এবং মুমিনদের উদ্বুদ্ধ করুন!- ১০ || আল ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশন

‘আল-কাতাইব মিডিয়া ফাউন্ডেশন’ এর নতুন ভিডিও সিরিজ

এবং মুমিনদের উদ্বুদ্ধ করুন!

পর্ব – ১০

ভাই আব্দু-শাকুর (NDUGU ABDU-SHAKUR)

প্রিয়ভাইয়েরা!

কুফরের দেশ থেকে কীভাবে আমি ইসলামের দেশ সোমালিয়াতে এসেছি, সেই ঘটনাটি আজ আমি আপনাদের কাছে বর্ণনা করতে চাই।

আমার জন্মের পূর্বেই আমার বাবা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌছার পর আমার মধ্যেও ইসলামের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়। ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে আমি মওয়ানজাতে (Mwanza) ইসলামী জ্ঞান অর্জনের জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে ‘তাকাফফাতুল ইসলামিয়া’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই। ছোট থাকা অবস্থাতেই আমার প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু করেছিলাম এবং দ্রুতই তা শেষ করি।

এর পরে, আমি ‘তাকওয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে’ কাজ নেই। এটি মওয়ানজাতেই অবস্থিত। সেখানে আমি চার বছর ছয় মাস কাজ করেছিলাম।

এর পরে, আমি মওয়ানজা এবং দারুস সালাম – এই দুই জায়গাতে একসাথে কাজ করা শুরু করি। সেখানে আমার প্রধান কাজ ছিল দারুস সালামে সার্ডিন (সামুদ্রিক পোনা মাছ) বিক্রি করা।

প্রিয় ভাইয়েরা,

আমি আমার এই জীবন কাহিনী আপনাদের কাছে বর্ণনা করছি, যাতে আমরা এটি থেকে কিছু শিক্ষা নিতে পারেন। আমি যখন দারুস সালামে ছিলাম তখন আমার আর্থিক অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছিল। সেখানে আমার আয় বেশ ভাল ছিল।

আমি দারুস সালামে একটি বাড়ি তৈরি করলাম। দুটি সাবানের কারখানাও খুলেছিলাম। একটি তান্ডিকা (Tandika) এলাকায় এবং অন্যটি এমবিঙ্গুনিতে (Mbinguni)।

স্থানীয় বাজারে ব্যবসা করার পাশাপাশি, আমি আমার পণ্য রপ্তানি করা শুরু করি। আল্লাহ আমাকে প্রচুর সম্পদের মালিক করেছিলেন।

সম্পদ অর্জন করতে গিয়ে আমার স্বাস্থ্যের ক্রমাগত অবনতি হতে থাকে। এর মধ্যেই রয়েছে সেই অলৌকিক ঘটনাটি যা আমি আপনাদের কাছে বর্ণনা করতে চাচ্ছি। অলৌকিক ঘটনাটি হলো – আমি জিহাদের ভূমি সোমালিয়ায় আল্লাহর নিদর্শন দেখেছি।

স্বাস্থ্য ঠিক করার জন্য আমি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের শরণাপন্ন হই। তাদের মধ্যে অয়েস্টার বে’র ফরাসি ডাক্তার ‘ডাঃ পিয়ের’ এবং কলোনি গ্রামের জার্মান ডাক্তার ‘ডাঃ কার্লোস’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

যাইহোক, পেশাদার চিকিৎসকদের পরিচর্যা সত্ত্বেও আমার স্বাস্থ্যের অবনতি চলতে থাকে।

আমার খাওয়ার রুচি কমে গিয়েছিল। আমার ওজন বেশ কমে গিয়েছিল এবং অসুস্থতায় ভুগছিলাম। এতদিনেও ডাক্তাররা ঠিক ধরতে পারেননি আমি ঠিক কী রোগে ভুগছি।

একদিন আল্লাহ হুকুমে, আমি শাইখ আবুদ রগোর সিডি দেখতে পাই। সেসময় আমি সিডি বিক্রেতাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।

সিডি’র দোকানের পাশ দিয়ে যাবার সময় আমি শাইখ এর ভিডিওটি দেখলাম। ভিডিওটিতে তিনি জিহাদের কথা বলছিলেন। ভিডিও বিক্রেতাদের জিজ্ঞেস করার পর আমি জানতে পারি যে, শাইখ কেনিয়াতেই শহীদ হয়েছেন।

আমি সিডিটি কিনে দেখলাম। শাইখ জিহাদের ভূমিতে প্রত্যক্ষ করা অলৌকিক কিছু ঘটনা বলেছিলেন। আল্লাহর পথে শহীদরা আল্লাহর কাছ থেকে যে সকল নিয়ামত পাবেন তার আলোচনাও ছিল।

