আন-নাসর মিডিয়াইলম ও আত্মশুদ্ধিউস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহপাকিস্তানবই ও রিসালাহবই ও রিসালাহ [আন নাসর]মিডিয়াহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও! প্রথম পর্ব || দ্বীনের প্রহরীগণ কোথায়? – উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ

ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান
তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও!
প্রথম পর্ব
দ্বীনের প্রহরীগণ কোথায়?

উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ

 

ডাউনলোড করুন

pdf
https://banglafiles.net/index.php/s/8EDnwZ829xKxMBA
https://www.file-upload.com/y9ewblyc44ic
https://archive.org/download/TomoraAllahrSahazzokariHow1/TomoraAllahrSahazzokariHow-1.pdf
https://www.mediafire.com/file/3c643rl23nyufw0/TomoraAllahrSahazzokariHow-1.pdf/file

word
https://banglafiles.net/index.php/s/QXZPGJAFXrfbG3k
https://www.file-upload.com/mif2uj49z7t3
https://archive.org/download/TomoraAllahrSahazzokariHow1/TomoraAllahrSahazzokariHow-1.docx
https://www.mediafire.com/file/tz69fn65n26r56y/TomoraAllahrSahazzokariHow-1.docx/file

====================================
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]
—————–

 

=====================

بِسْمِ اللّہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

الحمد لله رب العالمين. والصلوة والسلام على رسوله الكريم. أما بعد…

হামদ ও সালাতের পর-

পাকিস্তানে বসবাসরত আমার দ্বীন প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা!

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

সুপ্রিয় দ্বীনদার ভাইয়েরা আমার- আজ আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা নিবেদন করতে চাই। আপনারা আমার এমন সব ভাই যাদের অন্তরে দ্বীনের মহব্বত রয়েছে এবং আপনারা সমাজে দ্বীনদার হিসাবে পরিচিত। আমার এই নিবেদন বিশেষ করে সেই সব দ্বীনী ভাইদের প্রতি, যারা কোন ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত।

২০১৮ইং সালের নির্বাচনী হাঙ্গামা শেষ হয়েছে মাত্র কিছুদিন হল। এতে আপনাদের স্বল্প পরিমাণ প্রার্থীরাই এসেম্বলিতে পৌঁছাতে পেরেছেন। এর ফলে আপনারা অতীতের ন্যায় আজও এ বিষয়ে পেরেশানীতে রয়েছেন। এমনিভাবে আপনারা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে কি হয় নাই এটা আমাদের আজকের মজলিসের আলোচ্য বিষয় নয়। বরং আমাদের মূল উদ্দেশ্য ও আলোচ্য বিষয় এর চাইতে আরো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই আলোচনাটি সংক্ষিপ্ত চারটি পর্বে সমাপ্ত করা হবে (ইনশা আল্লাহ)। আল্লাহ তা‘আলা এই আলোচনাকে আমাদের সকলের জন্য উপকারী হিসেবে কবুল করে নিন।(আমীন)

মুহতারাম ভাইয়েরা আমার!

আপনাদের মাঝে হয়তো কেউ কেউ এটা মনে করে থাকতে পারেন যে, আমরা মুজাহিদীনরা আপনাদের ভাল চাই না অথবা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি (আল্লাহ এমনটি না করুন)। আমার প্রিয় ভাই ও বন্ধুরা! আসলে বিষয়টি কক্ষনো এমন নয়। যদিও আমরা আপনাদের এই গণতন্ত্রভিত্তিক রাজনীতির উপর সন্তুষ্ট নই। আল্লাহ তা‘আলাকে সাক্ষী রেখে বলছি – আমরা নিজেদের জন্যও গণতন্ত্রের পথ ধরে চলাকে পছন্দ করিনা। বরং এই পথের পথিক হওয়াকে নিজেদের দ্বীন ও আখিরাতের জন্য বিপদজনক মনে করি।

হে প্রিয় ভাইগণ!

