মুজাহিদের আত্মশুদ্ধি – ০৩ || মাসুলদের প্রতি আদব ও সম্মান প্রদর্শন -উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ
‘বালাকোট মিডিয়া’
পরিবেশিত
মুজাহিদের আত্মশুদ্ধি – ০৩
মাসুলদের প্রতি আদব ও সম্মান প্রদর্শন
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ
***************************************
অনলাইনে পড়ুন
PDF
https://banglafiles.net/index.php/s/Dg4HY4Rtmb65J75
https://archive.org/download/mujahider-attosuddhi-3/.pdf
https://www.file-upload.com/6mnk7vp4ifhs
WORD
https://banglafiles.net/index.php/s/5zwH36cH6Er7HNB
https://archive.org/download/mujahider-attosuddhi-3/.docx
https://www.file-upload.com/7823thf0f1t7
====================================
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]
মুজাহিদের আত্মশুদ্ধি – ০৩
মাসুলদের প্রতি আদব ও সম্মান প্রদর্শন
-উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহঃ বিসমিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালাম আলা রাসূলিল্লাহ। আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা ইলমান নাফিয়া ওয়া আমালান মুতাকব্বালা।
আপনারা সবাই মাশোয়ারা শুরুর দু’আগুলো পড়ে নিন ইনশাআল্লাহ। এরপর সবাই মাশোয়ারা দেন, আজকে আমরা কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি?
উপস্থিত এক ভাইঃ আজকে অন্যের প্রতি আদব ও সম্মান প্রদর্শন প্রসংগে আলোচনা করা যায়।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহঃ মাশাআল্লাহ! অত্যন্ত দামী একটি টপিক। তবে তার আগে ছোট ছোট কয়েকটি কথা বলে নিই।
এক. এই মজলিস আমাদের সবার জন্য উম্মুক্ত।
দুই. ইতিপূর্বে আমরা তাযকিয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। তাই আশা করি, আপনারা এই মজলিসের গুরুত্ব কোনো ভাবেই ছোট করে দেখবেন না।
তিন. মজলিসে আপনাদের সবার পূর্ণ মনোযোগ কাম্য। কারণ, এখানে এমন অনেক ভাই আছেন যারা নিজেদের অনেক জিম্মাদারিকে পিছনে রেখে মজলিসে শরিক হয়েছেন। তাই আমাদের কর্তব্য, ভাইদের সময়ের কদর করা।
দ্বীনের একটি উসূল হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ এক সাথে কয়েক জন মিলে করলে সেখানে সবার উপস্থিতি ও মনোযোগ সমান হওয়া চাই।
আরেকটি কথা হল, কেউ যখন আপনার কাছে কোনো বিষয়ে মাশোয়ারা চান তখন আপনার উচিৎ, মাশোয়ারা দেয়া। কারণ, আপনার উপর আপনার ভাইয়ের হক আছে। আপনি তাঁর কল্যাণকামী হবেন, তাঁকে নাসীহা দিবেন। মাশোয়ারা দেয়ার মাধ্যমে আপনি তা করতে পারেন। তাই যখনই আমাদের কাছে কোনো বিষয়ে মাশোয়ারা চাওয়া হবে আমরা অবশ্যই কোনো না কোনো মাশোয়ারা দিবো। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার অবহেলা করবো না ইনশাআল্লাহ।
আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, আমাদের প্রতিটি কাজই আল্লাহ দেখছেন। যদি এমন হয় যে, আমাদের কাউকে বলা হল, ‘ভাই! মাশোয়ারা দেন’। কিন্তু দেখা গেল, ওই ভাই কোন মাশোয়ারা দিচ্ছেন না। তাহলে ব্যাপারটি কেমন হয়ে যাবে ভাই! ফেরেশতারা যদি নোট করে রাখেন, কারা মাশোয়ারা দিলো এবং কারা দিলো না তাহলে? এখানে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে, আপনি জানেন না, আল্লাহ হয়তো আপনার মাশোয়ারাটিই পছন্দ করবেন এবং অনেক ভাইকে দিয়ে সে অনুযায়ী আমল করিয়ে নিবেন। আর আপনি এর পূর্ণ প্রতিদান পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। তাই মাশোয়ারা দিতে কখনো অবহেলা করবেন না ভাই!
