটে ফেলল। তার এক বন্ধু তাকে একদিন স্বপ্নে দেখল এবং তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। সে বললঃ “ আমি একটি ফার্মে ঘুমিয়েছিলাম এবং যখন আমি জাগ্রত হই তখন দেখি যে আমি জান্নাতে।”
  3. ইবন আল-মুবারক এমনই এক ঘটনা তুলে ধরেন – যুদ্ধে বন্দী দু’জনের ঘটনা। তাদেরকে অবিশ্বাসী (কাফির) নেতা তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করার জন্য হুকুম দেয়। যখন তারা তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করতে অসম্মত হল তখন তাদেরকে একটি পাত্রে নিক্ষেপ করা হয়, যার ভেতর পরপর তিনদিন ধরে তেল উত্তপ্ত করা হয়েছিল। উত্তপ্ত তেলের প্রচন্ড (তীব্র) উত্তাপে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের হাড়গুলো ভেসে উঠল। পরবর্তীতে, তাদের ভাই তাদেরকে স্বপ্নে দেখল এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তারা বললেনঃ “সেটা এমন ছিল যেন তেলের মাঝে প্রথম ডুব দেয়ার সাথে সাথেই আমরা সরাসরি আল-ফিরদাউসে চলে গেলাম!” (আল-ফিরদাউস হল সর্বোচ্চ জান্নাত (সর্বোৎকৃষ্ট))

ফেরেশতাগণ অবিরাম শহীদদের পরিদর্শন করেন এবং তাঁদেরকে সালাম জানানঃ

  1. আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আল-আস কর্তৃক বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রথম যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তাঁরা হলেন দরিদ্র মুহাজিরীন যারা এই উম্মাহকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছেন। যখন তারা শোনে তারা আনুগত্য করে। তাদের মধ্যে হয়ত কারো সুলতানের নিকট চাওয়ার প্রয়োজন পড়ে কিন্তু তারা তা না চেয়েই মারা যায়। বিচার দিবসে আল্লাহ জান্নাতকে ডাকবেন এবং জান্নাত তার সমস্ত সৌন্দর্য এবং চমৎকারিত্ব নিয়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর আল্লাহ্‌ বলবেনঃ কোথায় আমার সেই দাসরা যারা আমার জন্য যুদ্ধ করেছে এবং নিহত অথবা ক্ষত হয়েছে এবং আমার জন্য জিহাদ করেছে? তারা কোন হিসাব (গণনা) ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করুক।” এরপর ফেরেশতাগণ আগমন করবেন এবং আল্লাহর নিকট এসে অবনত হবেন এবং বলবেনঃ “আমাদের রব, আমরা তোমার মহিমা বর্ণনা করি এবং তোমার প্রশংসা করি – দিনে এবং রাতে, কারা সে সকল মানুষ যাদেরকে আপনি আমাদের চেয়েও আধিক্য পছন্দ করেন?”” আল্লাহ্‌ বলবেনঃ “তারা হল এমন মানুষ যারা আমার জন্য যুদ্ধ করেছে এবং তাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।” অতঃপর ফেরেশতাগণ তাদের দর্শনের জন্য প্রতিটি দরজা দিয়ে যাবেন এবং বলবেনঃ “তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক তোমাদের দৃঢ়তার জন্য। কত রহমতের নিবাস।” [আহমাদ – আল-হাকিম (আল-যাহাবী কর্তৃক পরিশুদ্ধ)]

