আকিদা-মানহাজআর-রিবাত মিডিয়াআর্কাইভইতিহাস- ঐতিহ্যপাকিস্তান আর্কাইভবই ও রিসালাহবার্তা ও বিবৃতিমিডিয়া

সরকারী জিহাদী দলসমূহ।। অনুবাদ।। আর-রিবাত মিডিয়া।।

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

সরকারী জিহাদী দলসমূহ

ডাউনলোড করুন

জাস্ট লিংক

https://archive.org/download/11.sorkarijihadisongothon/11.sorkari%20jihadi%20songothon.docx

http://www.mediafire.com/file/84dlbymgh4m530i/11.sorkari_jihadi_songothon.docx/file

 (PDF)

https://archive.org/download/11.sorkarijihadisongothon/11.sorkari%20jihadi%20songothon.pdf

http://www.mediafire.com/file/jbtnv0kmkzutuc7/11.sorkari_jihadi_songothon.pdf/file

 

========================

 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

অধ্যায়-১:

পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক জিহাদী সংগঠনগুলোকে প্রতিষ্ঠা করার পিছনে কি উদ্দেশ্য ছিল?

সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানবজাতিকে তাদের চরিত্রে ভিন্নতা দিয়ে তৈরি করেছেন। ঐ কারণেই প্রত্যেক ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন রকমের মেজাজ হয়, কিছু লোক কঠোর হয় যখন কিছু লোক খুব কোমল ও সূক্ষ্ম স্বভাবের হয়। কিছু হয় জ্ঞানী ও চালাক যখন কিছু হয় খুব সরল। একইভাবে তুমি তোমার সমাজে দেখতে পাবে যে, মুসলিমদের মধ্যেও বিভিন্ন প্রবণতা বিদ্যমান। তাদের কেউ ইসলামের প্রচারকে ভালবাসে, কিছু লোক ইসলাম শিখাতে ভালবাসে, কিছু লোক দরস ও তাদরিসে (শিক্ষাদান ও অধ্যয়ন) খুব আগ্রহী, কেউ কিতাবাদি বা বইপুস্তকের প্রতি আগ্রহী, আবার কিছু লোক বক্তৃতায়। অনুরূপভাবে জিহাদ ইসলামের একটি কর্তব্য (ফরজ), কিছু মুসলিমের জিহাদের দিকে স্বাভাবিক প্রবণতা আছে, যখন কিছু লোক তাদের কাপুরুষতার কারণে এটাকে পরিহার করার চেষ্টা করে। এটা ঐ ব্যক্তির মতো, যে অপেক্ষা করছে যে, যখন আযান দেওয়া হবে অতঃপর সে তার রবের সামনে অবনত হতে তাড়াহুড়ো করে মসজিদের দিকে যাবে, যখন অন্যান্য ব্যক্তিরা নামাজ আদায় করে ফেলে। কেননা এটা তাঁদের উপর একটি নিয়মিত আবশ্যিক কর্তব্য, যেটা তাদেরকে পরিপূর্ণ করতে হয়।

তাই মানব চরিত্রে ভিন্নতার কারণে, মানব সমাজের মধ্যেও প্রবণতা বদলায়।

এখন আসুন মূল কথায়: পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ- যার মধ্যে আই.এস.আই- এর অবস্থান শীর্ষে-জানতো যে, সমগ্র পাকিস্তানে সেখানে জনসংখ্যার বড় অংশ যারা সহজাত যোদ্ধা এবং জিহাদে যোগদান করতে আগ্রহী; যখন তারা একটি সুযোগ পাবে, তখন সুস্পষ্টভাবে যুদ্ধ করবে। এখন আই.এস.আই জানতো- “সমাজের এই অংশ রাজনৈতিক পদ্ধতি এবং জাতীয় স্বার্থের জন্য নিকট ভবিষ্যতে হুমকি হতে পারে এবং পাকিস্তানে শরিয়াহ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করতে পারে, যার জন্য পাকিস্তান তৈরি করা হয়েছিল। তাই যখনই তারা জিহাদি আলোচনা খুঁজে পাবে, তখন তারা সেটাতে যোগ দিতে দ্বিধা করবে না এবং আমাদের নাস্তিক-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতির জন্য এটি একটি প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। “এতে তাদের ভয় পাওয়ার পিছনে কারণ হলো- নির্যাতিত কাশ্মীরের ভাইদের প্রতি পাকিস্তানি জাতির আবেগ এবং আন্তরিকতা এমন অবস্থায় পৌঁছেছিল যে, তারা যেকোনো সম্ভাব্য উপায়ে নির্যাতিত কাশ্মীরী মুসলিমদের জন্য যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করছিল। তাই আই.এস.আই ভাবছিল, মুজাহিদদের কাফেলায় কেন মুনাফিকদের মতো গাদ্দার ঢুকিয়ে দেওয়া হবেনা? যেহেতু এটা প্রতীয়মান হবে যে, আমরা তাদের সাথে কাজ করছি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা আমাদের গোপন কর্মসূচি এবং মৌলিক কিছু স্বার্থ পরিপূর্ণ করতে থাকবো এবং স্পষ্টতই আমরা তাদেরকে প্রতারিত করব যে, আমরা জাতীয় পর্যায়ের উপর “কাশ্মীরী জিহাদকে সমর্থন করি” প্রশিক্ষণ এবং টাকা যোগান দেওয়ার মাধ্যমে।

