জিহাদের অর্থ – এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
তারবিয়াহ – ৬
বিষয়ঃ উমারাদের কলাম
জিহাদের অর্থ – এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
শাইখ আনওয়ার আল আওলাকি রহিমাহুল্লাহ
অনুবাদঃ হাম্মাদ সাইফুল্লাহ
আমরা আল্লাহ সুবহানা ওয়া-তাআলার কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি এই জামাতকে মহিমান্বিত করেন।আমরা আল্লাহ সুবহানা ওয়া-তাআলার কাছে দু’আ করি, যেন আমরা যা শিখি তা থেকে আমাদের উপকৃত করেন।আমরা আল্লাহ সুবহানা ওয়া-তাআলার কাছে দু’আ করি, যেন তিনি আমাদের উপকারী জ্ঞান দান করেন। আমরা আল্লাহ সুবহানা ওয়া-তাআলার কাছে দু’আ করি, যেন তিনি আমাদেরকে তাদের মত করে গড়ে তোলেন যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পথ অনুসরণ করে এবং তাঁকে ভালবাসে। এবং আমরা আল্লাহ সুবহানা ওয়া-তাআলার কাছে দু’আ করি, যেন তিনি আমাদেরকে তাদের মত করে গড়ে তোলেন যারা তার সাথে জান্নাতে থাকবেন।
জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর অপব্যাখ্যা:
কোরআনে যুদ্ধ সংক্রান্ত কিছু আয়াত আছে। যেমন-আল্লাহ বলেন,“তারা যেখানেই থাকুক, তাদের সাথে লড়াই কর”। এই আয়াতের ব্যাখ্যা কি হবে?
এর মানে হচ্ছে, ইসলামের প্রথম দিকে রাসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে তাদের সাথে যুদ্ধ করার কিংবা প্রতিশোধ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় নি। মুসলিমদেরকে প্রহার করা হত, তাদের হত্যা করা হত, এবং তাদের প্রচুর পরিমানে নির্যাতন করা হত আর তখনও আল্লাহ সুবহানা ওয়া-তাআলা তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার অনুমতি দেননি।
অত:পর আল্লাহ তা’য়ালা এই আয়াত নাজিলকরার মাধ্যমে “তোমরা তাদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ কর, যারা তোমাদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করে” মুসলিমদেরকে প্রতিশোধ নেওয়ার অনুমতি প্রদান করেন।আর আমরা আজ রাতে যে আয়াতগুলো পড়লাম, এগুলো মূলত আল্লাহ তা’য়ালা বদর, উহুদ ও অন্যান্য যুদ্ধ সম্পর্কে নাযিল করেছেন।
মনে রাখবেন, এই আয়াতগুলো আজকে আপনার আর আমার জন্য নির্দেশ নয়।এগুলো হচ্ছে কুরআনে বর্ণনা করা ইতিহাসের দলিল যেখান থেকে আমরা উদাহরণ পেতে পারি।তো আপনি কিছু অমুসলিমদের পাবেন যারা কুরআন সম্পর্কে বলে যে কুরআন সন্ত্রাসবাদ প্রচার করে।কিন্তু না, কুরআন কখনও সন্ত্রাসবাদ প্রচার করে না বরং কোরআন সন্ত্রাসবাদকে সুস্পষ্টভাষায় হারাম ঘোষণা করেছে। প্রকৃত ব্যাপার হলো তারা কুরআনকে বুঝতে পারে নি।
কুরআনের ইতিহাস সংক্রান্ত আয়াতগুলোকে তারা এমনভাবে অনুবাদ করে যেন এগুলো হচ্ছে আপনার আর আমার জন্য নির্দেশ।কিন্তু না, এগুলো আমাদের জন্য নির্দেশ নয়। যখন আল্লাহ বলেন যে “যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর”। তখন এটা তিনি মূলত রাসুলুল্লাহরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময়কার লোকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন। এবং আল্লাহ সুবহানা ওয়া-তাআলা আরো বলেছেন: “তাদের সেই একই জায়গা থেকে বিতাড়িত কর যেখান থেকে তারা তোমাদের বিতাড়িত করেছে।”
সেই জায়গাটা কোনটা ছিল।সেটা ছিল মক্কা থেকে মুকাররামা।মুমিনগন মক্কা থেকে মুকাররামায় বিতাড়িত হয়েছিলেন। তাই আল্লাহ সুবহানা ওয়া-তাআলা তাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে এখন তোমাদের অনুমতি আছে যে তোমারা তাদের সেখান থেকে বিতাড়িত করতে পার। তাই এখন আমাদের সেভাবে আয়াতগুলো ব্যাখ্যা করা উচিৎ না যেভাবে অমুসলিমরা চায়। যাতে করে তারা আমাদেরকে একদল সন্ত্রাসী ডাকতে পারে, আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুক, অথচ আমরা সন্ত্রাসী নই।
ইসলাম শান্তিতে পরিপূর্ণ, এর মানে হচ্ছে ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শান্তির বানী প্রচার করা, পৃথিবীর সকল মানুষকে শান্তির প্রতি আহবান করা ও পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, আর আমাদের সবার এটা বোঝা দরকার।তাই আমাদের অবশ্যই তাদের ফাঁদে পা দেওয়া উচিৎ নয়।আমাদের বুঝতে হবে যে এই আয়াতগুলো এমন ঘটনার সাথে জড়িত যা ইতিহাসে ঘটেছে। আমাদের সেখান থেকে শিখতে হবে।ঠিক অন্যান্য ইতিহাসের বইগুলোতে লিপিবদ্ধ অমুসলিমদের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধগুলোর মতই। ঐসব বইগুলোর ইতিহাস থেকে কেউ বলে না যে, ব্রিটিশরা বর্বর বা আমেরিকানরা বর্বর, যদিও বইগুলোতে তাদের বর্বোরচিত অতীত ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ আছে, কিন্তু এরপরও তাদেরকে আমরা সন্ত্রাসী বলিনা বরং আমরা এগুলো থেকে শিক্ষা নেই যে তারা কি করেছিল। তারাও তাদের অতীত কৃতকর্ম থেকে শিক্ষা নেয়। ঠিক একই জিনিস এখানেও বিদ্যমান।
