জিহাদে নারীর অবদান শায়েখ ইউসুফ বিন সালেহ আল উয়াইরী রহিমাহুল্লাহ
বালাকোট মিডিয়া
সম্পাদিত ও পরিবেশিত
জিহাদে নারীর অবদান
শায়েখ ইউসুফ বিন সালেহ আল উয়াইরী রহিমাহুল্লাহ
ডাউনলোড করুন
PDF
https://banglafiles.net/index.php/s/xjCXmtyiwRR4FRW
http://www.pdf-archive.com/2015/10/22/jihade-narir-obodan-shaykh-yousuf-al-uayri-rahimahullah/jihade-narir-obodan-shaykh-yousuf-al-uayri-rahimahullah.pdf
http://www.mediafire.com/file/c9oftdbis8hhwch/38.jihade-narir-obodan-shaykh-yousuf-al-uayri-rahimahullah.pdf/file
WORD
https://banglafiles.net/index.php/s/nNGcB9zWLJrcfYR
https://archive.org/download/jihade-narir-obodan/.docx
====================================
জিহাদে নারীর অবদান
সংকলনঃ
শাইখ ইউসুফ আল উয়াইরি (রহিমাহুল্লাহ)
প্রস্তুতঃ
মারকাজুল বহুস ওয়াদ্ দিরাসাতিল ইসলামিয়া
সম্পাদনা ও পরিবেশনায়ঃ
বালাকোট মিডিয়া
সূচিপত্রঃ
- ভূমিকা
- নারী কখনো জিহাদের পথে উদ্বুদ্ধকারী হয় ।
- সালাফ তথা পূর্বসূরীদের মধ্য হতে কতিপয় মুজাহিদা নারীর দৃষ্টান্ত
- এ যুগের কতিপয় মুজাহিদা ( জিহাদ কারিণী ) নারীর দৃষ্টান্ত
- সারমর্মঃ আমার প্রিয় সম্মানিতা বোন আপনার কাছে আমরা যা চাচ্ছি ।
ভূমিকা
بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
সকল প্রশংসা আল্লাহ তালার জন্য, দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাসুল ﷺ এবং তার সকল সাহাবীর (রাঃ) প্রতি।
প্রিয় বোন!
নিশ্চয়ই তোমার বিরাট গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রয়েছে। তোমার উচিত এই দায়িত্বকে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে ইসলামের এই নতুন যুদ্ধে পেশ করা, যে যুদ্ধে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দুনিয়ার সকল রাষ্ট্রগুলি এক হয়ে গেছে। বোন! আমি তোমাকে এ পৃষ্টাগুলিতে সম্বোধন করে কিছু বলতে চাই। আর তা কিছুটা দীর্ঘ হবে। কিন্তু এ দীর্ঘতা বিষয়বস্তুর গুরুত্বের কারণেই। যার জন্য এর কয়েকগুণ বেশি পৃষ্টার প্রয়োজন। সুতরাং শোন, আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করুন।
বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ বিভিন্ন ধরণের লাঞ্চনা-বঞ্চনার শিকার, যার কোন সীমা নেই। আর তা এতো ব্যাপকভাবে অতীতে কখনো হয়নি। আর এ লাঞ্ছনা-বঞ্চনা এজন্য নয় যে, এ জাতি সংখ্যায় কম বা আর্থিকভাবে দুর্বল। বরং এ জাতিকে পুথিবীর সংখ্যাগরিষ্ট জাতি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর একমাত্র এ উম্মতই আল্লাহ প্রদত্ত বিপুল ধনভান্ডারের অধিকারী। যা তার শত্রুদের কাছে নেই। কিন্তু বিবেকের কাছে প্রশ্ন হল, সেটি কোন কারণ যার দরুণ এ জাতি ধনে-জনে সমৃদ্ধ হওয়ার পরেও আজ চরম লাঞ্চনার শিকার।
আমরা বলি, সেই কারণটি নবী করীম ﷺ আমাদের জন্য চিহ্নিত করে দিয়েছেন। যেমন, মুসনাদে আহমদ ও আবু দাউদে হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল ﷺ বলেছেনঃ “শীঘ্রই জাতিগুলো চতুর্দিক হতে তোমাদেরকে গ্রাস করবে। যেভাবে খাবারের লোকমাকে পাত্রের চতুর্দিক হতে গ্রাস করা হয়”। তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল ﷺ! এটা কি আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে? তিনি বললেনঃ তোমরা তখন সংখ্যায় অধিক হবে। কিন্তু তোমরা স্রোতে ভেসে যাওয়া খড়কুটার ন্যায় হবে। তোমাদের শত্রুরদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় চলে যাবে এবং তোমাদের অন্তরে ওহান সৃষ্টি হবে”। তিনি বলেন, আমরা বললাম, ‘ওহান’ কী? তিনি বললেনঃ “বেঁচে থাকার প্রতি লোভ ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা।” অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘জিহাদকে’ অপছন্দ করা।
এটাই হল সেই কঠিন প্রশ্নের উত্তর যা নবী করীম ﷺ তা সংগঠিত হওয়ার প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে দিয়ে গেছেন। আর সেই ব্যাধি যা উম্মতকে ধ্বংস করে দিয়েছে তা হল, দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা ও মৃত্যুকে ভয় করা। উম্মত যখন দুনিয়াকে ভালবাসতে লাগলো ও মৃত্যুকে অপছন্দ করতে শুরু করলো, তখন তাকে চেপে বসলো সেই মন্দ গুণ যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা ইহুদিদেরকে গুণান্বিত করেছেন। “তুমি তাদেরকে জীবনের প্রতি সবচেয়ে লোভী পাবে”। -আল কোরআন ‘হায়াত’ শব্দটি এখানে নাকেরা (অপরিচিত) হিসেবে এসেছে যা যে কোনো ধরণের জীবনকে বোঝায়। তা অপমানের জীবনই হোক বা হাইওয়ান তথা জানোয়ারের জীবনই হোক। ফলে উম্মত এক নিকৃষ্টমানের জীবনকে আঁকড়ে ধরেছে। যা তার ও দ্বীনের জন্য লজ্জাজনক। আর এগুলো সবই দুনিয়ার প্রতি লোভ ও ভয়ের কারণে।
দুনিয়ার প্রতি আমাদের ভালবাসা ও মৃত্যু বা জিহাদের প্রতি ভয়ের অনিবার্য ফল হল এ যে, জিহাদ ছেড়ে দেওয়া। যাকে মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ লোক বিশেষ করে নারীরা এটাকে অবধারিত মৃত্যুও দুনিয়া ছাড়ার পথ মনে করে। ফলে মুসলিম উম্মাহ যখন জিহাদকে ছেড়ে দিল, তখন তাদের দুশমনরা তাদের উপর চড়াও হল এবং তারা লাঞ্চনা ও চরম অপমানে নিপতিত হল। আর রাসুল ﷺ এর সেই পবিত্র বাণী বাস্তবায়িত হল, যা আহমদ ও আবু দাউদে ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি রাসুল ﷺ কে বলতে শুনেছিঃ “যদি তোমরা ‘ইনা’ বিক্রি কর, ষাড়ের লেজ ধরে থাক এবং কৃষি কাজে লিপ্ত থাকার কারণে জিহাদ পরিত্যাগ কর তবে আল্লাহ তোমাদের উপর এমন অপমান চাপিয়ে দেবেন যে, যতক্ষণ না তোমরা দ্বীনের উপর পূর্ণরূপে প্রত্যাবর্তন করবে ততক্ষণ আল্লাহ তোমাদের থেকে ঐ অপমান দূর করবেন না।”
উপরে বর্ণিত হাদিসগুলো দ্বারা আমাদের কাছে সেই ব্যাধি বা কারণ স্পষ্ট হয়ে গেছে যা রাসুল ﷺ চিহ্নিত করেছেন। আর তা হল ‘ওহান’ এবং এর পরিণামও স্পষ্ট হয়ে গেছে। আর তা হল বিশ্বের সকল জাতির পক্ষ থেকে আমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অবমাননা। বর্ণিত ভাষ্যের মাঝে মনোনিবেশ করলে আমরা মুক্তির পথ সম্পর্কে জানতে পারি। আর তা হল, লাঞ্ছনা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে জিহাদে ফিরে যাওয়া এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাকে ভালবাসা এবং দুনিয়া ও তার চাকচিক্যকে পরিহার করা।
নারী জিহাদের পথে কখনো অন্তরায় আর কখনো চালিকাশক্তি হয়
কিন্তু আমরা একথা আত্মস্থ করার পরও জিহাদই হল একমাত্র ব্যবস্থাপত্র যা রাসুল ﷺ আমাদের জন্য সমস্যার সমাধান হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছেন, আমরা তার উপর আমল করতে পারছিনা। তাই আমাদের কর্তব্য হল সে ব্যবস্থাপত্রের উপর আমল করার পথে অর্থাৎ জিহাদের পথে ব্যক্তি পর্যায়ে যে অন্তরায় রয়েছে তা খুঁজে বের করা। জিহাদের পথে বাঁধা বা অন্তরায়ের মূল কারণসমূহ যা আল্লাহ তা’আলা সূরা তওবার এক আয়াতের মধ্যে বলেছেন তা হল,
قُلْ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوَٰنُكُمْ وَأَزْوَٰجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَٰلٌ ٱقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَٰرَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَٰكِنُ تَرْضَوْنَهَآ أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٍ فِى سَبِيلِهِۦ فَتَرَبَّصُوا۟ حَتَّىٰ يَأْتِىَ ٱللَّهُ بِأَمْرِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلْفَٰسِقِينَ
“বল তোমাদের নিকট যদি তোমাদের সন্তান, পিতা, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত; আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।”
এগুলো হল জিহাদের পথের অন্তরায়সমূহের মৌলিক বিষয়াবলী যা থেকে অসংখ্য শাখাপ্রশাখা বের হয়। চিন্তার বিষয় হল, এ প্রিয় বস্তুগুলোর ভালবাসা কিভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের এবং সেই জিহাদের উপর জয়ী হয় যা উম্মতের মর্যাদার পথ। কেননা যখন একথা আমাদের দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস হবে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ﷺ এবং জিহাদের ভালবাসা এসব প্রিয় বস্তু হতে বড় ও জরুরী, তখন অনিবার্যভাবেই আমরা তা বাস্তবে আমলে আনার চেষ্টা করব যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ﷺ ও জিহাদের মর্যাদা এসকল বস্তু থেকে বেশি। আর এটাই উম্মতের সন্তানদেরকে তাদের জীবন ইসলাম ও মুসলমানদের মর্যাদার জন্য উৎসর্গ করতে প্রস্তুত করবে। আর এর দ্বারা ওহানের ময়লা দূর হবে। অতঃপর কুফফার জাতি কখনো এ উম্মতের উপর চড়াও হতে পারবেনা। তাদের এ কথা জানার কারণে যে, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এমন পুরুষরা রয়েছে যারা মৃত্যুকে এমনভাবে ভালবাসে যেমন ভালবাসে বাচঁতে এবং এ উম্মতের মাঝে এমন ব্যবসায়ীরা রয়েছে যারা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যে সকল সম্পদ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত যেভাবে আবু বকর (রাঃ) প্রস্তুত ছিলেন এবং তাদের মধ্যে এমন মায়েরা রয়েছে যারা নিজেদের সন্তান জিহাদ থেকে পিছপা হওয়াতে সন্তুষ্ট নয়। এসকল খ্যাতিগুলো যখন এ উম্মতের অর্জন হয়ে যাবে তখন আল্লাহর দুশমনরা হাজারবার হিসাব কষবে এ উম্মতকে প্রাধান্য দেবার জন্য।
এ পৃষ্ঠাগুলোতে আমরা সেই অন্তরায়গুলোকে বিস্তারিতভাবে টেনে আনবো না। তবে আমরা একটি অন্তরায় সম্পর্কে আলোচনা করবো যেটিকে এ উম্মত থেকে দ্রুত দূর করা জরুরী বলে আমরা মনে করি। আর সেই অন্তরায়টি হল যে, নারী হয়তো মা হবে বা স্ত্রী বা মেয়ে বা বোন হবে। আর এরা সবাই আয়াতের উল্লিখিত অন্তরায়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর নারীরা অন্তরায় হওয়ার প্রসঙ্গে আমাদের আলোচনা এ থেকে অপ্রাসঙ্গিক নয়। বরং আমরা এখানে নারীকেই সম্বোধন করবো এবং তাকে অবগত করবো যে সেও ইসলামের বিজয়ের পথে বড় একটি অন্তরায়। আমরা যখন বলেছি যে, নারী ইসলামের বিজয়ের পথে বড় একটি অন্তরায় পক্ষান্তরে আমাদেরকে এটাও বুঝতে হবে যে, নারী ইসলামের বিজয়ের জন্য বিরাট এক প্রভাবক শক্তিও বটে। তবে এ শর্তে যে, সে তার ভূমিকাকে বীরত্বের সঙ্গে পেশ করবে। যেমনটি আমরা সামনে কতিপয় অনুস্মরণীয় মহিলাদের পবিত্র জীবনী বর্ণনা করবো।
এ পৃষ্ঠাগুলোতে আমাদের নারীদের সম্বোধন করার কারণ হলঃ আমরা দেখেছি নারী যখন কোন বিষয়ে যত্নশীল হয় তখন পুরুষের জন্য তা সম্পাদন করা সহজ হয়ে যায়। আর যখন সে কোন বিষয়ে বিরোধী হয় সেটা বিরাট বাঁধা হয়ে যায়। বিশেষ করে সে নারীটি যখন কোন মা বা দাদি হন তখন তো তাঁর সেবা ও সন্তুষ্টি জরুরি।
নারীরা যেহেতু পুরুষের আশ্রয়স্থল এবং মাল ও আওলাদের হেফাযতকারীনী। এজন্য আমরা নারীকে পৃথকভাবে বিশেষ করে আহ্বান করছি যাতে ইসলাম ও কুফর শক্তির মাঝে সংগঠিত যুদ্ধে তারা নিজেদের সক্রিয় ভূমিকাটি রাখতে পারেন। পক্ষান্তরে নারীরা যখন নিজের ভূমিকা (দায়িত্ব) হতে পিছপা হবে, তখন তাই হবে যা এই উম্মতের পরাজয়ের প্রথম ধাপ ও ধ্বংসের কারণ। যেমনটাতে বর্তমানে এ উম্মত নিপতিত হয়েছে।
ইসলামের গৌরবময় যুগগুলোতে কাফেরদের দেশসমূহে ইসলাম বিজয়ী হয়েছে অথচ কাফেররা ধনে জনে অধিক ছিল। আর তা এজন্যই সম্ভব হয়েছিল যে, তখন নারীগণ দায়িত্বশীল ছিলেন। এবং তারা নিজ সন্তানদেরকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের তরবিয়ত দিতেন এবং পুরুষেরা জিহাদে বের হলে তাঁরা নিজ চরিত্র সম্ভ্রম ও সম্পদের হেফাজত করতেন। নিজে ধৈর্য ধরতেন এবং নিজ সন্তান ও স্বামীকে ধৈর্য ধারণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। ফলে তা জনৈক ব্যক্তির কথার ন্যায় হল, “প্রত্যেক মহান ব্যক্তির পিছনে একজন নারী রয়েছেন।” বর্তমানে তা মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোয্য হয়। সুতরাং আমরা বলবোঃ প্রত্যেক মহান মুজাহিদের পিছনে একজন নারী ছিলেন। এবং সেই নারীগণ নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানতেন ও সেই গুণ অর্জন করেছিলেন যা নবী করীম ﷺ বর্ণনা করেছিলেন। যেমনঃ মুসনাদে তিনি আহমদ ও তিরমিযীতে হযরত ওমর রাঃ হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম ﷺ কে প্রশ্ন করেছিলেন যে, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কোন সম্পদ গ্রহণ করবো? তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন কৃতজ্ঞ হৃদয়, যিকিরকারী জিহ্বা এবং আখেরাতের কাজে সাহায্যকারী স্ত্রী গ্রহণ করে।”
আর বর্তমান যুগের নারীদের সম্পর্কে কি বলবো! তাদেরকে কোন গুণে ভূষিত করবো? আর তাদের দায়িত্ববোধই বা কি? আখেরাতের কাজে স্বামীদের প্রতি তাদের কি কোন সহযোগিতা আছে? আর তারা কি বর্তমান সময়ে ইসলাম ও কুফর শক্তির মাঝে সংগঠিত যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা রাখে? নাকি তারা কুফরি রাষ্ট্রগুলোকে চিনে? আর তারা কি জানে প্রতিটি দেশে মুসলমানরা কি বিপদে রয়েছে?
এখন তারা ব্যস্ত। কিসের জন্য ব্যস্ত? ফ্যাশনের আর সাজসজ্জার পিছনে ব্যস্ত। বরং তাদের একদল নিয়োজিত রয়েছে হারামের মাঝে এবং তারা বিভিন্নভাবে ইসলামের বিপরীতে তাঁর শত্রুদেরকেই সাহায্য করছে।
তদুপরি আমরা উম্মতের মুক্তির জন্য তাদের অংশগ্রহণের আশাবাদী। তাই আমরা নিয়োজিত হয়েছি ইসলামের ক্ষতি ও ধ্বংসাত্মক কার্য থেকে নারীদের হাতকে রুখতে। শত্রুরা ভালো করেই বুঝেছে যে, নারীগণ উম্মতের মেরুদন্ড, যখন এরা নষ্ট হবে তো তাদের প্রজন্মও নষ্টই হবে এবং আশপাশের পরিবেশও নষ্ট হবে। তাই তারা নারীদের স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতার দিকে আহ্বান করছে। আর তারাও তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে। আহ! আল্লাহ ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই আর আল্লাহর শক্তি ছাড়া কোন শক্তি নেই।
হে আল্লাহর দাসী!
বর্তমান এই প্রতিযোগিতামূলক লড়াইয়ে তোমার অনুপস্থিতিই থাকে, যদি শুধু তোমার একার অনুপস্থিতিই থাকত তাহলে বিষয়টি ততটা জটিল হতনা। তখন আমরা পুরুষের ক্ষেত্রে আশাবাদী থাকতাম। কিন্তু বর্তমানের এই প্রতিযোগিতা থেকে তোমার অনুপস্থিতির সাথে পুরো উম্মতই অনুপস্থিত থাকছে। সুতরাং কে যুবককে সেই যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করবে? পুরুষের পাশে কে দাঁড়াবে সেই যুদ্ধে তাঁকে সাহস যোগানোর জন্য?
তোমার পর সেই পথ অতিক্রম করার জন্য সামনে আগমণকারিণী মায়েদের কে প্রস্তুত করবে? এ প্রশ্নের ও এরকম আরো দশটি প্রশ্নের উত্তরে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, নারী বর্তমান এই প্রতিযোগিতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাঁর উপস্থিতি অতি জরুরি। নারী এ প্রতিযোগিতায় সম্পূরক নয় বরং তাঁর উপস্থিতি সাহায্যের আশ্রয়সমূহ হতে একটি ও পথের পাথেয়।
এজন্যই হে মুসলিম বোন!
তোমার বোঝা উচিত যে, তোমার গুরুত্ব তোমার ধারণা থেকে অনেক বেশি। বর্তমানে ইসলামের পরাজয়ের বড় একটি দায় তোমার উপরও বর্তাবে। কেননা তুমি যদি তোমার দায়িত্ব আদায় করতে তাহলে উম্মত এ লাঞ্চনার শিকার হতনা। বলতে পারো যে, কেন এ দায় আমার উপর বর্তাবে। আমরা বলবো তোমার প্রথম দায়িত্বটা যদি তুমি সঠিকভাবে আদায় না কর, তাহলে পরবর্তী চেষ্টাগুলো সাধারণত ফলপ্রসূ হয়না। শিশু তোমার কোলেই বেড়ে উঠে আর তোমাকে ছাড়া তার আর কোন ভালবাসা আছে কিনা তা সে জানেনা। সুতরাং তুমি যখন তার কোমল হৃদয়ে আল্লাহ ও তার রাসুল ﷺ এবং তার পথে জিহাদের বীজ বপন করবেনা তখন পূর্ণবয়সে তার হৃদয়ে কেউ অতি কষ্ট ছাড়া সেই বীজ বপন করতে পারবেনা। সুতরাং বোন তুমি নিজ ভূমিকা সম্পাদন কর এবং দুই দশক পর তার ফলাফল দেখ।
বর্তমানে ইসলাম ও অন্যান্য কুফরি ধর্মগুলার মধ্যে সংগঠিত যুদ্ধে বিশেষ করে নতুন এই ক্রুসেড যুদ্ধে যাতে আমেরিকার নেতৃত্বে পূর্ণ বিশ্ব এক হয়েছে। এতে নারীর ভূমিকা বর্ণনা করার ক্ষেত্রে আমরা ইসলামের স্বর্ণযুগের কতিপয় মুজাহিদা নারীর ভূমিকা বর্ণনা করব। আর মুসলিম মহান নারীগণের যে দৃষ্টান্তগুলো বর্ণনা করবো এ বিষয়ে এগুলোই যে সকল দৃষ্টান্ত তা নয়। বরং এগুলো হল সেই বীর মুজাহিদদের মা, বোন ও স্ত্রীদের একটি দিক মাত্র। পূর্ববর্তী মুসলিম নারীদের ন্যায় যদি বর্তমান মুসলিম নারীদের মধ্যেও সেরকম ত্যাগ, সততা ও দ্বীনের জন্য ভালবাসা থাকতো তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় ইসলাম সাহায্যপ্রাপ্ত ও বিজয়ী হত।
পূর্ববর্তী কতিপয় মুজাহিদা নারীদের দৃষ্টান্ত।
প্রিয় বোন!
এখন যাদের অবস্থা বর্ণনা করবো, আশা করি তুমি তাদের অনুকরণ করবে, যেন সেই মঙ্গল অর্জন করতে পারো যা তাদের ও তাদের সময়ে দ্বীনের অর্জন হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে তারাই হলেন অনুকরণের যোগ্য। প্রিয় মুসলিম বোন! তোমার জন্য ঐসব বেহায়া, কুলাঙ্গার ও দেহব্যবসায়ী নারীদের মাঝে কোন আদর্শ নেই। তুমি যদি জানতে চাও যে, তুমি কে? তাহলে উনাদের দিকে তাকাও যাদেরকে তুমি অনুসরণ করছো। আর তুমি যদি উম্মতের অবস্থা জানতে চাও, তাহলে উম্মতের নারীরা যাদের অনুকরণ করছে তাদের দিকে তাকাও। তারা যদি মহান মুজাহিদা, সত্যবাদী, আনুগত্যকারিণী, এবাদতকারিণী, ধৈর্যশীলা, রোজাদার নারীদের অনুকরণ করে তাহলে উম্মত বিজয় লাভ করবে। আর তারা যদি লম্পট, অবিশ্বাসী, মিথ্যাবাদী, পথভ্রষ্টা নারীদের অনুকরণ করে তাহলে এটা হবে উম্মতের জন্য অনিবার্য ও চরম ক্ষতি। আর বর্তমানে আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় চাচ্ছি।
ইসলামের প্রথম যুগে নারীরা যুদ্ধের ময়দানে প্রবেশ করেছেন। এটা তখন পুরুষের স্বল্পতার জন্য নয়। বরং তা দ্বীনের উত্তম প্রতিদান এবং দ্বীনের মহব্বত ও আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ হওয়ার তামান্নায়ই হয়েছিল। আর এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় সে বর্ণনা অনুযায়ী যা ইমাম আহমদ রঃ হাশরজ বিন আল আশজায়ী থেকে এবং তিনি তার দাদি থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেনঃ আমি ও আরো পাঁচজন নারী রাসুল ﷺ এর সঙ্গে খায়বর যুদ্ধে বের হলাম। এ খবর রাসুল ﷺ এর নিকট পৌঁছল যে তার সঙ্গে নারীরা রয়েছে।
রাসুল ﷺ আমাদেরকে ডেকে পাঠালেন ও বললেনঃ কোন জিনিস তোমাদেরকে বের করেছে? আর কার আদেশে তোমরা বের হয়েছ?
আমরা বললামঃ আমরা তীর সংগ্রহ করে দিব, লোকদেরকে পানি, ছাতু পান করাবো। আমাদের সঙ্গে আহতদের চিকিৎসার উপাদান রয়েছে তা দ্বারা চিকিৎসা করবা এবং কবিতা আবৃত্তি করে আল্লাহর রাস্তায় সাহায্য করবো। তিনি বললেন, উঠ! এবং ফিরে যাও। অতঃপর যখন আল্লাহ তা’আলা খায়বরের বিজয় দান করলেন, তখন পুরুষদের ন্যায় আমাদের জন্যও গণীমতের অংশ বের করলেন। আমি বললামঃ দাদি! আপনাদের জন্য কী বের করেছিলেন? তিনি বলেনঃ খেজুর। এভাবে জিহাদের প্রতি নারীর প্রগাঢ় ভালবাসা ও দ্বীনের জন্য উৎসর্গ হওয়ার যজবাই তাদের সেই পর্যন্ত পৌছিয়েছিল যে, এক পর্যায়ে তারা রাসুল ﷺ এর নিকট জিহাদে বের হওয়ার আবেদন পেশ করলেন।
যেমন বুখারী ও সুনানে নাসায়ীতে হযরত আয়েশা রাঃ হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ ওহে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আপনার সঙ্গে বের হয়ে জিহাদ করবোনা? কেননা কুরআন মাজীদে জিহাদের চেয়ে উত্তম কোন আমল দেখিনা। তিনি বললেনঃ না, তবে তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হল আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা, হজ্জে মাবরুর। তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে যে, পূর্বসূরী নারীগণ দ্বীনের প্রতি তাদের অধিক ভালাবাসার কারণে নিজেরা জিহাদে যাওয়ার অনুমতির আশা করতেন। আর আমরা বর্তমান নারীদের দেখছি যে, তারা চায় আল্লাহ তাআলার বাণী (তোমাদের উপর জিহাদ ফরয করা হয়েছে) যদি নাযিল না হতো, বিশেষ করে যখন তারা জানে যে, নিজের ছেলে, ভাই, পিতা বা স্বামী আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে দ্বীনের সাহায্যার্থে জিহাদের পথে বের হচ্ছে। এটাই বিরাট পার্থক্য সৃষ্টি করেছে পূর্বসূরী নারী ও বর্তমান যুগের নারীদের মাঝে। পূর্বসূরী নারীগণ পুরুষদের বের করে দিতেন যাতে তারা সকল কুফরি ধর্মগুলোর উপর বিজয় লাভ করতে পারে আর বর্তমান যুগের নারীরা তাদের পুরুষদেরকে বের করে দেয় যাতে তারা গরু, পাথর, বৃক্ষ পূজারী ও খৃস্টানদের দাস হতে পারে। এমনকি তারা অপমানজনক জিযিয়া (কর) দিতেও প্রস্তুত। আহ! আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কোন আশ্রয় নেই।
প্রিয় বোন!
আমরা প্রথমেই তোমার সামনে সেই মহান নারীর দৃষ্টান্ত পেশ করবো যার মর্যাদা হাজারো পুরুষের চেয়ে বেশি। যাতে তুমি তাদের সুন্দর আদর্শে সজ্জিত হতে পার। সেই গুণাবলীর এক দশমাংশও যদি বর্তমান মহিলাদের মাঝে থাকতো তাহলে আমাদের একটি অধিকারও নষ্ট হত না। সেই বীর মুজাহিদা হলেন উম্মে আম্মারাহ নাসীবাহ বিনতে কাব আল আনসারী রাঃ শিয়ারে আল’আমিন নুবালাতে তার জীবনীতে এসেছে। তিনি বলেনঃ উম্মে আম্মারা বাইয়াতে আকাবা, উহুদ, হুনাইন ও ইয়ামামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং জিহাদের ময়দানে বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন। জিহাদে তার হাত কাঁটা গিয়েছিল। ওয়াকিদী বলেনঃ তিনি নিজ স্বামী গুযাইয়া বিন আমর এবং তার ছেলের সঙ্গে উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি পানি পান করাতেন, তার সঙ্গে অস্ত্র ছিল। তিনি যুদ্ধ করেছেন এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। যুমরা বিন সাঈদ আল মাযিনী তার দাদি যিনি উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তার থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (দাদি) বলেনঃ আমি রাসুল ﷺ কে নাসীবা বিনতে কাবের অবস্থান সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে, সে আজ অমুক অমুক হতে উত্তম অবস্থানে আছে। এবং তিনি তাঁকে কোমরে কাপড় বেঁধে কঠিন যুদ্ধ করতে দেখেছেন। এমনকি তিনি তেরটি আঘাতপ্রাপ্ত হন।
তিনি বলতেন আমি দেখছিলাম যে, ইবনে কিময়া তার গায়ে আঘাত করছিল। আর এটাই তার বড় আঘাত ছিল। তিনি এক বছর পর্যন্ত সেটির চিকিৎসা করেন। অতঃপর যখন রাসুল ﷺ হামবাউল আসাদের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেন তখন তিনি রক্ত ক্ষরণের জন্য উঠতে পারছিলেন না। আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং রহম করুন। উম্মে আম্মার (রাঃ) বলেনঃ আমি উহুদ যুদ্ধে নিজে দেখেছি যে লোকেরা রাসুল ﷺ এর কাছ থেকে সরে পড়েছে। দশজনের একটি দল ছাড়া কেউ অবশিষ্ট নেই, আমি ও আমার দু ছেলে এবং আমার স্বামী তাঁর সামনে থেকে আঘাত প্রতিহত করছিলাম আর লোকেরা পলায়ন করছিল। তিনি ﷺ দেখলেন আমার কাছে কোন ঢাল নেই, অতঃপর তিনি পলায়নরত এক ব্যক্তির কাছে ঢাল দেখতে পেলেন এবং তাকে বললেনঃ যে যুদ্ধ করছে তাকে তোমার ঢালটি দিয়ে দাও। ফলে সে তার ঢালটি নিক্ষেপ করলো আর আমি তা উঠিয়ে আনলাম এবং রাসুল ﷺ হতে আক্রমণ প্রতিহত করছিলাম। অশ্বারোহীরা আমাদের উপর কঠিন আক্রমণ করেছিল। তারা যদি আমাদের ন্যায় পদাতিক হতো তাহলে ইনশা আল্লাহ তাদেরকে ঠিকভাবেই পাকড়াও করতাম।
অশ্বারোহী এক ব্যক্তি আমার দিকে অগ্রসর হয়ে আমার উপর আঘাত করল, আমি তা প্রতিহত করলাম। ফলে আমার কোন ক্ষতি হয়নি। অতঃপর আমি তাকে ধাওয়া করলে সে পালিয়ে যেতে লাগল। আমি তার ঘোড়ার পায়ের গোছায় আঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে যায়। তখন রাসুল ﷺ চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেনঃ (হে উম্মে আম্মারার ছেলে! তোমার মা, তোমার মা) অর্থাৎ তাকে সাহায্য কর। তিনি বললেনঃ তারা আমাকে সাহায্য করেছে। এমনকি কাবু করে ফেলেছি অতঃপর আমি তার মৃত্যুর ঘ্রাণ পেয়েছি।
ওয়াবিদী উম্মে আম্মারার ছেলে আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ আমি উহুদের যুদ্ধের দিন আমি একটা আঘাত প্রাপ্ত হয়েছি, তখন রক্ত বন্ধ হচ্ছিলনা। তখন রাসুল ﷺ বলেনঃ তোমার জখমটাতে পট্টি বেধে নাও। তখন আমার মা আমার দিকে আসলেন। তার সঙ্গে কিছু পট্টি ছিল। আর নবী কারীম ﷺ দাঁড়ানো। তিনি বললেনঃ হে উম্মে আম্মার! তুমি যা করতে সক্ষম হয়েছ কে তা করতে সক্ষম হবে? অতঃপর আমার ছেলের আঘাতকারী অগ্রসর হল। তখন রাসুল ﷺ বললেনঃ এই লোকটি তোমার ছেলের আঘাতকারী। তিনি বললেনঃ অতঃপর আমি অগ্রসর হয়ে তার পায়ের গোছায় আঘাত করলাম। এতে সে হাঁটু গেড়ে পরে গেলো। তখন রাসুল ﷺ কে মুঁচকি হাসতে দেখলাম এমনকি আমি তাঁর দাঁত দেখেছি। অতঃপর আমি তাঁর নিকট আসলাম। তখন রাসুল ﷺ বললেনঃ সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি তোমাকে বুদ্ধিমত্তার অধিকারী করেছেন।
বিন ইয়াহইয়া বিন হিব্বান হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ মুহাম্মাদ উম্মে আম্মারা উহুদ যুদ্ধে বারটি আঘাত প্রাপ্ত হন এবং ইয়ামামার যুদ্ধে তার হাত কাঁটা যায়। আর হাত ছাড়াও তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি এগারটি আঘাত প্রাপ্ত হন। এসব জখম নিয়ে তিনি যখন মদিনায় আসলেন তখন আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কে দেখা গেছে। (তখন তিনি খলিফা ছিলেন)। তার কাছে এসে তিনি ও তার ছেলে সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। তার ছেলে হাবিব বিন যায়েদ বিন আসেম যাকে মুসায়লামা শহীদ করেছিল। তার আরেক ছেলে আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আল মাযিনী যিনি রাসুল ﷺ এর ওযু বর্ণনা করেছেন, তরবারি দিয়ে মুসায়লামাতুল কা্যাবকে হত্যা করেছিলেন।
তিনি তার সিফাতুস সফওয়া নামক কিতাবে তার সম্পর্কে এসেছে যে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসুল ﷺ হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ উহুদ যুদ্ধের দিন আমি যে দিকেই দৃষ্টি দিয়েছি সে দিকেই তাকে আমার কাছে থেকে যুদ্ধ করতে দেখেছি।
আল ইসাবা নামক কিতাবে (৪/৪১৮) তার সম্পর্কে এসেছে। ওয়াকীদী উল্লেখ করেছেন, যে নাসীবা বিনতে কাবের কাছে যখন মুসায়লামার হাতে তার ছেলে হাবিব বিন যায়দ এর হত্যার খবর পৌঁছেছে তখন তিনি আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকার করলেন যে, হয় তিনি মুসায়লামাকে হত্যা করবেন না হয় তার কাছেই মরবেন। অতঃপর তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে খালেদ বিন ওয়ালিদ রাঃ এর সঙ্গে আপন ছেলে সেই আব্দুল্লাহ রাঃ সহ অংশগ্রহণ করেন ও মুসায়লামাকে হত্যা করেন, যুদ্ধে তার হাত কাটা যায়।
ইবনে হিশাম তার ‘যিয়াদাত উম্মে সাঈদ বিন কবির সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ আমি উম্মে আম্মারার নিকট গেলাম ও তাকে বললাম হে খালা! আমাকে কিছু শুনান।
তিনি বলেনঃ আমি (উহুদ যুদ্ধের দিন পানির মশক নিয়ে বের হলাম এবং একবারে রাসুল ﷺ এর নিকট চলে গেলাম, তখন যুদ্ধের পরিস্থিতি মুসলমানদের অনুকুলে ছিল। অতঃপর যখন পরিস্থিতি প্রতিকুল হয়ে গেল, আমি রাসুল ﷺ এর সামনে থেকে সরাসরি যুদ্ধ করতে লাগলাম এবং রাসুল ﷺ এর উপর যে আক্রমণ আসছিল তা তরবারি দ্বারা প্রতিহত করছিলাম। উম্মে সাঈদ বিনতে সাআদ বিন রাবীকে বলেনঃ আমি তাঁর গায়ে গর্ত দেখতে পেলাম অতঃপর বললাম, আপনাকে আঘাত কে করেছিল? তিনি বলেনঃ ইবনে কিময়া।
এ হলেন সেই বীর বাহাদুর মুজাহিদাহ উম্মে আম্মারা। আসলেই তিনি যা পেরেছেন কে তার ক্ষমতা রাখে? যেখানে পুরুষরাই রাসুল ﷺ এর সঙ্গে ধৈর্যশীল ও অটল থাকতে পারছিলেন না সেখানে নারীরা কিভাবে পারবে। কিন্তু হে বোন! আল্লাহর রাস্তায় তার এই বীরত্ব, ত্যাগ, অটলতা, সাহসিকতা ও ধৈর্য তোমার জন্য কখন আদর্শ হবে?
প্রিয় বোন!
তোমার কাছে একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত পেশ করছি, যা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যের পথে নারীরা ত্যাগ, কুরবানির প্রতি ইঙ্গিত করছে। তিনি মনে মনে আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন এবং যুদ্ধের ময়দানেও প্রবেশ করেছিলেন, পুরুষদেরকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করতেন, এগুলো সবই দ্বীনের ভালোবাসা ও ইসলামের সাহায্যের জন্য। আর এ উত্তম দৃষ্টান্ত হল হযরত উম্মে সুলাইম রাঃ এর। তার সম্পর্কে হায়াতুস সাহাবাতে (১/৫৯৭) এবং সিফাতুস সাফওয়াতে (২/৬৬) এসেছে যে তিনি আল্লাহর দ্বীনের প্রতি উৎসর্গ হয়ে হুনাইনের যুদ্ধের দিন ময়দানে প্রবেশ করেন, তার সাথে একটি খঞ্জর ছিল। উম্মে সুলাইম রাঃ কে এ অবস্থায় দেখে আবু তালহা রাঃ হেসে হেসে রাসুল ﷺ এর কাছে এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি উম্মে সুলাইমকে দেখেছেন যে, তার সাথে খঞ্জর রয়েছে? তখন রাসুল ﷺ তাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে উম্মে সুলাইম! তুমি এটা দ্বারা কী করবে? তিনি বললেনঃ আমি ইচ্ছা করছি তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি আমাদের কাছে আসে তাহলে তাকে এটা দ্বারা আঘাত করবো। অন্য রেওয়ায়াতে এসেছে আমি এটা নিয়েছি মুশরিকদের মধ্য থেকে কেউ যদি আমাদের নিকট আসে তাহলে আমি এটা দ্বারা তার পেট ফেরে দিব। তখন রাসুল ﷺ হাঁসতে লাগলেন।
আমার দ্বীনী মুজাহিদা বোন!
এখানে আরেকটি দৃষ্টান্ত পেশ করছি। এতে রয়েছে রুহের খোরাক, যা আমাদের মহিলাদের খুবই প্রয়োজন। আমরা মনে করিনা যে কোন পুরুষ তার পিছনে এমন নারী আছে জানার পর জিহাদ থেকে পিছপা হবে। আর দৃষ্টান্তটি হলঃ রাসুল ﷺ এর ফুফু সুফিয়া বিনতে আব্দুল মুত্তালিব, আল ইছাবাতে (৭/৭৪৪) তার সম্পর্কে এসেছে যে, তিনি বলেনঃ “রাসুল ﷺ যখন খন্দকের যুদ্ধে বের হন, তখন নারীদেরকে ‘উতম’ নামক দূর্গে রেখে যান। এটাকে ফারাও বলা হয়। হাসসান বিন ছাবিত রাঃ কে তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব দেন। তিনি বলেনঃ অতঃপর একটি ইয়াহুদি দুর্গে আরোহণ করে ও আমাদের দিকে উকি দেয়। তখন আমি হাসসান বিন ছাবিত রাঃ কে বললামঃ উঠ, এই ইহুদিকে হত্যা কর। তিনি বলেন যদি তা (ক্ষমতা) আমার মাঝে থাকত তাহলে তো আমি নবী করিম ﷺ এর সঙ্গেই (যুদ্ধে) থাকতাম। কেননা তিনি অতি বৃদ্ধলোক ছিলেন। তিনি বলেনঃ তখন আমি উঠে একটি খুঁটি নিলাম এবং দূর্গ থেকে নেমে সেই ইয়াহুদিকে হত্যা করলাম এবং তার মাথা কেটে নিলাম ও তারপর হাসসান বিন ছাবিত রাঃ কে বললাম এটা ইয়াহুদিদের মাঝে নিক্ষেপ করুন। তারা ছিল দূর্গের নিচে। তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ, এটা কী? তিনি বলেন, অতঃপর আমি তা নিয়ে ইয়াহুদিদের মাঝে নিক্ষেপ করলাম। তখন তারা বললোঃ জানতে পারলাম যে, এ ব্যক্তি তার পরিবার বর্গের মাঝে কাউকে না রেখেই ছেড়ে যায় নি। অতঃপর তারা বিভক্ত হয়ে যায়। ইনিই প্রথম কোন মুশরিককে হত্যাকারী মহিলা। ইবনে সাআদ তা আবু উসামা হতে বর্ণনা করেছেন।
আর পুরুষদের তিনি শুধু যবান দ্বারাই জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন নাই এবং পুরুষদের যারা জিহাদে অংশগ্রহণ করে নাই তাদেরকেই উদ্বুদ্ধ করেন নাই বরং গাজীদেরকেও উদ্বুদ্ধ করেন যারা শত্রুর উপর বিজয়ী হতে পারেন নাই। তার সেই উদ্বুদ্ধকরণ ছিল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারা। আল ইসাবাতে হাম্মাদের সূত্রে এসেছে, তিনি শিহাব ও তার পিতা হতে যে, উহুদ যুদ্ধের দিন মুসলমানরা ছুটাছুটি করছিল, তখন সুফিয়া হাতে বর্শা নিয়ে এলেন, তা দিয়ে তিনি তাদের মুখে মারছিলেন, তখন নবী করীম ﷺ বললেনঃ হে যুবাইর! সাবধান! মহিলা। তার ধৈর্য্য ও সহনশীলতা পাহাড়ের ন্যায়। আল ইসাবাতে এসেছে যে, হযরত হামযা রাঃ যখন শহীদ হলেনঃ তখন সুফিয়া বিনতে আব্দুল মুত্তালিব তার ভাইকে দেখার জন্য আসলেন, তখন যুবাইর রাঃ এর সঙ্গে তার সাক্ষাত হল। তিনি বলেন, হে মহিলা! রাসুল ﷺ তোমাকে ফিরে যেতে বলেছেন। তিনি বলেন কেন? আমি জেনেছি তাকে বিকৃত করা হয়েছে। আর আল্লাহর জন্য এর থেকে অধিক কোন জিনিস আমাদেরকে অধিক সন্তুষ্ট করাবে? অবশযই আমি ধৈর্য্যধারণ করবো এবং সন্তুষ্ট হব ইনশাআল্লাহ। তখন যুবাইর রাঃ এসে নবীজীকে জানালে তিনি বলেন তাকে আসতে দাও। তখন তিনি আসলেন এবং তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। অতঃপর তাঁকে দাফন করা হল।
হে আমার দ্বীনী বোন!
এটা তোমার জন্য আরেকটি আদর্শ। তাই আমাদের নারীরা সেখানে কখন পৌঁছাবে, যেখানে তারা পৌঁছেছেন? ত্যাগ ও উৎসর্গের ক্ষেত্রে। এ আদর্শটি হল আসমা বিন্তে ইয়াযিদ বিন সাকানের যিনি মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ এর ফুফু ছিলেন। তার সম্পর্কে সিআরে আ’লামিন নুবালাতে (২/২৯৭) এসেছে যে, তিনি বায়াত গ্রহণকারী মুজাহিদা নারী। তিনি ইয়ারমুকের দিন তার তাঁবুর খুঁটি দিয়ে ৯ জন রোমক কাফেরকে হত্যা করেছিলেন।
প্রিয় বোন!
