কাঁচের ঘর!
বাংলাভাষী ফেসবুক জগতে জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলিমীনের সদস্য, অনুসারী ও চিন্তা প্রভাবিত অনেক ভাই আছেন। তাদের মধ্যে কিছু ভাইয়ের মধ্যে মজার এক বৈশিষ্ট্য দেখলাম। অনলাইনে জিহাদি মানহাজের জনপ্রিয়তা ও জামাত-ইখওয়ানের ইরজাগ্রস্থ বিকৃত আপোসকামী মানহাজের ব্যাপারে বিদ্যমান খারাপ ধারণাকে মোকাবেলায় তাদের অনেকে এক পন্থা গ্রহন করেছেন। তারা জিহাদ সমর্থনের দাবি করেন, কিন্তু জামা’আত কায়েদাতুল জিহাদের মানহাজের বিরোধিতা করেন। এর সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রয়োগ হল, ‘আমরা তালিবান সমর্থন করি কিন্তু কায়েদা সমর্থন করি না।‘
.
আমরা বলি –
উত্তম! অতি উত্তম। জিহাদ আর জামা’আত কায়েদাতুল জিহাদ সমার্থক না। আমরা এটাও মনে করি না যে পৃথিবীতে একমাত্র এই জামা’আতই সঠিক জামা’আত। বরং আমরা মনে করি তাঁরা সত্যের সর্বাধিক নিকটবর্তী। এ ব্যাপারে আরেকজন ভিন্নমত পোষণ করতেই পারেন, এতে কোন আপত্তি নেই। যতোক্ষন পর্যন্ত আপনি শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছেন, ফারিজা স্বীকার করছেন, শরীয়াহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকছেন, আলহামদুলিল্লাহ ততোক্ষণ ‘কায়েদার’ ব্যাপারে আপনার অভিযোগ থাকলে, আপনার ব্যাপারে কায়েদার অভিযোগ নেই। জরুরী না যে আপনার এই জামা’আতে যোগ দিতে হবে, তবে হ্যাঁ, এটা জরুরী যে আপনি শরীয়াহর অনুসরণ করবেন ও ইচ্ছামতো দীনের বিধানকে বদলাবেন না।
.
তো এমন ভাইদের কথার ব্যাপারে পাঠকের সামনে দুটি প্রশ্ন রাখতে চাই।
.
২০০১ থেকে ২০১৪ এর আগ পর্যন্ত, আল-কায়েদার মিত্র, অধীনস্ত, আদর্শিক অনুসারী বা আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত নয় এমন কোন জিহাদি জামা’আত পৃথিবীতে ছিল না বললেই চলে। এই সময় তারা কোন জিহাদি জামা’আহ আর কোন জিহাদি মানহাজকে সমর্থন করতেন?
.
বর্তমানে তারা কোন কোন জায়গায় আল্লাহর জমীনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করছেন?
.
বাস্তবতা হল ইখওয়ানুল মুসলিমীনের মানহাজ যে ময়দানে ঢুকেছে্ সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষেত্রেই সেখানকার জিহাদকে তারা হয় কলুষিত করেছে অথবা মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাথে হাত মিলিয়েছে। আর যেখানে সম্মুখ জিহাদের ময়দান নেই সেখানে যখন জিহাদের মানহাজের প্রতি আহবান করা হয়েছে ইখওয়ান ও জামায়াতের মানহাজের ভাইরা বিরোধিতা করায় ঝাপিয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশেও অনেক ভাইকে তারা ধরিয়ে দিয়েছেন। তাদের কারণে অনেক ভাই আজ ঘরছাড়া। আর তাদের অনেক বিখ্যাত বক্তা এগুলো বুক ফুলিয়ে প্রকাশ্যে বলে বেড়ান।
.
ফরজ জিহাদ, শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা এসব আহবানের ব্যাপারে তাদের বিরোধিতার ও শত্রুর সাথে হাত মেলানোর অনেক উদাহরন আছে। তবে যেহেতু তারা এখন তালিবানের ব্যাপারে হঠাত করে জেগে উঠা ‘মমতা’ দেখাচ্ছেন তাই তাদের ব্যাপারে তালিবানের একজন মুখপাত্রের বক্তব্যই তুলে ধরি।
.
