শাম আল্লাহ ব্যাতীত কারো সামনে মাথা নত করবে না – শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ
শাম আল্লাহ ব্যাতীত কারো সামনে মাথা নত করবে না
শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ
ডাউনলোড করুন
পিডিএফ ডাউনলোড
https://banglafiles.net/index.php/s/mdkYZBPWDBEo5XY
https://www.file-upload.com/3p4l5k6zjsd2
https://archive.org/download/ShamWillNotBowDown_201707/Sham%20Will%20Not%20Bow%20Down.pdf
word
https://banglafiles.net/index.php/s/CCWNw5itBbfpwGb
====================================
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]
=====================
শাম আল্লাহ্ ব্যতীত কারো সামনে মাথা নত করবে না!
-শায়খ আইমান আয যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ
অনুবাদ ও প্রকাশনা
শাম[1] আল্লাহ্ ব্যতীত কারো সামনে মাথা নত করবে না!
শায়খ আইমান আয যাওয়াহিরি[2] হাফিজাহুল্লাহ
بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وآله وصحبه ومن والاه
পরম দয়ালু ও অসীম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সমস্ত প্রশংসার মালিক আল্লাহ তায়ালা, এবং শান্তি এবং রহমত বর্ষিত হোক হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবারবর্গ, তার সাহাবায়ে কেরাম এবং তাঁদের উপর যারা তাঁদেরকে অনুসরণ করে, তাঁদের উপর।
সমস্ত দুনিয়ার আমার প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা!
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ!
আল্লাহ আপনাদের উপর শান্তি, দয়া এবং রহমত বর্ষিত করুক।
শুরুতে, আমি শামে আমাদের অধিবাসীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আপনাদের ক্ষত সমস্ত মুসলিম জাতির ক্ষত, এবং আপনাদের ব্যথা সমস্ত মুসলিম জাতির ব্যথা। আমরা আপনাদেরকে সর্বদা আমাদের দোয়ায় স্মরণ রাখি এবং আমারা ইচ্ছা করি আমাদের জানগুলো আপনাদের জন্য উৎসর্গ হয়ে যাক। কিন্তু আমাদেরকে যে জিনিসটি ভুলিয়ে রাখা হয়েছে তা হল এই যে, আমরা একই ক্রুসেডর শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিমগ্ন আছি, যার বিরুদ্ধে আপনারাও লড়াই করছেন, যদিও সেটা অন্য আরেকটি ফ্রন্টে।
হে রিবাত ও জিহাদের ভূমি শামের অধিবাসী আমাদের মুসলিম জাতি!
জেনে রাখুন! আপনাদের শুধু এই কারণেই নিশানা বানানো হচ্ছে যে আপনারা ইসলামের মাধ্যমে শামের ভূমিকে চালাতে চেয়েছন, এবং আন্তর্জাতিক শয়তানিক জোট এটা কখনো গ্রহন করবে না, এবং ইসলামের এই বন্ধনকে বন্ধ করার জন্য কোন প্রচেষ্টাই তারা বাকি রাখবে না।
হে রিবাত ও জিহাদের ভূমি শামের অধিবাসী আমাদের মুসলিম জাতি!
অতএব আপনাদের অবশ্যই ক্রুসেডর ও তাদের রাফিদি এবং নুসাইরি সহযোগীদের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
সুতরাং হে আমাদের শামবাসী! আপনারা অবিচল থাকুন! সত্যিকারের বিজয় আসে ধৈর্যের মাধ্যমে, সহজতা আসে কষ্টের মাধ্যমে, মুক্তি আসে দুঃখ-কষ্টের মাধ্যমে, এবং নিশ্চই বিজয় প্রায় আসে সময়ের ঐকান্তিকতায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تَهِنُوا۟ وَلَا تَحْزَنُوا۟ وَأَنتُمُ ٱلْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
“আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।” (আল ইমরান- ৩ : ১৩৯)
আপনারাই হলেন তাঁরা, যারা আল্লাহর পথ জিহাদকে বেছে নিয়েছেন শামের ভূমিতে ইসলামের পতাকাকে উঁচু করা এবং শামকে অত্যাচারী, স্বৈরশাসক এবং দুর্নীতি থেকে মুক্ত করার জন্য। সুতরাং তা পরিত্যাগ করবেন না! দ্বিধাগ্রস্ত হবেন না! আর আপসেও যাবেন না! সম্মানের সাথে মরণকে বরণ করুন, কিন্তু কখনো অপমানকে গ্রহন করবেন না! আপনাদের জন্য আবশ্যক হল আপনারা শামে আপনাদের মুসলমান ও মুজাহিদিন ভাইদের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকুন এবং কাছাকাছি থাকুন! শুধু শাম নয়, বরং সমস্ত দুনিয়ার মুসলমান ও মুজাহিদদের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকুন! কেননা এটা হল একটি ক্রুসেড যুদ্ধ, যা শুরু হয়েছে সমস্ত দুনিয়ার মুসলিমদের বিরুদ্ধে।
হে আমাদের শামের ভাইয়েরা!
