অডিও ও ভিডিওআর্কাইভআল-হিকমাহ মিডিয়ানির্বাচিতবার্তা ও বিবৃতিবার্তা ও বিবৃতি [আল হিকমাহ]

জাযিরাতুল আরবের একদল মুজাহিদের লিখনিতে- সৈনিকদের সমস্যাবলী ও তা থেকে উত্তরণের দিকনির্দেশনা

مؤسسة الحكمة
আল হিকমাহ মিডিয়া
Al-Hikmah Media

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled

آفات الجند
لمجموعة من مجاهدي جزيرة العرب (رحمهم الله)

জাযিরাতুল আরবের একদল মুজাহিদের লিখনিতে-
সৈনিকদের সমস্যাবলী ও তা থেকে উত্তরণের দিকনির্দেশনা

The problems of the soldiers and the direction to overcome that

 

 

للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading

লিংক-১ : https://justpaste.it/soinikder_somossaboli
লিংক-২ : https://mediagram.me/bc5fd4fe592dd637
লিংক-৩ : https://noteshare.id/HbrvAVW
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20220329…er_somossaboli
লিংক-৫ : https://web.archive.org/web/20220329…5fd4fe592dd637
লিংক-৬ : https://web.archive.org/web/20220329…are.id/HbrvAVW

روابط بي دي اب
PDF (823 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৮২৩ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/nEapAoD8KD8gboj
লিংক-২ : https://archive.org/download/soinikder-somossaboli-update/SoinikderSomossaboli.pdf
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/d7t7k4e1a990db2ed4c099ff88146d0451e1c
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=b8q8g5v4b3
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/73bcf4ba-b987-416a-bc9c-9689ef63d795/9157e813ca8002c6cfd82d2d576aa0d8dc28f440e3b6821fdd599da239878ff2
লিংক-৬ : https://f005.backblazeb2.com/file/aroberekdolmujahider/SoinikderSomossaboli.pdf

روابط ورد
Word (515 KB)
ওয়ার্ড [৫১৫ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/CDDDPCJS9qK2XQH
লিংক-২ : https://archive.org/download/soinikder-somossaboli-update/SoinikderSomossaboli.docx
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/d7t7kda3bbf68ecae4977958621c319a89bcb
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=f9n6h7b7g5
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/1bfcf0da-1189-41fe-ac85-3d5f1c08af2a/7be674d2100fa7acbe03bd8cacaf2043e7749a95424c38b52b3e2696446811c1
লিংক-৬ : https://f005.backblazeb2.com/file/aroberekdolmujahider/SoinikderSomossaboli.docx

روابط الغلاف- ١
book Banner [1 MB] বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [১ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/2JYjbNQnsRkJY3o
লিংক-২ : https://archive.org/download/soinikder-somossaboli-update/SoinikderSomossaboli%20Cover.jpg
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/d7t7kbbd21868ad3a4048a0efa8ebe8ae0ffd
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=q1v5m7w2k2
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/90dc5d60-443d-4f09-88ad-46b18163e055/0738dd2a69c4a21a360e392854fefc0de88cf3d652dd0457d2700b3decb3719a
লিংক-৬ : https://f005.backblazeb2.com/file/aroberekdolmujahider/SoinikderSomossaboli+Cover.jpg

روابط الغلاف- ٢
Banner [1.6 MB] ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.৬ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/z5FNNBZft54LsXk
লিংক-২ : https://archive.org/download/soinikder-somossaboli-update/SoinikderSomossaboli%20WebBanner.jpg
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/d7t7kb48c4b7a4b004453a87db06eafd8d61e
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=w3n3k1e0i1
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/d046ee90-5c69-4660-9fc0-3c85c7a12bd5/2a82128731a6e19aba5a52dd79ce21c787855aff09288415dfd99e8f3cc9c804
লিংক-৬ : https://f005.backblazeb2.com/file/aroberekdolmujahider/SoinikderSomossaboli+WebBanner.jpg

*****

 

 

জাযিরাতুল আরবের একদল মুজাহিদের লিখনিতে

সৈনিকদে সমস্যাবলী ও তা থেকে উত্তরণের দিকনির্দেশনা

অনুবাদপ্রকাশনা

 

মূল প্রকাশনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য

মূল নাম:

آفات الجند

لمجموعة من مجاهدي جزيرة العرب (رحمهم الله)

পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩২ পৃষ্ঠা

প্রকাশের তারিখ: সফর ১৪৪৩ হিজরী (১ম প্রকাশ)

প্রকাশক: বাইতুল মাকদিস

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ভূমিকা

হামদ ও সালাতের পর

হে আমার প্রশিক্ষক ভাই, এখানে আমি আপনার জন্য কিছু কথা তুলে ধরেছি। এর আলোকে আপনি প্রশিক্ষণার্থী ভাইদের ভুল ত্রুটি শুধরে দিতে পারবেআজকের দিনে আপনি, সেসকল ভাইদের জন্য একজন অভিভাবকের ভূমিকাআছেন, আগামীকাল যারা এই উম্মাহর কল্যাণে তাওহীদ এবং হক্বের ঝাণ্ডা হাতে নিবে।

তাই আপনার দায়িত্ব অনেক ভারী। আপনি আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন অক্ষম হয়ে পড়বেন না, আল্লাহর সাহায্য আপনার সাথে আছে। আর আমাদের এই রিসালাটিআপনার চলার পথে পাথেয় যোগাবে। তাই সৈনিকদের বিষয়ে যখনই আপনি কোন সমস্যার সম্মুখীন হবেন, তখন এই রিসালার পৃষ্ঠা উল্টাবেএখানে কোথাও না কোথাও আপনি সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবে

এখানকার উল্লেখিত কোন সমাধান যদি আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে তা আপনি অকপটে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন কবি বলেন,

আমি খারাপ সম্পর্কে জেনেছি খারাপ করার জন্য নয়, বরং তা থেকে বাচাঁর জন্য কারণ যে খারাপ ভালোর পার্থক্য জানেনা, অচিরেই সে খারাপে আক্রান্ত হবে

তাই সকল প্রকার অনিষ্টের বিষয়ে আপনাকে সচেতন হতে হবে। কারণ প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকারই শ্রেয়।

যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি যাতে রিসালাটির কলেবর ছোট হয় এবং পাঠকের জন্য সহজ হয়। কিছু কিছু যায়গায় আরো বিস্তারিত জানার জন্য বড় বড় কিতাবের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে।

সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা আদায় করছি।

*******

 

প্রথম সমস্যা- না শোনা ও আনুগত্য না করা।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- কোন সৈনিক কর্তৃক নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করা।

২- নির্দেশ পালনে বিলম্ব করা।

৩- নির্দেশ পালনে অলসতা ও অনাগ্রহ দেখানো।

৪- আমীরের নির্দেশের অবজ্ঞা করা। তার উপর বেশি বেশি অভিযোগ তোলা তার সিদ্ধান্তের বার বার সমালোচনা করা

৫- নির্দেশ পালনে নির্ধারিত পন্থার ব্যতিক্রম করা। যেমন গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে বেধে দেওয়া গতি ক্রস করা, এক যায়গা থেকে অন্যত্র অনুমতি ছাড়াই চলে যাওয়া ইত্যাদি

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- হতে পারে নির্দেশ পালনে তার শারীরিক কোন অক্ষমতা আছে। উদাহরণস্বরূপ– দীর্ঘক্ষণ মাটি খননের কাজ করার কারণে তার পিঠে ব্যথা, শরীর দুর্বল ইত্যাদি।

