ইসলামী বসন্ত (৪) -শায়খ আইমান আজ জাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ)
ইসলামী বসন্ত (৪)
শায়খ আইমান আজ জাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ)
পর্ব ৪
অনলাইনে পড়ুন-
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৬৮৫ কেবি]
https://banglafiles.net/index.php/s/Rx4ZBkbMKrC24Ki
https://archive.org/download/IslamiBosonto4/islami%20bosonto-4.pdf
https://archive.org/download/IslamiBosonto4_201906/islami%20bosonto-4.pdf
https://www.file-upload.com/20gdmw8sraqt
https://alfirdawsweb.files.wordpress.com/2017/10/islami-bosonto-4.pdf
http://www.mediafire.com/file/fl5byl5gw297kp9/islami_bosonto-4.pdf/file
———————
ইসলামী বসন্ত – শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরী (হাঃ)
[পর্ব – ৪]
পূর্ববর্তী পর্বে যেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে-
১। খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ কি?
২। খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহর প্রধান বৈশিষ্ট কি?
৩। খলিফা নির্ধারণের শরয়ী পদ্ধতি কি?
৪। খলীফার জন্য প্রধান শর্ত কি?
আজ আমি পঞ্চম যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো তা হল, উল্লিখিত বিষয় সমুহের উপর কিছু সংশয় ও প্রশ্নের জওয়াব। আল্লাহ তাআ’লা যদি ইচ্ছা করেন তো এখন আমি নিম্নে বর্ণিত সংশয় ও প্রশ্নগুলোর সংক্ষেপে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।
সংশয়সমুহঃ
১। বল প্রয়োগ করে ইমারাহ দখল করার হুকুম কি?
২। অল্প সংখ্যক লোকের বায়াতের মাধ্যমে খলীফা নির্বাচন বৈধ হবে কি?
৩। কেউ যদি অযোগ্য মনে করে কাউকে বাইয়াত না দেয় তাহলে সে কি গুনাহগার হবে?
৪। খিলাফতের পদ শূন্য থাকা অবস্থায় যদি কোন অযোগ্য লোক নিজেকে এই বলে খলীফা দাবি করে যে। ‘কোন খলীফা না থাকার চেয়ে একজন খলীফা থাকাতো ভালো’। তাহলে করণীয় কি? আমরা কি তাকে খলীফা হিসেবে মেনে নিবো? অথচ মুসলমানদের এমন অনেক আমীর আছেন যারা জিহাদ করেন, শরীয়ত অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং ‘আমর বিল মারুফ, নাহি আনিল মুনকার করেন’ করেন এবং সম্মিলিত ভাবে ধীরে ধীরে ‘খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহর’ দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
৫। কোন অযোগ্য লোক যদি নিজেকে খলীফা হিসেবে ঘোষণা করে। আর কেউ যদি তাকে বাইয়াত না দেয় তাহলে কি সে হাদিসে বর্ণিত ধমকির উপযুক্ত হবে? কারণ, হাদিসে এসেছে,“যে ব্যাক্তি কাউকে বাইয়াত না দিয়ে মৃত্যুবরণ করলো সে জাহেলি অবস্থায় মৃত্যু বরন করলো!”(সহীহ মুসলিম)
৬। আপনারা বলছেন অমুক খিলাফতের যোগ্য নয়। অথচ আমরা খিলাফতের যোগ্য অনেক লোককে পর্যবেক্ষণ করেছি; কিন্তু তার চেয়ে যোগ্য অন্য কাউকেই পাইনি।
৭। যে লোক কারো পরামর্শ ব্যাতীত নিজেকে খলীফা বলে দাবি করে তার কি এ অধিকার আছে যে, সে তার অনুসারীদের এ আদেশ দিবে যে, ‘যারা আমাকে খলীফা হিসেবে মানবেনা তাদের মাথা গুড়িয়ে দাও। কারণ তারা জামাতের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করছে এবং জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। দলিল হিসেবে এই হাদিসটি পেশ করে,“আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন, যে ব্যাক্তি কোন ইমামকে বাইয়াত দিল নিজের দেহ মনের বন্ধন তার সাথে জুড়ে নিল। এর ভিন্ন কেউ যদি খিলাফতের দাবি করে প্রথম জনের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দিবে।”(সহিহ মুসলিম- ৪৮৮২)
৮। একটি উপযোগী পরিস্থিতির জন্য খিলাফতের ঘোষনা বিলম্বিত করা কি অপরাধ?
সংশয় ১। বল প্রয়োগ করে ইমারা দখল করা বৈধ কি না? বল প্রয়োগ করে ইমারাহ দখলকেই অনেকেই জায়েয মনে করে। কোন কোন আলেমের কথাকে দলিল হিসেবে পেশ করে বলে- উলামাগন বলেন, তরবারীর বলে ক্ষমতা দখল করা জায়েয এবং দখলকারীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার চেয়ে তার আনুগত্য মেনে নেয়া অধিক উত্তম। সুতরাং কেউ যদি কোন দেশ অথবা কোন অঞ্চল দখল করে নিজেকে খলীফা হিসেবে দাবি করে তাহলে আমাদের উচিৎ তার আনুগত্য মেনে নেয়া। এমন কি সে যদি জালেম হয় এবং জমিনে ফেতনা ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তবুও। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের জবাব হল, সর্ব সম্মতিক্রমে ইমাম নির্বাচনে শরয়ী পদ্ধতি হল দুটিঃ
ক। উম্মাহের ইমাম, আলেম ও বুদ্ধিজীবীরা মিলে একজনকে নির্বাচন করবেন।
খ। পূর্বের খলীফা কাউকে তার প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করবেন। অতঃপর তার (খলীফার) মৃত্যুর পর নির্বাচিত খলীফার প্রতি মুসলমানদের সমর্থন থাকবে।
