আল-ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশননির্বাচিতপিডিএফ ও ওয়ার্ডবই ও রিসালাহমাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহমিডিয়া

আত্মশুদ্ধি- পর্ব- ২৬ || সময়ের সঠিক মূল্যায়ন || মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

مؤسسة الفردوس
আল ফিরদাউস
Al Firdawsتـُــقدم

পরিবেশিত
Presentsفي اللغة البنغالية
বাংলা ভাষায়
In the Bengali Languageبعنوان:
শিরোনাম:
Titled:

سلسلة تزكية النفس- الحلقة ٢٦
تقييم دقيق للوقت
আত্মশুদ্ধি- পর্ব- ২৬
সময়ের সঠিক মূল্যায়ন
Self-purification- Episode-26
Accurate assessment of time


لمولانا صالح محمود حفظه الله
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
By Mawlana Saleh Mahmud Hafizahullah

 

 

للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading

লিংক-১ : https://justpaste.it/attoshoddi-26
লিংক-২ : https://web.archive.org/web/20210404…/attoshoddi-26
লিংক-৩ : https://web.archive.org/web/20210404…562454a5fb0c87


روابط بي دي اب
PDF (696 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৬৯৬ কিলোবাইট]

লিংক-১https://banglafiles.net/index.php/s/oSAn3D73rS9d4tL
লিংক-২ : https://archive.org/download/attosud…ikMullayon.pdf
লিংক-৩ : http://www.mediafire.com/file/a0yl4s…layon.pdf/file
লিংক-৪ : https://drive.internxt.com/sh/file/3419b7f3-2aac-416d-8269-0283ebcc169d/308cb2bc910b337a146e61e3ff4892d8622b4156c089e7adcce934612d45c5f5
লিংক-৫ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qyc6886ceeb0964886bd2e799e4b51efae
লিংক-৬ : https://f004.backblazeb2.com/file/Selfpurification26/Attoshoddi+26.pdf

 

=================================

 

আত্মশুদ্ধি – ২৬

সময়ের সঠিক মূল্যায়ন

 

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

 

সূচীপত্র

 

 

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,

আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন, ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা সাইয়্যেদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালিন,ওয়া আলা আলিহী, ওয়া আসহাবিহী, ওয়ামান তাবিয়াহুম বি ইহসানিন ইলা ইয়াওমিদ্দীন, মিনাল উলামা ওয়াল মুজাহিদীন, ওয়া আম্মাতিল মুসলিমীন, আমীন ইয়া রাব্বাল আ’লামীন।

আম্মা বা’দ:

মুহতারাম ভাইয়েরা! আমরা সকলেই দুরুদ শরীফ পড়ে নেই-

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ،كما صَلَّيْتَ عَلٰى إبْرَاهِيْمَ، وَعَلٰي آلِ إبراهيم، إنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إبْرَاهِيْمَ، وَعَلٰى آلِ إبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ.

বেশ কিছুদিন পর আজকে আবারও আমরা তাযকিয়া মজলিসে হাজির হতে পেরেছি, এই জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করি- আলহামদুলিল্লাহ।

সময়ের মূল্যায়নের গুরুত্ব

মুহতারাম ভাইয়েরা! আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে: সময়ের সঠিক মূল্যায়নই সফলতার সোপান।

সময়ের অনেক দাম, যে সময়টা হাতছাড়া হয়ে গেছে সেটা তো আর কখনো ফিরে আসবে না। এই জন্য কোন সময় বেকার নষ্ট করা যাবে না। বিচক্ষণ জ্ঞানীদের কাজ হচ্ছে সময়কে কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করা। সময়কে তিন ভাগে ভাগ করা হয় যেমন- অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। সফল ও কর্মময় জীবনের জন্য তিন কালই গুরুত্বপূর্ণ। অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হয়, বর্তমানে কর্মব্যস্ত থাকতে হয়, আর ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। সারকথা হচ্ছে; শিক্ষা, কর্ম ও পরিকল্পনা এই তিনের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে গেলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। কেউ যদি এই তিন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সত্যি সত্যি সামনে অগ্রসর হয় এবং সঠিক উপায়ে পরিশ্রম করে তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য নেমে আসবে ইনশা আল্লাহ।

কাজেই বলা যায় যে, সফলতা অর্জনের জন্য অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তিন কালই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই তিনের মধ্যেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বর্তমান। কারণ বর্তমানকে যে কাজে লাগায় তার ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়। ইসলাম আমাদেরকে এ বিষয়ে অতি গভীর ও যথার্থ শিক্ষা দান করে। একটি সহীহ হাদিসের আলোকে বিষয়টি আপনাদের সামনে আলোচনা করার চেষ্টা করব- ইনশা আল্লাহ।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللّيْلِ الْمُظْلِمِ، يُصْبِحُ الرّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا، أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا، يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدّنْيَا.

অর্থ: “তোমরা ঐ সকল ফিতনা আসার আগেই আমল করে নাও, যা হবে অন্ধকার রাতের বিভিন্ন অংশের মতো। সকালে মানুষ মুমিন থাকবে, সন্ধ্যায় কাফিরে পরিণত হবে অথবা (বলেছেন), সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে সকালে কাফিরে পরিণত হবে। সে নিজের দ্বীনদারি বিক্রি করে দিবে পার্থিব কিছু সহায়-সম্পদের বিনিময়ে”। [সহীহ মুসলিম, হাদিস ১১৮]

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রাহ. বলেন,

معنى الحديث الحث على المبادرة إلى الأعمال الصالحة قبل تعذرها والاشتغال عنها بما يحدث من الفتن الشاغلة المتكاثرة المتراكمة كتراكم ظلام الليل المظلم لا المقمر.

এই হাদিসে নেক আমলের দিকে ধাবিত হওয়ার এবং নানাবিধ ফিতনার শিকার হওয়ার আগেই নেক আমল করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। যে ফিতনাসমূহের রূপ হবে চাঁদবিহীন অন্ধকার রাতের মতো। (انظر شرح مسلم للنووي)

ফিতনাকে উপমা দেওয়া হয়েছে অন্ধকার রাতের সাথে। উপমাটি অতি স্বাভাবিক ও সর্বজনবোধ্য। যে কোনো চক্ষুষ্মান ব্যক্তিই ইচ্ছে করলে তা উপলব্ধি করতে পারবে।

দিন ও রাতের বৈশিষ্ট্য সবার সামনে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। দিনকে আল্লাহ বানিয়েছেন আলোকোজ্জ্বল। দিনের আলোতে সবকিছু পরিষ্কার দেখা যায়। সাদা-কালো, সুন্দর-অসুন্দরের পার্থক্য স্পষ্ট থাকে। সাদাকে সাদা বলে, কালোকে কালো বলে চিনতে কোনো অসুবিধা হয় না, কিন্তু অন্ধকার রাতে সবকিছু আঁধারে ঢেকে যায়। সাদা-কালো, যা দিনের আলোতে স্পষ্ট ছিল তা আর স্পষ্ট থাকে না। তখন কোনটি সাদা আর কোনটি কালো তা বোঝার জন্য আলাদা আলোর প্রয়োজন হয়। সেই আলো ছাড়া অন্ধকার রাতে কিছুই দেখা যায় না। এই অবস্থাটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য একটি বিষয়। যে কোনো চক্ষুষ্মান ব্যক্তিই এই অবস্থা দেখেন ও বোঝেন। এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অবস্থার উদাহরণ দিয়েই হাদিস শরীফে ফিতনাসমূহের অবস্থা বোঝানো হয়েছে। ফিতনার সময় সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, করণীয়-বর্জনীয়, উচিত-অনুচিত, যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় বরং বুদ্ধিগ্রাহ্য, সেগুলো সব অস্পষ্ট হয়ে যায়, যেমন অন্ধকার রাতে সাদা-কালো একাকার হয়ে যায়।

প্রচলিত জিনিসের দিকে মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে

ব্যক্তি ও সমাজের সৎপথে চলার ও সত্যের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য যা খুব দরকার তা হচ্ছে, ন্যায়-অন্যায় এবং সত্য-অসত্য স্পষ্ট থাকা এবং সত্য-ন্যায় গ্রহণে ও অন্যায়-অসত্য বর্জনে যা কিছু সহায়ক তা কার্যকর থাকা। কোনো সমাজে যখন সমষ্টিগতভাবে ভালোর জ্ঞান ও চর্চা অব্যাহত থাকে তখন সমাজের সদস্যদের ভালোর পথে চলা সহজ হয়। এটা কে না বোঝে? যে, উত্তম প্রচলন উত্তম কর্মের ক্ষেত্রে অতি সহায়ক। এই অবস্থাটাকে তুলনা করা যায় রৌদ্রোজ্জ্বল দিবসের সাথে। সমাজে যদি ভালো কাজের চর্চা ও প্রচলন থাকে তাহলে সর্বস্তরের মানুষের যেমন ভালো কাজটি জানা থাকে তেমনি তা মানাও সহজ হয়। আর বিপরীত বিষয়টি সম্পর্কে দ্বিধা, সঙ্কোচ, ভয় ও লজ্জা কাজ করে, যা ঐ পথে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

যেমন ধরুন জিহাদ ও জিহাদের ইতিবাচক বিধানাবলির চর্চা, আলোচনা-পর্যালোচনা কম হওয়ায় সর্বস্তরের মানুষের নিকট তা বিনা দ্বিধায় গ্রহণীয় হয়ে উঠে না। পক্ষান্তরে এর বিপরীত বিষয়গুলোর চর্চা ও প্রচার-প্রসার বেশি হওয়ার কারণে মানুষ তা অকপটে গ্রহণ করে নিচ্ছে। জিহাদি কার্যক্রমগুলো এখনো আমরা সর্বস্তরের মানুষের নিকট পছন্দসই করে তুলতে পারছি না। তার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে দ্বীনদার ও আলেম সমাজ থেকে এর চর্চা, আলোচনা-পর্যালোচনা উঠে যাওয়া। সুতরাং আমাদেরকে জিহাদ ও জিহাদের ইতিবাচক বিধানাবলির চর্চা, আলোচনা-পর্যালোচনা খুব বেশি বেশি করতে হবে, লেখার মাধ্যমে, কথার মাধ্যমে। মোটকথা হার্ড লাইনেই আমাদের কাজ বাড়াতে হবে। সবাই রাজি আছি তো ইনশা আল্লাহ? আল্লাহ তা’আলা সবাইকে কবুল করুন, আমীন।

যাই হোক ভাই বলতেছিলাম, মানুষের কাছে যেটার চর্চা বেশি হয় সেটার দিকেই সে ধাবিত হয়, হক্বের চর্চা বেশি হলে হক্বের দিকে ধাবিত হবে, আর বাতিলের চর্চা বেশি হলে বাতিলের দিকেই ধাবিত হবে। হক্ব বিষয়গুলো কখন মানুষের নিকট অস্পষ্ট হয়? এর উত্তরে আমি বলব যখন সমাজে মন্দ কর্মের বিস্তার ও প্রচলন ঘটে, এর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা এবং তত্ত্ব ও দর্শনগত সমর্থন আসতে থাকে তখন অনেকের কাছেই হক্ব বিষয়গুলো অস্পষ্ট হয়ে যায়। শুধু জ্ঞানগত ভাবেই অস্পষ্ট হয় না, কর্মগত ভাবেও ঐ বিষয়ের চর্চায় দ্বিধা, সঙ্কোচ বাড়তে থাকে।

গণতন্ত্র নামের কুফুরি মতবাদ যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে…

এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বর্তমানে ইসলামী রাজনীতির নামে প্রচলিত কুফরি মতবাদ গণতন্ত্রের প্রচলন। কারণ দ্বীন মানে-বুঝে এরকম সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যক্তির দাবিই হচ্ছে, বর্তমানে খেলাফত কায়েমের একমাত্র ব্যবস্থাই হচ্ছে, ইসলামী রাজনীতি তথা গণতন্ত্র। তাদের অনেকে আবার এটাকে কুফরি মতবাদ বলতেও রাজি না। এই গলত আকীদা এখন সাধারণ জনগণের ভিতরও ঢুকে গেছে। খেলাফত কায়েমের সঠিক পদ্ধতি গুলোর চর্চা, আলোচনা-পর্যালোচনা না থাকা এবং গণতন্ত্র নামক কুফরি মতবাদকে (খেলাফত কায়েমের ব্যবস্থা হিসেবে) ইসলামী রাজনীতি বলে ব্যাপক চর্চা ও প্রচার-প্রসার করা। এক পর্যায়ে ভাল-মন্দ একাকার হয়ে যায়, তারতম্য করার বোধশক্তিও থাকে না।

প্রথমে মন্দ বিষয়গুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও অল্প অল্প করে ভালোর মাঝে প্রবেশ করে। আর এভাবেই মন্দের অল্প বিস্তারও অধিক বিস্তারে সহায়ক হয়ে থাকে। এই অবস্থাটাকে তুলনা করা যায় অন্ধকার রাতের সাথে, যখন সাধারণভাবে সাদা-কালোর পার্থক্য স্পষ্ট থাকে না। সেটা স্পষ্ট হওয়ার জন্য বিশেষ আলোর প্রয়োজন হয়। ঠিক তদ্রূপ দ্বীনের ক্ষেত্রেও হক্ব-বাতিল একাকার হয়ে গেলে নির্ণয় করার জন্য বিশেষ আলোর প্রয়োজন হয়। আর সেই বিশেষ আলো হচ্ছে ইলমে ওহীর আলো। সুতরাং ইলমে ওহীর আলো যাদের কাছে থাকে এবং যারা সেই আলোকধারী জামাতের সঙ্গে থাকে শুধু তাদের কাছেই ঐ সময় বিশ্বাসগত ও কর্মগত বিভ্রান্তিসমূহ স্পষ্ট থাকে। ফলে ঐসকল বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকাও তাদের পক্ষে সহজ হয়।

আমরা যদি আমাদের ব্যক্তিজীবন ও সমাজ-জীবনকে পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে দেখি তাহলে এই সত্য খুব স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারব। ইসলামের দৃষ্টিতে যা কিছু ‘মুনকার’ ও পরিত্যাজ্য, তা আকীদা ও বিশ্বাসগত হোক, কিংবা কর্ম ও আচরণগত- এই সবের কত কিছু আমাদের মুসলিম-সমাজে বিস্তার লাভ করেছে। কালেমা পাঠকারী কত আল্লাহর বান্দা সে-সব বর্জনীয় বিশ্বাস ও কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছে! কত বর্জনীয় বিষয় এমন আছে, যেগুলোর পক্ষে প্রচার-প্রচারণাও রয়েছে! সেসব প্রচার-প্রচারণার শিকার হয়ে কত অসংখ্য মানুষ বিপথগামী হয়েছে এবং অনৈসলামিক চিন্তা, বিশ্বাস ও কর্মের মাঝে লিপ্ত হয়েছে! এক এক করে এই সব বিষয়ের তালিকা যদি প্রস্তুত করা হয় তাহলে সেই তালিকা লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। সেই তালিকায় ঈমান-আকীদা সংক্রান্ত ফিতনা যেমন দেখা যাবে তেমনি দেখা যাবে কর্ম ও আচরণগত বহু ফিতনা। কুফর, শিরক, বিদআত শ্রেণির ফিতনাসমূহ যেমন দেখা যাবে তেমনি দেখা যাবে ফিসক-ফুজুর ও গুনাহ-পাপাচার শ্রেণির বহু ফিতনা। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সকল অনাচারই ‘শুআবুল কুফর’ অর্থাৎ কুফরেরই শাখা-প্রশাখা। কুরআন-সুন্নাহর নুসূস সম্পর্কে সচেতন ব্যক্তিদের অজানা নয় যে, নসে ‘কুফর’ শব্দের প্রয়োগ যেমন ইসলাম থেকে খারিজকারী আকীদা ও কর্মের ক্ষেত্রে হয়েছে তেমনি সাধারণ গুনাহ ও নাফরমানীর ক্ষেত্রেও হয়েছে। ফরমাবরদারি ও নেক আমল যেমন ঈমানের শাখা-প্রশাখা।  তেমনি আল্লাহর নাফরমানী ও পাপাচার কুফরের শাখা-প্রশাখা।

একটি হাদিস

তো সমাজে যখন ফিতনার বিস্তার ঘটে তখন ফিতনার শিকার মানুষের কী অবস্থা হয় তা উপরোক্ত হাদিসে খুব সংক্ষেপে ও সারগর্ভ ভাষায় এভাবে বলা হয়েছে-

يُصْبِحُ الرّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا، أَوْ يُمْسِي مُسلماً وَيُصْبِحُ كَافِرًا.

অর্থাৎ “ব্যক্তি সকালে মুসলিম থাকবে, সন্ধ্যায় কাফিরে পরিণত হবে কিংবা বলেছেন, সন্ধ্যায় মুসলিম থাকবে, সকালে কাফিরে পরিণত হবে”। (মুসলিম-হা:২১৩)

ইমাম নববী রাহ. বলেন,

وَهَذَا لِعِظَمِ الْفِتَن، يَنْقَلِبُ الْإِنْسَانُ فِي الْيَوْمِ الْوَاحِدِ هَذَا الِانْقِلَاب.

অর্থাৎ “ফিতনাসমূহের বিস্তার ও ভয়াবহতার কারণে একদিনের মধ্যেই মানুষের এমন এমন পরিবর্তন ঘটবে”।

এর আরো ব্যাখ্যা এসেছে পরের বাক্যে-

يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدّنْيَا.

অর্থাৎ, “সামান্য পার্থিব স্বার্থের বিনিময়ে নিজের দ্বীনদারি বিসর্জন দিবে”।(মুসলিম-হা:২১৩)

সকল ফিতনার স্বরূপ হচ্ছে মানুষ ঈমান থেকে কুফরের মধ্যে কিংবা ‘সালাহ’ ও পরহেযগারী থেকে গোমরাহী ও পাপাচারের মধ্যে চলে যাওয়া। আর এর পেছনে পার্থিব স্বার্থই বড় কারণ। সামান্য পার্থিব স্বার্থের জন্য নিজের দ্বীনদারি বিসর্জন দেওয়া। ফিতনাসমূহের পরিচয়ের ক্ষেত্রে এটি এমন এক সারগর্ভ বাণী, যার দ্বারা কিয়ামত পর্যন্ত সব ধরনের ফিতনা চিহ্নিত করা এবং ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে বুঝতে পারা সম্ভব। ফিতনা থেকে আত্মরক্ষার জন্য ফিতনাকে ফিতনা হিসেবে চিনতে পারাটা খুবই জরুরি। এর জন্য জ্ঞান ও উপলব্ধির যে আলোর প্রয়োজন তা কুরআন-সুন্নাহে উম্মতের জন্য রয়েছে। কুফর-শিরক, গোমরাহী ও পাপাচারের যখন বিস্তার ঘটে তখন আমলে সালিহ ও নেক আমল থেকে মানুষ নানাভাবে বঞ্চিত হয়।

আল্লাহর কাছে আমল কবুল হওয়ার জন্য তো ঈমান সবচেয়ে বড় শর্ত। কাজেই কুফর-শিরকের ফিতনায় পড়ে ঈমান হারানো ব্যক্তির আমলের কী মূল্য আছে? তেমনি বিদআতে লিপ্ত হয়ে নিজ ধারণা অনুসারে বড় বড় আমলেও কোনো লাভ নেই। আমল তো সেটিই গ্রহণযোগ্য, যা সুন্নাহ মোতাবেক হয়। তেমনি গুনাহ ও পাপাচারের বিস্তারের ক্ষেত্রগুলোতে মানুষের আমলনামায় ভালো কাজ কমতে থাকে, গুনাহের কাজ বাড়তে থাকে। আর যা কিছু নেক আমল করা হয় তারও পূর্ণ সুফল থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।