তাই আই.এস.আই- এর উদ্দেশ্যের পেছনে কাশ্মীরী জিহাদকে শক্তিশালী করা ছিলো না, বরং খাঁটি মুজাহিদদের তথ্য সংগ্রহ করা উদ্দেশ্য ছিলো। তারা কোথায় বাস করে, যখন প্রয়োজন হয় কিভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে, অথবা যদি তারা নিয়ন্ত্রিত নাহয়,তাহলে তাদেরকে পরিহার করবে। যাতে যখন এই সকল জিহাদিরা জাতীয় স্বার্থের জন্য কোন হুমকি হবে, জাতীয় স্বার্থে কোনো আঘাত আসার আগে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাদের উদ্দেশ্য জানতে পারে এবং জাতীয় স্বার্থে কোনো আঘাত আসার আগে তাদেরকে অপসারিত করতে পারে। অতএব, জিহাদী সংগঠনগুলোকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মধ্যে সরকারের একটি উদ্দেশ্য উপরে উল্লেখিত হয়েছে, আরও একটি উদ্দেশ্য ছিলো, কোনো উপযুক্ত সামরিক বাহিনী ছাড়া এই সকল জিহাদী সংগঠনগুলোকে ব্যবহারের দ্বারা ভারতের উপর অবিরত চাপ সৃষ্টিকরা। তাই কাশ্মীরে নির্মমতার প্রতিশোধ নেওয়া তাদের উদ্দেশ্য ছিলো না, তবে “জাতীয় স্বার্থে কোন হুমকি ব্যতীত সময় অতিবাহিত হয়ে যায়” এই উদ্দেশ্য ছিলো। আই.এস.আই তাদের গুপ্তচরদের ব্যবহার করে, “প্রশিক্ষণ এবং টাকা যোগান দেওয়ার” নামে জিহাদি সংগঠনগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তি করতে শুরু করেছিল। যারা সময় দিয়ে খাঁটি মুজাহিদদের বিষয় সম্পর্কে তথ্য দিতে শুরু করেছিল। যাইহোক, তখন এই সকল সংগঠন অস্তিত্বের মধ্যে এসেছিল, তারা সময়ের সাথে শক্তিশালী হতে শুরু করেছিল, খাঁটি মুজাহিদরা কঠিন যুদ্ধ শুরু করেছিল এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে কাশ্মীরী হিন্দুদেরকে কঠিন সময় দিতে শুরু করেছিল। এই সকল মুজাহিদরা ভারতের জন্য বাস্তবে হুমকি হয়েছিল। ভারতের উপর তাদের তীব্র আক্রমণগুলোতে (ভারতের) ক্ষতি হচ্ছিল, ফলে ভারতের উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছিল, অবস্থা খারাপ হচ্ছিল এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধের দিকে মোড় নিচ্ছিল। পাকিস্তানের কাপুরুষ সরকার এবং সামরিক সংস্থাগুলো জানতো যে, যদি যুদ্ধ গুরুতরভাবে শুরু হয়ে যায়, তখন স্পষ্টতই বিষয়গুলো আমাদের অনুকূলে থাকবে না। কেননা ভারতীয় বাহিনী সব দিক থেকে শক্তিশালী। বিশ্বের সবচেয়ে কাপুরুষ বাহিনী হিন্দুদের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধ করতে চাইছিল না, কেননা তারা সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্যে বিশ্বাস করে না, বরং তারা দৃশ্যমান কারণগুলোর উপর বিশ্বাস রাখে। ঐ কারণের ফলেই তারা ভারতের সাথে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ শুরু করছিল না, কেবল সব সময় রক্ষণশীল যুদ্ধের উপর নির্ভর করছিল। যেটার উপর তারা মিডিয়া এবং সামাজিক মিডিয়াতে এখনও আমোদ করছিল, যদিও প্রকৃত ঘটনা তারা যে দাবি করছে তার থেকে অনেক দূরে। তাদের প্রকৃত সাহসিকতা ১৯৭১ সালে ঢাকায় সমগ্র বিশ্ববাসী দেখেছিল।

যাইহোক, যখন এইসকল জিহাদী সংগঠনগুলো তাদের আন্তরিকতার কারণে তাদের যুদ্ধকে তীব্রতর করছিল, তখন আই.এস.আই হুমকি অনুভব করতে শুরু করেছিল যে, আমাদের তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং তাদের আক্রমণগুলো সীমিত করতে হবে, অন্যথায় যদি তারা একইভাবে চালিয়ে যায়, তবে ভারত পূর্ণশক্তিতে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করবে। তাদের নাস্তিক গুরুদের আদর্শ অনুসারে, আই.এস.আই  ‘ভাগ কর এবং শাসনকর’ নীতি গ্রহণ করেছিল এবং মুজাহিদীন পর্যায়ে তাদের গুপ্তচরদের পরিব্যাপ্ত করার মাধ্যমে মুজাহিদদের বিভক্ত করে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছিল। পরিণাম হিসেবে সেসকল মুজাহিদীন, যারা এক নেতৃত্বের অধীনে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করছিল, তাঁরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। কার্যকরীভাবে এই বিচ্ছেদ, শত্রুর বিরুদ্ধে আক্রমণ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তাদের সামর্থ্য সাফল্যের সাথে হ্রাস করেছিল এবং তাদের আসল উদ্দেশ্য থেকেও তাদেরকে পথচ্যুত করেছিল। আই.এস.আই- এর এসকল খারাপ লোকদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত পতিত হোক, যারা মুসলিম উম্মাহর একতাকে বিচ্ছিন্ন করেছিল এবং তাদেরকে বিভিন্ন দলে ভাগ করার মাধ্যমে ধ্বংস করেছিল। যদি কাশ্মীরে জিহাদ আত্মোৎসর্গ এবং ত্যাগের পর্যায়ে পূর্বের মতো একইভাবে চলতে থাকতো, তবে নিশ্চিতভাবে কাশ্মীর মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে থাকতো এবং কাশ্মীরের মুসলিমেরা অনেক আগেই স্বাধীন হতো।

অধ্যায়-২:

পূর্বঅধ্যায়ে আমরা “কি কারণে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা সরকারী জিহাদী সংগঠনগুলো তৈরি করছে এবং সমর্থন দিচ্ছে,” তা আলোচনা করেছিলাম। এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করবো যে, কিভাবে এই সকল সংস্থাগুলো মুসলিম উম্মাহর চমৎকার জিহাদী দলগুলোকে অধঃপতন এবং দূর্বল করতে তাদের ন্যক্কারজনক ভূমিকা চালাচ্ছে।

প্রথম প্রচেষ্টা যেটা তারা তৈরি করেছিল যে, তারা মুজাহিদদের সারিতে তাদের গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ করিয়েছিল, যারা ঔপেনিবেশিক গুরুদের ‘ভাগ কর এবং শাসনকর’ নীতি অনুসারে মুজাহিদদের বিভিন্ন নেতৃত্বের সাথে, বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছিল। তখন তারা দলগুলোর মধ্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে ভুল ধারণা ছড়িয়ে দিলো। ফলে যৌথবাহিনী যারা তাদের পূর্ণশক্তির সাথে ভারতীয় বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছিল, একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল এবং এরপর প্রত্যেক দল অন্য দলের নিন্দা করতে শুরু করেছিল। যেটা ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধে মুজাহিদীন দলগুলোকে দূর্বল করেছিল এবং এটা যথাযথ ভাবে আই.এস.আই- এরউদ্দেশ্য ছিলো। তাদেরকে বিভক্ত করার পর আই.এস.আই এই সকল সংগঠনগুলোর উপর প্রবল চাপ অর্জন করেছিল এবং একটি সীমাবদ্ধ যু্দ্ধের ময়দান অতিক্রম করতে তাদেরকে অযোগ্য তৈরি করেছিল। যেটা আই.এস.আই- এর দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল। যদি কোনো দল শুধুমাত্র এই সীমানা অতিক্রম করতে চিন্তা করতো, তবে আই.এস.আই ঐ দলের উপর অর্থনৈতিক অনুমোদন প্রয়োগ করতো এবং এটার নেতৃত্ব¡ পরিবর্তন করতো যেটা আই.এস.আই’র নিয়ম অনুসারে হতো এবং অন্যান্য নিম্নস্তরের মুজাহিদদেরকে তাদের এক নায়কতন্ত্র মানতে বাধ্য করতো। কোনো মুজাহিদ যে প্রত্যাখ্যান করতো, তাকে প্রথমে সতর্ক করা হতো এরপরও যদি সে মেনে না নিতো, তখন তাকে এই পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হতো। জিহাদী সংগঠনগুলোর ভূমিকা সীমাবদ্ধ হওয়ায় এবং আই.এস.আই- এর স্বৈরতন্ত্রের অধীনে কাজ করার কারণে একই রণক্ষেত্রে যেখানে হিন্দুদের সমাধিক্ষেত্র হচ্ছিল, তা সীমিত হয়ে গিয়েছিল এবং কিছু সময়ের পর রণক্ষেত্র শান্ত হয়েছিল এবং প্রচন্ড এক যুদ্ধ পরিপুর্ণভাবে থেমে গিয়েছিল। অতীতে মুজাহিদীন যখন ভালোভাবে সংগঠিত ছিলো এবং এক নেতার অধীনে কাজ করছিল, তারা নিয়মিতভাবে সর্বাধিক পর্যায়ে অপারেশন পরিচালনা করছিল। পরবর্তীতে মুজাহিদরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছিল এবং দূর্বল হয়ে পড়েছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং আই.এস.আই- এর জন্য ভারতের সাথে পূর্ণ উদ্যমে যুদ্ধের হুমকি শেষ হয়েছিল। আমি আমার নিজের থেকে বলছি না। অবস্থার তুলনা এবং অতীত ও বর্তমানের ঘটনা দ্বারা এটা সাধারণ লোকদের জন্য সুস্পষ্ট। সত্যিকারভাবে সেখানে এই সকল সংগঠনগুলোর মধ্যে অনেক খাঁটি মুজাহিদীন আছে, যারা আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য জিহাদ করছে। যাদের কেউ আই.এস.আই- এর মতলব এবং উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছিল, তাঁরা পূর্ণগঠন হতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল এবং সর্বশেষে তারা ওয়াজিরিস্তানের দিকে পাড়িজমিয়েছিল এবং পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে জিহাদ শুরু করেছিল, কারণ জিহাদ হলো আল্লাহর আদেশ। যেটা কোনো ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে আবদ্ধ নয়। যেকোনো এলাকা অথবা ভূগোল, নির্বিশেষে এটা শারীয়ার আদেশের উপর নির্ভর করে। যদি জিহাদ তোমার নিজ দেশে ফরজ হয়, তখন আল্লাহর সত্যিকার বান্দা জিহাদ সম্পাদন করবে এবং এলাকা নির্বিশেষে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করবে। তাই জনপ্রিয় কাশ্মীরী মুজহিদদের বিশাল সংখ্যা ওয়াজিরিস্তানের দিকে পাড়িজমিয়েছিল, যেটাতে ইলিয়াস কাশ্মীরী (রহ.), ফায়েজ শাহেদ (রহ.), যুদ্ধের কমান্ডার ক্বারী ইমরান শাহেদ সহ বিশিষ্টজনরা ছিলেন। এখন বর্তমান অবস্থা হলো-আই.এস.আই- এর সম্পৃক্ততার কারণে যদিও এইসকল সংগঠনগুলো মিডিয়াতে আড়ম্বরপূর্ণ ভাষায় বক্তৃতা দিচ্ছে, কিন্তু এইসকল সংগঠনগুলো এমন পরিমাণ দূর্বল হয়েছে যে, যখনই সরকার ভারত থেকে চাপ অনুভব করে, তখন তারা এই সংগঠনগুলোর দিকে যায় না বরং তারা তালেবানকে অনুরোধ করে তাদেরকে সহযোগীতা করার জন্য। কয়েক বছর পূর্বে এরকম একটা অবস্থা ঘটেছিল, যখন সরকার কর্তৃক একটা প্রতিনিধি দল টি.টি.পির আমির বাইতুল্লাহ মেহসুদের কাছে পাঠানো হয়েছিল, যারা এম.এন.এ শাহ আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে ভারতের বিরুদ্ধে তালিবানদেরসমর্থনের অনুরোধ করার জন্য এসেছিল। আপনারা প্রমাণ হিসেবে হামিদ মীরের সাথে একটি টকশোতে শাহ আব্দুল আজিজের ইন্টারভিউ দেখতে পারেন। আমি ভাবছি আজকের জন্য এটা যথেষ্ট, ইনশাআল্লাহ! পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করবো ন্যক্কারজনক কৌশলের ধরণ সম্পর্কে, যেটা এই সকল সংগঠনগুলোকে দূর্বল করতে আই.এস.আই কর্তৃক ব্যবহৃত হয়েছিল

