আন-নাসর মিডিয়াইলম ও আত্মশুদ্ধিউস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহপাকিস্তানবই ও রিসালাহবই ও রিসালাহ [আন নাসর]মিডিয়াহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও || চতুর্থ পর্ব ||     গণতন্ত্রের নর্দমা থেকে উত্তরণের “কাঙ্খিত সহজ কর্মপন্থা…!” -উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ

|| আন-নাসর মিডিয়া পরিবেশিত ||
ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান
তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও
|| চতুর্থ পর্ব ||    
গণতন্ত্রের নর্দমা থেকে উত্তরণের
“কাঙ্খিত সহজ কর্মপন্থা…!”

উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ

ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও || চতুর্থ পর্ব ||     গণতন্ত্রের নর্দমা থেকে উত্তরণের “কাঙ্খিত সহজ কর্মপন্থা…!” -উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ

ডাউনলোড করুন

Pdf
https://banglafiles.net/index.php/s/y8HtQBABAPycBFW
https://www.file-upload.com/m7al121taz63
https://archive.org/download/TomraAllahrSahajjokariHow4/TomraAllahrSahajjokariHow-4.pdf
https://www.mediafire.com/file/5jeqda1alu1su9e/TomraAllahrSahajjokariHow-4.pdf/file

Word
https://banglafiles.net/index.php/s/EfXW6yDY9CktSSM
https://www.file-upload.com/htcjs1jai3pb
https://archive.org/download/TomraAllahrSahajjokariHow4/TomraAllahrSahajjokariHow-4.docx
https://www.mediafire.com/file/l5u3662666rczpw/TomraAllahrSahajjokariHow-4.docx/file

====================================
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]

==============================

بِسْمِ اللّہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
الحمد لله رب العالمين. والصلوة والسلام على رسوله الكريم. أما بعد…
হামদ ও সালাতের পর-
ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সম্পৃক্ত মুহতারাম দ্বীনি ভাই ও বন্ধুগণ!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ.
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-

وَأَنَّ هَٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿الأنعام: ١٥٣﴾
“নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ (অর্থাৎ এটি ইসলাম ও শরীয়তের আলোকে দেখানো সরল-সোজা রাস্তা)। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও।
(সূরা আন‘আম: ১৫৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র হাদীস শরীফে ইরশাদ করেছেন-

}قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا{
“আমি তোমাদেরকে আলোকউজ্জ্বল দিনের মত সুস্পষ্ট পথের উপর রেখে যাচ্ছি, যার রাতগুলো দিনের মতেই আলোকউজ্জ্বল।”
(মুসনাদে আহমাদ)
প্রিয় ভাইয়েরা!
আল্লাহ তা‘আলার দ্বীন ও শরীয়ত এবং এই শরীয়তের চাহিদা ও তাকাযাগুলো সবকিছুই প্রতীয়মান…তা আলোকউজ্জ্বল দিনের মতই প্রকাশমান। এখন কথা হচ্ছে: আল্লাহ তা‘আলার এই দ্বীন ও শরীয়তের মাঝে এই গণতান্ত্রিক রাজনীতির কোন অবকাশ আছে কিনা? তারপর কথা হচ্ছে: এই গণতান্ত্রিক রাজনীতির যে মন্দ পরিণতি; যার শিকার আমাদের দ্বীনদার ভাইয়েরা হয়েছেন এবং পুরো জাতি যার মন্দ পরিণাম ভোগ করছে, এই দ্বীনে কি এগুলো সহ্যক্ষম হতে পারে? এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আপনারা জানেন বিধায় তা আর বলার অবকাশ রাখে না। কিন্তু কথা হলো: এসব কিছু বিদ্যমান থাকার পরেও যে সকল ভাইয়েরা আমাদের সাথে একমত হতে পারছেন না, তাদের খেদমতে আমাদের সবিনয় নিবেদন হলো: এ ব্যাপারে (اسْتَفْتِ قَلْبَكَ ) অর্থাৎ আপনি আপনার অন্তরকে জিজ্ঞাসা করুন, এবং (وَاسْتَفْتِ نَفْسَكَ ) অর্থাৎ আপনি আপনার নিজের কাছেই ফতোয়া তালাশ করুন- আপনার কি নিশ্চিত বিশ্বাস আছে যে, এই ধরনের রাজনীতি ও সংগ্রাম ইসলামে কাম্য? অথবা এই গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে চলার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার দ্বীন বিজয়ী হবে ও দ্বীনের দুশমনরা পরাজিত হবে? অথবা আপনার অন্তর কি এ ব্যাপারে আশ্বস্ত যে, এই পথে চলার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত শরীয়তের উপর আমল হচ্ছে? আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন, কিভাবে কারো অন্তর আশ্বস্ত হতে পারে? আর যদি অন্তর আশ্বস্ত নাই হয়, বরং সংশয়পূর্ণ হয়। তাহলে এমন সংশয়পূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

}وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي صَدْرِك وَإِنْ أَفْتَاكَ عَنْهُ النَّاسُ{
“গোনাহ হলো: যা তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে, যদিওবা মানুষ তা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে ফতোয়া প্রদান করে।”

অন্য হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন-

۔}دَعْ مَا يُرِيبُكَ إِلَى مالا يُرِيبُكَ{
“তুমি সন্দেহ-সংশয়পূর্ণ বিষয় ছেড়ে নিশ্চিত বিষয় গ্রহন কর।”

সুতরাং হে প্রিয় ভাই ও বন্ধুরা!
আপনাদের নিকট আমাদের প্রথম নিবেদন হলো: আপনারা গণতন্ত্রের প্রকৃত বাস্তবতা ও পরিণতি এবং শরীয়তের চাহিদা ও তাকাযাগুলো সামনে রেখে নিজেদের মুহাসাবা (হিসাব গ্রহন) করুন। কারণ, আমরা সকলেই তো সেই মহাদিবসের দিকে যাত্রা করছি, যার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-

يَقُولُ الْإِنسَانُ يَوْمَئِذٍ أَيْنَ الْمَفَرُّ ﴿القيامة: ١٠﴾ كَلَّا لَا وَزَرَ ﴿القيامة: ١١﴾ إِلَىٰ رَبِّكَ يَوْمَئِذٍ الْمُسْتَقَرُّ ﴿القيامة: ١٢﴾ يُنَبَّأُ الْإِنسَانُ يَوْمَئِذٍ بِمَا قَدَّمَ وَأَخَّرَ ﴿القيامة: ١٣﴾ بَلِ الْإِنسَانُ عَلَىٰ نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ ﴿القيامة: ١٤﴾ وَلَوْ أَلْقَىٰ مَعَاذِيرَهُ ﴿القيامة: ١٥﴾
“সে দিন মানুষ বলবেঃ পলায়নের জায়গা কোথায় ? (১০) না কোথাও আশ্রয়স্থল নেই। (১১) আপনার পালনকর্তার কাছেই সেদিন ঠাঁই হবে। (১২) সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে যা সামনে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে ছেড়ে দিয়েছে। (১৩) বরং মানুষ নিজেই তার নিজের সম্পর্কে চক্ষুমান। (১৪) যদিও সে তার অজুহাত পেশ করতে চাইবে (১৫)।”
(সূরা কিয়ামাহ: ১০-১৫)

