আল-হিকমাহ মিডিয়ানির্বাচিতপিডিএফ ও ওয়ার্ড

চিন্তাধারা সিরিজ- ২১ || উপজাতীদের সাথে আচরণবিধি -শাইখ খামিস আল-মারওয়ানী আদ-দাহমী রহিমাহুল্লাহ

مؤسسة الحكمة
আল হিকমাহ মিডিয়া
Al-Hikmah Media

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled

سلسلة مفاهيم -٢١
التعامل مع القبائل

চিন্তাধারা সিরিজ- ২১
উপজাতীদের সাথে আচরণবিধি

Thought series- 21
Conduct with tribes

للشيخ خميس المرواني الدهمي رحمه الله
শাইখ খামিস আল-মারওয়ানী আদ-দাহমী রহিমাহুল্লাহ
By Shaykh Khamis Al-Marwani Ad-Dahomi Rahimahullah

 

 

للمشاهدة المباشرة والتحميل
সরাসরি দেখুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Viewing and Downloading

লিংক-১ : https://noteshare.id/nppkbIx
লিংক-২ : https://web.archive.org/web/20210604…/cintadhara-21
লিংক-৩ : https://web.archive.org/web/20210604…a19e9e388e4af5
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20210604…are.id/nppkbIx

 

روابط الجودة العالية
HQ 1080 (422 MB)
১০৮০ রেজুলেশন [৪২২ মেগাবাইট]

 

روابط الجودة العالية
HQ 1080 (290 MB)
১০৮০ রেজুলেশন [২৯০ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/mafahim-21/Sub-21%20HQ.mp4
লিংক-২ : https://drive.internxt.com/sh/file/fbc3c33d-4ac4-4ec0-b6c4-a11a6522c2ea/c5e57b82bd905c09fd6fb7ec129216b03ced3119aef70a6ea6140a6ea065cfbd
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dmkgh397b0f35bc374d04b0a9815b0a91eb11

 

روابط الجودة المتوسطة
MQ 720 (157 MB)
৭২০ রেজুলেশন [১৫৭ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/mafahim-21/Sub-21%20MQ.mp4
লিংক-২ : https://drive.internxt.com/sh/file/af563e93-e96c-4914-aff0-0a455557923d/ee2d5bce61b79607052d1f5744f2a5b4b28cd3838cf05574f724d9ebc01dcf3b
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dmkghaea2b7b010a94f6cb55be53abc637a5a
লিংক-৪ : https://download.ru/files/kZG9UjQl

 

روابط الجودة المنخفضة
LQ 360 (70 MB)
৩৬০ রেজুলেশন [৭০ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/mafahim-21/Sub-21%20LQ.mp4
লিংক-২ : https://drive.internxt.com/sh/file/386637e1-973f-48e7-9ebe-754d2589a5f6/aa807e48344eb41b53ac2e0b7c71912a3a52c2b01d4de89e42e0f5bf2fa7a7e8
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dmkgh2b48c851414e477abd4c43569c7e340e
লিংক-৪ : https://download.ru/files/lhVPakqe

 

روابط جودة الجوال
Mobile Qoality (75 MB)
3GP রেজুলেশন [৭৫ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/mafahim-21/Sub-21.3gp
লিংক-২ : https://drive.internxt.com/sh/file/da311aa4-b49b-4f18-adaf-0475770cdbd7/d92d664250266c29a12dd0c9d3ddb3ca2657536cca69ed2097f30c1c4dfc7896
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dmkgh95a9769788ec40fc9a9a7f11ad1c9a3a
লিংক-৪ : https://download.ru/files/ftYLLaER

 

پی ڈی ایف
PDF (930 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৪৫৫ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/mafahim-21/Mafahim%2021.pdf
লিংক-২ : https://drive.internxt.com/sh/file/81fb4c57-0abf-426e-82e2-34c18c05e157/cf54ae2bbbcf701603c1e07b5c2594281f086437121e47fa00b9282f1764b2be
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dmkgh97d9cd8240eb488c8a5d0acb63d95bf9

 


ورڈ
WORD (696 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৪৭৪ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/mafahim-21/Mafahim%2021.docx
লিংক-২ : https://drive.internxt.com/sh/file/340277a2-d956-4416-8ab8-54aa7fe4d66e/83c4de4bd177423c59ff87ba9f19d6038ee1a366b47d578a23ed299bbeac182d
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dmkgh3e9d1a70ef704603aa8c56e09343d5b9

 

 

غلاف
book cover [572 MB] বুক কভার [১.৫ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/mafahim-21/Mafahim%2021%20Cover.jpg
লিংক-২ : https://drive.internxt.com/sh/file/d6b27266-382a-4f77-a898-a816679e85d6/f7bcb489543aef4216f19e4e768e959b62d1dea75202aaccc42d1b89ac195e71
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dmkghf68a85799dbc415a95163647eb93f4b5

 

روابط الغلاف
Banner [920 KB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [৯২০ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/mafahim-21/Mafahim%2021%20Banner.jpg
লিংক-২ : https://drive.internxt.com/sh/file/62285506-45fc-4afa-89b7-1672c616ac2c/2aa8eba69c1d89ac683c58b010254c87f808a0da42d1f4d052a12a9a46fb037a
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dmkgh2424387ea76143ab9fee383db87c37b9
লিংক-৪ : https://download.ru/files/Vf6db5X2

======================================

 

চিন্তাধারা সিরিজ- ২১

উপজাতীদের সাথে আচরণবিধি

শাইখ খামিস আল-মারওয়ানী আদ-দাহমী রহিমাহুল্লাহ

অনুবাদ ও প্রকা শনা

কীভাবে উপজাতীদের মাঝে প্রভাব সৃষ্টি করবো? কীভাবে আমরা উপজাতীদের সাথে আচরণ করবো বা কথা বলবো, এটির মানেই হল কীভাবে তাদের মাঝে প্রভাব সৃষ্টি করবো- এর কাছাকাছি। উভয়টা একটা আরেকটার অন্তর্ভূক্ত। আমরা উপজাতীদের মাঝে প্রভাব সৃষ্টি করবো আন্তরিক দাওয়াত ও উত্তম আদর্শের মাধ্যমে। তাদের নিকট বেশি কথা বলার চাইতে আমাদের নিজ চরিত্র এবং উত্তম আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে আদর্শবান হিসেবে পরিচিত হতে হবে। অর্থাৎ নিজের দিক থেকে উত্তম আদর্শ উপহার দিতে হবে। এটাই মানুষের মাঝে প্রভাব সৃষ্টি করে এবং বিশেষভাবে উপজাতীদের মাঝে গভীর প্রভাব সৃষ্টিকারক হয়।

আমরা আরেকটি বিষয় বলতে পারি যে, কোন জিনিস উপজাতীদের মাঝে অধিক প্রভাব সৃষ্টি করবে.. সেটি হল মনোতুষ্ট করা এবং উপহার প্রদান। এটিই হল উপজাতীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে নববী নীতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের শুরুতে মদিনার মুনাওওয়ারায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নে এবং মদিনার আশপাশের এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সময় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। কিছু উপজাতী ও কিছু সম্ভ্রান্ত লোকদের জন্য কিছু এলাকা জায়গীর হিসাবে দান করেছিলেন। মানে তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতা বরাদ্দ থাকত। বিভিন্ন বিজয় ও গনিমতের সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ব্যক্তির ন্যায় দান করতেন যে ব্যক্তি দারিদ্র্যের ভয় করে না।

