আল্লাহর পথে জিহাদের বিষয়টির অর্থই হল উবুদিয়্যাত বা দাসত্ব। এটা অনেক বড় বিষয়। জিহাদ অন্যান্য ইবাদতসমূহের মধ্যে একটি ইবাদত। তবে এটার নাম হল ‘জিহাদ’, যার অর্থই হল পরিশ্রম বা কষ্ট। এর মধ্যে কষ্ট আছে। সুতরাং ভাইয়েরা আজ আমরা এমন একটি পথে আছি, যেখানে কষ্ট আছে। মহান মর্যাদাময় আল্লাহ বলেছেন:
کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِتَالُ وَ هُوَ کُرۡهٌ لَّکُمۡ ۚ
“তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে, যদিও তোমাদের নিকট তা অপ্রিয়।” (সূরা বাকারা ২:২১৬)
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা কাদেরকে সম্বোধন করেছেন? এর প্রথম সম্বোধিত ব্যক্তি হলেন সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু তাআলা আনহুম। অতঃপর আমি, আপনি এবং খাইরুল কুরুনসহ পরবর্তীতে আগত সকলেই এর মুখাতাব বা সম্বোধিত ব্যক্তি। যেমনটি আল্লাহ তা’আলার এই আয়াত (এর ব্যাপকতা) থেকে বুঝা যায়:
کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِتَالُ وَ هُوَ کُرۡهٌ لَّکُمۡ ۚ
“তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে, যদিও তোমাদের নিকট তা অপ্রিয়।” (সূরা বাকারা ২:২১৬)
সাহাবাদের (রাদিআল্লাহু আনহুম) নিকট অপ্রিয়। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। আর আজ আমাদের সাথে কে আছে?
তাদের নিকট জিহাদ অপ্রিয় ও কষ্টসাধ্য বটে, কিন্তু তা সত্ত্বেও জিহাদ থেকে যেকোন পশ্চাদপসরণ তাদের নিকট খুবই নিন্দনীয় কাজ ছিল। আর আজ যে জিহাদে যায়, সে নিন্দিত।
তাদের নিকট অপ্রিয় ছিল অথচ কুরআন তাদের সামনে নাযিল হচ্ছে। ওহী তাদেরকে বলে দিচ্ছে জিহাদ কী এবং কীভাবে করা উচিত! আর আজ পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টো। তাহলে অপছন্দের বিষয়টা কেমন হবে? নফসের উপর এটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
মনের জন্য সবচেয়ে’ কঠিন হবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায় যুদ্ধ ছিল তরবারির বিপরীতে তরবারি। বর্শার বিপরীতে বর্শা। এভাবেই চলছিল। আজ এমনটা নয়। যুদ্ধ পদ্ধতি ভিন্ন। অস্ত্র ভিন্ন। দুনিয়ার শেষ প্রান্ত থেকে এসে শত্রু আপনার উপর আক্রমণ করবে। আপনি তাকে ঠেকাতে পারবেন না, কিন্তু সে আপনাকে আক্রমণ করেই যাবে।
আল্লাহ তা’আলা জানাচ্ছেন, জিহাদ সাহাবায়ে কেরামের নিকট অপ্রিয় ছিল, তা সত্ত্বেও তারা জিহাদ করেছেন, তাহলে আজ আমাদের জন্য কেমন অপ্রিয় হতে পারে? যখন অস্ত্র সংগ্রহের মাঝেই ভিন্নতা?
তখন যুদ্ধ ছিল নির্দিষ্ট একটি ভূখণ্ডে। আপনি অমুক ভূখণ্ডে যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন। আর আজ পুরো পৃথিবী যুদ্ধের ময়দান। আপনি আপনার ঘরের ভেতরেও যুদ্ধের ময়দানে আছেন। মসজিদে বা আপনি কোন সফরে পথ চলছেন, তখনও যুদ্ধের মাঠে আছেন।
শত্রু আজ আপনাকে টার্গেট করছে যেকোন স্থানে। কিভাবে আমাদের অপছন্দনীয়তা সাহাবায়ে কেরামের অপছন্দনীয়তা থেকে কঠিন না হয়ে পারে? অথচ রাসূলের সাহাবাগণের মাঝে সেই বিশাল ঈমান ছিল, যার নাগালও আমরা পাবো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِيْ إِيَاسٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ الأَعْمَشِ قَالَ سَمِعْتُ ذَكْوَانَ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَا تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهُ تَابَعَهُ جَرِيْرٌ وَعَبْدُ اللهِ بْنُ دَاوُدَ وَأَبُوْ مُعَاوِيَةَ وَمُحَاضِرٌ عَنْ الأَعْمَشِ
“আবূ সা’ঈদ খুদরী রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ কর না। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বত পরিমাণ সোনা আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় কর, তবুও তাদের এক মুদ বা অর্ধ মুদ-এর সমপরিমাণ সওয়াব হবে না।” (সহিহ বুখারী – ৩৬৭৩)
আমরা ঈমানের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামের কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছতে পারিনি। এখন যদি জিহাদ তাদের নিকট অপ্রিয় হয়, তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে কী হতে পারে?!
জিহাদের ইবাদতটি পরিশ্রম ও কষ্টের দ্বারা হয়। মন এই কষ্টকে অপছন্দ করে।
وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ
“তোমরা কামনা করছিলে কাঁটাবিহীন দলটি তোমাদের ভাগে আসুক।” (সূরা আনফাল ৮:৭ )
