আল-হিকমাহ মিডিয়ানির্বাচিতপিডিএফ ও ওয়ার্ডবই ও রিসালাহ [আল হিকমাহ]মিডিয়া

AQ | Bengali Translation | সমসাময়িক জিহাদের অর্থনীতি সম্পর্কিত একটি ফিকহী মাসআলার বিশ্লেষণ [উম্মাতুন ওয়াহিদাহ দ্বিতীয় সংখ্যার উ&


مؤسسة الحكمة
আল হিকমাহ মিডিয়া
Al-Hikmah Media

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled

هدية العدد الثاني لمجلة : أمة واحدة ٢
تحرير مسألة فقهية من نوازل الأموال في الجهاد المعاصر

সমসাময়িক জিহাদের অর্থনীতি সম্পর্কিত একটি ফিকহী মাসআলার বিশ্লেষণ
[উম্মাতুন ওয়াহিদাহ ম্যাগাজিন-দ্বিতীয় সংখ্যার উপহার।]

An analysis of a jurisprudential masala on the economics of contemporary jihad
[Gift of Ummatun Wahidah Magazine-Second Issue.]


بقلم الالم الشهيد أبي يحيى الليبي رحمه الله
শহীদ শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল-লিবী (রহিমাহুল্লাহ)
By Shohid Sheikh Abu Yahya Al-Libi (Rohimahullah)

 

 

 

للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading

লিংক-১ : https://web.archive.org/web/20210409…ft_one_ummah-2
লিংক-২ : https://web.archive.org/web/20210409…121e57cf54999e

روابط بي دي اب
PDF (364 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৩৬৪ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/TKfwjb7iomz83oW
লিংক-২ : https://archive.org/download/baitul-maler-masala-saikh-abu-yahya/BaitulMalerMasala%20-%20SaikhAbuYahya.pdf
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/33fcce7a-6ff6-47ac-a402-7676f39d255b/fa5b5446e88ad38ad722d213e921029a4c8b3b8836561186909eee436d495bf3
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy1979e189ec674aa2ade14fa2f715108e
লিংক-৫ : https://f004.backblazeb2.com/file/OneUmmahorUpohar/BaitulMalerMasala.pdf
লিংক-৬ : https://download.ru/files/KVBD9myc

 


روابط ورد
Word (500 KB)
ওয়ার্ড [৫০০ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/w2BMZf2JKF8qTZP
লিংক-২ : https://archive.org/download/baitul-maler-masala-saikh-abu-yahya/BaitulMalerMasala%20-%20SaikhAbuYahya.docx
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/38a8f0c0-22d4-4511-b288-0131e4d5bc41/3045868a7c9bd1c147b0b924588c1fefa1db6c04a5132dd9360cda09e3abc10c
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qyff02a5987ce14b62a9b372eff45c9d74
লিংক-৫ : https://f004.backblazeb2.com/file/OneUmmahorUpohar/BaitulMalerMasala.docx
লিংক-৬ : https://download.ru/files/Bi8ipQy5

روابط الغلاف- ١
book Banner [312 KB] বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [৩১২ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/RE8scqr5Q7eAMAo
লিংক-২ : https://archive.org/download/baitul-maler-masala-saikh-abu-yahya/orothoni-fikhi-masala-update1.jpg
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/541a4ea7-73e6-4618-8939-c453a66f3b6c/f33fdf1e0ccb10e5cd26ec1bdf299784e841276ecb882318c28b857461ab7b1a
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy40230281589d46dda507fa8b9bfdff0a
লিংক-৫ : https://f004.backblazeb2.com/file/OneUmmahorUpohar/BaitulMalerMasala+Cover.jpg
লিংক-৬ : https://download.ru/files/nTy89Hn3

روابط الغلاف- ٢
Banner [78 KB] ব্যানার ডাউনলোড করুন [৭৮ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/7GR4z2j9Abk8Kwb
লিংক-২ : https://archive.org/download/baitul-maler-masala-saikh-abu-yahya/orothoni-fikhi-masala-banner.jpg
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/7b8e6b1d-ba8a-41e3-acfb-1959add53254/f3c66995dec1c2f5965fd2067ccb3d4ad75e3e22e8b904e7ccbe00b2d9ccb64f
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy473a31d6073a4267b2fc030e02c18019
লিংক-৫ : https://f004.backblazeb2.com/file/OneUmmahorUpohar/BaitulMalerMasala+Banner.jpg
লিংক-৬ : https://download.ru/files/mOiIH66t

===============================

সমসাময়িক জিহাদের অর্থনীতি সম্পর্কিত একটি ফিকহী মাসআলার বিশ্লেষণ

[উম্মাতুন ওয়াহিদাহ ম্যাগাজিনদ্বিতীয় সংখ্যার উপহার]

মূল

শহীদ শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল-লিবী

(রহিমাহুল্লাহ)

 

অনুবাদ
আনাস আব্দুল্লাহ

[আলিম, শিক্ষক ও দাঈ]

 

সম্পাদনা

আল হিকমাহ সম্পাদনা বোর্ড

 

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ.

প্রশ্ন: আমি একবার আপনাদেরকে প্রশ্ন করেছিলাম, সচ্ছল মুজাহিদের জন্য জিহাদের বাইতুল মাল থেকে কাফালাহ গ্রহণের বৈধতা প্রসঙ্গে এবং বাইতুল মাল থেকে কাফালাহ গ্রহণকারী কোন মুজাহিদ যদি ভবিষ্যতের আকস্মিক প্রয়োজনের জন্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করে রাখে, তাহলে সেটা জায়েয হবে কি না।

আপনারা উত্তর দিয়েছিলেন উভয় বিষয়ই জায়েয। কিন্তু পরবর্তীতে ভাই আতিফ পাকিস্তানী আমাকে শাইখ ডক্টর আব্দুল্লাহ আযযামের একটি প্রবন্ধের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রবন্ধটির নাম হল, “ফিলজিহাদি ফিকহুন ওয়া ইজতিহাদুন”। উক্ত প্রবন্ধে শাইখ এ সংক্রান্ত মাসআলাগুলো নিয়ে বিভিন্ন রকম আলোচনা করেছেন এবং মুজাহিদগণের উপর এ ব্যাপারটা কঠিন করে ফেলেছেন।

উত্তর: আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন, এ বিষয়ে লক্ষ্য করার জন্য এবং দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। যদিও আমি মনে করতে পারছি না যে, আমি আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়ে জায়েয হওয়ার ব্যাপারে পরিস্কার কিছু বলেছি। তবে আমি এক্ষেত্রে আমার স্মরণশক্তিকেই দোষারোপ করি, বেশি বেশি ভুলে যাওয়ার জন্য। আল্লাহই একমাত্র আশ্রয়।

শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ যা বলেছেন, সেটা আমি একাধিকবার পড়েছি। কোন সন্দেহ নেই যে, তিনি এক্ষেত্রে চূড়ান্ত কঠোরতা আরোপ করেছেন। আমার মনে হয় না পূর্বের বা বর্তমানের কোন মুজাহিদ, তিনি যা উল্লেখ করেছেন; তা মেনে চলেন। তার অধিকাংশ মাসআলাগুলোই এমন যে, তা কেবল দৃঢ় চিত্তের লোকেরাই মানতে পারবে, যাদের সংখ্যা নিতান্তই নগন্য। বিশেষ করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার খরচ আর পোষাক, জুতা ও খাবারের খরচের মাসআলাগুলোর ক্ষেত্রে। চাই সেটা মারকাজে হোক বা মেহমানখানায় হোক বা সেনাক্যাম্পে হোক।

বরং মুজাহিদগণের মধ্যে যেটার উপর আমল হচ্ছে, তা হল: বেশিরভাগ সময় সাধারণভাবে যে অর্থ লাভ হয়, সেটা থেকেই মুজাহিদ ভাইদের খোরপোষের যিম্মাদারি পালন ও যুদ্ধবিষয়ক প্রয়োজনাদি পূরণ করা হয়। তবে কতিপয় মুজাহিদ আছেন, আংশিকভাবে বা পরিপূর্ণভাবে নিজেরাই নিজেদের সবকিছুর ব্যবস্থা করেন। আর বেশির ভাগ সময় এটা ব্যয়িত হয় মুজাহিদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার ক্ষেত্রেই। অন্যক্ষেত্রে হয় না।