অধ্যায়-৩:

প্রকৃত ঘটনা প্রকাশক অধ্যায়

যেকোনো বিভাগে বা সংস্থায় আপনি যাবেন, আপনি খেয়াল করে দেখবেন প্রত্যেক বিভাগেই কিছু চোর আছে। এই ধরনের চোরেরা সবসময়েই উপায় খুঁজতে থাকে যে কিভাবে টাকা কামানো যায়। এই ধরণের লোকেরা জ্বিহাদী সংগঠন গুলোতেও আছে এবং সেই সাথে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা এই ধরণের জ্বিহাদী সংগঠনগুলোতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পদেও লোক অনুপ্রবেশ করানো হয়।

এটি একজন নেতার কাহিনী, যার মাধ্যমে কাশ্মীর রণক্ষেত্রে মুজাহিদিনদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই সরকারী কথিত জ্বিহাদী সংগঠনগুলো আই.এস.আই এর পথপ্রদর্শকদের নির্দেশনার সাহায্য নিয়ে কাশ্মীর রণক্ষেত্রে মুজাহিদিনদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এই স্থানীয় পথপ্রদর্শকরা এখানে বহু বছর ধরে স্থায়ী এবং তারা তাদের পূর্বপুরুষদের এলাকা সম্পর্কে দারুণ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং তারা রাস্তাঘাটও ভালো চিনে,  এই কারণে তাদের সহযোগিতাকে কাজে লাগানো হয়।

এই পথপ্রদর্শকরা তাদের কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেয়। এটা শুরু হয় ৩০ হাজার রুপি দিয়ে, রাস্তা  এবং ভ্রমণের দূরত্ব অনুযায়ী পারিশ্রমিক বাড়তে থাকে।

এদের মধ্যে একজন আছে যে আমার নিকটতম আত্মীয়। সে কাশ্মীরের মুজাহিদিনদের শুরুর দিকের একজন রাহবার ছিল কিন্তু এখন সে এই চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। সে আমাকে বলল তাকে ৩০ হাজার রুপির বদলে মুজাহিদিনদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিলো। তাদের দায়িত্ব ছিল শুধুমাত্র তাদের সেই জায়গা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া, বাকিটা মুজাহিদিনরা আই এস আই এর দেয়া ম্যাপ দেখে নিজেরাই পাড় হত।  এই ম্যাপ ছিল নির্দিষ্ট কিছু রাস্তার জন্য যা মুজাহিদিনদের ছদ্দবেশে চলার জন্য দরকার ছিল কারণ সমতল ভূমির তুলনায় পাহাড়ি অঞ্চলে খুব বেশী রাস্তা ছিল না।

­

এবার আসুন কাশ্মীর মুজাহিদিনদের মধ্যে অবস্থান করা নানা শ্রেণীর চোরদের দিকে নজর দেয়া যাক। যেমন, অস্ত্রশস্ত্র সমূহের চাহিদা মত লিখিত আকারে মালিকদের হাতে দেয়া হত। এই চোরেরা, যখন কাশ্মীরের আন্তরিক সব মুজাহিদগণকে ময়দানে পাঠাতো তখন তাদের নির্দেশ দিয়ে দিত যে যদি ইন্ডিয়ান আর্মিরা আক্রমণ করে তাহলে যেন তারা তাদের অস্ত্র রেখেই পিছনে ফিরে আসে কারণ অস্ত্র নিয়ে পিছনে পালিয়ে আসা তাদের জন্য নাকি কঠিন হয়ে যাবে।

যারা ময়দানে যুদ্ধ করেছেন তারা জানেন যে, দুনিয়ার সকল মুজাহিদ যারা গেরিলা স্টাইলে যুদ্ধ করে তারা তাদের অস্ত্র সবসময় তাদের সাথে রাখে, এমনকি যখন তাদের পিছনে ফিরে আসতে হয় তখনও।