অর্থাৎ উম্মাহের ইমাম, আলেম ও বুদ্ধিজীবীরা তাকে খলীফা হিসেবে মেনে নিবেন।এই দুতি পদ্ধতিই মুসলমানদের সন্তুষ্টিচিত্তে হতে হবে। এ সম্পর্কে পূর্বের আলোচনায় আমি সাহাবায়ে কেরামদের সিদ্ধান্ত, ইমাম মালেক রহ. ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এর ফতোওয়া উলেখ করেছি। আর অস্ত্র ও শক্তির জোরে ক্ষমতা দখল শরয়ীভাবেও অনেক বড় অপরাধ। যার কারণে মুসলমানদের রক্ত ঝরে এবং ক্ষমতার জন্য মুসলমানদের মাঝের শত্রুতা সৃষ্টি হয়।
ইবনে হাজার হায়তামী রহ. বলেন,“জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারীরা সাধারণত ফাসেক ও শাস্তি প্রদনকারী হয়ে থাকে। সে কিছুতেই তার দখলকৃত অঞ্চলে ইনসাফের উপদেশ কিংবা বাহবা পাবার যোগ্য নয়। বরং সে এহেন কর্মকাণ্ডের কারণে ভৎর্সনা ও তিরষ্কারের উপযুক্ত হবে এবং তার দুষ্কর্মের বিষয়ে জনগণকে অভিমত করতে হবে।” (আস সাওয়ায়েক)
আর কোন কোন আলেম বল প্রয়োগকারীর শাসনকে অনোন্যপায় অবস্থায় গ্রহণ করেছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ফিকহের কিতাবসমূহে আছে। কারো প্রয়োজন হলে সেখান থেকে দেখে নিতে পারে। অন্তত আমাদের এখনো এ প্রয়োজন দেখা দেয়নি। আর সে প্রয়োজনগুলো কি কি তা নিয়ে আলোচনা করারও আমাদের প্রয়োজন নেই। কেননা অল্প কিছু লোক ব্যাতিত এই বল প্রয়োগকারীর ক্ষমতা কারোর উপর নেই। আমাদের উপরও না। অন্য কোন মুসলমানের উপরও না। বরং তার দখলকৃত অঞ্চলের চেয়ে অনেক বড় বড় অঞ্চল অন্যান্য মুজাহিদদের দখলে রয়েছে এবং তারা ধীরে ধীরে খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। সর্বোপরি কথা হচ্ছে, আমরা তো আর বাইয়াত মুক্ত নই; বরং আমরা সন্তুষ্টচিত্তে আমীরুল মুমিনীন মোল্লাহ মুহাম্মাদ ওমার মুজাহিদের হাতে বাইয়াত দিয়েছি। তিনি আমাদের আমীর এবং বাগদাদী ও তার অনুসারীদেরও আমীর। কিন্তু বাগদাদী ও তার অনুসারীরা এই বাইয়াত ভঙ্গ করে খিলাফাহ ঘোষণা করেছে। তাই বলে তো আর আমরা তার কথিত একটি দেশ অথবা কিছু অঞ্চলে খিলাফতের কারণে আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমরের কাছে দেওয়া বাইয়াত ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারিনা। তাছাড়া আমরা মহান আল্লাহর করুণায় ‘খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ’ ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় নিয়োজিত। ইনশাআল্লাহ সামনে এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
উলামাগণ প্রয়োজনবশত ও বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য যে বলপ্রয়োগকারীর খিলাফাহ মেনে নিয়েছেন তা কিন্তু তারা কোন শর্ত ছাড়া এমনি মেনে নেননি; বরং এর জন্য তারা একটি শর্ত দিয়েছেন। আর তাহল শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত ও তার হুকুম কার্যকর থাকতে হবে। আর এ বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে প্রমানিত যে, তথাকথিত এই খলীফা ও তার অনুসারীরা শরীয়ত অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করেনা। সুতরাং যাদের মধ্যে এই মূল শর্তই অনুপস্থিত; তারা দখলকারী হলেও তো তাদের আনুগত্য জায়েয নেই। এরপর কথা হল, যারা এসব সংশয়কে নিজেদের পক্ষে দলীল হিসেবে দাঁড় করাতে চান; তারাই কিন্তু অন্যদের জন্য রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছেন। যেমন, প্রতিটি স্থানে প্রতিটি জামাতই যখন শক্তিশালী হয়ে উঠবে তখন তারা নিজেদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভেবে নিজেরাই খিলাফা ঘোষণা করে বসবে। যেমন উমাইয়ারা আন্দালুস নিয়ে আব্বাসীদের থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল। এই সংশয়ের উপর ভিত্তি করে প্রত্যেক উদ্ধত গোষ্ঠী প্রথম জবর দখলকারীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা দিবে এবং শক্তির মাধ্যমে অপর একজন দখলদার প্রকাশ পাবে। এভাবে জবরদখলের রাজ্য আমাদের রক্তের সাগরের দিকে নিয়ে যাবে। আর এভাবে উম্মাতের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রক্ত বিনামূল্যে বিকিয়ে যাবে যা দেখে ইসলামের শত্রুরা মুখ টিপে হাসবে।
ইবনে আরাবী রহ. বলেন, ইমাম মালেক রহ. থেকে ইবনে কাসেম বর্ণনা করেন,‘যখন ওমর বিন আব্দুল আজিজের মত ন্যায়পরায়ণ বাদশাহের বিরুদ্ধে কেউ বিদ্রোহ করে তাহলে তাকে দমন করা ওয়াজিব। আর যদি তার মত না হয় তাহলে তাকে তার মত ছেড়ে দাও। আল্লাহ তাআ’লা তার মত অন্য একজনকে দিয়ে এই জালেমের প্রতিশোধ নিবেন অতঃপর উভয়ের থেকেই প্রতিশোধ নিবেন।’
আল্লাহ তাআ’লা বলেন,“অতঃপর যখন প্রতিশ্রুতির সেই প্রথম সময়টি এলো, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা বান্দাদেরকে। তখন তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়লো। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল।”(সূরা বনী ইসরাইল- ৫)
