আল-ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশনমিডিয়াশাইখ বিলাল খরিসাত (আবু খাদীজাহ্ উরদুনী) রহিমাহুল্লাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

পিডিএফ/ওয়ার্ডঃ গণতন্ত্রের ভাঙ্গন-মুজাহিদ শাইখ বিলাল খরীসাত হাফিজাহুল্লাহ

গণতন্ত্রের ভাঙ্গন
মূল- মুজাহিদ শাইখ বিলাল খরীসাত হাফিজাহুল্লাহ
অনুবাদ- মাওলানা হামিদুর রহমান
c34f20f03d7f8312bf0057553647e85e.jpg
অনলাইনে পড়ুন
অনলাইনে ছড়িয়ে দিন
ডাউনলোড করুন
pdf
word

*********************

c34f20f03d7f8312bf0057553647e85e.jpg

 

[হাসান দিদু শানকিতীর আপত্তির নিরসন]

গণতন্ত্রের ভাঙ্গন

 

মুজাহিদ শাইখ বিলাল খরীসাত হাফিজাহুল্লাহ

 

 অনুবাদ- মাওলানা হামিদুর রহমান

 

5e33dd4f27c71d77fc1e60df89430ac6.png

********************

الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده

সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য এবং দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সেই মহামানবের প্রতি, যার পর আর কোন নবী নেই৷

হামদ ও সালামের পর–

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ

مثل الذين حملوا التوراة ثم لم يحملوها كمثل الحمار يحمل أسفارا بئس مثل القوم الذين كذبوا بآيات الله والله لا يهدي القوم الظالمين

অর্থঃ যাদেরকে তাওরাত দেয়া হয়েছিল, অতপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধা, যে পুস্তক বহন করে৷ যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে তাদের দৃষ্টান্ত কত নিকৃষ্ট৷ আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না৷ (সূরা জুমুআহ: ৫)

হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত

مثل الذين حملوا التوراة ثم لم يحملوها كمثل الحمار يحمل أسفارا

এখানে যে ব্যাক্তি কিতাব পড়ে; কিন্তু তার ভিতরস্থ বাণীর অনুসরণ করেনা, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সেই গাধার সাথে তুলনা করেছেন, যে কিনা আল্লাহ তা‘আলার গুরুত্বপূর্ণ কিতাব বহন করে চলে; কিন্তু জানে না তাতে কী রয়েছে।

তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

بئس مثل القوم الذين كذبوا بآيات الله…

এ আয়াতে مثل দ্বারা উদ্দেশ্য হলঃ বৈশিষ্ট্য ও অবস্থা৷ এবং ألذين حملوا التوراة দ্বারা উদ্দেশ্য হলঃ ঐ সমস্ত ইয়াহুদী, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাওরাতের পথনির্দেশ, বিধি-নিষেধ ও নৈতিকতাগুলো আমলের নির্দেশ দিয়েছিলেন; কিন্তু তারা সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে ও সেগুলোর উপর আমল করাকে ছেড়ে দিয়েছে৷ আয়াতে উল্লেখিত أسفار শব্দটি سفر এর বহুবচন৷ আর তা হচ্ছে এমন বড় কিতাব, যাতে বিভিন্ন রকমের উপকারী ইলম থাকে৷ আর কিতাবকে سفر নামে নামকরণ করার কারণ হচ্ছে, এটা এমন এক কিতাব যা তার অধ্যয়নকারীর নিকট তার ভিতরস্থ হিতকর তাৎপর্যসমূহ উন্মোচিত ও উদ্ঘাটিত করে দেয়৷

অর্থাৎ ঐ সমস্ত ইয়াহুদী, যাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি তাওরাত নাযিল করেছেন; কিন্তু তারা তা দ্বারা উপকৃত হয়নি, তাদের অবস্থা সেই গাধার মত, যে উপকারী ইলমের পুস্তকাদি বহন করে চলে; কিন্তু তা হতে মোটেও উপকৃত হতে পারে না৷ কেননা সে যা বহন করে তার কিছুই বুঝে না৷

সুতরাং যে সমস্ত ইয়াহুদী হেদায়াত ও নূরে পরিপূর্ণ তাওরাতের দ্বারা উপকৃত হয়নি, এ উদাহরণে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তুলনা করেছেন এমন গাধার সাথে, যে উপকারী ইলমের পুস্তকাদি হতে উপকৃত হওয়া ব্যতীত তা বহন করে যায়৷