কুরআনে তিনটি উপাদান আছে, একটাতে আমাদের পূর্বজাতীদের তথ্য আছে; আরেকটাতে আছে ইতিহাসের উপাদান এবং অন্যটাতে আছে ভবিষ্যতে কি হবে সে ব্যাপারে তথ্য ও ভবিষদ্য বাণী। এতে রয়েছে আমাদের নিজ জীবন পরিচালনার নিয়ম-রীতি, আদেশ-নিষেধ, বিচারব্যবস্থাসহ সকল বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ। এগুলো হচ্ছে কুরআনের তিন ধরণের আয়াত।
তো আমরা যে আয়াতগুলো আজ পড়লাম তা শুধু রাসুলুল্লাহরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময়ে কার্যকর হবে এবং এগুলো অবশ্যই আমাদের সবার জন্য শিক্ষনীয় বিষয় হিসেবে কাজ করে। কিন্তু আমরা ভুল বুঝব না যখন একজন অমুসলিম একজন সাধারণ মুসলিমের কাছে এসে কুরআন দেখিয়ে বলে যে এই আয়াতগুলো দেখো, এগুলো তোমাদের বলছে যে “যাও এবং কাফেরদের সাথে যুদ্ধ কর।”
না, এই আয়াতগুলো রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সময়ের মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলছে। এই আয়াতগুলো নাযিলের পেছনে কারন আছে। আল্লাহ আমাদের বুঝ দান করুন এবং আমি আশা ও দু,আ করি, যেন সবাই এটা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে যে ইসলাম অবশ্যই সেটা যা শান্তি প্রচার করে।
জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে কিছু সাধারণ আলোচ্যবিষয়।
বিশেষভাবে এই বিষয়টির উপর মন্তব্য করাটা গুরুত্বপূর্ণ কারন মদীনার দশ বছর সময়কালে, রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৯টি যুদ্ধে অংশগ্রগন করেন এবং উপরন্তু তিনি ৫৫টি অভিযান পাঠান যেখানে তিনি অংশগ্রগন করেননি। এগুলো সব যোগ করে আমরা দশ বছর সময়ে ৭০টা যুদ্ধের হাদিস পাই, তার মানে বছরে ৭টা যুদ্ধ। সুতরাং এটা এমন একটা মহান কাজ যার পেছনে রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবারা এত সময় দিয়েছিলেন, যে এই বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার ধারনা থাকা দরকার।
মনে রাখবেন যে একটা যুদ্ধপ্রস্তুতির পেছনে অনেক সময় ব্যয় হয়। মানে একটা সৈন্যবাহিনীর অর্থায়ন, সৈন্যসমাবেশ ও সংঘবদ্ধ করতে; তারপর তাদের বাইরে পাঠাতে এবং তাদের ভ্রমণে ও ফিরে আসতে কয়েক মাস লেগে যায়। তাই এটা সদ্যগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য অনেক বড় একটা বোঝা ছিল। তাই এটা এমন একটা বিষয় যার পেছনে রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত সময় ও শ্রম উৎসর্গ করেছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন? এবং কিভাবে?
২য় কারনটি হচ্ছে যে বিষয়টি আজ এত বিতর্কিত হয়ে উঠেছে এবং আমরা অগ্র-পশ্চাতে এত সব ভিন্ন মতামত শুনি জিহাদের ব্যাপারে যে, জিহাদের আসল অর্থ কি, এটার উদ্দেশ্য কি, এটার লহ্ম্য কি, এটার পেছনে কি প্রজ্ঞা আছে তা বুঝতেই পারি না। তাহলে এর মানে কি আর এর পেছনে কি প্রজ্ঞা আছে। জিহাদ শব্দটার নিজস্ব অর্থ হল যুদ্ধ। এটার উৎপত্তি ‘জুহুদ’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘চেষ্টা’, ‘চেষ্টা করা’। তাই শব্দটির ভাষাগত অর্থ হচ্ছে ‘চেষ্টা করা’ বা ‘যুদ্ধ করা’।
এই শব্দটি পরে একটি বিশেষ ইসলামী অর্থ বহণ করে। আরবী ভাষায় এমন কিছু শব্দ আছে যাদের ভাষাগত একটা অর্থ ছিল কিন্তু ইসলাম শব্দটির একটি নতুন অর্থ দান করে। উদাহরণসরূপ, সালাত শব্দটির আসল অর্থ ‘মিনতি’ কিন্তু ইসলামে এটা একটা নতুন অর্থ বহন করে তা হল নামায। তাই এখন যখন আপনি বলেন যে, চল সালাতের উদ্দেশ্যে যাই, আমার মনে হয় যে কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করে যে, তুমি কি শব্দটির আহ্মরিক অর্থ বোঝাচ্ছ না ভাষাগত অর্থ বোঝাচ্ছ না ইসলামী অর্থ বোঝাচ্ছ? এই শব্দটি একটি ইসলামী পরিভাষাগতশব্দ।
জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ক্ষেত্রেও একই বিষয়; এটি একটি নতুন অর্থ বহন করে আর তা হল, আল্লাহ আয ওয়া-জাল্লাহর শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করা যারা তার ধর্মকে অস্বীকার করে। আর চারটি মাযহাবই এই বিষয়ে একমত যে এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ আয ওয়া-জাল্লাহর পথে যুদ্ধ, তাই এটি এই নতুন অর্থ বহন করে এবং আমরা এই শব্দটি ব্যবহার করলে শর্তহীনভাবে এটিই বোঝায়। প্রিয় ভাই-বোনেরা, একমাত্র “আল্লাহ আয ওয়া-জাল্লাহর পথে যুদ্ধ” ছাড়া বাকি সকল যু্দ্ধই অসৎ।
এবং প্রতিটি যুদ্ধ, প্রতিটি রক্তপাতই অসৎ কিন্তু শুধুমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে “আল্লাহ আয ওয়া-জালের পথে যুদ্ধ”। আর তার প্রমাণ হচ্ছে কুরআনে সুরা নিসার একটি আয়াত।
আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেন:
الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ ۖ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا ﴿٧٦﴾
যারা ঈমানদার তারা যে, জেহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা জেহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল। (সূরা আন- নিসা: ৭৬)
আল্লাহ বলেছেন যে যুদ্ধ দুপ্রকার, একটা যুদ্ধ আল্লাহর জন্য করা হয় আরেকটা করা হয় তাগুতের জন্য আর তাগুতের অর্থ হল মিথ্যা উপাসনার বস্তুসামগ্রী বা সেসব সীমালংঘনকারীরা যারা অন্যায়ভাবে শাসনের ঐশ্বরিক অধিকার দখল করে। আল্লাহ বলেছেন যে ঈমানদারা আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করছে এবং তা একটি গ্রহণযোগ্য এবং পুরষ্কারযোগ্য কাজ।
আর যারা কাফের তারা তাগুতের পক্ষে লড়াই করে; তারা তাদের যুদ্ধের যেই কারনই দর্শাক না কেন, এটা হচ্ছে অসৎ, আল্লাহ বলছেন এটা অসৎ কাজ। এটা আগ্রাসনের যুদ্ধ হোক, সাম্রাজ্যবাদের যুদ্ধ হোক, ঔপনিবেশিক যুদ্ধ হোক, এক জাতির অন্য জাতির উপর কতৃত্বের যুদ্ধ হোক বা এক জাতিগত গোষ্ঠীর অন্য জাতিগত গোষ্ঠীর উপর কতৃত্বের যুদ্ধ হোক, এটা গনতন্ত্র ছড়ানোর নামে যুদ্ধ হোক, এটা অমুক অমুক মানুষদের নিপীড়ন বা একনায়কতন্ত্র থেকে মুক্ত করার নামে হোক, এগুলো সবই হচ্ছে অসৎ কাজ। এবং একমাত্র ন্যায়নিষ্ঠ যুদ্ধ হচ্ছে তা, যা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পতাকার নিচে করা হয়, অন্য কোনো যুদ্ধ নয়।
তাই প্রথমেই এই নীতিটি বিবৃত করা গুরুত্বপূর্ণ কারন আপনারা অনেককেই বলতে শোনেন যে ইসলাম হিংস্রতা এবং যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করে। ইসলাম যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করে, এটা সত্য নয়। ইসলাম সব ধরণের যুদ্ধের, সব ধরণের রক্তপাতের, সব ধরণের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যদি না তা আল্লাহর জন্য করা হয় যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যার আমাদের কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল সেটা দেখানোর অধিকার আছে। দেখেন, আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, সেকারনে শুধু তারই অধিকার আছে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটা মনোয়ন করার। কোনটা অন্য জিনিসের উপর অগ্রাধিকার বহন করে। উদাহরণসরূপ সপ্তাহে সাতটি দিন আছে, এগুলো সবকয়টিই সমান। শুক্রবার, শনিবার, রবিবার ও অন্যান্য দিনগুলোতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন পার্থক্য নেই, তারা সকলেই সমান। যাইহোক আল্লাহ আমাদের বলেছেন যে জুমাহ(শুক্রবার) সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোর চেয়ে পছন্দনীয়। যেহেতু আল্লাহ আয ওয়া-জাল এই দিনগুলো সৃষ্টি করেছেন তাঁর অধিকার আছে আমাদের বলার যে কোন দিনটা বেশী ভাল। সৌরজগৎ ও চন্দ্রসূর্যের আবর্তনের দিক দিক দিয়ে চিন্তা করলে রমজান মাস এবং বছরের অন্যান্য মাসগুলোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। রমজানকে অন্যান্য মাসের চেয়ে আলাদা দেখায় না, তারা সবাই সমান। যাইহোক, আল্লাহ আয় ওয়া-জাল রমজানকে বছরের সবচেয়ে পছন্দনীয় মাস হিসেবে মনোয়ন দিয়েছেন।
আল্লাহ নেক কাজের পুরষ্কার দানের জন্য জুল হিজ্জাহ এর প্রথম দশ দিনকে নির্বাচন করেছেন যেমনভাবে তিনি রমজানের শেষ দশ রাত্রিকে বছরের সবচেয়ে পুরষ্কারযোগ্য দিন হিসেবে ঠিক করেছেন এবং তারপর ঐ দশ রাত্রি থেকে তিনি বিজোড় রাত্রিগুলোকে সেরা হিসেবে এবং ঐ বিজোড় রাত্রিগুলো থেকে তিনি লাইলাতুল ক্বদরকে বছরের সেরা রাত্রি হিসেবে নির্বাচন করেছেন। আল্লাহ আয ওয়া-জাল সবকিছু সৃষ্টি করেছেন আর তারপর তিনি তার সৃষ্টি থেকে নির্বাচন করেন কোনটা অন্যগুলোর চেয়ে বেশী প্রাধান্যপ্রাপ্ত। তাই এটা করার অধিকার শুধু আল্লাহর আছে। যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তাই; এগুলো সবই খারাপ সেটা ব্যাতীত যা আল্লাহ ভাল হিসেবে মনোয়ন দিয়েছেন।
এখন, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর উদ্দেশ্য কি?
এটা হচ্ছে মানুষকে একে অন্যের বশ্যতা থেকে মুক্ত করে আল্লাহর বান্দায় পরিনত করা। তাই আমাদের কোন সৃষ্টির দাস না হয়ে, চাই সেটা মানুষই হোক বা পাথর বা মুর্তি বা আকাশচর কোন দেবতা হোক না কেন, আল্লাহ আয ওয়া-জাল চান যেন আমরা তাঁরই বান্দা হই। সুতরাং জিহাদ আমাদের আসলে বাতিল মা’বুদের ইবাদাত থেকে মুক্ত করে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইবাদতের দিকে নিয়ে আসে। এবং এটি হচ্ছে মানুষকে ইসলামের সৌভাগ্যশীল শাসনে আনার একটি উপায়, চাই সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক। কারন আমরা জানি, “ধর্মে কোন বলপ্রয়োগ নেই” মানুষকে মুসলিম হতে বাধ্য করা ইসলামে হারাম।
যাইহোক, যদি তারা ইসলামী শাসনের অধীনে থাকে তবে তাদের মুসলিম হওয়ার সম্ভাবনা বেশী এবং এজন্যই রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে বলেন, “আল্লাহ আয ওয়া-জাল তাদের দেখে বিস্মিত হন যাদের শিকল পড়িয়ে জান্নাতে আনা হয়।” আলেমদের একজন এই হাদিসের উপর মন্তব্য করেন যে, এই হাদিসটার মানে হচ্ছে, “এই লোকদের ইসলামে টেনে আনা হয়েছে যদিও তারা তা চায় নি এবং তা তাদের জান্নাতে প্রবেশ করার কারন হয়েছে।” সাধারণভাবে মানুষ ধর্মের ব্যাপারে শুনতে আগ্রহী নয়। মানুষ জানতে চায় কীভাবে অর্থ রোজগার করা যায়। তুমি যদি অমুসলিমদের কাছে ঘোষনা দাও যে, ইসলাম সম্পর্কে একটি লেকচার অনুষ্ঠিত হবে, মানুষ আসবে না অথবা তারা আসলেও তুমি বড় কোন সাড়া পাবে না। কিন্তু তুমি যদি ঘোষণা দাও যে যারা আসবে টারা ৫০ ডলার পাবে তাহলে মানুষ লেকচার হল ভাসিয়ে দেবে এমনকি তাদের জন্য যথেষ্ট আসনও থাকবে না।
কেন? কারন তুমি তাদের ৫০ ডলার সাধছ। এ ব্যাপারটা সুধু অমুসলিমদের জন্য নয় মুসলিমদের জন্যও সত্য। মানুষ ফজর সালাতের জন্য মসজিদে আসে না, মসজিদ জুমার সময় পরিপূর্ণ থাকে কিন্তু ফজরের সালাতের সময় তাদের খুব ছোট একটি অংশ থাকে। ধরা যাক, ১০%। কিন্তু আমরা যদি ঘোষণা দেই যে যারাই ফজরের সময় আসবে তারাই ২০ ডলার করে পাবে, তখন সবাই আসবে। প্রতিবেশীরা আসবে, সবাই আসবে, দূরে যারা থাকে তারাও আসবে আর তারা মসজিদে ভীড় জমাবে।
কেন? কারন তুমি তাদের ২০ ডলার সাধছ, মূলত মানুষ ধর্মের ব্যাপারে শুনতে আগ্রহী নয়। তাই রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন প্রথম মক্কায় ঘোষণা দেন যে তিনি একজন রাসুল আর তিনি কুরাইশদের সকলকে জড়ো করেন এবং তিনি এটাকে অনেক জরুরী বুঝিয়েছেন এবং এটা আসলেই জরুরী। তিনি ডাকছিলেন, “ওয়া সুবহাহ” এবং এটা ৯১১ ডায়াল করার মত, এটা জরুরী অবস্থা এবং এভাবেই রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষদের জড়ো করেন এবং তারপর তিনি তাদের বলেন, আমি তোমাদের আল্লাহর তীব্র শাস্তি থেকে সতর্ক করছি।
আবু লাহাব কি বলেছিল?
তোমার কপালে অমঙ্গল রটুক, তুমি আমাদের এজন্য ডেকেছ? আবু লাহাব ক্ষেপে ছিল, কারন সে তার দোকান বন্ধ করে মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা শোনার জন্য এসেছিল এবং সে মনে করেছিল যে এটা গুরুতর কিছু ছিল। এবং দেখা যায় যে এটা ধর্মপ্রচারের জন্য ছিল এবং একারনে সে অনেক অস্থির ছিল। তখন এই আযাত নাযিল হয়। আর তারপর আল্লাহ বলেন, “তার সম্পদ তার জন্য কি করবে?” এই সম্পদ যা তাকে ইসলাম থেকে দুরে রাখছিল, যা তাকে বার্তা শুনতে বাধা দিচ্ছিল, যা তাকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল কারন রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জড়ো করেছিল। এই সম্পদ হাসরের ময়দানে তার জন্য কি করবে? কিছু না। বাস্তবে এটা তার পতনের কারন হবে। তাই যখন সাহাবারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে আর মানুষদের ইসলামের শাসনাধীনে নিয়ে আসে তখন তারা শুনছিল।
তখন তারা শুনছিল কারন সাহাবারা তাদের শাসন করছিল এবং তাদের মানুষদের দাওয়াহ দেওয়ার কিছু কর্তৃত্ব ছিল এবং মানুষ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল কারন তখন এটা সরকারের পক্ষ থেকে আসছিল। এটা কোন ধর্মপ্রচারকের কাছ থেকে আসছিল না যে কোন রাস্তা বা বাজারের এক কোণে হাতে একটি লাউডস্পিকার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর মানুষ তাদের কান বন্ধ করে পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। তখন এটা একটা কর্তৃত্বপূর্ণ স্থান থেকে আসছিল এবং তখন মানুষ গুনোত্তর হারে ইসলামে প্রবেশ করছিল। শুরুর দিকে যখন রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় দাওয়াহ দিচ্ছিলেন, শুধু গুটিকয়েক জন আগ্রহী ছিল। কিন্তু যখন রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামী রাষ্ট্রের পত্তন করেন এখন গোত্রগুলো শুনছিল, অন্য জাতিগুলো শুনছিল এবং তারা এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছিল এবং তখন মানুষ হাজারে হাজারে মুসলিম হচ্ছিল। রাসুলুল্লাহরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৩ বছরের মক্কার ইতিহাসে তাঁর কতজন অনুসারী ছিলেন?১০০?২০০?৩০০? কিন্তু মদীনায় তারা প্রতিবছর সহস্রহারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তাই মক্কা বিজয়ের সময়ে রাসুলুল্লাহরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২,০০০ বা ১০,০০০ জনের বাহিনী ছিল এবং হাজাতিল ওয়াদা এর সময় ৯০,০০০। এবং যখন তিনি মারা যান তাঁর জানাযায় ১,১৪,০০০ জনের বেশী শরীক হয়।তো আপনার দেখলেন যে কিভাবে সংখ্যা বাড়ছিল কারন তখন তাদের হাতে কর্তৃত্ব ছিল।
তাহলে জিহাদ কোন কোন ধাপ অতিক্রম করেছিল?
ইবনুল কায়্যিম “যাদ-উল-মাআদ”- এ বলেন, শুরুর দিকে জিহাদের অনুমতি ছিল না। এটা নিষিদ্ধ ছিল। মুসলিমদের যুদ্ধ করার অনুমতি ছিল না।রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ধৈর্যশীল হও কারন আমি অনুমতিপ্রাপ্ত হইনি।তাই শুরুতে ছিল ধৈর্যধারণ।
দ্বিতীয় ধাপে তিনি বলেন, এরপর এটার অনুমোদন ছিল, সামান্য অনুমোদন।এটার অনুমোদন ছিল, কিন্তু নির্দেশ বা বাধ্যতামূলক ছিল না। এটার শুধুই অনুমতি ছিল। এরপর, আল্লাহ সুরা হাজ্জ এর ৩৯ নং আয়াত নাযিল করেন :
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا ۚ وَإِنَّ اللَّـهَ عَلَىٰ نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ ﴿٣٩﴾
যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম। (সূরা আল-হাজ্জ – ৩৯)
তার মানে, আপনারা দেখছেন, তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এখন, এর পরের ধাপ, যেমনটা ইবন কায়্যিম রহ. বলেন, এখন তাদের নির্দেশ দেওয়া হল যে যারা তাদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য। এটা ছিল তৃতীয় ধাপ।
এবং এর আয়াত হচ্ছে, সুরা বাকারার ১৯০ নম্বর আয়াত: আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেন,
وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّـهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا ۚ إِنَّ اللَّـهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ ﴿١٩٠﴾
আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা বাকারা – ১৯০)
এখানে অনুমতি প্রদান করা হল যে, তোমরা তাদের সাথেই যুদ্ধ কর যারা তোমার সাথে যুদ্ধ করে। এবং এরপর চুড়ান্ত ধাপ এবং এটা হচ্ছে সেই ধাপ যা আল্লাহ আয ওয়া-জাল্লাহর চুড়ান্ত আইন চিত্রিত করে যা উম্মাহর উপর প্রযুক্ত হয়, যেমনটা ইবনে কায়্যিম বলেন, এবং তারপর আল্লাহর রাসুল সকল অবিশ্বাসীদের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশপ্রাপ্ত হন।
আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেন,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّـهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّـهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ ۚ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ ۚ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّـهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ ﴿٣٦﴾
নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আত-তাওবা – ৩৬)
এবং এটা হচ্ছে একটা হাদিস যেটা হচ্ছে মুতাওয়াতির। এটা আল-বুখারী, মুসলিম এবং অন্যদের দ্বারা বর্ণিত হয়েছে এবং রাসুলুল্লাহরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২০ জনেরও বেশী সাহাবী দ্বারা বর্ণিত। আমি মানুষের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যতক্ষন না তারা সাক্ষ দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল, যাতে সালাত কায়েম হয়, যাকাত দান করা হয়। যদি তারা তা করে তবে তাদের রক্ত ও তাদের সম্পদ রক্ষা করল এবং আল্লাহ তাদের কাজের জন্য তাদের দায়ী করবেন।
তাহলে এগুলো হচ্ছে চারটি ধাপ যা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ অতিক্রম করে। এর উদ্দেশ্য কি ছিল? কেন রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ করছিলেন? কুরআনের কিছু আয়াত আমাদের জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর উদ্দেশ্যগুলো বলে।
প্রথমটা হচ্ছে ইসলামের প্রমোশন। আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেন
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّـهِ ۚ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّـهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ﴿٣٩
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। (সূরা আল-আনফাল – ৩৯)
২য় উদ্দেশ্য: ধর্মানুষ্ঠান ও ইবাদতস্থানসমূহের হেফাযত। আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেন,
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا ۚ وَإِنَّ اللَّـهَ عَلَىٰ نَصْرِهِمْযুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম। (সূরা আল-হাজ্জ –
তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়েছে যাদের সাথে যুদ্ধ করা হচ্ছে কারণ তাদের সাথে অন্যায় করা হয়েছে আর আল্লাহ যথার্থই তাদের বিজয় দানে সক্ষম। তারা হচ্ছে সেসব লোক যাদের কোন অধিকার ছাড়াই ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল কারন তারা শুধু বলেছে যে, “আল্লাহ আমাদের প্রভু।” আর এমনটা যদি না হত যে, আল্লাহ একদল দ্বারা অন্যদলকে প্রতিহত না করতেন, তাহলে ধ্বংস হয়ে যেত আশ্রম, চার্চ, সিনেগগ এবং মসজিদ যেগুলোতে আল্লাহর নাম অনেক বেশী স্মরণ করা হয়। এবং আল্লাহ তাদের সমর্থন করেন যারা তাঁর সমর্থন করে। আল্লাহ যথার্থই শক্তিশালী এবং ক্ষমতায় মহিমান্বিত।
এবং তাদের যদি আমরা ভূমির কর্তৃত্ব দিই তবে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সঠিক সৎ কাজের আদেশ এবং অন্যায় কাজ নেষেধ করবে এবং সবকিছুর পরিনাম আল্লাহর হাতেই আছে। তাহলে এখানে খেয়াল করুন, আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলছেন, আল্লাহ মানুষকে প্রতিহত না করতেন, কখনো অন্যদের দ্বারা, তাহলে ধ্বংসপ্রাপ্ত আশ্রম, চার্চ, সিনেগগ এবং মসজিদ থাকত যেগুলোতে আল্লাহর নাম অনেক বেশী ব্যাক্ত করা হয়। মানুষ যুদ্ধের দ্বারা প্রতিহত হয়, এটাকে সুন্নাত আল-মুদাফা বলে, এটা আল্লাহ আয ওয়া-জালের একটি আইন যা মানুষের জীবনকে শাসন করেছে। যদি এই যুদ্ধ না হত তবে চার্চগুলো ধ্বংস হয়ে যেত, সিনেগগ ও মসজিদগুলো ধ্বংস হয়ে যেত।
এখন আপনি হয়ত জিজ্ঞেস করতে পারেন, “চার্চ ও সিনেগগ কেন?”
আমরা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কথা বলছি। আমরাই প্রথম জাতি নই যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। প্রথম জাতি যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, তারা হচ্ছে বনী ঈসরাইল। সালেহ নবী এবং তার অনুসারীদের জন্য আল্লাহর পথে যুদ্ধের কোন নির্দেশ ছিল না, হূদ নবী ও তাঁর অনুসারীদের, নুহ নবী ও তাঁর অনুসারীদের। এই নবীগণের হ্মেত্রে আল্লাহ আয ওয়া-জাল তাঁদের শত্রুদের কোন অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে ধ্বংস করে দিতেন। তাদের নিজেদের যুদ্ধে জড়ানোর দরকার হয়নি। মুসার অনুসারী, বনী ঈসরাইল জাতি ছিল প্রথম যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। তাদের জিহাদের উম্মত হওয়ার কারনেই সিনেগগ ও চার্চগুলো হেফাযতে ছিল। আর মসজিদও এখন হেফাযতে আছে কারন মুহাম্মদেরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতও এই ইবাদত করছে।
তৃতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীকে বিকৃতি থেকে রক্ষা করা।
তাই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ বিকৃতি ঘটানোর কারণ না হয়ে বরং এটা হচ্ছে পৃথিবীর সুরক্ষার কারণ। এটি বিকৃতিকে প্রতিরোধ করে। দেখেন আল্লাহর আয়াতগুলো ভূল ধারণাগুলো শুধরে দিচ্ছে, এগুলোকে পরিষকার করে দিচ্ছে কারন শয়তানের কারণে আমরা বাস্তবতাকে ভুল বুঝি। সে আমাদের দিয়ে এভাবে চিন্তা করায় যে, ভাল হচ্ছে খারাপ আর খারাপ হচ্ছে ভাল।
ঠকানোর সেই দক্ষতা তার আছে। মানে এটাই তার শয়তান হওয়ার কারন, সে মানুষকে ঠকাবে এবং ভালকে খারাপ এবং খারাপকে ভাল হিসেবে উপস্থাপন করবে। তাই কুরআনের আয়াতগুলো আমাদের মনে শয়তানের ফিসফিসানির কারনে তৈরী হওয়া বিকৃতিগুলোকে নাকচ করে দেয়। কুরআনের আয়াতগুলো আমাদের অন্তরকে প্রচারমাধ্যম ও পৃথিবীর মিথ্যা কর্তৃত্বের কারনে সৃষ্টি হওয়া বিকৃতি থেকে পরিষ্কৃত করে। তাই আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলছেন যে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ জমিতে বিরাজমান বিকৃতিগুলোকে সীমিত করে। আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেন(২:২৫১):
فَهَزَمُوهُم بِإِذْنِ اللَّـهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ وَآتَاهُ اللَّـهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَاءُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّـهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَـٰكِنَّ اللَّـهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ ﴿٢٥١﴾
তারপর ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়। (সূরা বাকারা – ২৫১)
এবং এটা যদি না হত যে আল্লাহ কিছু লোকদের অন্যদের দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিকৃত হয়ে যেত, কিন্তু আল্লাহ বিশ্ববাসীর প্রতি দয়ালু।
চতুর্থ উদ্দেশ্য হচ্ছে, এটা মানবজাতীর জন্য একটি পরীক্ষা, এটা একটা পরখক্রিয়া।
আমরা যেটা বলে আসছি যে, পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব আল্লাহ আয ওয়া-জালের পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা, আর তাঁর পথে যুদ্ধ হচ্ছে এই পরীক্ষার একটা অংশ। আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেন, “এটা হচ্ছে হুকুম আর আল্লাহ যদি চাইতেন, তিনি নিজেই তাদের উপর প্রতিশোধ নিতে পারতেন, কিন্তু তিনি সশস্ত্র যুদ্ধের হুকুম দেন তোমাদের কয়েকজনকে অন্যদের দ্বারা পরখ করার জন্য।” তাই সশস্ত্র যুদ্ধ হচ্ছে বেঈমানদের জন্য পরীক্ষা। এটা ঈমানদারদের পরীক্ষা কারন এটা তাদের ধৈর্য্য ও বিসর্জন পরীক্ষা করে। চুড়ান্ত বিসর্জন যা একজন ঈমানদার আল্লাহ আয ওয়া-জালের জন্য করতে পারে তা হচ্ছে তার আত্না ও সম্পদের বিসর্জন। এটা হচ্ছে যাচাই করার পরীক্ষা যে তুমি আল্লাহ আয ওয়া-জালকে সৃষ্টির চেয়ে বেশী ভয় কর না সৃষ্টিকে আল্লাহ আয ওয়া-জালের চেয়ে বেশী ভয় কর। তাই এটা হচ্ছে “আমল ক্বুলুব” বা অন্তরের আমলের একটি শক্ত পরীক্ষা। আমাদের অন্তরে হয়ত অনেক ব্যাধি আছে, কিন্তু এই ব্যাধিগুলো প্রকাশ পায় না যতক্ষন না আমরা এই ইবাদতে শরীক হই। তখন এই ব্যাধিগুলো উন্মোচিত হয়। উদাহরণসরূপ: অনেক মুনাফিকরা সমাজে অনেক ভালভাবে মিশেছিল, তারা শুধুমাত্র বদর এবং উহুদের যুদ্ধে এবং পরবর্তী যুদ্ধগুলোতে দৃষ্টিগোচর হয়। আর একারনেই আল্লাহ আয ওয়া-জাল তাদের সম্পর্কে বলেন, তারা কি দেখে না যে টারা প্রতিবছর দুএকবার পরীক্ষীত হয়? রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বছরে গড়ে এক কি দুবার যুদ্ধ করতেন, তাই তাদের ভন্ডামী প্রকাশ পাচ্ছিল এই যুদ্ধগুলোতে কারন এটাই চুড়ান্ত পরীক্ষা।
৫ম উদ্দেশ্য: আল্লাহ আয ওয়া-জালের শত্রুদের শাস্তি দেওয়া এবং অপমানিত করা।
আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেন,
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّـهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّـهُ يَعْلَمُهُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ ﴿٦٠﴾
আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না। (সূরা আল-আনফাল – ৬০)
এটা ছিল সুরা আনফালের ৬০ নং আয়াত। আল্লাহ আয ওয়া-জাল সুরা তাওবাহর ১৪ ও ১৫ নং আয়াতে বলন,
قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّـهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ ﴿١٤﴾
যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন। (সূরা আত-তাওবা – ১৪)
وَيُذْهِبْ غَيْظَ قُلُوبِهِمْ ۗ وَيَتُوبُ اللَّـهُ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّـهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ﴿١٥﴾
এবং তাদের মনের ক্ষোভ দূর করবেন। আর আল্লাহ যার প্রতি ইচ্ছা ক্ষমাশীল হবে, আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা আত-তাওবা – ১৪)
এবং সুরা আনফালের ১৭ ও ১৮ নং আয়াতে বলেন,
مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِينَ أَن يَعْمُرُوا مَسَاجِدَ اللَّـهِ شَاهِدِينَ عَلَىٰ أَنفُسِهِم بِالْكُفْرِ ۚ أُولَـٰئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ وَفِي النَّارِ هُمْ خَالِدُونَ ﴿١٧﴾