ইমাম মালেক রহ. বলেন,‘যখন একজন ইমামের জন্য বাইয়াত সংঘটিত হয়ে যায়। অতঃপর তার ভাইয়েরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। আর প্রথম জন যদি আদেল হয় তাহলে তাদেরকে হত্যা করতে হবে। আর ভয়ের কারণে যদি তাদেরকে বাইয়াত দেওয়াও হয় তাহলে এই বাইয়াত গ্রহণযোগ্য হবে না।’(আহকামুল কোরআন, ইবনুল আরাবী- ৭/২৫৭)
এখানে আমি ঐ সকল ভাদের সতর্ক করে দিতে চাই যারা জবরদখলকারী জালেম শাসকদের ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম যে ধৈর্যের পরামর্শ দিয়েছেন এর মাঝে এবং খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহর মাঝে পার্থক্য করতে না পেরে বরং দুইটা এক মনে করে বলে, জবর দখলকারীর শাসনই হল, খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ। তারা উলামাদের কথাকে তাদের এই দাবীর সপক্ষে ইমাম আহমদ রহ. এর কথাকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে। তিনি বলেছেন,‘কোন ব্যাক্তি যদি তরবারীর জোরে খলীফা হয় এবং আমীরুল মুমিনীন নাম ধারণ করে। তাকে ইমাম হিসেবে না মানা আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী কারো জন্য বৈধ হবে না। চাই লোকটা নেককার হোক অথবা বদকার। কারন সে আমীরুল মুমিনীন।’(আল আহকামুস সানিয়্যাহ- ১/২০)
উক্তিটি তাদের দলীল হিসেবে পেশ করা একাধিক কারণে অসম্ভব।
১। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত বলপ্রয়োগকারীর শাসনের উপর ধৈর্য ধারণের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এখানে সেগুলো উল্লেখ করে আমি আমার আলোচনা দীর্ঘ করবো না। আগ্রহী ব্যাক্তি ফিকহের কিতাব থেকে তা দেখে নিতে পারেন।
২। ইমাম আহমদ রহ. থেকেই এর বিপরীত রেওয়ায়েত পাওয়া যায়। এখানে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি না; তবে শুধু মাত্র একটি ঘটনা উল্লেখ করছিঃ ইমাম আহমদ রহ. খলিফা ওয়াসিক আল আব্বাসীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারণে ইমাম আহমদ ইবনে নছর আল খুজায়ী রহ. এর প্রশংসা করেন। আহমদ ইবনে নাছর রহ. সম্পর্কে আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন,‘আল্লাহ তাআ’লা তাঁর প্রতি রহম করুন! আল্লাহর জন্য নিজের জান বিলিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে উদার মানুষ আর হতে পারেনা। তিনি আল্লাহর জন্য নিজের জান বিলিয়ে দিয়েছেন।’(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ১০/৩০৩)৩।
এরকম দলীল পেশকারীকে আমরা প্রশ্ন করতে চাই; এর মাধ্যমে আপনি কোন খিলাফাহ উদ্দেশ্য নিচ্ছেন? আপনি কি ‘খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ’ উদ্দেশ্য নিচ্ছেন যার সুসংবাদ স্বয়ং রাসূল সা. দিয়েছেন? খোলাফায়ে রাশেদীনের খিলাফাহ; যাদের অনুসরণ করতে নবী কারীম সা আদেশ দিয়েছেন নাকি বলপ্রয়োগ এবং জোর জরদবস্তির খিলাফাহ উদ্দেশ্য নিচ্ছেন। যার বর্ণনা নাবী কারিম সা দিয়েছেন যে সেটা তাঁর সুন্নতকে পরিবর্তন করবে। যার প্রতিষ্ঠাকারীকে ওমর রা. বাইয়াত দিতে নিষেধ করেছেন।
আর ইমাম মালেক রহ. তার বর্ণনা এ ভাবে দিয়েছেন,‘সে জালেম আল্লাহ তার বিচার করবেন। তাকে বাইয়াত দেওয়া যাবে না এবং তার বিরুদ্ধে কেউ বিদ্রোহ করলে তাকে সাহায্য করা যাবেনা।’আমি এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাইঃএক। উম্মাহের ইতিহাসে জবরদস্তি ও বলপ্রয়োগের খিলাফাহ (কেউ চাইলে তাকে ধ্বংস ও ফাসাদ সৃষ্টির খিলাফাহ বলতে পারেন।) দুর্গতিই বয়ে এনেছে এবং তাদের মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর আমাদের অধঃপতনের কারণও তো এটাই ছিল। জবরদখলের এই রীতি উম্মাহের ইতিহাসে কঠিন কঠিন মুহূর্তে এই শাসন নারী ও অবুঝ শিশুকেও খলীফা মনোনিত করেছে। যেমন, তাতারীরা যখন বাগদাদ আক্রমণ করে তা একেবারে উজাড় করে হলব পর্যন্ত পৌছে গেছে এবং মিসর আক্রমণেরও প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছে। এমন এক কঠিন ও নাযুক মুহূর্তে মিসরের বাদশা নিযুক্ত হয় আট দশ বছরের শিশু মানসুর ইবনে ইজুদ্দিন। অথচ তার সময় কাটতো কবুতর নিয়ে খেলা করে এবং উটের পিঠে চড়ে। তাতারীদের মোকাবেলা করে মিসরকে রক্ষা করার কোন চিন্তাই তার মধ্যে ছিল না।