আল্লাহ্‌ শহীদের উপর সন্তুষ্টঃ

  1. আনাস কর্তৃক বর্ণিতঃ কিছু ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকট আসল এবং তাঁকে বলল একজন ব্যক্তিকে শিক্ষকরূপে নির্ধারণ করে দিতে যে তাদেরকে কুরআন এবং সুন্নাহ শিক্ষা দেবে। ফলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্তর জন কুরআনের আলেম প্রেরণ করলেন যাদের মধ্যে আমার চাচা হারাআমও ছিলেন। এসকল ব্যক্তিবর্গ রাতে কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং দিনে পানির খোঁজ করতেন এবং তা মসজিদে নিয়ে আসতেন। তারা কাঠ কাটতে বেড়িয়ে পড়তেন এবং যখন তারা তা বিক্রি করতেন তখন সে অর্থ দিয়ে মসজিদের দরিদ্র মানুষের জন্য খাবার কিনে আনতেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সেখানে পাঠালেন তাদের আদিবাসীদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তখন আদিবাসীদের লোকজন, সেখানে পৌঁছানোর পূর্বেই তাদেরকে হত্যা করল। তাঁদেরকে হত্যা করার পর তাঁরা বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌, রাসূলের নিকট আমাদের সংবাদ পৌঁছে দিন যে আমরা আপনার সাক্ষাৎ লাভ করেছি এবং এটাও যে আপনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট এবং আমরাও আপনার প্রতি সন্তুষ্ট।” আমার চাচাকে একটি বর্শা দ্বারা হত্যা করা হয়। যখন তিনি দেখলেন যে বর্শাটি তাকে ছেদ করছে, তখন তিনি আর্তনাদ করলেনঃ “কা’বার মালিকের নামের শপথ, আমি বিজয় লাভ করেছি!” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “তোমার ভাইদের হত্যা করা হয়েছে এবং তাঁরা বলেছেনঃ “হে আল্লাহ্‌ এ সংবাদটি রাসূলের নিকট পৌঁছে দিন যে, আমরা আপনার সাক্ষাৎ লাভ করেছি এবং আপনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট এবং আমরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট।” (বুখারী – মুসলিম)

শাহাদাহর গ্রহণযোগ্যতার জন্য পূর্বকৃত অন্য কোন ভাল কাজেরই প্রয়োজন হয়নাঃ

  1. আল-বারা বিন আবীব কর্তৃক বর্ণিতঃ একজন লোহার বর্ম পরিহিত ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসলেন এবং বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল, আমি কি যুদ্ধ করব নাকি প্রথমে ইসলামে প্রবেশ করব?” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “ইসলামে প্রবেশ কর অতঃপর যুদ্ধ কর” ইসলামে প্রবেশ করলেন এবং যুদ্ধ করলেন এবং নিহত হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “সে অনেক অল্প করেছে কিন্তু অনেক বেশী পুরস্কৃত হয়েছে।” (বুখারী – মুসলিম)।
  2. আবু মুসা আল-আশআরী কর্তৃক বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি যুদ্ধে ছিলেন তখন একজন অবিশ্বাসী (কাফির) দ্বন্দ্বযুদ্ধ করতে চাইল। একজন মুসলিম তার কাছে গেল কিন্তু সেই কাফিরের দ্বারা নিহত হল। সে (কাফির ব্যক্তি) অপর কোন একজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে ডাকল। আরেকজন মুসলিম গেলেন এবং তিনিও নিহত হলেন। অতঃপর অবিশ্বাসীরা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গেল এবং বললঃ “ আপনি কেন যুদ্ধ করছেন?” রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আমরা যুদ্ধ করি যে পর্যন্ত না মানুষ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া উপাস্য হওয়ার যোগ্য কেউ নেই এবং (এটা যে) মুহাম্মাদ হলেন আল্লাহর প্রেরিত রাসূল এবং (এটাও যে) আমরা আল্লাহর অধিকার পরিপূর্ণ করব।” অবিশ্বাসী ব্যক্তিটি বললঃ “ যা তুমি বল তা প্রশংসনীয়। আমি তা গ্রহণ করলাম (মেনে নিলাম) এরপর তিনি ইসলামে প্রবেশ করলেন এবং মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করলেন। পরে তিনি নিহত হন। ফলে তাকে নিয়ে গিয়ে এ স্থানে কবর দেওয়া হয় যেখানে ঐ দু’ব্যক্তিকে কবর দেওয়া হয়েছিল যাদেরকে সে হত্যা করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “ জান্নাতের অভ্যন্তরে এমন কোন ব্যক্তিরা থাকবেনা যারা পরস্পরকে এদের চাইতে অধিক ভালবাসবে!” [তাবারানী (পরিশুদ্ধ)]

তারা একে অপরকে প্রচন্ড ভালবাসবে কারণ, যাকে হত্যা করা হয়েছে (নিহত ব্যক্তি) সে তার হত্যাকারীকে তার নিজের জান্নাত পাওয়ার কারণ হিসেবে সনাক্ত করবে।

