আর-রিবাত মিডিয়াআলজেরিয়াইতিহাস- ঐতিহ্যবই ও রিসালাহবার্তা ও বিবৃতিমিডিয়াশাইখ আবু উসামা আল আনসারীহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

প্রবন্ধ ।। নাইজেরিয়া থেকে বার্তা -শাইখ আবু উসামা আল আনসারী ।। বোন উম্মে আব্দুল্লাহ অনূদিত

নাইজেরিয়া থেকে বার্তা
-শাইখ আবু উসামা আল আনসারী (আল্লাহ তাঁর হেফাজত করুন)
আমির: জামাআত আনসারুল মুসলিমিন ফি বিলাদিস সুদান।

বোন উম্মে আব্দুল্লাহ অনূদিত

পিডিএফ
আর্কাইভ লিংক
আর্কাইভ শর্ট লিংক

ডক
আর্কাইভ লিংক
আর্কাইভ শর্ট লিংক

 

(Word)

https://archive.org/download/10.amessagefromnegeriabnf/10.A%20Message%20From%20Negeria%20BNf.docx

http://www.mediafire.com/file/gy5kzilm13d54l7/10.A_Message_From_Negeria_BNf.docx/file

(PDF)

https://archive.org/download/10.amessagefromnegeriabnf/10.A%20Message%20From%20Negeria%20BNf.pdf

http://www.mediafire.com/file/b2l4irljrz7y11g/10.A_Message_From_Negeria_BNf.pdf/file

==================

 

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি ন্যায়পরায়ণদের রক্ষাকারী, নিপীড়িতদের সাহায্যকারী। তিনিই আল্লাহ, যিনি কাফেরদেরকে তাদের প্রাপ্য আযাবের পথে ক্রমান্বয়ে পরিচালিত করেন। সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক মুজাহিদদের নেতা, আমাদের নবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ-এর উপর এবং তাঁর পরিবার এবং মুহাজিরীন ও আনসারদের মধ্য থেকে তাঁর সাহাবিদের উপর। আর তাঁদের উপর, যারা তাঁদের অনুসরণ করে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সত্য দ্বীনের অনুসরণ করবে।

সূচনা:

আমাদের মুসলিম উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতি এবং তাদের করুণ অবস্থার কথা আপনাদের কারও অজানা নয়। সমস্তজাতি সকল দিক থেকে তাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে; আর এই পরিণতি ঘটেছে মুসলিমরা নিজেদের দ্বীনকে অবজ্ঞা করার কারণে। তারা নিজেদের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থেকেছে, অথচ “জিহাদকে একমাত্র অপদস্থ দল ব্যতীত কেউ পরিত্যাগ করে না।”

অন্যান্য দখলকৃত মুসলিম ভূমিগুলোর মতো আমাদের দেশেও (নাইজেরিয়ায়) এই আগ্রাসী অবস্থা বিরাজমান; যেখানে মুসলিমদের মূলত দুই ধরনের তিক্ততার সম্মুখীন হতে হয়।

১. বিদ্বেষপরায়ণ খ্রিস্টানদের বর্বরোচিত আগ্রাসন ।

২. এবং মুসলিমদের ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, উঁচু মর্যাদা ও নেতৃত্বের অধিকার থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে অত্যাচারী, অবিশ্বাসী, পাপিষ্ঠ শাসকদের নিয়ম-মাফিক নির্যাতন।

মুজাহিদ শাইখ উসমান বিন ফৌজি’র (রাহিমাহুল্লাহ) ইমারতের অধীনে-যা খুব বেশিদিন আগের কথা নয়- মুসলিমরা সম্মানিত, গৌরবান্বিত ছিল এবং তারা গর্বকরে মাথা উঁচু করে চলতে সক্ষম ছিল। একটি যুগ ছিল, যখন (ইসলামী) শরী’য়াহ ছিল আইন-প্রণয়নের উৎস,সংবিধান ছিল কুরআন, আর বিশুদ্ধ সুন্নাহকে বিবেচনা করা হতো মানদণ্ড হিসেবে। আর তাই লোকেরা নিরাপদভাবে এবং নিরাপত্তার সাথে বসবাস করছিল, যতদিন না ব্রিটিশ দখলদাররা এসে এ ভূমিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও বিপর্যয়ের সৃষ্টি করল।