এহেন পরিস্থিতিতে বাদশা মনসুরের উপস্থিতিতে আমীর উমারাগন আসন্ন বিপদ মোকাবিলায় তাদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ সভায় বসলো। কিন্তু শিশু মানসুর শুধু মজলিসের শোভাই বর্ধন করছিল, তার কোন মতামত ছিল না। পরিস্থিতি খারাপ দেখে সাইফুদ্দিন কুতুজ রহ. মনসুরকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজে ক্ষমতা দখল করে নেন এবং ফুকাহা ও কাজীদের নিকট এই বলে ওজর পেশ করেন যে, মানসুর ছোট আর দেশে এখন তাতারীদের মকাবেলায় একজন দক্ষ ও শক্তিশালি শাসক প্রয়োজন। অতঃপর কুতুজ রহ. যখন আইন জালুতে তাতারীদের পরাজিত করে বিজয় অর্জন করলেন, বাইবারাছ তখন আমীর উমারাদের সাথে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যা করে এবং তাঁর সৈন্য বাহিনীর উপর সশস্ত্র আক্রমণ করে। অতঃপর তারা যুবরাজের বাসগৃহে এসে যুবরাজকে কুতুজ রহ. হত্যার সংবাদ দেয়। তখন সে বলে, তোমাদের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছে? বাইবারাছ বলে, আমি। তখন যযুবরাজ তাকে বললো, হে বীর আজ থেকে তমার মর্যাদা সুলতানের মত।‘ইমাম নিয়োগের ক্ষেত্রে শরিয়তের কর্তৃত্ব আড়াল হয়ে গেল এবং তার স্থানে কর্তৃত্ব দখল করে নিলো তরবারী (সে যাকে ইচ্ছা তাকে ইমাম বানাবে)’হত্যাকারির শরীয়ত অনুযায়ী বিচারের পরিবর্তে তাকে সুলতানের মর্যাদা দেয়া হয়। আর সে যাকে নিয়োগ দেয় সেই কাজী ও মুফতী হয় এবং এক সময় বলে আমিই ইমাম। আমার কথা মত সবকিছু চলবে। যার বিচারের প্রয়োজন তাকে আমার নিয়োগ দেওয়া বিচারকের বিচারই মানতে হবে; যদিও বিচার তাদের বিরুদ্ধেই চাওয়া হয়। আর এভাবেই ধীরে ধীরে শরীয়ত বাতিল হতে থাকে। আর আমরা রাসুল সা. এর ভবিষ্যৎ বাণির সত্যতার খোঁজ পাই। রাসূল সা বলেছেন,‘ইসলামের বন্ধনগুলো (হুকুমগুলো) একে একে বিলুপ্ত হতে থাকবে। আর যখনই একটা বন্ধন বিলুপ্ত হবে মানুষ তার বিকটতম বন্ধনের দ্বারস্থ হবে। সুতরাং সর্বপ্রথম (শরয়ী) হুকুম বিলুপ্ত হবে আর সর্ব শেষ হবে নামাজ।’(জামেউস সগীর)
আর আমাদের এ যুগের ঘটনা হল; এই বল প্রয়োগকারী হুকুমতই ইমাম মুজাদ্দেদ আব্দুল ওয়াহাব রহ. এর দাওয়াতকে নষ্ট করেছে এবং এ অঞ্চলকে আমেরিকার কর্তৃত্বাধীন অঞ্চলে পরিনত করেছে। সর্বোপরি মুসলমানদের আমেরিকা ও ইংরেজদের দাসে পরিণত করেছে। ফলে কোরআনের শাসন বাদ দিয়ে মানবরচিত বিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হুচ্ছে এবং মুসলমানদের দেশ ও সম্পদ কাফেরদের কাছে অর্পণ করা হচ্ছে।দুই। ধ্বংস ও বিশৃঙ্খলার খিলাফতের আহ্বান মুজাহিদদের মাঝে ফিতনার আগুনই জ্বেলে দিবে এবং তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করবে। যারা এই খিলাফতের অনুসরণ করবে তারা ভাববে তারা সঠিক পথে আছে। আর অন্যরা শরীয়ত মানছেনা বরং তারা বাগী-বিদ্রোহী। কখনো কখনো তাদের মুরতাদ পর্যন্ত বলবে। আর বিরোধীরা খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় রত। ঠিক এ ফিতনাটিই বর্তমানে ইরাক ও শামে দেখা যাচ্ছে। মুজাহিদরা পরস্পর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এর কারণে আসল শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফসল শত্রুরাই ঘরে তুলছে।তিন। রাজতন্ত্রের মধ্যেও ভালো কাজ হয়েছে।
যেমন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ একদিকে মোহাম্মাদ বিন কাসিমকে সিন্ধু অভিযানে পাঠিয়েছে, অন্যদিকে অসংখ্য ভালো মানুষকে হত্যা করেছে। তদ্রুপ খলিফা মুতাসিম এক দিকে যেমন আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর উপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে, অন্য দিকে আমুরিয়া বিজয় করেছে। কিন্তু এর কারণে তো আর হাকীকত বাতিল হবে না মাশওয়ারা ব্যাতীত শক্তির জোরে ক্ষমতা দখল শরীয়ত সম্মত হয়ে যাবে না; বরং তা শরীয়ত পরিপন্থি হিসেবেই চিহ্নিত হবে।আমরা খিলাফা আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ ফিরিয়ে আনারই চেষ্টা করছি। আর এর মাঝে রয়েছে উম্মাহর সর্বাধিক কল্যাণ, নেতৃত্ব ও ইজ্জত সম্মান। আমাদের নবী মোহাম্মাদ সা. আমাদেরকে এই খিলাফার সুসংবাদই দিয়ে গেছেন। সুতরাং আমরা রাজতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় আমাদের শক্তি ব্যয় করবোনা, কারণ এই রাজতন্ত্র আর স্বৈরতন্ত্রই হচ্ছে উম্মাহর অধঃপতন আর পরাজয়ের মূল।আমরা খোলাফায়ে রাশেদীনের পদ্ধতিতে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করবো। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ, বুছর ইবনে আরতা ও আবু মুসলিম খোরাসানীর পদ্ধতিতে নয়। ইনশাআল্লাহ আমরা সাইয়্যিদুনা মোহাম্মাদ সা. এর মানহাজে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করবো।
তিনি বলেন,‘তোমাদের সর্বোত্তম নেতা হচ্ছে তারা যাদেরকে তোমরা ভালোবাসবে এবং তারা তোমাদেরকে ভালোবাসবে এবং তোমরা যাদের জন্য দোআ করবে আর তারা তোমাদের জন্য দোআ করবে। আর তোমাদের নিকৃষ্ট নেতা হচ্ছে তারা যাদেরকে তোমরা অপছন্দ করবে আর তারা তোমাদেরকে অপছন্দ করবে তদ্রুপ যাদেরকে তোমরা অভিসম্পাত করবে আর তারা তোমাদের অভিসম্পাত করবে।’(মুসলিম- ৪৯১১)
মানুষ কিভাবে ঐ লোককে ভালবাসবে এবং তার মঙ্গল কামনা করে দোআ করবে- যে তাদের এবং তাদের প্রিয় লোকদের নির্যাতন করে হত্যা করে?
সংশয় ২। অল্প সংখ্যক লোকের বাইয়াতের মাধ্যমে খলীফা নির্ধারণ সঠিক হবে কি না? আমি খুব সংক্ষেপে এ ব্যাপারে কিছু আরজ করবো। কারণ, আমরা দেখতে পাই- কেউ কেউ অল্পসংখ্যক লোকের বাইয়াতকে বৈধ প্রমাণ করতে দুটি দলিল দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন।
১। কোন কোন আলেম থেকে বর্ণিত আছে যে, এক-দুইজন অথবা একেবারে অল্প সংখ্যক লোকের মাধ্যমেও খলীফা নির্ধারণ হয়। এ কথার উত্তর হলোঃ
ক। এ কথাটা সাহাবায়ে কেরাম রা. এর সুন্নত ও ইজমার বিপরীত। সহীহ হাদীসের কিতাবগুলোতে তা বর্ণিত আছে। পূর্বে এ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
খ। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এই সংশয়ের উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন এটা সাহাবায়ে কেরাম রা. এবং সায়্যিদিনা আবু বকর রা. কে অপবাদ দেয়ার ক্ষেত্রে রাফেজীদের মতাদর্শ অনুসরণ।
২। তারা ইমাম নববী রহ. এর কথাকে দলিল হিসেবে পেশ করে থাকে। ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, বাইয়াত সঠিক হওয়ার জন্য পৃথিবীর সকল মানুষের বাইয়াত জরুরী নয় এবং পৃথিবীর সকল সুধীজন ও চিন্তাশীলদের বাইয়াতও জরুরী নয় বরং ঐ সকল আলেম, নেতৃবৃন্দ এবং সম্মানিত লোকদের বাইয়াত শর্ত যাদের একত্র হয়ে বাইয়াত দেওয়া সহজ ও সম্ভব।’(শারহুন নববী আলা মুসলিম- ৬/২০৯)
আসলে এই উক্তিটিও তো ঐ সকল লোকদের বিরুদ্ধে দলীল যারা মনে করে অল্প সংখ্যক লোকের বাইয়াত জায়েয।
কারণ-
ক। কেউই তো পৃথিবীর সকল মানুষ অথবা সকল আলেমদের একত্র হওয়ার শর্ত করেননি বরং সবাই জমহুরদের ঐক্যমতকে শর্ত বলেছেন।
খ। বর্তমান বায়াতের শর্ত হল সারা দুনিয়ার যে সকল আলেম, নেতা ও সম্মানিত ব্যাক্তি ঐক্য মত পোষণ করতে সক্ষম তাদের সকলের ইজমা। আর এটা জানা কথা যে, বর্তমানে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই পৃথিবীর সকল আলেমের যোগাযোগ করা সম্ভব।
গ। ইমাম নববী রহ. ঐ সকল আলেম, নেতা ও সম্মানিত ব্যাক্তিদের ইজমাকে শর্ত বলেছেন যারা সহজে একত্র হতে পারেন। তবে তিনিও অপরিচিত নাম ঠিকানা কিছুই জানা যায় না একন লোকের বায়াতের কথা বলেন নি।
সংশয় ৩। কেউ যদি কাউকে অযোগ্য মনে করে তাকে বাইয়াত না দেয় তাহলে সে কি গুনাহগার হবে?স্বভাবতই এর উত্তর না বাচক হবে। এর দলীল অনেক সাহাবায়ে কেরামের আমল। যেমন হুসাইন রা., ইবনে যুবাইর ও আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. এরা কেউই ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়াকে বাইয়াত দেননি।
আবু নুয়াইম রহ. উরওয়া ইবনে যুবাইর রহ. থেকে বর্ণনা করেন, ‘ইবনে যুবাইর রা. ইয়াজিদের আনুগত্য মেনে নিতে অপরাগতা প্রকাশ করলেন এবং প্রকাশ্যে ইয়াজিদের সমালোচনা করলেন। তখন এ সংবাদ ইয়াজিদের নিকট পৌছলে সে কসম করলো যে, হয়তো তাকে (যুবায়েরকে) বেড়ি পরিয়া তার (ইয়াজিদের) কাছে আনা হবে অথবা সে (যুবায়ের) তার (ইয়াজিদের) কাছে সন্ধি চুক্তি পাঠাবে)। তখন ইবনে যুবায়ের রা. কে বলা হল, আমরা আপনার জন্য রুপার খাঁচা বানাবো। আপনি সেখানে কাপড় পরিবর্তন করবেন আর তাকে কসম থেকে মুক্তি দিবেন। (কিন্তু আমাদের মনে হয়) আপনার জন্য সন্ধি চুক্তিই উত্তম। অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ আমি তাকে কসম থেকে মুক্ত করব না।
অতঃপর বললেন,“প্রয়োজনে পাথর চিবিয়ে চূর্ণ করতে রাজি আছি কিন্তু হকের সামনে মাথা নত করতে রাজি নই।”‘অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! লাঞ্চিত হয়ে চাবুকের আঘাতের চেয়ে সম্মানের সাথে তরবারির আঘাত আমার কাছে অনেক প্রিয়। এরপর ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার খিলাফাত প্রত্যাখ্যান করে নিজের বায়াতের দিকে মানুষদেরকে আহ্বান করলেন।’(মা’আরেসুস সাহাবাহ, আন নু’আইম- ১১/৪৬১)
ইমাম ইসমাইলী রহ. বর্ণনা করেন,“মুআবিয়া রা. তার ছেলে ইয়াজিদকে খলীফা বানাতে চাইলেন। তাই এ বিষয়টি মারওয়ানকে লিখে পাঠালেন আর মারওয়ান লোকদের জমা করে ভাষণ দিলেন এবং ইয়াজিদের বিষয়টি উল্লেখ করে তাদেরকে তাকে বাইয়াত দেওয়ার আহ্বান জানালেন এবং বললেন, আল্লাহ তাআ’লা আমিরুল মুমিনিনকে ভালো কিছু এলহাম করেছেন। তাই তিনি চাচ্ছেন তাকে পরবর্তী খলীফা নির্ধারণ করতে। কারণ আবু বকরও তো ওমরকে নির্ধারণ করে গেছেন। তখন আব্দুর রহমান বললেন, এটাতো দেখছি হিরাকলিয়া নীতি (বাইযানটাইন)।”(ফাতহুল বারী- ২৩/৩৯২)
ইবনে হাজার রহ. বলেন,‘আব্দুল্লাহ ইবনে নাফে বর্ণনা করে বলেন, এক খুতবায় মুআবিয়া রা. ইয়াজিদকে বাইয়াত দেওয়ার জন্য লোকদের আহ্বান করলেন। অতঃপর হুসাইন ইবনে আলী, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ও আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. তাঁর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন। তখন আব্দুর রহমান তাঁকে বললেন, এটা তো দেখছি, হিরাকলিয়া! এক সম্রাটের মৃত্যুর পর অন্য সম্রাট তার স্থলাভিষিক্ত হয়। আল্লাহর কসম! আমরা কখনই এটা করবো না (অর্থাৎ তাকে বাইয়াত দিব না)।’(আল আসহাব- ৪/৩২৭)