  1. জাবির কর্তৃক বর্ণিতঃ আমরা খাইবার যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম এবং তিনি একদল সৈন্য পাঠালেন যারা একজন মেষপালক নিয়ে প্রত্যাবর্তন করে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই মেষপালকের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেন অতঃপর সে ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করে। সে প্রশ্ন করল রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে প্রশ্ন করলঃ “ আমি এই ভেড়াগুলি দিয়ে কী করব?” এরা আমার এবং অপর মানুষের নিকট দায়িত্বে রাখা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “এক মুঠো বালু দিয়ে নিয়ে তাদের দিকে নিক্ষেপ কর এবং তারা তাদের মালিকের নিকট ফিরে যাবে।” অতঃপর সেই ব্যক্তি মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে যোগদান করল এবং একটি তীর দ্বারা নিহত হল। সে এক ওয়াক্তের সালাহ্‌ পড়ারও সুযোগ পায় নি। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবাদেরকে বললেন যেন তাঁরা তার মরদেহ তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁবুর ভেতর নিয়ে যায়। তারা তাকে রাসূলের তাঁবুর মধ্যে নিয়ে যায় এবং অতঃপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে উঠলেন (বললেন), “আল্লাহ্‌ তার ইসলাম কবুল করেছেন। যখন তিনি তাঁবুর মধ্যে প্রবেশ করলাম তখন আমি তাকে তার দু’জন জান্নাতের স্ত্রীর সাথে দেখতে পাই, “ (যাহাবী কর্তৃক পরিশুদ্ধ)

শহীদদেরকে আল-হুরের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়ঃ

আল্লাহ বলেনঃ “আর তাদের জন্য গৌরবর্ণের বড় বড় চোখ বিশিষ্ট নারীগণ থাকবে, তারা যেন সংরক্ষিত (লুকায়িত) মুক্তা।” (আল-ওয়াক্কিয়াহ ২২ – ২৩)

  1. রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি হাদিসে শহীদদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বলেনঃ “শহীদদের বাহাত্তর জন আল-হুর (জান্নাতের নারী) এর সাথে বিয়ে দেওয়া হবে।[তিরমিযী – আব্দুল রাযাক – ইবন মাযাহ্‌ (নির্ভরযোগ্য)]
  2. রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “এবং যদি কোন জান্নাতে নারী নিজেকে পৃথিবীর মানুষের সম্মুখে প্রকাশ করে, তবে সে তাদের মধ্যকার দূরত্ব – আলো ও তার সুগন্ধি দ্বারা পূর্ণ করে দেবে, এবং তার মাথার উপরের রুমাল হল পৃথিবী এবং এর মধ্যকার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।” (বুখারী)
  3. আবু সাঈদ আল-খুদরী কর্তৃক বর্নিতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “একজন ব্যক্তি জান্নাতে স্থান পরিবর্তনের পূর্বে সত্তর বছর জান্নাতে হেলান দিয়ে থাকবে। অতঃপর একজন নারী তার নিকট আসবে এবং তার কাঁধে মৃদু স্পর্শ করবে। সে ব্যক্তি চারপাশে ফিরবে এবং সেই নারীর মুখশ্রী দেখতে পাবে। তার মুখ এতটা পরিষ্কার (স্বচ্ছ) হবে যে সে তার (নারীর) গালের ওপর তার (ব্যক্তির) প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবে এবং তার একটি মুক্তা জান্নাত (আসমান) এবং পৃথিবী (মাটি) ব্যাপী আলো ছড়াবে। সে (নারী) উত্তর দিবেঃ “আমি আল-মাযিদ থেকে।” সেই নারী সত্তরটি পোশাক পরিহিতা হবে এবং তারপরও সে ব্যক্তি তার পোশাকের নিচ থেকে তার (সেই নারীর) হাঁটুর নিচে পায়ের সম্মুখভাগের মজ্জা দেখতে পারবে। (ইবন হাব্বান – তিরমিযী – আবু ইয়ালা) [কুরআনে আল-মাযিদের কথা উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ্‌ জান্নাতে বিশ্বাসীদেরকে আল-মাযিদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ৷ আক্ষরিকভাবে, এর অর্থ হল “আধিক্য” ফলে, এটা হয়ত এমন কোন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পুরস্কার যার কথা কোরআনে বা সুন্নাহ – য় উল্লেখ করা হয়নি।]