এমনিভাবে, ন্যায়পরায়ণ, ধার্মিক ও ধর্মভীরু যেসমস্ত আলেম তাদের আনুগত্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তারা তাদের হত্যা করেছিল। মানবরচিত আইন দ্বারা ইসলামি শরিয়াহ’র স্থগিত ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। নিঃসন্দেহে তাদের এসকল কর্মকাণ্ড অত্যন্ত জঘন্য ছিল।

লোহা এবং আগুনের ক্ষমতার জোরে তারা পুরনো রূপকথা, দার্শনিক তত্ত্ব এবং ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাভাবনার সমন্বয়ে তৈরি এসকল মানবরচিত আইনগুলোকে মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিতে লাগল। মুসলিমরা এগুলোকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করল, তাই ওরা ওদের গভীর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইসলামি পাঠগুলোর বিকৃতি সাধন করল।

যাইহোক একটি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলো এবং সবার অলক্ষ্যেই মুসলিমদের ধর্মবিশ্বাস ও চিন্তা-ভাবনায় নানা পরিবর্তন ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে লাগল। যার ফলে তাঁরা ওদের বিদ্বেষী ক্রুসেডারদের হাতে চরম দুর্দশা ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। পাশাপাশি নাইজেরিয়ান সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফলে গণতন্ত্রকে একমাত্র শাসনব্যবস্থা ও জীবনপদ্ধতি হিসাবে গ্রহণ করা হয় এবং এর তহবিল গঠিত হয়েছিল বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্রিস্টান মিশনারি সংগঠন-যেমন,ক্রিশ্চিয়ান এসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া (CAN)-এর সহায়তায়,যাতে করে আমাদের মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে প্রতিদিন জঘন্য হত্যাযজ্ঞ চালানো যায়।

এবিষয়টি অসংখ্য উদাহরণের মাধ্যমে সকলের কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের পূর্বপুরুষ ও ইসলামি রেনেসাঁর পুনর্জাগরণকারী শাইখ উসমান বিন ফৌজি(রহিমাহুল্লাহ) -এর ইসলামী ইমারাতের পতনের পর থেকেই মুসলিমদের এই করুণ অবস্থা।

অতঃপর আল্লাহ সুব. গোত্রসমূহ থেকে এমন অল্প কয়েকজন মুজাহিদীনকে পথনির্দেশ করলেন, যারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে এবং তাঁরা কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবেনা । তাদের   সীমিতসংখ্যা, স্বল্পসংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জামাদি এবং নানা দুর্বলতা, অক্ষমতা ও অযোগ্যতা থাকার পাশাপাশি আলেম-উলামা, চিকিৎসক ও জিহাদের কাজে প্রয়োজনীয় অন্যান্যদের কাছ থেকে সাহায্য না পাওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের জিহাদ চালিয়ে যান।

এভাবে,মুজাহিদ ভাই আবু-আব্দির রহমান মুহাম্মদ আলী বারনাওয়ি (রহিমাহুল্লাহ)-এর শাইখ ও পরামর্শদাতা আবুল বারা আল-দারআওয়ির জিহাদ পরিত্যাগ করা ও দুনিয়ামুখীতার পর  মুজাহিদরা তাঁর (মুজাহিদ ভাই আবু-আব্দির রহমান মুহাম্মদ আলী বারনাওয়ি) নেতৃত্বের অধীনে চলতে থাকে।