হ্যাঁ, যদি কিছুই বলার না থাকে তাহলে বলতে পারেন যে, ভাই! আপাতত আমার কিছুই বলার নেই। অতএব যখনই কোনো ভাই আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন তখন অবশ্যই কিছু না কিছু উত্তর দিবেন। এতেও ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনাকে সওয়াব দিবেন।
আসলে ভাই আমাদের এই দ্বীন যে কত সুন্দর, তা বলে বুঝানো যাবে না। ছোট ছোট আমলের উপরও আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াবের ঘোষণা রয়েছে। কিন্তু আমাদের সমস্যাটা হল, আমরা শুধু বড় বড় নেক আমলের দিকেই লক্ষ্য করি। ছোটগুলোর দিকে তেমন একটা লক্ষ্য করি না। অথচ ছোট ছোট নেক আমলগুলোও এক একটি মহা মূল্যবান মুক্তার মতো!
যেমন ধরুন, আপনি কোন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। হঠাৎ আপনার নজরে পড়ল, রাস্তায় একটা পেরেক পড়ে আছে। আপনি ভাবলেন, পেরেকটা রাস্তা থেকে তুলে দূরে ফেলে দেই। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলেন, সবার পায়েই তো জুতা থাকে, পেরেকটা আর তেমন কী ক্ষতি করবে? তাছাড়া ওটা ধরলে, না জানি মানুষ কী ভাবে? এ সব কথা ভেবে পেরেকটা আর তুললেন না। কিন্তু পরে সাধারণ কোনো এক মুসলমান ভাই সেই পেরেকটা দেখে ভাবলো, ‘এর দ্বারা তো কেউ কষ্ট পেতে পারে’ এ কথা ভেবে সে ওটাকে রাস্তা থেকে তুলে দূরে ফেলে দিল।
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া ঈমানের একটি শাখা। একটু চিন্তা করুন, সামান্য একটি পেরেক সরানোও ঈমানের একটি শাখা। এটি কার কথা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা! আর আল্লাহর কাছে ঈমানের এক একটি শাখার মূল্য অনেক অনেক বেশি!
তাই আমরা কোনও আমলকে অবহেলা করে ছেড়ে দেব না, বাহ্যত তা যত ছোটোই হোক।
একটি ঘটনা
একটি ঘটনা বলি। ঘটনাটি আমাদের এক ভাইয়ের। একদিন তিনি বাসায় ছিলেন। কী এক কারণে বাসায় একটু দেরি হয়ে গেছে তাই আসরের জামাত ছুটে যাবে যাবে অবস্থা। তিনি ভাবলেন, মসজিদে গিয়ে এখন কি আর জামাত ধরতে পারব? পরক্ষণেই তাঁর মনে হল, আমার এত চিন্তা করার দরকার কি? আমার কাজ মসজিদে যাওয়া আমি যাই। সঙ্গে সঙ্গে রওনা হয়ে গেলেন। নামায শেষ করে চিন্তা করলেন, আমি তো মসজিদে বসে কিছু সময় জিকির করতে পারি। বাসায় তো তেমন কোন কাজ নেই। তখন বসে বসে কিছুক্ষণ জিকির করলেন। এরপর যখন বের হলেন দেখেন, মসজিদের বাইরে একজন মিসকিন বসা। ভাবলেন, আমি তো কিছু সাদাকা করতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে কিছু সাদাকা করলেন।
দেখুন, এই ভাই কদম উঠিয়েছিলেন মাত্র একটি নেক আমল করার জন্য, কিন্তু আল্লাহ তাঁকে তিন তিনটা নেক আমল করার তাওফিক দিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার!
সাদাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নেক আমল
সাদাকার বিষয়ে কিছু কথা বলি। সাদাকা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নেক আমল। তবে আমরা একে তেমন একটা গুরুত্ব দেই না। সাদাকার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। কুরআনে এবং হাদিসে সাদাকার বহু উপকারিতার কথা এসেছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করেন।
আরেকটি ঘটনা বলি। একবার এক ডাকাত এক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ দেখল, রাস্তার পাশের এক রুটির দোকানে একটি মাত্র রুটি অবশিষ্ট আছে। একজন গরিব লোক এসে সেই রুটিটা দোকানদারের কাছ থেকে কিনল। সে তখনও রুটিটি হাতে নেয়নি এরই মধ্যে এক ধনী লোক এসে দিগুণ দাম দিয়ে রুটিটি কিনে নিতে চাইল। তখন গরিব লোকটি বললো, এই রুটিটি আমার প্রাপ্য। তাছাড়া আজ আমার ঘরে কোনও খাবার নেই। এটি না নিয়ে গেলে আমার মেয়েরা না খেয়ে থাকবে। ধনী লোকটি তার কথার কোন পাত্তাই দিল না। একটু দূর থেকে ওই ডাকাত ব্যাপারটি লক্ষ্য করলো। সে এগিয়ে এসে ধনী লোকটির দেয়া দামের দিগুণ দাম দিয়ে দোকানদারের কাছ থেকে রুটিটি কিনে নিল এবং গরিব লোকটির হাতে তুলে দিল। সে তাকে শুধু এটুকু বলল যে, আপনার মেয়েদেরকে আমার জন্য একটু দোয়া করতে বলবেন। এ ঘটনার কিছু দিন পরই আল্লাহ ওই ডাকাতকে হেদায়েত দান করেন। পরবর্তীতে সে স্বপ্নে দেখেছিল, সদকার ওই আমল আর গরিব লোকটির মেয়েদের দোয়ার ওসিলায়ই আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করেছেন।
আমরা আমাদের পূর্বের কথায় ফিরে যাই। বলছিলাম, ওই ভাই মাত্র একটি নেক আমল করার জন্য কদম উঠিয়েছিলেন কিন্তু আল্লাহ তাঁকে তিন তিনটা নেক আমল করার তাওফিক দিয়ে দিলেন। যার মধ্যে একটি ছিল সাদাকা।
এবার কোনো ভাই একটু কি বলতে পারবেন যে, এতক্ষণ যা যা বললাম তার সারকথাটি কী?
উপস্থিত এক ভাইঃ কখনো কোনো আমলকে ছোট মনে করে ছেড়ে দিতে নেই।
আরেক ভাইঃ ছোট কোনো আমলও অবহেলা বশত না ছাড়া চাই। কারণ, ছোট আমলটিই হয়তো অনেক বড় রহমতের দরজা খুলে দিতে পারে ইনশাআল্লাহ
৩য় আরেক ভাইঃ আমল হেদায়াতের রাস্তা সহজ করে।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহঃ মাশাআল্লাহ। এই ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিসও আছে। তিনি বলেছেন, তোমরা কোনো আমলকেই তুচ্ছ মনে করো না।
অতএব কোনো আমল যত ছোটই হোক আমরা তা করার চেষ্টা করবো। আমরা যদি ছোট ছোট আমলগুলো বেশি করে করতে থাকি তাহলে বড় আমল করারও তাওফিক জুটবে ইনশাআল্লাহ।
আজ তাহলে আমরা কী শিখলাম? কখনো কোনো আমলকে ছোট মনে করে ছেড়ে দেয়া যাবে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করেন।
এবার আমরা আমাদের মূল আলোচনা শুরু করি ইনশাআল্লাহ।
আজকের বিষয় হলো, মাসুল ভাইদের প্রতি আমাদের আদব ও সম্মান কেমন হওয়া উচিৎ?
এখানে মূলত দুইটি বিষয়। প্রথমটি হল, আদব। দ্বিতীয়টি হল, মাসুল ভাইদের সাথে আদব।
আদব বিষয়টি আসলে আখলাকের অন্তর্ভুক্ত। তাই চলুন, প্রথমে আমরা আখলাক বিষয়ে কিছু আলোচনা করি ইনশাআল্লাহ।
আপনারা জানেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিভিন্ন নবীদের ব্যাপারে তাদের বিশেষ কিছু গুণের কথা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। যেমন, হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালামের সবর। হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের শোকর। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কোমলতা ও দয়া ইত্যাদি। আমাদের প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারেও আল্লাহ তাআলা তাঁর একটি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। বলুন তো ভাই! সেটি কী?
উপস্থিত এক ভাইঃ তাঁর আখলাক।
আরেক ভাইঃ চারিত্রিক পবিত্রতা তথা আখলাক।
৩য় আরেক ভাইঃ
وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ [٦٨:٤]
নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী। সূরা আল কালাম-৪
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহঃ বলুন তো ভাই! এ থেকে আমরা কী শিক্ষা পেতে পারি?