তার কথা শোনার পর, আমি আমার সম্পদ বাড়ানোর ফিকির বন্ধ করে দেই। আমি বরং ইসলামের দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি এবং অন্যদেরও একই কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করি।

আমি আফগানিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সফল হইনি। একইভাবে নাইজেরিয়া ও ইরাকে যাওয়ার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।

শেষ পর্যন্ত, আমি হিজরত করার জন্য দৃঢ় সংকল্প করলাম। এমনকি যদি আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়, তবুও আমি হিজরত করব বলে মনস্থির করলাম। এরপরই আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য সোমালিয়ায় যাওয়া সহজ করে দেন।

এখানে আসার পর প্রথম অবস্থায় আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। তবে, অলৌকিকভাবে এখানে আসার পর থেকে আমার স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে থাকে।

পূর্বে এমন কোন মাস অতিবাহিত হয়নি যে মাসে আমি অসুস্থ ছিলাম না।

আলহামদুলিল্লাহ, আমি এখানে কয়েক বছর ধরে সুস্বাস্থ্যের নিয়ামত উপভোগ করছি। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র একবার আমি অসুস্থতায় পড়েছি। আমার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে এবং বর্তমানে আমার কোনও শারীরিক জটিলতা নেই।

এটা একটি অলৌকিক ঘটনা। পূর্বে আমি ২০ লিটারের একটি জার বহন করতে সক্ষম ছিলাম না। এমনকি ১০ কেজির আটার বস্তাও বহন করতে পারতাম না। কারণ তা করলে আমার বুকে ব্যথা হত।

অয়েস্টার বে’র ডাক্তাররা দাবি করেছিল যে, আমার ফুসফুস রোগাক্রান্ত এবং আমি ডায়াবেটিস রোগী। কিন্তু আজ আমার ডায়াবেটিস নেই এবং আমার ফুসফুসে কোনও ব্যথা নেই।

এটিই সেই অলৌকিক ঘটনা, যা আমি আপনাদের জানাতে চেয়েছিলাম। কাফেরদের দেশে দক্ষ ও যোগ্য ডাক্তারদের দ্বারা সেবাপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আমি সর্বদা অসুস্থ ছিলাম।

এখানে আসার পর, আমার অসুস্থতা দূর হয়ে গেছে। আজ আর আমার সেই ডাক্তারদের প্রয়োজন নেই।

আমার প্রিয় ভাইয়েরা!

যারা এখনও কুফর দেশে আছেন, তারা হিজরত করুন। ইসলামের দেশে আসুন এবং ইসলামের বরকত উপভোগ করুন।

যখন আপনারা ইন্টারনেটে ইউটিউব বা ইন্সটাগ্রাম এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলি সার্ফ করেন, তখন আপনাদের সোমালিয়াকে চিরস্থায়ী ক্ষুধার জায়গা ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। এটি কুফফারদের একটি প্রোপাগান্ডা।

অতএব আমার ভাইয়েরা,

আমি আপনাদেরকে যে বাস্তবতা বুঝাতে চেয়েছি সেটি হলো – আমি অসুস্থ হয়ে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু এখন আমি সুস্থ। আমি আমার পূর্ণ ক্ষমতা ও শক্তি নিয়ে আল্লাহর ইচ্ছায় কাফেরদের মোকাবেলা করতে পারছি।

অতএব, আমার প্রিয় ভাইয়েরা,

আপনি সুস্থ বা অসুস্থ যা-ই হোন না কেন, হিজরত করুন এবং এই দেশে আসুন। আল্লাহর নিয়ামত প্রত্যক্ষ করুন।

আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদেরকে হেদায়েত দান করেন এবং রহমত দান করেন।

শাইখ আবুদ রগো রহিমাহুল্লাহঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

“আল্লাহর পথে জিহাদ কর। কেননা ‘আল্লাহর পথে জিহাদ’ জান্নাতের যাবার দরজাসমূহের একটি দরজা। আল্লাহ এর দ্বারা দুশ্চিন্তা ও দুঃখ দূর করেন।” (মুসনাদে আহমদ)

এখানে (দারুল কুফরে) আপনি কখনই নিশ্চিন্ত নন। আপনি সর্বদা কাপড় ও খাবারের দাম বাড়তে থাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন।

অথচ মুজাহিদরা এখানে গণিমত থেকে তার রিজিক পায়। রিজিকের জন্য তাকে ব্যবসা বা অন্য কোন মাধ্যমের পেছনে ছুটতে হয় না। সে বুলেটের মাধ্যমে তার রিজিক পায়।

********