মালালাকে তালিবান আদনান রশিদের চিঠি
[লেখাটি প্রচুর তথ্যবহুল। তালিবান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ]
আল্লাহর নামে, যিনি অসীম করুণাময় এবং পরম দয়ালু
মালালা ইউসুফজাই এর প্রতি আদনান রাশিদ, তাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক যারা নির্দেশনা মেনে চলে।
মিস মালালা ইউসুফজাই, আমি আমার ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনা থেকে আপনাকে লিখছি, এটা পাকিস্থানের তালিবান বা অন্য কোন জিহাদি দলের মতামত নাও হতে পারে। আমি সর্বপ্রথম আপনার সম্পর্কে জানতে পারি BBC-উর্দু এর মাধ্যমে, যখন আমি ছিলাম বানু জেলখানায়, তখনো আমি আপনাকে তালিবান বিরোধী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করে লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনার ঠিকানা জানা ছিল না এবং কিভাবে আপনাকে লিখবো বুঝতে পারছিলাম না। আপনার প্রতি আমার সব আবেগ ভ্রাতৃত্ববোধ থেকে কারন আমরা দুইজনই একই ইউসুফজাই উপজাতিয়। ইতোমধ্যে জেল ভাঙ্গার ঘটনা ঘটল, এবং আমি পালিয়ে যেতে সক্ষম হই। আমি অনেক আঘাত পেয়েছিলাম যখন শুনলাম আপনার উপর আক্রমন হলো, আমি আফসোস করেছিলাম যে এটা কখনই হতো না, যদি আমি আপনাকে আগে বুঝাতে পারতাম। আপনার উপর তালিবানের আক্রমন ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী সঠিক কি ভুল ছিল, অথবা আপনার মৃত্যু প্রাপ্য ছিল কি না আমি এইসব বিতর্কে এখন যাব না, আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর ছেড়ে দেই – উনিই সবচেয়ে বড় বিচারক। যদিও এটা অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে তবুও এখানে আপনাকে কয়েকটা উপদেশ দিব।
সর্বপ্রথম স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, তালিবান কখনোই এইজন্য আপনার উপর আক্রমন করে নি যে, আপনি স্কুলে যান অথবা আপনি লেখাপড়া করতে পছন্দ করেন, সাথে সাথে এটাও বলতে চাই যে তালিবান বা মুজাহিদরা কখনোই নারী-শিক্ষার বিরোধী নয়। তালিবানরা বিশ্বাস করে যে আপনি ইচ্ছাকৃতভাবেই তালিবানদের বিরুদ্ধে লিখেন এবং তাদের সোয়াত অঞ্চলে ইসলামী শরীয়া আইন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে বন্ধ করার জন্য প্রচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং আপনার লিখাগুলো ছিল যথেষ্ঠ জালাময়ী। আপনি আপনার (জাতিসঙ্ঘের) বক্তৃতায় বলেছেন যে, কলমের কালি তরবারির চেয়ে শক্তিশালী, তাই তারা আপনার উপর আক্রমন করেছে। সোয়াত প্রদেশে তালিবানের অভ্যুথানের পরও হাজার হাজার মেয়েরা স্কুল/কলেজে যাচ্ছে, আপনি কি বলতে পারবেন শুধু আপনাকেই কেন তারা টার্গেট করলো? এখন বলব কেন তালিবানরা স্কুল ধ্বংস করে দিচ্ছে। -শুধুমাত্র KPK or FATA এর তালিবানরাই স্কুল ধ্বংস করছে না, পাকিস্তান আর্মি এবং Frontier Constabulary সমানভাবেই এই কাজ করছে। এটার মূল কারন হচ্ছে – যখনই কোন এলাকা কোন পক্ষের দখলে