আত-তিবইয়ান পাবলিকেশন্সআরবইতিহাস- ঐতিহ্যইলম ও আত্মশুদ্ধিবই ও রিসালাহমিডিয়াশাইখ ইউসুফ আল উয়াইরী রহিমাহুল্লাহসৌদী আরবহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

জিহাদের ভূমির পথে… ইউসুফ আল উয়াইরি রহ.

জিহাদের ভূমির পথে…

-শাইখ ইউসুফ ইবন সালিহ্ আল-’উয়াইরী রহ.

ডাউনলোড করুন

https://archive.org/details/ThePathToTheBattleFieldBengali

https://archive.org/download/ThePathToTheBattleFieldBengali/The_path_to_the_battle_field_BENGALI.pdf

https://www.mediafire.com/file/1yr7nbhph51907y/Jihader_Vumir_poth.pdf/file

سلسلة المقالات من الثاني

ر ياح

جنات الفردوس من

The Second of the Series of Treatises

Breezes,

From the Gardens of Firdaws

وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান যমীন, যা তৈরি করা হয়েছে মুত্তাক্বীদের জন্যআলিইমরান: ১৩৩

 

জিহাদের ভূমির পথে

আরব ভূখণ্ডে মুজাহিদদের প্রাক্তন সেনাপতি,

শহীদ শাইখ, আল-হাফিয ইউসুফ ইবন সালিহ্ আল-’উয়াইরী-র

আলোচনা থেকে উদ্ধৃত

আত্-তিবয়ান পাবলিকেশন্স -এর পক্ষ হতে বিতরণ

সংক্রান্ত বিশেষ অনুরোধঃ প্রকাশকের টীকাসহ এই গ্রন্থের

সকল অংশে যে কোন প্রকার- যোগ-বিয়োগ, বাড়ানো-

কমানো অথবা পরিবর্তন করা যাবে না, এই শর্তে, যে কোন

ব্যক্তি এই প্রকাশনা প্রচার বা বিতরণ করার অধিকার রাখেন।

 

জিহাদের ভূমির পথে

সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর; যিনি জগতসমূহের রব; যিনি তাঁর কিতাবে বলেছেন,

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا

“যারা আমার পথে আত্মনিয়োগ করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো” [সূরা আনকাবুত ২৯:৬৯]

আর সালাত ও সালাম তাঁর বিশ্বস্ত রাসূল মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ উপর যিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল প্রজন্মের নেতা – আল ঘুর আল মুহাজ্জিলীন-দের (যাদের কপাল ও অঙ্গসমূহ অজুর কারণে আলোকিত হবে) নেতা। এবং সালাম তাঁর পরিবার ও সাহাবাগণের উপর।

অতঃপর, একথা সত্য যে, আজ মুসলিমদের অনেকেই জানে, জিহাদ এই উম্মতের উপর এখন ফরযে আইন; কারণ মুসলিম ভূমিতে ক্রুসেডের এই থাবা প্রতিহত করতেই হবে। আর মুসলিমরা এটাও খুব ভালভাবেই জানে যে, মুজাহিদদের তথা এই উম্মাহর জন্য আজ এমন কিন্তু সত্যনিষ্ঠ মানুষ প্রয়োজন যারা এই দ্বীনের জন্য; মুসলিমদের রক্ত ও ইজ্জতের জন্য লড়াই করবে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, বেশীরভাগ মুসলিম এই বুঝকে আমলে পরিণত করতে পারেনি। যদি পারত তাহলে তারাও আজ সাফল্য প্রাপ্ত ঐ মানুষদের মতো জিহাদের ময়দানে থাকতো। বরং তারা বসে বসে নিজেদের ক্ষয় ও দুর্বলতার মাঝে তলিয়ে যাচ্ছে। তাদের যখন প্রশ্ন করা হয়ঃ

“জিহাদের ময়দানে যাবার রাস্তা কোথায়? কিভাবে আমরা সেখানে যাব যেখানে সম্মুখ যুদ্ধ চলছে?”

