True Skills Radio এর চক্রান্তকারীদের চক্রান্তের ব্যাপারে আমাদের বিশেষ সতর্কতা! – সালমান ফরায়েজী

True Skills Radio এর চক্রান্তকারীদের চক্রান্তের ব্যাপারে আমাদের বিশেষ সতর্কতা!

আল্লাহ বলেন –

وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلاَةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُم مَّعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلْيَكُونُواْ مِن وَرَآئِكُمْ وَلْتَأْتِ طَآئِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّواْ فَلْيُصَلُّواْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ وَدَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَوْ تَغْفُلُونَ عَنْ أَسْلِحَتِكُمْ وَأَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيلُونَ عَلَيْكُم مَّيْلَةً وَاحِدَةً وَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن كَانَ بِكُمْ أَذًى مِّن مَّطَرٍ أَوْ كُنتُم مَّرْضَى أَن تَضَعُواْ أَسْلِحَتَكُمْ وَخُذُواْ حِذْرَكُمْ إِنَّ اللّهَ أَعَدَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا

যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকেন, অতঃপর নামাযে দাঁড়ান, তখন যেন একদল দাঁড়ায় আপনার সাথে এবং তারা যেন স্বীয় অস্ত্র সাথে নেয়। অতঃপর যখন তারা সেজদা সম্পন্ন করে, তখন আপনার কাছ থেকে যেন সরে যায় এবং অন্য দল যেন আসে, যারা নামায পড়েনি। অতঃপর তারা যেন আপনার সাথে নামায পড়ে এবং আত্মরক্ষার হাতিয়ার সাথে নেয়। কাফেররা চায় যে, তোমরা কোন রূপে অসতর্ক থাক, যাতে তারা একযোগে তোমাদেরকে আক্রমণ করে বসে। যদি বৃষ্টির কারণে তোমাদের কষ্ট হয় অথবা তোমরা অসুস্থ হও তবে স্বীয় অস্ত্র পরিত্যাগ করায় তোমাদের কোন গোনাহ নেই এবং সাথে নিয়ে নাও তোমাদের আত্নরক্ষার অস্ত্র। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদের জন্যে অপমানকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। [ সুরা নিসা ৪:১০২ ]

হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি উট বেঁধে রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করব, না বন্ধনমুক্ত রেখে? তিনি বললেন, উট বেঁধে নাও, অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।

মুমিনের সিফাত হচ্ছে সতর্ক থাকা, আমরা আল্লাহর কাছেই সাহায্য এবং তাউফিক কামনা করি। এটি মুমিনের সিফাত নয় যে, সে অসতর্ক থাকবে এবং তার এই অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে কাফেররা মুমিনের উপরে চড়াও হবে। আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন, কাফেররা চায় আমরা যেন অসতর্ক থাকি। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদের জন্যে অপমানকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।

প্রিয় ভাই আমার,

জানেন, আমরা যুদ্ধের ময়দানেই আছি। এই ময়দানে সতর্ক থাকা অনেক জরুরী। সামান্য অসতর্কতার জন্য অনেক বড় মুসিবত চলে আসতে পারে, আল্লাহর পানাহ। ইদানিং কাফের মুরতাদদের কিছু কাজ লক্ষ্য করলাম। তারা আমাদের সহজ সরল দীনি ভাইদের ধোঁকায় ফেলার জন্য, প্রতারনা করে তাদেরকে বন্দি করার জন্য বিভিন্ন রকম ছলনার আশ্রয় নেয়। যেমন, আমাদের দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামের কপি ফোরাম বের করেছিলো তারা। এ ব্যাপারে ফোরামে আলাদা পোস্ট করে সকলকে সতর্ক করা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।

আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং তারা তাদের পরাজয় টের পেয়ে গেছে। হতাশায় তারা খুব সম্ভব তাদের হাত গুলো কামড়াতে শুরু করবে। ইদানিং একটি ইউটিউব চ্যানেল আমার নজরে এলো, নাম “True Skills Radio”. সঙ্গত কারনে এই চ্যানেলটির ব্যাপারে কিছু বিষয় আলোচনা করার নিয়াত করলাম ইনশা আল্লাহ।

মুল আলোচনায় যাবার আগে একটা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কথা সেরে নেই ইনশা আল্লাহ –

কাফের মুরতাদদের একটি জঘন্য কৌশলের নাম হচ্ছে – “স্টিং অপারেশন” যখন তারা কোনভাবেই আল্লাহর দ্বীনের মুজাহিদ ভাইদের সাথে পেরে উঠেনা তখন তারা কাপুরুষের মত এই ঘৃণ্য পদ্ধতি অবলম্বন করে। সহজ ভাষায় স্টিং অপারেশন হচ্ছে একটি ফাঁদ। এর দ্বারা উদ্দেশ্য থাকে এমন কাউকে গ্রেফতার করা যে কোন অপরাধ করেনি কিন্তু সে হয়ত করতে পারত। অর্থাৎ কোন একটি বিশেষ বিষয়ে কারো কোন দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে সুনির্দিষ্ট কোন একটি কাজ করতে প্ররোচিত করা, কাজটি করার জন্য সমস্ত রকম উপায় উপকরন তার সামনে হাজির করে দেয়া। হয়ত কাজটি করার কথা সে কোনদিন কল্পনাও করেনি কিন্তু যখন দেখে সব কিছু এভাবে তার সামনে একে একে হাজির হয়ে যাচ্ছে এবং তাকে অনবরত প্ররোচিত করা হচ্ছে তখন কোন এক অসতর্ক মুহুর্তে সে কাজটি করে বসে বা হয়ত শুধু মাত্র মৌখিক স্বীকৃতি দেয় – আর এটুকুর ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এখন আমি উপরে যে চ্যানেলটির কথা উল্লেখ করলাম এই চ্যানেলটির ব্যাপারে এক দুইটি নয় বরং অনেক কারন রয়েছে এটি তাগুতের একটি সম্ভাব্য ফাঁদ বা স্টিং অপারেশন এর একটি মেকানিজম হবার, নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম জানেন। তবে এর আ আমি মৌলিক কিছু বিষয় আলোচনা করার চেস্টা করব ইনশা আল্লাহ, যা থেকে আমারা খুব সহজেই এরকম ফাঁদ, প্রতারনা কিংবা স্টিং অপারেশন/মেকানইজম এর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে পারি ইনশা আল্লাহ।

১। আল কা’ইদা অনলাইনে কোন সাথী নিজেদের সাথে যুক্ত করেনাঃ এই কথাটি একাধিক বার বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা করা হয়েছে। আল কা’ইদা কখনই অনলাইন ভিত্তিক যে কোন রকম প্ল্যাটফর্মে কোন সাথী নিজেদের সাথে যুক্ত করেনা, কাউকে করতে বলেনা বরং এর বিপরীত বলে থাকে। একই সাথে অনলাইন ভিত্তিক যে কোন প্ল্যাটফর্মের যে কোন আইডেন্টিটি/পরিচয় নির্ভরযোগ্য এবং দায়িত্বশীল কারো দ্বারা ভেরিফাইড না হওয়া পর্যন্ত সে আইডেন্টিটি/পরিচয় এড়িয়ে চলতে উতসাহিত করে। অফিশিয়াল কোন প্ল্যাটফর্ম ব্যাতিত অন্য কোন মিডিয়া আউটলেট/প্ল্যাটফর্মের ব্যাপারে সতর্ক করতে থাকে।

২। আল কা’ইদা অনলাইনে কখনই কারো ব্যাক্তিগত তথ্য জানতে চায় নাঃ যেমন নাম জানাতে বলে না, জায়গার নাম বলতে বলেনা, এমন কি কেউ জানাতে চাইলেও তাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। আর যদি তা ইউটিউবের মত প্রকাশ্য আউটলেট সে ব্যাপারে তো কোন প্রশ্নই আসেনা! হ্যা, বিশেষ ক্ষেত্রে প্রাথমিক নির্ভরযোগ্যতা যাচাই এর পরে কিছু প্রশ্ন করতে পারে তবে সেটি ২ পক্ষের সিগনেচার ভেরিফাইড হবার মতই। ২ পক্ষই যখন একে অপরের সাথে এক্টি বিশেষ অবস্থা পর্যন্ত নির্ভরযোগ্যতা প্রমান করতে সক্ষম হয়, শুধুমাত্র এরপরেই তা করা হতে পারে।

৩। এমন যে কোন কাজ বা কাজের গাইডলাইন দেয়না যা কোন একজন মুসলিমকে কাফের মুরতাদদের হাতে সহজ টার্গেটে পরিণত করে। তা আল কা’ইদার আদর্শ এবং কাজের নীতিমালার মধ্যে পড়েনা।

এই ৩ টি মুলনীতি যদি কেউ ভালো ভাবে বুঝে নিতে পারেন তাহলে আসলে বাকি যে কোন কিছু যাচাই করে নেয়া আল্লাহর তাউফিকে খুব ই সহজ হবে ইনশা আল্লাহ।

এখন আসি উক্ত ভিডিওটির ব্যাপারে।

যারা ভিডিওটি দেখেছেন আশা করি ইতিমধ্যে আপনারা বুঝে নিয়েছেন যে, শুধু মাত্র মৌলিক ৩ টি বিষয়ের আলোকেই এই ভিডিওর অবস্থান পরিষ্কার! এবং ওহে, – মুরতাদ এবং মূর্খের দল! আমি নুন্যতম আশা এও রাখি, বিষয়টি তোমাদের কাছেও পরিষ্কার!

এবার আমি আপনাদের সামনে এই ভিডিও এর ব্যাপারে কিছু বড় রকম গরমিল তুলে ধরছি ইনশা আল্লাহ

১। হাদিসের মান যাচাই এর ক্ষেত্রে মুহাদ্দিস গণ একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেন তা হচ্ছে – হাদিসের কথা যাচাই করে দেখা। অর্থাৎ, সাহিত্য, ব্যাকরণ, অলংকরণ, প্রকাশ ক্ষমতা, প্রাসঙ্গিকতা, উপমার প্রয়োগ এরকম আরো অনেক কিছুকে সামনে রেখে তাঁরা শুধু মাত্র কথা গুলো লক্ষ্য করে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন এটি হাদিস নয়। এটি হাদিসের মত শুনতে নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র জবান এমন নয়, তাঁর উপমা দেয়ার ভঙ্গি এবং উপমা নির্বাচন এমন নয়। একই ভাবে আমি শুধু মাত্র এই ভিডিও কথা শুনেই আমার প্রথম অনুমান এবং আল্লাহ উত্তম জানেন, এটি কোন ইলমের অধিকারী, কল্যানকামী কোন মুজাহিদের কথা নয় বরং এটি হচ্ছে কোন ধোঁকাবাজ মূর্খের কিছু সস্তা কথা!

২। এই ভিডিও তে কিছু সস্তা কৌশল ব্যাবহার করা হয়েছে এবং তা করা হয়েছে এমন ভাইদের জন্য যারা তেমন কিছু বুঝেন না, দ্বীনকে অন্তর থেকে ভালোবাসেন তাদেরকে লক্ষ্য করে। তারা সুকৌশলে কিছু “শব্দ” বারবার ব্যাবহার করেছে যার দ্বারা মনে হবে যেন খুব আহামরি কোন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন আলোচনা চলছে কিন্তু বাস্তবে এটি মূর্খতা এবং ছলনা। এমন কিছু কথা হচ্ছে –

মোবাইল ফ্ল্যাশ করে দিবেন
ঐ জিমেইল আর এই ফোনে ব্যাবহার করবেন না
এসব জিনিষ সবাই বুঝেনা

এগুলো হচ্ছে মুল ভিডিওর আগে নিজের ক্রেডিবিলিটি অর্জন। অর্থাৎ কিছু সস্তা শব্দ উচ্চারন করে আপনার মনে একটা জায়গা করে নেয়া, এমন যে সে আসলে সিকিউরিটি নিয়ে খুব সচেতন!