উভয়টির মাঝে উপমার প্রেক্ষাপট হচ্ছে, যে জিনিসটি মহামূল্যবান ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ার কারণে তা হতে বিরাট উপকৃত হওয়া দরকার ছিল, সে জিনিস থেকে উপকৃত না হওয়া৷

কাশশাফ প্রণেতা রহ. বলেছেনঃ

“আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদীদেরকে এ ক্ষেত্রে তুলনা করেছেন যে, তারা তাওরাতের ধারক, পাঠক ও রক্ষক হওয়া সত্ত্বেও তার উপর আমল করে না ও তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপকৃত হয় না… সেই গাধার সাথে, যে أسفار তথা ইলমের বড়বড় কিতাব বহন করে৷ সুতরাং সে সেগুলো নিয়ে চড়ে বেড়ায়; কিন্তু তার পার্শ্ব দিয়ে গমনকারীদের ও পৃষ্ঠদেশে অনুভবকৃত ক্লান্তি, পরিশ্রম ছাড়া সে কিতাবের অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্বন্ধে পুরোই অজ্ঞ থাকে৷ যে কেউই ইলম অর্জন করল; কিন্তু ইলম অনুযায়ী আমল করল না, এটাই হচ্ছে তার উপমা, কতইনা নিকৃষ্ট উপমা৷”

ইমাম ইবনে কাসীর রহ. বলেছেনঃ

“যে সকল ইয়াহুদীদের তাওরাত দেয়া হয়েছিল; কিন্তু তারা তদনুযায়ী আমল করেনি, আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিন্দা করে বলেনঃ এক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সেই গাধার মত, যে অনেক পুস্তক বহন করে নিয়ে যায়… সুতরাং সেগুলোকে সে পিঠে করেই বহন করে নিয়ে যায়; কিন্তু জানেনা যে, তাতে কী রয়েছে, তাদেরও একই অবস্থা৷ তারাও তাওরাত মোতাবেক আমল করেনি; বরং তার অপব্যাখ্যা করেছে ও বিকৃতি সাধন করেছে৷ সুতরাং তারা গাধার চাইতেও নিকৃষ্ট৷ কেননা গাধার কোন বোধশক্তি নেই, আর তাদের বোধশক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা তা কাজে লাগায়নি৷

আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ

أولئك كالأنعام بل هم أضل، أولئك هم الغافلون

“তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর৷ তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ”৷ (সূরা আরাফ: ১৭৯)

ইমাম কুরতুবী রহ.বলেনঃ

“এ উপমায় আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সে ব্যাক্তির প্রতি কিতাবের মর্ম শিক্ষা করার ও তদনুযায়ী আমল করার ব্যাপারে উপদেশ রয়েছে, যে আল্লাহর কিতাবের ধারক-বাহক হবে৷ যেন সেও ঐ ধরণের নিন্দার স্বীকার না হয়, যার স্বীকার হয়েছে পূর্ববর্তী ইয়াহুদীরা৷ কবি বলেনঃ

زوامل للأسفار لا علم عندهم # بجيدها، إلا كعلم الأباعر

لعمرك ما يدري البعير إذا غدا # بأوساقه، أو راح ما في الغرائر

অর্থাৎ এরা হচ্ছে পুস্তক বহনকারী, তারা উটের ইলমের সমপরিমাণ ইলম ছাড়া আর কোন কিছুরই ইলম ভালোভাবে অর্জন করে না৷ তোমার জীবনের শপথ করে বলছি, উট যখন তার বোঝা নিয়ে প্রত্যুষে বা সন্ধায় চলাচল করে তখন সে জানে না যে, থলিতে কি রয়েছে৷