কিছু কিছু গ্রুপ, যারা তাদের সদস্যদের বাইতুল মাল থেকে নির্ধারিত ভাতা দিয়ে থাকে, তারা তাদের সদস্যদের উপর এই শর্তারোপ করেন যে, তারা (মুজাহিদরা) তাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় কিছু কিছু আসবাব ক্রয়ের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিবেন, যেমন অস্ত্র বা এ জাতীয় বস্তুসমূহ। এটা হল তাদের বাইতুল মালের সচ্ছলতা বা সংকটের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। এটা আপনাদের জানা আছে। এই নিয়মটাই মুজাহিদগণের মাঝে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে আমরা যে ময়দানে আছি সেখানে। তাই-

প্রথমত:

এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, মুসলমানদের সম্পদের উপরও জিহাদ ফরজে আইন হয়, যেমনিভাবে তাদের জানের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়। আর ওটার মত এটারও প্রয়োজন আছে। বরং অনেক সময় মানুষের চেয়ে অর্থের প্রয়োজনই বেশি হয়। আর আল্লাহর কিতাবের মধ্যেও অনেকবার মুসলিমগণকে উভয়টার প্রতি একসাথে আদেশ করা হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াতে জানের মাধ্যমে জিহাদ করার আগে মালের মাধ্যমে জিহাদ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটি আয়াত ব্যতিত।

যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন:

انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿التوبة: ٤١﴾

“তোমরা (জিহাদের জন্য) বের হয়ে পড়, হালকা অবস্থায় থাক বা ভারি অবস্থায় এবং নিজেদের জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ কর তোমাদের যদি বুঝ থাকে, তবে এটাই তোমাদের জন্য উত্তম” (সূরা তাওবা ৯:৪১)

ইমাম ওয়াহিদী বলেন: এটা প্রমাণ করে যে, সম্পদশালী ব্যক্তি যদি অচল বা অসুস্থ হওয়ার কারণে শরীরের মাধ্যমে জিহাদ করতে অক্ষম হয়, তথাপি তার উপর সম্পদের মাধ্যমে জিহাদ ফরজ থাকে। তাই শরীরের মাধ্যমে জিহাদ করার মত, মালের মাধ্যমে জিহাদ করাও ওয়াজিব হয়। (আত-তাফসীরুল ওয়াসিত- ২/৫০০)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরো বলেন:

لَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَن يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ ﴿التوبة: ٤٤﴾

যারা আল্লাহ শেষ দিবসে ঈমান রাখে, তারা নিজেদের জান মাল দ্বারা জিহাদ না করার জন্য তোমার কাছে অনুমতি চায় না আল্লাহ মুত্তাকীদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন” (সূরা তাওবা ৯:৪৪)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরো বলেন:

إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ ﴿التوبة: ٤٥﴾

তোমার কাছে অনুমতি চায় তো তারা, যারা আল্লাহ শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং তাদের অন্তর সন্দেহে নিপতিত এবং তারা নিজেদের সন্দেহের ভিতর দ্যোদুল্যমান” (সূরা তাওবা ৯:১৫)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ﴿ جَاهِدُوا الْمُشْرِكِينَ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ وَأَلْسِنَتِكُمْ

তোমরা মুশরিকদের বিরদ্ধে জিহাদ করো তোমাদের সম্পদ দিয়ে, জীবন দিয়ে এবং যবান দিয়ে” (মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, সুনানুন নাসায়ী, সুনানুদ দারিমী মুসতাদরাকে হাকিম)

এছাড়া জিহাদে অর্থের যোগানদাতাকেও একজন যোদ্ধা হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। যেমন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ﴿مَنْ جَهَّزَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَقَدْ غَزَا وَمَنْ خَلَفَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِخَيْرٍ فَقَدْ غَزَا﴾

যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের মুজাহিদের অর্থের যোগান দিল, সে নিজেই যুদ্ধ করল এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের মুজাহিদের পরিবারকে কল্যাণের সাথে দেখাশোনা করল, সেও নিজেই যুদ্ধ করল

জিহাদ ফরজ হওয়ার জন্য উলামায়ে কেরাম যেমনিভাবে শারীরিক সামর্থ্য থাকার শর্ত করেন, তেমনিভাবে আর্থিক সামর্থ্য থাকাও শর্ত করেন। যেহেতু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তার নিম্নোক্ত বাণীতে উভয়টাকেই অন্তর্ভুক্ত করেছেন-

لَّيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلَا عَلَى الْمَرْضَىٰ وَلَا عَلَى الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ مَا يُنفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِن سَبِيلٍ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ﴿التوبة: ٩١﴾ وَلَا عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوا وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا مَا يُنفِقُونَ ﴿التوبة: ٩٢﴾

দুর্বল লোকদের (জিহাদে না যাওয়াতে) কোন গুনাহ নেই এবং পীড়িত সেই সকল লোকেরও নয়, যাদের কাছে খরচ করার মত কিছু নেই যদি তারা আল্লাহ তার রাসূলের প্রতি অকৃত্রিম থাকে সৎ লোকদের সম্পর্কে কোন অভিযোগ নেই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আর সেই সকল লোকেরও (কোন গুনাহ) নেই, যাদের অবস্থা এই যে, যখনতুমি তাদের জন্য কোন বাহনের ব্যবস্থা করবে এই আশায় তারা তোমার কাছে আসল আর তুমি বললে, আমার কাছে তো তোমাদেরকে দেওয়ার মত কোন বাহন নেই, তখন তাদের কাছে খরচ করার মত কিছু না থাকার দু:খে তারা এভাবে ফিরে গেল যে, তাদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল(সূরা তাওবা ৯: ৯১,৯২)

এ কারণেই আর্থিক জিহাদ কখনো কখনো নারী ও শিশুদের উপরও ফরজে আইন হয়ে যায়। যদিও তাদের উপর জানের মাধ্যমে জিহাদে অংশগ্রহণ ফরজ নয়, যেমনটা একাধিক উলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন:

উলামায়ে কেরামের দুই মতের বিশুদ্ধতম মতানুযায়ী জানের মাধ্যমে জিহাদ করতে অক্ষম ব্যক্তির উপর মালের মাধ্যমে জিহাদ করা ফরজ হবে। এটা ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত দুই মতের এক মত। কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআনের একাধিক স্থানে সম্পদের মাধ্যমে এবং জানের মাধ্যমে জিহাদ করতে আদেশ করেছেন। আর আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ ﴿التغابن: ١٦﴾

তোমরা যতটুকু সামর্থ্য রাখ, সে অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় করো(সূরা তাগাবুন ৬৪:১৬)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি যখন তোমাদেরকে কোন আদেশ করি, তখন তোমরা তোমাদের সামর্থ্যানুযায়ী তা পালন করো। ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহিমাহুমাল্লাহ হাদিসটি তাদের সহীহে উল্লেখ করেছেন।

এ কারণে যে ব্যক্তি শরীরের মাধ্যমে জিহাদ করতে অক্ষম হয়, তার থেকে সম্পদের মাধ্যমে জিহাদ করা মাফ হবে না। যেমনিভাবে কেউ সম্পদের মাধ্যমে জিহাদ করতে অক্ষম হলে তার থেকে শরীরের মাধ্যমে জিহাদ করা মাফ হয় না।

শাইখুল ইসলাম ‍ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ আরো বলেন:

যে ব্যক্তি শরীরের মাধ্যমে জিহাদ করতে অক্ষম হয়, কিন্তু মালের মাধ্যমে জিহাদ করতে সামর্থ্যবান হয়, তার উপর মালের মাধ্যমে জিহাদ করা আবশ্যক হবে।

আবুল হাকামের বর্ণনানুযায়ী এটা ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ’র হুবহু বক্তব্য। কাযী ইয়ায রহিমাহুল্লাহও তার আহকামুল কুরআনের সূরা তাওবার انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا আয়াতের তাফসীরে এটাকেই অকাট্য সাব্যস্ত করেছেন।

এ কারণে সম্পদশালীদের উপর আল্লাহর পথে জিহাদে খরচ করা ফরজ। তাই নারীদের উপরও তাদের সম্পদের মাধ্যমে জিহাদ করা ফরজ, যদি অতিরিক্ত থাকে। এমনিভাবে পরিস্থিতি অনুযায়ী শিশুদেরও মালের মাধ্যমে জিহাদ করা ফরজ হবে, যেভাবে যাকাত ও অন্যান্য খরচাদি প্রদান করা ফরজ হয়।

সম্ভবত দুই রকম মতামত হল ফরজে কিফায়ার ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে যখন শত্রু আক্রমণ করে, তখন তো দ্বিমতের কোন সুযোগই থাকতে পারে না। কারণ দ্বীন, জীবন ও সম্মানের উপর আক্রমণ ঠেকানোর জন্য তাদেরকে প্রতিহত করা সর্বসম্মতভাবে ফরজ। (আল ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যাহ: ৬০৭)

এ আলোচনার পর তিনি যা লিখেছেন সেটাও পড়া উচিত। কারণ, তাতে অনেক উপকারিতা, সূক্ষ্ম বিষয়াবলী ও গভীর ফিকহ রয়েছে, যা মুজাহিদগণের জন্য প্রয়োজন।

তাঁর বক্তব্যে- পক্ষান্তরে যখন শত্রু আক্রমণ করে বসে – এটা প্রমাণ করে যে, শত্রু মুসলিম দেশে আক্রমণ করলে তখন মালের মাধ্যমে জিহাদ ফরজ হওয়াটা সর্বসম্মত, যাতে তাদের ক্ষতি প্রতিহত করা ও তাদের অনিষ্টতা ঠেকানো যায়।

এ ধরণের আক্রান্ত এলাকায় জিহাদ ফরজে আইন হওয়ার উপর যে ইজমা হয়েছে, সেই ইজমা থেকেই এটাও অনুমিত হয়। কতিপয় উলামা এটাকেই নাফিরে আম বলে অভিহিত করেন। এ বিষয়টি একেবারে সুস্পষ্ট। কারণ ফরজ বিধান যেটা ছাড়া সম্পন্ন হয় না, সেটাও ফরজই হয়। তবে সম্ভবত এ মাসআলার প্রয়োগক্ষেত্র হল ওই সময়, যখন বাইতুল মাল থাকে না বা তা শূণ্য থাকে অথবা তার অর্থ দিয়ে জিহাদের প্রয়োজন মিটে না।

তবে এর কারণে সম্পদশালী মুসলিমের উপর নিজেকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করা ওয়াজিব হতে কোন বাধা নেই। যেমন ইমাম সারাখসী রহিমাহুল্লাহ তার এক আলোচনার মাঝে বলেন:

“তবে যখন বাইতুল মালে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকে, তখন তো উক্ত মাল ইমামের হাতে এ ধরণের প্রয়োজনগুলোর জন্য রাখা হয়েছে। তাই ইমামের উপর আবশ্যক হবে এ কাজে উক্ত মাল খরচ করা। আর তার জন্য মুসলমানদের থেকে নতুন করে মাল গ্রহণ করা জায়েয হবে না। যেহেতু তার হাতে যা আছে, তাতেই যথেষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এমনিভাবে যদি যোদ্ধা সম্পদশালী হয়, তাহলে তার তো অন্যের থেকে সম্পদ গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই। আর জিহাদ পরিপূর্ণ হয় জান ও মালের দ্বারা। এছাড়া যদি সে এই অবস্থায় অন্যের থেকে মাল গ্রহণ করে, তাহলে তার কাজটা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করে এমন ব্যক্তির মত হয়ে যাবে। তখন তার জিহাদ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য হবে না।” (মাবসূত ১০/৭৫)

ইমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ বলেন: “যেসকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনের কারণে মাল খরচ করা ফরজে আইন হয়ে যায় – তার মধ্যে একটি হল জিহাদ। যখন জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায়, তখন প্রয়োজন থাকলে মাল খরচ করা ফরজে আইন হয়ে যায়। উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, যাকাত আদায় করার পরেও যদি মুসলমানদের আকস্মিক কোন প্রয়োজন এসে যায়, তখন তাতে মাল খরচ করা ফরজ হয়ে যাবে। ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ বলেন: সকল মুসলমানের উপর তাদের বন্দীদের মুক্ত করা ফরজে আইন, যদিও তাতে তাদের সমস্ত মাল খরচ হয়ে যায়। এটা ইজমাও বটে।” (তাফসীরে কুরতুবী /২৪২)

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ গাযওয়ায়ে তাবুক থেকে শিক্ষণীয় মাসআলাসমূহের মধ্যে বলেন: “মালের মাধ্যমেও জিহাদ ফরজ হয়, যেমনিভাবে জানের মাধ্যমে ফরজ হয়। এটা ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত দুই মতের একটি। এটিই সঠিক, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। কারণ কুরআনে জিহাদ বিল-মালের ব্যাপারটি জিহাদ বিন নাফসের সহোদর ও সঙ্গীর মত এসেছে। বরং প্রতিটি জায়গায় জিহাদ বিন নাফসের আগে এটার কথা এসেছে, শুধুমাত্র এক জায়গা ব্যতিত। এটাই প্রমাণ করে যে, জিহাদ বিল-মাল, জিহাদ বিন নাফসের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী। আর এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা দুই প্রকারের জিহাদের এক প্রকার। যেমন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে কোন মুজাহিদকে আসবাব পত্র যোগাড় করে দিল, সে নিজেই জিহাদ করল। সুতরাং যে ব্যক্তি এটা করতে সামর্থ্যবান; তার উপর এটা ফরজ হবে, যেমনিভাবে যে ব্যক্তি শরীরেরর মাধ্যমে জিহাদ করতে সামর্থ্যবান হয়; তার উপর শরীরের মাধ্যমে জিহাদ করা ফরজ হয়।

আর মাল খরচ করা ব্যতিত শুধুমাত্র শরীরের মাধ্যমে জিহাদ সম্পাদন করা যায় না। সৈন্য ও রসদ ব্যতিত যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায় না। তাই কেউ ‍যদি নিজে মুসলিম বাহিনীতে উপস্থিত হয়ে সৈন্যসংখ্যা বাড়াতে না পারে, তাহলে তার উপর মাল ও রসদের মাধ্যমে সাহায্য করা আবশ্যক হয়ে যাবে। যখন শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির উপর মালের মাধ্যমে হজ্জ করা ফরজ হয়ে যেতে পারে, তখন মালের মাধ্যমে জিহাদ ফরজ হওয়া তো আরো অধিক উপযুক্ত ও যুক্তিসঙ্গত।” (যাদুল মাআদ: /৪৮৮)

 

দ্বিতীয়ত:

যখন এটা প্রমাণিত হয়ে গেল যে, জিহাদ বিন নাফসের মত জিহাদ বিল-মালও ফরজ এবং প্রয়োজন পড়লে বা বাইতুল মাল জিহাদ পরিচালনার প্রয়োজনীয় অর্থে ঘাটতি থাকলে, মালের মাধ্যমেও জিহাদ করা ফরজ হয়ে যায়, বিশেষ করে জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যাওয়ার সময়। তাই ধনী ও সম্পদশালী মুসলমানদের উপর তাদের মাল খরচ করা আবশ্যক হবে যতক্ষণ না প্রয়োজন পূরণ হয়।

এখন প্রশ্ন থেকে যায়: একজন মুসলিমের উপর কী পরিমাণ মাল জিহাদের পথে খরচ করা ফরজ, যার মাধ্যমে সে যিম্মামুক্ত হতে পারে এবং মালের মাধ্যমে জিহাদকারী হিসাবে গণ্য হতে পারে? আর কী পরিমাণ সম্পদ গচ্ছিত রাখা হারাম?

উত্তর: এ ধরণের অবস্থায় আর্থিক জিহাদ উম্মতের সমষ্টির উপর ফরজ হয়, যেমনটা শারীরিক জিহাদের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। তাই কিছু লোক যখন খরচ করার ক্ষেত্রে ত্রুটি করে এবং তাদের সর্বনিম্ন কর্তব্য পালনে অবহেলা করে, তখন তো জিহাদের জন্য অর্থের প্রয়োজন অব্যাহতভাবে থেকেই যায় এবং তার দাবিও বাকি থাকে। এখন কথা হল, কিছু লোক যদি তাদের উপর ফরজ হওয়া অর্থ খরচ করার ক্ষেত্রে ত্রুটি করে, তাহলে এর কারণে কি ঐ সকল লোক থেকে দ্বিগুণ দাবি করা হবে কি না, যারা সামষ্টিকভাবে তাদের উপর শুরুতে যা আবশ্যক হয়েছিল তা আদায় করে ফেলেছে? ফলে ত্রুটিকারী তার কমতির কারণে গুনাহগার হবে, আর খরচকারীকে আরো অধিক খরচ করতে বলা হবে এবং অন্যরা যেটুকু কার্পণ্য করেছে তা পূরণ করতে বলা হবে? নাকি সে সময় তার উপর ওয়াজিব হল, নিজের সামান নিজেই ব্যবস্থা করা আবশ্যকীয়ভাবে, আর অন্যের সামানের ব্যবস্থা করা ঐচ্ছিকভাবে?

কিন্তু তাতে তো পুরো উদ্দেশ্য সাধন হবে না এবং পরিপূর্ণ লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে না, যা হল জিহাদকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করা, যার মাধ্যমে শত্রুর ক্ষতি প্রতিহত করা যায় এবং মুসলমানদের দ্বীন ও দুনিয়া হেফাযত করা যায়।

ইমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ বলেন: “যদি বলা হয়, যখন সকলে গাফলতি করে, তখন একজন কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে? উত্তরে বলা হবে: সে একজন বন্দীর মুক্তিপণ আদায় করার চেষ্টা করবে। সে যখন একজনের মুক্তিপণ আদায় করল, তখন তো পুরো জামাতের সাথে তার উপর যা আবশ্যক হত, তার চেয়ে বেশিই আদায় করে দিল। কারণ ধনীরা যদি বন্দীদেরকে ভাগাভাগি করে নিত, তাহলে প্রত্যেককে এক দিরহামেরও কম আদায় করতে হত। আর সামর্থ্যবান হলে সে নিজে যুদ্ধ করবে। অসমর্থ হলে কোন যোদ্ধাকে সামানের ব্যবস্থা করে দিবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে কোন যোদ্ধাকে সামানের ব্যবস্থা করে দিল, সে যেন নিজেই যুদ্ধ করল। আর যে যোদ্ধার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারকে ভালোভাবে দেখাশোনা করল, সেও যেন নিজেই যুদ্ধ করল। (বুখারী) এটা এ কারণে যে, তার একা অবস্থান করা বা তার একার সম্পদ তো যথেষ্ট হবে না।” (তাফসীরে কুরতুবী: ৫৮/১৫২)

ইমাম ইবনুল আরবীও এমনই উল্লেখ করেছেন। আর তিনি কুরতুবীর পূর্বের।

এখানে দায়মুক্তির জন্য মুসলিম বন্দীদের মধ্য হতে একজন বন্দীর মুক্তিপণ আদায় করার শর্ত করা হয়েছে। ব্যয়িত মালের কোন পরিমাণ শর্ত করা হয়নি। এর মাধ্যমে জিহাদের উদ্দেশ্যগুলোর একটা অংশ অর্জন করা যায়। তারা আরো বৃদ্ধি করেছেন যে, তার নিজেরও জিহাদে অংশগ্রহণ করা আবশ্যক। তাদের উদ্দেশ্য হল, নিজেকে যুদ্ধের প্রয়োজনীয় আসবাব পত্রসহ প্রস্তুত করা, অতপর যুদ্ধ করা। সুতরাং তারপর ফরজে আইন হুকুম হল নিজেকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা। কারণ তাঁরা এর পরে বলেছেন: অন্যথায় একজন যোদ্ধাকে প্রস্তুত করে দিবে। অর্থাৎ যদি নিজে স্বশরীরে জিহাদ করতে না পারে, তাহলে তার উপর আবশ্যক হবে একজন যোদ্ধাকে আসবাব-পত্রের ব্যবস্থা করে দেওয়া।

সুতরাং সারকথা এটাই দাঁড়ায় যে, যখন ব্যক্তি নিজের জান ও মালের মাধ্যমে জিহাদ করতে পারে, তখন তার উপর অন্যের সামানের ব্যবস্থা করা আবশ্যক হবে না। আর তিনি তার বক্তব্যের শেষাংশের মাধ্যমে এর কারণ বর্ণনা করেছেন যে, তার একার অবস্থান তো যথেষ্ট হবে না। অর্থাৎ সে একা স্বশরীরে জিহাদে অংশগ্রহণ করাই তো যথেষ্ট নয়। সুতরাং তার একার অবস্থান পুরো মুসলিম বাহিনীর জন্য এবং শত্রুবাহিনীকে দমন করার জন্য যথেষ্ট নয়; আর সম্পদও সকলের জন্য যথেষ্ট নয়। এ স্থানটি গভীরভাবে বুঝার স্থান।

তৃতীয়ত:

জিহাদ বিল-মালের অর্থ হল – মুজাহিদ নিজের জিহাদের জন্য প্রয়োজনীয় সামানপত্রের ব্যবস্থা করবে অথবা জিহাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র, রসদ, বাহন, পোষাক ও অন্যান্য বস্তুসামগ্রী প্রদান করবে অথবা কোন যোদ্ধাকে প্রস্তুত করবে এবং তার জিহাদ সম্পাদনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সব ব্যবস্থা করে দিবে।

যেমন আল্লামা কাসিমী রহিমাহুল্লাহ বলেন: “ইমাম হাকিম রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, জিহাদ বিল-মাল কয়েক প্রকার: তন্মধ্যে একটি হল জিহাদের সফরে নিজের জন্য খরচ করা। আরেকটি হল, জিহাদের সহায়ক অস্ত্র-সামগ্রী ক্রয়ের জন্য মাল খরচ করা অথবা তার প্রতিনিধি ও তার সাথে গমনকারীর জন্য খরচ করা।” (মাহাসিনুত তাওয়ীল: ৫/৪২২)

ইমাম আবু বকর আল-জাসসাস রহিমাহুল্লাহ বলেন: “জিহাদ বিল-মাল দু’ধরণের হতে পারে:

এক. মুজাহিদ নিজের জন্য প্রয়োজনীয় বর্ম, অস্ত্র, বাহন, পাথেয় ও এ জাতীয় সামগ্রী ক্রয় করবে।

দুই. অন্য কোন মুজাহিদের জন্য মাল খরচ করবে, তাকে জিহাদী সফরের পাথেয় ও অন্যান্য সামানপত্র ব্যবস্থা করে দিবে।” (আহকামুল কুরআন: ৪/৩১৮)

শাইখুল ইসলাম রহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেছেন: “শাস্তিবাণী প্রযোজ্য হবে সে সকল লোকদের ক্ষেত্রে, যারা সম্পদ সঞ্চয় করে রেখে জিহাদের প্রয়োজনের সময় খরচ করে না। এটা সকলেরই জানা কথা যে, এই শাস্তিবাণী কেবল ওয়াজিব পরিত্যাগকারী ও হারামে লিপ্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ কারণে জিহাদে মাল খরচ করার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তাতে খরচ না করে মাল সঞ্চয় করে রাখা হারাম। শাইখ রহিমাহুল্লাহ বলেন: কেননা, আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তা‘আলা মুসলমানদের উপর জান ও মালের মাধ্যমে জিহাদ ফরজ করেছেন। আর জিহাদ প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের উপর ফরজ। যে নিজে স্বশরীরে জিহাদ করতে সক্ষম নয়, তাকে তার মালের মাধ্যমে জিহাদ করতে হবে, যদি তার খরচ করার মত মাল থাকে। কারণ আল্লাহ মালের মাধ্যমে এবং জানের মাধ্যমে জিহাদ ফরজ করেছেন। সুতরাং যে বাদশা, আমীর, শাইখ, আলেম, ব্যবসায়ী, কর্ম্মকার, সৈন্য বা যেকোন ধরণের মুসলিম জিহাদে মাল খরচের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও খরচ না করে মাল সঞ্চয় করে, সে আল্লাহর এই আয়াতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ كَثِيرًا مِّنَ الْأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ﴿التوبة: ٣٤﴾ يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ ﴿التوبة: ٣٥﴾

“হে মুমিনগণ (ইহুদী) আহবার ও (খৃষ্টান) রাহিবদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে, যারা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভোগ করে এবং অন্যদেরকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে। যারা সোনা-রূপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তির সুসংবাদ দাও। সেদিন এই ধন-সম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর তা দ্বারা তাদের কপাল, তাদের পাঁজর ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে (এবং বলা হবে) এই হচ্ছে সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যে সম্পদ পুঞ্জীভূত করতে তার মজা ভোগ কর।” (সূরা তাওবা ৯:৩৪-৩৫)

বিশেষ করে, যদি সম্পদটা বাইতুল মালের সম্পদ হয় অথবা সুদ ও অন্যান্য হারাম পন্থায় হয় অথবা এমন মাল, যার যাকাত প্রদান করা হয়নি এবং তার থেকে আল্লাহর হক বের করা হয়নি।” (জামিউল মাসায়িল: ৫/২৯৮)

সুতরাং তার বক্তব্য – ‘যে জিহাদের প্রয়োজনের সময়ও মাল সঞ্চয় করে রাখে’ – এ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, যে পরিমাণ মাল জিহাদের জন্য প্রয়োজন (তা পূরণ হওয়া ব্যতিত) সঞ্চয় করে রাখা জায়েয নেই। আর যার এ পরিমাণ মাল আছে – যার দ্বারা সে নিজে জিহাদ করতে পারে এবং তার পরিবারের খরচ চালাতে পারে – তার উপর তার মাধ্যমেই জিহাদ করা ফরজ। কারণ যদি অন্যের জিহাদে সাহায্য করার জন্য সম্পদ জমা করে রাখতে নিষেধ করা হয়, তাহলে নিজের ক্ষেত্রে তো এটা আরও আগেই প্রযোজ্য হবে, যদি সে ওযরগ্রস্ত না হয়। কখনো কখনো একজন লোকের উপর নিজ জান ও মাল উভয়টার মাধ্যমে জিহাদ করা ফরজে আইন হয়ে যায়। আর কখনো অবস্থা অনুযায়ী কোন একটার মাধ্যমে ফরজ হয়।

আবু বকর আল-জাসসাস আল-হানাফী রহিমাহুল্লাহ বলেন: “সুতরাং এ আয়াত জান-মাল উভয়টার মাধ্যমে জিহাদ ফরজ হওয়া সাব্যস্ত করে। সুতরাং যার সম্পদ আছে, কিন্তু সে অসুস্থ, অচল বা এমন দুর্বল যে, জিহাদ করার উপযুক্ত নয়, তাহলে তার উপর মাল দ্বারা জিহাদ করা আবশ্যক। অর্থাৎ অন্যকে এই সম্পদ দিবে, যাতে সে তার মাধ্যমে জিহাদ করতে পারে। তেমনিভাবে কারো যদি শক্তি-সামর্থ্য থাকে এবং জানের মাধ্যমে জিহাদ করা সম্ভব হয়, তাহলে তার উপর জানের মাধ্যমে জিহাদ করা আবশ্যক। চাই সে সম্পদশালী না হোক। তবে শর্ত হল জিহাদে পৌঁছার মত অর্থ কারো মাধ্যমে যোগাড় হতে হবে। আর যে জানের মাধ্যমেও জিহাদ করার শক্তি রাখে, আবার তার সম্পদও আছে, তার উপর জান ও মাল উভয়টার মাধ্যমে জিহাদ করা আবশ্যক হবে। আর যে শারীরিকভাবে অক্ষম, আবার একেবারে রিক্তহস্তও, তার উপরও আবশ্যক হবে – আল্লাহ ও তার রাসূলের কল্যাণ কামনা করার মাধ্যমে জিহাদ করা।” (আহকামুল কুরআন: ৪/৩১৬)

ইমাম ইবনুল জাওযী রহিমাহুল্লাহ এ ধরণের বক্তব্য কাযী আবু ইয়ালা আল-হাম্বলী থেকেও বর্ণনা করেছেন। এর জন্য যাদুল মাসির: ২/২৬৩ দেখতে পারেন।

সুতরাং উল্লেখিত আলোচনাগুলোর সমষ্টি থেকে এই সারকথা পাওয়া গেল যে, জিহাদ বিল-মাল, জিহাদ বিন-নাফসেরই সাথী। বরং কুরআনের বর্ণনায় এটিই আগে এবং এর প্রয়োজনও জিহাদ বিন-নাফসের আগে। প্রথমটি ব্যতিত দ্বিতীয়টি সম্ভবই নয়। আরো জানা গেল যে, জিহাদ বিল-মাল, শারীরিক জিহাদে অক্ষম ব্যক্তির উপরও ফরজে আইন হয়। শুধু তাই নয়, যাদের উপর শারীরিক জিহাদ একেবারেই ফরজ নয়, সেই নারী-শিশুদের উপরও এটি ফরজ। এমনিভাবে একজন ব্যক্তির উপর যেমনিভাবে শারীরিক জিহাদ ফরজ, তেমনিভাবে তার উপর আর্থিক জিহাদও ফরজ। তার ক্ষেত্রে জিহাদ বিল-মালের অর্থ হল, সে জিহাদে তার প্রয়োজনীয় আসবাবসমূহের ব্যবস্থা করবে অথবা অন্যের জন্য তার ব্যবস্থা করবে, যেমন নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির জন্য আসবাবের ব্যবস্থা করে দিল। অথবা তার সম্পদ দিয়ে জিহাদ ও মুজাহিদদের প্রয়োজনীয় রসদ, অস্ত্র, বাহন ও এ জাতীয় বস্তুসমূহ ক্রয় করে দিল। আর এটা হল, যখন জিহাদের জন্য এর প্রয়োজন পড়বে। সুতরাং সে সময় তার জন্য সম্পদ জমা করে রাখা হারাম হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োজন পূর্ণ না হবে।

বাকি থেকে যায়: কী পরিমাণ মাল খরচ করা ফরজ, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে পারবে এবং যার পরে আর তার থেকে চাওয়া হবে না। অর্থাৎ এটা হল একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে।

এমনিভাবে কী পরিমাণ মাল জমা করা জায়েয, যার বেশি করলে জায়েয হবে না? এবং লোকজন যদি ফরজ মালি জিহাদের ক্ষেত্রে ত্রুটি করে তাহলে কি যারা খরচ করল; তাদের থেকে কয়েকগুণ চাওয়া হবে?

এ ব্যাপারে ইমামদের পূর্বে উল্লেখিত বক্তব্য থেকে যা বুঝা যায়, বিশেষ করে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ এর বক্তব্য থেকে, তা হল: বিষয়টা জিহাদে সম্পদের প্রয়োজনীয়তার সাথে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং যতক্ষণ প্রয়োজন বাকি থাকবে, আর সামর্থ্যও বাকি থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত খরচ করা ফরজ হবে এবং জমা করা হারাম হবে।

আর আমরা জানি যে, জিহাদে মালের প্রয়োজনীয়তা, বিশেষ করে এই যামানায় অশেষ এবং কোন সীমায় গিয়ে না থামার মত। এমনটা হচ্ছে জিহাদী দল বেশি হওয়া, জিহাদের রূপ-রেখা বিভিন্ন ধরণের হওয়া এবং জিহাদের সময় অনেক দীর্ঘ হওয়ার কারণে। এছাড়া বর্তমানে এমন কোন ইসলামী রাষ্ট্রীয় বাইতুল মাল নেই যা এই মালের চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং জিহাদের কাজ আঞ্জাম দানকারীদের দেখাশোনা করতে পারে।

ফরজে আইন খরচের ফরজিয়্যাহ সমস্ত সামর্থ্যবান মুসলিমদের উপর প্রযোজ্য। এটা শুধু জিহাদী ময়দানের মুজাহিদগণের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং তারা হলেন – ওই খরচের ক্ষেত্র। যেমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য যাকাতের একটি অংশ নির্ধারণ করেছেন।

আর জিহাদের প্রয়োজন, যে প্রয়োজন পুরা করার জন্য মাল খরচ করতে হবে, তা নির্ধারণ করবেন জিহাদের বিশেষজ্ঞগণ। আল্লাহই ভাল জানেন। যেটা পূর্বে দায়িত্বশীল ইমামদের হাতে ন্যস্ত ছিল। কিন্তু আজ এটা নির্ধারণ করা বড় কঠিন। কারণ জিহাদি দল অনেক, আর এক যুদ্ধে বা দুই যুদ্ধেও এর প্রয়োজন শেষ হয়ে যায় না। বরং তার প্রয়োজনীয়তা অব্যাহতভাবে চলছেই, যা শেষ হওয়ার নয়। একদিক থেকে শেষ হলে অপরদিক থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া প্রয়োজনেরও বিভিন্ন ক্ষেত্র এখন বর্তমান। শুধু অস্ত্র কেনা, বাহনের ব্যবস্থা করা, পরিখা খননের যন্ত্রপাতি ব্যবস্থা করার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশেষ করে, বর্তমানে অধিকাংশ জিহাদী ময়দানে মুজাহিদগণের অবস্থা এমন কোন নির্ধারিত সেনাবাহিনীর আকৃতিতে নেই, যাদের সৈন্য সংখ্যা নির্ধারিত থাকে, দিক নির্ধারিত থাকে, আসা-যাওয়ার সময় নির্ধারিত থাকে। বরং সাধারণভাবে ও মোটের উপর দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার নয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের যুদ্ধক্ষেত্র হল – তাদের নিজ ভূমি। তাদেরকে ও তাদের পরিবারবর্গকে বিপদ চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে রাখে। আর যারা অস্ত্রসহ যুদ্ধের মাঝে থাকে না, তারা তাদের ভাইদের সাহায্যের উৎস হিসাবে থাকে। তাদেরকেও সব ধরণের আশঙ্কা গ্রাস করে রাখে। এছাড়া কখনো কখনো কোন পরিবারের কর্তা নিহত বা বন্দী হওয়ার পর উক্ত পরিবারকে সাহায্য-সহযোগিতা করার সকল পথও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। হয়ত বহু দূরে হওয়ার কারণে, কিংবা বিপদের আশঙ্কা থাকার কারণে কিংবা ভুলে যাওয়া বা পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার কারণে – এমনটা অনেক হয়েছে।

এমনকি কিছু কিছু বন্দী বা শহীদ মুজাহিদের ঘরণীর এমন অবস্থা হয়েছে, যা আলোচনা করাও ভালো মনে হচ্ছে না। যদিও তারা তাদের নিজ পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের মাঝেই ছিলেন। কিন্তু তাদের দায়িত্বশীল না থাকা এবং ভীষণ দারিদ্র্য ও প্রকাশ্য অভাব-অনটনের কারণে প্রতিবেশীদের অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি যদি সে স্বাবলম্বী ও অমুখাপেক্ষীভাবে থাকে, তবুও। যেহেতু সে বিপদে পড়েছে।

এমতাবস্থায় যদি মুজাহিদের উপর এই বিধান আরোপ করা হয় যে, সে তার সমস্ত মাল খরচ করে দিবে, নিজ পরিবার ও সন্তান-সন্তুতির জন্য সঞ্চয় করতে পারবে না, অথচ তাদের বিপদের সম্মুখীন হওয়া এবং ভরণ-পোষণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে- তাহলে এটা অনেক কঠিন ও অবর্ণনীয় চাপ হয়ে যায়।

বরং অনেক সময় এটার কারণে অনেকে জিহাদ থেকে সরে পড়ে। সন্তান-সন্তুতি ও পরিবার-পরিজনকে নি:স্ব ও অভাবগ্রস্ত রেখে যেতে হবে, তারা মানুষের কাছে ভিক্ষা করবে – এই আশঙ্কায় অনেকে জিহাদের ময়দান পরিত্যাগ করে। এ ধরণের সমস্যা বন্ধ করা, অর্থাৎ কোন ‍মুজাহিদ যেন জিহাদের ময়দান ছেড়ে দিতে বাধ্য না হয় – এটা অত্যাবশ্যক। কারণ যদি কিছু মালও সঞ্চয় করতে নিষেধ করা হয়, তাহলে অনেকেই জিহাদের ময়দানই ছেড়ে দিবে অথবা মৃত্যুর ভয়ে ও তার মৃত্যু-পরবর্তীতে পরিবারের ভোগান্তির আশঙ্কায় জিহাদের দায়িত্ব ভালোমত পালন করবে না। আর কোন মুজাহিদ যদি মৃত্যু থেকেই বেঁচে থাকতে চায়, তাহলে আর তার উপকারিতাটা কী?

তাই এহেন পরিস্থিতিতে সঞ্চয় করা যদিও একটা সমস্যা, কিন্তু এটা নিষেধ করা, এর চেয়ে আরো বড় সমস্যা সৃষ্টি করবে। তাই শরীয়তের মূলনীতি অনুযায়ী এই সমস্যা প্রতিহত করার জন্য ওই সমস্যাটি মেনে নিতে হবে। উলামায়ে কেরামও জিহাদের কিছু কিছু মাসআলায় এ বিষয়গুলোর বিবেচনা করেছেন। যেমন উলামাগণ বলেছেন, মুজাহিদগণ বাইতুল মাল থেকে যে ভাতা পান, তা তাদের শাহাদাতের পরও তাদের পরিবারের জন্য অব্যাহত থাকবে। এটা তাদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করার জন্য এবং জিহাদ ছেড়ে দেওয়া বন্ধ করার জন্য। কারণ যখন সে জানবে যে, মুজাহিদের পরিবার যেমনিভাবে তাদের জীবদ্দশায় ভরণ-পোষণ পায়, তেমনিভাবে তাদের মৃত্যুর পরও পাবে, তখন সে আর পিছপা হবে না। এটা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যণীয় বিষয়।

শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম আল্লামা বদরুদ্দীন ইবনে জামাআহ রহিমাহুল্লাহ বলেন: “কোন বেতনভূক্ত সৈন্য মারা গেলে তার ভাতা তার কন্যা সন্তান ও স্ত্রীদের জন্য অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ না তারা বিবাহের মাধ্যমে অন্যের দায়িত্বে চলে যায় এবং শিশু পুত্র-সন্তানদের জন্যও অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা প্রাপ্তবয়স্ত ও উপার্জনক্ষম না হয় কিংবা জিহাদের যোগ্যতা অর্জন না করে। এমনিভাবে তাদের মধ্যে অন্ধ ও অচলদের জন্য সর্বদাই প্রয়োজন পরিমাণ ভাতা অব্যাহত থাকবে। এ সবকিছুই জিহাদকারীদেরকে উৎসাহিত করা, তাদের মনোতুষ্টি করা এবং তাদের অবর্তমানে তাদের পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করার জন্য।

যদি বেতনভুক্ত মুজাহিদ বছরের মাঝে মারা যায়, তাহলে এক বছরে তার জন্য যে পরিমাণ ভাতা নির্ধারিত ছিল তা তার ওয়ারিশদের পৌঁছে দেওয়া হবে। আর যদি বছরান্তে মারা যায় তবে তার এক বছরের হক তার ওয়ারিশদের নিকট পৌঁছে দেওয়া হবে।” (তাহরীরুল আহকাম: ১২৫)

এখানে তার কন্যা, স্ত্রী ও ছোট বাচ্চাদেরকে ভাতা প্রদানের যে কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, তা এটাই বুঝায় যে, একমাত্র জিহাদের প্রতি উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং নিজের পরবর্তীদের ব্যাপারে মুজাহিদগণকে আশ্বস্ত করার জন্যই তাদেরকে এই ভাতাটা প্রদান করা হয়।

এই ভিত্তিতে তারা ধনী হলেও তাদেরকে দেওয়া হবে। যেমনটা ইমাম মাওয়ারদী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন: “আর যখন বলা হয়: তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণ দেওয়া হবে, তখন চাই তারা ধনী ও স্বাবলম্বী হোক, কিংবা দরিদ্র ও অভাবী হোক, উভয় অবস্থায়ই দেওয়া হবে।”(আলহাওয়িল কাবীর /৪৫০)

পক্ষান্তরে যদি শুধু সেই কারণটির প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়, যার ভিত্তিতে ভাতা লাভ হয়- তথা জিহাদ করা, তাহলে এটা তো এদের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। তারা যা নিচ্ছে তা শুধু সেই মুজাহিদের অনুসঙ্গ হিসাবে। এ কারণে উলামাদের কেউ কেউ মুজাহিদের মৃত্যুর পর কিংবা মুজাহিদ অসুস্থ বা অচল হয়ে জিহাদ করতে অক্ষম হয়ে গেলে তাদের জন্য ভাতা জারি রাখতে নিষেধ করেছেন। তারা বিষয়টাকে প্রকাশ্য অবস্থার উপরেই রেখেছেন। জায়েয সাব্যস্তকারীগণ যে কারণ উল্লেখ করেছেন তার প্রতি লক্ষ্য রাখেননি।

যেমন ইমাম মাওয়ারদি রহিমাহুল্লাহ বলেন: মুজাহিদের নিয়মতান্ত্রিক ভাতা থেকে তার পরিবার-পরিজনের জন্য ভাতা চালু রাখার ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম দুই মতে বিভক্ত হয়েছেন। একদল বলেছেন, উক্ত ভাতার অধিকারী চলে যাওয়ার কারণে তার পরিবারের ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের জন্য ওশর ও সাদাকা নির্ধারণ করা হবে।

আরেকদল বলেছেন, মুজাহিদকে জিহাদে অবিচল থাকতে উদ্ধুদ্ধ করা ও সাহসিকতা প্রদর্শনে উৎসাহ দেওয়ার জন্য তার মৃত্যুর পর তার পরিবার-পরিজনের জন্য ভাতা চালু থাকবে।

মুজাহিদ অচল হয়ে গেলে তার ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে কি না, এ ব্যাপারেও উলামাগণ দুই মত পোষণ করেছেন। একদল বলেছেন, বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ এটা ওই কাজের জন্য ছিল, যেটা এখন নেই। আরেকদল বলেছেন: জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য এটা অব্যাহত থাকবে। (আলআহকামুস সুলতানিয়া: ৩০৬)

উলামায়ে কেরামের এই বক্তব্যগুলো হল, যারা বাইতুল মাল থেকে সুনির্দিষ্ট বেতন পান তাদের পরিবার-পরিজন দেখাশোনা করার জন্য। কিন্তু বর্তমানের মুজাহিদগণের অবস্থা তো এর থেকে সম্পূর্ণই ভিন্ন। কারণ তারা যে কাফালাহ গ্রহণ করে থাকেন তার অধিকাংশগুলোর উৎসহই হল স্বপ্রণোদিত হয়ে দানকারীদের দান এবং সাদাকাকারীদের সাদাকা। এখান খুব কমই গণিমত ও শত্রুদের থেকে প্রাপ্য সম্পদ থাকে। বর্তমানে মুসলমানদের এমন কোন বাইতুল মালই নেই, যেখানে জানাশোনা ও সুনির্দিষ্ট উৎস থেকে অনেক মাল জমা হয়। বর্তমান মুজাহিদগণের অবস্থা সে সকল মুজাহিদগণের মত নয়, যাদের রাষ্ট্র ছিল, রেজিস্ট্রি ছিল, বেতন ছিল। বরং এদের অধিকাংশই জিহাদের দায়িত্ব আদায়ের জন্য স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে আসে। অর্থাৎ তারা যখন ইচ্ছা জিহাদের ময়দানে আসেন, আবার যখন ইচ্ছা ময়দান থেকে চলে যান। এখনে আমরা গুনাহ হওয়া- না হওয়া নিয়ে কথা বলছি না। অবস্থার বিবরণ দিচ্ছি এবং বাস্তবতা তুলে ধরছি।

তাই এ অবস্থার মাঝে আর ওই সকল মুজাহিদীনের অবস্থার মাঝে বিস্তর ফারাক আছে, যারা ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে বেতন পেত এবং নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট পরিমাণে ও নির্দিষ্ট খাতে রেশন পেত।

যারা বর্তমান জিহাদের ময়দানগুলোতে জীবন যাপন করেন এবং মুজাহিদগণের অবস্থা ও প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে তাদের উপর যে সংকীর্ণতা ও সংকট আসে, চাই তাদের ব্যক্তিগত ভরণপোষণের ক্ষেত্রে হোক কিংবা তাদের জিহাদী প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ক্ষেত্রে হোক- এবিষয়ে যার জানা আছে তিনি নিশ্চিতভাবেই জানেন যে, বর্তমান জিহাদের রূপরেখা – পূর্ববর্তী অনেক ফুকাহাগণ, ফিকহ ও শরয়ী রাজনীতির কিতাবসমূহে যে সকল মূলনীতি স্থির করেছেন তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ কারণে আমাদেরকে এ দিকটা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে এবং তাদের বক্তব্যগুলোকে বর্তমান অবস্থার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

তাই আমার সামনে যেটা প্রতিভাত হয়,-আল্লাহই ভালো জানেন- তা হল একজন মুজাহিদ যখন তার মালের ফরজ ব্যয়গুলো ও যাকাত আদায় করেন – তারপর এমন কোন সুনির্ধারিত পরিমাণ নেই, যে পরিমাণ মাল জমা ও সঞ্চয় করা মুজাহিদের জন্য জায়েয নেই। কারণ এ ধরণের সীমারেখা নির্ধারণের জন্য শরয়ী দলিলের প্রয়োজন হয়। অথচ বাস্তবে তা নেই।

তাই এখানে বিষয়টা প্রচিলত অবস্থার ভিত্তিতে হবে। এখানে মাপকাঠি হল, মানুষের প্রচলন। যেন অতিরঞ্জন-অতি সংকোচন এবং কার্পণ্য-অপচয়ের মাঝমাঝি হয়। মধ্যম অবস্থায় থাকতে হবে। আর এক্ষেত্রেও মানুষের অবস্থা বিভিন্ন রকম। এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। এই মাপকাঠির ব্যাপারে শরীয়তেও ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেন:

وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَّحْسُورًا ﴿الإسراء: ٢٩﴾

“(কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সাথে বেঁধে রেখো না এবং (অপব্যয়ী হয়ে) তা সম্পূর্ণরূপে খুলে রেখ না, যদ্দরুণ তোমাকে নিন্দাযোগ্য নি:স্ব হয়ে বসে থাকতে হয়” (আলইসরা ১৭:২৯)

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:

وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًا ﴿الفرقان: ٦٧﴾

এবং যারা ব্যয় করার সময় না করে অপব্যয় এবং না করে কার্পণ্য, বরং তাদের পন্থা হল (বাড়াবাড়ি সংকীর্ণতার) মধ্যবর্তী ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা” (আল-ফুরকান ২৫:৬৭)

আল্লামা শানকিতী রহিমাহুল্লাহ বলেন: “স্বভাবতই যে মধ্যমপন্থী খরচের জন্য আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন, তা নিজের পারিবারিক খরচ এবং যেকোন পূণ্য কাজে খরচ উভয়টকেই শামিল করে।” (আদওয়াউল বয়ান /৭৬)

শরীয়ত প্রণেতাও জিহাদ ও অন্যান্য কাজে খরচের পরিমাণের ব্যাপারটা সম্পদের মালিকের দায়িত্বে ছেড়ে দিতেন, তবে খরচের ব্যাপারে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা দান করতেন।

ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “একদা রাসূলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাদাকাহ করার আদেশ করলেন। ঘটনাক্রমে সে সময় আমার নিকট বেশ সম্পদ ছিল। তাই আমি মনে মনে ভাবলাম, আমি যদি কোনদিন আবু বকরের উপর অগ্রগামী হয়ে যাই, তাহলে সেটা আজকেই হবো। সেমতে আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নিয়ে আসলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছো? আমি বললাম: এর সমপরিমাণ। তিনি বলেন, তারপর আবু বকর রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু তার নিকট যা কিছু ছিল তার সব নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছো? তিনি বললেন: তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলকে রেখে এসেছি। তখন আমি বললাম, আমি কোনক্ষেত্রে কখনো আপনার উপর অগ্রগামী হতে পারবো না।” বর্ণনা করেছেন ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী, হাকিম ও বায়হাকী রহিমাহুল্লাহ।

বায়হাকী রহিমাহুল্লাহ উপরোক্ত হাদিসের শিরোনাম করেছেন এভাবে: “অধ্যায়: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য- “উত্তম সাদাকাহ হল তা – যা প্রাচুর্যের পিঠ ভেঙ্গে প্রদান করা হয়।” এমনিভাবে তার বক্তব্য- যখন তাকে সর্বোত্তম সাদাকাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তার উত্তরে- “হ্রাসকারীর কষ্ট”- এগুলো যে মানুষের সংকট ও উপবাস সহ্য করার ক্ষমতা এবং সর্বনিম্ন খরচে চলার সামর্থ্যের ভিত্তিতে তারতম্য হবে তার প্রমাণ”।

গাযওয়ায়ে তাবুকের জিহাদটি ছিল ফরজে আইন, কারণ রাসূলুলল্লাহ মদিনার সকল অধিবাসীকে বের হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছিলন। তাতে মালের প্রয়োজন ছিল অনেক বেশি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গমনিচ্ছুক সকলের জন্য সরঞ্জমাদী ব্যবস্থা করার মত যথেষ্ট পরিমাণ রসদও ছিল না। যেমনটা আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

وَلَا عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوا وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا مَا يُنفِقُونَ ﴿التوبة: ٩٢﴾

এবং সেই সকল লোকেরও (জিহাদে না যাওয়াতে কোন গুনাহ) নেই, যাদের অবস্থা এই যে, যখনতুমি তাদের জন্য কোন বাহনের ব্যবস্থা করবে এই আশায় তারা তোমার কাছে আসল আর তুমি বললে, আমার কাছে তো তোমাদেরকে দেওয়ার মত কোন বাহন নেই, তখন তাদের কাছে খরচ করার মত কিছু না থাকার দু:খে তারা এভাবে ফিরে গেল যে, তাদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল(সূরা তাওবা: ৯২)

এতদ্বসত্ত্বেও একথা বর্ণিত নেই যে, তিনি ধনী সাহাবীগণকে তাদের পরিবারের খরচ ব্যতিত অতিরিক্ত সমস্ত মাল খরচ করে দিতে আদেশ করেছেন। বরং তাদেরকে এ ধরণের কথা বলে বলে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা দান করছিলেন: কে আছে সংকটের বাহিনীর রসদের ব্যবস্থা করবে?? তারপর কী পরিমাণ মাল বের করা হবে, সেটা তাদের উপর ছেড়ে দেন।

এ কারণেই উসমান রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু যিনি ধনী সাহাবীগণের দলে ছিলেন, তিনি সংকটের বাহিনীর রসদের ব্যবস্থা করেছেন এবং তাদের তরে অকাতরে খরচ করেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করেননি- তুমি কী পরিমাণ রেখে এসেছো? বা তাকে ক্রন্দনকারীদের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতেও চাপ দেননি। এমনিভাবে বাকি সাহাবীগণের ব্যাপারেও এমনটাই করেছেন।

আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: সংকটের বাহিনী যাত্রার সময় উসমান রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু এক হাজার দিনার নিয়ে এসে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোলে ছড়িয়ে দিলেন। আব্দুর রহমান বলেন: আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ কোলে তা উল্টাচ্ছেন আর দু’বার বললেন: “আজকের পর উসমান যে আমলই করুক, তা তার ক্ষতি করবে না।” (বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী)

এমনটা করেছেন ভীষণ প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও। বিশেষ করে গাযওয়ায়ে তাবুকে, যেটাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নিয়ত করেন এবং দীর্ঘ সফরের সংকল্প করেন। তাই হাদিসে তিনটি বিষয় একত্রিত হল:

. রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণেকে বের হতে আহ্বান করার কারণে জিহাদ ফরজ হয়ে যাওয়া। এ কারণেই সেই তিনজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, যারা পশ্চাতে অবস্থান করেছিলেন। তাদের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক বর্জন করা হয়েছিল। কারণ, তারা বের হতে সক্ষম ছিলেন এবং তাদের কোন ওযর ছিল না।

. এমন সাহাবীগণের উপস্থিতি, যারা জানের মাধ্যমে জিহাদ করতে সক্ষম ছিলেন, কিন্তু মালের মাধ্যমে জিহাদ করতে অক্ষম ছিলেন। যদিও তাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী হওয়ার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। যেমনটা আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সূরা বাকারায় তাদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। এর দ্বারা বুঝা যায়, গাযওয়ায়ে তাবুকে মালের প্রয়োজন ছিল, যাতে এ সকল লোক বের হতে ও জিহাদে অংশ গ্রহণ করতে পারত। আশআরী গোত্রের কতক লোক রাসূলুল্লার নিকট বাহনের জন্য আসলে তিনি বললেন: আল্লার শপথ, আমি তোমাদেরকে বাহন দিতে পারছি না। আমার নিকট কোন বাহনই নেই। (বুখারী, মুসলিম)

. কিছু সাহাবীর নিকট অঢেল মালের উপস্থিতি। যার মাধ্যমে কিছু দরিদ্রের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা যেত। এতদ্বসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ তাদেরকে তাদের সমস্ত মাল বের করতে চাপ দেননি বা নিজেদের ইচ্ছেমত অবশিষ্ট মাল ঘরে রেখে দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করেননি। তবে তাদেরকে উৎসাহ দিয়েছেন। সেচ্ছায় দানকারীদের জন্য দু’আ করেছেন এবং ব্যয়কারীদের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু কতটুকু বের করা হবে তা মালের মালিকের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়েছেন।

কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হল, সাহাবীগণের মধ্যে অধিকাংশই নিজেদের যুদ্ধের সামানা নিজেরাই প্রস্তুত করতেন। যেমন কা’ব ইবনে মালিক রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু যখন যুদ্ধ থেকে পশ্চাতে থেকেছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন: কী কারণে তুমি পিছনে থেকে গেলে? তুমি কি তোমার বাহন ক্রয় করনি? (বুখারী, মুসলিম)

তাই সামর্থ্য থাকলে নিজের সরঞ্জামাদিরও ব্যবস্থা করবে এবং নিজের সাধ্য ও ইচ্ছেমত অন্য মুসলিমদের সরঞ্জামেরও ব্যবস্থা করবে।

আল্লামা রশীদ রেযা রহিমাহুল্লাহ বলেন: “প্রথম যুগে মুসলমানগণ প্রত্যেকে নিজের যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় মাল খরচ করতেন। আর যার নিকট অতিরিক্ত মাল থাকত, সে অন্যের জন্যও খরচ করত। যেমন উসমান রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু এই যুদ্ধে সংকটের বাহিনীর সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করেছিলেন। এমনিভাবে তিনি ছাড়া অন্যান্য সাহাবীগণও করেছিলেন। আর এখন নজদবাসীও এমনটা করছেন।

অত:পর যখন প্রচুর পরিমাণে গনিমত আসার কারণে বাইতুল মাল শক্তিশালী হয়ে গেল, তখন ইমাম ও সুলতানগণ বাইতুল মাল থেকে সেনাবাহিনীর যুদ্ধের খরচ বহন করতেন।” (তাফসীরুল মানার: ১০/৩৯৯)

আর আমি মনে করি না যে, তাদের কেউ জানের মাধ্যমে জিহাদ করতে অক্ষম হলে, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মালের মাধ্যমে জিহাদ করতে বা শারীরিক জিহাদে সক্ষম কোন মুজাহিদকে তার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দিতে কার্পণ্য করেছেন। বরং তারা উদারভাবে ও সন্তুষ্টচিত্তে তা প্রদান করতেন।

হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আসলাম গোত্রের জনৈক যুবক বললেন: “হে আল্লাহর রাসূল! আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চাই, কিন্তু যুদ্ধের সরঞ্জাম নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: অমুকের নিকট যাও, কারণ সে সরঞ্জামের ব্যবস্থা করেছিল। তারপর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তখন তিনি তার নিকট এসে বললেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে সালাম জানিয়েছেন আর বলেছেন: আপনি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য যে সকল সরঞ্জামের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেগুলো আমাকে দিতে। উক্ত সাহাবী তার এক লোককে বললেন: হে অমুক, আমি যেগুলোর মাধ্যমে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তাকে সেগুলো দিয়ে দাও। কোন কিছুই বাকি রাখবে না। আল্লাহর শপথ, কোন কিছু বাকি রাখলে আল্লাহ কখনোই তাতে বারাকাহ দান করবেন না।” (মুসলিম)

বর্তমান জিহাদের খরচাদীর অধিকাংশটাই, যেমনটা পূর্বে উল্লেখ করেছি, স্বেচ্ছা দানকারীদের দান-সাদাকার উপর প্রতিষ্ঠিত। পূর্ব যুগের মত তার এমন কোন বাইতুল মাল নেই, যার সুনির্দিষ্ট আয়ের খাত আছে। বরং তার পুরোটাই জিহাদ ও তার আবশ্যকীয় কাজের জন্য প্রদত্ত মানুষের দান-অনুদান। আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন।

 

******************************

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ (বাংলাদেশ শাখা)
In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 9 =

Back to top button