হুসাইন ইবনে আলী ও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. শুধুমাত্র ইয়াজিদের বাইয়াতকেই প্রত্যাখ্যান করেন নি বরং তারা প্রত্যেকেই একজনের পর অন্যজন নিজেকে বাইয়াত দেয়ার জন্য আহ্বান করেছেন। কারণ ইয়াজিদের ক্ষমতা ছিল অবৈধ। অন্য দিকে মুসলমানদের জন্য একজন খলীফার প্রয়োজন ছিল। আর উম্মাহর জমহুর অংশটি তাদেরকেই গ্রহণ করে নিবে। ইয়াজিদ বল প্রয়োগ করার পূর্বে মানুষ তাকে বাইয়াত দেয় নি; বরং তাকে নিয়োগের পূর্বেই শাম, হিজাজসহ কিছু অঞ্চল থেকে তার জন্য বাইয়াত নেওয়া হয়েছিল।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করে নিচ্ছি। তা হল, সায়্যিদিনা হুসাইন রা. সায়্যিদিনা মুআবিয়া রা. এর সাথে কৃত অঙ্গীকার ও বাইয়াত ভঙ্গ করেন নি; বরং তিনি হাসান রা. কর্তৃক সায়্যিদিনা মুআবিয়া রা. এর সাথে কৃত চুক্তি পালন করে গেছেন। অথচ এ ব্যাপারে তাঁর অসম্মতি ছিল। তিনি মুআবিয়া রা. এর সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর ও তাঁর ভাই হাসান রা. এবং সকল মুসলমানের এবং সকল মুসলমানের চুক্তি রক্ষা করেছেন। কারণ, তিনি দেখেছেন মুআবিয়া রা. শরীয়ত অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করছেন। তাঁর খিলাফাহও মুসলমানদের ইজমার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।হুসাইন রা. মুআবিয়া রা. এর ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত নিজের দিকে বায়াতের আহ্বান করেননি; বরং তাঁর ইন্তেকালের পরে করেছেন। কারণ, ইয়াজিদের খিলাফাহ ছিল শরীয়ত বিরোধী। কেননা, তা শুরার ভিত্তিতে গঠিত হয়নি এবং জমহুরগণ তাকে খিলাফতের অযোগ্য মনে করতেন।
সংশয় ৪। খিলাফতের পদ শূন্য থাকা অবস্থায় যদি কোন অযোগ্য লোক নিজেকে এই বলে খলীফা দাবি করে যে। ‘কোন খলীফা না থাকার চেয়ে একজন খলীফা থাকাতো ভালো’।
তাহলে করণীয় কি? আমরা কি তাকে খলীফা হিসেবে মেনে নিবো? অথচ মুসলমানদের এমন অনেক আমীর আছেন যারা জিহাদ করেন, শরীয়ত অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং ‘আমর বিল মারুফ, নাহি আনিল মুনকার করেন’ করেন এবং সম্মিলিত ভাবে ধীরে ধীরে ‘খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহর’ দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
উত্তরঃ না। আসলে এমন সন্দেহতো হুসাইন রা., আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর এবং আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. এরও জাগেনি। কেননা, যখন সায়্যিদিনা মুআবিয়া রা. ইন্তিকাল করলেন এবং খিলাফতের পদ শূন্য হল তখন তারা ইয়াজিদের শাসন প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা এ কথা বলেন নি যে, এখন যেহেতু কোন খলীফা নেই তাই আমাদের জন্য ইয়াজিদের খিলাফাহ মেনে নেওয়াই উত্তম। বরং হুসাইন রা. এবং আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. পর্যায়ক্রমে ইয়াজিদ থাকা অবস্থায়ই নিজের বায়তের দিকে আহ্বান করেছেন। কিন্তু বিষয়টি পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই হুসাইন রা. শাহাদাত বরণ করেছেন। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. এর জন্য তা পরিপূর্ণ হয়। সব এলাকা থেকে বায়াতের পর উলামায়ে কেরাম তাঁকে শরয়ি খলীফা হিসেবে গণ্য করেন।তাছাড়া আমরা তো আর বায়াতহীন অবস্থায় নেই; বরং আমাদের এবং বাগদাদী ও তার সঙ্গীদের স্কন্ধের উপরও তো ইমারতে ইসলামির বাইয়াত রয়েছে। কিন্তু বাগদাদী ও তার সঙ্গীরা তা ভঙ্গ করেছে। আর আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা তা পূর্ণ করে চলেছি।
বড় কথা হল, আমরা তো আর খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ প্রতিষ্ঠা করা থেকে গাফেল হয়ে বসে রইনি; বরং আমরা এবং সকল মুজাহিদরা খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। (কিভাবে এগুচ্ছি এ নিয়ে ইনশাআল্লাহ সামনে আলোচনা করবো) তবে আমরা চাই খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ। আমরা রাজতন্ত্র, বলপ্রয়োগ ও জুলুমের শাসন চাইনা।
সংশয় ৫। কোন অযোগ্য লোক যদি নিজেকে খলীফা হিসেবে ঘোষণা করে। আর কেউ যদি তাকে বাইয়াত না দেয় তাহলে কি সে হাদিসে বর্ণিত ধমকির উপযুক্ত হবে? রাসুল সা. বলেন, “যে ব্যাক্তি কাউকে বাইয়াত না দিয়ে মৃত্যুবরণ করলো সে জাহেলি অবস্থায় মৃত্যু বরন করলো!”উত্তরঃ না। সে এ ধমকির উপযুক্ত হবে না। এ বিষয়ে আলোচনা করার পূর্বে এই হাদিসেরই আরও কিছু বর্ণনা উল্লেখ করছি। ইমাম বুখারী রহ. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন,“কেউ যদি তার আমীরের মধ্যে অপছন্দনীয় কিছু লক্ষ করে; তাহলে সে যেন এ ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করে। কেউ যদি জামাত থেকে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়েও মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে জাহেলী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো।”(বুখারী- ৬৫৩১)
ইমাম মুসলিম রহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণনা করেন,“কেউ আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নিলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময় তার কোন দলীল থাকবে না। যে ব্যাক্তি মৃত্যুবরণ করলো অথচ তার উপর কারো বাইয়াত বেই সে যেন জাহেলি অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলো।”