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদেরকে (ইয়াহুদীদেরকে) তাওরাতের প্রতি আমলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতঃপর ইহুদীরা তা অমান্য করে ও তাওরাতের উপর আমল করা থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ তা‘আলাحملوا التوراة ثم لم يحملوها (তথা: যাদের পিঠে তাওরাত চড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা তা বহন করেনি) এ আয়াতের মাধ্যমে তাদের এই আচরণের বিষয়টি ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এখানে একথার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি এ নির্দেশটি ছিল তাদের জন্য একটি প্রত্যায়নকৃত চুক্তি স্বরূপ৷ অথচ তারা তাওরাতকে বহন করেছিল লোকদের কাধে বা পিঠে চাপিয়ে দেয়া বস্তুকে বহন করার মতো করে৷ এরপর তারা তাদের এ চুক্তিকে ভঙ্গ করেছে এবং তাদের কাধে যে বোঝা ছিল তা ফেলে দিয়েছে ও অন্ধ ব্যক্তি যেভাবে তার চালকের অনুসরণ করে, সেভাবে তারা নিজেদের প্রবৃত্তি ও খাহেশাতের অনুসরণ করেছে৷”

ثم لم يحملوها এ আয়াতাংশে উল্লেখিত ثم শব্দটি তুলনামূলক বেশি ঢিলেমি বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে৷ কেননা তারা যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে তা ভঙ্গ করাটা ছিল প্রতিশ্রুতি প্রদান করার চাইতে বেশি বিস্ময়কর৷

আল্লাহ তা‘আলা তাদের ও তাদের কদর্যপূর্ণ অবস্থার অধিক নিন্দা জ্ঞাপন করার জন্য তাদেরকে সেই গাধার সাথে তুলনা করেছেন, যা নির্বুদ্ধিতা ও বোকামিতে প্রবাদতুল্য৷ কেননা তারা সর্বাধিক মূল্যবান ও অধিক কার্যকরী বস্তু থেকে উপকৃত হওয়া থেকে বিরত থেকেছে ৷ আর তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব৷ যেমনটি কিনা সেই গাধার বৈশিষ্ট্য, যা তার পিঠে বহন করা কোন উপকারী কিংবা ক্ষতিকর বস্তুর মাঝে কোন পার্থক্য করতে জানে না৷

আলী বিন জা‘দ রহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ আমি ইমাম শু‘বা রহ. কে বলতে শুনেছি: যে মুহাদ্দিস আরবি ভাষা জানেনা তার দৃষ্টান্ত দেয়া চলে সেই গাধার সাথে, যার গলে খাবারের এমন থলি ঝুলন্ত রয়েছে, যাতে বিচালি (পশুখাদ্য) নেই৷

ইমাম হাম্মাদ বিন সালামাহ রহ. বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হাদিস শিক্ষার্জন করেছে; কিন্তু আরবি ব্যাকরণ অথবা বলেছেন, আরবি ভাষা শিখেনি, সে ঐ গাধার ন্যায়, যার গলে খাবারের এমন থলি ঝুলন্ত রয়েছে, যাতে যব (পশুখাদ্য) নেই৷

আরবরা সরাসরি গাধার নাম মুখে আনা থেকে বিরত থাকতো৷ তারা গাধার নাম স্পষ্ট করে উল্লেখ করাকে অপছন্দ করতো বলে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করে বলতো, লম্বা দ্বি-কর্ণধারী৷ তেমনিভাবে গন্যমান্য ব্যক্তিদের মজলিসে গাধা নিয়ে আলোচনা করা ভদ্রতার পরিপন্থি বলে পরিগণিত হত৷ আরবদের অনেকে তাদের পায়ে অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও লজ্জাবোধ করতঃ গাধায় আরোহণ থেকে বিরত থাকতো৷

অবশ্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গাধায় আরোহণ করতেন আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অবনত মস্তক ও বিনয় প্রদর্শনবশতঃ৷

আরবরা গাধার বিবরণ দিতে গিয়ে বলতোঃ

إذا وقفته أدلى، وإن تركته ولى، كثير الروث، قليل الغوث، لا ترقأ به الدماء، ولا تمهر به النساء.

