শাহাদাত বিষয়ক চল্লিশ হাদীস – শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল লিবি | pdf/word
DOWNLOAD
PDF LINK
https://banglafiles.net/index.php/s/RGGyXKcK9ECd7pj
https://archive.org/download/47.amarjannatamarhridoye/51.Forty-hadith.pdf
http://www.mediafire.com/file/gwxxtrz3l4gz406/51.Forty-hadith.pdf/file
WORD LINK
https://banglafiles.net/index.php/s/tQDMsg9aQbycPy7
*****
শাহাদাত বিষয়ক
চল্লিশ হাদীস
শাইখ আবূ ইয়াহইয়া আল-লিব্বী রহ.
الأربعون في فضل الشهادة وطلب الحسني وزيادة
শাহাদাত বিষয়ক চল্লিশ হাদীস
শাইখ আবূ ইয়াহইয়া আল-লিব্বী রহ.
অনুবাদ
তিতুমীর টিম
পরিবেশনায়
তিতুমীর
Titumir Media
উৎসর্গ
সমগ্র বিশ্বে দীনের তরে শাহাদাত বরণকারী
মুসলিমদের উদ্দেশ্যে
কিতাবটির ব্যাপারে শাইখ আতিয়্যাতুল্লাহ রহ. এর অভিমত
الحمد لله والصلاة والسلام علي رسول الله واله وصحبه ومن اهتداه.
আমি الأربعون في فضل الشهادة وطلب الحسني وزيادة: নামক কিতাবটি পড়েছি। এটি রচনা করেছেন শাইখ আবূ ইয়াহইয়া আ–লিব্বী। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে নিরাপদ রাখুন এবং তাঁকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন! তিনি এই সংকলনটিতে ইলমের একটি অধ্যায় “চল্লিশ হাদীস” সংকলনকারী উলামায়ে কেরামের মুবারক তরীকার অনুসরণ করেছেন। এই কিতাবটি আমার কাছে সার্বিক বিচারে একটি অপূর্ব রচনাই মনে হয়েছে। এতে আমি এমন অনেক উপকারী মনি–মুক্তাসদৃশ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এবং তথ্য ও তত্ত্বে সমৃদ্ধ পেয়েছি, যা এক জায়গায় এত সহজে পাওয়া সহজ কথা না। এটি একটি প্রামাণ্য জ্ঞানগর্ভ কিতাব এটা বলাই যেতে পারে।
তাই আমি আল্লাহ তা’আলার শাহী দরবারে শাইখ আবূ ইয়াহইয়া এর জন্য দু’আ করি, যেন তিনি তাঁকে উত্তম প্রতিদান করেন এবং তাঁর কর্মে ও হায়াতে বরকত দান করেন, তাঁকে নিজ রহমত দ্বারা ঢেকে নেন! দীন–দরদী সকলের প্রতি এই কিতাবটির প্রকাশনা ও প্রচারণার আহ্বান রইল। সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলার দরবারে এই দু’আ করছি, যেন তিনি এই সংকলনটিকে কবুল করেন এবং মুসলমানদের জন্য উপকারী সাব্যস্ত করেন, এর মাধ্যমে মুসলিম নারী–পুরুষ, যুবক–যুবতীদের হৃদয়েকে প্রদ্বীপ্ত করেন। আল্লাহর শপথ! শাহাদাতই প্রকৃত জীবন। সুতরাং শাহাদাতের আলোচনা, শাহাদাত বিষয়ক রচনা, এর প্রতি অনুপ্রাণিত করণ, এর জন্য প্রচেষ্টা, লোকদেরকে এর ফযিলত সম্পর্কে অবহিত করা এ সব কিছুই শাহাদাতের মর্যাদা লাভের একটি ধাপ। দুনিয়া–আখেরাতে প্রকৃত সম্মান এবং সৌভাগ্য লাভের উপায়। পরিশেষে আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ প্রার্থনা করে শেষ করছি।
والحمد لله رب العالمين, وصلي الله وسلم وبارك علي عبده ورسوله نبينا محمد وآله وصحبه والتابعين لهم بأحسان.
আবূ আব্দুর রহমান আতিয়্যাতুল্লাহ
রবিউল আউয়াল, ১৪৩২ হিঃ
সংকলকের কথা
الحمد لله الذي اعطى فأجزل العطاء، و اتخذ من عباده المئومنين شهداء، فاكرمهم و اصطفاهم خير اصطفاء، وقال: «ولاتحسبن الذين قتلو في سبيل الله أمواتا، بل أحياء». والصلاة والسلام على سيد الأنبياء وإمام الحنفاء محمد بن عبد الله وآله وأصحابه النجباء . وبعد
বক্ষমান সংকলনটিতে শাহাদাত, শহীদ এবং শাহাদাত অর্জনের শর্ত সংক্রান্ত চল্লিশটি হাদীস একত্রিত করা হয়েছে। আমি এই চাল্লিশটি হাদীসকে নির্বাচন করেছি যেন এগুলো তাদের জন্য পথনির্দেশিকা হয়, যারা শাহাদাতের পথ মাড়িয়ে জান্নাতে যেতে চায়। পুস্তিকাটি সংকলনের পিছনে আমার উদ্দেশ্য হল মুসলিমদের কে এই মহান সফলতা এবং অনন্ত সৌভাগ্যের প্রতি উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করা। কেননা শাহাদাতের পথ হল নাজাতের পথ। অথচ মানুষ এ ব্যাপারে উদাসীন। এই পথ শান্তি এবং নিরাপত্তার পথ। অথচ অধিকাংশ মানুষ অন্য পথের পথিক। আর যে ব্যক্তি কোন বস্তুর প্রত্যাশি হয় সে তা তালাশ করে।
ترجو النجاة و لم تسلك مسالكها – إن السفينة لا تجري على اليبس
‘তুমি নাজাত কামনা কর, অথচ এর পথে চল না। জেনে রেখ! স্থলে জাহাজ চলেনা।’
হ্যাঁ, কিছু মানুষ দুনিয়াতে চিরকাল থাকতে চায়। আল্লাহ তা’আলার এই বাণী তাদের ক্ষেত্রেই বলা যায়-
لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ ﴿
‘তোমার জীবনের শপথ! তারা তাদের মত্ততায় বিমূঢ় হয়ে আছে।’ [-সূরা হিজর: ৭২]
তারা এমন লোক যারা অস্থায়ী দুনিয়াতে স্থায়ী জীবন কামনা করে। তাদের একেকজন হাজার বছর বাঁচতে চায়। আচ্ছা, যদি তাদের কেউ হাজার বছর জীবন পেয়েও যায়, তার পরও তো সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। তখন মৃত্যু ছাড়া তাদের আর কী ঠিকানা থাকতে পারে!?
ওহে জ্ঞানী শোন! বিছানায় মৃত্যুর যন্ত্রণা অনেক। আর শাহাদাতের মৃত্যু পিপড়ার দংশন-যাতনার চে’ বেশি কিছু নয়।
ওহে গাফেল!
أَتَسْتَبْدِلُونَ الَّذِي هُوَ أَدْنَىٰ بِالَّذِي هُوَ خَيْرٌ ۚ
‘তোমরা কি ভালকে মন্দ পরিবর্তন করে ফেলবে?’ [-সূরা বাকারা : ৬১]
অথচ তোমরা জান, শহীদের রূহ সবুজ পাখির দেহে অবস্থান করবে, জান্নাতের বাগ-বাগিচায় ঘুরে বেড়াবে আর দয়াময়ের আরশের ছায়াতলে ঝুলন্ত বাসায় আয়েশী জীবন উপভোগ করবে। তোমরা যদি সন্দিহান হও তাহলে জেনে রেখ সন্দেহপ্রবণতা মানুষকে সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন করে। আমার কথা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এখনো বিলম্ব কিসের? সর্বশ্রেষ্ঠ মহা মানব বার বার শহীদ হওয়ার তামান্না করতেন শাহাদাতের ফযিলত অত্যাধিক হওয়ার কারণেই তো। একথাগুলো যদি আমাদের অন্তরকে নাড়া দিয়ে থাকে তাহলে সঠিক পথে এবং শাহাদাতের সম্ভাব্য স্থানসমূহে এখনই তা অন্বেষণ শুরু করে দেওয়া উচিৎ।
হে আমার ভাই! কোমর বেঁধে নাও, সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই খোঁজে লেগে যাও, সকল আশা আকাঙ্ক্ষার বন্ধন ছিড়ে ফেল এবং বল,
‘হে আমার মন! এখনই সময়, এখনই চলো। জীবনের যেটুকু সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে তা তো গেছেই। সুতরাং তৎপর হও! আরো তৎপর হও! জেনে রেখ! শুধু আশা-আকাঙ্ক্ষার দ্বারা সু-উচ্চ মর্যাদা অর্জন করা যায় না। সৌখিন পথে সুখের স্বপ্ন দেখা হাস্যকরই বটে।’
বল,
تهون علينا في المعالى نفوسنا – ومن يخطب الحسناء لم يغلها المهر .
‘আশা-আকাঙ্ক্ষার বাহুল্যে জীবনটা আমাদের অতিবাহিত হয়ে গেল। কেউ সুন্দরী রমনীকে বিয়ের প্রস্তাব দিল তবে মহর ধার্য করল স্বল্প।’
এই কিতাবটিতে নববী আলোকমালা থেকে আলোকিত কতগুলো হিরেতুল্য বাণী একত্রিত করা হয়েছে, যা মু’মিনের অন্তরে খুব রেখাপাত করবে- ফলে মন ছুটে যাবে জান্নাতের উঁচু বালাখানায় মনোরম ছাউনিতে। জান্নাতের হুর-পরী আর প্রাসাদ গুলোর দিকে। এর মেশক ও জাফরানের মনলোভা প্রসাধনীর দিকে। দুনিয়ার এই বন্দীদশা থেকে স্বাধীন হয়ে মিছে বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাতের বাগানসমূহে চলে যেতে!
মন ডেকে বলে, আমি উহুদের পাড়ে জান্নাতের ঘ্রাণ পাচ্ছি। কোন কিছুতেই মন বাধা মানছে না। কীভাবেই বা মানবে? এ পথে নিহত হওয়ার সাথে সাথেই তো জান্নাত। অনন্ত সৌভাগ্যের এই পথ তো একটু কষ্টকর হবেই। দুনিয়ার এই সামান্য কষ্ট সহ্য করে শহীদ যখন শাহাদাতের কাছাকাছি চলে যায়, তখন নিজ থেকেই বলে উঠে فزت ورب الكعبة ‘কা’বার রবের শপথ! আমি কামিয়াব হয়ে গেছি।’
এই হাদীসগুলো নির্বাচন করা হয়েছে সকল পাঠকদের জন্যই, বিশেষকরে যারা জিহাদের পথের পথিক তাদের জন্য। এই হাদীসগুলো তাদের সংকল্প অটুট করবে যখন তা কমে আসতে চাইবে। তাদের হিম্মতকে শানিত করবে যখন তাতে দূর্বলতা আসে। তাদের কাফেলাকে গতিশীল করবে যখন তা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাদের অন্তরে আল্লাহর সাক্ষাতের প্রত্যাশা জাগ্রত করে, অভিনন্দনের সত্তরতা ও পরিশ্রমের সমাপ্তি কামনা করবে।
সফলতা কিছু সময় ধৈর্যের পরেই আসে। তখন কাঠিন্যতা সহজ হয়ে যায়, অসমতল সমতল হয়ে যায়। কষ্ট তো দুনিয়ার ক্ষণিকসময়। পরিশেষে তারা আনন্দিত হবে। যখন তাদের সফল সমাপ্তি হবে রিয়াজুল জান্নাতে, যেখানে না আছে কোন দুঃখ-কষ্ট আর না আছে কোন বেদনা-যাতনা। সেটা হল এমন জান্নাত যাতে প্রবেশ করবে তাঁরা এবং তাঁদের পূর্বপুরুষ ও তাদের সন্তানদের যারা ভাল আমল করেছিল। ফেরেশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করবেন এবং বলবেন, আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, আপনারা ধৈর্য্য ধারণ করেছেন, অতি উত্তম আপনাদের চিরন্তন আবাসস্থল।’ [-সূরা রা’দ : ২৩-২৪]
আমি এই পুস্তিকাটির হাদীসগুলোকে আমার পছন্দ মতো বিন্যাস করেছি। অধ্যায়গুলোকে হাদীসের অর্থের গুরুত্ব অনুপাতে নির্ধারণ করেছি। চেষ্টা করেছি যাতে মুজাহিদের জন্য যে ধারাবহিকতা অতিক্রম করতে হয় -মুজাহিদের চেষ্টা, ত্যাগ এবং তার জন্য আল্লাহর দান শাহাদাত, এর পরে তার জন্য কবর জগতে যে নেয়ামত রয়েছে এবং ততপরবর্তী অবস্থা জান্নাতের স্থায়ী জীবন, আল্লাহর কাছে তার সুমহান মর্যাদা ইত্যাদির ধারাবাহিকতা- ঠিক থাকে। হাদীসের কিছু ব্যাখ্যা সংযোজনেরও চেষ্টা করেছি। যা আমার পক্ষ থেকে উদ্ভাবিত বা মুহাদ্দিসীনদের থেকে চয়ন কৃত। কখনো শুধু তার রেফারেন্স উল্লেখ করেছি আবার কখনো তা স্ববিস্তারে উল্লেখ করেছি। অতঃপর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিক্ষিপ্ত আলোচনাও করেছি যেগুলো উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন। যাতে আমরা তাদের ধীশক্তি ও তাদের মহত্ব অনুভব করতে পারি। কখনো বা কিছু মাসআলা নিয়েও সংক্ষেপে আলোচনা করেছি। যাতে এপুস্তিকাটি মুজাহিদের মারাকাজে, প্রশিক্ষণে, অনুষ্ঠানে এবং তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের সময় সঙ্গী হতে পারে। নাম দিয়েছি: “শাহাদাতের ফজিলাত ও জান্নাতের আকঙ্ক্ষা সম্বলিত চল্লিশ হাদীস”
পরিশেষে আমি এ কিতাবটি যারা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করবেন তাদের নিকট আশাবাদী যে, তারা আমার জন্য দোয়া করতে ভুলবেন না। তাদের প্রতিটি নেক দোআয় আমাকে স্মরণ রাখবেন।
–শায়েখ আবু ইয়াহইয়া আল-লিব্বী রহ.
সকল আমলে এখলাসের গুরুত্বঃ
الحديث الأول: عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ، فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ» رواه البخاري ومسلم
হাদীস নং-১ আমিরুল মু’মিনীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল স: কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, নিশ্চয় আমলের মান নির্ণয় হয় নিয়তের উপর ভিত্তি করে, আর প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিদান তার নিয়ত অনুযায়ীই হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি হিজরত করবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে, তার হিজরত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকেই হবে। আর যে ব্যক্তি হিজরত করবে দুনিয়া প্রাপ্তির জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য, তার হিজরত হবে ঐ জিনিসের দিকেই যার দিকে সে হিজরত করেছে। -বুখারী, মুসলিম।
হাদীসের শিক্ষা:
১. প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক হল, সে তার বাহ্যিক অবস্থাদি ঠিক করার সাথে সাথে তার আভ্যন্তরিক অবস্থাদিরও সংশোধন করে নেবে, নিজে অন্তরকে এখলাস, রেযা-বিল-কাযা ইত্যাদি মহৎ গুণে গুণান্বিত করবে পাশাপাশি হিংসা-বিদ্বেষের ন্যায় ধ্বংসাত্মক বিষয়দি থেকে অন্তরকে পবিত্র করবে।
২. নিয়তের খুলুসিয়াতের কারণে আমল অনেক শক্তিশালী ও প্রতিক্রিয়াশীল হয়। আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য হয়। তেমনিভাবে নিয়তের ত্রুটি আমলকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৩. একটি আমলে একাধিক নেক নিয়ত করা যায় এবং এর দ্বারা আমলটির সাওয়াব ও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। যেমন, কোন ব্যক্তি জিহাদ করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালনের নিয়ত করার সাথে সাথে ‘ই’লায়ে কালিমাতুল্লাহ’ তথা দীন প্রতিষ্ঠা করা, দূর্বলদের সাহায্য করা, বন্দিদেরকে মুক্ত করা, মুসলিমদেশের সীমান্ত রক্ষা করা, ইত্যাদি অনেক বিষয়ের নিয়ত করতে পারে এবং এর দ্বারা তার আমলের সাওয়াবও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।
মুমিনের কিতাল হবে শুধু ই‘লায়ে কালিমাতুল্লাহর জন্য:
الحديث الثاني: عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ الرَّجُلُ: يُقَاتِلُ لِلْمَغْنَمِ، وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلذِّكْرِ، وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُرَى مَكَانُهُ، فَمَنْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: «مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ العُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» متفق عليه .
হাদীস নং-২ হযরত আবু মূসা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, কোন ব্যক্তি গনিমতের জন্য যুদ্ধ করে, আবার কেউ বা করে সুখ্যাতির জন্য, কেউ করে লোক দেখানোর জন্য। এখন আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথের মুজাহিদ শুধু ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য যুদ্ধ করে। -বুখারী, মুসলিম।
হাদীসের শিক্ষা:
১. যে কোন কাজ খুব বুঝে শুনে করা চাই, যেন কাজটি ফলাফল শুণ্য না হয়। সার্বিক বিবেচনায় সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হয়।
২. জিহাদই ই’লায়ে কালিমাতুল্লাহ তথা আল্লাহর কালিমাকে বিজয়ী করা, ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করা এবং ফিৎতনা নির্মূল করে খিলাফার প্রবর্তণের এক মাত্র পথ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ ۚ
‘তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর যতক্ষণ না ফিৎনা নির্মূল হয় এবং দীন পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর হয়ে যায়।’ -সূরা আনফাল: ৩৯
সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত দীন পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে।
জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় যুদ্ধ সংগ্রাম কিছুতেই জিহাদ নয়:
الحديث الثالث: عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَفَعَهُ مَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عِمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبَةٍ أَوْ يَدْعُو إِلَى عَصَبَةٍ أَوْ يَنْصُرُ عَصَبَةً فَقُتِلَ فَقِتْلَتُهُ جَاهِلِيَّةٌ) رواه مسلم، وأحمد، والنسائي
হাদীস নং-৩ যে ব্যক্তি সত্য-মিথ্যার যাচাই না করেই কোন পতাকাতলে যুদ্ধ করল, শুধু বংশীয় কারণে রাগান্বিত হল, বংশীয় ব্যাপারাদিতে অন্যায়ভাবে সাহায্য প্রার্থনা করবে, অথবা শুধু বংশগত কারণে অন্যায়ভাবে কাউকে সহযোগিতা করবে এবং এর কোন একটি অবস্থাতে নিহত হবে, তাহলে সে জাহেলী মরা মরলো। -মুসলিম, আহমদ ও নাসায়ী
হাদীসের কয়েকটি শব্দের ব্যাখ্যা:
১.تحت راية عمية এর ব্যাখ্যায় আল্লামা সিন্দি রহ. বলেন,
)وقوله: “تحت راية عمية” كناية عن جماعة مجتمعين على أمر مجهول لا يعرف أنه حق أو باطل(
“تحت راية عميةعمية” (অন্ধ অনুকরণের পতাকা তলে) দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ‘এমন জামাত বা সংগঠন, যে জামাতের হক-বাতিল হওয়ার বিষয়টি শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে অস্পষ্ট।’
২. عصبة এর ব্যাখ্যায় আবুল ফরজ ইবনুল জাওযী রহ. বলেন,
و العصبة: نصرة القوم على هواهم وإن خالف الشرع،
العصبة দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ‘আপন সম্প্রদায়কে তাদের ইচ্ছার অনুকূলে কথা বা কাজের দ্বারা সাহায্য করা, যদিও কাজটি শরীয়ত বিরোধী হয়।’
হাদীসের শিক্ষা:
১. শরয়ী জিহাদ শুধু তাই যা সত্যের অনুকূলে হয় এবং তার উদ্দেশ্য হয় সত্যের সাহায্য করা। সুতরাং সত্যকে সাহায্য করা উদ্দেশ্য নয় এমন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা হারাম।
২. ভ্রাতৃত্ব এবং বন্ধুত্বের মাপকাঠি হল ইসলাম। যেমন আল্লাহ তাআলা নূহ আ. কে তাঁর ছেলের ব্যাপারে বলেছেন,
قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ ۖ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ ۖ
হে নূহ! সে (তোমার ছেলে) তোমার পরিবারের অন্তর্ভূক্ত নয়, এটা শুদ্ধ আমল নয়। -সূরা হুদ: ৪৬
মুসলমানদের জন্য ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জাতীয়তা নেই। মুসলমানদের দেশেরও কোন সীমানা নেই। সুতরাং ইসলামী জাতীয়তা ছাড়া অন্য কোন অবৈধ জাতীয়তার চেতনায়, অথবা অন্য কোন পতাকাতলে যুদ্ধ করা হারাম এবং এতে নিহত ব্যক্তি জাহান্নামী।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রহ. বলেন,
فمن تعصب لأهل بلدته أو مذهبه أو طريقته أو قرابته أو لأصدقائه دون غيرهم كانت فيه شعبة من الجاهلية حتى يكون المؤمنون كما أمرهم الله تعالى معتصمين بحبله و كتابه وسنة رسوله صلى الله عليه وسلم
‘সুতরাং যে ব্যক্তি এলাকা, মতাদর্শ, কর্মপন্থা, বন্ধুত্ব বা আত্মীয়তার কারণে অন্যদের সাথে অন্যায় ভাবে শত্রুতা রাখবে বা এধরনের কোন আচরণ করবে তাহলে বুঝতে হবে এখনো তার অন্তরে জাহিলিয়্যাতের আঁধার বিদ্যমান। সে পরিপূর্ণ মুসলিম বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ না সে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের রজ্জু ধারণকারী মুমিন হবে।’
মুসলমানদের জান-মাল, ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে জান দেয়াও ফযিলতের কাজ:
الحديث الرابع: عَنْ سَعِيدِ بْنِ زَيْدٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دِينِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دَمِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ أَهْلِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ» رواه أحمد، وأبو داود، والترمذي وقال: حديث حسن صحيح، والنسائي، وأوله مروي في الصحيحين
হাদীস নং-৪ যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হবে, সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার পরিজন বাঁচাতে গিয়ে নিহত হবে, সেও শহীদ। যে ব্যক্তি তার ধর্ম তথা ইসলাম অনুযায়ী যথাযথ আমল করতে গিয়ে নিহত হবে, সেও শহীদ। আর যে ব্যক্তি জুলুম থেকে বাঁচতে গিয়ে নিহত হবে, সেও শহীদ। -আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী। (ইমাম তিরমিযী রহ. হাদীসটিকে হাসান-ছহীহ বলেছেন)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. মুমিনের শরীয়ত অনুযায়ী করা প্রতিটি কাজের মূল্য যেমন আল্লাহর কাছে অপরিসীম, ঠিক তেমনি মুমিনের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রু, ধন-সম্পদ এবং পরিবার পরিজনের মূল্যও আল্লাহর কাছে অপরিসীম। তাই তো এগুলোর কোন একটি রক্ষার জন্যও যদি কোন ব্যক্তি নিহত হয় তাহলে সে শহীদ বলে গণ্য হয় এবং শাহাদাতের পরিপূর্ণ মর্যাদাও সে লাভ করে।
২. আল্লাহর কাছে এ জিনিসগুলোর মূল্য অপরিসীম হওয়ার কারণেই এর রক্ষার জন্য ইসলাম কঠিন ব্যবস্থা নিয়েছে এবং এর কোন একটিতে হস্তক্ষেপকারীর জন্যও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেছে।
যেমন, ধর্ম রক্ষার জন্য ‘মুরতাদকে হত্যার’ বিধান দিয়েছে, জীবন রক্ষার জন্য কিসাসের বিধান দিয়েছে। মাল রক্ষার জন্য চোরের হাত কাটার বিধান দিয়েছে। ইজ্জত রক্ষার জন্য অপবাদ আরোপকারীর জন্য حد قذف(অপবাদের শাস্তি আশিটা দোররা) মারার নির্দেশ দিয়েছে। বংশ রক্ষার জন্য ‘হদ্দে যিনা’ (ব্যভিচারের শাস্তি) প্রয়োগের বিধান দিয়েছে। আকল রক্ষার জন্য মদ বা নেশা গ্রহণকারীকে حد خمر (মদপানের শাস্তি আশিটা দোররা) মারার বিধান দিয়েছে।
৩. আল্লাহ তাআলার কাছে মুসলমানদের জান, মাল এবং ভূমির মূল্যও অনেক। তাই শত্রুকর্তৃক মুসলমানদের এক বিঘত ভূমিও দখল হলে বা একজন মুসলমানও কাফেরদের হাতে বন্দি থাকলে পর্যায়ক্রমে জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায় এবং ভূমি পুনরুদ্ধার হওয়া এবং ‘বন্দি’ মুক্ত হওয়া পর্যন্ত জিহাদ ফরযে আইন থাকে।
আমরা সকলেই একটু চিন্তা করি আমাদের উপর কি জিহাদ এখনও ফরযে আইন হয়নি, অথচ জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার সবগুলো কারণই এখন আমাদের সামনে বিদ্যমান। গোটা বিশ্বে ফিত্না বিস্তার হয়ে আছে, কোথাও ইসলমী খিলাফহ প্রতিষ্ঠিত নেই, ‘শাআ’য়েরে ইসলাম’ তথা ইসলামী নিদর্শনাবলী- যেমন নবী, বাইতুল্লাহ, মসজিদ, ওলামা, মিনার, কুরআন, ইত্যাদি সবই শাআয়েরে ইসলাম ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়াবলীর সম্মানও আমাদের চোখের সামনেই ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে! আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
তরবারীর ছায়াতলে জান্নাত:
الحديث الخامس عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي، وَهُوَ بِحَضْرَةِ الْعَدُوِّ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَبْوَابَ الْجَنَّةِ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ»، فَقَامَ رَجُلٌ رَثُّ الْهَيْئَةِ، فَقَالَ: يَا أَبَا مُوسَى، آنْتَ سَمِعْتَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ هَذَا؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: ” فَرَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ، فَقَالَ: أَقْرَأُ عَلَيْكُمُ السَّلَامَ، ثُمَّ كَسَرَ جَفْنَ سَيْفِهِ فَأَلْقَاهُ، ثُمَّ مَشَى بِسَيْفِهِ إِلَى الْعَدُوِّ فَضَرَبَ بِهِ حَتَّى قُتِلَ ” رواه أحمد، ومسلم، والترمذي، وابن حبان .
হাদীস নং-৫ আবু বকর ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে কায়েস তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে রণাঙ্গনে এ কথা বলতে শুনেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতের দরজাগুলো তরবারীর ছায়াতলে’ একথা শুনে আলু-থালু আকৃতির এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বলল, হে আবু মূসা! আপনি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একথা বলতে শুনেছেন? উত্তরে আবু মূসা রাযি. বললেন, হ্যা, বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে লোকটি তাঁর সাথীদের কাছে গেল এবং তাদেরকে (বিদায়ী) সালাম দিল। অতঃপর তরবারীর খাপটি ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে তরবারী হাতে নিয়ে শত্রুপানে এগিয়ে গেল এবং বীরদর্পে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে গেল। আহমদ, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান।
হাদীসের শিক্ষা:
১. জিহাদ হল জান্নাতের সহজ পথ। কুরআন ও হাদীসের বহু জায়গায় এ বিষয়টি বিবৃত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “জিহাদ হলো জান্নাতের সংক্ষিপ্ত পথ।’ ইমাম নববী বলেন, ‘ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, জিহাদ করা এবং রণাঙ্গনে হাজির হওয়া জান্নাতের পথ এবং জান্নাতে প্রবেশের সহজ উপায়।’
২. হাদীসের এ ঘটনাটি থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা সালাফের অন্তরে কিভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী জানতে পেরে হাদীসে উল্লিখিত লোকটির ব্যাকুল অবস্থা আমাদের হৃদয়েও নাড়া দিয়ে যায়। আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন। আমীন।
৩. সালাফের যুগে মায়েরা সন্তান জন্মই দিত ‘মুজাহিদের মা’ হওয়ার জন্য এবং সন্তানকে শহীদ হিসেবে দেখার জন্য।
৪. সাহাবায়ে কেরাম এবং পরবর্তী যুগে মুসলমানদের জিহাদে অংশগ্রহণের আগ্রহ যে কোন মুমিনের হৃদেয় নাড়া দিবে। আমাদের উচিৎ ঐ সকল ঘটনাবলী অধ্যয়ন করা এবং নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনে সচেষ্ট হওয়া।
প্রথম সারিতে এবং অবিচলভাবে জিহাদ করে শহীদ হওয়ার ফযিলত:
الحديث السادس: عَنْ نُعَيْمِ بْنِ هَمَّارٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَيُّ الشُّهَدَاءِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «الَّذِينَ يَلْقُونَ الْقَوْمَ فِي الصَّفِّ فَلَا يَلْفِتُونَ وُجُوهَهُمْ حَتَّى يُقَتَلُوا، أُولَئِكَ يَتَلَبَّطُونَ فِي الْغُرَفِ الْعُلَا مِنَ الْجَنَّةِ، يَضْحَكُ إِلَيْهِمْ رَبُّكَ، وَإِذَا ضَحِكَ رَبُّكَ إِلَى عَبْدٍ فِي مَوْطِنٍ فَلَا حِسَابَ عَلَيْهِ») رواه أحمد، وأبو يعلى، والطبراني في الأوسط .
হাদীস নং-৬ হযরত নুয়াইম ইবনে হাম্মার রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, কারা শ্রেষ্ঠ শহীদ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা যুদ্ধের প্রথম সারিতে শত্রুর মুখোমুখী হয় এবং নিহত হওয়া পর্যন্ত এক অবিচলভাবে জিহাদ চালিয়ে যায়, তারা জান্নাতের অতি উন্নত সুউচ্চ এবং বিশেষ কামরাসমূহে থাকবে। তোমার প্রতিপালক তাদের দিকে তাকিয়ে হাসবেন। আর তোমার প্রতিপালক যে বান্দার দিকে তাকিয়ে হাসেন তার কোন হিসাব হয় না। -আহমদ, আবু ইয়া’লা, আওসাতে তাবারানী।
হাদীসের শিক্ষা:
সব শহীদরা সমান মর্যাদার অধিকারী হবেন না। কারো মর্যাদা অনেক বেশি, কারো হবে সে তুলনায় একটু কম। আর এই পার্থক্য হবে জিহাদের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ও প্রাণ বিসর্জনের জযবার তারতম্যের কারণে। প্রাণ তো একটাই, একবারই তা দেওয়া যাবে। তাই আমাদের উচিৎ সর্বোত্তম পথেই আল্লাহর দরবারে তাকে সমর্পিত করার চেষ্টা করা এবং এর জন্য প্রতিনিয়ত দোআ করা।
الحديث السابع: عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” عَجِبَ رَبُّنَا عَزَّ وَجَلَّ مِنْ رَجُلٍ غَزَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَانْهَزَمَ – يَعْنِي أَصْحَابَهُ – فَعَلِمَ مَا عَلَيْهِ، فَرَجَعَ حَتَّى أُهَرِيقَ دَمُهُ، فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى لِمَلَائِكَتِهِ: انْظُرُوا إِلَى عَبْدِي رَجَعَ رَغْبَةً فِيمَا عِنْدِي، وَشَفَقَةً مِمَّا عِنْدِي حَتَّى أُهَرِيقَ دَمُهُ ” رواه أحمد، وأبو داود واللفظ له، وابن حبان، والحاكم .
হাদীস নং-৭ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের রব মুগ্ধ হন ঐ ব্যক্তির প্রতি যে আল্লাহর পথে জিহাদ করে আর তার সাথীরা যুদ্ধের তীব্রতার কারণে পলায়নপর হয়ে পিছু হটেছে আর সে তার দায়িত্ব বুঝতে পেরে রণাঙ্গনে ফিরে গেছে এবং নিহত হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করেছে। তার এ অবস্থা দেখে আল্লাহ তাআলা খুশী হয়ে ফেরেশতাদেরকে বলেন, তোমরা আমার বান্দার দিকে লক্ষ্য কর! সে আমার নেয়ামতের আশায় এবং আমার আযাবের ভয়ে দৃঢ় রয়েছে এবং নিহত হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। -আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান, হাকিম।
হাদীসের শিক্ষা:
১. আল্লাহ তাআলা বান্দার কোন কোন আমল নিয়ে মালায়ে আ’লা বা উর্ধ্ব জগতে আলোচনা করেন। আমাদের উচিৎ নিজেদেরকে আলোচনাযোগ্য করে গড়ে তোলা।
২. আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের প্রতি আগ্রহ এবং আযাবের ভয় ঈমানের অন্যতম লক্ষণ। আমাদের উচিৎ, যে কোন আমল করার সময় এ বিষয়ের লাভের প্রতি লক্ষ্য রাখা। এর আরেকটি অন্যতম ফায়দা হল, এর দ্বারা সহজেই ইহসানের স্তরে উন্নীত হওয়া যায়।
৩. যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা হারাম। এর থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
৪. নির্ঘাত মৃত্যুর কথা জেনেও জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার ফযিলত অনেক বেশি, এ হাদীস থেকে استشهادي হামলা বা ফেদায়ী হামলার বৈধতাও প্রমাণিত হয়। বরং এর ফযিলত অনেক বেশি হওয়ার কথাও প্রমাণিত হয়।
সর্বশ্রেষ্ঠ শাহাদাত:
الحديث الثامن: عن عبد الله بن حبشي الخثعمي أن النبي صلى الله عليه وسلم سئل أَيُّ الْقَتْلِ أَشْرَفُ؟ قَالَ: ” مَنْ أُهَرِيقَ دَمُهُ، وَعُقِرَ جَوَادُهُ ” رواه أحمد، وأبو داود، والنسائي، والدارمي، والبيهقي، وصححه الشيخ الألباني، ورواه بعضهم بلفظ: أَيُّ الْجِهَادِ أَفْضَلُ؟ فأجاب عليه الصلاة والسلام: (أَنْ يُعْقَرَ جَوَادُكَ، وَيُهَرَاقَ دَمُكَ).
হাদীস নং-৮ আব্দুল্লাহ ইবনে হুবুশী খাছআমী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, কোন নিহত ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন, যার রক্ত প্রবাহিত হয়েছে এবং তার বাহনটিও প্রাণ হারিয়েছে। -আহমদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, দারেমী, বাইহাকী।
হাদীসের শিক্ষা:
যে ভালো কাজে কষ্ট যত বেশি তার সওয়াবও তত বেশি। তাই কষ্ট দেখলে ঘাবড়ানো উচিত নয়; বরং আখেরাতে উঁচু মর্যাদা লাভের আশায় তা আরো অধিক গুরুত্বের সাথে করা উচিত এবং অন্যদেরকেও এ বিষয়ে উৎসাহিত করা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কবুল করুন।
শহীদের মর্যাদা ও সহজ মৃত্যু:
الحديث التاسع: عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” مَا يَجِدُ الشَّهِيدُ مِنْ مَسِّ الْقَتْلِ، إِلَّا كَمَا يَجِدُ أَحَدُكُمْ مَسِّ الْقَرْصَةِ ” رواه أحمد، والترمذي، والنسائي، وابن ماجه، والدرامي، والبيهقي.
হাদীস নং-৯ আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শহীদের মৃত্যুযন্ত্রণা বা কতলের কষ্ট অনুভব হয়না তবে তোমরা পিপড়ার কামড়ে যতটুকু কষ্ট অনুভব কর ততটুকু। -আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, দারেমী।
হাদীসের শিক্ষা:
প্রত্যেক ব্যক্তিরই মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। কারো বেশি কারো কম; তবে শহীদের না আছে ‘সাকরাতুল মাউত’-র কষ্ট, না আছে মৃত্যুর অসহনীয় যন্ত্রণা। তাই আমাদের নিষ্ঠার সাথে শাহাদাতের অন্বেষণ করা এবং ইখলাসের সাথে দোআ করতে থাকা উচিৎ।
الحديث العاشر: عَنْ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: ” لَمَّا طُعِنَ حَرَامُ بْنُ مِلْحَانَ، وَكَانَ خَالَهُ يَوْمَ بِئْرِ مَعُونَةَ، قَالَ: بِالدَّمِ هَكَذَا فَنَضَحَهُ عَلَى وَجْهِهِ وَرَأْسِهِ، ثُمَّ قَالَ: فُزْتُ وَرَبِّ الكَعْبَةِ “) رواه البخاري
হাদীস নং-১০ আনাস ইবনে মালেক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন হারাম ইবনে মিলহান রাযি. (তিনি হযরত আনাস রাযি. এর মামা ছিলেন) বি’রে মাউনার দিন আহত হলেন। তখন তার মাথা ও চেহারা রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি (আনাস রাযি.) তাঁর মাথা এবং চেহারার দিকে ইশারা করে রক্ত মাখা অবস্থা দেখালেন। অতঃপর বললেন, কা’বার রবের কসম আমি সফল হয়ে গেছি। -বুখারী।
হাদীসের শিক্ষা:
১. শাহাদাত ব্যক্তিকে অবশ্যই জান্নাতে পৌঁছে দেয়। তাই এ পথেই হাঁটা উচিত।
২. উম্মতের জন্য শাহাদাত হলো সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য। শহীদের সফলতা ফকীহ মুজতাহিদের সফলতার চেয়েও বহুগুণ উর্ধ্বে।
শহীদদেরকে কবরে প্রশ্ন করা হবে না:
الحديث الحادي عشر: عَنْ رَاشِدِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ رَجُلٍ، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ مَا بَالُ الْمُؤْمِنِينَ يُفْتَنُونَ فِي قُبُورِهِمْ إِلَّا الشَّهِيدَ؟ قَالَ: «كَفَى بِبَارِقَةِ السُّيُوفِ عَلَى رَأْسِهِ فِتْنَةً» رواه النسائي.
হাদীস নং-১১ রাশেদ ইবনে সা’দ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, কোন এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ইয়া রাসূল্লাহ! মুমিনদেরকে কবরে প্রশ্ন করা হয়; তবে শহীদদেরকে কেন নয়? অর্থাৎ, শহীদদেরকে প্রশ্ন করা হয়না ঠিক কী কারণে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পরীক্ষা হিসেবে (দুনিয়াতে) শহীদের মাথার উপর দিয়ে তরবারীর চমকই যথেষ্ট। -নাসাঈ
হাদীসের শিক্ষা:
১. জিহাদ একটি পরীক্ষা। এর দ্বারা মুমিন ও মুনাফিকের মাঝে পার্থক্য হয়ে যায় এবং ভাল-মন্দ চিহ্নিত হয়ে যায়।
মৃত্যুর আগে ও পরে শহীদের বিশেষ মর্যাদা:
الحديث الثاني عشر: عَنْ المِقْدَامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ: يُغْفَرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دَفْعَةٍ، وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الجَنَّةِ، وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَيَأْمَنُ مِنَ الفَزَعِ الأَكْبَرِ، وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الوَقَارِ، اليَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَيُزَوَّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ زَوْجَةً مِنَ الحُورِ العِينِ، وَيُشَفَّعُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَقَارِبِهِ ” رواه أحمد، والترمذي- واللفظ له، وابن ماجه.
হাদীস নং-১২ মিকদাম ইবনে মা’দীকারিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শহীদের জন্য আল্লাহর কাছে ছয়টি বিশেষ পুরস্কার রয়েছে।
১. প্রথমেই তাকে মাফ করে দেওয়া হয়।
২. জান্নাতে তাঁর নিবাস কোথায় হবে তা দেখিয়ে দেওয়া হয়।
৩. কবরের আযাব থেকে চির মুক্তি নিশ্চিত করা হয়।
৪. তাঁর মাথায় সম্মান ও গাম্ভীর্য্যের বিশেষ মুকুট পরিয়ে দেওয়া হয়, যার একটি ইয়াকুত (দুর্লভ মুক্তাদানা) দুনিয়া এবং দুনিয়াতে যা আছে এই সব কিছু থেকে উত্তম।
৫. ডাগর চোখের বাহাত্তরজন হুরের সাথে তাঁর বিয়ে পরিয়ে দেওয়া হয়।
৬. তাঁর আপনজনদের মধ্য থেকে ৭০ জনের ব্যাপারে তাঁর সুপারিশ কবুল করা হয়। -আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ।
الحورالعين মানে জান্নাতী রমণী। এক বচনে حوراء (হাওরা)। আর العين হল عيناء এর বহুবচন। হুরে ঈ’ন মানে হল, ডাগর চোখের মোহনীয় অপার্থিব রূপবতী জান্নাতী রমণী। স্বামীর প্রতি অতি আসক্ত, চির কুমারী নারী, যাঁরা জান্নাতী পুরুষের স্ত্রী হবেন। আল্লাহ আমাদের দান করুন।
হাদীসের শিক্ষা:
আখেরাতের সকল পথিকদেরই কয়েকটি অতি ভয়াবহ (তবে আল্লাহ যার জন্য সহজ করেন) অবস্থার মুখোমুখী হতে হয়।
ক. ‘সাকরাতুল মাওত’ (মৃত্যুর পূর্বের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং আশংকাজনক অবস্থা)।
খ. মৃত্যুর অসহনীয় যন্ত্রণা।
গ. কবরের সওয়াল-জওয়াব।
ঘ. কেয়ামতের ভয়াবহতা।
ঙ. পুলসিরাত পার হওয়া।
চ. আমলনামা প্রকাশ এবং তা ডান বা বাম (আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন) হাতে আসা।
ছ. জান্নাত বা জাহান্নাম আবাসস্থল হওয়া নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থা, ইত্যাদি।
আর নবী এবং শহীদদের ব্যতীত অন্য কারো ব্যাপারে এসকল বিপদ থেকে মুক্তির আগাম সুনিশ্চিত কোন সুসংবাদ নেই। সর্বোপরি নিহত হওয়ার সময় ‘হুরে ঈনের’ আগমন, ক্ষমার ঘোষণা এবং জান্নাতের উপস্থিতি শহীদের জন্য নিহত হওয়ার কষ্টের যাতনার পরিবর্তে তাকে বরং আখেরাতের প্রতি এবং শাহাদাতের প্রতি আরো বেশি আগ্রহী করে তুলে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমীনI
আর বাহাত্তরজন স্ত্রীর ব্যাপারে মোল্লা আলী কারী রহ. মিরকাত শরহে মিশকাতে বলেন, শহীদকে বাহাত্তরজন হুরে ঈ’নের সাথে বিবাহ পরানো সর্বনিম্ন সংখ্যা। আল্লাহ তাআলা এর চেয়ে বেশিও দিতে পারেন। আল্লাহ! আমাদেরকেও দান করুন। আমীন।
الحديث الثالث عشر: عن أبي الدَّرْدَاءَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُشَفَّعُ الشَّهِيدُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ») رواه البزار، و أبو داود
হাদীস নং-১৩ আবু দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শহীদের পরিবারের ৭০ জন সদস্যের ব্যাপারে তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। -বাযযার, আবূ দাউদ।
বিশেষ শহীদের বিশেষ মর্যাদা:
الحديث الرابع عشر: عن جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، يَقُولُ: لَقِيَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لِي: يَا جَابِرُ مَا لِي أَرَاكَ مُنْكَسِرًا؟ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ اسْتُشْهِدَ أَبِي، وَتَرَكَ عِيَالاً وَدَيْنًا، قَالَ: أَفَلَا أُبَشِّرُكَ بِمَا لَقِيَ اللَّهُ بِهِ أَبَاكَ؟ قَالَ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ: مَا كَلَّمَ اللَّهُ أَحَدًا قَطُّ إِلَاّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ، وَأَحْيَا أَبَاكَ فَكَلَّمَهُ كِفَاحًا. فَقَالَ: يَا عَبْدِي تَمَنَّ عَلَيَّ أُعْطِكَ. قَالَ: يَا رَبِّ تُحْيِينِي فَأُقْتَلَ فِيكَ ثَانِيَةً. قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: إِنَّهُ قَدْ سَبَقَ مِنِّي أَنَّهُمْ إِلَيْهَا لَا يُرْجَعُونَ قَالَ: وَأُنْزِلَتْ هَذِهِ الآيَةُ: {وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللهِ أَمْوَاتًا} رواه الترمذي-واللفظ له- وقال: حسن غريب، وابن ماجه، وابن حبان، وابن خزيمة، وغيرهم، ورواه أحمد، والحميدي، وأبو يعلى مختصراً .
হাদীস নং-১৪
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দিব না, আল্লাহ তাআলা তোমার পিতার সাথে কি নিয়ে সাক্ষাত করেছেন? আমি বললাম ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমাকে সুসংবাদ দিন ইয়া রাসূলাল্লাহ!’ উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা কারো সাথে পর্দার আড়াল ছাড়া কথা বলেন না, তবে তিনি তোমার পিতাকে জীবিত করে তাঁর সাথে সামনা সামনি কথা বলেছেন এবং বলেছেন, হে আমার বান্দা! তুমি আমার কাছে চাও, আমি তোমাকে দিব! তোমার পিতা তখন বললেন, হে আমার রব! আপনি আমাকে পুনরায় দুনিয়াতে পাঠান, আমি আবার আপনার পথে শহীদ হব। আল্লাহ তাআলা বললেন, আমি ইতিপূর্বেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি যে, দুনিয়া থেকে একবার কেউ আসলে তাকে পুনরায় সেখানে ফিরে যেতে দেওয়া হবে না। নয়তো আমি তোমার এই আশাটি পূর্ণ করতাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন এই আয়াতটি নাযিল হয়,
{ولا تحسبن الذين قتلوا في سبيل الله أمواتا}
‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে কর না।’ -সূরা আলে ইমরান: ১৬৯, তিরমিযী
হাদীসের শিক্ষা:
১. শহীদদের জন্য তো এমনিতেই বহু পুরস্কার নির্ধারিত রয়েছে। যার কিছু কিছু ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। এগুলো ছাড়াও আল্লাহ তাআলা বিশেষ কোন শহীদ কে বিশেষ কোন পুরস্কারে ভূষিত করতে পারেন, যেমনটি এ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
২. আল্লাহ তাআলা কর্তৃক সরাসরি কথা বলার এটা ছিল প্রথম ঘটনা। এর পর যে আর এমন হবেনা, এমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়নি। তাই আমরাও আশা করতে পারি। আল্লাহ! আমাদেরকেও দান করুন! আমীন
শহীদকে স্বাগত জানানোর জন্য হুরদের আগমন:
الحديث الخامس عشر: عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَجُلًا أَسْوَدَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي رَجُلٌ أَسْوَدُ مُنْتِنُ الرِّيحِ، قَبِيحُ الْوَجْهِ، لَا مَالَ لِي، فَإِنْ أَنَا قَاتَلْتُ هَؤُلَاءِ حَتَّى أُقْتَلَ، فَأَيْنَ أَنَا؟ قَالَ: «فِي الْجَنَّةِ» فَقَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ، فَأَتَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «قَدْ بَيَّضَ اللَّهُ وَجْهَكَ، وَطَيَّبَ رِيحَكَ، وَأَكْثَرَ مَالَكَ» وَقَالَ لِهَذَا أَوْ لِغَيْرِهِ: «لَقَدْ رَأَيْتُ زَوْجَتَهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ، نَازَعَتْهُ جُبَّةً لَهُ مِنْ صُوفٍ، تَدْخُلُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ جُبَّتِهِ» رواه الحاكم، ورواه البيهقي في ( دلائل النبوة ٣٠٣/٤)
হাদীস নং-১৫
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, কালো বর্ণের এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো এবং বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি একজন কালো মানুষ, আমার দেহ থেকে দুর্গন্ধ আসে, না আছে চেহারা সৌন্দর্য্য, না আছে কোন অর্থ। আমি যদি এদের সাথে যুদ্ধ করি এবং নিহত হই, তাহলে আমি কোথায় থাকব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি জান্নাতে থাকবে। এরপর লোকটি যুদ্ধ করল এবং নিহত হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটির আরো নিকটবর্তী হলেন এবং বললেন, আল্লাহ তোমার চেহারা সুন্দর করে দিন, তোমার দেহ সুবাসিত করে দিন এবং তোমাকে অনেক অনেক সম্পদ দান করুন!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই লোকটিকে বা অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি তার আয়তলোচনা স্ত্রীকে দেখেছি, হুরটি তাকে পশমি কাপড় পরাচ্ছে এবং তার জুব্বার ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। -হাকিম, বায়হাকী: দালায়েলুন নুবুওয়াহ।
হাদীসের শিক্ষা:
১. মানুষ দুনিয়াতে যে কয়টি কারনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করে এর মধ্যে অন্যতম হলো নারী। নারীর জন্যই পৃথিবীর সর্বপ্রথম হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। কেয়ামত পর্যন্ত যত পুরুষ জন্ম নিবে প্রায় সবাই নারীর প্রতি কোন না কোনভাবে মুখাপেক্ষী থাকবে। নারী কেন্দ্রিক দুনিয়াতে সংঘটিত ঘটনাবলীর সংখ্যা কম নয়।
প্রিয় পাঠক! আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি আমি এবং আপনি কোন না কোন পর্যায়ে নারীর প্রতি মুহতাজ এবং আন্তরিকভাবে আসক্ত। আর আল্লাহ তাআলা একজন শহীদকে আখেরাতে যে সকল নেয়ামত দ্বারা পুরষ্কৃত করবেন তার মধ্যে অন্যতম হল নারী। সাধারণত জান্নাতীরা তো জান্নাতে যাওয়ার পর ‘হুরে ঈ’নদেরকে’ পাবে।
তবে শহীদের সাথে আল্লাহ তাআলার মুআমালা এক্ষেত্রে ভিন্ন হবে। তিনি তাঁর শহীদ বান্দাকে শাহাদাতের সাথে সাথেই বাহাত্তরজন ‘হুরে ঈ’ন’-র সাথে বিবাহ করিয়ে দিবেন। মাঝে মাঝে তো দুনিয়াতেই তিনি তাঁর মনোনিত শহীদ বান্দাকে হুরের সাথে সাক্ষাত করিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহ! আমাদেরকেও এ মহান নেয়ামতে ভূষিত করুন! আমীন।
নিহত হওয়ার সাথে সাথেই শহীদ জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তিনি তথায় খাবেন এবং পান করবেন:
الحديث السادس عشر: عَنْ مَسْرُوقٍ، قَالَ: سَأَلْنَا عَبْدَ اللهِ عَنْ هَذِهِ الْآيَةِ: {وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ} [آل عمران: 169] قَالَ: أَمَا إِنَّا قَدْ سَأَلْنَا عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَ: «أَرْوَاحُهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ، لَهَا قَنَادِيلُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ، تَسْرَحُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ شَاءَتْ، ثُمَّ تَأْوِي إِلَى تِلْكَ الْقَنَادِيلِ، فَاطَّلَعَ إِلَيْهِمْ رَبُّهُمُ اطِّلَاعَةً»، فَقَالَ: ” هَلْ تَشْتَهُونَ شَيْئًا؟ قَالُوا: أَيَّ شَيْءٍ نَشْتَهِي وَنَحْنُ نَسْرَحُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ شِئْنَا، فَفَعَلَ ذَلِكَ بِهِمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، فَلَمَّا رَأَوْا أَنَّهُمْ لَنْ يُتْرَكُوا مِنْ أَنْ يُسْأَلُوا، قَالُوا: يَا رَبِّ، نُرِيدُ أَنْ تَرُدَّ أَرْوَاحَنَا فِي أَجْسَادِنَا حَتَّى نُقْتَلَ فِي سَبِيلِكَ مَرَّةً أُخْرَى، فَلَمَّا رَأَى أَنْ لَيْسَ لَهُمْ حَاجَةٌ تُرِكُوا ” رواه مسلم، والترمذي وقال: حسن صحيح، وابن ماجه، والطبراني .
হাদীস নং-১৬
মাসরুক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আব্দুল্লাহ রাযি. কে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম-
{ولا تحسبن الذين قتلوا في سبيل الله أمواتا، بل احياء عند ربهم يرزقون}
তোমরা আল্লাহর পথে নিহত ব্যক্তিদের মৃত মনে কর না বরং তাঁরা জীবিত, তাঁরা তাঁদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত হয়। সূরা আলে ইমরান:১৬৯
আব্দুল্লাহ রাযি. বললেন, আমরা এই আয়াত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি উত্তরে বলেছেন, শহীদদের রূহগুলোকে সবুজ বর্ণের পাখির দেহে ফুঁকে দেওয়া হয়। আর পাখিগুলো আরশের সাথে লটকানো বাসায় অবস্থান করে এবং এ বাসাগুলো থেকে জান্নাতে ইচ্ছেমত সেখানেই তারা ঘুরে বেড়ায়। আবার এই বাসাগুলোতে এসে আশ্রয় নেয়। তাদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আর কিছু চাও কি? তারা বলে, আমাদের আর কি চাই! আমরা জান্নাতের সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছি! আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করবেন, যখন তারা লক্ষ্য করবেন যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জিজ্ঞেস করতেই থাকবেন, যতক্ষণ না তারা কিছু চাচ্ছে তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা চাই আমাদের প্রাণগুলোকে আপনি আমাদের দেহে ফিরিয়ে দিন, যেন আমরা পুনরায় আপনার পথে শহীদ হতে পারি। যখন আল্লাহ তাআলা দেখবেন যে, তাদের চাওয়ার আর কিছু নেই তখন তিনি তাদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিবেন। -মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, তাবারানী।
হাদীসের শিক্ষা:
শহীদগণ শাহাদাতের মর্যাদা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এর শ্রেষ্ঠত্ব অনুধাবন করতে পেরেছেন। তাই তারা অন্য কিছুর তামান্না না করে শুধু পুনরায় শাহাদাতের তামান্নাই পেশ করছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এর খবর জানিয়ে দিয়েছেন যেন আমরা এই সুযোগকে হাত ছাড়া না করি। একবার মৃত্যু এসে গেলে এ সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। সুতরাং আগেই মহত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। আল্লাহ আমাদেরকে শাহাদাতের জন্য কবুল করুন! আমীন।
الحديث السابع عشر: عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” لَمَّا أُصِيبَ إِخْوَانُكُمْ بِأُحُدٍ جَعَلَ اللَّهُ أَرْوَاحَهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ، تَرِدُ أَنْهَارَ الْجَنَّةِ، تَأْكُلُ مِنْ ثِمَارِهَا، وَتَأْوِي إِلَى قَنَادِيلَ مِنْ ذَهَبٍ مُعَلَّقَةٍ فِي ظِلِّ الْعَرْشِ، فَلَمَّا وَجَدُوا طِيبَ مَأْكَلِهِمْ، وَمَشْرَبِهِمْ، وَمَقِيلِهِمْ، قَالُوا: مَنْ يُبَلِّغُ إِخْوَانَنَا عَنَّا، أَنَّا أَحْيَاءٌ فِي الْجَنَّةِ نُرْزَقُ لِئَلَّا يَزْهَدُوا فِي الْجِهَادِ، وَلَا يَنْكُلُوا عِنْدَ الْحَرْبِ، فَقَالَ اللَّهُ سُبْحَانَهُ: أَنَا أُبَلِّغُهُمْ عَنْكُمْ “، قَالَ: فَأَنْزَلَ اللَّهُ: {وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ} [آل عمران: 169] إِلَى آخِرِ الْآيَةِ رواه أحمد، وأبو داود، والحاكم وقال: صحيح على شرط مسلم ولم يخرجاه، ووافقه الذهبي، ورواه البيهقي، والضياء المقدسي بألفاظ متقاربة .
হাদীস নং-১৭
ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের ভাইয়েরা যখন উহুদে শহীদ হয়েছেন আল্লাহ তাআলা তাদের রুহ গুলোকে একটি সবুজ পাখির দেহে ফুঁকে দিয়েছেন। এই পাখিগুলো জান্নাতের নহরসমূহে ঘুরে বেড়ায়, এর ফলফলাদি ভক্ষণ করে এবং আরশের ছায়ায় সাটানো স্বর্ণের বাসায় এসে অবস্থান করে। যখন তারা তাদের খাদ্য, পানীয় এবং আবাসের স্বাদ আস্বাদন করল তখন তারা বলল, আমাদের ব্যাপারে আমাদের ভাইদেরকে কে সংবাদ দিবে যে, আমরা জান্নাতে জীবিত আছি এবং আমরা রিজিকপ্রাপ্ত হচ্ছি, যেন তারা জিহাদ ছেড়ে না দেয় এবং যুদ্ধ থেকে পলায়ন না করে। আল্লাহ তাআলা বললেন আমি তোমাদের পক্ষে সংবাদ পৌছিয়ে দেব। অতঃপর তিনি নাযিল করলেন,
{ولا تحسبن الذين قتلوا في سبيل الله أمواتا، بل احياء عند ربهم يرزقون}
‘আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখোন মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত এবং রিযিক প্রাপ্ত।’ -সূরা আলে ইমরান: ১৬৯, আহমদ, আবু দাউদ, হাকিম।
হদীসের শিক্ষা:
শহীদ ছাড়া অন্যান্য মৃত ব্যক্তিরা যদি নাজাতপ্রাপ্ত হয়- আলমে বরযখ, কিয়ামত, হিসাব-নিকাশ ইত্যাদির পরে জান্নাতে যাবেন। আর শহীদ ইন্তেকালের সাথে সাথেই জান্নাতে চলে যাবেন এবং জান্নাতের নিয়ামত ভোগ করতে থাকবেন। আল্লাহর সাথে কথা বলবেন, আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে কথা বলবেন। আমাদের উচিৎ এই পথেই হাঁটা এবং নিয়মিত দোআ অব্যাহত রাখা।
الحديث الثامن عشر: عن جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أُحُدٍ أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فَأَيْنَ أَنَا؟ قَالَ: «فِي الجَنَّةِ فَأَلْقَى تَمَرَاتٍ فِي يَدِهِ، ثُمَّ قَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ») رواه أحمد، والبخاري، ومسلم، والنسائي، والبيهقي .
হাদীস নং-১৮
জারেব ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক লোক বললেন, ‘আমি যদি নিহত হই তাহলে আমি কোথায় থাকব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জান্নাতে। একথা শুনে লোকটি তার হাতে থাকা খেজুরগুলো ফেলে দিলেন এবং জিহাদ করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন। -আহমদ, বুখারী, মুসলিম, বায়হাকী।
হাদীসের শিক্ষা:
সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এর দুনিয়ার জিন্দেগীর প্রতি অনাগ্রহ এবং আখেরাতের প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করুন!
শহীদ কোন প্রকার হিসাব-নিকাশ ছাড়া প্রথম দলের সাথেই জান্নাতে প্রবেশ করবেন:
الحديث التاسع عشر : عن عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ” إِنَّ أَوَّلَ ثُلَّةٍ تَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْفُقَرَاءُ الْمُهَاجِرُونَ، الَّذِينَ تُتَّقَى بِهِمُ الْمَكَارِهُ، إِذَا أُمِرُوا سَمِعُوا وَأَطَاعُوا، وَإِنْ كَانَتْ لِرَجُلٍ مِنْهُمْ حَاجَةٌ إِلَى السُّلْطَانِ، لَمْ تُقْضَ لَهُ حَتَّى يَمُوتَ وَهِيَ فِي صَدْرِهِ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَدْعُو يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْجَنَّةَ، فَتَأْتِي بِزُخْرُفِهَا وَرِيِّهَا فَيَقُولُ: «أَيْنَ عِبَادِيَ الَّذِينَ قَاتَلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ، وَقُتِلُوا فِي سَبِيلِي، وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي، وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِي، ادْخُلُوا الْجَنَّةَ» فَيَدْخُلُونَهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ، وَلَا عَذَابٍ فَتَأْتِي الْمَلَائِكَةُ فَيَقُولُونَ: رَبَّنَا نَحْنُ نُسَبِّحُ لَكَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ، وَنُقَدِّسُ لَكَ مَنْ هَؤُلَاءِ الَّذِينَ آثَرْتَهُمْ عَلَيْنَا؟ فَيَقُولُ الرَّبُّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: «هَؤُلَاءِ الَّذِينَ قَاتَلُوا فِي سَبِيلِي، وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي، فَتَدْخُلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ مِنْ كُلِّ بَابٍ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ، فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ») رواه الحاكم-واللفظ له- وقال: حديث صحيح الإسناد، ولم يخرجاه، ووافقه الذهبي، ورواه أحمد، والطبري، والبيهقي في الشعب، وغيرهم.
হাদীস নং-১৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। যারা সর্বপ্রকার কষ্ট সহ্য করেছেন, যখনই নির্দেশ পেয়েছেন শুনেছেন এবং ইত্তেবা করেছেন। শাসকের নিকট তাদের কোন প্রয়োজন হলে তা পূরণ করা হতনা, আর তাঁরা তাদের প্রয়োজনের কথা বুকে নিয়েই মৃত্যুবরণ করতেন। আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন জান্নাতকে ডাকবেন আর জান্নাত তার সর্বপ্রকার সৌন্দর্য এবং নেয়ামতসহ আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার ঐ সকল বান্দারা কোথায়, যারা আমার পথে যুদ্ধ করেছে, আমার পথে নিহত হয়েছে, আমার পথে কষ্ট সহ্য করেছে, আমার পথে জিহাদ করেছে? তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। তাঁরা কোন রকম হিসাব-নিকাশ এবং আযাব ভোগ করা ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
এরপর ফেরেশতারা আসবেন এবং বলবেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দিবা-রাত্রি আপনার তসবীহ পড়ি, আপনার পবিত্রতা জ্ঞাপন করি, আপনি আমাদের উপর কাদের প্রাধান্য দিলেন? তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, এরা আমার পথে জিহাদ করেছে, আমার পথে কষ্ট সহ্য করেছে। একথা শুনে ফেরেশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করবেন এবং বলবেন, আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, আপনারা ধৈর্য্যধারণ করেছেন, অতি উত্তম আপনাদের চিরন্তন আবাসস্থল। হাকেম রহ. হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং এটিকে সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাবীও তাকে সমর্থন করেছেন, আহমদ, তাবারী, বাইহাকী ইত্যাদি।
হাদীসের শিক্ষা:
আল্লাহ তাআলা নিজে শহীদদের প্রশংসা করবেন। শহীদদের সম্মানার্থে জান্নাতকে তাঁদের নিকট উপস্থিত করবেন। ফেরেশতারা শহীদদের ব্যাপারে ঈর্ষা করবেন এবং পরবর্তীতে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিবেন। আমাদের উচিত এসব বিষয় হৃদয় দিয়ে ভাবা; তা অর্জনে সচেষ্ট হওয়া।
الحديث العشرون: عن حسناءَ بنتِ معاويةَ الصُّريميَّهَ، قالت: حدَّثنا عمّي، قال: قلتُ للنبيِّ -صلَّى الله عليه وسلم-: مَنْ في الجنة؟ قال: “النبيُّ في الجنةِ، والشهيدُ في الجنةِ، والمولُودُ في الجنةِ، والوَئيدُ في الجنةِ”) رواه أحمد, وأبو داود, وابن أبي شيبة, وأبو نعيم الإصبهاني في معرفة الصحابة، وابن عبد البر، وقال ابن حجر: إسناده حسن، وصححه الألباني
হাদীস নং-২০
হাসানা বিনতে মুয়াবিয়া রাযি. বলেন, আমার চাচা আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, জান্নাতে কারা থাকবে? তিনি বললেন,
১. নবীরা জান্নাতে থাকবে।
২. শহীদরা জান্নাতে থাকবে।
৩. ছোট বেলায় মৃত্যুবরণকারীরা জান্নাতে থাকবে।
৪. যাদেরকে জীবিত পুঁতে ফেলা হয়েছে তারাও জান্নাতে থাকবে। -আহমদ, আবু দাউদ, ইবনু আবি শায়বাহ।
লক্ষ্য করুন, হাদীসটিতে নবীদের পরেই শহীদদের অবস্থান বর্ণনা করা হয়েছে। (সুবহানাল্লাহ!)
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বারংবার শাহাদাত লাভের তামান্না:
الحديث الحادي والعشرون عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوَدِدْتُ أَنِّي أُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، ثُمَّ أَحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ، ثُمَّ أَحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ») متفق عليه .
হাদীস নং-২১
আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার রুহ! অবশ্যই অবশ্যই আমি তামান্না করি- আমি একবার শহীদ হই, পুনরায় জীবিত হই। আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই আবার জীবিত হই, এরপর আবার শহীদ হই। -বুখারী, মুসলিম
হাদীসের শিক্ষা:
দেখুন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার পরে যার অবস্থান, তিনিও শাহাদাতের ফজিলতের কারণে এর প্রতি আগ্রহী হয়ে বারবার শাহাদাতের তামান্না করেছেন। তাই আমাদেরও উচিত এই পথে চলা এবং নিয়মিতএর জন্য দোআ করা।
الحديث الثاني والعشرون: عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِذَا ذُكِرَ أَصْحَابُ أُحُدٍ: ” أَمَا وَاللهِ لَوَدِدْتُ أَنِّي غُودِرْتُ مَعَ أَصْحَابِ نُحْصِ الْجَبَلِ ” يَعْنِي سَفْحَ الْجَبَلِ) رواه أحمد، والحاكم .
হাদীস নং-২২
জাবের রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শুহাদায়ে উহুদের আলোচনা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, আহ! আমি যদি আমার সাথীদের সাথে পাহাড়ের চূড়ায় শহীদ হয়ে যেতাম। -আহমদ, হাকিম।
হাদীসের শিক্ষা:
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, এতদসত্বেও তিনি শাহাদাতের তামান্না করতেন, সুতরাং আমরা তাঁর নগন্য উম্মত হয়ে (যাদের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির কোন নিশ্চয়তা নেই) কীভাবে জান্নাতকে নিশ্চিতকারী শাহাদাতের প্রতি নিরাসক্ত হতে পারি?
২. শাহাদাতের প্রতি ঐকান্তিক আগ্রহ ঈমানের অন্যতম আলামত এবং নেফাক থেকে মুক্তির গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেট।
৩. নবীদের আ. এর পরে শহীদের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল কেউ নেই। তাই এই মর্যাদা লাভের আশায় (ইমাম, মুজতাহিদ হলেও) এই পথে চলা এবং পরিপূর্ণ আগ্রহের সাথে দোআ করা আবশ্যক।
শহীদ কর্তৃক দশবার শাহাদাতের তামান্না:
الحديث الثالث والعشرون : عن أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا أَحَدٌ يَدْخُلُ الجَنَّةَ يُحِبُّ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا، وَلَهُ مَا عَلَى الأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا الشَّهِيدُ، يَتَمَنَّى أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا، فَيُقْتَلَ عَشْرَ مَرَّاتٍ لِمَا يَرَى مِنَ الكَرَامَةِ) رواه أحمد، البخاري ومسلم .
হাদীস নং-২৩
আনাস ইবনে মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের তুলনায় দুনিয়াতে কিছুই নেই, তারপরও জান্নাত থেকে দুনিয়াতে আসার আগ্রহ শহীদ ছাড়া কেউ করবে না। শহীদ দুনিয়াতে এসে দশবার শহীদ হওয়ার তামান্না করবে শুধু শাহাদাতের অভাবনীয় মর্যাদা বারবার লাভ করার উদ্দেশ্যেই। -আহমাদ,বুখারী, মুসলিম।
হাদীসের শিক্ষা:
জান্নাত (যা সর্বপ্রকার নেয়ামতরাজির একমাত্র প্রাপ্তিস্থান) থেকে দুনিয়াতে বারংবার আসার আগ্রহ কী জন্য? তাহলে কি দুনিয়া জান্নাতের চেয়েও অধিক প্রিয় স্থান? না কিছুতেই নয়। তাহলে জান্নাতি শহীদ এমনটা করবেন কী জন্য? এ জন্যই যে, শাহাদাত আখেরাতে লাভ করা যায়না আর শাহাদাতের মর্যাদা (যা শুধু জান্নাত প্রাপ্তির মর্যাদার চেয়ে কিছুতেই কম নয়) বরং বহু গুণে, শত গুণে বেশি। শাহাদাত লাভের জন্য এমনটা করাই স্বাভাবিক। হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়াতে থাকতেই শাহাদাতের হাকিকত সম্পর্কে পরিপূর্ণ বুঝার তাওফিক দিন এবং শাহাদাতে পরম ও অমর মৃত্যু দান করুন! আমিন।
কোন কোন শহীদের মর্যাদা নবীদের মর্যাদার চেয়ে শুধু এক স্তর নিচে:
الحديث الرابع والعشرون: عَنْ عُتْبَةَ بْنِ عَبْدٍ السُّلَمِيِّ، وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” الْقَتْلَى ثَلَاثَةٌ: رَجُلٌ مُؤْمِنٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَقِيَ الْعَدُوَّ فَقَاتَلَ حَتَّى يُقْتَلَ فَذَلِكَ الْمُمْتَحَنُ فِي خَيْمَةِ اللَّهِ تَحْتَ عَرْشِهِ لَا يَفْضُلُهُ النَّبِيُّونَ إِلَّا بِدَرَجَةِ النُّبُوَّةِ، وَرَجُلٌ مُؤْمِنٌ قَرَفَ عَلَى نَفْسِهِ مِنَ الذُّنُوبِ وَالْخَطَايَا لَقِيَ الْعَدُوَّ فَقَاتَلَ حَتَّى يُقْتَلَ فَذَلِكَ مَصْمَصَةٌ مَحَتْ ذُنُوبَهُ وَخَطَايَاهُ، إِنَّ السَّيْفَ مَحَّاءٌ لِلْخَطَايَا وَقِيلَ لَهُ: ادْخُلْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةِ شِئْتَ فَإِنَّهَا ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ، وَلِجَهَنَّمَ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ بَعْضُهَا أَفْضَلُ مِنْ بَعْضٍ، وَرَجُلٌ مُنَافِقٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَقَاتَلَ حَتَّى يُقْتَلَ فَذَاكَ فِي النَّارِ إِنَّ السَّيْفَ لَا يَمْحُو النِّفَاقَ “). رواه أحمد، والدارمي، والطبراني، وابن حبان، والبيهقي .
হাদীস নং-২৪
উতবা ইবনে আবদ আস্-সুলামী রাযি. থেকে বর্ণিত, (তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশেষ সোহবাতপ্রাপ্ত ছিলেন) রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিহত ব্যক্তিরা তিন প্রকার,
১. গুনাহ মুক্ত পরিপূর্ণ মুমিন যে জান-মাল নিয়ে বের হয়ে গেছে এবং শত্রুর মুখোমুখি হয়ে নিহত হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। তাকে আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা করে নিয়েছেন। সে আরশের নিচে আল্লাহ প্রদত্ত তাবুতে অবস্থান করবে, নবীদের এবং তাদের মাঝে শুধু একটি স্তরেরই ব্যবধান হবে। আর তা হল ‘দারাজায়ে নুবুওয়াত’ বা নবুওয়াতের স্তর।
২. গুনাহগার মুমিন যিনি শত্রুর মুখোমুখী হয়েছেন এবং নিহত হওয়া পর্যন্ত জিহাদ অব্যহত রেখেছেন, এ জিহাদ তার গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দিয়েছে আর তরবারী তো গুনাহসমূহকে একেবারেই মিটিয়ে দেয়। তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতের আটটি দরজার যে কোন একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, আর জান্নাতের দরজাতো আটটিই, আর জাহান্নামের দরজা হলো সাতটি। জান্নাতের আটটি দরজার মধ্যে স্তরের তফাত রয়েছে।
৩. আর তৃতীয় ব্যক্তি হল ‘মুনাফিক’ যে তার জান-মাল নিয়ে বের হয়েছে এবং যুদ্ধ করে নিহত হয়েছে। তার স্থান হলো জাহান্নাম। কেননা তরবারী ‘নেফাক’কে মুছে দিতে পারেনা। -আহমদ, দারেমী, তাবারানী, ইবনে হিব্বান, বাইহাকী।
الحديث الخامس والعشرون: عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” الشُّهَدَاءُ عَلَى بَارِقٍ – نَهْرٍ بِبَابِ الْجَنَّةِ – فِي قُبَّةٍ خَضْرَاءَ، يَخْرُجُ عَلَيْهِمْ رِزْقُهُمْ مِنَ الجَنَّةِ بُكْرَةً وَعَشِيًّا “) رواه أحمد، والطبري، والطبراني، وابن حبان، والحاكم .
হাদীস নং-২৫
ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শহীদ জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী একটি সবুজ গম্বুজে অবস্থান করবে, সকাল-সন্ধ্যা শহীদের নিকট তাদের রিযিক প্রেরণ করা হবে। -হাকিম, আহমদ, তাবারী, ইবনে হিব্বান।
১ম হাদীসের কয়েকটি শব্দের ব্যাখ্যা:
خيمةالله : আল্লাহ প্রদত্ত তাবু, এই তাবুটি আরশের ছায়ায় থাকবে, এর দ্বারা শহীদের উঁচু মর্যাদার বিষয়টি বুঝে আসে।
الشهيد الممتحن : যে শহীদকে আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা করে নিয়েছেন। মোল্লা আলী কারী রহ. বলেন, الشهيد الممتحن ঐ শহীদ যার কলবকে আল্লাহ তাআলা তাকওয়ার জন্য পরীক্ষা করে নিয়েছেন।
আর ইবনে মানযুর রহ. শামর রহ. এর উক্তি নকল করেছেন, তিনি বলেন, الشهيد الممتحن : অর্থ হল, যার অন্তরকে আল্লাহ তাআলা পরিমার্জন করেছেন, বা পরিশোধন করেছেন। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার নির্বাচিত অন্তর। এমনই বলেছেন মুজাহিদ এবং আবু উবাইদা রহ
المصمصة : অর্থ হল পবিত্রকারী।
نهر بباب الجنة : এর ব্যাখ্যায় সিন্দি রহ. বলেছেন, সম্ভবত এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐ নহর যার উৎস জান্নাতের দরজায় অবস্থিত।
হাদীসের শিক্ষা:
১. আমল অনুযায়ী শহীদদের মর্যাদার তারতম্য হবে।
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, তাঁদের মর্যাদার মধ্যে ব্যাবধান হবে, তবে সবাই আল্লাহ তাআলার বিশেষ রিযিক লাভ করবেন।
২. রিয়া, হিংসা, অহংকার ইত্যাদি মন্দ গুণাবলী থেকে অন্তরকে পবিত্র করার জন্য জিহাদের চেয়ে বড় কোন ঔষধ নেই। তাই তো সাহাবায়ে কেরামের অবস্থা এত উন্নত ছিল, আর আমরা আসল কাজ ছেড়ে দিয়ে হাজারো পথ-পদ্ধতি অবলম্বন করছি, একদিক থেকে শায়েখের (পীর সাহেবের)খেলাফত (!) পাচ্ছি, অপরদিকে হাজারো মন্দ কাজে জড়িত থাকছি। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন! আমীন।
শাহাদাত জান্নাতুল ফেরদাউস লাভের অন্যতম উপায়:
. الحديث السادس والعشرون: عن أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ أُمَّ الرُّبَيِّعِ بِنْتَ البَرَاءِ وَهِيَ أُمُّ حَارِثَةَ بْنِ سُرَاقَةَ أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ، أَلَا تُحَدِّثُنِي عَنْ حَارِثَةَ، وَكَانَ قُتِلَ يَوْمَ بَدْرٍ أَصَابَهُ سَهْمٌ غَرْبٌ، فَإِنْ كَانَ فِي الجَنَّةِ صَبَرْتُ، وَإِنْ كَانَ غَيْرَ ذَلِكَ، اجْتَهَدْتُ عَلَيْهِ فِي البُكَاءِ، قَالَ: «يَا أُمَّ حَارِثَةَ إِنَّهَا جِنَانٌ فِي الجَنَّةِ، وَإِنَّ ابْنَكِ أَصَابَ الفِرْدَوْسَ الأَعْلَى») رواه البخاري، وأحمد ، والطبراني، والبيهقي .
হাদীস নং-২৬
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, হারেসা ইবনে সুরাকার মা, উম্মে রুবাইয়ে বিনতে বারা রাযি. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হারেসার ব্যাপারে আমাকে সংবাদ দিবেন কি? হারেসা বদরের যুদ্ধে একটি অজ্ঞাত তীরের আঘাতে নিহত হয়েছে। যদি জান্নাতে থাকে তাহলে আমি ধৈর্য্য ধারণ করবো আর যদি ভিন্ন কিছু হয় তাহলে আমি তার জন্য খুব কাঁদবো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে হারেসার মা! জান্নাতে অনেকগুলো স্তর আছে। তোমার ছেলে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর ফিরদাউস লাভ করেছে। -বুখারী, আহমদ।
سهم غريب এর ব্যাখ্যা : ইবনুল আসীর রহ . বলেন, سهم غريب হলো ঐ তীর যার নিক্ষেপকারী কে তা জানা যায়নি।
হাদীসের শিক্ষা:
১. শাহাদাতের সময় হারেসা রাযি. নাবালেগ বাচ্চা ছিলেন, সুতরাং বুঝা গেল, শহীদ যেভাবেই শহীদ হোক না কেন, সে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা লাভ করবে।
২. পিতা-মাতার উচিত, জীবিত অবস্থায় তাকে যথাযথ তরবিয়ত করা আর মারা গেলে তাকে স্মরণ করা, ইছালে সাওয়াব করা; কোন ওছিয়ত থাকলে তা পূর্ণ করার চেষ্টা করা।
الحديث السابع والعشرون: عَنْ أُمِّ حَرَامٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «الْمَائِدُ فِي الْبَحْرِ الَّذِي يُصِيبُهُ الْقَيْءُ لَهُ أَجْرُ شَهِيدٍ، وَالْغَرِقُ لَهُ أَجْرُ شَهِيدَيْنِ») رواه أبو داود، والطبراني، والبيهقي، والحميدي عنها بلفظ قَالَتْ: ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُزَاةَ الْبَحْرِ لِلْمَائِدِ أَجْرُ شَهِيدٍ، وَلِلْغَرِيقِ أَجْرُ شَهِيدَيْنَ ” قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ، قَالَ «اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا مِنْهُمْ» فَغَزَتِ الْبَحْرَ فَلَمَّا خَرَجَتْ رَكِبَتْ دَابَّتَهَا فَسَقَطَتْ فَمَاتَتْ)
হাদীস নং-২৭
উম্মে হারাম রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নদীতে মাথা চক্করে আক্রান্ত ব্যক্তির যদি বমি হয় এবং এতে সে মারা যায়, তাহলে সে একজন শহীদের সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যাবে সে দু’জন শহীদের সাওয়াব পাবে। এ শব্দে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ, তাবারানী, বাইহাকী। আর হুমাইদী রহ. উম্মে হারাম থেকে একটু ভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সমূদ্রে জিহাদকারীদের ব্যাপারে আলোচনা করলেন এবং বললেন, সমুদ্রে মাথা চক্করে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি একজন শহীদের সাওয়াব পাবে আর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে মৃত ব্যক্তি পাবে দুজন শহীদের সাওয়াব। উম্মে হারাম বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করুন তিনি যেন আমাকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! উম্মে হারামকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। পরবর্তীতে তিনি সামুদ্রিক অভিযানে বের হলেন এবং নিজ বাহনে আরোহন করলেন। অতঃপর তা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু বরণ করলেন।
হাদীসের শিক্ষা:
সাহাবায়ে কেরাম সকলেই শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদার জন্য উদগ্রীব ছিলেন, নারী সাহাবীরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিলেন না। সুতরাং আমাদেরও উচিত শাহাদাতের তামান্না অন্তরে জাগরুক রাখা এবং যথাযথ চেষ্টা অব্যাহত রাখা। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দিন! আমীন।
জান্নাতের বাড়ীগুলো শহীদদের জন্যই বরাদ্দ:
الحديث الثامن والعشرون: عَنْ سَمُرَةَ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” رَأَيْتُ اللَّيْلَةَ رَجُلَيْنِ أَتَيَانِي، فَصَعِدَا بِي الشَّجَرَةَ فَأَدْخَلَانِي دَارًا هِيَ أَحْسَنُ وَأَفْضَلُ، لَمْ أَرَ قَطُّ أَحْسَنَ مِنْهَا، قَالَا: أَمَّا هَذِهِ الدَّارُ فَدَارُ الشُّهَدَاءِ “) رواه البخاري .
হাদীস নং-২৮
সামুরা ইবনে জুনদুব রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম দুইজন লোক আমার নিকট এসে আমাকে নিয়ে একটি গাছে আরোহন করলো এবং আমাকে এমন একটি বাড়িতে নিয়ে গেল যা ছিল সর্বোৎকৃষ্ট এবং সবচেয়ে সুন্দর। এর মতো বাড়ী ইতিপূর্বে আমি কখনোও দেখিনি। অতঃপর তাঁরা বললেন, এই বাড়িটি হল শহীদদের বাড়ি। -বুখারী
হাদীসের শিক্ষা:
আসুন আমরা শহীদদের মর্যাদা সম্পর্কে একটু চিন্তা করি এবং নিজেদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করি। হাফেজ হওয়ার জন্য, আলেম হওয়ার জন্য, ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য যেমন সুনির্দিষ্ট পথে চলতে হয়; ঠিক তেমনি ভাবে শহীদ হওয়ার জন্যও শাহাদাতের পথে চলতে হয়। আর শাহাদাতের পথ হল জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
শাহাদাতের পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভের জন্য সওয়াবের নিয়তে দৃঢ়পদ থেকে জিহাদ অব্যাহত রাখা আবশ্যক এবং হক্কুল ইবাদ থেকে মুক্ত থাকা অপরিহার্য:
الحديث التاسع والعشرون: عن أَبي قتادة – رضي الله عنه: أنَّ رسولَ اللهِ – صلى الله عليه وسلم – قَامَ فِيهِم فَذَكَرَ أنَّ الجِهَادَ في سَبيلِ اللهِ، وَالإيمَانَ بِاللهِ، أفْضَلُ الأعْمَالِ، فَقَامَ رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا رسولَ اللهِ، أرأيْتَ إنْ قُتِلْتُ في سَبيلِ اللهِ، أتُكَفَّرُ عَنِّي خَطَايَايَ؟ فَقَالَ لهُ رسول الله – صلى الله عليه وسلم: «نَعَمْ، إنْ قُتِلْتَ في سَبيلِ الله وَأنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيْرُ مُدْبِرٍ»، ثُمَّ قَالَ رسول الله – صلى الله عليه وسلم: «كيْفَ قُلْتَ؟» قَالَ: أرَأيْتَ إنْ قُتِلْتُ في سَبيلِ اللهِ، أتُكَفَّرُ عَنِّي خَطَايَايَ؟ فَقَالَ رسول الله – صلى الله عليه وسلم: «نَعَمْ، وَأنْتَ صَابرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيرُ مُدْبِرٍ، إِلَاّ الدَّيْنَ فَإنَّ جِبْريلَ – عليه السلام – قَالَ لِي ذَلِكَ») رواه مالك، وأحمد، ومسلم، والنسائي، وغيرهم .
হাদীস নং-২৯
আবু কাতাদা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবায়ে কেরামের মাঝে নসীহাত করার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন। তিনি তাদেরকে বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা সর্বোত্তম আমল।’
এক লোক দাড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি আল্লাহ তাআলার পথে নিহত হই তাহলে কি আমার গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলা তোমার গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। যদি তুমি দৃঢ়পদ থেকে সওয়াবের নিয়তে জিহাদ করে থাক। একটু পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কী যেন বললে? লোকটি বললেন, আমি আল্লাহর পথে নিহত হলে আমার গুনাহসমূহ মাফ হবে কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, যদি তুমি সাওয়াবের নিয়তে দৃঢ়পদ থেকে যুদ্ধ অব্যাহত রাখ তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমাকে মাফ করে দিবেন। তবে কর্য (ঋণ) মাফ করবেন না। এই মাত্র জিব্রাঈল আ. আমাকে এটা বলে গেলন। -মালেক, আহমাদ, মুসলিম, নাসায়ী।
الحديث الثلاثون: عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ «يُغْفَرُ لِلشَّهِيدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلَّا الدَّيْنَ») رواه أحمد، ومسلم، وفي لفظ له: («الْقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللهِ يُكَفِّرُ كُلَّ شَيْءٍ، إِلَّا الدَّيْنَ»)
হাদীস নং-৩০
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শহীদের সব গুনাহই মাফ হবে; তবে ঋণ মাফ হবে না।
হাদীস দুটির শিক্ষা:
মানুষের নিকট সবচেয়ে প্রিয় তার জীবন, আর শাহাদাত অর্জিত হয় আল্লাহর পথে এই জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমেই। কুরআন হাদীসের বর্ণনা মতে শাহাদাতের মর্যাদা অপরিসীম। নবী-রাসূলদের পরই শহীদের মর্যাদা। সুতরাং আমাদের উচিত এমন সব বিষয়াদি থেকে মুক্ত থাকা, যার কারণে শাহাদাতের মর্যাদাপ্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত হয়। বিশেষভাবে ঋণ থেকে বেঁচে থাকা। কেননা তা ‘হক্কুল ইবাদের’ অর্ন্তভুক্ত, যা সাধারণত আল্লাহ তাআলা মাফ করেন না। তবে এই অজুহাতে জিহাদ থেকে দূরে থাকার কোন অবকাশ নেই। যদি কোন কারণবশত ঋণ থেকেই যায় তাহলে পরিশোধ করার দায়িত্ব আমিরুল মুমিনীনের। যদি সে সুযোগও না থাকে তাহলে ওসিয়ত করে যেতে হবে অথবা ঋণদাতা থেকে ক্ষমা নিয়ে নিতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন এবং কবুল করুন!
বান্দার সততার সুফল আল্লাহর সততা:
الحديث الحادي والثلاثون: عَنْ أَبِي قَتَادَةَ أَنَّهُ حَضَرَ ذَلِكَ قَالَ: أَتَى عَمْرُو بْنُ الْجَمُوحِ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَرَأَيْتَ إِنْ قَاتَلْتُ فِي سَبِيلِ اللهِ حَتَّى أُقْتَلَ أَمْشِي بِرِجْلِي هَذِهِ صَحِيحَةً فِي الْجَنَّةِ؟، وَكَانَتْ رِجْلُهُ عرْجَاءَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” نَعَمْ “. فَقَتَلُوهُ (1) يَوْمَ أُحُدٍ هُوَ وَابْنُ أَخِيهِ وَمَوْلًى لَهُمْ، فَمَرَّ عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: ” كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْكَ تَمْشِي بِرِجْلِكَ هَذِهِ صَحِيحَةً فِي الْجَنَّةِ “. فَأَمَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهِمَا وَبِمَوْلَاهُمَا فَجُعِلُوا فِي قَبْرٍ وَاحِدٍ) رواه أحمد، قال الهيثمي: رواه أحمد، ورجاله رجال الصحيح غير يحيى بن نصر الأنصاري وهو ثقة، وقال ابن حجر في الفتح: إسناده حسن، ورواه أيضا ابن عبد البر في التمهيد.
হাদীস নং-৩১
হযরত আবু কাতাদা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমর ইবনে জামুহ রাযি. (তাঁর একটি পা খোঁড়া ছিল) রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি যদি আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহীদ হই তাহলে কি আমি আমার এ পা দিয়ে ভালভাবে চলতে পারব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর উহুদের দিন তিনি, তার একজন চাচাতো ভাই এবং তাদের একজন গোলাম শহীদ হলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম তার লাশের পাশে দিয়ে অতিক্রম কালে তাকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি তোমাকে দেখছি তুমি তোমার এই পা দিয়ে জান্নাতে ভাল ভাবে হাটছ। -আহমদ, তামহীদ।
আল্লাহ তাআলার নিকট জিহাদের ময়দানে প্রতিটি জখমের মূল্যই অপরিসীম আর শাহাদাতের মূল্য বর্ণনাতীত:
الحديث الثاني والثلاثون: عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ. «لَا يُكْلَمُ أَحَدٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَنْ يُكْلَمُ فِي سَبِيلِهِ، إِلَّا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَجُرْحُهُ يَثْعَبُ دَمًا. اللَّوْنُ لَوْنُ دَمٍ وَالرِّيحُ رِيحُ الْمِسْكِ») رواه مالك، وأحمد، والبخاري، ومسلم .
হাদীস নং-৩২
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার পথে আহত হবে (আর আল্লাহ তাআলাই তার পথে আহতদের ব্যাপারে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন) কেয়ামতের দিন সে যখন উঠবে তখন তার যখম থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে আর এর রং তো হবে রক্তের রং তবে তার ঘ্রাণ হবে মেশকের ঘ্রাণ। মালেক, আহমাদ, বুখারী, মুসলিম।
হাদীসের শিক্ষা:
সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর পথে সামান্য যখমও কত মূল্যবান। তবে তার জন্য আমাদের নিয়ত ছহীহ করে নিতে হবে। ঈমানের পর জিহাদই একমাত্র ইবাদত যা অল্প হলেও মহা সৌভাগ্যের পথ উন্মুক্ত করে দেয়।
আমল অল্প হলেও প্রতিদান অনেক:
الحديث الثالث والثلاثون: وعن البَراءِ – رضي الله عنه – قَالَ: أتَى النبيَّ – صلى الله عليه وسلم – رَجُلٌ مُقَنَّعٌ بالحَدِيدِ، فَقَالَ: يَا رسولَ اللهِ، أُقَاتِلُ أَوْ أُسْلِمُ؟ قَالَ: «أَسْلِمْ، ثُمَّ قَاتِلْ». فَأسْلَمَ، ثُمَّ قَاتَلَ فَقُتِلَ. فَقَالَ رسولُ اللهِ – صلى الله عليه وسلم: «عَمِلَ قَلِيلًا وَأُجِرَ كَثِيرًا») رواه البخاري- واللفظ له- ومسلم .
হাদীস নং-৩৩
হযরত বারা ইবনে আযেব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একজন লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধ করব নাকি ইসলাম গ্রহণ করবো? রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগে ইসলাম গ্রহন কর এরপর যুদ্ধ কর। কথামত লোকটি আগে ইসলাম গ্রহণ করলো এরপর যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই শহীদ হয়ে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি অল্পই আমল করতে পেরেছে; কিন্তু অসীম সৌভাগ্য অর্জন করে নিয়েছে। -বুখারী, মুসলিম।
জালেম বাদশার সামনে সত্য উচ্চারণের কারণে নিহত ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ:
الحديث الرابع والثلاثون: وعن جابر رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: “سيدُ الشهداء حمزة بن عبد المطلب، ورجلٌ قام إلى إمامٍ جائرٍ فأمرهُ ونهاهُ، فقتله”) رواه الحاكم وصحح إسناده، وتعقبه الذهبي بقوله: الصفار لا يدرى من هو. والخطيب في (تاريخ بغداد 155/3) والطبراني في الأوسط عن ابن عباس، وقال الهيثمي في المجمع: رواه الطبراني في الأوسط وفيه شخص ضعيف في الحديث .
হাদীস নং-৩৪
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ হল হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এবং ঐ ব্যক্তি যে কোন জালিম শাসকের সামনে সত্য উচ্চারণ করে তাকে সৎ কাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজ থেকে বারণ করে ফলে ঐ জালিম তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।
এই হাদীসটি হাকিম রহ বর্ণনা করে বলেছেন এটি সহীহ; কিন্তু যাহাবী রহ. বলেন সফ্ফার নামক বর্ণনাকারীর পরিচয় জানা নেই। খতীবে বাগদাদী রহ. তারীখে বাগদাদে ইবনে আব্বাস থেকেও বর্ণনা করেছেন এবং তাবরানী রহ. আল আওসাতে বর্ণনা করেছেন। হাইছামী রহ. মাজমাউয যাওয়ায়েদে বলেন, হাদীসটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন; তবে বর্ণনাকারীদের মধ্যে একজন দুর্বল বর্ণনাকারী আছে। (তবে একাধিক বর্ণনা থাকার কারণে হাদিসটি হাসান লিগাইরিহী। তাই এটি গ্রহণযোগ্য।)
হাদীসের শিক্ষা:
সত্য বলার কারণে নিহত ব্যক্তির মর্যাদা অপরিসীম। উক্ত ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কাছে শ্রেষ্ঠতম শহীদ বলে বিবেচিত। তাই আমাদের ও উচিত সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার প্রতি মনোনিবেশ করা। আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন।
হত্যাকারী এবং নিহত উভয়েই যখন জান্নাতী:
الحديث الخامس والثلاثون: عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَضْحَكُ اللهُ إِلَى رَجُلَيْنِ، يَقْتُلُ أَحَدُهُمَا الْآخَرَ كِلَاهُمَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ»، فَقَالُوا: كَيْفَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: «يُقَاتِلُ هَذَا فِي سَبِيلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فَيُسْتَشْهَدُ، ثُمَّ يَتُوبُ اللهُ عَلَى الْقَاتِلِ، فَيُسْلِمُ، فَيُقَاتِلُ فِي سَبِيلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فَيُسْتَشْهَدُ») رواه مالك، وأحمد، والبخاري، ومسلم وغيرهم .
হাদীস নং-৩৫
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এমন দুই ব্যক্তিকে দেখে আল্লাহ তাআলা হাসেন, যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করেছে, অতঃপর তারা উভয়েই জান্নাতী হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা আবার কীভাবে সম্ভব? রাসূল সাল্লাল্লাহু বাল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রথম ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহীদ হল, এরপর আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীকে হেদায়াত দান করলেন ফলে ইসলাম গ্রহণ করল অতঃপর জিহাদ করতে করতে শহীদ হয়ে গেল। -বুখারী, মসলিম, মুয়াত্তায়ে মালেক, মুসনাদে আহমদ।
হাদীসের শিক্ষা:
১. আল্লাহ তাআলা তাঁর মত করে হাসেন। ২. শাহাদাত জান্নাত লাভের অন্যতম উপায় এবং শাহাদাতের ফযিলত অসীম।
৩. ইসলাম তার পূর্বের সব ভূলত্রুটিকে মুছে দেয়।
৪. হেদায়াত আল্লাহ তাআলার হাতেই।
৫. এই ফজিলত শুধু মুখলিস মুজাহিদই লাভ করবে।
৬. বন্ধুত্বের মাপকাঠি ঈমান এবং ইসলাম। সুতরাং কাফের অবস্থায় যে লোকটি জানের দুশমন ছিল ঈমান আনার পর সে লোকটিই অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয় এবং সে আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
৭. যথা সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদিতে প্রশ্ন করা চাই।
আন্তরিকভাবে শাহাদাত কামনা করেও এর মর্যাদা পওয়া যায়:
الحديث السادس والثلاثون: عن سَهْلِ بْنِ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، حَدَّثَهُ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ سَأَلَ اللهَ الشَّهَادَةَ بِصِدْقٍ، بَلَّغَهُ اللهُ مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ، وَإِنْ مَاتَ عَلَى فِرَاشِهِ») رواه أحمد، ومسلم، وأبو داود، والترمذي، والنسائي، وابن ماجه.
হাদীস নং-৩৬
সাহল ইবনে হুনাইফ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে শাহাদাত কামনা করবে সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে, যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে। -মুসনাদে আহমদ, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ।
হাদীসের শিক্ষা:
১. আল্লাহ তাআলা সবকিছুই জানেন। তাঁর কাছে কিছুই গোপন থাকেনা।
২. আন্তরিকতার মর্যাদা অনেক। ইমাম মানাভী রহ. বলেন, ঐ প্রার্থনাই ধর্তব্য যা আন্তরিকতার সাথে হয়। এটাই আমলের মাপকাঠি এবং বরকত লাভের উপায়। আন্তরিকতার মাধ্যমেই আমলের ফলাফল লাভ হয়।
৩. আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ সীমাহীন।
৪. শাহাদাতের কামনা থাকা চাই এবং আন্তরিক ভাবে তার জন্য দোআ করাও কাম্য
৫. নেক আমলের উপর অবিচলতা আবশ্যক এবং তা বাস্তবায়নের নিয়ত রাখা চাই। কখনো কখনো নিয়তের দ্বারা মানুষ ঐ স্তরে উপনীত হতে পারে আমলের দ্বারা যে স্তরে উপনীত হওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাজুদ্দীন সুবকী রহ. বলেন, আমরা এমনটাই বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তাআলা তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করবেন তার ইচ্ছা ও প্রার্থনার কারণে এবং সে এতে অক্ষম হওয়ার কারণে।
কারো বাহ্যিক অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে তাকে শহীদ বলা যেতে পারে তবে জোড় দিয়ে বলা যাবে না:
الحديث السابع والثلاثون: عن عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، قَالَ: لَمَّا كَانَ يَوْمُ خَيْبَرَ، أَقْبَلَ نَفَرٌ مِنْ صَحَابَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: فُلَانٌ شَهِيدٌ، فُلَانٌ شَهِيدٌ، حَتَّى مَرُّوا عَلَى رَجُلٍ، فَقَالُوا: فُلَانٌ شَهِيدٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَلَّا، إِنِّي رَأَيْتُهُ فِي النَّارِ فِي بُرْدَةٍ غَلَّهَا – أَوْ عَبَاءَةٍ -» ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا ابْنَ الْخَطَّابِ، اذْهَبْ فَنَادِ فِي النَّاسِ، أَنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا الْمُؤْمِنُونَ»، قَالَ: فَخَرَجْتُ فَنَادَيْتُ: أَلَا إِنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا الْمُؤْمِنُونَ) رواه أحمد، ومسلم، وابن حبان .
হাদীস নং-৩৭
ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খাইবারের দিন একদল সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করলেন এবং বললেন, অমুক শহীদ, অমুক শহীদ। এক পর্যায়ে তারা এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং বললেন, অমুক শহীদ। একথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কখনো না। সে শহীদ নয় বরং আমি তাকে একটি চাদর বা আবা গনীমতের মাল থেকে বণ্টনের আগে নেওয়ার কারণে জাহান্নামে দেখছি। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! যাও, লোকদের মাঝে এলান করেদাও যে, মুমিন ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তিনি বলেন, এরপর আমি লোকদের মাঝে গেলাম এবং এলান করলাম- জেনে রাখ! মুমিন ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। -মুসলিম, আহমদ, ইবনে হিব্বান।
الغلول শব্দের অর্থ: ইবনুল আছীর রহ. বলেন, الغلول (গুলুল) হল- গনীমতের মালে খেয়ানত করা বা বণ্টন করার পূর্বেই গনীমতের মালে হস্তক্ষেপ করা।
হাদীসের শিক্ষা:
১. কোন প্রমাণ না থাকলে মুসলমান নিহত ব্যক্তিকে শহীদ বলতে বাধা নেই; বরং তাকে শহীদ বলে অভিহিত করাই উত্তম।
২. গনীমতের মালে অবৈধ হস্তেক্ষেপ বড় গুনাহ। তা শাহাদাতের ফযিলতকেও নষ্ট করে দেয়। তাই এটা থেকে পরিপূর্ণ বিরত থাকা আবশ্যক।
৩. কোন কিছুর নাম তার বাস্তবতাকে আড়াল করতে পারে না।
৪. শাহাদাতের ফজিলত লাভের জন্য এ পথের প্রতিবন্ধকতাগুলো থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
৫. মুমিনরা ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
ইমাম নববী রহ. বলেন:
ومنها انه لا يدخل الجنة أحد ممن مات على الكفرو هذا بإجماع المسلمين
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি ঈমান ছাড়া মৃত্যু বরণ করবে সে কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। এ ব্যাপারে সকল মুমিনদের ইজমা রয়েছে।
গনীমতের মালে অবৈধ হস্তক্ষেপ খুবই ভয়াবহ ব্যাপার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য তা ধ্বংসাত্মক:
الحديث الثامن والثلاثون: عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ خَيْبَرَ فَلَمْ نَغْنَمْ ذَهَبًا وَلَا وَرِقًا، إِلَّا الْأَمْوَالَ: الثِّيَابَ وَالْمَتَاعَ. قَالَ: فَأَهْدَى رِفَاعَةُ بْنُ زَيْدٍ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُلَامًا أَسْوَدَ، يُقَالُ لَهُ مِدْعَمٌ. فَوَجَّهَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى وَادِي الْقُرَى، حَتَّى إِذَا كُنَّا بِوَادِي الْقُرَى، بَيْنَمَا مِدْعَمٌ يَحُطُّ رَحْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ سَهْمٌ عَائِرٌ. فَأَصَابَهُ فَقَتَلَهُ. فَقَالَ النَّاسُ: هَنِيئًا لَهُ الْجَنَّةُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَلَّا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، «إِنَّ الشَّمْلَةَ الَّتِي أَخَذَ يَوْمَ خَيْبَرَ مِنَ الْمَغَانِمِ لَمْ تُصِبْهَا الْمَقَاسِمُ لَتَشْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا»، قَالَ: فَلَمَّا سَمِعَ النَّاسُ ذَلِكَ، جَاءَ رَجُلٌ بِشِرَاكٍ أَوْ شِرَاكَيْنِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «شِرَاكٌ أَوْ شِرَاكَانِ مِنْ نَارٍ») رواه مالك-واللفظ له- والبخاري، ومسلم .
হাদীস নং-৩৮
আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রিফায়া ইবনে যায়েদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটি কালো গোলাম হাদিয়া দিল। তাকে মিদআ’ম বলা হত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ওয়াদিয়ে কুরা’র দিকে যাওয়ার মনস্থ করলে আমরাও তাঁর সাথে ওয়াদিয়ে কুরায় উপনিত হলাম, মিদআম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাহনটি বসাচ্ছিলেন এমতবস্থায় একটি অজানা তীর এসে তার গায়ে আঘাত করলো। ফলে তিনি নিহত হলেন। লোকেরা বলতে লাগল, তিনি বড়ই সৌভাগ্যবান। সহজেই জান্নাতেবাসী হয়ে গেলেন। একথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কখনো নয়; ঐ সত্তার কসম! যার হাতে আমার জান খাইবারের যুদ্ধে বণ্টনের পূর্বে সে যে জুব্বাটি নিয়ে নিয়েছিল এটাই তাকে জাহান্নামে নিয়ে ছেড়েছে। লোকেরা যখন এ কথা শুনল তখন এক ব্যক্তি একটি বা দুইটি ফিতা নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটি বা দুইটি ফিতাও জাহান্নামে নিয়ে ছাড়বে। -বুখারী, মুসলিম
الحديث التاسع والثلاثون: عَنْ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ” مَنْ فَارَقَ الرُّوحُ الْجَسَدَ، وَهُوَ بَرِيءٌ مِنْ ثَلَاثٍ دَخَلَ الْجَنَّةَ: الْكِبْرِ وَالْغُلُولِ وَالدَّيْنِ “) رواه أحمد، والترمذي، والنسائي، وابن ماجه، والحاكم، والبيهقي .
হাদীস নং-৩৯
ছাওবান রাযি. -রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোলাম- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি জিনিস থেকে মুক্ত অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদয় নিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বিষয় তিনটি হল, ১. অহংকার ২. খিয়ানত ৩. ঋণ। – আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, হাকিম, বাইহাকী।
হাদীস দুটির শিক্ষা :
১. খিয়ানত একটি ভয়বহ গুনাহ। এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। সামান্য খিয়নাতও ক্ষমার যোগ্য নয়। খিয়ানত শাহাদাতের ফযিলতকেও নষ্ট করে দেয়।
২. শাহাদাতের মর্যাদা লাভের জন্য এর শর্তগুলোর প্রতি যত্নবান থাকা আবশ্যক।
৩. জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা অপরিহার্য।
৪. সাহাবায়ে কেরাম রাযি. উপদেশ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন।
৫. অহংকার থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। এটি শাহাদাতের মর্যাদাকেও নষ্ট করে দেয়।
৬. ঋণ এবং মানুষের হক থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।
৭. দুনিয়া থেকে পুত-পবিত্র অবস্থায় যাওয়ার জন্য সর্বদাই চেষ্টা করা আবশ্যক।
হুসনে খাতেমা ( শুভ পরিণাম ) প্রার্থনা:
الحديث الأربعون: عن سهل بن سعد رضي الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِ) رواه البخاري، وأحمد .
হাদীস নং-৪০
সাহল ইবনে সা’দ রাযি: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বশেষ আমলই (ঈমান বা কুফুর, গুনাহ বা তাওবা) সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য নির্ধারণকারী। -বুখারী, আহমদ।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ ﴿١٦٩﴾ فَرِحِينَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِم مِّنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿١٧٠﴾ ۞ يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِينَ ﴿١٧١﴾
‘আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে কর না; বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন দুশ্চিন্তাও নেই। আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।’ সূরা আলে ইমরান: ১৬৯-১৭১
قال أبو حامد الغزالي: -رحمه الله- ولا شرف ذكر الله عزوجل عظمت رتبة الشهادة, لأن المطلوب الخاتمة, ونعني بالخاتمة وداع الدنيا و القدوم على الله الخ .
শাহাদাতের ফজিলতের ব্যাপারে ইমাম গাযালী রহ. এর বক্তব্যের সারকথা: খাতেমা বিল-খায়র (শুভ পরিণাম বা কল্যাণ) এর উপর মৃত্যু লাভের কয়েকটি স্তর হতে পারে।
১. ঈমানের উপর মৃত্যু বরণকরা অর্থাৎ কুফর, শিরক থেকে বেঁচে ইসলামের উপর (মিল্লাতে ইসলামিয়ার উপর) মৃত্যু লাভ করা।
২. ঈমানের সাথে সাথে গুনাহমুক্ত অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় লাভ করা।
৩. এর চেয়ে আরেকটু আগে বেড়ে যিকরুল্লাহ বা আল্লাহর স্মরণের উপর মৃত্যু বরণ করা।
৪. খাইরের সর্বোচ্চ স্তর “শাহাদাত” অর্থাৎ শহীদ হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখিত হাদীসে পরোক্ষভাবে খাইরের সর্বোচ্চ স্তর শাহাদাতের প্রতিই আহ্বান করেছেন। দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার এরচেয়ে উৎকৃষ্ট কোন পথ নেই। (সংক্ষেপিত) ইয়াহয়াউ উলুমিদ্দিন- ২/৮৯-৯১।
و قال العراقي: فإن الإنسان محثوث على أن يختم اعماله بالصالحات في جميع الأمور. فإن الأعمال بالخواتيم, والله اعلم. (طرح التقريب:٨٧٤/٧ )
অর্থ:- ইরাকী রহ. বলেন, মানুষের জন্য দুনিয়া থেকে এমন একটি অবস্থায় বিদায় নেওয়া চাই, যখন সে সার্বিক ভাবে কল্যাণের উপর প্রতিষ্ঠিত। এর কারণ হল শেষ আমল দ্বারাই পরিণাম নির্ধারিত হয়। পরিশেষে আমরা আল্লাহ তাআলার নিকট পরিপূর্ণ মর্যাদাসম্পন্ন শাহাদাতের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় (হুসনে খাতেমা) কামনার দ্বারা এই সংকলনটির ইতি টানছি।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নবী-রাসূল, সিদ্দীক, শহীদ এবং নেক বান্দাদের সাথে জান্নাতুল ফিরদাউসে অবস্থানের সুযোগ করে দিন।
و الحمد الله في الانتهاء كما حمدته في الابتداء. والصلاة والسلام على خاتم الانبياء, وآله وصحابته انجم الاهتداء .
******
I am muslim.