জঙ্গির সাথে কথোপকথনপ্রবন্ধ-নিবন্ধ

এ দায় জঙ্গিরা কিভাবে এড়াবে?

প্রশ্ন – “আলকায়েদা, আইসিস ইত্যাদির তথাকথিত জিহাদের ফলে কাফিরদের আক্রমনে যেসব মুসলিম নারী শিশু বৃদ্ধারা নিহত তথা শহীদ হয়েছিলো তাদের দায়িত্ব কে নেবে? এ দায় জঙ্গিরা কিভাবে এড়াবে?
.
#উত্তরঃ ১.আল কায়দার কারনে কোথাও নিরীহ মুসলিমদের ক্ষতির স্বীকার হতে হয় নি।

– ফিলিস্তিনের মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
– চেচনিয়ার মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
– বসনিয়ার মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
– কাশ্মিরের মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
– মিশরের মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
– ভারতের মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
– কেনিয়ার মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
– কেন্দ্রীয় আফ্রিকার মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
– রাশিয়ার মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
– লাটভিয়ার মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
– চায়নার মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
– আলজেরিয়ার মুসলিমরা কি আল কায়দার কারনে হত্যা-নির্যাতনের স্বীকার?
উত্তরঃ BIG NO !!
.
** ইরাকে তো আল কায়দা ও আইএস বলে কিছুই ছিল না, সেখানে কেন আক্রমন করা হল ও লাখ লাখ মুসলিম হত্যা করা হল?
.
**টুইন টাওয়ার হামলার আগে থেকেই আমেরিকান বাহিনী দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আফগানিস্তানে আক্রমন করে আসছিল । তারা তালিবানের বিরুদ্ধে নর্দান অ্যালায়েন্সকে সাহায্য করছিল, তালিবানদের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তাদের উপর কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। কেন? কারন তালিবান একটি গনতান্ত্রিক, কিংবা সমাজতান্ত্রিক কিংবা স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বদলে একটি ইসলামী ইমারাহ প্রতিষ্ঠা করেছিল।
.
৯/১১ এর বরকতময় হামলার পর অ্যামেরিকা কোন প্রমান দেওয়া ছড়াই সরাসরি আফগানিস্তান আক্রমন করেছিল। যদি এখানে আফগানিস্তানের বদলে জার্মানী হতো, কিংবা রাশিয়া বা কোন অমুসলিম ইউরোপীয় দেশ থাকতো তবে কি অ্যামেরিকা এভাবে আক্রমন করতো?
.
টুইন টাওয়ার হামলার পরও যদি আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেন(র)কে আমেরিকার হাতে তুলে দিলেও আমেরিকা আফগান আক্রমন বন্ধ করত না- তার কারন হল আফগানিস্তান ছিল একমাত্র ইসলামি রাষ্ট্র ও মুল্যবান বিরল খনিজ সম্পদে ভরপুর একটি দেশ এখনও ।
.
** সিরিয়াতে তো আগে আল কায়দা ছিল না , তবে বাশার কেন হত্যা ও নির্যাতন চালাত?
** লিবিয়াতে কেন আমেরিকা আক্রমন করেছিল?
**উত্তর কোড়িয়ার সাথে অ্যামেরিকা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এতো শত্রুতা কেন? উত্তর কোরিয়াতে আল-ক্বা’ইদা তো দূরে থাক, তারা তো মুসলিমই না।
.
যত দেশে মুসলিম নিধন হচ্ছে কোথাও আল কায়দার কারনে নয় । তবে মিডিয়া আমাদের মাথা ভালভাবেই ওয়াশ করে যাচ্ছে যেন সবার মধ্যে আইএস আল-কায়দার মাধ্যমে জিহাদ-phobia ঢুকে পড়ে।
.
২. কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন (যা মোটামুটি এরকম)- ”কাফের মুশরিকরা তোমাদের উপর এই কারনে নির্যাতন করে যে তোমরা স্বীকার করেছ এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহা নাই” । এখানে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন কিসের জন্য কাফেররা যুগ যুগ ধরে আমাদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালায় । যারা বলেন জিহাদ করার কারনে অ্যামেরিকা আমাদের হত্যা করছে তারা কি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার চেয়ে বেশি বোঝার দাবি করছেন – আউযুবিল্লাহ।
.
৩. আল্লাহ তায়লার কাছে একজন ইমানদার বিশ্বাসী কাবাঘর থেকে বেশি মুল্যবান । এবং সেই ঈমানদার থেকে বেশি মুল্যবান হল দ্বীন ইসলাম । মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে এক আল্লাহর ইবাদত করার জন্য । ”দ্বীনকে মানুষের জন্য তৈরি করা হয় নি” । যদি তাই হত তবে কোন নবী এবং রাসুল(আ)দের নির্যাতনের স্বীকার হতে হত না । যেখানে নবী রাসুল(আ)গন ছিলেন আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে প্রিয় । তাই মুসলিমরা নির্যাতন ও মৃত্যুর ভয়ে দ্বীন আংশিক বা পরিপূর্ণ ছেড়ে দিয়ে থাকবে এটা কখনই সম্ভব না , এই ধরনের দ্বীন বা কোন ইবাদত ত্যাগকারি মুসলিমের দাম আল্লাহ তায়ালার কাছে নাই । বরং এইসব মুসলিমদের দুনিয়া এবং আখিরাতে উভয় জায়গায় নির্যাতনের স্বীকার হতে হবে । সুরা বাকারার ৮৮ নাম্বার আয়াত দেখুন ।
.
৪. তাদের জিহাদ যদি তথাকথিত হয় বা ভুলে ভরা হয়, তবে আপনাদের উচিৎ সঠিক জিহাদ করে দেখানো । যদি আল-ক্বাইদার জিহাদ কথিত জিহাদ হয় তবে পৃথিবীর কোন জায়গায় সঠিক জিহাদ হচ্ছে একটু বলুন, শুনি। কারন পৃথিবিতে আলহামদুলিল্লাহ এমন জিহাদের ভূমি খুব কম আছে যেখানে জিহাদ আছে কিন্তু সেখানে আল-ক্বাইদাহ কোন না কোন ভাবে নেই। আর যেখানে আল-ক্বাইদাহ নেই সেখানকার মুজাহিদিনগণও আল-ক্বাইদাকে ভালোবাসে এবং তাদের জিহাদকে সঠিক জিহাদ মনে করে। অতএব আপনি কথিত জিহাদ বলে কি বোঝাচ্ছেন? আর আপনার দৃষ্টিতে সঠিক জিহাদ কোনটা এবং এটা কে করছে?
.
জিহাদ বন্ধ করে থাকা যদি জিহাদ হয়, তবে বিয়ে না করা বিয়ে করা হবে না কেন? ইসলামের কোন ফরয বিধান পালন করতে গিয়ে নির্যাতন ও হত্যার স্বীকার হওয়াটাই বড় ইবাদত এবং কবুলিয়াতের লক্ষন। কোন ইবাদত করতে গিয়ে অন্য মুসলিম নির্যাতনের বা কষ্টের স্বীকার হবে এই ভেবে এখন কি আপনি সেই ফরয ইবাদত ছেড়ে দিবেন ? না বরং সেই ফরয ইবাদত প্রতিষ্ঠা করার জন্য জিহাদ করতে হবে বাধা দানকারীদের বিরুদ্ধে । এটা আল্লাহর হুকুম ।
.