কিন্তু হায়! এমন প্রশ্নের মুখোমুখি মুসলিম সন্তানেরা আজকে এই পথের খোঁজে নামছে না বা প্রস্তুতিও নিচ্ছে না। তারা বসে আছে আর বোকার মতো ভাবছে যে, পথ না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে রবের কাছ থেকে পার পেয়ে যাবে। সুতরাং আমি এখানে জিহাদে যাবার সেই রাস্তার কথাই আলোচনা করবো, এই রাস্তার অর্থ আর কিভাবে এই উম্মাহ জিহাদের রাস্তায় পাড়ি জমাতে পারে, সেই উপায়।

আজ জিহাদের কারণে ইহুদী ও ক্রুসেডারদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তোমরা নিশ্চয় জানো যে, জিহাদকে আজ ‘বর্বর সন্ত্রাস’ বলে আখ্যা দেয়া হয়। বলা হয় এই ‘দানব’ (জিহাদ) গোটা বিশ্বকে তথা ‘সভ্যতাকে’ আর “শান্তি ও স্থিতিশীলতা”কে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ক্রুসেডারদের মুখে আজ প্রতিনিয়ত এসব শব্দই ধ্বনিত হচ্ছে। আর আজকের সারা দুনিয়া জিহাদকে তাদের চোখেই দেখে। এমনই এক সময়ে কোন মুসলিম যেন একথা মনে না করে যে, জিহাদের রাস্তা খুবই সহজ ও আরামদায়ক। কখনও নয়। বরং নিশ্চিত ভাবে জেনে রাখো এই রাস্তা বিপদসংকুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ যার মুখোমুখি হতেই হবে যদি তুমি সত্যিই তোমার গন্তব্যে (জিহাদের দেশে) পৌঁছুতে চাও।

কোন মুসলিম যেন একথা কল্পনাও না করে যে তার শত্রুরা তার পথে ফুল ছিটিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাবে বলবে “এসো, এসো আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে, জান্নাতের পথে।” যদি সত্যই কেউ তার শত্রুকে এমন মনে করে তবে সে বোকা এবং মূর্খও বটে। কারণ, সে তার শত্রুকে চেনে না বা এর বাস্তবতাও উপলব্ধি করে না। এই শত্রুদের ব্যাপারে কুরআনে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) নিজেই জানিয়েছেন,

وَلا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا

“তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে, যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়; যদি তারা সক্ষম হয়।” [সূরা বাকারা ২: ২১৭]

আর এ বিষয়টি ইসলামের আগমনের পর থেকেই স্পষ্ট যে, কাফেররা দিন রাত অবিরাম চেষ্টা করবে যাতে মুসলিমরা তাদের দায়িত্ব পালন করতে না পারে। তবে এটাও একটি মুসলিমের অজুহাত হতে পারে না। তবে সেই সকল মুসলিম যাদের প্রত্যয় আকাশ ছোঁয়া, যারা তাদের রবকে সন্তুষ্টি করতে সচেষ্ট আর এই ভালবাসার প্রমাণ রাখতে যারা জীবন দিতে প্রস্তুত; তাদের নিকট এসব বাঁধা কিছুই নয়। কারণ, তারা জানে যে, কাফেররা আল্লাহর রাস্তায় বাঁধা দিবেই। সুতরাং মুসলিমকে অবশ্যই জিহাদি পথের বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে।

অনেক মুসলিম আছে যারা জিহাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন কিন্তু এখনো জিহাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়াননি। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, এই ‘প্রস্তুতি’ গ্রহণকেই যথেষ্ট মনে করবেন না। এমন অজুহাত আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। একথা ঠিক যে, জিহাদের প্রস্তুতি অন্তরের নিফাক দূর করে। অর্থাৎ যদি তুমি নিজেকে শারীরিক, মানসিক (তাকওয়া), সশস্ত্র কৌশলগত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রস্তুত করে থাকো তাহলে তুমি মুনাফিক নও। তবে, এই প্রস্তুতি গ্রহণ করা আর জিহাদে রওনা দেয়ার মাঝে পার্থক্য রয়েছে। শুধুমাত্র প্রস্তুতির অজুহাত দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। জিহাদের ক্ষেত্রে একমাত্র গ্রহণযোগ্য অজুহাত হলো, শারীরিক অক্ষমতা; যার কারণে জিহাদে যাওয়া বা সাহায্য করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটি মুসলিম যুবকের জেনে রাখা উচিৎ যে, তাদের পূর্বে একদল সত্যনিষ্ঠ মানুষ জিহাদের ময়দানে পৌঁছে গেছে। তারা সত্যিই কঠোর পরিশ্রম, সাধনা করেছে এই পথ পাড়ি দিতে; কুরবানী করতে হয়েছে অনেক কিছু। এতকিছুর পরই কেবল তারা পৌঁছুতে পেরেছে জিহাদের দেশে। সেখানে প্রবেশ করার পূর্বেই তার সবকিছু হারিয়েছে, ভয় ও উদ্বিগ্নতার মাঝে কাটিয়েছে সময়, অনেককে করা হয়েছে বহিষ্কার এবং আরো কত অত্যাচার। তারপরও তারা আল্লাহর হুকুম পালনে ছিল অবিচল, অবশেষে আল্লাহ তাদের পৌঁছে দিয়েছেন গন্তব্যে – জিহাদের দেশে।

