আল-ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশনপ্রবন্ধ-নিবন্ধ

সৌদি শাসকদের কুফরি – শাইখ উমর আবদুর রহমান রহিমাহুল্লাহ

তারবিয়াহ
ইস্যু-৫ | ১৪৪১ হিজরি | ২০২০ ইংরেজি

বিষয়ঃ সংশয় নিরসন
সৌদি শাসকদের কুফরি – শাইখ উমর আবদুর রহমান রহিমাহুল্লাহ
অনুবাদঃ হাম্মাদ সাইফুল্লাহ

 

পরম করুণাময়, অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি,

تَرَىٰ كَثِيرًا مِّنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚلَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنفُسُهُمْ أَن سَخِطَ اللَّـهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ﴿٨٠﴾وَلَوْكَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَااتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَـٰكِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ﴿٨١﴾
আপনি তাদের অনেককে দেখবেন, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তারা চিরকাল আযাবে থাকবে। যদি তারা আল্লাহর প্রতি ও রাসুলের প্রতি অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুরাচার। সূরা আল- মায়েদা ৫; ৮০-৮১
এরা আহমাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত নয়।
তাঁর কসম যিনি জান্নাত সৃষ্টি করেছেন, তারা কখনোই হতে পারবে না।
তাঁরা কখনোই মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠে রাসুলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মাহ হতে পারবে না।

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَوَلَّوْا قَوْمًا غَضِبَ اللَّـه ُعَلَيْهِمْ قَدْ يَئِسُوا مِنَ الْآخِرَةِ كَمَا يَئِسَ الْكُفَّارُ مِنْ أَصْحَابِ الْقُبُورِ﴿١٣﴾
হে মুমিনগণ! আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গেছে যেমন কবরস্থ কাফেররা নিরাশ হয়ে গেছে। (সূরা মুমতাহিনা ৬০; ১৩)

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تُطِيعُوا فَرِيقًا مِّنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ يَرُدُّوكُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ كَافِرِينَ﴿١٠٠﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আহলে কিতাবদের কোন ফেরকার কথা মান, তাহলে ঈমান আনার পর তারা তোমাদেরকে কাফেরে পরিণত করে দেবে। সূরা আল-ইমরান ৩; ১০০

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تُطِيعُوا الَّذِينَ كَفَرُوا يَرُدُّوكُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ فَتَنقَلِبُوا خَاسِرِينَ﴿١٤٩﴾بَلِ اللَّـهُ مَوْلَاكُمْ ۖوَهُوَ خَيْرُ النَّاصِرِينَ﴿١٥٠﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফেরদের কথা শোন, তাহলে ওরা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, তাতে তোমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়বে। বরং আল্লাহ তোমাদের সাহায্যকারী, আর তাঁর সাহায্যই হচ্ছে উত্তম সাহায্য।
সূরা আল-ইমরান ৩; ১৪৯ -১৫০

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَايَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُمِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚقَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ ۖإِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ﴿١١٨﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখে ফুটে বেড়িয়ে আসে। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশি জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। সূরা আল-ইমরানঃ ৩; ১১৮

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۚأَتُرِيدُونَ أَن تَجْعَلُوا لِلَّـهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُّبِينًا﴿١٤٤﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে। সূরা আন-নিসা ৪; ১৪৪

تَرَىٰ كَثِيرًا مِّنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚلَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنفُسُهُمْ أَن سَخِطَ اللَّـهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ﴿٨٠﴾
আপনি তাদের অনেককে দেখবেন, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তারা চিরকাল আযাবে থাকবে। সূরা আল- মায়েদা ৫; ৮০

وَلَوْكَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَااتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَـٰكِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ﴿٨١﴾
যদি তারা আল্লাহর প্রতি ও রাসুলের প্রতি অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুরাচার। সূরা আল- মায়েদাঃ৫; ৮১

