অডিও ও ভিডিওঅডিও ও ভিডিও [আন নাসর]আকিদা-মানহাজআন-নাসর মিডিয়াবই ও রিসালাহবাংলা প্রকাশনামিডিয়াশাইখ খালেদ বিন উমর বাতারফি হাফিযাহুল্লাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

আইএস ও আল-কায়েদার মৌলিক পার্থক্য – শায়খ আবু মিকদাদ খালিদ আল বাতরাফি (হাফিজাহুল্লাহ)

আল-কায়েদা ও আইএসের সম্পর্কহীনতা ও মৌলিক পার্থক্য

শায়খ খালিদ বাতরাফি হাফিজাহুল্লাহ

আইএস ও আল-কায়েদার মৌলিক পার্থক্য – শায়খ আবু মিকদাদ খালিদ আল বাতরাফি (হাফিজাহুল্লাহ)

ডাউনলোড করুন

ভিডিও ডাউনলোড: (৩০৬ মেগাবাইট)
https://banglafiles.net/index.php/s/em2zdXLySBL6H8Z
https://www.file-upload.com/3p1sq8g5w7bl
https://archive.org/details/NewJointStatementFromAl-qidahInTheArabianPeninsulaAnd_626
https://archive.org/download/NewJointStatementFromAl-qidahInTheArabianPeninsulaAnd_626/Difference%20Between%20AQ%20and%20IS.mp4
http://www.mediafire.com/file/0a5kcffhfal519s/Difference_Between_AQ_and_IS.mp4/file
https://archive.org/download/DifferenceBetweenAQAndIS_201906/Difference%20Between%20AQ%20and%20IS.mp4

পিডিএফ ডাউনলোড: (১.৭৬ মেগাবাইট)
https://banglafiles.net/index.php/s/qjf2KXwT3yiSYXP
https://www.file-upload.com/ps7vkigmp3k8
https://archive.org/download/NewJointStatementFromAl-qidahInTheArabianPeninsulaAnd_626/DifferenceBetweenAqAndIs.pdf
http://www.mediafire.com/file/scdjr0uszee22ee/DifferenceBetweenAqAndIs.pdf/file
https://archive.org/download/DifferenceBetweenAQAndIS_201906/DifferenceBetweenAqAndIs.pdf

ব্যানার ডাউনলোড
https://banglafiles.net/index.php/s/mSNHyXoznW5pYdJ
https://www.file-upload.com/8sqloqs6od86
====================================
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]
—————–

 

“আইএস ও আল-কায়েদার

মৌলিক পার্থক্য”

 

-শায়খ আবু মিকদাদ খালিদ আল বাতরাফি (হাফিজাহুল্লাহ)-এর বয়ান

আই এস মুখপাত্রের বক্তব্যের জবাবে প্রদত্ত বিবৃতি

 

আল কায়েদা জাজিরাতুল আরব ও

আল কায়েদা ইসলামী মাগরিবের পক্ষ হতে

 

জামাতুল বাগদাদির মুখপাত্রের

কাফিরদিগকে বলে দিন, খুব শীঘ্রই তোমরা পরাভূত হবে..

শীর্ষক বিবৃতির ব্যাপারে বক্তব্য

আল-মালাহিম ও আল-আন্দালুস মিডিয়া হতে যৌথ ভাবে প্রকাশিত

তানজীম আল-কাইদা কি জাযিরাতুল আরব (AQAP) ও তানজীম আল-কাইদা ফি বিলদ আল-মাগরির আল-ইসলামি (AQIM) –এর পক্ষে শাইখ খালিদ আল বাতরাফি হাফিজাহুল্লাহ্।

[অক্টোবর ১৩, ২০১৫তে প্রকাশিত জামাতুল বাগদাদির মুখপারে কাফিরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হবে…শীর্ষক বিবৃতির প্রেক্ষিতে খালিদ আল বাতরাফি হাফিজাহুল্লাহর এই ভিডিও বক্তব্যটি ধারণ করা হয় অক্টোবরে, এবং প্রকাশ করা হয় নভেম্বরের ১ তারিখে]

মূল আরবির লিঙ্কঃ

http://tinyurl.com/z2kd6n3

http://justpaste.it/oplo

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

সকল প্রশংসা জগতসমূহের অধিপতি আল্লাহর জন্য। আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক আশরাফুল আম্বিয়া, সাইয়্যিদিল মুরসালীন মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর। আম্মা বাআদ…

আমি জজিরাতুল আরব [AQAP] ও ইসলামিক মাগরিবের [AQIM] কাইদাতুল জিহাদের ভাইদের পক্ষ থেকে এই বক্তব্য উপস্থাপন করছি। এই বক্তব্য, জামাতুল বাগদাদীর মুখপাত্রের “কাফিরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হবে…” [সূরা আলে ইমরান, ১২] শীর্ষক বিবৃতির প্রেক্ষিতে আমাদের জবাব। উক্ত বিবৃতিতে এমন সব এলোমেলো, বিশৃঙ্খল এবং দুর্ভাগ্যজনক বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যা আমাদের বাধ্য করেছে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে। যে অবস্থান প্রতিষ্ঠিত সত্য ও কল্যাণের উপর… “যাতে সে সব লোক নিহত হওয়ার ছিল, প্রমাণ প্রতিষ্ঠার পর এবং যাদের বাঁচার ছিল, তারা বেঁচে থাকে প্রমাণ প্রতিষ্ঠার পর ।” [সূরা আনফাল, ৪২]।

এই দুঃখজনক বিবৃতি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হল, যখন উম্মাহর দৃষ্টি আল-আকসা এবং “ছুরি অভ্যুত্থানের” বীরদের দিকে নিবন্ধিত। অথচ এই বিবৃতিতে উম্মাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ফিলিস্তিনকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। শুধু তাই না এই দলের মুখপাত্র সব জায়গায় অবস্থিত সব (মুসলিম) দলের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, এবং তাঁদের রক্ত ঝরানোর হুমকি দিয়েছে। এবং এগুলো এই দলের [জামাতুল বাগদাদী] বিচ্যুতি ও গোমরাহির পরিচায়ক। উম্মাহর শত্রু, ইহুদী ও নাসারাদের দিকে অস্ত্র তাক করার বদলে তারা মুসলিমদের বুকের দিকে আজ তাঁদের অস্ত্র গুলো ঘুরিয়ে দিয়েছে। লা হাওলা ওয়ালা কু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ।

এই বিবৃতি, নিজেদের মানহাজ ও আকীদার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে এই দলের সব দাবিকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছে। এই বিবৃতির মাঞ্চমে তাদের লুকায়িত আকীদা, চেপে রাখা বিদ্বেষ এবং হিংসা প্রকাশিত হয়েছে। সবার কাছে এটা পরিস্কার হয়ে গেছে, এই দলের বিচ্যুতি শুধু শত্রুদের কাবু করার জন্য তাকফির ব্যবহার করার মধ্যে সীমাবদ্ধ না। বরং তাঁদের মুখপাত্র যখন বলেছে তাদেরকে (জামাতুল বাগদাদী) বাইয়াহ না দেয়াই যেকোন দলের রক্ত করানোর জন্য যথেষ্ট তখনই তাদের গোমরাহি সীমা ছাড়িয়ে গেছে অর্থাৎ শুধু তাকফিরে সীমাবদ্ধ নেই, কারণ যা হারাম আর তা হালাল করে নিয়েছে। আর তারা দাবি করছে তাদের দল ছাড়া আর কোন বৈধ মুসলিম দল দল নেই। 

আজ আমরা এমন এক সময় অতিবাহিত করছি যখন পূর্ব ও পশ্চিমের ক্রুসেডাররা শামের মুসলিমদের বিরুদ্ধে ছুটে এসেছে। আমেরিকা ও ইসরাইলের সাথে সহযোগিতায় এবং সমন্বয় করে রাশিয়া হিংস্র এক ক্রুসেডার ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। উম্মাহর এমন সংকটপূর্ণ সময়ে জামাতুল বাগদাদীর মুখপাত্র এমন এক বিবৃতি নিয়ে উম্মাহর সামনে আসলো যা বিভিন্ন মুসলিম দলের মধ্যে বিবাদ বন্ধের কিংবা যুদ্ধবিরতির আহবান জানায় না, মুসলিমদের একত্রিত হবার আহবান জানায় না, ক্রুসেডারদের তাদের নিজ ঘরে হামলা করা কিংবা একাকী মুজাহিদের আক্রমনের প্রতিশ্রুতি দেয় না। বরং এই বিবৃতির মাধ্যমে তারা শামে যুদ্ধরত সকল মুসলিম দলকে হুমকি দিল, এবং “মুক্ত অঞ্চলকে পুনরায় মুক্ত করা”-র তাদের [জামাতুল বাগদাদী] যে পলিসি তা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করলো। অর্থাৎ জামাতুল বাগদাদী ঘোষণা দিল শামের মুসলিমরা যেসব অঞ্চল নুসাইরিদের হাত থেকে মুক্ত করেছে, সেই অঞ্চলগুলো আক্রমণ করার এবং সেই মুসলিমদের উপর হামলা চালিয়ে যাবার। একই সাথে এই ব্যক্তি [আল- আদনানী] দুনিয়ার সকল মুসলিম দল এবং মুজাহিদিন জামা’আ, যারা ইসলামের জন্য কাজ করছে: তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। এবং বললো ধারালো ছুরি” আর বক্ষ বিদীর্ণকারী বুলেট ছাড়া এই মুসলিমদের দেয়ার মতো আর কোন জবাব তাদের [জামাতুল বাগদাদীর] নেই।

আর ইলম এবং দালীল-অদিল্লার ক্ষেত্র বাগদাদীর মুখপাত্র সম্পূর্ণভাবে পাশ কাটিয়ে গেলো। এবং শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিযাহুল্লাহ, ইসলামী বসন্ত সিরিযে যেসব শার’ই যুক্তি, প্রমান ও দলীল ও বাস্তবতা উপস্থাপন করেছেন, সেগুলোর কোন জবাবই তার [আল-আদনানী] কাছে ছিল না। তাই শার’ই দালীল-প্রমান-যুক্তির বদলে সে কটুক্তি, উপহাস ও অপমানজনক কথার মাধ্যমে জবাব দিলো। আর এটা হল মুর্খ ও দুর্বল অবস্থানের ব্যক্তি কৌশলের পরিচায়ক। দালীল-আদিল্লা এবং ‘ইলমের ক্ষেত্রে নিজের অজ্ঞতা ঢাকার জন্য সে একজন সম্মানিত বৃদ্ধ ব্যক্তিকে অপমান করলো যিনি কিনা প্রমাণ সম্বলিত এবং সুচিন্তিত বক্তব্যের জন্য সুপরিচিত। এবং একই সাথে এই ব্যক্তি [আজ আদনানী] এমন সব ব্যক্তিত্বদের অপমান করলো যারা জিহাদের ময়দানে অগ্রগামী এবং কিছুদিন আগেই যাদের প্রশংসা সে [আল-আদনানী] নিজেই করছিলো। নবী কারীম ﷺ বলেছেন, আল্লাহর মহত্ব ও পবিত্রতা ঘোষণার একটি অংশ হল ধূসর চুল সম্পন্ন ব্যক্তিদের সম্মান করা। [আবু দাউদ হতে বর্ণিত এবং আল-আলবানী সহীহ-আল-জামিতে এই হাদিসটিকে “হাসান” বলেছেন]। এবং একই সাথে এই হাদিসটিও – “সে ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত না যে আমাদের বৃদ্ধদের সম্মান করে না, আমাদের শিশুদের প্রতি কোমল ও দয়াশীল না এবং আমাদের উলামাদের তাঁদের অধিকার দেয় না।” [সাহীহ আল-জামীতে আল-আলবানী একে সহীহ বলেছেন]। তাহলে যারা “খিলাফা ‘আলা মানহাজুন নবুওয়্যাহ” প্রতিষ্ঠার দাবি করছে, তাদের মধ্যে নাবীর ﷺ দেয়া নির্দেশনার কোন ছাপই কেন পাওয়া যায় না? নিশ্চয় নাবী কারীম ﷺ এর মানহাজ এই দলের মানহাজ থেকে মুক্ত। নিশ্চয় এই দুটি মানহাজ এক নয়।  আর তাই এই প্রেক্ষাপটে আমরা পুনরাবৃত্তি করছি যা শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিযাহুল্লাহ সহ উম্মাহ-র অন্যান্য উলামা এবং উমারাগণ ইতিমধ্যেই বলেছেন, আমরা এই খিলাফাহকে স্বীকার করি না, এবং এই খিলাফাহকে দেওয়া বাইয়াহ [আনুগত্য]কে আমরা বৈধ মনে করি না, এবং আমরা এই খিলাফাহনাবী এর মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত বলেও মনে করি না। বরং এই এই দল যেসব জায়গায় কর্তৃত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে তা তারা করেছে জবরদস্তি, যুলুম, রক্তপাত ও মুসলিমদের উপর তাকফির করার মাধ্যমে। এবং তাদের এই কর্তৃত্ব না শূরার মাধ্যমে নির্ধারিত, আর না পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।

এই ‘খিলাফাহ’-র পথ আর নাবী কারীম ﷺ এর সুন্নাহ এবং খুলাফায়ে রাশিদার পথের মধ্যে সহস্র যোজনের ফারাক। জোরপূর্বক মুসলিমদের উপর নেতা নির্বাচন, মুসলিমদের হত্যা, মুসলিমদের উপর তাকফির করা, ঔদ্ধত্য, গর্ব এবং দুর্নীতিসহ তারা অনান্য যেসব কাজ করেছে এবং করছে সেটাকে নবুওয়াতের মানহাজ দাবি করা নাবী কারীম ﷺ ও তাঁর সুন্নাহ ও মানহাজ, এবং খুলাফায়ে রাশিদার সুন্নাহ-র উপর মিথ্যারোপ করা ছাড়া আর কিছুই না। এবং নাবী কারীম ﷺ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন খুলাফায়ে রাশিদার সুন্নাহ অনুসরণ করতে, “আমার এবং খুলাফায়ে রশিদার সুন্নাহ আকড়ে থাকো, মাড়ির দাঁত দিয়ে এগুলোকে আঁকড়ে ধরো” [আল-আলবানীর মাতে সহীহ]

নিশ্চয়ই নাবী এর মানহাজ হল শূরা এবং উম্মাহর মধ্য পারস্পরিক সম্মতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মানহাজ। নিশ্চয়ই এটা হল বিশ্বাসীদের প্রতি দয়া ও উদারতার একটি মানহাজ। ইনসাফ ও জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত মানহাজ। আহলুল ইসলাম এবং মুসলিমদের মধ্যে যারা শ্রেষ্ঠ, সেই মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা নিশ্চয়ই নাবী ﷺ এর মানহাজ না। মুসলিমদের মধ্যে “মতবিরোধের বীজ বপন”, যেসব দল আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করছে, তাঁদের ঐক্যে ফাটল ধরানো, ইসলামের মূল শত্রু ইহুদী-নাসারা ও তাদের দালালদের দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে, কিছু দুর্বল কুযুক্তির উপর নির্ভর করে আহলুল ইসলামের দিকে যুদ্ধের স্রোত ঘুরিয়ে দেয়া, অস্ত্রের নল তাক করা, কখনোই নাবীর ﷺ মানহাজ না।

নিশ্চয়ই নাবীর ﷺ মানহাজ হল এমন এক মানহাজ শুধুমাত্র যা বিদ্যমান থাকাই সীমালঙ্ঘনে বাধা দেয় এবং পবিত্রতাকে রক্ষা করে। এই মানহাজের মাধ্যমে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দুর্বলদের জন্য শক্ত ঢালে পরিণত হয়, যুলুমকে প্রতিহত করা হয় এবং ইসলামকে নিরাপত্তা দেয়া হয়। এবং এটা নির্দোষদের হত্যা করা আর মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের মানহাজ না, যেমনটা জামাতুল বাগদাদী সা’নাতে করেছে। আর মাসজিদে হামলা যদি আল-বাগদাদীর মতে “বরকতময় সূচনা হয়, যেমনটা সে তার “তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে” শীর্ষক বক্তব্যে বলেছে, তাহলে এর শেষটা কি রকম হবে!

তাই আমাদের কাছে শারীয়াহ-র যুক্তি-প্রমাণের আলোকে বাগদাদীর এই “খিলাফাহ” একটি অবৈধ খিলাফাহ, আমরা একে স্বীকার করি না এবং আমরা মনে করি না কোন মুসলিম তাদের জামাতুল বাগদাদী বাইয়াহ দিতে বাধ্য; বরং এই দলকে দেয়া বাইয়াহকে আমরা অর্থহীন ও বাতিল মনে করি এবং এদেরকে দেয়া বাইরাহ হল পাপ ও শত্রুতার ভিত্তিতে, তাক্বওয়া ও দ্বীনের প্রতি নিষ্ঠা এর ভিত্তিতে না, বিশেষ করে সর্বশেষ প্রকাশিত [আল-আদনানীর] বিবৃতির পর এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। আর উলামাগণ শরীয়াহ এবং বাস্তবতার আলোকে এই “খিলাফাহ”-র অবৈধ হওয়া সম্পর্কে সত্যকে তুলে ধরেছেন এবং এই দলের বক্তব্য ও দাবি সমূহকে খণ্ডন করেছেন। এবং শায়খ আইমান আয়-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহর “ইসলামী বসন্ত”সিরিয এর মধ্যে অন্যতম তবে বাগদাদীর মুখপাত্র শায়খ হাফিজাহুল্লাহ-র বক্তব্য উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে আল-আদনানী ইলম, দালীল-আদিল্লা এবং বিতর্কের ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গিয়ে অপমান, কটুক্তি আর উপহাসের আড়ালে আশ্রয় নিয়েছে। নাবী ﷺ বলেছেন, “মুমিনের জন্য সমীচিন না কুৎসা করা, গালিগালাজ করা, অমার্জিত আচরণ ও অশ্লীলতা” আহমাদ ও তিরমিযি হতে বর্ণিত [আল-আলবানীর মতে সাহীহ]

এইভাবে অপমান, রূঢ়তা, আর কটুক্তির মাধ্যমে এই দল এবং তাদের মুখপাত্র উলামা, যোগাতাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ এবং মুজাহিদিনের মধ্যে যারা অগ্রগামী, তাঁদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চায়। আর তাই, যে ব্যক্তি তাদেরকে বাই’য়াহ দেবে, তাদের পক্ষ নেবে এবং তাদের সমর্থন করবে, সে তাদের কাছে প্রকৃত মুমিন। আর যে তাদের সাথে একমত পোষণ করবে না, তাদের গোমরাহি নিরবে মেনে নেবে না এবং তাদেরকে সংশোধনের আহবান জানাবে সে তাদের কাছে উলামায়ে সু, অনভিজ্ঞ তাত্ত্বিক, নির্বোধ, কিংবা ত্বাগুতের জুতো বলে গণ্য হবে। অথচ যাদের ব্যাপারে জামাতুল বাগদাদী এরকম কথা বলছে তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের সারা জীবন কেটেছে তাওয়াগীতের বিরুদ্ধে জিহাদে, এবং তাঁরা এই পথে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতিত ও পরীক্ষিত হয়েছেন। ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ মিনহাজুন নুবুওয়্যাহ-তে সঠিকভাবে আহলুল বিদ’আ এবং যেসব লোক বিচ্যুতিতে নিপতিত তাদের অবস্থা তুলে ধরেছেন তাঁর এই কথার মাধ্যমে, এবং আহলুল হওয়ার যেসব লোকেরা নিজেদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করে অনেকেই মনগড়া বিভিন্ন মত উদ্ভাবন করে, আর যারা তাদের এই বিদআতি মতামতের সাথে একমত পোষণ করতে অসম্মত হয়, তাঁদেরকে তাকফির করে।

আর এরকম ভারসামহীন উষ্মাপূর্ণ বক্তব্যের সাথে সালাফদের বক্তব্য এবং বক্তব্য উপস্থাপনের পন্থার সাথে কোনই মিল নেই। না এর সাথে মিল আছে যা আমাদের উলামা, উমারা এবং এই পথের [জিহাদের] অগ্রগামী ব্যক্তিগণ আমাদের শিখিয়েছে। এরকম কোন বক্তব্য শাইখ উসামা বিন লাদিন, শাইখ আতিয়াতুল্লাহ, শাইখ আবু ইয়াহিয়া আল-লিবি, কিংবা শাইখ আবু মুস’তাব আয-যারকাউয়ীর মুখ থেকে উচ্চারিত হবে এটা ভাবাই যায় না – আল্লাহ্ তাঁদের সকলের উপর রহমত নাযিল করেন। অথচ জামাতুল বাগদাদী দাবি করে তারা এই উলামা ও উমরাহ, এবং তাঁদের মতো অন্যদের অনুসৃত মানহাজের উপর আছে, এবং তারা নাকি এই মানহাজকে বিশুদ্ধতা দান করেছে!

আর যদি আমরা, আমাদের হকপন্থী উলামাদের পেছনে ফেলে দেই, আর জিহাদের নেতৃবৃন্দকে প্রশ্নবিদ্ধ করি – যারা আমাদের আগে এই পথে অগ্রসর হয়েছেন এবং আত্মত্যাগ করেছেন, যারা ইসলাম এবং জিহাদে যোগ্যতাসম্পন্ন – তাহলে আমাদের এই পথে [জিহাদের পথে] উল্লেখ করার মতো আর কোন ব্যক্তি বাকি থাকে? আর যখন আমরা [জিহাদের ক্ষেত্রে] আমাদের পূর্ববর্তী এবং সমসাময়িক সকল প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করতে সচেষ্ট হই, এবং যারাই আমাদের মত ও পথের বিরোধিতা করবে তাঁদের পতন ঘটাতে উঠেপড়ে লাগি, তবে উম্মাহ-র মধ্যে আমাদের সাথে থাকার মতো আর কে অবশিষ্ট থাকবে?

যেসব উলামা এবং নেতৃবৃন্দ অ্যামেরিকা এবং তার এজেন্টদের বিরুদ্ধে গ্লোবাল জিহাদের সূচনা করেছেন তাঁদের প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে কে লাভবান হচ্ছে? যেসব ইসলামি জিহাদি দল সমূহ আমেরিকাকে তাদের অস্ত্রের নিশানা বানিয়েছে, সেসব দলকে আক্রমণ করার মাধ্যমে, তাদের মধ্যে ফাটল ধরনোর মাধ্যমে কার উদ্দেশ্য চরিতার্থ হচ্ছে? জিহাদের সকল ফ্রন্টে যে তাফফির দ্বন্দ্ব, অন্তর্কলহ ছড়িয়ে পড়ছে, এতে কে লাভবান হচ্ছে? এগুলো কি আমাদের বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নাকি ব্যর্থতার দিকে?

আল্লাহ বলেছেন, তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে [আনফাল, ৪৬]।

এই আয়াতের মাধ্যমে আমাদের এমন বিবাদ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে যা ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যায়। আর যখন তাকফির এবং মুসলিমদের রক্তপাত ঘটানো, যা এর চেয়েও গুরুতর বিষয় ছড়িয়ে পড়ে তখন তার ফলাফল কি হতে পারে? এটা কখনই ইসলামের মানহাজ ছিল না, এবং না ছিল নাবী এর মানহাজ। আল্লাহ বলেন, “মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল।” [আল-ফাতহ, ২৯] এবং তিনি আরো বলেন, “আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাঢালা প্রাচীর।” [আস-সফ, ৪]।

আমরা তাই আবারো পুনর্ব্যক্ত করছি, উপযুক্ত কারণ ছাড়া অবৈধভাবে তাকফির করা এবং মুসলিমদের রক্ত হালাল করার যে মানহাজ জামাতুল বাগদাদী অনুসরণ করে, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। এই মানহাজ গড়ে উঠেছে অজ্ঞতা, বিচ্যুতি, গোমরাহি আর খেয়াল-খুশির অনুসরণের সংমিশ্রণে। এ বৈশিষ্ট্যগুলোর যেকোন একটি বিদ্যমান থাকাই বিপর্যয় ঘটার জন্য যথেষ্ট, আর যখন কোন একটি মানহাজে এই সবগুলো বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ ঘটে তখন তার পরিণতি কি হতে পারে?

নিঃসন্দেহে এটি মুজহিদিনের মানহাজ না। এটা কাইদাতুল জিহাদের মানহাজ না, যা গড়ে উঠেছে ইসলামের মূলনীতিসমূহ, ইসলামের পবিত্রতা এবং পবিত্র স্থানসমূহ রক্ষা এবং বিশ্বের সকল নির্যাতিত মুসলিমকে সহায়তা করার মূলনীতির উপর ভিত্তি করে। কাইদাতুল জিহাদের মানহাজ গড়ে উঠেছে ইসলামের নীতি এবং নাবী ﷺ এর নির্দেশনার উপর ভর করে। অবশ্য মাঝে মধ্যে ভুল-ত্রুটি হয়েছে, কিন্তু আজও আল-কাইদাতুল জিহাদ এই নীতিসমূহ আকড়ে আছে এবং এই মানহাজের উপর দৃঢ় আছে। এই সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে কাইদাতুল জিহাদ তার লড়াই অব্যাহত রেখেছে। যখন আমরা ভুল করি তখন আমরা তা স্বীকার করি, এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করি, আমরা তাওবাহ করি এবং নিজেদের সংশোধনে সচেষ্ট হই, আমাদের এই প্রচেষ্টা উম্মাহ-র সেই সব হাক্কানী উলেমা, মুজাহিদিন, এবং উমারাহদের কাফেলার ধারাবাহিকতা মাত্র, যারা আল্লাহ-র শত্রু নাসারা এবং উম্মাহর উপর জগদ্দল বোঝার মতো চেপে বসা এজেন্ট শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শত প্রতিকূলতার মুখে জিহাদ শুরু করেছিলেন। এই প্রচেষ্টা হল দশকের পর দশক ধরে চলা জিহাদ আত্মত্যাগ এবং পরীক্ষার ফসল। এমাদের এই প্রচেষ্টা হল সেই কাফেলার ধারাবাহিকতা যাতে আমাদের পূর্বে শামিল হয়েছেন সাইদ কুতুব শাহীদ, শাহীদ ইযয আদ দ্বীন আল-ক্বাসসাম, শাইখ উমার আব্দুর রাহমান, শাইখ মারওয়ান হাদীদ, শাইখ আদনানী উক্বলা, শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম, শাইখ তামীম আল-আদনানী, শাইখ ইউনুস খালিস, শাইখ জালালুদ্দীন হাক্কানী শাইখ আব্দাল্লাহ আল-দ্বাখরি, শাইখ আবু উমার আস-সাইফ, শাইখ আব্দুর রাশীদ গাজী, শাইখ নিযামুদ্দীন শামযায়ীসহ অন্যান্য আরো অনেক অগ্রগামী উলামা এবং উমরাহগণ।

এই আদর্শ নিয়েই গঠিত হয়েছিল আল-কাইদাতুল জিহাদ, যাতে করে উম্মাহর সকল দলের চেষ্টা ও শক্তিকে উম্মাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যসমূহ পূরণের উদ্দেশ্যে একীভূত করা যায়। এবং এই কাফেলার নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন শাইখ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ। আমীরুল মু’মিনিন মুল্লাহ মুহাম্মাদ উমার রাহিমাহুল্লাহকে বাই’য়াহ দেয়ার মাধ্যমে তিনি সকল মুজাহিদিনকে একত্রিত এবং ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। মোল্লাহ উমার রাহিমাহিল্লাহ সকল মুসলিম ও মুজাহিদিনের জন্য তাঁর বক্ষ এবং আফগানিস্তান উভয়কেই উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন, যার ফলে আফগানিস্তান মুহাজিরিনের একত্রিত হবার এবং প্রস্তুতি গ্রহেণর এক নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিল। মুল্লাহ উমার রাহিমাহুল্লাহ এবং তাঁর অধীনস্ত ইসলামি ইমারত কোন দলকে বাইয়াহ দিতে বাধ্য করেননি। তাঁরা নিজেদেরকে খিলাফাহ দাবি করে এবং তাঁরাই মুসলিমদের একমাত্র বৈধ জামা, এই দাবি করে কাউকে গলা কাঁটা, কিংবা বুলেট দিয়ে খুলি বিদীর্ণ করার হুমকি দেন নি। আর এ ভাবেই মুজাহিদিন একতাবদ্ধ হয়েছিলেন, এবং তারা তাঁদের শক্তি ও সামর্থ্য একত্রিত করে সক্ষম হয়েছিলেন কল্যাণ ও ইসলামের নির্দেশনার আলোকে। এবং এই অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছিল দয়া, উন্নত চরিত্র, উত্তম আচরণ, সাহায্য ও সহযোগিতা এবং চুক্তি ও ওয়াদা রক্ষার মাধ্যমে। গলা কাঁটা আর বুলেট দিয়ে খুলি বিদীর্ণ করার মানহাজের মাধ্যমে না।

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ তাঁর ফাতাওয়াতে বলেছেন, কোন ব্যক্তির এই অধিকার নেই যে সে উম্মাহর জন্য একজন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করবে এবং তার দিকে আহবান করবে, এবং এর ভিত্তিতে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা নির্ধারণ করবে, একমাত্র নবি ছাড়া [অর্থাৎ নাবী ছাড়া আর কোন ব্যক্তির ব্যাপারে এভাবে আহবান করা এবং এর ভিত্তিতে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার নীতি নির্ধারণ করা যাবে না] এবং কোন ব্যক্তির এই অধিকার নেই যে সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বক্তব্য, এবং যেসব বিষয়ে উম্মাহ ঐক্যমতে পৌঁছেছে [ইজমা] ও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সেগুলো ছাড়া অন্য কোন বক্তব্যের প্রতি আহবান করার এবং তার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা নির্ধারণ করার। বরং এগুলো হল বিদআতীদের কাজের অন্তর্গত যারা নিজেদের ইচ্ছামতো একজনকে নির্ধারণ করে, তার প্রতি আহবান করে এবং তার প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার নীতি  গ্রহণ করে, এবং তাদের এরূপ কর্মের মাধ্যমে উম্মাহ-র মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে।

আল্লাহ্ শাইখ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ-কে সম্মানিত অবস্থান দিয়েছিলেন, তাঁর উত্তম চরিত্র, উদারতা, সদাচরণ, দানশীলতার এবং ইসলামে তার উত্তম আচরণের মাধ্যমে। রক্তপাত, ইসলামে যে রক্তকে পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে তাকে হালাল করা আর [মুসলিমদের প্রতি] তলোয়ারের পথের মাধ্যমে কখনই ঐক্য অর্জন সম্ভব না, আর একদিনের জন্যেও এটি শাইখ উসামার মানহাজ ছিল না। এই দূষিত মানহাজের শুরু হল ব্যক্তি আক্রমণ আর তাকফিরের মাধ্যমে, আর এর শেষ হল মুসলিমদের হত্যা, মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি আর মুসলিমদের জমায়েতে বিস্ফোরণ ঘটানোর মাধ্যমে। না এটা কখনো আমাদের মানহাজ ছিল, আর না কখনো হবে। নাবী ﷺ বলেছেন, যে আমার উম্মাহ, থেকে পৃথক হয়ে যায়, উম্মাহর নেককার ও পাপী ব্যক্তিদের উপর কঠোর আঘাত আনে, মুমিনদেরকেও ছাড় দেয় না, এবং চুক্তি পূর্ণ করে, সে আমার থেকে না, আর আমি তার থেকে না। [সাহীহ মুসলিম] আজ, আল্লাহর রহমতে সুস্থ মস্তিস্কের এবং ইনসাফকারী ব্যক্তিরা সাক্ষ্য দেবে আমরা একটি দিনের জন্যও ধ্বংস আর বিনাশের উপলক্ষ বা উপকরণে পরিণত হই নি। বরং আমরা একটি দল যারা আহবান করে ঐক্য ও বাস্তবতাকে উপলব্ধি করার প্রতি। আমরা উম্মাহর সুখ ও দুঃখের অংশীদার। আমরা চাই মুসলিম হিসেবে সকল সত্যপন্থী জিহাদি ও জিহাদি নয় এমন দলকে নাসীহাহ, সাহায্য ও সহযোগিতা করতে। আমরা নিজেদের মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত একটি দল মনে করি। আমরা বাগদাদী এবং তার অনুসারীদের মতো দাবি করি না যে, আমরাই মুসলিমদের জন্য একমাত্র বৈধ জামা, এবং যে বাইয়াহ দেবে না, তার একমাত্র প্রাপ্য হল ধারালো ছুড়ি অথব  বক্ষবিদীর্ণকারী বুলেট, আর তারপর জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু। বাগদাদী ও তার অনুসারীদের মতো আমরা দাবি করি না যে, যে ব্যক্তি বাইয়াহ দেয়নি এমন আচরণই তাঁর প্রাপ্য, কারণ সে এমন এক ব্যক্তিকে বাইয়াহ দেয় নি। যাকে মুসলিমদের উপর খিলাফাহ নিযুক্ত করা হয়েছে, মুসলিমদের শূরা ব্যতীত এবং তাঁদের [মুসলিমদের] অধিকার হরণের মাধ্যমে। আমরা এরকম দাবি করি না, আর তারপর তাদের মতো ভ্রান্ত যুক্তিও দেই না যে, “মুজাহিদিন দলসমূহ একজন ব্যক্তির অধীনে গোমরাহীর উপর ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না।

আমরা হলাম এমন একটি দল যারা সহযোগিতা, সমর্থন ও স্থাপন করে। আর আমাদের পথ হল এই উম্মাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদের পথ, এবং মুসলিম উম্মাহসহ সমগ্র মানবজাতির প্রতি দাওয়াহর পথ। উম্মাহ-র কল্যাণ ও স্বার্থই আমাদের স্বার্থ। উম্মাহর কাছে উদ্বেগের ও অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বিষয়গুলোই আমাদের উদ্বেগের বিষয়। আমরা এই উম্মাহর অন্তর্ভূক্ত একটি দল, যারা এই উম্মাহর জন্য কাজ করছে। ধ্বংস, অনৈক্য ও বিভেদের বীজ বপন, বিভ্রান্তি সৃষ্টি, বিরোধিতাকারীদের তাকফির করার যে মানহাজ, তা হল সেই দুর্বল, দুর্ভাগা এবং তুচ্ছ লোকের মানহাজ, যে ধ্বংস ছাড়া আর কোথাও পূর্ণতা খুঁজে পায় না। তাকফির, মুসলিমদের রক্ত ঝরানো, যেসব মুসলিমরা বিরোধিতা করবে তাঁদের বিস্ফোরক দিয়ে হত্যা করার যে পথ, সেটা কি সত্য ও হক্বপন্থীদের পথ নাকি বিচ্যুতি আর খাহেশাতের পথ? হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “যে শিবিরে গন্ডগোল সৃষ্টি করে, এবং রাস্তা বন্ধ করে তার জন্য কোন জিহাদ নেই।

তাহলে সেইসব ব্যক্তির জিহাদের কি হবে যারা মুসলিমদের রক্ত ঝরানোর জন্য অন্যদের উদ্বুদ্ধ করে, আর মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে নিজেদের সমর্থকদের লেলিয়ে দেয়, শুধু এই জন্য যে মুজাহিদিন তাদের দলকে বাই’য়াহ দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন? ইবন মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর নাবী ﷺ বলেছেন, যে কোন মুসলিমের হত্যায় সহযোগীতা করে, যদি অর্ধেক শব্দের দ্বারাও কেউ এই কাজে সহায়তা করে, তবে সে আল্লাহর মুখোমুখি হবে, সেই শব্দ তার দূচোখের মাঝে লেখা অবস্থায়, আর আল্লাহর রাহমাহ পাবার কোন আশাই তার নেই।

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল।

আল্লাহর রহমতে আমরা তাদের জন্যও ইনসাফ চাই যারা আমাদের সাথে ভিন্ন মত পোষণ করে, এমনকি যদি তাদের যুলুম এবং অত্যাচার ব্যাপক আকার ধারণ করে তাও। আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শক্রতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত। [মায়িদাহ, ৮]

তিনি সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলেন, “যারা মাপে কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ, যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয়, এবং যখন লোকদেরকে মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়।” [আল-মু তাফফীন, ১৩] মুসলিমদের মধ্যে যারাই কোন ভালো কাজ করে, আমরা তাদেরকে সেই ভালো কাজে সমর্থন করি, এবং তাদের প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আর মুসলিমদের মধ্যে যারা কোন খারাপ কাজ করে আমরা তাদের আন্তরিকভাবে নাসীহাহ করি এবং সেই ভুল কাজকে সমর্থন করি না।

শাইখ ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ তাঁর কিতাব “ক্বাইদাতু ফী মাহাব্বা”-তে বলেছেন – আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা রসূলগণকে প্রেরণ করেছেন

“সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে[আল-হাদিদ, ২৫]।”

তাই একজন মু’মিনের ইনসাফ সম্পর্কে, সিরাতুল মুস্তাকীম সম্পর্কে এবং তা বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিৎ। অন্যথায় সে অজ্ঞতায় পতিত হবে অথবা যালিমে পরিণত হবে। আর আমরা অনেকবার একথা বলেছি, মুসলিমদের বিশ্বাস হল এই যে, একজন ব্যক্তি ভালো, মন্দের মিশেলে গড়ে ওঠে, কখনো সে পুরষ্কৃত হয় আর কখনো শাস্তিপ্রাপ্ত হয়। সকল মুসলিম দলই এমনটা বিশ্বাস করে। শুধু মাত্র সেসব দল ছাড়া যারা গোমরাহীতে পতিত হয়েছে এবং বিচ্যুত হয়েছে, যেমন, খাওয়ারিজ, মুতাযিলাদের অন্তর্গত আল-ওয়াইদিয়াহ ও তাদের মতো অন্যান্যরা, এবং অধিকাংশ মুরজি’আ। এই দলগুলো মনে করে একজন ব্যক্তি হয় শুধুই শাস্তিপ্রাপ্ত হবে অথবা শুধু পুরষ্কৃত হবে, হয় সে সর্বদা সর্বক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হবে, বা সর্বদা সর্বক্ষেত্রে নিন্দনীয়  হবে। এবং এই বাতিল এবং দূষিত চিন্তাধারার ভুলগুলো সম্পর্কে আমরা অন্যত্র কুর’আন, সুন্নাহ এবং ইজমার দলীলের আলোকে আলোচনা করেছি।”

ইতিপূর্বে জামাতুল বাগদাদীর মুখপাত্র বেশ কিছু বিষয়ের উপর মুবাহালা (মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর লানত বর্ষণের জন্য দুআ) করেছিল, আর আজ সেই একই লোক তার নিজের এবং তার দলের মিথ্যাচার স্বীকার করে নিচ্ছে। তারা প্রথমে বলেছিল, যেসব দল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তারা সেসব দলকে তাকফির করে না। কিন্তু হে লোকসকল আল্লাহর প্রতি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দাও শীর্ষক বিবৃতিতে এই ব্যক্তি আল-আদনানী নিজেই ঘোষণা করলো, যারাই জামাতুল বাগদাদীর বিরুদ্ধে যুগ্ধ করবে, তারা কাফির হয়ে যাবে, এটা তারা উপলব্ধি করুক আর না করুক আর সর্বশেষ বক্তব্যে (কাফিরদিগকে বলে দিন, খুব শিঘ্রই তোমরা পরাভূত হবে..”) সে (আল-আদনানী) আরো অগ্রসর হয়ে ঘোষণা করলো যারাই জামাতুল বাগদাদীতে যোগ দেবে না, এবং জামাতুল বাগদাদীর খিলাফাহকে স্বীকার করবে না, তাদেরকে ধারালো ছুরি আর বক্ষ বিদীর্ণকারী বুলেটের মাধ্যমে জবাব দেয়া হবে, এবং হত্যা করা হবে। অথচ এই একই ব্যক্তি এক সময় দাবি করেছিল তারা বাইআহ-র (আনুগত্য) জন্য যুদ্ধ করে না। 

যখন শামে প্রথম ফিতনা দেখা দেয় তখন বাগদাদী বলেছিলো, যারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, তারা যেন আক্রমণ স্থগিত করে। বাগদাদী দাবি করেছিল, যদি অন্যান্য দলগুলো আক্রমণ স্থগিত করে, তবে সেও আক্রমণ বন্ধ রাখবে। যদি তারা শান্তির দিকে অগ্রসর হয়, তবে সেও শান্তির দিকে অগ্রসর হবে। যারা এখন, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময় শামের মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রুদের একত্রিত হবার প্রেক্ষিতে, যুদ্ধবিরতির [মুসলিম দলগুলোর মধ্যে] এবং জিহাদের স্বার্থে আপাতত মুসলিম দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ স্থগিত রাখার আহবান জানাচ্ছে, তাঁদের সেই আহবানের প্রতি সুচিন্তিত, ভারসাম্যপূর্ণ ও সুবিবেচনাপ্রসূত উত্তর দেয়ার পরিবর্তে, জামাতুল বাগদাদীর মুখপাত্র ঘোষণা করলো যে, তারা মুসলিম বিশ্বের সব দল ও তানজীমকে বিচ্ছিন্ন করবে এবং তাঁদের ঐক্যে ফাটল ধরাবে। এবং তারা অন্য সব দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে শুধু এই কারণে যে এই দলগুলো বাগদাদীকে বাইয়াহ দেয়নি এবং তার আনুগত্য স্বীকার করে নেয় নি। জামাতুল বাগদাদীর মুখপাত্র তার সর্বশেষ বক্তব্যে [কাফিরদিগকে বলে দিন, খুব শিঘ্রই তোমরা পরাভূত হবে..”] প্রকাশ্যভাবে বলেছে – “আমরা দলগুলোকে বিচ্ছিন্ন করবো, সব তানজীম এবং তাঁদের ঐক্যকে নষ্ট করবো, নিশ্চয় আমরা এরূপ করবো, কারণ এই জামাআহ/দল ছাড়া আর কোন [বৈধ] জামাআহ/দল নেই। তাই সব তানজীম ধ্বংস হোক, সব দল, ব্রিগেড আর বাহিনী ধ্বংস হোক। আমরা সব ব্রিগেড ও ব্যাটালিয়নকে ছিন্ন করবো, বিইযনিল্লাহ, যতক্ষণ পর্যন্ত সব দল শেষ না হচ্ছে। কারণ এসব দল উম্মাহকে দুর্বল করছে আর উম্মাহ-র বিজয়কে বিলম্বিত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা সোমালিয়ার মুজাহিদিনের ঐকো ফাটল ধরানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। অথচ বর্তমানে সোমালিয়াতে ক্রুসেডাররা বর্বর ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছে, এরকম অবস্থা সত্ত্বেও জামাতুল বাগদাদী এহেন হীন কাজে লিপ্ত হয়েছে। আর একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে আমাদের সকল কাজের ফল।

যারা বিভিন্ন যুক্তিতর্কের মাধ্যমে এই দলকে (জামাতুল বাগদাদী) সমর্থন করতে সচেষ্ট হন, তাদের এখন আর কি অজুহাত থাকতে পারে? মুসলিমদের উপর তাকফির করা, মুসলিমদের রক্ত হালাল করা এবং মুসলিমদের ঐক্য নষ্ট করা – এটাই কি আহলুল গুলুহ এবং খাওয়ারিজদের মানহাজ না? শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ, তাঁর ফাতাওয়াতে বলেছেন, খাওয়ারিজদের বিশ্বাসের মূল বৈশিষ্ট্য হল তারা মুসলিমদের বিভক্ত করে এবং তাঁদের রক্ত হালাল করে শিআরাও এরূপ করে থাকে তবে তারা দুর্বল। [অর্থাৎ শিআরা খাওয়ারিজদের মতো মুসলিমদের হত্যা করতে সক্ষম হয় না?]” আার খাওয়ারিজ এবং আহলুল গুলুহ-র বৈশিষ্ট্য হল নতুন নতুন শব্দ উদ্ভাবন করা এবং সেগুলোকে দ্বীনের অংশ বানানো, আর মুসলিমদের ভেতর থেকে যারা এগুলোর ব্যাপারে তাদের সাথে একমত হবে না তাদের হত্যা করা। শাইখুল ইসলাম ই তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আহলুল বিদআর বৈশিষ্ট্য হল তারা কোন একটি নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে এবং তারপর এই নব উদ্ভাবিত বিষয়কে দ্বীনের মধ্য ওয়াজিব করে নেয়। এবং এসব নব উদ্ভাবিত বিষয়কে আকীদার অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নেয়। আর একারণে মুসলিমদের ভেতর থেকে যারা এসব বিষয়ে তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে তাদের উপর তারা তাকফির করে, এবং তাঁদের রক্ত হালাল ঘোষণা করে, যেরকম খাওয়ারিজ এবং জাহমিয়্যাহরা করেছিল।

পরিশেষে, যারা এখনো জামাতুল বাগদাদীকে সমর্থন করছে, উৎসাহ দিচ্ছে এবং তাদের দলে অবস্থান করছে তাদের প্রতি নাসীহাহ হিসেবে আমরা বলতে চাই; এখনো কি সময় আসে নি এই দলের বিচ্যুতি এবং গোমরাহির মাত্রা উপলব্ধি করার? এখনো কি মুসলিমদের উপর তাকফির করা, তাঁদের রক্ত ঝরানো, তাঁদের জান ও মালকে হালাল করা থেকে বিরত হবার ফিরে আসার এবং খালেস ভাবে তাওবাহ করার সময় আসে নি? আল্লাহ বলেন, “যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।” [আল-আহযাব, ৫৮] আর একজন মুসলিমকে কাফির ঘোষণা করা আর তাঁকে দ্বীন থেকে বের করে দেয়ার চেয়ে গুরুতর ক্ষতি আর কি হতে পারে? উপযুক্ত কারণ ছাড়া কোন মুসলিনের রক্ত ঝরানোর চাইতে অধিক গুরুতর অপরাধ আর কি হতে পারে? আল্লাহ্ বলেন, “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মুসলিমকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।”[নিসা, ৯৩] এবং নারী ﷺ বলেন, “যদি কেউ তার ভাইকে বলে, হে কাফির! তাহলে অবশ্যই তাদের মধ্যে একজন কাফির।” [সহীহ বুখারী]

এবং: যে জ্ঞাতসারে কোন জ্ঞাতসারে অবস্থানের পক্ষে তর্ক করবে সে ততোক্ষণ আল্লাহর ক্রোধের বস্তু হবে যতক্ষণ না সে এটা ত্যাগ করবে। যদি কেউ কোন মুমিন সম্পর্কে এমন কিছু বলে যা সত্য নয়, আল্লাহ্ সে ব্যক্তিকে খাবালের কাদার মধ্যে বিচরণ করতে বাধ্য করবেন, যতক্ষণ না সে এই কথা ফিরিয়ে নেয় (আবু দাউদ] 

এবং তিনি ﷺ আরো বলেন: “অন্যায়ভাবে একজন মুসলিমকে হত্যা করার চেয়ে এই দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া আল্লাহ-র কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।” আবু সাইদ খুদরি রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এবং আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, নাবী ﷺ বলেছেনঃ “যদি আসমানসমূহ ও যমিনের অধিবাসীরা কোন মুমিনের রক্ত ঝরানোতে একত্রিত হতো, তবে আল্লাহ্ তাদের সকলকেই আগুনে নিক্ষেপ করবেন।“ [তিরমিযি, আল-আলবাণী কতৃক তাহক্বীককৃত]

নিশ্চয় কেউ ভ্রান্ত এবং অতিরঞ্জিত ফাতাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পাকড়াও থেকে রেহাই পাবে না। আর কোন আমীর কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে রক্ষা করতে পারবে না।

আল্লাহ বলেন, “অনুসৃতরা যখন অনুসরণকারীদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং যখন আযাব প্রত্যক্ষ করবে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক।” [আল-বাক্বারাহ, ১৬৬]

প্রত্যেক ব্যক্তি একাকি পুনরুত্থিত হবে, এবং তাঁর কাজের জন্য তাঁকে আল্লাহর সামনে একাকীই জবাবদিহি করতে হবে। কোন দল, কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে রক্ষা করতে পারবে না। আপনারা ঘর ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন আল্লাহর রাহে এবং তাঁর এই দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য। আপনাদের মধ্যে অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে হিজরত করেছেন, এই পবিত্র নিয়্যাত ও সংকল্পকে মুসলিমদের তাকফির করা এবং তাঁদের রক্ত ঝরানোর মাধ্যমে ধ্বংস করার কি অর্থ থাকতে পারে? আপনারা এসেছিলেন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে বিজয়ী করতে। অথচ আজ আপনারা মুসলিম উম্মাহ-র দিকে এবং উম্মাহ-র যেসব সন্তানরা জিহাদ করছে, তাঁদের দিকে আপনাদের অস্ত্র তাক করেছেন। শুধুমাত্র এই কারণে যে তাঁরা আপনাদের দলকে বাইয়াহ দেয় নি, এবং আপনাদের দলে যোগ দেয় নি। আপনার কি নিজ দলের প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা নির্ধারণ করছেন, অন্য দলের প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে মুসলিমদের রক্ত ঝরাচ্ছেন ও তাঁদের হত্যা করছেন? আপনাদের বিদআ আর মনগড়া মুক্তির ভিত্তিতে আর কতোগুলো মুসলিম দলের বিরুদ্ধে আপনারা যুদ্ধ করতে থাকবেন? আর কতো মুসলিম রক্ত আপনারা ঝরাবেন? আলজেরিয়ার জিআইএ-র দৃষ্টান্ত থেকে কি আপনারা কোনই শিক্ষা গ্রহণ করবেন না? আপনারা কি দেখেন নি কিভাবে গুলুহ তাদের ভেতর প্রবেশ করছিল, কিভাবে এই গুলুহ-র প্রসার ঘটেছিল এবং তা তাদেরকে পরিবর্তিত করে ফেলেছিল? এবং শেষ পর্যন্ত কিভাবে গুলুহ তাদেরকে ধ্বংসে নিপতিত করেছিল? অথচ সে সময় আলজেরিয়া জিহাদের জন্য একটি উর্বর ভূমি ছিল, এবং জিহাদের সফলতার জন্য প্রয়জনীয় সকল উপাদান সেখানে বিদ্যমান ছিল, এবং জিহাদের প্রতি মুসলিমদের বিপুল সমর্থনও ছিল, কিন্তু এসব কিছু থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত পরিণতি হয়েছিল ধ্বংস ও ব্যর্থতা।

অতএব নিজেদের সংশোধন করুন। কারণ এই দুনিয়া একটা সফর ছাড়া আর কিছুই না আর আখিরাতে আমাদের সকলকে মহান আল্লাহর সামনে দাড়াতে হবে হিসাব-নিকাশের জন্য। যারা এই দলের বিচ্যুতি উপলব্ধি করার পর তাদের ত্যাগ করেছেন, তাঁদেরকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। আমরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাই সাম্প্রতিক বিবৃতির মাধ্যমে জামাতুল বাগদাদীর মানহাজ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হবার পর, এই দলকে ত্যাগ করার জন্য। আমরা আল্লাহর কাছে দু’আ করি আমাদের ও তাঁদেরকে [যারা ভুল বুঝে ফিরে এসেছেন] সত্য, হিদায়াহ, সাফল্যের ও কল্যাণের উপর দৃঢ় রাখতে।

হে আল্লাহ, এই উম্মাহর জন্য সঠিক হিদায়েতের পথ সুস্পষ্ট করে দিন, যার মাধ্যমে যারা আপনার আনুগত্য করে তাঁরা সম্মানিত ও শক্তিশালী হবে, আর যারা আপনার অবাধ্য তাঁরা অসম্মানিত ও অপমানিত হবে। হে আল্লাহ, আপনি মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করে দিন, যারা মুসলিমদের মধ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে দিন, এবং তাঁদেরকে আপনার কাছে কল্যাণময় প্রত্যাবর্তন দান করুন। সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ-র জন্য।

আল্লাহর নাবী বলেছেন,

যে কোন মুসলিমের হত্যায় সহযোগিতা করে,

যদি অর্ধেক শব্দের দ্বারাও কেউ এই কাজে

সহায়তা করে, তবে সে আল্লাহর মুখোমুখি

হবে, সেই শব্দ তার দুচোখের মাঝে লেখা

অবস্থায়, আর আল্লাহর রাহমাহ পাবার কোন

আশাই তার নেই।

(ইবনে মাজাহ)

🟩🟩🟩🟩🟩🟩🟩🟩🟩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − eighteen =

Check Also
Close
Back to top button