চিন্তাধারা সিরিজ- ৩০ | শত্রুর দুর্বল পয়েন্টসমূহ লক্ষণীয় বিষয় -শাইখ কাসিম আর-রীমি রহিমাহুল্লাহ

بسم الله الرحمن الرحيم

শত্রুর দুর্বল পয়েন্টসমূহ লক্ষণীয় বিষয়:

শত্রু পক্ষের শক্তির পয়েন্টগুলোর দিকে না তাকিয়ে আপনি তার দুর্বল পয়েন্টগুলোর দিকে নজর দিন। অর্থাৎ আমি যখন আমার শত্রুর সবদিক পর্যবেক্ষণ করব, যখন তার শক্তির পয়েন্ট ও দুর্বল পয়েন্টগুলো আমরা সামনে নিয়ে বসবো তখন আমাদের উচিত হবে – দুর্বল পয়েন্টগুলোকে ফোকাস করা।

আজ আমরা মার্কিনীদের বিরাট সৈন্য বহরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তাদের সৈন্য সক্ষমতা ৬০০ বিলিয়নের উপরে। গোটা বিশ্বে তাদের সৈন্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

আপনি তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলো দেখুন! তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র, টেকনোলজি ও গোয়েন্দা বিমান রয়েছে। এখন আপনি যদি তাদের এসব অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং সৈন্য সক্ষমতার দিকে তাকিয়ে তাকে বিচার করেন, তাহলে আপনার কিছুই করার সুযোগ থাকবে না।

তাদের এসব শক্তির পয়েন্ট দেখে আপনার নিজ জায়গায় বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। এজন্য আমাদেরকে শত্রুর দুর্বল পয়েন্টগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। দুর্বল পয়েন্ট বলতে আমি বুঝিয়েছি, তার অনুকূল ও প্রতিকূল অনেক পয়েন্টের মাঝে যেগুলো তার জন্য দুর্বল – সেই পয়েন্টগুলো।

তার প্রথম দুর্বল পয়েন্ট হল, সে বিশালদেহী আর আপনি সে তুলনায় ক্ষুদ্রদেহী। এটা আপনার জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত। এটা আপনার আমার জন্য আসলেই অনেক বড় নেয়ামত।

দ্বিতীয় বিষয় হল, আপনার শত্রু যেহেতু বিশালদেহী তাই সবকিছুতেই তার খরচ অনেক বেশি। সেই তুলনায় ছোট হিসেবে আমাদের খরচ অনেক কম। এটা আমাদের জন্য একটি শক্তির পয়েন্ট আর শত্রুর জন্য একটা দুর্বল পয়েন্ট। আমাদের পক্ষে পয়েন্টটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই যে শত্রুপক্ষ আজ দাবি করছে এবং হম্বিতম্বি দেখাচ্ছে যে – সারা বিশ্বের ওপর তাদের কর্তৃত্ব ও খবরদারি চলছে, এ অবস্থায় ছোট হয়ে তাকে আঘাত করা তার জন্য কতটা লাঞ্ছনার তা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি। এ কারণে এটি আমাদের জন্য শক্তির পয়েন্ট।

আরেকটি পয়েন্ট হচ্ছে– শত্রু তার বিশাল দেহ নিয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে আর আপনিও ভিন্ন আঙ্গিকে সব দিকে ছড়িয়ে আছেন। শত্রু আপনাকে দেখতে পাচ্ছে না অথচ আপনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন।

এখানে আপনারাই বলুন – আমরা আমাদের এই শক্তির পয়েন্ট কীভাবে ব্যবহার করবো? এর একটা সুরত এমন যে, সারা বিশ্বে যত জায়গায় এই দানবের সৈন্য–ঘাঁটি ও সামরিক কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোর যেকোনোটাকে আমি নিজের মতো বেছে নিয়ে আচমকা হামলা করে বসবো। আমি–আপনি হলাম ক্ষীণকায় আর আমাদের শত্রু হল বিশালদেহী স্থূলকায়। তো আমার উদ্দেশ্য হল, এভাবেই সর্বদা শত্রুর শক্তির পয়েন্টগুলোর দিকে না তাকিয়ে আমাদের তাকাতে হবে তার দুর্বল পয়েন্টের দিকে।

আচ্ছা এবার আসি শত্রুর শক্তিশালী পয়েন্টগুলো আমরা কিভাবে মোকাবেলা করবো? এর সমাধান হল– আমরা সেগুলো এড়িয়ে চলব। শত্রুর গোয়েন্দা বিমানগুলো আমরা এড়িয়ে চলব। আমি যদি সেগুলো এড়িয়ে চলি, তাহলেই শত্রুর শক্তিশালী পয়েন্টগুলো আমি সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারব।