মুশরিকরা যোগ্যতা রাখে না আল্লাহর মসজিদ আবাদ করার, যখন তারা নিজেরাই নিজেদের কুফরীর স্বীকৃতি দিচ্ছে। এদের আমল বরবাদ হবে এবং এরা আগুনে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। (সূরা আত-তাওবা – ১৭)
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّـهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّـهَ ۖ فَعَسَىٰ أُولَـٰئِكَ أَن يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ ﴿١٨﴾
নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে। (সূরা আত-তাওবা – ১৮)
“এটা তো গেলো আর জেনে রাখ আল্লাহ নস্যাৎ করে দেবেন কাফেরদের সকল কলা কৌশল” তারমানে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ কাফেরদের কলাকৌশল ভেস্তে দেবে। আয়াতের শুরুটা হচ্ছে, “সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করনি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে পারেন যথার্থভাবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত। এটাতো গেল, আর জেনে রেখো, আল্লাহ নস্যাৎ করে দেবেন কাফেরদের সমস্ত কলা-কৌশল।”
৬ষ্ঠ উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুনাফিকদের দৃষ্টিগোচর করা, আর আমরা এটা নিয়ে একটু কথা বলছি।
আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেন,
مَّا كَانَ اللَّـهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَىٰ مَا أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّىٰ يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ ۗ وَمَا كَانَ اللَّـهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَـٰكِنَّ اللَّـهَ يَجْتَبِي مِن رُّسُلِهِ مَن يَشَاءُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّـهِ وَرُسُلِهِ ۚ وَإِن تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ ﴿١٧٩﴾
নাপাককে পাক থেকে পৃথক করে দেয়া পর্যন্ত আল্লাহ এমন নন যে, ঈমানদারগণকে সে অবস্থাতেই রাখবেন যাতে তোমরা রয়েছ, আর আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদিগকে গায়বের সংবাদ দেবেন। কিন্তু আল্লাহ স্বীয় রসূল গণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা বাছাই করে নিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর ওপর এবং তাঁর রসূলগণের ওপর তোমরা প্রত্যয় স্থাপন কর। বস্তুতঃ তোমরা যদি বিশ্বাস ও পরহেযগারীর ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে থাক, তবে তোমাদের জন্যে রয়েছে বিরাট প্রতিদান। (সূরা আল-ইমরান – ১৭৯)
“আল্লাহ বিশ্বাসীদের সেই অবস্থায় ছেড়ে দেবেন না যে অবস্থায় তারা আছে, যতক্ষন না তিনি খারাপকে ভাল হতে পৃথক করেন।”আর এই পৃথকীকরণ করার মাধ্যম হচ্ছে “কিতাল ফি সাবিলিল্লাহর”। উহূদের যুদ্ধে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এক তৃতীয়াংশ বাহিনী নিয়ে পশ্চাদপসারন করেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুরা আল-ইমরানের ১৭৯ নং আয়াতটি নাযিল করা হয়েছিল।
৭ম উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর শত্রুদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষা যারা উম্মতের বিরুদ্ধে সীমালংঘনের পরিকল্পনা করে।
তাই আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেন,
فَقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَ ۚ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ ۖ عَسَى اللَّـهُ أَن يَكُفَّ بَأْسَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ وَاللَّـهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنكِيلًا ﴿٨٤﴾
“আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের যিম্মাদার নন! আর আপনি মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন। শীঘ্রই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি-সামর্থ খর্ব করে দেবেন। আর আল্লাহ শক্তি-সামর্থের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর এবং কঠিন শাস্তিদাতা। (সূরা আন-নিসা – ৮৪)
আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেন নি যে, দাওয়াহ কাফেরদের সামরিক শক্তি খর্ব করে দেবে। তিনি বলেন নি যে, কথোপকথন ও বক্তৃতা কাফেরদের সামরিকশক্তি দূর্বল করে দেবে। আল্লাহ আয ওয়া-জাল বলেছেন, কাফেরদের সামরিক শক্তি দূর্বল করার উপায় হচ্ছে যুদ্ধ। যখন আল্লাহ বলেন যারা তোমাদের সাথে লড়াই করেছে তাদের সাথে লড়াই কর, তিনি রাসুলুল্লাহরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময়কার লোকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন। আমাদের বুঝতে হবে যে এই আয়াতগুলো এমন ঘটনার সাথে জড়িত যা ইতিহাসে ঘটে। আমাদের সেখান থেকে শিখতে হবে। ঠিক অন্যান্য ইতিহাসের বইগুলোতে লিপিবদ্ধ অমুসলিমদের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধগুলোর মতই। ইতিহাসের এই বইগুলো পড়ে কেউ বলে না যে, ব্রিটিশরা বর্বর বা আমেরিকানরা বর্বর। কিভাবে মুনাফিকরা জিহাদের অর্থকে পাল্টাতে চাচ্ছে?
এক নম্বর: তারা বলে যে, জিহাদ হচ্ছে প্রতিরক্ষামূলক আর এটা আক্রমণাত্বক নয়।
দুই নম্বর: জিহাদ শুধু স্বাধীন মুসলিম দেশে অনুমোদিত।
তিন নম্বর: জিহাদ অবশ্যই আমীরের অনুমতি ও নির্দেশানুসারে করতে হবে।
ইহূদী ও ক্রুসেডারদের তাবেদার ও দালালরা বলে যে, জিহাদ রাসুলুল্লাহরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময়েই শেষ হয়ে গেছে এবং অনেকে বলে যে আমাদের বর্তমান এই বিশ্বশান্তির দিনে, এই বিশ্বশান্তির সময়ে জিহাদ অনুপযুক্ত। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা দেখে আসছি যে, যুগে যুগে এসব উলামায়ে সু অর্থাৎ মুনাফেক আলেমরাই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ সম্পর্কে এসব ভুলতথ্য ছড়াচ্ছে। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর অর্থ পাল্টিয়ে মানুষদের ঠকানোর ক্ষেত্রে যত ষড়যন্ত্রই থাকুক না কেন, উম্মতরা রাসুলুল্লাহরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময় থেকে শিখে এসেছে জিহাদ মানে কি?