এখন যখন এই মুজাহিদগণ ভারতের বোমাবর্ষণের শিকার হয়ে তাদের অস্ত্রশস্ত্র রেখে সেই জায়গাটা নিশানা দিয়ে রেখে আসে, এই চোরেরা তখন তাদের বিশ্বস্ত রাহবারদের সেখানে পাঠায় এবং এই অস্ত্রগুলো নিয়ে আসে।

এখন যখন এরা এই অস্ত্রগুলো সফলতার সাথে ফিরিয়ে নিয়ে আসে, তখন যদি মুজাহিদিনদের ২৫ টি কালাশনিকভ দিয়ে পাঠানো হয়ে থাকে, তাহলে তারা কাগজে ২০ টি কালাশনিকভ পাওয়া গেছে বলে লিখত। বাকি ৫ টা মুজাহিদিনদের ভারতীয় সেনাদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সময় গুলিগোলে ‘হারিয়ে গেছে’  বলে জানানো হত।

অতঃপর এই চোরেরা এই ৫ টি কালাশনিকভ এবং কিছু গুলি তাদের স্থানীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে অল্প দামে বিক্রি করে দেয়। একটি ১ লাখ ৫০ হাজার ওয়াস্তু দামের কালাশনিকভ মাত্র ৩০ থেকে ৫০ হাজার রুপিতে তারা বেচে দিত, প্রাপ্ত অর্থ সকল চোরেদের মধ্যে বণ্টন হয়ে যায় ঠিক যেভাবে একটি দুর্নীতিগ্রস্থ সংগঠন এ হয়ে থাকে।

কাশ্মীরের বর্ডারে দেড় লাখ মূল্যের কালাশনিকভ মাত্র ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার রুপীতে পাওয়া যাওয়ার এটাই কারণ। যদিও কাশ্মীরে কোন অস্ত্রের কারখানা নেই, তারপরও কাশ্মীরের প্রতি ঘরে ঘরে সাধারণ ভাবেই অস্ত্র পাওয়া যায়।

আরেকটি লজ্জাজনক বিষয় হল, গিল্গিটবালতিস্তান এর শিয়ারা এই সব কালাশনিকভ গিল্গিটবালতিস্তান সংলগ্ন কাশ্মীর এলাকা থেকে কিনে নেয় এবং এই সব অস্ত্র সুন্নি মুসলিম হত্যাযজ্ঞে ব্যবহার করে। এখন কম দাম হবার কারণে যেখানে একটি শিয়া পরিবার দেড় লাখ মূল্যে একটি কালাশনিকভ কিনতে পারত সেখানে এখন একই দামে ৫ টি শিয়া পরিবার একই অস্ত্র কিনতে পারছে।

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হল,  মুজাহিদিনরা কিছু নির্দিষ্ট পথ  ব্যবহার করেন এবং দুই দেশের গুপ্তচরেরাও পথের দুই পাশে এবং পাহাড়ি পথ গুলোতে অবস্থান নেয় যেখান থেকে একজন মানুষকে অনেক দূর থেকেও দেখা যায়। তাই, মুজাহিদিনরা যেই রাস্তাগুলো দ্রুত পাড় হবার কাজে ব্যবহার করেন সেই পথ গুলোর সমস্ত তথ্য গুপ্তচরদের মাধ্যমে ভারতের হাতে পৌঁছে যায় এবং ভারত পরে সেসব যায়গায় বোমা বর্ষণ করে যে সব রাস্তা মুজাহিদিনরা ব্যবহার করেন।

গুরুত্বের সাথে নেয়ার বিষয় হল, প্রথম সারির একজন নেতার বরাতে জানা যায়, যুদ্ধের প্রাথমিক ময়দানে রাহবারের সাহায্যে পৌঁছার পর যখন মুজাহিদিনরা তাদের পথ হারিয়ে  ফেলে এবং এমন কোন পথে চলা শুরু করে যেটা আই এস আই এর নির্ধারণ করে দেয়া ছিল না, সে সব পথে মুজাহিদিনরা খুবই নিরাপদে ফেরত আসতে পারেন কিন্তু যখনই তারা আই এস আই এর বাতলে দেয়া পথে আসতে চেষ্টা করেন তখনই তারা ভারত এর বোমা বর্ষণের শিকার হয় কারণ গুপ্তচররা ভারতীয় সংস্থাকে মুজাহিদদের জিপিএস স্থান জানিয়ে দেয় এবং ফলশ্রুতিতে অনেক মুজাহিদিন ভারতের আক্রমণের মধ্য দিয়ে আসার সময় শাহাদাত বরণ করেন এবং আহত হন।

এখন আশ্চর্যের বিষয় হল, এই একই বিষয় আই এস আই বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে আসছে যখন পৃথিবীর অন্য সকল দেশের মুজাহিদরা একবার যেই পথে হামলার শিকার হন পরবর্তীতে সেই পথ ব্যবহার না করে অন্য পথ ব্যবহার করেন যদিও সেই পথ খুবই কঠিন হয়। তারপরও তারা সেই পথ ব্যবহার করেন যাতে তারা নিরাপদে ও বিপদমুক্ত ভাবে পৌঁছে যেতে পারেন।

কিন্তু  যখন অনেক খাঁটি মুজাহিদগণ শাহাদাত বরণ করছেন অথবা বোমাবর্ষণে আহত হচ্ছেন তারপরও আই এস আই এর রাস্তা না পাল্টানোর বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ মানে বহন করে বৈকি !

এর খুব গুরুত্বপূর্ণ অর্থ আছে বৈকি !

