ইতিহাস- ঐতিহ্যবই ও রিসালাহবাংলাদেশশাইখুল হাদীস মুফতি আবু ইমরান হাফিযাহুল্লাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

প্রশ্ন-৩: দাওয়াহ বলতে কি আপনারা শুধু তাওহীদের দাওয়াহ বুঝাচ্ছেন?

প্রশ্ন-৩: দাওয়াহ বলতে কি আপনারা শুধু তাওহীদের দাওয়াহ বুঝাচ্ছেন?

 

উত্তরঃ  ইন্নাল হামদা লিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ।

আপনার সুন্দর প্রশ্নের জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাযা দান করুন।

প্রথমতঃ          মুসলমানদেরকে ‘দাওয়াহ’ দেয়া হয় নাকি ‘ইসলাহ’ করা হয়, সেই শব্দগত আলোচনায় আমরা যাচ্ছি না। শাব্দিকভাবে দ্বীনের যেকোন কাজের দিকে আহবানকে ‘দাওয়াহ ইলাল্লাহতে’ ফেলা যাবে। যেমনঃ কেউ হারাম কাজ পরিত্যাগ করার জন্য কাউকে উদ্বুদ্ধ করলো, সে তো আল্লাহর আনুগত্যের দিকেই আহবান করলো।  আর আহবান শব্দের আরবী হচ্ছে দাওয়াহ।

দ্বিতীয়তঃ    সকল আম্বিয়া (আঃ) দাওয়াহ দিয়েছেন। আল-কোরআনের পাতায় পাতায় তাদের দাওয়াহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। এবং এটা খুব পরিষ্কার বিষয় যে, তাদের দাওয়াহ এর মূল বিষয়বস্তু ছিলো তাওহীদ। যেমনঃ

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ

আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাকো। (সূরা আন নাহল, আয়াতঃ ৩৬)

وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلاَّ نُوحِيۤ إِلَيْهِ أَنَّهُ لاۤ إِلَـٰهَ إِلاَّ أَنَاْ فَٱعْبُدُونِ

আমি আপনার পূর্বে এমন কোন রাসুল প্রেরন করি নাই এই ওহী ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত কোন (সত্য) ইলাহ নেই, সুতরাং আমারই ইবাদত কর (সূরা আম্বিয়া, আয়াতঃ ২৫)

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ .أَن لاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ اللّهَ إِنِّيَ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ أَلِيمٍ

আর অবশ্যই আমি নূহ কে তাঁর জাতির প্রতি প্রেরণ করেছি, (তিনি বললেন) নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য প্রকাশ্য সতর্ককারী।তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদত করবে না। নিশ্চয় আমি তোমাদের ব্যাপারে এক যন্ত্রণাদায়ক দিনের আযাবের ভয় করছি।(সূরা হুদ, আয়াতঃ ২৫-২৬)

وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ إِنْ أَنتُمْ إِلاَّ مُفْتَرُونَ

আর আদ জাতির প্রতি আমি তাদের ভাই হুদকে প্রেরণ করেছি; তিনি বলেন – হে আমার জাতি, আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, তোমরা সবাই মিথ্যা আরোপ করছ। (সূরা হুদ, আয়াতঃ ৫০)

এছাড়াও দেখুনঃ সূরাহ হূদ, আয়াত ৬১; সূরা ইউসুফ, আয়াতঃ ৩৯-৪০; এরকম আরো অনেক আয়াত আছে।

তৃতীয়তঃ  এছাড়াও প্রত্যেক নবী তাঁর যুগের বহুল প্রচলিত ও বড় বড় সমস্যাকে তাঁদের দাওয়াহতে সামিল করেছেন। যেমনঃ

وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّن الْعَالَمِينَ. إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّن دُونِ النِّسَاء بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُونَ

এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি? তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন করো নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ। (সূরা আল আরাফ, আয়াতঃ ৮০-৮১)

وَيَا قَوْمِ أَوْفُواْ الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ وَلاَ تَبْخَسُواْ النَّاسَ أَشْيَاءهُمْ وَلاَ تَعْثَوْاْ فِي الأَرْضِ مُفْسِدِينَ

আর হে আমার জাতি, ন্যায়নিষ্ঠার সাথে ঠিকভাবে পরিমাপ কর ও ওজন দাও এবং লোকদের জিনিসপত্রে কোনরূপ ক্ষতি করো না, আর পৃথিবীতে ফাসাদ করে বেড়াবে না। (সূরা হুদঃ ৮৫)