এটা সত্ত্বেও (অর্থাৎ,আবুল বারা আল-দারআওয়ির জিহাদ পরিত্যাগ করা ও দুনিয়ামুখীতা ) জিহাদের জন্য একটি শক্তিশালী (এবং অটুট) ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে তাঁর (মুজাহিদ ভাই আবু-আব্দির রহমান মুহাম্মদ আলী বারনাওয়ি) সংগ্রাম ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল। আরব উপদ্বীপে অবস্থানরত আল-কায়েদার সদস্যদের (আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের উত্তম বিনিময় দিন) থেকে সাহায্য এবং তহবিল নিয়ে তিনি এখানে (নাইজেরিয়াতে) আমাদের মুসলিম যুবকদের অন্তরে জিহাদের চেতনা পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।

নাইজেরিয়া থেকে জিহাদের বিলুপ্তি ঘটার প্রায় দুইশত বছরেরও অধিক সময় পার হওয়ার পর পুনরায় জিহাদের এই আবির্ভাব ঘটে।যাইহোক, এটা চরম অনুশোচনীয় যে, মুজাহিদদের বিরোধী পক্ষের লোকদের হাতে তাদের অর্থনৈতিক খাতের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল।

আবুল বারার পরিণাম ছিল এমন যে, সে সত্যকে পরিত্যাগ করেছিল এবং খেয়ালখুশির দিকে ঝুঁকেছিল। সে ওই সময় গ্রেফতারের ভয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যায়। এখনো এসব লোকেরা ভূমিগুলোতে ঘোরাঘুরি করে বেড়ায় আর সেসকল অপরিমেয় সম্পদ উপভোগ করে, যা ইতঃপূর্বে নাইজেরিয়াতে জিহাদের সাহায্য এবং সমর্থনের উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হতো। আমরা এরূপ ক্ষতি ও ধ্বংস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।

এ সবকিছু ঘটেছিল “৯/১১”-এর ঘটনার পর। এতসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যুবকরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ অব্যাহত রেখেছিল, যে পর্যন্ত না তাদের আমির মুজাহিদ ভাই মুহাম্মদ আলী তাঁর কয়েকজন সাহসী শিষ্যসহ সরকারি গার্ডদের দ্বারা নিহত হন। (আল্লাহ তাঁদের সকলকে কবুল করুন!) তারপর মুজাহিদ যুবকরা বিভিন্ন শহর অভিমুখে ছড়িয়ে পড়লেন।তাদের কেউ কেউ লোকজনকে তাওহীদের দিকে আহবান করতে লাগলেন;বাকি ভাইয়েরা মরুভূমিতে আলজেরিয়ান মুজাহিদ ভাইদের সাথে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে হিজরত করেছিলেন।

তাদের কারও কারও অন্তরে ধীরে ধীরে ভয় জায়গা করে নিতে লাগল, কিন্তু অধিকাংশ সময় তারা তাদের রবকে খুশি করার চিন্তায় মগ্ন থাকত। আল্লাহর রাস্তায় তারা যে দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছিল, তা সত্ত্বেও তাদের অন্তর পরাজয় বরণ করেনি এবং তারা দুর্বলও হয়নি কিংবা কাফের ও তাগুত বাহিনীর কাছে  বশ্যতাও স্বীকার করেনি।

বস্তুত তারা ঐসকল লোকদের পথ অনুসরণ করেছিল, যাদের ব্যাপারে আমরা আল্লাহর আয়াতে বর্ণনা পাই-

وَكَأَيِّنْ مِنْ نَبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ

“আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে যুদ্ধ করেছে;আল্লাহর পথে তাঁদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, তবে আল্লাহর রাহে তাঁরা পরাজিত হয়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালবাসেন।”-সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১৪৬

এরূপ অবস্থায় শাইখ মুহাম্মদ ইউসুফ (রহ) -এর দাওয়াতের উত্থানের মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য ও সহায়তা করেছিলেন। পূর্বে তিনি মুজাহিদ ভাই মুহাম্মদ আলীর (আল্লাহ তাঁদের উভয়কে কবুল করুন!) একজন শিষ্য ছিলেন। অতঃপর ভাইয়েরা তাঁকে নিযুক্ত করেন এবং সকল ভালো কাজে তাঁর কথা শোনা ও মান্য করার মাধ্যমে তাঁর প্রতি আনুগত্যের শপথ করেন। তিনি যে সত্যের দিকে আহবান করেছিলেন, তারা সকলে ঐব্যাপারে তাঁকে সমর্থন ও সহায়তা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এভাবে একটি বিশুদ্ধ ও উত্তম আকিদা-বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত এই সত্য আহবানের যাত্রা শুরু হয় এবং এগুলো তখন অত্যন্ত চমৎকারভাবে উন্নতির পথে এগুতে থাকে। এসময় মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে শাইখ মুহাম্মদ ইউসুফ (রহ.) অসংখ্যবার গ্রেফতার হয়েছিলেন।

মুসলিমদের সাধারণ বিষয়গুলো- বিশেষত মুজাহিদদের ব্যাপারে তিনি সর্বদা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকতেন। সত্যের উপর মুজাহিদদের সারিগুলোকে একত্রিত করতে তিনি কঠোর সংগ্রাম করেন এবং অনৈক্য, শত্রুতা, গোঁড়ামির নিন্দা করার ব্যাপারে তিনি সাবেক আমির-মহান ভাই মুহাম্মদ আলীর (রহিমাহুল্লাহ) পথ অনুসরণ করেন।

এগুলো আমরা স্বচক্ষে দেখেছি এবং আমরা এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আর আল্লাহ তা‘আলাই তাঁর সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। শাইখ তাঁর যাত্রা অব্যাহত রেখেছিলেন, অতঃপর নাইজেরিয়ান সরকার তার সেনাদলকে একটি জানাযার স্থলে মুজাহিদদের উপর আক্রমণের নির্দেশ দেয়। মুজাহিদীনরা ওই জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন, ফলে তাদের অনেকে গুলিবিদ্ধ ও আহত হন। পরবর্তীতে তাগুতবাহিনী ‘তাওহীদের সৈনিকদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত’ একটি মসজিদ ঘেরাও করে ওটাকে গুড়িয়ে দেয়।

২০০৯ সালের এক দুঃখজনক ঘটনায় ইসলামের এই শত্রুরা প্রায় সহস্রাধিক মুসলিমকে হত্যা করে এবং অবশেষে প্রকাশ্যে সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে শাইখের ফাসি কার্যকর করে। শাইখের তাওহীদি শিষ্যদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম তাদের অনেকেই সেদিন শাহাদাতবরণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের সকলের উপর দয়া করুন এবং তাঁদের সকলকে কবুল করুন!

পরিবর্তন (The change)

শাইখ মুহাম্মদ ইউসুফের (রহিমাহুল্লাহ) জীবদ্দশায় তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকার দরুন শুরা কমিটির পক্ষ থেকে শাইখের মিশন কার্যকরের লক্ষ্যে আবু বকর আশ-শিকাউকে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তার উপর জামাআহ’র আমিরের পদ অর্পণ করা হয়।

এভাবে আকিদা ও বিশ্বাসে আবু বকর আল-শিকাউ ও তার কিছু অনুসারীর মারাত্মক বিচ্যুতি প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত তাওহীদ ও জিহাদের পথে আমরা প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত করেছিলাম।