আপনারা হলেন দ্বীনের ধারক বাহক। তাই আপনাদের এই সুস্পষ্ট অনিষ্টের পথে ও ইবলিসের তৈরীকৃত এই ভ্রান্তিমূলক পথে উদাসীন হয়ে ঘুরে ফিরে চলার চাইতে নিজেদের দ্বীনি পরিচয় ও পরিচিতি নিয়ে থাকাটা অধিক উত্তম ও সুউচ্চ মর্যাদার বিষয়। নতুবা এর ফলশ্রুতিতে দ্বীন-ইসলামের শক্ররা দ্বীনের ধারক বাহকদের নিয়ে হাসি-তামাশা করার সুযোগ পাবে! সুতরাং আপনারা নিশ্চিত বিশ্বাস রাখুন যে, আমরা আপনাদের অহিতকামী নই। বরং আপনাদের হিতকামী। আপনাদের দুশমন নই, বরং আপনাদের ভাই ও বন্ধু। ইনশা আল্লাহ আমরা কখনো আপনাদের জন্য এমন কোন বিষয় পছন্দ করব না, যা আমরা নিজেরা নিজেদের জন্য পছন্দ করি না। আর তা এই জন্য যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র হাদীসে ইরশাদ করেছেন:

عَنْ أَنَسٍ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ.

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- “তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে”। (সহীহ বুখারী)

দ্বিতীয় কথা হচ্ছে: আমরা যখন আপনাদেরকে উদ্দেশ্য করে কোন কথা নিবেদন করি, তখন আমাদের প্রতিও আপনাদের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রশ্ন আসতে পারে যে, আপনারা মুজাহিদীনরা দ্বীনের কী কী সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন? বাতিলদের কোন কোন পথ অবরুদ্ধ করেছেন? উম্মাতে মুসলিমার জখমগুলোতে কোন ধরনের প্রতিকারের ব্যবস্থা নিয়েছেন? তাহলে শুনুন- ইনশা আল্লাহ, আমরা মনে করি (প্রকৃত অবস্থা তো আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন) এ কথা বলা কোন ধরণের বাড়াবাড়ি হবে না যে – আলহামদুলিল্লাহ, মুজাহিদীনে কেরাম তাদের সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে উম্মাতে মুসলিমার কল্যাণ সাধনে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তারা তাদের নিকট বা তাদের নিয়ন্ত্রনে কোন কিছুই অবশিষ্ট রেখে দেননি। বরং তাদের নিকট যা ছিল, সে সব কিছুই এই মহান দ্বীনের জন্য, দ্বীনের দাওয়াত ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাজলুম উম্মতের সাহায্যের জন্য অনবরত বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন (ইনশা আল্লাহ ভবিষ্যতেও বিলিয়ে যাবেন)।

ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমানে আফগানিস্তান থেকে ইয়েমেন ও মালি পর্যন্তই নয় বরং পুরো দুনিয়াতে আল্লাহর এই প্রিয় বান্দারা নিজেদের ফরয জিহাদ আদায় করে চলেছেন।

অন্যদিকে আমরা অতি দুঃখের সাথে এই বিষয়টিও আপনাদের সমীপে পেশ করতে চাই যে, পবিত্র জিহাদের নাম আইএস-এর মত অপরাধীরা নিয়েছে। তারপর তারা বিশ্বময় জিহাদের বদনাম করেছে। জিহাদের মত পবিত্র নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ করেছে। ফলশ্রুতিতে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে অনেক জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। পাশাপাশি এর দ্বারা কুফর ও কাফিরদের অনেক উপকার সাধিত হয়েছে। এরপর গোপনীয় গোয়েন্দাসংস্থাগুলো আইএসের পন্থায় বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে, যাতে করে ইসলাম ও মুসলিমদের অনেক বেশী বদনাম হয় এবং জুলুম ও ফ্যাসাদের এই রাত্রি কখনো শেষ না হয়।