চতুর্থতঃ      তাওহীদের যে অংশে সমসাময়িক যুগে মানুষের ভুলভ্রান্তি বেশী দেখা যায়, সেই অংশ নিয়ে সমকালীন আলেম-ওলামারা বেশী কথা বলেছেন, দাওয়াহ দিয়েছেন, সেগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করেছেন।

যেমনঃ ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) এর সময় ‘আল কোরআন কি আল্লাহর কথা নাকি আল্লাহর সৃষ্টি’ এই ব্যাপারে ফিতনা দেখা দেয়। বস্তুতঃ এটা তাওহীদ আসমা ওয়াস সিফাতের একটা অংশ। উনি এই ব্যাপারে সঠিক অবস্থান তুলে ধরেন, এর জন্য তৎকালীন খলিফাদের পক্ষ থেকে জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, জনসম্মুখে চাবুকের আঘাত সহ্য করেছেন। তারপরও তিনি বলেছেনঃ

لا والله، القرآن كلام الله.

“না, আল্লাহর কসম! আল কোরআন হচ্ছে আল্লাহর কথা।”

একইভাবে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) এর যুগে মানুষ তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাতের ক্ষেত্রে অনেক ভুল করছিলো। মুতাযিলা, মুসাব্বিহা ইত্যাদি বিভিন্ন ফিরকার প্রভাবে মানুষ আল্লাহর নাম ও গুনাবলীর ক্ষেত্রে ভ্রান্ত বিশ্বাস পোষণ করা শুরু করেছিলো। তাই তিনি তাঁর দাওয়াহ কার্যক্রমে আসমা ওয়া সিফাতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জোর দিয়েছেন। এমনকি তাঁর লিখিত আক্বীদা গ্রন্থ যেমনঃ আক্বীদা আল ওয়াসিতিয়া, আক্বীদা আল হামাবিয়াহ ইত্যাদিতে অন্যান্য আক্বীদা গ্রন্থের তুলনায় আসমা ওয়া সিফাতের উপর অনেক বেশী আলোচনা রয়েছে। (দেখুনঃ পৃথিবীতে আল্লাহর শাসন, শাইখ আবু হামজা আল মিশরী (দাঃ বাঃ), পৃষ্টাঃ ১৯৪; http://gurabamedia.wordpress.com/2012/09/20/পৃথিবীর-বুকে-আল্লাহর-শাস )

এক্ষেত্রে ভারত উপমহাদেশের ওয়লামায়ে কেরামের মধ্যে বালাকোট আন্দোলনের প্রাণপুরুষ সৈয়দ আহমদ (রঃ) এর নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁর আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল মূলত দুটি উদ্দেশ্যেঃ

এক. পারিপার্শ্বিক নানা প্রভাবে কলুষিত মুসলিম জাতির ঈমান-আকিদাকে শিরকমুক্ত করা। এটা ছিলো সমকালীন সমাজকে মাজার-কবর পূজা ইত্যাদি থেকে বের করে তাওহীদের সঠিক পথে পরিচালনা করার প্রচেষ্টা।

দুই. মুসলিম জীবনধারা ও জাগরণের অন্তরায় অশুভ শক্তিসমূহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। অস্তিত্ব হারাতে বসা মুসলিম জাতির জন্য তখন এ দুটি কর্মসূচি ছিল অত্যন্ত যগোপযোগী ও প্রয়োজনীয়।

এরই ধারাবাহিকতায় মুজাদ্দিদে আলফে সানি হযরত সায়্যিদ শাইখ আহমদ সারহিন্দি (রঃ) সম্রাট আকবর কর্তৃক উদ্ভাবিত কুফরী ‘দ্বীন-ই ইলাহীর’ বিরুদ্ধে কঠোর সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। এই দ্বীন-ই ইলাহী ছিলো তাওহীদ রবুবিয়াত ও উলুহিয়্যাতের বিরোধী, এক খিচুরী দ্বীন যাতে বিভিন্ন ধর্ম থেকে কিছু কিছু নিয়ম নিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিলো। আল্লামা সারহিন্দি (রঃ) এর বিরুদ্ধে বিপুলভাবে আন্দোলন গড়ে তুলেন এবং এর সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করেছেন।

পরবর্তীতে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানির পথ ধরে তাঁরই ভাবশিষ্য শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রঃ) এর বিপ্লবী চিন্তাধারা মুসলমান জাতির জন্য এক দিকদর্শনের কাজ করে। গড়ে উঠেন হযরত শাহ আবদুল আযীয, শাহ ইসমাইল শহীদ, সৈয়দ আহমদ শহীদ ও শাহ আব্দুল হাই প্রমুখের নেতৃত্বে একটি বিপ্লবি জামায়াত। তারা এই উপমহাদেশে তাওহীদের যে বিশেষ ক্ষেত্রসমূহে বিচ্যূতি লক্ষ্য করেছেন, সেসব ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে সেগুলি সংশোধন করার চেষ্টা করেছেন।

১৮০৩ সালে শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিসে দেহলবি (রঃ) ভারতীয় উপমহাদেশকে ‘দারুল হারব’ ঘোষণার মাধ্যমে এক বিপ্লবী ফতোয়া জারি করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদি আন্দোলন গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে এ ধারার এক মহান পুরুষ হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রঃ) নেতৃত্ব দেন ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ নামের প্রসিদ্ধ উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের। একে একে সূচিত হয় বালাকোট, সিতানা ও শামেলীর মতো জিহাদের ক্ষেত্র। ইসলামী শরীয়াত অনুপস্থিত থাকা হচ্ছে সামাজিক ও রাস্ট্রীয় ক্ষেত্রে তাওহীদ হতে বিচ্যূতি আর এসব আন্দোলনই ছিলো  ইসলামী শরীয়াতকে বুলন্দ করার জন্য মুজাহিদ-আলিমদের বিভিন্ন প্রচেষ্টা।

এমনিভাবে সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর (রঃ) ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী জিহাদের একজন আমীর। তিনি জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে সংগ্রাম ও তাঁর বিখ্যাত বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। ব্রিটিশ সেনাদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় এই বাঁশের কেল্লাতেই তাঁর শাহাদত নসীব হয়। তিনি আগ্রাসী কাফির-বৃটিশ সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের ফরজে আইন পালন করার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

এছাড়া এই শতকে মধ্যপ্রাচ্যের দুইজন অন্যতম আলেম শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহীম (রঃ) যিনি সৌদি আরবের শরীয়াহ কাউন্সিলের প্রধান ও শাইখ বিন বাজের (রঃ) উস্তাদ ছিলেন এবং ইমাম আহমেদ শাকির (রঃ) যিনি অন্যতম মুহাদ্দিস ও তাফসীর ইবনে কাসীরের সংক্ষিপ্তসার লিখেছেন – তারা মানবরচিত আইন দিয়ে বিচার ফায়সালার বিরুদ্ধে ব্যাপক দাওয়াহ ও আলোচনা করেছেন। যেহেতু তাদের সময় আরবে এই কুফরী কাজটির প্রচলন শুরু হয়েছিলো এবং বিভিন্ন দেশে শরীয়াহ আদালতের পাশাপাশি মানবরচিত আইনে পরিচালিত আদালত স্থাপন হচ্ছিলো। শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহীম (রঃ) তাঁর ‘তাহকীম আল ক্বাওয়ানিন’ নামক রিসালায় এবং ইমাম আহমেদ শাকির (রঃ) তাফসীর ইবনে কাসীরের সংক্ষিপ্তসারের (মুখতাসার তাফসীর ইবনে কাসীর) ভূমিকায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।”

পঞ্চমতঃ      আমাদের যুগে তাওহীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে ভুলের মাঝে সাধারণভাবে পুরো মুসলিম উম্মাহ ডুবে আছে তা হচ্ছে ‘গণতন্ত্র ও মানব রচিত আইনে বিচার ফায়সালার’ শিরক। এটা রব এবং ইলাহ হিসেবে আল্লাহর একত্বের পরিপন্থী । আইনপ্রণয়নকারীরা তাওহীদ রবুবিয়াত বিরোধী কাজ করছে কারণ আইন প্রণয়ন করা রব হিসেবে আল্লাহর হক্ব। আর সেই আইনকে পছন্দকারী, খুশী মনে মান্যকারী, শরীয়ার উপর প্রাধান্যদানকারী ও এই কুফরী আইনকে গ্রহনযোগ্য হিসেবে গ্রহণকারীরা তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাতের ক্ষেত্রে শিরক করছে কারণ সে আহকামুল-হাকিমীন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আইন থেকে মানুষের দেয়া আইনকে উত্তম মনে করছে, সেটাকে অধিক কল্যাণকর মনে করছে। আর যারা খুশীমনে সেই আইনে বিচার ফায়সালা চাইছে, তারা কুফরী এবং শিরক করছে । আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُواْ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُواْ إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُواْ أَن يَكْفُرُواْ بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلاَلاً بَعِيدًا

আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা সেটাকে অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। (সূরা আন নিসা, আয়াতঃ ৬০)

তাই আমাদের যুগে মূলতঃ তাওহীদের দাওয়াহ এর পাশাপাশি এই গণতন্ত্র ও মানব রচিত আইনে বিচার-ফায়সালার শিরক-কুফর সবার কাছে তুলে ধরতে হবে। আমরা সেটা করার চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ।

ষষ্ঠতঃ      তাওহীদের দাওয়াহ বলতে আমরা ‘কিছু বিষয়ে তাওহীদ এর আলোচনা ও শিরকের বিরোধিতা করা আর কিছু বিষয়ে নিশ্চুপ থাকা’ এটা বুঝাচ্ছি না যা আল-সৌদের দেশ (প্রকৃতপক্ষে বিলাদ আল হারামাইন) থেকে আল-সৌদের টাকায় চালিত ইউনিভার্সিটি থেকে ডঃ অথবা লিসান্স ডিগ্রীধারী কেউ কেউ করে থাকেন। এছাড়াও তাদের এদেশীয় মুরিদরাও একই ধরনের দাওয়াহতে বিশ্বাসী। যেমনঃ তারা মাজার-কবর পূজা, শোকেসে রাখা মূর্তি ইত্যাদির খুব বিরোধিতা করে থাকেন কিন্তু রাস্ট্র ব্যবস্থায় শিরক-কুফর নিয়ে তারা একেবারে নিশ্চুপ। বরং আমরা তাওহীদের দাওয়াহ বলতে সেই দাওয়াহকে বুঝাচ্ছি যেভাবে নবী-রাসুলগণ (আঃ) দিয়েছিলেন আর সমকালীন তাগুত-কাফির-মুরতাদগণের গাত্রদাহের কারণ হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা এমন কোন আংশিক তাওহীদের দাওয়াহ বুঝাচ্ছি না যা দেয়ার পর সমাজের সবাই আমাদের উপর খুব খুশী থাকে, আমাদেরকে বাহবা দেয়; বরং আমরা এমন দাওয়াহ বুঝাচ্ছি যা পরিপূর্ন, যা কোন কিছুকে গোপন করে না।

সপ্তমতঃ     আমাদের এই দাওয়াহ সাইটে বইগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন আমরা পুরো দ্বীন ইসলামের দাওয়াহ দিচ্ছি। প্রতিটা আমল আমাদের দাওয়াহ এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ‘রিয়াদুস সালেহীন’ এবং ‘কবিরা গুনাহ’ – এই বই দুটি একজন মুসলমানের জীবনের অধিকাংশ দিককে ব্যাপকভাবে তুলে ধরে। আর তাওহীদ বাস্তবায়নের অবধারিত অংশ, আল ওয়ালা ওয়াল বারা এর অবধারিত পরিণাম ‘আল জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ আমাদের দাওয়াহ এর অন্যতম অংশ। কারণ আল জিহাদ হচ্ছে এই উম্মাহর বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

اذا ضن الناس بالدينار والدرهم وتبايعوا بالعينة واتبعوا اذناب البقر وتركوا الجهاد في سبيل الله أنزل الله عليهم بلاء فلا يرفعه حتى يراجعوا دينهم

‘যখন মানুষ দিনার এবং দিরহামের মধ্যে ডুবে যাবে, এবং যখন ঈনা নামক (সুদী) ব্যবসায় জড়িত হয়ে যাবে, আর গরুর লেজ-এ সন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তাদের উপর লাঞ্চনা চাপিয়ে দিবেন, তিনি তা উঠিয়ে নিবেন না, যতক্ষণ না তারা তাদের দ্বীনে ফিরত না যাবে।’ [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ (২/২৮), তাবরানী (১২/৪৩৩), বায়হাকী (শুয়াবুল ঈমান ৭/৪৩৪), আবু ইয়ালা (১০/২৯), আবু নাঈম (১/৩১৩)।]

এই উম্মাহ আজ জিহাদকে ভুলে গেছে। অনেকে স্বার্থের কারণে এর বিরোধিতা করছে, অনেকে না বুঝে। আমরা আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই সুন্নাহর উপরেও আমল করতে চাই। বরং এটাতো ফরজ। আজকালকার দিনের জন্য এটা ফরজে আইন।

সংক্ষেপে আমাদের দাওয়াহকে তাওহীদ এবং জিহাদের সমষ্টি বলা যায়।

———————————-

উত্তর প্রদানেঃ

– শাইখুল হাদিস আবু ইমরান।

– মুফতী আইনান।

– মাওলানা আবু আনিকা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 1 =

Back to top button