জাকির মূসা রহ. এক সংকল্প, এক বিপ্লব! -উস্তাদ উসামা মাহমুদ (হাফিজাহুল্লাহ)

———————–

কাশ্মীরি মুসলমানদের মুজাহিদ নেতা কমান্ডার জাকির মূসা রহ. এর শাহাদাত উপলক্ষ্যে আল-কায়েদা উপমহাদেশের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র উস্তাদ উসামা মাহমুদ (হাফিজাহুল্লাহ) এর বিবৃতি-

জাকির মূসা রহ.

এক সংকল্প, এক বিপ্লব!

بسم الله الرحمن الرحيم.

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على رسوله الكريم.

رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي.

ভারত উপমহাদেশ ও বিশেষভাবে কাশ্মীরের, আমার প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা!

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেন—

مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا

﴿الأحزاب: ٢٣﴾

“মুমিনদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে যারা আল্লার সাথে কৃত ওয়াদা সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে আর কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের সংকল্পে মোটেই পরিবর্তন করেনি। (সূরা আহযাব: ২৩)

আজ কাশ্মীর জিহাদের বরকতময় আন্দোলনকে আরো একজন মহাবীর স্বীয় পবিত্র রক্তে প্রাণবন্ত করলো। সত্য পথের শাহ সাওয়ার, বিশ্বাস ও সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি, সত্য ও বাস্তব প্রেমের দৃষ্টান্ত, আত্মমর্যাদাবোধে উৎসর্গিত প্রাণ; এই মনীষী হলেন মুজাহিদ কমান্ডার জাকির মূসা রাহিমাহুল্লাহ। তিনি রমজানের বরকতময় দিনে মুশরিক হিন্দুদের সঙ্গে এক লড়াইয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন!

ভাই জাকির মূসার শাহাদাতের এ বেদনাদায়ক সংবাদ এখানে আফগানিস্থানে অবস্থিত আমাদের সকল মুজাহিদের অন্তরকে বেদনায় ভরে দিয়েছে। এই মুহূর্তে আমরা আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের শোকে সমানভাবে অংশীদার। আমরা দোয়া করি মহান রাব্বুল আলামীন জাকির মূসা ভাইয়ের শাহাদাতকে কবুল করুন। কাশ্মীরকে এমন শত শত জাকির মূসা দান করুন। কাশ্মীরসহ উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে জাকির মূসা, বুরহান ওয়ানী ও আফজাল গুরুর মতো মহান নেতাদের পয়গাম ও বার্তাকে এগিয়ে নেয়ার তৌফিক দান করুন।

ঈমানী আত্মমর্যাদাবোধে উৎসর্গিত আমার প্রিয় কাশ্মীরি ভাইয়েরা!

জাকির মূসা হলেন এক পয়গাম, এক দাওয়াত, এক বিপ্লব ও এক সংকল্পের নাম। তিনি শহীদ হয়েছেন। আল্লাহ চাহেন তো তিনি নতুন জীবন লাভ করেছেন। এবং আপন রবের রিযিক দ্বারা পরিতৃপ্ত হচ্ছেন। তবে সত্য কথা হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর দাসত্বের দাওয়াত হয়ে মৃত্যুবরণ করে এবং কুফর ও জুলুম থেকে মুক্তির পয়গাম হয়ে জীবন দিয়ে দেয়, সে মরেও  অমর থাকে। সে জীবিতই থাকে। তার সেই দাওয়াত ও পয়গাম কখনই মরে না, যার সততা ও সফলতার জন্য সে নিজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ প্রাণ উৎসর্গ করেছে। তাঁর দেহ থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তের প্রতিটি ফোঁটা তার সততা ও সত্যনিষ্ঠার সাক্ষ্য প্রদান করে।

শায়েখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. শহীদ সাইয়্যেদ কুতুব রহ.এর যে উক্তিগুলো বলতেন, তা আজ আমাদের ভাই জাকির মূসার শাহাদতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হচ্ছে। “আমাদের শব্দগুলো মোমবাতির আলোর ন্যায়, যা খুব বেশি প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে না। কিন্তু আমরা যখন স্বীয় সত্যনির্ভর অবস্থান ও সত্যনিষ্ঠ লক্ষ্যের জন্য যুদ্ধাংদেহী হয়ে উঠি, এবং এই পথে মৃত্যুবরণ করি, তখন আমাদের মৃতপ্রায় শব্দগুলো নবজীবন লাভ করে এবং সেই জীবন্ত শব্দগুলো মানুষের হৃদয়ে গিয়ে উত্তাপ সৃষ্টি করে”।

প্রিয় ভাইয়েরা আমার!