আমার প্রিয় ভাইয়েরা,
শেষ আয়াতটি পর্যন্ত মোট ১৭টি আয়াত পরিষ্কার করে যে, একজন ইমানদারের ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের আওলিয়াহ(সাহায্যকারী, মিত্র, বন্ধু ইত্যাদি) হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নয়। অথবা মুশরিকদের, কাফেরদের এবং আহলে কিতাবদের আওলিয়াহ হিসেবে গ্রহণ করাও জায়েয নয়।
তারা একজন আরেকজনের মিত্র। ইতিহাসেও আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি। তা নাহলে ইসরায়েল রাষ্ট্রটি আন্তর্জাতিক ক্রুসেডারদের(NATO,EU,UN,US ইত্যাদি) সাহায্য ছাড়া টিকে থাকতে পারত না।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘبَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚوَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗإِنَّ اللَّـهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ﴿٥١﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। সূরা মায়েদাঃ ৫; ৫১
যারাই ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, যারাই তাদের মিত্রতা বা সাহায্য চাইবে, সে তাদের একজন হয়ে যাবে। সে দ্বীন-ইসলাম পরিত্যাগ করেছে, সে মুসলিমদের সম্প্রদায় ত্যাগ করেছে। সে আর মুসলিমদের অংশ নেই, সে আর তাদের (মুসলিমদের) পক্ষে নেই, বরং সে ইহুদী বা খ্রীষ্টানদের বা যাদের সাহায্য ও বন্ধুত্ব সে চেয়েছে তাদের সম্প্রদায়ের অংশ হয়ে যাবে।
আউলিয়াহ বলতে আমরা বুঝাচ্ছি – যে কুফফারদের কাছে সাহায্য ও সুরক্ষা চাওয়া হয়েছে, অথবা যে সাহায্য ও সুরক্ষা তাদের দেওয়া হয়েছে। আমেরিকার খ্রীষ্টানদের কাছে সাহায্য ও সুরক্ষা চাওয়াকে কুফরি হিসেবে দেখা হবে। আর যারা এটা করবে তারা ইসলামের সম্প্রদায় ত্যাগ করেছে বলে ধরা হবে।
যে সরকার আমেরিকার কাছে সাহায্য ও সুরক্ষা চেয়েছে, সে সরকারপ্রধানরা কাফের বলে গণ্য হবে -এই আয়াত অনুসারে,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘبَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚوَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗإِنَّ اللَّـهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ﴿٥١﴾
………. তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। ……………সূরা আল- মায়েদাঃ ৫; ৫১