যারা  সম্মুখ  রনাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, বিশেষ করে আফগানিস্তানে, তারা জানেন যে, অনেক বড় বড় এলাকা বিজয় ও দখলের সময়েও অল্প কিছু মুজাহিদ সাধারণত শহীদ হন কিন্তু কাশ্মীরে এতো বড় বড় কুরবানি সত্তেও মুজাহিদিনরা কয়েক বছর আগে যেখানে ছিলেন এখনো সেই আগের অবস্থানেই আছেন।

এটা কি একারণে হচ্ছে না যে আই এস আই মুজাহিদিনদের রক্ত নিয়ে রাজনীতি করছে ? তারা চায় কাশ্মীর জিহাদের রুপরেখা একই রকম থাকুক যাতে তা তাদের হাতে থাকে। তারা চায় লোকে এটা ভাবুক যে যেহেতু মুজাহিদিনরা শহীদ হচ্ছেন তাঁর মানে কাশ্মীর জিহাদ সামনে অগ্রসর হচ্ছে।

যখন অন্য সব জায়গায় যখন অধিক সংখ্যায় মুজাহিদিনরা শাহাদাত বরণ করেন তখন বিজয়ের মানচিত্র কথা বলে আর এটা ১৪০০ বছর ধরেই চলছে।

শুধু মাত্র একবার আফগানিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন, তালিবানদের পতনের পর যখন যুদ্ধ আবার শুরু হল, শাহাদাতের পরিমান বিজয়ের পরিমানের সাথে তুলনা করে দেখুন। পুরো বিশ্ব দেখেছে কিভাবে আমেরিকা আর ন্যাটো অপদস্থ হয়েছে এবং আফগানের ধুলো চাটতে বাধ্য হয়েছে।

এর বিপরীতে, কাশ্মীর জিহাদ বিগত ৬৫ বছর ধরে চলছে, কিন্তু তারপরও কোন উল্লেখযোগ্য বিজয় নেই এবং পরিস্থিতিরও কোন পরিবর্তন নেই। কাশ্মীরের কোথাও উল্লেখযোগ্য কোন বিজয়ের নজির নেই, যদি আগের কিছু বিজয় থেকেও থাকে সেগুলোও আই এস আইয়ের চক্রান্তে ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে যা আমি আগের দুটি পর্বে লিখেছিলাম। যাই হোক, যখন অন্যক্ষেত্রে তালিবানগণ সমস্ত ন্যাটোভুক্ত  দেশ এবং অ্যামেরিকার সাথে যুদ্ধ করছেন তখন কাশ্মীরী মুজাহিদিন শুধুমাত্র ভারতীয় সেনাদেরই মোকাবেলা করছেন।

অপর দিকে, তালিবান মুজাহিদগণ স্থানীয় আফগান মিলিশিয়াদেরও মোকাবেলা করছেন, আফগান মুজাহিদরা, যারা অপরিমেয় সমস্যার শিকার হয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় রসদপত্রের অভাবে অনেক অসুবিধারও সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু ১৫ বছর পরেও তালিবানগণদের থেকে একটি শক্ত দল বেরিয়ে এসেছে যখন কাশ্মীরে পাকিস্তান সরকারের মদদের কারণে রসদপত্রের কোন অভাব নেই, অস্ত্রশস্ত্রও প্রচুর পরিমানে সরবরাহ করা হয়, যুদ্ধটাও শুধুমাত্র ভারতীয় সেনাদের সাথে কিন্তু  এরপরও মুজাহিদিনরা সেই আগের অবস্থানেই আছেন যেখানে তাঁরা পূর্বে ছিলেন।

নেতাদের প্রতি  ভালোবাসা একপাশে সরিয়ে যদি আমরা দেখি, আমাদের শক্তি এবং কুরবানি কি এখানে নষ্ট হচ্ছে না? কারণ যেখানে আল্লাহ্ সুবাহানুর ওয়াদা যে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কুরবানির বদলে বিজয় এবং শক্তি দান করেন, কিন্তু তাহলে কাশ্মীর ময়দানে কি এমন হল? যে এতো কুরবানির পরেও এখনো পর্যন্ত সেখানে কোন উন্নতি নেই?

এটা নিয়ে চিন্তা করুন।

আমরা কাশ্মীরে ইসলামিক আইন বাস্তবায়ন করবোই ইনশাআল্লাহ্।

অধ্যায়-৪:

( শেষ পর্ব)-

কিভাবে মুসলিম উম্মাহ পাকিস্তানী সরকার দ্বারা মদদপ্রাপ্ত কথিত জ্বিহাদী সংগঠনগুলো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে?

আগের পর্বে আমরা এই সাজানো গোছানো জ্বিহাদী কার্যক্রমে এই সব দস্যুদের ভূমিকা উল্লেখ করেছি ।

এই পর্বে আমরা প্রকাশ করবো কিভাবে এই সব কথিত জ্বিহাদী সংগঠন (এর মধ্যে শীর্ষে জাইশ ই মুহাম্মাদ এবং লশকরি ত্যাইবা, যারা জামাআতুদ দাওয়াহ নামে পরিচিত) গুলো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এটা উল্লেখ করার মত বিষয় যে, আমরা সেই সব সাধারণ মুজাহিদীনদের কথা বিবেচনায় আনি যারা এই সব সংগঠন গুলোতে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন এবং আল্লাহর রাস্তায় সম্মুখ ময়দানে নিজেদের জান কুরবান করে শহিদি মর্যাদা (ইনশাআল্লাহ্) লাভ করছেন।

