প্রবন্ধ-নিবন্ধ

পুলিশ মনিরুলের প্রশ্নের জবাব

#প্রশ্ন – কল্যাণপুরের নাটক নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ মনির বলেছে –
আমি যদি বলি আপনি বুঝেও না বোঝার ভান করছেন, আপনি খণ্ডাবেন কী করে? সোশ্যাল মিডিয়া-জুড়ে আলোচনা হচ্ছে যে প্রতিবেশীরা বলছে, ওই বাসার লোকেরা সারা রাতই কথিত জিহাদের পক্ষে স্লোগান দিয়েছে, তাদের রুমে কথিত আইএসের পতাকা পাওয়া গিয়েছে, প্রচুরসংখ্যক উগ্রবাদী বইপুস্তক পাওয়া গেছে। তারপরও

তাহলে কেন এ রকম প্রশ্ন তুলছেন? পুলিশের সাফল্য মানতে পারছেন না, তাই তো!’
.
#উত্তর – প্রথমেই বলে রাখা ভালো, এরকম আহামক্কি এবং মূর্খতাপূর্ণ কথাবার্তা বাংলাদেশের পুলিশের কাছ থেকেই শুধু আসা সম্ভব। তবে এটাও বোঝা জরুরী মনিরুল নিজেই তার এসব কল্পকাহিনী বিশ্বাস করে না।
.
কিন্তু তবুও সে এগুলো বলছে, কিংবা বলা যায় বলতে বাধ্য হচ্ছে কারন খবরের কাগজ ও টিভি চ্যানেলগুলো নির্লজ্জ ভাবে সরকার ও পুলিশের এ নাটকে সমর্থন দিলেও পুলিশের মোটা হাতে লেখা ও মোটা মাথা থেকে বের হওয়া যাচ্ছেতাই স্ক্রিপ্টের নাটক সাধারন মানুষকে গেলানো যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে মনিরুলরা তাদের যাত্রাপালার নাটকের গল্পের গ্রহনযোগ্যতা তৈরির ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
.
.
পুলিশ মনির বলেছে তাদের বাসায় প্রচুর উগ্রবাদী বই পাওয়া গেছে যা প্রমান করে এরা জঙ্গি। দেখুন বিষয়টি কতো বিভিন্ন দিক দিয়ে ধাপ্পাবাজি। প্রথমত, বাসায় জঙ্গি বই পাওয়া দ্বারা কিভাবে প্রমানিত হয় যে তারা সারারাত গুলি করেছে, আরা ওইখানে বসে আক্রমনের পরিকল্পনা করছিল এবং তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে?
.
দ্বিতীয়ত, উগ্রবাদী বই বলতে পুলিশ আসলে কি বোঝায়? বাংলাদেশে তো এমনো নজীর আছে যেখানে বুখারী শরীফকে জিহাদি বই বলা হয়েছে। পুলিশের কথা এখানে প্রমান হিসেবে যথেষ্ট না যেহেতু পুলিশ পরীক্ষিত মিথ্যাবাদি। তবে পারে তাদের কথিত উগ্রবাদী বই আসলে কথিত সরকারের আদেশে কথিত পুলিশের সাজানো নাটকের উপাদান ছাড়া আর কিছুই না।
.
উপরন্তু যদি উগ্রবাদী বই থেকেও থাকে, সে কারনে কি নয়জন মানুষকে মেরে ফেলা যায়? শারীয়াহ-র কথা নাহয় বাদ-ই দিলাম মানবিক বিচারে কিংবা দেশের মানব রচিত আইনের অধীনে কি এটা বৈধ??
.
তৃতীয়ত, ঐ বাসাতে যে উগ্রবাদী বই পাওয়া গেছে এ কথার স্বপক্ষে প্রমান কি? পুলিশ নিজে গিয়ে যে বই রেখে আসে নি এটার প্রমান কি? অতীতে এমন অনেক বার, অনেক অনেক বার হয়েছে পুলিশ কাউকে এক জায়গায় ধরে, আরেক জায়গায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে। যখন ধরেছে তার ছয় মাস পর গ্রেফতার দেখিয়েছে। খালি হাতে গ্রেফতার করেছে কিন্তু মিডিয়ার সামনে দেখিয়েছে ব্যাক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন অস্ত্র পাওয়া গেছে। এ একই ধরনের ঘটনা যে এখানে ঘটেনি তার প্রমান কি?
.
পুলিশ মনির আরো বলেছে সোশ্যাল মিডিয়া-জুড়ে আলোচনা হচ্ছে, প্রতিবেশীরা বলছে ঐ বাসার লোকেরা সারা রাত স্লোগান দিয়েছে। আবার দেখুন, সারা রাত ওই নয়জন স্লোগান দিয়েছে এটা প্রমান হলে কি পুলিশের কাহিনী সত্য প্রমানিত হয়? হাত বেধে ফেলে রাখা লোকও স্লোগান দিতে পারে, বন্দীও স্লগান দিতে পারে, ক্রসফায়ারের আসামীও স্লোগান দিতে পারে।
.
আবার দেখুন স্লোগানের ব্যাপারে প্রতিবেশীরা আসলে কি বলেছে –
.
“ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যরাতে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে ঘটনাস্থল প্রকম্পিত করে তোলা হয়েছিল৷ শব্দের ব্যাপকতায় কমপক্ষে বিশ থেকে ২৫ জন একসঙ্গে এরকম শব্দ করেছে বলে মনে করছেন ” অথচ পুলিশের বক্তব্য হল সেখানে ৯ জন নিহত হয়েছে একজন আহত। তাহলে বাকি স্লোগানদাতারা কোথায়?