অতএব, হে প্রিয় ভাইয়েরা!
আসুন, আমরা প্রত্যেকই আমাদের আখেরাতের জীবন নিয়ে চিন্তা-ফিকির করি। কেননা, আমাদের সকলকেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে একাই উপস্থিত হতে হবে। (তারপর নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে।) তাই এখানে সর্বাগ্রে আমাদের নিজেদের মুক্তির ফিকির করতে হবে, তারপর নিজেদের সন্তানাদি, বন্ধু-বান্ধব ও নেতাদের মুক্তির ফিকির করা উচিত।
সুপ্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ,
অতঃপর কথা হচ্ছে: যখন আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে অগ্রাহ্য করি এবং তা পরিত্যাগ করার প্রতি জোরদার আবেদন পেশ করি, তখন সাথে সাথেই আমাদেরকে বলা হয় যে, তা হচ্ছে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা উঠানোর নামান্তর। পাশাপাশি আরো বলা হয় যে, এই মুজাহিদীনরা আমাদেরকে অস্ত্র ধারণ করে নিজেদের মাথা কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে।
মুহতারাম ভাইয়েরা আমার!
এখন প্রশ্ন হলো: এটি কি এক চরম বাস্তবতা নয় যে, শক্তি, জুলুম ও জাহিলিয়্যাতের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার মুকাবিলা কখনো তাদের সামনে নত হওয়ার দ্বারা অর্জিত হয়না? বাতিলদের চিহিৃত পথে/দেখানো পথে সংগ্রাম করার দ্বারা এবং তাদের সংবিধানের অনুগত থাকার দ্বারা কখনো বাতিলদের একচ্ছত্র শাসনব্যবস্থা নিশ্চিহৃ হবে না। জাহিলিয়্যাতের মুকাবিলা, ইসলামের প্রতিরক্ষা ও বিজয় অর্জন করা যদি কখনো জাহিলিয়্যাতের সাথে সমঝোতা করার দ্বারা এবং তার শর্তাবলী মেনে নেওয়ার দ্বারা সম্ভবপর হতো, তাহলে সশস্ত্র জিহাদ কখনো ফরয হতো না। এমনিভাবে وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ (অর্থাৎ আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা/ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়;) এবং كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ (অর্থাৎ তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে,)সহ আরো অসংখ্য জিহাদের আয়াত নাযিল হত না। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত ও তাবলীগ করার সাথে সাথে হিজরত ও জিহাদের পথে বের হতেন না।
সুতরাং প্রিয় ভাইয়েরা আমার!
আল্লাহ তা‘আলার নামে কসম করে বলছি; ঐ সমস্ত লোকেরা সৌভাগ্যবান, যারা বর্তমান যামানার ত্বাগুতদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলার আহবান- انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا (অর্থাৎ তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে…)এর উপর সাড়া দিয়ে ‘লাব্বাইক’ বলে জিহাদের ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে গেছেন। কিন্তু এমতাবস্থায় এখানে কেউ এই কথা বলতে পারেন যে, আমাদের সাধ্য নেই, আর সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা কি কেউ কারো ‍উপর কখনো চাপিয়ে দিতে পারে? তাহলে এখানে আমার প্রিয় ভাইদের কাছে একটি প্রশ্ন রাখছি…যদি ধরে নেয়া হয় যে, বাতিলদের বিরুদ্ধে লড়াই করার মত শক্তি আমাদের নেই, তথাপি কি এখানে বাতিলদের সৈনিক হওয়ার এবং তাদের রঙে রঙিন হওয়ার কোন সুযোগ আছে?! বর্তমানে দুর্বলতা ও অক্ষমতার দরুন কি বাতিল শাসনব্যবস্থার অনুগত হওয়ার ও জাহিলিয়্যাতের ঝান্ডাবাহী হওয়ার কোন অনুমতি এই দ্বীন প্রদান করে? এখানে কি এই দু’টি উপায়ই আছে; হয়তো এই বাতিল শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা, আর যদি এটির সক্ষমতা না থাকে, তাহলে নিজেরাই বাতিল শাসনব্যবস্থার হাতিয়ার হয়ে যাওয়া; তার থেকে ভরপুর ফায়েদা (সুবিধা) নেওয়া, গুণগান গাওয়া, তার অনুসরণে গোমরাহীর পথে চলা, তার প্রতিরক্ষা, শক্তি যোগানো ও উন্নতি করা এবং নিজেদের সুবিধা আচ্ছামত ভোগ করা?!
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ!
না, বিষয়টি কখনো এমন হতে পারে না। এটা আল্লাহর দ্বীন হতে পারে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলার দ্বীন ত্বাগুতদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ও বাতিলদের সাথে শত্রুতা পোষণ করার শিক্ষা দেয়। তাছাড়া এই দ্বীন যার যতটুকু সাধ্য-সক্ষমতা আছে, ততটুকু দ্বারাই জুলুম ও কুফরের বিরোধিতা করাকে ফরয আখ্যায়িত করেছে। আর এই দ্বীন তো ভালো কাজের দিকে আহবান করার এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার শিক্ষা প্রদান করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে ইরশাদ করেছেন:
سَيَكُونُ أُمَرَاءُ بَعْدِي يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لَا يُؤْمَرُونَ.
“আমার পরে কতিপয় শাসক এমন আসবে; তারা মুখে যা বলে নিজেরা তা করে না। আর যা করে করে তার জন্য তাদেকে আদেশ করা হয়নি।”