সপ্তদশ অধ্যায় – যুদ্ধের কৌশল

  1. আল্লাহ্ পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করেছেন যদি সেগুলো একটি সেনাবাহিনীর মাঝে বিদ্যমান থাকে। তারা সংখ্যায় যতই হোক না কেন তারা নিশ্চিতরূপে বিজয়ী হবে। নিম্নোক্ত দু’ টি আয়াতে উল্লেখ এর উল্লেখ আছে –

“হে ঈমানদারগণ যখন তোমাদেরকে কোন দলের সম্মুখীন হতে হয় তখন দৃঢ়পদ থাকবে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। আর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতে থাকবে এবং বিবাদ করবে না অন্যথায় সাহস – হারা হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব বিনষ্ট হয়ে যাবে; আর ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (আল-আনফালঃ ৪৫ – ৪৬)

  • দৃঢ়পদ থাকা
  • আল্লাহর স্মরণ
  • আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য
  • বিবাদ করা হতে বিরত থাকা
  • সবর করা বা ধৈর্যধারণ করা
  1. মুজাহিদদের সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদেরকে প্রবঞ্চনার ব্যবহার জানতে হবে। রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যুদ্ধ হল প্রতারণা।” (বুখারী, মুসলিম)

বলা হয় যে যখন আলী(রাঃ) আমর বিন আব্দু উদ এর সাথে দ্বন্ধযুদ্ধে অবতীর্ণ হন, আলী(রাঃ) আমর এর কাঁধ বরাবর পিছনে তাকালেন এবং বললেন, “আমর আমি শুধু তোমার সাথে যুদ্ধ করতে এসেছি; তোমাদের দু’ জনের সাথে নয়।” আমর পিছনে ফিরল, দেখার জন্য যে কার সম্পর্কে আলী(রাঃ) কথা বলছেন এবং আলী(রাঃ) এ সুযোগটি গ্রহণ করেন এবং তাকে আঘাত করেন। আমর বলল, “তুমি আমাকে প্রতারিত করেছ” আলী(রাঃ) বললেন, “যুদ্ধ হলো পুরোটাই প্রতারণা”

  1. সেনাবাহিনীর গন্তব্য প্রকাশ না করা সুন্নত। কোন যুদ্ধেই রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর গন্তব্য প্রকাশ করতেন না একমাত্র তাবুক ব্যতীত, কারণ এটা রোমানদের বিরুদ্ধে ছিল এবং অত্যন্ত দূরে ছিল। তিনি তা এজন্য করলেন যাতে মুসলিমরা তদনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
  2. শত্রুর কাছে প্রেরিত দূত হল সেনাবাহিনীর প্রতিচ্ছবি। এ দূত সেনাবাহিনীর, শক্তি, সাহস এবং বুদ্ধিমত্তা ও এর নেতৃত্বের পরিচায়ক হওয়া উচিত। বহুবার একটি বাহিনী তার শত্রুকে তাদের সিদ্ধান্তহীনতা, বোকামি বা তাদের দূতের দুর্বলতার জন্য ছোট করেছে? এবং বহুবারই একটি সেনাবাহিনী তার শত্রুর দূতের মর্যাদা, সাহস, সাবলীলতা অথবা জ্ঞানের জন্য শত্রুপক্ষকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে। সুতরাং দলপতির উচিত এই গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য সঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচন করা। একই দূতকে একই শত্রুর কাছে বারংবার পাঠানো উচিত নয় যাতে করে কোন ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠে যা পরবর্তীতে বন্ধুত্বের রূপ নিতে পারে। যা ফলশ্রুতিতে দূতের মিশনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। এটা দূতের মাধ্যমে দেশদ্রোহিতার জন্ম দিতে পারে।
  3. দলপতির মজলিশে জিহাদের হাদিস, সিরাত বইসমূহ, মুসলিমদের জয়ের ইতিহাস, যুদ্ধের কৌশল এবং বীরত্বের গল্প পড়া উচিত। এগুলো অন্তরের সাহস বাড়াতে এবং অন্তরের ভয় তাড়াতে প্রয়োজন।
  4. একটি যুদ্ধবিগ্রহ ব্যবস্থাপনার মৌলিক আলোচ্য বিষয় হলো দলপতি নির্বাচন। দলপতির যেসব বৈশিষ্ট্যাবলী থাকা উচিত তা হলো, সাহস, তাক্বওয়া, ধৈর্যপূর্ণ প্রশান্ত মন, মজবুত হৃদয় এবং যুদ্ধ বিষয়ে অভিজ্ঞতা। যদি দলপতি এমন হয় তবে তা তাদের সৈন্যদের মাঝেও পরিব্যাপ্ত হবে। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছেন, এক হাজার শিয়ালের নেতৃত্বে একজন সিংহ থাকা একটি শিয়ালের নেতৃত্বে একহাজার সিংহ থাকা অপেক্ষা উত্তম।