সত্যের পথে জান উৎসর্গকারী ব্যক্তিবর্গের উপর মহান আল্লাহ এ বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন যে, যখন তাঁদের মাটির তৈরী দেহের কুরবানি কবুল করা হয় তখন পৃথিবীবাসীর মাঝে তাঁদের শব্দ ও বক্তব্যগুলোর গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে দেওয়া হয় । ফলে সেই শব্দ ও বক্তব্যগুলি সত্যপ্রেমী ব্যক্তিদেরকে সত্যের পথে টেনে আনে। আল্লাহ চাহেন তো জাকির মূসার দাওয়াত তাঁর শাহাদাতের পর আরো তেজী হয়ে উঠবে। আমাদের মাঝে তাঁর অবস্থান তাঁর রক্তের বদৌলতে অনেক বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে। তাঁর দাওয়াত ও বার্তা পূর্বেও ছিল প্রমাণভিত্তিক,  নিরেট ও সত্য নির্ভর। কিন্তু এখন তা আগের চেয়েও অনেক বেশি ক্রিয়াশীল।

জাকির মূসা ভাই ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যেই নক্ষত্র জম্মু-কাশ্মীরের আকাশে এজন্যই উদিত হয়েছিল, যেন কাশ্মীরের মুসলিমরা কাশ্মীরের স্বাধীনতার সঠিক পথ চিনে নেয়। এবং সেইসব ভুল ভ্রান্তির জাল ছিন্ন করে বের হয়ে আসতে পারে, যার মধ্যে জালিম বিশ্বাসঘাতকরা তাঁদের বরকতময় আন্দোলনকে বন্দী করে রেখেছে। আজ নিঃসন্দেহে সেই প্রদীপ্ত নক্ষত্র এক গ্যালাক্সির অংশে পরিণত হয়ে গেছে। এমন এক গ্যালাক্সি, যার মধ্যে বুরহান মোজাফফর ওয়ানী, আফজাল গুরু থেকে নিয়ে আমিরুল মুমিনীন মোল্লা উমর, শাইখ উসামা বিন লাদেন এবং মাওলানা আব্দুর রশিদ এর মতো অসংখ্য অগনিত নক্ষত্র ঝলমল করছে। আজ তার আলোতে কাশ্মীরের মজলুম মুসলমানরা সত্য- মিথ্যা ও আপন-পরের মাঝে পার্থক্যের সমীকরণটা আগের চেয়েও আরো ভালো ভাবে বুঝবে। তারকারাজির এই ঝাঁক কাশ্মীরি মুজাহিদদের স্বাধীন কাশ্মিরের সেই মোবারক পথ দেখাবে, যেখানে আল্লাহর সাহায্য অবতীর্ণ হয়। এই পথে স্বাধীনতার মানযিলে মাকসুদে পৌঁছাতে রাস্তার পরিধি বাড়ে না বরং কমে যায়। এই পথে কোন বিশ্বাসঘাতক কোন গুপ্ত এজেন্সি, আন্তর্জাতিক কুফুরী ও তাগুতী শক্তি ও প্রতিষ্ঠান কাশ্মীরি মুসলমানদের আজিমুশশান কুরবানীকে নষ্ট করে দিতে পারবে না।

প্রিয় ভাইয়েরা আমার!

জাকির মূসা রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি স্রোতের তোড়ে ভেসে যাবার মতো লোক ছিলেন না যে, ঐসব বিশ্বাসঘাতক এজেন্সিগুলো কাশ্মীরের মোবারক আন্দোলনকে নিয় খেল তামাশা করবে, আর তিনি চুপটি করে বসে বসে তামাশা দেখবেন। তিনি হাওয়ার অনুকূলে এমন একটি কদম উঠানোকেও আপন ঈমানের জন্য লাঞ্চনাকর মনে করতেন, যে ক্ষেত্রে মানযিলে মাকসুদে পৌঁছানোর ব্যাপারে তাঁর নিশ্চিত বিশ্বাস না হতো। তিনি কাশ্মীর জিহাদ এর উত্থান-পতন, উন্নতি, অগ্রগতির কারণগুলো বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে, এই পাকিস্তানি গুপ্ত এজেন্সিগুলো এই জিহাদকে নিয়ন্ত্রণে রেখে এর অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং পাকিস্তানের এই জেনারেলরা মজলুম কাশ্মীরী জনগণের আজিমুশশান কুরবানীকে শুধুমাত্র নিজেদের নিকৃষ্ট মুনাফার খাতিরে ব্যবহার করছে। শহীদ আফজাল গুরু, গাজিবাবা শহীদদের মত দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের চিন্তা-চেতনা দ্বারাও তাঁর জিহাদী চিন্তা-চেতনা শক্তিশালী হয়েছে।

ইসলামী ইমারাহ আফগানিস্তান থেকে নিয়ে ইয়েমেন, মালি ও সোমালিয়ার উত্তপ্ত রণাঙ্গন থেকে উত্থিত আওয়াজ আমাদের এই ভাইকে জিহাদী আন্দোলনের সঠিক গতিপথ বুঝতে সাহায্য করেছে। শরিয়াহর এ মৌলিক-শিক্ষা গ্রহণ করতে তাঁর সময় লাগেনি যে- জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ তাকেই বলে, যার মাকসাদ হবে আল্লাহর ইবাদাত, ইকামাতে দ্বীন, শরীয়াতে ইলাহীর বাস্তবায়ন ও মজলুম জনতার সাহায্য সহযোগিতা করা। তাঁর জন্য এই ফলাফল পর্যন্ত পৌঁছা খুব কঠিন হয়নি যে – আসল স্বাধীনতা কাকে বলে, আর নামকাওয়াস্তে সেই স্বাধীনতার বাস্তবতা কি, যার নাম করে সাহায্যের মিথ্যা অঙ্গীকার করা হয়। তার এই দৃঢ়বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল যে, কাশ্মীরের জিহাদ যদি পাকিস্তানের গুপ্ত এজেন্সিগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে কোরবানীর এই ধারাবাহিকতা হাজার বছর চলতে থাকলেও সেই স্বাধীনতা অর্জিত হবে না যার স্বপ্ন কাশ্মীরের মুসলিমদের চোখে সর্বদা বিরাজমান।

কাশ্মিরের প্রিয় ভাইয়েরা আমার!

ভাই জাকির মূসা ছিলেন সত্যের সঙ্গী। সত্যবাদিতা ও সত্যের আরাধনায় ছিলেন পোড়খাওয়া ব্যক্তিত্ব। তার মাঝে কোনোরকম দ্বিচারিতা ছিল না। তার জন্য এটা অসম্ভব ছিল যে, তিনি স্বাধীনতার সঠিক পথ চিনবেন, সফলতার পথে ধাবমান অশ্বের প্রতিকৃতি স্বচক্ষে দেখবেন, কিন্তু শুধু এই ভয়ে এই পথে চলার ইচ্ছাকে পরিত্যাগ করবেন যে, এখানে পথ বড় কঠিন। তাঁর সামনে বেছে নেওয়ার অধিকার সহজ ও কঠিনের মাঝে ছিল না। বরং অপশন ছিল আজাদী ও গোলামীর। প্রশ্ন ছিল আত্মসম্মান ও আত্মপ্রবঞ্চনার। বাস্তবতা দেখে সঠিক পথে কদম উঠানো কিংবা চোখ বন্ধ করে দিকভ্রষ্ট লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে নেয়ার মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নেয়ার প্রশ্ন ছিল তার সামনে। সুতরাং তিনি সেই পথ নির্বাচন করলেন, যা তার অন্তরে সঠিক বলে অনুমিত হয়েছে। এবং যে পথে চলে আপন কওমের দুঃখ দুর্দশাসমূহ ঘুচিয়ে দিতে পারবেন বলে তার ইয়াকিন হয়েছিল।