জিহাদের ওয়াজিবগুলো কি? সুন্নাহগুলো কি? জিহাদের নিয়মগুলো কি?
এগুলো আমরা কুরআন ও সুন্নায় পাব এবং সাহাবাদের(রাঃ) এবং ন্যায়নিষ্ঠ প্রজন্মের আমলেই পাব। তাই আমাদের দরকার নেই যে আজকে কেউ এসে পূর্ব ও পশ্চিম থেকে অর্থ ধার করে জিহাদের নতুন অর্থ ব্যাখ্যা করবে। কারন আমাদের ঐতিহ্যে যথেষ্ট তথ্য রয়েছে আমাদেরকে জিহাদের অর্থ শিখনোর জন্য। আমাদের কারো সাথে এব্যাপারে পরামর্শ করতে হবে না কারণ এটা কুরআন, সুন্নায় এবং সাহাবাদের(রাঃ) আমলে পরিষ্কার। মুজাহিদ ফি সাবিলিল্লাহ নিজের খারাপ প্রবৃত্তিকে হারিয়েছে, শয়তানকে হারিয়েছে এবং তাদের হারিয়েছে যারা তাকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ থেকে অনুৎসাহিত করে। আর এটা হল একটা মহান বিজয়। মুনাফিকরা নিজেদের দুনিয়াবি মর্যাদার জন্যই মুসলিমদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, তাদের জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ পালন করা উচিৎ নয়। যেহেতু তাদের উচ্চমর্যাদা আছে, যেহেতু তারা বিখ্যাত শাইখ বা প্রসিদ্ধ ব্যাক্তি, সেহেতু তারাই সিংহভাগ মুসলিম যুবসমাজকে পশ্চাৎমুখী করে রাখছে, যারা আল্লাহ আয ওয়া-জালকে সেভাবে মেনে চলত যেভাবে আল্লাহ পছন্দ করেন। দেখেন এই লোকগুলো কত বেশী গুনাহ স্তুপীকৃত করেছে।তারা যা করছে তা কাফেরদের স্বার্থে করছে। তারা দাওয়াহ করছে কাফেরদের স্বার্থে। তারা এটার জন্য অর্থপ্রাপ্ত হোক আর না হোক, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলোর সাথে দেখা করুক আর না করুক, তাতে কোন যায় আসে না। তুমি যা করছ তা যদি কাফেরদের কাজে আসে তবে তুমি তাদেরই একজন হয়ে গেছ। তুমি এটা অর্থের জন্য কর আর বিনামূল্যেই কর; তুমি এটা তাদের সাথে মিলে কর আর একাই কর, কোন পার্থক্য নেই, শেষ ফলাফল একই। জিহাদ শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এবং এই বিশ্বাসটা আমাদের আছে এবং এটা এমন একটা পর্যায়ে পৌছেছে(ইয়াকীন)।কারণ আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল আমাদের এটা বলেছেন।
আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّـهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّـهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّـهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ﴿٥٤﴾
হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। (সূরা আল-মায়েদা – ৫৪)
আয়াতটি বলছে, “ইউজাহিদুন”। জাহিদুন হচ্ছে বর্তমান কাল, তারা জিহাদ করছে। মানে প্রতিবারই যখন আমরা এই আয়াতটি পড়ি কেউ না কেউ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ করছে। এবং এটা একটা ইঙ্গিত যে জিহাদ বিচারের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
পরবর্তী আয়াত
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّـهِ ۚ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّـهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ﴿٣٩﴾
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। (সূরা আল- আনফাল – ৩৯)
এই আয়াতে “ফিতনা” মানে কুফর। আয়াতে বলা হচ্ছে, তাদের সাথে যুদ্ধ কর যতক্ষন না কুফর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আর আমরা রাসুলুল্লাহরসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিস থেকে জানি যে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত কুফরি অব্যাহত থাকবে। অতএব জিহাদও শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, কারন আমাদের জিহাদ করতে বলা হয়েছে যতদিন না আমরা কুফরি নিশ্চিহ্ন করে দেই। তাই যতদিন কুফরি থাকবে ততদিন জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ থাকবে। এখন হাদিস বলে যে, জিহাদ শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে কিন্তু আসলে ঠিক শেষের আগ পর্যন্ত। কারন ঈসার(আঃ) সময়ে জিহাদ শেষ হয়ে যাবে। কেন এটা ঈসার(আঃ) সময়ে শেষ হবে? কারন ঈসা আ. কুফর নিশ্চিহ্ন হওয়ার পর আর যুদ্ধ করবেন না। তাই যুদ্ধের উদ্দেশ্য শেষ এবং ঈসার(আঃ) এর পর আর কোন জিহাদ নেই। কারন আল্লাহ আয ওয়া-জাল মুমিনদের রুহ নিয়ে যাবেন এবং কী বাকী থাকবে? কাফের। আরে ইয়াযুয মাযুযদের বিরুদ্ধে কোন জিহাদ নেই কারন তাদের সাথে যুদ্ধ করার কোন সামর্থ নেই আর তারা অলৌকিকভাবে ধ্বংস হবে। তাই আমরা বলতে পারি যে শেষ জিহাদ হচ্ছে ঈসার(আঃ) দাজ্জাল এবং অন্যান্য কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ যতক্ষন না ইসলাম সবদিকে ছড়িয়ে পরে আর সকল কুফরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এটা হচ্ছে সর্বশেষ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।
**********
\\জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর অপব্যাখ্যা://
শিরোনামটি নির্দিষ্টকরণ করতে হতো।
এখানে বোঝা যাচ্ছে না এটা শাইখ আওলাকির বক্তব্য নাকি অন্য কারো বক্তব্য!
শিরোনাম এভাবে হলে ভালো হয়-
\\জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে একজন উলামায়ে সূ শাইখের অপব্যাখ্যা://
জাজাকাল্লাহু খাইরান
ভাই কীভাবে মুজাহিদদের সাথে মিলিত হবো?