৪র্থ আরেক ভাইঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত হিসেবে আমাদেরকেও তাঁর মতো উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহঃ আর?
৫ম আরেক ভাইঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের সব কিছুই অনুসরণযোগ্য।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহঃ আমি যা বুঝলাম তা হল, সমস্ত নবী রাসুলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন, আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তাআলা তাঁর যে গুণটির কথা উল্লেখ করেছেন তা হল, উত্তম চরিত্র। আমরা তাঁর উম্মত হওয়ায় আমাদেরকেও তাঁর মতো উত্তম চরিত্র অর্জন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রেষ্ঠত্বের বহু কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হল, তাঁর উত্তম চরিত্র।
উপস্থিত এক ভাইঃ শোকর, সবর ও অন্যান্য গুণাবলী থেকেও আখলাক উত্তম, তাই না ভাই?
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহঃ জী ভাই এমনই। কারণ, কারো মাঝে শোকরের গুণ থাকলে সবরের গুণ নাও থাকতে পারে। আবার সবরের গুণ থাকলে শোকরের গুণ নাও থাকতে পারে কিন্তু আখলাকের মধ্যে সবর, শোকর সহ ভালো ভালো সবগুণই রয়েছে। সব গুলোর সমষ্টিই হল উত্তম আখলাক। এটি অনেক মূল্যবান একটি গুণ। এক হাদিসে এসেছে,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ من أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَحَاسِنُكُمْ أَخْلاقًا
রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে তারাই আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় হবে এবং আমার সবচেয়ে নিকটে অবস্থান করবে যাদের চরিত্র সুন্দর। জামে তিরমিযী, হাদিসঃ ২০১৮
তো বলছিলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত নবী-রাসূলদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আর আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে তাঁর যে গুণটির কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন তা হল, তাঁর উত্তম চরিত্র। নবুওয়ত প্রাপ্তির পূর্বেই তাঁর মাঝে এ গুণটি বিদ্যমান ছিল।
উত্তম চরিত্রের পুরস্কার শুধু যে আখিরাতে পাওয়া যাবে এমন নয়। বরং এর কিছু পুরষ্কার ও উপকারিতা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে দুনিয়াতেই দেন। তাযকিয়াতুন নফসের অনেক বড় একটা অংশ এই আখলাককে নিয়েই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উত্তম আখলাকের গুণে গুণান্বিত হওয়ার তাওফিক দান করেন।
এবার আমরা আমাদের আলোচ্য বিষয়ের দ্বিতীয় পয়েন্টে আসি। দ্বিতীয় পয়েন্ট ছিল, মাসুল ভাইয়ের সাথে আদব। এখানে আমরা শুধু মাসুল ভাইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আদবের আলোচনা না করে এ বিষয়ে আরো ব্যাপক ভাবে আলোচনা করবো। যেন, মাসুল, মামুর, দ্বীনি ভাই, সাধারণ মুসলিম ভাই সবার সাথে সংশ্লিষ্ট আদব ও আখলাকের বিষয়টি এই আলোচনায় এসে যায়।
উত্তম আখলাকের অনেক শাখা রয়েছে। তবে যে সব শাখা দ্বারা উত্তম আখলাকের প্রকাশ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হল, জিহবা বিষয়ক আখলাক। আজকে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
জিহবা বিষয়ক উত্তম আখলাক
عَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَصْمُتْ». متفق عَلَيْهِ
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর এবং কেয়ামতের দিনের উপর ঈমান রাখে সে যেন হয় ভাল কথা বলে, না হয় চুপ থাকে। [সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম]