আসে তারা এই স্কুল গুলোতে তাদের ঘাটি করে। (আর প্রতিপক্ষের আক্রমনে স্কুলের ক্ষতি হয়।) ২০০৪ সাল, আমি তখন সোয়াতে সুফি মুহাম্মাদ এর প্রথম বিপ্লবের ব্যর্থতার কারন অনুসন্ধান করছিলাম। আমি জানতে পারলাম যে, FC (Frontier Constabulary) সোয়াতের স্কুল গুলোতে ঘাটি করল এবং স্কুল গুলোকেই তাদের transit camp হিসাবে ব্যবহার করতে লাগল। এখন বলুন, কাকে দোষ দিবেন আপনি? আপনি খোজ নিলে দেখতে পারবেন অনেক স্কুল/কলেজ পাকিস্তান আর্মি তাদের ব্যারাক হিসাবে ব্যবহার করেছে। তাই যখন কোন পবিত্র জিনিস ও প্রাণঘাতী হয়ে যায়, তাকে ধ্বংস করে দিতে হবে- এটাই তালেবানদের পলিসি। বিরোধীপক্ষ কৌশলগত ভাবে ব্যবহার করছে না এমন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা তালিবান্দের কাজ নয়। কিন্তু কিছু লোকাল প্রশাসনের লোভী ও খারাপ প্রকৃতির লোক বাহির থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য এই কাজ করে থাকে।
শিক্ষা ও বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা, এখন আসি মূল বিষয়ে- শিক্ষা।
এটা অতি চমৎকার যে আপনি শিক্ষার জন্য চিৎকার করছেন। আপনি এবং জাতিসঙ্ঘ এমনভাবে প্রচার করছেন যে শুধু শিক্ষার জন্যই আপনার উপর গুলি চালানো হয়েছে, কিন্তু আমি বলছি- শিক্ষার জন্যে নয় বরং আপনার প্রোপাগান্ডাই ছিল এর কারন। অথচ এখন আপনি কি করছেন? এখন আপনি আপনার জিহ্বাকে ব্যবহার করছেন আরেক জনের আদেশে। আপনি যদি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে কলমের কালি তরবারির চেয়ে শক্তিশালী, তবে এটাও জেনে রাখুন যে মানুষের মুখ (জিহ্বা) আরো বেশি শক্তিশালী। তরবারির আঘাতের ক্ষত শুকিয়ে যায়, কিন্তু জিহ্বার আঘাত শুকায় না। আমি আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ভারত উপমহাদেশের প্রায় সব মানুষই ব্রিটিশ শাসনের আগে থেকেই লিখতে ও পড়তে পারত। লোকাল জনগনই ব্রিটিশ কর্মকর্তাদেরকে আরবি, হিন্দি, উর্দু,ফার্সি শিখিয়েছে। প্রায় সকল মসজিদই স্কুল এর মতো ব্যবহার হতো এবং মুসলিম শাসকরা অনেক অর্থ ব্যয় করত শিক্ষার উপর। মুসলিম ভারত তাদের সিল্ক, কৃষি, পাট, টেক্সটাইল ও শিপিং এর জন্য অনেক ধনী ছিল। ছিল না কোন দারিদ্রতা, সংকট অথবা দ্বন্দ। কারন শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল মহৎ ও উন্নত চিন্তাভাবনার উপর। আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, Sir T.B Macaulay ২রা ফেব্রুয়ারি ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত উপমহাদেশের শিক্ষার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার উপায় বলতে গিয়ে বলেছিলেন,
“We must at present do our best to form a class who may be interpreters between us and them millions whom we govern, –a class of persons Indian in blood and color, but English in tastes, in opinions, in morals and in intellect.”
এটাই হলো বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মূল পরিকল্পনা এবং উদ্ধেশ্য যেই শিক্ষার জন্য আপনি মরতেও প্রস্তুত, যার জন্য UNO আপনাকে তাদের অফিসে নিয়ে গেছে যাতে করে আরো অনেক অনেক “রক্তে এশিয়ান কিন্তু স্বাদে ইংরেজ” বানানো যায়, আরো “রঙে আফ্রিকান মতে ইংরেজ” বানানো যায়। এই কথিত শিক্ষা ব্যবস্থাই ওবামার মতো খুনি হয় আপনার প্রিয় ব্যক্তিত্ব, তাই না? কেন তারা সব মানুষকে ইংরেজ বানাতে চায়? কারন ইংরেজরা হলো ইহুদীদের অন্ধ সমর্থক এবং চাকর। আপনি কি জানেন যে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তক Sir Syed Ahmed Khan ছিলেন একজন freemasons (যারা বিশ্বে ইহুদী স্বার্থ কায়েমের জন্য নিযুক্ত)? আপনি বলেছেন যে, একজন শিক্ষক, একটা কলম আর একটা বই পৃথিবীটাকে পাল্টে দিতে পারে, আমিও আপনার সাথে একমত; কিন্তু কোন শিক্ষক, কোন কলম, কোন বই? রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদ (স) বলেছেন,
“আমি প্রেরিত হয়েছি একজন শিক্ষক হিসাবে, আর কুরআন হলো সেই বই যা আমাকে শিক্ষা দিতে হবে।”
তাই একজন মহৎ ও তাকওয়াবান শিক্ষক পৃথিবীটাকে পাল্টে দিতে পারবে, শয়তানি আর সেকুলার শিক্ষা ব্যবস্থায় নয়।
আপনি একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন যে, একবার একজন সাংবাদিক একজন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, কেন তালিবানরা এই শিক্ষাকে ভয় পায়, উত্তরে সে বলেছিল, কারন তারা জানে না এই বইয়ে কি আছে। আমি আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে একই প্রশ্ন করতে চাই, কেন আপনারা আল্লাহর বই কুরআন কে ভয় পান? কারন, আপনারা জানেন না যে এর মধ্যে কি আছে। তালিবানেরা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর এই বইয়ে কি আছে সেটা, আর UNO প্রতিষ্ঠা করতে চায় যা মানব রচিত। আমরা চাই পৃথিবীটাকে তার সৃষ্টিকর্তার যোগাযোগ করিয়ে দিতে, কিন্তু ওরা চায় কিছু শয়তান স্রষ্টার গোলামি করাতে। আপনি ন্যায় বিচার এবং সমতার কথা বলেছেন এমন এক মঞ্চ থেকে যা নিজেই একটা অন্যায্য প্রতিষ্ঠান, যেখানে সকল জাতির অধিকার সমান নয়, যেখানে মাত্র ৫টা দেশেরই সবক্ষমতা, বাকিরা সবাই ক্ষমতাহীন। বহুবার সারা পৃথিবীর সব দেশই ইসরায়েল এর বিরুদ্ধে একমত হয়েছিল, কিন্তু একটা ভোটই ন্যয় দাবিকে নস্যাৎ করে দেয়! যেই স্থান থেকে আপনি কথা বলছেন, তারা নতুন পৃথিবীর ক্রমানু [new world order] করছে, আমি জিজ্ঞাসা করছি, পুরাতন পৃথিবীর ক্রমানুতে কি সমস্যা? তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় গ্লোবাল শিক্ষা, গ্লোবাল অর্থনীতি, গ্লোবাল আর্মি, গ্লোবাল ব্যবসা, গ্লোবাল সরকার এবং গ্লোবাল ধর্ম। আমি জানতে চাই আপনাদের এই গ্লোবাল পরিকল্পনায় নবী-রাসুলদের নির্দেশিকার কোন ব্যবস্থা আছে? আপনি কথা বলেছেন পোলিও দল এর উপর তালিবানদের আক্রমনের ব্যপারে, আপনি কি বলতে পারেন কেন আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী Henry Kissinger (একজন ইহুদী) ১৯৭৩ সালে তৃতীয় বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০% কমাতে বলেছিলেন? কেন sterilization and eugenics (জন্ম নিয়ন্ত্রন) পদ্ধতিগুলো UNO এর ছায়ায় বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পরিচালিত হচ্ছে? উজবেকিস্থানে ১০ লক্ষের ও বেশি নারীকে তাদের অজান্তেই জোর করে সন্তান ধারন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া হয়েছিল। Bertrand Russell তার “The impact of science on society” বইয়ে লিখেছিলেন, “Diet, injections and injunctions will combine, from a very early age, to produce the sort of character and sort of beliefs that the authorities consider desirable and any serious criticism of power that be will become psychologically impossible.” এই জন্যই সেই কথিত পোলিও প্রোগ্রামকে তালেবানরা বর্জন করেছিল।
আপনি বলেছেন “মালালা দিবস” আপনার দিন না, এটা যারা তাদের অধিকার এর কথা বলবে তাদের, আমি প্রশ্ন করি কেন এইরকম একটা দিন “Rachel Corrie” -এর নামে নির্ধারিত হয় নি? কারন বুলডোজরটা ছিল ইসরাইলদের। কেন এইরকম একটা দিন “আফিয়া সিদ্দিকা” -এর নামে নির্ধারিত হয় নি? কারন কী এই যে ক্রেতা ছিল আমেরিকা? কেন এইরকম একটা দিন “Faizan and Faheem” -এর নামে নির্ধারিত হয় নি? কারন হত্যাকারী ছিল Raymond Davis. কেন এইরকম একটা দিন সেই ১৬ আফগান মহিলা ও শিশুর নামে নির্ধারিত হয় নি যাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছিল আমেরিকান রবার্ট বেলাস? আমি এখন আপনাকে একটা প্রশ্ন করব, দয়া করে সততার সাথে উত্তর দিবেন-আপনি যদি আমেরিকান ড্রোন হামলার শিকার হতেন তাহলে কি দুনিয়া আপনার শরীরের অবস্থার খবর জানতে পারত? আপনাকে কী “জাতির কন্যা” হিসাবে ডাকা হতো? মিডিয়া কী আপনাকে নিয়ে এরকম ব্যস্ত হতো? জেনারেল কিয়ানি কি আপনাকে দেখতে আসতেন? জাতিসঙ্ঘ কি আপনাকে ডাকতো? ৩০০ -এর বেশি নিস্পাপ মহিলা ও শিশুকে ড্রোন হামলা করে হত্যা করার পরও কেউ খোজ নেয় না কারন হত্যাকারীরা উচ্চশিক্ষিত, অহিংস, শান্তিপ্রিয় আমেরিকান!!! আমি আশা করি, যেই সমবেদনার শিক্ষা আপনি নবীজি মুহাম্মাদ (স) -এর নিকট থেকে শিখেছেন তা যেন পাকিস্তান আর্মি ও শিখতে পারে যাতে করে তারা ফাতা ও বেলুচিস্তান এ মুসলিম রক্তপাত বন্ধ করে। আমি আশা করি, যেই সহানুভূতির শিক্ষা আপনি যীশু খ্রিস্টের নিকট থেকে শিখেছেন তা যেন USA ও NATO বাহিনী শিখতে পারে যাতে করে তারা সারা দুনিয়ার রক্তপান বন্ধ করে। একই ভাবে আশা করি বুদ্ধরাও শিখতে পারে যাতে তারা বার্মার মুসলিম নিধন বন্ধ করে। অনুরূপভাবে ইন্ডিয়ান আর্মিরা তাদের গান্ধিজীর পথ অনুসরন করে কাশ্মীরেরে গণহত্যা বন্ধ করে।
আর হ্যাঁ, বাছা খানের অনুসারীরা (ANP) গত পাঁচ বছর KPK প্রদেশে অহিংসতার একটা উদাহরন রেখেছে, যেমন সোয়াত, যেখানে একটা গুলিও ছোড়া হয় নি!
সবশেষে, আমি আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি, আপনি বাড়ি ফিরে আসুন, ইসলাম এবং পস্তুন সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিন। আপনার নিজ শহরেই একটা ইসলামিক মাদ্রাসাতে ভর্তি হোন। কুরআন পড়ুন। আপনার কলমকে ব্যবহার করুন ইসলাম এবং মুসলিম উম্মার জন্য। আর উম্মোচন করে দিন তাদের মুখোশ যারা মানবতার নামে তাদের শয়তানি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায়।
সকল প্রশংসা একমাত্র মহিমান্বিত সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’আলার জন্যই।