২- আমীরের নির্দেশগুলো তার কাছে গুরুত্বহীন মনে হয়।

৩- আমীরের উদ্দেশ্য বুঝতে সে ভুল করেছে।

৪- আমীরের আনুগত্য বিষয়ক শরীয়তের নির্দেশ পালনে গুরুত্বহীনতা। মনের চাহিদা ও ব্যক্তিগত খেয়াল-খুশিকে প্রাধান্য দেওয়া। কারণ হতে পারে, আমীর তার থেকে বয়সে ছোট বা ইলমে কম।

সমাধান পদ্ধতি:

১- আমীরের জন্য আবশ্যক হলো, কোন সৈনিককে তার সামর্থ্যের বাহিরে কোন দায়িত্ব চাপিয়ে না দেওয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا

অর্থঃ আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না(সূরা বাকারা ২: ২৮৬)

প্রসিদ্ধ উক্তি হল যদি আপনি চা আপনার আনুগত্য করা হোক, তাহলে এমন নির্দেশ দিন যা পালন করা সম্ভব।

২- ইসলামে সৈনিকের পরিচয় সম্পর্কে তাকে বুঝানো। আমীরের আনুগত্য ও তার গুরুত্ব সম্পর্কে তাকে সচেতন করা। ফলাফল যা-ই হোক আমীরের নির্দেশ পালন করা আবশ্যক।

قال النبي صلى الله عليه وسلم لحذيفة رضي الله عنه في غزوة الأحزاب:”اذهب فأتني بخبر القوم ولا تذعرهم علي”، قال: فمضيت حتى أتيتهم فإذا أبو سفيان يصلي ظهره بالنار، فوضعت سهمي في كبد قوسي وأردت أن أرميه، ثم ذكرت قول رسول الله صلى الله عليه وسلم “لا تذعرهم علي”، ولو رميته لأصبته، قال: فرجعت.

অর্থঃ গাযওয়াতুল আহযাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, যাও, শত্রুদের খবর নিয়ে আসো। তাদেরকে আমার ব্যাপারে ভীত করো না

আমি তাদের কাছে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, আবু সুফিয়ান আগুনের তাপ নিচ্ছে। আমি ধনুকের মাথায় তীর লাগালাম। তার দিকে তীর ছোড়ার ইচ্ছা করলাম। তখনই রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাটি মনে পড়লো- আমার ব্যাপারে তাদেরকে ভীত করোনাআমি খুব ভালোভাবেই তাকে বধ করতে পারতাম। কিন্তু রাসূলের এই নির্দেশ স্মরণ হওয়ায় আর কিছু করলাম না। তাই ফিরে আসলাম।” (মুসলিম১৭৮৮)

৩- যে নির্দেশ সৈনিককে দেওয়া হয় তা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া। এই নীতি সামনে রাখা শোন, বোঝ, তারপর আমল করো

৪- আমীরের আনুগত্যের গুরুত্ব বুঝানো। তার বর্ণ বা বয়সের দিকে না তাকানো।

«إِنَّ خَلِيلِي أَوْصَانِي أَنْ أَسْمَعَ وَأُطِيعَ، وَإِنْ كَانَ عَبْدًا مُجَدَّعَ الْأَطْرَافِ،

অর্থঃ হযরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার খলিল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে অসিয়ত করেছেন যে, আমি যেন শুনি এবং মেনে নেই। যদিও আমার আমীর হাত পা কর্তিত হয় (সহীহ মুসলিম – ৬৪৮)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

‏ “‏ مَنْ أَهَانَ سُلْطَانَ اللَّهِ فِي الأَرْضِ أَهَانَهُ اللَّهُ ‏”‏ ‏.‏

অর্থঃ দুনিয়াতে আল্লাহ্ তা’আলার নিযুক্ত শাসককে যে ব্যক্তি অপমান করবে, আল্লাহ্ তা’আলা তাকে অপমান করবেন। (তিরমিজি – ২২২৪)

৫- সৈনিকদেরকে উপদেশ দেওয়া তারা যেন আমীরের প্রতিটি নির্দেশ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে এবং তা সচেতনতার সাথে পালন করে এক্ষেত্রে কোন অলসতা ও উদাসীনতার পরিচয় না দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَا يَحْيَىٰ خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ ۖ وَآتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا

অর্থঃ “হে ইয়াহইয়া দৃঢ়তার সাথে এই গ্রন্থ ধারণ কর। আমি তাকে শৈশবেই বিচারবুদ্ধি দান করেছিলাম।” (সূরা মারয়াম ১৯:12)

দিকনির্দেশনা:

১- শরয়ী জিম্মাদারদের কর্তৃক সৈনিকদেরকে শোনা ও মানার গুরুত্ব সম্পর্কে উপদেশ দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

২- ‘ওয়াহাতুন জিহাদিয়্যাতুন’ বা জিহাদী উদ্যান বইয়ের – (وإن تطيعوا تهتدوا)

এই অধ্যায়টি অধ্যয়ন করা ফলপ্রসূ হবে।

৩- আমীরের সাথে সৈনিকদের আবশ্যকীয় করনীয় কি? এই অধ্যায়টিও পড়া ভালো হবে।

*******

দ্বিতীয় সমস্যা – নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- নিরাপত্তার নীতিমালা পালনে এমন অতিরঞ্জন করা যাতে মূল কাজই বন্ধ হয়ে যায়। যেমন; কোন এক সৈনিক মাইন গাড়ার কাজ থেকে একেবারে দূরে সরে যাওয়া এই আশংকায় যে, সামান্য ভুল হলে তা বিস্ফোরিত হতে পারে।

২- সাথীদের উপরে নিরাপত্তার ব্যাপারে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি করা। সামান্য ভুলেই তারা নিরাপত্তা বুঝেনা বলে সমালোচনা করতে থাকা।

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- আল্লাহর উপর ভরসা কম হওয়া। আসবাবের উপর ভরসা বেশি হওয়া

২- অন্তরে শত্রুর ব্যাপারে অধিক ভীতি লালন করা।

৩- শত্রুর প্রচার প্রচারণায় অনেক বেশি প্রভাবিত হওয়া।

৪- নিরাপত্তার বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনার ভুল বুঝা।

সমাধান পদ্ধতি:

১- নিরাপত্তার বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। এত বাড়াবাড়ি না করা যে, জিহাদ বন্ধ হয়ে যায়। এমন শিথিলতা না করা যে, মুজাহিদরা বিপদে পড়ে যায়।

২- সৈনিকদের হৃদয়ে শাহাদাতের তামান্না বপন করা। শাহাদাতের মুখোমুখি হবার ফযীলত বয়ান করা। শুহাদায়ে মুজাহিদীনদের বীরত্ব গাথা তুলে ধরা।

৩- এই হাদিসের মর্ম তুলে ধরা যে,

لَا يُغْنِي حَذَرٌ مِنْ قَدَرٍ

অর্থঃসতর্কতা কখনো তাকদীর খণ্ডন করতে পারেনা (মুসতাদরাকে হাকেম১৮১৩)

অনেক মুজাহিদ শাইখ নিরাপত্তার উপর চমৎকার গ্রন্থ রচনা করেছেন অথচ তাদের অনেকেই গ্রেফতারীর শিকার হয়েছেন।

৪- এই বিষয়ে পরিতুষ্ট থাকা যে, আমাদের দায়িত্ব হলোনিরাপত্তার উপকরণ গ্রহণ করা, হিফাজতকারী হলেন আল্লাহ তায়ালা।

৫- শত্রুদের ক্ষমতা ও শক্তির ব্যাপারে মিডিয়া কর্তৃক প্রচারিত তথ্যে প্রভাবিত না হওয়া। তাদের শক্তি যত বেশিই হোক না কেন, মুজাহিদদের মোকাবেলায় তা কোন কাজেই আসবেনাএই বিষয়টি মনের মধ্যে বদ্ধমূল করা।

*******

তৃতীয় সমস্যা – নিরাপত্তায় ঢিলেমি।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- নিরাপত্তা বিষয়ক দায়িত্বশীলের কথায় গুরুত্ব না দেওয়া। যেমন; এমন যায়গায় অস্ত্র নিয়ে বের হওয়া যেখানে অস্ত্র নিয়ে যাওয়া অনুমতি নেই

২- এমন যায়গায় একত্রিত হওয়া বা মিটিং করা যে যায়গা সহজেই শত্রুরা বেষ্টন করতে পারে।

৩- প্রয়োজন ছাড়াই সাধারণ সৈনিকদের মাঝে জামাআর গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি আলোচনা করা। যেমন; অমুক আমীর বর্তমানে অমুক স্থানে আছেন। অমুক দিন অমুক ব্যারাকের উপর হামলা করা হবে ইত্যাদি।

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- আমাদের ও শত্রুর মাঝে সংঘাতের বাস্তবতা ভালোভাবে না বুঝা। জামাআর সুরক্ষা এবং ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য যে সকল নিরাপত্তার আসবাব অবলম্বন করা হয় তার গুরুত্ব না বুঝা।

২- বিজয় এবং ক্ষমতা লাভ হয়ে গেলে নিরাপত্তার বিষয়গুলোর ব্যাপারে শিথিলতা করা। এক্ষেত্রে যুদ্ধের পর্যায়ক্রম ও তার ধারাবাহিকতার প্রতি লক্ষ্য না রাখা। অথচ যুদ্ধের পর্যায়ক্রম হলো, জয়পরাজয়। একদিন আপনার জয়, একদিন শত্রুর জয়।

৩- নিরাপত্তা বিষয়ে অজ্ঞতা। এটা না বুঝা যে, নিরাপত্তা বিষয়ে ঘাটতি মানে মুজাহিদদের পরাজয় এবং শত্রুর বিজয়।

৪- সাথীদের মাঝে পারস্পরিক ঝগড়ার কারণেও কখনো কখনো জামাআর নিরাপত্তা সমস্যা হতে পারে। কখনো তারা গোঁড়ামি এবং বিদ্বেষের বশে কারো ব্যাপারে এমন কিছু করে ফেলতে পারে, যা জামাআর নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটা

৫- সৈনিকদের মাঝে নিরাপত্তার কোর্স না হওয়ার কারণেও নিরাপত্তার বিষয়ে অসচেতনতা তৈরি হতে পারে

সমাধান পদ্ধতি:

১- নিরাপত্তার বিষয়ে অলসতার ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করা। এ বিষয়ে কোন গাফলতি হলে, তা ছাড় না দেওয়া।

২- সৈনিকদের মাঝে নিরাপত্তার গুরুত্ব তৈরি করার জন্য ধারাবাহিক কোর্স ও অন্যান্য প্রোগ্রাম চালু রাখা।

৩- নিরাপত্তার গাফলতির ব্যাপারে সতর্কতার পাশাপাশি মাঝে মাঝে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা।

৪- কাজে নতুন নিয়োগ দেওয়া ভাইদেরকে পুরাতন ভাইদের সাথে মিলিয়ে দেওয়া। যাতে নতুনরা পুরাতনদের থেকে এ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শিখে নিতে পারে।

৫- সৈনিকদের মাঝে নিরাপত্তার ঘাটতি হবার অন্যতম কারণ হলোদায়িত্ববোধের কমতি। তাই তাদের হৃদয়ে দায়িত্ববোধের অনুভূতি গেড়ে দিতে হবেআল্লাহ তায়ালা বলেন-

فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ ‎﴿٩٢﴾‏ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ

অর্থঃ “অতএব আপনার পালনকর্তার কসম, আমি অবশ্যই ওদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব (92) ওদের কাজকর্ম সম্পর্কে। (৯৩) (সূরা হিজর ১৫:৯২৯৩)

দিকনির্দেশনা:

প্রিয় ভাই! এ বিষয়ে আপনি ‘ওয়াহাতুন জিহাদিয়্যাতুন’ বা “জিহাদী উদ্যান” বইয়ের যখন আপনি আনন্দিত হতে চান এই শিরোনামটি দেখে নিতে পারেন।

২- শাইখ আবু যুবাইদার লেখা নিরাপত্তার বিষয়ে গাফলতির সমাধান বিষয়ক লেখাটা দেখা যেতে পারে।

*******

চতুর্থ সমস্যা – দায়িত্ব পালনে অবহেলা।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- কাজের ক্ষেত্রে অন্যের উপর নির্ভর করা।

২- কোন ভুল ধারণা বশত আমীরদের কল্যাণকামীতা থেকে বিরত থাকা।

৩- কোন সৈনিকের কাছে শরঈ কিংবা সামরিক যে জ্ঞান আছে, তা কোন কারণে গোপন রাখা

৪- কোন সৈনিক এটা মনে করা যে, সব দায়িত্ব শুধু আমীরের উপর বর্তায়।

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- নিজের উপর আস্থাহীনতা।

২- আমীরদের সাথে নসীহামূলক কথা বলতে ভয় পাওয়া।

৩- দায়িত্ব পালন আর বিনয় প্রদর্শনের বিষয়টি গুলিয়ে ফেলা।

৪- দায়িত্ব শুধুমাত্র আমীরের উপর নয়, বরং সবার উপর’এ বিষয়টি ভুলে যাওয়া।

সমাধান পদ্ধতি:

১- প্রতিটি সৈনিকের মনে আত্মবিশ্বাসের চারা বপন করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

وَاسْتَعِنْ بِاللهِ وَلَا تَعْجَزْ

অর্থঃ আল্লাহর থেকে সাহায্য নাও। অক্ষম হয়ে পড়ো না (সহীহ মুসলিম২৬৬৪)

কবি বলেন,

কোন বিষয় যদি বুঝে থাকো, তাহলে প্রস্তুতি নিতে সমস্যা নেই। যদি আত্মবিশ্বাস জাগ্রত থাকে, তাহলে সিংহের সাথে চলতেও সমস্যা নেই

২- আমীরকে নসীহা করার বিষয়ে সৈনিকদের উদ্বুদ্ধ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

عَنْ أَبِي رُقَيَّةَ تَمِيمِ بْنِ أَوْسٍ الدَّارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه و سلم قَالَ: “الدِّينُ النَّصِيحَةُ. قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ لِلَّهِ، وَلِكِتَابِهِ، وَلِرَسُولِهِ، وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ” 

অর্থঃ আবু রুকাইয়্যা তামীম ইবন আওস আদ্-দারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ দ্বীন হচ্ছে নসিহাআমরা জিজ্ঞেস করলামঃ কার জন্য? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম নেতাদের এবং সকল মুসলিমের জন্য। [মুসলিমঃ ৫৫]

৩- এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করা যে, ইখলাস এবং তাওয়াজু বা বিনয়ের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। কোন কাজে যৌথ অংশগ্রহণ এবং দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করতে কোন সমস্যা নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদিস স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে,

قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَتَمَ عِلْمًا مِمَّا يَنْفَعُ اللَّهُ بِهِ فِي أَمْرِ النَّاسِ أَمْرِ الدِّينِ، أَلْجَمَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنَ النَّارِ»

অর্থঃ যেই ব্যক্তি মানুষের এবং দ্বীনের উপকারে আসবে এমন কোন ইলম লুকিয়ে রাখলো, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরিধান করাবেন। (ইবনে মাজাহ২৬৫)1

৪- সৈনিকদেরকে বুঝানো যে, কোন জামাতে কোন দায়িত্ব একক হয়না।

দিকনির্দেশনা:

১- প্রশিক্ষকের উচিত হলো, মুজাহিদদেরকে আল্লাহর নির্দেশ পালনে সাওয়াব ও ফায়েদা সম্পর্কে সচেতন করা।

২- ‘ওয়াহাতুন জিহাদিয়্যাতুন’ বা “জিহাদী উদ্যান” বইটির – আমার সাথে ভাবো শিরোনামটি পড়তে দেওয়া।

*******

পঞ্চম সমস্যা –যেকোনো সংবাদ প্রচার করা ও সেনাদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- সৈনিকদের মাঝে ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে যাওয়া।

২- সৈনিকদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি, অবিশ্বাস এবং আস্থাহীনতার বিস্তার ঘটা।

৩- সৈনিকদের মাঝে উত্তম গুণাবলী হ্রাস পেয়ে মানসিক হীনমন্যতা প্রকাশ পাওয়া।

৪- শত্রুকে বড় করে দেখা এবং তাদের ব্যাপারে অতিভীতি বৃদ্ধি পাওয়া।

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাওয়া। ভুয়া সংবাদ প্রচারমাধ্যম তথা মিথ্যা মিডিয়ার উপর নির্ভর করা। চাই তা প্রিন্ট মিডিয়া হোক অথবা অডিও কিংবা ভিডিও

২- কোন সদস্যের ব্যাপারে যা কানে আসে তা-ই বিশ্বাস করা। মুমিন ভাইদের ব্যাপারে সুধারণার শিষ্টাচার কমে যাওয়া। কোন সংবাদ যাচাই না করেই প্রচার করে দেবার বিষয়ে শরীয়তের কঠোরতার বিষয়টি সামনে না থাকা।

৩- শত্রুর শক্তিমত্তা ও সামর্থ্যের ব্যাপারে মিডিয়ায় যা প্রচার হয়, তাতে প্রভাবিত হওয়া।

৪- শত্রুর শক্তির ব্যাপারে প্রচারিত তথ্যাবলীর বেশিরভাগই ভুয়া ও মিথ্যা এই বিষয়টি মাথায় না থাকা।

৫- অন্যদের সংবাদ জানা এবং এসব নিয়ে মেতে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা। এমনিভাবে এমন সব অবাস্তব ও অবিশ্বাস্য ঘটনাবলীর মাঝে ডুবে থাকা যার কোন বাস্তব অস্তিত্বই নেই। অনর্থক কথা-বার্তায় লিপ্ত থেকে নিজের গুরুত্বপূর্ণ সময় ধ্বংস করা।

সমাধান পদ্ধতি:

মিথ্যা, ভুয়া ও অনির্ভরযোগ্য সংবাদ প্রচারের ব্যাপারে শরীয়তের সতর্কবার্তাগুলো সামনে রাখা। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ

অর্থঃ “হে মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।” (সূরা হুজুরাত ৪৯:৬)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

وَعَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ كَفى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

অর্থঃ আবূ হুরায়রাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কোন লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (সত্যতা যাচাই না করে) তা-ই বলে বেড়ায়। (মুসলিম ৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৫৬১৭)

২- তাদের মাঝে ইসলামের এ নীতি বদ্ধমূল করে দেয়া যে, প্রমাণ ছাড়া কারো বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়না। সেইসাথে এই ধারণা বদ্ধমূল করা যে, একজন মুসলিম স্বভাবগতভাবে নির্দোষ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

لَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَذَا إِفْكٌ مُّبِينٌ

অর্থঃ “তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?” (সুরা নুর ২৪:12)

৩- যেকোনো খবর বা নতুন কথা ছড়িয়ে গেলে প্রথমেই দায়িত্বশীল বা আমীরের কাছে পৌঁছাতে হবে, সাথীদের মাঝে এই মনোভাব তৈরি করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَإِذَا جَاءهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُواْ بِهِ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَى أُوْلِي الأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ وَلَوْلاَ فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لاَتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلاَّ قَلِيلاً

অর্থঃ “আর যখন তাদের কছে পৌঁছে কোন সংবাদ শান্তি-সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের শাসকদের পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মত। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপর বিদ্যমান না থাকত তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করত!” (সুরা নিসা ৪:৮৩)

৪- আল্লাহ তায়ালার উপর আস্থা এবং তাওয়াক্কুলের বীজ বপন করা। এই বিশ্বাস স্থাপন করা যে, শত্রুর শক্তি কখনোই আল্লাহ তায়ালার শক্তির বরাবর নয়।

বেশিরভাগ সময় তাদের শক্তি তাদের কোন কাজেই আসেনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

لَن يَضُرُّوكُمْ إِلاَّ أَذًى وَإِن يُقَاتِلُوكُمْ يُوَلُّوكُمُ الأَدُبَارَ ثُمَّ لاَ يُنصَرُونَ

অর্থঃ “যৎসামান্য কষ্ট দেয়া ছাড়া তারা তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি তারা তোমাদের সাথে লড়াই করে, তাহলে তারা পশ্চাদপসরণ করবে। অতঃপর তাদের সাহায্য করা হবে না।” (সুরা ইমরান ৩:১১১)

৫- সৈনিকদেরকে ইলমি এবং আমলী প্রোগ্রামে ব্যস্ত রাখা। যাতে অনর্থক কথোপকথন থেকে তারা বেঁচে থাকতে পারে। এই বিষয়ে তাকিদ দেওয়া যে, ছড়িয়ে যাওয়া ভুয়া কথার একমাত্র চিকিৎসা হলো, এর বিপরীত বাস্তবতার দিকে দৃষ্টি দেওয়া যারা এই জাতীয় ভুল কথা ছড়ায়, তাদের সব কিছু পেছনে ছুড়ে মারা।

দিকনির্দেশনা:

১- ভুল সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার কারণে সৈনিকদের মাঝে যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় তখন করনীয় হলোপ্রশিক্ষণার্থীদেরকে কোন না কোন কাজে ব্যস্ত রাখা

*******

ষষ্ঠ সমস্যা -গুনাহর বিষয়ে ভ্রুক্ষেপহীনতা।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- ঈমানের দুর্বলতা এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হওয়া

২- শরঈ নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়া। যেমন গীবত, চোগলখুরী, কুধারণা ইত্যাদি।

৩- আল্লাহর শাআঈরসমুহের অবমূল্যায়ন করা। যেমন ফ্লোরের উপর কোরআন রাখা, ইসলামী লেখা বিশিষ্ট পত্রিকার উপর খাবার রাখা, আল্লাহর নাম লেখা বিশিষ্ট কাগজ ময়লা যায়গায় ফেলা ইত্যাদি

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- নেক আমলের কমতি। তাকওয়ার উপর আমল না করে সকল কাজে শুধু বৈধতা তালাশ করা।

২- ঈমানী তরবিয়তের দুর্বলতাশরঈ নিষিদ্ধ কাজে সহজেই লিপ্ত হবার মানসিকতা।

৩- অলসতা, গুরুত্বহীনতা এবং শরীয়তের সীমা জানতে অনাগ্রহ।

সমাধান পদ্ধতি:

১- অধিক নফল আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। যেমন রোজা, কিয়ামুল লাইল, কোরআন তিলাওয়াত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে কুদসীতে ইরশাদ করেন

وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ،

অর্থঃ “আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, এমনকি এক সময় আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি।” (বুখারী৬৫০২)

এমনিভাবে চলাফেরায় শুধু বৈধ বিষয়াদী তালাশ না করে তাকওয়ার উপর চলার চেষ্টা করা। খাবার দাবারে অতিরঞ্জন না করা। অনর্থক কথা থেকে বেঁচে থাকা।

হাসি তামাশার ছলে অনর্থক কথা বলা থেকে বিরত থাকাঅর্থহীন নাশিদ ও ভিডিও দেখা থেকে বিরত থাকা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

وَلَا تُكْثِرِ الضَّحِكَ، فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكِ تُمِيتُ القَلْبَ

অর্থঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কম হাসো, কেননা অধিক হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায়।” (তিরমিযী2305)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনর্থক কথা বার্তা এবং অধিক প্রশ্ন করা ও মাল নষ্ট করতে নিষেধ করেছেন।

حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ اللَّهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلاَثًا وَيَكْرَهُ لَكُمْ ثَلاَثًا فَيَرْضَى لَكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَأَنْ تَعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُوا وَيَكْرَهُ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ ‏”‏ ‏.‏

অর্থঃ আবূ হুরাইরাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা তিনটি কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটি কাজ অপছন্দ করেন। তোমাদের জন্য তিনি যা পছন্দ করেন, তা হলঃ ১. তোমরা তাঁরই ‘ইবাদাত করবে, ২. তাঁর সঙ্গে কিছুই রীক করবেনা এবং ৩. তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে ধারণ করবে ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। আর যে সকল বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেনঃ ১. নিরর্থক কথাবার্তা বলা, ২. অধিক প্রশ্ন করা এবং ৩. সম্পদ বিনষ্ট করা। (মুসলিম – ৪৩৩২)

২- গুনাহের ক্ষতির প্রভাব সম্পর্কে ভীত থাকা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ، فَإِنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُلِ حَتَّى يُهْلِكْنَهُ

অর্থঃ তোমরা তুচ্ছ গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকো। কারণ এই গুনাহ গুলো কারো মাঝে জমা হতে হতে তাকে ধ্বংস করে ফেলে।” (মুসনাদে আহমদ৩৮১৭)

কেউ যেন এটা মনে না করে যে, সে তো আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ, তাই গুনাহর কারণে তার কোন ক্ষতি হবেনা। তাকে স্মরণ করাতে হবে সেই হাদিসের কথা, সর্বপ্রথম যাদেরকে দিয়ে জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হবে, তাদের একজন হলো শহীদ।

৩- সৈনিকদেরকে বুঝানো এবং উপদেশ দেওয়া যে, শাআঈরুল্লাহ এর সম্মান মূলত অন্তরে তাকওয়া বিদ্যমান থাকারই আলামত। আর তাকওয়ার মাধ্যমেই মূলত মুজাহিদ তার শত্রুদের উপর বিজয় লাভ করে থাকে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

ذَٰلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ

অর্থঃ “আর যে, আল্লাহর শাআঈর সমুহের সম্মান করে, তো এটা হলো অন্তরের তাকওয়ার ফসল।” (সুরা হজ্জ ২২:৩২)

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ

অর্থঃ “হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।” (সূরা মুহাম্মদ ৪৭:৭)

*******

সপ্তম সমস্যা -জামাআর সাধারণ নিয়মের অনুসরণের ক্ষেত্রে গাফলতি করা।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- জামাআর সাধারণ নিয়ম কানুনের পরিপন্থী চিন্তা ও মনোভাব লালন করা।

২- প্রাথমিক সৈনিকদের জন্য আমীরদের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হওয়া। তাদের নির্দেশগুলোকে অনুপযোগী মনে করা।

৩- এমন কোন কাজ করা যা জামাআর কল্যাণ পরিপন্থী যেমন; কোন কাবায়েলের (উপজাতীয় গোত্র) সাথে বা জামাআর সাথে অসময়ে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া।

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- জামাআর বিরোধিতার ভয়াবহতা অনুধাবন না করা।

২- জামাআর নিয়মকানুন সম্পর্কে উমারাদেরকে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত না হওয়া।

৩- কোন সৈনিকের দ্বারা অপ্রয়োজনীয় কাজে লিপ্ত হওয়া। জামাআর মতামত এবং তার উমারাদের মতামতের ঊর্ধ্বে উঠে ব্যক্তিগত মতামতকে জামাআর উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করা।

সমাধান পদ্ধতি:

১- জামাআর সাধারণ নিয়মকানুনে মুজাহিদদের আত্মস্থ করে তোলা। এটা মেনে নেবার গুরুত্ব বুঝিয়ে দেওয়া। তাদেরকে এটা বুঝানো যে, জামাআর রায় অনুযায়ী আমল করলে যদি ভুলও হয়, তবুও তা ব্যক্তিগত মতানুযায়ী আমলের চেয়ে উত্তম।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُم بُنيَانٌ مَّرْصُوصٌ

অর্থঃ “আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।” (সুরা সফ ৬১:)

অপর আয়াতে বলেন-

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا

অর্থঃ “আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (সূরা আল ইমরান ৩:১০৩)

অপর আয়াতে বলেন-

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ

অর্থঃ “আর আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে।” (সূরা আনফাল ৮:৪৬)

২- সৈনিকদের এটা বুঝানো যে, একটি জামাআ একজন আমীর মজলিসে শুরার অধীনে চলায় উত্তম। জামা সামগ্রিক কাজগুলোকে সামরিক বিভাগ, প্রচারণা বিভাগ দাওয়া বিভাগের অধীনে বিভাগভিত্তিক পদ্ধতিতে পরিচালনা করা অনেক সহজ। যখন তখন নতুন নতুন মতামত বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পলিসির আলোকে চলা বহুমুখী ক্ষতি বয়ে আনে।

৪- জামাআর নীতি মেনে নেবার গুরুত্ব বুঝানো। তাদেরকে এটাও বুঝানো যে, অনেক সময় পরিস্থিতির বিবেচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজকেও বিলম্বিত করা হয়। যেমন; কোন অপরাধের কারণে কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়তো বর্তমানে আমীরের সাধ্যে আছে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তাকে শাস্তি দিলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই বিষয়টি সকল সৈনিকের মাথায় রাখা জামাআর ঐক্য ধরে রাখার জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়।

*******

অষ্টম সমস্যা – বিরোধ ও ঝগড়ায় জড়িয়ে যাওয়া।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- জামাআর সদস্যদের মাঝে ঝগড়া বিবাদ বাড়তে থাকা।

২- অপরের মত কবুল করতে না পারা। পুরো জামাআহকে নিজের মত মেনে নিতে পীড়াপীড়ি করা।

৩- মজলিসে অর্থহীন ঝগড়া বাড়তে থাকা।

৪- সদস্যদের মাঝে হিংসা বিদ্বেষ প্রকাশ পাওয়া।

৫- উমারাদের আনুগত্য থেকে সদস্যদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- নেতৃত্বের লোভ, সুখ্যাতির আগ্রহ।

২- মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোরতা করা। যার কারণে অন্যদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