বাস্তবিকভাবেই আমরা যখন মুকাল্লা লাভ করলাম, তখন কিছু ভাইয়ের বুঝ ছিল, ইলম ছিল, কিন্তু তারা উপজাতীদের সাথে যথার্থ আচরণ করতে পারতেন না। তারা কী বলতেন? আমাদের নিকট সকল মানুষ সমান। ঠিক আছে, কিন্তু এটা তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নীতিকে ভুল ধরা হল। তিনি হুনাইনের যুদ্ধে এসে কিছু কিছু উপজাতীয় গ্রাম্য নেতাদেরকে দান করলেন, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে মাত্র দু’দিন গত হয়েছে। অমুককে একশো উটনী দান করলেন, আরেকজনকে একশো উটনী, আরেকজনকে একশো উটনী, অমুককে পঞ্চাশটি। পক্ষান্তরে সেই আনসারী লোকগুলোকে কিছুই দিলেন না যারা উম্মতকে আশ্রয় দান করলেন, সাহায্য করলেন এবং উম্মতকে তাদের মাথায় তুলে রাখতেন। তাদেরকে কিছুই দিলেন না।

কেন তিনি এই ক্ষেত্রে মানুষের সাথে সমান নীতি অবলম্বন করলেন না। এটি কি ভুল ছিল? যদিও আচরণবিধি বুঝার ক্ষেত্রে এটা ভুল। হ্যা, আমাদের নিকটও সব মানুষ সমান, কিন্তু মর্যাদার কথা চিন্তা করলে তা ভিন্ন। হতে পারে জামাতে আপনার সাথে একজন ভাই বুঝমান, নিয়মানুবর্তী এবং সুশৃঙ্খল, যিনি সাধারণ প্রাথমিক একজন ভাই থেকে ভিন্ন। একজন সাধারণ উপজাতীয় লোক থেকে ভিন্ন। অর্থাৎ নিম্নস্তরের উপজাতী, যার মাঝে কিছুটা মূর্খতাও আছে (তার থেকেও)। এখানে এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির আচরণবিধি ভিন্ন হবে এটি স্বাভাবিক। এভাবেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের সাথে আচরণ করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামও তাদের যামানায় মানুষের সাথে এরূপ আচরণই করেছেন। এজন্য কী হয়েছে? একবার একজন ব্যক্তি তার (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে, তিনি বললেন: তাকে অনুমতি দাও। সে গোত্রের কত মন্দ সদস্য! কিন্তু সে যখন প্রবেশ করল, তখন তিনি খুবই হাসি-খুশি ছিলেন। এটাই আচরণ!

সেই ব্যক্তির ঘটনা দেখুন, যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তাকে ভীষণ জোরে টান দিয়ে বললেন, “হে মুহাম্মদ! আল্লাহ তোমাকে যে সম্পদ দান করেছেন, তা থেকে আমাকে দান কর। তোমার নিজের সম্পদ বা তোমার বাবার সম্পদ থেকে নয়”।

সে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নাড়িয়ে ফেলল। অত:পর নবীজি তাকে দান করার পরই সে শান্ত হল। তারপর ওই লোকটি বলল: তিনি অনবরত আমাকে দিতেই থাকলেন। অবশেষে তিনিই আমার নিকট আমার জীবন, পরিবার ও সন্তান থেকে অধিক প্রিয় হয়ে গেলেন। এটাই শিল্প। সুতরাং উপহার প্রদান মানুষের সাথে ও উপজাতীয়দের সাথে আচরণের শিল্পসমূহের মধ্যে এটি একটি অন্যতম শিল্প।

জনৈক এক ভাই আমাদের নিকট আসলেন যিনি ছিলেন খুব কঠোর। তিনি বিভিন্ন উপজাতীদের সাথে সহজ ও কোমল পন্থায় আচরণ করাটাকে যেন আকিদার ত্রুটি এবং দ্বীনদারির ত্রুটি হিসাবে দেখতেন। তিনি এটিকে দ্বীনের বিধি-বিধান মানার ক্ষেত্রে এবং বন্ধুত্ব ও শত্রুতার নীতির মধ্যে সমস্যা মনে করতেন। এটি একটি ভুল বিষয়। এটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গি।

অতএব মানুষের সাথে আচরণের নিয়ম হল, যখন আমার নিকট কোন ভাই এমন বিষয় নিয়ে আসে, যে ব্যাপারে আমার কড়া নির্দেশ ছিল, তখন এই ভাইয়ের সাথে এই ব্যাপারে আমি একই রকম আচরণ করবো। অর্থাৎ আমি জানি, তার শিক্ষা-দীক্ষা কেমন, তার মান্যতা কেমন, অর্থাৎ তার শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের পরিমাণ কেমন। কিন্তু আমার নিকট আরেক ভাই আসলে, তার সাথেও এমন করবো?

না! এ ব্যক্তির ক্ষেত্রে শোধরে দেওয়া, সঠিক করে দেওয়া যেতে পারে। অতএব ব্যাপারটি স্পষ্ট যে, উপজাতিরাও ঠিক এরকমই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মানুষের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে চুলের মত মাপকাঠি নির্ধারণ করা যাবে না। এটাই ছিল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নীতি। এটাই তার জীবনের দর্শন ছিল। এসকল উপজাতীদের ক্ষেত্রে এটাই ছিল তার দৃষ্টিভঙ্গি।

ভাই, আপনার মাঝে যে উপাদানগুলো আছে, তার থেকেও অনেক ধরণের সমস্যা তৈরি হতে পারে। আপনি কীভাবে কোনো ব্যক্তিকে পরিবর্তন করে ফেলার চেষ্টা করেন। সাইয়িদ কুতুব রহিমাহুল্লাহ বলেন: “আমরা যখন এই হিসাবে মানুষ থেকে দূরে থাকি যে, আমরা মনে করি, আমরা তাদের থেকে অধিক পবিত্র আত্মার অধিকারী, স্বচ্ছ হৃদয়ের অধিকারী, প্রশস্ত মনের অধিকারী, বা তাদের থেকে সূক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী, তখন আমরা নিজেদের জন্য খুব বড় বা ভালো কাজ করলাম না। আমরা নিজেদের জন্য সবচেয়ে সহজ ও কম ব্যয়বহুল পথটিই গ্রহণ করলাম। প্রকৃত বড়ত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব হল আমরা এ সকল মানুষদের সাথে মিশবো উদারতার প্রাণে পরিতৃপ্ত হয়ে ‍এবং তাদের দুর্বলতা, ত্রুটি ও ভুলগুলোর প্রতি দয়াশীল হয়ে। তাদেরকে পবিত্র করা ও সুসভ্য করার প্রকৃত ব্যকুলতা নিয়ে এবং যথাসম্ভব তাদেরকে আমাদের পর্যায়ে উন্নীত করার চেতনা নিয়ে”।