ইমাম মুসলিম রহ. আবু হুরাইরা রা. থেকে অন্য আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেন, “যে ব্যাক্তি আনুগত্যের হাত গুতিয়ে নিয়ে জামাত ত্যাগ করে মৃত্যুবরণ করলো, সে যেন জাহেলী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো।যে ব্যাক্তি কোন পথভ্রষ্টের পিছনে যুদ্ধ করলো; যে কিনা কোন গোত্রের কারনে ক্রুদ্ধ হয় অথবা কোন গোত্রের দিকে আহবান করে অথবা কোন গোত্রকে সাহায্য করে, অতঃপর সে নিহত হলে এটা হবে জাহেলি অবস্থায় নিহত হওয়া। আর যে আমার উম্মতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে সত্যবাদি-মিথ্যাবাদি সবাইকেই আঘাত করে; মুমিনদের থেকে বিরত থাকে না এবং চুক্তিকারির চুক্তি পূর্ণ করেনা। তাহলে আমার ও তার মাঝে কোন সম্পর্ক নেই।”(মুসলিম- ৩৪৩৬)
উল্লিখিত হাদিসে বর্ণিত ধমকির আওতায় যারা পড়বে-
১। যার আমীর আছে কিন্তু তার মধ্যে কোন অপছন্দনীয় বিষয় দেখে মুসলমানদের সম্মিলিত জামাত থেকেই সে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে; অথচ সকলেই ঐ আমীরের ব্যাপারে একমত।
২। যে কোন আমীরের আনুগত্য মেনে নেওয়ার পর তার থেকে আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নিলো।
৩। যে মুসলমানদের জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমিরের আনুগত্য ত্যাগ করলো।তবে যারা কাউকে ইমারত কিংবা খিলাফতের অনুপযুক্ত মনে করে তাকে বাইয়াত দেওয়া থেকে বিরত থাকে তাহলে সে এই ধমকির অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমনিভাবে হুসাইন রা. আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. এবং আব্দুর রহমান রা. ইয়াজিদকে অযোগ্য মনে করে তাঁকে বাইয়াত দেন নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে করা হয়েছে।
আমাদের সকল মুজাহিদ ও সাধারণ মুসলমানদের প্রতি আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণী এই যে-* আমরা এই মনগড়া খিলাফাহ ও খলীফার অনুগত নই। আর কখনও তার আনুগত্য মেনেও নেই নি যে এখানে হাত গুটিয়ে নেওয়ার প্রশ্ন আসবে। কারণ, সে তো খিলাফতের যোগ্যই নয়।* আমরা জামাহ থেকে বিচ্ছিন্ন নই। কারণ আমরা এমন কোন ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিনি যাকে সকল মুসলমান ইমাম হিসেবে মেনে নিয়েছেন। বরং তার আশ-পাশের অল্প কিছু লোক ব্যাতীত তাকে কেউই বাইয়াত দেননি।* তাছাড়া আমরা আনুগত্যের হাতও গুটিয়ে নেইনি এবং বাইয়াতও ভঙ্গ করিনি। কেননা, আমাদের উপর রয়েছে আমিরুল মুমিনীনের বাইয়াত। যাকে আমরা সকলেই সন্তুষ্টচিত্তে বাইয়াত দিয়েছি। আর আল্লাহর মেহেরবানীতে তিনি বিশাল বিস্তৃত অঞ্চল সফলভাবে নিয়ন্ত্রন করছেন এবং পাকিস্তান, ভারত উপমহাদেশ, মধ্য এশিয়া, আরব বিশ্ব, আফ্রিকা মহাদেশ সহ সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁকে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাঁর আনুগত্য নিয়েছে।
একটি প্রশ্নঃ প্রশ্ন হতে পারে আমরা যা বলছি সালাফদের যুগে এর কোন নজির আছে কিনা?হ্যাঁ, অবশ্যই; সালাফ দ্বারা আপনি কোন সালাফ উদ্দেশ্য নিচ্ছেন!! যেখানে হুসাইন রা. আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের ও আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর রা. সহ আরো অনেক বড় বড় সাহাবীদের সরাসরি আমল পাওয়া যায়। তারা ইয়াজিদের শাসনকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ, তা মাশওয়ারার মাধ্যমে গঠিত হয় নি। আর ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এই হাদীসের ব্যাখ্যায় যা বলেছেন তা তো বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে দেয়।
ইমাম খাল্লাল রহ. বলেন, আমাকে মোহাম্মাদ ইবনে আবু হারুন সংবাদ দিয়েছেন ইসহাক রহ. তাদের কাছে বর্ণনা করেন, ‘আবু আব্দুল্লাহকে (আহমদ ইবনে হাম্বল) এই হাদিসের অর্থ জিজ্ঞাসা করা হল “যে ব্যাক্তি মৃত্যুবরণ করলো অথচ তার কোন ইমাম নেই, সে যেন জাহেলি অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলো” এই হাদিসের অর্থ কি? আবু আব্দুল্লাহ বলেন,“তোমরা কি জানো ইমাম কাকে বলে? ইমাম হল যার ব্যাপারে সকল মুসলমানদের ইজমা হয়েছে এবং লোকেরা বলে এই তো ইনিই আমাদের ইমাম।”(আস সুন্নাহ লিল খাল্লাল- ১/৮০-৮১)
ইমাম ফাররা রহ. এই কথার সাথে আরেকটু যুক্ত করে বলেন,“এ ব্যাপারে স্পষ্ট কথা হল, এটা (বাইয়াত) সংঘটিত হবে তাদের জামাতের মাধ্যমে।”(আল আহকামুস সুলতানিয়্যাহ- ২৩)
বর্তমানে যে লোকটি অল্প কিছু অপরিচিত লোকের বায়াতের মাধ্যমে নিজেকে খলীফা বলে দাবি করছে। তার ব্যাপারে সকল মুসলমান একমত তো নয়ই, বরং অপরিচিত কিছু লোক ব্যাতীত কেউ বলে না যে ইনি আমাদের আমীর, যাদের সম্পর্কে আমরা জানি না।