আল্লাহর জমিনে আল্লাহর শরীয়ত বাস্তবায়িত করার এবং নাপাক হিন্দুদের আগ্রাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের ঝান্ডাকে তিনি উঠিয়েছেন। “হয়তো শরীয়াত নয়তো শাহাদাত” এই শানদার স্লোগানকে তিনি বুলন্দ করেছিলেন। তিনি এই প্রতিজ্ঞা করেনিয়েছিলেন যে কেবল এজন্যই যুদ্ধ করা হবে, কেবল এই দাওয়াতের উপরই জান কোরবান করা হবে। এটা এজন্য যে এটাই শরীয়তের চাওয়া, এটাই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এবং এটাই স্বাধীনতার একমাত্র পথ। তিনি প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে দেখেছিলেন যে এই রাস্তা ছাড়া অন্য সকল রাস্তা, অন্য যে কোন স্লোগান, স্বাধীনতার জন্য অন্য সকল প্রচেষ্টা আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়। তা এমন এক নির্দয় আত্মপ্রবঞ্চনা যাতে আপন মাজলুম কওমের দগদগে জখম তো কমবেই না, বরং আরও বাড়বে। কিন্তু সেই জখমের কোন উপশম কোথাও পাওয়া যাবে না। এই নওজোয়ান সিপাহসালার যে সত্য বুঝেছেন; তার সততার পক্ষে সুস্পষ্ট সাফাই গেয়েছেন, সাক্ষ্য দিয়েছেন। এমন সুন্দরভাবে সেই সাক্ষ্য প্রদান করেছেন যে, আল্লামা ইকবালের এই কবিতার চরণগুলো যদি তাঁর শানে বলা হয়, আল্লাহ চাহেন তো সামান্য অতিরঞ্জন হবে না।

ہے وہی تیرے زمانے کا امامِ برحق

جو تجھے حاضر و موجود سے بے زار کرے

موت کے آئینے میں تجھ کو دکھا کر رخِ دوست

زندگی تیرے لیے اور بھی دشوار کرے

دے کے احساسِ زیاں تیرا لہو گرمادے

فقر کی سان چڑھا کر تجھے تلوار کرے.

“সেই তোমার যুগের সত্যপন্থী নেতা,

যে তোমাকে উপস্থিত ও বিদ্যমান বিষয়ে নাখোশ করবে।

মৃত্যুর আয়নায় দেখাবে বন্ধুত্বের প্রতিচ্ছবি,

জীবনকে তোমার জন্য আরও কঠিন করে দেবে।

ক্ষতির অনুভূতি জাগিয়ে তোমার রক্তকে উত্তপ্ত করে দিবে,

দারিদ্রের শান দিয়ে তোমাকে তলোয়ার বানিয়ে দিবে”

অতঃপর হে সম্মানিত ভাইয়েরা!

ভাই জাকির মূসার উপর আল্লাহর এই মেহেরবানীও ছিল যে, তিনি শরীয়ত প্রতিষ্ঠার এই স্লোগানকে সাধারণ কোন স্লোগান হিসেবে গ্রহণ করেননি। বরং নিজেকে শরীয়তের অনুগত রাখা এবং সেই অনুযায়ী আমল করাকে নিজের প্রধান লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছিলেন। জিহাদী বিষয়াদি সম্পর্কে উলামায়ে জিহাদ থেকে শারঈ হুকুম জেনে নেওয়া ছিল তার অন্যতম একটা গুণ।

আলোকিত জীবনের অধিকারী এই নেতার এই গুণও পছন্দনীয় ছিল যে, কোন অনুপযুক্ত বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করতেন না। এর ফলে প্রতিনিয়ত তার দাওয়াত ও জিহাদের কর্মযজ্ঞে উজ্জ্বলতা ফুটে উঠছিল। এই মাহাত্ম ও দূরদৃষ্টি তাঁর ছিল যে, তিনি দায়েশের মতো মুসলিমদের হত্যাকারীদের পক্ষপাতদুষ্ট মতবাদে প্রভাবিত হননি। তিনি দায়েশের বিরোধিতা করে কাশ্মীরে তাদের বিশৃংখলার পথকে রুদ্ধ করে দিয়েছেন। এবং একথা স্পষ্ট করেছেন যে, যেখানে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা ও কাশ্মীর স্বাধীনতার জন্য জিহাদ করা ফরজ, যেখানে কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনকে লুটেরা ও ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা করা ফরজ, সেখানে মুসলমান জনসাধারণের সাথে ভালোবাসা ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রাখা,  তাদের জান-মাল ইজ্জত-আবরুর হেফাজত করাও একই রকম ফরজ ।

কাশ্মীরের প্রিয় ভাইয়েরা!

আজ আমরা কাশ্মীরের সকল মুজাহিদ ও মুসলমানদের সঙ্গে শোকাহত। আমরা আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের এ কারণে মোবারকবাদও জানাই যে, জাকির মূসা ভাইয়ের ন্যায়; পাহাড়ের সঙ্গে টক্কর দেয়ার মতো নওজোয়ানদের কোন অভাব নেই এই কওমের মধ্যে। হিন্দু ফৌজের অসংখ্য বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও জাকির মূসা ভাইয়ের জানাজায় চল্লিশ হাজারেরও বেশি কাশ্মীরী মুসলমানের উপস্থিতি এই কথার সাক্ষ্য বহন করে যে, এ জাতি জাকির মূসা ভাইয়ের সম্মানিত অবস্থানকে সংরক্ষণ করছে। এ জাতি কামিয়াবির সেই পথে চলার জন্য প্রস্তুত আছে, যার পরিচয় জাকির মূসা ভাই আপন রক্তের মাধ্যমে দিয়ে গেছেন। জাকির মূসা ভাই শুধু বিশেষ কোন দলের সদস্য ছিলেন না। বরং তিনি কাশ্মীরের প্রত্যেক মুজাহিদ, প্রতিটি কাশ্মীরি মা বোন, ভাই ও মুরুব্বী ব্যক্তিবর্গের কল্যাণকামী ছিলেন।

অতএব আমরা সকল কাশ্মীরি মুসলমান এবং দলমত নির্বিশেষে সকল মুজাহিদ ভাইদের নিকট এই আবেদন জানাচ্ছি যে, ভাই জাকির মূসার পয়গাম আপন সিনার সঙ্গে মিলিয়ে নিন। এই আহবান এর উপর লাব্বাইক বলুন। আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠা, শরীয়াতুল্লাহর ইত্তিবা, গোত্রপ্রীতি ও জাতীয়তাবাদের প্রতিমাকে পদদলিত করে এক উম্মাহ হওয়ার ভাবনা ও চেতনাকে আত্মস্থ করা, মুসলিমদের সাহায্য সহযোগিতা করা, কুফরের সকল প্রকার আগ্রাসন থেকে মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জন, সকল অন্ধ অনুসরণ থেকে সিনাকে পবিত্র করে কেবল আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও আল্লাহর জন্য শত্রুতা। ন্যায় নিষ্ঠা ও অনুগ্রহের প্রচার-প্রসার, কাশ্মীর জিহাদের আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ পরিপূর্ণরূপে নিজেদের হাতে রাখা। এ সকল বিষয় হল আল্লাহর দ্বীনের দাবী । আর এসবের উপর আমল করাই ছিল জাকির মূসা ভাইয়ের পয়গাম। এই পয়গামের উপর লাব্বাইক বলুন। এর উপর একতাবদ্ধ হোন। দুনিয়ার কোন গোয়েন্দা সংস্থাকে আপনাদের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দিবেন না।

নাপাক হিন্দুদের বিরুদ্ধে এই পবিত্র জিহাদে একমাত্র সেই আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, যার হাতে সকল এজেন্সি ও ক্ষমতাশীলদের জীবন। এখানে আরেকটি বিষয় আরজ করছি যে, সম্প্রতি বিজেপি সরকারের বিজয় এই কথাই প্রমাণ করছে যে –হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা যেখানে সাধারণভাবে মুসলিমদের উপর এবং বিশেষভাবে কাশ্মীরের মুসলিমদের উপর জুলুম অব্যাহত রাখার ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে সেখানে এ বাস্তবতাও রয়েছে যে, পাকিস্তানি ফৌজ ও এখানকার মুনাফিক শাসকরা অনেক আগে কাশ্মীর স্বাধীনতার সওদা করে ফেলেছে। তাদের নামকাওয়াস্তে রাজনৈতিক সহায়তার নাটকও খুব বেশিদিন চলবে না।  এমতাবস্থায় আপনাদেরকে ঈমানী সাহসিকতার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে।

আপনারা কেবল আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। সুযোগ সন্ধানী ও স্বার্থান্বেষী জেনারেলদের দিকে ফিরেও তাকাবেন না । মুসলিম জনসাধারণ ও মুজাহিদদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন। এবং তাদের সহযোগিতায় নিজেদের এই মোবারক জিহাদকে এগিয়ে নিয়ে যান।  সেই মহান রাব্বুল ইজ্জত এই বিষয়ে শক্তি রাখেন যে, তিনি আপনাদের সাহায্য এমনভাবে করবেন, আপনারা যার কল্পনাও করেননি।

وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰ أَمْرِهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿يوسف: ٢١﴾

অনুবাদ: “আল্লাহ নিজ কাজে প্রবল থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। (সূরা ইউসূফ: ২১)

و آخر دعوانا ان الحمدللہ ربّ العالمین.

والسلام علیکم ورحمۃ اللہ وبرکاتہ.

আস-সাহাব মিডিয়া সেন্টার, উপমহাদেশ

১৪৪০ হিজরী মোতাবেক ২০১৯ খৃষ্টাব্দ