এভাবে নিয়ে উল্লেখিত মুজাহিদা নারীকেও তোমার আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যের ক্ষেত্রে সেই বাহাদুরনী হলেন মুসা লাখসিয়্যার মা, যিনি নাসির লাখসিয়্যার স্ত্রী, যার ছেলে স্পেন বিজেতা ছিলেন। আল ইসাবাতে (৪/৫০১) এসেছে যে তিনি তার স্বামীর সঙ্গে ইয়ারমুক যুদ্ধে উপস্থিত হন এবং এক আফ্রিকানিকে হত্যা করে তার সালব (সামানা বা জিনিসপত্র) গ্রহণ করেন।
আব্দুল আজীজ তার কাজে তা জানতে চাইলে তিনি তা বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আমরা মহিলাদের একটি দলের মাঝে ছিলাম। তখন কতিপয় পুরুষ এসে ঘোরাফেরা করছিল, আমি এক আফ্রিকানিকে দেখলাম সে একজন মুসলমানকে টানছে, আমি তাঁবুর একটি খুঁটি নিয়ে তার নিকটে গিয়ে তার মাথায় সজোরে আঘাত করলাম এবং তার সালব (সামানা বা জিনিসপত্র) ছিনিয়ে আনলাম। এতে পুরুষরা আমাকে সাহায্য করেছেন।
প্রিয় বোন!
তোমাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কতবার তোমার ভাইদের আহত, নিহত ও নির্যাতিত অবস্থায় দেখেছ? কোন একদিনও কি তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছ? তুমি দেখনি মূসার মা কী করেছেন? শুধু একবার যখন সেই দৃশ্য দেখলেন, তখন আর সহ্য করতে পারেননি। তাঁবুর খুঁটি নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে প্রবেশ করেন, অথচ তার শত্রুর কাছে ছিল তরবারি। এই দ্বীনের প্রতি তাঁর গায়রত ও ভালবাসাই তাকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। বোন! তোমার গায়রত কোথায়? নাকি তোমার গায়রতকে মুজাহিদদের সম্পদ আটকানো ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ থেকে নিজ স্বামী ও ছেলেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে খরচ করেছ?
প্রিয় বোন!
তোমার জন্য আবু জাহলের ছেলে ইকরেমার স্ত্রী উম্মে হাকিম বিনতে হারিছের মাঝে শিক্ষা রয়েছে। তিনি কিভাবে তাঁর নিজ স্বামীকে তার বিপদের সময় আল্লাহর রাস্তায় উদ্বুদ্ধ করতেন। আল ইসাবাতে (৪/৪৪) এসেছে যে, তিনি নিজ স্বামী ইকরিমার সঙ্গে রোম যুদ্ধে বের হন। অতঃপর তাঁর স্বামী শাহাদাত বরণ করেন। পরে খালেদ বিন সাঈদ তাঁকে বিবাহ করেন। অতঃপর যখন তিনি তাঁর সঙ্গে বাসর করতে চাইলেন তিনি বললেন, আল্লাহ তা’লা এই বাহিনীকে পরাজিত করা পর্যন্ত বিলম্ব করবেন কি? তিনি বললেন, আমার মনে হচ্ছে আমি নিহত হব, তখন তিনি বললেন, তাহলে আপনার ইচ্ছা। অতঃপর খালেদ বিন সাঈদ এক পুলের নিকট বাসর করলেন। পরে সে পুলের নাম হয়ে যায় উম্মে হাকিম পুল।
অতঃপর সকাল বেলা ওলীমা করলেন। তারা যখন খানা থেকে অবসর হলেন, তখন রোমানরা আক্রমণ করলো এবং যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল ও তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। এদিকে উম্মে হাকিমও কাপড় বেঁধে নিলেন এবং বেরিয়ে পড়লেন। অথচ তাঁর শরীরে তখনও মেহেদীর চিহ্ন ছিল। সেদিন উম্মে হাকিম যুদ্ধ করেছেন এমনকি যে তাঁবুতে তিনি বাসর করেছিলেন সেই তাঁবুর খুঁটি দ্বারা সাতজন রোমানকে হত্যা করেছিলেন।
প্রিয় বোন!
এখানে আরেকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করছি যাতে তোমার জন্য শিক্ষা রয়েছে এবং তাঁর জীবনী তোমাকে জিহাদকে ভালবাসার দিকে উদ্বুদ্ধ করবে, যেভাবে মহিলা সাহাবিয়াতরা একে ভালবাসতেন ও এর প্রতি আগ্রহী ছিলেন। কোন জিনিস আমাদের নারীদেরকে জিহাদের ভালবাসা থেকে দূরে রেখেছে বরং তাদেরকে জিহাদ বিরোধিতার নিকটবর্তী করে দিয়েছে? তা একমাত্র ঈমানের দুর্বলতার কারণেই।
যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ﷺ এর ভালবাসা সবকিছুর উর্ধ্বে হত তাহলে আমাদের নারীরা উম্মে হারামের ন্যায় হত। আলা ইসাবাতে (৪/৪৪১) এসেছে যে, রাসুল ﷺ উম্মে হারাম বিনতে মিলহানের ঘরে দুপুর বেলায় কায়লুলা করলেন অর্থাৎ ঘুমালেন। অতঃপর হেসে হেসে জাগ্রত হলেন আর বললেনঃ আমার উম্মতের একদল লোককে আমার সামনে পেশ করে হয়েছে, তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতেছে। আর তারা এই সমুদ্রের উপর দিয়ে রাজা বাদশাহের ন্যায় সিংহাসনে বসে ভ্রমণ করতেছে। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল ﷺ! আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন আমিও যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত হই। তিনি তাঁর জন্য দোয়া করলেন। অতঃপর আবার মাথা রেখে ঘুমালেন। অতঃপর আবার হেসে হেসে জাগ্রত হলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কোন জিনিস আপনাকে হাসাল? রাসুল ﷺ বললেনঃ আমার উম্মতের একদল লোককে আমার সামনে পেশ করে হয়েছে। তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতেছে…) যেভাবে প্রথমবার বলেছেন। তিনি বলেন,
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন আমি যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত হই। তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম সারির অন্তর্ভুক্ত হবে। অতঃপর উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রাঃ সেই সমুদ্রে ভ্রমণ করেছেন এবং সমুদ্র হতে বের হওয়ার সময় সওয়ারী হতে পড়ে আহত হন এবং শাহাদাত বরণ করেন। (আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন) ইবনে আছীর বলেন, সেই যুদ্ধটি ছিল ‘কবরসের যুদ্ধ’। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। সেই যুদ্ধের সেনাপতি ছিলেন মু’আবিয়া বিন আবু সুফিয়ান রাঃ। উসমান রাঃ এর খেলাফতের যুগে ও সাঁতাশ হিজরি সনে।
প্রিয় বোন!
এ হলেন উম্মে হারাম। যিনি আখেরাতের ক্ষেত্রে অল্পে তুষ্ট হননি। বরং ইসলামের শৌর্য-বীর্যদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগ্রহী হলেন এবং রাসুল ﷺ এর কাছে দোয়া চাইলেন, যেন তিনি সেই সেই যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। তাঁর অন্তর আল্লাহ, তাঁর রাসুল ﷺ ও দ্বীনের ভালবাসায় ভরপুর ছিল বিধায় তিনি এ প্রশ্ন করেছিলেন এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য নিজেকে পেশ করেছিলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁকে জান্নাতের মাঝে স্থান দান করেছেন।
প্রিয় বোন!
নারীদের ধৈর্য এবং সন্তানদেরকে আল্লাহর রাস্তায় উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রে তোমার জন্য আরেকটি উদাহরণ পেশ করছি। আর তিনি হলেন দুই পিতা বিশিষ্টা নারী আসমা বিনতে আবু বকর রাঃ। ‘সিয়ারো আল’আমিন নুবালাতে (২/২৯৩) এসেছে যে, উরওয়া রাঃ বলেনঃ আমার ভাই আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের শহীদ হওয়ার দশ রাত পূর্বে, আমি এবং তিনি আম্মাজানের নিকট গেলাম। তখন তিনি মারাত্মক ব্যাথায় আক্রান্ত ছিলেন। তখন আব্দুল্লাহ বললেন, আপনার কি অবস্থা? উত্তরে তিনি বললেন, ব্যাথায় আক্রান্ত। তিনি বলেন, মৃত্যুতে মুক্তি পাবেন। উনার মা হেঁসে দিয়ে বলেন, সম্ভবত তুমি আমার মৃত্যুর ব্যাপারে আগ্রহী। এমন করোনা। আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি মৃত্যুর ব্যাপারে আগ্রহী নই যে যাবত না তুমি একপাশে অবস্থান নিবে। অর্থাৎ হাজ্জাজের সঙ্গে যুদ্ধে হয় তুমি শহীদ হয়ে যাবে, তখন আমি সবর করবো ও পরিতৃপ্ত হব আর না হয় তুমি বিজয়ী হবে, তখন আমার চক্ষু শীতল হবে। তখন তাঁর বয়স একশত বছর ছিল।
আব্দুলাহ ইবনে যুবায়ের শহীদ হওয়ার পর ইবনে ওমর রাঃ তাঁর মা আসমা রাঃ এর কাছে যান তাঁকে শান্তনা দেবার জন্য। এসে তাঁকে মসজিদের কিনারায় পেলেন। তিনি তখন তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, এই দেহ তো কিছুই না। নিশ্চয়ই আত্মাসমূহ আল্লাহর কাছে। সুতরাং তাঁকে ভয় করুন এবং ধৈর্যধারণ করুন। তখন তিনি বললেন, কেন আমি তা করবোনা? অথচ ইয়াহইয়া বিন যাকারিয়া আঃ এর মাতাকে বনি ইস্রাঈলের জনৈক বেশ্যা নারীর নিকট উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল।
আল্লাহ তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করুন। তিনি আল্লাহর নবীর মুসিবত হতে শান্তনা গ্রহণ করেছেন। আর বিপদকে ছোট করে দেখেছেন। কেননা আল্লাহর দ্বীন তাঁর কাছে নিজ ছেলে হতে অধিক প্রিয়। তাই যখন আল্লাহর নবীর উপর অর্পিত বিপদের কথা স্মরণ করেন যিনি তাঁর ছেলে থেকে আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানী ছিলেন। তখন তাঁর বিপদ সহজ হয়ে যায়।
প্রিয় বোন!
তোমার জন্য আরেকজন মহান নারীর আদর্শ পেশ করছি, যিনি আপন ছেলে শহীদ হওয়ার পরও রাসুল ﷺ এর সুস্থতাকে সবকিছুর উপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কেননা তিনি দৃঢ়ভাবে জানতেন যে, তাঁর ছেলের মৃত্যুতে দ্বীনের কোন ক্ষতি হবেনা, কিন্তু রাসুল ﷺ এর ইন্তিকালে দ্বীনের বিরাট ক্ষতি হবে।
তারিখে ইসলামী (২/২৪৬) তে এসেছে, যখন রাসুল ﷺ উহুদ যুদ্ধ থেকে মদিনার দিকে ফিরলেন, তখন মদিনায় যারা ছিলেন তারা সবাই রাসুল ﷺ কে স্বাগতম জানানোর জন্য বেরিয়ে আসলেন। তাদের মধ্যে আনসারদের নেতা সাআদ বিন মায়াযের মাতাও ছিলেন।
তিনি ঘোড়ার উপর আরোহণ করে আসছিলেন। তাঁর ছেলে সা’আদ রাঃ তাঁর লাগাম ধরলেন, সা’আদ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল ﷺ। ইনি আমার মা। রাসুল ﷺ বললেনঃ মারহাবা, অতঃপর তিনি যখন নিকটে আসলেন রাসুল ﷺ তাকে সান্তনা দিলেন। তাঁর ছেলে আমর বিন মায়ায শহীদ হওয়ায়, তিনি বললেন, আমি যখন আপনাকে সুস্থ দেখছি তখন আমার মুসিবত দূর হয়ে গেছে। রাসুল ﷺ তখন তাঁর জন্য দোয়া করলেন এবং বললেনঃ সুসংবাদ নাও, শহীদদের পরিবার জান্নাতে তাদের সাথেই থাকবে এবং পরিবারের সকলের ক্ষেত্রে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।
এমনিভাবে আরেকজন সাহাবিয়াহ রাসুল ﷺ সুস্থ থাকায় নিজের বিপদকে কিছুই মনে করেন নাই। বর্তমানে আমাদের নারীদের ন্যায় নয়, যারা নিজের প্রেমিককে ছাড়া অন্যের জন্য কাঁদেনা। আর দ্বীনের বা পরিবারের বিপদে তাদের গায়ে লাগেনা। বোন! নেককার নারীদের অন্তর্ভুক্ত হও যদি জান্নাতে যেতে চাও।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (৪/৪৭) গ্রন্থে এসেছে ইবনে ইসহাক সাআদ রা: বনী দিনার গোত্রের জনৈক মহিলার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, আর সে মহিলার স্বামী, ভাই, ছেলে এবং পিতা আহত হয়েছিলেন। যখন লোকেরা তাকে সেই দুঃসংবাদ জানালো, তিনি বললেন, রাসুল ﷺ কেমন আছেন? তারা বলল, আলহামদুলিল্লাহ তিনি ভাল আছেন। তিনি বললেন: আমাকে দেখাও, যাতে আমি তাকে একবার দেখতে পারি, তখন রাসুল ﷺ এর দিকে ইঙ্গিত করা হল, এবং তিনি দেখে নিলেন,অতঃপর তিনি বললেন : আপনাকে দেখার পর সকল বিপদ মুছিবতই তুচ্ছ।
প্রিয় বোন!
তুমি যদি আল্লাহর রাস্তায় বিপদ মুছীবতে ধৈর্য ধারণ করার আদর্শ চাও তাহলে তুমি নিচের আদর্শটি গ্রহণ করতে পার। সিয়ারে আলামিন নুবালা (৪/৫৮) গ্রন্থে এসছে যে, মুয়ায বিনতে আব্দুল্লাহ যিনি উম্মে সাহল নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন এবং সালত বিন আশআমের স্ত্রী ছিলেন। যখন তাঁর স্বামী সালত এবং ছেলে কোন এক যুদ্ধে শহীদ হলেন, তখন মহিলারা তার (শান্তনা দেওয়ার জন্য) কাছে আসলেন, তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা যদি আমাকে স্বাগতম জানানোর জন্য এসে থাক তাহলে তোমাদেরকে মোবারকবাদ, আর অন্য উদ্দেশ্যে এসে থাকলে ফিরে যাও। আর তিনি বলতে লাগলেন: “আল্লাহর শপথ আমি বেঁচে থাকাকে পছন্দ করছিনা তবে ছওয়াব অর্জন করে আমার প্রভুর নৈকট্য অর্জন করব যাতে তিনি জান্নাতে আমাকে আবু শাআছা ও তাঁর পুত্রের সঙ্গে একত্রিত করে দেন।
প্রিয় বোন!
এখানে আরেকজন মহিলার কথা তোমাকে শুনাব। আল্লাহ তাআলা তাকে নারীদের মাঝে সম্মানিত করেছেন, এবং শহীদ সন্তানদের জননী বানিয়েছেন। তিনি-ই একমাত্র সৌভাগ্যবান সেই মহিলা যার সকল সন্তানরা বদর যুদ্ধে রাসুল ﷺ এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আল-ইসাবা (৮/২৬) গ্রন্থে এসেছে আফরা বিনতে উবাইদ বিন ছালাবার দুই পুত্র মায়ায ও মুআওয়্যায শহীদ হওয়ার পর তাদের মা, রাসুল ﷺ এর নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসুল! এটি কি আওফ বিন হারিছের বংশের শেষ জন? আমি বলি এই “আফরা রা:” এর একটি বৈশিষ্ট আছে যা অন্যদের মাঝে পাওয়া যায়না। আর তা হল তিনি হারেছের পর বাকির বিন ইয়ালাইল লাইছি কে বিবাহ করেছিলেন। তার ঐরসে উনার চারটি সন্তান হয়েছিল। তারা হল ইয়াস, আকিল, খালেদ ও আমের এরা সবাই বদর যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। সুতরাং সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, ইনি একমাত্র মহিলা সাহাবী যার সাতটি ছেলে নবী করীম ﷺ এর সঙ্গে বদর যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন।
হে পুরুষদের মাতা!
আপনার কয়জন ছেলে পাঠিয়েছেন? যেভাবে আফরা রা: পাঠিয়েছিলেন। আপনার একটি ছেলেও কি কোন জিহাদে অংশগ্রহন করেছে? আপনি লজ্জাবোধ করেন না! এত ছেলের মাতা হলেন কিন্তু তাদের কেউ আল্লাহর দ্বীনের জন্য এগিয়ে আসলোনা। বরং আপনি কি আল্লাহকে ভয় করছেন না! যে জিহাদের পথে আপনি কিনা তাদের জন্য বাঁধা হয়ে যাচ্ছ। আর পূর্বসুরীদের মাঝে আপনার জন্য কি কোন শিক্ষা, নসীহত নেই? বোন! পাঠাও তারা যা পাঠিয়েছেন, যাতে তাদের ন্যায় তুমিও সওয়াব অর্জন করতে পার।
এই আরেকজন বিখ্যাত মহিলা, যদি আমাদের নারীরা উনার মত হত তাহলে একজন পুরুষও জিহাদ থেকে পশ্চাতগামী থাকত না। বরং দলে দলে জিহাদে অংশগ্রহন করত। আল ইসাবা (৭/৬৪) ও তাবকাতে শাফিইয়্যাহ (১/২৬০) তে উনার সম্পর্কে এসেছে যে, খানছা বিনতে আমর আসসালিমিয়্যাহ, কাদিসিয়ার যুদ্ধে তাঁর চার ছেলেসহ উপস্থিত হলেন, এবং তাদেরকে মূল্যবান কিছু নসীহত করলেন, দৃঢ় পদে যুদ্ধ করা ও পলায়ন না করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, হে ছেলেরা! তোমরা স্বেচ্ছায় আনুগত্যের সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছ, এবং স্বেচ্ছায় হিজরত করেছ। আর তোমরা এক পিতা-মাতার সন্তান, আমি তোমাদের বাপ, চাচার মুখ কালো করিনি, তোমাদের মামাদেরকে লজ্জিত করিনি। অতঃপর বললেন: তোমরা জান যে, কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাঝে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য কি ছাওয়াব রেখেছেন। আর তোমরা এটাও জানো যে, ক্ষনস্থায়ী বাসস্থান (দুনিয়া) অপেক্ষা চিরস্থায়ী (জান্নাত) বাসস্থান উত্তম। সুতরাং আগামী কাল যদি তোমরা সুস্থতার সাথে সকাল কর তাহলে তোমাদের শত্রুর বিরুদ্ধে বুঝে শুনে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে।
অতঃপর যখন যুদ্ধের আগুন জলে উঠবে ও তার স্ফুলিঙ্গ উড়তে থাকবে তখন ময়দানে ঢুকে পড়বে এবং মাথা চেপে ধরবে। তাহলে তোমরা বিজয়ী হবে গণীমত দ্বারা এবং চিরস্থায়ী বাসস্থান (জান্নাত) এর সম্মানের দ্বারা। অতপর ছেলেরা মায়ের উপদেশাবলীর অনুসরণ করে অগ্রসর হল, যখন ভোর হল তারা যুদ্ধের ময়দানে অবস্থান নিল। এবং একের পর এক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করতে লাগলে। এমনকি সবাই শাহাদত বরণ করল। তারা প্রত্যেকেই শহীদ হওয়ার পূর্বে কিছু কবিতা আবৃত্তি করে ছিল নিচে তা উল্লেখ করা হল।
প্রথমজন বলল-
- হে ভাইগণ! নিশ্চয় বৃদ্ধা নসীহতকারীণী মা গত রাতে ডেকে আমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেণ।
- কতিপয় সুস্পষ্ট কথা, যে তোমরা ভীষণ যুদ্ধে সকাল করো।
- আর তোমরা সকালে সাসান এলাকার কতিপয় কুকুরদের মুখোমুখি হবে।
- তারা তোমাদের দুর্যোগ-বিপদের ব্যাপারে দৃঢ় নিশ্চিত অথচ তোমরা এখনো সুস্থ জীবনের মাঝে রয়েছে।
অতঃপর সে অগ্রসর হয়ে শত্রুদের মাঝে ঢুকে পড়ল এবং যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে গেল। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি রহম করুণ।
অতঃপর দ্বিতীয় ছেলে সামনে বাড়ল এবং আবৃত্তি করতে লাগল-
- নিশ্চয় বৃদ্ধা মা বিচক্ষণ, ধৈর্যশীল, মমতাময়ী এবং সিংহের ন্যায় হিম্মতের অধিকারী নারী।
- তিনি আমাদের মঙ্গল কামনা করে যথার্থ উপদেশাবলী প্রদান করেছেন।
- সুতরাং তোমরা ভোরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও নগদ বিজয়ের জন্যে অথবা শাহাদতের জন্যে যা তোমাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বানাবে।
উনিও যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করলেন: আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি রহম করুণ।
তৃতীয় ছেলে সামনে বাড়ল এবং আবৃত্তি করতে লাগল-
- তিনি আল্লাহর শপথ আমি তাঁর এক অক্ষরও অমান্য করবনা, আমাদেরকে মমতার সঙ্গে নসীহত করেছেন।
- উত্তম সত্য ও ভালবাসাপূর্ণ নসীহতসমূহ। সুতরাং হামাগুড়ি দিয়ে যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হও।
অতপর চতুর্থ ছেলে অগ্রসর হল এবং আবৃত্তি করতে লাগল-
- আমি মা খানছার বা আখরাম বা আমরের সন্তুষ্টির জন্য যুদ্ধ করবনা
- বরং নগদ বিজয় এবং গণীমতের জন্য অথবা আল্লাহর রাস্তায় শাহাদত বরণের জন্য যুদ্ধ করবে।
তিনিও যুদ্ধ করে করে শহীদ হয়ে গেলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি রহম করুণ।
অতঃপর যখন ছেলেদের শাহাদতের খবর তাঁর কাছে পৌছল, তিনি বললেন: সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি আমাকে এই সৌভাগ্য দান করেছেন।
হযরত ওমর রাযি: খানাসাকে তাঁর চার ছেলের ভাতা দিতেন, প্রত্যেকের জন্য একশ দিরহাম করে।
মুসলিম বোন!
এ হল সালফে সালিহীন নারীদের কিছু দৃষ্টান্ত। তোমার সামনে তাদের ত্যাগ- কুরবানী ও মুজাহাদার কিছু অবস্থা পেশ করলাম। তাদের ন্যায় আরো অনেক রয়েছেন। প্রবন্ধ দ্বীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কায় আর বেশি উল্লেখ করতে চাচ্ছিনা। উল্লেখ্য যে, আমরা কেবল তাদের জীবনের একটি দিকই উল্লেখ করলাম। আমরা যদি তাদের এবাদত-বন্দেগী, খোদাভীতি, ইলম,দান খয়রাত ও সকল আমলের দিক উল্লেখ করতাম তাহলে কেমন হতো! আলোচনা অনেক দ্বীর্ঘ হয়ে যেত। কিন্তু আমরা যতটুকু উল্লেখ করছি, ইনশাআল্লাহ তা-ই যথেষ্ট।
এ যুগের কিছু মুজাহিদা নারীর উদাহরণ
প্রিয় বোন!
তুমি যখন এসব কাহিনী শুনো, কখনও হয়তো মনে হতে পারে যে এগুলো কোন কল্পকাহিনী কিনা! কিন্তু যখন তুমি জানবে যে, বর্তমান যুগের নারীদের মাঝেও কিছু নারীরা এমন রয়েছেন যারা পূর্বসুরীদের ন্যায় ঈমান ও আল্লাহর ভালবাসা রাখেন। তখন পূর্বসুরীদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা তোমার বিশ্বাস হবে।
সাহসিকতা ও উৎসর্গের ক্ষেত্রে এ যুগের নারীদের মধ্য থেকে একজনের দৃষ্টান্ত পেশ পরছি। যিনি সমসাময়িক নারীদের সরদার, শাহাদতবরণকারিণী।
তিনি হলেন “হিওয়া বারাইফ” একজন যুবতী নারী। শত্রুরা যখন তার শহরে প্রবেশ করে এবং শহরবাসীর প্রতি জুলুম-নির্যাতন চালায়, তখন থেকেই তার হৃদয়ে প্রতিশোধের আগুন জলে উঠে। তিনি সর্বত্মভাবে মুজাহিদদেরকে সাহায্য করতে থাকেন। অতপর তিনি যখন শুনলেন যে, শত্রুদেরকে ধ্বংস করার জন্য কোন ব্যাক্তি নিজেকে শত্রুদের মাঝে পেশ করা জায়েয। (অর্থাৎ তাদেরসহ নিজে মরা) তখন তিনি মনে মনে ঠিক করলেন যে, তিনি-ই সেই শহিদী হামলাকারিণী হবেন। তাঁর এক চাচাতো ভাই যিনি কমান্ডার ছিলেন, তার কাছে বারবার নিজের ইচ্ছার কথা বলতে লাগলেন। বারবার তার পীড়াপীড়ির পর তিনি রাজি হলেন। তাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিলেন। যখন আল্লাহ তাআলার সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময় এসে গেল, তিনি সালাত আদায় করলেন, কুরআন মাজিদ তেলাওয়াত করলেন এবং মাতা-পিতা ও আত্মীয়দের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। অতপর বিস্ফোরক বোঝাই করা একটি ট্রাকে আরোহন করলেন। এবং শত্রুদের একেবারে ভিতরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটালেন। আর শহীদ হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। এটাই আমাদের ধারণা।
আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে এ যুগের আরেকজন নারীর দৃষ্টান্ত পেশ করছি। তিনি হলেন “উম্মে ওমর আল মক্কিয়াহ”। এ মহিলাটি আল্লাহর সঙ্গে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন যে, তিনি নিজের সবকিছু দিয়ে আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যে আফগান জিহাদে যাবেন। তাই তাঁর ছেলেকে পাঠালেন আর নিজে মক্কাতে মহিলাদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত হলেন। এমনকি তিনি নিজের ঘরে তৈরী খাদ্য আফগান মুজাহিদদের জন্য পাঠাতেন। একদিন তিনি আফগানিস্তানের মুজাহিদা নারীদেরকে দেখার জন্য সংকল্প করলেন। আল্লাহর বান্দিকে আটকায় কে! তিনি এসে গেলেন আফগানিস্তান। আসার পর তিনি মুজাহিদদের ফ্রন্টে প্রবেশ করার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। মুজাহিদরা তাকে ফিরানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু কাজ হলনা। বরং তিনি আল্লাহর রাস্তায় শত্রুর প্রতি অস্ত্র নিক্ষেপ করবেন বলে শপথ করে বসলেন। অবশেষে তারা সম্মত হলেন। তিনি নিজ ছেলের সঙ্গে গাড়িতে আরোহন করলেন, এবং যুদ্ধের ফ্রন্টে প্রবেশ করলেন। এগুলো সবই তাঁর নেক আকাঙ্খা পুরণ, নিজ চোখে দুশমনকে দেখা, আল্লাহ তাআলার রাস্তায় শত্রুর প্রতি অস্ত্র নিক্ষেপ করা। তিনি নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করলেন। এবং একটি রকেট লাঞ্চার শত্রুর প্রতি ছুড়লেন। শত্রুরা তাঁর দিকে রকেট ছুড়ল। তাঁর কাছ থেকে জানা গেল যে, তাঁর রকেটটি লক্ষ্যবস্তুতে ঠিকভাবেই আঘাত হেনেছে। এবং তার অন্তরের ব্যাথা কিছুটা লাঘব হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা তাকে অফুরন্ত ছাওয়াব ও দান করবেন।
এ যুগের আরেকজন সৎ সাহসী নারীর দৃষ্টান্ত পেশ করছি। যিনি হযরত আসমা এবং উম্মে সাআদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখেন, তিনি হলেন উম্মে সুরাকা। তাঁর কলিজার টুকরা ছেলে যখন জিহাদে শহীদ হলেন, মুজাহিদরা ইতস্তত: করছিলেন যে, কিভাবে তাঁর মাকে এ সংবাদ দিবেন। কিন্তু যখন শায়খ আব্দুল্লাহ আ’যযাম রাহ. তাঁর মাকে সংবাদ দিলেন তখন তার সকল বিপদ দুরীভূত হয়ে গেল। শায়খ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ছেলে শহীদ হওয়ার সুসংবাদ দিলেন, এবং ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিলেন। কি আশ্চর্য ! উলটা তিনি পূর্বসূরী নেক নারীদের কথা স্বরণ করিয়ে দিলেন। আর বললেন: আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া যে, তিনি আমার ছেলেকে এই সৌভাগ্য দান করেছেন। এবং বললেন: ইনশাআল্লাহ! আগামী সপ্তাহে তাঁর ভাইকে আপনাদের কাছে পাঠাইতেছি তাঁর ভাইয়ের শুন্যস্থান পূরণ করার জন্য।
এ যুগের নারীদের মধ্যে আরেকজন সাহসী নারী। যিনি সুফিয়া রাযি: এর ন্যায় পুরুষদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি হলেন উম্মে গাজনাফার। তিনি একেবারে নিরক্ষর একজন মহিলা। একদিন এক মজলিসে বসলেন, সেখানে একজন মহিলা জিহাদের ফযীলত, শাহাদতের মর্তবা এবং পিতা-মাতাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য শহীদের সুপারিসের আলোচনা করছিলেন। উম্মে গাজনাফার তা ভালোভাবে শুনলেন এবং হৃদয়ের মাঝে গেঁথে নিলেন। অতঃপর ঘরে ফিরে তাঁর একমাত্র ছেলেকে ডাকলেন, এবং তাকে আফগান জিহাদে যাওয়ার প্রতি আহবান করলেন, যাতে আল্লাহ তা’আলা তাঁর শাহাদাত নসীব করেন। কিন্তু ছেলের পক্ষ থেকে তিনি আগ্রহ অনুভব করলেন না। ফলে ছেলে প্রতি রাগ করলেন, অসন্তুষ্ট হলেন। গাজনাফার তাঁর মাকে খুশি করার চেষ্টা করল। কিন্তু মা কোনভাবেই সন্তুষ্ট হচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে মা গাজনাফারের হাত ধরে এই বলে কাঁদতে লাগলেন যে, “কেয়ামতের দিন কে আমাদের জন্য সুপারিস করবে?” গাজনাফার বলেন, আমি সম্মত ও প্রস্তুত হওয়ার আগ পর্যন্ত মা, সন্তুষ্ট হন নি। আমি যখন তাকে জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছার কথা শুনালাম, তিনি বললেন সেখানে তুমি কত দিন থাকবে? আমি বললাম, চার থেকে ছয় মাস। তখন তিনি আমার মুখে থুথু দিয়ে বললেন, তুমি কি চার, ছয় মাসের জন্য তোমার নিজেকে বিক্রি করতে চাও। যাও আল্লাহ তোমাকে দুই কামিয়াবির একটি নসীব করা পর্যন্ত জিহাদ করতে থাক”।
প্রিয় বোন!
দেখেছ? কিভাবে এ যুগের সৎ সাহসী নারীরা দ্বীনের জন্য ত্যাগ ও কুরবানীর উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তুমি কি মনে কর যদি এ যুগের সকল মুসলিম নারীরা ঐ মহিলাদের ন্যায় হতেন তাহলে কি শত্রুরা আমাদের দেশের নারীদের উপর চরাও হতে পারত? উত্তর নিশ্চয় সুস্পষ্ট নেতিবাচক হবে। তাহলে তুমি কেন সেই সফলকামী দলের সাথে যোগ দিচ্ছে না। বোন! তুমি সেই নারীদের একজন হও যারা ইতিহাসে নিজের উচ্চস্থান সৃষ্টি করে।
সারাংশ:
প্রিয় বোন! আমরা তোমার হতে যা চাচ্ছি
প্রিয় বোন!
তোমার প্রতি আমাদের এ পত্রের শেষ দিকে এসে গেছি। তোমাকে বিদায় দেয়ার পূর্বে আমাদের উচিত তোমার কাছে আমরা যা চাচ্ছি এর সারমর্ম সংক্ষেপে পেশ করা। আমরা তোমার সামনে পূর্বসুরী ও এ যুগের কতিপয় নেককার নারীর অবস্থা উল্লেখ করেছি, এর দ্বারা তোমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সাহায্যে নারীর কত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। আমরা এটা চাচ্ছিনা যে, তুমি যুদ্ধের ময়দানে প্রবেশ কর কেননা এতে ফিতনা আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু আমরা চাচ্ছি যে, তুমি পূর্বসূরী নারীদের অনুসরণ করবে, জিহাদের প্রতি তাদের উদ্বুদ্ধ করণ, প্রস্তুত করণ, এ পথে ধৈর্যধারণ, এবং শত্রুর মুকাবিলায় সবকিছু দিয়ে আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করার প্রতি আগ্রহের ক্ষেত্রে।
আর তুমি যদি নিজ দ্বীন ও জাতির অপমানের উপর সন্তুষ্ট থাক, তাহলে তোমার ব্যাপারে আমাদের কোন কথা নেই। কিন্তু আমরা তোমাকে আল্লাহর ক্রোধের ব্যাপারে সতর্ক করছি। আর তোমাকে বলছি, আল্লাহকে ভয় করো এবং জিহাদের পথে পুরুষের প্রতিবন্ধক হয়োনা। অন্তত তোমার কাছে আমরা এতটুকু আশা করি যে, পুরুষ জিহাদে বের হওয়ার সময় তুমি নিরব থাকবে এবং আল্লাহর নির্দেশের উপর সন্তুষ্ট থাকবে। জেনে রেখো তুমি যখন কোন পুরুষকে জিহাদে না যাওয়ায় প্রশংসা করবে চাই সে স্বামী হোক বা ছেলে অথবা ভাই, তো নিশ্চয় এটাও এক ধরণের আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিরত রাখার-ই অন্তর্ভুক্ত। তুমি যদি তাদেরকে জিহাদে বের করে ধ্বংস না কর তবে শরয়ী দৃষ্টিতে তাদেরকে জিহাদ থেকে বিরত রাখার অধিকার তোমার নেই। হয়তো তুমি এ কথায় আশ্চর্য হতে পার, এবং বলতে পার কিভাবে মায়ের অধিকার থাকবেনা, অথচ নবী করীম ﷺ বলেছেন: যা বুখারী ও অন্যান্য কিতাবে আব্দুল্লাহ বিন আমর রা: হতে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যাক্তি রাসুল ﷺ এর নিকট এসে জিহাদের অনুমতি চেয়েছে, তিনি বলেছেন: তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত? সে বলল: হ্যাঁ, নবীজী ﷺ বললেন: তুমি তাদের সেবা করো।
আমরা উত্তর দিব, যে এই হাদীছ বা এ ধরণের অর্থবোধক হাদীস আমাদের কাছে অস্পষ্ট নয়। কিন্তু এর বিরোধী হাদীস ও রয়েছে। সেক্ষেত্রে উভয় হাদীসের উপর আমল করতে হয়। যেমন আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন। যে হাদীসটি আবু দাউদের বর্ণনায় এভাবে যে, (তুমি ফিরে যাও এবং তারা উভয়ের অনুমতি নাও, তারা যদি অনুমতি দেন তাহলে জিহাদ করো অন্যথায় তাদের সেবা যত্ন করো)। অধিকাংশ আলেমগণ বলেন: জিহাদ হারাম হয়ে যায় যখন পিতা- মাতা উভয় বা একজন নিষেধ করেন, এ শর্তে যে তারা উভয় মুসলমান, কেননা তাদের খেদমত করা ফরযে আইন, আর জিহাদ হল ফরয়ে কেফায়াহ। তবে জিহাদ যখন ফরযে আইন হয়ে যাবে তখন আর অনুমতি প্রয়োজন নেই। যা সমর্থন করে ঐ হাদীস যা ইবনে হিব্বান রাহ. অন্য সূত্রে আব্দুল্লাহ বিন আমর হতে বর্ণনা করেছেন। (এক ব্যক্তি রাসূল ﷺ এর নিকট এসে উত্তম আমল সম্পর্কে প্রশ্ন করেছে, রাসুল ﷺ বললেন: সালাত, সে বলল: অতপর কোনটি? রাসুল ﷺ বললেন: জিহাদ, সে বলল: আমার মাতা-পিতা আছেন, রাসুল বললেন: আমি তোমাকে পিতা- মাতার সাথে ভালো ব্যবহারের উপদেশ দিচ্ছি। সে বলল: আমি ঐ আল্লাহর শপথ করে বলছি যিনি আপনাকে সত্য নবী হিসাবে পাঠাইয়াছেন, আমি অবশ্যই পিতা-মাতাকে ছেড়ে জিহাদ করব, রাসুল ﷺ বললেন: তুমি ভাল জান)। এটা ফরযে আইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। দুই হাদীসের মাঝে সামাঞ্জস্য বিধান করতে।
হে মায়েরা!
আমাদের এ যুগে জিহাদ ফরযে আইন হয়ে গেছে, সুতরাং আল্লাহর অবাধ্য হয়ে তোমার আনুগত্য করা যাবেনা। আল্লামা কুরতুবী তাঁর তাফসীরে (৮/১৫১) লিখেছেন কখনো অবস্থা এমন হয় যে সবাই যাওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়। আর তা হল যখন জিহাদ ফরয়ে আইন হয়ে যায়। শত্রুরা মুসলিম কোন ভুখন্ডে বিজয় লাভ করার দ্বারা, বা জবর দখলের দ্বারা। যখন তা হয়ে যাবে তখন এদেশের সকলের উপর জিহাদে বের হওয়া ওয়াজিব হয়ে যাবে। হালকা ও ভারী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে, জোয়ান বৃদ্ধা প্রত্যেকের সামর্থ অনুযায়ী। এমনকি যার পিতা মাতা জীবিত আছেন তাদের অনুমতি ছাড়াই। জিহাদে বের হওয়ার সামর্থ রাখে এমন কেউ বসে থাকতে পারবেনা। এ দেশ বা এলাকাবাসী যখন শত্ৰুদের মুকাবিলা করতে অক্ষম হয়ে যাবে তখন তার পার্শ্ববর্তী দেশবাসীর উপর ও তেমনি ফরয হয়ে যায়। যতক্ষণ না তারা জানবে যে, শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধের যথেষ্ট ক্ষমতা এ দেশবাসীর রয়েছে।
এভাবে ঐ ব্যক্তির উপরও ওয়াজিব যে মুসলিমদের দুর্বলতা ও শত্ৰু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার খবর জানে, এবং তাদেরকে সাহায্য করার ক্ষমতাও রাখে। যতক্ষণ না আক্রান্ত এলাকার মুসলিমরা শত্রুর আক্রমন প্রতিরোধে রুখে দাড়াবে। কেননা মুসলমানগণ এক দেহের ন্যায়।
হে মা!
আমাকে উত্তর দিন, ফিলিস্তীন শত্ৰু কবলিত হয়েছে, এবং কাছের বা দুরের কেউ তা প্রতিরোধ করতে পারছেনা, তবে কি এখনো জিহাদ ফরয়ে কেফায়া-ই থাকবে? এই মুসলমানদের স্পেন কয়েক শতাব্দী যাবত শত্ৰু কবলিত হয়েছে, এভাবে চেচনিয়া, কাশমীর, ফিলিপাইন, আরাকান ইত্যাদি। সেখানে ইসলামের নিশানাকে অবধমিত করেছে, মুসলমানদেরকে লাঞ্চিত করেছে এবং কঠিন শাস্তি দিয়েছে। এমনকি বর্তমানে আমরা আফগানিস্তানে ক্রুসেডারদের নতুন আক্রমণ প্রত্যক্ষ করছি। এর পরও কি আপনি জিহাদকে ফরযে কেফায়া এবং বসে বসে আপনা সেবা করা বড় ওয়াজিব বলবেন? হে মা!
ইবনে কুদামা “আল কাফী(৪/২৫৫) গ্রন্থে বলেন: জিহাদ যখন ফরযে আইন হয়ে যাবে তখন আর মা বাবার অনুমতির প্রয়োজন নেই। যেমন ফরয হজ্জের ক্ষেত্রে, এমনিভাবে প্রত্যেক ফরয তরক করার ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করা যাবেনা। কেননা আল্লাহ তাআলা অবাধ্যতা করে কোন মাখলুকের আনুগত্য করা যাবেনা।
কিন্তু আমরা বারবার দৃঢ়তার সাথে বলছি যে, কোন ক্রমেই তোমার জন্য পুরুষদেরকে জিহাদ থেকে বিরত রাখা জায়েয হবেনা, তবে যখন তার বের হওয়ার দ্বারা তোমার বা সন্তানদের ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা হয়। এছাড়া অন্য কোন কারণে যদি বাঁধা দাও তাহলে জেনে রেখো তোমার এই কাজ আল্লাহর রাস্তা হতে বাঁধা দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত। আর কাফেরদের ক্ষেত্রে যে আয়াত নাযিল হয়েছে তুমি তার উপযুক্ত বলে গন্য হবে।
আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে বলেন:
الَّذِیۡنَ یَسۡتَحِبُّوۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا عَلَی الۡاٰخِرَۃِ وَ یَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ یَبۡغُوۡنَہَا عِوَجًا ؕ اُولٰٓئِکَ فِیۡ ضَلٰلٍۭ بَعِیۡدٍ
অর্থ: যারা পরকালের চাইতে পার্থিব জীবনকে পছন্দ করে; আল্লাহর পথে বাঁধা দান করে এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করে, তারা পথ ভুলে দূরে পড়ে আছে।
সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং সেই দিনকে ভয় করো যে দিন তুমি আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবে এবং তিনি তোমাকে প্রশ্ন করবেন তুমি কেন আমার পথ থেকে বাঁধা দিয়েছ? তখন কি উত্তর দিবে? তখন কি এ কথা বলবে যে দুনিয়া আমার কাছে দ্বীনের চেয়ে অধিক প্রিয়? নাকি বলবে যে, ছেলে ও স্বামী আমার কাছে আল্লাহ ও রাসুল ﷺ থেকে অধিক প্রিয়?
আর তুমি যদি নেককারদের অনুসরণ করতে অস্বীকার কর এবং মুখ ফিরিয়ে নাও এবং আল্লাহর পথ থেকে বাঁধা দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর অবাধ্যতা কর, তাহলে আমরা তোমার কাছে আশা করব যে অন্তত তোমার মন্দ থেকে জাতিকে হেফাযত রাখবে। এবং এমন বস্তু হবেনা যার মাধ্যমে এ উম্মতের মেরুদন্ড ও আখলাক নষ্ট করা হয়। আমরা অবশ্যই তোমাদের হতে মঙ্গলের আশা করি। যদি না মান তাহলে আশা করি তোমার মন্দ থেকে আমাদেরকে নিরাপদ রাখবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন এ উম্মতকে ফাসেক -ফুজ্জারদের মন্দ থেকে হেফাযত করেন। নিশ্চয় তিনি এর উপর ক্ষমতা রাখেন।
أخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين
والصلاة والسلام على رسول الله و على أله وصحبه أجمعين
আপনাদের ভাই
ইউসুফ বিন সালেহ আল উয়াইরী