আল-সিরমানী (একজন প্রসিদ্ধ মুজাহিদ) বলেনঃ মুজাহিদীনদের নেতার ১০টি বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন।

  • একটি সিংহের হৃদয় ধারণ কর, যে কখনও ভয় অনুভব করেনা।
  • একটি বাঘ হিসেবে গর্ব অনুভব কর, যে কখনও শত্রুর সামনে নিজেকে অবনমিত করবেনা।
  • ভাল্লুকের মত নির্মম হও, যে তার সর্ব অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে। তার থাবা এবং দাঁত।
  • বোয়ার মত আক্রমণ কর যে কখনও চারপাশে ঘোরে না।
  • নেকড়ের মত আক্রমণ কর, যে যদি একদিকে কাজ না হয় তবে অন্যদিকে চেষ্টা করে।
  • পিপড়ার মত অস্ত্র বহন কর, যে তার ভারের অতিরিক্ত বোঝা বহন করে।
  • পাথরের মত শক্ত হও
  • গাধার মত ধৈর্যশীল হও
  • কুকুরের মত টিকে থাক, যে তার খেলনাকে অনুসরণ করে তা সেখানেই থাক না কেন।
  • ঈগলের মত হও, যে সবসময় সুযোগ খোঁজে।
  1. সেনাদলের দলপতিকে যুদ্ধের আগে গুপ্তচর পাঠাতে হবে। এই গোয়েন্দা বা গুপ্তচর শত্রুর সেনাদলে ছড়িয়ে পড়বে এবং তাদেরকে ঠিকমত পরীক্ষা করবে, তাদের অস্ত্রবহর ও সরঞ্জামাদি গুনাগুণ এবং পরিমাণের ব্যাপারে খোজ নেবে, তাদের সৈন্যসংখ্যা নিয়ে গবেষণা করবে, তাদের নেতা এবং বীরদের সম্পর্কে জানবে এবং তাদের পরিকল্পনা এবং কৌশলসমূহ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করবে।

দলপতির উচিত শত্রুপক্ষের দলপতিদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি বা দলপতির লোকদেরকে যারা তাদেরকে ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করা। দলপতির আরও উচিত তাদের নেতাদের নামে নকল চিঠি বা কাগজপত্র লিখে শত্রুসৈন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যাতে তারা বিভ্রান্ত হয় ও মনোবল হারায়।

দলপতিদের উচিত গোয়েন্দা বিভাগে প্রচুর পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা। তার এ ব্যাপারে পিছিয়ে থাকা উচিত নয়। কারণ সে যদি বিজয়ী হয় তবে সে যা বিনিয়োগ করেছে নিশ্চয়ই তা উত্তম বিনিয়োগ এবং যদি সে পরাজিত হয় তবে সে যে সম্পদ গচ্ছিত রেখেছিল তা পরাজয়ের পর মূল্যহীন হয়ে পড়বে। উপরন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলিমদের জীবন ব্যয় করার চেয়ে অর্থ ব্যয় করা ভাল।