আপনি কোনো ব্যক্তির মানোন্নয়ন করতে চান, আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সহ্য করতে হবে। আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর রহমত বর্ষণ করুন। এক্ষেত্রে উপজাতীদের বিষয়টি সামনে চলে আসে। মুকাল্লায় তারা আমাদের সামনে আসল। তাদের সাথে আচরণটি ছিল এক প্রকার শক্তির। অর্থাৎ ময়দানে বা জামাতে একজন ভাই আরেকজনের সাথে যে আচরণ করে, অর্থাৎ যে ভাই, নিয়মানুবর্তী, সুশৃঙ্খল, মুজাহিদ এবং আল্লাহর পথে বের হয়ে পড়েছেন, ঠিক তার মত। এটা অনেক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। লোকগুলোকে উপেক্ষা করে। অর্থাৎ উপজাতীয়দের সম্মান না করে। আমি জানি না এটা সঠিক ছিল কিনা। ওই সময় এটা কারো কারো মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

আমি বলি, ভাইয়েরা, এই উম্মতের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষের জন্য, বিশেষভাবে উপজাতীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরণের আচরণ প্রয়োজন। কোনো ব্যক্তি সকাল বা সন্ধ্যায় ঠিক হয়ে যাবে না। বরং ভাইদের সাথে উঠাবসা করে মানুষের আচরণ দেখে তারা ঠিক হবে। জীবন পাঠ করে ঠিক হবে। খুব ধীরগতির পাঠ। কয়েক মাস নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী পাঠ করে ঠিক হবে। তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে চলাফেরা করেছেন। তিনি এমনকি কাফের, মুরতাদ ও মুনাফিকের এবং মুসলিমদের সাথে চলাফেরা করেছেন। যারা বিভিন্ন রূপের, বিভিন্ন প্রকারের ও বিভিন্ন ধরণের ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদের সকলের সাথে চলেছেন। অত:পর আমাদের সামনে একটি আদর্শ প্রকাশ করে গেছেন, যার অনুসরণ করা আবশ্যক, এমনকি তা অনুসরণ করা ওয়াজিব এবং এটিই আল্লাহর ইবাদত।

এখানে আরেকটা বিষয় আছে যেটা আমার মনে এসেছে তা হল কীভাবে আমরা উপজাতীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে নিজেদেরকে ভুলে যাই অথবা নিজেদেরকে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের প্রথম কাজ হবে এ সকল লোকদেরকে দাওয়াত দেওয়া এবং তাদের সংশোধণের চেষ্টা করা। যখন প্রকৃত অর্থেই আমাদের মধ্যে চিন্তা থাকবে, অর্থাৎ সব বিষয় ধারাবাহিকভাবে পরিচালনা করা; এমন হবে না যে, যেন আমাদেরকে আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে দুনিয়ার হীন কোন বস্তু প্রদান করা হয়েছে। না এটা হতে পারে না। সে তো মুসলিম। ছাড় দেওয়া এবং কোমলতা অবলম্বন করা শরয়ী ওয়াজিব, যতক্ষণ বিষয়টা আল্লাহর শরীয়তের বিরোধী না হবে। আল্লাহ তা্’আলা বলেন:

ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ

“তুমি হিকমাহ ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তোমার রবের পথে আহ্বান কর। আর তাদের সাথে সেই পন্থায় বিতর্ক কর, যা সর্বোত্তম।” (সূরা আন-নাহল ১৬:১২৫)

এগুলো সহজ, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা যদি আজ এগুলো অবলম্বন করি, তাহলে কারো সাথে সংঘাত হবে না। হিকমাহ ও উত্তম উপদেশ এবং এমন পন্থায় বিতর্ক করা, যা সর্বোত্তম। এটার প্রতিই আল্লাহ আদেশ করেছেন। আপনারা হাদিসের মধ্যে লক্ষ্য করেছেন যে, যখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একটি প্রতিনিধি দল আসলো, কতগুলো অস্বাভাবিক দাবি জানালো। এমন জিনিস, যা কেউ কল্পনা করতে পারে না। তারা লাতের ব্যাপারে সংলাপ করেছে। যা আপনাকে দুই মাস বা তিন মাসের জন্য তাকে ছাড় দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলেন: তোমরা কালিমা মেনে নাও এবং বায়আত গ্রহণ কর। পরিশেষে আপনি এটা কিভবে গ্রহণ করবেন? কিন্তু দেখুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলছেন, তিনি বলেন: তবে দ্বীন এটার অনুমোদন দেয় না। মুসলমানের মূল বিষয় তাওহিদের আকিদা। তখন তিনি বললেন, এটা (লাত মূর্তি) ধ্বংস করতেই হবে। তখন তারা কী বলল? তারা বলল, তাহলে আমাদেরকে এটা ধ্বংসের ইস্যুতে ক্ষমা করুন।

যদি আমাদের কেউ এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হত, তাহলে বলত: না, তোমরা অবশ্যই গিয়ে এটা ভেঙ্গে ফেলবে। যেন আমরা তাদের অন্তর থেকে জাহিলিয়াতের কুমন্ত্রণাগুলো বের করে ফেলতে পারি। তোমরা তা ভেঙ্গে ফেলবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা তাদের হাতেই অথবা অন্যদের হাতে ভাঙ্গা হবে। আমরা তোমাদেরকে (এখন) ছাড় দিলাম। যাও হে অমুক, যাও হে তমুক।

প্রামাণ্য বিষয় হল, কে এসেছিল? ওয়ালিদ ইবনে শোবা, আবু সুফিয়ান। আবু সুফিয়ান গতকালই খন্দক যুদ্ধে মদিনা অবরোধকারী কাফের বাহিনীর লিডার ছিলেন। রাত-দিন হুবাল ও কুরাইশদের অন্যান্য মূর্তিগুলোর প্রহরা দিতেন। কিন্তু এক মুহূর্তের মধ্যে এবং এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মাধ্যমে এই আবু সুফিয়ানই (রাঃ) লাত ধ্বংসকারী কোদাল বহন করেছেন। তার স্বর্ণগুলো জমা করেছেন। এই মানসিক পরিবর্তনটির প্রতি লক্ষ্য করুন, যা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সম্প্রদায়কে সেই মিথ্যা অবস্থা ও বাস্তবতা থেকে এই মহান অবস্থানে পরিবর্তন করেছেন। ফলে তারাই সেই মূর্তিগুলো ধ্বংস করেছে, যেগুলোর জন্য তারা নিজেদের আত্মা, নিজেদের সন্তানদের আত্মা এবং নিজেদের সর্বস্ব বিসর্জন দিত। আল্লাহ নবীজির প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।

এই প্রতিনিধি দলটির প্রতি লক্ষ্য করুন। আমরা এই কথার মধ্যেই উদাহরণটি দিয়েছি। কীভাবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরল ও বিস্ময়কর আবেদন ও পরিস্থিতিগুলোতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এইগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি ধৈর্য ও সহনশীলতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কীভাবে তাদের থেকে এটা গ্রহণ করে নিলেন। কীভাবে দলিলকে দলিল দ্বারা মোকাবেলা করে উভয় পক্ষ একমত হলেন এবং তার মাঝে ও তাদের মাঝে বায়আতনামা লিখলেন।