কিন্তু এখানে আমরা এই সংগঠনগুলোর সেই সব খারাপ বৈশিষ্টগুলো নিয়ে কথা বলব যা এই আন্তরিক মুজাহিদগণের কুরবানিকে নষ্ট করছে এবং যেই সব মুসলিমগণ জিহাদকে পছন্দ করেন তাদের ক্ষতি করছে।

যদি আপনাদের মনে থাকে ওই সময়ের কথা, যখন পাকিস্তানী ধর্মত্যাগী মুরতাদ সেনাবাহিনী ওয়ারিজিস্তানে ২০০৪ সালে তাদের অভিযান শুরু করে এবং পাকিস্তানী সরকার তাদের কিছু দাবীর কথা জানান দেয়।  তার মধ্যে পাকিস্তানী সরকার যে সকল বিদেশি যোদ্ধারা ওয়ারিজিস্তানে আছেন তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার উপর বেশী জোর দেয়।

কিন্তু কেন এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সরকারের একটি প্রাথমিক এবং  অতি প্রয়োজনীয় চাহিদা হিসেবে সামনে আসলো? কিছু মানুষ সম্ভবত  আগেই এটা বুঝতে পেরেছিল, তারপরও সামনে আরও ভালভাবে বুঝার জন্য আমরা কিছু জিনিস আলোচনা করবো।

আপনারা যদি সরকারী কথিত জ্বিহাদী সংগঠন গুলোর দিকে ভালভাবে লক্ষ করেন, আপনারা যারা তাদের সাথে কিছু সময় কাটিয়েছেন বা তাদের সম্পর্কে জানেন, তারা জানেন যখনই আপনি এসব সংগঠনে যাবেন, তারা আপনার পুরো তথ্য সংগ্রহ করবে, যেমন- আপনি কে? কোথা থেকে এসেছেন? বাড়ির ঠিকানা? জাতীয় পরিচয় পত্র ইত্যাদি।

তো, আসলে এর পিছনে কারণ টা কি?

কারণ, এই সব তথ্য গুলো সেই সব গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে যায় যারা এই সংগঠন গুলোতে অবস্থান করে যাতে তারা এই তথ্য ব্যবহার করে জ্বিহাদকে পছন্দ করে এমন মানুষদেরকে নিজেদের নজরদারির মধ্যে রাখতে পারে।

এখন এই তথ্য গুলো যখন সংগ্রহীত হয়ে যায়, এগুলো পরবর্তীতে দেশের মধ্যে ঘটা কোন ঘটনায় করা মামলায় ব্যবহার করা হয়।

যখনই কোন নির্দিষ্ট এলাকা আক্রমণের শিকার হয়, তখন এই দালাল সংস্থা গুলো সেই এলাকার সেই সব লোকদের তথ্য ঘাঁটতে শুরু করে যারা জ্বিহাদকে পছন্দ করে। কাজেই যখনই আপনি এই সংগঠন গুলোতে যাবেন এবং যার ফলে আপনার তথ্যসমূহ তাদের হাতে থাকে, তখন প্রথমেই আপনাকে তারা গ্রেফতার করবে। এবং যদি তারা এই ঘটনার আসল অপরাধীকে খুঁজে না পায়, তাহলে তারা শুধুমাত্র কিছু অফিসিয়াল কাজ সম্পূর্ণ করবে এবং আপনাকে মিথ্যা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে জেলে পাঠাবে। মিডিয়া তাদের ব্রেকিং নিউজ  দেখাবে যে, ‘তমুক আক্রমণের মূল পরিকল্পনা কারী গোয়েন্দা সংস্থার হাতে গ্রেফতার’।  আপনাকে গ্রেফতারের কারণ? কারণ সরকারের কাছ থেকে প্রশংসা প্রাপ্তি এবং জনগণের সামনে এটা প্রমাণ করে দেয়া যে তারা অনেক ‘দায়িত্বশীল’ এবং তাদের গোয়েন্দা সংস্থা পুরো বিশ্বের মধ্যে সবার আগে!

কাজেই এখন আপনি নির্দোষ হয়েও সেই অপরাধে দোষী যা আপনি করেন নি। এখন এই গণতান্ত্রিক নিয়মে  আপনি নির্দোষ, এটা প্রমাণ করতে আপনার বছরের পর বছর  সময় চলে যাবে।

আসুন, আমরা একটা কৌতুক শুনি যা উপরের অবস্থার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।

একদিন একটি গরু ভয় পেয়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে  দৌড়তে লাগলো। পথিমধ্যে গরুর সাথে একটি হাতির দেখা হয়ে গেলো। হাতি জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার? তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেনো?

গরু উত্তর দিল, সরকার সমস্ত মহিষদেরকে জেলে বন্ধি করতে আদেশ দিয়েছে। হাতি অট্টহাসি হেসে বললো, ওহে মূর্খ গরু! যদি তারা সমস্ত মহিষদের জেলে দিতেই বলে তাতে তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেন?