  1. যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হল গেরিলা আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়া। গেরিলা আক্রমণ শত্রুদের অন্তরে ভীতির সঞ্চারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতর্কিত আক্রমণের বিস্ময় শত্রুদের আঘাত করে এবং যখন পিছন থেকে আক্রমণ হয় শত্রুরা নিরাপত্তহীনতা বোধ করে। সৈন্যদের মন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় সামনের শত্রুদের আক্রমণ করতে এবং পশ্চাতের আক্রমণকে প্রতিহত করতে। ফলাফল স্বরূপ সৈন্যদের শৃঙ্খলা ও নৈতিক শক্তি হ্রাস পায়।
  2. যদি কোন আমির কোন শহর জয় করতে চায় তবে তাকে অবশ্যই আশেপাশের গ্রাম ও উপশহর গুলো দিয়ে শুরু করতে হবে। এটা উল্লেখ্য যে একজন রোমান সম্রাট তার কর্মকর্তাদের মাঝে পরীক্ষা করতে চেয়েছিল তাদেরকে সিসিলির রাজধানী দখন করার জন্য পাঠানোর পূর্বে। সে একটি বড় কম্বলের মাঝে একটি স্বর্ণমুদ্রা স্থাপন করল এবং কর্মকর্তাদেরকে বলল যে, যে ব্যক্তি কম্বলের উপর পা না ফেলে মুদ্রাটি তুলতে পারবে সে ব্যক্তিই দলপতি হবে। কর্মকর্তারা চেষ্টা করল এবং ব্যর্থ হল। সম্রাট অতঃপর কম্বলটি ভাজ করলেন এবং তা করার মাধ্যমে খুব সহজেই মুদ্রাটি পেল গেল। সে বলল “যদি তুমি কোন রাজধানী দখল করতে চাও তবে তোমাকে আশে পাশের এলাকা প্রথমেই ছোট করে আনতে হবে।”
  3. রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলিমদেরকে শত্রুদের সম্মুখীন হতে আগ্রহী হতে নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, “ কখনও শত্রুর সম্মুখীন হওয়ার জন্য আশা এবং প্রার্থনা কর না। কিন্তু তুমি যদি তাদের সম্মুখীন হও তবে দৃঢ় থেকো। (বুখারী ও মুসলিম)
  4. রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শত্রুর শরীর বিকৃত করতে নিরুৎসাহিত করেছেন এবং সেগুলোকে আগুনে পোড়াতে নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি শপথ এবং চুক্তি ভঙ্গ করতে নিষেধ করেছেন।
  5. রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “চারটি বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে আছে এমন ব্যক্তি একজন সত্যিকার মুনাফিক এবং এগুলোর একটি বৈশিষ্ট্য যার মাঝে রয়েছে এমন ব্যক্তির মধ্যে মুনাফিকের একটি বৈশিষ্ট্য আছে। যদি তাকে বিশ্বাস করা হয় তবে সে বিশ্বাসের খেলাফ করে, যদি সে কথা বলে সে মিথ্যা বলে, যদি সে ওয়াদা করে তবে তা ভঙ্গ করে এবং যখন সে কারও সাথে মতানৈক্য পৌঁছে তখন অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে।”

সুতরাং সেনাদলের দলপতির উচিত যেকোনো ধরনের প্রতারণা হতে সতর্ক হওয়া এবং কারও কথা ধরে বসে না থাকা।

পরিসমাপ্তিঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে কেউ তোমার কোন উপকার করবে তখন তুমি তাকে তার অনুরূপ উপকার করো। যদি তুমি তা করতে না পার তবে তাদের জন্য দোয়া করো যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি জানো যে তুমি তার অনুরূপ প্রতিদান দিয়েছ।” এটা প্রত্যেক মুসলিমের উপর দায়িত্ব যে তারা যে রহমতের মাঝে রয়েছে তার উপলব্ধি করা এবং যারা এই রহমতের কারণ তাদের প্রতি শুকরিয়া আদায় করা।

মুসলিমদের তাদের জন্য প্রার্থনা করা উচিত যাঁরা তাঁদের জীবন আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করছেন যতক্ষণ না ইসলাম আমাদের কাছে পৌঁছে। এবং আমাদেরকে একথা স্বীকার করতে হবে যে আজ তাদের মাধ্যমে এখানে আছি। এবং আমাদের এ বিষয়ে সুনিশ্চিত হতে হবে যে, যদি আল্লাহ্ আমদেরকে আশীর্বাদপুষ্ট না করতেন সাহাবাহ এবং তাবেঈনদের দ্বারা, এবং সেসব ব্যক্তিবর্গ যাঁরা তাদের অনুসরণ করছেন জিহাদের পথে ইসলামের প্রতিরক্ষাবাহিনী, উম্মাহর বীরসমূহ। ধনুক এবং বর্শার ধারকসমূহ, পূর্ব ও পশ্চিম উন্মুক্তকারীগণ, সেসব ব্যক্তি যারা সৈন্যবাহিনীকে গতি প্রদান করে। যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে, পৃথিবীর সবচেয়ে শক্ত বা কঠিন বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে, ধর্মত্যাগীদের পরাজিত করে। রোমান ও পারসিয়ানদের নিচু করে এবং তরবারির মাধ্যমে তাদের রক্ত পিপাসা নিবৃত করে এবং তাদের মাঝে যারা বেঁচে আছে তারা যারা নিহত হয়েছেন তাঁদের অনুসরণ করে এবং নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে গুরুত্বহীন বিবেচনা করেন।