আমি বলি, হে ভাইয়েরা, এটাই হল মানুষের মানসিকতা। আজকেও ঠিক এই রকম মানসিকতা আছে। যাদের ওপর আল্লাহ রহম করেছেন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মতবিরোধ ও সেই উপজাতীয় মানসিকতা থেকে যায়, তার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা, শ্রেণীবোধ এবং আত্মসম্মান বিরাজমান। এটিই আরবদের আত্মসম্মান, বংশ গৌরব, আভিজাত্যের গৌরব। এরাই হল আরব যাদের মধ্যে তা এখনো বিরাজমান। কিন্তু দেখুন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কীভাবে ব্যবহার করলেন। কীভাবে তাদেরকে সংকীর্ণ আত্মচিন্তা ও গোত্রীয় চিন্তা থেকে এমনভাবে পরিবর্তন ঘটালেন যে, তারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরে বৈশ্বিক তাগুত ও কুফরের মোকাবেলাকারী হয়ে গেলেন।

এমনিভাবে সাহাবায়ে কেরামও। আপনি যদি ইসলামী বিজয় ও সেনাবাহিনীগুলোর প্রতি লক্ষ্য করেন, তাদের অবস্থা এ পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তারা প্রত্যেক গোত্রকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছেন। বনী তামিমকে তাদের অবস্থায়। অমুক গোত্রকে তাদের অবস্থায়। এরকমভাবে সেনাবাহিনী গঠিত হত এবং যুদ্ধ করত। কারণ হল, যেহেতু একটি গোত্র নিজ গোত্রীয় ভাইয়ের সাথে এবং গোত্রের সন্তানদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক থাকে, তাই তারা পরস্পরে মিলে অত্যন্ত তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। ফলে তাদের দিক থেকে পরাজয় আসাকে তারা লজ্জার বিষয় মনে করে আত্মবিসর্জন দিয়ে ‍যুদ্ধ করত। তারা যুদ্ধকে এভাবেই দেখতেন। আজ যদি আমরা এমন কথা বলি, তা হলে আমাদের কেউ কেউ এটাকে সাম্প্রদায়িকতা হিসাবে গণ্য করবেন। হ্যা, আমরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ও শ্রেণীবিভেদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সাহাবা ও সালাফগণ এই পন্থাটি ব্যবহার করেছেন। এভাবেই এই গোত্রগুলো তাওহীদের পাতাকা বহন করেছিল। আল্লাহ মহান নবীর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।

কতগুলো চাবি আছে। অর্থাৎ রহস্য। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ চাবিগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। মোটকথা, সর্বপ্রথম যে জিনিসটি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবহার করেছেন, তা হল, হিকমাহ, উত্তম উপদেশ এবং এমন পন্থায় বিতর্ক, যা সর্বোত্তম। যখনই তার নিকট কোন গোত্রের ব্যাপারে সংবাদ আসত, অবাধ্যতার সংবাদ বা অন্য কোন সংবাদ, তিনি তাদের জন্য বাহিনী প্রেরণের পূর্বে প্রথমে তাদের জন্য দায়ী পাঠাতেন। তিনি তাদের বিরুদ্ধে প্রথমে সৈন্য পাঠাননি। বর্তমানে মাঝে মাঝে কিছু ভাই, সবচেয়ে সহজভাবে যে কথাটি বলে ফেলে, তা হল: তাদের উপর বিস্ফোরকের মাধ্যমে আঘাত হানুন, তাদেরকে বোমা মারুন। এক্ষেত্রে আমাদের মাঝে এক প্রকার বিস্ময়কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ আপনি কখনোই চাইবেন না যে, আপনার আন্তর্জাতিক জিহাদি কর্মসূচি, তথা আমেরিকান অহংকার ও দাম্ভিকতার বিরুদ্ধে জিহাদ এবং বিশ্ব কুফরের বিরুদ্ধে জিহাদটি উপজাতীদের দিকে মোড় নিক। এখানে ঝগড়া, ওখানে বিতর্ক। এখানে অমুক নিহত হয়েছে, ওখানে তমুক নিহত হয়েছে। শুনেছেন, না শুনেননি। ইত্যাদি এগুলো নানাভাবে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ফেলে।

এজন্যই আমাদেরকে উপজাতীদের সাথে সর্বোচ্চ পর্যায়ের হিকমতের সাথে আচরণ করতে হবে। কারণ এমন লোক আছে, যারা ভাইদের সম্পর্কের মাঝে হাতুড়ি মারতে চায়। যেন ভাইয়েরা তাদের আসল টার্গেট থেকে অমনোযোগী হয়ে যায়। যেন আমরা প্রকৃত লক্ষ্য ভুলে যাই। ফলে আমরা উপজাতীদের সাথে বিরোধ নিয়েই বসে থাকি। আর প্রধান সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।

এটা হল প্রথম বিষয়, হিকমাহ ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়া এবং সর্বোত্তম পন্থায় বিতর্ক করা।

দ্বিতীয় বিষয় হল সবর ও সহনশীলতা। আমাদের মাঝে ধৈর্যের মানসিকতা নেই। ভাই, যদি আপনার সাথে একটু বাঁধে অথবা আমাদের দলের সাথে বাঁধে, তখনও আমরা একে অপরকে সহ্য করি না। এটি ঠিক না ভাই। এর ফলে আমাদের মন সংকীর্ণ হয়ে যাবে। এটা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের পরিপন্থী। তিনি হিজরতের পূর্বে দাওয়াত দিতেন। নিজেকে আরবের বিভিন্ন গোত্রগুলোর সামনে পেশ করতেন। কুরাইশরা তার সাথে কী করত? তার সাহাবাদের সাথে কী করেছিল? তিনি পথ অতিক্রম করার সময় দেখতেন, তার সাহাবীগণকে নির্যাতন করা হচ্ছে, গ্রীষ্মের দিনে তাদের উপর ভারি পাথর রাখা হচ্ছে। তখন তিনি বলতেন: সবর করো হে ইয়াসির পরিবার। তোমাদেরকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।

আমরা মুজাহিদ, অথচ আমরা সবর করতে প্রস্তুত নই। যদি কোন এলাকায়, কোন ঘাটিতে বা কোন স্থানে আমাদের উপর হত্যা বা আঘাত আসে, তখন আমরা সবর করতে প্রস্তুত থাকি না। খুব দ্রুত আমাদের চেষ্টাগুলো কার্যকর করতে থাকি। এটা ভুল পন্থা। এটা রাসূলুল্লাহর মানহাজ নয়। তিনি সব বিষয়কে হিকমতের সাথে মোকাবেলা করতেন। সমস্যাটি নির্ণয় করতেন। সমস্যাটি বুঝতেন। তারপর সমস্যা অনুযায়ী জবাব দিতেন। যাতে এটা জামাতের উপর বহুগুণ সমস্যার কারণ না হয় এবং এর ফলে যাতে পুরো জামাত সমূলে ধ্বংস না হয়। আমাদেরকে এক এলাকা থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে আমাদেরই কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে। এগুলো বলা ঠিক নয়। কোথায় ধৈর্য, কোথায় সহনশীলতা! আমরা শাহাদাতের টার্গেট নিয়ে আছি। আমরা একটি মুসলিম সমাজের সাথে কারবার করছি। আল্লাহ নবীজির উপর রহমত বর্ষণ করুন।