সুবহানআল্লাহ! এই হাদিসটি যে কত ব্যাপক তা বুঝানোর মতো ভাষা আমার নেই। হাদিসটি নিয়ে মাঝে মধ্যে চিন্তা করে আমি হয়রান হয়ে যাই যে, এর ব্যাপকতা কত বেশি! তো ভাইয়েরা! আপনারা আমাকে প্রথমে বড় বড় যে কোনো তিনটি কবিরা গুনাহের নাম বলুন।
এক ভাইঃ গীবত করা।
আরেক ভাইঃ মিথ্যা বলা ও ব্যভিচার করা।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহঃ দেখুন ভাই, বড় বড় এই তিনটি কবিরা গুনাহ থেকে আল্লাহর তাওফিকে আমাদের জন্য বেঁচে থাকা সম্ভব যদি আমরা ওই একটি মাত্র হাদিসের উপর যথাযথ ভাবে আমল করি। কারণ, তিনটি গুনাহই মূলত জিহবা সংশ্লিষ্ট গুনাহ। এমন কি যিনাও! কারণ, যিনা ব্যভিচারের সূচনা চোখ আর জিহবা দিয়েই হয়। প্রথমে চোখ দিয়ে দেখে এরপর জিহবা দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আসল অন্যায়ের দিয়ে অগ্রসর হয়।
লক্ষ্য করুন, এক লাইনের একটি হাদিস অথচ এর মধ্যে কী মূল্যবান কথা বলে দেয়া আছে। এই একটি মাত্র হাদিসই আমাদেরকে অনেক বড় বড় কবিরা গুনাহ থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট কিন্তু আমাদের অনেকেই এ ব্যাপারে উদাসীন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
সাহাবায়ে কেরাম এবং আমাদের মাঝে পার্থক্য
এবার চলুন ভাই আমরা দেখি এই হাদিসের সাথে আমাদের জিন্দেগির সম্পর্ক কি? তার আগে এক শায়েখের খুবই চমৎকার একটি কথা শোনাই। একবার এক শায়েখকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, সাহাবায়ে কেরাম এবং আমাদের মাঝে পার্থক্য কি? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, পার্থক্য তো অনেক, তার মধ্যে একটি বড় পার্থক্য হল, তাঁরা প্রত্যেকেটি সুন্নাহকে এ কথা মনে করে আমল করতেন যে, এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ বা তরিকা! পক্ষান্তরে আমরা প্রায় সব সুন্নাহকেই এ কথা মনে করে ছেড়ে দেই যে, আরে এতো সুন্নাহ! (ফরয ওয়াজিব তো না)
শায়েখ আরও বলেন, কেউ যদি বলে, সুন্নাহকে ভালোবাসার কী অর্থ? তাহলে বলবো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রত্যেকটি সুন্নাহ -হোক তা যতই ছোট যেমন ধরুন, ডান হাত দিয়ে পানাহার করা এবং বাম হাত দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা- আপনার কাছে দুনিয়া এবং দুনিয়ার সব কিছু অপেক্ষা প্রিয় হতে হবে। এটিই হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর প্রতি ভালোবাসার অর্থ।
আমাদের জীবনের সাথে হাদিসটির সম্পর্ক
তো বলছিলাম, চলুন, আমরা একটু দেখি, আমাদের জীবনের সাথে এ হাদিসটির সম্পর্ক কতটুকু? হাদিসটি ছিলো, কথা বললে ভালো কথা বলো, না হয় চুপ থাকো।
হাদিসের উদ্দেশ্য হল, আমরা যে কোনো কথা বলতে চাইবো তা বলার আগে একটু চিন্তা করে নিবো। কথাটি ভালো কি না? ভালো হলে বলবো, না হলে বলবো না। চুপ থাকবো। দেখুন ভাই, মানুষের দিল খুবই নরম একটি জিনিস। সামান্য কথাতেই ভেঙ্গে যায়। আপনি হয়তো কাউকে কোনো কথা বললেন, আপনার হয়তো ইচ্ছা ছিল না, তাকে কষ্ট দেয়ার কিন্তু আপনার কথা সামান্য একটু এদিক ওদিক হওয়াতে তিনি কষ্ট পেয়ে ফেলেছেন।
আমাদের সালাফগণ কোনো কাজের ব্যাপারে কাজটি হালাল বা হারাম এভাবে বলতেন না। তাঁরা বলতেন, কাজটি উত্তম বা অনুত্তম। তবে উত্তম বা অনুত্তম বলে তাঁদের উদ্দেশ্য হালাল বা হারামই হত। এভাবে বলার কারণ হল, তাঁরা ঝুঁকি নিতে চাইতেন না। নিজেদেরকে কিছুটা হলেও নিরাপদ অবস্থানে রাখতেন। তবে এর অর্থ এই নয় যে, তাঁরা বিষয়টিকে অষ্পষ্ট রাখতে চাইতেন। না, বরং এটি কেবলই সতর্কতার খাতিরে করতেন। তাঁদের ছাত্ররা ঠিকই বুঝতে পারতো, উত্তম বা অনুত্তম বলে উস্তাদের উদ্দেশ্য কী?
