‘এবং তাদেরকে থামাও, তারা জিজ্ঞাসিত হবে’ | নিরাপত্তা ও দায়িত্ববোধ | (উম্মাতুন ওয়াহিদাহ ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যার ভূমিকা)

নিরাপত্তা ও দায়িত্ববোধ

وَقِفُوهُمْ إِنَّهُم مَّسْئُولُون

‘এবং তাদেরকে থামাও, তারা জিজ্ঞাসিত হবে’। [সুরা সাফফাত ৩৭: ২৪]

(উম্মাতুন ওয়াহিদাহ ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যার ভূমিকা)

অনুবাদ ও প্রকাশনা

–মূল প্রকাশনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য–

মূল নাম:

وقفوهم إنهم مسؤلون : الأمن و الشعور بالمسئولية (افتتاحية مجلة أمة واحدة – العدد الأول)

ভিডিও দৈর্ঘ্য: 7:28 মিনিট

প্রকাশের তারিখ: রজব ১৪৪৩ হিজরি, মার্চ ২০২২ ঈসায়ী।

প্রকাশক: আস সাহাব মিডিয়া

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এরশাদ করেন,

وَقِفُوهُمْ إِنَّهُم مَّسْئُولُون

‘এবং তাদেরকে থামাও, তারা জিজ্ঞাসিত হবে’। [সুরা সাফফাত ৩৭: ২৪]

ইমাম আলুসি বলেন, ‘এই আয়াতের ব্যাপারে বলা হয়েছে -এতে এ বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে যে, প্রতিটি স্থান অতিক্রমকারীকে সে স্থান সংশ্লিষ্ট জিজ্ঞাসার জবাব দেওয়ার জন্য থামতে হবে। ঐ স্থান সংশ্লিষ্ট সকল দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। সে যদি সদুত্তর দিতে পারে, তবে তাকে সামনে চলার অনুমতি দেওয়া হবে। অন্যথায় দায়িত্ব পালনের আগ পর্যন্ত নিজ অবস্থায় তাকে আটকে থাকতে হবে’।

তাফসীরে ইবনে কাসীরে এসেছে – আল্লাহর বাণী: ‘তাদের থামাও, নিশ্চয়ই তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে’ অর্থাৎ তাদেরকে থামাও যেন তাদের কাছ থেকে পার্থিব জীবনের কাজকর্ম ও কথাবার্তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়।

যে ব্যক্তি এই আয়াত এবং এজাতীয় আরও যেসব আয়াত দায়িত্ববোধের অপরিহার্যতা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, সেগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সে সহজেই বুঝতে পারে যে, দায়িত্ববোধ দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুদৃঢ় স্তম্ভ ও একটি খাঁটি ভিত। এটি রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার সামনে দণ্ডায়মান হবার দিনে, মুক্তি লাভের একটি মজবুত ভিত্তি হবে। হাবিবে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ববোধের অনুশীলন করিয়েছেন।

তাই তো আমরা দেখতে পাই, ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عنهما، عَن النَّبيّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «كُلُّكُم رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ: وَالأمِيرُ رَاعٍ، والرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أهْلِ بَيتِهِ، وَالمَرْأةُ رَاعِيةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجها وَوَلَدهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই নিজের অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা পরিবারের লোকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল; তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামীর ঘরের লোকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল; সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ক্রীতদাস মনিবের সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল; এ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে। অতএব হুঁশিয়ার! তোমরা প্রত্যেকেই নিজের অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে¹”। (বুখারী ও মুসলিম)

সুহৃদ দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, দায়িত্ববোধ সম্পর্কিত এই ভূমিকার সাথে নিরাপত্তার সম্পর্ক কী?

এর জবাবে আল্লাহর তাওফিকে আমরা বলব- দায়িত্ববোধের সঙ্গে নিরাপত্তার সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ যে, জিহাদি আন্দোলনগুলো ইতঃপূর্বে যতগুলো নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে এবং আজও হয়ে চলেছে, তার পেছনে সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো মুজাহিদদের একটি অংশের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। মুসলিমদের নিকট অতীতের ইতিহাস, যার ব্যাপ্তি প্রায় দুই দশক, সেখানে ‘নিরাপত্তামূলক যুদ্ধে’ মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে।

এটি একটি স্পষ্ট বিষয় যে, সাধারণভাবে সামষ্টিক কার্যক্রম এবং বিশেষভাবে জিহাদি কার্যক্রম হচ্ছে – শক্তি ও দুর্বলতার ভারসাম্য রক্ষা করে, পারস্পরিক সাহায্য ও একতার ভিত্তিতে – সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত কিছু পদক্ষেপ। এই চেইনের মধ্যকার ছোট একটি অংশের মাঝে থাকা ত্রুটিও বাকি সব অংশের ওপর এক বিধ্বংসী প্রলয়ের সৃষ্টি করে।

আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে আমরা একটি সরল উদাহরণ পেশ করতে চাই। এতে আসল চিত্র আমাদের সামনে ফুটে উঠবে ইনশাআল্লাহ। ধরে নেই, নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে একদল মুজাহিদ কাজ করেন। নানা বিভাগের অধীনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তারা নিয়োজিত আছেন। তাদের প্রত্যেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্ট পরিষদ কর্তৃক প্রণীত জরুরী নিরাপত্তা বিষয়ক নীতিগুলো পুরোপুরি অনুসরণ করে চলেন। বলাবাহুল্য, সেসব নীতি অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করার জন্য অনেক শ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো, মুজাহিদদের প্রাণের নিরাপত্তা এবং জিহাদি কার্যক্রমের চলমান ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই দলের ভেতরে এমন একজন সদস্য রয়েছে, যার মাঝে দায়িত্ববোধ নেই। নিরাপত্তার মূলনীতিগুলো লঙ্ঘন করতে সে পরোয়া করে না। অনেক সময় সে সকল মূলনীতি-ই উপেক্ষা করে। সে এমন এমন পন্থায় নিয়ম অমান্য করে যা মুজাহিদরা কখনও কল্পনাও করেনি।

এদিকে শত্রু তার বস্তুগত উপায়-উপকরণ, জনবল ও টেকনোলজি ব্যবহার করে মুজাহিদদের জন্য ওঁত পেতে আছে। মুজাহিদদের ক্ষতি সাধনের জন্য, তাদের কার্যক্রম থামিয়ে দেওয়ার জন্য, এমনকি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য; যেকোনো প্রকার সুযোগের তারা সন্ধান করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দায়িত্বজ্ঞানহীন ওই সদস্য এবং এ জাতীয় অন্যান্যরা যেন শত্রুর আরাধ্য মানিক। একজন অটল অবিচল মুজাহিদ হওয়া সত্ত্বেও এই সদস্য শত্রুর অস্ত্রাগারের একটি মারাত্মক কৌশলগত অস্ত্রে পরিণত হন। শত্রু তাকে সুরক্ষা দিয়ে তার দ্বারা সর্বোচ্চ সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। সদস্যটি তখন শত্রুর হোয়াইট লিস্টে স্থান পায়। আর সেই লিস্টে নাম থাকা অন্যান্যদের মতোই ওই সদস্যকে টার্গেটে পরিণত করা শত্রুর কাছে নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হয়। এর কারণ হলো, এজাতীয় লোকগুলো শত্রুপক্ষকে এমন অসংখ্য অগণিত সেবা দিয়ে যাচ্ছে, শত্রু যা লাভ করার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি। আর আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম অভিভাবক।

সুপ্রিয় দর্শক! এমন মনে করার কোনো কারণ নেই যে, উপরের দৃষ্টান্তটি নিতান্তই কাল্পনিক। বরং এগুলো এমন বাস্তব ঘটনা যা বহুবার ঘটেছে এবং এখনও ঘটে চলেছে। সেসব ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা ক্ষণজন্মা বহু নেতা ও শ্রেষ্ঠ সৈনিককে হারিয়েছি, যাদের কথা মনে হলেই অন্তর ব্যথিত হয়। এগুলোর কারণে অসংখ্য গঠনমূলক প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যর্থ হয়েছে; যেগুলোর পেছনে অনেক মূল্যবান শ্রম ব্যয় হয়েছিল। অনেক ঘাম ঝরিয়ে যেসব কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছিল, এসব ঘটনায় এমন অনেক কাঠামো ধসে গেছে। যদি বলি, বহু ক্ষেত্রে এসব ঘটনার কারণে বিজয় বিলম্বিত হয়েছে, তাহলেও অত্যুক্তি হবে না।

এ প্রসঙ্গে, একটি মূল্যবান অডিও রেকর্ড আপনাদের শোনাবো। আল মালাহিম ফাউন্ডেশন কর্তৃক ‘গোপনীয়তা, বিপদ এবং সর্বোত্তমদের প্রস্থান’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা এসেছিল। সেখান থেকে আমাদের প্রিয় ভাই শাইখ আবু হুরায়রা রিমী রহিমাহুল্লাহ’র কিছু কথা উল্লেখ করব। এখানে দায়িত্বজ্ঞানহীন মুজাহিদের বিপদের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। শাইখ রহিমাহুল্লাহ বলেন:

“ভাইয়েরা,

২০১১ সালে বাহিনী প্রত্যাহার করার পর, ন্যাশনাল সিকিউরিটি’র (জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ) কিছু কাগজপত্র আমাদের হাতে আসে। সে রিপোর্টে আমাদের ৩ জন ভাইয়ের উপর হামলা করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া ছিল। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই তারা তিনজন আমাদের সর্বোত্তম যুবক ছিলেন।

শাইখ আবু বাসীর রহিমাহুল্লাহ আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং কাগজটি দিলেন। তিনি বললেন: (কাগজটি) তাদেরকে দিয়ে তাদের সাথে কথা বলুন। কেন তারা আমাদের মধ্যকার সর্বোত্তম ভাই হওয়া সত্ত্বেও তাদের উপর হামলা চালানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে?

এই তিন ভাইয়ের, দুইজন নিহত হয়েছেন, একজন বেঁচে আছেন। আল্লাহর ইচ্ছা!

এই ভাইয়েরা তানযীমের সকল খবর জানতেন। তারা মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং তাদের থেকে খবর সংগ্রহ করতেন। ওহ! হয় তারা যোগাযোগ করতেন নয়তো খবর নিতেন। শত্রু কেবলমাত্র তাদের ফোন ট্র্যাক করে। আর এতেই সকল সংবাদ তাদের কাছে চলে যায়।

হেভাই! আল্লাহরইচ্ছায়, এইভাইয়েরাবিভিন্নজায়গায়ঘুরেঘুরেভাইদেরসংবাদসংগ্রহকরতেন।পরবর্তীতেঅন্যান্যভাইদেরএসকলসুসংবাদজানাতেন। আরএভাবেইতাদেরট্র্যাককরাফোনেরমাধ্যমেনিজেদেরঅজ্ঞাতসারেশত্রুকেখবরদিয়েদিতেন”।

এ পর্যায়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পত্রের অংশবিশেষ উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি। বছর দশেক পূর্বে শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহর কাছে পত্রটি প্রেরণ করা হয়। সেখানে আমাদের এই আলোচ্য দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বিষয়টি আরও সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। পত্র প্রেরক বলেন:

“দায়িত্বের অনুভূতি না থাকাটা ‘মুজাহিদকে’, এমনকি শত্রুদের গুপ্তচরের চাইতেও ভয়ংকর চরিত্রে পরিণত করে। যেমনটা আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি এবং বিষয়টি কারো অজানা নয়। গুপ্তচরবৃত্তিতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তথ্যের সমাবেশ ঘটানো। আর অত্র অঞ্চলে এমন এক তথ্য ভাণ্ডার রয়েছে যা কখনো শেষ হবার নয়। এই তথ্য ভাণ্ডার থেকে শত্রু অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে আসছে। আর তা হচ্ছে -ওয়াজিরিস্তান অঞ্চল থেকে ফোনে অথবা ইন্টারনেটের সাহায্যে বাহিরে যোগাযোগ।

এর চাইতে ভয়ানক বিষয় হলো – ময়দানে এমন কিছু সাথী রয়েছেন, যাদের সঙ্গে কাজ করা খুবই কঠিন। ফোনে অথবা ইন্টারনেটে কোনো কথা বলতে তারা ভয় পান না। যদি আমি বলি, এসব সাথী কখনো কখনো এমনকি গোয়েন্দাদের চাইতেও ভয়ানক চরিত্রে পরিণত হন; তবে এটা অত্যুক্তি হবে না।

অনেকেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে অসতর্কতাকে টার্গেট বোম্বিংয়ের প্রত্যক্ষ কারণ মনে করেন না। কিন্তু জিহাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমি মনে করি, আফগানিস্তান থেকে বের হওয়ার পর এখন পর্যন্ত আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পেছনে এটাই প্রধান কারণ”।

দায়িত্বের অনুভূতি না থাকা, উদাসীনতা ও বেপরোয়াভাব – জিহাদি আন্দোলনগুলোর টিকে থাকার পক্ষে এক বিরাট ঝুঁকি। আধুনিক জাহিলিয়াতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ানো ইসলামী দলগুলোর পতনের অন্যতম কারণ হলো এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। এতে করে বহু বছরের শ্রম, পরিশ্রম, কষ্ট ও রক্ত-ঘামের অপচয় ঘটে। অতএব, এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। বিষয়টি কোনমতেই অবহেলার নয়। বিজ্ঞ মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের জন্য উচিত হলো, এই মরণব্যাধির প্রতিকারের জন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এই বিষয়ে এগিয়ে আসা। আর তাই শরীয়তসম্মত সকল পন্থায় এবং প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিজাত সকল উপায় প্রয়োগ করে দায়িত্বজ্ঞানহীন সদস্যদেরকে নিবৃত্ত করা তাঁদের কর্তব্য। অন্যথায় তরী সকলকে নিয়েই ডুবে যাবে।

ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ তাঁর সহীহ গ্রন্থে একটি হাদিস সংকলন করেছেন। তিনি বলেন,

حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، قَالَ حَدَّثَنِي الشَّعْبِيُّ، أَنَّهُ سَمِعَ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ ـ رضى الله عنهما ـ يَقُولُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَثَلُ الْمُدْهِنِ فِي حُدُودِ اللَّهِ وَالْوَاقِعِ فِيهَا مَثَلُ قَوْمٍ اسْتَهَمُوا سَفِينَةً، فَصَارَ بَعْضُهُمْ فِي أَسْفَلِهَا وَصَارَ بَعْضُهُمْ فِي أَعْلاَهَا، فَكَانَ الَّذِي فِي أَسْفَلِهَا يَمُرُّونَ بِالْمَاءِ عَلَى الَّذِينَ فِي أَعْلاَهَا، فَتَأَذَّوْا بِهِ، فَأَخَذَ فَأْسًا، فَجَعَلَ يَنْقُرُ أَسْفَلَ السَّفِينَةِ، فَأَتَوْهُ فَقَالُوا مَا لَكَ قَالَ تَأَذَّيْتُمْ بِي، وَلاَ بُدَّ لِي مِنَ الْمَاءِ، فَإِنْ أَخَذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَنْجَوْهُ وَنَجَّوْا أَنْفُسَهُمْ، وَإِنْ تَرَكُوهُ أَهْلَكُوهُ وَأَهْلَكُوا أَنْفُسَهُمْ ‏”‏‏.‏

“আবু নু’আইম আমাদের কাছে যাকারিয়া সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আমেরকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নোমান ইবনে বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এই হাদিস বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত সীমারেখাসমূহ লঙ্ঘনকারী এবং তা লঙ্ঘিত হতে দেখেও নিঃস্পৃহতা অবলম্বনকারী, এই দুই ব্যক্তির উদাহরণ হলো- যেমন একদল লোক জাহাজে অবস্থানের ব্যাপারে লটারি করল। তাদের কতক লোক জাহাজের উপর তলায় আর কতক লোক নিচতলায় স্থান পেল। নীচতলার লোকেরা পানির জন্য উপরতলার লোকদের সামনে দিয়ে যাতায়াত করত। তখন নিচতলার লোকেরা চিন্তা করল, আমরা যদি আমাদের এখানে একটি ছিদ্র করে ফেলি তাহলে উপরতলার লোকেরা আর বিরক্ত হবে না। এই অবস্থায় উপর তলার লোকেরা যদি নিচতলার লোকদেরকে বাধা না দেয়; বরং তাদের ইচ্ছের ওপর ছেড়ে দেয় তবে জাহাজের সকলেই ধ্বংস হবে। আর যদি তারা বাধা প্রদান করে তবে জাহাজের সকলেই বেঁচে যাবে’। (বুখারী হাঃ নং – ২৬৮৬)

আমরা শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল লিবি রহিমাহুল্লাহ রচিত ‘আর রিব্বিয়্যূন ওয়া মাসীরাতুন নাসর’ গ্রন্থ থেকে একটি বক্তব্য উল্লেখ করব। শাইখ বলেন:

“বিপদাপদ যত বড়ই হোক না কেন, তা যত প্রকটই হোক না কেন, তা যেন শিথিলতা, হতাশা, দুর্বলতা ও উদাসীনতার কারণ না হয়। জিহাদের ময়দানে বিপর্যয়ের যত ভারী বোঝাই চাপিয়ে দেওয়া হোক না কেন; তা যেন শত্রুর কাছে পরাজয় ও আত্মসমর্পণের কারণ না হয়। এসকল মরণব্যাধিকে তাড়ানোর জন্য অপরিসীম ধৈর্য ও অনুশীলনের প্রয়োজন। আর প্রয়োজন নফসের প্ররোচনার বিরুদ্ধে লড়াই করা, উদাসীনতা ও অলসতার কারণগুলো ছেঁটে ফেলা। সেইসাথে এমন সকল পথ বন্ধ করে দেওয়া যেগুলোর মাধ্যমে হৃদয়ে এসব ব্যাধি প্রবেশ করতে পারে”।

********