কারদাবির রজম ব্যাখ্যা !!
কারদাবির রজম ব্যাখ্যা !!
মুসলিমদের মধ্যে পরাজিত মানসিকতার প্রসারের অনেক নেতিবাচক ফলাফল আছে। তার মধ্যে একটি হল পশ্চিমা কাঠামোকে সামনে রেখে চিন্তা করা। অবচেতন ভাবেই অনেকে এই ফাঁদে পড়ে যায়। যেমন প্রগতি, আধুনিকতা, উন্নয়ন, অগ্রগতি, পরিবর্তন, স্বাধীনতা, অধিকার – পশ্চিমা চিন্তায় এ কথাগুলো সবসময় ইতিবাচক। এটার কারণ বুঝতে হলে পশ্চিমের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। আজকের উন্নতির আগে পশ্চিমকে একটি অন্ধকার যুগ পেড়িয়ে আসতে হয়েছে। পশ্চিমারা মনে করে সেই অন্ধকার যুগের সব চিহ্নকে মুছে ফেলা, স্মৃতি পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া, সব আদর্শ ও ধ্যানধারণাকে মাটি চাঁপা দেয়ার মাধ্যমেই তাদের আজকের সাফল্য এসেছে। অতীতকে মোছার মাধ্যমে তারা বর্তমানকে সুন্দর করতে পেরেছে। ভবিষ্যত তৈরি করেছে। .
কিন্তু একই কথা মুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। কারণ আমরা জানি এ উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম সময় কোনটা। রাসূলুল্লাহর ﷺ দুনিয়াতে থাকার সময়টা, তারপর খোলাফায়ে রাশেদিনের সময়। তারপর তাবেইন ও তাবে-তাবেইনের সময়। আর তারপর শুরু হয় আমাদের ধীর কিন্তু ক্রমান্বয়ে চলা অধঃপতন। চলতে থাকা এ অধঃপতনের মাঝেই এমন মানুষেরা এসেছেন যারা দ্বীন ও উম্মাহকে আল্লাহর ইচ্ছায় পুনরুজ্জীবিত করেছেন। লক্ষণীয় বিষয় হল যারাই তাজদীদি কাজ করেছেন, উম্মাহ পুনরুজ্জীবিত করেছেন, তারা সেটা করেছেন প্রথম তিন প্রজন্মের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে। ইসলামের অবিকৃত শিক্ষাকে প্রচার করার মাধ্যমে, এবং পূর্ববর্তীদের দেখানো পথে হেঁটে। .
তাদের কেউই অন্যান্য জাতিদের অনুসরণ, অনুকরণ বা নব-উদ্ভাবিত পথে হেঁটে উম্মাহকে পুন্রুজ্জীবিত করতে পারেনি। ইতিহাস স্পষ্টভাবে, কোন সন্দেহ ছাড়াই এ সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু আধুনিক সময়ে পরাজিত মানসিকতার কারণে এমন অনেক ব্যক্তি ও দল আছে, যারা চিন্তা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, জ্ঞাতসার বা না জেনে – পশ্চিমা কাঠামোর ভেতরে আবদ্ধ হয়ে যায়। পশ্চিমা মাপকাঠি তাদের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তারা উম্মাহর পুনঃজাগরণ, পুনরুজ্জীবনের কথা বলে কিন্তু খাইরুল কুরুন বা কল্যাণময় পথে ছেড়ে দিয়ে। কাফিরদের দেখানো পথে, কাফিরদের বানানো ব্যবস্থায়, কাফিরদের দর্শনের ভাষায় তারা “বিজয়ের” স্বপ্ন দেখে। .
তাই দেখা যায় প্রগতি, আধুনিকতা, উন্নয়ন, অগ্রগতি, পরিবর্তন, স্বাধীনতা, অধিকার- এ জাতীয় ধারণাগুলোকে পশ্চিমাদের মতোই তারা ইতিবাচক হিসাবে গ্রহণ করে। কিন্তু সঠিক অবস্থান হল, আমাদের ইসলামের বুঝ ও ইসলাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তন, অগ্রগতি, প্রগতি, ইত্যাদির কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন কিতাব ও সুন্নাহর উপর আমল করা যেভাবে উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্মগুলো আমল করেছিল। আর এ সঠিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে পশ্চিমা কাঠামো অনুযায়ী চিন্তা করতে গিয়ে এসব দল ও ব্যক্তি এমন সব কথা প্রচার করা শুরু করে যা সরাসরি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। এসব কথা ও ধ্যানধারণা দ্বারা ক্ষতি হয় উম্মাহর আর লাভ হয় উম্মাহর শত্রুদের। অনেক সময়ই এধরনের বিপদজনক গোমরাহি ও বিচ্যুতিকে এসব দল ও ব্যক্তিরা সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী ইজতিহাদ, ফিকহি মত ইত্যাদি বলে হালকা করার চেষ্টা করে। কিন্তু দেখা যায় তাদের “ইজতিহাদ”, “ফিকহি ভিন্নমত” প্রতিবার পশ্চিমের বেঁধে দেয়া ছকে পড়ে। কারণ এসব দল ও ব্যক্তিদের চিন্তা পরাজিত মানসিকতার বাক্সে আটকা পড়ে গেছে। .
এধরনের ব্যক্তি ও দলগুলো, অনেক ক্ষেত্রেই তাদের স্বদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে উম্মাহর ক্ষতি কারণ হয়, কারণ তারা উম্মাহর বিশাল একটা অংশকে বিজয়ের ভুল পথে বিজয়ের স্বপ্ন দেখায়। এবং জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাও বিপরীত পথ ধরে গন্তব্যে যাবার সিদ্ধান্ত অপেক্ষা উত্তম। এ ভুল পদ্ধতির অনুসরণের কারণে কতোটা তীব্র বিচ্যুতি ও গোমরাহিতে পতিত হবার সম্ভাবনা থাকে তার “উৎকৃষ্ট” (অথবা নিকৃষ্ট) উদাহরণ হল ইউসুফ কারদাবি। কারদাবি, তার অনুসারী এবং তার মতো অনেকে ইজতিহাদ ও ফিকহি ভিন্নমতের দোহাই দিয়ে বস্তুত অনেক ক্ষেত্রেই হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল করে, শরীয়াহর বিধান অস্বীকার। দ্বীনের ছোট-বড় কোন বিধান, কোন অংশ তাদের “সংস্কার” থেকে রেহাই পায় না। ইচ্ছেমতো পরাজিত এ লোক এবং দলগুলো নিজেরা বিভ্রান্তির গহীনে তলাতে থাকে আর সাথে টানতে থাকে উম্মাহকে। .
ইজতিহাদের নামে কোন পর্যায়ের গোমরাহিকে জায়েজ করা হচ্ছে তা জানতে দেখুন শরীয়াহর স্পষ্ট বিধান অস্বীকারকারী “আল্লামা” কারদাবির রজম সম্পর্কে বক্তব্য এবং আমাদের বিশ্লেষণ – কারদাবির রজম ব্যাখ্যা।