তখন গরুটি উত্তরে বলল, হ্যাঁ, আমি এটাও জানি যে, এই হুকুম শুধু মহিষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু যদি তারা আমাকে সন্দেহবশতই জেলে দিয়ে দেয় তাহলে এই গণতান্ত্রিক নিয়মে আমার বছরের পর বছর শুধু এটা প্রমাণ করতেই লাগবে যে আমি মহিষ নই, গরু।

যখন হাতি এটা শুনল, সে নিজেও দৌড়তে শুরু করলো।

তাই ভাইয়েরা! এই কাল্পনিক ঘটনাটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা বুঝানোর জন্য যে, নিবন্ধন তাদের কাছে এজন্যই এতো বাধ্যতামূলক যাতে করে তারা এই পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য সমূহ বাগিয়ে নিয়ে নির্দোষ মানুষকে ধরতে পারে এবং এটা প্রমাণ করতে পারে যে তাদের সংস্থা অনেক  ‘পেশাদার’ এবং ‘কর্মঠ’ এবং তারা যেকোনো আক্রমণের ব্যাপারে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং ‘অপরাধী’কে কিছুদিনের মধ্যেই ধরে ফেলে।

তাই এখানে আমার সেসব ভাইদের প্রতি অনুরোধ যারা জ্বিহাদকে ভালোবাসেন, আপনারা এসব সরকারী খোরাকপ্রাপ্ত জ্বিহাদী সংগঠনে যোগ দেয়া এবং এখানে প্রশিক্ষণ নেয়ার বদলে  ধৈর্য ধারণ করুন এবং সেই সব আসল রণক্ষেত্র গুলোর দিকে মনোযোগ ফিরান যারা আফগানিস্তান এবং ওয়াজিরিস্তানের অধিক নিকটবর্তী।

এবং যে সব ভাইরা চিন্তা করছেন যে আপনারা এই সব সরকারী ‘জ্বিহাদী’ সংগঠনে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর তাদের থেকে লুকিয়ে ওয়াজিরিস্তানের ময়দানের দিকে ফিরে আসবেন, মনে রাখবেন, এটা সম্ভব নয়।

একবার যদি আপনার নাম তাদের তালিকাভুক্ত হয়ে যায়, তাহলে তাদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার আর উপায় থাকবে না।

সুতরাং, এই সব ‘জ্বিহাদী’ সংগঠন আমেরিকার মিত্র পাকিস্তানী সরকার দ্বারা সমর্থিত, যারা এর জন্য তহবিল সংগ্রহ করে, সমাবেশের আয়োজন করে এবং প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালায়।

তারা জনসম্মুখে আমেরিকাকে হুমকি দেয়, তারপর নিরাপদে তাদের আয়েশি ক্যাবিনে চলে যায় এবং পাকিস্তানী সরকার এবং এরা এদের  মার্কিন প্রভুদের  দাস, খুনী, ধর্মত্যাগী সেনাবাহিনীর প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলে যাদের হাতে লক্ষাধিক নির্দোষ মুসলিম এবং  মুজাহিদীনদের রক্ত লেগে আছে।

­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­

মনে রাখবেন, আপনি একটি ছোট্ট কক্ষে  শুধুমাত্র জিহাদ করার নিয়ত করবেন কিন্তু তারপরও আপনি আমেরিকার দ্বারা হুমকির শিকার হবেন।

যদিও অপর পক্ষে, এই লোকগুলোই বড় বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প এবং দফতর চালায় এবং সেখানে খুব খোলামেলা ভাবে জিহাদের আলোচনা করা হয় কোন সমস্যা ছাড়াই।

যদি মুজাহিদীনরা শুধুমাত্র এই চিন্তাও করে যে তারা আমেরিকার বিরুদ্ধে যাবে, তার ফলস্বরূপ তারা পুরো তোরাবোরা ধ্বংস করে দিতে উম্মুখ হয়ে যাবে।

যদিও অপর দিকে,  এই লোকগুলোই কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই আমেরিকাকে প্রকাশ্যে ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দেয়।

আল্লামা আলী শের হায়দেরি শাহিদ ( রাহিমাহুল্লাহ) প্রায়ই বলতেন, ‘চরিত্র সব কিছুই প্রকাশ করে দেয়।’ যদি হায়াতে বেঁচে থাকি,আমি এই বিষয়ে আরও লিখব। কিন্তু আমি আবারও উল্লেখ করছি, আমার উদ্দেশ্য সেই সব মুজাহিদীনগণকে আক্রমণ করা নয়, যারা এই সব সরকারী মদদপ্রাপ্ত সংগঠনগুলোতে সারিবদ্ধভাবে কুরবানির সাথে কাজ করছেন।

কিন্তু আমি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যেন তারা নিজেদের শুধরে নেন, যাতে তারা একজন সত্যিকার মুজাহিদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে পারেন, আল্লাহর বন্ধুদের সাথে সহানুভূতিশীল এবং বন্ধুর মত বিশ্বাস নিয়ে কাজ করা এবং নিজেদের আদর্শকে ঠিক করতে আল্লাহর শত্রুদের সাথে শত্রুতা করতে পারেন। আমরা জানি আপনি আপনার নিয়তের ব্যাপারে আন্তরিক কিন্তু আপনার আন্তরিকতা সঠিক জায়গায় ব্যবহার করুন।

এই দুনিয়ায় দুটি দল আছে। একদল হচ্ছে কুফফার এবং তাদের চেলারা এবং আরেকটি দল হল নিয়তে আন্তরীক মুজাহিদিনগণ এবং তাঁরা যারা উনাদের ভালোবাসেন এবং সমর্থন দেন।

এখন এটা আপনার সিদ্ধান্ত, আপনি কোথায় আপনার যোগ্যতা এবং শক্তি ব্যয় করবেন; সত্যিকার জিহাদে নাকি আমেরিকার দাস সেনাবাহিনী আর সরকারের আজ্ঞা বহন করে।

আল্লাহ্ আমাদের সত্যকে বুঝার এবং অনুসরণ করার শক্তি দান করুন।

ওয়াসসালাম,

-হাসনাইন কাশ্মীরী।

আর রিবাত মিডিয়া কর্তৃক অনূদিত-

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − four =

Back to top button