৫. কেউ যদি কাফেরদের হাতে সুমাইয়া(রা)এর নিহত হওয়ার ঘটনায় রাসুল ﷺ এর দ্বীনের প্রচারকে দোষ দেয় এই বলে যে, মুহাম্মাদ ﷺ ইসলাম এভাবে প্রচার না করলে সুমাইয়ার শহিদ হতে হত না, উসমান(রা)এর বস্তার মধ্যে পিটানি খেতে হত না এবং ওমর(রা)এর বোনের শরীরে কোন আঘাত লাগত না । (নাউযুবিল্লাহ) ।
.
আজকে কাফেরদের বিরুদ্ধে হালাল ফরয জিহাদ করতে গিয়ে যদি বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে তবে আমরা কেন নিজেদের মুসলিম মুজাহিদদের দোষ দেই ? যেখানে পাল্টা আক্রমনে কাফের বাহিনী নিরীহ মুসলিমদের মেরে ফেলতেছে মুজাহিদদের না পেয়ে । এটা তো কাফেরদের কাপুরুষতার দোষ সাহসী মুজাহিদিনদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন । এটা কি অপবাদ না?
.
৬. আজ আমরা ফিতনার সঙ্গাই পাল্টে ফেলেছি। ফিতনা কাকে বলে তাই আমরা আজ আর জানি না । সবচেয়ে বড় ফিতনা হল কুফর ও শিরক, তারপর নির্যাতন, পাপ, মিথ্যাচার, ধোঁকা, প্রতারনা, ও অনৈক্য অস্থিরতা/ ইখতিলাফ নিয়ে সমস্যা । ফিতনার আগেক অর্থ হল পরিক্ষা ও সংকুল পরিস্থিতি যার মাধ্যমে ভাল থেকে খারাপ আলাদা হয়ে যায় । পরিবার ও সম্পদও ফিতনা । আল্লাহর দ্বীন থেকে মানুশদের সরিয়ে রাখা বা বাধা দেয়া একটি বড় ফিতনা । আরও আছে ভুল পথ-প্রদর্শন/বিভ্রান্ত্র করা, অযৌক্তিক আচরন ।
.
প্রত্যেককে ফিতনা অর্থাৎ পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ।তাই ফিতনাবাজ বলার সময় আমাদের সাবধান থাকা উচিৎ । যারা মুজাহিদ তাদের ফিতনাবাজ বলার কোন সুযোগ নাই কুরআন হাদিস দিয়ে । আসল ফিতনাবাজ তাগুত সরকাররাই, তাদের মাঝে সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান । আর আল্লাহ তায়ালা জিহাদকে ফরয করেছেন যেন মুসলিমরা ফিতনা ও বিভ্রান্তিকে সমুলে উৎপাটিত করে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়া জুড়ে । অন্যদিকে যতক্ষন না খারেজিদের মত ইখতিলাফি অস্থিরতা দিয়ে অপরকে হত্যা নির্যাতন করে ততক্ষন সেটা ফিতনা না ।
.
৭. মুজাহিদিনদের না পেয়ে কাপুরুষ কাফেররা সাধারন নিরীহ অযোদ্ধা মুসলিমদের মেরে ফেলে বা গ্রেফতার ও নির্যাতন করে; যেন, অন্য মুসলিমরা মনোবল হারিয়ে বা ভীত হয়ে মুজাহিদিনদের দোষ দেয়া শুরু করে । কাফেররা এইক্ষেত্রে সফল। সাথে কাফেররা মুসলিমদের হত্যা করে মুসলিমদের সংখ্যা কমানোর ও মুসলিমদের নির্যাতন করে প্রতিশোধ নেয়ার প্ল্যানও বাস্তবায়ন করে । এরকম পরিস্থিতিতে মুসলিমদের উচিৎ ধৈর্য ধরে কাফিরদের উপর দোষারোপ চালিয়ে গিয়ে সমুচিত জবাব দেয়া । কিন্তু এখন ব্যাপারটা এরকম যার জন্য করলাম জিহাদ সেই বলে জঙ্গি সন্ত্রাসী । তবে মুজাহিদিনরা নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করে না ।
.
.
সবচেয়ে অদ্ভুত কথা হল আল-ক্বাইদার গঠনেরও আগে থেকেই অ্যামেরিকা মুসলিমদের হত্যা করে আসছে। আল-ক্বাইদা গঠনের অনেক আগে থেকেই ইস্রাইলের বিরুদ্ধে জিহাদ, অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে জিওহাদ, অ্যামেরিকার নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক সম্পরদায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ মুসলিমদের উপর ফরয হয়ে আছে। আল-ক্বাইদা অ্যামেরিকার উপর কোন হামলা করার আগেই অ্যামেরিকা মুসলিমদের উপর হামলা করেছে, মুসলিম ভুমি দখল করেছে, মুসলিম ভূমি দখল করে রাখতে ইয়াহুদীদের সাহায্য করেছে। ৯/১১ এর আগেই ইরাকে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে অ্যামেরিকা হত্যা করেছে ১০ লক্ষ মুসলিম শিশু।
.
ইতিহাসের শুরু ৯/১১ তে না। আল-ক্বাইদা অ্যামেরিকাকে আঘাত করার আগ থেকেই অ্যামেরিকা মুসলিম হত্যা করে আসছে। এ হল বাস্তবতা। এবং অ্যামেরিকা বহু আগে থেকেই তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে এটা নিশ্চিত করার জন্য যে মুসলিম কোন ভূখণ্ডে যেন ইসলামী শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা না হয়। অর্থাৎ ৯/১১ এর আগেই সক্রিয় ভাবে অ্যামেরিকা ও পশ্চিম ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল।
.
তাহলে যে ব্যক্তি এ আগ্রাসী কাফিরদের হত্যা নিয়ে কিছু করে না, আগ্রাসী কাফিরকে প্রতিরোধ করে না, যে ব্যক্তি ফরয জিহাদ করে না, যে ব্যক্তি নির্যাতিত মুসলিমদের পাশে দাড়ায় না, যার এক সপ্তাহের আরাম উম্মাহর কথা চিন্তা করে সে নষ্ট করে না – সেই লোক যখন আল-ক্বাইদা এ কাজ গুলো করে তখন তেড়ে এসে বলে – এই তোমাদের কাজের কারনে মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে – তখন এর মানে কি হয়?
.
মুসলিমদের তো কাফিররা এর আগেও হত্যা করছিল। এখনো করছে। এখানে কিছু বদলায় নি। বদলেছে সমীকরনের অন্য দিকটা। আগে কাফিররা আঘাত করছিল কিন্তু তাদের উপর আঘাত করা হচ্ছিল না। এখন কাফিরদেরকেও আঘাত করা হচ্ছে। তাহলে আসলে আপনার চিন্তাটা কি মুসলিমদের উপর আক্রমন নিয়ে নাকি কাফিরদের উপর আক্রমন নিয়ে? কারন মুসলিমদের উপর যখন আক্রমন চলছিল তখন আপনি ছিলেন চুপ- কিন্তু যখন কাফিরদের উপর আক্রমন করা হল তখন হঠাৎ আপনার দরদ উথলে পড়লো আর তাই আপনি কাফিরদের উপর আক্রমন বন্ধ করতে বললেন..? কি বিচিত্র বিকৃত চিন্তা !
.
জঙ্গিদের দায়ের কথা জিজ্ঞেস করছেন…দশকের পর দশক মুসলিমদের হত্য করা হল, মুসলিম নারীদের ধর্ষন করা হল, মুসলিমদের বন্দী করে রাখা হল, মুসলিম ভূমি দখল কয়রা হল, মুসলিমদের সম্পদ লুটপাট করা হল – আপনি এ সময় দিব্যি আরাম-আয়েশের জীবন কাটালেন আপনার পরিবার-পরিজন আপনার সাজানো গোছানো দুনিয়া নিয়ে। অথচ এর যেকোন একটি ঘটলেই জিহাদ করা পনার দায়িত্ব। আপনি এ ফরয দায়িত্ব পালন করলেন না। করলেন তো না-ই অন্য কেউ পালন করতে গেলে তাকে পারলে আটকে রাখলেন। তাদের জিহাদকে কথিত জিহাদ বললেন। আপনি এ নিষ্ক্রিয়তার দায় এড়াবেন কিভাবে?
.
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেদায়েত ও সহিহ বুঝ দান করুক আমীন ।

[সংগ্রহীত, সম্পাদিত ও পরিবর্ধিত]

Related Articles

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 4 =

Back to top button