আমরা কি চাই…? || উপমহাদেশ ভিত্তিক জিহাদি আন্দোলন – প্রকৃত বাস্তবতা! প্রথম পর্ব
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম
পরিবেশনায়
আস-সাহাব উপমহাদেশ
সাক্ষাৎকার
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
মুখপাত্র, আল-কায়দা উপমহাদেশ
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৪৩৮.৩ কিলোবাইট]
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [২৪৯.৩ কিলোবাইট]
পিডিএফ ডাউনলোড করুন-
https://banglafiles.net/index.php/s/Q2NiXJeKdFyKSeq
http://www.mediafire.com/file/mkejdy143rsfta0/amra ki cai.pdf
http://www.mediafire.com/file/nrjan8ecpaja7wk/usamahiwarBEN.pdf/file
https://archive.org/download/usamahiwarBEN_201905/usamahiwarBEN.pdf
ডক লিংক
https://banglafiles.net/index.php/s/PpWAyzfoaQHx7pq
https://archive.org/download/usamahiwarBEN_201905/usamahiwarBEN.docx
http://www.mediafire.com/file/c36d9c04qw036dq/usamahiwarBEN.docx/file
———————-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
উপমহাদেশ ভিত্তিক জিহাদি আন্দোলন
প্রকৃত বাস্তবতা!
প্রথম পর্বঃ আমরা কি চাই?
মুসলিম উম্মতের সফলতা এবং এর মাধ্যম
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সম্মানিত দর্শকবৃন্দ, আজ আমরা জামা’আত কায়েদাতুল জিহাদ উপমহাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ এর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। অনেক দিন থেকে এই ইন্টারভিউ এর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল; কিন্তু অনিবার্য কিছু পরিস্থিতির কারণে আমাদের এই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। যেহেতু আলকায়েদা উপমহাদেশের প্রতিষ্ঠার পরে এটা প্রথম ইন্টারভিউ এজন্য প্রশ্নের আধিক্য থাকায় এই বৈঠককে কয়েকটি পর্বে বিভক্ত করা হয়েছে। আজ এর ধারাবাহিক বৈঠকের প্রথম পর্ব। সম্মানিত উস্তাদ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আস-সাহাব উপমহাদেশের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ জাযাকুমুল্লাহু খায়রা। আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আলকায়েদা উপমহাদেশের মুখপাত্র হিসেবে আপনার সাথে অনেক বিষয়ে আলাপ করার প্রত্যাশা ছিল। জিহাদি আন্দোলন পুরো দুনিয়ার সাথে সাথে উপমহাদেশে আজ এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করছে। এজন্য অনেক প্রশ্ন সাধারণ মানুষ এবং এই আন্দোলনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অন্তরে জন্ম নিচ্ছে। আশা করি আপনার সাথে কয়েক পর্বে বৈঠকের সুযোগ পাওয়া যাবে; ইনশাআল্লাহ এতে এসব প্রশ্নের উপর ফলপ্রসূ কথোপকথন সম্ভব হবে।
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আপনাদের, আস-সাহাব উপমহাদেশের, ভাইদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, আপনারা আমাকে এই সাক্ষাতকারের সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা এই বৈঠকগুলোকে আমাদের সবার জন্য এবং পুরো মুসলিম উম্মতের জন্য কল্যাণ এবং ফায়দার কারণ বানিয়ে দিন।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আমিন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আপনাদের মাধ্যমে এই সুযোগে আমি শ্রদ্ধাস্পদ আমিরুল মুমিনীন শায়খুল হাদিস শায়খ হেবাতুল্লাহ হাফিযাহুল্লাহ এবং সম্মানিত আমির শায়খ আইমান আল-জাওয়াহিরি হাফিযাহুল্লাহ সহ দুনিয়ার সব জিহাদি নেতৃত্ব, মুজাহিদ এবং মুসলমান ভাইদের সেবায় আমার পক্ষ থেকে, সম্মানিত আমির আসেম উমর হাফিযাহুল্লাহ এবং আমাদের জামা’আতের পক্ষ থেকে সালাম জানাচ্ছি। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ এক বুনিয়াদি প্রশ্নের মাধ্যমে শুরু করছি। আলকায়েদা উপমহাদেশের মূল দাওয়াত কি এবং কি উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য এটি গঠিত হয়েছে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আমরা জুলম ও ফাসাদ শেষ করার জন্য, আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য এবং নিজেদের প্রতিপালক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে খুশি করার জন্য বের হয়েছি। আল্লাহর সন্তুষ্টি মুসলমানদের প্রতি কল্যাণকামিতার সাথে শর্তযুক্ত। এজন্য আপনি এটাকে এভাবেও বলতে পারেন যে, আমাদের লক্ষ্য মুসলমান জনসাধারণের পথপ্রদর্শন, তাঁদের প্রতিরক্ষা এবং তাঁদের কল্যাণকামিতা। এরপর এটাও বাস্তবতা যে, আজ এই ভূখণ্ডে জুলম, ফিতনা এবং ফাসাদ যেভাবে ছেয়ে গেছে, তার সমাপ্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা জিহাদের মাঝে রেখেছেন, জিহাদ হবে তো এগুলো বন্ধ হবে, জিহাদ হবে তো এগুলো ধ্বংস হবে। আর যদি জিহাদ না হয়, তাহলে এগুলো দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং ধ্বংস ও বিপর্যয় হতে থাকবেঃ
وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَفَسَدَتِ الْأَرْضُ
অর্থাৎ আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো।
আল্লামাহ ইবনে আবি হাতিম রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
[لَوْلا الْقِتَالُ وَالْجِهَادُ.لَفَسَدَتِ الأَرْضُ]۔
অর্থাৎ যদি কিতাল ও জিহাদ না হত, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো।
এসব ফিতনা ও ফাসাদের প্রতিকার, জুলম ও শোষণের আঁধারের নিরাময় আল্লাহ শরীয়ত মোতাবেক জিহাদ এবং কিতালের মাঝে রেখেছেন। এরপর এটাও বাস্তবতা যে, মুসলমানদের কল্যাণকামিতা এবং তাঁদের পথপ্রদর্শনের যে দাবি তা সত্যি হতে পারেনা যতক্ষণ না তলোয়ার নিয়ে এই জালেমদের সাথে মুখোমুখি না হওয়া হয়, তাদের শক্তিকে ভেঙে না দেওয়া যায় যারা আল্লাহর দ্বীন এবং তাঁর বান্দাদের মাঝে প্রতিবন্ধক, যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে নিজের দাস বানিয়ে রেখেছে এবং যারা আল্লাহ দ্রোহী। আজ এসব জালেমদের কারণে মনুষ্যত্ব বিপথগামী হচ্ছে এবং এদের কারণে এই ধ্বংসের গহ্বরে পৌঁছে গেছে। আল্লাহ এমন অহংকারী জালেমদের বিরুদ্ধে শুধু দাওয়াত অথবা অনুনয় বিনয়ের রাস্তা দেখাননি, বরং আল্লাহ কিতাবের সাথে তলোয়ারও দিয়েছেন, দাওয়াতের সাথে কিতালও ফরয করেছেন।
[ فَقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَكُفَّ بَأْسَ الَّذِينَ كَفَرُوا وَاللَّهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنْكِيلًا]
অর্থাৎ আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের যিম্মাদার নন! আর আপনি মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন। শীঘ্রই আল্লাহ কাফেরদের শক্তি-সামর্থ খর্ব করে দেবেন। আর আল্লাহ শক্তি-সামর্থের দিক দিয়ে অত্যন্ত কঠোর এবং কঠিন শাস্তিদাতা।