মুসলিমরা যখন বনু কায়নুকা গোত্রের ইহুদীদের অবরোধ করেছিল তখন আবদুল্লাহ ইবন উবাই তাদেরকে আউলিয়াহ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। আবদুল্লাহ ইবন উবাই (মুনাফিকদের প্রধান) নিজের হাত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পকেটে রেখে বললেন, আমার আউলিয়াদের (ইহুদীদের) উপর করুণা করুন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই রাগান্বিত হলেন এবং বাকি সকলে তাঁর চেহারায় রাগ দেখতে পেলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমাকে ছাড়! কিন্তু আবদুল্লাহ ইবন উবাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পকেটে হাত রেখে দিয়ে বললেন, আমার আউলিয়াদের (ইহুদীদের) উপর করুণা করুন। ৩০০ সশস্ত্র আর ৪০০ নিরস্ত্র। এরা আমাকে গাঢ় ও লাল চামড়া হতে সুরক্ষা দিয়েছে। আমি জোরাজুরি করছি যে – আপনি তাদের প্রতি করুণা করুন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা তোমার কিন্তু তারা আমার সাথে মদিনায় থাকবে না।
এখানে দেখার বিষয়টি হচ্ছে যে, ইবন উবাই (মুনাফিকদের প্রধান) ইহুদীদের প্রতি তাঁর মিত্রতার প্রতি জোরাজুরি করছিল, সে তার বন্ধুত্ব ধরে রেখেছিল। তারপর এই আয়াত নাযিল হয় –
فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَىٰ أَن تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ ۚفَعَسَى اللَّـهُ أَن يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِّنْ عِندِه ِفَيُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا أَسَرُّوا فِي أَنفُسِهِمْ نَادِمِينَ﴿٥٢﴾
বস্তুতঃ যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তাদেরকে আপনি দেখবেন, দৌড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে। তারা বলে, আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোন দুর্ঘটনায় পতিত হই। সূরা আল-মায়েদাঃ ৫; ৫২
এখন আমরা দেখছি – ইবনে উবাই এর মতো সৌদি শাসকরাও আমেরিকার বন্ধুত্ব চেয়েছে এবং এই বন্ধুত্ব ধরে রেখেছে। তারা তাদের এই বন্ধুত্ব ধরে রেখেছে এবং এই বন্ধুত্বকে ত্বরান্বিত করেছে। তারা বলে,
………আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোন দুর্ঘটনায় পতিত হই………..সূরা মায়েদাঃ ৫; ৫২
এবং যারা আমাদের এই বিপদ ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারবে তারা হচ্ছে আমেরিকানরা।
এই আয়াতে আল্লাহ আযযা ওয়া যাল এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন – যে ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের কাছে সাহায্য ও বন্ধুত্ব চেয়েছে, সে ইসলাম ত্যাগ করেছে। এমনটা হবার পর আল্লাহ সুবহানাহুহু ওয়াতা’আলা মুসলমানদের মধ্যে এমন এক জাতি নিয়ে আসবেন যারা ইসলামের বার্তা বহন করবে। আল্লাহ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّـهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّـهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚوَاللَّـهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ﴿٥٤﴾
হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। সূরা আল-মায়েদাঃ ৫; ৫৪
(মাঝে থামিয়ে) একজন জিজ্ঞেস করল,সৈয়দ ডঃ ওমার…
শাইখ বললেন,দয়া করে আমাকে বিষয়টি শেষ করতে দিন।
“…স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে…”মুফাসসিরগণ এর ব্যাখ্যা দেন যে – এটি ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে হয়। এরপর কুরআন আমাদের দেখায় যে, আমরা কার কাছে বন্ধুত্ব ও সুরক্ষা চাইব। আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَاوَلِيُّكُمُ اللَّـهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِين َيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ﴿٥٥﴾وَمَن يَتَوَلَّ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّـهِ هُمُ الْغَالِبُونَ﴿٥٦﴾
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র। আর যারা আল্লাহ তাঁর রাসুল এবং বিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী। সূরা আল-মায়েদাঃ ৫ ৫৫-৫৬
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণিত একটি হাদিসে এটি পরিষ্কার যে, মুশরিকদের কাছ থেকে বন্ধুত্ব ও সুরক্ষা চাওয়া জায়েয নয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমরা মুশরিকদের কাছে মিত্রতা চাই না।
একবার একজন লোক – যে তার সাহসের জন্য সুপরিচিত ছিল –রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বদরের যুদ্ধে অনুসরণ করেন। মুসলিমরা সে মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও তার উপর খুশি ছিল। সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল, আমি আপনাদের হয়ে যুদ্ধ করতে চাই।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি আল্লাহ ও তার রাসুলকে বিশ্বাস কর”? লোকটি বলল, “না”। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমরা মুশরিকদের কাছে সাহায্য চাই না”। দ্বিতীয়বার লোকটি জিজ্ঞেস করলেও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই কথা বলেন।
তৃতীয়বারের সময় যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন যে – সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে বিশ্বাস করে কিনা? তখন সে বলল, “হ্যা”। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যাও, মুসলমানদের সাথে একসাথে যুদ্ধ কর…”।
তাহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ থেকে এটা পরিষ্কার যে, একজন মুশরিকের বিরুদ্ধে অন্য মুশরিকের কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েয নয়। তাহলে একজন মুসলমানের বিরুদ্ধে একজন মুশরিকের কাছে সাহায্য চাওয়া কেমন হবে?
যার চিন্তা-ভাবনা এখনও পরিষ্কার আছে এবং মনে আল্লাহ ও বিচারের দিনের ভয় আছে, সে কখনোই এটা মেনে নেবে না।

*******************
১৯৯৩ সালে শাইখ গ্রেপ্তার হন এবং ইহুদী জজ তার বিরুদ্ধে আনা চারটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে –
১। আমেরিকান সরকারের পতন ঘটানোর ষড়যন্ত্র ও উষ্কানি।
২। হোসনি মোবারককে হত্যা করার ষড়যন্ত্র ও উষ্কানি।
৩। সামরিক ঘাঁটি অপসারণের ষড়যন্ত্র।
৪। আমেরিকার বিরুদ্ধে একটি শহরে গেরিলা হামলার পরিকল্পনা।
শাইখ গর্বের সাথে আমেরিকান নির্বিচারকারী আদালতে দাড়িয়ে বলেন,“রাষ্ট্রপক্ষ ইসলামকে আমেরিকার মতো করে সংস্কার করতে চায়। আর আমি কঠোরভাবে এর প্রত্যাখ্যান করি”। রাষ্ট্রপক্ষ চায় যে আমরা আমেরিকার প্রতি নত হয়ে থাকি, নাহলে তারা আমাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেবে। আমরা বলি,

قَالَ رَبِّ السِّجْنُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِي إِلَيْهِ ۖوَإِلَّا تَصْرِفْ عَنِّي كَيْدَهُنَّ أَصْبُ إِلَيْهِنَّ وَأَكُن مِّنَ الْجَاهِلِينَ﴿٣٣﴾
ইউসুফ বললঃ হে পালনকর্তা তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহবান করে, তার চাইতে আমি কারাগারই পছন্দ করি। যদি আপনি তাদের চক্রান্ত আমার উপর থেকে প্রতিহত না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। সুরা ইউসুফ ১২; ৩৩

তাই আমরা বলি – কারাগারে স্বাগতম, যদি এতেই আল্লাহ সুবহানাহুহু ওয়া তা’আলার নির্দেশ থাকে”।
শাইখকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শাইখ কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তার সাথে বহির্বিশ্বের কোনো যোগাযোগ ছিলনা। তাঁকে রেডিও ও দোভাষীও দেওয়া হয় নি। অর্থাৎ তিনি বহির্বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলেন এবং তার কিঞ্চিৎ কোন সাক্ষাতকারী আসতেন। কখনো তাঁর কাছে কোনো সাক্ষাতকারী আসলেও তার সব কাপড় খুলে ফেলে তাকে আভ্যন্তরীণভাবে চেক করা হতো।
তিনি শারীরিক নিপীড়নেরও শিকার হন। একদিন এক গার্ড তার কারাকক্ষে আসে যখন শাইখ সালাত আদায় করছিলেন এবং সে শাইখকে নির্যাতন করে। যখন শাইখ কুরআন পড়তেন তখন তারা উচ্চস্বরে গান বাজাতো এবং তাকে অন্যান্য মুসলিম কারাবন্দীদের সাথে সালাত আদায় করতে দেওয়া হতো না।

এভাবেই আল্লাহ সুবহানাহুহু ওয়াতা’আলার শত্রুরা রাসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই উত্তরাধিকারীকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিল। আর এগুলো তখনই হয়েছে – যখন শাইখ একজন বয়স্ক লোক। যিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য ব্যাধিতে আক্রান্ত।

আমরা আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার কাছে দুআ করি, যেন শাইখকে তার ধৈর্য ও জিহাদের জন্য জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন; আমীন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 5 =

Back to top button