যেসমস্ত মুসলিমকে তাদের অজ্ঞতার কারণে ছাড় দেওয়া উচিত,তারা তাদের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছিল। সমস্ত মুসলিম জনগণকে কাফের আখ্যায়িত করার ব্যাপারে তাদের মূল কারণ এই ছিল যে, তারা তাওহীদের প্রথম অংশ অর্থাৎ তাগুতের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাদের সন্তানরা তখনো সরকারি স্কুলে পড়তে যেত এবং তারা গণতান্ত্রিক নির্বাচনসমূহে অংশগ্রহণ করত। এর পরিণাম ছিল অত্যন্ত জঘন্য। তারা মুসলিমদের সম্পদ ও ইজ্জতকে হালাল সাব্যস্ত করে এবং নির্বিচারে মুসলিমদের রক্ত প্রবাহের এক সামরিক অভিযানের সূচনা ঘটায়। বস্তুত আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সাহায্যকারী নেই।

তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্যায় ও ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ভ্রান্ত ও প্রতারণামূলক অভিযোগ আরোপ করে। এ ধরনের ভয়ঙ্কর ব্যাখ্যাগুলো শুধু কোনো বইয়ে লিখিতভাবে কিংবা অডিও আকারেই প্রকাশ করা হয়নি, বরং নাইজেরিয়ার মুসলিম জনসাধারণকে প্রভাবান্বিত করার লক্ষ্যে এগুলোর নৃশংস বাস্তবায়নও ঘটিয়েছিল। নিরীহ মুসলিমরা তাদের নিজেদের বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্রে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। নির্বিচারে শতশত মুসলিম হত্যা, ইয়োবা প্রদেশের “ফুটাকাসম” মার্কেটে জোরপূর্বক তাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া এবং বরনু প্রদেশের “বাক্বা স্টেশন” মাছ বাজারে মুসলিমদের উপরে চালানো হত্যাকাণ্ড হলো উম্মাহর বিরুদ্ধে শিকারিদল কর্তৃক সংঘটিত বর্বরতার দু’টি উদাহরণ। আল্লাহর আয়াতসমূহের ভুল ব্যাখ্যা করে তারা বরনু প্রদেশের দাম্বুরে নিরীহ জনগণের উপর এলোপাতাড়ি আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় অস্পষ্ট তথ্যের উপর ভিত্তি করে একত্রে ১২ জন নাগরিককে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়। তারা মুসলিমদের রক্ত প্রবাহের ক্ষেত্রে কোনো বাছ-বিচার করেনি। নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর নিকট এরূপ সীমালঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ড থেকে পানাহ চাচ্ছি।

যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকনির্দেশনা হলো-

‏”‏ انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا ‏”‏‏

“তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য করো, সে অত্যাচারিত বা অত্যাচারী যাই হোক না কেন।”  -সহিহ বুখারী ৬৯৫২

তাই আমরা আবু বকর আশ-শিকাউর সংশোধনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলাম।এই ব্যাপারটি বাকি মুজাহিদদের মধ্যে জানাজানি হয়ে যাওয়ার আগে আমরা তাকে গোপনে উপদেশ প্রদান করেছিলাম।

যাইহোক সে ও তার অনুসারীরা মিলে সংশোধিত হতে অস্বীকৃতি জানাল। নিজেদের মতের উপরে অটল থাকল এবং মুসলিমদের রক্ত প্রবাহ অব্যাহত রাখল। তার মনোভাবে অহংকার প্রকাশ পেতো এবং সে এমন আচরণ করত যেন ইসলামীতত্ত্ব বিষয়ে সৃষ্টিকুলের মধ্যে তার চেয়ে অধিক জ্ঞানী আর কেউ নেই।

শিকাউর পথভ্রষ্টতার মধ্যে ছিল নিজেকে মুসলিমদের সাধারণ আমির মনে করা এবং নাইজেরিয়ার মুসলিমদের জন্য তাকে বায়াহ প্রদান আবশ্যক বিবেচনা করা ও তার দলত্যাগকারীদের মুরতাদ গণ্য করা।

এভাবেই সে তার বিরোধিতাকারী ও অমান্যকারীদের রক্ত ও সম্পদকে হালাল করে নিয়েছিল এবং সে এমন নির্মম আদেশ দিত, যেগুলো ঠিকমত মানা না হলে কঠিন শাস্তি পেতে হতো।

এরকম পথভ্রষ্টতা ও উম্মাহর বিরুদ্ধে এরূপ সীমালঙ্ঘনের জন্য আমরা শিকাউ-এর জামাআত “আহলুস সুন্নাহ লিদ দাওয়াহ ওয়াল জিহাদ” সংগঠন, যা মূলত “বোকো হারাম” নামে বেশি পরিচিত,  হতে নিজেদের বিচ্ছিন্ন  হওয়াকে আবশ্যক বলে মনে করি। এবং এটাও আবশ্যক মনে করি যে, মুজাহিদদের অন্তরে তাদের ন্যায় বিপদগামী ও বিপদজনক আদর্শ রোপন করা থেকে বিরত থাকা উচিত, কেননা তা আমাদের এই মহান ও মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

তাই আলেম ও কমান্ডারদের মধ্য থেকে অভিজ্ঞ কিছু ভাইয়েরা একটি নতুনগ্রুপ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যার আকিদা ও বিশ্বাস হবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’র কার্যপদ্ধতির আলোকে এবং যার ভিত্তি স্থাপিত হবে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঠিক সুন্নাহর অনুসরণে।

এই নতুন গ্রুপ ঘোষণার আগে ভাইদের মধ্য থেকে আলেম ও তালিবে ইলমরা বেশ ভালো একটি কাজ করেছিলেন। তারা এই গ্রুপের আকিদা, কার্যপদ্ধতি এবং আমাদের মহান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ উল্লেখপূর্বক একটি স্পষ্ট ও লিখিত বিবৃতি তৈরি করেছিলেন।

শিকাউর আকিদা ও নীতি থেকে উদ্ভাবিত মারাত্মক বিচ্যুতিগুলো ঠেকাতে এবং সেই সাথে তার সীমালঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ডগুলো যাতে উম্মাহর উপর দ্বিতীয়বার আপতিত না হয়, একারণেই এই উদ্যোগ।

আমাদের উদ্দেশ্য উল্লেখপূর্বক এই লিখিত বিবৃতি প্রদানের পর২০১২ সালে আমরা সাহারার আলজেরিয়ান ভাইদের সাথে (আল্লাহ তাঁদের উত্তম বিনিময় দিন) পরামর্শ করে সংগঠনটির নামকরণ করেছিলাম “জামাআহ আনসারুল মুসলিমীন ফি বিলাদিস-সুদান”। আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছি যে, আমরা জামাআত আহলুস সুন্নাহ লিদ দাওয়াত ওয়াল জিহাদ (বোকো হারাম)-এর সাথে নেই এবং আমরা তাদের আমির আবু বকর আশ-শিকাউ থেকে পৃথক। আমরা তাদের খারেজি কর্মকাণ্ড ও পদক্ষেপের সাথে একমত পোষণ করি না।বরং আমরা আল্লাহর নিকট তাদের এই জঘন্য কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের পৃথক সাব্যস্ত করছি। তাদের এরূপ কার্যাবলী উম্মাহর প্রতি সম্মান পোষণকারী এবং কল্যাণকামী কোনো মুসলিমের জন্য আনন্দদায়ক হতে পারে না। সে (শিকাউ) এ ব্যাপারে “কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জামাআহ ত্যাগকারীর রক্তের বৈধতার প্রমাণ এবং এ বিষয়ে আলিমদের মতামত” শিরোনামে একটি প্রকাশনা লিখেছিল। এখানে “জামাআহ” দ্বারা সে তার জামাআহকেই বুঝিয়েছে এবং এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যখন সে তার জামাআহ ত্যাগকারী এবং তাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসার অপেক্ষাকারী ভাইদেরকে লক্ষবস্তুতে পরিণত করে ।

এমনকি মুজাহিদদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী-যারা কিনা সম্পূর্ণ কুরআনের হাফিজ ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের সংরক্ষণকারী ছিলেন, শিকাউ তাদেরও হত্যা করেছিল। এদের মধ্যে আছেন ভাই শাইখ মুহাম্মাদ (রহিমাহুল্লাহ), আর তাঁর পূর্বে ভাই খালিদ আল-বারনাভি (আল্লাহ তাঁর ও সমস্ত মুসলিম বন্দিদের মুক্তি ত্বরান্বিত করুন) –এর উপর গাড়িতে থাকা অবস্থায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল; আল্লাহ তাদের চক্রান্ত থেকে তাঁকে রক্ষা করেছিলেন। নিঃসন্দেহে মুজাহিদদের মধ্যে এমন অসংখ্য ভাই রয়েছেন যাদেরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। যাদের ডজন খানেককে গুরুঅপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অনেক যুবক মুজাহিদকে কেবল “তথাকথিত ইমামের”প্রতি আনুগত্যের বায়াহ প্রদান না করার কারণে হত্যা করা হয়েছিল। কে ছিল সেই ইমাম? অসংখ্য মুজাহিদীনকে তাদের স্ত্রীদের নিকট থেকে পৃথক করা হয়েছিল, কেননা তারা সেই “তথাকথিত জামাআহ” ত্যাগ করেছিল। কোন জামাআহ ছিল সেটি?

কা’বার রবের শপথ! এগুলো হলো তাই যা আমরা দেখেছি এবং আমরা এর সাক্ষ্য দিচ্ছি; আমরা অতিরিক্ত কিছুই বলিনি। বরং আমরা যা বলেছি তারা মুজাহিদীনদের সাথে এর চেয়েও আরও বেশি কিছু করেছে, যা কখনোই একজন আল্লাহভীতি সম্পন্ন মুসলিমের দ্বারা সম্ভব নয়। অথচ সেখানে ঠিক এটাই ঘটেছিল। মুসলিমদের হত্যা, তাদের সম্পদ আত্মসাৎ, তাদের স্থানচ্যুত করা ও সাবায়ার (মহিলা যুদ্ধবন্দি) নামে তাদের স্ত্রীদের ভোগদখল এসকল ভয়ঙ্কর কার্যকলাপের পূর্বে সাধারণ জনগণের মধ্যে তাদের কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা ছিল। কি ভয়ঙ্কর ছিল সেটা!খাওয়ারিজ এবং তাদের অত্যাচারের ভয়ে মরুভূমির লোকেরা পর্যন্ত তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল, রিফিউজি(শরণার্থী) হিসেবে শহরে আশ্রয় নিয়েছিল মিডিয়ার সংবাদে এমনটাই উঠে এসেছে। আমরা একমাত্র আল্লাহরই নিকট সাহায্য চাই এবং তাঁর উপরই আমরা নির্ভর করি। আমরা মহান ও প্রতাপান্বিত আল্লাহর নিকট সাহায্য চাই, যেন তিনি মুজাহিদীনদের অন্তরকে একতাবদ্ধ করে দেন, তাদের পদমর্যাদার উপর ঐক্যবদ্ধ করেন, সত্যের প্রতি তাদের জবানকে এক করে দেন, তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে ধর্মভীরু ব্যক্তির অধীনে তাদের একত্র করেন। আমাদের, তাদের এবং মুসলিমদের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় দুঃখ-দুর্দশা থেকে দূরে রাখেন। আমাদের সর্বশেষ দু‘আ হলো-যাবতীয় প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর এবং শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার ও সাহাবিদের উপর।

-শাইখ আবু উসামা আল আনসারী (আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন)

আমির: জামাআত আনসারুল মুসলিমিন ফি বিলাদিস সুদান।

(অন্ধকার রাজ্যের মুসলিমদের প্রতিরক্ষায় অগ্রদূত

Vanguard for the Protection of Muslims in Black Lands)

 

আপনাদের নেকদুআয় আমাদের ভুলবেন না

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 − six =

Back to top button