কাজেই আমাদের আলোচিত হাদিসের শিক্ষাই হচ্ছে, ফিতনাসমূহ আসার আগেই ভালো কাজগুলো করতে থাকা। ভবিষ্যতের সুসময়ের অপেক্ষায় বর্তমানকে কর্মহীন রাখা নির্বুদ্ধিতার কাজ। বর্তমান সম্পর্কে এবং বর্তমানের করণীয় সম্পর্কে যে সজাগ হয় এবং নিষ্ঠার সাথে সেই করণীয় বিষয়গুলো যে পালন করতে থাকে তার সময়টাই কাজে লাগে। এই ব্যক্তিই সময়ের সদ্ব্যবহার করে সফলতা অর্জন করতে পারে। আমরা সময়ের মূল্যায়ন করব তো ইনশা আল্লাহ?

হাদিসের শিক্ষা

আজকের আলোচিত হাদিস থেকে আমাদের জীবন ও কর্মের জন্য যে শিক্ষাগুলো আমরা গ্রহণ করতে পারি তা এখন আমি আপনাদের সামনে পেশ করছি। হাদিসের শিক্ষা হচ্ছে:

এক. নেক আমল ও ভালো কাজের বিষয়ে উদ্যমী ও তৎপর হওয়া।

দুই. বর্তমানের মূল্য বুঝে একে কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

তিন. বর্তমানের নানাবিধ সমস্যা ও সঙ্কটে হতোদ্যম না হয়ে এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ও বিশেষ উভয় প্রকারের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে যাওয়া।

চার. চারপাশের বিশ্বাসগত ও কর্মগত ফিতনা থেকে নিজের ঈমান আমলকে রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

পাঁচ. সম্পদের মোহ ও পদ-পদবির লিপ্সা থেকে অন্তরকে শুদ্ধ ও পবিত্র করার চেষ্টা করা।

ছয়. ভিতরের প্রবণতাসমূহ যেমন- ক্রোধ, জিঘাংসা, প্রতিহিংসা, যৌনতা, প্রবৃত্তিপরায়ণতা প্রভৃতির অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সন্ধান করা। কারণ এইসকল আভ্যন্তরীণ প্রবণতা ফিতনার শিকার হওয়ার অনেক বড় কারণ।

সাত. বাইরের প্রোপাগান্ডার প্রচার ও পাপাচারের পরিবেশে প্রভাবিত না হওয়া।

আট. দাওয়াহ, জিহাদ, আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া।

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সময়ের সঠিক মূল্যায়ন করে সফলতা অর্জন করার তাওফীক দান করুন, আমীন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করার তাওফীক দান করুক। আমাদের মুজাহিদ ভাইদেরকে সব জায়গায় কাফেরদের ওপর বিজয়ী হওয়ার তাওফীক দান করুন। সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে আ’মালের উন্নতি করার তাওফীক দান করুন। জিহাদ ও শাহাদাতের পথে ইখলাছের সাথে অগ্রসর হওয়ার তাওফীক দান করুন। পরকালে আমাদেরকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন।

প্রিয় ভাইয়েরা, আমাদের আজকের মজলিস এখানেই শেষ করছি। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।

আমরা সকলে মজলিস থেকে উঠার দোয়া পড়ে নিই।

 

سبحانك اللهم وبحمدك،أشهدأن لاإله إلا أنت،أستغفرك وأتوب إليك

وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين

وآخردعوانا ان الحمد لله ربالعالمين

***********

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الفردوس للإنتاج الإعلامي
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশন
In your dua remember your brothers of
Al Firdaws Media Foundation

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 − one =

Back to top button