যেন তারা মদীনার শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার সুর বাজায়, এবং إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (অর্থাৎ আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।) মুখে বলে বলে সাধারণ জনগণের চোখে ধুলো নিক্ষেপ করে, অথচ প্রকৃত বাস্তবতা হলো: তারা ইসলামের শিকড় গোড়া থেকে কেটে ফেলছে। অন্যদিকে ইসলামের স্থলে উদারতন্ত্রবাদ ও নাস্তিক্যবাদ স্থাপন করা তাদের অন্যতম টার্গেট। পাকিস্তানের এই একচেটিয়া অ-রাজা জেনারেলরা (সেনাবাহিনী) এবং তাদের ইশারায় চলা পুতুল শাসকরা আপনাদের সামনে রয়েছে! তারা কি এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হবে না?
উল্লেখিত হাদীসের পরের অংশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন-
فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ لا إِيمَانَ بَعْدَهُ .
“অতএব যে ব্যক্তি হাত (শক্তি) দ্বারা তাদের মুকাবিলা করবে (অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের ময়দানে অবতীর্ণ হবে,) সে মু’মিন। যে ব্যক্তি মুখ দ্বারা তাদের ‍মুকাবিলা করবে (অর্থাৎ যারা কলম ও বয়ানের মাধ্যমে তাদের চেহারার মুখোশ উন্মোচন করবে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের ফরয দায়িত্ব পালন করবে, তাদের ভ্রান্ত পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান করবে,) সেও মু’মিন। আর যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা তাদের মুকাবিলা করবে, সেও মু’মিন। এরপর আর ঈমানের কোন স্থর নেই।”
অন্তর দ্বারা জিহাদ করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: অন্তরে সেই পরিমাণ ঘৃণা বিদ্যমান থাকা, যা দ্বীন থেকে সম্পর্কহীনতার প্রতি, আল্লাহ তা‘আলার এই সকল শক্রদের থেকে কোন প্রকারের সাহায্য-সহযোগিতা ও ফায়েদা (সুবিধা) নেওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে না। বরং তা তাদের সাথে অন্তরঙ্গতা পরিত্যাগ করার এবং সাহায্য-সহযোগিতা বন্ধ করার জন্য তাদেরকে প্রস্তুত করে তুলবে। এই ধরনের ঘৃণাই অন্তর দ্বারা জিহাদ করার নামান্তর, যা অবশেষে এক মহা বিপ্লব ও জিহাদী আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করবে এবং সাথে সাথে জুলম ও ফ্যাসাদের সকল প্রতিবন্ধকতাকে নিজের সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
অতএব প্রিয় ভাইয়েরা আমার!
এই দ্বীন খুবই সহজ-সরল, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন। রহমতে ভরপুর এই দ্বীন কখনো আমাদের উপর এমন কোন বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে না, যা বহন করার সাধ্য/সক্ষমতা আমাদের নেই। মহান আল্লাহ তা‘আলার দরবারে শুধু ঐ সমস্ত বিষয়ের ব্যাপারেই আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, যা আমাদের সাধ্যের ভিতরে ছিল। এই কারণেই আল্লাহ তা‘আলার এই দ্বীন ‘দাওয়াত ও জিহাদ’কে ইসলাম হেফাযত করা ও তাকে বিজয়ী করার পন্থা বলে আখ্যায়িত করেছে। দাওয়াত ও জিহাদের এই রাস্তা একটি সম্পূর্ণ প্যাকেজ ও একটি সম্পূর্ণ মানহাযের নাম। এমনিভাবে জুলুম-ফ্যাসাদ দূর করা এবং আল্লাহ তা‘আলার হাকিমিয়্যাত তথা আইনের ক্ষেত্রে আল্লাহর একচ্ছত্র কর্তৃক প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের সম্মান-সুখ্যাতি লাভ করাই এই দ্বীনের উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দাওয়াত, ই‘দাদ তথা প্রস্তুতি গ্রহন করা, হিজরত ও কিতাল করার নির্দেশ দিয়েছে। দ্বীন বিজয়ের সফরে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চলার পূর্ণাঙ্গ নকশা হলো উল্লিখিত বিষয়গুলো। আর এটি পুরোপুরিভাবে শরীয়তের আলোকে প্রণিত নকশা।

এমনিভাবে এই দাওয়াত ও জিহাদ হলো: আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সকল কিছু থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করে শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার দিকে মনোনিবেশ করার এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার দিকে আহবান করার পথ। পাশাপাশি তা সকল ত্বাগুতদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ইয়াকীন-বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল স্থাপন করার এবং শরীয়তের আনুগত্য করার পথ। তদ্রুপ দাওয়াত ও জিহাদ হলো: সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করার পথ, আল্লাহ তা‘আলার দ্বীন এবং আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদের মাঝে যালিমরা যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে ও যে সমস্ত আবরণ তৈরী করেছে, তরবারীর শক্তি দ্বারা সেই সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে সরানো ও সে সমস্ত আবরণকে ছিন্ন করার পথ… পাশাপাশি তা হচ্ছে ঐ পথ; যে পথ থেকে মুসলিম উম্মাহ যখনই সরে গেছে, তখনই তাদের ঐক্যের মাঝে ফাটল ধরেছে, নিরাপত্তা ও স্বকীয়তা হারিয়ে গেছে এবং মান-সম্মান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তদুপরি এটাই হচ্ছে সেই পথ: মুসলিম উম্মাহ যখনই এই পথে ফিরে আসবে, তখনই আল্লাহ তা‘আলার দ্বীন বিজয়ী হবে, উম্মাহর অসম্মান-অপদস্থতা দূর হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় সেই সময় আবার নবুওয়্যাতের আদলে খেলাফতব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে; যার সুসংবাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছেন।

দাওয়াত ও জিহাদের এই মানহায একটি পূর্ণাঙ্গ মানহায। তাতে প্রত্যেক দুর্বল ও সবলের জন্য কাজ করার সমান সুযোগ ও ময়দান বিদ্যমান রয়েছে। আর এসব কিছু ঈমানদারদেরকে একই বিন্যাস ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে অভিন্ন এক মানযিলের-/গন্তব্যের দিকে যাত্রার পথে সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ করে তোলে। এই দাওয়াত ও সশস্ত্র জিহাদ একটি অপরটির বিরোধী নয়। তা‘লীম ও তাআ‘ল্লুম তথা জ্ঞান বিতরন ও জ্ঞানার্জন বা তাযকিয়ায়ে নফস তথা আত্মশুদ্ধি অর্জন করা সশস্ত্র জিহাদের পথে কখনো বাঁধা নয়, বরং একটি অপরটির মুখাপেক্ষী, এমনিভাবে একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে।