কাজেই আমরা কি চাই? আমরা জুলম, ফিতনা এবং ফাসাদ খতম করতে চাই। আমরা আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার মাধ্যমে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা মুসলিম জনসাধারণের পথপ্রদর্শন, প্রতিরক্ষা এবং কল্যাণ চাই। আর এইসব লক্ষ্য অর্জনের শরীয়তসম্মত রাস্তা হল দাওয়াত ও জিহাদ বা দাওয়াত ও কিতাল। এই দুইটি অর্থাৎ দাওয়াত ও জিহাদকে আমরা অবিচ্ছেদ্য এবং একটি আরেকটির জন্য পরিপূরক মনে করি, এটাই আমাদের মানহাজ, এটার দিকে আমরা আমাদের উম্মতকে ডাকি এবং এর মাধ্যমেই ইনশাআল্লাহ মাজলুমদের সাহায্য করা সম্ভব হবে, বঞ্চিতদের এর মাধ্যমেই আল্লাহ তা’আলা অধিকার দেবেন, এর মাধ্যমেই এখানকার দলিত, পীড়িত, মাজলুম জনসাধারণের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার রাস্তা আল্লাহ খুলবেন এবং এই দাওয়াত ও কিতালের রাস্তা উপমহাদেশের ভেতর জুলম এবং ফাসাদের এই কাল রাত্রিকে ন্যায়পরায়ণতা, নিরাপত্তা ও বরকতে পরিপূর্ণ ভোরে পরিবর্তন করার কারণ হবে ইনশাআল্লাহ।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ উপমহাদেশে জিহাদি আন্দোলন একটা লম্বা সময় ধরে অব্যাহত আছে। আলকায়েদা উপমহাদেশের দৃষ্টিতে উপমহাদেশের জিহাদি আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আমাদের জামা’আতের মৌলিক নীতি আপনাদের সামনে রাখছি যাতে বোঝা যায় আমরা জামা’আত হিসেবে উপমহাদেশের জিহাদি আন্দোলনকে কিভাবে দেখি। এই আন্দোলন পাকিস্তান, কাশ্মীর, ভারত এবং বাংলাদেশসহ পুরো উপমহাদেশকে ইসলামী উপমহাদেশে পরিবর্তন করার আন্দোলন; আর এটা ঐ বৈশ্বিক জিহাদি আন্দোলনের অংশ যা বৈশ্বিক স্তরে জায়নবাদী ক্রুসেডার, ধর্মনিরপেক্ষ সেক্যুলার, মুশরিক এবং ধর্মহীনদের জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। একইসাথে আমাদের দৃষ্টিতে এই আন্দোলন ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের বরকতময় অভিযানের ধারাবাহিকতা।
- প্রকৃতপক্ষে, আমাদের জামা’আত ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্য থেকে এক বাহিনী। আমাদের কাছে সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য বিষয়গুলোর মাঝে একটি হল ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা এবং একে শক্তিশালী করা। আফগানিস্তানের ইসলামী ইমারতের পতাকাতলে আমাদের সাথীরা আলহামদুলিল্লাহ লড়াই করছে এবং আমরা পাকিস্তানের মুসলমানদেরকে, উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে সরাসরি দাওয়াত দেই যে, তাঁরা যেন এখানে আসে এবং ইমারতের পতাকাতলে অ্যামেরিকান জোটের বিরুদ্ধে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য এই বরকতময় জিহাদে অংশগ্রহণ করে। এরপর আফগানিস্তানের বাইরে উপমহাদেশের ভেতরেও ইসলামী ইমারতের শত্রুদের প্রতিরোধ করা এবং তাদের মোকাবেলায় জনসাধারণের স্তরে জিহাদি আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করাও এই উপমহাদেশ ভিত্তিক জিহাদি আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য!
- দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক শয়তানদের লুটতরাজ এবং ফাসাদের রাস্তা উপমহাদেশে বন্ধ করা এবং তাদের জুলম থেকে পাকিস্তান, কাশ্মীর, বাংলাদেশ, ভারত ও বার্মার মুসলমানদের প্রতিরক্ষা করা আমাদের এই আন্দোলনের লক্ষ্য!
- একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি বড় উদ্দেশ্য হল উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, যেসব অধিকার তাঁদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, এই অধিকারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার আল্লাহ তা’আলার দেওয়া উপহার পবিত্র শরীয়ত। অর্থাৎ এই জায়গার লোকেরা জাহিলিয়াতের অধীনে থাকতে যেন বাধ্য না হয়, বরং শরীয়তের ছায়াতলে যেন তাঁরা থাকতে পারে; একইভাবে আরেকটি অধিকার হল স্বাধীনতা, মুসলমানদের জান, মাল ও ইজ্জতের প্রতিরক্ষা! উপমহাদেশের মুসলমানদের এই সব অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া আমরা জিহাদি আন্দোলনের লক্ষ্য মনে করি …!
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ উপমহাদেশে চলমান এই জিহাদি আন্দোলনে আলকায়েদা উপমহাদেশ কি ভূমিকা রেখেছে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আমাদের জামা’আত, জামা’আত কায়েদাতুল জিহাদ উপমহাদেশ, যাকে সংক্ষেপে আলকায়েদা উপমহাদেশও বলা হয়ে থাকে, তো আমাদের জামা’আত উপমহাদেশের জিহাদি আন্দোলনের এক বড় দায়ী! আল্লাহর অনুগ্রহে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং ভারতে এই জামা’আত পুরোপুরি কার্যকর রয়েছে। আমাদের মুজাহিদ ভাইয়েরা দাওয়াত এবং কিতালের ময়দানে উপমহাদেশের জিহাদি আন্দোলনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে। দুই ময়দানেই আল্লাহর সাহায্য করছেন; শাহাদাত, গ্রেপ্তারি এবং বাস্তুহারা হওয়া এসবের সম্মুখীন হতে হচ্ছে; কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহে কান্দাহার থেকে ইসলামাবাদ, ঢাকা এবং দিল্লী পর্যন্ত গাযওয়ায়ে হিন্দের বরকতময় দাওয়াতকে এই কাফেলা নিজেদের রক্ত দিয়ে রঙিন করে রেখেছে এবং আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা যে এসব পরীক্ষা থেকে শুধু আমাদের জামা’আত নয় বরং পুরো উপমহাদেশের জিহাদি আন্দোলন ইনশাআল্লাহ সফল ও শক্তিশালী হিসেবে দেখা দিবে।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ উপমহাদেশের ভেতরে আপনাদের প্রধান শত্রু এবং প্রণিধানযোগ্য লক্ষ্যবস্তু কি?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ সবচেয়ে প্রথম লক্ষ্যবস্তু ‘গুণ্ডাদের সর্দার’ আমেরিকা, কারণ আমেরিকা ইসলাম এবং ইসলামের শত্রুদের সবচেয়ে বড় শত্রু। এর হাত মুসলিম উম্মতের রক্তে রঞ্জিত, দুনিয়াভর ইসলামের বিরুদ্ধে জালেমদের পৃষ্ঠপোষক এবং বৈশ্বিক অত্যাচারী শাসনব্যবস্থার সবচেয়ে বড় রক্ষক এবং সর্দার। এজন্য উপমহাদেশের এই ভূখণ্ডকে আমেরিকার নোংরামি থেকে মুক্ত এলাকা বানানো, এর ষড়যন্ত্র এবং এর জুলম থেকে এই ভূখণ্ডকে পবিত্র করা এবং এ জায়গা থেকে এর স্বার্থসিদ্ধির প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয় লক্ষ্যবস্তু ভারত, সেই ভারত যে মুশরিক, লুণ্ঠনকারী এবং অত্যাচারী, যে কাশ্মীর দখল করে রেখেছে এবং যে প্রতিদিন আমাদের কাশ্মীরী মা, বোন এবং ভাইদের উপর জুলম করে যাচ্ছে। এই ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা থেকে আসাম ও গুজরাট পর্যন্ত আমাদের মুসলমান ভাইদের রক্ত দিয়ে হোলি খেলা অব্যাহত আছে। আবার এই ভারত আজ ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে আমেরিকা এবং ইসরায়েলসহ সমস্ত বৈশ্বিক শয়তানদের মিত্র। কাজেই বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান বরং পুরো উপমহাদেশে ভারতীয় সরকারের স্বার্থকে নিশানা বানানো আমাদের দ্বিতীয় বড় লক্ষ্যবস্তু!
তৃতীয় নম্বরে ঐসব শক্তি আমাদের লক্ষ্যবস্তু যারা জিহাদি আন্দোলনের শত্রু, জিহাদি আন্দোলনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং এর জন্য বৈশ্বিক কুফরি শক্তি থেকে অর্থ জমা করছে। পাকিস্তানের উপর চেপে বসা জেনারেল, এদের সশস্ত্র চেলা এবং শাসক শ্রেণী এর সুস্পষ্ট উদাহরণ। এটা ঐ আলসার যার কাজই হল জিহাদি আন্দোলনকে মূল থেকে শেষ করে দেওয়া। যখন তারা এটা করতে ব্যর্থ হয়, তখন এই আন্দোলনকে বিক্ষিপ্ত করা, বৈশ্বিক গুণ্ডাদের বশীভূত করা এবং এর বরকতময় ফলকে এসব কাফেরদের কোলে সপে দেওয়া এরা নিজেদের দায়িত্ব মনে করে। কাজেই এই জালেম জিহাদি আন্দোলনের এবং ইসলামী জাগরণের বিরুদ্ধে প্রত্যেক মুলহিদ (নাস্তিক) এবং কাফেরের বাহু, এদের কারণেই আজ পাকিস্তান দুনিয়া ভরা অপরাধী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এবং আজ এদের কারণেই এই ভূখণ্ড আল্লাহর শরীয়ত থেকে বঞ্চিত এবং এখানে জুলম ও ফাসাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত আছে।
এখানে লক্ষ্যবস্তু নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এজন্য বলছি যে, আলকায়েদা উপমহাদেশের আচরণবিধি আলহামদুলিল্লাহ প্রকাশিত হয়েছে, এতে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, পদ্ধতিসহ আমাদের জিহাদি লক্ষ্যবস্তু এবং মূলনীতি ও মানদণ্ড লিপিবদ্ধ হয়েছে! এজন্য সব মুসলমানদের বিশেষভাবে মুজাহিদদের, আমাদের জামা’আতের সাথীদেরকে এবং জামা’আতের বাইরের অন্যান্য ভ্রাতৃস্থানীয় অন্যান্য জামা’আতের প্রিয় ভাইদের সবাইকে এই আচরণবিধি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আমেরিকা, ভারত এবং সাথে সাথে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে একই সময়ে শত্রু বানানো এবং এদের বিরুদ্ধে লড়াই করা কি যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজির দিক থেকে উপযুক্ত?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ বাস্তবতা এটাই যে, আমরা পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে শত্রু বলি আর না বলি এরা শত্রু এবং এরা শরীয়তের বিরুদ্ধে, দ্বীনের অনুসারীদের বিরুদ্ধে, জিহাদি আন্দোলন এবং মুজাহিদদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমরা জানি যে, শত্রুর সংখ্যা কম করা যুদ্ধে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে, কিন্তু নিজেদের বিরুদ্ধে লড়াইরত শত্রু থেকে চোখ বন্ধ করে রাখা নিজেদের দাওয়াত, জিহাদ এবং আন্দোলনকে নিজ হাতে ধ্বংস করার প্রতিশব্দ। আজ পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী এবং অত্যাচারী শাসনব্যবস্থা, শরীয়ত এবং জিহাদের রাস্তায় পুরোপুরি প্রতিবন্ধক। এজন্য অনিবার্যভাবে এই শত্রুদের বিরুদ্ধে ময়দানে নামতে আমরা বাধ্য হয়েছি। এখানে আমি এটাও উল্লেখ করছি যে, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ইসলামের শত্রুতার ইতিহাস দেখে এই বাস্তবতাকে কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা যে, দ্বীনের বিজয়ের আন্দোলন যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের দাওয়াতকে বাঁচানোর জন্য এই সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ময়দানে না নামবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই আন্দোলন এক পাও অগ্রসর হতে পারবেনা এবং ততক্ষণ পর্যন্ত উপমহাদেশে কোন জালেমের রাস্তা বন্ধ করা যাবেনা।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ বাংলাদেশের অবস্থা আপনার সামনে। আপনি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে কিভাবে দেখেন? এবং এখানকার মুজাহিদদের জন্য আপনি কোন কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়াকে জরুরী মনে করেন?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ বাংলাদেশের মুসলমানেরা আজ এক ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। আর তাঁদের এই অবস্থার জন্য পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ভূমিকা – জালেম, শরীয়তের শত্রু এবং উম্মতের সাথে খেয়ানতকারী এই সামরিক বাহিনীর ভূমিকা – ভারতীয় সরকারের থেকে কোন দিক থেকে কম নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর লজ্জাজনক জুলম এই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি আজ পর্যন্ত ভুলতে পারেনি। এই জাতি ইসলামের জন্য পাকিস্তানের অংশ হয়েছিল কিন্তু ইসলামের শত্রু পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার তাঁদেরকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করে দিয়েছে। ভারতের এ থেকে ফায়দা নেওয়ার সুযোগ ছিল আর সেই সুযোগ ভারত পুরোপুরি কাজে লাগায়। ফলস্বরূপ, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পুরোপুরি ভারতের দাস হয়ে গেছে। এখানকার সশস্ত্রবাহিনী, পুলিশ, আদালত এবং মিডিয়া সবকিছু আজ ভারতের ভাষায় কথা বলে এবং ভারতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করে; যদিও আলহামদুলিল্লাহ এখানকার জনসাধারণের মাঝে তাওহিদের সন্তান এবং রাসূলের (ﷺ ) এর জন্য কুরবান হওয়া লোকের অভাব নেই। আর এই কারণেই এরকম আহলে ঈমানদের জন্য জায়গা অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে গেছে। মূর্তি এবং গরুর পূজারিদের লক্ষ্য এই মুসলিম জনপদকে তাঁদের সবচেয়ে বড় মূল্যবান সম্পদ ঈমান থেকে বঞ্চিত করা এবং নিজেদের পুরোপুরি দাস বানানো। দুঃখের বিষয় আজ চোর, লুটেরা, নিচ, ধর্মহীন এবং মুলহিদদের (নাস্তিকদের) সম্মান দেওয়া হচ্ছে আর দ্বীনের অনুসারীদের জাতি, দেশ বরং পুরো মানবজাতির শত্রু হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাঁদের উপর জুলম করা হচ্ছে। ২০১৩ সালে ঢাকার ভেতরে এক দ্বীনি সমাবেশে রাতে অভিযান এবং শুধু এক রাতেই নীরবে এক হাজারেরও বেশি মুসলমানকে শহীদ করা; এরপর ভারতের সীমান্তে অবস্থিত সাতক্ষীরা জেলার ভেতরে স্বয়ং ভারতের সামরিক বাহিনীর পূর্ণ অনুপ্রবেশ এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সাথে মিলে পঞ্চাশের বেশি মুসলমানকে হত্যা এবং তাঁদের ঘরবাড়ি ধ্বংস … হায়! ঘটনা যদি এখানেই শেষ হত, কিন্তু না এখানে শেষ হয়নি। আজ একদিকে আহলে ঈমানদের ফাঁসি, হত্যার পর হত্যা এবং বন্দী করার ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে এবং অন্যদিকে দ্বীনের শত্রু মুলহিদ এবং রাসূল (ﷺ) এর অবমাননাকারীদের মত নিকৃষ্ট সৃষ্টিরা পুরোপুরি আশ্রয় প্রশ্রয় পাচ্ছে। অনেক লম্বা সময় থেকে বাংলাদেশের মুসলমানদের উপর এক যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যা প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতার চেহারায় মুশরিক হিন্দুদের ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের মুসলমানরা জানে যে, তাঁদের উপর জিহাদ ফরয হয়ে গেছে। এই জিহাদ বাংলাদেশে ভারতের ইসলাম দুশমনির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসেবে হোক অথবা কাশ্মীরী এবং ভারতীয় মুসলমানদের সাহায্য হিসেবে হোক, প্রত্যেক অবস্থায় ভারতীয় সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়া আজ ফরযে আইন। এই কারণেই আমাদের জামা’আতের কাছে বাংলাদেশ বরং পুরো উপমহাদেশে ভারতীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় লক্ষ্যবস্তু।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আপনি কি এখানে বাংলাদেশে আমাদের জামা’আতের সাথে সংশ্লিষ্ট মুজাহিদদের জন্য কোন বার্তা দিতে চান?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আমি বাংলাদেশের নিজেদের অত্যন্ত প্রিয় সাহসী মুজাহিদ ভাইদের প্রতি অনুরোধ করব বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে জিহাদের এই ইবাদতের দিকে ডাকা এবং গাযওয়ায়ে হিন্দের এই মহান আন্দোলনকে এখানে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আল্লাহ আপনাদেরকে নির্বাচিত করেছেন। বাংলাদেশের মুসলমানদের দ্বীন ও দুনিয়ার প্রতিরক্ষা আপনাদের উপর ফরয এবং এই ফরয আদায়ে নিজ জাতিকে অত্যন্ত যত্নের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জিহাদে শামিল করুন, এতে আপনারা সফল হবেন তো আপনারা বাংলাদেশে ইসলাম এবং ইসলামের অনুসারীদের সাহায্য করতে পারবেন এবং কাশ্মীর থেকে বার্মা পর্যন্ত মাজলুমদের হ্রদয়ও আপনারা ঠাণ্ডা করতে পারবেন। আপনারা আপনাদের হাতিয়ার মুশরিক, অপবিত্র এবং জালেম ভারতীয় সরকারের দিকে করুন যা ঢাকা এবং সাতক্ষীরা থেকে শুরু করে কাশ্মীর এবং আহমাদাবাদ বরং পুরো উপমহাদেশের আহলে ঈমানের শত্রু এবং অপরাধী, এই মুশরিক এবং নিচ শত্রুর বিরুদ্ধে অগ্রসর হোন … যদি আপনার এই রাস্তায় কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আপনারাও নিজেদের কাজের মাধ্যমে এই বার্তা দিন যে আপনারা নিজেদের জিহাদ, আন্দোলন এবং দাওয়াত কিভাবে রক্ষা করতে হয় তা খুব ভাল করে জানেন। আল্লাহ আপনাদের সাহায্য করুন এবং আপনাদের মাধ্যমে উপমহাদেশের তাওহিদ ও জিহাদের এই বরকতময় পতাকা সুউচ্চ করুন। আমিন।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আপনি বর্তমান জিহাদি আন্দোলনকে উপমহাদেশের ইসলামী এবং জিহাদি ইতিহাসের সাথে কিভাবে সংযুক্ত করেন?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ ইংরেজরা যখন উপমহাদেশের অধিকাংশ এলাকা থেকে শরীয়ত ধ্বংস করে, তখন শাহ আব্দুল আযিয (র) ১৮০৬ সালে এক ফাতওয়া দেন যে, উপমহাদেশ আর দারুল ইসলাম নেই, এটা দারুল হারব হয়ে গেছে। এরকম ঐতিহাসিক ফাতওয়ার আলোকে সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (র) এবং শাহ ইসমাইল শহীদ (র) এর জিহাদি আন্দোলন শুরু হয়, (উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে ১৮৫৭ সালে স্বাধীনতার আন্দোলন এবং শায়খুল হিন্দের (র) মত অন্যান্য জিহাদি আন্দোলনও অস্তিত্ব পায়)।
শাহ আব্দুল আযিয (র) যে উপমহাদেশকে দারুল হারব ঘোষণা করে ফাতওয়া দেন, এই ফাতওয়া আজও প্রতিষ্ঠিত আছে। কারণ, এর সব বিষয় আজও পুরো উপমহাদেশে আরও বেশিভাবে আছে, আজ পুরো উপমহাদেশে কোথাও শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত নেই! বরং উপমহাদেশের প্রত্যেক কোণায় কোণায় আজ শরীয়তের শত্রুদের রাজত্ব, উপমহাদেশের মুশরিকদের বা মুলহিদদের (নাস্তিকদের) এবং ক্রুসেডার কাফেরদের ধর্মহীন গোলামদের শাসন। এজন্য শাহ আব্দুল আযিয (র) এর ফাতওয়ার উপর আমল আজও ওয়াজিব। দ্বিতীয় কথা হল সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (র) যখন আন্দোলন ও যুদ্ধাভিযান শুরু করেন, সেই আন্দোলন যার জন্য হাজার হাজার উলামায়ে কেরামকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং যে আন্দোলনকে শায়খুল হিন্দও (র) পরে সমর্থন দিয়েছিলেন, তো এই আন্দোলন উপমহাদেশে কখনও শেষ হয়নি, বরং এটি এই পুরো ইতিহাসে অব্যাহত থাকে। বাংলায় (বাংলাদেশ) হাজ্বী শরীয়তুল্লাহ এবং তিতুমীরের উত্তরাধিকারেরা, পাকিস্তানের গোত্র এলাকায় ফক্বির এপি, হাজী তারংযাই এবং মোল্লা পাবন্দের মত বিখ্যাত নাম এই জিহাদি আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরও এই আন্দোলন এখানে গোত্রীয় এলাকাগুলোতে জারি থাকে। শরীয়ত প্রতিষ্ঠার ওয়াদা যখন এখানকার শাসকেরা পূরণ করেনি, তখন ফক্বির এপি (র) শরীয়ত প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে আন্দোলন আবার শুরু করেন এবং এই “অপরাধে” পাকিস্তানী বিমানবাহিনী তাদের ইংরেজ এয়ার ভাইস মার্শাল এলেন এর নেতৃত্বে এই আন্দোলনের এক জনসমাগমের উপর নিজেদের