উম্মাহর প্রতি উদাত্ত আহ্বানঃ ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন! কুনূতে নাযেলা পাঠ করুন!!
উম্মাহর প্রতি উদাত্ত আহ্বানঃ
ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন! কুনূতে নাযেলা পাঠ করুন!!
বিপদ-আপদের সময় বিশেষ করে মুসলিমদের উপর কাফেরদের নির্যাতন কিংবা আক্রমণের সময় কুনুতে নাযেলা পড়া নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ সুন্নাহ। কুরাইশের মুশরিকরা মক্কার যেসকল দুর্বল মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালাতো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূতে নাযেলা পড়ে তাঁদের মুক্তির জন্য দোয়া করতেন এবং অত্যাচারী কাফেরদের উপর বদদোয়া করতেন। বী’রে মাউনার ঘটনায় মুশরিকরা সত্তরজন ক্বারীকে শহীদ করলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমাস পর্যন্ত ফজরের নামাযে কুনুতে নাযেলা পড়ে তাদের জন্য বদদোয়া করেন।-সহীহ বুখারী: ২/২৬, ৫/১০৪ হাদীস নং: ১০০৬, ৪০৮৮ (দারু তাওকিন নাজাহ); সহীহ মুসলিম: ১/৪৬৬-৪৬৮ হাদীস নং: ৬৭৫-৬৭৭ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস)
বর্তমানে ইসরাইল ফিলিস্তিনের মুসলিমদের উপর যে নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে তা সকলেরই জানা। ইসরাইলের অব্যাহত বোমা বর্ষণে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। এতে লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়েছে। অবরুদ্ধ গাজাবাসী খাদ্য, পানি ও জ্বালানি সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
মুসলিমরা পরস্পর একদেহের ন্যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
“পরস্পর ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতায়; মুমিনদের অবস্থা একটি দেহের মতো। যার একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে গোটা দেহ তার জন্য বিনিদ্র ও জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ে।” -সহীহ বুখারী: ৮/১০ হাদীস নং: ৬০১১, সহীহ মুসলিম: ৪/১৯৯৯ হাদীস নং: ২৫৮৬
অপর হাদীসে ইরশাদ করেছেন,
“এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে না তার উপর জুলুম করতে পারে, না তাকে জুলমের সামনে অসহায় ছেড়ে দিতে পারে।” -সহীহ বুখারী: ৩/১২৮ হাদীস নং: ২৪৪২; সহীহ মুসলিম: ৪/১৯৯৬ হাদীস নং: ২৫৮০
এ অবস্থায় সামর্থ্য অনুযায়ী বিশ্বের অন্যান্য মজলুম মুসলিমদের মতো ফিলিস্তিনিদের প্রতিও সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ। সকল ফুকাহায়ে কেরাম এবিষয়ে একমত। বস্তুগত সহযোগিতার মতো তাঁদের জন্য ব্যথিত হওয়া, তাঁদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা, জুলুমের প্রতিবাদ করা, মজলুমদের মুক্তির জন্য দোয়া করা এবং জালিমদের জন্য বদদোয়া করাও এই ফরজের ন্যূনতম অংশ।
তাই সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁদের প্রতি সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য নারী পুরুষ নির্বিশেষে মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্যের প্রতি বিনীত নিবেদন জানাচ্ছি। অক্ষমতার কারণে কেউ যদি সকল প্রকার সহযোগিতা নাও করতে পারি, অন্তত তাঁদের জন্য দু’রাকাত নামায পড়ে দু’ফোঁটা অশ্রু ফেলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দরবারে একটু দোয়া তো আমরা সকলেই করতে পারি। ইনশাআল্লাহ এর বরকতে আল্লাহ তায়ালা ফিলিস্তিনের মুসলিমদের দু:খ-কষ্ট লাঘব করবেন এবং মুজাহিদদের বিজয় দান করবেন। মুজাহিদদের বিজয়ে সাধারণ মুসলিমদের দোয়ারও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। হাদীসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পর কাফেরদের উপর আক্রমণ না করলে জোহর পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর যুদ্ধ শুরু করতেন, যেন জোহরের নামাযে মুসলিমরা মুজাহিদদের জন্য দোয়া করেন এবং তাঁদের দোয়ার কল্যাণে আল্লাহ মুজাহিদদের বিজয় দান করেন।-সহীহ বুখারী: ৪/৯৭ হাদীস নং: ৩১৬০; জামে তিরমিযী: ৪/১৫৯, ১৬০ হাদীস নং: ১৬১২, ১৬১৩ (দারুল গরবিল ইসলামী); ফাতহুল বারী: ৬/১২০ (দারুল ফিকর)
তাই আমরা সকল মুসলিমের প্রতি বিশ্বের সকল মজলুম ও মুজাহিদের জন্য ব্যক্তিগত দোয়ার পাশাপাশি ফজরের জামাতে কুনূতে নাযেলা পাঠের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। কুনূতে নাযেলার এখনই মোক্ষম সময়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন। উম্মাহকে বিজয় দান করুন। আমীন।
-আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৭-০৩-১৪৪৫ হি.
১৩-১০-২০২৩ ঈ.
(সুত্রঃ ফাতওয়া.ওআরজি, আল-লাজনাতুশ শরিয়াহ লিদ দাওয়াতি ওয়ান নুসরাহ)