আর একারণেই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) জিহাদের পথে বের হওয়াকেও জিহাদ বলেছেন। আর এজন্য তিনি প্রস্তুত রেখেছেন বিরাট পুরস্কার। আল্লাহ তাদের সংখ্যা গুনে রাখেন যারা জিহাদের রাস্তায় পা বাড়ায়, আর কেউ যদি এই পথেই নিহত হয় তবে তো সে ‘শহীদ’। মুমিনদেরকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করার জন্যই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) এসব মর্যাদা ও পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। আর একজন মুজাহিদ জিহাদ থেকে কি আশা করে? হয় মৃত্যু অথবা বিজয়। এ দুটির যেকোনো একটি লাভ করতে পারলেই সে সফল। আর একারণেই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয়েই স্পষ্ট করে বলেছেন, যে ব্যক্তি জিহাদের জন্য বের হবে সে অবশ্যই এই দুটি জিনিসের একটি অর্জন করবে।

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেনঃ

وَمَنْ يُهَاجِرْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَجِدْ فِي الْأَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيرًا وَسَعَةً وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا

“কেউ আল্লাহর পথে হিজরত করলে সে দুনিয়ার বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রাচুর্য লাভ করবে এবং কেউ আল্লাহও রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ গৃহ থেকে মুহাজির হয়ে বের হলে এবং তার মৃত্যু ঘটলে তার পুরস্কারের ভার আল্লাহর উপর। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” [সূরা নিসা ৪: ১০০]

এখানে আল্লাহ পরিষ্কার ভাবে জানিয়েছেন যে, কেউ যদি জিহাদে অংশগ্রহণ করে তাহলে তার জন্য রয়েছে প্রচুর আবাসস্থল যেখানে সে অবস্থান নিতে পারে, আর রয়েছে প্রচুর রিযিক। আর যদি মৃত্যু আসে তবে তার পুরস্কার দেবেন সেই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা), যিনি কমপক্ষে জান্নাতে একটি বাগান দিয়ে থাকেন।

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আরো বলেনঃ

وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوا أَوْ مَاتُوا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

“এবং যারা হিজরত করেছে আল্লাহর পথে অতঃপর নিহত হয়েছে অথবা মারা গেছে তাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন; আর নিশ্চয় আল্লাহ্, তিনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।” [সূরা হজ্জ ২২: ৫৮]

এই আয়াতে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বুঝাতে চেয়েছেন যে মুহাজির ব্যক্তিকে যদি হত্যা করা হয় অথবা কোন কারণে সে পথেই মৃত্যু বরণ করে – উভয় ক্ষেত্রেই তার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে উত্তম রিজিক বা জান্নাত।

আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ

وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مَا ظُلِمُوا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَلاجْرُ الْآَخِرَةِ أَكْبَرُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

“যারা অত্যাচারিত হবার পর আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দিব এবং আখিরাতের পুরস্কারই তো শ্রেষ্ঠ। হায়! তারা যদি জানত।” [সূরা নাহল ১৬: ৪১]

এই আয়াতে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) শুধু দুনিয়ার উত্তম রিযিকের আশ্বাসই দেননি সেই সাথে আখিরাতে বিরাট পুরস্কারের কথা বলেছেন। বরং আল্লাহ তা’আলা কখনো কখনো তাকে দুনিয়ার রিযিক কম দিয়ে থাকেন; এটা তাঁরই হিকমত যা তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাদীসে এ বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দরভাবে, সুন্দরতম শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেছেন। তিনি মানুষকে হিজরতের ফলাফল সম্পর্কে জানিয়েছেন, যাতে অন্তরসমূহ জিহাদের জন্য ব্যাকুল হয়। আবু মালিক আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