তবে এর অর্থ এই নয় যে, আমরা শৈথিল্য বা তেলবাজি করবো। আমরা কতগুলো মুসলিম উপজাতীর সাথে কারবার করছি। কাফেরদের সাথে কারবার করছি না। আল্লাহ নবীজির প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। তাই সবর করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহনশীলতা অবলম্বন করেছেন। তারা তার পথে কাঁটা বিছাতো, আবু জাহল ও আবু লাহাব তার মাথার উপর উটের নাড়িভুরি রাখত। তবুও তিনি গোত্রগুলোর নিকট নিজেকে পেশ করতেন। অপরদিকে আবু লাহাব তার পিছনে পিছনে গিয়ে বলত: তোমরা তাকে বিশ্বাস করো না। এই লোক মিথ্যাবাদী, এই লোক বিশ্বাসঘাতক। এভাবে তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলে অভিহিত করত। এতদসত্ত্বেও তিনি সবর করেছেন এবং আল্লাহর নিকট প্রতিদানের আশা করেছেন।

আয়েশা রাযিআল্লাহু তাআলা আনহা নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেছিলেন: উহুদের দিনের চেয়ে কোন কঠিন দিন কি আপনার উপর এসেছে? রাসূলুল্লাহ বললেন: “আমি তোমার সম্প্রদায় থেকে অনেক কষ্টের সম্মুখীন হয়েছি। সবচেয়ে কঠিন কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলাম আকাবার দিন। আমি নিজেকে ইবনে আব্দে ইয়ালিল ইবনে কুলালের সামনে পেশ করেছিলাম। কিন্তু আমি যা চেয়েছি সে তাতে সাড়া দেয়নি।” তখন নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন। ঐ সময় বেলালের বগলের নিচে দাবিয়ে রাখা কিছু খাদ্য ছাড়া তাদের সাথে কোন খাদ্য ছিল না। দেখুন, আমাদের কেউ কেউ ধারণা করে, জামাত মানে সমৃদ্ধশালী জীবন যাপন। না (এমনটা সঠিক নয়), আপনার কাছে আসবে আশ্রয়হীনতা, ক্ষুধা, পিপাসা। আশ্রয় দান করার মত কাউকে পাবেন না। তবু উম্মাহর বিরুদ্ধে এরকম কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যা তাদের মধ্যকার নেককার, বদকার সকলকে আঘাত করবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবর করেছেন। তিনি আরো বলেন, অত:পর তারা নির্বোধদেরকে তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিত। তারা তাকে প্রস্তরাঘাতে জর্জরিত করেছিল। এমনকি তার উভয় পা রক্তাক্ত করে ফেলা হয়েছিল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অত:পর আমি চিন্তিত-দু:খিত অবস্থায় চললাম। আমি কারনুস সায়ালিবে যাওয়ার আগ পর্যন্ত হুশ ফিরে পেলাম না। এটি দ্বিতীয় একটি অঞ্চল, যার নাম কারনুস সায়ালিব। এ সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী ব্যাপারে চিন্তা করছিলেন? কোন উপত্যকায় উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরছিলেন? দুনিয়ায়? না। বরং কীভাবে এই দাওয়াত পৌঁছে দিবেন সে চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। এ সময় তার নিকট পাহাড়ের ফেরেশতা আসল। তিনি তার প্রসিদ্ধ দু’আটি করেছিলেন: “হে আল্লাহ আমি আমার শক্তির দুর্বলতা, উপায়হীনতা এবং মানুষের নিকট গুরুত্বহীনতার অভিযোগ করছি আপনার নিকট। আপনিই আমার রব এবং সকল দুর্বলের রব। আমাকে কাদের নিকট সোপর্দ করছেন। এমন দূরবর্তীদের নিকট, যারা আমাকে দেখে ভ্রুকুটি করে? নাকি এমন নিকটজনদের নিকট, যাদেরকে আমার উপর কর্তৃত্বশীল করেছেন। যদি আমার প্রতি আপনার ক্রোধ না থাকে, তবে আমি কোনো কিছুরই পরোয়া করি না। আপনার নিরাপত্তাই আমার জন্য সর্বাধিক বিস্তৃত নিরাপত্তা। আপনার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। আর আপনি ব্যতিত কোন উপায় বা শক্তি নেই”।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের নিকট যদি কোনো বিষয় জটিল হয়ে যায়, তখন আমরা খুব কমই দু’আর আশ্রয় নেই এবং শক্তি ব্যবহারের দিকে ধাবিত হই – কীভাবে কোনো কিছুকে শক্তি দ্বারা সমাধান করা বা বুঝিয়ে দেওয়া যায়। আল্লাহ নবীজির প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।

যখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আর আশ্রয় নিয়েছিলেন তখন জিবরাঈল এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, আমার সাথে পাহাড়ের ফেরেশতা আছে। আপনি যদি চান আমি তাদের উপর দুই পার্শ্বের পাহাড়দ্বয় চাপিয়ে দেই, তাহলে তাই করবো। আল্লাহ আপনাকে বলছেন: যদি আপনি চান, আমি তাদের উপর দুই পার্শ্বের পাহাড়দ্বয় চাপিয়ে দেই, তাহলে তাই করবো। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছিলেন? এই আত্মার একমাত্র চিন্তা ছিল এই দ্বীন, মানুষকে দ্বীনের দিকে দাওয়াত দেওয়া এবং তাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে প্রবেশ করানো। পক্ষান্তরে যদি আমাদের মধ্যে একজনের হাত বা পায়ে আঘাত করা হত, তাহলে কী হত। এখনো পর্যন্ত আমাদের কারো পায়েই তো আঘাত লাগেনি। উপজাতীরা তাদের ক্ষেত্রে এমন কিছুই করেনি। যদিও কোনো ক্ষেত্রে কিছু কিছু হয়েছে। কিন্তু হয়ত এতে আমাদেরই ভূমিকা ছিল, আমরা মানুষকে আমাদের স্বার্থে কিছু করার ব্যাপারে বিরক্ত করেছি। যদি আমাদের নিকট একজন ফেরেশতা এসে তাদেরকে ধ্বংস করার কথা বলত, তাহলে হয়ত তাদের একজনও বাকি থাকত না। ঠিক কি না?

এটা হল প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা। কিন্তু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি আশা করি, আল্লাহ তাদেরই বংশধর থেকে এমন লোক বের করবেন, যারা আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নিবে এবং তার সঙ্গে কোন কিছুকে শরিক করবে না।

যুগে যুগে দায়ী ও সংস্কারকদের চিন্তা-ভাবনা এমনই ছিল। আর তাদের সর্দার হলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যিনি বলেছেন: “আমি আশা করি, আল্লাহ তাদের বংশধর থেকে এমন লোক বের করবেন, যারা আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না”। কোন কোন বর্ণনায় আছে, “তাদের বংশধরদের বংশধর থেকে এমন লোক বের করবেন, যারা আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নিবে এবং তার সঙ্গে কোন কিছু শরিক করবে না”।

সুতরাং এখানে ব্যাপারটি হল এ সকল লোকদের (উপজাতি) দাওয়াত দিতে গিয়ে কষ্ট বরদাশত করা। কষ্ট বরদাশত করা, এই চেতনা আমাদের মাঝে থাকা আবশ্যক। হ্যা, কষ্ট বরদাশত করা। আল্লাহর পণ্য অনেক দামি। আল্লাহর পণ্য হল জান্নাত। শুধু কাফেরদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে সবর নেই। মুসলমানদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সবর করতে হবে। এমনকি আমাদের কতিপয় ভাইয়ের ক্ষেত্রেও সবর করতে হবে। কারণ কত ভাই মাঝে মাঝে এমন সমস্যা নিয়ে আসেন, যা বাহির থেকে বুঝা মুশকিল। অতএব সবর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এটিই হল দাওয়াত। এটাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ। সম্প্রদায়সমূহের লোকদের একে অপরকে সহ্য করা এবং একে অপরকে সাহায্য করা, এগুলোই হল তার আদর্শ। এটিই মানুষের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে এবং উপজাতীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ।

উপজাতীদেরকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য উপযুক্ত উপায় ও পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করতে হবে। অনেকগুলো উপায় ও পদ্ধতি আমরা আপনাদের সামনে উদাহরণ হিসাবে পেশ করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইাহি ওয়াসাল্লাম যখন খুজায়ী আল মুযানীকে মুযাইনা গোত্রের নিকট প্রেরণ করলেন, তখন তিনি তার নিকট আসতে বিলম্ব করলেন। মুযাইনা একটি গুরুত্বপূর্ণ গোত্র। রাসূলুল্লাহর নিকট এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যেহেতু এটা মদিনার নিকটবর্তী ছিল। তিনি বিলম্ব করলেন তার ডাকে সাড়া দিতে নয়, বরং তিনি তাদেরকে দাওয়াত দিচ্ছেন। কিন্তু তারা তাকে সাড়া দিচ্ছে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসানকে বললেন, খুযায়ীর প্রশংসামূলক আলোচনা কর, তবে তাদের নিন্দা করো না। ব্যাস, শুধুমাত্র তার মাঝে ও তাদের মাঝে যে ওয়াদা ছিল, সেটা উল্লেখ করলেন। তার প্রশংসামূলক আলোচনা করলেন, কিন্তু তাদের নিন্দা করলেন না। কবিতার পংক্তিগুলো খুযায়ীর নিকট আসল। কবিতার ৩ টি পংক্তি। তখন তিনি নিজ সম্প্রদায়ের সামনে চিৎকার করে বলতে লাগলেন: লোকটির কবি বিশেষভাবে তোমাদের কথা উল্লেখ করেছে। তারপর তিনি তাদের সামনে কবিতার চরণগুলো বললেন। ফলে মুযায়না গোত্রের চারশো ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর নিকট আসে এবং তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট বায়আত গ্রহণ করে।

উপজাতীদেরকে দাওয়াত দিতে গেলে উপযুক্ত উপায় ও পন্থাগুলো ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি এটা বলি না যে, যেকোন মানুষই উপজাতীদেরকে বা কতক শ্রেণীর মানুষকে দাওয়াত দিতে পারবে। কারণ কিছু নির্দিষ্ট পন্থা আছে। এ সকল লোকদের অতীত কীর্তিগুলো প্রশংসার সাথে উল্লেখ করা। অর্থাৎ তাদের গৌরবের ইতিহাসগুলো। এটাও তাদের সাথে উত্তম ব্যবহারের অংশ।

চতুর্থ বিষয় হল (এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ) আমার নিকট যে সমাধান আছে তা আমি দিচ্ছি এবং আপনাদের থেকেও আপনাদের সমাধান শুনতে চাই। কারণ আমরা প্রায় সকলেই একই সমুদ্রের সাথে সংশ্লিষ্ট। আমরা এখানেই বসবাস করি। আর তা হল ইয়ামানের উপজাতীদের সমুদ্র যেখানে শতকড়া ৮৫ পার্সেন্টই উপজাতী। এ কারণে আমরা এই সমুদ্রের সাথে জড়িত। তাই আমরা সকলের কাছ থেকেই শুনতে চাইবো।

পঞ্চম বিষয়, গোত্রের অপরাধীকে শাসন করেই ক্ষান্ত থাকা। একজন সদস্যের অপরাধকে পুরো গোত্রের উপর চাপিয়ে না দেওয়া। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ ভাইদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তারা আল-মালাহিমের ভিডিও চিত্রে এই কথাটি বলেছেন। তারা একথা প্রকাশে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন যে, অমুক ব্যক্তি শুধু নিজেরই প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় পুরো ভিডিওটিতেই এ বিষয়টার প্রতি লক্ষ্য রেখেছেন যে, অমুক ব্যক্তি তার সম্ভ্রান্ত গোত্রের প্রতিনিধিত্ব করে না। এটা উপজাতীদের অনেকের মনে লেগেছে। উপজাতীরা মেধাবী। তাদের মাঝে একটা জিনিস আছে, তার নাম হল মর্যাদা এবং তা রক্ষা করার চেতনা।

সাধারণত তারা একজন হত্যাকারী, শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাথে থাকবে না। অর্থাৎ উপজাতীরা একজন বিশ্বাসঘাতক সাজাপ্রাপ্ত লোকের সঙ্গে থাকে না। সে যাদের সঙ্গে খায়, যাদের সঙ্গে পান করে, তাদেরকেই সঠিক পথ দেখাবে (অর্থাৎ শত্রুর সুবিধাজনক স্থানগুলো বলে দিবে টার্গেট করার জন্য), এটাই তো শোভনীয়। যতগুলো গোত্র থেকে গুপ্তচর এসেছিল, তাদের প্রায় কেউই এই গোষ্ঠীটির জন্য কিছু করেনি কেন? কারণ তারা বলল, সে তো বিশ্বাসঘাতক। সে তো গাদ্দার। মানুষের সাথে গাদ্দারি করেছে। তাদের সঙ্গে গিয়েছে, তাদের সাথে পানাহার করেছে আর পরিশেষে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

আল্লাহর শপথ, এটাই বাস্তবতা। আমরা শুধুমাত্র অপরাধী ব্যক্তি থেকেই বদলা গ্রহণ করবো বা শুধু অপরাধীকেই ধরবো। এটাই নববী আচরণবিধি। পক্ষান্তরে ব্যাপকভাবে গোটা গোত্রের উপর চাপানো, এটা ভুল কাজ। এটা উপজাতীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের পরিপন্থী।

সাধারণকরণ না করার বিষয়টিও এর অন্তর্ভূক্ত হবে। অনেক সময় এমন শব্দ বের হয়ে যায়- ‘হে অমুক এলাকার অধিবাসীরা আপনারা’, বা ‘হে তমুক এলাকার অধিবাসীরা আপনারা আসুন’। আমার দৃষ্টিতে এটা ভুল পদ্ধতি। এমনকি যা ঘটেছে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে গুপ্তচরের পরিবারও তাদের নিকট সংবাদ নিয়ে কথা বলতে পারে। তাদের এই অধিকার আছে। তারা তাদের সন্তানদের সম্পর্কে এটা জিজ্ঞেস করার অধিকার রাখে যে, সে কী করেছে। তাদের এই অধিকারও আছে যে, আমরা তাদের নিকট বিষয়টি ক্লিয়ার করে দিবো এবং স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলবো যে, অমুক লোক অমুক কাজ করেছে। বা তমুক লোক তমুক কাজ করেছে। বা এই লোক গোত্রের একটি গ্রুপকে হত্যা করেছে। আমরা যদি এসে উপজাতীদেরকে সাম্প্রদায়িকতার জন্য ধরি, তাহলে এটা ভুল।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহর শপথ, যেদিন তুমি আমাকে তাকে হত্যা করতে আদেশ করেছ, সেদিন যদি আমি তাকে হত্যা করতাম, তাহলে অনেক নাক তার জন্য কেঁপে উঠত। কিন্তু আজ যদি তুমি তাদেরকেই (গোত্রকে) আদেশ কর তাকে (গোত্রের অপরাধী সদস্যকে) হত্যা করতে, তাহলে তারাই তাকে হত্যা করে ফেলবে।” ঠিক কি না। তাই আসুন, আমরা সকলে একে অপরের নিকট আসি।

কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা থাকবেই। গোত্রপ্রীতি থাকবেই। কিন্তু কীভাবে আমরা এই সাম্প্রদায়িকতাকে পরিবর্তন করবো? এরকম চিন্তাভাবনা করা এবং ধাপে ধাপে কাজ করাই হল দাওয়াতের মৌলিক একটি নীতি। এটা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতের মূলনীতি। নবীজি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলছেন: “যদি তোমার সম্প্রদায় নতুন ইসলাম গ্রহণকারী না হত, তবে আমি বর্তমান কা’বাকে ভেঙ্গে ফেলে ইবরাহিমের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতাম। কিন্তু মানুষ সবেমাত্র কুফর থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাই এটা তাদের জন্য বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে”। একারণে তিনি এমন একটি বিষয় পরিত্যাগ করলেন, যা মুসলমানদের ইবাদতের সাথে সম্পৃক্ত এবং মুসলমানদের ভিত্তি যা বর্তমান কা’বাকে ভেঙ্গে তাকে ইবরাহিমের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করা দরকার ছিল। তবুও তিনি করেননি। কাদের প্রতি লক্ষ্য করে? এসকল লোকের প্রতি। এমনিভাবে এখানেও একই।

কিন্তু এ সকল লোকদেরকে নিরপেক্ষ করে গড়ে তোলার আদর্শ পন্থা কী, যাতে তারা বাতিলের সাথে না দাড়ায়? কোন আদর্শ পদ্ধতিটি ব্যবহার করা আবশ্যক, যাতে এই উপজাতীগুলো জামাতের বিরুদ্ধে তাদের কাজগুলোর পক্ষে না দাড়ায় এবং তাকে প্রশ্রয় না দেয় এবং তাকে সুযোগ হিসাবে ব্যবহার না করে। অনেক সময় আমাদের কিছু কিছু কর্মই আমাদের কথার পোষাকের ভূমিকা পালন করে। আমরাই মানুষকে আমাদের বিরুদ্ধে একত্রিত করি। এটা হয় ভুল উপস্থাপনা অবলম্বনের কারণে। আমরা এটা ধরেই নেই যে, তারা দাড়াবেই, তারা এক, তারা দাড়াবেই ব্যাস। কীভাবে দাড়াবে? কীভাবে দাড়াবে? তাদের গোত্রের এই অপরাধী সদস্যটির পূর্বে তারা কীভাবে আপনার পক্ষে আপনার সাথে দাড়িয়েছিল?

তারা ছিল সাম্প্রদায়িক। আমরা এখন আলোচনা করলাম যে, সাম্প্রদায়িকতা গোত্রীয় লোকদের মন-মানসিকতার একটি মৌলিক বিষয়। এটা সেই জাহিলি যামানা থেকে এখনো পর্যন্ত। সাম্প্রদায়িকতা তাদের একটি মৌলিক বিষয়। আপনি কখনো এটা ভাববেন না যে, কেউ গোত্রীয় লোক, কিন্তু সে সাম্প্রদায়িকতা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা কীভাবে এই সাম্প্রদায়িকতাকে নিরপেক্ষ করবো এবং কীভাবে এটাকে ব্যবহার করার জন্য বা কমপক্ষে নিরপেক্ষ করার জন্য সর্বোত্তম পন্থাটি অবলম্বন করতে পারি। আল্লাহ মহান রাসূলের উপর রহমত বর্ষণ করুন।

আমি বলি, ভাই, গোত্রীয় সবাই তার গোত্রের অপরাধী লোকটির পক্ষে এমনভাবে থাকে না যে, তার হুকুম (পক্ষপাতি লোকটির) তার (অপরাধীর) হুকুমের মতই হয়ে যায়।

একবার জনৈক ভাই এসে বলল, অমুক গোত্র পুরোটা মুরতাদ। কেন? কি কারণে? তারা অমুকের পক্ষে দাড়িয়েছে। কীভাবে এটা মুরতাদ গোত্র? কোন ভিত্তিতে আপনি তাদেরকে কাফের আখ্যায়িত করলেন? কোন ভিত্তিতে আপনি তাদেরকে ইসলাম থেকে বের করে দিলেন? সে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চায়, তাদের জন্য বিস্ফোরক পাঠাতে চায়। আরো কত কিছু! আল্লাহ মহান নবীর উপর রহমত বর্ষণ করুন।

আমি মনে করি, এ বিষয়গুলো শরীয়ত প্রণেতার দায়িত্বে। তবে আমাদের কাছে যেটা স্পষ্ট এবং আমাদেরকে যেটার উপর নির্ভর করা আবশ্যক, তা হল, এই রকম অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণবিধি অনুসরণ করা এই ধরণের গোত্রসমূহের সাথে। ‘আমি যদি এখন তাকে হত্যা করতাম, তাহলে তার জন্য অনেক নাক কেঁপে উঠত।’ প্রথম যুগ.. যদি আমি তোমাদেরকে সেই সময় আদেশ করতাম। যে সময় ওমর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলেন- আমাদের একটি গাড়ি বোমা আছে… হে আল্লাহর রাসূল আমাকে ছেড়ে দিন, তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, না। যেন অনেকদিন পর তাকে এটা স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন। যখন স্বয়ং সেই আনসারীই বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার ছেলে বলছে, যদি আপনি কাউকে আদেশ করতে চান, তবে আমাকে আদেশ করুন আমার বাবাকে হত্যা করতে। এরপর তিনি তাকে স্মরণ করিয়ে দেন, আমি যদি সেই সময় তোমার কথা শুনতাম, তাহলে অনেক নাক কেঁপে উঠত। কিন্তু আজ যদি আমি তাদেরকেই আদেশ করি তাকে হত্যা করতে, তবে তারাই তাকে হত্যা করে ফেলবে। এটাই সূক্ষ্ণ বুঝ। অন্যের সাথে আচরণের বুঝ। উপজাতীদের সাথে আচরণের বুঝ। সাম্প্রদায়িক ও গোড়া লোকদের সাথে আচরণের বুঝ। বিষয়টা এমনই। পক্ষান্তরে পরিস্কার করার রাজনীতি… তথা প্রত্যেকেই অমুক উপজাতীর সঙ্গে অবস্থান নিয়েছে, অমুক অপরাধীর সঙ্গে অবস্থান নিয়েছে… এটা ভুল। এটা অনেক বড় বড় সমস্যার কারণ হয়। যে সমস্যা আজও পর্যন্ত আমরা কিছু কিছু অঞ্চলে টেনে আনছি।

তাই আমি বলি, ভাইয়েরা, এটাই আচরণ শাস্ত্র, যা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আশপাশের সেই লোকেদের সঙ্গে অবলম্বন করেছেন, যাদের মাঝে তিনি বসবাস করতেন। আর সর্ববৃহৎ যে সমুদ্রটিতে তিনি বাস করতেন, তারা হল উপজাতী। সুতরাং শাস্তি বা শাসন শুধুমাত্র মন্দাচারির উপরই সীমাবদ্ধ রাখা।

এরকম কিছু অবস্থায় বিভিন্ন মন্দাচার হয়। যেমন জনৈক সরদার বললেন, তিনি তাদের অপরাধীদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। দু:খিত ভাইয়েরা, আল্লাহ তাদেরকে এই ক্ষেত্রে উত্তম প্রতিদান দান করুন। বিরাট পরিশ্রম হয়েছে। আমি আবইয়ান, মুকাল্লা ও আরো অনেক অঞ্চলের এমন ঘটনা ও কাহিনী জানি। কারা এগুলো করেছে এবং কাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। এর অনেক বিরাট প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আমাদেরকে অবশ্যই অন্তরে এটা বদ্ধমূল করতে হবে যেখানে আমাদের সকল ভাইদের থাকতে হবে।

সুতরাং ভাইয়েরা, উপজাতীদের সাথে আচরণের পদ্ধতি হল একটি শাস্ত্র। যা হল সাধারণ মুসলমানদের সাথে আচরণের শাস্ত্রের মত। আমরা নিজেদের জন্য যা পছন্দ করি, মানুষের জন্যও তা পছন্দ করি। এটা ঈমানের গভীর বিষয়।

لا يؤمن أحدكم حتى يحب لأخيه ما يحب لنفسه

“তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তার ভাইয়ের জন্যও তাই পছন্দ না করবে”। (মুসলিম)

যেহেতু তিনি মুসলিম ভাই, তাহলে কেন আপনি চাইবেন সে জাহান্নামে প্রবেশ করুক। তাকে আন্তরিক দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করুন। হয়ত আল্লাহ তাকে হেদায়াত দিবেন। তারপর হয়ত এক মুহূর্তের মধ্যেই সে আপনার কাতারে চলে আসবে। এ হল আচরণবিধির ক্ষেত্রে আমার দৃষ্টিভঙ্গি। কিছু ভাইয়েরা জানেন না যে তারা ধীরে ধীরে উপজাতীদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে।

এটি হল একটি দায়িত্ব, একটি গুরু দায়িত্ব। আর তাই ভাইয়েরা, এমনকি অনেক সমর্থকরাও লেনদেন প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করতে পারেন। বিষয়টিকে যথাসম্ভব সহজভাবে নেয়ার চেষ্টা করুন। এখানে রাগ বা একগুয়েমিভাব না দেখানোই ভালো। উপজাতীয় ধারণা অনুযায়ী এটি একটি ভুল বিষয়।

মুহাজির ভাইয়েরা সমর্থক ভাইদের সাথেই থাকে। এটাই স্বাভাবিক সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। তবে এখানে কি বিষয়টা এইজন্য আলাদা হয়ে যাবে কারণ সে আল্লাহর শত্রুদের মধ্যে একজন ছিল?

না। উদাহরণস্বরূপ যদি সে বলে থাকে যে, আমার ভূমি অতিক্রম করবেন না, তবে আমরা থেমে গেলে তো কোন সমস্যা নেই। কোথায় সেই বিজ্ঞতা? সেখানে সে অবস্থায় থেমে যেয়ে পরবর্তীতে আমরা উপজাতি গোত্রের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করবো। (এটাই তো উত্তম!)

তো এই ঘটনার কারণ কী ছিল? আমাদের মধ্যে থেকে কেউ আপনাকে বিষয়টা নিয়ে চটিয়েছিল? আমাদের কাছে সমস্যা মনে হওয়ার আগেই কেউ কি বিষয়টা নিয়ে আপনাকে বিরক্ত করেছিল? আসলে প্রকৃত কারণ কি?

এ সকল বিষয়গুলোকে যথাযথ পরিমাণে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আর যে ভাই গোত্রীয় বিষয়গুলোতে তানযীম ও ভাইদেরকে জড়ায়.. আমাদের কাছে এমন কিছু নমুনা আছে যে, কতদিন পূর্বে এ বিষয়টাকে এভাবে ঘুরানো হয়েছে। তারা বলেছে, অমুকের গোত্র এরা। আমরা অমুক গোত্রের নিরাপত্তাকর্মী। অমুক কোন গোত্রের তা জানি না। পরিশেষে কী হয়? বিষয়টি তার মাঝে ও তার গোত্রীয় সম্পর্কের মাঝে বা তার মাঝে ও তার গোত্রের মাঝে গোত্রীয় বিরোধ হয়। বা গোত্রীয় কোন সমস্যা হয়। তাহলে সে চাচ্ছে, তার ও এ সকল লোকের মধ্যকার হিসাবটি তানযীমের মাধ্যমে চুকাতে!

এটি হল আমানত ও দায়িত্ব, (নিজের স্বার্থে গোত্রীয় বিষয়গুলোতে তানযীম ও ভাইদেরকে জড়ানো) বরং মুজাহিদ জামাতের মধ্যে এটা একটা অপরাধ। যে ভাই এটা করেন, তিনি এমন ব্যক্তি, যার দ্বীনদারির ব্যাপারে আমি অভিযাগ করি। এই ব্যক্তির নিয়ত সঠিক মনে করি না আমি। সে এমন হিসাব-কিতাব চুকানোর জন্য মুজাহিদগণের রক্ত ব্যবহার করছে, যা আল্লাহর জন্য বা আল্লাহর দ্বীনের জন্য নয়। এই ব্যক্তি, এমনকি চাই মুহাজির হোক, এমনকি গোত্রগুলোর সাথে হোক। জামাতের আদর্শের ক্ষেত্রে, জামাতের শাইখদের ক্ষেত্রে, তার মধ্যে সমস্যা বিরাজমান। এই ব্যাপারটি একটি উপায়ে সমাধান হবে। আমি মনে করি এই গোত্রীয় সমস্যাগুলো যা অনেক রক্তপাতের কারণ হয়। এক্ষেত্রে আমি উপদেশ দিব, প্রত্যেক ভাই-ই এক্ষেত্রে থেমে যাবেন। এক্ষেত্রে মারকায থেকে মীমাংসা আসা আবশ্যক। এখানে মীমাংসা হবে মারযাকের পক্ষ থেকে। স্থানীয় আমীরের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে উপজাতীয়দের উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেওয়া যাবে না। তবে এ ব্যাপারে ভাইদের নিকট উপরের নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সংবাদ থাকলে ভিন্ন কথা। কেন?

কারণ কেউ কেউ আমাদেরকে উপজাতীদের সাথে যুদ্ধে টেনে নিতে চায়। দ্বিতীয়ত এটা জায়েয নেই। আমরা আমাদের শক্তিগুলো ব্যবহার করবো, অথচ আমরা একমাত্র আমাদের দ্বীনের জন্যই বের হয়েছি। তারপর কেন আমরা এটাকে মন্দ ও বেঠিকভাবে ব্যবহার করবো। এটা আমানত। এটা দায়িত্ব। আমাদেরকে এটা বুঝতে হবে। চাই গোত্রীয় ভাই হোক এবং যেকোন এলাকায় বাস করুক অথবা হিজরীতকারী ভাইয়েরা হোক। আমরা একে অপরকে সত্যের উপদেশ দেই। আমরা একে অপরকে ধৈর্যের উপদেশ দেই। পরিশেষে আমাদের কতগুলো নীতি এবং আদর্শ আছে।

 

 

*************************************

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ (বাংলাদেশ শাখা)
In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + twelve =

Back to top button