টেলিফোন এবং গাড়ি ব্যাবহারের বিষয়টা নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সাংগঠনিকভাবে দুটো বিষয়ে যদি আমরা উসুল মেনে চলতে পারি তাহলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আর কোন চিন্তা নেই ইনশাআল্লাহ! আমরা যখন আমাদের চলাফেরা, যাতায়াত এবং যোগাযোগ উসুল অনুসারে পরিচালনা করব, তখনই আল্লাহর রহমতে শত্রুর সকল প্রযুক্তি ব্যর্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তখন আল্লাহর রহমতে এরকম নিয়ম রক্ষা করে আপনি যেকোনো জায়গায় যেতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

স্বাভাবিকভাবেই পরিস্থিতির কারণে আমাদের ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করতে হয়। আবার নিরাপত্তা রক্ষার ব্যাপারটিও স্বভাবসিদ্ধ প্রয়োজনীয় বিষয়। আর এ দুটি বিষয় সর্বদাই বাহ্যিকভাবে পরস্পরবিরোধী।

তাই দুটি বিষয় ক্ষেত্রবিশেষ সমন্বয় করে চলার চেষ্টা করা, কিভাবে সমন্বয় করবে? অর্থাৎ মানুষের মাঝে প্রকাশ্যে বিচরণের সময় কি করবে? সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঠিক রেখে স্থান পরিবর্তন করবে। আপনি নিরাপত্তা ঠিক রেখেছেন এবং স্থানও পরিবর্তন করেছেন, এখানে দুটি বিষয়ের সমন্বয় হয়েছে। আপনি স্থান পরিবর্তন করেছেন, আপনার শত্রুও স্থান পরিবর্তন করেছে, এক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঠিক থাকলে কেউ কারে মুখোমুখি হবে না। সুতরাং তার নিকট যে অস্ত্র আছে আপনার নিকট তা নেই।

ফলে সে (শত্রু) আপনার কাছে পৌঁছে যেতে পারে কিন্তু আপনি তার কাছে পৌঁছাতে পারেন না। এ কারণেই যদি আপনি (নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল না করে) নড়াচড়া করেন, তবেই সে শিকার করে ফেলবে। আর যদি আপনি কোনও কাজ নিয়ে বসে থাকেন যে, তা ঠিক আছে কি–না? তখন হয়তো কোন বিষয় সামনে আসে?

এমন পরিস্থিতিতে নবীজি ﷺ কি করেছেন এবং কিরূপ নির্দেশনা আমাদের জন্য রেখে গেছেন? যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন যে, তিনি নড়াচড়া করলে শত্রুরা তাকে ধরে ফেলবে, তখন তিনি আত্মগোপন করেছেন এবং মুক্তির পথ অবলম্বন করেছেন। কি ছিল সেই মুক্তির উপায়?

লক্ষ্য করুন যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ কোন যুদ্ধের ইচ্ছা পোষণ করতেন, তখন ভিন্ন স্থানের দিকে ইংগিত করতেন। কৌশল হিসেবে তখন ভিন্ন কোন স্থানের নাম নিতেন। অর্থাৎ আপনাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বসে না থেকে সেই নিরাপত্তা বলয়ে থেকে আপনাকে পথ চলতে হবে। এটা কি উচিত যে আমরা ঝুঁকির ভয়ে সব কিছু ফেলে কোন একটা কিছু নিয়েই বসে থাকবো?

না কখনোই নয়। কেউ সে কথা বলছেও না। বরং আমাদেরকে কাজ করতে হবে কিন্তু সেটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।

হে ভাই লক্ষ্য করুন,

আপনার কাজের জন্য আপনাকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হয়। কেউই আপনার স্থান পরিবর্তনের কথা জানার কথা নয়। আপনি টেলিফোনে যোগাযোগ করবেন না। আপনি হয়তো পরিচ্ছন্ন সুন্দর গাড়িতে করে যাতায়াত করেন। সে ক্ষেত্রে আপনার পার্সোনাল যে গাড়ি দিয়ে আপনি যাতায়াত করেন সেটিরও রূপ পাল্টে ফেলুন। অতঃপর যাতায়াত করুন।

এমনভাবে আপনি নিজ অবস্থানস্থল থেকে যাতায়াত আরম্ভ করবেন না। এতে ঘাপটি মেরে থাকা শত্রু আপনাকে এবং আপনার অবস্থানস্থল চিনে ফেলবে। তাই আপনি প্রথমে অন্য কোথাও সপ্তাহখানেক সময় অবস্থান করুন। অতঃপর আপনি আপনার দীর্ঘ–যাত্রা আরম্ভ করুন। স্বাভাবিক অবস্থায় আপনার যাত্রা যেরূপ হয় তা থেকে আলাদা করে আপনি আপনার যাত্রা করুন।

এ বিষয়গুলো যদি আমরা লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাব এগুলো অবশ্যই আমাদের সকলেরই সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে এবং এগুলো আসলেই কোন কঠিন ব্যাপার নয়।