এরপরে উপস্থাপন করা মুল বিষয় আর তা হচ্ছে – গ্রুপ তৈরি করা, এক হওয়া যত বেশী সম্ভব এক সাথে সরল মনা দীনি ভাই গুলো কে এক করা। এটা কিভাবে ভাবা যায় বলেন তো, একটু আগে সিকিউরিটির সবক দিয়ে আসা মহাবিজ্ঞ! শায়েখ আমাদের প্ল্যান দিচ্ছেন আমরা গ্রুপ বানাবো এবং গ্রুপের নাম দিবো এলাকার নাম দিয়ে! পুরা ভিডিও জুড়ে মুল মাকসাদ একটিই আর তা হচ্ছে যত বেশী সম্ভব সরল মনা দীনি ভাই গুলোকে এক জায়গায় করা।

এবং এই কথার ফাকে কিছু মিস্টি কথা ছেড়ে দেয়া –

এর দুইটি মাকসাদ। যদি সচেতন ভাবে কোন ভাই তাদের এই ধাপ্পাবাজি হঠাত বুঝেও ফেলেন সাথে সাথে তিনি আবার শুনলেন আমাদের দরকার “ট্যালেন্টেড ভাই” এই কথা তাকে আবার আগের বিষয় গুলো ভুলিয়ে দিবে, নিজেকে উৎসাহী মনে হবে।

তারা প্রত্যেকটি ভিডিওর সাথে – উম্মাহ নেটওয়ার্ক, উম্মাহ নিউজ এবং এএফএন রেডিও এর নাম ব্যাবহার করেছে। এর একটাই অর্থ, তারা এই নামে সার্চ দেয়া ট্রাফিক গুলো যতটুকু পারে তাদের দিকে নিতে চায়।

সব শেষে তারা আবার কিছু নাম উল্লেখ করেছে, যেমন তামিম আল আদনানি, যদিও নামটাও ঠিক ভাবে উচ্চারন করতে পারেনি। এই জায়গায় এসে এমন একটা উপস্থাপনা করতে চেয়েছে যেন, তামিম আল আদনানি মাঝে মাঝেই তাদের সাথে জিহাদের কাজের ব্যাপারে বিস্তর আলাপ আলোচনা করে থাকেন!

পরিশেষে আবার এও বলেছে – আমরা তো শহিদ হয়ে যাব! আল্লাহর দ্বীনের কোন মুজাহিদ কখনই এভাবে শাহাদাতের কথা বলতে পারেন না, এটি তাদের সিফাত না! যদি কোন মুজাহিদ ভাই এ কথা উল্লেখ করতেও চান, তিনি এই কথার সাথে নিজের চূড়ান্ত নীচতা, হীনতা, অসহায়ত্ব, গুনাহ, এবং আল্লাহর দয়া অনুগ্রহকে সংযুক্ত করে দেন।

আসলে আল্লাহর তাউফিকে পুরা ভিডিওর প্রতিটি লাইনের অসারতা প্রমান করে দেয়া সম্ভব ইনশা আল্লাহ। কিন্তু সেটির কোন জরুরত নেই ইনশা আল্লাহ।

পরিশেষে আল্লাহর কালামই আমাদের জন্য আল্লাহর কাহে আশ্রয় চাওয়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম, ওহে চক্রান্তকারীর দল, তোমাদের আর আমাদের মাঝে রইলেন আল্লাহ! আর মুমিনদের জন্য কতই না উত্তম অভিভাবক তিনি!

رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।