আল-ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশনপ্রবন্ধ-নিবন্ধ

যুবকদের জন্য নসিহা – শাইখ সুলায়মান আল উলওয়ান হাফিজাহুল্লাহ

তারবিয়াহ
ইস্যু-৫ | ১৪৪১ হিজরি | ২০২০ ইংরেজি

বিষয়ঃ যুবকদের জন্য নসিহা
যুবকদের জন্য নসিহা – শাইখ সুলায়মান আল উলওয়ান হাফিজাহুল্লাহ
অনুবাদঃ মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি যে, কীভাবে কিছু কিশোররা তাদের নীতি হতে দোদুল্যমান। তারা সহজেই তাদের নীতি হতে সরে পড়ে এবং অটল থাকতে পারেনা। তারা ঘুরে যায় ঠিক রাজনীতিবিদদের মতো এবং বাস্তবতাও ঘুরে যায়। এমনটা হবার অনেকগুলো কারণ আছে। আমি এখানে প্রধান প্রধান কারণগুলো বর্ণনা করছি –

প্রথমত: কিছু লোক প্রকৃত ঘটনা ও ধর্মের বাস্তবতা এড়িয়ে যায়। তাই তারা ইবনে তাইমিয়্যাহর পায়ের কাছাকাছি না গিয়েও নিজেদেরকে তাঁর সমপর্যায়ের মনে করে। ফলে তারা নিজেদেরকে এমন পরিস্থিতিতে নিয়ে যায়, যা তাদের পক্ষে সামলানো সম্ভব হয়না। তারা ইবনে তাইমিয়্যাহর জীবনী ও উক্তিগুলো পড়েছে এবং যা তিনি করেছেন তা তারা করতে চায়। কিন্তু তাদের মধ্যে ইবনে তাইমিয়্যাহর প্রাথমিক আদবগুলো অনুপস্থিত। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তারা শুধু ফলাফলটা গ্রহণ করে, ফলাফল অর্জনের উপায়টা নয়।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, তারা এমনটা করে নিজেকে এবং নিজের ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আর সে নিজেকে পরীক্ষার সামনে উপস্থিত করে না কেননা সে এগুলো সহ্য করতে পারবে না। কিছু দ্বীনি কিশোররা বলে যে, তারা নিজেদের বিসর্জন দিতে চায় এবং তারা এমন কিছু করে যা হয়ত গ্রহণযোগ্য। কিন্তু তারা সঠিকভাবে কাজটি করে না, যেভাবে কাজটি করতে হয়। তাই তারা এমন কিছু পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, যা তারা সামলাতে পারে না ফলে তারা আবার সরে যায়।

দ্বিতীয়ত:ভালবাসা। অনেক কিশোরদের কিছু আলেম, দাঈ এবং সৎকর্মশীলদের প্রতি এতই ভালবাসা থাকে যে, তারা নিজেদের ভালবাসা প্রকাশ করার জন্য বা অন্যদের কাছে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার জন্য – অন্যদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক গল্প – রচনাও প্রচার করে। এছাড়া পরস্পরকে নিন্দা, অবমাননা, খারাপ ব্যবহার, আলেমদের প্রতি শ্রেণী বিভাগ ও তুলনা করা শুরু করে কোন জ্ঞান ছাড়াই। যেমন: এই আলেম বেশি জানেন, ইনি বিপদজনক, ইনি বেশি যথাযথ ইত্যাদি। এভাবেই তারা অপবাদ দেয়া ও শ্রেণীবিভাগ ইত্যাদি করা শুরু করে। আর এই বিষয়গুলো অজ্ঞতা এবং পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়।

আবু ইয়া’লা “তাবকাত ইবনে রাজাব” বইতে এমন কিছু লোকের কথা তুলে ধরেছেন, যারা সৎকর্মশীলদের আক্রমণ করত ও অপবাদ দিত, ফলে তারা পথভ্রষ্ট হয়।‌ এব্যাপারে ইমামদের জীবনীতে আরো বিস্তারিত আছে।

আল মুখাদ্দিম, মাহমুদ ইবন ইসমাইলের একটি ভাল বই, “হারামাতুল আহলিল ইসলাম” এই বিষয়টির জন্য ভাল এবং উপকারী।
তৃতীয়ত: কম আমল। তারা কাজের চেয়ে গল্প ও কথা বেশি বলে। আপনারা দেখবেন, কিশোরদের কেউ কেউ হক প্রচারের অজুহাতে কথা বলে এবং সিদ্ধান্ত নেয়। তারা বলে – এগুলো কোন বাজে আড্ডা নয়, কিন্তু তাদের অন্তরে আনুগত্য নেই।

তারা বিদ্বেষমূলক গল্পগুজব করে ও অপবাদ দেয়। কিঞ্চিৎ তাহাজ্জুদে দাঁড়ায়, এমনকি ফজরের নামাজেও অবহেলা করে। তারা আল্লাহর হককে অবহেলা করে এবং অন্যান্য দুনিয়াবী জিনিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সে তার ভাইয়ের চোখের এক চিমটি বালুও দেখতে পায়, কিন্তু নিজের অঙ্গহানী দেখতে পায় না। এ অভ্যাসগুলো তাকে পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়।

চতুর্থত: তারা এমন জিনিস বহন করে যা তারা সহ্য করতে পারে না। অর্থাৎ তারা তাদের সাধ্যের বেশি নিজেদের উপর নিয়ে নেয়। আর এটা স্বাভাবিক, যে একজন যখন তার সাধ্যের চাইতে বেশি কিছু বহন করবে, তখন সে পথভ্রষ্টতার দিকে এগিয়ে যাবে। তাই এটা আবশ্যক যে, একজন শিক্ষক তার কিশোর ছাত্রকে – সে নিজে যা জানে সবটুকুই দিবে না। সে ছাত্রদেরকে, তারা যতটুকু সামলাতে পারবে এবং যতটুকুর উপযুক্ত ততটুকুই দিবে।

রাসুলের(সাঃ) সময় দেখুন, যখন আবু দাহর তাঁর কাছে এসে মুসলিম হন এবং বলেন, “আমাকে তাদের কাছে প্রচার করতে দিন”। তিনি(সাঃ) বলেন, “না। তোমার লোকজনের কাছে ফিরে যাও এবং যখন তুমি আমার কাছ থেকে খবর পাবে যে তুমি ইতিমধ্যে প্রচার করেছ তখন আমার কাছে ফিরে আস।”

তাই রাসুলুল্লাহ(সাঃ) মানুষের প্রতি স্নেহশীল ছিলেন। এবং যেহেতু মানুষ তাদের নাম ও অবস্থানের চেয়ে তাদের সামর্থ্য ও ধৈর্যের দিক দিয়েই বেশি পৃথক হয়ে থাকে। ইমাম আহমাদ রাহি. এর সময়কার ফিতনার দিকে দেখুন। আবু ম’মার, আহমাদ ইবন মানীই, আলী ইবন আল-মাদিনী, ইয়াহইয়া ইবন ম’ঈন আনুগত্য করেন। এরা ছিলেন সে সময়ের নেতা। তারা আনুগত্য করেন এবং বাধা দেননি এবং প্রচার করেননি। মাত্র তিনজন অটল ছিলেন: আহমাদ ইবন হানবাল, মুহাম্মদ ইবনে নুহ: এবং তাঁর ভাই খুজা’আহ। খুজা’আহকে হত্যা করা হয়।
মুহাম্মদ ইবন নূহ: জাহাজে মারা যান এবং শুধু আহমেদ বেঁচে থাকেন। তাঁর কিছু সঙ্গী তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হে আবু আবদুল্লাহ, আপনি কি দেখছেন না কীভাবে সত্যের উপর মিথ্যা জয়লাভ করে?” তিনি বলেন, “কখনোই না। যতক্ষণ অন্তর সত্যের উপর অটল থাকে ততক্ষণ সত্য জয়ী থাকে।” মুসলিমদের উপর এটা করণীয় যে, যখন তাঁরা অটল আছেন এবং আল্লাহ তাদের পথপ্রদর্শনের মাধ্যমে ও ন্যায়নিষ্ঠদের ভ্রাতৃত্ব দ্বারা অনুগ্রহ করেছেন তখন তাদের দায়িত্ব হচ্ছে অন্যদেরকে দয়া ও জ্ঞানের মাধ্যমে সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকাজে বাধা দিবেন। আল্লাহ বলেন
,فَوَجَدَا عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا (65)
“আমার বান্দা যাকে আমি আমার পক্ষ হতে রহমত দিয়েছি এবং জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছি।” (সূরা কাহাফ, আয়াত ৬৫)
এবং তার অর্থহীন ও অমঙ্গল কোন কিছুতে যাওয়া উচিৎ নয়। বরং এসব ব্যাপার আলেমদের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ এবং নিজের জন্য এমন একটি সময় বের করা উচিৎ যখন সে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং আল্লাহর হক
আদায় করবে। এবং তার কথা তার নীরবতার চেয়ে বেশি হবে না এবং তার কথা তার কাজের চেয়ে বেশি হবে না, কারণ আমাদের এতে ঘাটতি আছে।

পঞ্চমত: রিয়াহ। এটা পথভ্রষ্টতার দাসত্যের দিকে নিয়ে যায়।

ষষ্ঠত: নিজের প্রশংসা। কিছু লোক নিজের কাজের প্রশংসা এবং অন্যের কাজকে তুচ্ছজ্ঞান করে। এটা একধরনের ঔদ্ধত্য। এরকম জিনিস পথভ্রষ্টতার দাসত্যের দিকে নিয়ে যায়।

সপ্তমত: জ্ঞানী লোকজন এবং আলেমদের সাথে যোগাযোগের অভাব। যে বিচ্ছিন্নভাবে থাকে সে হয় নিজেকে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি মনে করে অথবা সে মানুষের বাস্তবতা দেখে নি এবং তার সাথে ইসলামের অনুসারী কেউ নেই। এবং যখন কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় যে কোন আলেম আছে কিনা তখন সে চিন্তা করে যে আলেমদের বোঝা খুব কঠিন। এবং উমার ইবনে আবদুল আযীয রহ. হতে বর্ণিত, “যখন বলা হয়েছে যে, মানবজাতির সবাইকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে দাড় করিয়ে বলা হবে যে, একজন ছাড়া সবাই জান্নাতে যাবে তখন আমি দুশ্চিন্তায় পড়ি যে আমি সেই জন।”

বাস্তবতা হচ্ছে অনেকে নিজেকে ছোট মনে করে এবং আলেম ও ন্যায়পরায়ণদের সাথে বসে না, তাঁরা তাকে সাহায্য করতে পারে এবং আল্লাহ জাল্লা ওয়া আলার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। এবং যেমনটা কিছু সাহাবারা বলতেন, “আমাদের সাথে বস এবং এক ঘন্টার জন্য বিশ্বাস কর।” তাই তারা এটা জানে তারপরও নিজেদের নিয়ে ভয়ে থাকে। এগুলো সম্ভবত বড় কারণগুলো, কিন্তু আমার মতে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে যুবকদের মধ্যে সচ্চরিত্রের অভাব। এবং আপনি কিছু ব্যাপারে এটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, অনেকে আছেন যারা মনে করেন যে, তারা ইবনে তাইমিয়্যাহর মতো এবং তদানুসারে তারা টিভি দেখেন এবং কোন চিন্তাই করেন না। সে বলে, “আমি নিজেকে জানি।” কিন্তু এখনও সে নিজেকে জানে না।

শীঘ্রই সে নারীদের সৌন্দর্যের খাদে পড়ে যায়, যা টিভি চ্যানেলের মধ্যে অনেক বড় ফিতনাহ। এবং এরপর সে নারীদের এবং যৌন-মিলনের এবং আরো নিষিদ্ধ জিনিসের প্রলোভনে পড়ে যায়। তারা বুকভরা সাহস নিয়ে টিভি চ্যানেলের লাগামকে অবহেলা করে, পথভ্রষ্টতার কোন সন্দেহ ছাড়াই। এবং এর প্রমাণ হচ্ছে রাসুলুল্লাহর(সাঃ) উক্তি, “আমি এমন কোন ফিতনা এপর্যন্ত দেখিনি যা নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর।”

********************

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 2 =

Back to top button