“যে কেউ আল্লাহর পথে বের হয়, অতঃপর তাকে হত্যা করা হয় বা সে মারা যায়; অথবা তার ঘোড়া বা উট তার ঘাড় ভেঙ্গে দেয় (ফেলে দেয়); অথবা তাকে কোন সাপে কাঁটে; অথবা সে বিছানায় শুয়ে মারা যায় (আল্লাহর রাস্তায় থাকাকালে); অথবা অন্য কোন উপায়ে যেভাবে আল্লাহ চান- তাহলে অবশ্যই ঐ ব্যক্তি একজন শহীদ এবং অবশ্যই তাঁর জন্য রয়েছে জান্নাত।” [আবুদাউদ, নাসিরুদ্দিন আলবানী বলেছেন হাদীসটি হাসান অথবা সহীহ]

এই হাদীসের সমর্থন পাওয়া যায় আহমদে বর্ণিত সেই হাদীস থেকে যেখানে আব্দুল্লাহ ইবনে উতাইক (রাঃ) বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনেছেনঃ

“যে কেউ আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য ঘর থেকে বের হয়।” এরপর তিনি তার তিনটি আঙ্গুল, মধ্যমা, শাহাদাহ এবং বৃদ্ধাঙ্গুল; জড়ো করে বললেন, “এক মুজাহিদদের মধ্যে যে কেউ তার জন্তু (বাহন) থেকে পড়ে যায়; এবং মৃত্যুবরণ করে- তাহলে তার পুরস্কার আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে পড়ে; অথবা যদি কোন প্রাণী তাকে দংশন করে এবং সে মারা যায়- তাহলে তাকে পুরস্কৃত করা আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে পড়ে; অথবা সে বিছানায় মৃত্যুবরণ করে (আল্লাহর রাস্তায় থাকা কালে) – তাহলেও তাকে পুরস্কৃত করা আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে পড়ে।” [মুসনাদে আহমদ]

আর এসব হাদীসের রেওয়াতে যদি সামান্য দুর্বলতাও থেকে থাকে তবে তা কেটে যায় ঐসব আয়াতের দ্বারা যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে; কারণ এগুলো পরস্পর বিরোধী নয়।

আর ইমাম বুখারী (রহঃ) এটি জানতেন, তাই তিনি তার ‘সহীহ গ্রন্থের একটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেনঃ অধ্যায়ঃ যে আল্লাহর রাস্তায় (বাহন থেকে) পড়ে যায় এবং মৃত্যুবরণ করে সে তাদেরই একজন।

আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ

“কেউ আল্লাহও রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ গৃহ থেকে মুহাজির হয়ে বের হলে এবং তার মৃত্যু ঘটলে তার পুরস্কারের ভার আল্লাহর উপর।”এক্ষেত্রে ‘ভার’ মানে অবশ্যই কর্তব্য।

ইবনে হাজর (রহঃ) ব্যাখ্যা করেছেন, ‘সে তাদেরই একজন’ – এর অর্থ হলো, সে মুজাহিদদের একজন। আল্লাহ যেখানে বলেছেন, “এবং তার মৃত্যু ঘটলে”- সেখানে এটি সার্বজনীন; যার মধ্যে নিহত হওয়া বা যে জন্তুর পিঠে আরোহণ করা হয়, তা থেকে পড়ে যাওয়া বা অন্য সকল কিছুই অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে এই আয়াত নাযিলের কারণ আলোচনা করাটা খুবই উপযুক্ত হবে। সাদ ইবনে যুবাইর আস সুদ্দী এবং আরো অনেকের থেকে আত-তাবারী বর্ণনা করেছেন, যে, এই আয়াত নাযিল হয় ঐ মুসলিম ব্যক্তিকে নিয়ে যিনি মক্কায় থাকতেন। যখন তিনি আল্লাহর আয়াত শুনলেনঃ

أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا

“আল্লাহর জমিন কি এমন প্রশস্ত ছিল না যেখানে তোমরা হিজরত করতে?” [সূরা নিসা ৪: ৯৭]

সুতরাং তিনি অসুস্থ অবস্থায় তার পরিবারকে বলেন, “আমাকে বাইরে নিয়ে যাও, মদীনার দিকে (পথ দেখাও),” সুতরাং তারা তাকে বাইরে নিয়ে এলো (এবং মদীনার দিকে পথ দেখালো), এবং তিনি সেই পথেই মারা গেলেন, এর পরেই এই আয়াত নাযিল হয়। সঠিক বর্ণনা মতে তার নাম ছিল যামরাহ। এ বিষয়ে আমি সাহাবাদের নিয়ে আমার বইতে (আল ইসাবা) পরিষ্কার আলোচনা করেছি। ইমাম বুখারীর (রহঃ) বক্তব্য ‘ভার’ অর্থ ‘অবশ্যই কর্তব্য’ যা দ্বারা তিনি আল্লাহর বাণীর দিকে ইঙ্গিত করেছেন, “তার পুরস্কারের ভার আল্লাহর উপর”। অর্থাৎ তাকে পুরস্কৃত করা অবশ্যই কর্তব্য হয়ে পড়ে। ইবনে হাজরের (রহঃ) বক্তব্যের সারমর্ম এখানেই শেষ। সুতরাং এই যদি হয় জিহাদের রাস্তায় পা বাড়ানোর পুরস্কার তাহলে জিহাদের পুরস্কার কত বড়। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) এত বড় প্রতিশ্রুতি এমনি এমনিই দেননি। তিনি জানেন এ পথে অনেক বাঁধা আছে, কারণ দুইটিঃ