তবে হ্যাঁ, যদি কারো সশস্ত্র জিহাদ করার সামর্থ্য না থাকে অথবা সশস্ত্র জিহাদের ময়দানে যাওয়ার সুযোগ ও প্রেক্ষাপট তৈরী না থাকে, তাহলে সে দাওয়াতের সাথে সাথে সশস্ত্র জিহাদের প্রস্তুতি (ই‘দাদ) নেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করবে…কেননা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার এই দ্বীন উপস্থিত/বিদ্যমান শক্তিকে কাজে লাগানো ও অতিরিক্ত শক্তি অর্জনের রাস্তা দেখায়, কিন্তু দুর্বল মানুষকে বাতিলের বড়ত্ব মেনে নেওয়ার ও তার গুণগান গাওয়ার এবং তার থেকে সব ধরনের ফায়েদা (সুবিধা) ভোগ করার অনুমতি কখনোই প্রদান করে না। এখানেও সে জিহাদের ইচ্ছা পোষণ করবে। আর যদি জিহাদ করার মত সক্ষমতা না থাকে, তাহলেও হাতের উপর হাত রেখে বসে থাকবে না, বরং জিহাদের প্রস্তুতি নিতে থাকবে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-
} وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً{
“আর যদি তারা (জিহাদে) বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো।”
(সূরা আত-তাওবা: ৪৬)
ফুকাহায়ে কেরাম (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেছেন: যদি জিহাদ ফরযে আইন হয় এবং তার সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তার জিম্মায় জিহাদের প্রস্তুতি নেওয়া ফরয, যাতে করে সে কাংখিত শক্তি-সামর্থ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। বিষয়টি যেন এমন যে, যদি যালিমকে প্রতিহত করার শক্তি-সামর্থ না থাকে, তথাপি সেই যালিমের সমর্থক ও সহযোগী হওয়া এই দ্বীন সমর্থন করে না। এমনিভাবে এই দ্বীন বর্তমান যামানার আবু জাহেলের সাথে তার দারুন নাদওয়ায় (পার্লামেন্টে) অংশগ্রহন করা, তার আইনি শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেওয়া এবং তার থেকে ফায়েদা (সুবিধা) গ্রহন করার অনুমতি কখনো প্রদান করে না। বরং এই দ্বীন তার সঙ্গ পরিত্যাগ করে তার বিরুদ্ধে মুকাবিলা করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করার পথ দেখায়। তদুপরি এই দ্বীন, যারা হেদায়েত থেকে বঞ্চিত; তাদেরকে অত্যন্ত আন্তরিকতা, সহানুভূতি ও প্রজ্ঞার সাথে দাওয়াত দেওয়ার পথ দেখায়। কিন্তু যে দুর্ভাগা দ্বীনের দুশমনি করার ক্ষেত্রে অনঢ়, আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার এবং আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদেরকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এই জাতীয় লোকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে শক্রতা পোষণ করার শিক্ষা দেয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সীরাতকে আমাদের আমলের জন্য একটি মডেল/নমুনা হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-

}قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ{

“তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের (আল্লাহদ্রোহী) সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।” (সূরা মুমতাহিনা: ৪)

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ!
এই কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর জন্যই ভালবাসা ও আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করা, এই দ্বীনের খাতিরেই কারো সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা এবং এই দ্বীনের কারণেই কারো সঙ্গ পরিত্যাগ করাকে ঈমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মজবুত কড়া বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রকাশ থাকে যে, যদি এই কড়া দুর্বল হয়ে যায় অথবা ভেঙ্গে যায়, তাহলে পুরো দ্বীনই শংকার/আশংকার মধ্যে পড়ে যায়।
মুহতারাম ভাইয়েরা!
বর্তমানে জিহাদ ফরযে আইন। এখানে আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদেরকে অপর বান্দার ইবাদত-উপাসনা করা থেকে বের করার জন্য এবং আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত শরীয়ত ও ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বর্তমানে জিহাদ নিঃসন্দেহে একটি শরয়ী ফরয দায়িত্ব। কিন্তু প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা আমার! আপনারা যদি বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে অস্ত্র ধারণ করা উপযুক্ত নয় বলে মনে করেন অথবা এখানে জিহাদ করার মত আপনাদের সক্ষমতা নেই বলে মনে করেন, তাহলে আমরাও আপনাদের উপর সেই বোঝা চাপিয়ে দিতে রাজী নই, যা আপনারা উঠাতে চাচ্ছেন না। আর তাই আপনাদের যদি সশস্ত্র জিহাদ করার শক্তি-সামর্থ না থাকে, তাহলে আপনারা করবেন না। কিন্তু এই সশস্ত্র জিহাদের প্রস্তুতি নেওয়াও ফরয। সুতরাং এই ফরয তো আদায় করা চাই। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার দিকে আহবান করার দাওয়াত, এই বাতিল শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে মনের ভিতরে ঘৃণা সৃষ্টি করার দাওয়াত, আল্লাহ তা‘আলার জন্য ভালবাসা এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য শক্রতার দাওয়াত, প্রত্যেক মু‘আমালাতের/মোকদ্দমার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার হাকিমিয়্যাত তথা আইনের ক্ষেত্রে আল্লাহর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাওয়াত ও একমাত্র শরীয়ত অনুসরণ করার দাওয়াত, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের ‍উপর অটল-অবিচল থাকার দাওয়াত এবং পূর্ণাঙ্গ শরয়ী ইসলামী ইমারাত প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার দাওয়াত; এই সবকিছুর দাওয়াত দেওয়াও ফরয। তাই এই দাওয়াতের হকও তো আদায় করা চাই।

এই সকল দাওয়াত ও প্রস্তুতির মধ্য থেকে কোন ফরযটি আদায় করার সক্ষমতা আপনাদের নেই! অথবা এই আমলগুলোর মাঝে কোন আমলটি আপনাদের নিকট শরীয়তের খেলাফ/বিপরীত মনে হয়? আসলে এসবগুলোই শরয়ী আমল। এগুলোর আদেশ আপনারা কুরআন ও সুন্নাহর মাঝে পড়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাতের প্রত্যেকটি অধ্যায় এই আমলগুলোর গুরুত্ব ও ফরয হওয়ার উপর সাক্ষ্য প্রদান করে থাকে। সুতরাং এগুলোর মাঝে কোন আমলটি এমন আছে যেটা পালন করা আপনাদের জন্য কষ্টকর? এই বাতিল শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে অন্তরে ঘৃণা পোষণ করা কি কঠিন কাজ? অথবা তার ‍বিরুদ্ধে কলম ও বক্তৃতার মাধ্যমে কথা বলা কি আপনাদের জন্য কঠিন কাজ? অসৎ কাজকে অসৎ বলা, তাকে ঘৃণা করা এবং তার পথ রোধ করা কি বর্তমানে অসম্ভব?!
আল্লাহর কসম করে বলছি- এ জাতীয় ফরযগুলো আদায় করা সম্ভব এবং তা করা একেবারেই কঠিন কোন বিষয় না। তবে হ্যাঁ, কঠিন যদি কিছু থাকে, তাহলে তা হলো: গণতান্ত্রিক রাজনীতির আবর্জনা থেকে নিজেদের আঁচলকে বাঁচানো। আরো কঠিন কোন বিষয় যদি থাকে…তা হলো: বাতিলদের পক্ষপাতিত্ব ও ফায়দা (সুবিধা) নেয়া থেকে আপনারা নিজেদেরকে দূরে রাখা। বর্তমানে বাতিলরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে, আপনাদেরকে গাইরুল্লাহর সামনে মাথা নত করার এবং ধর্মহীনতার পথে ঠেলে দেওয়ার নিমিত্তে বিশেষাধিকার দরজা ও ধনভান্ডার উন্মুক্ত করে রেখেছে। এই বিশেষাধিকার দরজা ও ফায়দা (সুবিধা) গ্রহন করাকে জুতার এক প্রান্তে রেখে এবং শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার উপর তাওয়াক্কুল করে ইসলাম বিজয়ের আন্দোলন গড়ে তোলা কিছুটা কঠিন ও জটিল কাজ বটে। কিন্তু এই কঠিন কাজটিও সহজ, কোন জটিল বিষয় না। তবে তা ঐ ব্যক্তির জন্য সহজ; যে দুনিয়ার জীবনের উপর আখেরাতের জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছে এবং দুনিয়ার জীবনের এই কয়েক দিনের মেলবন্ধনকে ক্ষণস্থায়ী মনে করে।
অতঃপর প্রিয় ভাইয়েরা!
আমাদের এটাও মনে রাখা উচিত যে, মহান আল্লাহ তা‘আলার এক অমোঘ নীতি হলো পরিবর্তনের/প্রতিস্থাপনের নীতি। এজন্যই যদি কোন ব্যক্তি দ্বীনকে সাহায্য-সহযোগিতা করার দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও দ্বীনের চাহিদা অনুযায়ী কাজ না করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার কাছ থেকে দ্বীনের খেদমত করার তাওফিক ছিনিয়ে নেন। তখন সে আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে জীবন যাপন করার নিয়তি বরণ করে নিতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে আল্লাহ তা‘আলা তার স্থলে অন্য সম্প্রদায়ের মাঝ থেকে এমন কাউকে নির্বাচন করে নেন, যাকে তিনি ভালবাসেন এবং সেও তাঁকে ভালবাসে। আর সে ব্যক্তিই হয় আল্লাহভীরুদের সৌভাগ্যবান ইমাম ও মহান নেতা। এমনিভাবে সে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও রহমতের হকদার বলে বিবেচিত হয়। এখন কথা হলো সেই সম্প্রদায়ের গুণাবলী কী? আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত নিজেই তা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ﴿المائدة: ٥٤﴾
“হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।
(সূরা মায়েদা: ৫৪)

