জাবহাতুন নুসরাহ থেকে তাহরির আশ শামঃ যে কথাগুলো না বললেই নয়!
আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসুলিহিল আমিন। আম্মা বাদ-
বর্তমানে শামের ভুমিতে খুব দ্রুত প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হচ্ছে। আজকের শত্রু কালকের বন্ধুতে এবং কালকের শত্রু আজকের বন্ধুতে পরিবর্তন হচ্ছে। শামের জিহাদের ৫/৬ বছরে মধ্যপ্রাচ্যের দুটি দেশ ইরাক ও সিরিয়া ইতিহাসের এক সংকটকাল অতিক্রম করছে।
কালো পতাকাধারী দলগুলো নিজেদের স্বার্থে হোক, অথবা দেশের স্বার্থে হোক সবুজ বা এই জাতীয় পতাকার বহনকারী হচ্ছে।
আল কায়েদার একটি শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত “জাবহাতুন নুসরাহ” আজকের তাহরির আশ শামে পরিণত হয়েছে।
শামের ভুমিতে আল কায়েদার বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত বেশ কিছু নেতৃত্ব শাহাদাত বরণ করেছেন। যাদের মধ্যে আছেন আধুনিক যুগের একজন সমরকৌশলবিদ শাইখ আবু ফিরাস আস সুরি, শাইখ আবু আব্দুল্লাহ আল মুহাজির, শাইখ আহমাদ হাসান আবুল খাইর সহ অনেক বড় বড় নেতৃত্ব।
ইতিহাসের পটপরিবর্তনের এই মোড়ে এসে কিছু কথা জিহাদের একজন ছাত্র হিসেবে না বললেই নয়!
শামের জিহাদের একটি বড় ঘটনা হচ্ছে জাবহাতুন নুসরাহ’র আল কায়েদা ত্যাগ। এটা একজন পাঠকের জানার অধিকার আছে যে, ঠিক কি কারণে জাবহাতুন নুসরাহ আল কায়েদা ত্যাগ করেছে?, কেন্দ্রীয় আল কায়েদা কি এর অনুমতি দিয়েছিল? শামে আল কায়েদার পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত শাইখ ও উমারাদের অনেকে কেন তাহরির আশ শাম ত্যাগ করেছিল?
জাবহাতুন নুসরাহ’র আল কায়েদা ত্যাগের একটি অন্যতম কারণ ছিল, আমেরিকা ও তার মিত্রদের হামলা থেকে শামকে রক্ষার অজুহাত।
এক্ষেত্রে কিছু প্রশ্ন এসে যায়-
-৯/১১ এর বরকতময় হামলার পর আমিরুল মুমিনিন মোল্লা উমর রহঃ শাইখ উসামাকে কেন আমেরিকার হাতে তুলে দেন নি? কেন তিনি একজন মানুষের কারণে পুরো একটি দেশ ও জাতিকে ধ্বংস হতে দিলেন? কেন তিনি ‘শাইখ উসামাকে আমেরিকার তুলে দেওয়া হোক’ দাবীকারীদের বারবার ফিরিয়ে দিলেন? তাহলে কি সিরিয়ানদের জান ও মালের মুল্য আছে আফগানদের জান ও মালের মুল্য নেই?
-বাইয়াত এর ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কি তা সবার জানা থাকা উচিত। বাইয়াত হচ্ছে একটি ওয়াজিব বিধান, যাকে বাইয়াত দেওয়া হয়েছে, যতক্ষন যাবত তার থেকে কুফুরি প্রকাশ না পাবে, তাঁর থেকে বাইয়াত ছিন্ন করা জায়েজ নয়। আল কায়েদা বা তালেবান থেকে কোন কুফুরি প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত জামাআহ ত্যাগ করা কিভাবে বৈধ হতে পারে? তাহরির এর শরিয়াহ বিশেষজ্ঞ শাইখ আবু আব্দুল্লাহ আশ শামী কি আদনানিকে মোবাহালায় বলেনি যে, আল কায়েদার বাইয়াত আমাদের কাঁধে শরঈ বাইয়াত? তাহলে আজ কেন বাইয়াতকে যেভাবে চাওয়া হচ্ছে ভঙ্গ করা হচ্ছে?