রাসূলের সাহাবীগণ বদর যুদ্ধে আশা করেছিলেন আবু সুফিয়ানসহ ব্যবসায়ী কাফেলাটিকে ধরবেন। তারা যুদ্ধ ও লড়াইয়ের আশা করেননি।
যাইহোক, জিহাদের মধ্যে কষ্ট ও পরিশ্রম আছে। তা সত্ত্বেও এটা করতে হবে। আর এই কষ্ট ও পরিশ্রমসহ জিহাদ বিধিবদ্ধ হয়েছে সর্বাধিক পবিত্রাত্মাদের যুগে, যারা হলেন রাসূলের সাহাবা। এতসব কিছুর পরও সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম তা চালিয়ে গেছেন। তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে (কষ্ট, পরিশ্রম ও অপছন্দের মাত্রা) কেমন হতে পারে?
এর মধ্যে কষ্ট আছে, তা সত্ত্বেও আমল করতে হবে। কেন আমরা কষ্টটার বিষয়ে আলোচনা করছি?
আল্লাহর শপথ! কোন মানুষ বলতে পারবে না যে, জিহাদ আরাম। বরং আরামকে হারামকারী। তবে হ্যাঁ, এটা এমন এক দরজা, যার মাধ্যমে আল্লাহ চিন্তা-পেরেশানি দূর করে দেন। আমরা আমাদের বাড়ি-ঘরে হাজারো চিন্তা-পেরেশানিতে থাকি। এমন চিন্তা, যার চূড়ান্ত সীমা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। প্রত্যেকটি জিনিসই আপনাকে চিন্তায় ব্যস্ত রাখে। কিন্তু জিহাদের মধ্যে আপনার চিন্তা একটাই – আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করা। এটা এমন এক দরজা, যার মাধ্যমে আল্লাহ চিন্তা-পেরেশানি দূর করে দেন।
অন্যান্য চিন্তা-পেরেশানি থাকে। তবে জিহাদের মধ্যে আপনার মূল চিন্তা একটাই। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন ‘ইসলাম ও মুসলিমদের চিন্তা’কে আমাদের একমাত্র চিন্তা বানিয়ে দেন।
জিহাদের প্রকৃতি এমনই। এর মধ্যে কষ্ট আছে। আর যদি বিনিময়ের দিকে তাকান, তবে জিহাদ হল মহান। অর্থাৎ ফরজসমূহের পরে আর কোন ইবাদতকে জিহাদের সমকক্ষ করতে পারবেন না। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ বলেন, “ঈমানের পর কোন ইবাদত জিহাদের সমকক্ষ হতে পারে না”।
জিহাদের সমকক্ষ কিছু হতে পারে না। জিহাদ হল – আল্লাহর জন্য, এই দ্বীনের জন্য এবং দুর্বলকে সাহায্য করার জন্য সব কিছু বিসর্জন দেওয়া। সুতরাং পরিশেষে জিহাদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল – পরিশ্রম, কষ্ট ও ক্লান্তি।
আরেকটি বিষয় হল – এই কষ্টের দ্বারা মহান আল্লাহ আপনাকে সুদৃঢ় করবেন। কত বড় একটি বিষয়!! আর আল্লাহর প্রতি আমাদের সুধারণা হিসেবে আমরা ধারণা করি যে, তিনি আমাদেরকে ভালোবাসেন। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে তার প্রিয়দের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করেন, আমীন।
আজ এই পুরো পৃথিবী আপনার বিরুদ্ধে লেগেছে, এমনকি ভিতর থেকেও আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। কুফফাররা সর্বশক্তি দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আপনার বিরুদ্ধে এমন নোংরা জিনিসসমূহ দিয়ে যুদ্ধ করছে, যার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহর শপথ! কেউ কল্পনাও করতে পারে না।
এতকিছু সত্ত্বেও আল্লাহ আপনাকে সুদৃঢ় রেখেছেন। অর্থাৎ তার মহান সঙ্গ দান করেছেন। আল্লাহর শপথ, এটা ইহাই প্রমাণ করে যে, মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ খুব শীঘ্রই আমাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিবেন। তিনি আমাদেরকে হেফাজত করবেন এবং আমাদেরকে সাহায্য করবেন। আর তিনি তো আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট বি-ইযনিল্লাহ। আমরা কেন “আল্লাহর প্রতি আমাদের সুধারণা হিসাবে” এই কথাটা উল্লেখ করলাম? কারণ আল্লাহ বলেছেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَال رسول الله صلى الله عليه وسلم : « يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ
“আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমি আমার প্রতি বান্দার ধারণা অনুযায়ী আচরণ করি”।” (সহিহ হাদিসে কুদসি – ২৪)
আল্লাহর শপথ, আমরা আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করি। প্রতিটি বিষয়ে ভালোরই ধারণা করি।
তাই আল্লাহর অনুগ্রহে আজও আমরা কল্যাণের মাঝে আছি। এই বিশাল ঘটনাবলীর মধ্যে, আমাদের সঙ্গে আল্লাহর সঙ্গ থাকাটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে তাওফিক দান করেন এবং আমাদেরকে সুদৃঢ় রাখেন। আমীন।

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ (বাংলাদেশ শাখা)
In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]

জুন ৫, ২০২১

০ ৩,৭১৮ ৬ minutes read