অতঃপর কথা হচ্ছে: আমরা এটাও স্বীকার করি যে, প্রকৃত মুজাহিদীনরা ফেরেশতা নন, তারা মানুষ। তাই তাদের থেকেও ভুল-ভ্রান্তি প্রকাশ পেতে পারে। সুতরাং আমাদের দাবী এটা নয় যে, জিহাদের নামে যে কেউ যা কিছু করবে সবই সঠিক বলে গণ্য হবে। আর আপনারাও তাদের দেখাদেখি সেই সব কিছু করে বেড়াবেন। বরং আমাদের আহবান হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা‘আলার এই মহান দ্বীনের যে দাবী এবং শরীয়াহর যে চাহিদা রয়েছে, আমরা ও আপনারা সবাই তার ‍উপর আমল করবো। কিয়ামতের দিন আমাদের নিজেদেরকে অন্য কারো ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না, বরং আমাদেরকে আমাদের আকীদ-বিশ্বাস ও আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সুতরাং কেউ দ্বীনের নুসরত করার জন্য প্রস্তুত হোক বা না হোক; আমরা ও আপনারা দ্বীনের নুসরতের জন্য কোমর বেঁধে কাজে লেগে যাব। পাশাপাশি আমরা ঐ সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি থেকেও বেঁচে থাকার চেষ্টা করবো, যার কারণে অন্যরা দ্বীনের যথাযথ নুসরত করতে পারেনি। এটাই আমাদের মূললক্ষ্য হওয়া উচিত এবং এ সম্পর্কেই আমরা জিজ্ঞাসিত হব।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুরা!

সম্প্রতি পাকিস্তানে আল্লাহ তা‘আলার এই মহান দ্বীনের উপর চূড়ান্ত পর্যায়ের আঘাত এসেছে। যার ফলে সংকটময় পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। হয়তোবা এমন পরিস্থিতি নিকট অতীতে আর কখনো আসেনি। যুগের ভাষায় এই মহান দ্বীন যেন আমাদেরকে ডেকে ডেকে বলছে যে, مَنْ أَنْصَارِي إِلَى اللَّهِ অর্থাৎ আল্লাহর জন্য কারা আমার সাহায্যকারী হবে? এবং كُونُوا أَنصَارَ اللَّهِ অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও…। যেহেতু আমাদের মধ্য থেকে প্রত্যেকেই এই মহান দ্বীনের সম্বোধিত ব্যক্তি – তাই আমাদের প্রত্যেককেই সম্বোধন করে বলছে যে, এই মহান দ্বীনের সাহায্যকারী কেউ আছো কি? আছো কি কেউ জাহিলিয়্যাতের চিৎকার ও ঔদ্ধত্যতার মাঝে এই মহান দ্বীনের প্রকৃত অবস্থা ও দ্বীনের মৌলিক পয়গামের ঝান্ডাকে উর্ধ্বে তুলে ধরবে? কেউ আছো কি পাকিস্তানে তুফানের ন্যায় ধেয়ে আসা এই ধর্মহীনতার প্রবল স্রোতের বিপরীতে দ্বীনের প্রতিরক্ষা বিধানের নিমিত্তে প্রাচীরের ন্যায় দাঁড়িয়ে যাবে? এই মহান দ্বীন তো আমাদেরকে ও আপনাদেরকে সকলকেই সম্বোধন করে বলছে যে, কে এই জাহিলিয়্যাতের চিৎকার, ঔদ্ধত্যতা এবং অন্ধকারের প্রচন্ডতার এই বাদুড় সদৃশ লোকদের দ্বারা ভীত হওয়ার পরিবর্তে তাদের উপর মারাত্মকভাবে আঘাত হানবে? তাদের চোখে চোখ রাখবে? তাদেরকে চরম পর্যায়ের অসম্মান ও লাঞ্ছনার পরিস্থিতিতে ফেলবে এবং ইসলামের সম্মান ও শরীয়তের মর্যাদা দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত করবে?

 

ভাইয়েরা আমার!

আল্লাহর কসম করে বলছি: আজ যেভাবে দ্বীনের দাওয়াত ও তার আসল রুহ এবং চাহিদাসমূহ স্বয়ং আমাদের দ্বীনের ধারক-বাহকদের কাছে অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে, এমনটি মনে হয় ইতিপূর্বে আর কখনো হয়নি!

সুপ্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ!

আপনারাই বলুন! এটা কি সত্য নয় যে, আজ দ্বীনের ধারক-বাহকদের কাছ থেকে সকল ধরনের রাজনৈতিক শ্লোগান ও জনসাধারণের সকল ধরনের চাহিদার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু ইসলামের কি প্রয়োজন, ইসলামের কি চাহিদা, এই মহান দ্বীনের ভাষ্য কী, তার মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি কি? এই জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে তো কোথাও আলোচনা হচ্ছে না। বর্তমানে কতগুলো ইস্যুতে আমাদের দ্বীনের ধারক-বাহকদের অবস্থান ধর্মহীনদের বিপরীতে এবং ইসলামী ভাষ্যের অনুকূলে? অথচ আজ আমরা সকাল-সন্ধ্যা আমাদের দ্বীনের ধারক-বাহকদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের প্রশংসা, সম্মান, আইনের প্রতি বিশ্বস্ত ও শ্রদ্ধাশীল হওয়াসহ আরো অনেক বিষয়ে বক্তৃতা শুনতে পাই। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার সাথে বিশ্বস্ত হওয়া, বিশুদ্ধ কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, শরীয়তের আনুগত্যের দাওয়াত, শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব প্রভৃতি বিষয়ের উপর তাদের কোন বক্তৃতা শুনতে পাই না। আজ সাধারণ জনগণের সামনে উন্নয়ন ও স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আগাম ইশতেহার তো খুব ভালভাবেই প্রচার করা হচ্ছে, কিন্তু সাধারণ জনগণকে রবের আনুগত্য ও তাঁর হকসমূহ যথাযথভাবে আদায় করার ব্যাপারে দাওয়াতের দৃশ্য কোথাও দেখা যাচ্ছে না! বর্তমানে এই দেশে দেশপ্রেম ও জাতিপ্রেমের ঝান্ডা উড়ানোর জন্য অগণিত এজেন্ট কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এই ইস্যুতে যদি মৌলিকভাবে কারো কমতি থেকে থাকে, তাহলে প্রকৃতপক্ষে তা দ্বীনের ধারক-বাহকদের কমতি। কেননা দ্বীনের ধারক-বাহকদের পরিচয়ের ভিত্তি দেশপ্রেমের পরিবর্তে খোদাপ্রেম হওয়া কাম্য ছিল; যেহেতু তারা এক কালিমা, এক কাবা ও এক রাসূল এবং এক উম্মত হওয়ার দাবী করে থাকে।

মুহতারাম ভাইয়েরা আমার!

আজ আমাদের সেই ধরণের দ্বীনের ধারক-বাহকরা কোথায় – যারা স্রোতের ন্যায় ধেয়ে আসা ধর্মহীনতা ও অপকর্মের নোংরামির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে? একত্ববাদীদের সেই প্রজন্ম আজ কোথায় হারিয়ে গেছে, যারা পশ্চিমাদের ও উদারপন্থীদের তুফানসম গোস্তাখীর বিরুদ্ধে লড়াই করবে? মহান আল্লাহ তা‘আলার সেই সব প্রিয় বান্দাদেরকে আমরা আজ কোথায় তালাশ করবো – যারা এই দাবী করবে যে, এই দেশ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীদের দেশ। তাই এখানে উদারতাবাদ, পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদসহ অন্যান্য তন্ত্রমন্ত্র চলবে না। বরং এখানে ‍শুধুমাত্র ইসলাম ও ইসলামী মতবাদ-ই চলবে।

প্রিয় ভাইয়েরা আমার!

আপনারাই বলুন! বাতিলদের ক্রমবর্ধমান এই অগ্রসরতার মোকাবেলায় আমাদের এই মহান দ্বীনের প্রতিরক্ষার জন্য নিখাদ প্রাচীর রচনার ক্ষেত্রে এবং দ্বীনকে বিজয়ী করার ক্ষেত্রগুলোতে আজ একেবারেই শূণ্যতা ও নিরবতা বিরাজ করছে কেন?

সুপ্রিয় ভাইয়েরা আমার!

হযরত উমর রাযি. এর ফরমান শুনুন- সুনানে তিরমিযীতে এসেছে

حاسبوا أنفسكم قبل أن تحاسبوا.

“তোমাদের হিসাব গ্রহণের আগে, তোমরা নিজেরা নিজেদের হিসাব গ্রহণ করো।”

সুতরাং দ্বীনদরদী ভাই ও বন্ধুরা, আসুন! আমরা সকলেই নিজেরা নিজেদের হিসাব গ্রহণ করি। এছাড়া আপনারা আপনাদের এই (রাজনৈতিক) দীর্ঘ সফরের একটি জরিপ করুন যে, পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আপনাদের এই সফরে দ্বীনের ধারক-বাহকরা কোন কোন ক্ষেত্রগুলোতে অগ্রসরতা, অগ্রগামীতা অর্জন করতে পেরেছে? অথবা বাস্তবেই কি আপনাদের নিশ্চিত বিশ্বাস আছে যে, গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে এখানে ইসলামের বিজয় সম্ভব হবে? নাকি ইসলাম ও গণতন্ত্র বিষয় দুইটি সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে?

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ!

আপনারা নিজেরাই নিজেদের ফায়সালা করুন। নিজেদের কাছ থেকে নিজেরাই উত্তর খুঁজে নিন। আপনাদের অন্তর কি এই বিষয়ে ইতমিনান যে, গণতন্ত্রের এই সর্বনাশা পথে চলে আপনারা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার মানযিলের দিকে অগ্রসরমান হচ্ছেন? দ্বীনের দুশমনরা পরাজিত হচ্ছে? ধর্মহীনতা ও বেহায়াপনার রাজত্ব নিশ্চিহৃ হয়ে যাচ্ছে? অসৎকাজ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে? জাতির দ্বীন-ধর্ম বাঁচানোর ক্ষেত্রে আপনারা সফলকাম হচ্ছেন? আমাদের মেনে নেওয়া উচিত এবং আপনাদের স্বীকার করা উচিত যে, পাকিস্তানে উদারপন্থার নাম দিয়ে ধর্মহীনতা, জুলুম-ফ্যাসাদের ক্ষমতা দিনের পর দিন শুধু দৃঢ় থেকে অধিকতর দৃঢ় হচ্ছে। বাতিল নিত্যদিন নতুন নতুন রূপ ধারণ করে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। অপরদিকে “প্রকৃত সত্য” উত্তরাধিকারীবিহীন অপরিচিত অবস্থায় পরাজয় থেকে অত্যধিক পরাজয়ের দিকে ধাবমান হচ্ছে!

সুপ্রিয় ভাইয়েরা আমার!

আফসোসের কথা হচ্ছে এই যে – যখন দ্বীনের ধারক-বাহকরা ইসলামী আন্দোলন ও শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করার দাওয়াত দেন, তখন এই মুবারক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের কর্মীদেরকে এবং সাধারণ জনগণকে লাঠি ও গুলির সামনাসামনি হওয়ার জন্য প্রস্তুত করেন। চাই তাদের এই মানযিল লাভ হোক বা না হোক। কিন্তু আজ তারা তো এই মানযিলের দাওয়াত প্রদান করার অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়ে গেছেন!

মোদ্দাকথা: যারা বাতিলদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল, কালের পরিক্রমায় তারাই আজ বাতিলদের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করার মত অবস্থায় পৌঁছে গেছে!

হে পাকিস্তানের দ্বীনি ভাইয়েরা!