http://www.dw.com/bn/কল্যাণপুরে-অভিযান-আমরা-যা-এখনো-জানি-না/a-19428063
.
আর সোশ্যাল মিডিয়াতে কোন কিছু নিয়ে কথা হওয়াই যদি প্রমান হিসেবে যথেষ্ট হয় তাহলে তো সোশ্যাল মিডিয়াতে পুলিশের বানোয়াট নাটকের গোজামিল নিয়ে আর অনেক বেশি কথা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা দিয়ে হিসেব করলে ইতিমধ্যে পুলিশের মিথ্যা প্রমানিত হয়ে গেছে।
.
.
এছাড়া পুলিশের এ সস্তা নাটকে আছে আরো অসংখ্য ফাকফোকর। যেমন –
.
ময়নাতদন্তে প্রমাণিত হয়েছে জঙ্গিদের শরীরে বেশি ভাগ গুলি লেগেছে পেছন দিক থেকে। অথচ গোলাগুলি চলাকালীন অবস্থায় মারা গেলে গুলি লাগার কথা সামনের দিকে। শেষ চেষ্টা হিসেবে মরিয়া হয়ে হাতে ছুড়ি নিয়ে যদি জঙ্গিরা আক্রমন চালায় তবে কি তারা পুলিশের দিকে পেছন ঘুড়ে ছুড়ি নিয়ে আক্রমন করছিল?
.
একই সাথে “ ওই ভবনের বাইরের দেয়াল বা আশপাশের ভবনগুলোর কোনো দেয়ালে গুলি বা বিস্ফোরকের চিহ্ন দেখা যায় নি।“ অথচ সারারাত যদি গোলাগুলি হয়ে থাকে তাহলে চিত্র বিপরীত হবার কথা।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/928171/বেশির-ভাগের-গুলি-লেগেছে-পেছন-দিক-থেকে
.
যদি জঙ্গিদের সাথে বোমা থেকে থাকে তাহলে তারা সেগুলো ব্যবহার করলো না কেন?
.
ঘটনার সূত্রপাত কয়টার সময়? একবার পুলিশ বলছে রাত তিনটায় ব্লক রেইডের সময় ঘটনার সূত্রপাত, আবার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে রাত ১২টার দিকে পুলিশ দরজায় গিয়ে গিয়ে, সবাইকে দরজা বন্ধ রাখতে এবং বাইরে বের হতে নিষেধ করছিল। আবার মনিরুল বলছে রাত ১ টার দিকে পুলিশ বাসাটিতে নক করে। অথচ পুলিশের প্রাথমিক তথ্য ছিল তারা ২/৩ তলা পর্যন্ত ওঠার পর উপর থেকে তাদের গুলি করা হয়। আসলে কি হয়েছিল?
.
বাংলাদেশের পুলিশ মিথ্যা বলতে বলতে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাদেরকে মিডিয়াতে বলার জন্য যে মিথ্যাটা শেখানো হচ্ছে, সেটাও তারা বলতে পারছে না।
.
উপরন্তু আশপাশের ভবনের কেউ এ ঘটনা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতেও রাজি হননি। অনেকে বলেছেন, নিহত নয় জঙ্গিকে এলাকায় আগে কেউ দেখেনি – চিন্তা করুন ! রাতে পাঞ্জাবী-জিন্স পরে, পাগড়ি বেধে ঘুমায় এমন নয়টা ছেলেকে এলাকার কেউ আগে দেখেই নি! অর্থাৎ পুলিশ যে আগে থেকে গ্রেফতার কিছু ছেলেকে রাতের অন্ধকারে এলাকা কর্ডন করে ওই বাসাতে রেখে তার পর “দুঃসাহসী পুলিশি অভিযানের” নাটক সাজায় নি, তার প্রমান কি?
.
.
সাধারন জনগনের সাথে পুলিশের সম্পর্কটা আওয়ামী-বিএনপি ধরনের কোন সম্পর্ক না যে, পুলিশের সাফল্য মানুষ মেনে নিতে পারবে না। বরং ঐতিহাসিক ভাবে র‍্যাব-পুলিশ-ডিবির মতো বাহিনীগুলোর দুর্নীতি, অনিয়ম ও যুলুমের পরও, বিভিন্ন সময় সরকার, ফিরিঙ্গি ও হিন্দুস্তানি প্রভুদের স্বার্থরক্ষার্থে জনগনের টাকায় চলা এসব বাহিনীগুলো জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে – সত্য জানা সত্ত্বেও, সাধারন ছাপোষা মানুষ এসব বাহিনীর প্রতি কিছুটা হলেও বিশ্বাস রাখতো।
.
.
কিন্তু রমযান মাসে প্রথমে সাঁড়াশি অভিযান, তারপর ক্রসফায়ার নাটক এবং তারপর মিতু হত্যা কেলেঙ্কারির পর জনগনের কাছে এ বিষয়টা পরিষ্কার যে রাস্তার কুকুরের কথাও বিশ্বাস করা যায় কিন্তু পুলিশের কথা বিশ্বাস করা যায় না। পুলিশের সাফল্য মানতে না পারা মত হাস্যকর উপসংহার টানা নিস্প্রয়োজন। মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না কারন পুলিশ পরীক্ষিত মিথ্যাবাদি। সিম্পল।
.
তাই পুলিশ মনিরের বোঝা উচিত পুলিশ যদি কখনো, কোনদিন ভুল করে সত্য কথা বলেও ফেলে তাও মানুষ বিশ্বাস করবে না। কারন পতিতা যদি দাবি করে সে ধর্ষিতা তখন কেউই তাকে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের মানুষের চোখে পুলিশের সত্যবাদী হবার পতিতার ধর্ষিতা কিংবা সতীসাধ্বী হবার দাবির চাইতেও হাস্যকর। তাই ফালতু পাল্টা প্রশ্ন করে পুলিশের গ্রহণযোগ্য তৈরি করা যাবে না, এটা বোঝার জন্য মাথা মোটাদেরও রিসার্চের প্রয়োজন নেই।
.
তবে বাংলাদেশের পুলিশ, বিশেষ করে মনিরের মতো পুলিশরা কতোটা নীচ, কতোটা নির্লজ্জ হতে পারে আর পুলিশের গল্প বিশ্বাস করতে হলে কোন পর্যায়ের মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়া প্রয়োজন তা নিয়ে আসলেই রিসার্চের দরকার আছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 4 =

Back to top button