প্রথম অভিযান সম্পন্ন করে। এরপরেও এই আন্দোলন জারি থাকে, উত্থান পতন অবশ্যই এর উপর এসেছে, আর আন্দোলনের উপর এমন উত্থান পতন হয়েও থাকে; কোন ঘটনা অথবা অবস্থা এই আন্দোলনকে তার পুরনো বুনিয়াদের উপর নতুন প্রেরণার সাথে আবার উন্নীত করে! আমেরিকা যখন এখানে আসে এবং পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী জিহাদি আন্দোলন এবং ইসলামের বিরুদ্ধে খোলাখুলি ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে এবং যখন এর আসল চেহারা সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় তখন এখানে মুজাহিদদের আন্দোলনও নতুন প্রেরণা নিয়ে ঐ পুরনো বুনিয়াদের উপরই … নিজ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আবার দাঁড়িয়ে যায়, যে বুনিয়াদ সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (র) এর জিহাদি আন্দোলনের ছিল … এভাবে এখানে উপমহাদেশের জিহাদি আন্দোলনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। কাজেই আমরা মুজাহিদরা উপমহাদেশে সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (র) এর আন্দোলনেরই ধারাবাহিকতা। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক অর্থে সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (র) এর উত্তরাধিকার বানিয়ে দিন, আমরা যেন সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (র) এর কাঙ্ক্ষিত উপমহাদেশকে ইসলামের শত্রু থেকে মুক্ত করতে পারি এবং এখানে শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় – এসব আমাদেরও লক্ষ্য। একইভাবে তাঁর (র) পথ ছিল দাওয়াত ও জিহাদ আর এটা আমাদেরও রাস্তা। এজন্য আমরা উপমহাদেশের ভেতরে ইনশাআল্লাহ সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (র) এর জিহাদি আন্দোলনেরই ধারাবাহিকতা, আল্লাহ আমাদেরকে এই আন্দোলনের হক্ব আদায় করার তৌফিক দান করুন এবং আল্লাহ এখানকার মুসলমানদের জন্য আমাদের এই আন্দোলনকেও সৈয়দ আহমাদের আন্দোলনের মত বরকতময় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন। আমিন।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ উপমহাদেশ থেকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের দিকে মনোযোগ দেওয়া যাক। আপনি উল্লেখ করেছেন আলকায়েদা উপমহাদেশের বড় লক্ষ্য ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের শক্তিবর্ধন। আমেরিকার আফগানিস্তানে যুদ্ধ সতের বছরে গড়িয়েছে। আজ সতের বছর পরে আপনার দৃষ্টিতে ইসলামী ইমারত আফগানিস্তান কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আজ আলহামদুলিল্লাহ ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের কাফেলা সফলতার সাথে নিজ সফর জারি রেখেছে, আমেরিকার জোট হামলা করেছে সতের বছর হয়ে গেছে, এই সময়ের মধ্যে যুগের এই ফেরাউন সব ধরণের শক্তির পরীক্ষা করেছে, আণবিক বোমা ছাড়া এর তুনে যা কিছু ছিল সব কিছু সে শেষ করে ফেলেছে, ডলারও অনেক খরচ করেছে, প্রেরণা দেওয়ার জন্যও অনেক কিছু সাজিয়েছে, যা কিছু তার সামর্থ্যের মধ্যে ছিল সবকিছুর পরীক্ষা সে করেছে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ব্যর্থ হয়ে গেছে। আল্লাহ আমিরুল মুমিনীন মোল্লা উমর (র) এর তাঁর রবের উপর ধারণা সত্য করে দেখিয়েছেন যা তিনি ব্যক্ত করেছিলেন যে – এরা আমাদেরকে পরাজিত করার ওয়াদা করেছে আর আল্লাহ আমাদেরকে বিজয়ী করার ওয়াদা করেছেন, দেখা যাক কার ওয়াদা সত্য। আলহামদুলিল্লাহ আমেরিকার ওয়াদা মিথ্যা ছিল। আল্লাহর ওয়াদা সত্য ছিল এবং সত্য আছে, আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের রবের সাথে নিজ ওয়াদার ব্যাপারে সত্যবাদী হিসেবে দেখান। আল্লাহ আমাদের জিহাদের রাস্তায় দৃঢ়তা দিন। যাহোক, তিনি ইসলামী ইমারতের কাফেলাকে, মুসলিম উম্মতের মুজাহিদ এবং মুসলমানদেরকে বিজয় দিয়েছেন আর আমেরিকা পরাজিত হয়েছে; আজ আমেরিকার এই পরাজয়কে পুরো দুনিয়া দেখছে।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আপনি বর্তমান পরিস্থিতিকে কিসের ভিত্তিতে আমেরিকার পরাজয়ের সমার্থবোধক মনে করেন?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আমেরিকা কিছু লক্ষ্য সামনে নিয়ে এখানে এসেছিল, তার এখানে আসার কিছু উদ্দেশ্য ছিল, ঐসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি অর্জিত হয়েছে? সেগুলো কি অর্জিত হয়েছে; আজ সে কোন নতুন কথা বলা শুরু করেছে নাকি আজও সে তার পুরনো কথার উপরই রয়েছে যেখান থেকে সে তার এই যাত্রা শুরু করেছিল? বাস্তবতা হল এই যে, আমেরিকা তার লক্ষ্য অর্জনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আফগানিস্তানে আমেরিকার জোটের লক্ষ্য কি ছিল? আর যদি আমেরিকা নিজ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে থাকে তাহলে তার এই ব্যর্থতার ফলাফল কি?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ প্রথম লক্ষ্য ছিল জিহাদি আন্দোলনকে এবং এই তালিকার শীর্ষে ইসলামী ইমারত এবং আলকায়েদাকে ধ্বংস করা। কিন্তু জিহাদি আন্দোলন কি শেষ হয়েছে? আলহামদুলিল্লাহ, আফগানিস্তানে এই আন্দোলন আজও প্রতিষ্ঠিত আছে, মুজাহিদেরা আমিরুল মুমিনীন শায়খ হেবাতুল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ) নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ও ঐক্যমতের উপর আছে। জিহাদি কাফেলা শক্তি থেকে শক্তিশালী হয়েছে, অর্ধেকের বেশি আফগানিস্তান মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে, বিজয়ের পর বিজয় হচ্ছে, মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় অ্যামেরিকান সামরিক বাহিনী এবং চোর লুটেরাদের নিয়ে গঠিত এদের যে স্থানীয় এজেন্ট, আফগান সামরিক বাহিনী আছে, তারা আজ পা ফেলার