আজ একটি বাস্তবতা সূর্যের আলোর ন্যায় আমাদের সামনে প্রকাশমান। বাস্তবতাটা হচ্ছে – ইসলামকে বিজয়ীকরনের এই যুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ব্যর্থতা পূর্ণাঙ্গরূপে স্বীকার করে নিয়েছেন। ধর্মহীনদের বিজয় মনে-প্রাণে মেনে নিয়েছেন। বাতিলদের ক্রমাগত আক্রমণের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে রেখেছেন। এই প্লাবনের  মোকাবেলায় শান্তি ও সন্ধির স্রোতে ভাসছেন। আর এভাবে ভেসে ভেসে চলাকেই ভাল মনে করে নিচ্ছেন। আপনি এখন রাজনৈতিক নেতাদের কথা-বার্তা ও কর্মকান্ডে এক প্রকার নিরাশা দেখতে পাবেন। যা তাদের বাক-ভঙ্গি থেকে ঝড়ে পড়ছে! তাছাড়া আপনি তাদের মাঝে এক প্রকার চাটুকারিতা দেখতে পাবেন, যা তাদের কথা-বার্তাতে সুষ্পষ্টরূপে বিদ্যমান। যারা বাতিলকে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিল, আজ তারাই বাতিলদের তত্ত্বাবধানে জীবন-যাপন করছে। বাতিলকে সন্তুষ্ট করার এবং তাদের থেকে ফায়েদা হাসিল করার জন্য ভিক্ষা চাওয়ার মত দৃশ্যও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে!

এই দেশে উদারবাদী, পুঁজিবাদী ও ধর্মহীন দলগুলোর প্রত্যেকেরই দিক নির্দিষ্ট করা  আছে। তাদের দাবী-দাওয়া, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং চলার পথ সুষ্পষ্টরূপে তাদের সামনে বিদ্যমান আছে। আর তারা তা প্রকাশ্যভাবেই ঘোষণা করে থাকে এবং ক্রমান্বয়ে উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে। কিন্তু কারো যদি দিক নির্দিষ্ট না থাকে, কেউ যদি স্বীয় লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও সঠিক রাস্তা থেকে বঞ্চিত থাকে; তাহলে তারা হলেন আমাদের দ্বীনদার রাজনৈতিক ভাইয়েরা। এ সকল পরিস্থিতির অনিবার্য পরিণতি হলো: আজ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাকসাদ খোয়া যাচ্ছে। জাতির দুনিয়া ও আখিরাত ধ্বংস হচ্ছে। অস্থিরতা, অশান্ত ভাব, উদ্দেশ্যহীনভাবে চলাফেরার মাত্রা বেড়ে চলেছে। এরফলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম পর্যন্ত জাহিলিয়্যাতের ও ধর্মহীনতার এই সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সেখানে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হওয়ার পরিবর্তে সেই মহান সত্ত্বার অসন্তুষ্টি অবতীর্ণ হচ্ছে এবং পুরো জাতি গোনাহগারে পরিণত হচ্ছে।

 

পরিশেষে প্রিয় ভাইয়েরা আমার!

একটি সত্য বিষয় হচ্ছে -এই অন্ধকারাচ্ছন্নতার উপাদানগুলো বহিরাগত নয়, বরং অভ্যন্তরীণ। আর এটাই হচ্ছে লাঞ্ছনার ও পরাজয়ের মৌলিক কারণ। এই সকল বিষয়াবলীর উপর ভ্রুক্ষেপ করা ব্যতীত কোন একজন লোকের পক্ষে এক কদম সামনেও বাড়তে পারার কথা না!

মুহতারাম ভাই ও বন্ধুগণ!

আমাদেরকে আজ বলতেই হবে যে, এ সকল পরিস্থিতি তৈরী হওয়ার কারণগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে: দ্বীনের ধারক-বাহকদের এই গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহন। এখন কথা হচ্ছে – এই গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কী ধরণের অনিষ্ট আছে, যার কারণে দ্বীনের ধারক-বাহকরা তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে পর্যন্ত বঞ্চিত হচ্ছে? এ ব্যাপারে আগামী বৈঠকে আলোচনা করা হবে, ইনশা আল্লাহ।

 

وآخر دعوانا أنِ الحمدُ للهِ ربِ العالمين .والسلامُ عليكم ورحمةُ اللهِ وبركاتُه.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × one =

Back to top button