জিহবার বিষয়টি এমনই। ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কথা একদমই না বলা চাই। কারণ, কোন কথা একবার মুখ থেকে বের হয়ে গেলো তা আর ফিরানো যায় না। তা যে কতদূর পর্যন্ত যাবে তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
এবার চলুন আমরা আমাদের বাস্তব জীবন সম্পর্কে কিছু কথা বলি। বর্তমানে আমরা আমাদের দ্বীনী ভাইদের সাথে সরাসরি কথা বলার সুযোগ কমই পাই। অধিকাংশ কথাই এখন চ্যাটে হয়। আর এই চ্যাট এক মহা মুশকিলের জায়গা। এখানে কখনো এমন হয় যে, আপনি লিখলেন একটা কিন্তু হয়ে গেল আরেকটা। এতে কোনো কোনো সময় কোন ভাই কষ্ট পেয়ে ফেলেন। তাই আমরা সব সময় যথাসম্ভব সতর্ক থাকার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যে নিজের মনের ভাবটা প্রকাশ করার তাওফিক দিয়েছেন, মুখ দিয়ে প্রকাশ করি বা হাত দিয়ে লিখে করি এটি আল্লাহ তাআলার অনেক বড় একটি নেয়ামত। আমাদের উচিৎ এ নেয়ামতের যথাযথ কদর করা। আমরা যদি একটু হুঁশিয়ার হই তাহলে আমরা আমাদের প্রতিটি কথাকে এবং প্রতিটি লাইনকে সওয়াবে পরিণত করতে পারি। আর যদি হুঁশিয়ার না হই তাহলে দেখা যাবে, আমাদের কোন কথায় বা কোন লেখায় কোন ভাই মনে কষ্ট পেয়ে ফেললেন। কিন্তু আমরা তা খেয়ালই করলাম না।
এই কথাটাই একটু সুন্দর করে বলুন
একটি উদাহরণ দেই। ধরুন, কোন এক ভাই আপনাকে নক করল, ‘ভাই! এটা একটু বলে দিন’। সঙ্গে সঙ্গে আপনি বললেন, ‘ভাই আপনাকে যা বলেছি আগে ওটা শেষ করেন’। আরে ভাই, আপনি এই কথাটাই একটু সুন্দর করে বলতে পারেন যে, ‘ভাই আমি যা বলেছি আপনি একটু কষ্ট করে আগে ওটা শেষ করুন। এরপর ইনশাআল্লাহ আপনি যা জানতে চেয়েছেন তা বলে দেবো’। দেখুন, সামান্য একটু পরিবর্তন করাতে কথাটা কত সুন্দর হয়ে গেল!
মনে রাখবেন ভাই! আপনার একটা কথাতেও যদি কোন ভাই অন্তরে সাকিনা পান তবে তা আপনার জন্য সাদাকা বলে গণ্য হবে।
আপনি আপনার প্রত্যেকটি কথাকে সুন্দর থেকে সুন্দর করে বলার চেষ্টা করুন। যা-ই বলুন সুন্দর ভাবে বলুন। ভাই! এর জন্য তো আপনাকে আলাদা কোনো কষ্ট করতে হচ্ছে না। আলাদা কোনো সময়ও দিতে হচ্ছে না। শুধু একটু নিয়ত থাকলেই হয়ে যাচ্ছে।
এক ভাইয়ের ঘটনা
আমি আপনাদেরকে এক ভাইয়ের একটি ঘটনা বলি। ওই ভাই ছিলেন মাসুল। একবার তিনি কোনো ভাবে জানতে পারলেন যে, তার মামুররা তাকে ভয় পান। ভিন্ন কোন কারণে না। তিনি ভাইদের কাছ থেকে কাজের খুব হিসাব নেন তাই। তখন ওই ভাই ভেবে দেখলেন যে, তিনি তো ভাইদের সাথে মোটেও কড়াকড়ি করেন না বরং ভাইদেরকে অনেক ভালোবাসেন। তারপরও এমন কেন হল? তখন তিনি নিজে নিজে মুহাসাবা করে বুঝতে পারেন যে, তিনি ভাইদের ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে কোন খোঁজ খবর নেন না। এরপর ওই ভাই ঠিক করলেন, এখন থেকে অন্তত দু তিনটা কথা দিয়ে হলেও ভাইদের ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিব। এর কিছু দিন পরই ওই ভাই তাঁর মামুর ভাইদের কাছে প্রিয় পাত্র হয়ে গেলেন। তাঁরা তাঁর জন্য খুব দোয়া করতেন। একবার তাঁর মামুরদের মধ্য হতে এক ভাই আমাকে তাঁর ব্যাপারে বলেছিলেন, অমুক ভাই যখন জিজ্ঞেস করতেন, ভাই! আপনার পরিবারের সবাই ভালো আছে তো? তখন তাঁর এই একটি কথা শুনেই মনটা ভরে যেত!
চিন্তা করে দেখুন ভাই, এই কথাটি বলার জন্য কি খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়?
পাল্টা কিছু না বলে সবর করুন
এতো গেল কথা বলার একটা দিক। এবার আরেকটা দিক প্রসঙ্গেও কিছু বলি।
আমার মাসুল ভাই যখন আমার কাছে কোনো কাজের জবাবদিহিতা চেয়ে বসেন এবং প্রয়োজনে কিছু শক্ত কথাও বলে ফেলেন তখন দেখা যায়, আমরা বেশ পেরেশান হয়ে যাই। চেহারাটাও যেন কেমন কেমন হয়ে যায়। এ ব্যাপারেও আপনাদের সাথে একদম খোলামেলা কিছু কথা বলি। ভাই! এখানে আসলে আমরা সবাই কামলা খাটছি। এক কথায় আমরা কী করছি ভাই? কামলা খাটছি। আমরা সবাই জান্নাতের বিনিময়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কামলা খাটছি। ব্যাস, এটাই হল আসল কথা।
দ্বিতীয় কথা হল, আমার এক ভাই আমার উপর মাসুল হিসেবে আছেন আল্লাহরই হুকুমে। যদি আমাকে শক্ত কোন কথা বলা মাসুল ভাইয়ের কাছে হক মনে হয়ে থাকে আর তাই তিনি বলে থাকেন তাহলে আমার উচিৎ, সবর করা। পাল্টা কোন কথা না বলা। কারণ, আল্লাহ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, এ কথাটি তুমি কেন বললে? তখন আমি কী উত্তর দেবো? যদি আল্লাহর সামনে দেয়ার মতো উত্তর আমার থাকে তাহলে আমি বলতে পারবো। তা না হলে অবশ্যই বিরত থাকবো। এটাই হল পরিক্ষা। আর আল্লাহ যে আমাদেরকে পরীক্ষা করবেন তা তো বলেই দিয়েছেন।
এছাড়াও পাল্টা কিছু বললে আরও কিছু সমস্যা আছে। তখন শয়তান সুযোগ পেয়ে যাবে, বলবে, ‘তুই ঠিকই আছিস। তোর মাসুল কি আর তোর সমস্যা বুঝবে? আমি বলবো, ভাই! আপনার মাসুল না বুঝু্ক, আল্লাহ তো বুঝবেন। তাই আপনি কিছু না বলে সবরই করুন। কখনোই এমন কথা বলবেন না যা দ্বারা বেয়াদবি বা উগ্রতা প্রকাশ পায়। এমনকি যদি দেখেন যে, আপনার উপর জলুম করা হচ্ছে তবুও শুধু এটুকু বলবেন যে, জী ভাই আমি মেনে নিলাম। আল্লাহ যেমন চান তেমনই হবে। এতে আপনি মাসুলের ইত্তেবাও করলেন আবার জুলুমের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে একটা বিচারও দিয়ে দিলেন।
আপনার প্রতিটি কথাই সাদাকা হতে পারে
তো বলছিলাম, কথা বলার সময় আমরা আমাদের কথাগুলোকে যথাসম্ভব সুন্দর করে বলার চেষ্টা করব। প্রতিটি কথাকে সাদাকা মনে করে বলবো। আমাদের প্রতিটি কথাই সাদাকা বলে গণ্য হবে যদি আমরা সুন্দর করে বলতে পারি।
আপনাকে যদি বলা হয়, ভাই আপনি আজ থেকে যত কথা বলবেন প্রতিটি কথার বিনিময়ে দশ টাকা করে সাদাকা করার সাওয়াব পাবেন। তাহলে আপনি কি এই প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না? নিশ্চয়ই করবেন। বাস্তবেও তো ভাই আপনার প্রতিটি কথা সাদাকা হতে পারে যদি কথাগুলোকে একটু সুন্দর করে বলতে পারেন। তাহলে এটাকে আপনি কেন গ্রহণ করছেন না?