তালিবানের সাথে যুক্ত এই টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা ছবিতে আগ্রাসী কাফির আমেরিকার জেনারেলদের সাথে দেখা যাচ্ছে আব্দুর রব রাসুল সায়য়াফকে। ছবির ক্যাপশনে বলা হয়েছে
.
“আল ইখওয়ানুল মুসলিমীন
আফগানিস্তানে দালালির দীর্ঘ ইতিহাস”
.
এছাড়া ইখওয়ানের আদর্শের অনুসারী গুলাবুদ্দিন হেকমতিয়ার ও বুরহানুদ্দিন রব্বানীর তালিবান বিরোধী অবস্থানের কথাও সবার জানা। এমনকি রব্বানী তো সরাসরি শিয়া আহমেদ শাহ মাসুদের নর্দান এলায়েন্সের সাথে যোগ দিয়ে তালিবানের ইমারতের বিরুদ্ধে শুরু থেকে যুদ্ধ করে আসছিল। আমেরিকা আসার পর সে তাদের সহযোগিতা করে। বলা হয়ে থাকে ইমারতে ইসলামিয়ার পক্ষ থেকেই দালালির শাস্তি হিসাবে তাকে হত্যা করা হয়।
.
কাজেই দেখতেই পাচ্ছেন ইখওয়ান ও জামায়াতের আদর্শের বাস্তবতা কী। যখন ময়দান থেকে দূরে থাকে তখন তারা জিহাদের পক্ষে দুয়েকটা কথা বলে নিজেদের ভাবমূর্তি বজার রাখার চেষ্টা করে। আর যখন ময়দানে থাকে তখন মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, আর কাফির-মুশরিকদের সাহায্য করে। আসলে সফলতা দেখলে এরা যে কাউকে সমর্থন করে যার প্রমান ইরানের শিয়া বিপ্লবের প্রতি এদের সমর্থন। এরদোগানের আগে ইরানের বিপ্লবই তাদের মডেল ছিল বলা যায়।
.
একইসাথে লক্ষ করুন, আবুদুর রব রাসুল সায়য়াফ, গুলাবুদ্দিন হেকমতিয়ার, বুরহানুদ্দিন রব্বানী – এরা সবাই রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিল। শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের বইতে আপনি এদের নাম পাবেন। এমনকি শাইখ উল্লেখ করেছেন যে সায়য়াফের নাম আগে ছিল আব্দুর রাসুল, আরব মুহাজিরগণ তার নাম বদলে আবদুর রব রাসুল করে দেন। হেকমতিয়ারের ব্যাপারেও শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের প্রশংসা আছে।
.
এখন কেউ যদি আব্দুর রব রাসূলের এই ছবি ও এখনকার বক্তব্য দিয়ে বলে সে শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের অনেক আগের সাথী, আর সে-ই শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের মানহাজে আছে, আল-কায়েদা এই মানহাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে? কেমন হবে কথাটা? কতোটা গ্রহণযোগ্য ও বুদ্ধিবিবেচনার পরিচায়ক হবে? এই যুক্তিতে হেকমতিয়ার, রব্বানি, আহমাদ শাহ মাসুদসহ সবার ব্যাপারেও বলা যায় যে তারাই শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের প্রকৃত মানহাজে আছে। বাকিরা বিচ্যুত হয়েছে।
.
অথচ এধরনের দুর্বল যুক্তি দিয়েই আমাদের ভাইরা কাজ চালাচ্ছেন! এই যুক্তিগুলোকে তাদের দিকে ঘুরিয়ে দিলে, যেসব নিচুমানের কৌশল তারা ব্যবহার করছেন সেগুলো তাদের উপর প্রয়োগ করা শুরু হলে, কী অবস্থা হবে তা চিন্তা করছেন না, বরং কাঁচের ঘরে থেকে প্রবল আত্ববিশ্বাসে অপরের দিকে ঢিল ছুড়ছেন।
[সংগৃহীত]