মহানবী(স.)কে কটূক্তির প্রতিবাদ: পুলিশের ভয়ে ২৫ গ্রাম পুরুষশূন্য, নিহত ৫ গ্রেফতার প্রায় দেড়শ
রংপুরে মহানবী সা.কে কটূক্তির প্রতিবাদের জের ধরে সদর উপজেলার ঠাকুরটারি এলাকার আশপাশের ২৫ গ্রামে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মুসলমান পুরুষরা।
টিটু চন্দ্র নামের এক হিন্দু যুবক ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং পবিত্র কাবা শরীফ সম্পর্কে ধর্ম অবমাননাকর কু-রুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেয়। এতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে গত মঙ্গলবার বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। তারা স্মারকলিপিও দেন পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কাছে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও উক্ত মালাউন গ্রেফতার না হওয়ায় শান্তিপ্রিয় মুসলিম জনতা গত ১০ নভেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। এতে আশপাশের প্রায় ২০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নামাজ শেষে সমাবেশ স্থলে রওয়ানা দেয়। কিন্তু পুলিশ তাদের সাহায্য তো করেইনি, বরং তাদের যেতে বাধা দেয় এবং হামলা চালায়। এক পর্যায়ে মুসল্লি-পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করলে পুলিশের গুলি টিয়ারশেলে দুইজন শহীদ হয় এবং ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে অভিশপ্ত মালাউনের বাড়ি ও তার আশপাশের কয়েকটি বাড়িতে আগুন লেগে যায়।
রংপুর সহকারী পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) সাইফুর রহমান সাইফ জানিয়েছে, এ ঘটনায় গঙ্গাচড়া ও কোতয়ালী থানায় পুলিশ দুটি মামলা করেছে। এখন পর্যন্ত ১৩০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে এই পর্যন্ত ঘটনাস্থল ঠাকুরটারি ও আশপাশের এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে মুসলমান পরিবারগুলোতে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে মুসলমান পরিবারগুলোতে কোনো পুরুষ সদস্য বাড়িতে নেই। তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। আশপাশের মহাদেবপুর, খলেয়া, ফকিরটারী, শলেয়াশাহ, হাজিরবাড়ি, হাজিপুর, লালচাদপুর, হারিয়ালকুঠি, খলেয়ার নুনিটারী, কচুটারি, চওড়াচরি, ফকিরপাড়া হেরিদেবপুরের ফকিরপাড়া, গঞ্জিপুর, তারাগঞ্জের ইকরচালি ইউনিয়নের হাজারঝার, আলোয়াকুড়ি, শলেয়াশাহ, মমিনপুর, ময়েরজপুর, পাগলাপীর, নদীরপর, সেন্টারের হাট, মুনসির হাটসহ গ্রামের মুসলমান পরিবারের পুরুষ সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। বাড়িতে শুধু মহিলা সদস্যরা আছেন।
মহিলা সদস্যরা জানান, পুলিশ সারা রাত গ্রামে গ্রামে ঘুরেছে। দিনেও ঘুরছে। যাকেই পাচ্ছে তাকেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে আমাদের পুরুষ অভিভাবকরা পালিয়ে গেছে। তারা কোথায় গেছেন, কেউ জানি না আমরা।
শলেয়াশাহ বাজরে গিয়ে দেখা গেল চায়ের দোকান, একটি ফ্লেক্সিলোডের ও ওষুধের দোকান ছাড়া প্রায় সব দোকান বন্ধ। ফ্লেক্সিলোড ও ওষুধের দোকান খোলা থাকলেও তাতে লোকজনে নেই।
নায়েব আলী নামের ওই দোকানি বললেন, আমরা ভাই আতঙ্কে আছি। কখন যে আমাদেরকে ধরে নিয়ে যায়। রাতে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা সাধারণ লোককেও ধরে নিয়ে গেছে। অনেকেই আজকে আতঙ্কে দোকানই খোলেনি। আমরা দোকান খুললেও বেচাবিক্রি নেই। আমরা আতঙ্কে আছি।
সরেজমিনে পাগলীপর বন্দর, গঞ্জিপুর বাজার, মমিনপুরবাজারসহ আশপাশের হাটবাজারগুলোতে দেখা গেলে মানুষজনের উপস্থিতি খুবই কম। অনেক দোকানপাট বন্ধ আছে আতঙ্কে।