যদি এটা তাদের মাধ্যমে না হতো, হয়তো এমন হতে পারত যে আমরা ইসলামের ছায়ায় আনন্দ করতে পারতাম না যা তাদের মাধ্যমে আসা, আমাদের জন্য একটি রহমত।

তাঁরা আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার জন্য তাঁদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে যে মূল্য দিয়েছেন আমরা তা গ্রহণ করেছি। এবং আমরা তাদের জিহাদের পথকে অবজ্ঞা করেছি। আমরা নিচে পড়ে এ পার্থিব জীবনের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছি এবং আমাদের তরবারিগুলো পরিত্যাগ করেছি। এখন কেউ যুদ্ধ নিয়ে কথা বলে না এবং কেউ তার জন্য উদ্বুদ্ধ করে না এবং এই কারণে ধর্ম দুর্বল হয়ে পড়ল এবং এর নক্ষত্র আকাশ থেকে খসে পড়ল। আজ আমাদের তোলা হয় যেন কোন পাখি ভূমি থেকে দানা তুলছে।

আজ আমাদেরকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ভূমিতে এবং সমুদ্রে।

সুতরাং আমার ভাইগণ স্বীকার কর যে আমাদের অবস্থা ভূলুণ্ঠিত। স্বীকার কর যে আমাদের পূর্ণতাপ্রাপ্তির পর আজ আমরা শূন্য। এবং স্বীকার কর যে, এটা শুধুমাত্র হয়েছে তখন যখন আমরা আমাদের ইসলামের সর্বোচ্চ আচরণ বা বিধি অবজ্ঞা করেছি – যা হল আল্লাহর পথে জিহাদ।

আল্লাহ্ যাকে পথ দেখান কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না আর আল্লাহ্ যাকে পথভ্রষ্ট হতে দেন কেউ তাকে পথ দেখাতে পারে না।

হে আল্লাহ্! আমার কলম যা লিখেছে তা তোমার পক্ষ থেকে বর্জন করো না। এবং আমি যে গ্রন্থ লিখেছি তা আমার বিরুদ্ধে শেষ বিচারের দিন সাক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরো না। এবং হে আল্লাহ্ আমি তোমার কাছে একজন শহীদ হিসেবে কবুল হওয়ার প্রার্থনা করি, যা জান্নাতে আমার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবে।

এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর যেন তোমার শান্তি ও রহমত বর্ষিত হয়।

(লেখকের এক দোয়া কবুল হয়েছিল। এই বই লেখার ২ বছর পর তিনি শাহাদাত প্রাপ্ত হন)

[1] জিযিয়াঃ মুসলিম খিলাফতে খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদীদের উপর অর্পিত কর।

[2] রিবাত: রিবাত হলো জিহাদের উদ্দেশ্যে দারুল ইসলামের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থান করা। যেসব অঞ্চলে মুসলিমরা কাফিরদের হামলার শিকার হতে পারে সেসব অঞ্চলই হলো রিবাতের স্থান। যে ব্যক্তি রিবাতে দন্ডায়মান হয় তাকে বলা হয় মুরাবিত।

Related Articles

One Comment

  1. আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকাতুহ! ভাইজান, উক্ত কিতাবের প্রচ্ছদ্বে যে আরবীতে নাম লেখা হয়েছে সম্ভবতঃ মূল কিতাবের নামের সাথে অমিল রয়েছে। তথা বানানে অসঠিক মনে হচ্ছে। তা হলো- مشارع الأشواق إلى مشارع العشاق তবে মূল কিতাবে রয়েছে এভাবে مشارع الأشواق إلى مصارع العشاق

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + nineteen =

Back to top button