অর্থঃ তুমি যখন তাকে দাঁড় করিয়ে রাখবে তখন সে স্থির থাকে, আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে সে পলায়ন করবে৷ সে হচ্ছে অধিক মলত্যাগকারী, অল্প সাহায্যকারী। তার দ্বারা না মুক্তিপণ দেয়া যায়৷ আর না স্ত্রীকে মোহরানা প্রদান করা যায়।

আরো বলতোঃ গাধা এ পরিমাণ একটি নির্লজ্জ, কামুক ও নারীলিপ্সু প্রাণী যে, মধ্যরাস্তাতেও সে তার মাদীর সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকে না৷ অথচ উট, ভেড়াসহ অন্যান্য প্রাণী এর ব্যতিক্রম৷

গাধার উচ্চ আওয়াজের জন্য অন্যান্য সকল জীব-জানোয়ারের মাঝে তার একটি প্রসিদ্ধি রয়েছে৷ যা সর্বনিকৃষ্ট ও অমার্জিত আওয়াজ বলে পরিগণিত হয়ে থাকে৷ গাধার আওয়াজকে نهيق (কর্কশ ডাক) বলে নামকরণ করা হয়৷

কুরআনুল কারীমে তার আওয়াজকে সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর আওয়াজ বলে বিশেষায়িত করা হয়েছে; কেননা তা লোকদের জন্য বিরক্তি ও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷

আল্লাহ তা‘আলা লোকমান হাকীম কর্তৃক তার ছেলেকে কৃত উপদেশকে কুরআনে উল্লেখ করে বলেনঃ

واغضض من صوتك إن أنكر الأصوات لصوت الحمير

“পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নীচু কর৷ নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর”৷ (সূরা লোকমান: ১৯)

এক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, এ উদাহরণটি যদিও ইয়াহুদীদের জন্য দেয়া হয়েছিল, তবুও তা উদ্দেশ্যের প্রতি বিবেচনা করতঃ সে ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যে কুরআন বা ইলমের ধারক-বাহক হয়ে তদানুযায়ী আমল করা ছেড়ে দিবে, তার হক্ব আদায় করবে না ও তার যথোপযুক্ত মূল্যায়ন করবে না৷

ইমাম মাইমুন বিন মিহরান রহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ

“হে কুরআন ওয়ালাগণ! তোমাদেরকে পাকড়াও করার আগেই তোমরা কুরআনের অনুসরণ কর৷” অতপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেছেন৷

ইমাম ইয়াহয়া বিন ইয়ামান রহ. বলেছেনঃ

“তাদের একেকজন হাদিস লেখে অথচ না সে হাদিস বুঝার চেষ্টা করে, আর না হাদিস নিয়ে গভীরভাবে কোন চিন্তা-ভাবনা করে৷ অতপর যখন তাদের কাউকে কোন মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন সে মুকাতাব ক্রীতদাসের মতন চুপটি মেরে বসে থাকে৷”

কবি বলেনঃ

إن الرواة على جهل بما حملوا مثل الجمال عليها يحمل الودع

لا الودع ينفعه حمل الجمال له ولا الجمال بحمل الودع تنتفع

অর্থাৎ যে সকল রাবীগণ (বর্ণনাকারীগণ) নিজেদের ধারণ করা হাদিসের (মর্মের) ব্যাপারে অজ্ঞতা রেখেই তা বর্ণনা করে যায়, তারা সেই উটের ন্যায়, যে আমানত বহন করে নিয়ে চলে৷ উটের এই আমানতকে বহন করা না আমানতের মালিকের নিকট কোন ফায়দা পৌছায় এবং আর না এ আমানত বহন করার দ্বারা উট নিজেও কোন উপকৃত হতে পারে৷

এমনই ঘটেছে কতিপয় সে সকল লোকদের ক্ষেত্রে, যারা কুরআন-হাদিসের (কিছু) নুসুস মুখস্থ করে নিয়েছে ও দিগদিগন্তে তাদের সুনাম ছড়িয়ে গেছে৷ ফলে হাজার হাজার জ্ঞানপিপাসু ও ক্ষুধার্ত ব্যক্তিরা তাদের বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি সত্বেও তাদের অনুসরণ করে যাচ্ছে৷

কুরআন-সুন্নাহর একেবারে সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার নস সমূহকেও তারা তার স্বস্থান থেকে সরিয়ে দিয়ে বিকৃত করে ফেলছে৷

তারা সুযোগ-সুবিধা, আনুকূল্য ও ঝুঁকিমুক্ত জীবনযাপনের জন্য যারপরনাই আত্মবিনাশ ও চাটুকারিতার মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের সন্তুষ্টকরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে৷