আবু রিগালের[3] সন্তানদের ব্যপারে সতর্ক থাকবেন! যারা শামের জিহাদকে সিরিয়ার একটি জাতীয় সংগ্রাম হিসেবে পরিচয় করিয়ে আপনাদের জিহাদকে কিনে নিতে চায়, ফলে আন্তর্জাতিক নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও খুশি হবে, এটা সম্পূর্ণভাবে কুরআনের বিপরীত, যা কুরআন পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছে-
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ ٱلْيَهُودُ وَلَا ٱلنَّصَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْۗ
ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। (সুরা বাকারাহ ২ : ১২০)
হে আমাদের শামের অধিবাসী ভাইয়েরা!
আমি আমাকে এবং আপনাদেরকে কিছু উপদেশ দিতে চাই।
প্রথমঃ আমাদের অবশ্যই ক্রমাগত আমাদের কর্মের পর্যালোচনা করতে হবে, এবং সবকিছুকে জয় করতে সক্ষম হওয়া থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা কখনো হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীদের মত শ্রেষ্ঠ হতে পারব না, যাদেরকে বিজয় দেয়া হয়নি যখন তারা অবাধ্য হয়েছিলেন। সংকটপূর্ণ সময়ের পূর্ণমূল্যায়ন এবং ভুলকে শুধরে নেওয়াই হল বিজয়ের পথে প্রথম ধাপ।
দ্বিতীয়ঃ আমার মতে, শামের জিহাদ অবশ্যই গেরিলা যুদ্ধ অনুযায়ী হবে যা শত্রুকে নামিয়ে আনবে এবং মৃত্যুর রক্তে রঞ্জিত করবে। সীমা অতিক্রমকারী এবং অহংকারীদের বিরুদ্ধে এটাই ছিল প্রত্যক যুগের নির্যাতিত এবং নিপীড়িতদের অস্ত্র। নিজেদের ধোঁকায় ফেলবেন না এলাকা দখলের চিন্তার মাধ্যমে, বরং শত্রুদের নীতিকে ধ্বংস করার দিকে লক্ষ্য স্থির করুন! নির্মম আঘাত এবং অপূরণীয় ক্ষতি সাধনের দ্বারা শত্রুর সেনাদের নিয়ে যান হতাশার অতল গহবরে!
তৃতীয়ঃ শামের ফায়সালা সমগ্র মুসলিম জাতির ফায়সালা। আমরা অবশ্যই এটাকে ছোট করে শুধু শামের উদ্দেশ্য বলে উপস্থাপন করবে না, এবং তারপর আরো অধিক ছোট করে শুধু সিরিয়ার সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করবে না, কেননা এটাই হল শত্রুদের অবিকল পরিকল্পনা এবং তাদের উদ্দেশ্য আদায়ের পর এটাই তাদের চাওয়া।
শত্রুরা চায় শামের জিহাদকে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্য থেকে পরিবর্তন করে কেবলমাত্র সিরিয়ার জাতীয় উদ্দেশ্য বলে প্রচার করা, তারপর জাতীয় ইস্যু থেকে পরিবর্তন করে নির্দিষ্ট অঞ্চল এবং এলাকা বলে, সর্বশেষ এটাকে আরো নামিয়ে কিছু শহর, গ্রাম এবং প্রতিবেশীর ইস্যু বলে প্রচার করা। এটা আমাদের উপর দায়িত্ব যে এই ধরনের শয়তানি পরিকল্পনার মুখোমুখি হওয়া এই ঘোষনার মাধ্যমে যে শাম তথা সিরিয়ার জিহাদ সমস্ত মুসলিম উম্মাহর জিহাদ, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করা। এটা অবশ্যই সমস্ত মুসলিম জাতিকে একত্র করবে এবং শামের জিহাদে তাঁদের সন্তানদের, সম্পদ, প্রচেষ্টা, ও শক্তিকে সাথে নিয়ে অংশগ্রহণ করতে সাহস জোগাবে।
আর আমরা যেন ভুলে না যাই যে, ইতিহাসে যারা শাম তথা সিরিয়াকে রক্ষা করেছিলেন তারা আর কেউ সিরিয়ান নন যেমনঃ সালাহুদ্দিন[4], কুতয[5], বাইবারস[6], মুহাম্মাদ বিন কালাউন[7], এবং উসমানী তুর্কী শাসকেরা[8], বরং তাঁরা ছিলেন অন্য যে কোন কিছুর পূর্বে মুসলিম ও মুজাহিদ।
আমারা কোনভাবেই ঝুঁকব না সন্ত্রাসীদের লিডারদের নির্দেশের দিকে, যারা আমাদেরকে দুর্বল করতে চায় “সন্ত্রাসী” এবং “কঠরপন্থি” অপবাদ দিয়ে। এরা সেই একই শক্তি যারা মুহাম্মাদ মুরসিকে পর্যন্ত ছেড়ে দেয়নি, যদিও সত্য হল, সে তাদেরকে সবকিছুই দিয়েছে যা তারা চেয়েছে।
আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি যে আল্লাহ আমাদের শামের অধিবাসীদের অবিচল ও শক্ত থাকার তৌফীক দান করুন! আল্লাহ তাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন! সাহায্য এবং বিজয় দান করুন, এবং তাদেরকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের ওই সকল মুজাহিদিন ভাইদের সাথে দাঁড়ানোর তৌফীক দান করুন, যারা সমস্ত দুনিয়ায় একটি একত্রিত শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।
এবং আমাদের সর্বশেষ দোয়া হল যে, সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার জন্য, এবং শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক আমাদের নেতা মুহাম্মদ, তাঁর পরিবারবর্গ, এবং সাহাবায়ে কেরামের উপর।
শান্তি, দয়া এবং রহমত বর্ষিত হোক আপনাদের উপর।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين ، وصلى الله على سيدنا محمد وآله وصحبه وسلم والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته.
[1] আরবি ভাষায় সিরিয়াকে বলা হয় ‘শাম বা বিলাদুশ শাম’। অবশ্য হাদিসের কিতাবে যাকে ‘বিলাদুশ শাম’ বলা হয়েছে, আজকের সিরিয়া তার থেকে ভিন্ন। মূলত বর্তমানে ওই পরিভাষার মধ্যে পাঁচটি দেশের অন্তর্ভুক্তি দেখা যায়। দেশগুলো হচ্ছে, সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, মিসর ও ফিলিস্তিন। ভূ-মধ্যসাগরের তীরবর্তী এই দেশটির একদিকে রয়েছে ইরাক, তুরস্ক ও লেবানন এবং অন্যদিকে জর্দান ও ইসরঈল। এখানে আছে উর্বর সমভূমি, আছে উঁচু-নিচু পাহাড় এবং মরুভূমি। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি প্রাচীনকাল থেকে ভিন্নমতাবলম্বী নানা জাতি-গোষ্ঠীর বসবাসে সমৃদ্ধ। মুসলমান, শিয়া, কুর্দি, আর্মেনিয়, আসিরিয়, দ্রুজ ও খৃস্টানরা এখানে কয়েক শতাব্দীব্যাপী বসবাস কত্রে আসছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানি খেলাফতের পরাজয়ের পর ব্রিটিশ ও ফরাসির যৌথপ্রযোজনায় ‘বিদুশ শাম’কে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি পিটার ম্যান্সফিল্ড ‘দ্য আরবস’ বইয়ে লিখেছেন, ‘কায়রোর এক চায়ের টেবিলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল কলমের এক খোঁচায় জর্দান নামের একটি দেশের জন্ম দেন’। অথচ আরববিশ্বের ইতিহাস ঘেঁটে ওই নামে কোনো দেশ বা ভূখণ্ডের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। ওই সময় বিশাল একটি দেশকে পরাশক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। ফিলিস্তিন অংশ ইহুদিদেরকে বসানো হয়। লেবাননে চালু হয় গোত্রভিত্তিক শাসন। সিরিয়ার বর্তমান ভূখণ্ড ন্যস্ত হয় ফরাসি দখলদারির অধীনে এবং মিসরের নিয়ন্ত্রণভার থাকে ব্রিটিশের হাতে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সিরিয়া ১৯৪৬ সালে ফরাসি উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভে সমর্থ হয়। কিন্তু ভূখন্ড গত স্বাধীনতা মিললেও ফরাসির তৈরি সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বিরোধ দেশটিকে অস্থিতিশীল করে রাখে। সামাজিক বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ১৯৬৩ সালে সেকুলার ‘ বাথ পার্টি রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নেয়। দলটি মূলত গঠিত ছিল ‘নুসাইরি’ শিয়াদের দিয়ে। যাদের একটি গোত্র হচ্ছে, ‘আলাওয়াইত’ গোত্র। ‘আলাওয়াইত’ শব্দের অপভ্রংশ হচ্ছে, ‘আলাভি’। বর্তমানে সিরিয়া-প্রশাসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে, আলাভি গোত্রের লোকজন। সেনাবাহিনীও পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে।
[2] ১১ সেপ্টম্বরের হামলার পর আমেরিকা আল-কায়েদার সন্দেহভাজন যে কয়েকজন সদস্যের নাম প্রকাশ করেছিলো এদের মধ্যে প্রথম নাম হচ্ছে শায়খ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ’র, দ্বিতীয় নাম হচ্ছে আমীরুল মুজাহিদীন হাকীমুল উম্মাহ শায়খ আইমান আজ জাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ। যাঁকে আল-কায়েদার মগজ বলা হয়। শায়খ আইমান হাফিজাহুল্লাহের বাপারে খুব-ই কমই প্রকাশিত হয়েছে এজন্য লোকেরা কম জানে। প্রখর মেধা, বিচক্ষণতা, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার জন্যে মুজাহিদদের মধ্যে হাকীমুল উম্মাহ (উম্মতের চিকিৎসক) উপাধিতে প্রসিদ্ধ। শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ’র ডানহাত এবং আল-কায়েদার নীতি নির্ধারক হিসেবে প্রসিদ্ধ।
জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ তিনি আবু আব্দুর রাহমান আইমান বিন মুহাম্মদ আজ-জাওয়হিরি ১৫ রমজান ১৩৭০ হিজরি মোতাবেক ১৯৫১ সালে কায়রোর মুয়াদী এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর দাদা জাওয়াহিরি জামেয়া আজহারের একজন শায়খ ছিলেন। নানা ডাক্তার আব্দুল ওয়াহহাব আযযাম ছিলেন আলাবে শারকিয়াহের শিক্ষক, সাহিত্য কলেজের অধ্যক্ষ এবং কায়রো ইউনিভার্সিটির প্রধান। তিনিই আল্লামা ইকবালের কবিতাকে আরবিতে রূপান্তর করেন, আরবি কবি মুতানাব্বীর কবিতার ব্যাখ্যাসহ আরো অনেক গ্রন্থের রচয়িতা। তাঁর পিতা মুহাম্মদ রাবে’ আজ-জাওয়াহিরি ছিলেন আইনে শামস ইউনিভার্সিটির চিকিৎসা কলেজের শিক্ষক এবং মিশরের প্রসিদ্ধ ডাক্তার। তাঁর মামা সাশিম আযযাম ছিলেন ইউরোপ ইসলামিক বোর্ডের সেক্রেটারি, অন্য মামা মাহফুজ আযম মিশরের শ্রমপার্টির প্রধান। শায়েখের শফশব বেড়ে ওঠে একটি ইসলামি পরিবেশে, বাল্যকাল থেকেই তিনি মসজিলে সালাত আদায়ে আগ্রহী ছিলেন, বিভিন্ন দারস ও ইলমি হালকায়ে উপস্থিত হতেন, পড়ালেখায় মনোযোগী, খেলাধুলা ও বন্ধুদের থেকে দূরে থাকতেন।
শিক্ষাদীক্ষাঃ শায়খ হানী আস-সিবায়ী হাফিজাহুল্লাহ বলেন, ডাক্তার আইমান আনসারুস সুন্নাহ মসজিদে যাতায়াত করতেন, সেখানে তার সাথীদের সাথে মিলতেন, দ্বীনি দারস শুনতেন এবং তাজবীদের হালকাতে উপস্থিত হতেন, এটাই ছিলো তাঁর সূচনা ; কোনো কোনো হালকাতে কুরআন শরীফ পড়া হত, কোনো কোনো হালকাতে বিভিন্ন শায়খদের কাছ থেকে তাজবীদ শিখা হতো। এরপর তিনি ভাইদেরকে কুরআন ও তাজবীন শিক্ষা দেওয়া শুরু করেন। অতঃপর তাফসীর পড়া শুরু করেন এবং মাকতাবায়ে সালাফিয়্যাহ থেকে প্রকাশিত কিতাবাদি অধ্যয়ন শুরু করেন। প্রচলিত পদ্ধতিতে তাঁর পড়ালেখা একটি সরকারী স্কুল থেকে শুরু হয়। এরপর তিনি মেডিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কাসরে আইনীতে ভর্তি হন, সেখান থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে বের হন। এরপর মাস্টার্স সমাপ্ত করে পাকিস্তানের একটি ইউনিভার্সিটি থেকে সার্জারীতে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁর পরিবার একটি ডাক্তার পরিবার হিসেবে প্রসিদ্ধ। শুধু তাঁর বংশেই আছেন ৪০ জন ডাক্তার।
ইসলামি আন্দোলন ও জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহঃ শায়খ নিজে তাঁর ইসলামি আন্দোলন সম্পর্কে বলেন, ইসলামি আন্দোলনে আমার সূচনা হয় এই জামাআতুল জিহাদ দ্বারা, তখন ছিলো ১৯৬৬ সাল, সায়্যিদ কুতুব শহীদ রাহ’র হত্যার পর এই দলের জন্ম হয়। ১৯৮০ সালের শেষ দিকে ১৯৮১ সালের শুরুর দিকে আমি আফগানিস্তানে সেখানকার পরিস্থিতি কাছ থেকে দেখার জন্যে সফর করি ‘। আফগান থেকে ফেরার পর ১৯৮১ সালের শেষদিকে শায়খকে মিসরের ফেরআউন ইসরাইলের রক্ষক আমেরিকার গোলাম আনোয়ার সাদাতকে হত্যা করার অভিযোগে তাঁর দল জামায়াতুল জিহাদকে সন্দেহ করে শায়খকে গ্রেফতার করা হয়। লাগাতার ৩ বছর কারাগারে বন্দী থাকার পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। এই তিন বছর গভীরভাবে ইসলামি পুস্তকাদি অধ্যয়ন করে চলমান ইসলামি আন্দোলনকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর সৌদী আরবে চলে যান, সেখান থেকে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে তিনি একটি ক্লিনিক খুলেন, যেখায় আফগান মুহাজিরদেরকে ফ্রী চিকিৎসা দিতে থাকেন। এখানেই প্রথমে পরিচিত হন শায়খ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ’র সাথে। এরপর আফগান জিহাদে শরীক হন। এ ব্যাপারে শায়খ নিজে বলেন, “জেল থেকে মুক্তির পর আমি ভাইদেরকে নতুনভাবে জড়ো করা শুরু করি, আমরা সিদ্ধান্ত নেই আফগান রণাঙ্গনকে ট্রেনিংয়ের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে। আল্লাহ এব্যাপারে আমাদেরকে অনেক তাওফিক দেন।
শায়খের সংক্ষিপ্ত জীবনরেখা-
- ১৪০৫ হিজরি (১৯৮৫ সাল) শায়খ পাকিস্তানের আফগান সীমান্তে আহতদের চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকেন।
- ১৪১৩ হিজরি (১৯৯২ সাল) শায়খ উসামা বিন লাদেনের সাথে সুদান হিজরত করেন।
- ১৪১৬ হিজরি। (১৯৯৬ সাল) আফগানিস্তানে তালেবান আধিপত্যের পর ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ ঘোষণার পর হিজরত করেন।
- ১৪১৮ হিজরি (১৯৯৮ সাল) তিনি নিজের দল তানযীমে জিহাদ বিলুপ্ত করে শায়খ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহের নেতৃত্বে অন্যান্য দলের সমন্বয়ে “ আল-জাবহাতুল ইসলামিয়্যাহ আল-আলামিয়্যাহ লিক্বিতালিল ইয়াহুদ ওয়াসসালিবিয়্যীন (ইয়াহুদী-ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জিহাদি ইসলামিক ফ্রন্ট) প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে আল-কায়েদ নামে পরিচিত। শায়খ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহের শাহাদতের পর তিনিই বর্তমানে আমাদের আমীরুল মুজাহিদীনের ভুমিকায় আবির্ভূত হয়েছেন শায়খকে হেফাজত করুন। আমীন।
শায়খের রচনাবলীঃ
- ফুরসানুন তাহতা রায়াতিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঝান্ডাতলের অশ্বারোহী) ৭০০ এর অধিক পৃষ্ঠার আরবিগ্রন্থ। যেখানে শায়খ বিগত ৫০ বছরের বিভিন্ন ইসলামি, জিহাদি দল ও সংগঠনের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় আত্মজীবনী আকারে লিপিবদ্ধ করেছেন।
- আস-সুবহু ওয়াল ক্বিনদীল (প্রভাত এবং নিভুনিভু প্রদীপ) পকিস্তানের সংবিধানকে যারা শরীয়াহ সংবিধান বলেন তাদের জবাবে একটি ইলমি আলোচনা।
- আল-হাসাদুল মুর… ইখওয়ানুল মুসলিমীন ফী সিত্তীনা আমান (তিক্ত অর্জনঃ মুসলিম ব্রাদারহুডের ষাট বছর) ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়ে লিখা।
- এছাড়া রয়েছে ছোটছোট বার্তা ও পুস্তিকা। যেমন- নিশ্চয় ফিলিস্তিন আমাদের এবং প্রত্যেক মুসলমানদের ইস্যু, ত্বাওয়াগীতদের সাথে কথোপকথন, কুদসের পথ কায়রো হয়ে অতিক্রম করবে, আল-ওয়ালা ওয়াল বারা, কুরআনের ঝান্ডাতলে মানুষ ও ভূমির মুক্তি, মুসলমানদের মিসর জল্লাদদের চাবুক এবং গাদ্দার দোসদের হাতে ইত্যাদি।