-অনেক ভাই বলে থাকবেন যে জাবহাতুন নুসরাহর আল কায়েদা ত্যাগ উমারাহদের সম্মতিতে হয়েছে। যার প্রমাণ হল শাইখ আহমাদ হাসান আবুল খাইরের বার্তাটি। কিন্তু পাঠক! আসলেই আল কায়েদা ত্যাগের ব্যাপারে শাইখের বক্তব্যে কোন আলোচনা ছিল? যারা বয়ানটি শুনেছেন, তারা দেখবেন বাইয়াহ ত্যাগের ব্যাপারে কোন কথা-ই ছিল না। তবে এটাকে জাবহা’র একটি কৌশল বলা যেতে পারে, যাতে বিশ্বব্যাপী কায়েদাতুল জিহাদ এর ভাইয়েরা আলোচনা সমালোচনা না করতে পারেন। বা এই জাতীয় কোন কৌশল।
– অধমের পড়াশোনা হিসেবে কেন্দ্রীয় আল কায়েদার উমারাহদের থেকে বাইয়াহ ত্যাগের কোন অনুমতির ইঙ্গিত তখনই ছিল, যখন নুসরাহ সকল দলের সাথে আমভাবে ঐক্যবদ্ধ হবে, অথবা শামে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। আর এই কাজগুলো হলে তো মুল কেন্দ্র থেকেই বাইয়াহ মুক্ত ঘোষণা করা হবে, জাবহাতুন নুসরাহর তো আর নিজের থেকে ঘোষণার অনুমতি নেই।
– জাবহাতুন নুসরাহ থেকে জাবহাতু ফাতহিশ শাম, এবং পরে যখন তাহরির হল, তখনই আল কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক শাইখ তাহরির থেকে আলাদা হয়ে গেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন জাবহাতুন নুসরাহর প্রধান শরিয়াহ বিশেষজ্ঞ ও অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতাদের একজন শাইখ সামি আল উরাইদি, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শাইখ জুলাইবিব রহঃ সহ আরও অনেকে। যদি কেন্দ্রীয় উমারাহদের থেকে অনুমতি থাকতো, তাহলে উনারা পদত্যাগ করলেন কেন?
সম্মানিত পাঠক! এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে! জাবহাতুন নুসরাহর বাইয়াহ ত্যাগ এক বিষয়, এবং আইএসকে খারেজি ও গোমরাহ বলা আরেক বিষয়। আইএস শুধু বাইয়াহ ত্যাগ করেছি আর এই কারণেই গোমরাহ বিষয়টা এমন নয়, তাদের অপরাধের মধ্যে রয়েছে মুসলমানকে অন্যায়ভাবে তাকফির করা, এবং তাকে হত্যা করা, তাঁদের সতীসাধ্বী স্ত্রীদের জিনাকারি সাব্যস্ত করা সহ আরও অনেক অপরাধ। তবে মুজাহিদিন উমারাহ আইএসকে তাকফির করেন না। আইএস যদি শুধু বাইয়াহ ত্যাগেই বসে থাকতো, তাহলে তাদের সাথে এমন আচরন হয়তো হতোনা। সুতরাং এই ক্ষেত্রে এসে কেউ আইএসকে হক প্রমাণ করার কোন সুযোগ নেই।
সম্মানিত পাঠক! শামের জিহাদের রণাঙ্গনের পটপরিবর্তনের এই বাঁকে এসে কথাগুলো কেন বলা হল, প্রশ্নগুলো কেন তুলে ধরা হল, তা সময়ই বলে দিবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সত্য সত্য-ই, চাই তাতে একজন জমে থাকুক অথবা দশজন জমে থাকুক। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেদায়াতের উপর অটল রাখুন! আমিন।
-ভাই সাইফ আল আদিল কর্তৃক লিখিত