তারা নিজেরা নিকৃষ্টতম কুফুরী কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে এবং একত্ববাদীদেরকে অজ্ঞ ও দ্বীনের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনকারী বলে আখ্যা দিয়ে তাদের সাথে তর্কাতর্কি করে ধর্মহীনতা ও সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নিয়ে।

তারা তাদের প্রতি অনুগ্রহকারীদের শুধুমাত্র সমর্থন করাকেই যথেষ্ট মনে করে না; বরং তারা নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে তাদের প্রতিটি বক্তব্যেরই স্তুতি গাওয়া, তা প্রচার করা, তার দিকে মানুষদের আহবান জানানো ও সেটিকে ইসলামী শরীয়াহর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে রূপ দেয়ার প্রয়াস চালানোর ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করে থাকে৷

সুতরাং এই হাসান দিদু হচ্ছে এ যুগের আলেমদের একজন, যার প্রশংসায় লোকেরা সদা পঞ্চমুখ থাকে৷ সে পাশ্চাত্য থেকে গণতন্ত্রকে আমদানি করার আহবান জানিয়ে তার সাথে শর্ত জুড়ে দিয়ে বলে যে, “যদি আমাদের জন্য তা কল্যাণকর হয় তবে…”৷ ভাবখানা এমন, যেন সে ইতিহাসের বাইরে বসবাস করে এবং গণতন্ত্রের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ রয়েছে, যেটিকে জোর করে ও কৃত্রিমভাবে শুরার সাথে মিলিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে৷

মহিমান্বিত সেই সত্তা, যিনি আমাদের বোধশক্তিকে সুশোভিত করেছেন এবং পরিস্থিতিকে আমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন ও আবরণে আচ্ছাদিত বস্তু আমাদের কাছে করে দিয়েছেন উন্মোচিত৷

তাদের মতে ইসলামি শরিয়ত যেন অসম্পূর্ণ ও তা গোটা মানবজাতির জীবনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়৷ ফলে সে ছিদ্র বন্ধ করতে ও সকল সমস্যার সমাধান করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে৷ আর ঠিক সেই সময়ে বিদেশ থেকে চিন্তাধারা আমদানি করার দাবি জানিয়ে আমাদের মাঝে আবির্ভাব ঘটেছে সেই মুক্তমনা ও বিস্তৃত চিন্তাসম্পন্ন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্বের৷ অথচ সেই উন্মাদ জানেনা যে, নিজের এ দাবির মাধ্যমে সে খরিদ করছে উৎকৃষ্ট বস্তুর বিনিময়ে নিকৃষ্ট বস্তু ৷

আর সেই উৎকৃষ্ট বস্তুটি ছিল এমন এক কিতাব, যার আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত মহাজ্ঞানী সর্বজ্ঞ সত্ত্বার পক্ষ থেকে৷ যা নাযিল করা হয়েছে সপ্ত আকাশের উপর থেকে৷ যা সেই সর্বজ্ঞ সত্ত্বার বাণী, যার সামনে কিংবা পিছন কোনো দিক থেকেই বাতিল স্পর্শ করতে পারে না৷

ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেছেনঃ

“মোটকথা তারা (ইয়াহুদীরা) দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেরই কল্যাণ লাভে ধন্য হয়েছিলেন৷ আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর কাছে ব্যতিত অন্য কারো মুখাপেক্ষী বানাননি৷ তাহলে মহান আল্লাহ তা‘আলার এমন পূর্ণাঙ্গ শরিয়ত, বিশ্বের ইতিহাসে অদ্যাবধি যার চেয়ে শ্রেষ্ঠতম কোন শরিয়তের অবতারণা হয়নি, সে শরিয়ত সম্পর্কে সে কিভাবে ধারণা করে যে, তা অসম্পূর্ণ ও তার জন্য ভিন্ন এমন কোন নীতি, যুক্তি বা বাস্তবতার প্রয়োজন, যেগুলো এসে সেটিকে পূর্ণাঙ্গতায় রূপ দেবে? এমন ধারণা পোষণকারী হচ্ছে সেই ব্যাক্তির ন্যায়, যার ধারণামতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর মানুষদের জন্য অন্য কোন রাসূলের প্রয়োজন রয়েছে৷ এ সকল ভ্রান্ত ধারণার কারণ হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত দ্বীন সম্পর্কে অস্পষ্টতা থাকা ও সে বোধশক্তির ঘাটতি থাকা, যা আল্লাহ তা‘আলা দান করেছিলেন সাহাবায়ে কেরামদের৷ যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত দ্বীনকেই যথেষ্ট মনে করেছিলেন ও এতদ্বভিন্ন অন্য সবকিছু থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করেছিলেন এবং তা দ্বারাই মানুষদের হৃদয় ও ভূখণ্ড জয় করে নিয়ে বলতেনঃ আমাদের কাছ থেকে আমাদের নবী এ দ্বীনের প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন৷ আমরাও তোমাদের কাছ থেকে উহার প্রতিশ্রুতি নিচ্ছি৷ হযরত ওমর রাযি. তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে হাদিস পর্যন্ত বর্ণনা করতে লোকদের নিষেধ করতেন এই আশঙ্কায় যে, লোকেরা যেন কুরআন থেকে বিমুখ হয়ে হাদিস নিয়েই ব্যস্ত না হয়ে পড়ে৷ আর যদি তিনি এখনকার লোকদের কুরআন হাদিস থেকে বিমুখ হয়ে নিজেদের চিন্তা ও মেধার আবর্জনা এবং আপন আপন অভিমত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়াকে দেখতেন, তাহলে না জানি তিনি কী করতেন? আল্লাহর পানাহ!!

আল্লাহর শপথ! এ সকল গণতন্ত্রের দাবিদাররা যদি হযরত ওমর রাযি. এর সময়ে থাকতো তাহলে তিনি পিটিয়ে তাদের মাথা ফাঁটিয়ে ফেলতেন ও হাড়গোড় ভেঙ্গে দিতেন৷

ছাবীগ বিন ‘আসালের প্রসিদ্ধ ঘটনায় হযরত ওমর রাযি. তার সাথে যে আচরণ করেছিলেন, এদের সাথেও হযরত ওমর রাযি. এর সেই আচরণের পুনরাবৃত্তি করা দরকার৷ সে ঘটনাটি তাফসিরে কুরতুবী ও তাফসিরে ইবনে কাসীর সহ বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে৷

ঘটনাটি হচ্ছেঃ ছাবীগ বিন ‘আসাল মিশরে এসে লোকদেরকে কুরআনুল কারীমের রূপক অর্থবহ আয়াতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো৷ মিশরের গভর্নর আমর ইবনুল ‘আস রাযি. তাকে খলিফাতুল মুসলিমিন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. এর কাছে প্রেরণ করলেন৷ ছাবীগের সফরসঙ্গী দূত যখন চিঠি নিয়ে এসে হযরত ওমরকে রাযি. তা পড়ে শুনালো তখন তিনি বললেনঃ “সে লোক কোথায়”? দূত বললোঃ “সে সফরের আসবাবপত্রের কাছে অবস্থান করছে”৷ ওমর রাযি. বললেনঃ “দেখ সে যেন আবার পালিয়ে না যায়৷ সেক্ষেত্রে তুমিই আমার হাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির স্বীকার হবে”৷ তখন সে তাকে ওমর রাযি. এর নিকট নিয়ে আসলো৷ তাঁর নিকট এসে সে বসে পড়লো৷ তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ “তুমি কে”? সে উত্তর করলোঃ “আমি আল্লাহর বান্দা ছাবীগ”৷ তখন ওমর রাযি. বললেনঃ “আমি আল্লাহর বান্দা ওমর”৷ অতপর তিনি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন ও শুকনো খেজুর কাণ্ড দিয়ে তাকে প্রহার করতে শুরু করলেন৷ প্রহার করতে করতে তার মাথা ফাটিয়ে ফেললেন ও তার চেহারা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো৷ লোকটি তখন বললোঃ “হে আমিরুল মুমিনিন যথেষ্ট হয়েছে, আল্লাহর শপথ! আমার মস্তিষ্কে উদয় হওয়া অপ্রয়োজনীয় বিষয়টি এখন দূরীভূত হয়ে গেছে”৷ অতপর ছাবীগ তামিমী হযরত ওমর রাযি. কে এ কথা বলে প্রশ্ন করা শুরু করে বললোঃ “আমাকে বলুন, والذاريات ذروا (কসম ঝঞ্ঝাবায়ুর) কি জিনিস”? ওমর রাযি.বললেনঃ “বাতাস, আমি যদি এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে না শুনতাম তাহলে বলতাম না”৷ সে বললোঃ “আমাকে বলুন, فالحاملات وقرا (অতঃপর বোঝা বহনকারীর) কি জিনিস”? ওমর রাযি.বললেনঃ “মেঘমালা, আমি যদি এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে না শুনতাম তাহলে বলতাম না”৷ সে আবার বললোঃ “আমাকে বলুন, فالجاريات يسرا (অতঃপর মৃদুভাবে চলমান বস্তুর) কি জিনিস”? ওমর রাযি.বললেনঃ “জাহাজ, আমি যদি এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে না শুনতাম তাহলে বলতাম না”৷ সে বললোঃ “আমাকে বলুন, فالمقسمات أمرا (অতঃপর কর্ম বন্টনকারীর) কি জিনিস”? ওমর রাযি.বললেনঃ “ফেরেশতা, আমি যদি এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে না শুনতাম তাহলে বলতাম না”৷

ওমর রাযি.বললেনঃ “তুমি আবারও নতুন করে জিজ্ঞাসা করছো”? তারপর তিনি তাজা খেজুর কাণ্ড নিয়ে এসে তা দ্বারা প্রহার করার আদেশ দিলেন৷ উহা দ্বারা তাকে একশো কষাঘাত করা হলো ও একটি বাড়ীতে তাকে রাখা হলো। অতপর সে সুস্থ হলে তাকে ডেকে আরো একশো কষাঘাত করা হলো৷ তখন সেই তাজা খেজুর কাণ্ড দ্বারা তাকে এমনভাবে প্রহার করেছিলেন যে, তার পিঠে ঘা বানিয়ে ফেলেছিলেন৷ অতপর তাকে আবার সুস্থ হতে দিলেন৷ তারপর আবার ডাকলেন ও আবার সুস্থ হতে দিলেন৷ এরপর আবার কষাঘাত করতে ডাকলে ছাবীগ বললোঃ আপনি যদি আমাকে হত্যা করতে চান তাহলে আমাকে উত্তমপন্থায় হত্যা করে ফেলুন৷ আর যদি আপনি আমার চিকিৎসা করতে চান তাহলে আল্লাহর শপথ! আমি সুস্থ আছি৷ তখন তিনি তাকে আবু মুসা আশ‘আরী রাযি. ও ইরাকবাসীদের নিকট এই মর্মে নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করলেন যে, মুসলমানেরা যেন তার সাথে উঠাবসা করা থেকে বিরত থাকে৷ তখন সে যদি কোন মজলিসে আসতো তাহলে তারা উঠে পড়তো ও তাকে রেখে চলে যেত৷ বিষয়টি লোকটির কাছে দুঃসহ হয়ে দাঁড়ায়৷ তখন আবু মুসা আশ‘আরী রাযি. হযরত ওমর রাযি. এর নিকট এই মর্মে চিঠি লেখলেন যে, লোকটি খাঁটি দিলে তাওবা করেছে৷ জবাবে ওমর রাযি. লেখলেন যে, লোকদেরকে তার সাথে উঠাবসা করার অনুমতি দিয়ে দিন৷

তর্কশাস্ত্রবিদদের সম্বন্ধে ইমাম শাফি‘য়ী রহ. এর অভিমতটি যথার্থই ছিলঃ

“তর্কশাস্ত্রবিদদের ব্যাপারে আমার নির্দেশ হচ্ছে এই যে, তাদেরকে খেজুর কাণ্ড ও জুতাপেটা করে গোত্রে গোত্রে ঘুরানো হবে ও বলা হবে যে, এটা ঐ ব্যাক্তির শাস্তি, যে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহকে বাদ দিয়ে তর্কশাস্ত্রে আত্মনিয়োগ করেছে৷”

সুতরাং সে ব্যক্তির সাথে কিরূপ আচরণ করা উচিত, যে গণতন্ত্রের দাওয়াত দেয় ও ইসলামের শুরা ব্যবস্থার পরিবর্তে এটাকে মান্য বলে নির্ধারণ করে৷