[3] আরবের ঐতিহাসিক গাদ্দার আবু রিগাল ছিল বনু সাকিফ গোত্রের লোক, যে কুখ্যাত বাদশাহ আবরাহাকে পথপ্রদর্শন করেছিল। ঘটনা হল ৫৭০ বা ৫৭১ খৃষ্টাব্দে ইয়েমেনের বাদশাহ আবরাহা পবিত্র কাবা শরীফ ভাঙ্গার জন্য ৬০ হাজার পদাতিক, ১৩ টি হাতি (অন্য বর্ণনা মতে ১ টি হাতি) সহকারে মক্কার পথে রওয়ানা হয়। পথে প্রথমে যু-নফর নামক ইয়ামনের একজন সরদার আবরদের একটি সেনাদল সংগ্রহ করে তাকে বাধা দেয়। কিন্তু যুদ্ধে সে পরাজিত ও ধৃত হয়। তারপর খাশ’আম এলাকায় নুফাইল ইবনে খাশ’আমী তার গোত্রের লোকদের নিয়ে তার পথ রোধ করে। সেও পরাজিত ও গ্রেফতার হয়ে যায়। সে নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য আবরাহার সেনাদলের পথ প্রদর্শনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ সেনাদল তায়েফের নিকটবর্তী হলে বনু সকীফ অনুভব করে যে এত বড় শক্তির মোকাবিলা করার ক্ষমতা তাদের নেই এবং এই সংগে তারা এ আশঙ্কাও করতে থাকে যে, হয়তো তাদের লাত দেবতার মন্দির ও আরা ভেঙে ফেলবে। ফলে তাদের সরদার মাসউদ একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে আবরাহার সাথে দেখা করে। তারা তাকে বলে, আপনি যে উপাসনালয়টি ভাঙতে এসেছেন আমাদের এ মন্দিরটি সে উপাসনালয় নয়। সেটি মক্কায় অবস্থিত। কাজেই আপনি আমাদেরটায় হাত দেবেন না। আমরা মক্কার পথ দেখাবার জন্য আপনাকে পথ প্রদর্শক সংগ্রহ করে দিচ্ছি। আবরাহা তাদের এ প্রস্তাব গ্রহণ করে। ফলে বনু সাকীফ আবু রিগাল নামক এক ব্যক্তিকে তার সাথে দিয়ে দেয়। মক্কা পৌঁছতেই যখন আর মাত্র তিন ক্রোশ পথ বাকি তখন আলমাগান্মাস বা আল মুগান্মিস নামক স্থানে পৌঁছে আবু রিগাল মারা যায়। আরবরা দীর্ঘকাল পর্যন্ত তার কবরে পাথর মেরে এসেছে। তাকে অভিশাপ দেয়। এখনো অবধি আরবের লোকেরা সমাজের গাদ্দার ও মুনাফিকদের ক্ষেত্রে আবি রিগালের উদাহরণ দিয়ে থাকে।
[4] ক্রুসেডরদের যম সুলতান সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে আইয়ুব রহমাতুল্লাহি আলাইহি (জন্মঃ ১১৩৭/১১৩৮ ইংরেজি-মৃত্যুঃ ৪ মার্চ ১১৯৩ ইংরেজি) ছিলেন মিশর ও সিরিয়ার প্রথম সুলতান। তিনি কুর্দি জাতিগোষ্ঠীর লোক ছিলেন। লেভান্টে ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে তিনি মুসলিম প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেন। ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে তার সালতানাতে মিশর, সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, হেজাজ, ইয়েমেন এবং উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
১৯৬৩ সালে তার জঙ্গি বংশীয় উর্ধ্বতন সুলতান নুরউদ্দিন জঙ্গি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকে তেমীয় মিশরে প্রেরণ করেন। ক্রুসেডারদের আক্রমণের বিরুদ্ধে সামরিক সাফল্যের মাধ্যমে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফাতেমীয় সরকারের উচ্চপদে পৌছান। তৎকালীন শিয়া মতাবলম্বী ফাতেমিয় খলীফা আল আদিদের মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের আনুগত্য ঘোষণা করেন। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি ফিলিস্তিনে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান, ইয়েমেনে সফল বিজয় অভিযানের আদেশ দেন এবং উচ্চ মিশরে ফাতেমীয়পন্থি বিদ্রোহ উৎখাত করেন।
১১৭৪ সালে সুলতান নুরউদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহির মৃত্যুর অল্পকাল পরে তিনি সিরিয়া বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। দামেস্কের শাসকের অনুরোধে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে শহরে প্রবেশ করেন। ১৯৭৫ সালের মধ্যভাগে তিনি হামা ও হিমস জয় করেন। উত্তর সিরিয়া ও জাজিরায় তিনি আরও অভিযান চালান। এসময় হাশাশিনদের দুটি হত্যাচেষ্টা থেকে তিনি বেঁচে যান। ১৯৭৭ সালে তিনি মিশরে ফিরে আসেন। ১৯৮২ সালে আলেপ্পো জয়ের মাধ্যমে সালাহউদ্দিন সিরিয়া জয় সমাপ্ত করেন।
সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি রহমাতুল্লাহি আলাইহির নেতৃত্বে মুজাহিদিন ১১৮৭ সালে হাত্তিনের যুদ্ধে ক্রুসেডারদের পরাজিত করেন। এর ফলে মুসলিমদের জন্য ক্রুসেডারদের কাছ থেকে ফিলিস্তিন জয় করা সহজ হয়ে যায়। এর ৮৮ বছর আগে ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে নেয়। ক্রুসেডার ফিলিস্তিন রাজ্য এরপর কিছুকাল বজায় থাকলে ও হাত্তিনের পরাজয় এই অঞ্চলে মুসলিমদের সাথে ক্রুসেডার সংঘাতের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
১১৯৩ সালে তিনি দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন। তার অধিকাংশ সম্পদ তিনি তার প্রজাদের দান করে যান। উমাইয়া মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। সেখানে তার কবর অবস্থিত।
[5] ইতিহাসের ত্রাস তাতারিদের চরম আঘাতকারী ইতিহাসের অন্যতম লড়াই আইনে জালুতের যুদ্ধে মুসলিম মুজাহিদিনের নেতৃত্বদানকারী সুলতান সাইফুদ্দিন কুতজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন মামলুক বংশের তৃতীয় সুলতান। তিনি ১২৫৯-১২৬০ ইংরেজি মাত্র দুই বছর শাসন ক্ষমতায় ছিলেন, তথাপি ইসলামের ইতিহাসের সবচে’ মকবুল সুলতানদের মধ্যে তাঁকেও গন্য করা হয়।
[6] মামলুক সালতানাতের আক্ষরিক স্থপতি আল মালিকু যাহির সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবারস (১২২৩ ইংরেজি-২ মার্চ ১২৭৭ ইংরেজি) মুসলিম বিশ্বের সিংহ শার্দুল। অনন্য সাধারণ বিরল এক সামরিক প্রতিভা। বীরত্ব ও সাহসিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি। উন্মত্ত ক্রুসেডের মাজা ভেঙ্গে দেয়া সিংহহৃদয় ব্যক্তিত্ব। যার চওড়া বুকের টক্করেই প্রথমবারের মতো মুখ থুবড়ে পড়েছিল সর্বগ্রাসী তাতারি তুফান। দিক পাল্টেছিল কথিত ইয়াজুজ-মাজুজের মোঙ্গল ঝড়।
হ্যাঁ, তিনিই হচ্ছেন তৎকালীন বিশ্বরাজনীতির গতিপথ বদলে দেয়া অসামান্য সমরনায়ক। তার কিলিজের (তরবারি) ডগায়ই রচিত হয়েছিল মধ্যযুগের স্বর্ণিল মুসলিম ইতিহাস। বর্ণিল বীরত্বগাঁথার অনবদ্য মহাকাব্য। বিশ্ব ইতিহাসের তিনিই একমাত্র সেনানায়ক, যার ঝুলিতেই কেবল রয়েছে শত্রু বাহিনীকে বিরামহীন সাড়ে চারশ কিলোমিটার তাড়িয়ে নেয়ার অবিশ্বাস্য বিশ্বরেকর্ড। তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য বিশ্ব আতংক বাতেনী ফেদাইনদের (গুপ্তঘাতক) সাক্ষাৎ যম। নুপুংশুক গাদ্দারদের মূর্তিমান বিভীষিকা। তাই বিশ্ব ইতিহাসে তিনি আজো হয়ে আছেন অম্লান-ভাস্বর। মুসলিম ইতিহাসের বরেণ্য দিগ্বিজয়ী বীরশ্রেষ্ঠদের অন্যতম একজন। কে তিনি?
