আমীর খাত্তাব (সামির সালেহ আব্দুল্লাহ) রহিমাহুল্লাহইতিহাস- ঐতিহ্যনির্বাচিতপ্রবন্ধ-নিবন্ধ

লাল ফৌজের আতঙ্ক । আহমাদ উসমান

লাল ফৌজের আতঙ্ক । আহমাদ উসমান

চে গুয়েভারা বলতেই আমরা অজ্ঞান। অনেক বড় বিপ্লবী ছিল হেন তেন। অথচ হাল যামানার আমাদের এমন অনেক বীর আছেন যাদের একেকজন ছিলেন পুরো একটা বাহিনী। যাদের নাম শুনলে শত্রুরা পালানোর পথ খুঁজতো। তাদের একজন মূর্তমান আতংক আমির আল খাত্তাব। যিনি রাশিয়ান লাল ফৌজের মাঝে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন।

তিনি ১৯৯৫ সালে চেচেনের স্বাধীনতাযুদ্ধে সম্মুখসমরে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে হাতেগোনা মুজাহিদ নিয়ে শক্তিশালী রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয়লাভ করেছেন। প্রতিটি ফ্রন্টে তাদেরকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। রাশিয়ার বৃহৎ বৃহৎ বাহিনীকে যুদ্ধে অপদস্ত করে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছেন। তাদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করতেন। তাদের এমন নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন যে, দাগেস্তানে তার মুজাহিদ বাহিনীর অবস্থানাকালে এক কদম অগ্রসর হবার সাহস পায়নি দখলদার রুশ বাহিনী।

পুরো নাম ছিল সামির সালেহ আব্দুল্লাহ। সবার কাছে কমান্ডার খাত্তাব বা আমির খাত্তাব নামে পরিচিত। ১৯৬৯ সালে সৌদি আরব জন্ম গ্রহন করেন। সীমাহীন ভোগ-বিলাসে থাকা সত্ত্বেও ১৮ বছর বয়সে পরিবার ছেড়ে ১৯৮৭ সালে আফগানিস্তানে হিজরত করেন এবং শাইখুনা উ(সামার সাথে সাক্ষাত করে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ গ্রহন করেন।

সোভিয়েতের পতনের পর যখন আরব মুজাহিদরা পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়লো, তখন তিনি একদল প্রশিক্ষিত মুজাহিদদের সাথে করে আফগান থেকে চেচনিয়ার উদ্দেশ্যে নতুন হিজরতের পথ ধরলেন। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাজিকিস্তানের গৃহযুদ্ধের সাথে যুক্ত থাকার পর চেচেন মুজাহিদের সাথে যুক্ত হন।

১৯৯৮ সালে বন্ধু শামিল বাসায়েভের সাথে মিলে Islamic Peacekeeping Army নামে একটি বাহিনী গড়ে তুলেন। ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধ শুরু হয়। কমান্ডার খাত্তাব ও শামিল বাসায়েভের দক্ষ নেতৃত্বে শুরু হয় লাল ফৌজ নিধন। যুদ্ধের শুরুর দিকে একটা ঘটনা। খাত্তাবের ঘাটির কাছাকাছি এক পাহাড়ে সৈন্য নামায় লাল ফৌজ। তারমধ্যে ৮৪ জনকেই হত্যা করেন কমান্ডার খাত্তাব। অতঃপর অবশিষ্ট পুরো বাহিনীই পালিয়ে যায়। একের পর এক যুদ্ধে রাশিয়ান বাহিনীকে পিছু হটান, পরাজয়ের পর পরাজয়ে রাশিয়ান আর্মি মুজাহিদ বাহিনীকে থামাতে নিরাশ হয়ে পড়ে।

অগাষ্টে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে একটি বোমা বিস্ফোরন করেন। তাতে প্রায় ১০০ শতের উপর মানুষ নিহত হয়। এর জন্য রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা FSB কমান্ডার খাত্তাবকে দায়ী করেন। এর জবাবে খাত্তাব রাশিয়া সংবাদ এজেন্সীকে বলেন- “আমরা তাদের মত নই যারা ঘুমন্ত সাধারন মানুষকে বোমা মেরে হত্যা করে।”

যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ২০০২ সালের মার্চ মাসে কমান্ডার খাত্তাব এক অভিযানে ল্যান্ড মাইন দ্বারা আহত হন। আহত হবার পর কিছুদিনের জন্য বিশ্রামে যান।

আমির খাত্তাবের সাথে তার মায়ের প্রায়শই চিঠিতে কথা হতো। আহত থাকা অবস্থায় আমীর খাত্তাবের মা তার কাছে একটি চিটি লিখেছিলেন। কিন্তু চিঠিটি এক রুশগুপ্তচরের হস্তগত হয়। সে তাতে এক রাসায়নিক বিষ মেখে দেয়। যা শুকার পর যে কেউ আস্তে আস্তে অজান্তে মৃত্যুর খোলে ঢলে পড়ে।

২০ মার্চ চিঠিটি কামান্ডার খাত্তাবের হাতে আসে। আমীর খাত্তাব তা পড়ার পর মধ্যে রাতে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন। শাহাদাৎ বরণ করেন এক মূর্তমান আতংক। যিনি গুটি কয়েক মুজাহিদ নিয়ে রাশিয়ার মত বিশাল দৈত্যংদেহী বাহীনিকে পরাজিত করেছিলেন। লড়াইয়ের ময়দানে তিনি ছিলেন ইস্পাত দৃঢ়। তিনি চেচেনদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। ভীতসন্ত্রস্ত করে রেখেছেন শত্রুদের। সময়ের সুপার পাওয়ার রাশিয়া তাকে মারার জন্য কোন বাহীনি পাঠানোর সাহস করেনি।

চে গুয়েভারাদের আমরা খুব ভালোভাবে চিনি, তাদের বীরত্ব নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তাদের ছবি অঙ্কিত জামা গায়ে দেই, অথচ আমাদের এতো বড় বড় বীরদের নামটাও ভালো করে জানিনা। তাদের বীরত্ব ও উম্মতের প্রতি অসামান্য অবদান সম্পর্কে ছিটেফোঁটা ধারণা রাখিনা।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × one =

Back to top button