অডিও ও ভিডিওআরবইয়েমেনদাওয়াহ আর্কাইভবাংলা প্রকাশনামিডিয়াশাইখ আনোয়ার আল আওলাকী রহিমাহুল্লাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

কাস্টোমাইযিং ইসলাম- শাইখ আনওয়ার আওলাকি রহঃ

কাস্টোমাইযিং ইসলাম

– শাইখ আনওয়ার আওলাকি রহঃ

স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়েছে। দুই সুপারপাওয়ারকে কেন্দ্র করে বাস্তবতাকে বিশ্লেষণের যে কাঠামো পাঁচ দশক জুড়ে অধিকাংশ মানুষের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রিত করছিলো, হঠাৎ করেই তা অচল হয়ে গেলো। দ্বি-কেন্দ্রিক বিশ্বের সমীকরণ বদলে গেলো। ফ্রান্সিস ফুকোয়ামা নামের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলা শুরু করলেন পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থাই মানব ইতিহাসের সামাজিক ও রাজনৈতিক উৎকর্ষের চূড়া স্নায়ুযুদ্ধের পর মানবজাতির সামনে থাকা অগ্রগতির একমাত্র পথ ও আদর্শ হল উদারনৈতিক গণতন্ত্র, সর্বজনীন মানবাধিকার আর পুঁজিবাদী মুক্তবাজার অর্থনীতির সমন্বয়ে গঠিত এ বিশ্বব্যবস্থা। এ দাবি অনেকেই সেলফ-এভিডেন্ট সত্য হিসেবে মেনে নিলেন। .

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্যামুয়েল হান্টিংটন অন্যরকম একটা বিশ্লেষণ তুলে ধরলেন। ১৯৯৩ সালে ফরেন অ্যাফেয়ার্সে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি বললেন – স্নায়ুযুদ্ধের পরের বিশ্বে সংঘাতের ধরণ বদলে যাবে। ভবিষ্যতের যুদ্ধগুলো আগের মতো বিভিন্ন দেশের মধ্যে হবে না, হবে বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে। আর অ্যামেরিকা কেন্দ্রিক পশ্চিমা বিশ্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ইসলাম। হান্টিংটন তার এ প্রবন্ধের নাম দেন – সভ্যতার সংঘাত (The Clash of Civilizations) .

তিনি সভ্যতাকে সংজ্ঞায়িত করলেন ব্যক্তির ধর্ম, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা পরিচয় (Identity) হিসাবে। হান্টিংটনের এ সংজ্ঞা অনুযায়ী একজন ব্যক্তির পরিচয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্পূর্ণ মাপকাঠি হল সে কোন সভ্যতার অংশ। পশ্চিমা সভ্যতার অংশ হবার অর্থ ধর্ম, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে পশ্চিমের অবস্থান থেকে দেখে। এসব ক্ষেত্রে পশ্চিমের ব্যাখ্যা ও চিন্তার কাঠামো গ্রহণ করা। আর এ কারণেই হান্টিংটন দাবি করলেন ভবিষ্যতে রাজনৈতিক আদর্শ বা স্বার্থের বদলে মানুষের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের মূল উৎস হবে তাদের সভ্যতাকেন্দ্রিক পরিচয়। “আপনি কার দলে?” এ প্রশ্নের চাইতে “আপনি কে?” এই প্রশ্ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে . হান্টিংটন ইসলামকে একটি সভ্যতা হিসেবে ক্যাটাগরাইয করলেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইসলাম নিছক একটি ধর্ম না, বরং স্বতন্ত্র আক্বিদা, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, শাসন ব্যবস্থা ও ইতিহাসের সমন্বয়ে গড়া একটি সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা। আর একারণেই পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসবে ইসলামের দিক থেকে। . .

মানব জাতির ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখবেন চক্রাকারে দেশ ও জাতিগুলোর উত্থান-পতন ঘটতে থাকে। ভাঙ্গাগড়া খেলা চলতে থাকে। একসময়ের সুপারপাওয়ার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আবার একসময়ের পশ্চাৎপদ অঞ্চল সময়ের পালাবদলে সভ্যতার কেন্দ্র পরিণত হয়। অনেকটা ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো। পেন্ডুলাম একবার পশ্চিমের দিকে আসে, তারপর ধীরে ধীরে আবার পূর্বের দিকে যায়। তবে একটি সভ্যতার উত্থান থেকে পতনের মাঝে কয়েক শতাব্দী সময় লাগায়, আমরা অধিকাংশ মানুষ প্যাটার্নগুলো খেয়াল করি না। .

যেমন প্রতিটি সভ্যতা পতনের আগে অবাধ যৌনতা, বিকৃতি ও অধঃপতনের চরম সীমায় পৌঁছে যায়। রোমান, বাইযেন্টাইন, মিশরীয়, গ্রিক – বিভিন্ন সভ্যতায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংহতি নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে চলা বৃদ্ধির পর তাদের অর্থনীতির উল্টো গতি শুরু হয়, কিন্তু ভোগে অভ্যস্ত জনসাধারণের মানসিকতার পরিবর্তন হয় না। একটি সভ্যতার পতনের পর নতুন যে সভ্যতা তার জায়গা দখল করে, সেটা অধিকাংশ ক্ষেতরে মৌলিকভাবে আলাদা হয়। অর্থাৎ অনুকরণের মাধ্যমে একটি সভ্যতা আরেকটিকে পরাজিত করতে পারে না। বরং নিজের আলাদা পরিচয়, সংস্কৃতি ও আদর্শের অনুসরণের মাধ্যমে সে শক্তি অর্জন করে। আর যে বিদ্যমান সভ্যতার অনুকরণ করে যায়, তারা ঐ সভ্যতার অংশ হতে পারে, কিন্তু কখনো প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে না।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × one =

Back to top button