৩- নিজের মতামতকেই উত্তম মনে করা। অন্যদের মতামতকে খাটো করা।

৪- অন্যদের প্রতি কুধারণা রাখা। যার ফলে তাদের মতামতকে উড়িয়ে দেওয়া।

৫- বয়সে বড়, অথবা জ্ঞান কিংবা সুনাম সুখ্যাতিতে বড় হবার কারণে আত্মঅহমিকায় ভোগা।

৬- পার্থিব স্বার্থের কারণে হিংসা বিদ্বেষে লিপ্ত হওয়া।

সমাধান পদ্ধতি:

১- নেতৃত্ব লাভের আগ্রহের ক্ষতি সম্পর্কিত কোরআন হাদিসের ভাষ্য তুলে ধরা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

وَعَنْهُ – رضي الله عنه – قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم -: «إِنَّكُمْ (1) سَتَحْرِصُونَ عَلَى الإِمَارَةِ، وَسَتَكُونُ نَدَامَةً يَوْمَ القِيَامَةِ، فَنِعْمَ المُرْضِعَةُ، وَبِئْسَتِ الفَاطِمَةُ» رَوَاهُ البُخَارِيُّ

অর্থঃ “আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নিশ্চয়ই নেতৃত্বের লোভ কর, অথচ ক্বিয়ামাতের দিন তা লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কত উত্তম দুগ্ধদায়িনী ও কত মন্দ দুগ্ধ পানে বাধা দানকারিনী (এটা) (অর্থাৎ এর প্রথম দিক দুগ্ধদানের মত তৃপ্তিকর ও পরিণাম দুধ ছাড়ানোর মত যন্ত্রণাদায়ক)।” (বুখারী – ৭১৪৮)

2- মতামত ব্যাক্তকরণ ও পর্যালোচনার সময় নম্রতা ও কোমলতা অবলম্বনে উৎসাহ দেওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: إِنَّ اللهَ تَعَالَى رَفِيْقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيُعْطِيْ عَلَى الرِّفْقِ مَا لَا يُعْطِيْ عَلَى الْعُنْفِ وَمَا لَا يُعْطِي عَلَى مَا سِوَاهُ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: قَالَ لِعَائِشَةَ: عَلَيْكِ بِالرِّفْقِ وَإِيَّاكِ وَالْعُنْفَ وَالْفُحْشَ إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُوْنُ فِيْ شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ وَلَا يُنْزَعُ مِنْ شَيْء إِلَّا شَانَهُ.

অর্থঃ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেন, ‘কোমলতা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা হতে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যাতে নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে পড়ে।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৮)

৩- সৈনিকদের মাঝে অন্যের মতামত মেনে নেবার সৎ স্বভাব তৈরি করা। অন্যের মতামত যত কাচাই মনে হোক, তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে শেখানো। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَاصْبِرُوا

অর্থঃ “আর আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবেআর তোমরা ধৈর্যধারণ কর।” (সূরা আনফাল ৮:৪৬)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

إِذَا رَأَيْتَ شُحًّا مُطَاعًا، وَهَوًى مُتَّبَعًا، وَدُنْيَا مُؤْثَرَةً، وَإِعْجَابَ كُلِّ ذِي رَأْيٍ بِرَأْيِهِ، فَعَلَيْكَ بِخَاصَّةِ نَفْسِكَ وَدَعِ العَوَامَّ،

অর্থঃ যখন তোমরা দেখবে, মানুষ লালসার পিছু ছুটছে, কৃপ্রবৃত্তির অনুসরণ করছে, দুনিয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছে, প্রতিটি মানুষ নিজের মতামত নিয়েই সন্তুষ্ট থাকছে, তখন তুমি নিজেকে নিয়ে ভাবতে থাকো, মানুষ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নাও।” (তিরমিযি৩০৫৮)

ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ বলতেন- ‘(ইখতিলাফী মাসআলার ক্ষেত্রে) আমার মত সঠিক, তবে ভুল হবার সম্ভাবনাও আছে। অন্যের মত ভুল, তবে সঠিক হবারও সম্ভাবনা আছে

৪- অন্যদের প্রতি সুধারণা পোষণ করার বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ

অর্থঃ “হে মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। (সূরা হুজুরাত ৪৯:১২)

এটা বুঝানো যে, মুমিনদের ব্যাপারে কুধারণামুক্ত অন্তর শুহাদায়ে কেরাম ও জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَى سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ

অর্থঃ “তাদের অন্তরে যে ক্রোধ ছিল, আমি তা দূর করে দেব। তারা ভাই ভাইয়ের মত সামনা-সামনি আসনে বসবে।” (সূরা হিজর ১৫:৪৭)

৫- কোন সৈনিক অন্যের সামনে নিজের প্রশংসা ও শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

فَلَا تُزَكُّوا أَنفُسَكُمْ ۖ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَىٰ

অর্থঃ “অতএব তোমরা আত্নপ্রশংসা করো না। তিনি ভাল জানেন কে সংযমী।” (সূরা নাজম ৫৩:৩২)

কারো মত যদি কল্যাণকর হয়, তাহলে তার মত গ্রহণ করাই আবশ্যক। যদিও সে বয়সে ছোট কিংবা জ্ঞান বা যোগ্যতায় নিচের অবস্থানের হয়ে থাকে।

কবি বলেন-

আপনার মন যা বলে সেটা ভুলও হতে পারে

বোকারাই শুধু প্রবৃত্তির অনুসরণ করে।

৬- পার্থিব বিষয় নিয়ে তর্কে লিপ্ত হওয়ার ভয়াবহতা তুলে ধরা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

فَوَاللَّهِ مَا الفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ، وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا، كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا، وَتُلْهِيَكُمْ كَمَا أَلْهَتْهُمْ»

অর্থঃ “আমি তোমাদের উপর দারিদ্র্যতার আশংকা করিনা। আমি তো বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের মাঝে প্রাচুর্য এমন ছড়িয়ে দেওয়া হবে, যেমনটা পূর্ববর্তীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ফলে তোমরা তার মাঝে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হবে যেমন পূর্ববর্তীরা হয়েছিল। ফলে তা তোমাদেরকে এমনভাবে ধ্বংস করবে যেমন তাদেরকে করেছিল।” (বুখারী৬৪২৫ ও মুসলিম২৯৬১)

দুনিয়ার তাচ্ছিল্যের সবক শিখানো বিশ্বাস করানো যে, পৃথিবী আল্লাহর কাছে মশার ডানার বরাবরও মূল্য রাখেনা।

দিকনির্দেশনা:

‘ওয়াহাতুন জিহাদিয়্যাতুন’ বা ‘জিহাদী উদ্যান’ বইটি থেকে “ইল্লা মান আতাল্লাহা বিকালবিন সালিম” এই শিরোনাম দেখা যেতে পারে।

*******

নবম সমস্যা – আমীরদের বোঝা বাড়িয়ে দেওয়া।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- আমীরের কাছে অনেক বেশি অভিযোগ করতে থাকা।

২- আমীরের কাজে অবৈধ অনু্প্রবেশ বা নিজস্ব চিন্তার আলোকে তার কাজের সমালোচনা করা।

৩- নির্দেশগুলোর মাঝে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রাখা।

৪- অনর্থক বিভিন্ন প্রস্তাব ও আবেদন পেশ করে আমীরদের সময় নষ্ট করা। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাঘাত ঘটা।

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- আমীরের সক্ষমতার ব্যাপারে সৈনিকদের আস্থা না থাকা। তার যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা ব্যাপারে সন্দিহান থাকা।

২- যেকোনো বিষয়ে মুনাসিব সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার আমীরের আছে, এই থিরি ভুলে যাওয়া।

৩- আমীরের আনুগত্যের বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়া।

৪- আমীরকেও অন্যান্য সাধারণ সৈনিকদের মত মনে করা। তার সাথে অনর্থক সময় নষ্টকারী কাজে লিপ্ত হওয়া।

সমাধান পদ্ধতি:

১- সৈনিকদের হৃদয়ে আমীরদের সক্ষমতা ও দক্ষতার বিষয়টি গেঁথে দেওয়া।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত-

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একটি কাফেলা পাঠালেন। তাদের আমীর বানালেন উসামা বিন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে। কিছু মানুষ তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললোতখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, আজকে যদি তোমরা তার নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলে থাক, (তবে এটা নতুন কিছু নয়) এর আগেও তোমরা তার বাবার নেতৃত্বের ব্যাপারে কথা তুলেছিলে। আল্লাহর কসম করে বলছি, অবশ্যই সে ইমারার উপযুক্ত ছিল। আর সে ছিল আমার অনেক প্রিয় ব্যক্তি। এখন তার মৃত্যুর পর তার ছেলেই আমার সবচে প্রিয়ভাজন।” (বুখারী ও মুসলিম)

২- আমীরের আনুগত্য ওয়াজিব এই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ

অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলুল আমর তাদের(সুরা নিসা ৪:৫৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « مَنْ أطَاعَنِي فَقَدْ أطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمَنْ يُطِعِ الأَمِيرَ فَقَدْ أطَاعَنِي، وَمَنْ يَعصِ الأميرَ فَقَدْ عَصَانِي ». متفقٌ عَلَيْهِ

অর্থঃ আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর আনুগত্য করল এবং যে আমার অবাধ্যতা করল, সে (আসলে) আল্লাহর অবাধ্যতা করল। আর যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য করল, সে (আসলে) আমার আনুগত্য করল এবং যে নেতার অবাধ্যতা করল, সে (আসলে) আমার অবাধ্যতা করল।’’ (বুখারী ২৯৫৭)

3- আমীরের সময় হেফাজতের বিষয়ে সৈনিকদের সচেতন করা। যে কোন কাজ বা বিষয় তার সামনে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় ও নিয়ম ফলো করা।

*******

দশম সমস্যা – কিছু গুরুত্বপূর্ণ চারিত্রিক আচরণের ঘাটতি।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- অন্যদের সাথে অসদাচরণ করা।

২- অহেতুক গায়ে পড়ে ঝগড়া করা।

৩- অন্যের কাজ নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা।

৪- অন্যদের সাথে আচরণে আত্মগরিমা প্রকাশ পাওয়া।

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণগত সুন্নাহ সামনে না থাকা। মন্দ চরিত্রের লোকদের সাথে উঠাবসা করা। সচ্চরিত্রবান নেক লোকদের থেকে দূরে থাকা।

২- বিতর্কের নিয়ম-কানুন না জেনেই সবসময় বিতর্কিত বিষয়ে আলোচনা করা।

সমাধান পদ্ধতি:

১- মানুষের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে আখলাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণরা। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্রই ছিল জীবন্ত কোরআন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ

অর্থঃ “নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।” (সুরা কালাম ৬৯:)

২- নেককারদের সাথে উঠাবসা করা। সাহাবা, তাবেয়ীন এবং সালাফে সালেহিনের জীবনী পড়া। তাদের মতো করে জীবন গড়ার চেষ্টা করা। মন্দ লোকদের সংশ্রব থেকে দূরে থাকা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه أَنَّ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِنَّمَا مَثَلُ الجَلِيسِ الصَّالِحِ وَجَلِيسِ السُّوءِ، كَحَامِلِ المِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ: إمَّا أنْ يُحْذِيَكَ، وَإمَّا أنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الكِيرِ : إمَّا أنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً مُنْتِنَةً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

অর্থঃ আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল, কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) ও হাপরে ফুৎকারকারী (কামারের) ন্যায়। কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে অথবা তার কাছ থেকে সুবাস লাভ করবে। আর হাপরে ফুৎকারকারী (কামার) হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’’ (বুখারী ২১০১, মুসলিম ২৬২৮)

কোন কোন মনিষী বলেন- কোন ফাসেক, দুশ্চরিত্র পাপী ব্যক্তির মজলিসে বসে সুবিধা লাভের চেয়ে, উত্তম চরিত্রবান কারো মজলিসে বসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া আমার কাছে বেশি উত্তম

৩ – নিজের হৃদয়কে আত্মিক ব্যাধিসমূহ থেকে মুক্ত করতে সচেষ্ট হওয়া।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ

অর্থঃ “আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো।” (সূরা আল ইমরান ৪:১৫৯)

রাসূল সাল্লা্ল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم ” لَا تَحَاسَدُوا، وَلَا تَنَاجَشُوا، وَلَا تَبَاغَضُوا، وَلَا تَدَابَرُوا، وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إخْوَانًا،……..

অর্থঃ আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ পরস্পর হিংসা করো না, একে অপরের জন্য নিলাম ডেকে দাম বাড়াবে না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করবে না, একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যেও না, একজনের ক্রয়ের উপর অন্যজন ক্রয় করো না। হে আল্লাহর বান্দাগণ! পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও…… (মুসলিমঃ ২৫৬৪)

৪- ইখতিলাফের আদাব ও মূলনীতি জানা। অর্থহীন তর্ক-বিতর্ক থেকে দূরে থাকা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَنَا زَعِيْمٌ بِبَيْتٍ فِىْ رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ

অর্থঃ আবু উমামা বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি ঘর নিয়ে দেয়ার জন্য দায়িত্বশীল, যে তর্ক পরিহার করে হক হলেও।” (আবুদাঊদ ৪৮০০; বায়াহাক্বী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৭৯) 

৫- সৈনিকদের সামনে বিনয়ের গুরুত্ব ও ফযীলত তুলে ধরা। অহংকারের ভয়াবহতা ও ক্ষতি তুলে ধরা।

وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَمُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، وَإِبْرَاهِيمُ بْنُ دِينَارٍ، جَمِيعًا عَنْ يَحْيَى بْنِ حَمَّادٍ، – قَالَ ابْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ حَمَّادٍ، – أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبَانَ بْنِ تَغْلِبَ، عَنْ فُضَيْلٍ الْفُقَيْمِيِّ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ النَّخَعِيِّ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ رَجُلٌ إِنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَنًا وَنَعْلُهُ حَسَنَةً ‏.‏ قَالَ ‏”‏ إِنَّ اللَّهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ ‏”‏

অর্থঃ আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, মানুষ চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এ –ও কি অহংকার? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। প্রকৃতপক্ষে অহংকার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা।” (মুসলিম – ১৬৬)

দিকনির্দেশনা:

সৈনিকদেরকে সবসময় বিতর্কিত মাসায়েল এড়িয়ে থাকতে হবে। কখনো এ জাতীয় কোন মাসআলার সম্মুখীন হলে শরঈ দায়িত্বশীলদের শরণাপন্ন হতে হবে

২- আপনি এ বিষয়ে ‘ওয়াহাতুন জিহাদিয়্যাতুন’ বা ‘জিহাদী উদ্যান’ বইয়ের লিসানাকা ইয়া মুজাহিদ (হে মুজাহিদ, তোমার যবান সামলাও) শিরোনামটি দেখে নিতে পারেন

৩- “সৈনিকদের পারস্পরিক দায়িত্ব” বিষয়ক বইটিও দেখা যেতে পারে।

*******

একাদশতম সমস্যা – অস্ত্র এবং বিস্ফোরকের ব্যাপারে গাফলতি।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- নিরাপত্তার উপকরণ গ্রহণে অলসতা করা।

২- এলোপাথাড়ি বুলেট ছোড়া

৩- নিক্ষেপণের ক্ষেত্রে ভালোভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ না করা।

৪- দুষ্টুমি ছলে সাথীদের উপর অস্ত্র তাক করা।

৫- বিস্ফোরক ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন না করেই নিজের খেয়াল খুশি মত ব্যাবহার করতে থাকা।

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- নিরাপত্তার উপকরণসমূহ নিয়ে গাফলতি

২- অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে অবহেলা করা।

৩- সৈনিকের দায়িত্ব অনুধাবনে দুর্বলতাসাধারণের মালের উপর গুরুত্বহীনতা। দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে দিক নির্দেশনা না থাকা।

৪- অস্ত্র নিয়ে রসিকতা করার ব্যাপারে ইসলামের কঠোর বিধান জানা না থাকা।

৫- বিস্ফোরকের ব্যাবহার বিধি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা।

সমাধান পদ্ধতি:

১- নিরাপত্তার উপকরণ গ্রহণে জোর তাগিদ দেওয়া। এ ব্যাপারে কোন ধরনের শিথিলতা ও ছাড় না দেওয়া।

২- অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ক্ষেত্রে কোন প্রকার গাফলতি কাম্য নয়, এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করা। মাঝে মাঝে এ সংক্রান্ত দুর্ঘটনাগুলোর পর্যালোচনা করা।

৩- প্রতিটি বুলেট ছোড়ার ক্ষেত্রে আমীরের অনুমতি লাগবে এ বিষয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা। যে এর বিপরীত করবে, তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা।

৪- অস্ত্র নিয়ে রসিকতা যে ইসলামে নিষিদ্ধ তা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

«مَنْ أَشَارَ إِلَى أَخِيهِ بِحَدِيدَةٍ، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَلْعَنُهُ، حَتَّى يَدَعَهُ وَإِنْ كَانَ أَخَاهُ لِأَبِيهِ وَأُمِّهِ»

অর্থঃ “কেউ যদি তার ভাইদের দিকে কোন লোহা তাক করে, ফেরেশতা তাকে লা’নত করতে থাকে। যদিও সে তার আপন ভাই হোক না কেন।” (মুসলিম২৬১৬)

৫- ব্যবহার বিধি না জেনে বিস্ফোরক ব্যাবহার নিষিদ্ধ এটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া। আর যে অনধিকার চর্চা করবে, তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা।

দিকনির্দেশনা:

১- মাউসুআ শামেলা থেকে “অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিরাপত্তার বিষয়ে সাধারণ মূলনীতি” বইটি দেখা যেতে পারে।

*******

দ্বাদশতম সমস্যা – জাহেলী প্রবণতা।

প্রকাশ মাধ্যমঃ

১- জাহেলী শ্লোগান দেওয়া। যেমন- জাতিয়তাবাদী, দেশবাদী বা গোত্রবাদী শ্লোগান।

২- কোন সদস্য তার অঞ্চল কিংবা গোত্রের ব্যাপারে অতি আশ্বস্ত থাকা ও তাদের উচ্চ প্রশংসায় মেতে থাকা।

৩- সৈনিকদের মাঝে গোত্র কিংবা অঞ্চল ভেদে গ্রুপিং চলতে থাকা

৪- কোন সদস্য শুধু নিজের অঞ্চলের সাথীদের সাথে সকল কাজে থাকতে চাওয়া। অন্যদের সাথে থাকতে রাজী না হওয়া।

সমস্যার কারণসমূহঃ

১- ইসলামে জাতীয়তাবাদ যে ঘৃণ্য তার ইলম না থাকা।

২- সে যেই পরিবেশে বেড়ে উঠেছে তার দ্বারা প্রভাবিত হওয়া। বিশেষ করে যদি পরিবেশটা এমন হয় যে, সেখানকার মানুষরা শুধু আত্মপ্রশংসায় মেতে থাকতো।

৩- ইসলামে পরস্পরকে সহযোগীতার ভিত্তি হল- সৎকর্ম ও তাকওয়া। দেশ কিংবা জাতি নয়। এ বিষয়টি জানা না থাকা।

সমাধান পদ্ধতি:

১- ইসলাম যে ‘জাতীয়তাবাদ’কে বাতিল করেছে সেই বিষয়ে সদস্যদেরকে সচেতন করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

অর্থঃ “হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেজগার নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।” (সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ، حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ يَفْتَخِرُونَ بِآبَائِهِمُ الَّذِينَ مَاتُوا إِنَّمَا هُمْ فَحْمُ جَهَنَّمَ أَوْ لَيَكُونَنَّ أَهْوَنَ عَلَى اللَّهِ مِنَ الْجُعَلِ الَّذِي يُدَهْدِهُ الْخِرَاءَ بِأَنْفِهِ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ إِنَّمَا هُوَ مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ وَفَاجِرٌ شَقِيٌّ النَّاسُ كُلُّهُمْ بَنُو آدَمَ وَآدَمُ خُلِقَ مِنْ تُرَابٍ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ وَابْنِ عَبَّاسٍ ‏.‏ قَالَ وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏

অর্থঃ আবূ হুরাইরাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে সমস্ত সম্প্রদায় তাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে গর্ব করে, তারা যেন অবশ্যই তা হতে বিরত থাকে। কেননা তারা জাহান্নামের কয়লায় পরিণত হয়েছে। নতুবা তারা আল্লাহ তা’আলার দরবারে গোবরে পোকার তুলনায় বেশি অপমানিত হবে, যা নিজের নাক দিয়ে গোবরের ঘুঁটা তৈরি করে। তোমাদের হতে আল্লাহ তা’আলা জাহিলী যুগের গর্ব-অহংকার ও পূর্বপুরুষদের নিয়ে আত্মগর্ব প্রকাশ দূরীভূত করেছেন। এখন সে মু’মিন- মুত্তাকী অথবা পাপাত্মা–দুরাচার। সমস্ত মানুষ আদম (আলাইহিস সালাম)–এর সন্তান। আর আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি হতে।” (জামেআত-তিরমিজি ৩৯৫৫)

২- সৈনিকদের হৃদয়ে দেশ বা গোত্র সম্পৃক্ততার চাইতে ইসলাম সম্পৃক্ততার বীজ বপন করা।

৩- গ্রুপ তৈরির ক্ষেত্রে এক দেশীয় বা এক গোত্রীয় থেকে নির্বাচন না করে বিভিন্ন দেশ ও গোত্রের সদস্যদের মিলিয়ে গ্রুপ তৈরি করা। যাতে সবাই সবার রুচি ও মেজাজের সাথে মিলতে পারে ও গোত্রপ্রীতির স্বভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

দিকনির্দেশনা:

এ বিষয়ে ‘ওয়াহাতুন জিহাদিয়্যাতুন’ বা ‘জিহাদী উদ্যান’ কিতাবের “জাহেলী আসাবিয়াতের নিন্দা” শিরোনামটি দেখা যেতে পারে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

 

**********

 

 

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 5 =

Back to top button