আর্কাইভআল কায়েদার বাঙ্গালী মুজাহিদিনপ্রবন্ধ-নিবন্ধ

কে ছিলেন শহীদ ফায়েজ রহিমাহুল্লাহ ?

কে ছিলেন শহীদ ফায়েজ রহিমাহুল্লাহ ?

শহীদ মুহাম্মাদ ফায়েজ । খোদ বাংলাদেশের ঢাকা শহরের সন্তান ছিলেন। বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও শহীদ ফায়েজ বায়বীয় কোন আদর্শে গা ভাসিয়ে দেননি।। আল্লাহ তা’আলার অশেষ রহমতে যুবক বয়সেই তার অন্তরে জ্বলে উঠেছিলো ইসলামের উজ্জ্বল আলো । খোরাসানে মার্কিন ত্বাগুতের হামলা ও মুসলিমদের উপর অকথ্য নির্যাতন তার অন্তরে নিদারূন এক মর্মপীড়ার সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে বসে খোরাসানের মুসলিমদের জন্য তার প্রাণ ছটফট করতে থাকে। কিভাবে খোরাসানের মুসলিমদের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত করা যায় তা নিয়ে তিনি অনেক চিন্তা-ভাবনা করেন। অত:পর তিনি বাংলাদেশ থেকে খোরাসানে হিজরত করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। তারপর থেকে তার জীবনের একমাত্র মাক্বসাদ হয়ে ওঠে কিভাবে খোরাসানে প্রবেশ করা যায়।

ঈসায়ী ২০০৯ খ্রীষ্টাব্দ। শহীদ ফায়েজ খোরাসানে যাওয়ার জন্য প্রথমে পাকিস্তান যাবার সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি খোরাসানে প্রবেশ করা বেশ ঝুকপূর্ণ ছিলো সেসময়। আর খোরাসানের ভাইদের সাথে বাংলাদেরশের ভাইদের কোন যোগাযোগই ছিলো না তখন। তাই পাকিস্তান হয়ে তারপর খোরাসানে যেতে হতো। কিন্তু পাকিস্তানের ভিসা না পাওয়ায় তার সে পরিকল্পনা সফল হয়নি। পাকিস্তানের সাথে চীনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনেকদিন থেকেই বেশ ভালো । সে চিন্তা করে পাকিস্তান প্রবেশের জন্য শহীদ ফায়েজ প্রথমে চীনে যান। আল্লাহ তা’আলার অশেষ রহমতে চীনে প্রবেশের কিছুদিন পরই তিনি এমন একটি বানিজ্য কাফেলার সন্ধান পান , যারা অল্পদিন পরই বানিজ্যের উদ্দেশ্যে চীন থেকে পাকিস্তান যাবে। শহীদ ফায়েজ সেই বানিজ্য কাফেলার সাথে সম্পর্ক যোগাযোগ করেন এবং আল্লাহর সীমাহীন কুদরতে পাকিস্তানের পথে তাকে সাথে নেয়ার ব্যাপরে তিনি ঐ কাফেলাকে রাজী করতে সক্ষম হন। অত:পর সেই কাফেলার সাথে শহীদ মুহাম্মাদ ফায়েজ পাকিস্তানের প্রবেশ করেন। আলহামদুলিল্লাহ।

পাকিস্তান। উত্তর ওয়াজিরিস্হানের মিরানশাহ নগর। নগরটি তখন মুসলিম মুজাহিদদের দখলে। মুজাহিদরা বীরদর্পে শহরের রাস্তায় প্রকাশ্যেই চলাফেরা করেন। ইসলামের স্বর্ণযুগে মুজাহিদরা যেমন বীরদর্পে চলাফেরা করতেন, শহরটি যেন তারই এক খন্ডচিত্র। শহীদ মুহাম্মাদ ফায়েজ বাংলাদেশের মুজাহিদ ভাইদের সন্ধানে হাজির হন সেই মিরানশাহ নগরে। নতুন জায়গায় পরিচিত কেউ নেই, নির্দিষ্ট কোন আশ্রয় নেই – এমন পরিস্হিতি ভাইয়ের জন্য ছিলো খুব কষ্টকর। সামান্য কিছু টাকা ছিলো সাথে। সে টাকা দিয়েই দোকান থেকে নামেমাত্র খাবার কিনে খেতেন । আর রাতে রাস্তার পাশেই শুয়ে ঘুমিয়ে নিতেন। এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। ধীরে ধীরে শহীদ ফায়েজের কাছে থাকা সঞ্চিত অর্থও প্রায় নি:শেষ হতে চলেছে। সে সময় তার অবস্হা ছিলো অনেকটা মাছের পেটে আটকে থাকা নবী ইউনুসের (আলাইহি ওয়াস সালাতু আস-সালাম) মতো। এক কঠিন পরীক্ষা ভাইকে চারিদিক থেকে আষ্টেপৃষ্টে বেধে ফেলেছিলো।

কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তার মু’মিন বান্দাকে খুব বেশীদিন পরীক্ষার ভেতর ফেলে রাখেন না । মু’মিনের জন্য কষ্টের পরই থাকে স্বস্তি। একদিন হঠাত বাংলাদেশের এক মুজাহিদ ভাই শহীদ ফায়েজকে রাস্তার পাশে বসে থাকতে দেখে চিনতে পারেন। সাথে সাথেই মুজাহিদ ভাইটি তার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেন। মুজাহিদ ভাইটি ফায়েজকে সাথে করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যান। এভাবেই বাংলাদেশ থেকে হিজরত করা মুজাহিদ ভাইদের সাথে শহীদ ফায়েজের সাক্ষাত হয় ।

ক্যাম্পে শহীদ ফায়েজর সাথে সবার খুব আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি ছিলেন ইসলামের একনিষ্ট সেবক। ক্যাম্পেই তিনি কুর’আন হিফয করা শুরু করেন এবং আল্লাহ তা’আলার অশেষ মেহেরবাণীতে অবেশেষে একদিন তিনি কুর’আন হিফয সম্পন্ন করেন। মাতৃভাষা বাংলা ছাড়াও শহীদ মুহাম্মাদ ফায়েজ আরবী, উর্দু, পশতু ও ইংরেজি ভাষা জানতেন।

ঈসায়ী ২০১৩ খ্রীষ্টাব্দ। আল্লাহ তা’আলা তার এক মু’মিন বান্দাকে খুব বেশীদিন দুনিয়ার পরীক্ষাগারে রাখতে চাইলেন না। সে বছরই আমেরিকান ত্বাগুত সৈন্যদের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে মুহাম্মাদ ফায়েজকে আল্লাহ তা’আলা শাহাদাতের অমীয় সূধা পানের মর্যাদা দান করেন । আল্লাহ তা’আলা তার এই বান্দাকে শহীদের মর্যাদায় সম্মানিত করে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন । আমাদের সকলকেও ভাই শহীদ মুহাম্মাদ ফায়েজর মতো ইসলামের তরে জীবন বিলিয়ে দেবার উচ্চ মনমানসিকতা তৈরী করে দিন। জান্নাতে তার সাথে মিলিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন, সুম্মা আমীন।

https://shahidfayez.wordpress.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 + 11 =

Back to top button