হ্যাঁ, তিনি হচ্ছেন তুর্কী কুমান বংশদ্ভোত সেই যাযাবর যোদ্ধা — যার লৌহকঠিন হাতেই ক্রুশের নাগপাশ থেকে দ্বিতীয়বার উদ্ধার হয়েছিল পবিত্র মাসজিদুল আকসা, জেরুজালেম। নিস্কৃতি পেয়েছিল লেভান্টসহ পুরো আরব ভূখণ্ড। সমূলে উচ্ছেদ হয়েছিল হিংস্র ক্রুসেডের বিষবৃক্ষ। যার বজ্রাঘাতে আইন জালুত প্রান্তরে ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল অজেয় তার সেনাপতি কিতবুঘার উদ্ধত শির। হিমসের মহারণে চূর্ণ হয়েছিল মোঙ্গল রাজাধিরাজ নরখাদক হালাকু খানের সব দর্প।
আমরা ক্রুসেড বলতে ইমামুদ্দিন, নূরুদ্দিন আর সালাহউদ্দিনই কেবল বুঝি! অথচ এরা ছিলেন রক্তস্নাত দ্বিশতাব্দীব্যাপি চলমান ক্রুসেডের এক একটি অধ্যায়ের নেতৃত্ব দানকারী মাত্র। জঙ্গীরা প্রথম প্রতিরোধকারী হলে, আইয়ূবী জেরুজালেমের প্রথম উদ্ধারকারী! বেশ, এটুকুই। এরপরের ক্রুসেডের সব ইতিহাস, সব উপাখ্যান তো সেই তুর্কী কুমানের নিজ হাতেই লেখা। তিনিই হলেন নারকীয় ক্রুসেডের বিষদাঁত ভাঙ্গার, মেরুদণ্ড গুড়িয়ে সেবার কেন্দ্রীয় চরিত্র। মূল মাস্টারমাইন্ড।
মোঙ্গল ঝড়ে দুনিয়া যখন ইসলামী সভ্যতার প্রায় সমাপ্তিই দেখে ফেলেছিল, বিশাল খাওয়ারিযাম সাম্রাজ্য, আদিগন্ত বিস্তৃত আব্বাসী ফিলাফাহ যখন তাসের ঘরের মতো একে একে ধ্বসে পড়েছিল, এক মিশর আর হিন্দুস্তান বাদে সমগ্র মুসলিম দুনিয়া যখন জ্বলছিল, রক্তে হাবুডুবু খাচ্ছিল, ঠিক তখনই বীরবিক্রমে রুখে দাঁড়ালেন তিনি। বাকিটা তো ইতিহাসই। আর হ্যাঁ, টানা ৫০৭ বছরের আব্বাসী খিলাফাহ’র পতন পরবর্তী মাত্র দু’বছরের মাথায় নেতৃত্বশুন্য মুসলিম উম্মাহকে ফের খিলাফাহ উপহার দেন সেই তিনিই তো। তিনি আর কেউ নন — মামলুক সালতানাতের আক্ষরিক স্থপতি আল মালিকুয যাহির সুলতান রুকনুদ্দিন। বাইবার্স-চিতারাজ, দ্য প্যান্থার। তাকে নিয়ে যে রকম আলোচনা হবার কথা ছিল — ভূগোলে, সাহিত্যে, ইতিহাসে ; অজ্ঞাত কারণে এর সিকিভাগও কিন্তু হয় না, হচ্ছে না। ১২৭৭ সালের ২ মার্চ তিনি সিরিয়ার দামেস্কে ইন্তেকাল করেন।
[7] সুলতান আন নাসের মুহাম্মাদ ইবনে কালাউন ছিলেন ৯ম মামলুক সুলতান। তিনি মিসরের কায়রোতে ১২৮৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৩৪১ সালে কায়রোতেই ইন্তেকাল করেন। তিনি তাঁর সালতানাতের দীর্ঘ সময়ে ক্রুসেডর ও তাতারিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গিয়েছেন। ইতিহাসে তাঁর অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
[8] উসমানীয় খিলাফত মিশরের আব্বাসীয় খিলাফতের পর খিলাফতে আসীন হয়। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই খিলাফত টিকে ছিল। খিলাফতের সর্বশেষ খলীফা ছিলেন দ্বিতীয় আবদুল মজিদ। উসমানীয় শাসকদের উত্থানের সময় সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ খলিফা হন। তার নাতি প্রথম সেলিম মুসলিম ভূমিগুলো জয় করে ইসলামের পবিত্র স্থানসমূহের রক্ষক হন। পরবর্তীতে ইউরোপের সাথে প্রতিযোগীতায় ধীরে ধীরে সাম্রাজ্যের পতন হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে সাম্রাজ্য বিভক্ত হয়ে যায়। শেষ খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মজিদ দুই বছরের জন্য দায়িত্ব পান। কিন্তু মুরতাদ কামাল আতাতুর্কের সংস্কারের সময় খিলাফত বিলুপ্ত করে দেয়া হয়।
দীর্ঘ সময় মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিত্বকারী উসমানীয় শাসকেরা ১৫শ শতাব্দী থেকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের খিলাফত ঘোষণা করেন। এবং ধীরে ধীরে তারা মুসলিম বিশ্বের নেতা ও প্রতিনিধিতে পরিণত হন। সাম্রাজ্য সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছানোর সময় উসমানীয় শাসকরা কনস্টান্টিনোপল থেকে আনাতোলিয়া, অধিকাংশ মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, ককেশাস এবং পূর্ব ইউরোপের অনেক গভীর পর্যন্ত শাসন উনিশ শতাব্দীর শেষের দিকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সমস্যাগুলো যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ইউরোপীয় অগ্রগতিকে ধারণ করার জন্য ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি কিছুকাল ধারণ করা হয়। এসময় পাশ্চাত্য দন্ডবিধি গ্রহণ করা হয়েছিল এবং ঐতিহ্যবাহী ইসলামী আইনগুলো ইউরোপীয় আইন দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়েছিল। রুশ-তুর্কি যুদ্ধের মত সংঘর্ষে হারানো অঞ্চলসমূহের কারণে উসমানীয় শাসকদের ক্ষমতা ও প্রভাব অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়াও গৃহীত ঋণের কারণে অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটে।