সেনাবাহিনী ও ইমারাহ: কিছু আদব ও গুণাবলী | কমান্ডার আশরাফ আত তায়া’যযী (খালেদ বিন গালেব আল হামূদী) রহিমাহুল্লাহ
مؤسسة الحكمة
আল হিকমাহ মিডিয়া
Al-Hikmah Media
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents
الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation
بعنوان:
শিরোনাম:
Titled
الجندية والإمارة آداب وصفات
সেনাবাহিনী ও ইমারাহ
কিছু আদব ও গুণাবলী
Army and Imarah
Some Etiques and Virtues
بقلم القائد: أشرف التعزي (خالد بن غالب الحمودي) – رحمه الله
কমান্ডার আশরাফ আত তায়া’যযী
(খালেদ বিন গালেব আল হামূদী)
রহিমাহুল্লাহ
Commander Ashraf At Taya’zzi
(Khaled Bin Galeb al-Hamudi)
Rahimahullah
للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading
লিংক-১ : https://justpaste.it/senabahini_o_imarah
লিংক-২ : https://mediagram.me/0db12b35723e95f9
লিংক-৩ : https://noteshare.id/5wHoObw
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20220328…ahini_o_imarah
লিংক-৫ : https://web.archive.org/web/20220328…b12b35723e95f9
লিংক-৬ : https://web.archive.org/web/20220328…are.id/5wHoObw
روابط بي دي اب
PDF (587 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৫৮৭ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/p35o8kTFfXZcGKJ
লিংক-২ : https://archive.org/download/senabahini-o-imaraha-update/Senabahini%20O%20Imaraha.pdf
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/d7t7kebeb60372eda4234bca3768207441309
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=s0m7k5g1d6
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/41f6b50d-3cfe-4e3e-9e7e-c8eff0b2eec2/5943fdd8fae068e1cb3a3e7eeedd619473923554a10142cdae597d32506d7fb2
লিংক-৬ : https://f005.backblazeb2.com/file/kichuadobogunaboli/Senabahini+O+Imaraha.pdf
روابط ورد
Word (545 KB)
ওয়ার্ড [৫৪৫ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/zoxc4w3DG7QZFea
লিংক-২ : https://archive.org/download/senabahini-o-imaraha-update/Senabahini%20O%20Imaraha.docx
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/d7t7k365a70156c1043a38db8c44dabe4ab6c
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=v9k3r7v4d5
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/2030240a-d5d3-43d2-a630-8c36a792ae6c/54ce2360730bd81f09699485abbe9b8b6b84e2523756a4d5b77b02695de1b6c5
লিংক-৬ : https://f005.backblazeb2.com/file/kichuadobogunaboli/Senabahini+O+Imaraha.docx
روابط الغلاف- ١
book Banner [1.2 MB]
বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.২ মেগাবাইট]
লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/5DGtnEyqCYt6dXp
লিংক-২ : https://archive.org/download/senabahini-o-imaraha-update/Senabahini%20O%20Imaraha.jpg
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/d7t7k2f23192e6ea6418da8b46485d92a4e33
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=o6q2s3d8j3
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/06c10e29-7691-42cf-a36b-da5ea66aada7/91af58bfc44f72fcf35ce96b8599a6837ff1a1b3b3d867b91702642038a4daf6
লিংক-৬ : https://f005.backblazeb2.com/file/kichuadobogunaboli/Senabahini+O+Imaraha.jpg
روابط الغلاف- ٢
Banner [1.5 MB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.৫ মেগাবাইট]
লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/26n2LykJ8ncXxSK
লিংক-২ : https://archive.org/download/senabahini-o-imaraha-update/Senabahini%20O%20Imaraha%20WebBanner.jpg
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/d7t7kf686a8e09a8a48fdb22c467314b1aa85
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=n3o6y2f6w0
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/144926ce-cf5c-4cee-8b83-b3a50d5cc54e/297f695286cd08967fdce74538bba603af7a9d427596615bc98e02027200f4b5
লিংক-৬ : https://f005.backblazeb2.com/file/kichuadobogunaboli/Senabahini+O+Imaraha+WebBanner.jpg
*******
সেনাবাহিনী ও ইমারাহ
কিছু আদব ও গুণাবলী
মূল
কমান্ডার আশরাফ আত তায়া’যযী
(খালেদ বিন গালেব আল হামূদী)
রহিমাহুল্লাহ
প্রকাশকের ভূমিকা ও অবতরণিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এই পুস্তিকাটি সংকলন করেছেন শহীদ (আমরা এমনটাই ধারণা করি) কমান্ডার আশরাফ আত তায়া’যযী। যিনি আরব উপদ্বীপে তানযীম আল কায়েদার বাহ্যিক ও প্রকাশ্য কাজের দায়িত্বশীল ছিলেন। উক্ত দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি “সেনাবাহিনী ও ইমারাহ (রাষ্ট্রব্যবস্থা)” বিষয়ক একটি প্রবন্ধ রচনা করার দায়িত্ব লাভ করেন। আর এই পুস্তিকাটি প্রকাশের আট বছরের পূর্বে তিনি আমেরিকার এক বোমা বর্ষণে শাহাদাত বরণ করেন। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন, আমীন।
তথ্য সমৃদ্ধি ও পরিপূর্ণ রূপে উপকৃত হওয়ার জন্য মূল লেখকের আলোচনার সাথে আরও কিছু পয়েন্ট, হাদিস ও উলামায়ে কেরামের বাণী যুক্ত করা হয়েছে। আর মূল লেখার বাইরে আমরা যেসব কথা ও তথ্য যুক্ত করেছি তাকে পৃথকভাবে “সংযুক্তি” শিরোনামে উল্লেখ করেছি।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যেন তিনি এই ছোট পুস্তিকা দ্বারা সকল মুসলিম ও মুজাহিদদেরকে উপকৃত করেন। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দানকারী।
ভূমিকা:
بسم الله الرحمن الرحيم والحمد لله والصلاة والسلام على خير خلق الله سيدنا محمد وعلى آله وصحبه ومن والاه …
হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে এমন ইলম শিক্ষা দিন যা আমাদের উপকার করবে এবং যা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন তা দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করুন। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের উপর অনুগ্রহ করুন এবং আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন!
নিশ্চয় জিহাদ সর্বোৎকৃষ্ট নেক আ’মলের মধ্যে অন্যতম। তাই এই ইবাদত পালন করতে অনেক কষ্ট ও কুরবানি করতে হয়।
জিহাদ একটি সাংগঠনিক কাজ। তাই এতে সঠিক নেতৃত্ব ও অনুগত সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হয় এবং কমান্ডার ও সৈনিকের মাঝে সম্পর্ক ঠিক রাখতে হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিষয়টি সুবিন্যস্ত রূপে আঞ্জাম দিয়েছেন এবং আমীরের প্রতি সেনাদের কর্তব্য এবং সেনাদের প্রতি আমীরের দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। কারণ এই বিষয়গুলো জিহাদি সংগঠনের সফলতা এবং ব্যর্থতার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীমে দুটি দলের দুটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এবং জিহাদি জামাতের সফলতা ও ব্যর্থতার ক্ষেত্রে সেনা বাহিনীর আনুগত্যের ভূমিকা আমাদের সামনে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
প্রথম জামাআতের দৃষ্টান্ত:
বনী ইসরাইল জাতি এবং মুসা আলাইহিস সালাম। আল্লাহ তাদের মাধ্যমে নিকৃষ্ট সেনাবাহিনীর উদাহরণ বর্ণনা করেছেন। তাদের কথা ও কর্মসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যাতে আমীরের অবাধ্য সেনাদের প্রতিচ্ছবি আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়। তাদের অবস্থা ছিল এমন – আমীরের নেতৃত্ব তারা কখনো মানতো না। আর কখনো যদি মানতো তবু তারা তা কার্যকর করতো না। তাদের অবাধ্যতার আরও অনেক প্রমাণ রয়েছে। যেমন, আল্লাহ তায়ালা মুসা আলাইহিস সালাম এর ভাষায় উপস্থাপন করে বলেন: আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাইলকে বলেন: তোমরা বল, আমরা (হিত্তা) ক্ষমা চাই, তারা এই বাণীকে পরিবর্তন করে বলে; আমরা (হিন্তা) গম চাই।
অন্যত্রে আছে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে একটি গরু জবাই করার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন তারা প্রশ্ন করে বসলো: গরু’র রং কী হবে?
আরেক জায়গায় তিনি তাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন: তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করার জন্য লড়াই করো। তখন তারা আস্পর্ধা দেখিয়ে বলল: তুমি এবং তোমার রব গিয়ে লড়াই কর, আমরা এখানেই বসে অপেক্ষা করছি।
অন্যত্র তিনি তাদের বলেন: তোমাদেরকে যা কিছু আদেশ করা হয় তা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর এবং মান্য করার উদ্দেশ্যে মনোযোগের সাথে শ্রবণ কর। তারা বলল; আমরা শুনলাম এবং অমান্য করলাম।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন না করায় সিনাই মরুভূমিতে উদ্ভ্রান্তের মত/লক্ষহীনভাবে ঘুরে বেড়ানোটাই ছিল তাদের শেষ পরিণতি। এটি ছিল তাদের শাস্তি। তারা পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করার উপায়-উপকরণকে অস্বীকার করায়, পৃথিবীতে শাসনক্ষমতা হাতছাড়া করেছে।
দ্বিতীয় জামাআতের দৃষ্টান্তঃ
দ্বিতীয় দলটি হল: সাহাবীদের জামাত। তারা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথী- সঙ্গী। তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল; রাসূলের আনুগত্য এবং তাঁর নির্দেশনা কার্যকর করা। তাই আল্লাহ তাদের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে একাধিক বিজয় দান করেছেন। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা এবং মুসলিম উম্মাহর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করা ছিল সেই বিজয়গুলোর মধ্যে অন্যতম।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসা আলাইহিস সালাম এই দুজন রাসূল “উলূল আজম” এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন (অর্থাৎ উভয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী রাসূল ছিলেন)। উভয়ের উপর স্বতন্ত্র দুটি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে। এই দুটি বৈশিষ্ট্যে তাঁরা ছিলেন এক ও অভিন্ন।
তবে উভয়ের মধ্যকার ভিন্নতার দিকটি হল; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ জাযিরাতুল আরব (আরব উপদ্বীপ) বিজয় করেছেন। আর মুসা আলাইহিস সালাম শুধুমাত্র ফিলিস্তিন বিজয় করেছেন এবং তাতেও বেশ সময় লেগেছে। এই পার্থক্যের কারণ হল, বনী ইসরাইল ছিল অবাধ্য সেনাদের নিকৃষ্ট নমুনা। অপরদিকে সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুম’রা ছিলেন অনুগত সেনাদের উৎকৃষ্ট প্রতিচ্ছবি। যদি মুসলিম দলগুলো নিজেদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সফল হতে চায়, তাহলে সেনাবাহিনীকে যেসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হবে – এই পুস্তিকাটিতে সেসব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ।
প্রথম অধ্যায়: সেনাবাহিনী সংক্রান্ত
একজন মুসলিম কমান্ডারের অধীনস্থ সৈনিকদের জন্য অবশ্য পালনীয় এমন কিছু আদাব ও শিষ্টাচার রয়েছে, যার কিছু শরয়ী দিক থেকে এবং কিছু চারিত্রিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। একজন সৈনিককে এই সব শিষ্টাচার নিজেদের মধ্যে রপ্ত করে নিতেই হবে। শিষ্টাচারগুলো নিম্নরূপ:
প্রথম আদব: সেনাবাহিনীর ইখলাস ও আমীরের আনুগত্য আল্লাহর ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তায়ালা আমীরের আনুগত্যের আদেশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
يا أيها الذين آمنوا أطيعوا الله وأطيعوا الرسول وألى الأمر منكم، فإن تنازعتم في شيئ فردوه إلى الله والرسول إن كنتم تؤمنون بالله واليوم الآخر، ذلك خير وأحسن تأويلا. (النساء: 59)
অর্থ: “হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর তাঁর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বশীল তাদের। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দেয়, তবে তোমরা আল্লাহ ও পরকালে সত্যিকারের বিশ্বাসী হয়ে থাকলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রাসূলের উপর ন্যস্ত কর। এটাই উৎকৃষ্টতর এবং এর পরিণামও সর্বাপেক্ষা শুভ।” (সুরা নিসা 4:৫৯)
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَمَنْ يُطِعِ الْأَمِيرَ فَقَدْ أَطَاعَنِي وَمَنْ يَعْصِ الْأَمِيرَ فَقَدْ عَصَانِي وَإِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَى بِهِ فَإِنْ أَمَرَ بِتَقْوَى اللَّهِ وَعَدَلَ فَإِنَّ لَهُ بِذَلِكَ أَجْرًا وَإِنْ قالَ بغَيرِه فَإِن عَلَيْهِ مِنْهُ»
অর্থ: “আবু হুরায়রাহ্ (রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করল। আর যে আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা করল। আর যে আমীরের (নেতার) আনুগত্য করল, সে আমারই আনুগত্য করল। যে আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমারই অবাধ্যতা করল। প্রকৃতপক্ষে ইমাম (নেতা) হলেন ঢাল স্বরূপ। তার পিছন থেকে যুদ্ধ করা হয়, তার দ্বারা (শত্রুদের কবল থেকে) নিরাপত্তা পাওয়া যায়। সুতরাং শাসক যদি আল্লাহর প্রতি ভয়প্রদর্শন পূর্বক প্রশাসন চালায় এবং ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে এর বিনিময়ে সে সাওয়াব (প্রতিদান) পাবে। কিন্তু সে যদি এর বিপরীত কর্ম সম্পাদন করে, তাহলে তার গুনাহও তার ওপর কার্যকর হবে।” (বুখারী ২৯৫৭, মুসলিম ১৮৩৫, আহমাদ ৮১৩৪, সহীহ আল জামি‘ ৬০৪৪)
আমীরের আনুগত্য একটি ইবাদত। এই ইবাদতটি ‘নিষ্ঠা’ ও ‘আনুগত্যের’ মত দুই খুঁটির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই ইবাদতের মাঝে ইখলাস আবশ্যক। আমীরুল মুমিনীন আবু হাফস উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এক হাদিসে বলেন:
حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيُّ، أَنَّهُ سَمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ
অর্থ: “আলক্বামাহ ইব্নু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত:
আমি ‘উমর ইব্নুল খাত্তাব (রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: সকল আমল (এর ফলাফল) নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করবে তাই পাবে। সুতরাং যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করবে তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই হবে। আর যে দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা কোনো নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হিজরত করবে তার হিজরত সে হিসেবেই গণ্য হবে।”
(৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩; মুসলিম ২৩/৪৫ হাঃ ১৯০৭, আহমাদ ১৬৮) (আধুনিক প্রকাশনী: ১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১)
আনুগত্য মানে প্রবৃত্তি ও আকাঙ্ক্ষা-আগ্রহের অনুসরণ নয়। বরং আমীরের প্রতি হৃদয়ের টান থাকুক বা না থাকুক – সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করা। যদিও তা মনের খেয়াল খুশির বিপরীত হয়। আর এটা ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় আনুগত্যের একটি ধরণ।
এমন একটি সম্প্রদায় আছে যারা তাদের আমীরকে সহায়তা করাকে আমীরের হক্ক মনে করে, আর তার আদেশের আনুগত্য করাকে ঈমান মনে করে।
দ্বিতীয় আদব: আমীরের কথা শুনা ও মেনে চলা।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَلَيْكَ السَّمْعَ وَالطَّاعَةَ فِي عُسْرِكَ وَيُسْرِكَ، وَمَنْشَطِكَ وَمَكْرَهِكَ، وَأَثَرَةٍ عَلَيْكَ»
অর্থ: “আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: তুমি তোমার সুখে-দুঃখে, পছন্দ-অপছন্দ এবং তোমার উপর অন্য কাউকে প্রাধান্য দেয়া হলেও (আমীরের কথা) শুনবে ও তার আনুগত্য করবে। (আহমদ-৮৯৫৩, মুসলিম-১৮৩৬)।
হাদিসের মধ্যে “শ্রবণ করা” কে ”আনুগত্য করা”র উপর অগ্রবর্তী করা হয়েছে। কেননা, আনুগত্য করা তো মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করার ফলাফল।
أَنَّ الحَارِثَ الأَشْعَرِيَّ، حَدَّثَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِنَّ اللَّهَ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهَا وَيَأْمُرَ بني إسرائيل أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا، إلى أن قال: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ، السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالجِهَادُ وَالهِجْرَةُ وَالجَمَاعَةُ،
অর্থ: “তিরমিযী রহিমাহুল্লাহ হারেস আশআরী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: আল্লাহ তায়ালা ইয়াহয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম’কে পাঁচটি কালিমা অনুযায়ী আমল করতে আদেশ করেছেন এবং তেমনিভাবে বনী ইসরাইলকেও আদেশ করেছেন। এরপর তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি তোমাদেরকে আল্লাহর পাঁচটি কালিমা অনুযায়ী আমল করতে আদেশ করছি, যেগুলো সম্পর্কে তিনি আমাকে আদেশ করেছেন। আর সেগুলো হল: শ্রবণ করা, আনুগত্য করা, জিহাদ করা, হিজরত করা ও জামায়াতবদ্ধ থাকা।” (তিরমিযী-২৮৬৩) শাইখ আহমাদ শাকের হাদিসটিকে হাসান সহীহ গরিব বলেছেন, আর শাইখ আলবানী বলেছেন সহীহ)।
তৃতীয় আদব: সকল বিষয় আমীরের উপর ন্যস্ত করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ
অর্থঃ “তাদের কাছে যখন শাস্তির বা ভীতির কোন সংবাদ আসে তারা তা (যাচাই না করেই) প্রচার শুরু করে দেয়। তারা যদি তা রাসূল বা তাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বের অধিকারী তাদের কাছে নিয়ে যেতো তবে তাদের মধ্যে যারা তার তথ্য অনুসন্ধানী তারা তার (যথার্থতা) জেনে নিত।” (সুরা নিসা ৪:৮৩)।
এটা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার বান্দাদের এই অসঙ্গত কাজের জন্য শিক্ষাদান।
যখন তাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ ও জনকল্যাণমূলক কোন বিষয় উপস্থিত হয়, যাতে হয়তো নিরাপত্তা ও মুমিনদের আনন্দ থাকবে অথবা তাদের উপর কোন বিপদের আশংকা থাকবে, তখন তাদের জন্য উচিত হল, সে খবরের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া এবং খবরটি প্রচারে তাড়াহুড়া না করা। বরং তাদের মধ্যে যারা সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, জ্ঞানীগুণী, কল্যাণকামী, বুদ্ধিজীবী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ হবে এবং যারা এই বিষয়গুলো জানে এবং কল্যাণ-অকল্যাণ সব বিষয়ে পূর্ণ অবগত এমন কর্তৃত্বের অধিকারীদের উপর সোপর্দ করবে।
যদি তারা মনে করে যে, এ খবর ছড়ানোর মাধ্যমে মুমিনদের কল্যাণ সাধিত হবে, তাদের আনন্দ ও উদ্যম ফিরে আসবে এবং তারা তাদের শত্রুদের থেকে সতর্ক থাকতে পারবে তাহলে তারা তা প্রকাশ করবেন। আর যদি মনে করেন যে, এতে কোন কল্যাণ নেই, অথবা কল্যাণ আছে তবে কল্যাণের চেয়ে ক্ষতি বেশি তাহলে তা প্রচার করবে না। এজন্য আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
“তাদের মধ্যে যারা তার তথ্য অনুসন্ধানী তারা তার (যথার্থতা) জেনে নিত।” অর্থাৎ, তাদের চিন্তা-গবেষণা, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশুদ্ধ জ্ঞানের সাহায্যে তা বের করবে। (তাফসীরে সা’দী)
চতুর্থ আদব: আমীরকে সম্মান করা।
عَنْ زِيَادِ بْنِ كُسَيْبٍ العَدَوِيِّ، قَالَ: كُنْتُ مَعَ أَبِي بَكْرَةَ تَحْتَ مِنْبَرِ ابْنِ عَامِرٍ وَهُوَ يَخْطُبُ وَعَلَيْهِ ثِيَابٌ رِقَاقٌ، فَقَالَ أَبُو بِلَالٍ: انْظُرُوا إِلَى أَمِيرِنَا يَلْبَسُ ثِيَابَ الفُسَّاقِ، فَقَالَ أَبُو بَكْرَةَ: اسْكُتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ أَهَانَ سُلْطَانَ اللَّهِ فِي الأَرْضِ أَهَانَهُ اللَّهُ»: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
অর্থ: “যিয়াদ বিন কুসাইব আ’দাবী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবু বাকরাহ সহ ইবনে আমেরের মিম্বরের পাশে বসা ছিলাম। আর ইবনে আমের রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু পাতলা পোশাক পরিধান করে মিম্বরে খোতবা দিচ্ছিলেন। তখন আবু বেলাল বললেন: আমাদের আমীরকে দেখো! তিনি ফাসেকদের পোশাক পরিধান করে আছেন। তখন আবু বাকরাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন: তুমি চুপ কর। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: যেই ব্যক্তি জমিনে আল্লাহর সুলতানকে অপদস্থ করে আল্লাহ তাকে অপদস্থ করেন।” (তিরমিযী -হাদিসঃ ২২২৪)। শাইখ আহমেদ শাকের বলেছেন; হাসান গরিব। শাইখ আলবানি সহীহ বলেছেন।
সুতরাং আমীরকে সম্মান ও মূল্যায়ন করা আবশ্যক। আর আমীরকে অসম্মান করার অর্থ হল – আমীরের আদেশ-নিষেধ না মানা, তাঁকে উপহাসমূলক কথা বলা এবং কটাক্ষ ও নিন্দা করা, তাঁর চারিত্রিক কোন বিষয় নিয়ে নিজে অবজ্ঞা করা বা অন্যের অবজ্ঞা করার কারণ হওয়া, অন্য কারো প্রশংসা করার মাধ্যমে ইশারা ইঙ্গিতে এই আমীরের নিন্দা করা, অথবা অন্যদেরকে আমীরের অসম্মান ও নাফরমানি করতে উৎসাহিত করা।
পঞ্চম আদব: আমীরের অনুমতি ছাড়া নিজ থেকে কোন কাজ না করা।
আমীর কোন দায়িত্ব দেয়া ছাড়া – ছোট-বড় কোন ক্ষেত্রেই আদেশ করা কিংবা নিষেধ করা অথবা কোন ফায়সালা দেয়া – কোন সৈনিকের জন্য সঙ্গত নয়। চাই আমীর উপস্থিত থাকুক কিংবা অনুপস্থিত থাকুক। আরবরা বলে থাকে: তুমি কখনো বাবা এবং ইমামের আগে যেয়ো না। অর্থাৎ তাকে বাদ দিয়ে একাকী কোন কাজ করোনা, চাই তা আদেশের ক্ষেত্রে হোক কিংবা নিষেধের ক্ষেত্রে।
এখানে আমীরের সাথে শিষ্টাচার দ্বারা উদ্দেশ্য হল – আমীরের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় তার দিকেই ন্যস্ত করা।
وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا
অর্থঃ “আর তাদের কাছে যখন শান্তির বা ভীতির কোন সংবাদ আসে, তারা তা (যাচাই না করেই) প্রচার শুরু করে দেয়। তারা যদি তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বের অধিকারী তাদের কাছে নিয়ে যেতো, তবে তাদের মধ্যে যারা তার তথ্য অনুসন্ধানকারী তারা তার (যথার্থতা) জেনে নিতে পারতো। (হে মুসলিমগণ!) তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত না হত, তবে তোমরা অবশ্যই শয়তানের অনুসরণ করতে অল্পসংখ্যক ছাড়া।” (সুরা নিসা 4:৮৩) (তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন)।
শাইখ আব্দুর রহমান সা’দী রহিমাহুল্লাহ তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বলেন: এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ অসঙ্গত কাজের জন্য তাঁর বান্দাদেরকে শিক্ষামূলক তিরস্কার করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইশারা করেছেন যে, যখন তাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ ও জনকল্যাণমূলক কোন বিষয় উপস্থিত হয়, যাতে হয়তো নিরাপত্তা ও মুমিনদের আনন্দ থাকবে অথবা তাদের উপর কোন বিপদের আশংকা থাকবে, তখন তাদের জন্য উচিত হল, সে খবরের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া এবং খবরটি প্রচারে তাড়াহুড়া না করা। বরং তারা রাসূলের কাছে কিংবা তাদের মধ্যে যারা সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, জ্ঞানীগুণী, কল্যাণকামী, বুদ্ধিজীবী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ হবে এবং যারা এই বিষয়গুলো জানে এবং কল্যাণ-অকল্যাণ সব বিষয়ে পূর্ণ অবগত এমন কর্তৃত্বের অধিকারীদের উপর সোপর্দ করা। যদি তারা মনে করে যে, এ খবর ছড়ানোর মাধ্যমে মুমিনদের কল্যাণ সাধিত হবে, তাদের আনন্দ ও উদ্যমতা ফিরে আসবে এবং তারা তাদের শত্রুদের থেকে সতর্ক থাকতে পারবে তাহলে তারা তা প্রকাশ করবেন। আর যদি মনে করেন যে, এতে কোন কল্যাণ নেই, অথবা কল্যাণ আছে তবে কল্যাণের চেয়ে ক্ষতি বেশি তাহলে তা প্রচার করবে না। এজন্য আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধানী তারা তার (যথার্থতা) জেনে নিত।” অর্থাৎ, তাদের চিন্তা-গবেষণা, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশুদ্ধ জ্ঞানের সাহায্যে তারা তার হাকীকত বের করতে পারতো। (তাফসীরে সা’দী)
এখানে শিষ্টাচারের একটি মূলনীতি রয়েছে। আর তা হল: যখন কোন একটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন দেখা দেয় তখন এই বিষয়ে যোগ্য ব্যক্তিবর্গকে তার দায়িত্ব দেয়া এবং তাদের নিকট তা সোপর্দ করা এবং কেউ আগ বাড়িয়ে কোন কিছু না করা। কেননা এটিই হল সঠিকতর পদ্ধতি এবং ভুল থেকে নিরাপদ থাকার সহজ মাধ্যম।
উল্লেখিত আয়াতে কোন বিষয় শুনার সাথে সাথে দ্রুত ও তাড়াহুড়া করে প্রচার করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এবং তাতে আরও রয়েছে, কোন কথা বলার পূর্বে চিন্তা-গবেষণা করার নির্দেশ। যাতে এটা কল্যাণকর না কি অকল্যাণকর হবে সেটি বুঝা যায়! যদি কল্যাণকর হয় তাহলে তা মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হবে। আর যদি অকল্যাণকর হয় তবে তা প্রকাশ করা হবে না।
কোন বিষয় উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গের নিকট ন্যস্ত করা ছাড়াই যদি দ্রুত ও তাড়াহুড়া করে প্রচারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে তো তাদেরকে ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নেয়া এবং তাদের কল্যাণকর দিকনির্দেশনাকে উপেক্ষা করে নিজ থেকে কোন কাজ করা আরও কঠিনতম নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে।
ষষ্ঠ আদব: আমীরের সকল বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করা।
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ رَأَى مِنْ أَمِيرِهِ شَيْئًا يَكْرَهُهُ فَلْيَصْبِرْ عَلَيْهِ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الجَمَاعَةَ شِبْرًا فَمَاتَ، إِلَّا مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً
অর্থ: “নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত :
যে কেউ তার আমীর থেকে অপছন্দনীয় কোন কিছু দেখে তখন সে যেন তার উপর ধৈর্য ধারণ করে। কেননা তোমাদের যে কেউ জামাআত থেকে এক বিগত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে সে অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো, তাহলে সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করলো।” (বুখারী ৭০৫৪)
অপছন্দনীয় বিষয় দ্বারা উদ্দেশ্য হল: এমন অপছন্দনীয় বিষয় যা কুফুরে বাওয়াহ (সুস্পষ্ট কুফুর) পর্যন্ত পৌঁছেনি। যে ব্যক্তি জামাত থেকে অর্থাৎ মুসলমানদের জামাত থেকে এক বিঘত বিচ্ছিন্ন হয়ে; সেই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে জাহিলী মৃত্যুবরণ করলো। এর অর্থ এ নয় যে, সে ব্যক্তি ইসলামের সীমানা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে এবং জাহেলে পরিণত হয়েছে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, তার মাঝে জাহিলিয়্যাতের একটি স্বভাব রয়েছে। (শরহে কিতাবুল ফিতান মিন সহিহিল বুখারী)
সপ্তম আদব: যে কোন প্রয়োজনে আমীরের অনুমতি গ্রহণ করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَإِذَا كَانُوا مَعَهُ عَلَىٰ أَمْرٍ جَامِعٍ لَّمْ يَذْهَبُوا حَتَّىٰ يَسْتَأْذِنُوهُ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ فَإِذَا اسْتَأْذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَن لِّمَن شِئْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
অর্থঃ “প্রকৃত মুমিন তো কেবল তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং যখন রাসূলের সাথে সমষ্টিগত কোন কাজে শরীক হয় তখন তার অনুমতি ছাড়া কোথাও যায় না। (হে নবী!) যারা আপনার অনুমতি নেয় তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সত্যিকার ভাবে মানে। সুতরাং তারা যখন তাদের কোন কাজের জন্য আপনার কাছে অনুমতি চায়, তখন তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে হয় অনুমতি দিন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দোয়া করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা নুর ২৪:৬২)
সমষ্টিগত বিষয় হলো – সেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যাতে যুদ্ধ, পরামর্শ অথবা জনসাধারণের কোন কাজের জন্য জামাআতকে অংশগ্রহণ করতে হয়।
সুতরাং, মুমিনরা তাদের ইমাম অথবা তাদের আমীরের অনুমতি ব্যতীত কোথাও যাবে না। যাতে জামাতের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও গণ্ডগোল সৃষ্টি না হয়। যারা এই পর্যায়ের ঈমানদার এবং এই আদব নিজেদের জন্য লাযেম করে নেয় তারা তো নিরুপায় হওয়া ছাড়া অনুমতি চায় না। তারা তাদের এই ঈমান ও এই শিষ্টাচারের কারণে জনস্বার্থে সংঘটিত দলবদ্ধ কাজগুলো থেকে পিছিয়ে পড়েনা।
এতদসত্ত্বেও অনুমতি দেয়া না দেয়ার ক্ষেত্রে কুরআন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইচ্ছাধিকার দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে:
﴿فَإِذَا اسْتَأْذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَن لِّمَن شِئْتَ مِنْهُمْ﴾.
অর্থঃ “সুতরাং, তারা যখন কোন কাজের জন্য আপনার কাছে অনুমতি চায়, তখন তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে অনুমতি দিন।” (সুরা নুর ২৪:৬২)
অষ্টম আদব: আমীরের কল্যাণ কামনা।
عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «الدِّينُ النَّصِيحَةُ» قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ: «لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ
অর্থ: “তামীম দারী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত; নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: নিশ্চয় দ্বীন হল কল্যাণ কামনা। আমরা বললাম; ইয়া রাসূলাল্লাহ! কার জন্য? তিনি বললেন: আল্লাহ, ও তাঁর রাসূলগণের জন্য ও তাঁর কিতাবসমূহ ও আয়িম্মায়ে মুসলিমিনের জন্য এবং সর্বসাধারণের জন্য” (মুসলিম, হাদিস, ৫৫)।
ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন: আর আইম্মায়ে মুসলিমিনের জন্য কল্যাণ কামনার অর্থ হল; তাদেরকে হকের ক্ষেত্রে সহায়তা করা, তাদের আনুগত্য করা এবং হকের বিষয়ে তাদের ফায়সালা মেনে নেয়া। মুসলিম জনগণের অধিকার ও যেসব বিষয়ে আমীরগণ উদাসীন সেগুলো তাদেরকে সহনশীলতা ও কোমলতার সাথে স্মরণ করিয়ে দেয়া।
যতক্ষণ পর্যন্ত আমীরের সিদ্ধান্তের কারণে সুনিশ্চিত কোন ক্ষতি না হবে অথবা শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক না হবে, বরং বৈধতার পর্যায়ে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমীরকে উপদেশ দেয়া কোন সেনা সদস্যের জন্য আবশ্যক নয়। কেননা কখনো উপদেশদানকারী মনে করে তার উপদেশই সঠিক, অথচ বিষয়টি সম্পূর্ণ এর বিপরীত।
নবম আদব: আমীরের সাথে সত্য বলা।
তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকা তিন ব্যক্তির ঘটনায় আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নিজের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে কা’ব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু ঘটনাটির বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন: অতঃপর আমি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বসলাম। তখন তিনি বললেন: ‘(হে কা’ব!) যুদ্ধে যাওয়ার ব্যাপারে কোন জিনিস তোমার জন্য প্রতিবন্ধক হয়েছে? তুমি কি বাহন ক্রয় করো নি’?
আমি বললাম: ‘অবশ্যই ক্রয় করেছি। হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ; আমি যদি আজ আপনার সামনে না বসে দুনিয়ার অন্য কারো সামনে বসতাম তাহলে কোন না কোন ওজর দেখিয়ে আমি তাকে সন্তুষ্ট করে ফেলতাম। আর এমনিতে আমি তর্কে পণ্ডিত। কিন্তু আমি জানি, যদি আজ আমি মিথ্যা বলে আপনাকে সন্তুষ্ট করি, তাহলে আল্লাহ অতি শীঘ্রই আপনাকে আমার উপর অসন্তুষ্ট করে তুলবেন। আর যদি আমি সত্য বলি তাহলে আপনি অসন্তুষ্ট হবেন জানি, তবে আমি আশা করি যে, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কোন ওজর তো ছিলোই না, বরং ইতিপূর্বে আমি কখনো এতো সম্পদশালী এবং এতো শক্তিশালী ছিলাম না, যেমন ছিলাম তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকার সময়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, সে সত্য বলেছে। আচ্ছা! তোমার বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে ফয়সালা আসা পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা কর। (বুখারী, মুসলিম)।
দশম আদব: নেতৃত্ব না চাওয়া এবং চাওয়ার ইচ্ছাও না করা।
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سَمُرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ سَمُرَةَ، لاَ تَسْأَلِ الإِمَارَةَ، فَإِنَّكَ إِنْ أُوتِيتَهَا عَنْ مَسْأَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا، وَإِنْ أُوتِيتَهَا مِنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا
অর্থ: “আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: হে আব্দুর রহমান! তুমি কখনো নেতৃত্বের দায়িত্ব চেয়ে নিও না, কেননা যদি তোমার চাওয়ার কারণে তোমাকে আমীর বানানো হয় তাহলে তোমার কাছে সম্পূর্ণ দায়িত্ব সোপর্দ করা হবে (তোমাকে একাই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে)। আর যদি না চাওয়া সত্ত্বেও তোমাকে আমীর বানানো হয় তাহলে তো তোমাকে সে বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ হতে সহায়তা করা হবে।” (বুখারি, হাদিস, ৬৬২২, মুসলি্ম, হাদিস, ১৬৫২)।
عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَرَجُلاَنِ مِنْ قَوْمِي، فَقَالَ أَحَدُ الرَّجُلَيْنِ: أَمِّرْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَقَالَ الآخَرُ مِثْلَهُ، فَقَالَ: «إِنَّا لاَ نُوَلِّي هَذَا مَنْ سَأَلَهُ، وَلاَ مَنْ حَرَصَ عَلَيْهِ
অর্থ: “আবু মুসা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি এবং আমার সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাজির হলাম। তখন আমার সাথে থাকা দুই ব্যক্তির একজন বলে উঠলো: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে আমীর বানিয়ে দিন। তার অপর সাথীও একই কথা বলল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যে আমীরের দায়িত্ব চায় এবং যে এই দায়িত্ব পেতে আগ্রহী তাদের কাউকে আমি এই দায়িত্ব অর্পণ করবো না।” (বুখারি, ৭১৪৯)
দ্বিতীয় অধ্যায়: আমীর বিষয়ক
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন: যেনে রাখ! সকলে একটি জামাতে সংঘবদ্ধ হওয়া ছাড়া ইসলাম পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় এবং একজন আমীরের অনুপস্থিতিতে জামাতও সংঘবদ্ধ হতে পারেনা। আর জামাতের নেতৃত্বের জন্য এমন এক ব্যক্তির প্রয়োজন যার আনুগত্য সকলেই মাথা পেতে মেনে নিবে। কারণ যার কথা সকলেই শুনবে ও মানবে – এমন একজন আমীর ব্যতীত একটি জামাতের মাঝে কখনো উৎকর্ষ সাধন হতে পারে না। আর আচার-আচরণ ও মুআমালার ক্ষেত্রে আমীরকেও অবশ্যই সুন্দর শিষ্টাচার ও উত্তম আখলাক দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করতে হবে।
আর ইমারত তথা শাসন ব্যবস্থার মধ্যেও কিছু আছে আঞ্চলিক আর কিছু আছে আন্তর্জাতিক। তবে যে কেউ মুসলমানদের যে কোন বিষয়ের শাসনভার গ্রহণ করবে, সেই বিষয়ে তার আনুগত্য করা আবশ্যক। আমীরের কর্তব্য হল, যথাযথ দায়িত্ব পালন করা ও শরয়ী শিষ্টাচারে গুণান্বিত হওয়া। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন:
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ
অর্থ: “(হে নবী!) আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষ রহমতের কারণেই আপনি মুমিনদের সাথে কোমল আচরণ করতে পেরেছেন। আপনি যদি রূঢ় প্রকৃতি ও কঠোর হৃদয়ওয়ালা হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা করুন, তাদের জন্য মাগফেরাতের দুআ করুন এবং (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।” (সুরা আলে-ইমরান ৩:১৫৯)
তো সেনাদের সাথে আমীরের আচরণ বিষয়ে এই আয়াত আমাদেরকে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়।
প্রথম বৈশিষ্ট্য: কোমল ও নরম হওয়া।
কুরআনে কারীমে রয়েছে:
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ
তথা; আপনার প্রতি এবং আপনার সাথীদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ থাকায় আপনি তাদের প্রতি সদয় হয়েছেন। আল্লাহর কৃপায় আপনি তাদের সামনে কোমল, নরম হয়েছেন, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করেছেন। ফলে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনাকে ভালবেসেছে এবং আপনার আদেশ পালন করেছে।
وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ
অর্থ: যদি আপনি রূঢ় ও রুক্ষ হৃদয়ের অধিকারী হতেন তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেত।
হৃদয়ের রুক্ষতা ও আচরণে রুঢ়তা দিন দিন আরও বেশী ভয়ংকর ও মারাত্মক হতে থাকে। এক সময় তা আমীরের চেহারায় এমনভাবে প্রকাশিত হয় যে, যেন শুধু তার শব্দ থেকে নয়, বরং তার দৃষ্টি থেকেও আগুন ঝরে। আর এভাবে শুধুমাত্র আমীরের অমত ও মনঃপুত না হওয়ার কারণে সেনাদের অনেক সুন্দর প্রচেষ্টা ও অভিনব আবিষ্কার ব্যর্থ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় সেনারা হয়তো ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে কিংবা উপরে আমীরের প্রশংসা করলেও ভিতরে ভিতরে নেফাকী করতে থাকে। আর দুটি বিষয়ই সেনাদের মনে আমীরের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা সৃষ্টি করে এবং সেনারা আমীরকে নয়, বরং শুধু তার ধমকেরই আনুগত্য করে। এমতাবস্থায় সেনারা যদি অন্য কোথাও ভালো সুবিধা পায় তাহলে তো অবশ্যই তারা এই আমীরকে ছেড়ে চলে যাবে।
সংযোজন:
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ شِمَاسَةَ، قَالَ: أَتَيْتُ عَائِشَةَ أَسْأَلُهَا عَنْ شَيْءٍ، فَقَالَتْ: مِمَّنْ أَنْتَ؟ فَقُلْتُ: رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ مِصْرَ، فَقَالَتْ: كَيْفَ كَانَ صَاحِبُكُمْ لَكُمْ فِي غَزَاتِكُمْ هَذِهِ؟ فَقَالَ: مَا نَقَمْنَا مِنْهُ شَيْئًا، إِنْ كَانَ لَيَمُوتُ لِلرَّجُلِ مِنَّا الْبَعِيرُ فَيُعْطِيهِ الْبَعِيرَ، وَالْعَبْدُ فَيُعْطِيهِ الْعَبْدَ، وَيَحْتَاجُ إِلَى النَّفَقَةِ، فَيُعْطِيهِ النَّفَقَةَ، فَقَالَتْ: أَمَا إِنَّهُ لَا يَمْنَعُنِي الَّذِي فَعَلَ فِي مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ أَخِي أَنْ أُخْبِرَكَ مَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ فِي بَيْتِي هَذَا: «اللهُمَّ، مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ، فَاشْقُقْ عَلَيْهِ، وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ، فَارْفُقْ بِهِ
অর্থ: “আব্দুর রহমান ইবনে শাম্মাসাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি কোন একটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে এসেছি। তিনি বললেন: ‘তুমি কোন এলাকার লোক’? আমি বললাম, ‘আমি একজন মিসরীয় ব্যক্তি’। তিনি বললেন, ‘তোমাদের চলমান যুদ্ধে তোমাদের আমীর তোমাদের সাথে কেমন আচরণ করেন’? আমি বললাম, ‘আমরা তাঁর থেকে কোন ধরণের অপছন্দনীয় কোন কিছু দেখতে পাইনি। আমাদের কারো উট মারা গেলে আমীর তাকে উট প্রদান করে। কারো গোলাম মারা গেলে তাকে গোলাম দান করে। কারো কোন খরচের প্রয়োজন হলে তাকে খরচ দেন’।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘আমার ভাই মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের সাথে যেই আচরণ করা হয়েছে তার কারণে আমি তোমাকে রাসূলের হাদিস শুনানো হতে বিরত থাকবো না। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামকে আমার এই ঘরেই বলতে শুনেছি: তিনি বলেন: হে আল্লাহ! যারা আমার উম্মতের কোন বিষয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে অতঃপর আমার উম্মতের সাথে কঠোর আচরণ করে আপনি তাদের সাথে কঠোর আচরণ করুণ। আর যারা আমার উম্মতের কোন দায়িত্ব গ্রহণ করে অতঃপর তাদের সাথে কোমল আচরণ করে আপনিও তাদের সাথে কোমল আচরণ করুন।” (মুসলিম: ১৮২৮)।
عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كُنَّا مَعَ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ فِي غَزْوَةٍ فَأَصَابَتْنَا مَخْمَصَةٌ فَكَتَبَ جَرِيرٌ إِلَى مُعَاوِيَةَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ لَا يَرْحَمُ النَّاسَ لَا يَرْحَمُهُ اللَّهُ» قَالَ: فَكَتَبَ مُعَاوِيَةُ أَنْ يَقْفُلُوا قَالَ وَمَتَّعَهُمْ قَالَ أَبُو إِسْحَاقَ: فَأَنَا أَدْرَكْتُ قَطِيفَةً مِمَّا مَتَّعَهُمْ
অর্থ: “আবু ইসহাক তার বাবা থেকে বর্ণনা করে বলেন: আমি কোন এক যুদ্ধে জারির ইবনে আব্দুল্লাহর সাথে উপস্থিত ছিলাম। সেই যুদ্ধে আমরা তীব্র ক্ষুধার শিকার হই। তখন মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর কাছে জারির পত্র লিখে পাঠান। তাতে লেখা ছিল, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মানুষের উপর রহম করে না, আল্লাহও তার উপর রহম করেন না।
আবু ইসহাক বলেন: মুয়াবিয়া প্রথমে (বায়তুল মাল) বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেন। আবু ইসহাক রাদিয়াল্লাহু বলেন পরবর্তীতে তাদেরকে আসবাব সামগ্রী দিয়েছেন। আবু ইসহাক বলেন: আমি তাদের আসবাব সামগ্রী থেকে ঝালরের একটি পোশাক পেয়েছি।” ( মুসনাদে আবী দাউদ তায়ালাসী; ৬৯৭)। (জারির ইবনে আব্দিল্লাহের হাদিসসমূহ থেকে)
উকবা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহিমাহুল্লাহ সর্বদা বলতেন: আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় বিষয় হল: প্রাচুর্য থাকা স্বত্বেও মিতব্যয়ী হওয়া, সক্ষমতা থাকাবস্থায় ক্ষমা করা এবং নেতৃত্বে থাকাবস্থায় কোমল আচরণ করা। দুনিয়াতে যদি কোন বান্দা অন্যের প্রতি কোমল হয় তখন কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি কোমল হবেন। যুহুদ কিতাবের ২/৬০৬ পৃষ্ঠায় হান্নাদ এই আসারটি বর্ণনা করেন।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য: ক্ষমা ও মার্জনা।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন:
فَاعْفُ عَنْهُمْ
অর্থাৎ: তাদেরকে ক্ষমা করুন। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৫৯)
সকল কাজেই সেনাদের পক্ষ হতে কিছুনা কিছু দ্বন্দ্ব, ত্রুটি এবং ভুল হতে পারে। কিভাবে ইতিবাচক ও কার্যকরী পন্থায় ক্ষমা-মার্জনার দৃষ্টিতে সৈনিকের দিকে তাকাতে হয় – সেটা আমীরের জানা থাকতে হবে। সংশোধনের লক্ষ্যেও কখনো কখনো সৈনিকের ভুল এড়িয়ে যেতে হয়!!
বিপরীতে আমীর যদি যে কোন অপরাধে সৈনিককে লজ্জা দেয় এবং তার অপরাধ সবার সামনে প্রকাশ করে, তখন হতে পারে আমীরের কঠোরতা ও রূঢ় আচরণের কারণে অপরাধী মনে মনে লজ্জা অনুভব করবে এবং মানুষের দৃষ্টির আড়ালে চলে যাওয়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। শুধু তাই নয়, বরং ঐ সৈনিক পরবর্তীতে নিজের সঠিক কোন মত প্রকাশেও বিব্রত বোধ করবে। বিশেষত এটা হয় যখন আমীর প্রায়ই সৈনিকদের ভুল-ত্রুটি উল্লেখ করে তাদেরকে তিরস্কার করে। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট আমীর তারাই যারা সেনাদের ভুল ও দুর্বলতার কারণে বারবার তাদেরকে তিরস্কার করে।
সংযোজন:
أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «قَدِمَ عُيَيْنَةُ بْنُ حِصْنِ بْنِ حُذَيْفَةَ فَنَزَلَ عَلَى ابْنِ أَخِيهِ الحُرِّ بْنِ قَيْسٍ، وَكَانَ مِنَ النَّفَرِ الَّذِينَ يُدْنِيهِمْ عُمَرُ، وَكَانَ القُرَّاءُ أَصْحَابَ مَجَالِسِ عُمَرَ وَمُشَاوَرَتِهِ، كُهُولًا كَانُوا أَوْ شُبَّانًا»، فَقَالَ عُيَيْنَةُ لِابْنِ أَخِيهِ: يَا ابْنَ أَخِي، هَلْ لَكَ وَجْهٌ عِنْدَ هَذَا الأَمِيرِ، فَاسْتَأْذِنْ لِي عَلَيْهِ، قَالَ: سَأَسْتَأْذِنُ لَكَ عَلَيْهِ، قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: «فَاسْتَأْذَنَ الحُرُّ لِعُيَيْنَةَ فَأَذِنَ لَهُ عُمَرُ»، فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهِ قَالَ: هِيْ يَا ابْنَ الخَطَّابِ، فَوَاللَّهِ مَا تُعْطِينَا الجَزْلَ وَلاَ تَحْكُمُ بَيْنَنَا بِالعَدْلِ، فَغَضِبَ عُمَرُ حَتَّى هَمَّ أَنْ يُوقِعَ بِهِ، فَقَالَ لَهُ الحُرُّ: يَا أَمِيرَ المُؤْمِنِينَ، إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ لِنَبِيِّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: {خُذِ العَفْوَ وَأْمُرْ بِالعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الجَاهِلِينَ} (الأعراف: 199)، وَإِنَّ هَذَا مِنَ الجَاهِلِينَ، «وَاللَّهِ مَا جَاوَزَهَا عُمَرُ حِينَ تَلاَهَا عَلَيْهِ، وَكَانَ وَقَّافًا عِنْدَ كِتَابِ اللَّهِ
অর্থ: “ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “উয়াইনাহ ইবনে হিসন ইবনে হুজাইফা তার ভাতিজা হুর ইবনে কায়সের মেহমান হলেন। আর হুর ইবনে কায়স ছিলেন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন। কারীগণ ছিলেন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর মজলিসের সদস্য এবং পরামর্শ দাতা, চাই তারা বৃদ্ধ হোক বা যুবক হোক।” তখন উয়াইনা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু ভাতিজাকে বললেন: ‘ভাতিজা! এই আমীরের কাছে তোমার কোন অবস্থান আছে কী? থাকলে আমার জন্য তার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চাও’। তিনি বললেন: ‘অবশ্যই অনুমতি চাচ্ছি’।
ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন: পরবর্তীতে হুর ইবনে কায়স উয়াইনার জন্য অনুমতি চাইলে উমর তাকে অনুমতি প্রদান করে। তিনি সাক্ষাৎ করা মাত্রই বলে উঠলেন: ‘হে ইবনুল খাত্তাব! আল্লাহর শপথ আপনি আমাদের পর্যাপ্ত দান করেন না এবং আমাদের মাঝে ন্যায়ের সাথে বিচার করেন না’। তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু রেগে গেলেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে হুর ইবনে কায়স বললেন : হে আমীরুল মুমিনিন! আল্লাহ তো তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন:
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
অর্থ: “(হে নবী!) আপনি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করুন এবং মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিন আর অজ্ঞদের অগ্রাহ্য করুন।” (সূরা আরাফ 7:১৯৯)
আর এই লোক তো জাহেল।
এই আয়াত শুনে উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেমে গেলেন, কারণ আল্লাহর কিতাবের সামনে নিজেকে সঁপে দেয়াই ছিল তাঁর বৈশিষ্ট্য।” (বুখারী: ৪৬৪২)।
ইবনে সাবেত থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন: একদা উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর কানে তার কিছু গভর্নরের পক্ষ হতে কিছু সমালোচনা আসে। তখন তিনি সকলকে সমবেত করে ভাষণ দেন। সে ভাষণে তিনি বলেন: ‘হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের তত্ত্বাবধায়কের রয়েছে তোমাদের উপর অধিকার। আর তা হল: তাঁর জন্য গোপনে কল্যাণ কামনা করা এবং তাঁকে ভালো কাজে সহায়তা করা। জেনে রাখ; আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিস হল ন্যায়পরায়ণ শাসকের সহনশীলতা এবং কোমলতা। আর অত্যাচারী শাসকের অজ্ঞতা হলো আল্লাহর কাছে ঘৃণ্যতম অজ্ঞতা। আর যারা নিজেদের অধীনস্থদের সাথে সহনশীলতার আচরণ করবে আসমান থেকে তাদের সাথে সহনশীলতার আচরণের ফায়সালা করা হবে’।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য: সেনাদের জন্য দুআ ও ইস্তেগফার করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَاسْتَغْفِرْ لَهُم
অর্থ: তাদের জন্য মাগফেরাতের দুআ করুন। (সুরা আল-ইমরান – ৩:১৫৯)
বিশেষভাবে এই গুণটি দ্বারা গুণান্বিত হওয়া শুধু একজন প্রকৃত মুমিন আমীরের পক্ষেই সম্ভব। কারণ এটি গতানুগতিক কোন বিষয় নয়, বরং আবেগ-অনুভূতি ও গভীর ভালোবাসা থেকেই শুধু এটি সম্ভব। যার ফলে আমীর শুধু তার অনুসারীদের ভুলকেই ক্ষমা করবেন না বরং তিনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তিগফারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। যেন আল্লাহও তাদের ক্ষমা করে দেন।
নিঃসন্দেহে এই উত্তম চরিত্রটি স্বচ্ছ, কোমল ও নিষ্কলুষ সহনশীল হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি থেকেই হবে, যিনি তাঁর চারপাশের মানুষকে ভালোবাসতে জানেন। আর আমীর ও তার রবের মাঝে এই যে ইস্তেগফারটি, আমীর এবং সৈন্যের হৃদয়ে বিরাট প্রভাব ফেলে। যদিও তাদের মাঝে সরাসরি কোন কথা না হয়। আর এটা অন্তরের ভাষা, যা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। কেউ চাইলে এই বিষয়টি তার জীবনে পরীক্ষা করেও দেখতে পারে।
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য: পরামর্শ করা ও মতামত নেয়া।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ
অর্থ: “এবং (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।” (সুরা আল-ইমরান – ৩:১৫৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিপক্ব বিবেক ও সঠিক মতামতের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করতেন। আল্লাহ তায়ালার আদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন এবং সাহাবীদের হৃদয় খুশি করার জন্য। আর পরামর্শ করার মধ্যে অনেক উপকার এবং ইহকালীন ও পরকালীন অগণিত কল্যাণ রয়েছে। যেমন:
(ক) পরামর্শ করা এমন ইবাদত যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
(খ) পরামর্শের মাধ্যমে আমীর সাথীদের মন জয় করতে পারে। বিভিন্ন বিপদাপদের কারণে সাথীদের মনে কোন কষ্ট থাকলে তা মুছে যায়। আমীর যদি সৈনিকদের মধ্যে জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের সমবেত করে নতুন যে কোন বিষয় তাদের সাথে পরামর্শ করে, তাহলে তাদের মন প্রশান্তি লাভ করবে এবং তারা তাকে ভালোবাসবে। এ ছাড়াও তারা নিশ্চিত হবে যে, আমীর তাদের সাথে স্বেচ্ছাচারী হতে চান না। বরং তিনি সর্বসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ লক্ষ্য করেন। তখন তারা সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েও আমীরের আনুগত্য করবে। কারণ তারা জানে যে, তিনি জনকল্যাণ মূলক কাজে সচেষ্ট।
বিপরীতে যে আমীর এ গুনে গুণান্বিত নয়, জনগণ কিছুতেই তাকে সত্যিকারের ভালোবাসবে না এবং মন থেকে তাদের আনুগত্য করবে না। আর পরামর্শের মাধ্যমে কাজ করলে সব কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়। এভাবে নিজের চিন্তাধারা ও বুদ্ধিরও উন্নতি হয়।
পরামর্শ চাওয়ার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত জানা যায়। কারণ পরামর্শদানকারী নিজ কর্মে ভুল করেন না। আর যদিও ভুল করে কিংবা কাঙ্ক্ষিত বিষয় অর্জিত না হয়, তারপরও সে নিন্দিত নয়। কারণ আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বলেছেন:
وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْر
অর্থ: “এবং (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।” (সুরা আল-ইমরান – ৩:১৫৯)
অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবেক ছিল অন্যদের তুলনায় পরিপূর্ণ, ইলম ছিল পর্যাপ্ত এবং তাঁর সিদ্ধান্ত ছিল তাদের মাঝে সর্বোত্তম। তা সত্বেও আল্লাহ তাঁর রাসূলকে পরামর্শ নেয়ার আদেশ করেছেন। তাহলে আমরা কেন পরামর্শ নেবো না?
পঞ্চম বৈশিষ্ট্য: সেনাদের শক্তি সামর্থ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া।
আমীরের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল, সৈনিকদের উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে তাদের সুপ্ত প্রতিভা থেকে যথাযথ উপকৃত হওয়া। আর তাই একজন আমীরের অবশ্য কর্তব্য হল তার সৈনিকদের সুপ্ত প্রতিভাগুলো খুঁজে বের করা এবং সেগুলো যথাযথভাবে কাজে লাগানো।
ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্য: সেনাদের সার্বিক অবস্থা জানা।
আমীরের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল; মাঝেমাঝে সেনাদের অবস্থার খোঁজ-খবর নেয়া, তাদের সম্পর্কে উদাসীন না হওয়া এবং তাদের ব্যক্তিগত সমস্যাসমূহের সমাধানে তাদের সহযোগিতা করা। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের অবস্থার খোঁজ খবর রাখতেন। অনুপস্থিত ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। অসুস্থ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করতেন এবং তাদের দেখতে যেতেন। এভাবেই জনমনে আমীরের ভালোবাসা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কারণ মানুষ তো তাকেই ভালোবাসে যে তার প্রতি সদাচার করে।
সপ্তম বৈশিষ্ট্য: সেনাদেরকে শিক্ষা দেয়া।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের শিক্ষা, দীক্ষা, আত্মশুদ্ধির বিষয়ে খেয়াল রাখতেন এবং তাদেরকে মহৎ চরিত্রের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। তাদেরকে সম্প্রীতি, ভালবাসা, আত্মমর্যাদা, শিষ্টাচার, ইবাদত ও আনুগত্য শিক্ষা দিতেন।
أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ؟ قَالَ: «تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ
অর্থ: “জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলো: ইসলামের কোন জিনিসটা উত্তম? তিনি বললেন: তুমি মানুষকে আহার দান করবে, পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দিবে।” (বুখারী – ১২ )।
তিনি আরও বলেছেন:
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ
অর্থ: “ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার প্রতিবেশী তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ থাকে না।” (মুসলিম – ৪৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
«المُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ
অর্থ: “প্রকৃত মুসলিম সে যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলিম ভাই নিরাপদ থাকে।” (বুখারী – ৬৪৮৪)
তিনি আরও বলেন:
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
অর্থ: “তোমাদের কেউ মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অপর মুসলিম ভায়ের জন্যও তা পছন্দ করে।” (বুখারি – ১৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
الْمُؤْمِنُونَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ إِنِ اشْتَكَى رَأْسُهُ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالْحُمَّى وَالسَّهَرِ
অর্থ: “সকল মুমিন এক দেহের ন্যায়, যদি তার মাথায় আঘাত পায় তাহলে তার পুরো দেহ জ্বরাক্রান্ত থাকে এবং নির্ঘুম থাকে।” (মুসলিম – ২৫৮৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا
অর্থ: “এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য মজবুত প্রাচীরের ন্যায়, যার একাংশ আরেকাংশকে মজবুত করে রাখে।” ( মুসলিম – ২৫৮৫)
তিনি আরও বলেন:
لاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا، وَلاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ
অর্থ: “তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ ও হিংসা পোষণ করোনা এবং এক অপরের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়োনা। বরং তোমরা পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আল্লাহর প্রকৃত বান্দা হও। কোন মুসলমানের জন্য বৈধ নয় যে সে তার অপর মুসলিম ভাইকে তিন দিনের বেশী সময় পরিত্যাগ করবে।” (বুখারী – ৫০৬৫)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
ارْمُوا بَنِي إِسْمَاعِيلَ، فَإِنَّ أَبَاكُمْ كَانَ رَامِيًا
অর্থ: “হে বনী ইসমাইল! তোমরা নিক্ষেপ করতে শিখো, কারণ তোমাদের বাবা নিক্ষেপকারী (তীরন্দাজ) ছিলেন।” (বুখারী – ২৮৯৯)
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: كُنْتُ خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا، فَقَالَ: «يَا غُلَامُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ، احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ، إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ، وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ، وَلَوْ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ، رُفِعَتِ الأَقْلَامُ وَجَفَّتْ الصُّحُفُ» هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ “
অর্থ: “ইবনে আব্বাস রাজি; থেকে বর্ণিত; একদা তিনি বলেন: ‘হে বালক! আমি তোমাকে কিছু শব্দ শিখাবো। তুমি আল্লাহর বিধানাবলীর হেফাজত করো, আল্লাহ তোমার হেফাজত করবেন! তুমি আল্লাহর বিধানাবলীর হেফাজত করো, তাহলে আল্লাহকে তোমার সামনে পাবে! যদি কোন কিছু প্রার্থনা করো তাহলে আল্লাহর কাছেই করো! আর যদি সাহায্য চাও তাহলে আল্লাহর কাছেই চাও। আর জেনে রেখো, যদি পুরো জাতি তোমার কোন উপকার করতে চায় তাহলেও তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না, তবে ততোটুকু উপকার করতে পারবে যার ফয়সালা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রাখেন। আর যদি পুরো জাতি তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় তাহলে তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তবে ততোটুকু ক্ষতি করতে পারবে যা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রাখেন। তকদীর লেখার কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং সহীফার কালি শুকিয়ে গেছে।” (তিরমিযী – ২৫১৬, তিরমিযী রহিমাহুল্লাহ. বলেন: হাদিসটি হাসান ও সহীহ)
সংযোজন:
ইমাম দারেমী ও অন্যান্যরা আবু মুসা আশআরী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: ‘তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালার কিতাব ও তার নবীর সুন্নাহ শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং তোমাদের পথ-ঘাট পরিষ্কার করার জন্য আমীরুল মুমিনিন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন’।
ইমাম আহমাদ-আবু ফিরাস থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: উমর ইবনুল খাত্তাব ভাষণে বলেন: ‘জেনে রাখ, আল্লাহর শপথ! তোমাদের শরীরে আঘাত করার জন্য এবং সম্পদ লুটপাট করার জন্য আমি তোমাদের কাছে আমার গভর্নর পাঠাইনি। বরং তোমাদেরকে দ্বীন এবং সুন্নাহ শিক্ষা দেয়ার জন্য তাকে পাঠিয়েছি’।
অষ্টম বৈশিষ্ট্য: দায়িত্ব গ্রহণ করা এবং সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করা।
আবু যার রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমাকে গভর্নর নিযুক্ত করবেন না’? তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় হাত আমার কাঁধে রেখে বলেন: ‘হে আবু যার! তুমি তো দুর্বল। আর গভর্নরের দায়িত্ব একটি আমানত। কিয়ামতের দিন তা হবে লাঞ্ছনা ও লজ্জার কারণ। তবে যে তা যথাযথভাবে গ্রহণ করবে এবং তার উপর আরোপিত দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে সে লাঞ্ছিত হবে না’।
তাই আমীরের কর্তব্য হল, নেতৃত্বের মাধ্যমে শুধু সম্মানের প্রতি লোভী না হওয়া। কারণ এই দায়িত্ব শুধুমাত্র সম্মানের নয়, বরং এটি কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনা ও লজ্জার কারণ হবে। আমীরের কর্তব্য হল, সংগঠনের দ্বীনি ও দুনিয়াবি সকল বিষয় সুবিন্যস্ত আকারে সম্পাদন করা। তাঁর অবহেলার কারণে যেন এই গুরু দায়িত্ব নষ্ট না হয়। যেমন, তিনি সংগঠনের জন্য একজন ইমাম ও মুয়াজ্জিন নির্বাচন করবেন। বিভিন্ন বাহিনী ও সেনাবাহিনীর জন্য আমীর নির্ধারণ করবেন এবং তার অনুপস্থিতিতে একজন প্রতিনিধিকে তার স্থলাভিষিক্ত করবেন।
সেনাবাহিনীর কাজগুলো সুবিন্যস্ত ভাবে আঞ্জাম দেয়ার কিছু নমুনা:
এক. অনুসারীদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের আদেশ করা এবং নাফরমানী থেকে বাধা প্রদান করা। যেমনটি উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু পারস্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যাত্রা কালে সা’আদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস এবং তাঁর সেনাবাহিনীর কাছে পত্র লিখে পাঠান।
“হামদ ও সানার পর,
তোমাকে এবং তোমার সেনাদেরকে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করার আদেশ করছি। কারণ শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের সর্বোত্তম প্রস্তুতি হল তাকওয়া অবলম্বন করা। যুদ্ধের ময়দানেও এটাই সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল।
তুমি ও তোমার সাথীরা নাফরমানী সম্পূর্ণভাবে পরিহার করবে। তোমাদের মাঝেই রয়েছে তোমাদের শত্রু। কারণ সেনাদের অপরাধ শত্রুর চেয়েও বেশী ক্ষতিকর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার সাথে শত্রুদলের নাফরমানির কারণেই আল্লাহ মুসলিমদেরকে সাহায্য করেন। যদি তাদের এই নাফরমানি না থাকতো তাহলে তাদের মোকাবেলা করার জন্য আমাদের কোন শক্তিই থাকতো না।
আমাদের সেনা সংখ্যা এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি তো তাদের সমান নয়। তাই যদি নাফরমানির ক্ষেত্রে আমরা তাদের বরাবর হই, তাহলে তো শক্তির ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে আমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব। ফলে তারা আমাদের উপর বিজয় লাভ করবে। আর যদি আমরা তাদের উপর বিজয়ী হতে চাই তবে তাকওয়া ও নাফরমানি ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে হবে, কারণ শক্তির মাধ্যমে আমরা তাদের উপর বিজয়ী হতে পারবো না।
জেনে রাখো; তোমাদের এই অভিযানে তোমাদের সাথে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে সংরক্ষণকারী ফেরেশতা। তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তারা অবগত। তাই তোমরা তাদের থেকে লজ্জা করো। জিহাদের পথে থেকে আল্লাহর নাফরমানি করো না। এটা বলো না যে, শত্রুবাহিনী আমাদের চেয়ে নিকৃষ্ট, তাই মন্দ কাজ করলেও তিনি কিছুতেই তাদেরকে আমাদের উপর ক্ষমতা প্রদান করবেন না। কারণ এমন অনেক সম্প্রদায় রয়েছে যাদেরকে তাদের চেয়ে নিকৃষ্ট লোকেরাই শাসন করেছে।
বনি ইসরাইল যখন আল্লাহকে অসন্তুষ্টকারী কাজসমূহ করেছে তখন আল্লাহ তাদের উপর অগ্নি পূজক কাফেরদেরকে চাপিয়ে দিয়েছেন এবং তারা অলিতে গলিতে হানা দিয়ে বনী ইসরাইলকে হত্যা করেছে। আর এটি ছিল আল্লাহর কার্যকর প্রতিশ্রুতি। তাই তোমরা তোমদের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর, যেভাবে তোমরা তাঁর কাছে শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য প্রার্থনা কর। আমরাও আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য এরই প্রার্থনা করছি।”
দুই. তিনি নিজে তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও অস্ত্রশস্ত্রের খোজ খবর নিবেন যে – তা পর্যাপ্ত আছে কিনা এবং ঠিক আছে কিনা?
তিন. তিনি তাদের অবস্থান, রাত যাপন এবং তাদের খাবারের স্থান সম্পর্কে খোঁজখবর রাখবেন।
চার. দিনে ও রাতে পাহারার জন্য পর্যাপ্ত লোক নির্ধারণ করবেন। দিনের তুলনায় রাতে অধিক প্রহরী পালাক্রমে পাহারা দিবে, যাতে তন্দ্রার কারণে কোন ক্ষতি না হয়।
পাঁচ. আমীর তার অনুসারীদের মধ্যকার দ্বন্ধের সমাধান করবেন। কিংবা এই কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য একজনকে তার স্থলাভিষিক্ত করবেন। তাঁর কর্তব্য হল, শুধু অন্যায়কারীকে শাস্তি দেয়া, অন্য কাউকে নয়। কারণ আল্লাহ বলেছেন:
أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى
অর্থ: “কোন ব্যক্তি অন্য কারো অপরাধের বোঝা বহন করবে না।” (সূরা নাজম ৫৩:৩৮)
সংযোজন:
ইমাম মাওয়ারদী রহিমাহুল্লাহ তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আল আহকামুস সুলতানিয়াহ” কিতাবে জিহাদ ও যুদ্ধের যাত্রাকালের সময় আমীরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন: সেনাদের নিয়ে যুদ্ধে যাত্রার সময় আমীরের উপর সাতটি দায়িত্ব রয়েছে।
এক. যুদ্ধের জন্য যাত্রাকালে অতি তাড়াহুড়া না করা। খুব দ্রুত না চলা, যাতে দুর্বল ব্যক্তিরা সবার সাথে সঙ্গ দিয়ে চলতে পারে এবং সেনাদের শক্তি সংরক্ষিত থাকে। দ্রুত চললে দুর্বল ব্যক্তি নিস্তেজ হয়ে পড়বে, শক্তিশালীর শক্তি ফুরিয়ে যাবে। তাই দ্রুত চলবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
هذا الدين متين ، فأوغلوا فيه برفق . فإن المنبت لا أرضا قطع ولاظهرا أبقي و شر السير الحقحقة .
অর্থ: এই দ্বীন তথা ইসলাম ধর্ম মজবুত ও সুদৃঢ়, তাই ইসলাম পালনে তোমরা কোমল হও। কারণ যুদ্ধ যাত্রায় যে বাড়াবাড়ি করে সে পথের শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনা এবং নিজের বাহন টিকিয়ে রাখতে পারেনা। ভ্রমণের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট হচ্ছে দুর্বলদের খেয়াল না করে দ্রুত ভ্রমণ।” (সূত্র: আল আহকামুস সুলতানিয়াহ, এই কিতাবের টিকায় বলা হয়েছে হাদিসটি যয়ীফ-শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানী হাদিসটি যয়ীফ বলেছেন)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, দুর্বল ব্যক্তি সফর সঙ্গীদের আমীর হবে। অর্থাৎ যার বাহন দুর্বল হয়ে পড়বে সফর সঙ্গীদেরকে দুর্বল সাথীর চলার গতিতে চলতে হবে।
হাদিসের উদ্দেশ্য হল; যদি কাফেলায় কারো বাহন নিস্তেজ হয়ে পড়ে তখন সম্প্রদায়ের কর্তব্য চলার ক্ষেত্রে তার প্রতি খেয়াল রাখা।
দুই. যেসব ঘোড়া ও বাহনে চড়ে সেনারা যুদ্ধ করবে, সেসব বাহনের দেখা-শুনা করবেন। তাই জিহাদের ময়দানে অনেক মোটা, দুর্বল, রোগা, হাল্কা-পাতলা ও ছোট ওলান বিশিষ্ট কোন বাহন ব্যবহার করবে না। কেননা তখন এসব বাহন নিজে বাহন হওয়ার কারণে নিজেকে এবং তার আরোহীকে শত্রু পক্ষ থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আমীর আরোহণের বাহনগুলোর দেখাশোনা করে যেসব বাহন চলতে পারে না, সেগুলোকে অন্যান্য বাহন থেকে পৃথক করবেন। সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত বহন করতে বারণ করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن قُوَّةٖ وَمِن رِّبَاطِ ٱلۡخَيۡلِ
অর্থ: “(হে মুসলিমগণ!) তোমরা তাদের (মোকাবেলার) জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-ছাউনি প্রস্তুত কর।” (সূরা আনফাল ৮:৬০)
তিন. আমীর তার যোদ্ধাদের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। সেনা আবার দু প্রকার। ভাতা প্রাপ্ত মুজাহিদ এবং সেচ্ছাসেবী মুজাহিদ। ভাতা প্রাপ্তরা বাইতুল মালের রেজিস্টার ভুক্ত থাকবে। সক্ষমতা ও প্রয়োজন অনুপাতে বাইতুল মালের গনিমত থেকে তাদেরকে তাদের অংশ দিয়ে দিতে হবে।
আর সেচ্ছাসেবী মুজাহিদ হল – বেদুইন, মরুভূমি, গ্রাম এবং শহরের ঐ সকল অধিবাসীরা, যারা আল্লাহর তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে বের হয়েছে:
ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا وَجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ
অর্থ: “(জিহাদের জন্য) বের হয়ে পড়, তমরা হালকা অবস্থায় থাক বা ভারি অবস্থায় এবং নিজেদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর।” (সুরা তাওবা ৯:৪১)
এই প্রকারের যোদ্ধাদেরকে গনিমত দেয়া হবে না। বরং আল্লাহ ও তার রাসূলের জন্য বণ্টিত গনিমতের এক পঞ্চমাংশ থেকে তাদেরকে সদকা হিসেবে দেয়া হবে।
চার. কাফেলার দায়িত্বশীল ও জ্ঞানীদেরকে আমীর বিভিন্ন দলে ভাগ করে দিবেন। তাদের মাধ্যমে সমস্ত কাফেলার অবস্থা সহজেই জানতে পারবেন এবং সহজেই তাদের সাথে যে কোন বৈঠক করতে পারবেন। বিভিন্ন যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এমনটা করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا
অর্থঃ “আর আমি তোমাদেরকে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীতে ভাগ করেছি যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো।” (সুরা হুজুরাত ৪৯:১৩)
পাঁচ. প্রত্যেক দলের জন্য একটি প্রতীক নির্ধারণ করবেন, যাতে তারা একে অপরকে ডাকতে পারে, অন্যদের থেকে আলাদা হতে পারে এবং সংঘবদ্ধ লড়াইয়ের মাধ্যমে সফল হতে পারে।
উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজিরদের জন্য প্রতীক নির্ধারণ করেছেন। তাই তিনি তাদেরকে ‘ইয়া বনী আব্দির রহমান’, আর খাজরাজকে ডাকতেন, ‘ইয়া বনী আব্দিল্লাহ’ বলে। আউস গোত্রকে ডাকতেন ‘ইয়া বনী উবাইদিল্লাহ’ বলে। নিজ ঘোড়ার নাম রেখেছেন ‘খয়লুল্লাহ’ তথা আল্লাহর ঘোড়া।
ছয়. কাফেলার ভিতরে গোপন দৃষ্টি রাখবে। যাতে যারা মুজাহিদদেরকে অপমান করে, মুসলমানদের নামে মিথ্যা রটনা করে কিংবা মুসলিমদের ভিতরে থেকে মুশরিকদের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করে, তাদেরকে চিহ্নিত করতে পারে।
আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল মুসলমানদেরকে লাঞ্ছিত করার কারণে তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু যুদ্ধে বের হতে দেননি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَقَٰتِلُوهُمۡ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتۡنَةٞ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ كُلُّهُۥ لِلَّهِۚ
অর্থ: “তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যতক্ষণ না পৃথিবী থেকে ফাসাদ নিঃশেষ হয় এবং কর্তৃত্ব পরিপূর্ণ আল্লাহর জন্য হয়।” (সুরা বাকারা ২:১৯৩)
অর্থাৎ তোমাদের একে অপরকে যেন ফেতনায় ফেলতে না পারে।
সাত. নিজের বংশের কিংবা নিজের মতের লোকদের পক্ষ নিয়ে অন্যদের উপর তাদেরকে প্রাধান্য না দেয়া। কারণ এতে দ্বন্ধ ও কলহে লিপ্ত হয়ে পারস্পরিক ঐক্যে ফাটল দেখা দিবে। মুনাফেকরা ইসলামের শত্রু হওয়া সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ব্যাপারে কোন হুকুম দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন এবং তাদেরকে বাহ্যিকভাবে মুসলমান আখ্যা দিয়েছেন। ফলে তাদের মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে, তাদের দ্বারা মুসলিমদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে মুসলিমদের কর্তৃত্ব পরিপূর্ণ হয়েছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অন্তরের নেফাকিকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করেছেন, যিনি সমস্ত অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ অবগত এবং অন্তরের গোপন বিষয়ের কারণে পাকড়াও করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ولا تنازعوا فتفشلوا وتذهب ريحكم
অর্থ: “আর তোমরা পরস্পর বিবাদ করো না, তাহলে শক্তি হারাবে এবং ব্যর্থ হবে।” (সূরা আনফাল ৮:৪)
(ইমাম মাওয়ারদী রহিমাহুল্লাহ. তাঁর গ্রন্থে এই সাতটি দায়িত্ব উল্লেখ করেছেন)
নবম বৈশিষ্ট্য: কাফেলার ঐক্যের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا
অর্থ: “আল্লাহর রশিকে (অর্থাৎ তাঁর দীন ও কিতাবকে) দৃঢ়ভাবে ধরে রাখ এবং পরস্পরে বিভেদ করোনা। (সূরা আলে ইমরান ৩:১০৩)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ اللهَ يَرْضَى لَكُمْ ثَلَاثًا، وَيَكْرَهُ لَكُمْ ثَلَاثًا، فَيَرْضَى لَكُمْ: أَنْ تَعْبُدُوهُ، وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَأَنْ تَعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا، وَيَكْرَهُ لَكُمْ: قِيلَ وَقَالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةِ الْمَالِ
অর্থ: “আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য তিনটি জিনিস পছন্দ করেন, আর তোমাদের জন্য তিনটি জিনিস অপছন্দ করেন। পছন্দনীয় তিনটি জিনিস হল: আল্লাহর ইবাদত করা, আল্লাহর সাথে শিরক না করা, আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরা এবং বিক্ষিপ্ত না হওয়া। অপছন্দনীয় জিনিস তিনটি হল: গড়িমসি করা, বেশি বেশি প্রশ্ন করা ও মাল অপচয় করা।” (মুসলিম, হাদিস -১৭১৫)
মতবিরোধ ও মতানৈক্য থেকে বাঁচার উপায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি প্রসিদ্ধ হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, তিনি বলেন:
أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَإِنْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّهَا ضَلَالَةٌ فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَعَلَيْهِ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ المَهْدِيِّينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ
অর্থ: “আমি তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করার ওসিয়ত করছি। শ্রবণ ও আনুগত্য করার ওসিয়ত করছি, যদিও কোন হাবশি গোলামকে তোমাদের উপর আমীর নিযুক্ত করা হয়। কারণ তোমাদের মধ্য হতে আমার পর যারা থাকবে তারা অনেক মতানৈক্য দেখবে। তোমরা ইসলামের মধ্যে নতুন নতুন বিষয়াদি আবিষ্কার করা থেকে এবং তা অনুসরণ করা থেকে সাবধান থাক। আর ইসলামের মধ্যে প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বস্তু পথভ্রষ্টতা। তখন তোমাদের কর্তব্য হল আমার সুন্নত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা এবং এই সুন্নাহকে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা।” (তিরমিযী, হাদিস নং – ২৬৭৬)
ইমাম তিরমিযী রহিমাহুল্লাহ ইরবাজ ইবনে সারিয়াহ থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেন এবং হাদিসটিকে তিনি হাসান বলেছেন।
জামাতে ফাটল ধরা থেকে রক্ষা পাওয়ার মাধ্যমসমূহ:
১. নিজ বংশ বা আপন মতের লোকদের পক্ষ নিয়ে অন্যদের উপর তাদেরকে প্রাধান্য না দেয়া। এতে ঐক্যের মধ্যে ফাটল দেখা দিবে। বরং আচার আচরণে সকল সেনাদের মাঝে সমতা রক্ষা করা।
২. সাথীরা যদি কোন বিষয় অস্পষ্ট মনে করে তাহলে সেটা স্পষ্ট করে দেয়া, যাতে সমালোচনা না হয়। হুনাইনের যুদ্ধে গনিমত বণ্টনের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটিই করেছিলেন। তিনি গনিমত থেকে প্রথমে আনসারদের না দিয়ে মুয়াল্লাফাতুল কুলুবদেরকে দিলে (মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে যাদেরকে টাকা দেয়া হয়) আনসারদের মনে খটকা তৈরি হয়, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তাদের সামনে তাঁর কাজের হিকমত স্পষ্ট করে দেন।
৩. ঐক্যের মধ্যে ফাটল সৃষ্টিকারী তর্ক-বিতর্কের সুযোগ না দেয়া। জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
اقرؤا القرآن ماائتلفت عليه القلوب فإذا اختلفتم فقوموا عنه
অর্থ: “তোমরা পরিচিত কেরাতে কুরআন তেলাওয়াত কর, আর যখন তোমাদের কেরাতের মধ্যে পার্থক্য দেখা দিবে তখন তোমরা তেলাওয়াত রেখে অন্য কাজে ব্যস্ত হও।” (বুখারী, হাদিস নং – ৫০৬০)
৪. একটি জামাতের মাঝে বিভিন্ন ছোট ছোট দলে বিভক্ত হওয়ার সুযোগ না দেয়া। কারণ তা ঐক্যের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করে এবং ঝগড়া বিবাদের বীজ বপন করে। আর নিন্দিত দলের মধ্যে রয়েছে জাতীয়তাবাদী দলগুলো। তারা বংশ ইত্যাদির সম্পর্ককে ইসলামের সম্পর্কের উপর প্রাধান্য দেয়। তাদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
من قاتل تحت راية عمية يغضب لعصبية أو يدعو إلى عصبية أو ينصر عصبية فقتل فقتلة جاهلية
অর্থ: যে ব্যক্তি কোন অন্ধ পতাকাতলে যুদ্ধ করে, জাতীয়তার জন্য ক্রদ্ধ হয় অথবা জাতীয়তার দিকে আহ্বান করে কিংবা জাতীয়তাকে সাহায্য করে সে নিহত হয় তাহলে এই নিহত হওয়া এক ধরণের জাহিলিয়াতের মৃত্যু।” (মুসলিম শরীফ, হাদিস – ১৮৪৮)
নিন্দিত দলগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে ধর্মীয় দলাদলি। যেমন, দ্বীন ও অন্য কোন বিষয়ে কোন মত অথবা কোন ফিকহি মাজহাবের কিংবা কোন শায়েখের পক্ষপাতিত্ব করা।
৫. পরামর্শ কমিটির সাথে পরামর্শ করে সদস্যদের মধ্য হতে যাদের থেকে ক্ষতির আশঙ্কা হয় তাদেরকে দূরে রাখা বা যারা সংগঠনের কাজ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয় তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন, যেসব সেনা মানুষের মাঝে গীবত এবং চোগলখুরী করে বেড়ায়, তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৬. আমীর নিজে অনুসারীদের এড়িয়ে বিশেষভাবে কোন কিছু নিবেন না। যাতে আমীরের জন্য তাদের মন বিগড়ে না যায়। সুতরাং কর্তব্য হলো তারা যা খাবে আমীরও তাই খাবে। তাদের মতো ঘুমাবে, তাদের মত বাহন গ্রহণ করবে অথবা তাদের চেয়ে কম সুবিধা গ্রহণ করবে। কাজের প্রয়োজন ছাড়া নিজে বিশেষভাবে কোন সামান গ্রহণ করবেন না।
দশম বৈশিষ্ট্য: সেনাদের সাথে ইনসাফ করা।
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَا مِنْ أَمِيرِ عَشَرَةٍ إِلَّا يُؤْتَى بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَغْلُولًا لَا يَفُكُّهُ مِنْهَا إِلَّا عَدْلُهُ
অর্থঃ “উবাদাহ ইবনে সামেত থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তিই অন্য দশ জনের আমীর হবে তাকে কেয়ামতের দিন বেড়ী পরানো অবস্থায় উপস্থিত করা হবে, দুনিয়াতে আমীর অবস্থায় তার ন্যায়পরায়ণতাই শুধু তার সেই বেড়ী খুলতে পারবে।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস -২২৭৫৮)
আমীরের দায়িত্ব হল; তার অনুসারীদের মাঝে ইনসাফ করা। তাই যখন সাথীদের মাঝে বিবাদ ও ঝগড়া হবে, হয় আমীর নিজে তা ফায়সালা করবেন, কিংবা জুলুমের বিচারের জন্য তার পক্ষ হতে একজনকে প্রতিনিধি বানাবেন, যিনি মাজলুমের সাথে ন্যায়ভাবে বিচার করবেন। সেইসাথে ধমক ও শাস্তির মাধ্যমে জালেমের জুলুমকে প্রতিহত করবেন। আমীরের চেষ্টা থাকবে সকল বিষয় ইনসাফের সাথে সম্পাদন করা, যাতে অপরাধী-সেনা থেকে আল্লাহর ক্রোধ দূর হয়ে যায়।
যদি মুসলিম ভাইদের মাঝে তাদের পারষ্পরিক অধিকারের ক্ষেত্রে বিভেদ হয় তখন শাস্তি প্রয়োগ করার চেয়ে সমঝোতাই অতি উত্তম। আর আমীর এবং তার প্রতিনিধি বিবাদকারীদের উপদেশ দিবেন, তাদেরকে পারষ্পরিক শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। বিশেষ করে জিহাদের ময়দানে নিজেদের ব্যক্তিগত ভূমিকাগুলো ভুলে যেতে আদেশ করবেন। তাই শত্রুতা, বিদ্বেষ দূর করার ক্ষেত্রে শাস্তি দেয়ার চেয়ে সংশোধন করাই বেশি কার্যকরী। আল্লাহ ইঙ্গিত করে কুরআনে বলেন:
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ
অর্থ: “সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক শুধরে নাও।” (সূরা আনফাল ৮:১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَفْضَلَ مِنْ دَرَجَةِ الصِّيَامِ وَالصَّلَاةِ وَالصَّدَقَةِ؟» قَالُوا: بَلَى، يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «إِصْلَاحُ ذَاتِ الْبَيْنِ، وَفَسَادُ ذَاتِ الْبَيْنِ الْحَالِقَةُ .
অর্থ: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
আমি কি তোমাদেরকে রোজা, যাকাত এবং সাদাকার চেয়ে উত্তম কোন আমলের সংবাদ দেবো? তারা বলল: হাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি বলেছেন: মীমাংসার মধ্যমে সৎ সম্পর্ক রক্ষা করা এবং অসৎ সম্পর্ক মিটিয়ে দেয়া।” (আবু দাউদ, হাদিস – ৪৯১৯)। হাদিসটিকে শাইখ আলবানি সহীহ বলেছেন।
অসৎ সম্পর্ক মানে এমন সম্পর্ক যা দ্বীনকে নষ্ট করে ফেলে।
প্রশাসনিক কল্যাণমূলক কাজে বিবাদ সৃষ্টি হলে আমীর সেনাদের মাঝে অধিক কল্যাণমূলক পদ্ধতিতে ফায়সালা করবেন।
একাদশতম বৈশিষ্ট্য: সেনারা কষ্ট দিলে তাতে ধৈর্য ধরা
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন: হুনাইনের যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আকরা ইবনে হাবেসকে একশটি উট দিয়েছেন, উইয়াইনাকে একশ উট দিয়েছেন। আরবের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের দিয়েছেন। সেদিন বণ্টনের ক্ষেত্রে তাদেরকে অন্যদের তুলনায় বাড়িয়ে দিয়েছেন। তখন এক লোক আপত্তি করে বলল: আল্লাহর কসম এই বণ্টনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনসাফ করেননি এবং এর দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। তখন আমি বললাম: আল্লাহর কসম! তোমার এ কথা অবশ্যই আমি রাসূলকে জানিয়ে দিবো। এরপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বিষয়টি জানালে তিনি সকলকে সম্বোধন করে বললেন:
«فَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ يَعْدِلِ اللَّهُ وَرَسُولُهُ، رَحِمَ اللَّهُ مُوسَى قَدْ أُوذِيَ بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ
অর্থ: “যদি আল্লাহ ও তার রাসূল ইনসাফ নাই করেন তাহলে কে ইনসাফ করবে?! আল্লাহ মুসা আলাইহিস সালাম এর উপর রহম করুক, তাঁকে তো এর চেয়েও বেশি কষ্ট দেয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি সবর করেছেন।” (বুখারী, হাদিস – ৩১৫০)
তাই সেনারা কষ্ট দেওয়ার পরও তাতে ধৈর্য ধারণ করবে। বাবা তার সন্তানের সাথে যেমন আচরণ করে তিনিও তাদের সাথে তেমন আচরণ করবেন। কারণ আমীর তো সবার দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু, সবার দৃষ্টিই তার প্রতি নিবদ্ধ থাকে। তাই আমীরের উচিৎ, তার অধীনে থাকা সকল সৈন্যকেই নিজের আয়ত্তে রাখা। কারণ আমীর ও সেনার মধ্যকার দ্বন্দ্ব আমীরের মর্যাদাকে কমিয়ে দেয় এবং নেতৃত্ব দেয়াটাও তাঁর জন্য দুর্বোধ্য হয়ে যায়।
সংযোজিত আরো কিছু বৈশিষ্ট্য:
দ্বাদশতম বৈশিষ্ট্য: সেনাদের প্রতি হিতাকাঙ্খী এবং যত্নবান হওয়া।
عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ أَنَّ عُبَيْدَ اللهِ بْنَ زِيَادٍ عَادَ مَعْقِلَ بْنَ يَسَارٍ فِي مَرَضِهِ، فَقَالَ لَهُ مَعْقِلٌ: إِنِّي مُحَدِّثُكَ بِحَدِيثٍ لَوْلَا أَنِّي فِي الْمَوْتِ لَمْ أُحَدِّثْكَ بِهِ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا مِنْ أَمِيرٍ يَلِي أَمْرَ الْمُسْلِمِينَ، ثُمَّ لَا يَجْهَدُ لَهُمْ، وَيَنْصَحُ، إِلَّا لَمْ يَدْخُلْ مَعَهُمُ الْجَنَّةَ
অর্থ: “আবুল মালিহ থেকে বর্ণিত যে, উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ মা’আকাল ইবনে ইয়াসারের অসুস্থতার সময় তাঁকে দেখতে গেলেন। তখন মা’আকাল তাকে বললো: আমি তোমার কাছে একটি হাদিস বর্ণনা করবো। আর যদি আমি মৃত্যুশয্যায় না থাকতাম তাহলে তা বর্ণনা করতাম না। আমি রাসূলকে বলতে শুনেছি: যে আমীর মুসলমানদের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে, কিন্তু তাদের প্রতি হিতাকাঙ্খী হবে না এবং তাদের বিষয়ে সচেষ্ট হবে না, তাহলে সে তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (মুসলিম, হাদিস – ১৪২)।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيهِ اللهُ رَعِيَّةً، يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ، إِلَّا حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ
অর্থঃ “যে বান্দাকে আল্লাহ প্রজাদের রক্ষক বানাবেন সে যদি মানুষের সাথে ধোঁকা ও প্রতারণা করা অবস্থায় মারা যায়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।” (মুসলিম – ১৪২)
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أمر أميرا على جيش، أو سرية، أوصاه في خاصته بتقوى الله، ومن معه من المسلمين خيرا
অর্থ: “সুলাঈমান ইবনে বুরদাহ তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন বাহিনী বা ছোট জিহাদি কাফেলার জন্য কাউকে আমীর বানাতেন, তখন তাকে বিশেষভাবে আল্লাহকে ভয় করার এবং তার সাথে থাকা মুসলমানদের ব্যাপারে কল্যাণ কামনার ব্যাপারে নির্দেশ দিতেন।” (মুসলিম – ১৭৩১)।
ইমাম বাইহাকী রহিমাহুল্লাহ সুনানে কুবরার ৯/৭০ ‘বাবু মা আলাল ওয়ালি মিন আমীরিল জাইশ’ তথা ‘সেনাদের বিষয়ে গভর্নরের কর্তব্য’ – এ অধ্যায়ে এ বিষয়টি উল্লেখ করেন।
ইমাম শা’ফেয়ী রহিমাহুল্লাহ বলেন: শাসকের কর্তব্য হলো; তিনি ধর্মীয় ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য, সাহসী, ধীরস্থিরতা অবলম্বনকারী, সমর বিষয়ে অভিজ্ঞ ও দৃষ্টি সম্পন্ন, তাড়াহুড়ো প্রবণ ও অদূরদর্শী নয়, এমন ব্যক্তিকে যুদ্ধের দায়িত্বশীল বানাবেন। আর শাসক তাকে আমীর বানাবেন এ শর্তে যে, তিনি কোন অবস্থাতেই মুসলমানদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবেন না।
ত্রয়োদশতম বৈশিষ্ট্য: সৈন্যদের থেকে আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য গ্রহণ না করা।
أَنَّهُ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ: بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي المَسْجِدِ، دَخَلَ رَجُلٌ عَلَى جَمَلٍ، فَأَنَاخَهُ فِي المَسْجِدِ ثُمَّ عَقَلَهُ، ثُمَّ قَالَ لَهُمْ: أَيُّكُمْ مُحَمَّدٌ؟ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَّكِئٌ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ، فَقُلْنَا: هَذَا الرَّجُلُ الأَبْيَضُ المُتَّكِئُ. فَقَالَ لَهُ الرَّجُلُ: يَا ابْنَ عَبْدِ المُطَّلِبِ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ أَجَبْتُكَ». فَقَالَ الرَّجُلُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنِّي سَائِلُكَ فَمُشَدِّدٌ عَلَيْكَ فِي المَسْأَلَةِ، فَلاَ تَجِدْ عَلَيَّ فِي نَفْسِكَ؟ فَقَالَ: «سَلْ عَمَّا بَدَا لَكَ
অর্থ: “আনাস ইবনে মালেক রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমরা মসজিদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বসা ছিলাম। তখন একজন লোক একটি উটে আরোহণ করে আগমন করলো। তারপর উটটিকে মসজিদের পাশে বসিয়ে বেধে রাখল। অতঃপর বলল: তোমাদের মাঝে মুহাম্মাদ কে? আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের সামনে হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তাই তার কথার প্রতিউত্তরে আমরা বললাম, হেলান দিয়ে বসে থাকা এই শুভ্র লোকটি। আগন্তুক লোকটি বলল: ‘হে আব্দুল মুত্তালিবের বেটা!’
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: ‘তুমি কি বলবে বলো, অবশ্যই আমি তোমার কথার উত্তর দিচ্ছি’। লোকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল: ‘আমি আপনাকে প্রশ্ন করবো এবং সে ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করবো। কিন্তু এতে আপনি আমার উপর মনকষ্ট নিবেন না’। রাসূ্ল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার যা ইচ্ছে প্রশ্ন করতে পরো … ” (বুখারী শরীফ, হাদিস, ৬৩)।
তারতুশী সিরাজুল মুলুকের ৫০ নং পৃষ্ঠায় এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, হাদিস থেকে বুঝে আসে যে, তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সভার বিশেষ কোন সম্মান গ্রহণ করেননি। আর না তিনি আলাদা কোন বেশ-ভূষা গ্রহণ করেছেন, না কোন বিশেষ আসন।
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: أَصَابَ النَّاسَ سَنَةٌ غَلَا فِيهَا السَّمْنُ، فَكَانَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَأْكُلُ الزَّيْتَ فَيُقَرْقِرُ بَطْنُهُ “. وَفِي رِوَايَةِ يَحْيَى قَالَ: ” كَانَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَأْكُلُهُ، فَلَمَّا قَلَّ قَالَ: ” لَا آكُلُهُ حَتَّى يَأْكُلَهُ النَّاسُ “. قَالَ: فَكَانَ يَأْكُلُ الزَّيْتَ فَيُقَرْقِرُ بَطْنُهُ “. قَالَ ابْنُ مُكْرَمٍ فِي رِوَايَتِهِ: ” فَقَالَ: ” قَرْقِرْ مَا شِئْتَ فَوَاللهِ لَا آكُلُ السَّمْنَ حَتَّى يَأْكُلَهُ النَّاسُ “. ثُمَّ قَالَ لِي: ” اكْسِرْ حَرَّهُ عَنِّي بِالنَّارِ “. فَكُنْتُ أَطْبُخُهُ لَهُ فَيَأْكُلُهُ
অর্থ: “যায়েদ ইবনে আসলাম তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ‘একবার লোকেরা একটি দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়, যাতে ঘির মূল্য অনেক বৃদ্ধি পায়। তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু ঘি না খেয়ে তেল খেতেন। ফলে তার পেটে গুড়গুড় শব্দ শুরু হয়’।
আর ইয়াহয়া রহিমাহুল্লাহ এর রেওয়াতে আছে, আসলাম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু ঘি খেতেন। এরপর যখন ঘি কমে আসল, তখন তিনি বললেন, ‘জন সাধারণ এই ঘি না খাওয়া পর্যন্ত আমি আর ঘি খাবোনা’। আসলাম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তেল খান। ফলে তার পেটে গুড়গুড় শব্দ করে’।
ইবনে মুকরিম তার বর্ণনায় বলেন, তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু পেটকে সম্বোধন করে বলেন: হে পেট! তুমি ইচ্ছামতো গুড়গুড় শব্দ করো। কিন্তু আল্লাহর কসম! মুসলিমরা ঘি না খাওয়া পর্যন্ত আমি ঘি খাবো না’। তারপর উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আমাকে বললেন: আগুনের মাধ্যমে তুমি এই তেলের উষ্ণতা কমিয়ে দাও। তখন আমি তাকে তা রান্না করে দিলে তিনি তা খেতেন।”
বাইহাকী রহিমাহুল্লাহ হাদিসটি বর্ণনা করেন যা সুনানে কোবরায় রয়েছে। (হাদিস -১৭৯০৯)
يَقُولُ: لَمَّا كَانَتِ الرَّمَادَةُ أَصَابَ النَّاسَ جُوعٌ شَدِيدٌ، فَلَمَّا كَانَ ذَاتَ يَوْمٍ رَكِبَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ دَابَّةً لَهُ، فَرَأَى فِي رَوْثِهَا شَعِيرًا فَقَالَ: ” وَاللهِ لَا أَرْكَبُهَا حَتَّى يَحْسُنَ حَالُ النَّاسِ
অর্থ: “সায়েব ইবনে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, ফলে মানুষ কঠিন ক্ষুধায় আক্রান্ত হয়। এরপর একদা উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু নিজের একটি বাহনে আরোহণ করেন। তখন তিনি নিজের বাহনের গোবরে জব দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! সাধারণ মানুষের অবস্থা ভালো না হওয়া পর্যন্ত আমি এই বাহনে আরোহণ করবো না’।”
সুনানে কোবরায় বায়হাকী রহিমাহুল্লাহ এই হাদিসটি বর্ণনা করেন। (হাদিস -১৭৯১১)
عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، قَالَ: «لَمَّا قَدِمَ عُتْبَةُ أَذْرَبِيجَانَ بِالْخَبِيصِ فَذَاقَهُ فَوَجَدَهُ حُلْوًا»، فَقَالَ: لَوْ صَنَعْتُمْ لِأَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ مِنْ هَذَا، قَالَ: فَجَعَلَ لَهُ سَفَطَيْنِ عَظِيمَيْنِ، ثُمَّ حَمَلَهُمَا عَلَى بَعِيرٍ مَعَ رَجُلَيْنِ فَبَعَثَ بِهِمَا إِلَيْهِ، فَلَمَّا قَدِمَا عَلَى عُمَرَ قَالَ: أَيَّ شَيْءٍ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا خَبِيصٌ، فَذَاقَهُ فَإِذَا هُوَ حُلْوٌ، فَقَالَ: أَكُلَّ الْمُسْلِمِينَ يَشْبَعُ مَنْ هَذَا فِي رَحْلِهِ؟ قَالُوا: لَا، قَالَ: فَرُدَّهُمَا، ثُمَّ كَتَبَ إِلَيْهِ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّهُ لَيْسَ مِنْ كَدِّكَ وَلَا مِنْ كَدِّ أَبِيكَ، وَلَا مِنْ كَدِّ أُمِّكَ أَشْبِعِ الْمُسْلِمِينَ مِمَّا تَشْبَعُ مِنْهُ فِي رَحْلِكَ
অর্থ: “আবু উসমান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: উতবা যখন আজারবাইজান আসলেন তখন তার সামনে খেজুরের লাড্ডু পেশ করা হয়। তিনি খেয়ে দেখলেন যে সেগুলো মিষ্টি। তখন তিনি বললেন: তোমরা যদি আমীরুল মুমিনের জন্যও এরকম খাবার তৈরি করতে! আবু উসমান বলেন: তারপর বড় বড় দুই পাত্র খেজুরের লাড্ডু তৈরি করা হয় এবং দুইজন খাদেমসহ একটি বাহনে করে সেগুলো আমীরুল মুমিনীন উমরের কাছে পাঠানো হয়। এরা দুইজন যখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর কাছে আসলো তখন তিনি বললেন: এগুলো কী? তারা বলল: খেজুরের লাড্ডু (খেজুর ঘি বাদাম ইত্যাদি দিয়ে তৈরি মিষ্টান্ন)। উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু খেয়ে দেখলেন যে সেগুলো মিষ্টি। তখন তিনি বললেন: সকল মুসলিমরাই কি সফরে তৃপ্তি সহকারে এরকম খাবার খেতে পায়? তারা বলল: না। তখন তিনি সেগুলো ফিরিয়ে দিলেন। এবং উতবার কাছে চিঠি লিখলেন যে, এই খাবার তোমার কিংবা তোমার বাবা মায়ের পরিশ্রমের নয়। সুতরাং সফরে তুমি যেই খাবার খাও মুসলিমদেরকেও সেই খাবার খাওয়াও।” (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস , ৩২৯১৭)
কাজী ইয়াজ “ইকমালুল মুলিম” গ্রন্থে বলেন: “সুতরাং সফরে তুমি যে খাবার খাও মুসলিমদেরকেও সেই খাবার খাওয়াও” উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর এই কথার অর্থ হলো, মুসলিমদের খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া। আল্লাহর দেয়া রিজিক সবার মাঝে সমানভাবে বণ্টন করা এবং খাবারের আধিক্য বা উন্নত জীবন যাপনের ক্ষেত্রে নিজেকে জনগণের উপর অগ্রাধিকার না দেয়া।
চতুর্দশতম বৈশিষ্ট্য: যোদ্ধাদের অভ্যর্থনা ও বিদায় জানানো।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: مَشَى مَعَهُمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِلَى بَقِيعِ الْغَرْقَدِ، ثُمَّ وَجَّهَهُمْ وَقَالَ: ” انْطَلِقُوا عَلَى اسْمِ اللهِ “، وَقَالَ: ” اللهُمَّ أَعِنْهُمْ – يَعْنِي النَّفَرَ الَّذِينَ وَجَّهَهُمْ إِلَى كَعْبِ بْنِ الْأَشْرَفِ
অর্থ: “ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূ্ল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবীদের নিয়ে গারকাদ ভূখণ্ড পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তারপর তিনি তাদের মুখোমুখি হলেন এবং বললেন: তোমরা আল্লাহর নামে চলো, তারপর তিনি বললেন: হে আল্লাহ! আপনি তাদের সাহায্য করুন। এটি ছিল সেই বাহিনী যে বাহিনীকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’ব ইবনে আশরাফের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। (মুসনাদে আহমাদ – ২৩৯১, মুসতাদরেকে হাকেম – ২৪৮০)। হাদিসটি সহিহ।
عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي خَالِدٍ، عَنْ قَيْسٍ، أَوْ غَيْرِهِ يَحْسَبُ الشَّكُّ مِنْهُ قَالَ: بَعَثَ أَبُو بَكْرٍ جَيْشًا إِلَى الشَّامِ فَخَرَجَ يُشَيِّعُهُمْ عَلَى رِجْلَيْهِ فَقَالُوا: يَا خَلِيفَةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , أَنْ لَوْ رَكِبَتْ , قَالَ: أَحْتَسِبُ خُطَايَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
অর্থ: “ইসমাইল ইবনে আবী খালেদ এর সূত্রে কায়স ইবনে আবু হাযেম কিংবা অন্য কোন ব্যক্তি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আবু বকর সিরিয়ায় একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। তাদেরকে বিদায় জানানোর জন্য তিনি পায়ে হেঁটে তাদের পিছনে পিছনে গেলেন। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূলের খলিফা! যদি আপনি আরোহণ করতেন। তিনি বললেন: আমি আল্লাহর রাস্তায় এই কদমসমূহের বিনিময়ে সাওয়াবের প্রত্যাশা করি।” ( মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা – ১৯৫২২)
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ، قَالَ: «لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ مِنْ غَزْوَةِ تَبُوكَ تَلَقَّاهُ النَّاسُ، فَلَقِيتُهُ مَعَ الصِّبْيَانِ عَلَى ثَنِيَّةِ الْوَدَاعِ
অর্থ: “সায়েব ইবনে ইয়াজিদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধ থেকে মদিনায় ফিরলেন, তখন লোকজন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলেন। আমিও শিশুদের অনুগামী হয়ে সানিয়্যাতুল ওদা নামক স্থানে তাঁর সাক্ষাতে আসলাম।” (বুখারি – ২৯১৭, আবু দাউদ – ২৭৭৯)
বুখারী রহিমাহুল্লাহ এই হাদিসটিকে ‘বাবু ইস্তেকবালিল গুযাত’ অর্থাৎ যুদ্ধাদের অভ্যর্থনা জানানো শিরোনামে উল্লেখ করেছেন।
পঞ্চদশতম বৈশিষ্ট্য: কাউকে নেতৃত্ব দেয়ার পূর্বে তার সম্পর্কে আশ্বস্ত হওয়া।
أنا عَامِرُ بْنُ شَقِيقٍ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا وَائِلٍ، يَقُولُ: ” اسْتَعْمَلَنِي ابْنُ زِيَادٍ عَلَى بَيْتِ الْمَالِ فَأَتَانِي رَجُلٌ مِنْهُ بِصَكٍّ فِيهِ: أَعْطِ صَاحِبَ الْمَطْبَخِ ثَمَانِمِائَةِ دِرْهَمٍ، فَقُلْتُ لَهُ: مَكَانَكَ وَدَخَلْتُ عَلَى ابْنِ زِيَادٍ فَحَدَّثْتُهُ فَقُلْتُ: إِنَّ عُمَرَ اسْتَعْمَلَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ عَلَى الْقَضَاءِ وَبَيْتِ الْمَالِ، وَعُثْمَانَ بْنَ حُنَيْفٍ عَلَى مَا يَسْقِي الْفُرَاتُ، وَعَمَّارَ بْنَ يَاسِرٍ عَلَى الصَّلَاةِ وَالْجُنْدِ، وَرَزَقَهُمْ كُلَّ يَوْمٍ شَاةً فَجَعَلَ نِصْفَهَا وَسَقَطَهَا وَأَكْراعَهَا لِعَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ لِأَنَّهُ كَانَ عَلَى الصَّلَاةِ وَالْجُنْدِ، وَجَعَلَ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رُبُعَهَا، وَجَعَلَ لِعُثْمَانَ بْنِ حُنَيْفٍ رُبُعَهَا ثُمَّ قَالَ: إِنَّ مَالًا يُؤْخَذُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ شَاةٌ إِنَّ ذَلِكَ فِيهِ لَسَرِيعٌ قَالَ ابْنُ زِيَادٍ: ضَعِ الْمِفْتَاحَ وَاذْهَبْ حَيْثُ شِئْتَ
অর্থ: “আমের ইবনে শাকীক রহিমাহুল্লাহ বলেন, তিনি আবু ওয়ায়েলকে বলতে শুনেছেন যে: ইবনে যিয়াদ আমাকে বাইতুল মালের গভর্নর বানিয়েছেন। তখন একজন ব্যক্তি আমার কাছে বাইতুল মালের একটি চেক নিয়ে এসে বলল; রান্নাঘরের প্রধানকে আটশ দিরহাম দিন। আমি তাকে বললাম: আপনি এখানে অবস্থান করুন। আর আমি ইবনে যিয়াদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে বললাম: উমর ইবনুল খাত্তাব আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদকে বিচারকার্য এবং বাইতুল মালের কাজে নিযুক্ত করেছেন। উসমান ইবনে হানিফকে ফুরাত নদী থেকে পানি উত্তোলনের দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন। আম্মার ইবনে ইয়াসিরকে নামায ও সেনাদের ব্যবস্থাপনার কাজে নিযুক্ত করেছেন। তিনি তাদের সবার জন্য প্রতিদিন একটি বকরী ভাতা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। বকরীর অর্ধেক, নাড়ীবুড়ি ও খুরা আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর জন্য নির্ধারণ করেছেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল নামাজ ও সৈন্যদের ব্যবস্থাপনা করা। আর বকরীর এক চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের জন্য। উসমান ইবনে হানিফের জন্যও এক চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেছেন। তারপর তিনি বলেছেন: সুতরাং বাইতুল মাল থেকে প্রতিদিন একটি করে বকরী নেয়া হবে, এবং এটা অনেক বেশী।
ইবনে যিয়াদ বলেন: তুমি বাইতুল মালের চাবি রেখে যেথায় মন চায় সেথায় চলে যাও।” (সুনানে সগীর-বাইহাকী – ২৯৪৭, সুনানে কুবরা বাইহাকি – ১৩০১৩)
আহনাফ ইবনে কায়েস রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আমি উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর নিকট আগমন করলাম। তখন তিনি আমাকে এক বছরের জন্য রেখে দিলেন। তারপর বললেন: হে আহনাফ! আমি এতো দিন তোমাকে পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করার জন্য রেখেছিলাম। তোমার বাহ্যিকটা অনেক ভালো পেয়েছি, তাই আমি আশাবাদী তোমার অভ্যন্তরীণটাও ভালো হবে। পূর্বে আমাদের অনেক আলোচনা হতো যে, প্রত্যেক মুনাফিক আলেম এই জাতিকে ধ্বংস করেছে।
আবু বকর আল ইসমাইলি রহিমাহুল্লাহ এই হাদিসটি মুসনাদে ফারুকে বর্ণনা করেছেন।
আহনাফ ইবনে কায়স থেকে অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর কাছে আগমন করলেন, তখন তিনি তাকে এক বছরের জন্য রেখে দিলেন। অতঃপর বললেন: তুমি কি জান, কেন তোমাকে আমি এক বছর রেখে দিয়েছি? উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন: সুমিষ্টভাষী প্রত্যেক মুনাফিক থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সতর্ক করেছেন। কিন্তু তোমার বিষয়টা আমরা যাচাই করে জানলাম যে, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও। (মুসনাদুল ফারুক: ৩/৭৫)।
أَخْبَرَنِي سَالِمٌ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ عُمَرَ لَمَّا نَزَعَ شُرَحْبِيلَ بْنَ حَسَنَةَ قَالَ: حَدِّثْنَا عُمَرُ عَنْ سَخْطَةٍ نَزَعَتْنِي؟ قَالَ: لَا , وَلَكِنَّا رَأَيْنَا مَنْ هُوَ أَقْوَى مِنْكَ فَتَحَرَّجْنَا مِنَ اللَّهِ أَنْ نُقِرَّكَ وَقَدْ رَأَيْنَا مَنْ هُوَ أَقْوَى مِنْكَ , فَقَالَ لَهُ شُرَحْبِيلُ: فَأَعْذِرْنِي، فَقَامَ عُمَرُ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ: كُنَّا اسْتَعْمَلْنَا شُرَحْبِيلَ بْنَ حَسَنَةَ ثُمَّ نَزَعْنَاهُ مِنْ غَيْرِ سَخْطَةٍ وَجَدْتُهَا عَلَيْهِ , وَلَكِنَّا رَأَيْنَا مَنْ هُوَ أَقْوَى مِنْهُ , فَتَحَرَّجْنَا مِنَ اللَّهِ أَنْ نُقِرَّهُ وَقَدْ رَأَيْنَا مَنْ هُوَ أَقْوَى مِنْهُ , فَنَظَرَ عُمَرُ مِنَ الْعَشِيِّ إِلَى النَّاسِ وَهُمْ يَلُوذُونَ الْعَامِلَ الَّذِي اسْتُعْمِلَ , وَشُرَحْبِيلُ يَجِيءُ وَحْدَهُ فَقَالَ عُمَرُ: مَا الدُّنْيَا؟ فَإِنَّهَا لَكَاعٌ
অর্থ: “সালেম রহিমাহুল্লাহ তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন যে, উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু যখন শুরাহবিল ইবনে হাসানাকে বরখাস্ত করলেন তখন তিনি বললেন: ‘হে উমর! আমাকে বলুন তো আপনার কোন অসন্তুষ্টির কারণে আমাকে বরখাস্ত করেছেন’? তিনি উত্তরে বললেন: ‘তোমার প্রতি কোন অসন্তুষ্টি নেই। কিন্তু আমি তোমার চেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি পেয়েছি। তাই এ অবস্থায় তোমাকে এই কাজে নিযুক্ত রাখতে আমরা আল্লাহকে ভয় করছি’। সুরাহবিল তাকে বললো: ‘তাহলে আমার ওজর গ্রহণ করুন’।
একথা শুনে উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন: ‘আমি সুরাহবিল ইবনে হাসানাকে গভর্নর নিযুক্ত করেছি। এরপর তার প্রতি কোন অসন্তুষ্টি ছাড়াই আমরা তাকে বরখাস্ত করেছি। কারণ, তার অপেক্ষা শক্তিশালী ব্যক্তিকে আমরা পেয়েছি। তাই এ অবস্থায় তাকে এই কাজে নিযুক্ত রাখতে আমরা আল্লাহকে ভয় করছি। তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু লোকজনের দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন, সবাই নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত গভর্নরের অনুসরণ করছে। তখন সুরাহবিল একাকী এসে উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু কে বললেন: বলুন তো দুনিয়া কী জিনিস? দুনিয়ার মূল্য কব্জির হাড়ের চেয়ে বেশি নয়।” (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ – ৩০৫৬৯)।
আবু নুআইম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তার ‘হিলইয়া’ নামক গ্রন্থে হিসাম ইবনে উরওয়াহ থেকে, তিনি তার বাবা থেকে, তিনি আসেম ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করেন যে, উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেছিলেন: ‘যে ব্যক্তি ইমারাহ তথা নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহী, সে (নেতৃত্ব পাওয়ার পর) ইনসাফ করতে পারবে না’।
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ أَنَّهُ قَالَ يَوْمًا لِمَنْ حَوْلَهُ: تَمَنَّوْا، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: أَتَمَنَّى لَوْ أَنَّ هَذِهِ الدَّارَ مَمْلُوءَةٌ ذَهَبًا فَأَنْفِقُهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قَالَ: تَمَنَّوْا، فَقَالَ رَجُلٌ: أَتَمَنَّى لَوْ أَنَّهَا مَمْلُوءَةٌ لَؤْلُؤًا أَوْ زَبَرْجَدًا أَوْ جَوَهِرًا، فَأَنْفِقُهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأَتَصَدَّقُ، ثُمَّ قَالَ عُمَرُ: تَمَنَّوْا، فَقَالُوا: مَا نَدْرِي يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، قَالَ عُمَرُ: «أَتَمَنَّى لَوْ أَنَّهَا مَمْلُوءَةٌ رِجَالًا مِثْلَ أَبِي عُبَيْدَةَ بْنِ الْجَرَّاحِ، وَمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، وَسَالِمٍ مَوْلَى أَبِي حُذَيْفَةَ، وَحُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ
অর্থ: “উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত যে, একদা তিনি তাঁর আশেপাশের লোকদের বললেন: ‘তোমরা কী চাও’? তখন কেউ বলল: আমি চাই যে, যদি এই পুরো বাড়িটি স্বর্ণে পরিপূর্ণ হতো তাহলে আমি তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতাম। তারপর তিনি আবার বললেন: তোমরা কী কামনা কর? তখন একজন বলল: যদি এই বাড়িটি মণিমুক্তা বা জাবরযাদ পাথর বা অলংকারে পরিপূর্ণ হতো তাহলে আমি তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতাম এবং সদকা করতাম। তারপর তিনি আবার বললেন: তোমরা কী আশা করো? তখন উপস্থিত লোকেরা বলল: হে আমীরুল মুমিনিন, আমাদের জানা নেই।
তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন: আমার ইচ্ছা যদি এই পুরো বাড়িটা আবু উবাইদাহ ইবনুল জা্ররাহ, মু’আয ইবনে জাবাল, সালেম মাওলা আবু হুযাইফা এবং হুজাইফাহ ইবনুল ইয়ামানের মত ব্যক্তি দ্বারা পূর্ণ হতো।” (ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ ফাযাইলুস সাহাবাতে হাদিসটি বর্ণনা করেন, হাদিস নং ১২৮০)
আবু উবাইদাহ আল কাসেম ইবনে সালাম রহিমাহুল্লাহ উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন: ‘আল্লাহর শপথ, আমি তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ লোকদেরকে নির্বাচনে কোন ত্রুটি করবো না’।
أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، خَطَبَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ
ثُمَّ قَالَ: اللهُمَّ إِنِّي أُشْهِدُكَ عَلَى أُمَرَاءِ الْأَمْصَارِ، وَإِنِّي إِنَّمَا بَعَثْتُهُمْ عَلَيْهِمْ لِيَعْدِلُوا عَلَيْهِمْ، وَلِيُعَلِّمُوا النَّاسَ دِينَهُمْ، وَسُنَّةَ نَبِيِّهِمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَيَقْسِمُوا فِيهِمْ فَيْئَهُمْ، وَيَرْفَعُوا إِلَيَّ مَا أَشْكَلَ عَلَيْهِمْ مِنْ أَمْرِهِمْ
অর্থ: “ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন যে, একদা উমর ইবনুল খাত্তাব জুমুআর দিন খুৎবাতে বললেন: ‘হে আল্লাহ! শহরের শাসকদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী রাখছি। আমিতো তাদেরকে শহরে জনগণের কাছে পাঠিয়েছি, যাতে শাসকরা ইনসাফ কায়েম করে, দ্বীন ও রাসূলের সুন্নাহ তাদের শিক্ষা দান করে, মানুষের মাঝে গনিমত সঠিক ভাবে বণ্টন করে এবং শাসকদের কাছে কোন বিষয় অস্পষ্ট থাকলে তা আমার কাছে উত্থাপন করে’।” (মুসলিম – ৫৬৭)
عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، قَالَ: اسْتَعْمَلَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ رَجُلًا مِنْ بَنِي أَسَدٍ عَلَى عَمَلٍ فَجَاءَ يَأْخُذُ عَهْدَهُ، قَالَ: فَأَتَى عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ بِبَعْضِ وَلَدِهِ فَقَبَّلَهُ، قَالَ: أَتُقَبِّلُ هَذَا؟ مَا قَبَّلْتُ وَلَدًا قَطُّ. فَقَالَ عُمَرُ: ” فَأَنْتَ بِالنَّاسِ أَقَلُّ رَحْمَةً، هَاتِ عَهْدَنَا، لَا تَعْمَلْ لِي عَمَلًا أَبَدًا
অর্থ: “আবু উসমান আন নাহদী রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: উমর ইবনুল খাত্তাব একদা একটি কাজে বনু আসাদ গোত্রের এক ব্যক্তিকে কোন কাজে নিয়োগ করেন। ঐ ব্যক্তি তার দায়িত্ব গ্রহণ করতে আসলেন। আবু উসমান আন নাহদী বলেন: তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তার এক সন্তানকে কোলে নিয়ে চুম্বন করে আদর করলেন এবং ঐ ব্যক্তিকে বললেন: তুমি কি তাকে চুম্বন করবে? ঐ লোক বলল: পূর্বে কখনো কোন শিশুকে চুম্বন করিনি। একথা শুনে উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন: মানুষের প্রতি তোমার দয়া অনেক কম। তাই আমাদের চুক্তি ফিরিয়ে দাও, তুমি কখনো আমার কোন কাজ আঞ্জাম দিতে সক্ষম হবে না।” (সুনানে কুবরা – ১৭৯০৬)।
عَنِ الأَسْوَدِ بْنِ يَزِيدَ، قَالَ: كَانَ الْوَفْدُ إِذَا قَدِمُوا عَلَى عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ سَأَلَهُمْ عَنْ أَمِيرِهِمْ، فَيَقُولُونَ خَيْرًا، فَيَقُولُ: هَلْ يَعُودُ مَرْضَاكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيَقُولُ: هَلْ يَعُودُ الْعَبْدَ؟
فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيَقُولُ: كَيْفَ صَنِيعُهُ بِالضَّعِيفِ؟ هَلْ يَجْلِسُ عَلَى بَابِهِ؟
فَإِنْ قَالُوا لِخِصْلَةٍ مِنْهَا: لا، عَزَلَهُ
অর্থ: “আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: কোন কাফেলা উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর কাছে আসলে তিনি তাদেরকে তাদের আমীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। তারা বলতো ‘ভালো’, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, তিনি কি তোমাদের রোগীদের দেখতে যান? যদি তারা “হ্যাঁ” বলতো তাহলে জিজ্ঞাসা করতেন: তিনি কি গোলামদের দেখা-শোনা করেন? যদি তারা “হ্যাঁ” বলতো, তাহলে জিজ্ঞাস করতেন: দুর্বলদের সাথে তার আচরণ কেমন? তিনি দুর্বল ব্যক্তির দুয়ারে বসেন? যদি তারা উপরোক্ত জিজ্ঞাসার কোনটাতে “না” বলতো তাহলে ঐ আমীরকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে দিতেন।” (তারিখে ইবনে জারির, খণ্ড, ৪, পৃষ্ঠা, ২২৬)।
ষোড়শতম বৈশিষ্ট্য: দলীয় নেতা, সেনা এবং সকল কাজের খোঁজ খবর নেয়া।
فجهز عمر جيشا واستعمل عليه الأشعرى ثم قال: انظر ربيع بن زياد، فإن يك صادقا فيما قال فإن عنده عونا على هذا الأمر فأستعمله، ثم لا يأتين عليك عشرة إلا تعاهدت منه عمله وكتبت إلى بسيرته فى عمله حتى كأنى أنا الذى استعملته
অর্থ: “ইমাম ইসহাক আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু একটি বাহিনী প্রস্তুত করে আবু মুসা আশআরীকে তাদের আমীর নিযুক্ত করে বলেন: ‘তুমি রাবীঈ ইবনে যিয়াদকে পর্যবেক্ষণ করো। যদি তিনি তার কথা-বার্তায় সত্যবাদী হন তাহলে এই কাজে তিনি সহায়ক হতে পারবেন। তাই তুমি তাকে নিয়োগ দিতে পারবে। তারপর তোমার কাছে যে কোন দল আসুক তুমি তার কাজ পর্যবেক্ষণ করবে এবং তার কর্মপদ্ধতি আমারা কাছে লিখে পাঠাবে, যেন আমিই তাকে নিয়োগ দিয়েছি’।”
(এটি দীর্ঘ হাদিসের অংশ বিশেষ, কানযুল উম্মাল – ৩৭০৪৬, অধ্যায়, রবীউবনু যিয়াদ রাজিয়াল্লাহু আনহু, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা, ৩৯০, জামিউল আহাদিস -২৮৬৪০, অধ্যায়, মুসনাদে উমর ইবনুল খাত্তাব, খণ্ড, ২৬, পৃষ্ঠা, ৮৯। আরও কিছু কিতাবে হাদিসটা এসেছে। হাদিস – সহীহ)
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ إِلَى حَرَّةَ وَاقِمٍ، حَتَّى إِذَا كُنَّا بِصِرَارٍ إِذَا نَارٌ، فَقَالَ: يَا أَسْلَمُ (ص:291)، إِنِّي لَأَرَى هَا هُنَا رَكْبًا قَصَّرَ بِهِمُ اللَّيْلُ وَالْبَرْدُ، انْطَلِقْ بِنَا، فَخَرَجْنَا نُهَرْوِلُ حَتَّى دَنَوْنَا مِنْهُمْ، فَإِذَا بِامْرَأَةٍ مَعَهَا صِبْيَانٌ صِغَارٌ وَقِدْرٌ مَنْصُوبَةٌ عَلَى نَارٍ وَصِبْيَانُهَا يَتَضَاغَوْنَ، فَقَالَ عُمَرُ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَصْحَابَ الضَّوْءِ، وَكَرِهَ أَنْ يَقُولَ: يَا أَصْحَابَ النَّارِ، فَقَالَتْ: وَعَلَيْكَ السَّلَامُ، فَقَالَ: أَدْنُو؟، فَقَالَتِ: ادْنُ بِخَيْرٍ أَوْ دَعْ، فَدَنَا فَقَالَ: مَا بَالُكُمْ؟ قَالَتْ: قَصَّرَ بِنَا اللَّيْلُ وَالْبَرْدُ، قَالَ: فَمَا بَالُ هَؤُلَاءِ الصِّبْيَةِ يَتَضَاغَوْنَ؟ قَالَتِ: الْجُوعُ، قَالَ: فَأَيُّ شَيْءٍ فِي هَذِهِ الْقِدْرِ؟ قَالَتْ: مَا أُسْكِتُهُمْ بِهِ حَتَّى يَنَامُوا، وَاللَّهُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ عُمَرَ، فَقَالَ: أَيْ رَحِمَكِ اللَّهُ، وَمَا يُدْرِي عُمَرَ بِكُمْ؟ قَالَتْ: يَتَوَلَّى عُمَرُ أَمْرَنَا ثُمَّ يَغْفُلُ عَنَّا. قَالَ: فَأَقْبَلَ عَلَيَّ فَقَالَ: انْطَلِقْ بِنَا، فَخَرَجْنَا نُهَرْوِلُ حَتَّى أَتَيْنَا دَارَ الدَّقِيقِ، فَأَخْرَجَ عِدْلًا مِنْ دَقِيقٍ وَكَبَّةً مِنْ شَحْمٍ، فَقَالَ: احْمِلْهُ عَلَيَّ، فَقُلْتُ: أَنَا أَحْمِلُهُ عَنْكَ، قَالَ: أَنْتَ تَحْمِلُ عَنِّي وِزْرِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا أُمَّ لَكَ؟ فَحَمَلْتُهُ عَلَيْهِ فَانْطَلَقَ، وَانْطَلَقْتُ مَعَهُ إِلَيْهَا، نُهَرْوِلُ، فَأَلْقَى ذَلِكَ عِنْدَهَا وَأَخْرَجَ مِنَ الدَّقِيقِ شَيْئًا، فَجَعَلَ يَقُولُ لَهَا: ذُرِّي عَلَيَّ، وَأَنَا أُحَرِّكُ لَكِ، وَجَعَلَ يَنْفُخُ تَحْتَ الْقِدْرِ ثُمَّ أَنْزَلَهَا، فَقَالَ: أَبْغِينِي شَيْئًا، فَأَتَتْهُ بِصَحْفَةٍ فَأَفْرَغَهَا فِيهَا ثُمَّ جَعَلَ يَقُولُ لَهَا: أَطْعِمِيهُمْ وَأَنَا أُسَطِّحُ لَهُمْ، فَلَمْ يَزَلْ حَتَّى شَبِعُوا، وَتَرَكَ عِنْدَهَا فَضْلَ ذَلِكَ، وَقَامَ وَقُمْتُ مَعَهُ، فَجَعَلَتْ تَقُولُ: جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا، كُنْتَ أَوْلَى بِهَذَا الْأَمْرِ مِنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ، فَيَقُولُ: قُولِي خَيْرًا إِذَا جِئْتِ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، وَحَدَّثِينِي هُنَاكَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ تَنَحَّى نَاحِيَةً عَنْهَا ثُمَّ اسْتَقْبَلَهَا فَرَبَضَ مَرْبَضًا، فَقُلْنَا لَهُ: إِنَّ لَنَا شَأْنًا غَيْرَ هَذَا، وَلَا يُكَلِّمُنِي حَتَّى رَأَيْتُ الصِّبْيَةَ يَصْطَرِعُونَ ثُمَّ نَامُوا وَهَدَأُوا، فَقَالَ: يَا أَسْلَمُ، إِنَّ الْجُوعَ أَسْهَرَهُمْ وَأَبْكَاهُمْ، فَأَحْبَبْتُ أَنْ لَا أَنْصَرِفَ حَتَّى أَرَى مَا رَأَيْتُ
অর্থ: “যায়েদ ইবনে আসলাম থেকে বর্ণিত, তিনি তার বাবা থেকে বর্ণনা করে বলেন: একদা আমরা উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর সাথে হাররায়ে ওয়াকেম (বনু কুরাইজা) এর প্রস্তর ভূমির উদ্দেশ্যে বের হয়ে “সাররা” নামক স্থানে পৌঁছলাম। তখন আমরা সেখানে আগুন দেখতে পেলাম। তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন: ‘হে আসলাম! অদূরে একটি কাফেলা দেখা যাচ্ছে। রাতের অন্ধকার আর ঠাণ্ডা তাদেরকে কাবু করে ফেলেছে। সুতরাং তুমি আমার সাথে চলো’। তখন আমরা তাদের দিকে ছুটে গেলাম। সেখানে আমরা দেখতে পেলাম এক অবলা নারী আর তার সাথে কিছু ছোট ছোট বাচ্চা। আগুনে একটি পাতিল রাখা ছিল। আর শিশুরা তার পাশে হামাগুড়ি দিয়ে কান্নাকাটি করছে। তা দেখে উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন:
السلام عليكم يا أصحاب الضوء
অর্থাৎ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ হে আলোর পাশে অবস্থানকারীরা! এ স্থলে তিনি أصحاب النار অর্থাৎ “হে আগুনের পাশে অবস্থানকারীরা” বলাটা অপছন্দ করলেন। মহিলাটি বলল: ওয়ালাইকাস সালাম। তিনি বললেন: আমি কাছে আসতে পারি? সে বলল: আসলে কল্যাণের সাথে আস, অন্যথায় চলে যাও।
তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু কাছে এসে বললেন: আপনাদের কী অবস্থা? উত্তরে মহিলাটি বলল: রাত ও ঠাণ্ডা আমাদের কাবু করে ফেলেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এই বাচ্চারা কেন হামাগুড়ি দিয়ে কাঁদছে? মহিলাটি বলল: ক্ষুধার তাড়নায়। উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন: এই পাতিলে কী? সে বলল: পাতিলের আওয়াজের মাধ্যমে তাদের নিস্তব্ধ করে রেখেছি, যাতে তারা ঘুমিয়ে যায়। আল্লাহ ওমরের বিচার করুক।
উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন: আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন, উমর কি আপনাদের অবস্থা জানে? মহিলা বলল: উমর আমাদের দায়িত্বভার গ্রহণ করে দায়িত্বের ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে আছে। আসলাম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন; তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আমার কাছে এসে বললেন: ‘আমাদের সাথে চলো’।
আমরা আটার গোডাউনের কাছে ছুটে এলাম। অতঃপর এক বস্তা আটা ও এক বল চর্বি নিলাম। তিনি বলেন: এটা আমার মাথায় উঠাও। আমি বললাম; আমিই নেই। তিনি বললেন: কিয়ামত দিবসে তুমি কি আমার গোনাহের বোঝা বহন করবে? একথা শুনে তাঁর মাথায় বস্তাটি উঠিয়ে দিলে তিনি সামনে দ্রুত চলতে থাকেন। আমি তার সঙ্গ নিলাম। তিনি এই বস্তা ঐ মহিলার সামনে রেখে সামান্য আটা নিলেন এবং তাকে বললেন: আপনি চলে যান, আমি আপনাদের জন্য গরম গরম রুটি তৈরি করছি।
উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু চুলার নিচে ফু দিতে লাগলেন। তারপর তিনি চুলা থেকে পাতিল নামালেন, তিনি বললেন: আমাকে কিছু একটা দিন। তখন মহিলাটি একটি পাত্র দিলে তিনি পুরোটুকু পাত্রে ঢেলে দিলেন। তারপর উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তাকে বললেন: বাচ্চাদের খাইয়ে দিন, আমি বিছানা বিছিয়ে দিচ্ছি।
তারা পরিতৃপ্ত হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে থাকলেন এবং অতিরিক্ত অংশটা মহিলাকে দিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন। আর আমিও তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকলাম। তখন মহিলা উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু কে বলতে লাগলেন: আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন! আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!! তুমি আমীরুল মুমিনিন থেকেও খলিফা হওয়ার অধিক উপযুক্ত।
তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তাকে বললেন: যদি আপনি আমীরুল মুমিনিনের কাছে গিয়ে এ কথাগুলো বলতেন তাহলে ভালো হতো। আর তিনি পাশে সরে মহিলাটির অভিমুখ হয়ে পশু বাঁধার স্থানে হাঁটু গেড়ে বসলেন। তখন আমি তাকে বললাম: আমাদের তো আলাদা মর্যাদা রয়েছে এবং বিশেষ অবস্থান রয়েছে। তখন তিনি আর কোন কথা বলেননি।
এরপর যখন শিশুদের কান্না শেষ হয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়ল এবং তারা শান্ত হলো তখন তিনি বললেন: হে আসলাম! ক্ষুধা তাদের রাত জাগিয়েছে এবং কাঁদিয়েছে। তাই ভালো কিছু দেখা পর্যন্ত এখন থেকে যাওয়া আমি পছন্দ করিনি।” (হাদিসটি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহ; তাঁর ‘ফাযায়েলুস সাহাবাহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন। হাদিস – ৩৮২, খণ্ড – ১, পৃষ্ঠা – ২৯০)
সপ্তদশতম বৈশিষ্ট্য: দায়িত্বশীলদেরকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে দেয়া এবং কাজ বণ্টন করা।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ: ” لَمَّا وَلِيَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ الْخِلَافَةَ فَرَضَ الْفَرَائِضَ، وَدَوَّنَ الدَّوَاوِينَ، وَعَرَّفَ الْعُرَفَاءَ، وَعَرَّفَنِي عَلَى أَصْحَابِي
অর্থ: “যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু যখন খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তখন তিনি ফরজ বিধানগুলো সম্পর্কে কঠোর আইন জারি করলেন। রেজিস্টার বইগুলো নতুন ভাবে সাজালেন। সমজদার ব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন দায়িত্ব দিলেন এবং আমাকে আমার সাথীদের মাঝে জিম্মাদার বানালেন।” (বাইহাকি, সুনানে কুবরা, হাদিস – ১৩৪৬)
حَدَّثَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ مَرْوَانَ بْنَ الحَكَمِ، وَالمِسْوَرَ بْنَ مَخْرَمَةَ، أَخْبَرَاهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ حِينَ أَذِنَ لَهُمُ المُسْلِمُونَ فِي عِتْقِ سَبْيِ هَوَازِنَ: «إِنِّي لاَ أَدْرِي مَنْ أَذِنَ مِنْكُمْ مِمَّنْ لَمْ يَأْذَنْ، فَارْجِعُوا حَتَّى يَرْفَعَ إِلَيْنَا عُرَفَاؤُكُمْ أَمْرَكُمْ»، فَرَجَعَ النَّاسُ فَكَلَّمَهُمْ عُرَفَاؤُهُمْ، فَرَجَعُوا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَخْبَرُوهُ أَنَّ النَّاسَ قَدْ طَيَّبُوا وَأَذِنُوا
অর্থ: “উরওয়া ইবনে যুবায়ের বর্ণনা করেন, যে মারওয়ান ইবনে হাকাম ও মিসওয়ার মাখরামাহ আমাকে বলেছেন, যে, যখন হাওয়াজেনের বন্দিদের আজাদ করে দেয়ার ক্ষেত্রে মুসলমানগণ তাদের অনুমতি দিয়েছেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি জানিনা তোমাদের মাঝে কারা অনুমতি দিয়েছে, আর কারা অনুমতি দেয়নি। তোমরা এখন যাও, তোমাদের দলীয় নেতারা তোমাদের বিষয়ে আমাকে জানাবে। তখন লোকেরা ফিরে যাওয়ার পর দায়িত্বশীলরা তাদের সাথে কথা বলেছেন। তারপর তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে গিয়ে তাকে বললো যে, লোকেরা সন্তুষ্টচিত্তে বন্দিদের আজাদ করার অনুমতি দিয়েছে’।” (বুখারী, হাদিস – ৭১৭৬)
عَنْ أَبِي مِجْلَزٍ: أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، بَعَثَ عَمَّارَ بْنَ يَاسِرٍ، وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ، وَعُثْمَانَ بْنَ حُنَيْفٍ، إِلَى الْكُوفَةِ، فَجَعَلَ عَمَّارًا عَلَى الصَّلَاةِ وَالْقِتَالِ، وَجَعَلَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ عَلَى الْقَضَاءِ، وَعَلَى بَيْتِ الْمَالِ، وَجَعَلَ عُثْمَانَ بْنَ حُنَيْفٍ عَلَى مِسَاحَةِ الْأَرْضِ
অর্থ: “আবু মিজলায থেকে বর্ণিত; উমর ইবনুল খাত্তাব আম্মার ইবনে ইয়াসির, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এবং উসমান ইবনে আফফান রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু কে কুফা নগরীতে পাঠালেন। আম্মারকে নামায এবং যুদ্ধের বিষয়াদি আঞ্জাম দেয়ার দায়িত্ব দিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদকে বাইতুল মাল ও বিচারকার্যের দায়িত্ব দিয়েছেন আর উসমান ইবনে হানিফকে জমি মাপার দায়িত্বশীল হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।” (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক – ১০১২৮)
অষ্টাদশতম বৈশিষ্ট্য: যে কোন কাজে বিলম্ব না করে দ্রুত সম্পাদন করা।
قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ: الْقُوَّةُ فِي الْعَمَلِ أَلا تُؤَخِّرَ عَمَلَ الْيَوْمِ لِغَدٍ، وَالأَمَانَةُ أَلا تُخَالِفَ سَرِيرَةٌ عَلانِيَةً، وَاتَّقُوا اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ، فَإِنَّمَا التَّقْوَى بِالتَّوَقِّي، وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَقِهْ.
অর্থ: “উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন: কাজের শক্তি হলো, একদিনের কাজকে পরের দিনের জন্য রেখে না দেয়া। আর আমানত হলো, মানুষের বাহ্যিক অবস্থা ও আভ্যন্তরীণ অবস্থা ভিন্ন না হওয়া। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর তাকওয়া অর্জিত হয় মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাকে মন্দ কাজ থেকে রক্ষা করেন।” (তারিখে ইবনে জারির তাবারি, খণ্ড – ৪, পৃষ্ঠা – ২১৩)।
عَنِ الضَّحَّاكِ، قَالَ: كَتَبَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِلَى أَبِي مُوسَى: «أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ الْقُوَّةَ فِي الْعَمَلِ أَنْ لَا تُؤَخِّرُوا عَمَلَ الْيَوْمِ لِغَدٍ، فَإِنَّكُمْ إِذَا فَعَلْتُمْ ذَلِكَ تَدَارَكَتْ عَلَيْكُمُ الْأَعْمَالُ، فَلَمْ تَدْرُوا أَيُّهَا تَأْخُذُونَ فَأَضَعْتُمْ , فَإِذَا خُيِّرْتُمْ بَيْنَ أَمْرَيْنِ أَحَدُهُمَا لِلدُّنْيَا وَالْآخَرُ لِلْآخِرَةِ، فَاخْتَارُوا أَمْرَ الْآخِرَةِ عَلَى أَمْرِ الدُّنْيَا , فَإِنَّ الدُّنْيَا تَفْنَى، وَإِنَّ الْآخِرَةَ تَبْقَى , كُونُوا مِنَ اللَّهِ عَلَى وَجَلٍ، وَتَعَلَّمُوا كِتَابَ اللَّهِ؛ فَإِنَّهُ يَنَابِيعُ الْعِلْمِ، وَرَبِيعُ الْقُلُوبِ
অর্থ: “যাহ্হাক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আবু মুসা আশআরী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর কাছে পত্র লিখে পাঠান যে: “কাজের শক্তি হল, আজকের কাজ আগামীকালের জন্য রেখে না দেয়া। যদি তোমরা আজকের কাজ আগামীকালের জন্য রেখে দাও, তাহলে তোমাদের কাছে অনেক কাজ জমে যাবে। অতঃপর তোমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে না যে, কোনটি রেখে কোনটি করবে। এক পর্যায়ে তোমরা এই সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে কাজকে নষ্ট করে ফেলবে। আর যদি দু’টি বিষয়ের মাঝে তোমাদের ইচ্ছাধিকার দেয়া হয়, একটি পার্থিব বিষয়, দ্বিতীয়টি পরকালীন বিষয়, তখন তোমরা পরকালীন বিষয়কে পার্থিব বিষয়ের উপর প্রাধান্য দিবে। আর দুনিয়া তো ক্ষণস্থায়ী, বিপরীতে পরকাল তো চিরস্থায়ী। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, কিতাবুল্লার ইলম অর্জন কর। কারণ কিতাবুল্লাহই হলো সকল ইলমের মূল উৎস এবং অন্তরের খোরাক।” (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা – ৩৫২৯৫)
আরবিতে প্রবাদ রয়েছে:
فلا تبق فعل الصالحات إلى غد، لعل غدا يأتي وأنت فقيد.
অর্থ: সৎকর্ম আগামীকালের জন্য রেখে দিওনা, হতে পারে আগামীকাল তো আসবে, কিন্তু তুমি থাকবে না।
عن الحسن البصري رحمه الله قال: “إياك والتسويف فإنك بيومك ولست بغدك قال: فإن يكن غد لك فكس فيه كما كست في اليوم، وإلا يكن الغد لك لم تندم على ما فرطت في اليوم
অর্থ: “হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: বিলম্ব করা থেকে সাবধান, কারণ তুমি আজ আছ, কাল নেই। তুমি যদি আগামীকাল বেঁচে থাকও তবুও তুমি আজকে যেভাবে চিন্তা করেছ আগামীকালও সেভাবে চিন্তা করবে যে, আমি তা আগামীকাল করবো। আর এই ভাবেই তুমি প্রতিদিন গড়িমসি করতে করতে একদিন লজ্জিত হওয়ার বিষয়টাই ভুলে যাবে।” (ইমাম হান্নাদ “আয যুহদ” গ্রন্থে তা বর্ণনা করেন, হাদিস – ৫০২)
ইবনে হাযাম রহিমাহুল্লাহ তার রাসায়েল কিতাবের ১নং খণ্ডের ৫০২নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন: আমি দেখেছি যে, কোন কাজ সহজ হওয়ার পরেও যদি অবহেলা করে তা না করা হয়, তবে ঐ কাজ পরবর্তীতে করা সম্ভব হয় না।
শিক্ষণীয় একটি ঘটনা:
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَابِطٍ، قَالَ: أَرْسَلَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِلَى سَعِيدِ بْنِ عَامِرٍ الْجُمَحِيِّ، فَقَالَ: إِنَّا مُسْتَعْمِلُوكَ. فَقَالَ: اتَّقِ اللَّهَ يَا عُمَرُ، وَلَا تَفْتِنِّي. فَقَالَ: وَاللَّهِ لَا أَدْعُكُمْ، جَعَلْتُمُوهَا فِي عُنُقِي، ثُمَّ تَخَلَّيْتُمْ عَنِّي، إِنِّي إِنَّمَا أَبْعَثُكَ عَلَى قَوْمٍ لَسْتَ بِأَفْضَلِهِمْ، وَلَسْتُ أَبْعَثُكَ عَلَيْهِمْ لِتَضْرِبَ أَبْشَارَهُمْ، وَلَا تَنْتَهِكَ أَعْرَاضَهُمْ، وَلَكِنَّكَ تُجَاهِدُ بِهِمْ عَدُوَّهُمْ، وَتُقْسِمُ فِيهِمْ فَيْئَهُمْ. قَالَ: اتَّقِ اللَّهَ يَا عُمَرُ، وَلَا تَفْتِنِّي، وَأَقِمْ وَجْهَكَ وَقَضَاءَكَ لِمَنِ اسْتَرْعَاكَ اللَّهُ مِنْ قَرِيبِ الْمُسْلِمِينَ وَبَعِيدِهِمْ، وَلَا تُقْصِرْ فِي أَمْرٍ وَاحِدٍ قَضَاءَيْنِ، فَيَخْتَلِفَ عَلَيْكَ أَمْرُكَ وَتَزِيغَ عَنِ الْحَقِّ، وَالْزَمِ الْأَمْرَ وَالْحُجَّةَ يُعِينُكَ اللَّهُ عَلَى مَا وَلَّاكَ، خُضِ الْغَمَرَاتِ إِلَى الْحَقِّ حَيْثُ عَلِمْتَهُ، وَلَا (ص:207) تَخْشَ فِي اللَّهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ. قَالَ عُمَرُ: وَيْحَكَ، مَنْ يُطِيقُ هَذَا يَا سَعِيدُ بْنَ عَامِرٍ؟ قَالَ: مَنْ قَطَعَ اللَّهُ فِي عُنُقِهِ مِثْلَ الَّذِي قَطَعَ فِي عُنُقِكَ، إِنَّمَا عَلَيْكَ أَنْ تَأْمُرَ فَيُطَاعَ أَمْرُكَ أَوْ يُتْرَكَ، فَتَكُونَ لَكَ الْحُجَّةُ
অর্থ: “মুআফী ইবনে ইমরান তাঁর যুহদ নামক কিতাবে আব্দুর রহমান ইবনে সাবেত থেকে বর্ণনা করে বলেন: উমর ইবনুল খাত্তাব সাঈদ ইবনে আমের আল জুমাহীর কাছে একজন দূত পাঠিয়ে বলেন: আমি তোমাকে গভর্নর নিযুক্ত করবো। তিনি বললেন: উমর! আল্লাহকে ভয় কর, আমাকে পরীক্ষায় ফেলো না। তখন উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন: আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি না। তোমরা আমার ঘাড়ে খেলাফতের দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে আমার থেকে দূরে সরে গেছো। আর আমি তোমাকে এমন এক জাতির কাছে পাঠাবো যাদের মাঝে তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ নও। আর তাদের চেহারায় আঘাত করা ও তাদের ইজ্জত-আব্রুতে আঘাত হানার জন্য আমি তোমাকে তাদের কাছে গভর্নর হিসেবে পাঠাচ্ছি না। বরং তাদের সাথে তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য এবং তাদের মাঝে ইনসাফের সাথে গনিমত বণ্টন করার জন্য আমি তোমাকে পাঠাচ্ছি।
তিনি আবার বললেন: উমর! আল্লাহকে ভয় কর। আমাকে পরীক্ষায় ফেলো না। নিকট ও দূরের মুসলমানদের মধ্য হতে আল্লাহ তোমাকে যাদের অভিভাবক বানিয়েছেন তাদের জন্য তুমি সঠিক ফায়সালা করো এবং সঠিক সিদ্ধান্ত দাও। তুমি কখনো একটি বিষয়ে দুটি ফায়সালা করো না। তাহলে সকল বিষয় তোমার সামনে বিভ্রাটপূর্ণ হয়ে যাবে এবং তুমিও সত্য থেকে সরে যাবে। আর সর্বদা দলিল ও প্রমাণকে মজবুতভাবে অনুসরণ করো। তাহলে অবশ্যই আল্লাহ অর্পিত দায়িত্বে তোমাকে সাহায্য করবেন। বাস্তব সত্য জানা পর্যন্ত তুমি কখনো কোন বিষয় থেকে পিছু হটো না, যদিও তুমি অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হও। আল্লাহর বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করবে না।
উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন: ‘ছি, হে সাঈদ ইবনে আমের! এই দায়িত্ব পালন করতে কে পারবে’? তিনি বলেন: ‘ঐ ব্যক্তি পারবে আল্লাহ যার কাঁধে আপনার অনুরূপ দায়িত্ব রেখে দিয়েছেন। আপনার দায়িত্ব শুধু আদেশ করা। ফলে আপনার আদেশ হয়তো মানা হবে কিংবা অমান্য করা হবে। আর এটা আপনার জন্য ন্যায়পরায়নতার প্রমাণ হয়ে থাকবে’।”
কিতাবুয যুহদ, হাদিস, ৪২, খণ্ড, ১, পৃষ্ঠা, ২০৬, কানযুল উম্মাল, ১৪২০৩, ইবনে আসাকির, ২১/১৪৫
হাদিস শরীফে আরও এসেছে-
عَنْ عَاصِمِ بْنِ أَبِي النَّجُودِ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، كَانَ إِذَا بَعَثَ عُمَّالَهُ شَرَطَ عَلَيْهِمْ: «أَلَّا تَرْكَبُوا بِرْذَوْنًا، وَلَا تَأْكُلُوا نَقِيًّا، وَلَا تَلْبَسُوا رَقِيقًا، وَلَا تُغلِقُوا أَبْوَابَكُمْ دُونَ حَوَائِجِ النَّاسِ، فَإِنْ فَعَلْتُمْ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ فَقَدْ حَلَّتْ بِكُمُ الْعُقُوبَةُ» ، قَالَ: ثُمَّ شَيَّعَهُمْ، فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْجِعَ قَالَ: «إِنِّي لَمْ أُسَلِّطْكُمْ عَلَى دِمَاءِ الْمُسْلِمِينَ، وَلَا عَلَى أَعْرَاضِهِمْ، وَلَا عَلَى أَمْوَالِهِمْ، وَلَكِنِّي بَعَثْتُكُمْ لُتُقِيمُوا بِهِمُ الصَّلَاةَ، وَتَقْسِمُوا فَيْئَهُمْ، وَتَحْكُمُوا بَيْنَهُمْ بِالْعَدْلِ، (ص:325) فَإِنْ أَشْكَلَ عَلَيْكُمْ شَيْءٌ، فَارْفَعُوهُ إِلَيَّ، أَلَا فَلَا تَضْرِبُوا الْعَرَبَ فَتُذِلُّوهَا، وَلَا تُجَمِّرُوهَا فَتَفْتِنُوهَا، وَلَا تَعْتَلُّوا عَلَيْهَا فَتَحْرِمُوهَا، جَرِّدُوا الْقُرْآنَ، وَأَقِلُّوا الرِّوَايَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، انْطَلِقُوا وَأَنَا شَرِيكُكُمْ
অর্থ: “আসেম ইবনে আবিন নাজুদ থেকে বর্ণিত, যখন উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু গভর্নরদের কাজে পাঠাতেন তখন তাদের উপর শর্তারোপ করতেন যে, তোমরা আরোহণ করবে না। স্বচ্ছ খাবার আহার করবে না, মসৃণ কাপড় পরিধান করবে না, অভাব গ্রস্থদের জন্য দ্বার বন্ধ করবে না। আর যদি এগুলোর কোন একটি করো, তাহলে তোমাদের উপর শাস্তি নেমে আসবে। তারপর তিনি তাদেরকে বিদায় দিতেন। এর পর যখন তিনি সেখান থেকে ফিরে আসার ইচ্ছা করতেন তখন তিনি বলতেন: আমি মুসলমানদের রক্ত, সম্ভ্রম ও তাদের সম্পদের উপর তোমাদেরকে কর্তৃত্ব দেয়নি। বরং আমি তোমাদের পাঠিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে তোমরা নামাজ কায়েম করো, তাদের গণিমত বণ্টন করো এবং তাদের মাঝে ইনসাফের সাথে বিচার ফায়সালা করো। আর যদি কোন বিষয় তোমাদের নিকট অস্পষ্ট হয়, তাহলে তোমরা বিষয়টি আমার কাছে সোপর্দ করবে। জেনে রেখো, তোমরা আরবদের আঘাত করে লাঞ্ছিত করোনা। তাদের পাথর নিক্ষেপ করে ফিতনাগ্রস্ত করোনা, তাদের উপর বাড়াবাড়ি করে তাদেরকে বঞ্চিত করোনা। কুরআন হাদিসকে একাকার না করে কুরআন থেকে আলাদা কর, (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন) এভাবে হাদিস কম বর্ণনা কর, তোমরা যাও আমি তোমাদের সাথেই আছি’।”
হাদিসটি মা’মার রহিমাহুল্লাহ তার জামে’ এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন। হাদিস – ২০৬৬২, অধ্যায় – ইমাম রাখাল, খণ্ড – ১১, পৃষ্ঠা – ২২৪। শুয়াবুল ঈমান বায়হাক্কি, হাদিস – ৭০০৯, অধ্যায় – ন্যায় পরায়ণ শাসক এর ফজিলত।
পরিশিষ্ট: আমীরগণের প্রতি শাইখ ইবরাহীম আর রুবাইশ রহিমাহুল্লাহ এর উপদেশ বাণী:
হে আমীর! সর্বদা মনে রাখবেন যে, আপনি শুধুমাত্র আল্লাহর দ্বীনের জন্য কাজ করেন। তাই ব্যক্তিস্বার্থ থেকে দুরে থাকুন। আর সর্বদা আপনার আদর্শ যেন হয়, আল্লাহর কাছে যা প্রিয় সেটা আমার কাছেও প্রিয়।
ব্যক্তিস্বার্থ ও নিজ চাহিদার অনুগত হয়ে কাজ করা থেকে আপনি সাবধান। জনকল্যাণমূলক কাজের নামে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে নিজেকে বিশ্বস্ত, হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে প্রকাশ করা থেকে সতর্ক থাকুন। এমনটি করলে আপনিই হবেন সবচে নিকৃষ্ট স্বার্থপর। কারণ এ ধরণের আচরণ তাদের মাঝেই পাওয়া যায়, যাদের নিয়তে ত্রুটি রয়েছে।
আর ছোট বড় সর্বক্ষেত্রে সাওয়াবের আশা করুন। কারণ কোন আমলের কারণে আপনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন তা আপনার জানা নেই। আর প্রতি মুহূর্তে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করুন। যদি আপনার নফস নেতৃত্বের প্রতি লোভী হয় এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বস্তি লাভ করে, তাহলে জেনে রাখুন, আপনি বিরাট ঝুঁকিতে রয়েছেন।
একনিষ্ঠ, মুখলিস ব্যক্তি নেতৃত্বকে কখনোই পছন্দ করে না। কারণ নেতৃত্বের প্রতি ভালবাসা যদি আপনার ভিতরে বিরাট আকার ধারণ করে তখন এই ভালবাসা আপনার দ্বীন-ধর্মকে নষ্ট করে দিবে। শুধু তাই নয়, বরং আপনাকে আল্লাহর পথের মুজাহিদ থেকে প্রবৃত্তির পথের মুজাহিদে পরিণত করবে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেতৃত্বের প্রতি ভালবাসাকে ক্ষুধার্ত নেকড়ের সাথে তুলনা করেছেন – যে নেকড়ে মেষ পালকে শেষ করে দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلَا فِي غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ المَرْءِ عَلَى المَالِ وَالشَّرَفِ لِدِينِهِ
অর্থ: “সম্পদ ও মর্যাদার প্রতি কোন ব্যক্তির লোভ, মেষপালকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়া নেকড়ের চেয়ে জঘন্য ও নিকৃষ্ট।” (তিরমিযী, হাদিস – ২৩৭৬, ইমাম তিরমিযী রহিমাহুল্লাহ হাদিসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন)।
তো দ্বীন যদি আপনার জন্য কষ্টসাধ্য হয়, তাহলে ক্ষুধার্ত নেকড়ের ঝুঁকির ন্যায় আপনি দ্বীনের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। কারণ, ক্ষুধার্ত নেকড়ে দ্রুত সবকিছু ধ্বংস করে দেয়।
সর্বশেষ কথা, সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর।
********
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent