Bengali Translation || জিহাদ ও শাহাদাতের বিরাট সুযোগ (জায়নবাদী ও ক্রুসেডারদের একেক জনের রক্ত তো কুকুরের রক্ত) || শাইখ ডক্টর সামি আল উরাইদি হাফিযাহুল্লাহ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের রব। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ সমস্ত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামের উপর। আম্মা বাদ:
এ যুগে মুসলিম উম্মাহর উপর আল্লাহর বিরাট নেয়ামতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি নেয়ামত হলো, আল্লাহ তাআলা গাজার পবিত্র ভূমিতে ‘তুফানুল আকসা’ অভিযানে তাঁর মুজাহিদ বান্দাদেরকে বিজয় দানের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর মাঝে আশার আলো জ্বালিয়ে দিয়েছেন। জিহাদ ও আত্মত্যাগের চেতনাগুলো পুনরুজ্জীবিত করেছেন। বিজয় ও সম্মানের সুবাতাস প্রবাহিত করেছেন।
এই অভিযান উম্মতের মাঝে তার সেই উজ্জ্বল ললাট বিশিষ্ট সৌভাগ্যবান সন্তানদের জীবনী ফিরিয়ে এনেছে, যারা তাদের রক্ত ও ছিন্নভিন্ন মস্তকের মাধ্যমে উম্মাহর ইতিহাস রচনা করেছেন। তাই আমাদের উচিত, এই বিজয়, সফলতা ও তার পরবর্তী সেই কষ্টগুলোর জন্য শুকর আদায় করা, যা মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মানজনক কষ্ট। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

অর্থঃ “স্মরণ কর, যখন তোমাদের রব ঘোষণা করলেন, তোমরা যদি সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, তবে আমি তোমাদেরকে আরও বেশি দেবো, আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অতি কঠিন।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:০৭)
তাই মহান আল্লাহর সেইরূপ প্রশংসা ও শোকর আদায় করছি, যা তাঁর মহান সত্তা ও বিশাল ক্ষমতার জন্য উপযুক্ত। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি এ নেয়ামতকে পূর্ণতা ও স্থায়িত্ব দান করুন। নিশ্চয়ই এ নেয়ামতের স্থায়িত্ব হবে আল্লাহর আদেশের উপর অবিচল থাকা, অপরাধীদের দিকে না ঝুঁকা এবং আল্লাহর পথের সেই জিহাদে অবিচল থাকার মাধ্যমে, যা আজ মুসলমানদের উপর সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ফরযে আইন।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক উলামা, সংস্থা, সংগঠন, ইলমী ও দাওয়াতী বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ একেক জন একেক দৃষ্টিভঙ্গি ও মতাদর্শের হওয়া সত্ত্বেও এ ব্যাপারে ফাতওয়া ও বিবৃতি দিচ্ছেন। তাঁরা স্পষ্ট ও প্রকাশ্যভাবে বর্তমানে ‘নাফিরে আম’ (সর্বাত্মক অভিযান) ও জিহাদ ফরয হওয়ার কথা বলছেন। তাই উম্মতের যে সকল সন্তানদের মন আল্লাহর পথে জিহাদ ও শাহাদাতের জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে, তাদের জন্য এটাই ঐতিহাসিক সুযোগ! এই মহান ফরযে আইন পালনের জন্য এবং সেই সকল লোকের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার জন্য, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন:

অর্থঃ “আর যারা ঈমান এনেছে, তারা বলে, কতই না ভালো হতো, যদি কোনো (নতুন) সূরা নাযিল হতো! অতঃপর যখন মুহকাম তথা সুস্পষ্ট বিধি-বিধানসহ কোনো সূরা নাযিল হয় এবং তাতে যুদ্ধের উল্লেখ থাকে, তখন যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তুমি তাদেরকে দেখবে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে মৃত্যুভয়ে মূর্ছিত ব্যক্তির তাকানোর মতো। এরূপ ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে চরম ধ্বংস। তারা আনুগত্য জাহির করে ও ভালো ভালো কথা বলে। যখন জিহাদের আদেশ চূড়ান্ত হয়ে যায়, তখন যদি তারা আল্লাহর সাথে সত্যবাদিতার পরিচয় দিতো, তবে তাদের জন্য ভালো হতো।” (সূরা মুহাম্মদ ৪৭: ২০-২১)
তাই আজ এই মহান ফরযে আইন পালন করা থেকে বঞ্চিত হবে একমাত্র সেই ব্যক্তিই, যার ব্যবসা লোকসান হয়েছে, অন্তর বোকা বনেছে এবং দুনিয়া ও আখিরাতের বিশাল লাভ হাতছাড়া হয়েছে। আমরা আল্লাহর নিকট এর থেকে মুক্তি ও পরিত্রাণ প্রার্থনা করছি।
হে সারা বিশ্বের ইসলামের সন্তানগণ!
আজকের দিন হলো আপনাদের দিন। এটা হলো কুরবানী, আত্মত্যাগ ও শত্রু শিবিরে রক্তক্ষরণ ঘটানোর দিন। কারণ এই জায়নবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা ও তাদের স্বার্থগুলো পৃথিবীর অনেক দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার ব্যাপারে এবং তাদেরকে হত্যা করার ব্যাপারে কারও সাথে পরামর্শ করার প্রয়োজন নেই। আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে আল্লাহর নামে নেমে পড়ুন। আর আল্লাহ তাআলার নিকট আপনাদের জন্য যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তথা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্য লাভের, তা স্মরণ করুন।
আমরা এই জায়নবাদী রাষ্ট্রটির জাতীয়তা ধারণকারী প্রতিটি ইহুদীর ব্যাপারে সেই কথাই বলি, যা উমর ইবনুল খাত্তাব আল-ফারুক রাযিয়াল্লাহু আনহু হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনাবলিতে আবু জান্দাল রাযিয়াল্লাহু আনহু এর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন:

“ধৈর্য ধারণ কর হে আবু জান্দাল! এগুলো তো মুশরিক, এদের একেক জনের রক্ত হলো কুকুরের রক্ত।”
আর এ সকল জায়নবাদীদের অবস্থা তাদের থেকেও জঘন্য, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন:

অর্থঃ “অতঃপর মুশরিকদেরকে যেখানেই পাবে, হত্যা করবে। তাদেরকে গ্রেফতার করবে, অবরোধ করবে এবং তাদেরকে ধরার জন্য প্রত্যেক ঘাটিতে ওঁৎ পেতে বসে থাকবে।” (সূরা তাওবা ০৯: ০৫)
তাই হে সারা বিশ্বের ইসলামের সন্তানগণ!
আমরা আপনাদেরকে এ কথা বলছি এবং আহ্বান জানিয়ে দিচ্ছি। কারণ আমরা জানি যে, এই চিন্তা অনেক উলামা, তালিবুল ইলম ও দায়ীদের মাঝেই ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু তাদের পরিস্থিতি তাদেরকে এটা পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করার সুযোগ দিচ্ছে না। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি আমাদের জন্য, তাদের জন্য এবং সমস্ত উম্মতের জন্য আশু বিজয় ও মুক্তির ব্যবস্থা করুন।
হে সারা বিশ্বের ইসলামের সন্তানগণ!
আসুন, আপনাদের কাতারগুলো ও প্রচেষ্টাগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন। আর আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে আপনাদের শত্রুদের স্বার্থগুলোতে আঘাত হানুন। কারণ আপনাদের জন্য বিভিন্ন রণাঙ্গনে আপনাদের ভাইয়েরা আছেন। যারা চেষ্টা একটুও বাকি রাখবে না এবং অন্যায় দেখে ঘুমিয়ে থাকবে না। তাই আপনারা তাদের জন্য সর্বোত্তম সাহায্যকারী হোন। কারণ মুমিন তার ভাইয়ের মাধ্যমে শক্তিশালী।
আর জেনে রাখুন, আমরা যদি গাজাবাসীকে সাহায্য-বঞ্চিত রাখি, তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে নিজেদেরকেই বঞ্চিত করলাম। আল্লাহ তাআলার নিকট এর থেকে মুক্তি ও পরিত্রাণ প্রার্থনা করছি। সহীহ বুখারীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে:

“মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তাকে জুলুম করতে পারে না, সাহায্য বঞ্চিত রাখতে পারে না এবং শত্রুর হাতে সঁপে দিতে পারে না।”
হে ইসলামের সন্তানগণ!
মনে রাখবেন, এই যুদ্ধ শুধু গাজা ও সেখানকার মুজাহিদদের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে জায়নবাদী ও ক্রুসেডারদের নতুন যুদ্ধ, যা আপনাদের নিকট অস্পষ্ট নয়। তাই আসুন আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি, যেমনিভাবে তারা আমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মিক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যেভাবে মহান কল্যাণময় আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আদেশ করেছেন:

অর্থঃ “আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন।” (সূরা তাওবা ০৯: 36)
কারণ আজ এটাই সময়ের ফরয দায়িত্ব। এটা মূল্যবান সুযোগ। যা আল্লাহ অনুগ্রহপূর্বক আমাদেরকে দান করেছেন। যেন তিনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন যে, আমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং জানতে পারেন কারা ধৈর্যশীল ও অবিচল। আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করি, তিনি আমাদেরকে ও আপনাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য, যিনি জগতসমূহের রব।