জায়গা পাচ্ছেনা। সবশেষ উপায় এদের কাছে রয়েছে বোমাবর্ষণ; কিন্তু বোমাবর্ষণ করে তো আর ভূমি দখল করা যায়না। শাসন করার জন্য ভূমিতে নামতে হয় এবং এটা এদের সাধ্যের মাঝে নেই। এরপর এটাও দেখুন, যে জিহাদি আন্দোলনকে কান্দাহার এবং তোরাবোরাহতে দাফন করে দেওয়ার জন্য আবরাহার এই বাহিনী এসেছিল, সেই বরকতময় আন্দোলন পুরো দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ছায়াবান বৃক্ষ হয়ে পূর্ব ও পশ্চিমে বেশকিছু ভূখণ্ডে আহলে ঈমানদের অন্তর এবং চোখ শীতলকারী হয়ে গেছে। আজ আমেরিকার সামনে শুধু আফগানিস্তান নেই, বরং ইয়েমেন, সোমালিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, মালি এবং উপমহাদেশসহ পুরো দুনিয়ায় আলহামদুলিল্লাহ কুফরি শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে এই জিহাদি আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত এবং আল্লাহর অনুগ্রহে আরও প্রশস্ত এলাকার উপর আজ তৌহিদের পতাকা পত পত করে উড়ছে।
দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল শরীয়তকে শেষ করে ফেলা … প্রথম কথা শরীয়ত শেষ করার কি দরকার ছিল? শরীয়তের সাথে শত্রুতা কেন? কারণ, যেখানে শরীয়ত হবে সেখানে আল্লাহর দাস তৈরি হবে, সেখানে জুলমের প্রতি ঘৃণা এবং ন্যায়পরায়ণতার প্রতি ভালবাসা হবে এবং সেখানে এদের অজ্ঞতায় পূর্ণ শাসনব্যবস্থা এবং পচা-গলা সংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা জন্ম নিবে। এজন্য এরা দুনিয়ার কোন প্রান্তরে শরীয়ত সহ্য করতে পারেনা। যাহোক আমেরিকার এখানে আসার একটি লক্ষ্যও ছিল শরীয়ত ধ্বংস করা। এখন কি শরীয়ত ধ্বংস হয়ে গেছে? এদের নোংরামি আর শয়তানিতে ভরা সংস্কৃতি কি এখানে চালু হয়েছে? আজও যেসব এলাকায় মুজাহিদদের ক্ষমতা আছে, আলহামদুলিল্লাহ সেখানে শরীয়তের উপরেই আমল হচ্ছে, কুফরের ক্ষতিকর শাসনব্যবস্থা নেই, এদের পশ্চিমা সংস্কৃতির যে নোংরামি, এগুলোর নাম নিশানাও আপনি কোথাও পাবেননা … এটা শুধু এখানে আফগানিস্তানের অবস্থা নয়, বরং যেসব এলাকায় আল্লাহ মুজাহিদদের বিজয় দিচ্ছেন, সেখানে আপনি শরীয়তের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দেখবেন।
আমেরিকার হামলার তৃতীয় লক্ষ্য ছিল জনসাধারণকে দাস বানানো … যাতে আমেরিকা যাকে ভাল বলে জনসাধারণও তাকে ভাল মনে করে এবং যাকে আমেরিকা খারাপ বলে, জনসাধারণও তাকে খারাপ বলে। এখানকার জনসাধারণ কি এই দাসত্ব কবুল করেছে? আলহামদুলিল্লাহ এখানকার মানুষেরা আজ মুজাহিদদের জন্য জীবন দেয়, তারা মুজাহিদদের নিজেদের জান, মাল ও দ্বীনের রক্ষাকারী মনে করে। আর নিজ দ্বীন ও পবিত্রতার শত্রুদের বিরুদ্ধে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মুজাহিদ এই জনতার শত্রুতাও সব সময় আপনার দৃষ্টিতে আসবে।
এই জালেমদের চতুর্থ লক্ষ্য ছিল নিজেকে নিরাপদ বানানো, অর্থাৎ এই জালেমরা জুলম থেকে নিজেদের হাত তো রুখবেই না, আফগানিস্তান থেকে ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও ইয়েমেন পর্যন্ত আমাদের মা, বোন, ভাই এবং বাচ্চাদের তো হত্যা করছে কিন্তু এসব কিছুর পরও এরা নিজেদেরকে প্রতিরক্ষার স্বপ্ন দেখে। আজ আলহামদুলিল্লাহ আমেরিকা এবং এর মিত্ররা আগের থেকে মোটেও বেশি নিরাপদ নেই; সতের বছর পার হয়ে গেছে এবং এরপরেও আজ এদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হল নিজেদের হেফাজত করা। বাজেটের এক বৃহদাকার অংশ এরা নিজেদের এবং নিজেদের মিত্রদের প্রতিরক্ষার জন্য খরচ করছে কিন্তু এরপরও তাদের নিউওয়ার্ক, ম্যানচেস্টার এবং প্যারিস সেই আগুনের শিখা ও তাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা যেই আগুন এরা আমাদের ঘরে লাগিয়েছিল।
কাজেই এটা ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা, যা দেখে অ্যামেরিকানরা ভয়ে স্তম্ভিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে গেছে, এদের কাছে আজ এমন কোন কার্ড নেই যা তারা ব্যবহার করেনি, একজন আহাম্মক ব্যক্তির প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়া এই মানসিক অবস্থার সত্যিকার চিত্র ফুটিয়ে তোলে। কোথায় সেই আমেরিকা যার প্রেসিডেন্ট যেখানেই যেত, সৌভাগ্যের আশায় সবাই তার সাথে মিলিত হত আর কোথায় আজকের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যে নিজ স্থান সামলানোর জন্য নিজ মিত্রদের কাছে এক এক পয়সার হিসাবের কথা বলে, জাতীয় বাজেটে কাটতি আর সবার আগে আমেরিকার শ্লোগান দিতে থাকে। কাল আমেরিকার বৈশ্বিক রাজনীতিতে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ সহ্য হচ্ছিলনা আর আজ কুফরি এবং ইসলামের যুদ্ধে এই রাশিয়া থেকে লুকিয়ে এবং প্রকাশ্যে সাহায্য নিয়ে যাচ্ছে।
এসবই এটাই প্রমাণ করে যে আমেরিকা এখন ঐ আমেরিকা নেই, এর পরাজয় সুস্পষ্ট আলহামদুলিল্লাহ। আমেরিকার এই পরাজয় এখন শুধু মুজাহিদদের কথা নয়, বরং আমেরিকা এবং এর মিত্রদের কাছ থেকেই এই পরাজয়ের স্বীকৃতির কথা শুনা যাচ্ছে।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ তো এই অবস্থায় আপনি কি এটা প্রত্যাশা করেন যে, আমেরিকা নিকট ভবিষ্যতে মুসলিম উম্মতের উপর অপরাধ চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত হয়ে যাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ না আমেরিকার নির্যাতনের ফিরিস্তি অনেক লম্বা, এখন যদি সে পিছু হটতে চায় তবুও এর অন্যায় অত্যাচারের পরিণাম এর পিছু নেবে। নিজের ধ্বংস আমেরিকার দৃষ্টিতে আসছে, এজন্য এর বোধশক্তি আরও কমে গেছে, এক আহাম্মক মানুষকে প্রেসিডেন্ট বানানোর পর যেভাবে সে ইয়েমেন, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে জনসাধারণের বসতির উপর বোমাবর্ষণ করেছে, তা এর বোধশক্তির কমতিরই ইংগিত। আর প্রবল সম্ভাবনা আছে যে নিজেদের এরকম বোধশক্তির অভাব থেকে সে এমন পদক্ষেপ নিবে যা থেকে নিকট ভবিষ্যতে একে ভুগতে হবে।
তবে হ্যাঁ, এর আগের এবং এখনকার যুদ্ধের মাঝে পার্থক্য আছে! প্রথমে ইসলামী বিশ্বকে বিজয় করার জন্য আমেরিকা লড়াই করছিল আর এখন সে নিজে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে, নিজেকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করছে; প্রথমে সে নিজের শক্তি এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে সবকিছু করার দাবি করত কিন্তু আজ সে নিজের শক্তির সীমাবদ্ধতা এবং নিজের পরাজয় অনুভব করছে! আল্লাহর কাছে আশা রাখি নিজেকে নিরাপদ ও রক্ষা করার ভাগ্য আমেরিকার হবেনা; মুসলিম উম্মতের কুরবানি এবং জিহাদের আঘাতের নিচে তলিয়ে আমেরিকা ধ্বংস হবে ইনশাআল্লাহ।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আমেরিকার এই পরাজয় এবং আগ্রাসনের প্রচেষ্টা ফলে মুসলিম উম্মতের উপর কি প্রভাব পড়ছে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ বাস্তবতা এই যে আজ মুসলিম উম্মত জিহাদি আন্দোলনের চেহারায় সম্মান, প্রগতি এবং বিজয়ের যে সফরের দিকে পদার্পণ করছে, এটা কোন ছোট খাট ঘটনা নয়, এটা একটা বড় ঘটনা, এটা প্রত্যেক মুসলমানের অনুভব হওয়া জরুরী। দুইটা যুগের একটু তুলনা করে দেখেন, একটা যুগ ছিল যখন শরীয়ত প্রতিষ্ঠার সব আশা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সব দিকে জুলম ও ফাসাদের রাজত্ব ছিল, এই শয়তানদের তর্জন গর্জন চরমে ছিল, পবিত্র ভূমি এবং মুসলমানদের অন্যান্য অধিকৃত ভূমির স্বাধীনতার জন্য এমন কোন বড় শক্তি উম্মতের জন্য ছিলনা, বৈশ্বিক জালেম শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি উম্মতকে গ্রাস করে ফেলছিল; যেখানে চোখ যায় সেখানেই দেখা যাচ্ছিল পশ্চিমাদের আশীর্বাদপুষ্ট, পালিত শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের রক্ষক এবং গোলাম বাহিনী; মুসলমানদের দ্বীন এবং দুনিয়াকে এই জালেমদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কোন শক্তি ছিলনা। তাই একটা যুগ ছিল যা ছিল হতাশার যুগ, অবনতির যুগ, পতনের যুগ। আর এখন আজকের এই যুগ যাতে উম্মত পুরো সম্মানের সাথে উম্মত হিসেবে শত্রুর মোকাবেলা করছে, দৃঢ়তা দেখাচ্ছে এবং শত্রুরাও নিজের বানানো ময়দানে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই বরং এমন যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়ানো যার কারণে দুনিয়ার এই গোলামদেরও জান চলে যাচ্ছে! সেই ময়দান যা থেকে বাঁচার জন্য বৈশ্বিক কুফর কত কিছু ব্যয় করছে, মুসলিম উম্মতের মাঝে কি রকম ব্যক্তিত্ব, চিন্তা এবং আন্দোলন এরা সামনে নিয়ে আসল যাতে মুসলমান কিতালের ময়দানে নামার আগে থেমে যায়; কিন্তু এইসব ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক প্রচেষ্টা সব মেহনত ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। আজ এসব কিছুর পরও উম্মত জিহাদের ময়দানে দাঁড়িয়ে আছে। এসব জালেমদের বিরুদ্ধে এই ময়দানে আর কে মোকাবেলা করছে? সেই সামরিক বাহিনী তো নেই যে বেতন, প্লট এবং উন্নতিকে নিজের জীবনের লক্ষ্য মনে করে, ওরা সবাই তো আজ এই জালেমদের গোলাম হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এদের মোকাবেলায় ঐসব বীরেরা দাঁড়িয়ে আছে যারা উম্মতকে লুট করছেনা বরং উম্মতের কল্যাণের আশায় নিজের সবকিছু এই উম্মতের জন্য ব্যয় করে যাচ্ছে … আলহামদুলিল্লাহ শরীয়ত প্রতিষ্ঠায়, স্বাধীনতা এবং সম্মান এবং ইসলামের উদয়ের স্বপ্ন আজ শুধু স্বপ্ন নয়, বরং আলহামদুলিল্লাহ বৈশ্বিক জিহাদি আন্দোলনের চেহারায় এসব স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ আপনার দৃষ্টিতে বৈশ্বিক কুফরের মোকাবেলায় মুসলিম উম্মতের এই সফলতার কারণ কি?
উস্তাদ উসামা মাহমুদঃ আল্লাহর উপর ভরসা এবং শরীয়ত বহির্ভূত সমস্ত পথ ও পন্থা ছেড়ে আল্লাহর কিতাবের দেওয়া শরীয়ত সম্মত পন্থা গ্রহণ করা এই সফলতার প্রথম কারণ। আজ অধিকার আদায়ের জন্য যে “আইনি” এবং “গণতান্ত্রিক” পন্থার কথা বলা হয়, এগুলো সব কুফরের কুৎসিত, শয়তানী পন্থা। এগুলোর মাধ্যমে আগেও কখনও মুসলমানরা তাদের ইসলামী অধিকার পায়নি, আর না ভবিষ্যতেও তারা অধিকার আদায় করতে পারবে। দ্বীনি জামা’আতের যেসব ভাইয়েরা যখন এবং যেখানে এসব পন্থা অবলম্বন করেছে, তারা সবাই পথ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছে। যখন আমরা এই কথা বলি তখন আল্লাহর শপথ এদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা এবং কল্যাণকামিতার উপর ভিত্তি করেই এরকম কথা বলি। আমাদের আফসোস যে এই জামা’আতগুলো এসব পন্থা অবলম্বন করে নিজেরাও দ্বীন থেকে দূর হয়ে গেছে। আজ অবস্থা এমন যে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য সত্যিকার প্রচেষ্টা তো বহু দূরের কথা, শুধু শরীয়ত প্রতিষ্ঠার দাবি করার জায়গাও গণতন্ত্র এদের দেয়নি। অর্থাৎ অতীতে যেখানে প্রথমে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার নামে দেশজুড়ে আন্দোলন চালানো যেত এবং অন্যায় অশ্লীলতাকে বন্ধ করার জন্য গণবিক্ষোভ ও প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেওয়া যেত, আজ এসবের জায়গায় গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মানবাধিকার অথবা নামসর্বস্ব রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় স্বার্থের মত অস্পষ্ট এবং বাতিল পরিভাষার হৈচৈ তো অবশ্যই করা যাচ্ছে, কিন্তু জাহিলিয়াতের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রতিরোধের যে প্রয়োজনীয়তা তার জন্য কোন সাথী আপনি পাবেননা। বাস্তবতা এটাই যে, আমর বিল মারুফ (সৎ কাজের আদেশ) এবং নাহিয়ানিল মুনকার (অসৎ কাজের নিষেধ) এবং আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার মত ফরযগুলো এই পন্থার মূলনীতি অনুযায়ী বাতিল হিসেবে গণ্য হয়। তাহলে এই পথ ও পন্থার মাধ্যমে কোন কল্যাণ আসবে? রাশিয়ার পরাজয়, ইসলামী ইমারতের প্রতিষ্ঠা এবং এর বরকতময় কাফেলার ধারাবাহিকতা এবং বিজয়; একইভাবে দুনিয়ার অন্যান্য জায়গায় জিহাদি আন্দোলন ছড়িয়ে যাওয়া এবং এর সফলতা, শরীয়ত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন – এসব সফলতার প্রথম কারণ এসব শরীয়ত বহির্ভূত পথ ছেড়ে নবুয়্যতী মানহায, শরীয়ত সম্মত পন্থা, দাওয়াত ও জিহাদের মানহাযকে দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরা প্রমাণিত হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ, ইসলামী বিশ্বকে দখল করে রাখা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গোলামী থেকে জিহাদি আন্দোলনকে স্বাধীন করা। এসব বাহিনী তো বৈশ্বিক কুফরি শক্তির দাস এবং শরীয়তের সবচেয়ে বড় শত্রু, এদের জীবন মরণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুনিয়াবি স্বার্থের কারণে হয়ে থাকে, এজন্য এদের নিয়ন্ত্রণ থেকে জিহাদি আন্দোলনকে মুক্ত করা অত্যন্ত জরুরী ছিল। অতীত অভিজ্ঞতা এই বাস্তবতাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল যে, এসব বাহিনীর হাতে নিজের লাগাম ছেড়ে দেওয়া জিহাদি আন্দোলনের ব্যর্থতারই সমার্থবোধক; উপমহাদেশ থেকে আরব বিশ্ব পর্যন্ত ইতিহাস এই শিক্ষাই দেয়। এজন্য এখন জিহাদি আন্দোলন এসব বাহিনীকে নিজেদের অবলম্বন বানায়নি এবং নিজেদের লাগাম নিজেদের হাতেই রেখেছে।
তৃতীয় কারণ, বৈশ্বিক কুফরের মাথা আমেরিকার উপর আঘাত করা এবং সবকিছু সহ্য করে এই যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকা প্রমাণিত হয়েছে। আগে সে সুরক্ষিত ছিল, এই পাপাচারী, এই জালেম এবং খেয়ানতকারী দুশমন দূরে বসে নিজেদের এজেন্টদের মাধ্যমে মুসলিম উম্মতের উপর জুলম করত। এর নিজের এসব জুলমের জন্য কোন মূল্যই দিতে হতনা, কিন্তু এখন নিজেকে রক্ষা করার জন্য একে নিজেরই জান ও মাল যুদ্ধের আগুনে ঢালতে হচ্ছে।
এগার সেপ্টেম্বরের বরকতময় হামলা জালেমদের এবং বলপ্রয়োগকারীদের মোকাবেলায় মাজলুমদের যুদ্ধ এক সফল পদ্ধতি এবং এক প্রভাবশালী দাওয়াত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই দাওয়াতের উত্তরে লাব্বায়েক বলে উম্মত দাঁড়িয়ে গেছে, যার ফলে আমেরিকার জন্য নিজেকে সুরক্ষিত খাঁচার মাঝে লুকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ খোদা হওয়ার দাবিদার আমেরিকা আজ খোদার মুজাহিদদের সামনে নিজেকে একেবারে অক্ষম হিসেবে দেখছে। আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা, আল্লাহ চায় তো আমেরিকা আরও কিছুদিন জিহাদের আঘাতের নিচে থাকবে এবং জিহাদের অব্যাহত আঘাতের ফলে আমেরিকার পতন হবে ইনশাআল্লাহ।
একইভাবে এটাও আপনাদের সামনে হওয়া জরুরী যে, আগে আমেরিকা ইসলামী বিশ্বে পিছে বসে নিজের এজেন্টদের মাধ্যমে কাজ করাত … এসব এজেন্টরা ধোঁকার মাধ্যমে নিজের গোলামী এবং নোংরামির উপর পর্দা ঢেলে রাখত … নিজেকে উম্মতের নায়ক হিসেবে দেখাত, কিন্তু আমেরিকার উপর আঘাতের কারণে যখন আমেরিকা খোলাখুলি ভাবে সামনে এসে গেল, তখন এর গোলাম বাহিনী এবং নেকাবধারী শাসকদের ঘোষণা দিয়ে কুফর এবং ইসলামের মাঝে যে কোন একটি তাবুকে নির্বাচন করতে হল, ফলে মুসলমানদের শত্রু ও বন্ধুকে সনাক্ত করা সহজ হয়ে গেল!
চতুর্থ কারণ ছিল, আজকের দিনের জিহাদি আন্দোলন হক্বপন্থী আলেমদের থেকে নির্দেশনা নিচ্ছে এবং সাথে সাথে এটা নিজেকে বিগত ইসলামী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা মনে করে, যার ফলে অভিজ্ঞতা থেকে এই আন্দোলন কার্যক্রম শিখতে পেরেছে এবং শত্রুর চাল এবং ষড়যন্ত্রকেও বুঝতে শিখেছে, আলহামদুলিল্লাহ। এই গুণের কারণে আল্লাহ একে পাকাপোক্ত বানিয়েছেন যাতে উম্মতের ভেতরে এর মূল মজবুত হয়েছে এবং এটা ফিতনারও মোকাবেলা করতে পারছে। আজ “জামাতুত দৌলা” এর ফিতনা আমাদের সামনে, কিভাবে জিহাদি আন্দোলন এই পথভ্রষ্ট চিন্তা এবং ফাসাদের তুফানের মোকাবেলা করেছে এবং জিহাদকে ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে তা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট।
আলহামদুলিল্লাহ, এই চার কারণ ছিল বাহ্যিক, যদিও সবচেয়ে বড় প্রথম এবং আসল কারণ হল আল্লাহর উপর ভরসা, শরীয়তের অনুসরণ, সাহায্যের জন্য শুধু আল্লাহর দিকে তাকানো এবং এরপরে অদৃশ্য থেকে আল্লাহর সাহায্য। আলহামদুলিল্লাহ সফলতা ছিল এবং সফলতার দিকে, শরীয়ত প্রতিষ্ঠার দিকে, স্বাধীনতা, সম্মান এবং উন্নতির দিকে এখন এই সফর ইনশাআল্লাহ জারি আছে! আর এজন্য আমাদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা দরকার, এই রাস্তায় আমাদের পথ দেখানোর জন্য নিজেদের রবের শুকরিয়া আদায় করা দরকার।
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا أَنْ هَدَانَا اللَّهُ
অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদের হেদায়েত দিয়েছেন; আর আল্লাহ আমাদের হেদায়েত না দিলে আমরা হেদায়েত পেতাম না।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে, পুরো উম্মতকে, নিজের সন্তুষ্টির রাস্তার উপর দৃঢ়তা দিন। আমিন।
আস-সাহাব উপমহাদেশঃ দর্শকবৃন্দ, জাযাকুমুল্লাহু খায়রান। আমদের পরবর্তী পর্ব ইনশাআল্লাহ কাশ্মীরের জিহাদ এবং কাশ্মীরের স্বাধীনতার আন্দোলনের উপর হবে। সেই পর্বে ইনশাআল্লাহ জামা’আত আলকায়েদা উপমহাদেশের কাশ্মীরের জিহাদের ব্যাপারে অবস্থান এবং আচরণবিধির উপর আলোচনা হবে, সে পর্যন্ত অনুমতি চাচ্ছি, আল্লাহ আপনাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন। ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।