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে এই সমস্ত গুণে গুণান্বিত হওয়ার এবং দ্বীনের সাহায্য-সহযোগিতা করার তাওফিক দান করুন। পাশাপাশি আমাদেরকে সেই সকল কাজসমূহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন, যার দরুন আল্লাহ তা‘আলার তাওফিক ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ!
আপনারা দাওয়াত ও জিহাদের পথ অবলম্বন করুন এবং বর্তমানে পাকিস্তানে দাওয়াত, ই‘দাদ তথা প্রস্তুতি, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের পথ চয়ন করে নিন। আল্লাহ তা‘আলা আপনাদেরকে এই বরকতময় পথ অবলম্বন করার ও তার যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন।(আমীন)।
সুপ্রিয় ভাইয়েরা!
আপনাদের সমীপে আরো একটি অনুরোধ হলো: হক ‍ও বাতিলের দ্বন্দ্ব বিশ্বব্যাপী চলছে। তাছাড়া বর্তমানে কুফরী বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমগ্র দুনিয়াতে ইসলামের বিরুদ্ধে সারিবদ্ধ হয়েছে। সুতরাং কোথাও যদি অস্ত্র ধারণ করার মত পরিস্থিতি না থাকে, তাহলে অন্য কোথাও জিহাদে অংশগ্রহন করা যেতে পারে। অন্য স্থানে এই ফরয আদায় করা যায়। বর্তমানে আপনাদের পার্শ্ববর্তী দেশ আফগানিস্তান; ইসলাম ও কুফরের মাঝে চলমান এক বিশাল সশস্ত্র জিহাদের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে। সেই জিহাদকে সাহায্য-সহযোগিতা করাও তো ফরয। সুতরাং জান, মাল, লিখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে সেই জিহাদের সাহায্য-সহযোগিতা এবং সমর্থন করুন। বর্তমানে এই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তো আপনাদের থেকে এই অধিকারটুকুও ছিনিয়ে নিয়েছে। আর এই ফরয আদায়ের পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দাঁড় করিয়ে রেখেছে এবং ফরযে আইন জিহাদ পালনও শরীয়ত বিদ্রোহী জেনারেল ও স্থানীয় পুতুল শাসকদের অধীনে করতে বাধ্য করছে।
ভাইয়েরা আমার!
আপনারা নিশ্চিত বিশ্বাস করুন যে, গণতান্ত্রিক রাজনীতির ব্যর্থতা, অসারতা এবং দ্বীনি ভাইদের জন্য তা ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হওয়া যেমনিভাবে একটি প্রকাশ্য বাস্তবতা, ঠিক এমনিভাবে দাওয়াত ও জিহাদের এই শরীয়তসম্মত পন্থায় পথ চলার সফলতা ও কামিয়াবিও আজ একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা। যখনই দ্বীনদার ভাইয়েরা এই পথ অবলম্বন করবেন, তখনই তাদের নিজেদের দ্বীন নিরাপদ হবে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কুফরের মুকাবিলায় বিজয় দান করবেন। আফগানিস্তানের এই মুজাহিদগণ ও তার মহান জাতি এর অতি উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত। এখানে যদি রাশিয়ানরা পরাজিত হয়ে থাকে বা কয়েক শতাব্দি পরে আল্লাহর ওলী, ঈমানী আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন এবং ধার্মিকতা ও সরলতার প্রতিচ্ছবি আমীরুল মু’মিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ ওমর রাহিমাহুল্লাহর নেতৃত্বে ইসলামী ইমারাহ কায়েম/প্রতিষ্ঠা হয়ে থাকে অথবা আল্লাহ তা‘আলার আসমানী শরীয়তের আইন-কানুন চালু হয়ে থাকে, তবে এ জাতীয় বড় বড় ঘটনাবলী শুধুমাত্র এই দাওয়াত ও জিহাদের বদৌলতে সম্ভবপর হয়েছে। বর্তমানেও এখানে এই দাওয়াত ও জিহাদের বরকতেই পুনরায় ইসলাম বিজয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। যা কোন গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কল্পনাও করা যায় না। বর্তমান যামানার ফেরআউনতুল্য আমেরিকার নেতৃত্বে পুরো কুফরী বিশ্বের পরাজয় প্রতীয়মান হচ্ছে এবং বর্তমানে এখানে ইমারাতে ইসলামীর বরকতময় পতাকা; উম্মাতে মুসলিমাহকে ব্যাপকভাবে ও পাকিস্তানের মুসলমানদেরকে বিশেষভাবে যেন এই বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও দ্বীনকে বিজয়ী করার পথ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম নয়, বরং তার একমাত্র পথ হলো এই দাওয়াত ও জিহাদের পথ।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ!
আমি আমার বক্তব্যকে সর্বশেষ এই একটি কথার উপর-ই সমাপ্ত করার ইচ্ছা করছি, সেটি হলো: অন্ধকারের নিজস্ব কোন অস্তিত্ব নেই, নেই নিজস্ব কোন বাস্তবতা, বরং আলোহীনতাকেই অন্ধকার বলা হয়। তাই যখন আলোকরশ্মি জ্বলে উঠে, তখন অন্ধকার পলায়ন করে এবং তা নিঃশেষ হয়ে যায়। এই মর্মেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-

وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا ﴿الإسراء: ٨١﴾
“বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।”
(সূরা ইসরা বা বনী ইসরাইল: ৮১)

তাফসীরে সা‘দীতে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে: “বাতিলদের কাছে বাহ্যিকভাবে সাময়িক ক্ষমতার দাপট ও বিজয় থাকতে পারে, কিন্তু তার স্থায়িত্ব সেই সময় পর্যন্তই যতক্ষণ না সে হকের/সত্যের মুখোমুখী হয়। আর যখনই বাতিল হকের/সত্যের মুখোমুখী হবে, তখনই সে দুর্বল হয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে।”
সুতরাং পাকিস্তানে যদি বাতিলদের ক্ষমতার দাপট ও বিজয় থাকে এবং দিনদিন তা বাড়তে থাকে, তাহলে তার কারণ এছাড়া আর কিছু নয় যে, আমরা সমষ্টিগতভাবে হকের/সত্যের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও হকের/সত্যের হক তথা যথাযথ প্রাপ্ত আদায় করেনি এবং দাওয়াত ও বড় ধরণের ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে আমরা আল্লাহ তা‘আলার পছন্দনীয়, কাংখিত পথ অবলম্বন করেনি। অথচ পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার ওয়াদা রয়েছে। তিনি ইরশাদ করেছেন-

وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿آل‌عمران: ١٣٩﴾
“আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।
(সূরা আলে ইমরান: ১৩৯)
(‘তোমরাই জয়ী হবে’ আল্লাহ তা‘আলা এই ওয়াদার সাথে একটি শর্তও জুড়ে দিয়েছেন, এই পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য একটি মূল্যও নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা হলো যদি তোমরা সত্যিকারের মু’মিন হও।’)
অতএব, আমাদের দ্বীনি ভাইয়েরা যদি সত্যিকার অর্থে ঈমানদার হয়ে যান, আর আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরতে পারি এবং আমরা নিজেদেরকে জাতির জন্য আলোর মিনাররূপে ‍উপস্থাপন করতে পারি, তাহলে আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলতে পারি- এই অন্ধকারচ্ছন্নতা নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং এখানে আল্লাহ তা‘লাআর দ্বীন বিজয়ীরূপে আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হবে। তখন এই জাতির উপর আল্লাহ তা‘আলার রহমত ও বরকতের বারিধারা বর্ষণ শুরু হবে এবং এই নির্যাতিত, নিপীড়িত জাতির জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, সুখ-সাচ্ছন্দে ভরপুর সুখময় নির্মল জীবন লাভ করার সুযোগ পাবে, ইনশা আল্লাহ। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে শরীয়তের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন, সব ধরনের স্বজনপ্রীতি থেকে আমাদের বক্ষগুলোকে পূত-পবিত্র রাখুন এবং দ্বীনকে সাহায্য-সহযোগিতা করার কাংখিত পথ ‘দাওয়াত ও জিহাদ’-এর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
اللّٰھم أرنا الحقَّ حقاً وارزقنا اتِّباعہ و أرنا الباطل باطلا وارزقنا اجتنابہ
(হে আল্লাহ! আমাদের দৃষ্টিতে হককে হক হিসাবে দেখিয়ে দিন, হককে আমাদের জন্য সুষ্পষ্ট করে দিন এবং তার সাহায্য-সহযোগিতা করার তাওফিক দিন। আপনি আমাদের দৃষ্টিতে বাতিলকে বাতিল হিসাবে দেখিয়ে দিন, বাতিলকে আমাদের জন্য সুষ্পষ্ট করে দিন এবং তা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দিন। আমীন)
وآخر دعوانا أنِ الحمدُ للهِ ربِ العالمين .والسلامُ عليكم ورحمةُ اللهِ وبركاتُه.

.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × three =

Back to top button