সংশয় ৬। আপনারা বলছেন অমুক খিলাফতের যোগ্য নয়। অথচ আমরা খিলাফতের যোগ্য অনেক লোককে পর্যবেক্ষণ করেছি; কিন্তু তার চেয়ে যোগ্য অন্য কাউকেই পাইনি। আসলে এ ধরনের কথার কোন ভিত্তি নেই। কারণ, মুজাহিদীনদের মাঝে এবং সম্ভ্রান্ত মুসলমানদের মাঝে তার চেয়ে অধিকতর যোগ্য অনেক লোক আছেন। শায়েখ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসী দা বা ঐ জামাত সম্পর্কে বলেন, যারা অল্প কিছু লোকের বায়াতের মাধ্যমে তাদের আমীরকে খলীফা বলে দাবি করছে, “একথা বলতেই হয় যে, ময়দানে যদি এই জামাত ব্যাতীত অন্য কোন জামাত না থাকতো তাহলে আলেমদের ইলম তাদেরকে এই জামাতের আমীরকে সমর্থনের পক্ষেই বলতো। কারণ, তারা একজন শ্রেষ্ঠ লোককে আমীর বানাতে আগ্রহী। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এরা মুরতাদ তাগুত শাসকদের থেকে উত্তম। আর সত্য কথা হল; ময়দান অনেক জিহাদি জামাতের মাধ্যমে পরিপূর্ণ। তাদের কোন কোনটা শক্তির বিচারে তাদের সমকক্ষ, সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে এদের চেয়ে বেশী এবং নেতৃত্বের দিক থেকে এদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। সুতরাং উৎকৃষ্টের উপর অনুৎকৃষ্টকে প্রাধান্য দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।”
সংশয় ৭। যে লোক কারো পরামর্শ ব্যাতীত নিজেকে খলীফা বলে দাবি করে তার কি এ অধিকার আছে যে, সে তার অনুসারীদের এ আদেশ দিবে যে, ‘যারা আমাকে খলীফা হিসেবে মানবেনা তাদের মাথা গুড়িয়ে দাও। কারণ তারা জামাতের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করছে এবং জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
তারা দলিল হিসেবে এই হাদিসটি পেশ করে,“আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেন, যে ব্যাক্তি কোন ইমামকে বাইয়াত দিল নিজের দেহ মনের বন্ধন তার সাথে জুড়ে নিল। এর ভিন্ন কেউ যদি খিলাফতের দাবি করে প্রথম জনের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দিবে।”(মুসলিম- ৪৮৮২)
উত্তরঃ১। অল্প সংখ্যক লোকের বাইয়াত বাতিল, অগ্রহণযোগ্য। এবং যাকে অল্প সংখ্যক লোক বাইয়াত দিবে তাকে শরয়ী ইমাম হিসেবে গণ্য করা হবে না। পূর্বে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যাতে রাসুল সা. এর হাদিস, খোলাফায়ে রাশেদীনের সিরাত ও সাহাবায়ে কেরামের ইজমা এবং ইবনে তাইমিয়া রহ. এর ফতোওয়া দলীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
২। যে ব্যাক্তি ইমাম ছাড়া মৃত্যুবরণ করলো সে জাহেলী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো। এই হাদীসের ব্যাপারে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর পূর্বোক্ত ব্যাখ্যা প্রানিধানযোগ্য।।
৩। জোর পূর্বক ক্ষমতা দখল কারীকে তার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাহায্য না করার ব্যাপারে ইমাম মালেক রহ. এর উক্তি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
৪। যে ব্যাক্তি তার আমীরের বাইয়াত ভঙ্গ করে নিজেকে বাইয়াত দেয়ারপ্রতি আহ্বান করে তার বিরুদ্ধেই এই হাদিসটি প্রযোজ্য হবে। এই হাদিস কিছুতেই তাদের পক্ষের দলীল নয়; বরং তাদের বিপক্ষেরই দলীল।
৫। যে তার আমীরের বাইয়াত ভঙ্গ করে নিজের বাইয়াতের দিকে আহ্বান করে তার বাইয়াত বাতিল, অগ্রহণযোগ্য। কেননা- “যার ভিত্তি বাতিলের উপর সেটাও বাতিল”।
৬। এই ভয়ংকর বিপদের আরো ভয়ংকর পরিণতি সম্পর্কে আমাদের একবার ভেবে দেখা উচিৎ। বিপদটি হল, এক লোক কোন মাশওয়ারা ব্যাতীত নিজেকে খলীফা বলে দাবি করে বসলো। অথচ তাকে অল্প কিছু অপরিচিত লোক ব্যাতীত কোন মুজাহিদ ও মুসলমানরা খলীফা হিসেবে মেনে নেয়নি। এর পরিণতি এই হল যে, এরপর সে মুজাহিদদের গুপ্ত হত্যা করা শুরু করলো এবং মুজাহিদদের ধবংস করার জন্য তাদের উপর আত্মঘাতী আক্রমণ শুরু করলো। অথচ এরা হল শরীয়তের হুকুম বাস্তবায়ন এবং খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ প্রতিষ্ঠার লক্ষে নিবেদিত প্রাণ শ্রেষ্ঠ সব মুজাহিদ তাদের অনেকেই এখন আর ময়দানে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে না। তারা জিহাদ ছেড়ে বসে পড়েছে। হয় তো তাদের আর কখনো জিহাদের ময়দানে ফিরে আসা হবে না!! আর এভাবেই এ সকল দুর্ভাগারা জিহাদের আন্দোলনকে নষ্ট করে দিচ্ছে এবং তার অভ্যন্তরে ফিতনা ছড়িয়ে দিচ্ছে আর নিজেদের হাতেই নিজেরা প্রাণ হারাচ্ছে!! ইসলামের শত্রুরা এটা দেখে আনন্দ উল্লাস করছে। হে ভাই! আপনারা যারা এই কল্পিত খিলাফতে বিশ্বাসী একবার ভেবে দেখুন! ঐ লোকটি কী মসিবতেই না পতিত, যে দুর্ভাগা জান্নাতের আশায় ঘর থেকে বের হয়ে ছিল; কিন্তু জাহান্নামের অতল গহ্বরে গিয়ে পতিত হল।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন,“যে ব্যাক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (সূরা নিসাঃ- ৯৩)
সংশয় ৮। একটি মুনাসিব পরিস্থিতির অপেক্ষায় খিলাফতের ঘোষণা বিলম্বিত করা কি অপরাধ? অচিরেই এ প্রশ্নের বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ; কিন্তু এখানে সংক্ষেপে বলে রাখছি, সাহাবায়ে কেরাম রা. হুসাইন রা. কে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে নিষেধ করার মাধ্যমে কোন অপরাধ করেননি। কারণ তারা দেখেছিলেন এই মুহূর্তে বিদ্রোহে সফল হওয়ার মত পরিস্থিতি নেই। ইনশাআল্লাহ এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসছে। আজ এ পর্যন্তই। সামনের মজলিসে দেখা হবে।