সবর করলে সম্মান বাড়ে
তার চেয়েও বড় কথা কি ভাই জানেন? আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনি নিজের হক ছেড়ে দিলেন। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা না। আপনি যদি আল্লাহর জন্য নিজেকে ছোট করেন তাহলে আল্লাহ অন্যের সামনে আপনাকে বড় করে দিবেন। আপনি জানবেনও না, আপনার ওই মাসুল ভাই হয়তো তাঁর উপরস্থ ভাইদের সামনে আপনার প্রশংসা করে বলবেন, ‘ভাই অমুক ভাইয়ের কী যে সুন্দর আখলাক! কী আর বলবো! সুবহানাল্লাহ, আমি লজ্জায় পড়ে যাই। এভাবেই আল্লাহ আপনার সম্মান আরও বাড়িয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ। আর সাদাকার ব্যাপারটা তো আছেই। এবার বলুন ভাই এমন প্যাকেজ কি মিস করা যায়? আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।
এটি হল বোনাস
আর এর সাথে আছে তিন নম্বর আরও একটা ফায়েদা, যা বোনাস। কিন্তু তাও কোনো অংশে কম না। কী সেটা জানেন? সেটা হল, যখন দুজন ভাই একে অপরের সাথে এমন বিনম্র আদব পূর্ণ আখলাক প্রদর্শন করে তখন শয়তান রাগে জ্বলে-পুড়ে শেষ হয়ে যায়। কারণ সে ব্যর্থ হয়েছে। সে ওই দুই ভাইয়ের মাঝে ফাটল ধরাতে পারেনি। এ কারণে সে আফসোস করতে থাকে।
শয়তান ভাবতে থাকে, আমি নিজেকে বড় মনে করে জাহান্নামী হলাম, আর এরা নিজেদেরকে ছোট মনে করে জান্নাতের দিকে চলে যাচ্ছে! সে আফসোসে জ্বলে-পুড়ে মরতে থাকে। আর আল্লাহ ওই দুই ভাইয়ের অন্তরে মুহাব্বত ঢেলে দেন। তখন তাঁরা একজন আরেকজনের কাছে আপন ভাইয়ের চেয়েও প্রিয় হয়ে যান। তারা হয়ে যান একে অপরের আখি ফিল্লাহ।
উপস্থিত এক ভাইঃ আমি এক ভাইয়ের ব্যাপারে জানি, তাঁর যখনই কোনো ভুল হয়ে যেত সঙ্গে সঙ্গে বলে দিতেন, ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে। এর ফলে তাঁর মাসুল তাঁকে খুবই মুহাব্বত করতেন।
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহ। দেখুন ভাই! আপনার জন্য সব কিছুই সহজ হয়ে যাবে যদি আপনি শুধুমাত্র নিজের জবানটা একটু সুন্দর করতে পারেন। চেষ্টা করতে থাকলে আল্লাহ তাআলা আপনার জন্য সহজ করে দিবেন এবং আরও অনেক নেক আমলের তাওফিক দিবেন ইনশাআল্লাহ।
আর এভাবেই ধীরে ধীরে আমরা আমাদের কাংখিত সেই উত্তম চরিত্রের গুণে গুণান্বিত হতে পারবো ইনশাআল্লাহ যে গুণে গুণান্বিত ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আমার কথায় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে তা আমার পক্ষ থেকে আর তাতে কল্যাণকর কিছু থাকলে তা একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমীন।
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين
وآخر دعوانا ان الحمد لله رب العالمين
—————————