মূলতঃ এ সকল আলেমরা হচ্ছে বিশ্বাসঘাতক ও তাদের প্রতি অনুগ্রহকারীদের ভাড়ার গোলাম৷ তারা তাদের প্রতি অনুগ্রহকারীদের সকল কর্মকাণ্ডকেই নির্দোষ বলে ঘোষণা করতে প্রস্তুত৷ তাই তারা তাদের পক্ষ হয়ে বিতর্ক করে যায় ও তাওহীদবাদীদের চরমপন্থী ও তাকফিরী বলে আখ্যা দিয়ে থাকে৷ তারা হক্বের অনুসারী ও হক্বকে চেনা সত্বেও অপব্যাখ্যা করে এবং বুঝেও না বুঝার ভান করে সত্য বলা থেকে বিরত থাকে৷

আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে ইলম ও মা‘রেফাত দানে ধন্য করেছেন, তাদের প্রত্যেকের উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হচ্ছেঃ তাদের ভণ্ডামি ফাঁস করে দিয়ে লোকসমাজে তা প্রচার করে দেয়া এবং তাদের দোষ-ত্রুটি ও বিভ্রান্তিমূলক মতগুলো লোকদের কাছে বর্ণনা করা৷

কেননা সাধারণ মুসলমানদের জন্য তাদের অনুসরণ করা অত্যন্ত বিপদসংকুল ও ভীষণ বিপজ্জনক৷ একজন আলেমের পদস্খলনের দায় শুধুমাত্র তার নিজের উপরই বর্তায় না; বরং তা তার সকল অনুসারীদেরকেই গ্রাস করে নেয়৷ তাই সেই আলেমের ক্ষেত্রে কী বলা হবে, যে কিনা পাশ্চাত্যের নোংরা রাজনীতি ও গণতন্ত্র বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বনের আহবান জানায়…

আলেমের তুলনা করা যেতে পারে একটি জাহাজের সাথে৷ যার নিমজ্জনে নিমজ্জন ঘটে বহু সৃষ্টজীবেরও৷

প্রবাদে আছেঃ “আলেম যখন পদস্খলিত হয় তখন ঢোল বাজিয়ে হয়”৷ অর্থাৎ সকলকে নিয়ে পদস্খলিত হয়৷

আমিরুল মুমিনিন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. বলেছেনঃ তিনটি জিনিস দ্বীনকে ধ্বংস করে দেয়ঃ আলেমের পদস্খলন, কুরআনের আয়াত নিয়ে মুনাফিকের বিতণ্ডা ও পথভ্রষ্টকারী শাসকবর্গ৷

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. বলেছেনঃ “তুমি তোমার দ্বীনের দ্বায়িত্ব লোকদের কাছে অর্পণ করোনা৷ কেননা তারা আদৌও ভুল থেকে নিরাপদ নয়৷”

ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেছেনঃ “শরিয়তের নস সমূহের স্থলে নির্দিষ্ট কোন এক ব্যক্তির বক্তব্য সমূহকে এমনভাবে গ্রহণ করতে থাকা যে, তার কথা ছাড়া অন্য কারো কথা; এমনকি শরিয়তের যে নস তার মতের সাথে সাংঘর্ষিক সেটার প্রতিও কর্ণপাত না করা এমন একটি কাজ, যা হারাম হওয়ার ব্যাপারে গোটা উম্মাহ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। উম্মাহর মাঝে এ রোগের উৎপত্তি কেবল খাইরুল কুরূণের অতিক্রান্ত হওয়ার পরই হয়েছে৷”

সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ, আপনারা ঐ সমস্ত লোকদের অনুসরণ করা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করুন, যারা নিজেদের অলিক প্রভু ও শাসকদের সন্তুষ্ট করার জন্য নরম নরম কথা বলে ও দ্বীনের মাঝে বিকৃতি নিয়ে আসে৷ এবং জেনে রাখুন, এ ইলম হচ্ছে দ্বীন৷ তাই খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনারা কার কাছ থেকে তা গ্রহণ করছেন৷

والله تعالى أعلى وأعلم

وآخر دعونا أن الحمد لله رب العالمين

মুজাহিদ শাইখ বিলাল খরীসাত (আবু খাদিজা) হাফিজাহুল্লাহ

১৮ রবিউস সানি, ১৪৪০ হিজরী / ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ঈসায়ী

————————–

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 4 =

Back to top button