প্রথমতঃ নিজের পরিবার ও সহায় সম্পত্তি ছেড়ে যাবার পর এটাই প্রথম দুর্ভোগ; তাছাড়া তার নফস এখনো জিহাদের প্রচন্ডতার জন্য প্রস্তুত নয়।

দ্বিতীয়তঃ শত্রুরা মুসলিমদের জিহাদের রাস্তা নষ্ট করছে বা বাঁধা দিচ্ছে। কারণ, একজন মুজাহিদকে মারার চেয়ে এই কাজটি তাদের জন্য সহজ। কারণ মুজাহিদরা তো সকল প্রস্তুতি নিয়ে অস্ত্র হাতে অবস্থান করে।

মুসলিমদের প্রত্যয়কে আরো শানিত করার জন্য; সবার অন্তরকে জাগানোর জন্য আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) জিহাদের পথে পা বাড়ানোকেই এত বড় মর্যাদা দিয়েছেন। আর মুজাহিদদের জন্য দিয়েছেন পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি। এমন প্রতিশ্রুতি পাবার পর কোন সন্দেহ বা সংকোচের অবকাশ থাকতে পারে না।

আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তিনি বলতে শুনেছেনঃ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে বের হয়েছে আল্লাহ তার দায়িত্ব নিয়ে নেনঃ আমার পথে জিহাদ করা, আমার প্রতি ঈমান আনা ও আমার প্রেরিত রাসূলদের সত্য বলে মেনে নেয়া ছাড়া অন্য কোন কারণ তাকে ঘরছাড়া করেনি- তখন আমারই জিম্মায় যে তাকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাব অথবা সেই ঘরের দিকে তাকে সফলভাবে প্রত্যাবর্তিত করাব, তার প্রাপ্য সওয়াব গনীমত সহকারে যেখান থেকে সে (জিহাদের জন্য) বের হয়েছিল।” [সহীহ মুসলিম (১৮৭৬)]

আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) পথে বের হবার এই প্রতিশ্রুতিগুলো এটাই বার বার প্রমাণ করে যে, এ কাজটি কঠিন, বিপদ সংকুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। আর একারণেই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বার বার পুরস্কারের কথা স্মরণ করিয়ে এসব সমস্যাকে নগণ্য করতে চেয়েছেন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآَخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآَخِرَةِ إِلا قَلِيلٌ

“হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হলো যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা মাটিতে লেগে থাকো (অলসভাবে বসে থাকো); তবে কি তোমরা পার্থিব জীবনের উপর পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? বস্তুত পার্থিব জীবনের ভোগ বিলাস তো আখিরাতের তুলনায় কিছুই না, অতি সামান্য।” [সূরা তওবা ৯: ৩৮]

সুতরাং হে আল্লাহর বান্দা! তুমি যদি সত্যিই তাদের একজন হও যারা নিজেদেরকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করেছেঃ তাহলে এই প্রস্তুতি শেষ করেই তুমি বসে থেকো না; বরং সতর্ক হও। কারণ, জিহাদে রওনার ক্ষমতা যদি থাকে বা চেষ্টা করার সুযোগ যদি তোমার থাকে, তাহলে কোন অজুহাতই আল্লাহর সামনে কাজে আসবে না ।

জিহাদের রাস্তায় পা বাড়াও আর এজন্য কঠোর সাধনা কর। যারা জিহাদের দেশে গিয়েছে তারা সুপারম্যান না- তারা মুসলিম, তারাও মানুষ। তারা শুধু একনিষ্টভাবে সেখানে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করেছে; আর আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করেছেন – যখন এই পথের খোঁজে তাদের চোখ আর কান ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর এভাবেই তারা পৌঁছে গেছে জিহাদের দেশে।

কত পথই তো রয়েছে জিহাদে যাবার! এই যে আফগানিস্তান, যার সাথে সীমানা রয়েছে পাকিস্তান, ইরান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং চীনের। একইভাবে চেচনিয়ার সীমানায় রয়েছে জর্জিয়া, দাগিস্তান, ইঙ্গুঁশটিয়া এবং রাশিয়া। আর ফিলিস্তিনেরা রয়েছে মিসর, লেবানন, জর্দান ও সিরিয়ার সাথে।

কাশ্মীরের রয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে। ইন্দোনেশিয়ার চতুর্দিকেই সমুদ্র। আর ইরিত্রিয়ার সীমানায় রয়েছে সুদান, ইথিওপিয়া ও লোহিত সাগর। এছাড়াও তাকাতে পারো ফিলিপাইন, মেসিডোনিয়া, ইরাক বা অন্যান্য স্থানের দিকে। সব দেশেই যাবার কোন না কোন পথ রয়েছে। একজন মুখলেছ বান্দা এসব পথের কোনটিই খুঁজে পাবে না, এটি হতে পারে না। সুতরাং চিন্তা করে দেখো; আল্লাহর ইচ্ছায় তুমি অবশ্যই জিহাদের দেশে পৌঁছুতে পারবে।

আর আমাদের এই উম্মাহ্ তো কোটি মানুষের উম্মাহ্। যদি ১০ লক্ষ মুসলিম জিহাদের ময়দানে যাবার চেষ্টা করে এবং অন্তত ১ লক্ষ সফল হয়, সেটাও মুজাহিদদের সমর্থনে অনেক হবে।

কিন্তু এই উম্মাহ্ তো জিহাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। জিহাদের রাস্তা নেই বা বন্ধ এই অজুহাতে তারা বসে আছে। কিন্তু আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) এ ধরনের অজুহাতের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে জিহাদের রাস্তায় পদার্পণকারী ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন, যে এই পথে মারা যায় তাকেই ‘শহীদ’ বলেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো এখনো আমরা নানা অজুহাত খুঁজি বিলম্ব করার জন্য বা পিছে বসে থাকার জন্য।

আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই; তিনি যেন আমাদের ঘরে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত না করেন-

যাদের ব্যাপারে তিনি বলেছেনঃ

وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لاعَدُّوا لَهُ عُدَّةً وَلَكِنْ كَرِهَ اللَّهُ انْبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقَاعِدِينَ

“আর যদি তারা (যুদ্ধে) যাত্রা করার ইচ্ছা করতো তবে নিশ্চয় এর জন্য প্রস্তুতির ব্যবস্থা করতো, কিন্তু আল্লাহ তাদের যাত্রাকে অপছন্দ করেছেন, এজন্য তাদেরকে তৌফিক দেননি এবং বলে দেয়া হলো, তোমরাও এখানেই অক্ষম লোকদের সাথে বসে থাকো।” [সূরা তাওবা ৯: ৪৬]

আমরা আল্লাহর কাছে আরও আশ্রয় চাই তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে যাদের ব্যাপারে তিনি বলেছেনঃ

لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيبًا وَسَفَرًا قَاصِدًا لاتَّبَعُوكَ وَلَكِنْ بَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُ وَسَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَوِ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْ يُهْلِكُونَ أَنْفُسَهُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ

“আশু সম্পদ লাভের সম্ভাবনা থাকলে ও সফর সহজ হলে তারা নিশ্চয় তোমার অনুসরণ করতো, কিন্তু তাদের নিকট পথের দূরত্বই দীর্ঘতর মনে হলো। তারা অচিরেই আল্লাহর নামে শপথ করে বলবেঃ ‘পারলে আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের সঙ্গে বের হতাম’তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছে, আর আল্লাহ জানেন যে, তারা মিথ্যাবাদী।” [সূরা তাওবা ৯: ৪২]

তবে আল্লাহর উপর আস্থা রাখো প্রিয় ভাইয়েরা – কারণ তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তোমাদের সংগ্রামে এবং জিহাদের পথ অনুসন্ধানে, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ্ও তোমাদের প্রতি তাঁর ওয়াদায় অবিচল থাকবেন, তিনি তো নিশ্চয়তা দিয়ে রেখেছেন যে, তিনি তোমাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবেনঃ

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ

“যারা আমার পথে আত্মনিয়োগ করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো।” [সূরা আনকাবুত ২৯: ৬৯]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − 6 =

Back to top button