আরবইলম ও আত্মশুদ্ধিবই ও রিসালাহবালাকোট মিডিয়ামিডিয়াশাইখ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসী হাফিযাহুল্লাহশামহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

দ্বীনের স্বার্থে কি ধরণের কাজ করা উচিত?- শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল মাকদিসি হাফিজাহুল্লাহ

দ্বীনের স্বার্থে কি ধরণের কাজ করা উচিত?

– শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল মাকদিসি হাফিজাহুল্লাহ

দ্বীনের স্বার্থে কি ধরণের কাজ করা উচিত?- শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল মাকদিসি হাফিজাহুল্লাহ

 

অনলাইনে পড়ুন-

https://justpaste.it/odikotor_opokari_bostur_maje

 

Word

https://banglafiles.net/index.php/s/eG3qmnHBtkJ85qx

https://archive.org/download/Deen_er_sharthe_ki_dhoroner_kaj_kora_uchit/21.Deen_er_sharthe_ki_dhoroner_kaj_kora_uchit.docx
http://www.mediafire.com/file/pebnu0sd9yiwcxa/21.Deen_er_sharthe_ki_dhoroner_kaj_kora_uchit.docx/file

PDF

https://banglafiles.net/index.php/s/SsR5GnKSRnfyoar

https://archive.org/download/balakot_media_books/Deen_er_sharthe_ki_dhoroner_kaj_kora_uchit.pdf
http://www.mediafire.com/file/qr1nd2916kmqzop/21.Deen_er_sharthe_ki_dhoroner_kaj_kora_uchit.pdf/file

========================

হালাল এবং উত্তমের মাঝে, শরীয়াহসম্মত এবং অধিকতর উপকারী বস্তুর মাঝে

আবু মুহাম্মদ আলমাক্বদিসীর লেখা জিহাদের ফলগুলো থেকেবইয়ের অংশ বিশেষ

﴿إِنَّ هَـذَا الْقُرْآنَ يِهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ﴾

নিঃসন্দেহে, এই কুরআন পথ দেখায় সেইদিকে, যা সর্বাধিক সরল এবং সঠিক। []

কারাগারে এক সাথী একবার আমাকে বললো যে বেসামরিক কোন আমেরিকান লোককে কিছু মুজাহিদীন হত্যা করে সেটি টেলিভিশন ও ইন্টারনেটে প্রচার করে দিয়েছে, যাতে পুরো বিশ্ববাসী তা দেখতে পায়, এই সুযোগে যারা কিনা নিজেদেরকে মানবাধিকারের রক্ষক বলে দাবী করে, সেই আমেরিকানরা আবু গারিব কারাগারে কী নৃশংস পাশবিকতা করে আসছে, তার উপর থেকে সকলের দৃষ্টি সরে গিয়ে পড়ে মুজাহিদীন ভাইদের এ অপারেশনের ওপর! আর তখন সেটা গরম খবরেপরিণত হয়। এ ব্যাপারে আমার মতামত জানতে চাইলো কারাগারের সে সঙ্গী। আমি জবাব দিলাম যে আমি কখনোই এমন কাজকে সমর্থন করি না। যদিও আমি জানি, যে মুজাহিদীনরা এ কাজ করেছিলো তাদের মনে তখন কেমন ঝড় চলছিলো। দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য তাদের মনে যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা, ইসলামের শক্তি ও গৌরব পুনরুদ্ধারের প্রতি তাদের সযত্ন প্রচেষ্টা, উম্মাহর দুঃখকষ্টে তাদের ব্যথাতুর হৃদয়ের ঝরে পড়া কান্না, দুর্বল শিকারের উপর শত্রুর বিষাক্ত মরণ থাবার প্রতি তাদের যে রাগ আর ক্ষোভ কতোখানি তা আমি উপলব্ধি করতে পারি। এসব কিছুর কারণে তারা এই খবরটি প্রচার করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা যা করেছে তা আমার পছন্দনীয় নয়, আর আমার ইচ্ছা, না তারা এ কাজ করতো, আর না তারা প্রচার করতো!

যে ব্যক্তি নিজেকে ইসলামী জিহাদী স্কুলের একজন সদস্য মনে করে, তার দ্বারা এমন কাজ করা শোভা পায় না যার কারণে তাকে ভৎর্সনার শিকার হতে হবে। বরং তার তো এমন কাজে মনোনিবেশ করা উচিৎ যে কাজের মাধ্যমে জিহাদের পতাকা উত্তোলিত হবে, এবং তার সে সমস্ত কাজ থেকে দূরে থাকা দরকার যার ফলে এ পতাকার রং মলিন/বিবর্ণ হতে পারে কিংবা শত্রুরা এর সুযোগ নিয়ে মুজাহিদীনদের উপর অপবাদ আরোপ করে তাদের কাজকে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।

আমার সঙ্গী বিস্ময়ভরে বলে উঠলো, “আপনি আমাকে বড়ই বিস্মিত করলেন! কেন আপনি এসব কর্মকাণ্ডকে অপছন্দ করছেন এগুলো কি ইসলামে হালাল নয়?”

আমি উত্তর দিলামঃ হে আমার ভাই, আমি যখন বলি আমি কোন একটা বিষয় পছন্দ করি না, সেটি যে শরীয়াহ বিরোধী অথবা বিবাদপূর্ণ কোন ব্যাপার হতেই হবে তা নয়! মুসলিমদের মাঝে যে বিষয়ে ঐকমত্য আছে, তার চেয়ে প্রিয় আমার কাছে কিছুই হতে পারেনা। কিন্তু জিহাদের ক্ষতি করবে কিংবা এর মর্যাদা হানি করবে এমন সবকিছু রুখে দিতে আমি বদ্ধপরিকর। বিশেষ করে এটি এমন একটি সময় যখন যুদ্ধ কেবল যুদ্ধেক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই, কেননা মিডিয়াও এখন এ যুদ্ধে এক বিশাল ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং ইসলামের দাওয়াহ এবং জিহাদের জন্য সবচেয়ে উপকারী এবং যথাযথ ধাপ বেছে নিতেই আমার এ অবস্থান।

আমি আমার লেখনী, বক্তৃতা ও ক্লাসে বার বার আপনাকে এবং সবাইকে একটি কথা বলেছি দাঈ এবং মুজাহিদীন, তারা যেভাবে করে চাইছে, সেভাবে করে কখনোই উম্মাহ ও জিহাদের বিজয় ও উপকারসাধন করতে পারবে না, যতোদিন না তারা কেবল হালাল ও হারামের খাঁচা থেকে বের হয়ে আসে; আর তার বদলে হালাল বিষয়গুলোর মাঝেই কোনটি বেশি উপকারী, কোনটি ক্ষতিকর, কোনটি সুবিধাজনক, কোনটি বেশি জোরালো আর কোনটি সবচাইতে সঠিক সে হিসেব করা শুরু না করে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,

﴿إِنَّ هَـذَا الْقُرْآنَ يِهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ﴾

নিঃসন্দেহে, এই কুরআন পথ দেখায় সেইদিকে, যা সর্বাধিক সরল এবং সঠিক। []

আর আল্লাহ আরো বলেন,

﴿وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنزِلَإِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُم﴾

আর তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ উত্তম বিষয়ের অনুসরণ কর []

অতএব আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে সবচাইতে সুবিধাজনক, উপকারী আর উত্তম কাজের অনুসরণ করা। তিনি বলেছেন,

﴿الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ﴾

যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে []

মুসলিম হিসেবে আমাদের তো কেবল কোনটি হালাল, আইনসিদ্ধ আর অনুমোদিত সেটি দেখলে চলবে না; এগুলো সর্বজন স্বীকৃত, সকলেরই জানা, আর যে সব বিষয় হালাল সেগুলোর দ্বারাই আমাদেরকে দ্বীনের বিজয় আনতে হবে। আল্লাহর হাতে যা আছে তা আমরা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কখনোই পাবো না, আর আল্লাহর দ্বীন কোনদিনও হারাম, কুফর বা শিরকের সাহায্যে বিজয়ী হবে না। দ্বীনের জন্য যারাই কাজ করতে চাইবে তাদের এ মৌলিক জ্ঞানটি থাকা চাই। দ্বীনের সাহায্যকারী ও মুজাহিদীনদের কাজের মূলনীতিই হলো হালালের মধ্যে থাকা ও হারাম পরিহার করা। সুতরাং কেবলমাত্র হালালহারামের ভিত্তিতে আমাদের প্রশ্ন তোলা উচিৎ নয়, বরঞ্চ যেমনটা আগেও বহুবার বলেছি, আমাদের বিবেচ্য বিষয় হবে অনুমোদিত একাধিক পন্থার মাঝে কোনটি জিহাদের জন্য সর্বাপেক্ষা উপকারী, মুসলিমদের জন্য সব চাইতে কল্যাণকর, এবং শত্রুর বিপক্ষে সবচেয়ে ক্ষতিকর।

যখন আমরা খাদ্য, পানীয়, জামাকাপড়, বা বিয়ের ব্যাপারে চিন্তা করি, তখন কিন্তু আমরা শুধু অনুমোদিত, শরীয়াহসম্মত, আর হালালএতটুকু নিয়ে মোটেও খুশি থাকতে পারি না; বরং আমরা সবচেয়ে ভালো খাবার, পানীয়, পোষাকআষাক, আর সবচেয়ে উত্তম নারীটিকেই নিজেদের জন্য বেছে নেই। কিন্তু যেই না দাওয়া, জিহাদ বা দ্বীনের ক্ষেত্রে কথা ওঠে, তখন সবকিছুই গ্রহণযোগ্য আর মনপছন্দ ঠেকে; আর তা যদি হয় অনুমোদিত, ইসলামী শরীয়াহসম্মত আর হালাল, তাহলে তো কথাই নেই, আরো চমৎকার ব্যাপার!

আচ্ছা, একটি উদাহরণ দেই, যে নারীটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত, এক চোখে অন্ধ, আর পঙ্গু তাকে বিয়ে করা কি শরীয়াহ সম্মত নয়? নিঃসন্দেহে, এটি হালাল এবং শরীয়াহ সম্মত, তার উপর এমন নারীকে বিয়ে করার মাধ্যমে আপনি পুরস্কৃতও হবেন! তাহলে কেন আপনার অভিলাষ আর প্রাণপণ চেষ্টা থাকে এমন এক নারীকে বেছে নেয়ার যে নীরোগ ও স্বাস্থ্যবতী, শুধু তাই নয়, বরং তাকে হতে হবে সুন্দরী?

আমি একটি সত্য কাহিনী বলি, এ ঘটনা শুনে হয়তো এ বিষয়টির রুক্ষতা কিছুটা দূর হবে। আমাদের এক বসনিয়ান ভাই আমাকে জানালেন যে কিছু আরবীয় তরুণ এক মুজাহিদীন ভাইকে একটি ব্যাপারে খুব পীড়াপীড়ি করছে। তাদের সাথে যেন বসনিয়ার এতিম নারীদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া হয় এই ছিল তাদের চাওয়া (উল্লেখ্য, বসনিয়ার নারীদের গায়ের রং ফর্সা হয়) তাদের ভাষ্য, এতে করে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। বসনিয়াতে কী পরিমাণ জুলুমনির্যাতন, হত্যা আর ধর্ষণ চলছে সে কথাও বলল তারা। তাদের অন্তরের গভীরের মমতা আর আগ্রহ ব্যক্ত করে, তাদের অনুরোধ রাখার জন্য চাপাচাপি করতে থাকলো। সেই মুজাহিদীন ভাই তাদেরকে কথা দিলেন যে কয়েকদিন পরে তিনি তাদের প্রস্তাবের জবাব দেবেন। কিন্তু তাদের চাপাচাপি আর থামে না, তো তিনি তাদেরকে বললেন, “আমি তোমাদের প্রস্তাব নিয়ে ভেবেছি, এবং তোমাদের মাঝে উম্মাহর কথা বিবেচনা, এবং নারীদের সম্ভ্রম রক্ষা করার যে মানসিকতা আছে তা আমি যারপরনাই শ্রদ্ধা করি। আমি আফ্রিকান উপমহাদেশের বহু গরীব ও এতিম বোনদের কথা জানি, যেমনঃ ইথিওপিয়া আর সোমালিয়ার বোনেরা (এসব অঞ্চলের মানুষের গায়ের রং কালো)। আমি সর্বতো চেষ্টা করবো এ বোনগুলির সাথে তোমাদের বিয়ে করিয়ে দিতে যাতে করে তোমরা তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে পারো, যেমনটি তোমরা চাও!” এর কিছুক্ষণ আগেই এই তরুণেরা কথা দিয়েছিলো তারা তাকে কিছুদিন পরে নিজেদের উত্তর জানাবে, কিন্তু সেই যে তারা গেলো, এই ভাই আর কোনদিনও তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছু শুনলেন না!

তো কেন তারা প্রস্থান করলো আর কোনদিন ফিরে আসলো না? তিনি কি তাদেরকে একটি শরীয়াহ সিদ্ধ হালাল, উপরন্তু সওয়াব মিলবে এমন একটি প্রস্তাব দেন নি? এটি কি এ কারণে নয় কারণ এ বিষয়গুলোতে আমরা নিজেদেরকে কেবল হালাল ও শরীয়াহ সিদ্ধ জিনিসের মাঝেই সীমিত রাখি না, বরং যেটি আরো বেশি ভালো, সুন্দর ও মনোরম সেটি খুঁজি?

হে আমার ভাই, যখন আমরা খাদ্য, জামাকাপড় আর বিয়ে নিয়ে ভাবছি, আমরা সবচাইতে বিশুদ্ধ ও সর্বোতৎকৃষ্ট মানের বস্তুগুলিই কেবল গ্রহণ করি, তাহলে দ্বীন, জিহাদ আর দাওয়াহর ক্ষেত্রে নিচুমানের কোনকিছু গ্রহণ করা কীভাবে বোধগম্য হতে পারে? আল্লাহ তাআলা উম্ম নিদাল আলফিলিস্তিনিয়্যাহ কে রক্ষা করুন! তিনি ইহুদীদের দখলদারিত্ব চলাকালীন সময়ে তার ছেলে মাহমুদকে ফিলিস্তিনে প্রেরণ করেছিলেন। সে বুলেট ও বোমা বিস্ফোরণ করে ইহুদীদের আস্তানায় ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়, শিকারের উপর হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে সেখানে সাত ঘণ্টার জন্য লুকিয়ে থাকে। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সে লড়াই করতে থাকে আর হত্যাকাণ্ড চালায়। ছেলে মারা যাওয়ার পর মাকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, তার একটি কথা ছিল এমনঃ আমি ওকে ইহুদীদের দিকে পাথর খণ্ড ছুঁড়তে দেই নি, যেন তারা ওকে গুলি করে মেরে না ফেলে, যাতে ও আহত না হয়ে যায়, কেননা তেমনটা হলে ওর কাঁধে যে গুরুদায়িত্ব ছিল সেটা ও কখনোই করতে পারতো না। তিনি ছেলেকে বলতেন, “আমি চাই তুমি পাথর ছুঁড়ে মারার চেয়েও বড় কোন কাজ করো, আর তিনি বলেন, “আমার ছয় ছেলে আছে, যাদেরকে আমি আল্লাহর রাহে কুরবানি করতে প্রস্তুত করছি, তবে তা হতে হবে মাহমুদের মতো সম্মানজনক উদ্দেশ্যে…”

কবে আমাদের মুজাহিদীন তরুণরা পরিপক্কতা লাভ করবে এবং নিজেদের চিন্তাধারাকে এভাবে আকৃতি দিবে? কিংবা আরো মহান কিছু করার পরিকল্পনা করবে? আমাদের মুজাহিদীন ভাইদের শ্রম, সম্পদ আর আত্মত্যাগের তিনচতুর্থাংশই আজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হয় তাদের অদূরদর্শিতার ফলে, কিংবা তাদের নেতাদের অদূরদর্শিতার ফলে যার কারণে দেখতে পাই নিচুমানের কোন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো হালাল এই দাবীতে!

কবে আমরা কোনটি সবচাইতে উত্তম, উম্মাহর জন্য সর্বাপেক্ষা কল্যাণকর, আর শত্রুর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ক্ষতির কারণ সেই ভিত্তিতে আমাদের প্রচেষ্টা ও জিহাদকে পরিচালিত করবো?

কবে আমরা কেবল হালাল ও শরীয়াহ সিদ্ধ বিষয়ের সীমা ছাপিয়ে আরো বেশি গভীরে দেখার চেষ্টা করবো? আর তাদের ভেতর থেকে সবচাইতে মহান, সম্মানজনক ও নিখাদ কাজটি বেছে নেবো, যা জিহাদের পতাকা সমুচ্চ করবে?

আমার এ কারাসঙ্গীটি কিছু সিনেমা হল আর মদের দোকান বিস্ফোরণের কারণে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। এই সুদীর্ঘ সময় কারাবন্দী থেকে এবং কারাজীবনে জ্ঞান আহরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরেও এখন পর্যন্ত তার চিন্তাধারা পরিপক্কতা লাভ করে নি, সে আগের মতই রয়ে গেছে। আমি আমার সঙ্গীটির দিকে তাকিয়ে বললাম, “তোমার যদি আমার কথা পছন্দ না হয়, আমার কথা যদি মানতে না চাও, তাহলে এক কাজ করোঃ কাল জেল থেকে ছাড়া পেলে, বের হয়ে আবারো সিনেমা হল আর মদের দোকান উড়িয়ে দিও। ঠিক আছে, তুমি এটাই কর। যেখানে আজকের মুসলিমরা আরো বড় কিছু পেতে আগ্রহী। তারা বিশ্বের সবচেয়ে দাম্ভিক পরাশক্তির বিরুদ্ধে লড়ে চলেছে, তাদের চাওয়া হল একটি ইসলামী রাষ্ট্র, তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব পরিচালনায় মুসলিমদের অবস্থান সুসংহত করতে এবং দুনিয়ার বুক থেকে কুফরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। যখন তারা প্রত্যেক সচেতন ব্যক্তি আর মুজাহিদের কাছ থেকে তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা, শরীরের সবখানি রক্ত ঢেলে দেয়ার আশা করে, তখন তুমি এটাই করো। তুমি এই উচু মানের গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য কোনকিছুতে অংশগ্রহণ না করে, গুনাহগার মুসলিম আর সাধারণ জনতার বিরুদ্ধে তোমার লড়াই অব্যাহত রাখো, সিনেমা হল উড়িয়ে দাও যেখানে জনসাধারণের নিয়মিত যাতায়াত।তোমার এই কাজ তো হালাল, শরীয়াহসম্মত এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, তাই না?! সে বললো, “না, আমি এ কাজ আর কখনো করবো না, কারণ এখন আমি বিষয়টা এখন বুঝতে পারছি, আমিও মহৎ কিছুর আশা করি…”

আমি জবাব দিলামঃ আমি তোমাকে যা বলেছি, তা যদি তুমি বুঝতে অপারগ হও, তাহলে তোমার জ্ঞান ও বুঝের আরো পরিপক্কতা দরকার। তুমি এখনো এ বিশ্বের চ্যালেঞ্জ, বাস্তবতা এবং উম্মাহ ও দ্বীনের কী প্রয়োজন তা বুঝতে পারো নি।

টেলিভিশন স্ক্রিনের সামনে কিছু আমেরিকান, যাদেরকে বর্তমান বিশ্বের ভাষায় বেসামরিকবলা হয়ে থাকে, তাদেরকে হত্যা করা হলো, তারপর ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দেয়া হলো, যে কাজকে কিছু আলেম এক প্রকারের অঙ্গবিকৃতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, চিন্তা করে দেখো, এ কাজটি টিভিতে প্রচার করার পর কী পরিমাণ শোরগোলটাই না বেঁধে গেলো?

আল্লাহর শত্রুরা, ভণ্ড আলেমের দল, আমেরিকা আর অত্যাচারী জালেমরা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জিহাদের উপর কালিমালেপন করা শুরু করেছে, মুজাহিদীনদের উপর মিথ্যে অপবাদ রটিয়ে, মুজাহিদীন ও তাদের নেতিবাচক কাজের প্রতি, সাধারণ মুসলিম, বিশেষ করে ইরাকী মুসলিমদের মনকে একেবারে বিষিয়ে তুলেছে। এ কাজের দিকে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং টিভিতে ফলাও করে সম্প্রচার করা নিশ্চিতভাবে কোন উপকার বয়ে আনে নি। আমার বিশ্বাস, যারাই এ কাজটি করেছে, তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় নি। যদি কেউ আজকে আল্লাহর শত্রুর মাথা উড়িয়ে দিতে চায়, তাহলে তাকে প্রথমেই আজকের বিশ্বে চলমান যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি, মাধ্যম ও অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে জানাশোনার ব্যাপারে মনোনিবেশ করতে হবে। তাকে বুঝতে হবে, আজকের যুদ্ধ কেবল একটি ছুরির ওপর ভর করে চলছে না, যা দিয়ে সে আমেরিকানের মাথা কেটে ফেলেছিলো। জিহাদ বোঝার সামর্থ্য ছুরির আকার ও মাপের ওপর নির্ভর করে না, বরং জিহাদ নির্ভর করে জিহাদের মাধ্যম, মিডিয়া, জনমত, মানুষের সমর্থন এবং সঠিক ধাপ বেছে নেয়ার পরিপক্কতার উপর। কিছু সময় আছে যখন অন্যদের কথা ভেবে কিছু কাজ পরিহার করতে হবে, কখনো বা একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি বিশেষ কাজ করার ব্যাপারে প্রাধান্য দিতে হবে, কখনো আবার নিজেদের কাজ সর্বসমক্ষে প্রচার করতে হবে যদি দেখা যায় এ কাজের পরিষ্কার কার্যকারিতা আছে, এবং এ থেকে বিবাদ বা প্রতিক্রিয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি তারা এমনটি করতে পারে, তাহলে তাদের নিজেদের মিডিয়া, এমনকি শত্রুর মিডিয়াও তাদের পক্ষ হয়ে কাজ করতে বাধ্য হবে, কেননা তারা তখন মিডিয়াকে সেভাবে পরিচালিত করতে পারবে যেভাবে তারা চায়। শত্রুরা তাদের ইচ্ছামত মিডিয়া পরিচালনা করতে তখন আর পারবে না, কারণ তারা মুজাহিদীনদের কোন ভুলের সুযোগ নিয়ে নিজেদের নোংরা স্বার্থ হাসিল করবে, এমন কোন সুযোগ তাদেরকে দেয়া হবে না। ইসলামী জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য, তবে শুধু ইসলামী জ্ঞানের সাহায্যে কেউ এসব লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। এই বিষয়গুলো সফলভাবে সম্পাদন করতে হলে বাস্তবতা বুঝতে হবে, শত্রু ও তাদের ষড়যন্ত্রকে বিচক্ষণতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। উম্মাহর পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখতে হবে যে কোনটি এখন সবচাইতে বড় সমস্যা, আর কী এখন উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার।

তুমি যদি আমাকে বলো, “হে শায়খ, আপনি তো আমাদের আশার উপর পর্দা ফেলে দিলেন, বৃহৎ পরিসরকে সঙ্কুচিত করে দিলেন! আল্লাহর রাসূল (সা) বন্দীদেরকে হত্যা করেছেন, বনু কুরায়যার অধিকাংশ জনগণকে মেরে ফেলেছেন, আর তাঁর কাজই আমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ!” আমি তাহলে জবাব দেবো, “হ্যাঁ, মুহাম্মদই আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ এতে কোন সন্দেহ নেই, তবে তোমরা যদি একটু এ আদর্শকে বুঝতে, নিরীক্ষণ করতে, গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে, তাহলে তোমরা মহাসাফল্য অর্জন করতে।

এ কারণেই যে সব উলেমা এই মহান আদর্শ নিয়ে ভালোভাবে গবেষণা করেছেন, তারা বলেছেন যে যুদ্ধবন্দীদের সাথে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা ইমামের ইচ্ছা, তিনি চাইলে দয়াপরবশ হয়ে তাদের ছেড়ে দিতে পারেন, তাদের থেকে মুক্তিপণ নিতে পারেন, মুসলিম কারাবন্দীদের বিনিময়ে তাদেরকে মুক্তি দিতে পারেন, হত্যা করতে পারেন কিংবা তাদের ধর্ম, ইসলামের সাথে শত্রুতা কতোখানি সেই ভিত্তিতে যা ভালো মনে হয় সেটাই করতে পারেন।

এই উলেমাদের মতে, তার গৃহীত ব্যবস্থার ভিত্তি হতে হবে ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য কোনটি সবচেয়ে বেশি কল্যাণকর ও সুবিধাজনকসে কথা বিবেচনা করে। উলেমারা আমাদেরকে এ ব্যাপারেই নির্দেশ দিচ্ছেন, যেটি সবচেয়ে উপযুক্ত ও কার্যকর তা করতে হবে, আর আমিও এ কথারই পুনরাবৃত্তি করছি। মুজাহিদীনদের কে আমরা জিহাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম পথ গ্রহণ করার আহবান দিচ্ছি!

তুমি যদি যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সা) এর জীবন নিরীক্ষণ করে দেখো, তাহলে দেখতে পাবে তিনি (সা) সবার ক্ষেত্রে এক নীতি গ্রহণ করেন নি, কখনো তিনি তাদের উপর দয়া দেখিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন, যেমনটি হয়েছে সুমামা বিন ইসালের এর ক্ষেত্রে কখনো তিনি তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন; কখনো বা শিক্ষামূলক নজীর স্থাপনের উদ্দেশ্যে তাদের মেরে ফেলেছেন। প্রতিশোধ বা অন্য কোন কারণেও তিনি যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করেছেন, যেমনটা করা হয়েছে উরাইনাহ গোত্রের লোকদের সাথে যারা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলো, তারা রাখালদের হত্যা করে তাদের চোখ উপড়ে ফেলতো, তাই রাসূলুল্লাহ(সা) তাদের উপর একইভাবে প্রতিশোধ নেন। তিনি (সা) কাবার গিলাফ ধরে ঝুলে থাকা এক কাফেরকে হত্যার নির্দেশ দেন, আর তার মৃত্যুর খবর মক্কার নেতাদের নিকট পৌঁছে দেয়া হয়, যেন প্রত্যেক ব্যক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার, কিংবা ইসলাম ও মুসলিমদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করার পরিণতি সম্পর্কে জানতে পারে। কিন্তু এসব উদাহরণের কোথাও এমন দেখা যায় না যে তিনি যুদ্ধবন্দীদের কাউকে সর্বসমক্ষে এভাবে হত্যা করেছেন, একমাত্র তারা ব্যতীত যারা রাসূল (সা) ও তাঁর দ্বীনের বিরুদ্ধে শত্রুতায় সবচাইতে কঠোর ছিল।

আবদুল উযযা, বা আব্দুল্লাহ ইবন খতাল, যাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা) কাবার দেয়াল ধরে ঝুলন্ত থাকা অবস্থায় হত্যা করেন, তারা ছিল এমন এক গোত্রের লোক, রাসূলুল্লাহ (সা) মক্কা বিজয়ের দিনেই তাদের রক্ত হালাল বলে ঘোষণা দেন। অন্য সকল কাফেরের মধ্যে তাদের ব্যাপারেই কেবল এই ঘোষণা দেয়ার কারণ ছিল ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি তাদের তীব্র শত্রুতা, প্রচণ্ড বিরোধিতা এবং চরম বিদ্রূপাত্মক আক্রমণ। আব্দুল্লাহ ইবন খতাল ইসলাম গ্রহণ করার পর, আল্লাহর রাসূল (সা) তাকে একজন আনসারের সাথে একটি অভিযানে প্রেরণ করেছিলেন, লোকটি আনসার ব্যক্তিকে হত্যা করে আর মুরতাদ হয়ে যায়। এই আবদুল্লাহ ইবন খতাল আল্লাহর রাসূল (সা) কে নিয়ে বিদ্রূপমূলক কথাবার্তা বলতো, মুশরিকদের সামনে তার দুজন বাদী গায়িকাকে দিয়ে মুহাম্মদ (সা) এর ব্যঙ্গাত্মক গান শোনাতো। তাই বন্দীত্বের সময় নবীজি (সা) তার একজন গায়িকা সহ তাকে হত্যা করে। এরূপ আরেকটি উদাহরণ, মুকাইস বিন সাবাবাহ নামের এক লোককে হত্যা করা হয়, যে ইসলাম গ্রহণের পরে মুরতাদ হয়ে যায়, মুসলিমদের হত্যা করে, মুশরিকদেরকে আল্লাহর রাসূল (সা) এর নামে মিথ্যা অপবাদ রটাতে ও তাঁর (সা) বিরুদ্ধে উগ্রভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

সুতরাং গভীরভাবে চিন্তা করে দেখো, সেই অপরাধগুলোর কথা যেগুলোর জন্য তিনি বন্দীদেরকে মেরে ফেলেছিলেন, আর তার সাথে তুলনা করো মক্কার জনপদের, যাদেরকে তিনি নিরাপত্তা দান করেছিলেন। যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে সে লোকগুলো ইসলামত্যাগ, খুন, ব্যক্তিগত আক্রমণ, শত্রুতা, এবং অপবাদ রটানোর মতো মারাত্মক সব অপরাধ করেছিল। যেহেতু মক্কা বিজয়ের পর সকল মুশরিক বন্দীর মধ্য থেকে কেবল এই লোকগুলোকেই হত্যা করা হয়েছিলো, তাই শায়খুল ইসলাম এ থেকে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে রাসূলুল্লাহ (সা) কে অবমাননা করা হলে তাকে হত্যা করা ফরয।

কিন্তু তারপরও, যদি এমন অপরাধী কোন ব্যক্তি তার গোত্র থেকে পালিয়ে যেয়ে ইসলাম গ্রহণ করে, আর তাকে নিরাপত্তা দেয়া হয়, তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিতে হবে। হাব্বার বিন আলআসওয়াদের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছিল; সে আল্লাহর রাসূল (সা) এর কন্যা যায়নাবকে হিজরতের সময় আক্রমণ করেছিল, সে যায়নাবের উটে আঘাত করতে থাকে ফলে তিনি একটি পাথরের উপর পড়ে যান। সে সময় তিনি ছিলেন গর্ভবতী, তার গর্ভপাত ঘটে। এছাড়া আরো উদাহরণ আছে, যেমন, ইকরিমাহ বিন আবু জাহল ও ক্বায়নাহ বিন খাতাল প্রভৃতি লোককেও ক্ষমা করে দেয়া হয়।

শুধুমাত্র যে দুজন যোদ্ধা সৈনিককে বন্দীত্বের সময় হত্যা করা হয় তাদের নাম যথাক্রমে আলনাদর বিন আলহারিস, যে কথায় ও কাজে রাসূলুল্লাহ (সা) কে অপমান ও তাঁর ক্ষতি করতো, এবং উকবা বিন আবু মুঈত, যে রাসূল (সা) এর সাহাবীদের মারাত্মক ক্ষতি ও নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয় নি, উপরন্তু কুরআনে ও নবীজির নামে মিথ্যাচার, তাঁর ক্ষতি করা, তাকে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে হত্যাচেষ্টা, সিজদারত অবস্থায় তাঁর পিঠে উটের নাড়ীভুঁড়ি ফেলে দেয়া এসব করেছে। তাই আল্লাহর রাসূল (সা) সব বন্দীর মধ্য থেকে কেবল এ দুজনকে হত্যা করেন।

বনু কুরাইযার ব্যাপারে ইবন কায়্যিমের আলযাদ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ইহুদীদের মাঝে আল্লাহর সাথে কুফরী ও আল্লাহর রাসূল (সা) এর বিরুদ্ধে শত্রুতায় সবচেয়ে প্রবল ছিল তারা। আর এজন্যই তাদের সাথে নবীজি (সা) যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা অন্য কোন ইহুদী গোত্রের সাথে করা হয়নি, যেমন বনু কায়নুকা ও আলনাযির গোত্র।

আলবুখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন তারা (বনু কুরাইযা গোত্রের ইহুদীরা) নবীজি (সা) এর সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে কুরাইশদের কাফেরদেরকে তাঁর বিরোধিতায় সহায়তা করেছে, আর তাদেরকে গাতাফান গোত্রের সাথে মিলে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করেছে, তখন রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করেছেন, তার আগে নয়। আহযাবের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে একটি কারণ ছিল এই গোত্রের ইহুদীরা, সুতরাং সব ইহুদী গোত্রের মধ্যে রাসূলুল্লাহ বনু কুরায়যার সাথে আলাদাভাবে বোঝাপড়া করবেন এটাই স্বাভাবিক। আর তিনি (সা) সেটাই করেছেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও, তাঁর গভীর প্রজ্ঞা এবং সাহাবীদের কথা বিবেচনা করে তিনি নিজে থেকে তাদেরকে হত্যা করার বিধান দেন নি, কেননা আনসারদের মাঝে নতুন ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবীরা এতে করে খারাপ ধারণা করতে পারে। বরং তিনি আউস গোত্রে তাদের যে মিত্রেরা ছিল, এমনকি স্বয়ং বনু কুরাইযা গোত্রের ইহুদীদেরকেই এ রায় দিতে বললেন। আর ইহুদীরা তো সাদ বিন মুয়ায (রা) এর ঘোষিত যেকোন রায় মেনে নেয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল, তাই তিনিই এ রায় দিলেন যে তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করতে হবে। নিরীক্ষণ করে আমরা দেখি যে এমন একটি বর্ণনাও নেই যেখানে আল্লাহর রাসূল (সা) সৈনিক যোদ্ধা ব্যতীত অন্য কাউকে বন্দীত্বের সময় হত্যা করেছেন, বা সাম্প্রতিক ভাষায় যাদের বেসামরিকব্যক্তি বলা হয় এমন কোন ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন। সত্যি বলতে, যোদ্ধাদের মাঝেও তিনি কেবল তাদেরকে হত্যা করেছেন যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুফর, শত্রুতা, যুদ্ধ, অবমাননা ও ব্যঙ্গবিদ্রূপে ছিল সবচাইতে প্রখর। নিঃসন্দেহে, এভাবে একজন মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তির মাধ্যমে এ রায় দেয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল অত্যন্ত সুচিন্তিত। শুধুমাত্র হালাল ও অনুমোদিত বিষয়ের সীমা ছাপিয়ে কোনটি ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য সর্বোত্তম এবং কীভাবে আল্লাহর শত্রুদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করা যায় তা এখানে বিবেচনা করা হয়েছে। এভাবেই তিনি তাঁর পিছু লাগা প্রত্যেক শত্রুকে উপযুক্ত শিক্ষা দিলেন; যারা আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর দ্বীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলেন, যেন তারা চুক্তি মানার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত থাকে, এবং চুক্তির সীমালঙ্ঘন করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও শত্রুতা শুরু না করতে তাদেরকে বাধ্য করলেন। এছাড়াও আরো অনেক কার্যকরিতা ছিল। মধ্যস্থতাকারী সাদ ইবন মুআয এক্ষেত্রে সবচেয়ে হিংস্র শত্রুর বিরুদ্ধে সব চাইতে তীব্র ও ক্ষতিকর পন্থাটিই বেছে নিয়েছেন, অন্যান্য কাফির, এমনকি যোদ্ধাকেও একই কাতারে ফেলেন নি। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা দরকার, তিনি (সা) কোন মৃতদেহকে বিকৃত করেন নি, বরং তা করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি রাসূলের চোখের সামনে যে লোক তাঁর (সা) চাচা হামজার (রা) অঙ্গবিকৃত করছে, সেই মুশরিক লোকের দেহবিকৃত করা থেকে পর্যন্ত তিনি (সা) নিজেকে বিরত রাখলেন। যদিও অনুরূপ প্রতিশোধ গ্রহণ করা অনুমোদিত, শরীয়াহসম্মত, তা সত্ত্বেও তিনি উম্মাহকে শিখিয়েছেন জিহাদ এবং অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী, উত্তম, ও পরিপূর্ণ পদ্ধতি বেছে নিতে, যেমনটি আল্লাহ তাআলা তাকে করতে বলেছেন,

﴿وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُواْ بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ وَلَئِن صَبَرْتُمْلَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرينَ﴾

আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়েছিল। []

আল্লাহ তাআলা এরপর তাকে আরো উত্তম বিষয়ের দিকে পরিচালিত করে তাঁর বক্তব্যের সমাপ্তি টানেন,

﴿وَلَئِن صَبَرْتُمْلَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرينَ﴾

কিন্তু যদি তুমি সবর করো, তবে তা সবরকারীদের জন্য আরো উত্তম। []

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরো বলেন,

﴿وَجَزَاء سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَا﴾

আর মন্দের প্রতিফল তার অনুরূপ মন্দ []

তারপর তিনি বলেন,

﴿فَمَنْ عَفَاوَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ﴾

কিন্ত যে কেউ ক্ষমা করে আর সদ্ভাব সৃষ্টি করে, তাহলে তার জন্য রয়েছে আল্লাহ্র কাছে পুরস্কার। [8]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

﴿وَالْجُرُوحَقِصَاصٌ﴾

জখম সমূহের বিনিময়ে সমান জখম। []

আর তারপর তিনি বলেন,

﴿فَمَن تَصَدَّقَ بِهِ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَّهُ﴾

কিন্তু যে (প্রতিশোধ গ্রহণ না করে, দান হিসেবে) ক্ষমা করে দেয়, সেটি তার জন্য হবে প্রায়শ্চিত্য (অর্থাৎ এর দ্বারা তার নিজের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে)[১০]

মুজাহিদীন ও জিহাদের পথে আহবানকারী দাঈদেরকে এ জিনিসগুলোর প্রতি দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমি সর্বদা তৎপর হয়ে থাকি; যাতে করে তারা নিজেদের আশাভরসা, সংকল্প, প্রচেষ্টা, উদ্যম এবং চিন্তাধারায় এ ব্যাপারগুলোর স্থান দেয়। ইসলামী জিহাদের সুমহান মর্যাদা তাদের মনে রাখতে হবে, উম্মাহ ও দ্বীনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় কোনটি তা বিবেচনা করতে হবে, নিজেদের কাজকে কেবল হালাল ও শরীয়াহসম্মত এটুকুর মাঝে বেঁধে রাখলে চলবে না। বরং তাদেরকে বেছে নিতে হবে মুক্তোর মতো নির্মল কাজগুলোকে, যা উম্মাহ ও জিহাদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, কার্যকরী এবং জোরালো। তারা যেন কেবলমাত্র ভাসাভাসা ভাবে কোনটি হালাল, শরীয়াহসম্মত ও অনুমোদিত সেই বিচারে কাজ না করে, বরং তারা প্রত্যেকটি ব্যাপার খতিয়ে দেখবে, মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করবে, গবেষণা করবে, যাতে তারা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে যে কোন কাজটি করা একটি বিশেষ সময়ের জন্য করা সবচাইতে উপকারী, উৎকৃষ্ট, এবং শত্রুর বিপক্ষে সর্বাধিক ক্ষতিকারক।

আমি শুধু এটুকু বলেই শেষ করবো না, বরং আমি আরো বলবো যে এভাবে সর্বাধিক উপযোগী কাজটি বেছে নেয়া ফরয, যেহেতু মুসলিমদের আজ অসংখ্য দায়িত্ব পূরণ করতে হবে আর ফরয কাজের মধ্যে অনেক কিছুই পরস্পর বিরোধী। সুতরাং হতে পারে, খুব বিশাল পরিসরের কিন্তু কম উপযোগী একটি ফরযের বদলে তাদেরকে এমন একটি ফরয কাজের ব্যাপারে প্রাধান্য দিতে হবে যার সুযোগ খুবই সীমিত কিন্তু অধিক উপকারী। আমাদের এই জিহাদে আমরা তরুণদেরকে যেকোন ভাবে, যেকোন প্রকারে, কিংবা যারতার নেতৃত্বে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়া ফরয এমনটা বলতে পারি না। বরং তাদের ওপর ফরয হলো জিহাদের ময়দানে শত্রুর মোকাবেলা করা, উম্মাহর ওপর আপতিত বিপর্যয়, মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলে আসা যুদ্ধ, এবং মুসলিমদের জানমাল বৈধ ঘোষণাকারী শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। এই কঠিন বাস্তবতার সাগরে, যখন ইসলাম ও মুসলিমদের বিজয়ের প্রশ্ন আসে, তখন সে কাজই বেছে নেয়া কর্তব্য যা উত্তম, গুরুত্বপূর্ণ এবং অধিকতর শ্রেয়। তাদের বেছে নিতে কলঙ্কবিহীন নির্মল জিহাদের ঝাণ্ডা, খুঁজে নিতে হবে সবচেয়ে বিচক্ষণ নেতৃত্ব। সরকারপুষ্ট আলেমদের বক্তৃতা, মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণা কিংবা অন্তঃসারহীন আবেগ দ্বারা যেন এ মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়ে না যায়। বরং, যেমনটি আমি বার বার বলে চলেছি এই বাছাই করার ভিত্তি হবে ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে উপকারী, জিহাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিষ্কলঙ্ক, এবং শত্রুর বিরুদ্ধে সবচেয়ে হানিকর কাজটি বেছে নেয়া। মুজাহিদীনদের উচিৎ আক্রমণাত্মক জিহাদের উপর আত্মরক্ষামূলক জিহাদ পরিচালনায় অগ্রাধিকার দেয়া, কেননা আক্রমণাত্মক জিহাদ একটি দলগত দায়িত্ব (ফরযে কিফায়া), কিন্তু আত্মরক্ষামূলক জিহাদ একটি ব্যক্তিগত ফরয (ফরযে আইন)। তাই, উলেমাগণ আক্রমণাত্মক জিহাদের ক্ষেত্রে অনুমতি নেয়ার শর্ত আরোপ করেছেন, যেমন মাবাবা বা ঋণদাতার নিকট থেকে অনুমতি নেয়া, তবে আত্মরক্ষামূলক জিহাদের ব্যাপারে এরূপ কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

তাদের জানা উচিৎ যে মুসলিম ভূমিকে আভ্যন্তরীণ হোক কিংবা বাহ্যিক, যেকোন কাফের, জালেম শাসকের হাত থেকে মুক্তির জন্য যুদ্ধ করা আত্মরক্ষামূলক জিহাদের অন্তর্ভুক্ত, এভাবে জিহাদের মাধ্যমে মুসলিমদের ও দ্বীনকে শক্তিশালী করে তোলা তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। এ ধরণের জিহাদ সেসব সাধারণ হানাহানির চাইতে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য, যেগুলো দ্বারা কেবল শত্রুকে আহত করা ছাড়া আর কোন উপকার সাধিত হয় না, কিংবা বিচ্ছিন্ন কিছু ভালো কাজের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিবাদ হিসেবে যে সব কাজকে গণ্য করা হয়।

তাদের মুসলিম কারাবন্দীদের মুক্তির জন্য জিহাদ করায় প্রাধান্য দিতে হবে, কেননা আত্মরক্ষামূলক জিহাদ বলতে এমনটিই বোঝানো হয়, এবং তাদের উচিৎ দুর্বল ও মজলুমদের উদ্ধার করার জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করা, যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন,

﴿وَمَا لَكُمْ لاَ تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِوَالنِّسَاء وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَـذِهِ الْقَرْيَةِالظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيّاً وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَنَصِيراً﴾

আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, “হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য রক্ষাকারীবন্ধু নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।[১১]

সহীহ বুখারীতে আবু মূসা আলআশআরী থেকে বর্ণিত একটি মারফু হাদীসে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “দাস মুক্ত করো…”

এ কারণেই ইমাম নববী বলেছেন, “যদি শত্রুরা এক বা তারচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলিমকে বন্দী করে, তবে অধিক শক্তিশালী মত হচ্ছে, ধরে নিতে হবে যেন শত্রুরা মুসলিম ভূমিতে প্রবেশ করেছে, আর তাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে (অর্থাৎ আত্মরক্ষামূলক জিহাদ), কেননা একজন মুসলিমের পবিত্রতা, মুসলিম ভূমির পবিত্রতার চাইতে অনেক বেশি, সুতরাং কারাবন্দীদের মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা করা ফরয

কোনটির উপর কোনটিকে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ সেটা বোঝা, কঠিন বাস্তবতায় ধৈর্য্যধারণ, শত্রুদের অনিষ্টের পরিমাণ এবং ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের শত্রুতা ও যুদ্ধের তীব্রতার কথা মাথায় রাখলে একজন মুজাহিদীনের পক্ষে বিভিন্ন ফরয কাজে অগ্রাধিকার দেয়া সহজ হবে। যার প্রকৃত ফলাফল হলো, সে দলবদ্ধ দায়িত্বের চাইতে ব্যক্তিগত ফরযের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিবে, আর সে বুঝতে পারবে কোথায়, কখন নীরব থাকা, বা দেরি করা

চলবে না। কেননা এসব ক্ষেত্রে বিলম্ব করার অর্থ হচ্ছে মুসলিমদের ওপর বিপর্যয় ডেকে আনা, তাদের রক্তমাংস শত্রুর জন্য হালাল হয়ে যাওয়া, বা এমন ভয়ানক কোন পরিণতি। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ কাজে অগ্রাধিকার দিবে, কেবলমাত্র তার উপর কতোখানি ফরয সেটুকু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে না। আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে দুআ করি যেন মুসলিমদের ব্যাপারসমূহের মীমাংসা করে দেন, এবং তিনি যা ভালোবাসেন, ও যে কাজে সন্তুষ্ট হন, তার উপর মুসলিমদের দৃঢ়পদ হওয়ার তওফিক দান করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা এ কাজ করতে সমক্ষ, তিনি সত্য বলেন, এবং তিনিই সরলপথে পরিচালিত করেন। একজন ভাই আমার লেখাগুলো পড়ে, তার মাথায় গেঁথে থাকা তথ্যের সাথে মিলিয়ে আমাকে বললো, “হে শায়খ, আপনার কলম চালনায় নরম হোন, এর উপর দয়া দেখান!” যার উত্তরে আমি বলবো, “আমি এর উপর দয়া দেখাবো, এমনকি একে প্রসন্ন করে তুলবো, আর তা করবো মুসলিমদের জিহাদের পক্ষে একে চালানোর মাধ্যমে, আর যা কিছুই জিহাদের সুনাম নষ্ট করতে চাইবে, তা নিয়ে মিথ্যাচার করবে, কিংবা জিহাদকে ভুল পথে পরিচালিত করবে তা লেখা থেকে আমি একে পবিত্র রাখবো

জিহাদ কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, সে এর উপর বিশেষ অধিকার ফলাবে, যে পথে ইচ্ছা সে পথে জিহাদকে পরিচালিত করবে এমনটি ভাবলে চলবে না। বরং, এতে সকল মুসলিমের অংশ আছে; জিহাদের তত্ত্বাবধান করা এবং জিহাদ কায়েমের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা মুসলিমদের কর্তব্য। আর এ কর্তব্য পালনের জন্য তাদেরকে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে হবে, বিশ্বস্ততার সাথে জিহাদের ব্যাপারে নিজেদের মত প্রকাশ, উপদেশ ও দিকনির্দেশনা দিতে হবে, দুআ করতে হবে। যাদেরকে জিহাদের আমীর, বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়, তাদের দায়িত্ব তো আরো বেশি। তাদের কোনপ্রকার তোষামুদে বা মন ভোলানো কথা ব্যবহার করা উচিৎ নয়, কোনরূপ বিপথগামিতা, বিকৃতি কিংবা ভুল কাজে সায় দেয়া উচিৎ নয়, এমনকি তাদের সবচেয়ে কাছের কেউও যদি তা বলে থাকে তবুও তা করা ঠিক হবে না। কোন বিশেষ ব্যক্তিকে খুশি করার বদলে তাদেরকে অবশ্যই সে কাজে অগ্রাধিকার দিতে হবে যা দ্বীন, জিহাদ এবং মুসলিমদের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর।

আমি তাকে এবং তার মতো সবাইকে এটাই বলিঃ এ লেখনীর শব্দগুচ্ছের উপর প্রতিফলন করো, এ শব্দমালা এক কষ্টের কথা ব্যক্ত করে, যার দ্বারা জিহাদের দিকে আহবানকারী দাঈ ও মুজাহিদীনদের প্রতি আমার সবচাইতে আন্তরিক উপদেশ প্রদান করছি। আমার এ কথাগুলোকে তোমরা শায়খ কী অমুক বুঝিয়েছে নাকি তমুক বুঝিয়েছে” – এই চিন্তার মাঝে সীমিত করে ফেলো না, কেননা তাহলে তোমরা এর প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে না। বরং তোমরা যা চিন্তা করছো, তার চাইতে এ ব্যাপারখানা আরো অনেক বিশাল, এবং আরো মহান। আমি নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই না। কেননা তা আমাকে দাঈ ও মুজাহিদীনদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে, যাদেরকে আমরা সত্যের ধারক, বাহক ও সচেতন বলে বিবেচনা করি। আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে আমরা অতিরিক্ত প্রশংসা করতে চাই না, ইনশা আল্লাহ। আমার এই উদ্বেগ ও বেদনাভরা বইয়ে আমি তা লিখেছি যা অস্ত্র ও অঢেল সম্পদ দিয়েও অর্জন করা সম্ভব নয়। কেবল আশা যেন তা সকলে বুঝতে পারে। জিহাদকে সর্বাধিক কল্যাণকর পথে পরিচালিত করা এবং আল্লাহর দ্বীনের জন্য সর্বোচ্চ সুফল বয়ে আনার উদ্বেগ থেকে লিখেছি, যেন আমি জিহাদের ক্ষেত্রে কোনরূপ নড়চড়, ত্রুটিবিচ্যুতি এবং ভুলের ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে পারি।

﴿إِنْ أُرِيدُ إِلاَّ الإِصْلاَحَمَا اسْتَطَعْتُ وَمَا تَوْفِيقِي إِلاَّ بِاللّهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ﴾

আমি তো যথাসাধ্য শোধরাতে চাই। আর আল্লাহর সাহায্য বৈ আমার কার্যসাধন (সম্ভব) নয়। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং তাঁরই প্রতি আমার প্রত্যাবর্তন। [১২]

[] আলইসরা, আয়াত ৯

[] আলইসরা, আয়াত ৯

[] আযযুমার, আয়াত ৫৫

[] আযযুমার, আয়াত ১৮

[] আননাহল, আয়াত ১২৬

[] আননাহল, আয়াত ১২৬

[] আশশুরা, আয়াত ৪০

[] আশশুরা, আয়াত ৪০

[] আলমায়িদাহ, আয়াত ৪৫

[১০] আলমায়িদাহ, আয়াত ৪৫

[১১] আননিসা, আয়াত ৭৫

[১২] হুদ, আয়াত ৮৮

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 7 =

Back to top button